Tareq Nurul Hasan's Blog, page 6

January 30, 2023

ইন আদার ওয়ার্ডস | ঝুম্পা লাহিড়ী



ঝুম্পা লাহিড়ীর লেখা 'ইন আদার ওয়ার্ডস' খুব ইন্টারেস্টিং একটা বই। কারণ একটা না, বরং বেশ কয়েকটা।

যেমন, এই বইটি ঝুম্পা লিখেছেন ইটালিয়ানে। ইংরেজিতে নয়। আমি যে বইটি পড়েছি, সেটা ইটালিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন অ্যান গোল্ডস্টাইন। বইয়ের ভূমিকায় ঝুম্পা বলেছেন, অনুবাদের কাজটা তিনি নিজে না করে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন। কারণ নিজেই অনুবাদ করলে তাঁর হয়ত মনে হতো, মূল ইটালিয়ানের সীমাবদ্ধতাকে ইংরেজি অনুবাদে শুধরে ফেলা যাক। কিন্তু তিনি সেটা করতে চাননি।

হঠাৎ ইংরেজি ছেড়ে ইটালিয়ানে কেন লেখা শুরু করলেন তিনি, বিশেষ করে যখন এই ভাষায় তিনি পুলিৎজার বিজয়ী একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক, তার ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন নানা জায়গায়।

অভিবাসী পরিবারের সন্তান তিনি। ঘরের ভেতর বাংলা, আর বাইরে ইংরেজি চলত। নিজের দেশ আসলে কোলকাতা, ব্রিটেন নাকি আমেরিকা, এই দোলাচলের মাঝখানে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই একবার ইটালি ভ্রমণে গিয়ে তিনি ইটালি দেশটার, এবং এর ভাষার প্রেমে পড়ে যান। এবং সিদ্ধান্ত নেন, এতদিন নিজের দেশ বা ভাষা বলে মেনে নিতে হচ্ছে যেগুলোকে, সেসব বাদ দিয়ে তিনি সম্পূর্ণ নতুন এক ভাষাকে নিজের আপন করে নিবেন। তাই পরিবারসহ বসত গুটিয়ে চলে যান ইটালিতে, পাকাপাকিভাবে থাকতে। এবং একটা লম্বা সময় ধরে টানা ইটালিয়ানে লিখে যান শুধু, ইংরেজি বাদ দিয়ে।

এই বইটি তাঁর ইটালিয়ান শেখার বিভিন্ন পর্যায়ের অভিজ্ঞতা, কৌশল, এবং উপলব্ধি নিয়ে লেখা। খুব মজা লেগেছে পড়তে। নতুন ভাষা শিখে লেখা বলেই হয়ত খুব সহজ শব্দ আর বাক্যে লেখা। পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে, ক্লাস সিক্সে পড়া কোনও মানুষের দিনলিপি পড়ছি হয়ত। নতুন শব্দ খোঁজা, তারপর সেগুলোর অর্থ বুঝে নেয়ার যে ভ্রমণ, খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে সেগুলো। আসলে যে কোনো ভাষার নিয়মিত ব্যবহারকারীদের যে জিনিসগুলো চোখ এড়িয়ে যায়, নতুন করে শিখতে গেলে অনেক কিছুই চোখে পড়ে।

তবে বাহবা দিতে হয় আসলে। এভাবে ভাষা বদলে ফেলার সাহস করাটা। নিশ্চয়ই সহজ নয়। স্কুলের প্রথম ক্লাস থেকেই বাংলা আর ইংরেজি শিখে আসছি। এখনও, এই বুড়ো বয়সে এসেও ভুলভাল বাংলা লিখে যাচ্ছি। বানানও ভুল হয় এখনও। আর ইংরেজিতে কিছু লিখলে দুমিনিট সেদিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকি, ঠিক লিখলাম তো? আর ঝুম্পা সেখানে নতুন ভাষা শিখে সে ভাষায় সাহিত্যচর্চা করছেন, ভাবা যায়!

