Rafan Ahmed's Blog, page 7
September 15, 2019
কে ছিলেন মুহাম্মাদ (ﷺ)? [Who was The Prophet Muhammad?]
আজ থেকে প্রায় ১৪৫০ বছর আগে আরবের ধূসর মরুর বুকে এক মশাল
জ্বলে উঠে, যার আলো পূর্ব থেকে পশ্চিমকে আলোকিত করে, মানবের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছে। তিনি
এমন এক ক্ষণজন্মা মহানায়ক যিনি মানব সভ্যতার ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ! (1) তাঁর তিরোধানের এত বছর পরও সেই আলো কাঁপিয়ে তুলছে
অত্যাচারীর মসনদ।
তাঁর নাম মুহাম্মাদ ইব্নে আবদুল্লাহ্ (ﷺ)। বিখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী জন উইলিয়াম ড্রেইপার লিখেন,
“ … (রোম সম্রাট) জাস্টিনিয়ান এর মৃত্যুর চার বছর পর … আরব ভূমির মক্কাতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি, যিনি সকল মানুষের মাঝে মানবজাতির উপর সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করেছেন – তার নাম মুহাম্মদ, ইউরোপীয়রা যার উপাধি দিয়েছিল “প্রতারক” (impostor) … !”(2)
মুহাম্মদ (ﷺ) এর জন্ম হয় তার বাবার মৃত্যুর পর ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এক সোমবারে
সভ্যতার কেন্দ্র থেকে দূরে মক্কার হাশিম বংশের কুরাইশ গোত্রে। (3.1, 3.2) পরবর্তীতে মা ও দাদাকে হারানোর পর তার দায়িত্ব গ্রহন করেন
চাচা আবু তালিব। (4) কিন্তু চাচার অর্থাভাবের কারণে মরুর সংগ্রাম মুখর
পরিবেশে অল্প বয়সেই রাখালের কাজে নামতে হয় জীবিকার সন্ধানে। (5)
তৎকালীন অধিকাংশ আরবের মতই লেখাপড়ার কোন সুযোগ পান নি তিনি।
তিনি ছিলেন “উম্মী” অর্থাৎ জানতেন না লিখতে বা পড়তে। (6.1, 6.2) অন্যান্য কুরাইশদের মতই ব্যবসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন
তিনি। ২৫ বছরে এসে প্রথম বিয়ে করেন, তাও আবার পনের
বছর বড় দু’বারের বিধবা খাদিজা (রদ্বিয়াল্লহু ‘আনহা) কে! (7)
তৎকালীন ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও সংগ্রাম মুখর পরিবেশ বিবেচনায়
কোন মানুষের পক্ষে মানব সভ্যতায় কিইবা অবদান রাখা সম্ভব ছিল ? মক্কার লোকদের কাছে তিনি অত্যন্ত বিশ্বস্ত, সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাকে মক্কার
মানুষেরা ” আল-আমিন (বিশ্বস্ত), আস-সাদিক
(সত্যবাদী)” বিশেষণে আখ্যায়িত করত। বিভিন্ন সামাজিক বিরোধিতার নিরসনে তার
সিদ্ধান্ত খুশি মনে মেনে নিত। (8)
মহাবিশ্বের সকল কিছুর স্রষ্টা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা, সমস্ত ক্ষমতার উৎস একমাত্র মহান আল্লাহ্ – নির্দ্বিধায়
স্বীকার করার (9.1) পরও তার সান্নিধ্য অর্জনে মধ্যস্থরূপে বহু সৃষ্টির
উপাসনা (9.2), অত্যাচার, দুর্নীতি, শোষণ, যুদ্ধ, অশ্লীলতা, নারীর অবমাননা
প্রভৃতি পূর্ণ গোত্র নির্ভর সমাজে তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যেতে থাকেন। (9.3)
৬১০ খ্রিস্টাব্দের রমাদান মাসে হেরা গুহায় নির্জনে অবস্থান
কালে তিনি পরম স্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হন, যা নিয়ে আসেন সম্মানিত দূত জিবরিল (Gabriel)। (10) New Catholic Encyclopedia অনুযায়ী,
“… মুহাম্মদ স্বয়ং এ ধরনের অভিজ্ঞতার সামনে আতংকগ্রস্থ, সংশয়ী ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রী-স্বজনদের কাছ থেকে আশ্বস্ত হওয়ার পরই তার প্রত্যয় জন্মালো, সত্যিই তিনি স্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়েছেন … ” (11)
তাঁর আহ্বানে যারা সাড়া দেন তাদের অধিকাংশই ছিল তার আত্মীয়
ও পরিচিতজনদের মাঝে, যারা জানতেন তার সততা, নিষ্ঠা, সত্যবাদিতা ও সচ্চরিত্র সম্পর্কে। (12) প্রায় ৩ বছর পর স্রষ্টার নির্দেশে তিনি প্রকাশ্যে স্রষ্টা
প্রেরিত বাণী প্রচার শুরু করেন এবং ঘোষণা করেন যে, সকল প্রকার
উপাসনা ও সর্বক্ষেত্রে আনুগত্য পাওয়ার একমাত্র যোগ্য সত্তা হলেন পরম স্রষ্টা মহান
আল্লাহ এবং তার প্রজ্ঞাপূর্ণ ইচ্ছার কাছে জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণরূপে
আত্মসমর্পণ করাই হল একমাত্র মুক্তির পথ, আর তিনি হলেন
স্রষ্টা মনোনীত একজন বার্তাবাহক। (13)
শোষণের সমাজ বদলের এই আহ্বানের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে
তুলে তৎকালীন মক্কার পুরোহিত ও শাসক গোষ্ঠী। শুরু হয় তাদের উপর নির্মম অত্যাচার ।
(14) অত্যাচারের মুখে কিছু অনুসারী আবিসিনিয়াতে (গমন)
হিজরত করেন। (15) অবশেষে সকল গোত্রের সম্মিলিত হত্যা প্রচেষ্টার মুখে
তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করে ইয়াসরিব (মদীনা) -এ হিজরত করেন। (16) মদীনায় পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠে ইসলামি রাষ্ট্র। এরপর সত্যের
সংগ্রামে জীবনের শেষ দশকে এসে জড়িয়ে পড়তে হয় একের পর এক যুদ্ধে। অবাক করার মত
ব্যাপার হল, তার অংশ নেয়া প্রায় ২৭ টি যুদ্ধে উভয়পক্ষে নিহতের
সংখ্যা ছিল মাত্র ১০১৮ জন! (17) আজ থেকে ১৪৫০ বছর
