Rafan Ahmed's Blog, page 6

November 21, 2019

আত্মঘাতী বিবর্তনবাদ [Evolution is a suicide]

নবয-নাসতিকতাবাদের অনযতম পুরোধা দারশনিক ডেনিয়েল ডেনেট বলেছিলেন, ডারউইনবাদ হলো এক “ইউনিভারসাল এসিড”। এটি এমন এক সরবগরাসী এসিড যা পরচলিত ধরম, ধযানধারণা, পরথা সবকিছুকে গলিয়ে ফেলে। তার ভাষায় –

“[Darwinism is an] universal acid… [It’s a] liquid so corrosive it will eat through anything… it eats through just about every traditional concept and leaves in its wake a revolutionized world-view.”

Dennett, Darwin’s Dangerous Idea, 63

কিনতু ডেনেট খেয়াল করেন নি, বিবরতন যদি আসলেই ঘটে থাকে, তাহলে এই সরবগরাসী...

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on November 21, 2019 19:36

আত্মঘাতী বিবর্তনবাদ

নবয-নাসতিকতাবাদের অনযতম পুরোধা দারশনিক ডেনিয়েল ডেনেট বলেছিলেন, ডারউইনবাদ হলো এক “ইউনিভারসাল এসিড”। এটি এমন এক সরবগরাসী এসিড যা পরচলিত ধরম, ধযানধারণা, পরথা সবকিছুকে গলিয়ে ফেলে। তার ভাষায় –

“[Darwinism is an] universal acid… [It’s a] liquid so corrosive it will eat through anything… it eats through just about every traditional concept and leaves in its wake a revolutionized world-view.”

Dennett, Darwin’s Dangerous Idea, 63

কিনতু ডেনেট খেয়াল করেন নি, বিবরতন যদি আসলেই ঘটে থাকে, তাহলে এই সরবগরাসী...

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on November 21, 2019 19:36

November 16, 2019

ধর্মের সমাপ্তি চাওয়া মন্দচিন্তা – রিচার্ড ডকিন্স !

ডকিনস!! কি বললেন আপনি!!

রিচারড ডকিনস, সারাজীবন ধরে এমন এক সততার বিরুদধে যুদধ করে যাচছেন – যার অসতিতবই নেই তার মতে! বিশববযাপী নাসতিকতার নয়া ভারসন পরচারের দায়িতব কাঁধে তুলে নিয়ে যিনি নিরনতর ধরমকে, ধারমিককে অপমান করতে; ধরমকে বসুধার বুক থেকে কলম-কথা-গালি দিয়ে নিশচিহন করতে বদধ পরিকর – এমন একজনের মুখ থেকে উপরের উকতি ডিনামাইট বিসফোরণের সমতুলয। অভিজিৎ রায গং ডকিনসের দবারা অনুপরাণিত হয়ে ধরমকে ভাইরাস এর সাথে তুলনা করে কতই না সবপন দেখলেন! অথচ সেই পীর সাহেব এখন নিজেই বলছেন, ধরমের অবসান চাওয়া মনদ পদকষেপ! ভূত...

1 like ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on November 16, 2019 05:19

September 27, 2019

ইসলাম কি তরবারি দ্বারা প্রচারিত হয়েছে ? [পর্ব ০১]

আরব ভূখণডে ইসলাম পরতিষঠিত হওযার পরথম শতকের মাঝে এবং পরবরতীতে মুসলিমদের করমাগত রাজয জযের অভিযানে আরব সামরাজযের দরুত সমপরসারণের ফলে বিশবের ইতিহাসে অনযতম পরভাবশালী সামরাজয গডে উঠে। খরিসটীয ৭ম শতকে সভযতার কেনদর থেকে দূরে মরুময আরব অঞচলে যুগ যুগ ধরে চলে আসা গোতর বযবসথা সংসকার করে পরথম বারের মত একটি ঐকযবদধ রাষটরবযবসথা পরতিষঠা করেন সরষটার সরবশেষ বারতাবাহক মুহামমাদ (ﷺ)। ৬৩২ খৃষটাবদে তার মৃতযুর পর পরম সরষটার আদেশ বাসতবাযনে, সুপথপরাপত খলিফা ও উমাইযযা খিলাফত কালে সরষটার ইচছার নিকট জীবনের সকল কষেতরে আতমস...

1 like ·   •  1 comment  •  flag
Share on Twitter
Published on September 27, 2019 22:51

September 24, 2019

রমাদান ও দাঁড়কাকের উষ্মা

ফি বছর ইসলামের নানা অনুসঙগ এলেই এক শরেণির মানুষকে সব-অসতিতব জানান দেওযার চেষটায লিপত হতে দেখা যায। এরা সচরাচর পরগতিশীল, সুশিল, সংসকৃতিমনা, আধুনিকমনা ইতযাদি নামে পরিচিত। কেন জানি দেশীয পৌততলিক আচারে এদের আধুনিক মন ঠাস করে ফিউজ হযে যায, শুধু ইসলামের কষেতরেই ১০০ পাওযারের সৈনিক বালবের মত জেগে উঠে। এবার রমাদানেও এমন একজন ভদদরনোক রমাদান নিযে চিনতিত হযে পডেছেন; ভকতকূল তার দাবি যাচাই না করেই পরম ভকতিতে সেটা মেনে নিযেছে এবং ধারমিকদের এক হাত দেখে নেওযার আশায সমিতহাসয হচছে।

তিনি বলেছেন, ‘ধরমীয কারণে উপোস...

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 24, 2019 06:34

September 20, 2019

নাস্তিকতা একটি (অন্ধ)বিশ্বাস !!

[image error]নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স স্বপ্নাতুর চোখে তাকিয়ে আছেন নাস্তিকতার মুলমন্ত্রের দিকে। মনচাহি জিন্দেগি তাদের পরম চাওয়া।



নাস্তিকতা হলো হাল আমলের ফ্যাশন, অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। তারুণ্যের মনচাহি জিন্দেগীর সামনে বাধার মতো দাঁড়িয়ে থাকে ধর্ম, তাই ধর্ম ছেড়ে দিলে খালি মজা আর মজা (যদিও নাস্তিকদের মাঝে আত্মহত্যার হার বেশি)। ফলে দেখা যায়, এদের নাস্তিকতার প্রায় শতভাগই হলো ইসলাম নিয়ে হাসিঠাট্টা আর নিজেদের দর্শনের বেসিক সম্পর্কে মহা-অজ্ঞতা। তাই অনেককে বুক ফুলিয়ে বলতে দেখা যায়:





নাস্তিক্যবাদ ধর্ম হলে ‘বাগান না করাও একটি শখ, ক্রিড়া না খেলাও একটি ক্রীড়া, কোকেইন সেবন না করাও একটি নেশা।’

জুবায়ের অর্নব




বিষয়টি খোলাসা করার আগে চলুন নাস্তিকতা কি তা নিয়ে একটু আলাপচারিতা করা যাক। ইংরেজি Atheist (এথিইস্ট) শব্দটি মূলত গ্রীক থেকে আসা। দুটি গ্রীক শব্দ (a+theos) মিলে গিয়ে এর অর্থ দাঁড়িয়েছে – “এক বা একাধিক স্রষ্টার অস্তিত্বে যে অবিশ্বাসী”। (১) তবে এথিইস্ট শব্দের শুরুটা কিন্তু এই অর্থে হয় নি। ইতিহাস থেকে জানা যায় খ্রিস্ট পরবর্তী দ্বিতীয় শতকে খ্রিস্টানরা মুখ বেজার করে অভিযোগ করতো – দেখো! ওরা আমাদের এথিইস্ট বলছে, অথচ এই অভিযোগ ওদের ঘাড়েই বর্তায়! তো ওরা, মানে রোমান পৌত্তলিকেরা খ্রিস্টানদের ‘এথিইস্ট’ বলে অভিহিত করত কেন? কারণ খ্রিস্টানরা রোমান পৌত্তলিকদের প্রচলিত ধর্মকর্মে বিশ্বাসী ছিলো না, তাই। (২) গবেষকদের মতে সেই প্রাচীন যুগে আজকের প্রচলিত অর্থে নাস্তিক কারো হদিশ মেলা ভার। প্রচলিত ধর্মাচারের বিরোধীদের গায়েই নাস্তিক তকমা লাগানো হতো। (৩)