এই বইয়ের আরেকটা মজার দিক হলো, এর ছাপা। ডানের পাতায় ইংরেজি, আর তার পেছনে বামের পাতায় মূল ইটালিয়ান। এভাবেই ছাপা হয়েছে পুরো বই। মানে, কেউ চাইলে শুধু এই বই ব্যবহার করেও বেশ খানিকটা ইটালিয়ান শিখে ফেলতে পারবেন।

সব মিলিয়ে ভাল লেগেছে এই বইটা।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on January 30, 2023 12:33

January 14, 2023

আমার ইলিয়াস | হাসান আজিজুল হক

 


এই বইয়ের কম্বিনেশান এতই লোভনীয় যে বই দোকানের তাকে দেখামাত্রই কেনা হয়ে গেল।

প্রিয় লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে নিয়ে লিখেছেন আরেকজন পছন্দের লেখক হাসান আজিজুল হক।

হাসানের লেখা কয়েকটি প্রবন্ধ আর সাক্ষাৎকারের সংকলন এটা। সম্পাদনা করেছেন চন্দন আনোয়ার।

এরকম সংকলনের একটা দুর্বলতা হচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে লেখা বা বলা বলে প্রচুর পুনরাবৃত্তি থাকে। প্রসঙ্গের, বক্তব্যের। পাঠক হিসেবে তাই মাঝে মাঝে মনোযোগ হারাতে হয়। তবে এটা এড়ানোর উপায় নেই খুব একটা। বিশেষ করে এরকম ছোট আকারের বইয়ে।

ইলিয়াস নিয়ে নতুন কী জানলাম? খুব বেশি কিছু না। তবে হাসানের স্পষ্ট ও সাবলীল বয়ানে ইলিয়াসকে নিয়ে পড়তে খুব ভাল লেগেছে।

বিশেষ করে একটা ব্যাপার উল্লেখ করতে হয়। ইলিয়াসকে নিয়ে হাসান প্রথম লিখেছিলেন ইলিয়াসের প্রথম বই বের হবার পরেই। এটা জেনে ভাল লাগলো, নতুন একজন লেখকের প্রথম বই পড়ার পরে কতটা ভাল লাগায় এবং সম্ভাবনাময় মনে হওয়ায় তিনি সেটা করেছিলেন।

আর সেই প্রবন্ধটাই পড়তে বেশি ভাল লেগেছে আমার। সেই লেখাটায় ইলিয়াসের গল্প নিয়ে অনেক কাঁটাছেড়া আছে। এই ব্যাপারটা আমার জন্যে নতুন, কারণ ইলিয়াসের সব লেখা পড়ে ফেলায় তিনি আমার কাছে পরিপূর্ণ একজন লেখক, একজন মাস্টার স্টোরিটেলার। হাসান যখন ওই লেখাটা লিখেছিলেন, ইলিয়াস তখনও নতুন। মাত্র একটা গল্পগ্রন্থের লেখক কেবল তিনি। সুতরাং হাসানের সামনে রেফারেন্স শুধুই তাঁর প্রথম বই 'অন্য ঘরে অন্য স্বর'। সেই সময় জোর দিয়ে যেসব কথা তিনি লিখতে পেরেছিলেন, আরও কয়েকটা বই প্রকাশের পরে লেখাটা এরকম হতো বলে মনে হয় না আমার।

মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ এসেছে অনেকবার, ইলিয়াসের সাথে তুলনায়। আমি তার সাথে একমত। হাসান নি:সঙ্কোচে বলেছেন, বিশ্বের তাবৎ বড় মানের লেখকদের কাতারেই থাকবেন ইলিয়াস। আমিও এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।

ইলিয়াসকে নিয়ে পড়তে আগ্রহী এবং হাসানের গদ্য ভাল লাগে এমন পাঠকদের ভাল লাগবে বইটা।

পুনশ্চঃ ফ্রেমের ছবিটা আমার আঁকা, কয়েক বছর আগে। সুযোগ পেয়ে একটু ভাব নিলাম আরকি।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on January 14, 2023 12:30

January 9, 2023

দি লটারি অ্যান্ড আদার স্টোরিজ | শার্লি জ্যাকসন



দি লটারি- সম্ভবত ছোটগল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গল্পগুলির একটি।

নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে এটা প্রথমবার ছাপা হবার পরে পাঠকেরা হেইট মেইলের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল, ম্যাগাজিনকে এবং লেখিকাকেও। প্রচুর পাঠক সাবস্ক্রিপশান ক্যানসেল করেছিল এর পরে। অনেকে ব্যাখ্যা চেয়ে দিনের পর দিন চিঠি লিখে গেছে, 'লেখিকা এই গল্প দিয়ে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন?'