আগেও যুদ্ধকালীন নীতির যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছিলেন, তা আজকের তথাকথিত সভ্য সমাজও অর্জন করতে পারে নি। (18) তাছাড়া যুদ্ধবন্দীদের সাথে সদাচরণের যে দৃষ্টান্ত তিনি
স্থাপন করেছিলেন (19), ইসলামের তীব্র সমালোচক স্যার উইলিয়াম ম্যুর পর্যন্ত
তার প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন। (20) অথচ তা থেকেও
আমাদের তথাকথিত সভ্য সমাজ বহু দূরে। (21)
Embed from Getty Images
প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হওয়ার পর মাত্র ২৩ বছরের সংগ্রামে এই
নিরক্ষর মানুষটি বদলে দিয়েছিলেন সমাজ, সংস্কৃতি, নৈতিকতা, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি সহ
মানব জীবনের সকল ক্ষেত্র, যা থেকে পরবর্তীতে জন্ম নেয় নব সভ্যতা! পৃথিবীর বুকে
আর কোন বিপ্লব সংঘটিত হয় নি যা এত অল্প সময়ের মাঝে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে
বদলে দিতে পেরেছে। সুপরিচিত সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক ও
রাজনীতিবিদ আলফোনস ডি ল্যামার্টিন বলেন,
“… যদি লক্ষ্যের বিশালতা, তা অর্জনে উপায়ের স্বল্পতা এবং বিস্ময়কর ফলাফল কোন প্রতিভাবান মানুষের ৩টি মানদন্ড হয়, তবে কার সাহস আছে ইতিহাসের আর কোন মহাপুরুষের সাথে মুহাম্মদকে তুলনা করবে? সবচেয়ে খ্যাতিমান মানুষেরা গড়ে তুলেছে সৈন্য বাহিনী, আইন ও সাম্রাজ্য মাত্র। তারা যদি কিছু গড়েও থাকে তা ছিল জাগতিক কর্তৃত্ব মাত্র যা প্রায়শ তাদের চোখের সামনেই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে। এই মানুষটি (মুহাম্মদ) কেবল বাহিনী, আইন, সাম্রাজ্য, মানুষ, রাজত্বের ধারাকেই বদলে দেননি বরং বদলে দিয়েছিলেন তৎকালীন পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশে বাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষকে। অধিকন্তু তিনি বদলে দিয়েছিলেন পূজার বেদী, স্রষ্টার ধারণা, ধর্ম, আদর্শ, বিশ্বাস এবং মানব আত্মাকে। …দার্শনিক, বাগ্মী, স্রষ্টার দূত, আইন দাতা, আদর্শের বিজেতা, যৌক্তিক বিশ্বাসের পুন:প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিমাহীন প্রবল শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি, বিশটি পার্থিব সাম্রাজ্য ও একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের স্থপতি – তিনি হলেন মুহাম্মদ। যে কোন মানদণ্ডেই মানবের মহত্ত্ব পরিমাপ করা হোক না কেন, আমরা জিজ্ঞেস করতেই পারি, আছে কি এমন কোন মানুষ যে মুহাম্মদের চেয়েও মহত্ত্বর … ? ” (22)
বসওয়ার্থ স্মিথ বলেন,
“… রাষ্ট্র ও ধর্ম দুই দিকের প্রধান ব্যক্তিত্ব, তিনি (মুহাম্মদ) ছিলেন একই সাথে সিজার (রাষ্ট্রনায়ক) এবং পোপ (ধর্মগুরু)। তিনি এমন ধর্মগুরু ছিলেন যার ছিল না পোপদের মত গাম্ভীর্য, এমন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যার ছিল না সিজারদের মত প্রাচুর্য, সদা প্রস্তুত (সুসজ্জিত) সৈন্য বাহিনী, কোন দেহরক্ষী, ছিল না কোন পুলিশ বাহিনী, না ছিল কোন নির্ধারিত বেতন। যদি কোন ব্যক্তি কখনো যথাযথ ঐশ্বরিক প্রেরণায় শাসন করে থাকে তবে তিনি হলেন মুহাম্মাদ…” (23)
এমনকি তার আদর্শের প্রতিপক্ষরাও তাকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনদাতা
হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কালজয়ী এই মহামানব অজস্র মানুষের চোখের মণি হওয়া সত্ত্বেও
খুবই সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। ইসলামের প্রতি বিরূপ মনোভাব সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও
ড. গুস্তাভ ওয়েইল লিখেন,
“…তাঁর আবাস, তাঁর ভূষণ, তাঁর আহার – এ সবের মাঝেই ছিল এক বিরল সরলতা। তিনি ছিলেন এতই বিনয়ী ও নিরহংকারী যে, তাঁর সঙ্গীদের থেকে কোন বিশেষ শ্রদ্ধামূলক কর্ম গ্রহন করতেন না, আর না তার ভৃত্য থেকে এমন কোন কাজে সাহায্য নিতেন যা তিনি নিজেই করতে পারতেন। … যে কেউ, যে কোন সময় তার সাথে সাক্ষাত করতে পারত। তিনি অসুস্থদের দেখতে যেতেন এবং সকলের প্রতিই অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন … তাঁর বদান্যতা ও উদারতা ছিল সীমাহীন, এবং তেমনই ছিল সমাজের কল্যাণের প্রতি তাঁর উৎকণ্ঠা। চতুর্দিক থেকে তাঁর নিকট অবিরতভাবে আগত অসংখ্য উপঢৌকন ও প্রচুর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ স্রোতের ন্যায় আসা সত্ত্বেও তিনি অতি সামান্য নিজের জন্য রাখতেন, এমনকি তাও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁর সম্পদ তাঁর একমাত্র কন্যা ফাতিমার নিকট নয় বরং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল …” (24)
পশ্চিমা বিশ্বের ধর্মান্ধ এবং ধর্মবিরোধী দুই সম্প্রদায়ের
মানুষই তাঁর চরিত্রকে কলুষিত করার চেষ্টা করে আসছে বহু শতাব্দি থেকেই। নোবেল বিজয়ী
সাহিত্যিক টমাস কার্লাইল তাই আক্ষেপ করে বলেছিলেন,
