Tareq Nurul Hasan's Blog, page 10
July 8, 2020
ব্যক্তিগত | উৎসব রায়
এই সময়ের বাঙালী পাঠক হওয়ার যন্ত্রণা হলো, ভাল কবিতা পড়তে চাইলে এখনো পুরনো প্রেমের কাছে ফিরে যাওয়ার মত করে বুককেসের পুরনো কবিতার বইগুলোকেই কাছে টেনে নিতে হয়।
সব চেনা নাম সেখানে, চেনা আশ্রয়, মনের ভেতরে যারা ঈশ্বরের জায়গা নিয়ে বসে আছেন।
এই আকালে, উৎসব রায়ের কবিতা পড়ে ভাল লাগল অনেক।
মনে হলো- নতুন কোনও কবি হয়তো আমাদের দিগন্তরেখায় ধীরে ধীরে উঁকি দিচ্ছেন- যার কবিতায় পুরনো ভালোলাগাগুলোকে নতুন করে পাওয়ার আশা জাগে।
July 4, 2020
সত্যজিৎকে নিয়ে | শঙ্করলাল ভট্টাচার্য
একটানা একটাই বই পড়ে যাওয়ার আনন্দ, অনেকদিন হলো, পাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠছিল না। সমস্যা আমারই, একই সঙ্গে কয়েকটা বই পড়তে থাকি। সেগুলোর অবস্থানও ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়; কোনোটা বিছানার পাশের সাইডটেবলে, তো কোনোটা কাজের টেবলের ওপরে। একটা ফোনে তো অন্যটা কিন্ডলে। যখন যেখানে পড়তে সুবিধা হয় আর কি।
এই অনভ্যাসের মধ্যেও এই বইটা টানা পড়ে শেষ করে ফেললাম। ছোট বই, লকডাউনের জন্যে বাসায় বন্দী- যখন যে রুমে গিয়েছি সাথে করে নিয়ে ঘুরেছি।
বইটির নাম 'সত্যজিৎকে নিয়ে'- কারণ হিসেবে এটাই আসলে যথেষ্ঠ। কিন্তু তার সঙ্গে লেখকের কৃতিত্ব না দিলে অন্যায় হবে। শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের অনেক গুণ, তিনি গল্প উপন্যাস লিখেন, আবার সাংবাদিক, সেই সাথে সংগীতজ্ঞও বটে।
এই বইটি মূলত সত্যজিতের কয়েকটি সাক্ষাৎকারের সংকলন, শঙ্করলালের নেয়া। এবং সেই সাথে কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হওয়া নিবন্ধও রয়েছে। বলা বাহুল্য সেগুলোও সত্যজিৎ সম্পর্কিত।
শঙ্করলালের বর্ণনায় সাংবাদিকসুলভ 'টু দ্য পয়েন্ট' টোনের বদলে বরং লেখকসুলভ একটা আরামদায়ক অলসতা খেয়াল করলাম। শুরুর লেখাটায় সত্যজিতের বসার ঘরে বসে তাঁর জন্যে অপেক্ষা করতে করতে কী কী চিন্তা মাথায় ঘুরছিল, সে সবেরও একটা সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
সত্যজিতের অন্যান্য সাক্ষাৎকার আগে যা পড়েছি, সেখানে তাঁর নিজের কাজ নিয়ে আলাপ ছিল বেশি। কিন্তু এই বইটিতে বেশি এসেছে সত্যজিতের নিজের পড়া বই বা দেখা সিনেমার প্রসঙ্গ। অনেকটা তাঁর নিজের গড়ে ওঠা বেশি ফোকাসে ছিল। কেমন করে তিনি মোজার্ট বা বেটোফেনের অনুরাগী হয়ে উঠলেন, ধীরে ধীরে- এবং তাঁর সংগীতপ্রেম নিয়ে দীর্ঘ আলাপ পড়া হলো সেই সুবাদে।
সাক্ষাৎকারের গৎবাঁধা ভাবটা অনুপস্থিত থাকাতেই বইটি পড়তে হয়তো খুব ভালো লাগছিলো।