অন্যদিকে বাংলাতে Atheist এর প্রতিশব্দ হলো ‘নাস্তিক’। এই শব্দের বুৎপত্তিতেও কিন্তু মজার ব্যাপার আছে। উমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য তাঁর ‘ভারত দর্শনসার’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “বেদে অবিশ্বাসীরাই নাস্তিক বলে আখ্যায়িত। চার্বাক এই অর্থে নাস্তিক” (৪) বোঝা যাচ্ছে এক্ষত্রে চার্বাকের দোষ ছিলো দ্বিতীয় শতকের খ্রিস্টানদের মতই। খ্রিস্টানরা রোমান পৌত্তকদের আচার-বিশ্বাস মানে নি, আর চার্বাক মহাশয় বেদের বিধিবিধান মানে নি। একই কাতারে শামিল হয় বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম। ভাষা ও শব্দ যেহেতু বিবর্তনশীল তাই সময়ের স্রোতে নাস্তিক অর্থ স্রষ্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাস – এসে থিতু হয়েছে। কিন্তু ঝামেলা হলো, বিদ্যানগণ নাস্তিক্যবাদের কোন সংজ্ঞতেই এখন পর্যন্ত একমত হতে পারেন নি।





ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে দেখা যায় নাস্তিকদের অধিকাংশ জীবনদর্শন হিসেবে অস্তিত্বগত প্রকৃতিবাদ বা বস্তুবাদকে (Philosophical/ontological/metaphysical Naturalism) গ্রহণ করেন। বস্তুবাদ বলতে চায় সুবিশাল এই মহাবিশ্বে ঘটে চলা সকল ঘটনাই জাগতিক বা ভৌত প্রক্রিয়ার হয়। এই ভৌত প্রক্রিয়াগুলো উদ্দেশ্যহীন, এলোমেলো, অযৌক্তিক স্রেফ জড় প্রক্রিয়া। বস্তুজগতের বাইরে কোনো অতিপ্রাকৃত কিছু থাকতে পারে না। নব্য নাস্তিক্যবাদের অন্যতম পুরোধা রিচার্ড ডকিন্স নাস্তিকদের এই বিশ্বাস সম্পর্কে বলেন,





“দার্শনিক বস্তবাদি অর্থে নাস্তিক হলো এমন ব্যক্তি যে বিশ্বাস করে পার্থিব, ভৌত জগতের বাইরে কিছু নেই। কোনো স্রষ্টা নেই যিনি দৃশ্যমান এই মহাবিশ্বের পিছনে চুপিসারে কলকাটি নাড়ছেন। আত্মার কোন অস্তিত্ব নেই যা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে, নেই অলৌকিক বলে কোনো কিছু। কেবলই রয়েছে জাগতিক ঘটনাবলী, যা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারি নি।”

Richard Dawkis, The God Delusion; p. 14 (London: Bantham Press 2006)




সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ তাঁর আমার অবিশ্বাস গ্রন্থে লিখেন,





“… আমি কোনো মহাপরিকল্পনা নই, কোনো মহাপরিকল্পনার অংশ নই, আমাকে কেউ তার মহাপরিকল্পনা অনুসারে সৃষ্টি করে নি; একরাশ প্রাকৃতিক ক্রিয়ার ফলে আমি জন্মেছি, অন্য একরাশ প্রাকৃতিক ক্রিয়াকলাপের ফলে আমি ম’রে যাবো, থাকবো না; যেমন কেউ থাকবে না, কিছু থাকবে না।…”

হুমায়ুন আজাদ, আমার অবিশ্বাস; পৃ. ১৩ (ঢাকা, আগামী প্রকাশনী, সপ্তম মুদ্রণ ফেব্রুয়ারী ২০১১)




সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, নাস্তিকেরা মেটাফিজিক্যাল প্রকৃতিবাদকে ওয়ার্ল্ডভিউ মনে করে। মজার ব্যাপার হলো, এই দার্শনিক বস্তুবাদও কিন্তু স্রেফ বিশ্বাসগত অবস্থান! সেজন্য দেখা যায়, একাডেমিক বই পত্রে নাস্তিকতাকে মেটাফিজিকাল প্রকৃতিবাদ বলা হয়। কি, অবাক হলেন! এটা আমার কথা না কিন্তু, নাস্তিক গবেষকের কথা যিনি ডকিন্স গংদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সৎ। সুপরিচিত নাস্তিক বিজ্ঞান-দার্শনিক প্রফেসর মাইকেল রুজ বলেন,





“আপনি যদি স্বীকারোক্তি চান তবে শুনুন, আমি সবসময় স্বীকার করেছি বস্তুবাদ হলো স্রেফ অন্ধবিশ্বাস… ”

Stewart, R. B. (ed.). (2007) Intelligent Design: William A. Dembski & Michael Ruse in Dialogue. Minneapolis, MN: Fortress Press, p.37




[image error]


নাস্তিকদের পূজ্য সেলিব্রেটি নাস্তিক কার্ল স্যাগানও এহেন বিশ্বাসকে অন্ধবিশ্বাসই বলেছেন! আমি হলফ করে বলতে পারি, এমন স্বীকারোক্তি আপনি বঙ্গীয় মুক্তমণাদের লেখাজোকায় পাবেন না। আপনি দেখতে পাবেন এরা পাতার পর পাতা লিখে বুক ফুলিয়ে তা অস্বীকার করে চলছে। (৫)







মিডিয়া ফিগার, নাস্তিক ও ফেমিনিস্ট লেখিকা ইজিওমা ওলু’র কলমে এই স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়,





“… স্রষ্টা নেই আমার এহেন দৃঢ় বিশ্বাস কেবলই অন্ধবিশ্বাস। আমরা যেমন (বস্তুগতভাবে) প্রমাণ করতে পারবো না যে স্রষ্টা আছেন, একইভাবে এও প্রমাণ করতে পারবো না যে স্রষ্টা নেই। স্রষ্টা না থাকার অনুভূতির স্বীয় সত্তার মাঝে পুরেই আমি দিনানিপাত করি। কিন্তু আমি মোটেও এই ঘোরের মধ্যে থাকি না যে, আমার এই অনুভূতি আস্তিকদের স্রষ্টার অস্তিত্বে দৃঢ় বিশ্বাসের তুলনায় বেশি তথ্যপ্রমাণ নির্ভর।”

Ijeoma Oluo, My atheism does not make me superior to believers. It’s a leap of faith too. The Guardian, 24 Oct 2015




নাস্তিকতা হলো স্রেফ বিশ্বাসগত অবস্থান, তারা সুকৌশলে বিজ্ঞানের চাদর জড়িয়ে বস্তুবাদের বিশ্বাসকে লুকিয়ে রাখে। বঙ্গীয় নাস্তিকেরা তো এসব জানেই না। কারণ, ঐ যে বললাম, এরা তো জেনে নাস্তিক হয় নি, হুজুগে হয়েছে। এছাড়া যারা বলতে চায় নাস্তিকতা ধর্ম না, তাদের চিন্তাতেও সংকির্ণতা আছে। নাস্তিক্যবাদ সেই বিষয়গুলোরই উত্তর দিতে চায় যেগুলো ধর্ম দেয় – মেটাফিজিক্স, নৈতিকতা, জীবনাচার ইত্যাদি। তাই নাস্তিকতাকে ধর্ম না বলাও যৌক্তিক বিচারে অপরিপক্ব চিন্তা





