খ্যাটনপুরাণ ও হা পিত্যেশের গল্প

“Your body is not a temple, it's an amusement park. Enjoy the ride.”
― Anthony Bourdain, Kitchen Confidential: Adventures in the Culinary Underbelly
এমন হাড়জ্বালানো বই আমি কস্মিনকালেও পড়িনি। গত কয়েকমাস ধরে এই বইটা শেষ করতে যে আমার কী কষ্ট হয়েছে সেটা একমাত্র আমিই জানি। ফুড জার্নালিজম আর বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতি নিয়ে কত বইই না লেখা হয়েছে, কিন্তু সেই সমস্ত বই এভাবে টর্চার করে না পাঠককে। খ্যাটনসঙ্গী যেন চক্রান্ত করে লকডাউনের মধ্যে আমার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল। এই দুঃখের কাহিনী খুলে বলতেই হচ্ছে।
কথা হল, খুব খাওনদার পাবলিক আমি মোটেও নই। টানা চাকরি- ফাকরি করতে হলে আমার খাওয়া দিন দিন আরো কমতে থাকে। রাতে চারটে রুটি থেকে সাড়ে তিনটে, তিনটে, আড়াইটে হয়ে এখন দুটো রুটি বরাদ্দ করেছি। উদাস নয়নে নেটফ্লিক্স বা আমাজন প্রাইম দেখতে দেখতে রুটি চিবোনো অথবা সানডে সাসপেন্স শুনতে শুনতে ভাত খাওয়ার মাঝে স্বাদ বা পদ নিয়ে আমি বিশেষ মাথা ঘামাই না। ও সব মায়ার বস্তু! তুম কেয়া লেকর আয়ে থে অউর কেয়া লেকর যাওগে?
এইবার কথাটা শুনে যদি আমাকে খুব রসকষহীন বলে ঠাউরে থাকেন তাহলে জানিয়ে রাখি, এই তুরীয় অবস্থা শুধুমাত্র ঘরে থাকার সময়টুকুতেই থাকে। করোনার করুণাদৃষ্টি আমাদের ওপর পড়ার আগে আমি ফি মাসে ব্যাগ পিঠে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তাম আর একবার পথে বেরোলেই আমার দিব্যদৃষ্টি খুলে যেত। তখন সমস্ত লোনলি প্ল্যানেট, ফুড অন দ্য প্লেট, জায়কা ইন্ডিয়া কা, ফুড স্ট্রিট আর গুচ্ছের বইয়ে পড়ে স্মৃতিতে তুলে ধরা খাবারের জায়গা আর পদ আপনিই আমার মস্তিষ্কে আপডেট হয়ে যায়। সঙ্গে প্রকোপ বেড়ে ওঠে নোলার। ন্যালাপ্যাঙলা শরীরের মধ্যে যেন ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি হয়। ঝপাঝপ স্ট্রিট ফুড ওড়াচ্ছি, রেস্তরাঁয় গিয়েও দেদার বিল উঠছে, মোমো কাবাব বিরিয়ানি রাবড়ি সব সেঁধিয়ে যাচ্ছে পেটে।
এই কচুরি খেলাম, তারপর হালুয়া খেলাম, তারপর কপির চপ আর ছানার জিলিপিতেও আপত্তি নেই। শিমুলতলা থেকে স্কটল্যান্ড, গোধুলিয়া থেকে গোরখপুর, যেখানে যা বিশ্ববিখ্যাত খাওয়ার দোকান, সব জায়গায় গিয়ে হামলা করার জন্যে একেবারে তৈরিই থাকি।পরাঠা লস্যি মকটেল থেকে রেলের ফিরিওয়ালার বাদাম শসা এলাচ চা, কেরলা কুইজিন থেকে পাইস হোটেলের মিল, গোয়ার ধনে পাতা দই দেওয়া পোর্ক থেকে পর্তুগালের হাতি সাইজের Francesinha স্যান্ডউইচ সব বেমালুম হজম হয়ে যায়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, আমার খাওয়ার সঙ্গে ঘোরাটা একেবারে লেপ্টে আছে। আরো ভাল ভাবে বলতে গেলে আমার সমস্ত কিছুর সঙ্গেই ওই একটা জিনিসের যোগাযোগ। বেশিদিন ঘরে থাকতে হলে আমার যেটা হয়, সেটা অবসাদের ঠাকুরদা। বৈরাগ্য হলেও হতে পারে! 'লাভ ফর ফুড' ব্যাপারটা দরজার চৌকাঠ পেরোলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে।