প্রথমবার এই গল্পটা যখন পড়ি এসব ইতিহাস না জেনেই পড়েছি। তাতে ভাল যেটা হয়েছিল, পড়ামাত্রই থমকে গিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিল, এটা কী পড়লাম!

বিভিন্ন গল্প বা উপন্যাস নিয়ে এরকম শোরগোল হওয়াটা অপ্রচলিত নয়, তবে সবগুলো যে সেসবের যোগ্য তা কিন্তু নয়। দি লটারি এই ক্ষেত্রে চমৎকার একটা ব্যাতিক্রম অবশ্যই। এক লাইনে বলতে গেলে, দি লটারি প্রথমবার পড়ার অভিজ্ঞতা অভাবনীয়। ঠিক যেন 'এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।'

ছাব্বিশটা গল্প রয়েছে এই বইয়ে। প্রতিটা গল্প পড়ি আর খানিক্ষণ চুপ করে বসে ভাবি, শার্লি জ্যাকসনের মাথার ভেতরে উঁকি মেরে যদি দেখতে পারতাম!

আমার আরেকটা খুব পছন্দের গল্প হচ্ছে চার্লস। কুইন্সল্যান্ডের গোল্ড কোস্টের থিম পার্কে গিয়ে ব্যাটম্যান নামে একটা রাইডে চড়েছিলাম। খুব ধীরে ধীরে অনেক উঁচুতে তুলে তারপর হঠাৎ করে ছেড়ে দেয়া হয়। কয়েক সেকেন্ডের জন্যে ফ্রি ফলের একটা অনুভূতি হয় তখন।

চার্লস গল্পের শেষটা পড়ে সেই রাইডের স্মৃতি চট করে মনে পড়েছিল আমার।

এই বইটা শেষ করার পরে ঠিক করেছিলাম শার্লি জ্যাকসনের সব লেখা পড়ে ফেলব।
মাঝ রাস্তায় আছি। 
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on January 09, 2023 12:27

January 2, 2023

সুরাইয়া | শিবব্রত বর্মন



বানিয়ালুলু পড়ে শিবব্রত বর্মনের লেখা নিয়ে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, সুরাইয়া শেষ করে বলতে পারি, সেই আগ্রহ এখনও বজায় রয়েছে।

গল্পগুলো এক কথায় অদ্ভুত। শিবব্রত বর্মনের নামের মলাটে এখানে খানিকটা মন দিয়ে খুঁজলে দেখা পাওয়া যাবে কয়েক চিমটি শার্লি জ্যাকসন, খানিকটা সত্যজিৎ আর কিছু কিছু হুমায়ুন আহমেদও বটে। আর হঠাৎই যেন উঁকি দিয়ে যায় অল্প অল্প ফ্ল্যানারি ও'কনর।

এরা সকলেই আমার এত প্রিয় যে, শিবব্রত বর্মনও পছন্দের লেখকের তালিকায় ঢুকে গেছেন অবলীলায়।

'সুরাইয়া' গল্পটাই সবচেয়ে ভাল লেগেছে। দুয়েকটি গল্প ভালমতন বুঝতে পারিনি অবশ্য, রেফারেন্স বা কনটেক্সট জানা না থাকায় হতে পারে সেটা। আরও ভাল লেগেছে 'মরিবার হল তার সাধ'। আর 'চেইন ক্যাফে'।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on January 02, 2023 12:24

December 31, 2022

তখন গল্পের তরে | রিফাত আনজুম পিয়া


 

