Tareq Nurul Hasan's Blog, page 3
November 5, 2024
কিছু এর রেখে যাই | আলী আহমাদ রুশদী
গ্রামের মাদ্রাসা থেকে পাশ করা একজন তরুণ পড়তে চান অর্থনীতি নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তীব্র ইচ্ছাও ছিলো তাঁর, কিন্তু এখানে এসে শুনলেন ভালো ফলাফল থাকা সত্বেও অর্থনীতি পড়ার সুযোগ পাবেন না, শিক্ষকেরা তাঁকে ভর্তি হতে বললেন ইসলামিক স্টাডিজে। তিনি ভাবলেন, ইসলামিক স্টাডিজ নতুন কিছু শেখাতে পারবে না তাঁকে, তিনি অর্থনীতিই পড়বেন। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছায় মুলতুবি দিয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ার জন্যে তিনি ভর্তি হয়ে গেলেন ঢাকা কলেজে।
এর পরেও এরকম দৃঢ়তার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় তাঁকে। পড়াশোনা শেষে চাকরিজীবনে নানা প্রতিবন্ধকতা সামনে এসেছে, কিন্তু কোথাও শর্টকাট রাস্তায় হাঁটেননি, বরং সততার সাথে সেগুলো পেরিয়ে এসেছেন।
প্রথম সন্তানের মৃত্যু অথবা মায়ের চলে যাওয়ার বিবরণ পড়তে গিয়ে বিষণ্ণতায় ডুবে গেছি। টাংগাইল সাদাত কলেজের প্রিন্সিপাল থাকার সময় যেভাবে ছাত্র, শিক্ষক এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপ সামলেছেন, সেসবের বর্ণনা কোনো থ্রিলারের চেয়ে কম নয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নতুন দেশ গড়তে লন্ডন থেকে এক কথায় চলে আসা, দেশে ফিরে স্বপ্নভঙ্গ, এসবই যেন ইতিহাসের পৌনপুনিকতার কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। চরম সিরিয়াস সময়ে, বাইরে ছাত্রদের 'মুজিবের গদিতে আগুন জ্বালো এক সাথে' শুনে, তাজউদ্দীন আহমেদ যখন তাঁকে নিচুস্বরে বলেন, 'গদি পুড়িয়ে কী লাভ, না পোড়ালে বরং পরে যারা আসবে তারা বসতে পারবে'-- এই জায়গাটা পড়ে খুব হেসেছি।
বিদেশের পড়াশোনা ও কাজ করার অভিজ্ঞতাকে শুধু নিজের জীবনের সিঁড়ি হিসেবে নয়, বাংলাদেশের কাজে লাগানো যায় কিনা তা নিয়ে ভেবেছেন সারা জীবন, বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের জন্যে অস্ট্রেলিয়ায় প্রচলিত হেক্স প্রকল্পের একটা রূপ বাংলাদেশে নেয়া গেলে খুব ভালো হতো, এরকমটা প্রায়ই ভাবি আমি, এই বইয়ে তার উল্লেখ দেখে ভালো লাগলো। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, অথবা রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে এরকম বেশ কিছু মণি-মুক্তা ছড়ানো আছে এই বইয়ে। এ কারণেই আমার মনে হলো, বাংলাভাষী তরুণ-তরুণীদের কাছে 'কিছু এর রেখে যাই' ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পারলে খুব ভালো হতো। আমি অন্তত আমার পরিচিতদের এই বইটি রেকমেন্ড করবো।
একটা পরিপূর্ণ জীবনের ছবি যেন দেখতে পেলাম। সত্যি কথা বলতে গেলে, পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিলো সুলিখিত কোনো ফিকশন পড়ছি। অন্য অনেক সুখপাঠ্য স্মৃতিকথা পড়েছি, ভালোও লেগেছে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, আলী আহমাদ রুশদীর 'কিছু এর রেখে যাই'কে আরও বেশি আপনার, আরও বেশি কাছের মনে হলো আমার কাছে।
