Nabila Tabassum Chowdhury > Recent Status Updates

এই রকম দুর্ধর্য স্কুলের প্রবেশপথে একটি ইংরেজি নিষেধবাণী চোখে পড়ল।যার বঙ্গানুবাদ হলো এইঃ‘মাতা-পিতা এবং কুকুরের প্রবেশ নিষেধ।’
‘ইন্ডিয়ান্স অ্যান্ড ডগস প্রহিবিটেড’ লেখা থাকলে এককালে আমাদের রক্ত তেতে উঠতো,এখন আর উঠে না।আমরা অনেক উদার আর সহিষ্ণু হয়ে গেছি। কিন্তু লেখাটা সিম্বলিল। ‘চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট'– মা বাপকে দিয়ে শুরু হবে প্রথমটায়।তারপর মাতৃভাষা,স্বদেশ,সংস্কৃতি অ্যান্ড ডগস (অবশ্যই আল্সেশিয়ন–ডালমেশিয়ান নয়) প্রহিবিটেড।

ইতিহাসের এক প্যারাডক্স মনে এলো ছাত্র-জীবনের দূরান্ত থেকে। ‘রোম জয় করল অ্যাথেন্সকে, আথেন্স জয় করে নিল রোমকে’। রোমান সিসেরো থেকে হোরেস পর্যন্ত সকলের কন্ঠে আথেন্সের মুগ্ধ বন্দনা– গ্রীসের মাটিতে প্রতিটি রোমানের আনন্দিত তীর্থ-চারণা। আমরাও ইংরেজকে বিদায় করে আজ তিনগুন বেগে তাকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেছি। পার্থক্য কেবল মনস্তস্ত্বে– একটা প্রজ্ঞা আর সংস্কৃতির প্রতি নিবিড় শ্রদ্ধায়,আর একটা অপরূপ হীনম্মন্যতায়– নাকি বলবো অনহন্মন্যতায়?

অতএব আতঙ্কে আর অনিশ্চয়তায় হৃৎপিন্ড স্তব্ধ। কলমের কালি শুকনো। একবার রাজা হওয়ার পরে আর তো পদাতিকের চপলতা চলে না। আমার ধারণা, সেই বিশ্বগত মহৎ সাহিত্যের ভাবনা ভাবতে ভাবতেই ‘নোবেলিত’ লেখকরা ইংরজ সেনাপতি রবার্ট গর্টের মত ‘নোবেল রিট্রীট্’ আশ্রয় করেন, কিংবা কল্পিত শঙ্কিত হৃদয়ে একটু আধটু যা লিখে ফেলেন, ‘তার এক লাইনও পাঠযোগ্য হয় না।’

এখন তাঁদের প্রতিটি লাইনের বিচার হবে আন্তর্জাতির মহাসাহ্যিতের মনদণ্ডে – তাঁদের প্রতিটি বানীকে ভাষা করবার কন্য হাজার হাজার ক্রুর চক্ষু সমালোচক মুখিয়ে রয়েছেন। তারপর? তারপর আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের না হলে যে আর লেখাই চললে না। কী সেই স্ট্যান্ডার্ড? পৃথিবীর কোনও লেখক তা অবগত আছেন বলে তো মনে হয় না।

আমার সন্দেহ হয়, একবার আন্তর্জাতিক খ্যাতির চুড়োয় পৌঁছুলে তাঁদের মারাত্মক রকমের অন্তর্দ্বন্দ শুরু হয়ে যায়। এতদিন বেশ ছিলেন, নিজে যা ভালো বুঝছিলেন – তাই লিখছিলেন – বিশ্ব নিয়ে (রাজনীতি এবং যুদ্ধটুদ্ধ ছাড়া তাঁদের তেমন কোনো মাথা ব্যাথা ছিল না। কিন্তু একদা এক সুপ্রভাতে তাঁরা আবিস্কার করলেন যে নিজেদের দেশ আর ভাষার মধ্যে আরা তারা সীমাবদ্ধ নেই – একেবারে বিশ্ব- পৃথিবীর চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন।

রুচির সঙ্গে ব্যক্তিগত রসগত রসবোধ জড়িয়ে আছে – তার একটা ভালো মন্দের নিজস্ব ‘ঈস্থেটিক সেন্স’ মিশে আছে। কিন্তু ফ্যাশান একটা সামগ্রিক ব্যাপার। নিজের যেমনই লাগুক, অন্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজের ভাল মন্দ জামাকে শিকের তুলে রাখতে হয়।