“… মুহাম্মাদ সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা হল তিনি ছিলেন একজন ছদ্মবেশী প্রবঞ্চক, অসত্যের মূর্ত প্রতীক, যার ধর্ম হল কেবলই অজ্ঞতা ও হীনবুদ্ধিতার সমষ্টি – এ ধারণা এখন যে কারও কাছেই অগ্রহণীয়। (পশ্চিমাদের) মিথ্যার ফুলঝুরি যা প্রবল উৎসাহে এই মানুষটির চতুর্দিকে পুঞ্জিভূত করা হয়েছে, তা কেবল আমাদের জন্যই লজ্জাকর। …” (25)
তাঁর আদর্শকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করার অসংখ্য
প্রচেষ্টা স্বত্বেও আজ হাজার পরও তার আদর্শ ও কর্ম সজীব হয়ে আছে অসংখ্য মানুষের
জীবনে। তার পবিত্র নাম পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত। (26) ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ ডেভিড জর্জ হোগার্থ বলেন,
“… গুরুত্ববহ হোক আর তুচ্ছই হোক, তার দৈনন্দিন চালচলন এমন এক নৈতিক আদর্শ স্থাপন করেছে যা এখন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ সচেতনভাবে অনুকরণ করে চলেছে। মানব ইতিহাসে এমন নিখুঁত মানুষের আর কোন দৃষ্টান্ত নেই যাকে এত পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে অনুকরণ করা হয়… ” (27)
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর জুল্স ম্যাসারম্যান বলেন,
“ … যে কোন জননেতাকে অবশ্যই তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হবে- জনকল্যাণমূলক কাজ করা, এমন এক সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেখানে জনগণ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকবে, তাদের এক ধর্মবিশ্বাস (বা দার্শনিক মত) প্রদান করা। প্যাস্টর ও সল্ক এর মত মানুষেরা প্রথম শর্তে নেতা বলে বিবেচ্য। একদিকে গান্ধি ও কনফুসিয়াস, অন্যদিকে অ্যালেক্সান্ডার, সিজার ও হিটলার হলেন অন্য শর্তে নেতা – দ্বিতীয় বা সম্ভবত তৃতীয় শর্ত বিবেচনায়। যীশু ও বুদ্ধ কেবল তৃতীয় শর্তে নেতা বলে বিবেচ্য। সম্ভবত মুহাম্মাদই হলেন সর্বকালের সর্বসেরা নেতা; তিনি তিনটি দিকেরই সমন্বয় ঘটিয়ে ছিলেন …” (28)
সেক্যুলার গবেষকগণ যখন ইতিহাসের দিকে তাকান তখন একটি অনুমান
নিয়ে তারা পথযাত্রা শুরু করেন, আর তা হলো
পদ্ধতিগত বস্তুবাদ। অর্থাৎ ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার কেবল জাগতিক ব্যাখ্যা দেওয়া হবে, স্রষ্টা আছেন কিনা বা স্রষ্টা মানুষের কাছে কোনো দূতের
দ্বারা বার্তা প্রেরণ করেছেন কিনা এ সম্ভাবনা আগেই বাদ দেওয়া হবে। সেদিক থেকে
চিন্তা করে, মুহাম্মাদ (ﷺ) সম্পর্কে গবেষক
বার্নাবী রজারসন বলেন,
“মুহাম্মদ আল্লাহর পয়গম্বর, আডাম থেকে শুরু করে এব্রাহাম, মোজেস ও জেসাস হয়ে মানুষের দীর্ঘ সারির সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, যিনি মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌছে দিতে সংগ্রাম করেছেন। এমনকি পুরোপুরি সেক্যুলার দৃষ্টিকােণে বিচার করা হলেও তিনি সুপার হিরােই রয়ে যান ৷ বিশ্বের অন্যতম মহান সাম্রাজ্য খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা তিনি, এক নতুন সাহিত্য ও বিশ্বভাষা ক্লাসিক্যাল আরবি ভাষার স্রষ্টা; এক নতুন আরব জাতীয় পরিচয়ের প্রতিষ্ঠাতা; বর্তমানে ১,২০০ মিলিয়ন মানুষের বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতি ইসলামের স্রষ্টা, যা আপনার হিসাবের চেয়েও দ্রুত গতিতে বেড়ে উঠছে ৷ ইউরােপিয় সভ্যতার বিশেষ বিশেষ কিছু চরিত্রের সবচেয়ে সেরা গুণাগুণ একত্রিত করেই কেবল-ধরুন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, ডায়েজিনিস আর অ্যারিস্টটল বা সম্রাট কান্সট্যান্টাইন, সেইন্ট পল ও সেইন্ট ফ্রান্সিস-এর এক ধরনের সমন্বয়-আপনি এই মানুষটির পরিমাপ উপলব্ধি শুরু করতে পারেন।” (29)
Embed from Getty Images
আমেরিকান ইহুদি ইতিহাসবিদ মাইকেল এইচ. হার্ট এর নিরপেক্ষ
গবেষণায় বিশ্বের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকার শীর্ষে রয়েছেন
মুহাম্মাদ (ﷺ) । তিনি তার বহুল আলোচিত গ্রন্থে লিখেন,
“ বিশ্বের (ইতিহাসে) সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় সবার শীর্ষে মুহাম্মাদকে স্থান দেওয়ায়, আমার এই সিদ্ধান্ত পাঠকদের কাউকে হয়তো অবাক করবে এবং অন্য কেউ এই বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করবে। কিন্তু তিনিই হলেন (মানব সভ্যতার) ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় দুই ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সফলতার অধিকারী। … মুহাম্মাদ প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করেছিলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ধর্মকে এবং পরিণত হয়েছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতায়। তার মৃত্যুর ১৩০০ বছর পর আজও তার প্রভাব শক্তিশালী ও ব্যাপ্তিশীল। ” (30)
প্রায় ৬২ বছর বয়সে এই মহামানব বিদায় জানান এই নশ্বর পৃথিবীকে। কিন্তু আজও তিনি বেঁচে আছেন তার আদর্শে, দর্ষণে, চেতনায়, স্বপ্নে, কর্মে।
রেফারেন্স:
(1) ক্যারেন আর্মস্ট্রং, মুহাম্মদ মহানবীর
(স:) জীবনী; পৃ. ৫১ (বঙ্গানুবাদ; ঢাকা, সন্দেশ প্রকাশন, ৪র্থ প্রকাশ: মে
২০১১)
(2) John William Draper, A History of the
Intellectual Development of Europe; vol. 1, chapter XI, p. 329 (London: George
Bell and Stones, York Street, Covent Garden, 1875)
(3.1) ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, আর রাহীকুল মাখতুম; পৃ. ৭১ (ঢাকা, আল কোরআন একাডেমি লন্ডন বাংলাদেশ সেন্টার; ৯ম সংস্করণ, জুন ২০০৩); কাতাদা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত; মুস্লিম, আস্–সহীহ্, কিতাবুস্ সিয়াম (বাবু ইস্তিহ্বাবি সিয়ামি … ওয়াল্
খামিস); খণ্ড ০৩/হাদীছ ২৬২১
(3.2) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কোনো হাদীসে তাঁর জন্মমাস ও জন্ম তারিখ সম্পর্কে কোন তথ্যই
পাওয়া যায় না। সাহাবীগণের মাঝেও এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট মত প্রচলিত ছিল না। যার
কারণে পরবর্তী যুগের গবেষকগণ তাঁর জন্ম তারিখ সম্পর্কে অনেক মতভেদ করেছেন। এ বিষয়ে
১২ টিরও বেশি মত রয়েছে। দেখুন: ইবনু কাছির, আল বিদায়া ওয়ান্
নিহায়া; খণ্ড ২, পৃ. ৪৮২ – ৪৮৫
(ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; ১ম প্রকাশ, সেপ্টেম্বর ২০১০); সীরাত বিশ্বকোষ; খণ্ড ৪, পৃ. ২০৬-২১০ (ঢাকা, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; প্রকাশকাল জুন ২০০২); William Muir,
The Life of MAHOMET; Vol. 01, pp. 14-15 (London, Smith, Elder & CO. 65,
Cornhill, 1858)
(4) Britannica Encyclopedia of World Religions, p.
754 (Encyclopædia Britannica, Inc., 2006)
(5) ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, আর রাহীকুল মাখতুম; পৃ. ৭৬; Martin Lings, Muhammad His Life Based on Earliest Sources, p. 29
(6.1) Dr. Laura Veccia Vaglieri, An Interpretation
of Islam, p. 43 (New Delhi, Goodword Books Pvt. Ltd., 1st Published 2004);
Thomas Carlyle, On Heroes, Hero-Worship, and the Heroic in History, p. 51 (New
York, Longmans, Green and CO., 1906)
(6.2) কোন কোন পশ্চিমা গবেষক উদ্ভট দাবী করেছেন যে “উম্মী”
অর্থ “নিরক্ষর” হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় না এবং যেহেতু মুহাম্মদ ব্যবসায়ী ছিলেন
তাই তিনি সম্ভবত প্রাথমিক অক্ষর জ্ঞান আয়ত্ত করেছিলেন। এ ধারণা সম্পূর্ণ
বিভ্রান্তি। মুহাম্মদ এর সাক্ষরতা সম্পর্কে প্রাথমিক সূত্রে কোন উল্লেখ নেই। চিঠি
লেখার প্রয়োজন হলে তিনি তা শ্রুতিলিখন করাতেন এবং আলী এর মত সাক্ষর কেউ তা
লিপিবদ্ধ করতেন। দেখুন : ক্যারেন আর্মস্ট্রং, মুহাম্মদ:
মহানবীর (স:) জীবনী; পৃ. ১০০, ১৭৮; Muhammad Mohar Ali, Sîrat Al-Nabî and The Orientalists, vol. I A, p.
179-181, 241-252 (Madina Munawwara, King Fahd Complex, 1st edition, 1997)
(7) Britannica Encyclopedia of World Religions, p.
635; Martin Lings, Muhammad His Life Based on Earliest Sources, p. 34
(8) ইবনে হিশাম, সীরাতুন নবী (স); খণ্ড ১, পৃ. ১৮৪-১৮৫
(ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় সংস্করণ জানুয়ারি ২০০৮); T.P. Hugens, A Dictionary of Islam; p. 369 (London, W.H. Allen & Co.,
1885)
(9.1) আল-কুর্আন, ৪৩:৮৭,০৯; ২৯:৬১,৬৩; ৩১:২৫; ২৭:৬০; ১০:৩১; ৩৪:২৪; ৩৯:৩৮; ২৩:৮৪-৮৯
ইত্যাদি। উক্ত আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় তাফসীর ইবনে কাসির, কুর্তুবি, তাবারি, মা’আরেফুল কুর্আন, মাযহারী, ফি যিলালিল কুর্আন দ্রষ্টব্য। আরও দেখুন : Karen Armstrong, Islam A Short History, p. 04 (New York, The Modern
Library, Paperback Edition 2002); Karen Armstrong, A History of God; p. 141
(New York, Ballantine Books, 1st Edition, September 1994); J. L. Esposito,
Islam: A Straight Path; p. 03; Toshihiko Izutsu, GOD and Man in the Qur’an; p.
106-111 (Malaysia, Islamic Book Trust, 2nd reprint 2008)
(9.2) আল-কুর্আন ১০:১৮, ৩৯:৩০। ইত্যাদি।
উক্ত আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় তাফসীর ইবনে কাসির, কুর্তুবি, তাবারি, মা’আরেফুল কুর্আন, মাযহারী, ফি যিলালিল কুর্আন
দ্রষ্টব্য। আরও দেখুন : শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল
বালিগাহ্; খণ্ড ০১/পৃ. ১৮৬-১৮৭, ১৯১ (ঢাকা, রশীদ বুক হাউস; ৩য় প্রকাশ, মে ২০০৮) এবং ফাউযুল কাবীর ফি উসুলিত তাফসীর; পৃ. ১৬-১৭ (ঢাকা, কুতুব খানায়ে
রশিদিয়া; ২য় মুদ্রণ ২০০৪); সাইয়েদ আবুল
হাসান আলী নাদাবী, মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কি ক্ষতি হল ?; পৃ. ১০১-১০২ (ঢাকা, দারুল কলম, ১ম প্রকাশ আগস্ট ২০১৩); M. Lings,
MUHAMMAD his life based on the earliest sources; (chapter II: A Great Loss) p.