নতুন বছরের শুরু হল রিফাত আনজুম পিয়া-র গল্পের বইটা দিয়ে।

রিফাতের লেখা প্রথম পড়ি ক্যাডেট কলেজ ব্লগে। সেখানে অনেক লেখার ভিড়ে ওর গল্পগুলো আলাদা করে চোখে পড়েছিলো। প্রথম বই বের হচ্ছে খোঁজ পেতেই লিস্টে যোগ করে নিয়েছিলাম, আর এবারে দেশে গিয়ে বাতিঘর থেকে কেনা হয়ে গেল বইটা- তখন গল্পের তরে।

সব মিলিয়ে ৭ টা গল্প বইয়ে। শুরুতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লেখা একটা ভূমিকাও রয়েছে।

গল্পগুলো পড়তে ভাল লেগেছে। সমকালীন এবং গতিময়। এক বসায় শেষ করে ফেলেছি বইটা। ভাল লেগেছে লেখার অকপট ভঙ্গিটাও। তবে, গতির ব্যাপারটায় একটা মনোটোনাস ভাব ছিল। কোথাও কোথাও রাশ টেনে ধরে খানিকটা ধীরে চললে হয়ত আরও ভাল লাগত।

রিফাতের নতুন গল্প পেলে আগ্রহ নিয়ে পড়ব অবশ্যই, এটুকু নিশ্চিন্তে বলা যায়।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on December 31, 2022 12:19

November 16, 2022

রেহানা মরিয়ম নূর

মুগ্ধ হলাম দেখে। ভালো মানের গল্প-উপন্যাসে এরকম চরিত্র ‘পড়ে’ অভ্যাস আছে আমাদের। এত স্পষ্ট, শক্তিশালী, মানবিক দোষ-গুন সম্পন্ন একজন পরিপূর্ণ মানুষ। কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্রে এরকম পরিপূর্ণ চরিত্র ‘দেখার’ অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই।

রেহানা আর বাঁধন মিলেমিশে একাকার। আর তাঁর মেয়ের চরিত্রে জাইমা। অসাধারণ অভিনয় এই দু’জনেরই। পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ-কে টুপি খোলা অভিনন্দন জানাই। এরকম একটা গল্প যার মাথা থেকে আসে, গল্পের ভেতরের ট্যুইস্ট, এরকম একটা চরিত্র। আর সেটাকে পর্দায় এভাবে তুলে নিয়ে আসা, একদম শেষ দৃশ্য পর্যন্ত, যেন আমাদের চারপাশের সময় কেউ থামিয়ে দিয়েছিল।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on November 16, 2022 04:25

September 25, 2022

জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা- শহীদুল জহির

 জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা- শহীদুল জহির

একচল্লিশ পৃষ্ঠার এই এক প্যারাগ্রাফের বিরতিহীন উপন্যাসিকায় ফর্ম নিয়ে চমৎকার সব কারুকার্য চোখে পড়ে। খুব অবলীলায় অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতে আসা-যাওয়া আছে, চরিত্রের পয়েন্ট অব ভিউ এর বদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু সেটা পাঠককে বাড়তি কোনও যন্ত্রণা না দিয়েই। ভাল গায়কেরা নাকি এক নি:শ্বাসে গাওয়া লাইনের মাঝে চোরা শ্বাস নিতে পারেন, শ্রোতারা সেটা বুঝতেও পারে না। সে কথাই মনে পড়লো আবার এটা পড়তে গিয়ে। কিন্তু গল্পের ফর্ম নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষার আসল সাফল্য, আমার মতে, সব কিছুর পরেও পাঠকের মনে থেকে যাবে গল্প, আর গল্পের চরিত্ররা। ফর্ম শেষমেশ কেবলই একটা উপায় বা মাধ্যম, কিন্তু সেটাই সব নয়। মানে, সবার উপরে গল্প সত্য, তাহার উপরে নাই। জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা পড়া শেষ হলে তাই এই এক প্যারাগ্রাফের বদলে মাথায় রয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ, আর সেই মহল্লার মানুষেরা। বদু মওলানা, আজিজ পাঠান, মোমেনা আর আব্দুল মজিদসহ আরও অনেকে। আর সম্ভবত আড়ালে কোথাও প্রায় না-দেখার মতই দাঁড়িয়ে থাকেন শহীদুল জহির।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 25, 2022 06:24