প্রসঙ্গ এসেছে রবীন্দ্রনাথ এবং বিনোদবিহারীর। শান্তি নিকেতনে আড়াই বছর কাটিয়ে পড়াশোনা শেষ না করেই চলে এসেছিলেন, কারণ ফাইন আর্টিস্ট হবার মেধা তাঁর নেই, এরকমটা নাকি মনে হচ্ছিলো! ত্রিশ বছর বয়সে করেছেন 'পথের পাঁচালী'। আর তেত্রিশে 'দেবী'।
অল্প দু'তিন লাইনে উঠে এসেছে তাঁর গল্প লেখার প্রক্রিয়াও। কেমন করে গল্প আর চরিত্র নিয়ে অনেক ভাবেন। ভাবতে ভাবতে সেগুলো মাথায় খুব করে জেঁকে বসলে সারাদিন ধরে টানা লিখে গল্প শেষ করেন, প্রায়শই সেটা হয় এক দিনেই।
আর ভীষণ ঘরকুনো ছিলেন। নিজের কাজের ঘরেই বসে বসে লেখা আর আঁকার সব কাজ করতেন তিনি। সিনেমার কাজ বাদে খুব একটা বাইরে বেরুতেন না।
বইটিতে 'ফেলুদার দাদা-দিদিরা' নামে একটা লেখা আছে। শঙ্করলাল এটিতে একই সাথে হোমস, মার্পল, পোয়ারো এবং মেগ্রে- জনপ্রিয় এই গোয়েন্দা চরিত্রগুলোর সমান্তরালে ফেলুদা-কে রেখে একটা তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। খুব মজা লাগলো পড়ে।
সত্যজিৎ রায়-কে নিয়ে আগ্রহীরা খানিকটা ভিন্ন কিছু পড়তে চাইলে এই বইটি সুপারিশ করবো আমি।
June 17, 2020
হিরণ্ময় কথকতা - মাহমুদুল হক-এর সাক্ষাৎকার সংকলন
অনেক বছর আগে মাহমুদুল হক-কে প্রথম যখন পড়ি, তখন লিখেছিলাম, তিনি একজন সাপুড়ে লেখক; লেখার মন্ত্রে তিনি পাঠককে বশ করে ফেলতে পারেন। তারপর থেকে যত পড়ে গেছি, আমার সেই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। ইলিয়াসের পরে মাহমুদুল হকই আমার সবচেয়ে প্রিয় বলা যায়, কালো বরফ আজও আমার কাছে একটা জাদুর বাক্স।
হিরণ্ময় কথকতা - এই জাদুকর লেখকের অনেকগুলো সাক্ষাৎকারের সংকলন। সম্পাদনা করেছেন- আহমাদ মোস্তফা কামাল।
একটানা পড়ে শেষ করলাম বইটা। এর আগে বিশদ কোন সাক্ষাৎকার পড়িনি তেমন, তাই আগ্রহের কমতি ছিল না আমার। লেখকের শুরুর দিকের লেখার কথা, তাঁর শৈশব, লেখক-বন্ধুদের গল্প, অনেক কিছুই উঠে এসেছে আলাপচারিতায়। শহীদ সাবের, শহীদ কাদরীর কথা এসেছে অনেকবার। এসেছে মানিক, ওয়ালিউল্লাহ, বিনয় মজুমদার, সুনীল, শক্তি, শ্যামল, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমানের কথা।
যেহেতু বিভিন্ন সময়ে অনেকের নেয়া সাক্ষাৎকার, তাই কিছু পুনরাবৃত্তি এসেছে, কিন্তু এটুকু বোধগম্য।
প্রায় সব প্রশ্নকারীর একটা বিশেষ ঝোঁক ছিল লেখকের লম্বা সময় লেখালেখি থেকে বিরত থাকার কারণ জানতে। সেটা নিয়ে শেষমেশ কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল।
তাঁর প্রতিটি বইয়ের আশ্চর্য সুন্দর সব নাম! নিরাপদ তন্দ্রা, কালো বরফ, মাটির জাহাজ। প্রতিদিন একটি রুমাল, জীবন আমার বোন। অপ্রকাশিত একটা উপন্যাসের নাম ছিল 'দ্রৌপদীর আকাশে পাখি'। আরেকটার নাম 'ব্যাধ ও নীল দুপুর'!