4; Dr. Henry Stubbe, M.A., An Account of The Rise & Progress of
Mahometanism; p. 62 (London, Luzac & CO. 1911) Dr. Henry Stubbe, M.A., An
Account of The Rise & Progress of Mahometanism; p. 62 (London, Luzac &
CO. 1911)
(9.3) ক্যারেন আর্মস্ট্রং, মুহাম্মদ:
মহানবীর (স:) জীবনী; পৃ. ৯১; James A.
Michener, Islam: The misunderstood Religion; p. 68 (The Reader’s Digest, May
1955 edition)
(10) ক্যারেন আর্মস্ট্রং, মুহাম্মদ:
মহানবীর (স:) জীবনী; পৃ. ৫১-৫২; Britannica
Encyclopedia of World Religions, p. 755; ইব্নুল কাইয়িম, যাদুল মা’আদ; খণ্ড ১, পৃ. ৪৯-৫০ (ঢাকা, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকাল মার্চ ১৯৮৮)
(11) New Catholic Encyclopedia Retrived from
http://www.encyclopedia.com/religion/encyclopedias-almanacs-transcripts-and-maps/muhammad-0,
আরও দেখুন: বুখারী, আস-সহিহ, কিতাবুল ওয়াহী; খণ্ড ১/হাদীছ ৩, John L Espasito, Islam: The Straight Path; p. 07 (New York, Oxford
University Press, 2005)
(12) Martin Lings, Muhammad His Life Based on
Earliest Sources, chapter XVII, p. 50; Sir William Muir, Life of Mahomet; vol.
02, p. 97-98 (London, Smith, Elder and Co. 65, Cornhill., 1861)
(13) আল-কুরআন, ২৬:২১৪, ১৪:৯৪; ইবনে হিশাম, সীরাতুন নবী; খণ্ড ১, পৃ. ২৩৬-২৩৭; Britannica
Encyclopedia of World Religions, p. 755
(14) Martin Lings, Muhammad His Life Based on
Earliest Sources, p. 78-79; T.P. Hugens, A Dictionary of Islam; p. 371
(15) Martin Lings, Muhammad His Life Based on
Earliest Sources, p. 80
(16) T.P. Hugens, A Dictionary of Islam; p. 372-373; Martin Lings, Muhammad His Life Based on Earliest Sources, p. 116-117
(17) সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, নবীয়ে রহমত (সা.); পৃ. ৩৮৯-৩৯১ (ঢাকা, মজলিস নাশ্রিয়াত-ই-ইসলাম, প্রকাশকাল জুলাই ১৯৯৭); Tanya Cariina Hsu, Western Stereotypes of the Prophet Muhammad: Examples and Causes Retrieved from http://www.mercyprophet.org/mul/node
(18) সিরাত বিশ্বকোষ; খণ্ড ৬, পৃ. ১০৫-১০৬; মুসলিম, আবু দাউদ, মুয়াত্তা, মুসনাদে আহমাদ এবং অন্যান্য; http://www.thedailybeast.com/articles/2012/11/20/prophet-muhammad-s-rules-of-war0.html
(19) সিরাত বিশ্বকোষ; খণ্ড ৬, পৃ. ৪১১-৪১৯; আর রাহীকুল মাখতুম; পৃ. ২৩৫-২৩৭
(20) Sir William Muir, Life of Mahomet; vol. 03, p. 122-123; আরও দেখুন: http://www.huffingtonpost.com/qasim-rashid/prophet-muhammads-rules-o_b_2169309.html
(21)
a. http://www.npr.org/sections/parallels/2016/04/04/472964974/it-was-torture-an-abu-ghraib-interrogator-acknowledges-horrible-mistakes
b. https://en.wikipedia.org/wiki/Abu_Ghraib_torture_and_prisoner_abuse
c. http://www.telegraph.co.uk/news/worldnews/northamerica/usa/5395830/Abu-Ghraib-abuse-photos-show-rape.html
d. http://www.newsweek.com/how-american-torture-prevented-911-victims-get-justice-532447
e. http://edition.cnn.com/2013/10/30/world/meast/iraq-prison-abuse-scandal-fast-facts
(22) Alphonse De Lamartine, Historie de la Turque (History of Turkey); vol. I, p. 154-155 (English Translation; New York, D. Appkenton & Company, 346 & 348 Broadway, 1855)
(23) R. Bosworth Smith, Mohammed and Mohammedanism; p. 265 (London, Smith, Elder, & Co., 15 Waterloo place, 1874)
(24) Dr. Gustav Weil, A History of the Islamic Peoples; p. 27 (Translated from the German of Dr. Weil’s Geschichte der Islamltlschen Volker; Calcutta, University of Calcutta); আরও দেখুন: সহীহ শামায়েলে তিরমিযী; পৃ. ১৩২-১৩৩, ১৫১-১৫৪ (ঢাকা, ইমাম পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ডিসেম্বর ২০১৪)
(25) Thomas Carlyle, On Heroes, Hero-Worship, And The Heroic In History; p. 42-43 (Edited by Henry David Gray, Ph.D.; New York, Longmans, Green, And Co., 1906)
(26) Muhammad, prophet of Islam. The Columbia Encyclopedia, Sixth Edition. 2001-07; Retrieved from http://www.bartleby.com/65/mu/Muhammd.html
(27) David George Hogarth, Arabia; p. 52 (Oxford, 1922)
(28) Jules Masserman, Who were Histories Great Leaders? (Time Magazine, July 15, Special Section, 1974)
(29) বার্নাবি রজারসন, মুহাম্মদ (ঢাকা: রোদেলা প্রকাশনী)
(30) Michael H. Hart, The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History; p. 03 (New York, A Citadel Press book, Carol Publishing Group Edition 1993)
© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.