September 13, 2022

জীবন আমার বোন | মাহমুদুল হক

পড়া বই পুনর্পাঠের একটা আনন্দ আছে। চেনা দোকানে ঢুকে চা খাওয়ার মত আনন্দ। দোকানীর হাতের চায়ের স্বাদ আপনার জানা, তাই আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে পারবেন, এই নিশ্চয়তা জেনেই আপনি সেখানে যাবেন। পড়া বই হাতে তুলে নেয়ার অনুভূতিটাও এরকমই।

মাথায় কোনো কারণে জট পাকিয়ে গেলেও পড়া বইয়ের দ্বারস্থ হওয়া ভাল, বহুদিনের অভিজ্ঞতা আমাকে তা-ই শিখিয়েছে। এই সমস্ত বিবিধ কারণে আবার অনেক দিন বাদে পড়লাম মাহমুদুল হকের 'জীবন আমার বোন'।মনে আছে, এই বইটা পড়ার পরে জানতে পেরেছিলাম Boris Pasternak এর My Sister, Life নামের কবিতার বইটার কথা। তখন ভেবেছিলাম, এই দুই বইয়ের কোনও যোগসূত্র আছে কি? তার বেশ কিছুদিন পরে মাহমুদুল হকের এক সাক্ষাৎকারে জানতে পারলাম, তাঁর বইয়ের নামের পেছনে অবদান আছে সেই বইটার। মাহমুদুল হকের ভাষাকে ঠিক আটপৌরে বা সাবলীল বলা যায় না, তবে আমার ভাল লাগে। এই বইটা মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগের কয়েকটা দিনের গল্প মূলত। কয়েকজন তরুণ তরুণী, এক বা কয়েকটি পরিবার। আর একটা বোন। সব তরুণের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস ছিল না, সবার যুদ্ধে যাবার পেছনের কারণও এক ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়া অন্য উপন্যাসগুলো যে ধাঁচের, এটা ঠিক সেরকম নয়। পড়ে আবারও ভাল লাগল। লিখতে লিখতে পুনর্পাঠের আরেকটা দিক টের পেলাম। গল্প ছাড়িয়ে দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ হয় পরের পাঠে, চোখের সীমানায় ধরা পড়ে আরও বেশি কিছু, প্রথমবারে যেগুলো হয়ত চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। মন্দ নয় ব্যাপারটা।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 13, 2022 06:21

August 31, 2022

"হোয়াট উই টক অ্যাবাউট হোয়েন উই টক অ্যাবাউট লাভ-"



রেমন্ড কার্ভারের গল্পের চরিত্ররা সবাই এত বেশি সাধারণ, এত বেশি প্রতিদিনকার যে মাঝে মাঝে আয়না দেখার মত করে চমকে যেতে হয়।