Reference:
(১) জুলিয়ান বাগিনি, এথিইজম: এ ভেরি শর্ট ইনট্রোডাকশন; পৃ. ০৩ (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৩)। অক্সফোর্ড অনলাইন ডিকশনারিতে উপরের সংজ্ঞার সাথে “বা যার বিশ্বাসে ঘাটতি রয়েছে” অংশটুকুও যুক্ত করা হয়েছে। যদিও অন্যান্য প্রথম সারির ইংরেজি অভিধানগুলোতে এই বাড়তি অংশটি পাওয়া যায় না।
(২) স্টিফেন বুলিভ্যান্ট, মাইকেল রুজ (সম্পাদিত), দি অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অফ এথিইজম; পৃ. ১৫৪-১৫৫ (অক্সফোর্ড, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৩)
(৩) প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫২
(৪) উমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, ড. আর এম দেবনাথ রচিত সিন্ধু থেকে হিন্দু গ্রন্থে উদ্ধৃত; পৃ. ২০৯
(৫) অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীর, অবিশ্বাসের দর্শন; পৃ. ২৬৫-২৬৭ (ঢাকা, শুদ্ধস্বর প্রকাশন, ২য় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারী ২০১২)





© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.

2 likes ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 20, 2019 20:34

নাস্তিকতা ও ধর্মগ্রন্থের অবমাননা

“ধাৰ্মিকেরা খুবই অমানবিক, তারা নিজেদের ধর্ম ও ধর্মের বই ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম ও ধর্মের বইকে মর্যাদা দেয় না । এক ধর্মের ধাৰ্মিক অন্য ধর্মের পবিত্রগ্রন্থ ও গৃহকে অবলীলায় অপমানিত করতে পারে, যা নাস্তিকেরা কখনো করে না ।”

হুমায়ুন আজাদ, আমার অবিশ্বাস, পৃ. ৭৮




এই অংশটুকু পড়ে আমি বেশ বিরক্ত বোধ করেছি। মানুষ কতটা স্ববিরোধী ও বাস্তবজ্ঞানহীন হলে এমন মন্তব্য করতে পারে তা চিন্তাশীল সমাজের ভেবে দেখা জরুরি। আমার অবিশ্বাস পড়লে দেখা যায়, ড. আজাদ পুরো বই জুড়ে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের বদনাম গেয়েছেন, ধার্মিকদের বিকলনগ্রস্থ (পাগল) বলেছেন, ধর্মপ্রচারকারী মহাপুরুষদের মনোবিকলনগ্রস্থ (মহাপাগল) বলেছেন! উনি নিজেই তো মর্যাদা দিলেন না, আবার ধার্মিকদের নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন! অদ্ভূত স্ববিরোধীতা!





উনার বাতুল দাবি নাস্তিক নাকি অন্য ধর্মের পবিত্রগ্রন্থকে কখনো অবমাননা করে না! অথচ নাস্তিকদের আচরণ উলটো প্রমাণ বহন করে। যেমন – ব্রিসবেন ইউনিভার্সিটির আইনবিদ, নাস্তিক এলেক্স স্টুয়ার্ট কুর্‌আন ও বাইবেলের পাতায় মারিজুয়ানা পুরে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া টেনেছেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখতে চেয়ছিলেন কোন পাতা ভালো পুড়ে, সেটা দিয়ে বিড়ি টানা যাবে! এই দুই গ্রন্থকে তিনি অত্যন্ত নোংরা ভাষায় গালমন্দ করেছেন! বাহ, কি মানবিকতা!





সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেখতে পাওয়া যায়, #Burn_Quran_Challenge হ্যাশটাগ দিয়ে বেশ কিছু নাস্তিক কুর্‌আন অবমাননার বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করেছে। কেউ কুর্‌আন পোড়াচ্ছে, কেউ দুমড়ে-মুছড়ে ছিড়ে ফেলছে! শিয়া ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হওয়া আরমিন নবাবীকে দেখা গেছে এমনই এক ভিডিও শেয়ার করে সোৎসাহে সমর্থন দিতে। এই পোস্টের কমেন্ট অংশে দেখা যায় আরো অনেক নাস্তিক জোরেশোরে এই কর্মের পক্ষে সাফাই গাইছে!





[image error]লাইভ ভিডিওতে পবিত্র কুর্‌আনের উপর জুতা রেখে নাস্তিক মাসুদ



বাংলাদেশের নাস্তিকও পিছিয়ে নেই এইক্ষেত্রে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, মুরতাদ মুফতি মাসুদ পবিত্র কুর্‌আনের উপর চপ্পল রেখে ভিডিও করছে, নিজ মুখে বলছে – উনি সবসময় কুর্‌আনের উপর জুতা রাখেন। বুক ফুলিয়ে বলছে – আমি আপনাদের অনুভূতিতে আঘাত করলাম! সুতরাং ড. আজাদের মানদণ্ডে নাস্তিকেরাও যে খুবই অমানবিক ও অসামাজিক তাতে সন্দেহ নেই।





ধর্মগ্রন্থ আবমাননার কাজ সাধারণত কিছু খ্রিস্টানদের করতে/সমর্থন করতে দেখা যায়। যেমন – যাজক টেরি জোনস প্রথমে এই বার্ন কুর্‌আন ডে-এর আয়োজন করার চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাদেশে খ্রিস্টান মিশনারিদের খপ্পর থেকে ফিরে আসা মানুষদের সাক্ষ্যতে জানা যায় – খ্রিস্টান হিসেবে গৃহীত হওয়ার আগে তাদের পবিত্র কুর্‌আনের উপর দাঁড়াতে বলা হয়, প্রশ্রাব করতে বলা হয়!





একজন প্রকৃত মুসলিম এদের থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থান করেন। তিনি কখনো অন্য ধর্মের গ্রন্থকে অবমাননা করেন না। কারণ, হতে পারে এই গ্রন্থটি এককালে স্রষ্টার প্রেরিত বাণী ছিলো, যা কালক্রমে বিকৃত হয়ে গেছে। (যেমন খ্রিস্টধর্মের বাইবেল বিকৃত হওয়ার প্রমাণ দেখুন এই লিংকে।) তাই এতে আল্লাহ্‌র বাণীর কিছু অংশ থাকার সম্ভাবনা আছে। তিনি সত্যের অনুসরণ করেন, ও অন্যের কাছে আন্তরিকভাবে সত্যের প্রচার ও প্রসার করতে সচেষ্ট থাকেন। অন্য ধর্মের পবিত্রগৃহ অর্থাৎ উপাসনালয়কেও তিনি অবমাননা করেন না। তিনি অন্য ধর্মের উপাস্যদের কোন গালি দেন না, কারণ আল-কুর্‌আন তা নিষেধ করা হয়েছে। তাই বোঝা যাচ্ছে এক্ষেত্রে আমাদের নৈতিক আচরণ প্রশংসার দাবি রাখে।





© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.

