Shoroli Shilon's Blog
April 22, 2024
দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যান এবং দস্তয়েভস্কি
আমি একজন অসুস্থ লোক। দুষ্টু লোক ও বলতে পারেন। দেখতেও সুবিধার নই! এদিকে স্টমাক পেইনে নড়তে পারছি না। জানিনা কি হয়েছে! ডাক্তার দেখানো জরুরি কিন্তু ডাক্তারের কাছে যেতে আমার বড় অনীহা। তাকে যে আমার পছন্দ নয়! তবে হ্যাঁ, যেহেতু পড়াশোনা করেছি ডাক্তারী পেশাকে তো আর অসম্মান করতে পারি না! আর কুসংস্কারেও আমার অবিশ্বাস। শুধুমাত্র অপছন্দের খাতিরেই ডাক্তারের কাছে কখনোই যেতে চাই না। এজন্য লোকসানই বা হচ্ছে কার? আমারই তো! নাকি? হতে থাকুক। এভাবেই তো বিশ বছর পার করে ফেলেছি ইতিমধ্যে..

উপরের এই কথাগুলো বুঝে উঠতে পারবেন না এটা স্বাভাবিক ধ’রলে আপনি পড়বেন ঠিক ওই ডাক্তার কিসিমের লোকের দলে। আর আমি আজ ঢুকে যাবো ক্ষ্যাপা ঐ আন্ডারগ্রাউন্ড এর লোকটার মগজে।
সাধারণ মানুষের ধর্ম হচ্ছে-তারা কথায় কম, কাজে বেশি বিশ্বাসী। ঘুম থেকে উঠবে, ঘুমাতে যাবে এবং মাঝের সময়টাতে ‘ল অব ন্যাচার’ কে মাথায় রেখে জীবন আরোপিত করবে। ইতিহাস এবং আধুনিকতার উদাহরণ টানলে দেখা যায় মানবসভ্যতা কোনো দরকারে মানুষের বৈশিষ্ট্যকে নমনীয় ক’রে তোলে নি। বরং মানুষ দিনে দিনে হয়েছে অনুভূতিহীন, অনিশ্চিত, যান্ত্রিক। তারা সজাগ থেকেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ঐ সমস্ত পথ বেছে নিয়েছে যেখানে নিজস্ব প্রবৃত্তির তোয়াক্কা করা হয় না। যে সমস্ত পথ তাদেরকে আরো সচেতন করে তোলে। যে সমস্ত জিনিস তাদের জন্য কল্যানকর।
কারণ দেখা যায় আমরা যেটা সবসময় চাই সেটা হতে পারে সমাজের যাবতীয় নিয়মকানুন বহির্ভূত এবং গতানুগতিক ধারনার বাইরে। এই আক্ষাঙখা গুলো কোনো যুক্তি মানেই না বরং জন্ম দেয় অযাচিত ফলাফলের, বিশৃঙ্খলার।
অন্যদিকে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যান বিশ্বাস করে সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা ধর্মে আশ্রিত নিয়ম কানুন ‘ল অব ন্যাচার’ এর মানদণ্ড অনুসরণ করে চলে ঠিকই। তবে তাতে অনেকটা নিজস্ব ইচ্ছাবৃত্তির (ফ্রি উইল) মৃত্যুও হয়। প্রকৃতি আপনাকে নাড়াচ্ছে যেভাবে সেভাবেই আপনি নড়ছেন। অনেকটা কাঠের পুতুলের মতন।
ক্রিস্টোফার হিচেন্সই তো বলেছিলেন, “ইয়েস আই হ্যাভ ফ্রি উইল; আই হ্যাভ নো চয়েজ বাট টু হ্যাভ ইট।”
তারমানে কি এই না-যে-এটা সহজাত কোনো উপহার। যেটাকে বর্জন করা তো যায়-ই না বরং গ্রহণ করার পর প্রয়োগ করা যায় কিনা কিংবা ঠিক কতটুকু করা উচিৎ-সেটাই বুঝে ওঠা কঠিন!
ধরা যাক, আজ থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যান সমাজের নিয়মকানুনের ধার ধরবে না। তলকুঠুরিতে গিয়ে লুকাবে। আবার হঠাৎ একদিন লোকটার ইচ্ছে হবে তার ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে কসিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে বা তখনকার রাশিয়ার সমাজব্যবস্থাকে। তার এমন বেপরোয়া ইচ্ছার কারন হতে পারে অতি সামান্য কিংবা বৃহৎ। ধরা যাক, ইচ্ছে পূরনও হলো। ফলাফল কি প্রতিকূলে যাবে নাকি অনুকূলে?
এই সমস্ত উটকো ইচ্ছাবৃত্তিরই অতিরঞ্জিত ব্যবহারেরা জন্ম দেয় অযৌক্তিক আচরণের; যার ফলাফল এর সম্মুখীন হতে আবার নারাজ আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যানেরা। কিন্তু কেন?
অনেকটা অনুমেয় সত্য-
সাধারণ মানুষেরা প্রতিশোধপরায়ণ। তাদের ধারণা শুধুমাত্র প্রতিশোধেই ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজস্ব কৃতকর্মের দ্বারা তৈরি দেওয়ালের মুখোমুখি হতে জানে তারা। কেবলমাত্র তারা যৌক্তিক আচরণ এ বিশ্বাসী এবং ইচ্ছাবৃত্তিকে তোয়াক্কা করে না বলেই কি এমনটা সম্ভব? অপরদিকে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যানেরা তাদের সমস্যার সম্মুখে সজাগ হলেও, প্রতিশোধ এর আকাঙ্ক্ষা অনুভব করলেও প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতাকে যথাযোগ্য কিংবা যথেষ্ট কারণ মনে করে না। তাদের মতে, কেবলমাত্র ঘৃণার বশেই এমন আচরণ।
শুধুমাত্র মাত্রাতিরিক্ত সজাগ ব’লেই কি তাহলে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যানেরা না পারে ফ্রি উইলের প্রয়োগ করে তার ফলাফলের সম্মুখীন হতে, না পারে আর দশটা মানুষের মত সাধারণ হয়ে থাকতে? কিন্তু এই কনশাসনেস জন্য তাদের তো গর্বেরও কোনো শেষ নেই। পরোক্ষণেই আবার এমন গর্ববোধের জন্য অপরাধবোধে মারাও যায়। নিজেকে মনে করতে থাকে ইঁদুরের মত তুচ্ছ কোনো প্রানী।
কেমন হতো যদি তিনি পোকার মত কোনো প্রকার বোধ ছাড়াই জন্মেছেন। তাতে তো উদ্ভট সব কৃতকর্মের ফলাফলের ঝক্কি সামলাতে হতো না অন্তত! সেটাও বা হতে পেরেছেন কই? চোখ খোলা রেখে, কান খাড়া করে অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই উপলব্ধি করা যে আশীর্বাদ-তাতে কোনো সন্দেহ নেই.. অথচ অভিশাপটা ঠিক কোথায় একটু ভেবে দেখেন তো! বেশি গভীরে যাবেন না। বেশি সজাগ হবেন না। কারণ আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যান যে নিজেই বলেছে,
“I swear to you, gentlemen, that to be overly conscious is a sickness, a real, thorough sickness.”