October 31, 2024
আমাদের চিঠিযুগ কুউউ ঝিকঝিক | ইমতিয়ার শামীম
আমাদের সমস্ত গা-জুড়ে বড় বড় শহরের গন্ধ। আমাদের গল্প কবিতা গানে কেবলই নগরের নুয়ে পড়া আলাপ। অথচ, তার মধ্যেও এই অদ্ভুত গল্পটার কথককে বইয়ের ভাঁজ খুলে একটা মৃত পাতাকে সাক্ষী রেখে খানিকক্ষণ কেঁদে নিতে দেখে খুব অবাক হই আমি। কোন ভুলে যাওয়া এক মফস্বলের এক বিশাল চওড়া রাস্তার ধারে একটা ভাঙা চায়ের দোকানে আমাদের যে অস্তিত্ব ডোবানো, মনে পড়ে যায় তার কথা। যেনবা টাইম মেশিনে চড়ে বহু আগের কোনো বিষণ্ণ কিশোরের লুকিয়ে রাখা ডায়েরি পড়লাম বসে বসে। মনে পড়লো, রঙ্গন গাছের ঝাঁকে, অথবা কুয়াশায় ডুবে যাওয়া ফুটপাতে এরকম কত কত ডাকঘর, আর তাতে লুকিয়ে থাকা কত কত চিঠি খুঁজে বেড়ানো কয়েকজন কিশোরের কথা।
October 14, 2024
ব্ল্যাক ডগ | নিল গেইম্যান
ব্ল্যাক ডগ নতুন গল্প নয়, নিল গেইম্যানের ট্রিগার ওয়ার্নিং নামের সংকলনে আছে গল্পটা। এই বইয়ে শুধু ব্ল্যাক ডগ আলাদা করে ছাপা, সাথে ইলাস্ট্রেশন। আর এই অলংকরণের লোভে পড়েই মূলত কেনা হলো বইটা। আমার কাছে এই ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে। মানে সংকলন থেকে নিয়ে বড় একটা গল্পকে ছবিসহ আলাদা বই হিসেবে প্রকাশের চিন্তাটা। নিলের লেখা পড়তে গেলে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। যেকোনো বই পড়ার সময়, আমাদের মাথার ভেতরে একজন কেউ বইটা শব্দ করে পড়তে থাকে। আমরা যখন মনে মনে পড়ি, আমরা আসলে সেই শব্দটা শুনতে থাকি। সাধারণত সেই কণ্ঠ হয় আমাদের নিজের (সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে)। কিন্তু আমি খেয়াল করে দেখেছি, গেইম্যানের লেখা যখন পড়ি, তখন মাথার ভেতর পড়ে চলা কণ্ঠটা আমার থাকে না, সেটা হয়ে যায় নিলের গলা। ব্যাপারটা প্রায় ভৌতিকই বলা যায়! তবে এর পেছনে কারণ কী তা ভেবে বের করেছি। অডিওবুক এমনিতে আমার পছন্দ নয়, বিশেষ করে ফিকশনের জন্যে। নন-ফিকশন বা পডকাস্ট অবশ্য শুনতে পারি। তবে কোরালাইন দিয়ে নিলের নিজের কণ্ঠের অডিওবুকের সাথে পরিচয় হবার পরে, তাঁর ন্যারেশনের ভক্ত হয়ে গেছি। ব্ল্যাক ডগের অডিওবুক লোকাল লাইব্রেরি থেকে ধার নেয়া যাবে দেখলাম। ভাবছি সেটাও শুনে ফেলবো।
October 11, 2024
গ্রামায়নের ইতিকথা | ইমতিয়ার শামীম
উপন্যাস ভেবে পড়া শুরু করি, শুরুর তিন অধ্যায় পড়া হয়ে গেলে প্রথম চোখে পড়ে যে নতুন চরিত্ররা এসে হাজির হচ্ছে প্রতিবার। চরিত্র নতুন, কিন্তু গল্পগুলো যেন অভিন্ন মানুষদের, কেমন একের ওপর আরেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে এলিয়ে বিছিয়ে আছে। বইয়ের শেষ পাতায় গিয়ে জানলাম ছয়টা ভিন্ন গল্প এগুলো। এবারে ফ্ল্যাপে পড়া কথাটার মানে বুঝতে পারলাম, 'উপন্যাসের আদলে...কথকতার এক নতুন বিন্যাস...,যা একই সাথে ছোটগল্প আবার উপন্যাসের বিশাল মাত্রাকেও ছুঁয়ে যায়।'
