Nabila Tabassum Chowdhury > Recent Status Updates

"বন্ধু-বান্ধব বলে পৃথিবীতে এক শ্রেনীর জীব তৈরী হয়েছে, হর হিতার্থে তাদের অবদান কতখানি জানি না, কিন্তু বিব্রত করার কাছে তাদের নৈপুন্য অসাধারণ। তাঁরা একটি বিশেষ ব্যাক্তিকে যদি রসিকতার লক্ষ্য বলে নির্বাচন করেন, সেই উপলক্ষে তাকে সহানুভূতি জানাতে থাকেন, সহানুভূতিলব্ধের দল যদি ক্রমশ দলে ভারী হতে থাকেন, তা হলে পৃথিবীর যবতীয় রসিককে, আফ্রিকার জঙ্গলে আত্নগোপণ করতে হয়। রসিকতার চাইতে সিংহের খপ্পরও ভালো!"

" স্বাধীনতা-প্রাপ্তির পর বানী এবং পরিকল্পনা ছাড়া যা আমরা সব চাইতে বেশি পেয়েছি তা হল বিশ্ববিদ্যালয়। জলে, স্থলে, অনলে, অনিলে - একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় মহামন্দির । অত্যন্ত সৎকাজ শিক্ষাই হচ্ছে জাতি গঠনের ভিত- বিশ্ববিদ্যালয় সেই ভীতের উপর স্কাই-স্ক্রেপার। 'এভরিথিং ক্যান ওয়েট বা এডুকেশন কান্‌'ট'-! "

" "দারুণ অগ্নিবাণে" তৃষাদগ্ধ কবিও বলতে পারেন, না- ভয় নেই, কারণ, "জানি ঝঞ্ঝার বেশে/ দিবে দেখা তুমি এসে/ একদা তাপিত প্রাণেরে।" "

অশুভ শক্তিকে পুজো করাই যে আমাদের ইতিহাস-গনেশ তার আর একটি প্রমাণ। আদিতে ছিলেল সর্ববিঘ্নদাতা 'বিনায়ক'- এই বিরূপাক্ষটিকে প্রসন্ন করার জন্য তাঁকে আমরা সর্বসিদ্ধির দেবতা করে তুলেছি। এই মারাত্ম দেবতার বাহন হচ্ছে ইঁঁদুর।

শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ আতস্থ হয়ে উঠে নবযুগের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করলেন। আর্ট স্কুলের পদ্ধতি ইয়োরোপীয় চিত্রকলার অনুসরণ নয়- রাফায়েল, টিশিয়ান, রুবেনস্‌ নয়- পুনর্জীবিত করবো আমাদেরই ঐতিহ্যের ধারাকে।

আত্মশ্লাঘা এবং আত্মদ্ব‌োধনের সেই পরম লগ্নে আমরা ঘরের দিকে দিরে তাকিয়েছিলুম। কাঙালবৃত্তি নয়, পরানুসৃতি নয়- কী ঐশ্বর্য আমাদের ধুলো মাটির কুটীরে সঞ্চিত হয়ে আছে, আমরা তা-ই পুনরাবিস্কার করব। সেইখানেই আমাদের গর্ব, তাই আমাদের পরিচিয়। শিল্পের ক্ষেত্রে এই আত্মসমীক্ষায় আমাদের উদ্বদ্ধ করলেন ওকাকুরা-হ্যাভেল্ম রইলো রবীন্দ্রনাথের এবং স্বদেশের নিয়ত অনুপ্রেরণা।

"আশাহীন, বিশ্বাসহীন, প্রস্তুতিহীন মানবতা কোনো দূর লক্ষ্যের সহযাত্রী নয়। এই শক্তিকে কোনো শাসনও ভয় দেখাতে পারে না - কারণ পরিপূর্ন শূন্যতায় কোনো আঘার গিয়ে পৌঁছায় না।"