2 likes ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 20, 2019 19:22

September 15, 2019

বিবর্তন বনাম স্রষ্টা [Evolution or God]

এই মহাবিশ্বের বিস্ময় দেখে আমার এক সময় একজন মহানির্মাতার ছবি মনে আসত। ডারউইনের বিজ্ঞান পড়ার পর, সেই ছবি মন থেকে উধাও হয়ে যায়। – রিচার্ড ডকিন্স

অতনু চক্রবর্তী, রিচার্ড ডকিন্স: ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যিনি লড়ে চলেছেন নিরন্তর! এগিয়ে চলো, ২৭ মার্চ ২০১৮




[image error]

নাস্তিকতার হাল আমলের গুরু রিচার্ড ডকিন্স। দেশে তাকে নিয়ে অনেকের উচ্চ ধারণা থাকলেও খোদ ব্রিটেনের বিজ্ঞানীদের একাংশ তাকে অপছন্দ করেন। তাঁদের অভিযোগ – ডকিন্স বিকৃত বিজ্ঞান প্রচার করে। (দেখুন টেলিগ্রাফ-এর খবর) ধর্ম নিয়ে যেসকল অভিযোগ তিনি করেন সেগুলো মোটাদাগের ও অনেকাংশেই বিকৃত উপস্থাপন। (দেখুন ফোর্বস-এর আর্টিকেল)






আমরা অধিকাংশই
সেলিব্রেটি কালচারে আক্রান্ত। পূজিত ব্যক্তিজন কিছু বললেই আমরা তা মাথা পেতে নেই,
বুঝি বা না-বুঝি।
তারপর ভান করি সব বুঝে গেছি। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় নাস্তিকদের
তালিকায় প্রফেসর ডকিন্স প্রথমই হবেন হয়তো। মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রি হওয়া বইয়ের
লেখক, অক্সফোর্ডের সাবেক
অধ্যাপক কি আর ভুল বলবেন? কিন্তু
বাস্তবতা হলো, তিনি
ভুল বলেছেন। যার দোহাই দিয়ে ভুল বলেছেন সেই ডারউইন সাহেবও তার এই বক্তব্যের সাথে
একমত নন! অবাক হচ্ছেন? হওয়ারই
কথা।





আসুন ডকিন্সের বক্তব্য একটু ব্যবচ্ছেদ করি। ১ম অংশটা খেয়াল করুন – ফিতরাহ-এর অনুভূতির স্বীকারোক্তি স্পষ্ট! মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় দেখে এক মহানির্মাতার অস্তিত্বের অনুভূতির ব্যাপারটা মানুষের মনস্তত্ত্বে গ্রথিত বলা যায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে পাওয়া পর্যবেক্ষণও তাই জানাচ্ছে। তাছাড়া ডকিন্সের আরেকটি উক্তিতে এই ফিতরাহ-এর অনুভূতির স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়! (1)





এবার ২য় অংশে আসি। তিনি বলেছেন – ডারউইনের বিজ্ঞান পড়ার পর সেই মহানির্মাতার ছবি মন থেকে উধাও হয়ে যায়। এই উক্তিটিতেই বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রতীভাত। বিজ্ঞান কাজ শুরু করার আগে কতগুলো অনুমান বা এসাম্পসনকে ঠিক বলে ধরে নেয়। (2) এগুলোর মাঝে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান অনুমান হলো  Methodological Naturalism বা পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ। এর অর্থ হলো – আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটে সেসব প্রাকৃতিক ঘটনাবলির জাগতিক ব্যাখ্যা দেওয়াই যথেষ্ঠ। বস্তুজগতের বাইরের কিছু বা প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরের কিছুকে কোনও প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যাস্বরূপ টেনে আনা যাবে না। তাই স্রষ্টা আছে না-কি নেই, এই প্রশ্নে বিজ্ঞান নিরব। এটা তার নাগালের বাইরে। আমেরিকার বিখ্যাত ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সাইন্সেস-স্বাক্ষী দিচ্ছে :





বিজ্ঞান হলো প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের একটি উপায়। প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জাগতিক ব্যাখ্যা প্রদানেই এটি সীমাবদ্ধ। অতিপ্রাকৃত কিছু আছে কি না, সে বিষয়ে বিজ্ঞান কিছুই বলতে পারে না। স্রষ্টা আছে কি নেই, এ প্রশ্নের ব্যাপারে বিজ্ঞান নীরব ।

https://www.nap.edu/read/5787/chapter/6#58




যেহেতু পদ্ধতিগত
প্রকৃতিবাদে বিশ্বাসের কারণে, বিজ্ঞান
স্রষ্টাকে সমীকরণের বাইরে রেখে যাত্রা শুরু করে, তাই বৈজ্ঞানিক বিবর্তনতত্ত্বের
প্রচেষ্টাও হলো মানুষসহ সকল প্রাণের উৎপত্তি ও বিকাশের জাগতিক ব্যাখ্যা দেওয়া। তাই
ডারউইনের বিজ্ঞান পড়ে কেবল তার মন থেকেই স্রষ্টার ধারণা উধাও হতে পারে সে
বিজ্ঞানের এসাম্পসান ও কর্মপরিধি সম্পর্কে অজ্ঞ। বিজ্ঞানের যে-কোনও তত্ত্বই
স্রষ্টার অস্তিত্ব বা অনস্তিত্বের ব্যাপারে নিরব। নাস্তিক প্রফেসর লরেন্স এম.
ক্রউস বলেন:





“বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে বিবর্তনবাদ স্রষ্টার অস্তিত্ব বা অনস্তিত্বের বিষয়ে কিছুই বলে না। এমনকি প্রাণ কীভাবে উৎপত্তি হল সে বিষয়েও কিছু বলে না বরং কীভাবে পৃথিবীর এত বৈচিত্রময় প্রজাতির আবির্ভাব হল তা নিয়ে আলোচনা করে…”

Science in the Dock, Discussion with Noam Chomsky, Lawrence Krauss & Sean M. Carroll, Science & Technology News, March 1, 2006





Embed from Getty Images





ডারউইনের জীবনী ঘেঁটে পাওয়া যায়, তার তত্ত্ব দিয়ে যারা নাস্তিকতা প্রচার করতো ডারউইন তাদের পছন্দ করতেন না।





বিবর্তনবাদি প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা লিখেন:





যদিও এই সত্য এখন সুপ্রতিষ্ঠিত যে, বিজ্ঞানের দর্শনের সামনে ধর্মকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানো নিরর্থক। ডারউইনের সমসাময়িক প্রায় সমস্ত বিজ্ঞানীই ছিলেন ধর্মবিশ্বাসী, আস্তিক এবং তাঁরা এই বলে ডারউইনবাদ গ্রহণ করেন যে, ঈশ্বর প্রাণের আদিস্রষ্টা আর বিবর্তন ঘটেছে তাঁরই নির্দেশে, সুতরাং একে স্বীকৃতিদানে ধর্মচ্যুতির [নাস্তিকতার] আশংকা অমূলক। অন্যথা ডারউইনের শিক্ষক হেনশ্লো এবং বন্ধু লায়েল ও হুকার কখনোই তাঁর তত্ত্বের পৃষ্ঠপোষক হতেন না।

দ্বিজেন শর্মা, চার্লস ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি; ভূমিকা (ঢাকা: সাহিত্য প্রকাশ, ৩য় মুদ্র ২০১৬)





ডারউইনের জীবনী ঘেঁটে পাওয়া যায়, তার তত্ত্ব দিয়ে যারা নাস্তিকতা প্রচার করতো ডারউইন তাদের পছন্দ করতেন না। তাছাড়া ডারউইন এক চিঠিতে নিজেও বলেছেন –





“কোন ব্যক্তি একই সাথে বিবর্তনবাদি ও গোড়া আস্তিক হতে পারে। এ নিয়ে কোনও প্রকার সন্দেহ আমার কাছে অবান্তর লাগে।”

Belief In God And In Evolution Possible, Darwin Letter Says. The New York Times, 27 December 1981




যার তত্ত্ব দিয়ে ডকিন্স নাস্তিকতাবাদ ফেরি করে বেড়াচ্ছেন সেই ডারউইন কি নাস্তিক ছিলেন? উত্তর হচ্ছে, না! জীবনের শেষকালে উনি সংশয়বাদে প্রবেশ করেন। স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করা অর্থে নাস্তিক তিনি ছিলেন না, নিজের মুখেই বলেছেন। তাহলে কেন সংশয় তার ভেতর বাসা বেঁধে নিলো? এর কারণ স্বীয় দর্শনগত অবস্থান, তার তত্ত্বের কারণে তিনি সংশয়বাদি হন নি। (3) তত্ত্বপ্রদানকারী নিজে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের কারনে নাস্তিক হলেন না, অথচ ডকিন্স সাহেব নাস্তিক হয়ে গেলেন। কি অদ্ভূত! আর আমরাও তার সাথে তাল মিলিয়ে নাচছি! তারা আমাদের নিয়ে খেলেন, আমরাও সানন্দে পুতুল হতে রাজি! (৮)