'আমরা হেঁটেছি যারা'-র পরে আমার পড়া ইমতিয়ার শামীমের লেখা মাত্রই দ্বিতীয় বই এটা, কিন্তু সর্বশেষ যে নয়, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। পাঠক হিসেবে ব্যাপারটা ভীষণ আনন্দেরও বটে।
October 7, 2024
মির্জা গালিবের গজল
অনুবাদক জাভেদ হুসেনের লেখা ভূমিকা গালিবের জন্যে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। কবি মির্জা গালিবকে সেখানে খুব কাছের, খুব চেনা একজন মানুষ বলে মনে হয়। অনেকগুলি উর্দু আর অল্প কিছু ফারসি গজলের অনুবাদ রয়েছে এই বইয়ে। পড়তে গিয়ে টের পেলাম, উর্দু আসলে কানে শুনেই অভ্যস্ত আমি। বাংলা হরফে উর্দু পড়তে যাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। এমনকি উচ্চারণ করে পড়ার চেষ্টা করলাম যখন, তখন সেগুলোকে চেনা কোনো ভাষা বলে মনে না হওয়ায় ক্ষান্ত দিলাম দ্রুত।বরং বাংলা অনুবাদগুলো মন দিয়ে পড়া হলো বেশি। কী সুন্দর, সহজ, সরল অনুভব সেগুলোয়। কখনও গালিব সেখানে অনুরোধ করছে, মরে গেলে যেন প্রিয়ার গলিতে তাকে কবর দেয়া না হয়। লোকে গালিবকে দেখতে এসে তার প্রিয়ার বাড়ির খোঁজ পেয়ে যাবে, এটা তার মরার পরেও সহ্য হবে না। অথবা অন্য এক জায়গায় গালিব খোদাকে বলছে, কেন তুমি আমাকে স্বর্গ থেকে বিদায় করে দিলে? করেছই যখন, দুনিয়াতে অনেক কাজ আমার, এখন অপেক্ষা করো, শেষ না করে আসছি না। মৃত্যু বিলম্বিত করার কী দারুণ বুদ্ধি! প্রথমা প্রকাশনীর বইগুলোয় যত্ন টের পাওয়া যায়। সুন্দর বাঁধাই, প্রচ্ছদ, ভেতরের অলংকরণ...। এরকম বই হাতে নিয়ে পড়তে ভালো লাগে।
October 4, 2024
গাইলে বৈরাগীর গীত গাইও
ডালে বসে থাকা চাতকী ময়নাকে আসগর আলী বলে, গাইতেই যদি হয় তো বৈরাগীর গীত গাও। প্রথম শুনিয়েছিলেন তপন চৌধুরী, প্রায় এক কোটি বছর আগে। সেদিন ইউটিউবে খুঁজতেই সেই অসাধারণ অ্যালবামটা পেয়ে গেলাম– মনে করো তুমি আমি। কোটি বছর আগে শুনলেও দেখা গেলো, সবগুলো গানের অন্তত প্রথম কিছু লাইন এখনও মাথা থেকে বিদায় নেয়নি। বসে বসে পুরো অ্যালবাম টানা শোনা হলো আরেকবার। ময়নার গানটা খুব প্রিয় ছিলো, যদিও পুরোটা মনে ছিলো না। এবারে শুনে টের পেলাম, শুরুতে যাকে বৈরাগী বলা হচ্ছে, সে কোনো অ্যাবস্ট্রাক্ট চরিত্র নয়। "কহে হীন আসগর আলী, সময় হইলে পরে, মাধব বৈরাগীর সনে, পরান বন্ধুয়ার সনে, মিলাই দিবো তোরে।" মাধব বৈরাগী নামের একজন মানুষ আসগর আলীর প্রাণের বন্ধু। বন্ধুর অপেক্ষায় থেকে অস্থির হয়ে ময়নাকে জিজ্ঞেস করে আসগর আলী, পূব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ কোন দিক দিয়ে আসবে তাঁর বন্ধু, এখুনি জানানো হোক তাঁকে। আর বন্ধু যতক্ষণ নেই, ততক্ষণ ময়না যেন তাঁর বন্ধুর গানই গাইতে থাকে। এক কোটি বছর পরে গানটা নতুন করে আবার ভালো লাগলো!