March 9, 2024
দ্য পারসিস্টেন্স অব মেমরি
অনুর্বর ভূমিতে জন্মালো মৃত গাছের এক শরীর। ঘড়িরা গলে গলে পড়ছে। কখনো সে মৃত গাছে, কখনো মাটিতে, কখনো বা অনুমেয় কোনো শরীরের গায়ে। দৃষ্টি আরো সূক্ষ্ম করলে দেখা যায় সময় কখনো আবার গলে পড়ছে না পিপড়ের দলের পাহারাকে ভেদ করে।

বিস্মৃতির অতীতের দেওয়াল টপকে এক ভয়াল উপস্থিত গুদামঘরে প্রবেশের পথ এ দাঁড়ালে দূর থেকে দেখা যায় সম্মোহনী ভবিষ্যতে লেপ্টে থাকে ধুলোর প্রলেপ। কেউ দৌড়ে গিয়ে সে ধুলোয় গা মাখায় আগে ভাগে। কথায় আছে,
“উই নিড ম্যামরি টু অ্যাওয়ার অব টাইম
উই নিড টাইম টু হ্যাভ মেমরিস”
তা সত্ত্বেও কেউ কেবলই অনুমেয় সেই শরীরের মালিক যে গভীর তন্দ্রাঘোরে স্বপ্নের বিভিন্ন স্তরে নিজস্ব মুদ্রাদোষে দূষিত হয়ে দোষ দিতে থাকে সময়ের। অথচ সময় তার আপেক্ষিকতায় লাগামহীনভাবে সূত্র মেলায়..
ওদিকে তন্দ্রা ভেঙে উঠে দেখে স্বপ্ন সে এক পিচ্ছিল বস্তু, মাঝ সমুদ্রে ভাসতে থাকা সামান্য এক ডিঙি নৌকা। যে নৌকায় চড়ে বসলে সময় এবং স্মৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
March 2, 2024
My Dear Kappus..
Let everything happen to you, beauty and terror. Just keep going. No feeling is final.” These words reflect the introspective nature of the writer Rainer Maria Rilke. He, known among notable German lyric poets, has a profound connection to natural themes and a deep, contemplative approach. Exploring human inner experiences and the purpose of existence, he urges individuals to keep going.

Now, let’s delve into the context of the book “Letters to a Young Poet.” Young poet Franz Xavier Kappus sought advice and reactions on creativity, finding solace in Rilke’s wisdom. The book encapsulates Rilke’s advice, thoughts, ideals, and messages that have transformed in recent years into a self-inspired movement.
Every creation in the world rises in solitude, accompanied by the presence of sadness, desires, and passing thoughts. Sometimes unity is built, and while constructing one another’s unity, transformations occur, leading to losses. Poetry becomes a bit of ice during these.
February 7, 2024
মাই ডিয়ার কাপুস..
কতগুলো পর্যায়ের পর ভেতরের সমস্ত কনফ্লিক্টকে এড়াতে কিছু কথা নিজেকে শোনাই, “লেট এভ্রিথিং হ্যাপেন টু ইউ, বিউটি এন্ড টেরর। যাস্ট কিপ গোয়িং। নো ফিলিং ইজ ফাইনাল।” কথাগুলো ধার করা অন্তর্মুখী ব্যাক্তিত্বের চিন্তাশীল লেখক রাইনার মারিয়া রিলকে এর কাছ থেকে। তার পরিচিতির শেকড় অনেকটা কবিতার দিকেই। উল্লেখযোগ্য জার্মান লিরিক পোয়েটদের মধ্যে অন্যতম একজন তিনি। প্রকৃতির যাবতীয় বিষয়বস্তুর প্রতি তার সাড়া দেওয়া অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত এবং প্রাঞ্জল। তদারকি করেছেন মানুষের অন্তর্নিহিত অভিজ্ঞতা, বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য।

এবার আসি “লেটারস টু আ ইয়ং পোয়েট” বইয়ের প্রসঙ্গে। তরুণ কবি ফ্রান্স জাভার কাপুস, পরামর্শ এবং প্রতিক্রিয়া চাইতেন সৃষ্টিশীলতা সম্পর্কে, শরণাপন্ন হয়েছিলেন রিল্কের। তার পরামর্শ, মতামত, আদর্শ, সৃষ্টিশীলতা সম্বলিত বার্তা যা কিনা কয়েক বছরের স্বতঃস্ফূর্ত বন্দোবস্তে পরিণত হয়েছে গোটা একটা বইয়ে।
পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টি একাকীত্বের নিভৃতে বেড়ে ওঠে। বেড়ে ওঠে স্যাডনেসেস, ডিজায়ারস, পাসিং থটস এর উপলব্ধিতে। কখনো জমাট বাঁধে, কারো কারো জমাট বাঁধতে বাঁধতে পরিনত হয় ক্ষততে। একটুকরো বরফ যেন তখন পোয়েট্রি। সব ক্ষত মেরামতের ওষুধ। পোয়েট্রি ছাড়াও অন্যান্য সকল সৃষ্টি আসলে কেমন হওয়া উচিৎ এবং সৃষ্টিশীল ব্যাক্তি কখন তার সৃষ্টির স্বার্থকতা উপলব্ধি করবে এ প্রশ্নের মুখে পড়লে বরাবরই মনে রাখা উচিৎ, যখন এ পৃথিবীতে নতুন কিছুর উদ্ভাবন করা হবে, নতুন কিছু সৃষ্টি করা হবে সে সৃষ্টির প্রকাশ বাস্তবিক জগতেও প্রায়োগিক হতে হবে, সক্রিয় হতে হবে। সে কথাই যেন বলতে চেয়েছেন লেখক।
আবার প্রতিদিনকার জীবনেও সৃষ্টির বিষয়বস্তুর ঘাটতি যদি উপলব্ধি হয় প্রশ্ন রেখা দাঁড় করাতে হয়, এ বিষয়ের জন্য প্রস্তুত কিংবা যথেষ্ট কি আপনি? কারণ যেখানে বদ্ধ কারাগারে চারপাশে তাকালে শুধু দেওয়ালের ভিত চোখে পড়ে, যেখানে বাইরের কোলাহল প্রবেশের পথ সংরক্ষিত সেখানেও নিমগ্ন হওয়া যায় স্মৃতি রোমন্থনে। প্রাচুর্যে ভরপুর অভিজ্ঞতায়।
হতেও পারে হঠাৎ করেই আপনি হয়ে উঠলেন একজন উঠতি কবি। যথেষ্ট চর্চা ছাড়াই, শুধুমাত্র নিজেকে অন্বেষণ এর মাধ্যমে এবং পারিপার্শ্বিক সবকিছুর জোরজবরদস্তিতে। এবং আস্তে আস্তে কতগুলো পর্যায়ের পর ভেতরের সমস্ত কনফ্লিক্টকে এড়াতে আপনিও আমার মত নিজেকে শোনালেন, “লেট এভ্রিথিং হ্যাপেন টু ইউ, বিউটি এন্ড টেরর। যাস্ট কিপ গোয়িং। নো ফিলিং ইজ ফাইনাল।”
December 22, 2023
ড্রিম রেডিয়েটিং থ্রু আয়িস
চোখের পাতারা যেন ক্রমশ নিজেদের কাছাকাছি টেনে নিচ্ছিলো দু’টো খাবি খাওয়া মাছের মতন। স্বপ্নে দেখলাম বন্য ভেড়ার দলের তৃণভূমিতে বিচরণ, মৃত্যুর বিলাপে ক্রন্দনরত। তাদের রক্তের পলেস্তারায় মুড়ে থাকা চোখ যেন সংবেদনশীল। কিছুটা সময় পরপর জানান দিচ্ছে কেউ এখানে মৃয়মান, তারার মত জ্বলছে, নিভছে। যার হৃদয় ব্লুবেরির মত বেগুনি রক্তে জমাট বাঁধা, অতীতের বিস্মৃতিতে বিমোহিত।
স্বপ্ন এবার জানান দিলো নিঃসঙ্গ এক মেষপালক এক পাল ভেড়ার পাহারায় সজাগ। কথিত আছে, উইলো থেকে জন্মানো পোঁকার দলেরা খেয়ে ফেলেছে তাকে। ইতোমধ্যে খুঁজতে শুরু করেছি আমি তাকে। কারণ শোনা কথায় কান লাগাতে নেই!