পেন্ডুলাম পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত, সুন্দর প্রচ্ছদ ও বাঁধাইয়ের দুশো চল্লিশ পৃষ্ঠার বই এটি। মাহমুদুল হক-কে নিয়ে আগ্রহ রয়েছে যাদের, তাঁদের জন্যে অবশ্যপাঠ্য।
June 12, 2020
প্রার্থনা-কাব্য
প্রার্থনা-কাব্য
----
দুঃখ আমাকে ছেড়ে
যেন কখনো না চলে যায়।
দুঃখ মানেই সৃষ্টির অপার শক্তি,
তোমার চেয়ে ভালো তা কে জানে হায়।
হে হিংসুটে প্রভু,
আমার সকল সুখ তুমি নিয়ো;
তার বদলে দুঃখগুলো,
আমায় রাখতে দিয়ো।
--
তারেক নূরুল হাসান
১১/০৬/২০
May 28, 2020
আমি যেখানে আছি -
আমি যেখানে আছি-
---------------------
আমি কিন্তু এখানে এখন নেই,
বরং রয়েছি সুদূর অতীতে,
এই ঘরের কোণেই চুপটি দাঁড়িয়ে আছি,
কিন্তু কাঁপছি বহু আগের শীতে।
আমার কোনও আগামী কাল নেই-
বর্তমানেও আমার দারুণ ভয়,
শান্তি দেয় শুধুই গতকাল,
অতীতটাকেই আপন মনে হয়।
একলা পথে পিছিয়ে গিয়ে হাঁটি,
তোমরা আমায় খুঁজোনা প্লিজ আর,
দিঘীর জলে গা ডুবিয়ে আছি,
নাক ভাসিয়ে দিচ্ছি ডুব সাঁতার।
তুমি দেখছ যাকে, ভাবছ আমি,
কিন্তু আমি এখন এখানে নেই।
অতীত থেকে আলো এসে ছুঁলে,
একটা গাঢ় ছায়া তো পড়বেই।
- তারেক নূরুল হাসান
০৯/০৫/২০২০
May 9, 2020
একজন গৃহপালিত প্রাণী
একজন গৃহপালিত প্রাণী
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা নির্বিবাদী গৃহপালিত প্রাণীটির নাম- মা।
এরা তেমন কোন রা করে না,
জোর-জুলুমের প্রতিবাদ করে না।
খেতে পেলে খায়,
আবার না খেয়েও সহাস্যে তাঁদের দিন চলে যায়।
সবার সব কিছু ঠিকমতন হচ্ছে কি না,
সেদিকে খুব খেয়াল তাঁদের।
শুধু নিজের বেলায় মস্ত মনভুলো।
হয়ত ওষুধ খেতে ভুলে যায়, হয়ত নিজের পাতের খাবার পড়ে থাকে।
কোনো কারণে চোখের কোণ ভিজে গেলে,
চট করে তা শুকিয়ে নিতে অবশ্য ভুল হয় না।
আমাদের সবার বাড়িতেই একটা করে এই প্রাণী থাকে।
আমরা তাই আলাদা করে এদের অস্তিত্ব টের পাই না।
বাড়ির গরু মুরগী হাঁস এবং মা- সবাই থাকে যার যার নিজের মতন।
আসা যাওয়ার পথের পাশে, নিজের মতন।
কোনো কোনো বাড়ির মা - হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যায়।
অসুখে ভুগে, বা এমনিই, হয়তো মনের খেয়ালে,
সে হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়।
বাড়ির সবার খুউব অসুবিধে হয় তখন।
কেউ বিরক্ত হয় মা নেই বলে,
কারও কারও অভ্যাসের ছন্দপতন হয়।
সবাই খুব করে গালমন্দ করে, তাঁর অনুপস্থিতিকে।
শুধু বাড়ির সব গরু মুরগী হাঁস,
ঘরের টেবল বা চেয়ারগুলো,
শোবার ঘরের আলনা,
এবং জানালার কম্পমান পর্দাগুলো-
অবাক চোখে
মাঝে মাঝে
আকাশের দিকে চেয়ে থাকে।
শুধু তারাই জানে, এই বাড়ির মা-টি আসলে মানুষ ছিল।
-
তারেক নূরুল হাসান।
১০ মে ২০২০।
April 2, 2020
কোরালাইন- নিল গেইম্যান