লকডাউন আর ট্রেন না চলার খাতিরে ঘরে বসে থেকে থেকে এমনিতেই আমার মাথা গরম, মনে দুঃখ, চোখে জল, নাকে সর্দি, গলায় খুশখুশ, পায়ে টনটন ইত্যাদি নিয়ে বসে আছি, এমন সময় এই বিদঘুটে বইটা এসে হাজির।
লিরিকালের বই যে ভাল হবে, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল না। খ্যাটনসঙ্গী নিয়ে বহু তারিফ করেছে লোকে, সেই সব আমি বলে আর কী হবে? কিন্তু আমাকে যা সহ্য করতে হল, সেটা নিয়ে কোর্টে পাবলিক পিটিশন দায়ের করা যায়। প্রথম পাতা থেকেই পাঠকের ওপর এইসা অত্যাচার শুরু করলেন, যে ভাবলেও আমি শিউরে উঠছি।
ভাবুন তো, আপনি আট মাস ধরে ঘরে বন্দী আর লেখক কী না বৃষ্টির রাতে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! তাও যদি শুধু বেড়ানো হত, এক এক জায়গায় যাচ্ছেন আর চর্বচোষ্য ওড়াচ্ছেন। উড়িষ্যার জঙ্গল থেকে শিলংয়ের ইকোরিসর্ট, হাইওয়ের ঠেক থেকে অরণ্যের গভীরে অবস্থিত ফরেস্ট বাংলো... পাকা রাঁধুনিদের হাতে তৈরি এক একটা পদ উপভোগ করছেন আর আপনি সেটা কল্পনা করে চোখের জল ফেলছেন! আর এই খাওয়াদাওয়ার বর্ণনা যে শুধুমাত্র পাঠককে জ্বালিয়েপুড়িয়ে মারার জন্যে লেখা হয়েছে, সেটা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। দেখুন দেখি নিচের লাইনগুলো...
"দীর্ঘ সময় ধরে ঢিমে কেঠো আঁচে ঝলসানোর ফলে মাংসে ধরেছে কালচে বাদামি রঙ। তার ওপর গলে যাওয়া চর্বির পালিশে যেন আবলুস কাঠের জেল্লা। আঙ্গুলের চাপে টুকরো ছিঁড়ে মুখে পুরে মুগ্ধ হলাম। উপরের মুচমুচে আবরণের আড়ালে সন্ধান মিল মাখন-নরম মাংসল স্তরের, জার মসৃণ রসাল মেজাজের সামনে নতি স্বীকার্য করতে বাধ্য পিকিং-ডাক এর ঔদ্ধত্য, পট রোস্টের সাবেকিয়ানা অথবা ক্রিসমাস টার্কির বিলিতি আস্ফালন। হাঁসের পেটে পুরে দেওয়া ধানি পেঁয়াজ আর শুকনো লঙ্কা ভাপে সেদ্ধ হয়ে মাংসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার রস ঢুকে পড়ায় স্পর্শ পাওয়ামাত্র স্বাদগ্রন্থিতে রোমাঞ্চকর সব কান্ডকারখানা শুরু হল। সিমলিপালের জঙ্গলে এমন অভূতপর্ব অভিজ্ঞতা হবে, কে ভেবেছিল?"
খিদে পাচ্ছে? জঙ্গলে যেতে ইচ্ছে করছে? না ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে? আরে দাঁড়ান, এই তো সবে শুরু! বাংরিপোশি যাওয়ার সময় গাড়ি বিগড়ে কুন্দবুড়োর আস্তানার খাওয়াটা দেখুন তো আগে...