চোখের পাতাটা যেন ক্রমশ আরো কুঁকড়ে যাচ্ছিলো একে ওপরের দিকে। আমি দেখতে পেলাম অন্তঃসারশূন্য অতল গভীর এক কূপ। যেখানের প্রতিবার আমার নিঃশ্বাস এর প্রতিধ্বনি উঠে আসছে শূন্য হাতে। যেন কেউ প্রাচীনকালের কোনো প্রাসাদের অশুভ আত্নায় অধ্যুষিত। লেপ্টে আছে পাজরের সবগুলো হাড় জুড়ে।
আমি আরো দেখলাম এক ভয়াল গ্রাম। কঠিন এক রোগে হতবিহব্বল। এ যেন শেষ হবার নয়। গ্রামজুড়ে অসুস্থ বোটকা গন্ধ কালো আকাশে ছেয়ে গেছে। তবে অতল সেই কূপ এবার তল খুঁজে পেয়েছে। যে তলে ঠাই পেয়েছে রক্ত, মাংস আর গোঙানি।
খানিকক্ষণ বাদেই আবিষ্কার করলাম, স্বপ্নে দেখা সেই কূপ রুপান্তরিত হয়ে উঠেছে পুরনো মলিন এক গোলকধাঁধায়। চোখের পাতারা যখন সরিয়ে দিচ্ছে নিজেদের একে অপরের থেকে ছদ্মবেশধারী এক আয়না এসে উপস্থিত হলো তখন। বিচ্ছুরণ করছে একের পর এক সুরাহাহীন স্বপ্নের। আমি আয়নাটা স্পর্শ করলাম। ঘুমপাড়ানি ছড়ার দলেরা ভাসতে লাগলো। যত কর্কশ সে কন্ঠ তত বলিষ্ঠ তার সুবাস! এমন সুর যেন কোনো আধ খাওয়া সিগ্রেট থেকে মৃত কোনো আত্না ভেসে বেড়াচ্ছে। ভেসে বেড়াচ্ছে। ভেসে বেড়াচ্ছে…
সকাল দশটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট। ঘুম থেকে উঠেই বুঝে উঠতে পারছি না কোথায় আছি, কোথায় ছিলাম। সুরাহাহীন স্বপ্নগুলোর ছেদ করতে কষ্ট হচ্ছে খুব। চোখে মুখে পানি দিয়ে ব্রেকফাস্ট শেষে বাইরে যেতে চাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা ফোন কল আসলো। একটা রেড এলার্ট। “এন্ড এন এপিডেমিক”।
November 27, 2023
কিছু হয়নি তো!
মৃদুমন্দ হাওয়ায় হারিকেনের কমলা রঙের আভায় মনে হচ্ছিলো রাতটা যেন পার হতে চাইছে না। টিনের চালে হঠাৎ একটা ডাল পড়ার শব্দে বাবার ঘুম ভেঙে যায়। পাশের রুম থেকে দাদীর শুষ্ক কাশির শব্দকে বৃষ্টির ছন্দময়ী শব্দের সাথে বেমানান লাগে। একটা মোটা কম্বলের নিচে বসে আমি গল্পের বই পড়ছি। বইয়ের মলাটে বড় বড় অক্ষরে লেখা-“সেরা ভূতের গল্প”।
বাবা বিরক্তির চোখে আমার দিকে আড়ে আড়ে তাকায় খাট থেকে। আমি ঠিক খাটের পাশেই একটা মাদুর পাতিয়ে শুয়ে আছি। বই হাতে নিয়ে আমার খানিকক্ষণ পর পর ঝিমুনি আসে। হঠাৎ করে তন্দ্রাঘোরে চলে যাই। ঠিক মধ্যরাতে, আনুমানিক তিনটা তেত্রিশ মিনিটে অদ্ভুৎ এক স্বপ্নে আমার ঘুম ভেঙে যায়। স্বপ্নে দেখলাম একটা হিন্দু বিয়ে খেতে এসেছি অজপাড়া এক গাঁয়ে। সেখানেই পরিচিত একজনের দেখা পেয়ে যাই। স্বপ্নে তাকে মনে হলো সে আমার খুব আপন। তবে তার অবয়ব একেবারেই ঝাপসা লাগলো! শাড়ি সামলাতে কষ্ট হচ্ছিলো। শাড়ির আচলে বেধে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই আমার বাঁ হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো সে।
বিয়ের লগ্ন রাত দশটায়। উঠোনে চেয়ার পেতে বসে আছি কয়েকজন। সময়টা আঁচ করতে পারলাম। বেশ ঠান্ডা। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি হবে। রাত বিশেষত লম্বা। কুয়াশার কারণে আশেপাশে কিছু দেখা যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে শুধু উলুধ্বনির আওয়াজ আসছে।
হঠাৎ করে আকাশ ভেঙে পড়ার মত কান্নার আওয়াজে উঠানের সবাই লাফ দিয়ে উঠলাম। সবার মধ্যে কৌতুহলের প্রতিযোগিতা। দক্ষিণ পাশের একটা ঘর থেকে একজন বেরিয়ে এসে বললো এ বাড়িতে কেউ একজন মারা গিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে শবদাহ করা হবে। আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে বলা হলো। ঘড়িতে নয়টা বেজে পনেরো মিনিট। শুনেছি হিন্দু বিয়ে বেশ লম্বা একটা সময় ধরে, কিছুটা জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সেখানে মাত্র পয়তাল্লিশ মিনিটে কিভাবে শবদাহ করে এসে আবার বিয়ের কাজে হাত দিবে এরা! এত তাড়াহুড়োই বা কিসের! সবকিছু মিলিয়ে হ জ ব র ল এর মত একটা অবস্থা।
কিছুই বুঝতে উঠতে পারলাম না। এদিকে সেই ঝাপসা চেহারার পরিচিত লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে সায় দিলো উঠে পড়ার জন্য। সবার সাথে তাল মিলিয়ে তাদের পেছনে পেছনে হাঁটছি। অদ্ভুৎ একটা ঘ্রাণ। এ প্রথম দেখলাম কান্নার কোনো ছিটেফোঁটা নেই কারোর মধ্যে। ভাবলেশহীন চাহনি। চিন চিন করে শব্দ আসছে পাখির কিচিরমিচিরের। তাও আবার এই অসময়ে? এদিকে যতদূর এগোচ্ছি ঠান্ডা যেন বাড়ছে। কোনো গরম কাপড় সাথে না আনার জন্য নিজেকেই দোষারোপ করছি। পাশের সেই পরিচিত মানুষটাকে আর দেখতে পেলাম না। নিমেষেই যেন হাওয়া হয়ে গেল। খেয়াল করলাম সামনের মানুষগুলো আর আমার মাঝে বেশ লম্বা একটা গ্যাপ। ফোনের ফ্লাশলাইটটা জ্বালিয়ে পেছনে দেখলাম লোকটা আছে কিনা! না, পেছনে আমি আর আমার ছায়া ছাড়া কিছুই নেই। এবার দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। মেয়ে হিসেবে অনেকটা সাহসী আমি কিন্তু কোনো এক অজানা ভয় ভর করলো আমার ভেতরে। কোথায় যাচ্ছি? কেনো যাচ্ছি? কোনো প্রশ্নের উত্তর মিললো না যেন!