তবুও হিরোশিমা-বিস্বাদ মনের ভেতর একটা আলো জ্বলে উঠলো আমার। শুধু মৃত্যুকেই আমরা সব মিটিয়ে দিই না, তার কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারি। আনতে পারি হারানো কাব্যকে, প্রেমকে, চিরকালের জীবনকে। মৃত্যুরও একটা দক্ষিণ হস্ত আছে - নিশ্চয় আছে।"

কে জানে, কতকাল আগের কোনো দরিদ্র বুদ্ধিজীবীর ওইটিই সব চাইতে প্রিয় গ্রন্থ ছিল হয়তো। তাই মৃত্যুতে ওই তার অঙ্গাবরণ। ওইটিই তার শেষের সহযাত্রী।

মিশরীয় বিদ্যাবিশারদ আশা ছাড়েননি। তিনি এখনো বাকীটুকু খুঁজছেন। পত্রিকাটা পুরোনো, জানি না, শেষটুকু তিনি এতদিনে খুঁজে পেয়েছেন কিনা।

কিন্তু কী এ কাগজ? এক আধটু লেখা যেন পড়া যায়?এ যে গ্রীক অক্ষর!কিছুই অসম্ভব নয়, একদা প্রাচীন মিশরে গ্রীক ভাষা ও সাহিত্যের প্রসার ঘটেছিল।

কাগজ গুলো পরিষ্কার করতে দেখা দিল এক পরম বিষ্ময়। এ তো কতগুলো এলোপাথাড়ি বাজে কাগজের ব্যান্ডেজ নয়।এ যে একখানা সম্পূর্ণ বই- পরিচিত গ্রীক কপির এক অপরিচিত কাব্য! প্রেম, বীরত্বে বেদনায় এক মনোরম কাহিনী- শুধু শেষের সামান্য একটু অংশ মাত্র নেই - বোধ হয় শবাচ্ছদনের জন্য সে পাতাগুলোর আর দরকার হয়নি।

"একটি মিশরীয় মমির গাত্রাচ্ছাদন পরীক্ষা করছিলেন একজন ঈজিপ্টোলজিস্ট। কোনো ফারাও-পুরোহিত-সামন্তের মমি নয়-নিতান্তই একটি সাধারণ মানুষের। সত্তর দিনের সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ায় নয়, মধু-মশলা-সুগন্ধির সমারোহে নয়, নিছক লবণ দিয়ে শুকিয়ে বিটুমেনের সাহায্যে মতি করা হয়েছে। দামি কাপড়ের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে কিছু কাগজ অর্থাৎ যা হাতের কাছে পাওয়া গেছে, তাই।"

"তাই জীবনে আমরা নিয়ম ভাঙবো, ভুল করবো, মূর্খতার পরিচয় দেব। আমাকে দেখে অন্য হাসবে, অন্যকে দেখে আমি হাসবো - এই পারষ্পরিক হাস্য বিনিময়ের মাঝেই আমরা বেঁচে থাকবো। এই হাসিকে সব সময় দন্ত বিকাশ বলে চেনা যাবে না; কখনো চোখের জলে তা গলে পড়বে, কখনো হাহাকার বিদীর্ণ হবে,কখনো ধূসর বিষাদে তা লীন হয়ে যাবে। কিন্তু আসলে সবই 'হাউলার' - ভুল শোনা, ভুল বোধা, ভুল বলা, ভুল করা আর ভুলের ফসলে জীবনের গোলা ভরে ভরে তোলা।

"জাতীয় অগ্রগতি আত্মবিস্মৃতিকে আশ্রয় করে ঘটে না। তার জন্য দরকার আত্ন বিস্তৃতি"

"স্বপ্ন তো স্বপ্নই। তা অবচেতনমনের কতকগুলো বুদ্বু‌দ।"

"আমরা কোলকাতার বাসিন্দা, আমাদেরও মৃত্যু ভয়? বৈষ্ণব কবিরা অনেক আগেই আমাদের বক্তব্য বলে গেছেনঃ
"সখি হে, ফিরিয়া আপন ঘরে যাও
জীয়ন্তে মরিয়া যে আপনা খাইয়াছে
তারে তুকি কি আর বুঝাও?""১দস

