Tareq Nurul Hasan's Blog, page 7

June 4, 2022

অনীক দত্তের অপরাজিত (দি আনডিফিটেড)



অনীক দত্তের অপরাজিত (দি আনডিফিটেড) দেখলাম গত সপ্তাহে। বেশ ভালো লাগল। 
(স্পয়লার রয়েছে। মুভি দেখা না থাকলে আর না পড়াই ভালো।) .......

সিনেমা দেখার আগে ট্রেলার বা অন্যান্য খবর খুব বেশি দেখিনি বলে, সিনেমায় বসে যখন প্রথম টের পেলাম, এটা সত্যজিতের ওপরে নয়, বরং পথের পাঁচালীর ওপরে বানানো সিনেমা, বেশ মজা পেলাম। 
সবার অভিনয় দারুণ একেবারে। চরিত্র অনুযায়ী কাস্টিং একেবারে ফুলমার্কস পেয়ে যাবে, মেকআপও দুর্দান্ত। 
শুধু সব কিছুর নাম বদলে দেয়াটা ভালো লাগেনি। পরিচালকের নিশ্চয়ই কোনও ব্যাখ্যা আছে এ নিয়ে, আমার এখনও চোখে পড়েনি যদিও, কিন্তু সিনেমা দেখার সময় দর্শক হিসেবে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলাম এটা নিয়ে। এক শুধু সত্যজিতের অপরাজিত রায় হওয়াটাই মানতে সমস্যা হয়নি, কিন্তু পাঁচালীর ‘পদাবলী’, বিন্দুকে ‘বৃন্দা’, কৃষ্ণকান্তের উইলের ‘উকিল’ অথবা রবিশংকরের সূর্যবাবু হয়ে যাওয়া কেমন স্যাটায়ার হয়ে যাচ্ছিল বারে বারে। আর এই নাম বদলের ফর্মূলাই বা কী ছিল? বাইসাকেল থিভস ঠিক কীভাবে বাইসাইকেল ‘রাইড’ হয়? একেকটা নতুন চরিত্র আসছিল পর্দায়, আর আমার কুইজ খেলার মত করে ‘সেটা আসলে কে’ এই গেমে জড়িয়ে পড়তে ভালো লাগছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে, চিত্রনাট্যও এ কারণে কিছু জায়গায় বেশ ঝুলে গেছে। কারণ অনেকবারই অন্য চরিত্রের মুখ দিয়ে বলাতে হয়েছে, ‘উনি তো এই, তাই না?’ বা ‘উনি তো ইনি’। অথচ নাম না বদলালে এই ঝামেলার দরকারই হতো না। 
আর কেন যেন মনে হল, যারা ইতিহাস খুব বেশি জানেন না, এই মুভি তাদের ভেতরে বেশ কিছু ভুল তথ্য ঢুকিয়ে দেবে নাম-বদলের কল্যাণে। অবশ্য ইতিহাস শেখানোটা পরিচালকের দায় নয়, বরং জেনে নেওয়াটা দর্শকের দায়িত্ব, এটাও মানি। 
তবে বলতেই হয় যে, পথের পাঁচালীর শুটিং এর কিছু দৃশ্যের পুনর্চিত্রায়ন একেবারে হা করে গিলেছি। পুকুর পাড় ধরে সার বেঁধে মিষ্টিওয়ালা, দুর্গা, অপু আর কুকুরের হেঁটে যাওয়া, অথবা ইন্দির ঠাকরুনের দৃশ্যগুলো ছিল অসাধারণ। আর প্রথম ট্রেন দেখার দৃশ্যটাও চমৎকার হয়েছে। 
সত্যি কথা বলতে গেলে, হয়ত বার বার দেখা হবে না এই মুভি, কিন্তু সত্যজিৎ এবং অনীক দত্তের ভক্তদের অন্তত একবার এই মুভিটা দেখতেই হয়। 
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on June 04, 2022 23:27