আচমকা আমাকে চমকে দিয়ে লোকটা খিলখিল করে হেসে উঠলো। মনে মনে রাগ করলেও একটা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এবার দুজনে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে বাকিদের দলে যোগ দিলাম। সমস্ত যোগাড়যন্ত্র হয়ে গেল খুব দ্রুত। ওদিকে বিয়েতে কন্যার লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার শঙ্কা। মাত্র পনেরো মিনিট বাকি আছে দশটা বাজতে। যেন চিন্তাটা একাই আমার! সব কিছুর জটলা মাথা থেকে নামিয়ে শ্বশানঘাটের ভেতরে প্রবেশ করলাম। চিতার আগুন জ্বলজ্বল করবে একটু পরেই। নিষ্পলক দৃষ্টি একেকটা অবয়বের চোখে। যেন কঠিন শোকে পাথর হয়ে গেছে সবাই। এবার মৃতদেহ চিতায় ওঠানোর পালা। প্রক্রিয়াটা খুব কাছ থেকে দেখার জন্য আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলাম। হঠাৎ আমার হৃদস্পন্দন যেন থেমে গেলো!
স্পষ্ট দেখতে পেলাম তাকে। যাকে কিছুক্ষণ আগেই বিয়ের কন্যার পোশাকে মুড়িয়ে থাকতে দেখেছি। খেয়াল করলাম কাছে যেতে যেতে এতটাই কাছে গিয়ে পৌঁছেছি যে তার মুখটা ঠিক আমার মুখের সামনে। অদৃশ্য কতগুলো হাত যেন পেছন থেকে তাকে শূন্যে ভাসিয়ে রেখেছে। তার চোখ জোড়া বন্ধ অথচ মুচকি হাসির ঢেউ ঠোঁট জুড়ে। পেছন থেকে দৌড়ে পালাতে গেলাম। চোরাবালির মত ডুবে যেতে থাকলাম আস্তে আস্তে। প্রচন্ডভাবে কেউ আমাকে পেছন থেকে ঢাক্কা দিলো। পেছনে দাঁড়িয়ে আমার সাথে থাকা সেই লোকটা খিলখিল করে হাসছে। তার অকস্মাৎ আগমনে আমার হৃদস্পন্দন থেমে গেল। আবার ও আরেক ধাক্কায় হুমড়ি খেয়ে পড়লাম ঠিক মেয়েটার মুখের উপর। মুচকি হাসি যেন নিমেষেই পরিবর্তিত হলো অসম্ভব রাগে, অপমানে আর বিস্ময়ে। মেয়েটা আমাকে তখনই কিছু একটা বলতে চাইলো। তার চোখের ধারালো দৃষ্টিতে লাঞ্চনা আর কিছু বলতে না পারার করুণ আভাস পেলাম। আমি পালাতে চেষ্টা করলাম। আমাকে আরো জাপ্টে ধরলো সে। যেন শুনতেই হবে সে কি বলতে চায়! কেউ যেন বুকের উপর পাহাড়সম ভারী কিছু দিয়ে চেপে ধরলো আমাকে। চিল্লানো শুরু করলাম। ‘কি হয়েছে তোর?’
চোখ খুলে দেখলাম সেই মাদুরেই শুয়ে আছি, হাতে গল্পের বইটা মুঠ করে ধরা। বাবা, মা আর ছোটভাই আমার দিকে কৌতুহলী চেহারা বেশে তাকিয়ে আছে। সেমিকোলনের মত লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ‘কিছু হয়নি তো!’
August 10, 2023
টেলিফোন রিং, ক্রিং ক্রিং ক্রিং
১৯৯৮ সাল। একটা টেলিফোন রিং। ক্রিং ক্রিং ক্রিং…
নাফিসা কেবল চুলায় চা বসিয়েছে। ভাবছে চুলাটা বন্ধ করে টেলিফোনটা ধরতে যাবে কিনা! যেতে যেতে একবার কল বেজে বন্ধ হয়ে দ্বিতীয়বারের মতন টেলিফোনটা বাজছে।
হ্যালো! কে বলছেন?
ওপাশ থেকে কেউ কথা বলছে না। তবে আশেপাশের শব্দ ভেসে ভেসে আসছে। এই নিয়ে কয়েক ডজন কল এসেছে দু’সপ্তাহ ধরে। প্রতিদিন কম করে তিন-চারবার কল আসে অথচ কেউ কথা বলে না। নাফিসা কয়েকবার ভেবেছে টেলিফোনের লাইনটা কেটে দেওয়ার জন্য কিন্তু এটাই তার পরিবার, অফিসের সাথে যোগাযোগ করার একমাত্র মাধ্যম।
তবে এর এক একটা সমাধান করতে হবে শীঘ্রই। এভাবে এমন জালাতন সহ্য করে আর কতদিন?