ইসলামোফোবিয়া [Islamophobia]
বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও মিথ্যা ছড়ানো একটি বিশাল বানিজ্য। বাংলাদেশের অনলাইনে এক্টিভ নাস্তিকদের কথোপকথনের সময় বেরিয়ে এসেছে – তারা ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি ও এক্টিভিজমের দ্বারা অর্থ পায়।
একবিংশ শতকের সূচনালগ্নে মিডিয়া জুড়ে কোন ধর্মের
আলোচনা-সমালোচনা-নিন্দা সবচেয়ে বেশি চলে? এ প্রশ্নের উত্তর
খুব সহজেই আঁচ করা যায় – সে ধর্ম হলো ইসলাম! এথনিক/কালচারাল/ফোক মুসলিমরা (যদিও
এমন কোনো পরিভাষা মূল ইসলামে নেই) ইসলামের কথা শুনলেই কেমন এক হীনমন্যতায় ভোগেন!
সন্ত্রাসবাদী ও বর্ণবাদী পশ্চিমাদের মিডিয়া আগ্রাসনে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইসলাম নিয়ে
অমুসলিম তো বটেই, নামে মুসলিমদের মাঝেও বিরক্তি, আশংকা, ভয় কাজ করতে দেখা
যায়।
এর কারণ কী হতে পারে? এর কারন কী
সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাবলী যা আমরা ঘটতে দেখছি? না এর কারন
হতাতের সংখ্যা ? তাই যদি হয়, তবে যুক্তির
আলোকে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদকে আমাদের ততটুকু “ভয় বা ঘৃণা” করা উচিত হবে কি? যদি আরও বেশী ভীত আমরা হতে না চাই! মুসলিম হিসেবে তা আমরা
কখনোই সমর্থন করি না, বরং আমরা আশা ও ভালোবাসার বাণী শোনাতে চাই। কিন্তু
কেন এই নেতিবাচক মনোভাব শুধুমাত্র ইসলামের প্রতি? একই কাজ অন্য
মতবাদ বা ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রে কেনো এতো প্রচার পায় না? কেনো আমাদের ভেতর বিরক্তি ও ভয় উদ্রেক করে না?
এটা কি প্রায় ৪৩ মিলিয়ন
ডলার অর্থায়নের ফল যা সরাসরি ইসলামের প্রতি ঘৃণা ও ভয়
ছড়াতে অনুদান দেয়া হয়েছিল! অবাক হলেন নাকি? বানিয়ে বলছি না
কিন্তু। Center for American Progress এর গবেষণা
অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০০৯ সালের মাঝে সাতটি গোষ্ঠি প্রায় ৪২.৬
মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান প্রদান করেছে ইসলামোফোবিয়া ছড়াতে নিয়োজিত দলগুলোকে !! (1) তাদের প্রচারিত মিথ্যা তথ্য এরপর ছড়িয়ে পড়ে আরও বড়
নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাতে অংশ নেয় অ্যাকটিভিস্ট, মিডিয়া, রাজনীতিবিদ এবং আরও অনেকে যা ইসলাম একটি সহিংস ধর্ম এই ভুল
ধারণার প্রতিধ্বনি ঘটায়। সাম্প্রতিক সময়ে এই অনুদানের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে আশংকাজনক
হারে !
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক সর্ববৃহৎ মুসলিম সিভিল
রাইটস এবং অ্যাডভোকেসি সংস্থা কাউনসিল অন অ্যামেরিকান -ইসলামিক রিলেশনস (CAIR) কর্তৃক ২০১৩ সালে প্রকাশিত “Legislating
Fear: Islamophobia and its Impact in the United States” প্রতিবেদনে জানা
যায় ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠীগুলো ২০০৮-২০১১ সালের মাঝে অনুদান পেয়েছে ১১৯ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী অর্থ !! (2) ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Berkeley Center for Race & Gender এবং CAIR যৌথভাবে গবেষণার ফল প্রকাশ করে “Confronting Fear: Islamphobia and its Impact in the United
States” প্রতিবেদনে, এবং জানায় যে
২০০৮-২০১৩ সালের মাঝে ইসলামোফোবিয়া ছড়াতে নিয়োজিত দলগুলো অনুদান পেয়েছে ২০৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী অর্থ!! (3)
আচ্ছা, যদি এই পরিমাণ
অর্থ অন্য কোন মতবাদ (যেমন: গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র) বা
কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণার আগুন ছড়াতে ব্যবহৃত হয় তবে কি পরিণতি হবে?
সেক্যুলার পশ্চিমা গবেষকদের গবেষণায় জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামোফোবিয়া নেটওয়ার্কের অন্তঃকেন্দ্রে
রয়েছে প্রায় ৩৩টি গোষ্ঠী যাদের মূল লক্ষ্য হল ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভুল
ধারণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো। এছাড়া আরও ৪১টি দল ইসলামোফোবিয়ার সমর্থনে কাজ করে যাচ্ছে
যাদের দ্বারা নেটওয়ার্কের বহিঃকেন্দ্র গঠিত। (4) ইসলাম বিরোধী আইন
প্রণয়নের ধারাবাহিকতায়, ২০১৫ সালে ৩১টি বিল বা সংশোধনী প্রণয়ন করা হয়েছে ১৭টি
অঙ্গরাজ্যের আইন সভায় যার মূল লক্ষ্য মুসলিমদের ধর্মীয় আচারসমূহের প্রতি নিন্দা
জ্ঞাপন করা। এর মধ্যে ২৩টি বিল সেই ভাষা বহন করে যা ডেভিড ইয়েরুশ্যালমাই এর “অ্যামেরিকান ল’স ফর অ্যামেরিকান কোর্টস (ALAC)” থেকে গৃহিত। কেন এই বিষয়টি জানা জরুরি? কারণ ডেভিড অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে মুসলিম বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ভীতি
ছড়াতে সিদ্ধহস্ত। এরপরও আইন নেয়া হচ্ছে তার থেকে? এই বিলগুলোর মাঝে
৩০টি বিল প্রণয়নে অর্থায়ন করেছে শুধুমাত্র রিপাবলিকান নেতারা। বাকি একটি বিল
প্রণয়নে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় পক্ষ অংশ নিয়েছে!