May 17, 2022

The Collected Short Stories by Satyajit Ray



সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্পের আমি সাঙ্ঘাতিক ভক্ত। তাঁর ‘গল্প ১০১’ বইটার বেশিরভাগ গল্পই প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে পড়তে পড়তে। সেগুলো থেকে বাছাই করা ঊনপঞ্চাশটি গল্পের ইংরেজি অনুবাদ নিয়ে এই বই- ‘The Collected Short Stories by Satyajit Ray.’ 
অনুবাদ অনেকটা পাজ্‌ল এর মত ব্যাপার বলে মনে হয় আমার কাছে। সেখানে শুধু শব্দের অর্থ বসিয়ে গেলেই চলে না, বরং উদ্দিষ্ট পাঠকের মন বুঝে বাক্য সাজানো লাগে। ধাঁধাঁর চেয়ে কম নয় তা কোনও অংশে!
সত্যজিতের লেখা এত পছন্দের গল্পগুলির ইংরেজি চেহারা কেমন হল, সেই আগ্রহ থেকেই বইটি সংগ্রহ করা। 
কেনার সময় জানতাম গল্পগুলো অনুবাদ করেছেন গোপা মজুমদার। এখনও সব গল্প পড়ে উঠতে পারিনি, প্রথম দিকের কয়েকটা কেবল। কিন্তু তাতেই অনুবাদের মান নিয়ে খুব ভালো বোধ করছি। খুবই মসৃণ, কোথাও হোঁচট না-খাওয়া অনুবাদ। সত্যজিতের বাংলা-র ঝরঝরে ভাবটা এই অনুবাদগুলোয় খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না। এটা একটা বিরাট সাফল্য বলে মনে করি। 
তবে বইটি হাতে পেয়ে যে সারপ্রাইজটা পেলাম তা হল, কিছু গল্প দেখলাম সত্যজিতের নিজেরই অনুবাদ করা! এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত পাওনা। এক লাফে খুব প্রিয় গল্প ‘খগম’ খুলে বসলাম। সাপের ভাষা সাপের বিষ, ফিস্‌ ফিস্‌ ফিস্‌ ফিস্‌। এটা হয়েছে- Snakes speaks, when snakes hiss; I know this, I know this. কী দারুণ! 
একটা বই পুরোটা শেষ করার আগে কিছু বলা হয়তো ঠিক না, কিন্তু চেনা বামুনের পৈতে লাগে না- এ কথাও তো সত্যি। 
পেঙ্গুইনের বের করা বইটা আমি কিনেছি বুক ডিপোজিটরি থেকে। অ্যামাজনেও পাওয়া যাওয়ার কথা। 
বিশেষ করে প্রবাসী দ্বিতীয় প্রজন্মের বাঙালীদের জন্যে এটি একটি চমৎকার উপহার হতে পারে বলে আমার মনে হয়। বাংলা না জানা শিশুরা অন্তত কিছুটা হলেও বাংলার সাহিত্য নিয়ে জানবে।
2 likes ·   •  1 comment  •  flag
Share on Twitter
Published on May 17, 2022 20:46

April 28, 2022

April 19, 2022

অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া-


গানেরা কেমন করে ফিরে ফিরে আসে!  

তখন কুমিল্লা জিলা স্কুলে পড়ি। ফাইভ অথবা সিক্সে। স্কুলের সামনের ছোট মার্কেটের সিঁড়ি ঘরটাকেই কায়দা করে বদলে নিয়ে একটা ‘ক্যাসেটের দোকান’ চালু হল। গান মানেই তখন ‘ক্যাসেট’- আমাদের কাছে। দোকানের নামটাও একেবারে সেইই- জিপসী! আমাদের কিশোর মনে একটা নতুন ধুমদাড়াক্কা কিছুর  ডুগডুগি বাজিয়ে দিলো দোকানটা। ঈদ উপলক্ষে তখন প্রচুর এলবাম বের হতো। এখন কী হয় জানি না। তো কোনও এক ঈদের আগে আগে আমি আর ছোটমামা সম্ভবত ৩৫ টাকা পকেটে নিয়ে গেলাম সদ্য বের হওয়া একটা এলবাম কিনতে। শক্তি, নাকি স্টারজ, নাকি স্রোত- ভুলে গেছি। কিন্তু এরকম কোনও নাম নিশ্চিত। 

সেই ছোট্ট দোকানে ঢুকে আমরা নানা রকম ক্যাসেট দেখছি। বাইরে বিশাল সাউন্ডবক্সে দারুণ কোনও ব্যান্ডের গান বাজছে। 

সেই সময় দরজা ঠেলে এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক ঢুকলেন দোকানে। দেখলাম বাইরে যে রিকশা থেকে তিনি মাত্র নামলেন, সেখানে আরেকজন স্নিগ্ধ চেহারার ভদ্রমহিলা বসে আছেন। 

তিনি ঢুকে দোকানের ঝকমারি দেখে একটু থমকে গেলেন। তারপরে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনাদের কাছে কি অমল ধবল পালে ক্যাসেটটা আছে?’ 