দ্রুত চা শেষ করে বাজারের উদ্দেশ্যে যায়। ফ্লাটে সে একাই থাকে। তবে এমন একা থাকাটা বাসা থেকে মানতে পারেনা তার বাবা মা। বিয়ের জন্য বাসা তাড়া দেয় হরহামেশা। অফিসের টুকটাক ঝামেলা তো আছেই সাথে রোজ রোজ ও বাদে সবার ওর বিয়ের জন্য কনসার্ন ভালোলাগেনা।

ফর্সা, পাতলা, লম্বা গড়নের নাফিসা। একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কল্পনা করতে থাকে একজন গ্রীক দেবতার পাশে। তীক্ষ্ণ কলার বোন ছুঁয়ে সে ডাকছে তাকে। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে গিয়ে গ্রীক দেবতা টিপের বেশে আয়নার লেপ্টে থাকে। সেখান থেকে ছোট একটা লাল টিপ কপালে পড়ে তারাহুরো করে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে।
ফার্মগেটে এসে সে বিশাল জ্যামে আটকা পড়ে। থামা বাসে উঠে আসে একজন মধ্য বয়স্ক লোক, দুইজন হিজরা। হিজরা দু’জন ধেই ধেই নেচে এর ওর কাছ থেকে টাকা চাইতে থাকে। নাফিসার কাছে আসলে একটা দশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে ঝামেলার ভয়ে তাড়াতাড়ি বিদেয় করে দেয়। তবুও তাদের মুখে শুষ্কতার রেশ কাটেনা। এদিকে মধ্যবয়স্ক লোকটা ইতিমধ্যে ওর ডানপাশের সিটটায় বসা। খুব সতর্কতার সাথে চেষ্টা করছে যেন তার কনুই তার গা স্পর্শ করে। নাফিসা এবার ড্যাবড্যাব করে লোকটার দিকে ফিরে তাকিয়েই থাকে। উনি এবার একরকম ভয়ে পেয়ে একটু সরে বসে। ও ভাবতে থাকে কোথায় গেলে মেয়েরা নিজেদেরকে একটু নিরাপদ মনে করবে। যেখানে এইসমস্ত লোকদের লেজ গুটিয়ে পালানোর কথা সেখানে এক-একটা মেয়ে প্রতিদিন নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে কোনো না কোনো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে পড়ে। এত এত নিরাশা ভীড় করে ওর মাথায়। ভাবতে থাকে কোথায় গিয়ে এসব ভাবন থেকে মুক্তি পাবে। কোত্থেকে হঠাৎ একটা লাইন হঠাৎ মাথায় ঢুকে যায়। সারাদিন কানে বাজতেই থাকে ভুভুজেলার মত।
“সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা
আশা তার একমাত্র ভেলা”
ও ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে রক্ত বের করে ফেলে। চিন্তা করে এবার ভেলা হিসেবে কি আশা করা যায়। যে আশা ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।
অক্টোবরের শেষে শীতের একটা আমেজ আসে। সেটা সবাই লক্ষ্য করে। লক্ষ্য করে না যেটা সেটা হচ্ছে ঠিক লেইট সেপ্টেম্বরে দিনে ভ্যাপসা গরমের পরে রাতে যে এক ধরনের মৃদুমন্দ হাওয়া বয়-সে সময়টা। কেমন জানি শীত আসবে আসবে একটা ভাব। জানিয়ে রেখে যায় সে আসবে কিন্তু খানিকটা পরে। অনেকটা শীতের এই আগাম বার্তার মত নাফিসাকে কেউ জানিয়ে রাখেনা সে আসবে তার জন্য। কিন্তু ও অপেক্ষা করে, করতেই থাকে। ছোটবেলায় দেখেছিলো দাদীকে উল দিয়ে সোয়েটার বুনতে। কত যত্নই না লুকিয়ে থাকে শুকনো চামড়ার ঐ দুই হাত জুড়ে! এমন উষ্ণতা পেটে মোচড় দিলে মনে হয় অপেক্ষাও বুঝি এত মধুর হয়! মাঝেমধ্যে নাফিসার চোখে ভেসে ওঠে পুরনো এক অবয়ব। প্রশ্নবোধক চিহ্ন দাঁড় করাতে হয়েছে। যেমনঃ কি যেন জানতে চাই জানতে চাই একটা ভাব! বিনিময় করা বাক্যের লেজে ঝুলতে ঝুলতে সেটাকে টেনে ইলাস্টিকের মতন লম্বা করতে ইচ্ছে করতো। আফসোস! একতরফা টানলে সেটা আবার তার নিজের দিকেই ফিরে যায়। এক সময় আবেশ এর মঞ্চে প্রবেশ, কাগজের টুকরোও চিরুনী বেয়ে উঠে এসেছিলো! কৌতুহল এর উপর মুগ্ধতা নামক পরগাছা জন্মাতে শুরু করে। আস্ত গাছটাকেই না উপড়ে ফেলতে হয়!
হঠাৎ করে টেলিফোন বেজে ওঠে প্রতিদিনের মত। এবার আর ও ধরতে যায় না। বেজে বেজে একটা সময় থেমে যায়। সন্ধ্যার পরে আবারও টেলিফোনটা বাজে। ‘কি ব্যাপার আপনাকে এতবার ফোন করলাম ফোন ধরলেন না। প্রায়ই এরকম করেন। আপনি আদৌ চান তো কাজটা ঠিকঠাক করতে? নাকি আপনার বদলে নতুন রিক্রুমেন্ট এর জন্য আমাদের ভাবতে হবে?’
নাফিসা এবার জিহবায় কামড় বসিয়ে গড়গড় করে স্যরি স্যার, স্যরি স্যার আওরাতে থাকে। ওপাশ থেকে খট করে লাইনটা কেটে দেয়। এবার ও সারারাত ধরে ভাবতে থাকে কাল অফিসে গিয়ে স্যারকে কি বলবে! কিসের অজুহাত দিলে এবারের মতন অন্তত রক্ষা পাওয়া যাবে। এই চাকরিটা ওর খুবই দরকার। এতটা স্বাধীন ভাবে থাকতে পারবে না যদি ওকে কুমিল্লায় বাবা-মার সঙ্গে থাকতে হয়!
ভাগ্য ভালো এবারের মতন তেমন কিছুই শুনতে হয় না নাফিসার। দু-য়েকবার হলেও হয় কিন্তু প্রায়ই প্রয়োজনের সময় ওকে ফোনে পাওয়া যায় না। এ নিয়ে অফিসের বস কিংবা বাবা-মায়ের অভিযোগের সীমা নেই। সাথে যুক্ত হয়েছে অসভ্য কারোর ফোন করে ডিস্টার্ব করা! আরে এত যখন জালাতন করার ইচ্ছা, সামনে এসে জালাতন কর। এভাবে তো মুখ না দেখে কাউকে দুটো গালি দিয়েও শান্তি পাওয়া যায় না। ও অফিসের এক কলিগকে জানায় এই অবস্থার কথা। সে ওকে নতুন টেলিফোন আনার উপদেশ দেয়। নাফিসা সেটা করতে চায় না একটা কারণে। ওর ধারণা একটা কল আসবে। টেলিফোনের তার বেয়ে সমস্ত উষ্ণতা তার কান থেকে পেট অব্দি পৌছাবে। সবকিছু পাল্টে যাবে সিনেমার মতন।
এভাবে চলতে চলতে সময়ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে ঘড়ির কাটার মতন। কিন্তু নাফিসা ক্লান্ত হয় না। প্রতিদিন যে নামহীন ব্যাক্তির কল আসে ও চিন্তা করতে থাকে কে হতে পারে সে! সন্দেহ করে কাউকে। সন্দেহ করা ব্যাক্তিই যদি হয় কেনো সে কথা বলে না? কি অপরাধবোধে ভুগতে ভুগতে গলার স্বরটুকুকে সে পরাধীন করে ফেলেছে!
