Tareq Nurul Hasan's Blog, page 4

June 10, 2024

সুনীল এবং কয়েকজন | স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়



অনেক দেরিতে হলেও এ-বছর বইমেলায় অর্ডার করা বইয়ের কয়েকটি অবশেষে হাতে এসে পৌঁছেছে। আর সেগুলোর মধ্য থেকে সবার আগে পড়ে শেষ করলাম এই বইটি।

'সুনীল গাঙ্গুলীর দিস্তে দিস্তে লেখা'র সাথে পরিচয় থাকলে, তাঁর জীবনের অনেক কিছুই পাঠকের জানা থাকার কথা। তারপরেও খুব আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়লাম। মিষ্টি কিছু স্মৃতিচারণ, কিছুটা এলোমেলো, এবং অনেকটা অসম্পূর্ণই বলা যায়। তবু ভালো লাগলো পড়ে যেতে, একটা ঘষা কাচের মধ্য দিয়ে যেন দেখে যাওয়া, সুনীল ও তাঁর আশেপাশের কিছু মানুষকে। তাঁদের প্রথম পরিচয়, সংসার শুরুর প্রথমদিকের দিনগুলো, নানা ভূমিকায় সুনীলের অবিরাম লেখা চালিয়ে যাওয়ার গল্প কিছুটা জানা গেলো স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রায় মৃদুভাষী কলমে।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ছাপা হয়েছিল বইয়ের লেখাগুলো, সেগুলোর তারিখ দেয়া থাকলে ভাল হতো। বইয়ের মাঝে অনেকগুলো দেখা না-দেখা ছবি ছাপা আছে, তবে সেগুলোর ক্যাপশন নেই। পুরো বইয়ের ছাপা ও বাঁধাইয়ের যত্নের সাথে, সম্পাদনার এই খামতিটুকু বেমানান।

তবে একদম শেষে এসে লেখকের পুত্র শৌভিকের ছোট্ট লেখাটা অপ্রত্যাশিত ছিল, 'বাবা' সুনীলের টুকরো কিন্তু খুব আপন একটা ছবিও পাওয়া গেলো তাতে।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on June 10, 2024 20:59

May 31, 2024

নাইন স্টোরিজ | জে ডি স্যালিঞ্জার



ফ্লু ভ্যাকসিনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কেমিস্ট শপে নিজের নাম লিখিয়ে মাঝের একটা আইলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। ফ্লু ভ্যাকসিন নামে নিরীহ শোনালেও আদতে তা নয়; প্রতিবারই আমাকে অন্তত দিন চারেক ভোগায়। খাল কেটে কুমির আনার মত, ভ্যাকসিন নিয়ে অবশ্যম্ভাবী জ্বর ডেকে আনি আমি।


অপেক্ষা করতে করতে ফার্মাসিস্টদের সন্দেহের চোখে দেখছি। আজ কার হাত দিয়ে এই দুর্যোগ ডেকে আনছি নিজের ওপরে, বোঝার চেষ্টা করছি।

কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য এই গুরুদায়িত্ব থেকে নিজেকে অব্যাহতি দিলাম। হাতে ছিল নাইন স্টোরিজ, মুখ ডুবিয়ে পড়া শুরু করে দিলাম সেটা। গভীর মনোযোগে পড়ছি, হঠাৎ খেয়াল করে দেখি ফার্মাসিস্ট এসে আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ ছোট করে অবাক হয়ে তাকালাম। কী ব্যাপার?

ফার্মাসিস্ট হাসিমুখে জানালো, সে নাকি আমার নাম ধরে ডেকেছে কাউন্টার থেকে, আমি শুনতে পাইনি। আমার ভ্যাকসিন নেয়ার পালা এখন। আমরা উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলাম। সে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, এটা কি সেই স্যালিঞ্জার, ক্যাচার ইন দ্য রাই?

আমার মুখ সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। হ্যাঁ হ্যাঁ, সে-ই। তুমি পড়েছ সেটা?

তারপরের কিছু সময় আমরা হোল্ডেন কফিল্ড, তার বোন, আর তার বন্ধুদের নিয়ে আলাপ করলাম। উৎসাহ কার বেশি, আলাপের তোড়ে সেটা বোঝা গেল না। মিনিট দশেক পরে আমার মনে হলো ভ্যাকসিন কেন, ফার্মাসিস্ট আমাকে এখন সার্জারির টেবলে তুলতে চাইলেও আমি আপত্তি করবো না!