দোকানী বুঝলেন না, আবার জিজ্ঞেস করলেন ক্যাসেটের নাম। ভদ্রলোক আবারও বললেন, ‘অমল ধবল পালে।‘ স্বভাবতই ওই নামের ক্যাসেট ওখানে নেই। তিনি চলে গেলেন। 

আমি আর ছোটমামা মিটিমিটি হাসতে লাগলাম, অমল ধবল পালে, এটা আবার কেমন গান? 

তারও বেশ কিছু বছর বাদে ঋতুপর্ণ ঘোষ আমাদের বুঝিয়ে দিলেন এটা কেমন গান, ‘উৎসব’ সিনেমায়। আহা ঋতুপর্ণ, পেছনে দূর্গাপুজার ঢাকের বাজনা রেখে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনাবার সাহস আর কারই বা হবে! সেই দৃশ্যে চিলেকোঠায় বসে অর্পিতা পাল খালি গলায় গাইছেন ‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া...।‘ অসাধারণ এই সিনেমাটার সাথে সাথে এই ছবিটাও মাথায় গেঁথে গেল একেবারে, এবং গানটাও। 

তারও অনেক বছর বাদে মেলবোর্নের কোনও এক স্টেজ শো-তে শ্রাবণী সেন এলেন গান শোনাতে। সেই অনুষ্ঠানের ইন্ট্রো-তে এসে জানলাম, ‘উৎসব’ ছবির গানটায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্রাবণী সেন। শুনে ভালো লাগল অনেক।
 মেলবোর্নে শীত পড়ে গেছে এখন, ঘরে হিটার চালাতে হয় রাতে। বাইরে বিচ্ছিরি ঝুম বৃষ্টি। এর মাঝেই কদিন ধরে দেখি অফিস শেষ করে তিথি বসে বসে গিটারে তুলছে এই গান।

দেখলাম, শীতের শহরে বসে স্মৃতির ওপরে ভর করে শরতের এই গান শুনতে মন্দ লাগছে না!  
2 likes ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on April 19, 2022 17:24

December 14, 2021

মাসুদ রানা-র কপিরাইট এবং চুক্তিপত্রের গুরুত্ব

খবরে দেখলাম, প্রয়াত লেখক শেখ আব্দুল হাকিম-কে মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের স্বত্বাধিকারী বলে ঘোষণা করেছে দেশের কপিরাইট কর্তৃপক্ষ। 

মাসুদ রানা, কাজী আনোয়ার হোসেন এবং শেখ আব্দুল হাকিম, এই সবগুলো নামই বাংলাদেশী পাঠকদের আবেগের সাথে এমনভাবে জড়িত যে, এই মামলা, অভিযোগ এবং তা থেকে আসা সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক রকমের মতামত দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন শেখ আব্দুল হাকিম-ই বইগুলোর ন্যায্য দাবীদার, আবার কেউ বলছেন কাজী আনোয়ার হোসেন এগুলোর প্রকৃত স্বত্বাধিকারী। 

স্বল্পজ্ঞানে যতটুকু বুঝি, কপিরাইট কর্তৃপক্ষের ঘোষণায় কোনও ভুল নেই;  আইন অনুযায়ী এগুলোর স্বত্বাধিকারী শেখ আব্দুল হাকিম। আবার একই সাথে আমি মনে করি, এই বইগুলোর স্বত্ব আসলে কাজী আনোয়ার হোসেনের হওয়া উচিত, হাকিমের নয়।  

কেন? 