কোরালাইন অনেকটা যেন আমাদের চেনা জানা সেই এলিসের গল্প; কিন্তু ওয়ান্ডারল্যান্ড নয়, তার বদলে যেন সে হাজির হয় দেয়ালের ওপাশে সমান্তরালে বয়ে চলা ভয়ের কোনো জগতে। লাইব্রেরি থেকে ধার করে আনা বইটা কয়েক পাতা পড়েই হারিয়ে ফেলি। সপ্তা-দু'এক পরে আবার খুঁজেও পাই, বিশালবপু কয়েকটা বইয়ের নিচে চাপা পড়ে ছিল। কিন্তু ততদিনে ফেরত দেয়ার সময় চলে এসেছে। ধারের সময় বাড়ানো যেত, কিন্তু আর কেউ এটাকে বুক করে ফেলায় সেটাও পারা গেল না। শেষমেশ না পড়েই ফেরত দিয়ে এলাম। এই নিদারুণ সঙ্কটে উদ্ধারকারী হিসেবে আবির্ভুত হলো Borrowbox। সেখানে খুঁজতেই কোরালাইনের ইবুক এবং অডিওবুক দুই সংস্করণই পেয়ে গেলাম। বিস্তারিত পড়তে গিয়ে দেখি, অডিওবুকে কণ্ঠ দিয়েছেন লেখক নিজেই। এই দেখে আর লোভ সামলানো গেল না, শোনা শুরু করলাম অডিওবুক। নিল গেইম্যান লেখেন যেমন, পড়েনও চমৎকার। তাঁর আর সব গুণাবলীর তালিকায় কন্ঠ-অভিনেতাও যুক্ত আছে জানা গেলো। অন্য অনেক অডিওবুকের মত একেবারেই বোরিং লাগলো না এটা, শুনে যাওয়া গেল তরতর করে। গল্পে অনেক বেশি নতুনত্ব আছে, ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। পরিচিত ভয়ের গল্পেরই খানিকটা ভিন্ন রূপ সেটা। অথবা অন্যভাবে বললে, ছোট্ট একটি বাচ্চা মেয়ের কাল্পনিক জগতের ভীতিকর রূপ এটি। যে ভাবেই বলি, এটুকু বলতেই হবে, এই রূপান্তরটুকু খুবই আকর্ষনীয় এবং আগ্রহোদ্দীপক হয়েছে। নিলের লেখনীকে এ ক্ষেত্রে বিশেষ নম্বর দিতেই হবে। একটা সাধারণ রূপকথা হিসেবে বইটা পড়া যায়, চাইলে গভীর কোন মানবিক সঙ্কটের খোঁজ চালানো যায়, আবার শিশুসাহিত্যের ইতিহাস ঘেঁটে এর জায়গা কোথায় হবে তা নিয়ে গবেষণাও চালানো যায়।আমি শুধু একটা কথাই নির্দ্বিধায় বলতে পারি, নিলের লেখা এত চমৎকার যে, বেশ কিছু জায়গায় সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছি!
পাতা ঝরার আগের গল্প- নজমুল আলবাব
কী আমাদের সবচেয়ে ভালো লাগে?
স্মৃতি।
যখন তখন সকালে দুপুরে বিকেলে আমরা স্মৃতি হাতড়াই। গালে হাত দিয়ে বসে শৈশবের কথা ভাবি, চায়ে চুমুক দিতে দিতে গল্প করি সেই মায়াবী সময় নিয়ে।
অপু ভাইয়ের গল্পগুলো একেকটা স্মৃতির টুকরো যেন।
ছোট ছোট ছবির মতন সেগুলো। সে ছবিতে মা থাকে, বাবা থাকে, তোমার আমার গল্প থাকে, ট্রেন থাকে, একটা জানালা থাকে, অভিমানী দুপুর থাকে। ক্রসফায়ার থাকে, ঝাঁ চকচকে আর্মি অফিসারের হাতে চড় খাওয়া মুখ লুকোনো বাবা থাকে। কালো-রঙা বোন থাকে, মায়ের সাথে মিথ্যে বলা থাকে।
সেই স্মৃতিগুলো সবই আমার বড় ভালো লাগে। সবগুলো ছবির ভেতরে মনোযোগে বা অবহেলায় যেভাবেই তাকাই না কেন, সে ছবির গল্পগুলো জোনাকির মত জ্বলজ্বল করতে থাকে।
অপু ভাইয়ের লেখায় এত মায়া এত মায়া! যেনবা 'কালো বরফ' ঝিকমিকিয়ে ওঠে, যেনবা 'অক্ষয় মালবেরি' উঁকি দিয়ে দিয়ে যায়। কলমের ভেতরে যেন মায়ার কালি পোরা তাঁর, পাতার পর পাতায় মায়া ঝরে ঝরে যায়। পড়তে গিয়ে কেমন আবেশে ডুবে যাই, ভেসে উঠি, আবার ডুবি।
খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে বইটা। সুন্দর প্রচ্ছদ, সুন্দর ছাপা। এই সময়ের অন্যান্য বাংলা বইগুলোর মত ভুল বানানে ভর্তি নয়, দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি।
অপু ভাই-র কলম দীর্ঘজীবি হোক, তাঁর মায়ার দোয়াত সমুদ্রে মিলাক।
March 27, 2020