নাইন স্টোরিজের গল্প নিয়েও কথা হলো। বলতে বলতেই আমি প্রথমবারের মত খেয়াল করলাম, স্যালিঞ্জারের গল্পে কমবয়সী চরিত্র অনেক, আর তারা খুব গুরুত্বও পায় প্লটে। ছোটদের মনস্তত্ত্ব বেশ ভাল ফুটিয়ে তোলেন স্যালিঞ্জার। যেমন ধরা যাক 'আ পারফেক্ট ডে ফর ব্যানানাফিশ', অথবা 'জাস্ট বিফোর দ্য ওয়ার উইদ দি এস্কিমোস' গল্পগুলো। আবার অনেক গল্পেই তিনি তাদের সারল্য ব্যবহার করে সামলাতে চেয়েছেন জগতের জটিল কোনো সমস্যা, যেমন 'ডাউন অ্যাট দ্য ডিঙ্গি' বা 'দ্য লাফিং ম্যান' গল্পগুলো।

যাই হোক, জ্বর তবু এসেছিলো, জে ডি স্যালিঞ্জারও সেটা আটকাতে পারেননি। See less
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on May 31, 2024 20:56

May 23, 2024

আমি এবং আমরা -

 
আমি এবং আমরা - 
আজ ঘুম ভেঙে হঠাৎ 
তার কথা মনে পড়ে গেলো। আর তাই মন খারাপ হলো খুব। 
খানিক বাদে, অন্য একটা মন খারাপের তলায়, 
চাপা পড়ে গেলো সেটা। 
এভাবেই একটা মন খারাপ, 
আরেকটা মন খারাপের হাত থেকে 
আমাকে আগলে আগলে রাখে। 

২৪/০৫/২৪ 
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on May 23, 2024 19:03

April 20, 2024

সংলাপ | লাতিন আমেরিকান উপন্যাস নিয়ে | অনুবাদ - রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী


 

দৃশ্যটা মাথায় আনতে অবশ্য বেশি বেগ পেতে হলো না। একজন ভদ্রলোক হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। আর সামনে দাঁড়ানো অপর ভদ্রলোক সপাটে তাঁকে ঘুষি চালালেন। 

ক্রিস রক আর উইল স্মিথের কল্যাণে এই দৃশ্য অবশ্য আমাদেরকে কল্পনা করে নিতে হয় না আর। 

যদিও আমি যে দৃশ্যের কথা বলছি, সেটা প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা। এই দৃশ্যের মানুষদের একজন, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস—দ্য প্যারিস রিভিউ-এ যেভাবে বলা—দুহাত মেলে বন্ধুকে আলিঙ্গনের জন্যে সামনে যেতেই তাঁর বন্ধু মারিয়ো বার্গাস ইয়োসা তাঁর ডান চোখ বরাবর মারলেন এক ঘুষি। মার্কেসের চশমা ভেঙ্গে একাকার, সাথে চোখে পড়লো কালশিটে। তাঁদের বন্ধুত্বের ইতিও ঘটলো সেখানেই। আর ঘুষির কারণ? এটা আর না বলি, ইচ্ছে থাকলে নিজেই খুঁজে নিন। :) 


এই ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার বছর আটেক আগে, দুই বন্ধু পেরুর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আলাপে বসেছিলেন, তৎকালীন ল্যাটিন অ্যামেরিকার সাহিত্য নিয়ে কথা বলার জন্যে। সেটিরই অনুবাদ এই বইটা, স্প্যানিশ থেকে সরাসরি, করেছেন রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী। 

খুব ছোট একটা বই। শনিবারের দুপুরে প্রায় এক বসাতেই পড়ে ফেললাম। যদিও শুরুতে দীর্ঘ সব বাক্যে দাঁত বসাতে কিছু সমস্যা হচ্ছিলো, কিন্তু কয়েক পৃষ্ঠা যেতেই দেখি কখন যেন উঠে গিয়ে পেন্সিল নিয়ে এসে পাতায় পাতায় দাগ বসানো শুরু করে দিয়েছি! 