মূল ইসলামকে পরিবর্তন করে কিভাবে ‘মডারেট ইসলাম’কে প্রচলিত করা
যায় সে উদ্দেশ্যে একের পর এক গবেষণা পত্র প্রকাশিত হচ্ছে! (5) কিন্তু কেন তারা এই নিচু কৌশল অবলম্বন করছে? কারণটা সহজ, তারা দূর্বলের
ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় বা তারা ‘ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স’ এ আক্রান্ত কারণ
তারা এমন বিক্রেতা যার পন্য নিম্নমানের। তাই আপনাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রির জন্য
তাদের মনোনিবেশ করতে হয় অন্যের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত মিথ্যা ছড়াতে। (6) অধিকাংশ সময় তাদের এই চেতনার প্রকাশ ঘটে, কারণ তারা জানে যা তাদের নিকট আছে তা কোনক্রমেই উত্তম নয়।
তাছাড়া এই নেতিবাচক মানুষগুলো আত্মিকভাবেও ব্যর্থ।
তাহলে আমরা কেন ভীত?
Embed from Getty Images
কারণ কিছু মানুষের অন্তর ঘৃণায় পরিপূর্ণ, আর তারা এই ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে যাতে করে আমরাও ‘ঘৃণা ও
ভয়ের’ মহামারীতে আক্রান্ত হই। বিশ্বায়নের যুগে এই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে
দাবানলের মত। (7) ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাসজিদগুলোর ওপর ৭৮ বার
হামলা করা হয়েছে যা আগের বছরগুলোর তুলনায় ৩গুন! (8) যুক্তরাজ্যে
মুসলিম বিদ্ধেষী আক্রমণের হার ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৬%, যার লক্ষ্যবস্তুর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী, প্রায় ৬১% ! (9)
এর মানে কি মুসলিমরাও ঘৃণা ছড়াবে? না। বরং তাদের আরও বেশী উদ্যমী হতে হবে সত্য প্রকাশে এবং
ইসলামের সৌন্দর্যকে যৌক্তিকভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে। আশার কথা হলো, এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অসংখ্য অমুসলিম ইসলামকে অধ্যয়ন করে
নিজের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করছে ! (10) অবাক হচ্ছেন?
অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব
চিন্তাশক্তি ও মনন হয়েছে। যখন আমাদের চিন্তা ও চেতনায় গণমাধ্যমের অনধিকার প্রবেশ
আমরা বন্ধ করতে পারব, কেবল তখনই মুক্তি সম্ভব। তা না হলে আমরা মিডিয়ার দাসে
পরিণত হব। ম্যালকম এক্স (11) বলেছিলেন,
“The media’s the most powerful entity on earth.
They have the power to make the innocent guilty and to make the guilty
innocent, and that’s power. Because they control the minds of the masses.”
“মিডিয়া হল পৃথিবীর বুকে অত্যন্ত ক্ষমতাধর সত্ত্বা। তাদের ক্ষমতা আছে নির্দোষকে অপরাধী ও অপরাধীকে নির্দোষে পরিণত করার, এবং এটা সত্যিই এক শক্তি। কারণ, তারা জনসাধারণের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।” (12) তাই আসুন নিজের অন্তরকে সত্যের পানে উন্মুক্ত করি, সত্য জানতে সচেষ্ট হই। কারণ, সত্য মুক্তির পথ দেখায়।
– Malcom X
[লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় callingtotheone ব্লগে। সেখান থেকে ঈষৎ পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে।]
রেফারেন্স:
(1) https://www.americanprogress.org/issues/religion/report/2011/08/26/10165/fear-inc/
(2) http://www.cair.com/press-center/press-releases/12149-cair-report-islamophobia-network-funded-with-119-million-2008-to-2011.html ;
http://www.nydailynews.com/news/national/anti-muslim-groups-rake-millions-u-s-article-1.1461566
(3) Confronting Fear: Islamphobia and its
Impact in the United States, p. vii
http://crg.berkeley.edu/content/confronting-fear
https://www.theguardian.com/us-news/2016/jun/20/islamophobia-funding-cair-berkeley-report
http://www.nbcnews.com/news/asian-america/mosque-attacks-apparent-anti-islam-spending-report-n595826
(4) Confronting Fear: Islamphobia and its
Impact in the United States, p. vii
(5) মডারেট ইসলাম (Moderate Islam) বাস্তবায়নে RAND Corporation এর পরিকল্পনা পত্র Civil Democratic
Islam, Building Moderate Muslims Network ইত্যাদি।
(6) http://money.cnn.com/2015/01/18/media/fox-apologizes-for-anti-islam-comments
(7) http://www.gallup.com/poll/157082/islamophobia-understanding-anti-muslim-sentiment-west.aspx
(8) Confronting Fear: Islamphobia and its
Impact in the United States, p. viii
(10) https://m.youtube.com/watch?v=_DeBzL9TJBs ;
https://m.youtube.com/watch?v=vSGNybMDTgI
(11) Malcolm X (১৯২৫-১৯৬৫) ছিলেন একজন আফ্রিকান-মার্কিন মুসলিম রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের মানবাধিকার আদায়ের আন্দোলনে অন্যতম অংশগ্রহণকারী ছিলেন। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয় Malcolm Little । পরবর্তীতে Nation of Islam এর নেতা ও নব্যুওয়াতের দাবীদার এলিজা মুহাম্মদের আদর্শ (Elijah Muhammad) দ্বারা প্রভাবিত হন ও তার মত গ্রহন করেন। তাঁর নতুন নাম হয় ম্যালকম এক্স। ঘটনাচক্রে তিনি Elijah Muhammad এর গোপন চারিত্রিক কলুষণের সংবাদ পান ও গভীরভাবে আহত হন কারণ তিনি তাকে নবী মনে করতেন। পরবর্তীতে তিনি মক্কাতে হজ্জে গমন করেন। সেখানে বিশ্বভ্রাতৃত্বের স্বরূপ দেখে তিনি উজ্জীবিত হন ও মূল ধারার ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আল-হাজ্জ মালিক আল-শাব্বাজ নামেও পরিচিত। দেখুন: http://malcolmx.com/biography
(12) https://www.goodreads.com/quotes/74430-the-media-s-the-most-powerful-entity-on-earth-they-have
© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.
‘ইসলাম’ অর্থের খোঁজে [Meaning of Islam]
“ইসলাম” অর্থ কি? এর অর্থ কি শান্তি, অনেক নামধারী মুসলিমকে যেমনটা বলতে শোনা যায়?