পৃথিবীতে কোনো একজন লেখক এইরকম মানুষদের গল্পে নিয়ে এসেছেন, ভাবতে খুব ভাল লাগে। ওঁর মিনিমালিস্ট লেখার স্টাইলটা দারুণ। যদিও সেটার জন্যে এখন তাঁর এডিটরকে ক্রেডিট দেয়া হয় বেশি, সেটা অর্ধেক মেনে নিয়েও আমি যখন ওঁর চরিত্রগুলার কথা ভাবি, তখন মনে হয়, স্টাইল যেমনই হোক, কিন্তু এই চরিত্রদের নিয়ে লিখবার কথা তো তাঁর মাথা থেকেই এসেছে। সালমান রুশদী একবার বলেছিলেন, অনেকেই লোভে পড়ে ওভাবে লিখতে চেয়েছিল। ওরকম একটা ঘরে বসে থাকা দুইজন মানুষের গল্প, অথবা ওয়ার্কিং ক্লাস বা ব্রাত্য মানুষদের গল্প, কিন্তু কেউই তো আর কার্ভার হয়ে উঠতে পারেনি। এ কথা সত্যি। কার্ভারের লেখা পড়ে মনে হয়, এ আর এমনকি। এরকম তো সবাই লিখতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, এই ছোট ছোট বাক্যগুলো পরপর বসিয়ে দিয়ে এর ভেতরে কার্ভার যে প্রাণ আর শক্তি পুরে দেন, সেটা নকল করা সহজ কাজ নয়। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে, ওঁর গল্পের নামগুলোও যেন নিজেরাই একেকটা গল্প। হোয়্যার আ'ম কলিং ফ্রম, সো মাচ ওয়াটার সো ক্লোজ টু হোম, নোবডি সেইড এনিথিং, দে আর নট ইওর হাজবেন্ড, হোয়াট উই টক অ্যাবাউট হোয়েন উই টক অ্যাবাউট লাভ, হোয়াই ডোন্ট ইউ ডান্স। এরকম এক লাইনে একটা গল্প আঁটিয়ে ফেলার মত লেখক ক'জন আছেন? কার্ভারকে নিয়ে, তাঁর জীবন নিয়ে, তাঁর গল্পগুলো নিয়ে লিখব বলে দীর্ঘ একটা লেখা মাথায় নিয়ে অনেকদিন ধরে বসে আছি। কিন্তু সময়ের বড়ই টানাপোড়েন, আদৌ কখনও লেখা হয়ে উঠবে কিনা জানি না। হায়, জীবন এত ছোট ক্যানে?
2 likes ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on August 31, 2022 18:49

August 22, 2022

শর্ট ফিল্ম: মশারি



দিনের আলো স্ক্রিনের ওপরে পড়ে ঝাপসা দেখায়, তাই জানালার ব্লাইন্ড নামিয়ে দরজা আটকে তারপরে দেখা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কিছুদূর যেতেই পজ বাটনে চাপ দিয়ে দরজা-জানালা খুলে দিয়ে আবার বসতে হল। অন্ধকারে ভালোই ভয় পেয়েছি!

মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কল্যাণে দেখতে পারলাম নুহাশ হুমায়ুনের নির্মিত শর্ট ফিল্ম ‘মশারি’। এক শব্দে বলতে হয়, চমৎকার! একদম প্রথম দৃশ্য থেকেই আটকে রাখে স্ক্রিনে। মনে হচ্ছিল ডিস্টোপিয়ান কোনও জগতের গল্প। সুনেহরা বিনতে কামাল আর নাইরা অনরা সাইফ, অনবদ্য অভিনয় করেছেন দুজনেই। কী চমৎকার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দুজনের ভেতরের সম্পর্কটুকু! প্রতিটি দৃশ্য একেবারে সঠিক মাপ দিয়ে কাটা যেন, কোথাও কোনও বাহুল্য নেই। একদম শুরুতে দেখানো মৃত গরুর শিঙটিও শেষমেশ ‘চেখভের বন্দুক’ প্রমাণিত হয়েছে। পুরোটা সময় স্নায়ুর উপরে ভালোই চাপ পড়েছে। অক্টাভিয়া বাটলারের স্পিচ সাউন্ডস গল্পটা পড়ার সময় মনের ভেতর সারাক্ষণ একটা অস্বস্তি গুনগুন করছিল, সেরকম একটা অস্বস্তি যেন ফিরে এলো ‘মশারি’ দেখতে দেখতে। সবচেয়ে দারুণ খবর, এবারের ফেস্টিভ্যালে বেস্ট ফিকশান শর্ট ফিল্মের পুরস্কারও জিতে নিয়েছে এই ছবি। ফিল্মের দৈর্ঘ্য মাত্র কুড়ি মিনিটের মত, কিন্তু এই ফিল্ম দেখে আমাদের আশার দৈর্ঘ্য মাইলখানেক লম্বা হয়ে যেতে ক্ষতি নেই কোনও।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on August 22, 2022 17:47

Tareq Nurul Hasan's Blog

Tareq Nurul Hasan
Tareq Nurul Hasan isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Tareq Nurul Hasan's blog with rss.