খুব ভালো লাগলো, সেই সময়ের তরুণ ও জনপ্রিয় দুই লেখকের আলাপ। খুব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে তখনকার সময়ে হঠাৎ করে ল্যাটিন অ্যামেরিকার উপন্যাসগুলির জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানের গল্প। এই আলাপে বার্গাস ইয়োসা ছিলেন মূলত প্রশ্নকারী, আর মার্কেস উত্তরদাতা, তবু অনেকগুলো প্রসঙ্গেই দুজনেরই পরিষ্কার মতামত জানা গেলো। বারবারই বোর্হেসের কথা এলো। কেমন করে বোর্হেসকে তেমন পছন্দ করেন না মার্কেস, কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই তাঁর লেখা পড়তেন গল্প বলার  কৌশল জানতে। মার্কেসের বিখ্যাত সব বইয়ের পেছনের গল্প এলো কিছুটা। পড়ে অবাক হলাম, নিঃসঙ্গতার একশ বছর তিনি লেখা শুরু করেছিলেন ষোল বছর বয়সেই। কিন্তু লিখতে গিয়ে তাঁর মনে হলো, এই উপন্যাসটা ঠিকঠাক বলার জন্যে যে ভাষা প্রয়োজন, সেটা তাঁর কব্জায় নেই। অনেকটা তাঁর প্রস্তুতির জন্যেই নাকি প্রথম চারটি বই লিখেছিলেন। তারপরেই নাকি তিনি বুঝতে পারলেন কেমন হবে সেই উপন্যাস বলার কৌশল। 

সবচেয়ে ভালো লাগলো তাঁর এই কথাটা, যা লিখছি সেটা আগে নিজে বিশ্বাস করতে হবে, তবেই তা বিশ্বাসযোগ্য হবে পাঠকের। 

মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠার এই বইটা প্রকাশ করেছে শুদ্ধস্বর, ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারি মাসে। 

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on April 20, 2024 00:58

April 4, 2024

আমরা হেঁটেছি যারা | ইমতিয়ার শামীম


 

মুক্তিযুদ্ধের একদম গা ঘেঁষে এই উপন্যাসের শুরু, আর তার পরের আড়াই দশক জুড়ে এর সীমানা। পাতার পর পাতা ইমতিয়ার শামীম শীতের কুয়াশার মত ঘোরলাগা ভাষায় বলে গেছেন একটা দেশের গল্প।

চাইলে সেটাকে একটা মানুষের গল্প বলেও ভাবা যেতে পারে, তথাগত যার নাম। কিন্তু আমি আসলে তথাগত-র চোখ দিয়ে দেখে নিলাম এমন এক দেশ, যার সাথে পত্রিকার সাদাকালো পাতা আর সেই ছেলেবেলার দূরত্বে দাঁড়িয়ে প্রায় ঝাপসা হয়ে আসা ছবির মতন চাদরের নিচে নিষিদ্ধ বই লুকোনো কিছু মানুষের হতাশ চোখে ছায়া পড়ে যে বাংলাদেশের, দেখলাম সেই দেশটাকে।

২০০০ সালে প্রথম প্রকাশ এই বইয়ের, ২০২৪ এ এসেও নিরুত্তাপ পাঠকের মাথায় কেমন আগুনের ওম জ্বেলে দিলো। চুক আর গেকের সাথে জন ডেনভার মিলেমিশে গেছে এই উপন্যাসে। দলবল নিয়ে ঘোরা তিমুরের সাথে বব ডিলান, আবার তাদের সকলের সাথে মিশে গেছে একাগ্রচিত্তে মানুষের খেত পাহারা দেয়া অবিচল কাকতাড়ুয়া।

বইটা পড়া শেষ হতেই একেবারে হুড়মুড় করে হাজারখানেক ছবি এসে মাথায় ঢুকে গেল একসাথে। তারপর নির্বাক সেই ছবিগুলো সব একত্রে এমনভাবে কথা বলা শুরু করলো যে আমি কেমন নি:সাড় হয়ে বসে রইলাম অনেকক্ষণ। হাজার বছর ধরে পথ হাঁটতে থাকা মানুষদের জীবনকে এই ১১৯ পৃষ্ঠার একটা বইয়ে যেভাবে নিয়ে এলেন লেখক, তার জন্যে তাঁকে মনে থাকবে অনেকদিন।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on April 04, 2024 20:40

March 29, 2024

আনটিল অগাস্ট | গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস


 

এ মাসেই প্রকাশিত হয়েছে লাতিন আমেরিকার নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের শেষ প্রকাশিত উপন্যাস আনটিল অগাস্ট। এ লেখকের অন্য উপন্যাসের সাপেক্ষে এ উপন্যাসটি কেমন, এর বিষয়বস্তুইবা কী?