এই কারণেই 'অল কোয়ায়েট'র বহ্নুৎসব করতে হয়েছিল হিটলারকে; একান্ত বিদ্বেষের দর্শনকেই যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল থিয়োরি হিসেবে দাঁড় করাতে হয়, তাহলে যিনি মানবপ্রীতির বানীবহ - তাঁকেই সর্বাগ্রে বিতাড়িত করবার প্রয়োজন পড়ে; ন্যাশনালিজমের যুযুধান দানব - মূর্তির উদ্দেশে যাঁর ধিক্কার সমুদ্যত - উগ্র জাতীয়তাকে মাতিয়ে তুলে সাধারণ মানুষকে 'কামানের খাদ্য' করতে হলে - তাঁকেই বিষধর সাপের মতো বর্জন করতে হয়।

রবীন্দ্রনাথ জাতি-ধর্ম-ন্যাশানালিজম- সব কিছুর সংকীর্ণ হিংস্রতার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন- এইটেই কি তাঁকে নিষিদ্ধ করবার মূল কারণ? ধর্মের গোঁড়ামি দিয়ে যদি দেশসুদ্ধ মানুষের চোখে ঠুলি পরাতে হয়, তাহলে যিনি সব ধর্মান্ধতার বিরোধী, তাঁকেই 'এনিমি নাম্বার ওয়ান বলে চিহ্নিত করতে হয় -

নানা কারণে দেশের মন= উদ্‌ভ্রান্ত - মানসিক শৃঙ্খলার দুর্বিপাক ঘটেছে - এসব কথা কেউই অস্বীকার করবেন না।কিন্তু এক হাতেই কি তালি বাজে? আজ যেমন ছাত্রদের মধ্যে একটা মানসিক পুনরুজ্জীবন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে, ঠিক সেইভাবেই শিক্ষার ক্ষেত্রেও দৃষ্টিভঙ্গির সুস্থ পরিবর্তন দরকার। তা যদি না হয়, তা হলে শুধু পরীক্ষা কেন, সমস্ত বাংলাদেশটাই অচিরে রসাতলে যাত্রা করবে।

ভাবতে ভাবতে কল্পনা আরও বিকশিত হল। এমন তো হতে পারে - হওয়া অসম্ভব নয়, যে ইমিউনিটি বাড়তে বাড়তে আমরা গাড়ি চাপা পড়েও মরব না - চ্যাপটা শরীরটাকে পিটিয়ে - পাটিয়ে আবার গওলালো করে দিলেই চলবে; ট্রেনের তলায় মাথাটা কাটা গেলেও আবার সেটা কুড়িয়ে এনে- সশব্দে চিন্তাটা জ্ঞাপন করতেই অধ্যাপক বললে, 'থামো, আর ইয়ার্কি করতে হবে না'।

"যাঁরা আরও বেশি গণতান্ত্রিক, অর্থাৎ বিশেষ পরীক্ষার্থী সম্পর্কে যাঁদের কোনো মোহ নেই, তারা সমবেতভাবে গণ-কল্যাণের পুন্যব্রত পালন করে চলেছেন। সন্নিহিত কোনো রেস্তোরাঁ অথবা ওই রকম কোনো ভালো জায়গায় মাইক্রোফোণ এবং আমপ্লি-ফায়ার বসানো হয়েছে, সেখান থেকে বিঘোষিত হচ্ছে আকাশবাণীঃ 'ইংলিশ, সেকেন্ড পেপার। কোশ্চেন নাম্বার টু। বন্ধুগণ, আমরা বলে যাচ্ছি, আপনারা লিখে যান-' "

"The beauty myth is always actually prescribing behavior and not
appearance."

" Nor is “beauty” a function of evolution: Its ideals change at a pace far more rapid than that of the evolution of species, and Charles Darwin was himself unconvinced by his own explanation that “beauty” resulted from a “sexual selection” that deviated from the rule of natural selection; for women to compete with women through “beauty” is a reversal of the way in which natural selection affects all other mammals. "

"And the final piece of the puzzle fell into place : researchers at Wayne State University found that anorexia and bulimia were triggered, in women who had a biochemical predisposition to it, by simple dieting; caloric restriction resulted in biochemical changes in the brain, which addicted women physiologically to anorexia and bulimia."