আরো পড়ুন:




নাস্তিকতা একটি (অন্ধ)বিশ্বাস !!
নাস্তিকতা ও ধর্মগ্রন্থের অবমাননা
বিবর্তন বনাম স্রষ্টা [Evolution or God]
আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি কে ধ্বংস করেছিলো?[Who Burnt The Alexandria Library]
আল-কুর্‌আন: সংক্ষিপ্ত পরিচয় [The Qur’an: An Introduction]







তথ্যসূত্র :





(1) রাফান আহমেদ, অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়; পৃ. ৫৫-৬৯ (ঢাকা : সমর্পন প্রকাশন, ২য় সংস্করণ এপ্রিল ২০১৯)
(2) Dr. Martin Nickels, The Nature Of Modern Science & Scientific Knowledge. Anthropology Program, Illinois State University, August 1998; Macaulay A. Kenu, The Limitations of Science: A Philosophical Critique of Scientific Method. Journal of Humanities & Social Science, vol. 20, Issue 7, p. 80-81 (July 2015)
(3) Nick Spencer, Darwin and God (SPCK, January 31, 2009)
(4) মজার ব্যাপার কি জানেন? ডকিন্স এক সাক্ষাতকারে ফস করে বলে ফেলেছেন – বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করলে তাকে নাস্তিক হতে হবে এই চিন্তা ভুল। দ্বিমুখীতা, তাই না? দেখুন: Lawrence Krauss discussion with Richard Dawkins about Education, Universe, and Evolution; Available at: https://youtu.be/WObFAvOw830





[লেখাটি অবিশ্বাসের বিভ্রাট বই থেকে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত]





© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 15, 2019 17:27

আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি কে ধ্বংস করেছিলো?[Who Burnt The Alexandria Library]

“৬৪০ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানরা আলেকজান্দ্রিয়া জয় করে; তাদেরও জ্ঞানের আগ্রহ ছিলো না; রাজ্য, জয় আর ক্ষমতার উল্লাসে তারা পুড়িয়ে দেয় আলেকজান্দ্রিয়ার মহাগ্রন্থাগার, নষ্ট হয়ে যায় অনেক মূল্যবান গ্রিক বই ও জ্ঞান । …”

হুমাহুন আজাদ, মহাবিশ্ব; পৃ. ৩০ (ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, ২য় সংস্করণ জুন ২০০৭)




কথাগুলো এক কালের সমালোচিত, নার্সিসিস্ট নাস্তিক ড. হুমায়ুন
আজাদের মহাবিশ্ব  বইয়ে পেলাম। এই অভিযোগ বেশ
পুরনো। এত বছর পরে দেখলাম নাস্তিকদের ব্লগ ইস্টিশন-এ ‘মৃত কালপুরুষ’ নামের একজন
ব্লগার লিখেছেন:





“আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল মুসলিম খলিফা হযরত ওমর রাঃ এর নেতৃত্বে । যার ফলে বহু স্ক্রোল ও বই চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগারের অগ্নিকাণ্ড তাই সাংস্কৃতিক জ্ঞান ধ্বংসের প্রতীক । আজ পর্যন্ত বিশ্বের জ্ঞানী ব্যাক্তি ও গবেষকেরা এর অভাব অনুভব করেন।”





ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বিখ্যাত বীর আলেকজান্ডারের পরে খ্রিস্টপূর্ব তিন শতকের দিকে মিশরের শাসনভার গ্রহণ করেন টলেমি-২। যিনি মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে সুবিশাল এক গ্রন্থাগার স্থাপন করেন, সে আমলেই এতে বইয়ের সংখ্যা ছিলো প্রায় পাঁচ লক্ষ! ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) এর শাসনকালে মিশর বিজিত হয়, সেখানকার গভর্নর নিযুক্ত করা হয় বিখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আ‘স-কে (রা)।





Embed from Getty Images



বলা হয়ে থাকে আমর ইবনুল আ‘স আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের
ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে খলিফা উমারকে (রা) জিজ্ঞেস করলে তিনি নাকি বলেন, গ্রীকদের এই বইগুলো যদি আল্লাহ্‌র
কিতাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তবে সেগুলো অপ্রয়োজনীয় আর তাই
সংরক্ষণের কোনো দরকার নেই; আর যদি
সাংঘর্ষিক হয় তবে এগুলো ক্ষতিকর, তাই এগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়াই উচিত।
উমারের (রা) এই কথা শুনে নাকি আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়!
বইগুলো গোসলখানার পানি গরম করার কাজে পুড়ানো হতে থাকে। সব বই পুড়তে নাকি দীর্ঘ
ছয়মাস লেগেছিলো! বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক ড. জাফর ইকবাল এই গল্প আরো একটুখানি বিজ্ঞান বইতে উল্লেখ করেন এভাবেঃ





“আলেকজান্দ্রিয়ার সেই লাইব্রেরি একদিন পুড়ে ছাই করে দেয়া হলো – ঠিক কারা সেটি করেছিল সেটা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে৷ কথিত আছে লাইব্রেরির বইগুলো পুড়িয়ে গোসলখানার পানি গরম করা হয়েছে – দশ লক্ষের উপর বই পুড়িয়ে শেষ করতে সময় লেগেছে ছয় মাস থেকেও বেশি। পৃথিবীর ইতিহাসে এর থেকে হৃদয়বিদারক কোনো ঘটনা আছে বলে জানা নেই।”

ড. জাফর ইকবাল, আরো একটুখানি বিজ্ঞান, পৃ. ২৩ (ঢাকা: কাকলী প্রকাশনী, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ ফেব্রুয়ারি ২০১২)




জাফর স্যার সরাসরি মুসলিমদের দোষ দেন নি, একটু ঘুরিয়ে বলেছেন আরকি! তো আসল ইতিহাসটা কি? চা তৈরি তো? চুমুক দিতে দিতে পড়া শুরু করুন।





মুসলমানরা মিশর বিজয় করে ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে। আর উপরে বর্ণিত ঘটনাটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় বাগদাদের চিকিৎসক আব্দুল লতিফের (১১৬২-১২৩১ খ্রি.) সূত্রে। অর্থাৎ মুসলিমদের মিশর বিজয়ের প্রায় ৬০০ বছর পরে! অথচ নাস্তিক মৃত কালপুরুষ  তার লেখায় নির্জলা মিথ্যা বলেছেন-বিভিন্ন হাদিসে নাকি এ ঘটনার উল্লেখ আছে! বেচারা হাদিস কাকে বলে সেটাই জানে না! যাই হোক, আব্দুল লতিফের পরে আল কিফতি (১১৭২-১২৪৮ খ্রি.) এই ঘটনাটি তার সূত্রে উল্লেখ করেন। এই দু’জনের বরাতে সিরিয়ার ইসলামবিদ্বেষী খ্রিস্টান যাজক বারহেব্রাইয়াস (যার অপর নাম আবুল ফারাজ) ঘটনাটি তার লেখনিতে নিয়ে আসেন। ১৬৬৩ সালে এডওয়ার্ড পোকক এই লেখার কিছু অংশের ল্যাটিনে অনুবাদ করেন, সেখান থেকেই এই কাহিনী পশ্চিমে প্রবেশ করে। মজার ব্যাপার হলো, নাস্তিকদের  অন্যান্য অনেক দাবির মতো এই দাবিও ভিত্তিহীন, মিথ্যা।





Embed from Getty Images



এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা জানায়:





“আলেকজান্দ্রিয়ার জাদুঘর ও লাইব্রেরি খ্রিস্টিয় ৩য় শতকের গৃহযুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়; এর সম্পূরক লাইব্রেরিটি ৩৯১ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টানরা ধ্বংস করে দেয় ।”

Britannica Concise Encyclopedia, p. 44




নিউ ওয়ার্ল্ড এনসাইক্লোপিডিয়ার মতে, উমারের (রা) নামে প্রচলিত এই
ঘটনা বানোয়াট। খ্রিস্টানরা বানিয়ে এই গল্প প্রচার করেছে। নাস্তিক ব্লগার মৃত
কালপুরুষ বলেছেন:





“প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে এই অগ্নিকাণ্ডের সময় নিয়ে বিতর্ক পাওয়া যায় মুসলিম সম্প্রদায়ের ভেতরে । তাদের ভাষ্য এটা মুসলমানেরা করেনি। কে এই অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছিলেন তা নিয়েও মতান্তর তৈরি করা হয়েছে । … তবে এটাই সব চেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্য যে, ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে মুসলমান খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর দ্বারা এই লাইব্রেরি ভস্মীভুত হয় ।”





তার লেখা পড়ে মনে হয়, সত্য ধামাচাপা দেওয়ার জন্য
মুসলিমরা ইচ্ছে করে এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার এই
দাবিও নির্জলা মিথ্যা, মিথ্যা!
মুসলিম ঐতিহাসিকগণ যথেষ্ঠ গবেষণার পরই এই ঘটনার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
তাছাড়া অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বিতর্কের নজীর নাস্তিকদের পরমপূজ্য পশ্চিমা গবেষকদের
লেখাতেই ভুরিভুরি পাওয়া যায়। যেমন, ইসলামের কড়া সমালোচক প্রাচ্যবিদ
পি.কে. হিট্টি বলেন:





“খলিফার (উমরের) আদেশে (সাহাবি) আমর (ইবনুল আ‘স) দীর্ঘ ছয় মাস যাবত শহরের অগণিত গোসলের পানি গরমের চুল্লি জ্বালানোর কাজে আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের কিতাবাদি ব্যবহার করেছিলেন – এই গল্প এমনই এক কিচ্ছা যা অলীক কাহিনী হিসেবে ভালো হলেও ইতিহাস হিসেবে নিকৃষ্ট । এই বিশাল টলেমিয় গ্রন্থাগারটি প্রায় ৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজার পুড়িয়ে দেন । অপর গ্রন্থাগার যা ডটার লাইব্রেরি হিসেবে পরিচিত ছিলো, সেটা প্রায় ৩৮৯ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট থিওডোসিয়াসের হুকুমে ধ্বংস করে দেওয়া হয় । তাই আরবদের মিশর জয়ের সময় উল্লেখ করার মতো গ্রন্থাগারই আলেকজান্দ্রিয়ায় ছিলো না । সে কারণেই সমসাময়িকদের কেউই আমর বা উমারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ চাপায় নি । সর্বপ্রথম এই গপ্পো আব্দুল লতিফ আল-বাগদাদি বর্ণনা করেন বলে প্রতীয়মান হয়, যার মৃত্যু হয় ৬২৯ হিজরিতে (১২৩১ খ্রিস্টাব্দ) । কেন যে তিনি এই আকাজ করলেন তা তো আমরা জানি না, তবে তার গপ্পোই পরবর্তীতে কপি করে তাতে রঙ চড়ানো হয়েছে ।”

Philip K. Hitti, History of The Arabs; p. 166 (Macmillan International Higher Education, 2002)




ড. আজাদ ও রিচার্ড ডকিন্সের জ্ঞানপিতা অজ্ঞেয়বাদি
বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন:





“আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি খলিফা (উমার) ধ্বংস করেছিলেন এই গল্প প্রত্যেক খ্রিস্টানকেই শিখানো হয় । কিন্তু আসল ঘটনা হলো, এই লাইব্রেরি বারবার ধ্বংস হয়েছে, আবার গড়া হয়েছে । সর্বপ্রথম একে ধ্বংস করেন (সম্রাট) জুলিয়াস সিজার, আর শেষবার যখন একে ধ্বংস করা হয় সে সময়টা ছিলো নবী (মুহাম্মাদ) এর জন্মেরও আগে ।”

Bertrand Russell, Human Society in Ethics and Politics; p. 218 (Routledge, 2013)




ইসলামের কড়া সমালোচক বার্নাড লুইস স্বীকার করেছেন, এই কল্পকাহিনী ১৮শ শতক থেকে আজ পর্যন্ত ইউরোপিয় পণ্ডিতমহলে মিথ্যা, বানোয়াট ও অসম্ভব হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ড. আজাদ, মৃত কালপুরুষের মতো প্রকাশ্য নাস্তিক ও কিছু সুপ্ত নাস্তিকমনা ব্যাক্তি এতো গবেষণা করতে যান নি, পশ্চিমের কোনো ধর্মবিদ্বেষী বইয়ে পেয়েছেন, আর যাচাই ছাড়াই নিজের বইয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। নাস্তিকরা নাকি সত্য সন্বেষী! কই, তাদের কাউকে দেখেছেন মোঙ্গল চেঙ্গিস খা (আসল উচ্চারণ গেঙ্গিস হান) ও তার হন্তারক বাহিনী কর্তৃক বাগদাদের লাইব্রেরি পুড়ানো নিয়ে মাতামাতি করতে? মুসলিম মরলে নাস্তিকেরা হয়তো আনন্দ পান, কিন্তু এত বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার ধ্বংস করা হলো এটা নিয়ে কাউকে হাউকাউ করতে দেখা যায় না! উল্টো মুক্তমনা ব্লগে তাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ বানানোর অপচেষ্টা চলে হোরাস নামের নাস্তিকের কলমে! কেন এই দ্বিমুখীতা? চেঙ্গিসের হাতে মারা যাওয়া বেশীরভাগ লোকই মুসলিম – এটাই হোরাসের উচ্ছ্বাসের কারণ?





Embed from Getty Images



ইতিহাস বলে, খারাজাম মুসলিম সাম্রাজ্যকে পদানত করে লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যা করেন। তারই ধারাবাহিকতায়, যোগ্য উত্তরসুরী হালাগু খা বাগদাদে মুসলিম আব্বাসীয় খেলাফার পরিসমাপ্তি টানেন অবর্ণনীয় সন্ত্রাস আর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। এটা নিয়ে হোরাসের অভিযোগ নেই! অথচ তারিক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয়কে এই ব্যক্তি তরবারীর বিজয় আখ্যা দেন, আর ভুলে যান তারিকের বসানো ভিত্তির উপরেই তৈরী হয়েছে কর্ডোবার প্রাণবন্ত প্রকৃত মুক্তচিন্তার সমাজ যা ইউরোপে রেনেসাকে কিছুটা হলেও উদ্দীপিত করেছে।





আলেক্সান্দ্রিয়া ধ্বংসের বানোয়াট গল্পে মৃত কালপুরুষ, হোরাস ও মুক্তমনা গংদের অন্তরে ছুরিকাঘাত বসে যায়। কিন্তু এই সুশীল মুক্তমনারা আবার বাগদাদের লাইব্রেরির ধ্বংসের সুপ্রতিষ্ঠিত ইতিহাসকে ভুলে গিয়ে, যারা এই অন্যায় করেছেন তারা যে কত মহান ছিলেন তা নিয়ে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেন। আর কতো বলবো! পাঠকরাই বিচার করুন। [বিস্তারিত]





লেখাটি নিচের বই থেকে সংগৃহীত ও পরিমার্জিত:
ডা. রাফান আহমেদ, অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়; পৃ. ১৯৬-২০০ (ঢাকা: সমর্পন প্রকাশন, ২০১৯) [বেস্ট সেলার]





© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 15, 2019 17:00

আল-কুর্‌আন: সংক্ষিপ্ত পরিচয় [The Qur’an: An Introduction]

এই পৃথিবীর ইতিহাসে জনপ্রিয় গ্রন্থগুলোর তালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারী গ্রন্থটি হলো আল-কুর্‌আন। প্রায় ১৪৫০ বছর আগে ধূসর-কর্কশ মরুর বুকে বসবাসকারী যুদ্ধবাজ, বর্বর, স্বার্থপর, প্রাণপিপাসু, স্বাক্ষরতাহীন মানুষদের ‘পড়া’র আহ্বান দিয়ে এর যাত্রার শুভসূচনা ঘটে। তারপর এই গ্রন্থ ও একে বুকে ধারণকারী মানুষেরা সৃষ্টি করে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব, যার নজির ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। এই গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে এক জ্বাজল্যমান সভ্যতা, মরুর বর্বরেরা হয়ে উঠে নতুন দিনের বার্তাবাহক।





Embed from Getty Images



মাত্র ২৩ বছরে এই গ্রন্থ বদলে দেয় মানব ইতিহাসের ধারা। পৃথিবীর বুকে আর কোনো গ্রন্থ নেই যা এতো বেশি সংখ্যক মানুষ মস্তিষ্কের নিউরনে হুবহু ছেপে রেখেছে। লক্ষ-লক্ষ মানুষ, ছোট বা বড়, নারী বা পুরুষ, সাদা বা কালো; নিজের স্মৃতির খাতায় এই গ্রন্থকে সযতনে লিখে রেখেছে। প্রতিটি মুহূর্তে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও এই গ্রন্থ পঠিত হচ্ছে। আমেরিকান সাহিত্যিক জেমস এ. মিশেনার বলেন,





“পৃথিবীতে কুর্‌আনই সম্ভবত একমাত্র গ্রন্থ যা সবচেয়ে বেশী পাঠ করা হয় এবং নি:সন্দেহে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক লোক তা মুখস্থ রেখেছে।… আকারে বাইবেলের নতুন নিয়মের মত তত দীর্ঘ নয়, অপূর্ব ভাষায় রচিত এ গ্রন্থ কবিতা নয়, নয় কোন সাধারণ গদ্য; অথচ শ্রোতার হৃদয়কে বিশ্বাসের ভাবাবেগে উদ্বেলিত করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে এর।”

James A. Michener, Islam: The Misunderstood Religion; p. 70. The Reader’s Digest, May 1955




মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী পবিত্র আল-কুর্‌আন হলো পরম স্রষ্টা প্রেরিত আখেরি পয়গাম। এই বাণীকে তিনি একজন মনোনীত দূতের মাধ্যমে পুরো মানবজাতির মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কুর্‌আন (ক্রিয়া বিশেষ্য) শব্দটির উৎস ‘আরবি মূলশব্দ (قرأ – يقرأ) যার শাব্দিক অর্থ “একত্রিত করা (To collect, To put Together)”। কিন্তু পরবর্তীতে এর অর্থ দাঁড়ায় “পড়া, আবৃত্তি করা” কারণ কিছু পড়ার সময় শব্দ ও বর্ণকে একত্রিত করা হয়। (1) আল-কুরআনের সুপরিচিত ও সর্বজনবিদিত সজ্ঞাটি প্রদান করেন বিশিষ্ট ইসলামি মনিষী আল্লামা যারকানি, যার অর্থ:





আল-কুর্‌আন হল আরবি ভাষায় (পরম স্রষ্টা) মহান আল্লাহর বাণী। যা তিনি অবতীর্ণ করেছেন (সর্বশেষ বার্তাবাহক) মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর – শব্দে ও অর্থে। এটি সংরক্ষিত রয়েছে ‘মুসহাফে’ (2) এবং আমাদের নিকট পৌঁছেছে ‘মুতাওয়াতির’ বর্ণনা পরম্পরায়। মানবজাতির প্রতি এটি চ্যালেঞ্জ জানায় এর সমতুল্য কিছু রচনা করার।

মুহাম্মাদ আব্দুল আজিম আয-যারকানি, মানাহিল আল-ইরফান ফি ‘উলুম আল-কুর্‌আন; খণ্ড ১, পৃ. ২১ (কায়রো, দারুল কুর্‌আন)




Embed from Getty Images



প্রত্যাদেশ মৌখিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রচারের দ্বারা ক্রমান্বয়ে তা দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু পবিত্র কুর্‌আন মৌলিক এবং লৈখিক পদ্ধতির পাশাপাশি এক অভিনব পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হয়েছে, যাকে বলা হয় মুতাওয়াতির বর্ণনা পরম্পরা। মুতাওয়াতির বর্ণনা পরম্পরা বলতে বুঝায় – কোন বিষয় বিভিন্ন প্রজন্মে (যুগে) অসংখ্য মানুষ স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন যারা একে অপরের সাক্ষাত পাননি; এবং এসকল বর্ণনাও অভিন্ন। এক্ষেত্রে তাদের পক্ষে সম্মিলিতভাবে ভুল করা বা মিথ্যা রচনা করা সম্ভব নয়। তাই এমন তথ্যের গ্রহনযোগ্যতা সম্পর্কে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। (3) ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী সুপরিচিত পশ্চিমা দার্শনিক স্কটিশ সংশয়বাদী (Skeptic) ডেভিড হিউম-ও স্বয়ং এমন বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতার যৌক্তিকতার সমর্থন দিয়েছেন। (4) 





পবিত্র কদরের রাতে সমগ্র কুর্‌আন সংরক্ষিত ফলক (লাওহে মাহফুয) থেকে পৃথিবীর নিকটবর্তী “বাইতুল ‘ইযযাহ”তে অবতীর্ণ হয়। পরবর্তীতে ২৩ বছর সময়ব্যাপী তা প্রয়োজন অনুসারে মহান স্রষ্টার সর্বশেষ বার্তাবাহক মুহাম্মাদ (স) এর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়। কুর্‌আন যখন অবতীর্ণ হয় তখন ‘আরবি ভাষা ও সাহিত্য উৎকর্ষতার শীর্ষে অবস্থান করছিল। (5) আরবরা ছিল অত্যন্ত কাব্য অনুরাগী। আধুনিক ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম জনক ইবনে খালদুন আরব জীবনে কাব্যের গুরুত্ব সম্পর্কে তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল-মুকাদ্দিমা’য় বলেন:





… এভাবে প্রস্তুত তাদের কাব্যসম্ভার তাদের ইতিহাস ও বিচক্ষণতার ভান্ডার এবং তাদের দুঃখ-বেদনার গাঁথা হয়ে উঠেছিল …

ইবনে খালদুন, আল-মুকাদ্দিমা; খণ্ড ২, পৃ. ৯২ (অনুবাদ-গোলাম সামদানী কোরায়শী; ঢাকা, দিব্য প্রকাশ, ৩য় মুদ্রণ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)




তখন কবিদের কোনো গোত্রের মুখপাত্র গণ্য করা হতো। বর্তমান সময়ের মিডিয়া যেমন ব্যাপক প্রভাব ছড়িয়ে আছে আমাদের উপর, আরবে সেসময় কবি ও কাব্যের প্রভাব ছিল তেমন। আরবের বাৎসরিক সাহিত্য মেলা ওকায ও মুযান্নায় অনুষ্ঠিত কবিতা প্রতিযোগিতায় মুখে মুখে কাব্য রচনা ছিল তাদের প্রাণের উৎসব। ঐতিহাসিক বসওয়ার্থ স্মিথ বলেন,