প্রথম আলো লিঙ্ক: https://www.prothomalo.com/onnoalo/n7...

নটিল অগাস্ট বইটা পড়া শুরু করতেই গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের সেই চিরচেনা ‘সিগনেচার স্টাইল’ চোখে পড়ল। দীর্ঘ দীর্ঘ সব বাক্য, আর প্রতিটা বাক্যেই অনেক অনেক সব তথ্য। কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই ফেলনা বা অতিরিক্ত মনে হয় না এবং সেই একই রকম করে বলার ভঙ্গিতে কোনো আড়ষ্টতা নেই, যেনবা গল্প বলছেন না তিনি, বরং সাংবাদিক হিসেবে পত্রিকার প্রতিবেদন লিখছেন। উদাহরণ হিসেবে এই বাক্যটিকে ধরা যাক, ‘গ্রামের মানুষদের দারিদ্র্য দেখে তার হতাশ লাগল, দুটো পামগাছের মধ্যে একটা হ্যামক ঝুলিয়ে তারা সেখানে ঘুমায়; যদিও এই গ্রামটি এই দেশের এক কবি ও গালভারী সিনেটরের জন্মভূমি, যে কিনা দেশের প্রায় রাষ্ট্রপতিই হয়ে বসেছিল।’ অথবা এই বাক্য, ‘তার ছেচল্লিশ বছর জীবৎকালের সাতাশ বছরই সে এই পুরুষের সঙ্গে একটি সুখী বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছে; যাকে সে ভালোবাসে এবং পুরুষটিও তাকে, যাকে সে বিয়ে করেছিল নিজের আর্টস অ্যান্ড লেটারস ডিগ্রি শেষ করার আগেই, তখনো সে কুমারী ছিল এবং বিয়ের আগে সে কোনো সম্পর্কেও জড়ায়নি।’


২০২৪ সালে এসে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘সদ্য প্রকাশিত’ একটা বই পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে বসেছি। ব্যাপারটা আসলে চমকপ্রদ একটা ঘটনাই বটে। আরও বছরখানেক পেছনে ফিরে গিয়ে যদি তাকাই, তখন এ রকম কেউ বললে সেটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল না। অথচ তাঁর মৃত্যুর প্রায় আট বছর বাদে সত্যিই প্রকাশিত হলো আনটিল অগাস্ট নামের এই বই; তাঁর শেষ প্রকাশিত উপন্যাস। এখন পর্যন্ত অবশ্যই; যদি না আবার কোনো এক জাদু(বাস্তবতা)র বলে নতুন কিছু চলে আসে আমাদের সামনে! অবশ্য তাঁর সন্তানদের ভাষ্যমতে, সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কারণ, তাঁদের কাছে গ্যাবোর আর কোনো অপ্রকাশিত লেখা জমা নেই।


মার্কেসের এর আগের কোনো বই আমাকে ‘প্রি-অর্ডার’ করে কিনতে হয়নি, অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে এটাও পাঠক হিসেবে আমার জন্য নতুন ঘটনাই। আর অপেক্ষাটাও বেশ উত্তেজনাকর ছিল। অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে বইটা হাতে পেয়েই তাই পড়তে শুরু করে দিলাম। আনটিল অগাস্ট–এর প্রচ্ছদে একে বলা হয়েছে ‘দ্য লস্ট নভেল’। আমি কেন যেন সেটিকে পড়লাম ‘দ্য লাস্ট নভেল’! তবে ‘উপন্যাস’ হিসেবে বইটি বিজ্ঞাপিত হলেও এর শব্দসংখ্যা ২৫ হাজারের আশপাশে হবে বলেই মনে হলো। সেই হিসাবে এটাকে ‘নভেলা’ বলাই সংগত, ‘নভেল’ নয়। আর পুরোপুরি ‘হারানো’ বলাটাও কি সঠিক দাবি করা হলো? বরং ‘পরিত্যক্ত’ বললেই হয়তো বেশি ভালো হয়। কারণ, গ্যাবো এটা প্রকাশ করতে চাননি। সে রকমই নির্দেশ ছিল তাঁর, কিন্তু সন্তানদের ইচ্ছায় অবশেষে আলোর মুখ দেখল এই উপন্যাসিকা। বাবার ইচ্ছার সঙ্গে এটা বিশ্বাসঘাতকতা হলো কি না, তা নিয়ে হয়তো আরও বহুদিন তর্ক চলবে সাহিত্যের দুনিয়ায়। তবে পাঠক হিসেবে গার্সিয়া মার্কেসের নতুন একটা বই হাতে নেওয়ার সুযোগ কতজনই–বা হারাতে চাইবেন!