সহজ কথায়, যে কোনও সৃজনশীল কাজের কপিরাইট নিজে থেকেই তার স্রষ্টার কাছে থাকে। মানে, কেউ যদি একটা গান তৈরি করে, অথবা নিজের লেখা কোনও বই প্রকাশ করে, তাহলে সেটির কপিরাইট হবে সেই সঙ্গীতশিল্পী কিংবা লেখকের। এই স্বত্ব দাবী করার জন্যে আলাদা করে কোথাও নিবন্ধন করার দরকার পড়ে না। বইয়ে অথবা এলবামের কোথাও কোনও ঘোষণার দরকার হয় না, কোনও © চিহ্ন ব্যবহারেরও প্রয়োজন হয় না। 

এরকম ঘোষণা বা প্রমাণপত্রের দরকার তখনই পড়ে যখন কেউ তাঁর কাজের স্বত্ব অন্য কাউকে দিয়ে দেন। সেটা অর্থের বিনিময়ে হতে পারে, বা অন্য যে কোনও কারণে।

মাসুদ রানা-র ক্ষেত্রে আমরা জানি শেখ আব্দুল হাকিম ছায়ালেখক (গোস্টরাইটার) হিসেবে সেবা প্রকাশনী বা কাজী আনোয়ার হোসেনের পক্ষে এই বইগুলো লিখেছিলেন। 

গোস্টরাইটিং বিশ্বজুড়েই একটি বহুল প্রচলিত ব্যবস্থা। বহু প্রকাশনী এবং লেখক প্রতিনিয়ত ছায়ালেখকদের সাথে কাজ করেন। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, ছায়ালেখকদেরকে কাজের শুরুতে চুক্তিবদ্ধ হতে হয় এই মর্মে যে, এই বই লেখার বিনিময়ে তারা পারিশ্রমিক পাবেন তবে বইটির স্বত্ব তারা দাবী করতে পারবেন না। বইয়ের স্বত্বাধিকারী থাকবে প্রকাশনী বা সেই লেখক, যার হয়ে ছায়ালেখক  বইটি লিখছেন। 

এই সূত্র মেনে বলা যায়, এই বইগুলোর আসল স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেন। তিনি শেখ আব্দুল হাকিমকে তাঁর যথার্থ সম্মানী দিয়েছিলেন কিনা সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ, কপিরাইটের সাথে সম্পর্কিত নয়। 

তাহলে এখানে সমস্যা কোথায়? 

খবর থেকে যতটুকু বুঝলাম, সমস্যা হচ্ছে চুক্তিপত্রের অনুপস্থিতি। 

সেবা প্রকাশনী থেকে দাবি করা হচ্ছে কাজী আনোয়ার হোসেন এবং শেখ আব্দুল হাকিমের মধ্যে মৌখিক চুক্তি হয়েছিল। এই কথাটি অবিশ্বাস করার কোনও কারণ দেখি না, কারণ ১৯৬৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শেখ আব্দুল হাকিম সেবা-র হয়ে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে লিখে গেছেন। কিন্তু মৌখিক চুক্তি কপিরাইট আইনে কাজে লাগে না। ওই বইগুলোর প্রকৃত লেখক যে শেখ আব্দুল হাকিম, সেটা সেবা প্রকাশনীও অস্বীকার করছে না। এবং যেহেতু কাগজপত্রে তিনি স্বত্ব সেবা-কে দেননি, তাই কপিরাইট আইন বলছে এগুলো তাঁরই বই, সেবা-র নয়। 

সুতরাং, শেখ আব্দুল হাকিমের পক্ষে এই বইগুলোর স্বত্ব দাবী আসলে বেআইনি নয়। আবার এ কথা সত্যি হলেও আইনের ফাঁক ব্যবহার করে তাঁর এই দাবীর ন্যায্যতা এবং নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

অবশ্য আইন এবং মূল্যবোধের বিরোধ আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়, যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। 

এই ঘটনা আর কতদূর গড়াবে এখনও বুঝতে পারছি না। তবে আমি প্রাসঙ্গিক আরেকটি ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমাদের দেশের লেখক এবং ছায়ালেখকদের কাছে অনুরোধ থাকবে, তাঁরা যেন বই প্রকাশের আগেই তাঁদের প্রকাশকদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, চুক্তির প্রসঙ্গ হাজির হলেই দেশের লেখক-প্রকাশক দুই পক্ষই একটা অস্বস্তিতে ভোগেন, ভাসুরের নাম মুখে না নেয়ার মত অদ্ভুত আচরণ শুরু করেন। দয়া করে এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনি লেখক হলে অকুণ্ঠচিত্তে প্রকাশকের কাছে চুক্তিনামা চান। আপনি প্রকাশক হলে একটা সাধারণ চুক্তিনামার নমুনা তৈরি রাখুন; মনে রাখবেন এটা আপনার পেশাদারিত্বের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে। 