"ধর্ম ব্যাপারটাকে ঠিক বিড়ালের ল্যাজের মতো মনে হল আমার। কোনো কাজে লাগে কি না জানি না, কিন্তু ধ্বজা-পতাকার মতো উঁচু করে বয়ে বেড়ালে বেশ মনোরম দেখায়, আর ভুল করে কেউ একটুখানি মাড়িয়ে দিলেই 'ফ্যাঁচ' করে এক দারুন চিৎকার, তারপরেই আঁচড়ে কামড়ে রক্তারক্তি কাণ্ড।"

'ছেঁদো কথা রেখে দিন, মশাই। আসলে এই হচ্ছে আমাদের চরিত্র, আমরা মেটিরিয়্যালিস্টিক ফিলসফিও পড়ো, আবার ঠনঠনের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কপালে হাতও তুলব। কাউকে আমরা ছাড়তে চাই না। কিসে কী হয় যখন জানা নেই, তখন সব দেবতার পায়েই নৈবদ্য সাজিয়ে দেওয়া যাক। এই সুবিধেবাদী মনোবৃত্তির জন্যই আমাদের কোনো ন্যাশনাল ক্যারেক্টার গড়ে ওঠে না - এই ফাঁকিবাজির জন্যেই আমরা কোনোদিন দাঁড়াতে পারবো না - এমন কি, দেশে সেন্ট পারসেন্ট লিটারেসি এলেও না।'

'আসলে আমাদের মজ্জায় মজ্জায় কন্ট্রাডিকশ্যন। আমরা বড় জোর স্কেপ্‌টিক হতে পারি। অ্যাগ্‌নস্‌স্টিকও হতে পারি - কিন্তু একটা অজ্ঞাত রহস্য সম্পর্কে আমাদের কৌতূহল এবং বিশ্বাস কিছুতেই যায় না।'

"সামাজিক প্রথা! ওইটেই হচ্ছে চমৎকার একটা স্কেপ গোট। অর্থাৎ আমরা নিজেরা কাপুরুষ, সত্যকে জানি, অথচ-"

"পাঠকমনও কি নির্বিচারেই যে কোনো 'ইলাস্‌ট্রেশ্যন'কে মেনে নিতে পারে? আমি অনেক সময় অনুভব করেছি বড়ো লেখকের রচনার সঙ্গে বড়ো শিল্পীর ছবি যেম প্রায়শ বেসুরো হয়ে ওঠে - দুটো প্রবল ব্যক্তিত্ব কেউ কারো কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায় না, তার ফলে আশ্চর্য লেখার সঙ্গে আশ্চর্য ছবিকে আলাদাভাবে আস্বাদ করতে হয়, অদ্বৈত-সন্ধিটি ঘটে না।"

"আজ বাংলা দেশে ছোটদের জন্য রূপকথা আর কেউ লিখতে চান না- আর প্রয়োজনও আর নেই, কারণ বড়োরাই যে আজ চুষিকাঠি মুখে পুরে হামা দিতে শুরু করেছেন - এ সত্যতি বুদ্ধিমান লেখকদের অধিগত।

না- সন্দেহ নেই, যোগীন্দ্রনাথ সরকার এই যুগে জন্ম নিলে ঐতিহাসিক উপন্যাসই লিখতেন"

"আমার সন্দেহ হচ্ছে, যোগীন্দ্রনাথ-দক্ষিণারঞ্জন-উপেন্দ্রকিশোর এ যুগের বাংলা দেশে জন্ম নিলে শিশু - সাহিত্য সৃষ্টির পন্ডশ্রম না করে মোটা মোটা ঐতিহাসিক এবং ইতিহাস রচনাকারী উপন্যাস লিখতেন - তাতে তাঁদের অর্থ আর পরমার্থ দুই-ই অর্জিত হত।"

"সাম্যবাদী দেশের কথা বলছি না - তাদের হিসাব আলাদা। কিন্তু অন্য সর্বত্রই শিল্পপতি এবং বণিকেরা যেমন প্রচুর মুনাফা করেন, তেমনি টাকাটা চারিয়েও দেন। তার ফলে আমেরিকা বৃটেনের মত ধনপতির দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার একটা ন্যূনতমমান পায়। কিন্তু টাকা সঞ্চয়ের এই কদর্য লোলুপতা, এই প্রয়োজনহীন, শোষন, কণামত্রা সুযোগে বিবেকহীন কালো বাজার এবং অন্ধকারে স্তূপীকৃত অকারণ যক্ষের ধন-এ বোধ হয় একমাত্র ভারতবর্ষেই সম্ভব।"