কিন্তু সত্যি কথা যদি বলি, বইয়ের প্রথম দুই পরিচ্ছেদ পড়া শেষে বেশ অনেকটা হতাশই হলাম। মনে হলো, একটা বেশ সুলিখিত ও উচ্চমানের কোনো ‘ইরোটিকা’ পড়ছি। অবাক হয়ে খুঁজতে লাগলাম, এর কারণ কী? ভাবতে গিয়ে টের পেলাম, সম্ভবত এর পেছনে বড় একটা কারণ হলো, এই উপন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র একটিই। এমনকি এই লেখকের ছোট্ট আরেকটি বই নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল–এর প্রটাগনিস্ট একজন হলেও সেখানে গুরুত্বসহকারে আরও কিছু চরিত্রের উপস্থিতি ছিল। চট করে মনে পড়ছে, কর্নেলের স্ত্রী, তাদের মৃত সন্তান এবং পাড়া-প্রতিবেশী কয়েকজনের কথা। আর দ্বিতীয় ‘প্রটাগনিস্ট’ মোরগটার কথাও। কিন্তু আনটিল অগাস্ট–এ সে রকম কোনো ভিড় নেই চরিত্রদের। প্রটাগনিস্ট হিসেবে অ্যানা মাগডালেনা বাখ একাই সর্বেসর্বা। তার স্বামী ও পরিবারের কথা এসেছে, তার মৃত মায়ের কথাও, তবে তাদের উপস্থিতি যেন অনেকটাই সেই গ্রামের পামগাছগুলোর ছায়ার মতো, যারা ঠিক গাঢ় কোনো রেখাপাত করে না; না বইয়ের পাতায়, না পাঠকের মনে।


তবে বইয়ের শেষে এসে হতাশা কেটে গেছে সহজেই। টের পাচ্ছিলাম, মায়েস্ত্রো তাঁর মাস্টার-স্ট্রোক দিতে চলেছেন শিগগিরই। আর শেষ যখন করি, আয়নায় না তাকিয়েও নিজের হাসিমুখ যেন স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমি।

বইয়ের শুরুতে মার্কেসের দুই সন্তানের একটা ভূমিকা আছে। আর শেষে রয়েছে সেই সম্পাদকের বক্তব্য, যাঁর হাত ধরে এই পরিত্যক্ত উপন্যাস জীবন পেল। এ দুটোই বেশ গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। সেই সঙ্গে উপরি হিসেবে ছিল উপন্যাসের মূল পাণ্ডুলিপির চারটি পাতার ছবি।


কোনো ‘স্পয়লার’ না দিয়ে তবু সচেতন পাঠকদের বলে রাখতে চাই, নতুন আরেকটা ‘মাস্টারপিস’ পড়ার আশায় এই উপন্যাস খুলে বসলে সেই আশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা খানিকটা কমই থাকবে বলে মনে হয়। কারণ, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের অন্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে যে বিপুল আয়োজন, তা এখানে অনুপস্থিত। পাশাপাশি এটাও বলতে হবে যে মার্কেসকে খুঁজলে এই ক্ষীণকায় উপন্যাসেও তাঁকে খুব ভালোমতোই পাওয়া যাবে। আর পাঠক হিসেবে শেষমেশ এটাই হয়তো আমার সান্ত্বনা।