একসময় সে মানুষটা কথা বললে মনে হত চারপাশে বেহালা বাজছে। ঘোর নামক অতল গহব্বর সমস্ত অস্তিত্বকে চুম্বকের মতন টানছে। যে অন্ধকার অর্ধেক ডুবন্ত জাহাজের একজন নাবিকের চোখের জ্যোতিতে ধরা পরে সে অন্ধকারে নিলীন হয়ে যাওয়াটাও নিছক কোনো ভ্রম নয়। তবে ধোয়া-ছোঁয়ার বাইরের মানুষকে আর কতটুকুই বা ধরে রাখা যায়! ধরতে পারলে মানুষ ছেঁড়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেয়। আর যে ধরতে গেলেই সব পিছলে যায়, তার কথা লিখতে গেলে শুধুশুধু কালির অপচয়।
ভয় হত নাফিসার। সেজন্য এ ভয়কে একটা বৈয়াম এ ভরে আটকে রেখেছে ও। সেদিন ভয় কেটে যাবে সেদিন বৈয়াম এর মুখ খুলে দিবে। আলাদিনের দৈত্যের মত সব ভয় বৈয়াম থেকে বেরিয়ে আসবে। আর ভয় কেটে না যাওয়ার শঙ্কা থাকলে বৈয়ামটাকে একটা মৃত নদীতে ফেলে দেবে। কোনক্রমেই ভাসতে দেওয়া যাবে না আর।
আবার ও সেই টেলিফোন রিং। ক্রিং ক্রিং ক্রিং…
পিন পতন নিরবতা। নাফিসা ফোনটা কানে ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। যেন ওর সিক্সথ সেন্স বলে, অপেক্ষা করো আর কিছুক্ষণ। ও চোখ বন্ধ করে মিটমিটিয়ে হাসে। জানালা থেকে তীর্যক কমলা আলো ওর কপালে চিকচিক করে নিখাঁদ স্বর্ণের মত। সেমিকোলন এর মতন দীর্ঘ নিশ্বাস সমস্ত নিরবতার ইতি টানে। অবশেষে ওপাশ থেকে বাজতে থাকে,
‘আই ওয়ান্স হ্যাড আ গার্ল
অর শ্যুড আই সে, সি ওয়ান্স হ্যাড মি?
সি শো’ড মি হার রুম
ইজ’ন্ট ইট গুড, নরওয়েজিয়ান উড?’
July 30, 2023
Clueless dreams
As my eyelids slowly forward in between them they were turning into two fishes gasping for breath. I dreamt of a meadow land surrounded with wild sheeps moaning to death. Crimson blood plastered on the eyes I sensed of someone with blueberry heart enchanted with oblivion to the past. I dreamt of a shepherd boy. A lone wolf guarding of a flock of sheeps. It was told that he was eaten by worms from the willows. I looked for the boy. But what would I do with the iron with rust?

As I larked between my eyes I saw a bottomless well shaped hole. Echoes of my words coming back to me with empty hand. As someone is haunted with old house sinisters, clinging by chest to chest. Diseases spreaded all over the village. Maladies and maladies, an never ending loop. My bottomless well is now bottomful with the dead bodies all around. The well that I I’ve dreamt about slowly becoming an old grimed labyrinth. Like a person with facades.
As my eyelids slowly backwards from each other I saw a mirror made of camouflage, radiating clueless dreams through my eyes. I touched the mirror. Lullabies start floating from it. Raspier the voice, stronger the aroma. Melodies like a soul spirited away became a blunt cigar butt. Awaken from sleep I started to figure out my clueless dream. Washed my face, ate breakfast and wanted to go for a walk.
Hence a telephone ring, an alert, and an epidemic.
July 29, 2023
রেইনট্রি
জানিনা। কিছুই জানিনা। একটা রেইনট্রি এর সামনে দাঁড়িয়ে এক লোক। লোকটা কে সেটা জানিনা। গায়ে কাঁদা মাখানো নোংরা কাপড়। বৃষ্টির কোনো চিহ্ন নেই, রেইনকোট এর মত কিছু একটা পড়ে আছে। লোকটা দেখতে কেমন খানিকটা পরে বলছি! একটু সংশয় আছে এ ব্যাপারে। আশ্চর্যজনকভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, ফ্যালফ্যাল করে। না, আমার কাছে তাকে মানসিক ভারসাম্যহীনও মনে হচ্ছে না একদমই। আমাকে কি তার নিজের কোনো জানাশোনা মানুষ মনে হচ্ছে? আদতে এটা কোনো ভ্রম নয় তো!

একটু অদ্ভুত লাগলো, ব্যাটা তো চোর-বাটপার ও হতে পারে। তাকে এড়িয়ে চলতে তাই উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলাম। অসম্ভব বাতাস শুরু হয়েছে। বৃষ্টির আগে আগে মাটিতে যে অদ্ভুত সুন্দর একটা ঘ্রাণ থাকে সেটা শরীরের সমস্ত জায়গায় প্রবেশ করেছে। দুই পাশের গাছগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে খুশিতে হাত-পা ছুঁড়ে নাচানাচি করছে।
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। রাস্তা ছেড়ে একটা টং এর কাছে এসে দাঁড়ালাম। দু’ এক ফোঁটা বৃষ্টি আমার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে এসে আটকে পড়েছে। বাদামী রঙের একটা সুতির শার্ট পড়েছি। বৃষ্টির সামান্য পানিতেই গায়ের চাপা রঙের জন্য শার্টের কিছু কিছু জায়গা খয়েরি দেখাচ্ছে।
কানে এয়ার বাডস গুজতেই স্ক্রিনে দেখলাম পিংক ফ্লয়েডের “উইশ ইউ ওয়ার হেয়ার” পজ করা। প্লে করে বৃষ্টির আঁচ কমেছে কিনা দেখতে বাইরে উঁকি দিলাম। উল্টোটা হয়েছে, আরো বেড়েছে। গানটাও আর ভালোলাগছে না। কেউ এখানে থাকুক এটা আমি এখন একদমই চাচ্ছি না। উল্টা চলে যেতে পারলে বাঁচি!
অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। কেন যে উল্টা পথে আসতে গেলাম লোকটাকে দেখে কে জানে! তবে সামনেই বটতলা। এ জায়গায় নিয়মিত যাতায়াত করা হয় না। জানাশোনাও কম।অনেকটা পথ ঘুরতে হবে এ পথ দিয়ে গেলে। আর ওখানে গেলে বাস ধরতে পারবো কিন্তু তাও খানিকটা পথ। পুরো ভিজে যেতে হবে।
সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে ভুগতে এবার টং ছেড়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। দূর থেকে কিছু একটা আসছে। ভাবলাম সিএনজি, গাড়ি, বাস, ট্রাক যা পাই তাতেই উঠে যাবো! সন্ধ্যা হয়ে আসছে এজন্য হেডলাইটের আলো দেখা যাচ্ছে। লিফট এর উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতে আসলাম, উল্টো সা করে এসে আমার সমস্ত জামাকাপড় এ কাঁদা-পানি দিয়ে একাকার করে দিয়ে গেলো! রাগ হয়ে লাভ নেই এজন্য চুপচাপ রাস্তায় হা করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। পাশ দিয়ে টং থেকে বেড়িয়ে এসে কেউ ডাক দিলো,
-ভাইজান আমার একখান ছেড়া রেইনকোড আছে। ম্যালাক্ষণ ধইরা দেখতাসি খাড়ায় আছেন, যদি মনে করেন কাইল ফেরত পাডাইতে পারবেন তয় নিয়া যান।
কথাটা বলেই উনি একটা ছেড়া রেইনকোট আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। আমি আর কোনো উপায় না দেখে রেইনকোটটা পড়ে এবার হাঁটা শুরু করলাম। না, বৃষ্টি কোনোভাবেই থামছে না। বৃষ্টির বেড়ে যাওয়া আর আমার দুর্ভোগ এখন সমানুপাতিক।
রাস্তায় আমি ছাড়া আর কাউকেই দেখছি না। আলো কমে আসছে এজন্য কিছুটা ভয় ও লাগছে। ভূত-প্রেত এর না, মানুষের! মানুষ সুযোগ পেলে সামনে পেছনে সবদিক থেকেই বিপদে ফেলে।
হঠাৎ বৃষ্টির তেজ আরো বেড়ে গেলো! বাতাসের তোড়ে চোখে ময়লা জাতীয় কিছু একটা ঢুকে পড়েছে। তাকাতে পারছি না, চোখ ডলতে ডলতে যা দেখলাম বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ঠিক এক হাত সামনে সেই লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। অস্বাভাবিক অভিব্যক্তি তার চোখে মুখে। আমার মস্তিষ্ক থেকে পা অব্দি শীতল কিছু একটা বয়ে গেলো!
রেইনকোট গায়ে সে দাঁড়িয়ে আছে, অবিকল আমার রেইনকোটটার মত। এবং যেটা অলৌকিক কিন্তু সত্য তা হলো তাকে দেখতে হুবহু আমার মত। পা থেকে মাথা পর্যন্ত একেবারে সব একই। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, সুতির কাঁদাওয়ালা শার্ট আর উপরে হলুদ রেইনকোট। আমার দিকে তাকিয়ে আবার ও হাসছে। হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছি। চোখ বন্ধ করলাম। এবার আমি অন্য এক জগতে। এ জগত অন্ধকার, বিষাক্ত সালফার এ ছেয়ে যাওয়া স্যাঁতসেঁতে ল্যাব্রিন্থ। এর মাঝে বসে কেউ একজন ব্যাঙের মত ডাকছে। ঘ্যাঙরঘ্যাঙ, ঘ্যাঙরঘ্যাঙ। আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। আমাকে ডাকছে, আমার অস্তিত্বকে। কাঁদছি, শব্দ বের হচ্ছে না। আমি এখন অন্তঃসারহীন বায়বীয় পদার্থের মত উবে যাওয়ার শঙ্কায়!
এক, দুই, তিন..
চোখের পাতা খুলতেই দেখলাম আমিও হাসছি। কিন্তু লোকটার দিকে চেয়ে না। দূর থেকে দেখলাম একটা রেইনট্রি এর নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে, তার দিকে। পেছনে ফিরে দেখলাম আগের মানুষটা তার জায়গায় নেই। একদম হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার মতন করে সেও মিলিয়ে গেলো! সে কি অভিন্ন কেউ? নাকি সে-ই আমি? কিংবা আমি-ই সে? আমরা একই অস্তিত্বের কেউ? নাকি দুই পেরিয়ে চার কিংবা ছয় ছাড়িয়ে অসীম?
July 23, 2023
কয়েকটা মাছ এবং সব এলোমেলো
একটা পঁচা পুকুরে কিছু মানুষ বড়শি পেতে বসে আছে। খুব বেশি মাছ নেই পুকুরে। সবার ভেতর টানটান উত্তেজনা। দক্ষতা আর ভাগ্য মিলে বিশাল এক প্রতিযোগিতা। সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে। কারো বড়শিতে মাছ ধরা পড়ছে না। লোকে বলাবলি করছে দু’দিন আগে নাকি কারা এসে সমস্ত পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। তবুও কিঞ্চিত আশায় সামান্য অর্জনের জন্য সারাটাদিন ধরে এখানে পড়ে আছে সবাই। বহু প্রতীক্ষার পরে হঠাৎ একজনের বড়শিতে একটা মাছ উঠলো। হুলুস্তুল কান্ড বেঁধে গেলো সবার মধ্যে। চরম হিংসা থেকে শুরু তর্কাতর্কির এক পর্যায় রুপ নিলো ধস্তাধস্তিতে। শেষমেশ ওই লোকের কপালে মাছ তো রইলোই না বরং পরদিন সকালে গ্রামবাসীরা তাকে আবিষ্কার করলো মাছ হয়ে পুকুরে ভাসতে।
এক লাফে ঘুম থকে উঠে বসলো নাহিদ। নিজের শরীর ভালোমত ছুঁয়ে দেখছে। মাছ নয়তো সে! এমন বিদ্ঘুটে স্বপ্ন ও আগেও দেখেছে। এমন সব স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি আদৌ আছে? খুব জানতে ইচ্ছে করে ওর। অসময়ে ঘুমানোর এই একটা অসুবিধা! কিছুই ভালোলাগেনা এ সময়ে। নিজেকে নবজাতক শিশুর মত মনে হয়। আশেপাশের সবকিছু অচেনা-অজানা লাগে। বিশ্রী এক ফ্যাকাশে অনুভূতি!