September 24, 2024
থার্ড পারসন
বর্ডারস, বুক ডিপোজিটরির পরে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় বই কেনার সাইট বুকটোপিয়ারও বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছিলো। ডিজিডিরেক্ট নামে একটা কোম্পানি হঠাৎ কিনে নেয়ায় এবারের মত বেঁচে গেলো তারা, আবার বিক্রি শুরু হবে শীঘ্রই।
এই দেশে বইয়ের দোকানের এই দুরবস্থা দেখে সচেতন নাগরিক হিসেবে দু:খবিলাসী একটা স্ট্যাটাস ড্রাফট করার পরে জনৈক পাঠক হিসেব করে দেখে, বাংলা বইগুলো বাদে তার কেনা শেষ ২০টা বইয়ের মধ্যে মাত্র একটা সে কিনেছে বুকটোপিয়া থেকে, বাকি সব অ্যামাজন থেকে কেনা। তার মানে, স্থানীয় এই বই দোকানটির নেই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার পেছনে তারও ভূমিকা আছে। দু:খবিলাসী ড্রাফট মুছে ফেলে বুদ্ধিমানের মত এবার সে থার্ড পার্সনে একটা স্ট্যাটাস লিখে ফেললো।August 16, 2024
অ্যানিমেল ফার্ম | জর্জ অরওয়েল
‘দ্য নভেল কিউর’ নামে ইন্টারেস্টিং একটা বই আছে। বইয়ের লেখকেরা বলছেন, মানুষের মন স্বভাবতই বিভিন্ন রকম অবস্থায় থাকে। কখনও আনন্দে থাকে, কখনও বিক্ষুব্ধ, কখনও দু:খে আকুল, কখনও চিন্তাক্লিষ্ট। তো, এই পরিস্থিতির সাথে মানানসই কিছু বই রয়েছে, যেগুলো পড়লে -লেখকদের অভিমত- অস্থির মন কিছুটা শান্ত হবে, আনন্দ দীর্ঘায়িত হবে, আর বেদনায় থাকলে সেটা উপশম হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। এই দাবি মিথ্যা নয়, বই মানুষ কিছুটা এসব কারণেই পড়ে। তবে এরকম ওষুধের প্রেসক্রিপশনের মত বই সাজেশনের ব্যাপারটা অপ্রচলিত। আবার অপ্রচলিত হলেও, আমার ধারণা এরকম একটা অদৃশ্য তালিকা প্রায় সব পাঠকেরই থাকে। মন খারাপ হলে বহু পাঠকই জেনে বা না-জেনে ঠিকই নির্দিষ্ট কোনো বই টেনে নিয়ে পড়া শুরু করে দেন।
মনে মনে এরকম একটা তালিকা আমার নিজেরও রয়েছে। দ্য নভেল কিউর-এ বইয়ের নাম দেয়া আছে ৭৫১টা, আমার তালিকা অবশ্য তার তুলনায় অনেক ছোট। যাই হোক, গত জুলাই ও অগাস্টের প্রায় নির্ঘুম রাত ও অস্থির দিনগুলোর পরে স্বভাবতই সেই লিস্ট থেকে আবারও পড়া হলো বহু পুরোনো 'অ্যানিমেল ফার্ম'। এ বইটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ইতিহাস নাকি ঘুরে ঘুরে আসে। আর কিছু বই ইতিহাসের চেয়েও নিখুঁত, তারা অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদের মত অলঙ্ঘনীয়, ইতিহাসই বরং তাদের অনুসরণ করে। ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে বসে আমি তাই ইতিহাস পাঠের মতো করে পড়তে থাকি অ্যানিমেল ফার্মে মেজরের বিপ্লবের গান আর নেপোলিয়নের রাজ্য দখলের গল্প। স্নোবলের বীর থেকে দেশদ্রোহী হয়ে যাওয়া বড় বেশি চেনা লাগে। এদিকে নিজের জীবন দিয়ে সকলের উপকার করা বক্সার, ক্ষমতাসীনদের মুখপাত্র তোষামোদকারী স্কুইলার, এরাও আমাদের অচেনা নয়। এবং হঠাৎ করেই 'অল অ্যানিমেলস আর ইকুয়ালের' বদলে কিছু অ্যানিমেলের মোর ইকুয়াল হয়ে যাওয়ার মধ্যেও নতুনত্ব কিছু থাকে না। নতুনত্ব নেই, তবে দীর্ঘশ্বাস হয়তো আছে, হয়তো আক্ষেপও, এই দু:সময়ে বই কেউ পড়ে না। সামনে আরও যুগের পর যুগ এমন করেই আমরা কেউ বক্সার, কেউ বেঞ্জামিন, কেউ মেজর বা নেপোলিয়নের ভূমিকা পালন করে যাবো, কখনও বিপ্লব কখনও স্বাধীনতা উদযাপন করবো; তবু কেউ জানতে পারবো না, একটা অ্যানিমেল ফার্মের কিছু বন্দী আমরা শুধু।June 30, 2024