"এরই ফলে একটা অন্ধ ক্রোধ আমরা নিজের মধ্য প্রতি মূহুর্ত বহন করে চলেছি। সে ক্রোধের কোনো লক্ষ্য খুঁজে পাই না, তাই যে-কোনো উপলক্ষে আমরা বিদীর্ণ হয়ে পড়ি, সে-কোনো সুযোগে মাত্রা ছাড়িয়ে যাই। অভাব-অভিযোগ-সমস্যা তাতে আহুতি যোগায়, আমাদের উৎসবগুলো এই কারণেই আমরা বিভৎস করে তুলি, বিকৃত যত বিকট হয়, ততই যেন এক ধরণের অবচেতন প্রতিহিংসা চরিতার্থ হতে থাকে আমাদের।"

"দেশদ্রোহী মানবদ্রোহী আত্মতন্ত্রতা, দর্শনহীন সাহিত্য, অস্তিত্বের ভার টেনে চলা দৈনন্দিনতা, অবিশ্বাস-সংকুচিত নেতৃত্ব আর অর্থহীন ভবিষ্যৎ- এই যদি আজকের ইতিহাস হয়, তাহলে কোন খানে দাঁড়িয়ে আছি আমরা?

"আগের জার্নালে লিখেছিলুম, আন্দোলন অ্যানার্কিতে রূপ না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের নেতারা সজাগ হন না। কিন্তু আজকে আশঙ্কা জেগেছে অন্য কারণে। আমাদের সব আন্দোলনই কি চলবে অ্যানার্কির দিকে? ক্রোধের প্রকাশ ঘটবে ক্ষিপ্ততায়, উদ্দামতাই কি আনন্দের অপরিহার্য পরিণতি?আমরা কি সুনিশ্চিত ভাবে নৈরাজ্যের অভিমুখেই এগিয়ে চলছি।

ক্রোধ মাত্রেই আত্মবিস্মরণ নউ, কখনো কখনো তা মহান আত্মবোধন ঘটায়; আনন্দের অর্থই প্রেততাণ্ডব নয়, তা প্রাণশক্তির উচ্ছ্বাস।"

"ইয়োরোপের অবস্থা অনেক বদলেছে, সন্দেহ নেই। তবু সবটা বদলায়নি। আজও এদের শিক্ষা-সংক্রান্ত কাগজপত্রে দেখি, প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র শিক্ষকের দুর্ভিক্ষ। বারো আনা মানুষই ছুটেছে টেকন্যিকাল এবং কমার্শিয়াল লাইনে- শিক্ষকতার জন্য যে দু-চারজন আসে তাদেরও অধিকাংশ বৃত্তির আকর্ষণে আসে না। আসে অন্যত্র সুবিধে হয় না বলে।"

"এ বিদ্যার পুঁজিবাদ, সাধারণের জন্যে অশিক্ষা-কুশিক্ষার ভেজালের ঢালাও ফতোয়া।"

"পয়সা থাকলেই ইংরেজী স্কুল, ইংল্যান্ডে পাঠাতেও বাধা নেই, ডলারের বাধা ওঁদের অনতিক্রম্য নয়। ছেলেমেয়েরা কে কতটা মাতৃভাষা ভুলতে পেরেছে, তারই ওপরে ওদের আত্মশ্লাঘা। ব্রেকফাস্ট টেবিলে পরিজ না হলেও ওরা তুলকালাম কাণ্ড বাধান, ইংরেজি গোয়েন্দা উপন্যাসই ওদের একমাত্র পাঠ্য, অথচ ওরাই দরাজ গলায় শোর তুলেছে আংগ্রেজী হঠাও।"

" 'শক্তিমানেরা ইতিহাসের বিরাট ক্যান্‌ভাসে প্রাণের ধ্রুপদী রূপ ফোটাতে চান বলেই এ পথে আসেন। আর জীবনধর্ম সে আজকের মূহুর্তকে নিয়ে ফুটতে পারে, অতীতের আলোতেও উজ্জ্বল হতে পারে। কথা হল ভালো বই চিরদিনই ভাল; তা ওয়্যার অ্যান্ড পীসই হোক আর সিস্টারকারিই হোক, উপকরণ যাই হোক, সাহিত্যে ভালো আর খারাপ। এই দুটো ভাগই আছে।' "