নাহিদরা দুই ভাই-বোন। ছয় বছর বয়সে বড় বোন এখন শশুরবাড়িতে কলুর বলুদ খাটছে। মাও বাসায় নেই আজ। ছোট খালার বাসায় গিয়েছে। আর বাবা অনেক আগেই জ্ঞাত হয়েছেন।
ঘড়িতে আটটা বেজে দশ মিনিট। বাসি ভাত আর একটা ডিম ভাজা দিয়ে রাতের খাবার শেষে ছাদে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। আজকের রাতটা নিস্তব্ধ আর তারা গুলো অন্যান্য রাতের তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল। পুরো আকাশটা আজ বেশ আড়ম্বর করে সেজেছে। তারা গুনতে গুনতে এখন আকাশকুসুম কল্পনা করছে নাহিদ। অনেক টাকা দরকার ওর। টাকার বিছানায় শুয়ে শুয়ে ওসব অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতেও আরাম লাগার কথা! ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলে এজন্য ভাবনা-চিন্তাও বাদ দিয়ে দিয়েছে। একটা সস্তা চাকরি পেতে গেলেও যে হাড়ভাঙাখাটুনি চাই!
পরেরদিন সকালে খুব তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হয়।উদ্দেশ্য, টিউশনির টাকা আনতে যাবে। ছাত্রের মা বলে দিয়েছে এরপর থেকে আর পড়াতে যেতে হবে না। কেনো যেতে হবে না ও জানতে চায়নি। যার যা ইচ্ছা করুক! এটা নতুন কিছু নয়!
বাসায় ফিরে টের ও পেলো মা চলে এসেছে। রান্নাঘর থেকে লাউ এর তরকারির মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে। কিছু টাকা রেখে বাকিটা মায়ের কাছে দিয়ে দিলো সে। স্বামীর পেনশনের টাকা আর টুকটাক বুটিক এর কাজ করে সংসার চালান নাহার বেগম।
দুপুরের খাবার সেরে বিশাল এক ঘুম দিয়ে নাহিদ দেখলো বাসায় কেউ নেই। একটা কল আসলো আননোন নাম্বার থেকে। রিসিভ করে জানতে পারে একটা ফার্ম থেকে কলটা এসেছে। দু’মাস আগে যে চাকরির জন্য ও এপ্লাই করেছিলো সেখান থেকে ওকে ডেকেছে। ধুর! স্ক্যাম ছাড়া আর কিহ! পরে মেইল চেক করে দেখলো ঠিকই তো ও এপ্লাই করেছিলো সাথে সাথে এপোয়েন্টমেন্ট লেটার ও এসেছে। বলে দিয়েছে কবে কি করতে হবে। স্বপ্ন না বাস্তব বুঝতে পারছে না সে। সবকিছু একটা ঘোর মনে হচ্ছে। পাশে মায়ের ঘরে গিয়ে বুঝতে পারলো মা নেই। কোথায় গিয়েছে জানেনা। খালাকে ফোন দিলে উনি বললেন, ‘এই বোকা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস নাকি আমার সাথে ফাজলামি করছিস? তোর মা কোত্থেকে আসবে?’ কিছু বোঝার বাকি রইলো না। সব কেমন গোলমেলে, ধোঁয়াশা লাগলো!
এর মাঝে কিছু সময় পার হলো। বিশাল বড় ধাক্কা আর ঘোর কিছুতেই কাটছে না। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। বুঝে উঠতে পারছে না কীভাবে কি হয়ে গেলো!
এক মাস পর নাহিদ চলে গেলো ফার্মটাতে। এখানে আরো অদ্ভুৎ কান্ড যেটা ঘটলো সেটা হচ্ছে, তার পোস্টে আরো দুজনকে ডাকা হয়েছে। তিনজন একই সারির পরপর তিনটা চেয়ারে তিনজন বসা। পর্যায়ক্রমেঃ নীল, লাল, হলুদ। ফার্মের কেউ একজন তাদের তিনজনকে ৩ টা খাম দিয়ে গেলো। এবং সাথে বলা হলো যে খামে ছোট একটা লাল কাগজ মিলবে তাকে এই পোস্টটা দেওয়া হবে। নাহিদ খামটা খোলার আগে ওর বাম ও ডানে বসা দু’জনের খামের দিকে চোখ বুলালো। ফলাফলঃ তারা নিরাশ। তার খামেই যে কাগজটা আছে তা বুঝতে আর বাকি রইলো না। চরম উত্তেজনায় লোকটার কাছে কাগজ সহ খামটা ফিরিয়ে দিলো। ‘কংগ্রাচুলেশনস, ইউ আর জয়েনিং ফ্রম টুমরো।’ পেছন ফিরে দেখলো বাকি দুইজন লোক নেই। এক মিনিটে কোথায় যেন চলে গিয়েছে। এবার পাশের করিডোর এ দাঁড়িয়ে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলো নাহিদ। গ্যাসলাইটে আগুন জ্বালালো, সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎটাও চলে গেলো। ধারাম করে একটা শব্দ, নিজেকে আবিষ্কার করলো মেঝেতে। পেছনে সেই দুজন। ঝাপসা চোখে দু’জন কে চারজন দেখাচ্ছে। হাতে রডের মত কিছু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে আরেকটা বারি দিলো ঠিক বুকের উপর। এবার তার হাত-পা, চোখ বেধে একটা বস্তায় ভরে কোথাও একটা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নাহিদ সব ভেতর থেকে সব টের পাচ্ছে কিন্তু ওর মুখ থেকে এক ফোঁটাও শব্দ বের করতে পারছে না। এ কেমন ধূম্রজাল এ পড়েছে ও? বারবার নিজের কাছে প্রশ্ন ছুড়ছে। হঠাৎ ভেতর থেকে রুক্ষ কন্ঠস্বর ভাসছে। ‘মালডারে এই পঁচা ডোবায় ফালায় দে। হালায় আমাগোর চাকরি খাইয়া ফালাইসে। ফালা অরে।’
নাহিদের হৃদ স্পন্দন শঙ্কিত অবস্থায়। মাছ হয়ে ভেসে না ওঠার করুণ আকুতি মিনতি জানাচ্ছে। হাতুড়ি পেটানোর মত করে ভারী কিছু বুকের উপর চেপে রাখা হয়েছে। উঠতে পারছে না। উঠতে গেলে আরো চেপে ধরছে। হঠাৎ তীব্র বজ্রপাতের সাথে বৃষ্টি শুরু হলো, বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা চোখের কাপড়কে আরো পুরু করে দিলো। অদ্ভুত এক অদৃশ্য শক্তি এসে কাপড়ের গিট আলগা করে দিতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করলো তার ঘরের মেঝেতে। ঘামে ভেজা সমস্ত শরীর হাঁসফাঁস করছে।সেমিকোলন এর মত দীর্ঘ এক শ্বাস নিলো। আশেপাশে কেউ নেই। রান্নাঘর থেকে প্রেশার কুকারের উইসেল এর শব্দ আসছে।
এতক্ষণ যা যা ঘটেছে তার সবই কি স্বপ্ন দেখেছে নাহিদ? স্বপ্নের ভেতরে স্বপ্ন এবং সে স্বপ্নের ভেতরেও স্বপ্ন! নিজের গায়ে চিমটি কেটে নিশ্চিত হলো ঝড় থেমে গিয়েছে।
Shoroli Shilon's Blog
- Shoroli Shilon's profile
- 8 followers