“… সেই অজ্ঞতার যুগেও প্রতিটি গোত্র থেকে একজন করে প্রতিভাবান কবি অংশগ্রহণ করত। এদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ কবি নির্বাচিত হত, তার কবিতা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হত অথবা কা’বার দরজায় প্রদর্শনীর জন্য ঝুলিয়ে রাখা হত। যাতে করে পবিত্র ভূমিতে (মক্কা) আগত তীর্থযাত্রীরা সবাই সেই কবিতা পড়ার সুযোগ পায় …”

Bosworth Smith, Mohammed and Mohammedanism; p. 67 (London
Smith, Elder, & Co., 1874)




এমন প্রেক্ষাপটে নিরক্ষর (উম্মী) এবং কাব্যে অভিজ্ঞতাহীন মুহাম্মাদ (স) এক অমীয় বাণী প্রচার শুরু করেন যা আরবি ভাষার শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তিতে রচিত, কোনো মানুষ আগে তা শোনে নি ! (6) এই বাণীর অমীয় সৌন্দর্য ও মাধুর্য বিজ্ঞ আরব কবিদের হতভম্ব ও বাকহীন করে দেয়। তারা এর সমতুল্য কিছু রচনায় ব্যর্থ হয়ে একে “যাদু” বলে অভিহিত করে। প্রফেসর এম এ দ্রায লিখেন,





“… আরব বাগ্মীতার স্বর্ণযুগে ভাষা যখন বিশুদ্ধতা ও প্রেরণার শীর্ষে আরোহণ করেছিল, এবং বার্ষিক উৎসবে মহাসমারোহে কবি ও বাগ্মীদের প্রতি সম্মানের উপাধি অর্পিত হত; তখন কুর্‌আন কাব্য বা গদ্যের প্রতি সমস্ত উদ্দীপনাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল। কা’বার দরজায় ঝুলে থাকা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত কবিতাগুলো তারা নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। সকলেই নতমস্তকে আরবি অভিব্যক্তির এই অলৌকিকের (কুরআনের) প্রতি কান পেতে দিয়েছিল…

M.A. Draz, Introduction to the Qur’an; p. 90 (I.B. Tauris 2000)




Embed from Getty Images



আল-কুর্‌আন যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপনার দ্বারা মানুষকে এক ন্যায়ভিত্তিক শাশ্বত জীবন ব্যবস্থার দিকে আহ্বান করে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে স্মরণিকা, পথনির্দেশ ও সংবিধান প্রদান করে। কেন এই মহাবিশ্ব, কেন আমরা এই পৃথিবীতে আর মৃত্যুর পর আমাদের গন্তব্য কোথায় – মানুষের এই চিরাচরিত মৌলিক প্রশ্নগুলোর যৌক্তিক ও চিন্তা-উদ্দীপক উত্তর প্রদান করে।





এই উত্তর আহরণে খোলামন নিয়ে কুর্‌আন পড়তে হবে আমাদের। কোনো ভরা গ্লাসে নতুন করে কিছু দেওয়া তো সম্ভব না, তাই না? তাই বস্তুবাদী – সেক্যুলার – পশ্চিমা চোখে নয়, বরং বিনয়, জ্ঞান ও পথনির্দেশ গ্রহণের মানসিকতা নিয়ে কুর্‌আনের নিকট আসতে হবে। আমরা যারা আরবি ভাষী নই, তাদের জন্য অনুবাদই ভরসা। কিন্তু এতে মূল ভাষার মিষ্টতা ও অনন্যতা বোঝা দুষ্কর। প্রাচ্যবিদ আলফ্রেড গাইলাম ঠিকই বলেছেন:





কুর্‌আন বিশ্বসাহিত্যে এমন একটি রচনা যার মূল আবেদনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে অনুবাদ করা সম্ভব নয়। এতে আছে এমন সৌন্দর্যময় ছন্দ এবং সুরের মূর্ছনা যা কর্ণকুহরকে মোহিত করে। … এ কথা অনস্বীকার্য যে উচুমানের পদ্য ও গদ্যের সংমিশ্রণে রচিত এ গ্রন্থ আরবি সাহিত্যে অতুলনীয়… 

Alfred Guillaume, Islam; p. 73-74 (Penguin Books, Reprinted 1990)




তাই অনুবাদ পড়ার সময় প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত সে যা পড়ছে তা স্বয়ং কুর্‌আন নয় বরং তা হলো অন্য ভাষায় রূপান্তরিত একটি ব্যখ্যা মাত্র; যা অনুবাদকের ব্যক্তিগত অনুধাবন। কুর্‌আনের পাঠক যদি অমূলক সংশয় ও অস্পষ্টতা এড়িয়ে চলতে চান তাহলে তাকে চারটি মূলনীতি মনে রাখতে হবে (7) :





১। এমন গ্রন্থ পৃথিবীতে মাত্র একটিই আছে। (8)
২। এর সাহিত্যশৈলী অন্য সকল গ্রন্থ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন
৩। এর প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন।
৪। গ্রন্থ সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণার উপর ভিত্তি করে কুর্‌আন বুঝতে চেষ্টা করলে তা কেবল প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করবে।









রেফারেন্স:
(1) Edward William Lane, An Arabic-English Lexicon; Vol. 7, Book I, p. 2502 (Lebanon, LIBRAIRIE DU LIBAN, 1968); Justice Mufti Muhammad Taqi Usmani, An approach to the Quranic Sciences; p. 28 (Karachi, DARUL-ISHAAT, 1sr edition 2000)
(2) মুসহাফ এর শাব্দিক অর্থ লিখিত পৃষ্টার সংকলন; তবে এর দ্বারা সাধারণত পৃষ্টায় লিখিত কুরআনের সংকলনকে বুঝানো হয়, দেখুন: Edward William Lane, An Arabic-English Lexicon; Vol. 4, Book I, p. 1655
(3) A.A. Yasir Qadhi, An Introduction to the Sciences of the Qur’aan; p. 29 (Birmingham UK, Al-Hidaayah Publishing and Distribution, 1st edition 1999)
(4) “… তাই, যদি সকল ভাষার লেখকগণ একমত হন যে ১৬০০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে আট দিন সারা পৃথিবী পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে ছিলঃ যদি এই বিস্ময়কর ঘটনার বর্ণনা মানুষের মাঝে আজও স্পষ্ট ও প্রাণবন্ত যে সকল ভ্রমণকারী যারা বিদেশ থেকে ফিরেছেন তারাও একই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সামান্যতম পরিবর্তন বা অসংগতি ছাড়াইঃ এটা অনস্বীকার্য যে, আমাদের বর্তমান দার্শনিকগণ এই বর্ণনাকে সন্দেহের বদলে নিশ্চিতরূপে গ্রহণ করবেন এবং এর উৎসের কারণ অনুসন্ধান করবেন … ”, দেখুন : David Hume, An Enquiry Concerning Human Understanding; Sec. I/99, p. 88-89
(5) The Sacred Books and Early Literature of the East with Historical Surveys of the Chief Writings of Each Nation, vol. v (Ancient Arabia), p. 14-16 ( Parke, Austin, and Lipscomb, Inc., 1917)
(6) Dr. Laura Veccia Vaglieri, An Interpretation of Islam, p. 43 (New Delhi, Goodword Books Pvt. Ltd., 1st Published 2004); ক্যারেন আর্মস্ট্রং, মুহাম্মাদ: মহানবী (স:) জীবনী; পৃ. ১০০, ১৭৮ (বঙ্গানুবাদ-ঢাকা, সন্দেশ প্রকাশনী, চতুর্থ প্রকাশ: মে ২০১১)
(7) ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস, কুর্‌আন বুঝার মূলনীতি; পৃ. ৮৯, ৯৬ (বঙ্গানুবাদ; ঢাকা, সিয়ান পাবলিকেশন, ১ম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)





(8) Dr. Bassam Saeh, The Miraculous Language of the Qur’an: Evidence of Divine Origin (London: IIIT, 2015)





© 2019. No part of this article can be published in print form without prior approval from author.

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 15, 2019 09:39