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on March 29, 2024 20:36

March 20, 2024

জবরখাকি | বর্ণালী সাহা



 'জবরখাকি' বইয়ের ভাষাভঙ্গি মুগ্ধ হওয়ার মতো। লেখক প্রচুর বাংলা শব্দ ব্যবহার করেছেন দেখে শান্তি পেলাম। ঘুরে ফিরে অল্প কিছু শব্দেই অনুভূতি প্রকাশের প্রচলিত যে স্টাইল, সেটাকে শব্দ-কানা রোগ বলা যায়। আর এখনকার শব্দ-কানা লেখকেরা বিভিন্ন অনুভূতিকে একটা নাম দিয়েই কাজ চালিয়ে দেন। ভালো লাগলো দেখে যে এই সময়ের লেখক হয়েও বর্ণালী সেই দোষ থেকে মুক্ত। যেকোনো অনুভূতি প্রকাশের জন্যে ঠিকঠাক শব্দ খুঁজে নিয়ে বাক্যে বসিয়েছেন তিনি, কিন্তু তা করতে গিয়ে লেখার গতি বা ফ্লো একটুও কমাননি। সবগুলো গল্পই তরতর করে পড়ে ফেলা গেছে। আবার সেই ভাষাভঙ্গিও সব গল্পে একইরকম থাকেনি। মানে লেখক নিজস্ব স্টাইল সৃষ্টির গোয়ার্তুমি করেননি, বরং গল্পের বিষয় ও চরিত্র অনুযায়ী সেটা প্রয়োজনমাফিক বদলে নিয়েছেন। তাতে করে স্বকীয়তা নষ্ট হয়নি, আবার গল্পের ভাষায়ও দরকারী একটা স্পেস এসেছে, এটা ভালো লেগেছে। কারণ, আমার মনে হয়, সবার উপরে গল্প সত্য, তার উপরে এমনকি লেখকও নয়।


সবকটি গল্পেই বর্ণালী সাহার পর্যবেক্ষণের গভীরতা লক্ষ্য করার মতো। প্রায় শতবর্ষ আগে ক্রিস্টোফার ইশারউড নিজের কলমটাকে ক্যামেরা বানিয়ে বার্লিন শহরের গল্প শুনিয়েছিলেন আমাদের। বর্ণালীর ক্যামেরা-কলমও সেরকমই শক্তিশালী, পার্থক্য শুধু তাঁর গল্পের চরিত্রদের বাসস্থানের নাম 'বাংলা'।

'লিম্বো' গল্পের স্বপ্নদৃশ্যগুলোর উজ্জ্বল বর্ণনা বহুদিন মনে থাকবে। 'জাঙ্গলিক'-এর ছদ্মবেশী সিমি-শর্মিলার কাল্পনিক দ্বৈরথ আমি প্রায় বিশ্বাস করে বসে আছি। ভালো লেগেছে 'জবরখাকি' গল্পের রক্তমাংশের মানুষদেরও। প্রায় সবকটি গল্পই যে প্রত্যাশা দিয়ে শুরু হয়েছে, গল্প শেষে তা মিটিয়েছে অনেকাংশেই। 'চশমে ক্বাতিল' গল্পটা এখানে ব্যতিক্রম। ঠিক গল্প নয়, এটাকে মনে হয়েছে একটা বিশাল চলচিত্রের চিত্রনাট্য থেকে ছিঁড়ে নেয়া কোনো একটা পাতা, একটা ছোট কিন্তু টানটান দৃশ্য যেন সেটা।

শুরুর গল্পের চরিত্রদের শেষের গল্পে ফিরে আসার ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। কেমন যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার মত অনুভূতি দেয় এটা। এরকম ছোটখাট কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংকলনটাকে আরও আকর্ষণীয় করেছে বলে আমার মনে হয়। রামায়ণসহ আরও যা যা রেফারেন্স এসেছে বইয়ে, সেগুলির কোনোটাই উচ্চকিত নয়। মানে রেফারেন্সের ছায়ায় গল্পের চরিত্ররা ঢাকা পড়েনি। ক্রাফটিংএর দিক দিয়ে খুব সহজ নয় কিন্তু এই কাজটা।

এক কথায় যদি বলি, অনেকদিন পরে এতো চমৎকার একটা গল্প সংকলন পড়লাম, বাংলায়।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on March 20, 2024 20:34