সিসিফাস শ্রম | আনিসুর রহমান
নয়টি ছোটগল্প রয়েছে এই বইয়ে। তবে, বইটা শেষ করে মনে হলো, লেখার ধরনের কারণে সেগুলোকে আলাদা আলাদা গল্প হিসেবে চিনে নেওয়া সহজ হয় না। অ্যাবস্ট্রাক্ট টোনে লেখা গদ্য, সাথে উচ্চমাত্রার মেটাফর। অনেক, অনেকগুলো দৃশ্যকল্প দেখতে পাওয়া যায় বইটা পড়তে পড়তে। আলাদা করে সেগুলো বেশ সুন্দর, যত্ন নিয়ে 'আঁকা' বোঝা যায়। তবে ছবিগুলোর শক্ত কোনো মালা গেঁথে ওঠা থেকে কিছুটা যেন দূরত্ব রয়ে গেছে। যে-জগতের কথা বলেছেন লেখক, সেটি আমাদের চেনা নাকি অচেনা, এই দ্বিধা কাটে না সহজে। কিছু উপমার ব্যবহার চমকে দিয়েছে, একদম নতুন এই দৃশ্যগুলো। ভালো লেগেছে সেই নতুনত্ব। তবে পাঠক হিসেবে চরিত্রগুলোর একটা দৈহিক কাঠামো এঁকে নেয়া সহজ হয়নি। বিষণ্ণ দার্শনিকদের মনোলগ ছাড়িয়ে যদি কিছু গল্পের শরীর খুঁজে পেতাম, হয়ত আরও ভালো লাগতো।
June 21, 2024
আর জনমে | লুনা রুশদী
সকালের অফিসগামী ট্রেনে বসে পড়া শুরু করলাম লুনা রুশদীর 'আর জনমে'। রেলগাড়ির মতই গতিময়, ঝরঝরে লেখা। ভাল লেগেছে পড়তে। কোথাও আটকালো না একদম। প্রথম দেখাতেই তাবাসসুমকে চেনা গেলো। মেলবোর্নের শহরের রাস্তায়, বিভিন্ন অফিসে, শান্ত-নিরিবিলি সাবার্বের বিভিন্ন বাড়িতে থাকেন এরকম মানুষেরা। লুনা রুশদীর সাবলীল বর্ণনায় খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে তাদের গল্প। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংলাপগুলো বাস্তব লেগেছে, কথার পিঠে বলা তাদের কথাগুলো, উপভোগ্য।
ফিকশন-পাঠক হিশেবে একটাই অভিযোগ, বাস্তব জগতের অনেক বেশি রেফারেন্সের কারণে গল্পে ফিকশন কমে গেছে কিছু জায়গায়। বরং ডকু ফিকশন ধরনের ভাব এসেছে একটা সব মিলে।
কিছু কিছু অনুভূতির বর্ণনা খুব সুন্দর দিয়েছেন লেখক। অনেক দিনের প্রতিবেশীর বাড়ি ধীরে ধীরে নাই হয়ে যাওয়া, বা তৃষ্ণার্ত পাখিটার ভাঙা ঠোঁট, অথবা যেখানে লিখেছেন, মানুষের অস্তিত্বের বাতাস হয়ে যাওয়ার কথা, এগুলোর গভীরতা অনেক। চাচাত বোনেদের সাথে সম্পর্কের রসায়ন, চাচীর সাথেও, ছবির মত পরিষ্কার এসেছে। এই শহরের নানা জায়গার নাম, ট্রাম-বাস-ট্রেন, সব মিলে খুব চেনা পরিচিত লেগেছে বইটার সবকিছু।
বইয়ের ছবিটা আমার অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে তোলা। পেছনে দেখা যাচ্ছে ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট স্টেশনের আবছায়া অবয়ব। এই বইয়ের জন্যে এর চেয়ে ভাল কম্পোজিশন আর মাথায় এল না।
Tareq Nurul Hasan's Blog
- Tareq Nurul Hasan's profile
- 21 followers