সাবধানে থেকো-
March 3, 2020
দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী - আর্নেস্ট হেমিঙওয়ে
চেনা বামুনের পৈতে লাগে না। ক্লাসিক লেখাগুলো নিয়ে তাই খুব বেশি লিখতে মন চায় না, তারচেয়ে বরং নতুন কোনো লেখকের বই, অথবা পুরাতন হলেও কম পরিচিত কোনো বই নিয়ে লেখা শ্রেয় মনে করি, অন্তত সেই বইটা নতুন কারও কাছে যদি পৌঁছয়, এই আশায়। কিন্তু সেদিন রাত দুইটায় যখন পড়া শেষ হলো আবার, এই বইটা নিয়ে দু'কলম লিখতে ইচ্ছা হলো। বহু বছর আগে কোনো একটা বাংলা অনুবাদে পড়েছিলাম এই বইটা। সেবা-র ছিল কি? জানি না। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রেরও হতে পারে। সেই অল্প বয়সে খুব বেশি দাগ কাটেনি মনে। এখন বুঝতে পারি, দাগ পড়ার মত শক্ত হয়ে ওঠেনি তখনও আমার শিশু-মন। এতগুলো বছর পরে হেমিঙওয়ের আরেকটা না-পড়া বই, দি মোভেবল ফিস্ট, পড়তে শুরু করতেই, হঠাৎ মনে হলো, দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী আরেকবার পড়া যাক। তাই আবার টেনে নেয়া। পড়তে গিয়ে অনেক অনেকবার চোখ বুজে দৃশ্যগুলো দেখে নিয়েছি। সান্তিয়াগোকে মাঝ সমুদ্রে ধ্যানে বসে থাকা গৌতম বুদ্ধের মতই মনে হয়ে যেত প্রায়, যদি না হঠাৎ হঠাৎ ইয়াঙ্কিদের খেলার ফল জানার জন্যে তার আকুতি না দেখতাম। খুব সহজ সরল ভাষা, তবু কয়েকটা জায়গায় হোঁচট খেয়েছি পড়তে পড়তে। একই প্যারায় বুড়ো, আটক মার্লিন আর আক্রমণোদ্যত হাঙর, সবার জন্যে একটাই সর্বনাম বরাদ্দ রেখেছেন হেমিঙওয়ে, He! এত সাদামাটা একটা গল্প, কিন্তু যতই শেষের দিকে এগুতে থাকি, আস্তে আস্তে টের পাই, গল্প আসলে সেটা নয় যেটা দেখা যাচ্ছে সহজে। এই যে একের পর এক মুশকিলে পড়তে থাকা, হার্পুন এবং শেষ সম্বল একমাত্র ছুরি হারিয়ে ফেলা, ক্ষত বিক্ষত হাত, তবু লড়াই করে যাওয়া সমুদ্রের পাঠানো দানবদের সাথে। এইখানে এসে যেন জীবনানন্দের হাজার বছর ধরে হেঁটে চলা মানুষের দেখা হয়ে যায় চুরাশি দিন মাছ না ধরতে পাড়া বুড়ো সান্তিয়াগোর।বুড়োর সঙ্গে সঙ্গে যেন উচ্চস্বরে স্বগতোক্তি করে চলেছে পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জন্মানো প্রতিটি আদমসন্তান, "হার মেনে নিতে জন্মায়নি মানুষ"। মানুষ এসেছে লড়াই করে জিততে। বইয়ের পাতা থেকে এই কথাগুলো ছেঁকে চোখের সামনে তুলে আনতে হলে হয়তো জীবনের কিছু পোড় খাওয়া বছর পেরুতে হয় প্রত্যেককে। তা না হলে সম্ভবত এই শব্দগুলো দেখতে পাওয়া যায় না ঠিকঠাক। একটা অদ্ভুত সুন্দর তৈলচিত্রের মত পুরো গল্পটা, আর শেষ লাইনটায় যেন হেমিঙওয়ে তুলির টানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে দিলেন ছবিটায়। এমনকি শেষ বাক্যের মাস্টার ও'হেনরিরও হিংসা হবে নিশ্চয় এই লাইনটা পড়ে। আমাদের যার যার জন্যে বরাদ্দ ডিঙি নৌকাটায় করে জীবন সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে, ঘুমঘোরে কখনও কখনও আমরা সবাই হয়তো এইভাবেই স্বপ্নে দেখবো বুড়ো সান্তিয়াগোকে।
Tareq Nurul Hasan's Blog
- Tareq Nurul Hasan's profile
- 21 followers