March 9, 2024

দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই | জে ডি স্যালিঞ্জার



অদ্ভুত এই বইটার শুরুর দিকে একবার মনে হলো, হোল্ডেন কফিল্ডের মধ্যে পছন্দ করার মত খুব বেশি কিছু নেই। আবার হয়তো আছেও, কে জানে! ভালো একটা স্কুলে পড়তো, কিন্তু ভালো লাগে না বলে ক্রিসমাসের ছুটির আগে আগে সে স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে। ( অথবা এটাও বলা যায়, শুধু ইংরেজি ছাড়া আর কোনো বিষয়ে পাশ করতে পারেনি বলে স্কুলই তাকে ছেড়ে দিচ্ছে।)

ছুটি যেদিন হবার কথা, তার কয়েকদিন আগেই বের হয়ে যায় হোল্ডেন। বাবা-মাকে বলা যাবে না, তাই বাড়ি না গিয়ে বাকি সময়টা পার করতে হবে এই শহরেই। এই দিনগুলোর গল্প নিয়েই এই বই। চেষ্টা করলাম যতটা নিরাসক্তি নিয়ে বলা যায়, তবে স্বীকার করছি, পড়তে গিয়ে আগ্রহ চেপে রাখা যায়নি। ঘটনার জন্যে যতটা, তারচেয়ে অনেক বেশি যেভাবে বলা হয়েছে গল্পটা তার জন্যে। সম্ভবত বলার (বা লেখার) এই সাংঘাতিক স্টাইলটাই এই বইয়ের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব। বইয়ের মাঝপথে গিয়ে হোল্ডেনের লাগামছাড়া ভাবনাগুলি পড়তে পড়তে বহুবার হিংসা হয়েছে। মনে হয়েছে, এভাবে বলতে বা লিখতে পারলে দারুণ হতো। প্রতিটা ক্লিকের সাথে সাথে ছবির সঙ্গে অটো-ফিল্টার জুড়ে যাওয়ার এই ভানসর্বস্ব সময়ে বসে, স্যালিঞ্জারের রাখঢাকবিহীন অকপট ছবির মতন বিরতিহীন এই উপন্যাস শেষ করে সত্যিই মনে হলো, This book killed me!
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on March 09, 2024 03:22

February 6, 2024

ঋতুপর্ণ ঘোষ: চলচ্চিত্র, জীবন ও সাক্ষাৎকার | নাফিস সাদিক

 



রেইনকোট সিনেমার বাংলা স্ক্রিনপ্লে খুঁজতে গিয়ে ঋতুপর্ণকে নিয়ে লেখা এই বইটা হাতে তুলে নেয়া হলো। তার আগে পরিচয় হলো এর লেখক নাফিস সাদিকের সাথেও। আর ভাগ্যিস, হয়েছিল! দারুণ কিছু তথ্য জানা হলো ওঁর সূত্রে। সেটাই আরও বিশদে জানলাম বইটা পড়ে।

ও’ হেনরির গল্প থেকে রেইনকোটের অস্থিমজ্জা নেয়া, এমনটাই জানতাম। দেখা গেল, এটা হয়ত পুরোপুরি সত্যি নয়। মনোজ বসুর একটা গল্প আছে, নাম প্রতিহিংসা। সেটাও পড়লাম। মিলিয়ে দেখলে, রেইনকোট যে আসলে পুরোপুরি সেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না। সেই গল্পের চরিত্র, নামের মিল, এবং রেইনকোটের উল্লেখ, ঘটনার ক্রম, এই সব কিছুই সিনেমাটার সাথে নব্বই ভাগ মিলে যায়। তাহলে ঋতুপর্ণ কোথাও মনোজ বসুকে কৃতিত্ব দিলেন না কেন?