ভবিষ্যতের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা এড়াতে সঠিকভাবে দুই পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সংস্কৃতি আমাদের প্রকাশনা জগতে অবিলম্বে চালু হবে, এমনটাই আশা করি। 

1 like ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on December 14, 2021 02:43

November 14, 2021

আ ফেয়ারওয়েল টু গ্যাবো অ্যান্ড মার্সিডিস | রড্রিগো গার্সিয়া




গতকাল রাত জেগে রড্রিগো গার্সিয়া-র এই বইটা পড়ে ফেললাম। আ ফেয়ারওয়েল টু গ্যাবো অ্যান্ড মার্সিডিস।  


 ঠিক কী আশা করেছিলাম বইটা থেকে, জানি না। তবে পড়া শেষে মন খারাপ হলো বেশ। ঘড়িতে তখন চারটার বেশি বাজে, বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে শুধু শুধুই ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা হাঁটাহাঁটি করলাম কিছুক্ষণ। 

 সত্যি বলতে কী, সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের মৃত্যুর অভিজ্ঞতায়, পৃথিবীর আর সব আটপৌরে ব্যাপারের মতই, কোনও নতুনত্ব নেই আসলে।  

 রড্রিগো-র লেখার হাত ভালো। ওর দীর্ঘশ্বাসের সাথে তাই নিজেরগুলো মিলিয়ে নেয়া গেল। 
 মার্কেজের সাতাশি বছরের দীর্ঘ জীবন নিয়ে তেমন কিছু বলা নেই এই বইয়ে। শুধু তাঁর মৃত্যুর আগে-পরের কিছুদিনের গল্প এখানে। আর হঠাৎ হঠাৎ অল্প কিছু স্মৃতিচারণ।  

 সেটুকু থেকেই জানা গেলো তাঁর প্রতিদিনের লেখার রুটিন। সকাল নয়টা থেকে দুপুর আড়াইটা। একটা ঘোরের মধ্যে চলে যেতেন মার্কেজ, লেখার সময়টায়। ডাকলে ফিরে তাকাতেন, কিন্তু কিছু শুনতেন বলে মনে হতো না। প্রতিদিনের লেখা শেষে তিনি ঘোষণা দিতেন, রাশান কালজয়ী উপন্যাসগুলোর পরে সবচেয়ে দারুণ উপন্যাসটি তিনিই এখন লিখছেন বসে বসে। যদিও দিন বাড়তে বাড়তে তাঁর ভেতরে সংকোচ জমা হতে থাকতো, ঘুমুবার আগে লেখার মান সম্পর্কে দ্বিধা নিয়ে বিছানায় যেতেন। বলতেন, কালকের দিনটা খুব জরুরী, ঠিকঠাক না লেখা গেলে পুরোটাই ফেলে দিতে হবে। তারপরে আবার, পরদিন, দুপুরের খাবার খেতে খেতে হাসিমুখে সেই নিশ্চয়তা, নাহ, এ যাবৎ কালের সবচেয়ে দুর্দান্ত উপন্যাসটিই লিখছেন এখন তিনি।  

 তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাসের একটি চরিত্র, কর্নেল ব্যুন্ডিয়া-র মা, আরসুলা ইগুয়ারাঁ-র মতই মার্কেজেরও মৃত্যু হয়েছিল ইস্টারের আগের বৃহস্পতিবারে। গল্পে সেদিন একটা পাখির মৃত্যুর কথাও লিখেছিলেন মার্কেজ। আর কী আশ্চর্য, তাঁর নিজের মৃত্যুর দিনে তাঁর বসার ঘরের সোফায়ও খুঁজে পাওয়া গেলো একটা বিহ্বল পাখির মৃতদেহ।  

 বই শেষ করে হঠাৎই নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হলো। কারন সেখানে বর্ণিত বিদায়ের অংশটুকু কেবলই রড্রিগো-র, আমার নয়।  

 আমার কখনই মার্কেজকে বিদায় জানাতে হবে না, যে কোনও সময় হাত বাড়িয়ে টেনে নিয়ে যখন খুশি তাঁর পৃষ্ঠা ওলটানো যাবে, এ কথা ভেবে খুব স্বস্তি পেলাম মনে।

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on November 14, 2021 18:56

May 27, 2021

April 8, 2021

March 23, 2021

Tareq Nurul Hasan's Blog

Tareq Nurul Hasan
Tareq Nurul Hasan isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Tareq Nurul Hasan's blog with rss.