"আমার কেদার বাঁড়ুজ্জের উপন্যাস থেকে একটি চরিত্রের কথা মনে আসছে। বিদেশী-জিনিসের ওপর স্বদেশী লেবেল লাগিয়ে, মেড্‌ ইন্‌ ইংল্যান্ড লেবেন তুলে দিয়ে সে ট্রেনে ফিরি করছে-বলছেঃ দেখেছেন কি, আমাদের দুঃখের রাত্রি পার হয়ে এল- এসব হচ্ছে সোনার ভারতের স্বদেশ-লক্ষীর দান।"

রক্ত-কলঙ্কিত কঙ্গো,আজকের যন্ত্রণাবিদ্ধ ভিয়েতনাম। আমাদের অবদান 'মুলাটো, আমাদের অবদান আমেরিকান নিগ্রো, আমাদের অবদান ঔপনিবেশিক দেশে দেশে রাশি রাশি অপজাতক। অতএব ডলফিন-শিকার আমরা বন্ধ করব না।

"ভাতৃহত্যার ছুরিতে শান দেওয়াই আমাদের প্রত্যেকটি মুহূর্তের অনুচিন্তন। এই রীতিতেই আমরা অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রাচীনতম মানবধারাকে নিঃশেষ করেছিঃ আফ্রিকার গ্রামে গ্রামে পাঠিয়েছি রেড-বিয়র্ড জাতীয় হিংস্রতম মানুষ শিকারীদের; মায়া-সভ্যতার যারা জন্মদাতা-তাদের বন্দুকের লক্ষ্য করে ছুটে গেছি 'এল দোরোদার'র সন্ধানে। শোষণের স্বর্ণ-সাম্রাজ্য যখন দায়ে পড়ে ছেড়ে গেছি- তখন উপহার দিয়ে গেছি বিষ-জর্জরিত ভারত-পাকিস্তান,

"ভরাডুবির আগেই আমাদের আত্মতুষ্টির সুখনিদ্রা নিশ্চয় ভেঙে যাবে; যদি না ভাঙে, ঈশ্বরও আমাদের বাঁচাতে পারবেন না।"

"তিন কোটির ব্যার্থতা, বঞ্চনা আর বিদ্বেষের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে জাতির মুখোজ্জ্বল করবে তিন হাজার কৃতী ডাক্তার, এঞ্জিনীয়ার, টেকনিশিয়ান, বুদ্ধিজীবী? এতগুলো শূন্যতারা ক্রোধ, অভিসম্পাত এবং যন্ত্রণার ওপর সুখী সমৃদ্ধ ভারতবর্ষ গড়ে উঠবে? কার মন্ত্রবলে?"

"ট্যাক্সি আমদের জন্য নয় - আমরা তা ধরতে পারি না। আমাদের এই রিকশাই ভালো। তাই আমাদের চিরকালের প্রতীক, আমাদের জন্মের বিষ্ময়, মৃত্যুর বিরতি।"

"যিনি আমাকে লজ্জা দিতে চেয়েছিলেন, তার একটি জিজ্ঞাস্য ছিল তাঁকে, 'বেশ তো, মানব প্রেমে বিচলিত হয়ে না-হয় আমরা রিকশা চাপা বন্ধ করলুম, কিন্তু এই লোকগুলো কী খাবে? বিকল্প ব্যবস্থা করবেন? বর্ষার কলকাতা যখন দ্বীপপুঞ্জ , তখন না হয় আমরা সাঁতারই দিলুম, হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য না হয় অ্যাম্বুলেন্সেই ফোন করা গেল, কিন্তু এদের অন্ন-সংস্থান কোথায় হবে?"

"মোটরচারী ভাগ্যবানদের জন্য আমার সহানুভূতি নেই। আমি বিব্রত হয়ে উঠেছি মানব-প্রেমিকদের গঞ্জনায়। মানুষের পিঠে চড়া নাকি অপরাধ। একজন ত স্পষ্টই বললেন, 'তুমি তো বুদ্ধিমান লোক, রিক্‌শা চড়তে তোমার লজ্জা হয় না?'
'আমি বুদ্ধিমান'-এ খবরে পুলকিত হওয়া গেল। কিন্তু লজ্জিত কেন হবো এইটে ঠিক বোঝা গেল না।"