তবে এ-কথাও সত্যি, মনোজ বসুর গল্প পড়ে আমার মনে হয়েছে, সেটা সম্ভবত ও’ হেনরির গল্পের অনুপ্রেরণা থেকে লেখা। সাহিত্যের ভাষায় যেটাকে বলে ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি। তবে তারপরেও ঋতুপর্ণ-র বসুকে কৃতিত্ব না দেয়ার হিসাব আসলে মেলে না। এই রহস্য আর কখনো হয়ত জানাও হবে না।

রেইনকোট গুটিয়ে রাখার পরে এবার বইটা শুরু থেকে পড়া ধরলাম।

নাফিস সাদিকের বাংলা খুব সুন্দর, শব্দচয়ন সাবলীল। ইদানিং সবার বাংলা পড়ে আরাম পাই না, এই বইটা পড়ে তা পেলাম। লেখক নিজে যে অত্যন্ত মনোযোগী পাঠক, সেটা বোঝা যায় সহজেই।

ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে এর আগে আস্ত একটা জীবনীমূলক বই আর কেউ হয়ত লেখেনি, সেদিক দিয়েও বইটা অনন্য। তাঁর অনেকগুলো সিনেমা নিয়ে সাবলীল আলাপ রয়েছে এতে। কিছু ইংরেজি সাক্ষাৎকারের বাংলা করে এখানে রাখা হয়েছে। আগে দেখিনি, এমন বেশ কিছু ফটোগ্রাফ। আর একদম শেষে গিয়ে দেখি, ঋতুপর্ণ-র লেখা বিভিন্ন গানের লিরিকও তুলে দেয়া হয়েছে বইয়ে। খুব ভালো লাগলো দেখে। মেঘপিয়নের ব্যাগ অথবা মথুরা নগরপতি গানগুলো খুব প্রিয় আমার অনেক আগে থেকেই।

বাতিঘরের বইগুলোয় যত্নের ছাপ সবসময়ই পাই। এটাও ব্যতিক্রম নয়। দৃষ্টিনন্দন ছাপা, বাঁধাইও।

এই বইমেলায় কেনার জন্যে বইয়ের তালিকা করছেন যারা, এই বইটা সেখানে যুক্ত করতে পারেন নির্দ্বিধায়।

আর শেষ খবর, রেইনকোটের স্ক্রিনপ্লে এখনও পাইনি। তবে সেটার একটা অডিও ভার্সন খুঁজে দিয়েছেন নাফিস সাদিক। তার জন্যেও তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপাতত সেটা দিয়েই কাজ চলবে।

1 like ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on February 06, 2024 13:42

November 18, 2023

কী শোভা কী ছায়া গো



ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেলাগুলো দেখছি মাঝে মাঝে। খেলার শুরুতে সব দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময়টা খুব ভাল লাগে দেখতে। সব খেলোয়াড়দের মুখের দিকে দেখি, কী নিখাদ ভালবাসা সবার, নিজের দেশের জন্যে।

কলকাতায় বাংলাদেশের খেলার দিন মজা হলো। খেলোয়াড়দের সাথে করে মাঠে নিয়ে যায় যে ছোট্ট শিশুরা, দেখি ওদের অনেকেই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলাচ্ছে! খুব মিষ্টি লাগলো দেখতে। ওদেরও তো গানটা জানা! এই খেলার সময়গুলোয় বারবার মনে আসে, আমাদের জাতীয় সঙ্গীতটা কী সুন্দর! বড় হয়ে গেছি, শিশুবেলার মোহ কেটে গেছে অনেক আগেই। আমরা এখন জানি, সকল দেশের রাণী আসলে আমার জন্মভূমি না। রাণী হবার জন্যে চেষ্টা, উদ্যম আর শ্রম জরুরী। সেটা না দিলে রাণীর বদলে আমাদের দেশ হয়ে থাকবে ঘুঁটেকুড়ুনি। তবে হয়ত, জাতীয় সঙ্গীতে আমরা আসলেই সেরা। সবাই দেশের কথা বলে, দেশের রাজা রাণীর কথা বলে। আর আমরা কেমন দেশটাকে মা বানিয়ে সেই মাকে নিয়ে গান লিখেছি। বলেছি, কী শোভা, কী ছায়া, কী স্নেহ, আর কী মায়া মায়ের আঁচলে। বলেছি, মায়ের মুখ মলিন হলে আমরা কেঁদে বুক ভাসাই, মায়ের মুখের কথা আমাদের কানে কেমন সুধার মত বেজে ওঠে। এত সুন্দর জাতীয় সঙ্গীত কি আর কারো আছে?
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on November 18, 2023 20:00

Tareq Nurul Hasan's Blog

Tareq Nurul Hasan
Tareq Nurul Hasan isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Tareq Nurul Hasan's blog with rss.