নাকি এর অর্থ “জঙ্গিবাদ”? যা পশ্চিমা
মিডিয়া ও এর বিশ্বব্যাপী দোসররা আমাদের বিশ্বাস করাতে উঠেপড়ে লেগেছে। আর এজন্য
ব্যয় করছে কোটি কোটি ডলার! বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না? মাসজিদের হুজুররা কি শুধুশুধু বলে বেড়ায়
– ইহুদি খ্রিস্টানরা আমাদের পিছে লেগেছে?
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Berkeley Center for Race and Gender ও কাউনসিল অন
অ্যামেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (CAIR) কর্তৃক যৌথভাবে
পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী ‘ইসলামোফোবিয়া’ অর্থাৎ ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা
ও বিদ্বেষ ছড়াতে নিয়োজিত গোষ্ঠিসমূহকে ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মাঝে অনুদান প্রদান
করা হয়েছে ২০৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী অর্থ !! (1)
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক
গবেষণায় দেখা যায় যে, ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে মূলধারার মিডিয়ার
প্রচারণা মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুIssভাবাপন্ন পরিবেশ
তৈরীতে অবদান রেখে চলছে … (2)
কিন্তু এরপরও ইসলাম বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। (3) ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার কর্তৃক পরিচালিত প্রায় ছয় বছর ব্যাপী চলমান গবেষণার ফল এই শতকের মাঝেই বিশ্বের প্রধান ধর্ম হবে ইসলাম। (4)
Embed from Getty Images
অনেকে বলতে চান এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী শুধু “বায়োলজিক্যাল
গ্রোথ” বা অধিক জন্মহার !! (5) এটা একটি কারণ
ঠিকই। তবে তারা সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে চান যে শুধু জন্মহার নয়, বরং অন্য ধর্ম বা নাস্তিকতা থেকে ইসলামে আসা এর অন্যতম
কারণ। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নারী !! (6)
তবে কেন এই প্রত্যাবর্তন ?
“ইসলাম” শব্দটির উৎস আরবি মূলশব্দ (সিন লাম মিম) (যার
অর্থ আত্মসমর্পন, শান্তি, নিরাপত্তা
ইত্যাদি)। প্রাচীন আরবি ভাষার প্রখ্যাত অভিধান লিসানুল্ আ’রব অনুযায়ী, “ইসলাম” এর শাব্দিক অর্থ “ইস্তিস্লাম্” অর্থাৎ আত্মসমর্পন
করা, অনুগত হওয়া ইত্যাদি। (7)
সামগ্রিকভাবে ইসলাম হল, জীবনের সকল ক্ষেত্রে স্রষ্টার ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ রূপে আত্মসমর্পন করে শান্তি অর্জন করা। ইসলাম কোন জন্মগত বা বংশগত পরিচয়ের নাম নয়, বরং এর ভিত্তি আদর্শে ও কর্ম। অর্থাৎ ইসলামকে কেবল ধর্ম বলা সম্পূর্ণ ভুল। এটি একটি জীবনব্যবস্থা, একটি সংবিধান, একটি লাইফস্টাইল, একটি ওয়ার্ল্ডভিউ। ভাবতে অবাক লাগে, অনেক অমুসলিম গবেষক ইসলামের সঠিক অর্থ বুঝতে পেরেছেন যা বহু মুসলিম দাবিকারীও পারে নি !! (8)
আরো পড়ুন:
ইসলামোফোবিয়াআল-কুরআন এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়কে ছিলেন মুহাম্মাদ (ﷺ)
সুতরাং ইসলামকে বুঝতে হলে আমাদের তিনটি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে-
১। স্রষ্টা আছেন তো ? কিভাবে জানব তিনি আছেন কিনা ? তার বৈশিষ্ট্যই বা কি ?
২। তার ইচ্ছা কি ? কিভাবে তার ইচ্ছা
আমরা জানতে পারি ?
৩। আর কিভাবে তাঁর ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করে শান্তি অর্জন করা যায় ?
তথ্যসূত্র:
(1) Hamila Kazem, Funding Islamophobia: $206m
went to promoting ‘hatred’ of American Muslims. The Gurdian, 20 Jun 2016.
Available
at: https://www.theguardian.com/us-news/2016/jun/20/islamophobia-funding-cair-berkeley-report
(2) Miqdaad Versi, Why the British media is
responsible for the rise in Islamophobia in Britain. The Independent, 4
April 2016. Availabe
at: https://www.independent.co.uk/voices/why-the-british-media-is-responsible-for-the-rise-in-islamophobia-in-britain-a6967546.html
(3) Guinness World Records 2003; p. 142 (https://tinyurl.com/mz99w5g)
(4) Nadia Whitehead, A Religious Forecast For
2050: Atheism Is Down, Islam Is Rising. NPR, December 25, 2015. Available
at: https://www.npr.org/sections/goatsandsoda/2015/12/25/460797744/a-religious-forecast-for-2050-atheism-is-down-islam-is-rising
(5) The Future of World Religions: Population
Growth Projections, 2010-2050. Available
at: http://www.pewforum.org/2015/04/02/religious-projections-2010-2050
(6) Why ARE so many modern British career
women converting to Islam? The Daily Mail, 28 October 2010. Available
at: http://www.dailymail.co.uk/femail/article-1324039/Like-Lauren-Booth-ARE-modern-British-career-women-converting-Islam.html
Jack Doyle, How 100,000 Britons have chosen to
become Muslim… and average convert is 27-year-old white woman. The Daily
Mail, 5 January 2011. Available
at: http://www.dailymail.co.uk/news/article-1343954/100-000-Islam-converts-living-UK-White-women-keen-embrace-Muslim-faith.html
(7) Ibn Manzur, Lisanul A’rab; vol. 7; p. 243 (Al Maktabatul Islamiyyah Online); Lane’s Arabic-English Lexicon; vol 4, p. 1413 (Beirut, Librairie Du Liban, 1968)
(8) Britannica Encyclopedia of World’s Religion; p. 515 (2006 by Encyclopedia Britannica Inc.); Karen Armstrong, Islam A Short History; p. 05 (New york, Modern Library, Paperback Edition 2002); John L. Esposito, Islam: The Straight Path; p. 69 (Oxford University Press, Edition: 2, Illustrated, reissue, 1992)
© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.