" 'মিথ্যে তর্ক করছো সুনন্দ। আমার কথা নিশ্চয় বুঝতে পারছো।সেদিন একটা প্রবন্ধ পড়লুম । তাতে রাগ করে লিখেছেঃ ঐতিহাসিক উপন্যাস মানেই লেখকের খোলা মাঠ। অবাধ রোমান্স আর অসম্ভব ঘটনা তৈরির নিরঙ্কুস সুযোগ, মূল গল্পের জন্য ভাবনা নেই, পাতা বাড়াবার অফুরন্ত অবকাশ। আসলে বড়োদের জন্য লেখা হচ্ছে রূপকথা; আর বয়স বাড়লেও যাদের মন বাড়ে না, তারা সেগুলো গো-গ্রাসে গিলছে।' "

"দুঃখ করার কারণ নেই-এই নিয়ম।
আমাকে বাধা দিয়ে অধ্যাপক বললে, "উহু, ইতিহাসের মৃত্যু আছে।'
আমি বললুম 'বোঝাও'।
সে বললে, 'তোমাদের ঐতিহাসিক উপন্যাসে যে-ভাবে-'
বললুম, 'ইয়ার্কি করতে হবে না, বেরোও'।"

"বেরিয়ে গেল, শুনলাম এলিয়ট আওড়াচ্ছে।

"Stuffed men - leaning together-
Headpiece filled with straw-"

কিন্তু এত কবিতা থাকতে 'দ্য হলো মেন'-টাই ওর মনে পড়ল কেন? আমি বুঝতে পারুলাম না।

""Soul, be still and wait without hope
For hope would be hope of the
wrong thing;
Wait without love-"

এলিয়টের মৃত্যুর সংবাদে মনটা বিচলিত ছিল, তঁার কবিতা পড়ছিলুম। "

"কিন্তু আজকের নবাগত আর 'লাঁজ বানি' - 'নির্বাসিত দেবদূত' নয়, সে আর নন্দনের সংবাদ বয়ে আনে না। আজ প্রতিটি শিশুই যেন বিশ্বব্যাপী দূর্ভিক্ষের সঞ্চয়ে আর একটি ক্ষুধার্ত ছোট মুঠি বাড়িয়ে দেয়।"

তাতে মহারাজ চন্দ্রগুপ্ত ক্রুসবেল্টস এঁটে দেখা দেন, তাতে সাগরকন্যারা লেটেস্ট ফরাসী কস্টুম পরে জলে তলে টুইস্ট নাচ নাচে, তাতে অন্তরীক্ষ থেকে কিন্নরের দল পিয়ানো-বেহালা-আকর্ডিয়ান চেলো সহযোগে রক-এন-রোলের বাজনা বাজাতে থাকেন। সে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা।"

"হিন্দী এবং উর্দু ভাষার এই অনুপম সৃষ্টিগুলি আমার কাছে এক সুগভীর বিষ্ময়ের ব্যাপার। তাতে রঙের ইন্দ্রপুরী, সুরের সুরধনী, নৃত্যকলার গন্ধর্বলোক। তার কালভুমি বোধ হয় জুরাসিক যুগ থেকে একবিংশ শতাব্দী। কোয়েম্বাটুর থেকে কাম্‌চাটকা পর্যন্ত সবর্ত্র অবাধ বিচরণ।...

যে এক মরণান্তিক অভিশাপকে বরণ করে নিয়েছিল, সেই করুন কাহিনীর নায়িকাকে ডেনমার্কের মানুষ তাদের জাতীয় ইতিহাসে অক্ষয় করে রেখেছে; বিকৃত মূর্তিটিকে নতুনভাবে গড়ে নিতে তারা এতটুকুও কালক্ষেপ করে নি।"