"কত রাতে যে খেতে বসলাম খেয়াল নেই। গরম ভাতের সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা বনমুরগির ঝোল। জাঙ্গল ফাউলের স্বাদ আগেও পেয়েছি। কিন্তু কুন্দবুড়োর আস্তানায় রাঁধা মাংসের জবাব নেই। কেরোসিনের ম্লান শিখাতেও তার জেল্লায় চোখ ধাঁধায়। বেঁটে-মোটা লালচে ভাতের চুড়ো বেয়ে নামছে বাদামি গ্রেভির হিমবাহ। তারই মাঝে ডোরা কেটেছে সোনারংয়ের গলিত চর্বির লাভাস্রোত। তুলতুলে মাখন-মসৃণ মাংসে ধোঁয়াটে স্বাদের অপূর্ব উস্কানি। পোল্ট্রির মুরগির বিস্বাদে অভ্যস্ত জিভ তাতে সাড়া দিয়ে দিশেহারা। ঝোলমাখা আলুর আস্বাদনে ধন্য হল তামাম টেস্টবাড। সঙ্গে মূলো- কাঁচালংকার স্যালাডও মজুত।"
বুঝছেন তো এবার কী টর্চার? এ জিনিস বরদাস্ত করা যায়? বছর ঘুরে গেছে ফুচকা অব্দি জোটেনি, এর মধ্যে এইসব বিপদ! শুধু গহীন জঙ্গল নয়, একে একে অন্যরাও আপনার শান্তি ভঙ্গ করতে হাজিরা দিয়েছে তড়িঘড়ি। পাকদণ্ডী পাহাড়ের ছ'টা পর্বে যে পাহাড়ি ভ্রমণ আর রসনার বর্ণনা উঠে এসেছে, সেটা পড়ে পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়েছিল। (শালো, আড়াই তলা ভাড়া বাড়ি থেকে লাফানোও যায় না! সোজা গিয়ে তারের জঞ্জালে আটকে যাব!) পোর্ক শ্যাফটার রোমাঞ্চকর অনুসন্ধান আর লেপচা-নেপালি-পাহাড়িয়া খানা শুধু ননভেজেই থেমে থাকেনি, চিজ চকোলেট আর বেকারির জগতেও তার অবাধ বিচরণ। মাঝে মাঝে স্মৃতি ফুঁড়ে বেরিয়ে পড়া এক একটা পদের স্বাদ যেন খুঁজে পাওয়া যায়। কসম খোদার, সবচেয়ে আগে আমি দার্জিলিঙ গিয়ে ডল্লে খোরসানির আচার যদি না কিনেছি!
লেখক অবশ্য পাহাড়েই থামেননি। টর্চার চলেছে জলে, স্থলে, রেলে, শহরের অলিগলিতে, স্মৃতির ভাঁজে। ইলিশ পুরাণ থেকে কাবাব কিসসা, বেকন সসেজ থেকে তেঁতুলের চুরণ চাটনি, সাবেকি রান্না থেকে শৈশবের হারিয়ে যাওয়া পদ, বেনারস থেকে হোশিয়ারপুর, অতীত থেকে বর্তমান -- সব চেঁছেপুছে তুলে এনেছেন। পরিচিত রান্না যেমন আছে, তেমনই আছে এক্সক্লুসিভ সব রেসিপি। মাঝে মাঝে পাঠক ভাব বিহ্বল হয়ে বসে থাকবে, আবার মাঝে মাঝে ইতিহাসের রেলে উঠে পাড়ি দেবে একশ বছর আগে। তবে ওইসব ছেড়ে দিন, আসল চিজ অন্য। সেটা হল থার্ড ডিগ্রির মাহাত্ম্য। খাবারের বর্ণনা শুনে যে আপনি মাথার চুল ছিঁড়বেন না ডিগবাজি খাবেন, সেটা আমি বলতে পারছি না। এগুলো এক একটা ভয়ানক জায়গা এই বইয়ের। না পড়লেও চলবে না, আর পড়লে ঘিলু নড়ে বিকারগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ষোলআনা।
বিশ্বাস যেতিছে না? বটে! পড়ুন তাহলে--
"শেষে ডিনারের ডাক এল। ডাল তরকারির বাহুল্য নয়, সরাসরি পাতুরি দিয়ে শুরুয়াত। অভ্যস্ত হাতে আধপোড়া আস্তরণ সরিয়ে চমক। ও হরি! মাছের গাদার বদলে এ যে ইলিশের ডিম। খাওয়া তো দূরস্থান, এ পদ জীবনে ঠাহর করিনি। খানিক ভেঙে মুখে ফেলে বোধ-বুদ্ধি লোপ পাওয়ার জোগাড়। কলাপাতায় মুড়ে এ কোন মায়াজাল রচনা করা হয়েছে! সরষে-পোস্ত বাটার অল্প মুচমুচে স্তর অতিক্রম করে ইলিশ-গর্ভের গভীর থেকে উঠে আসা পেলব আস্বাদনের স্পর্শে মগজ আচ্ছন্ন হয়। চিরকাল জানি মাছের ডিম ভাজলে বা সেদ্ধ করলে শক্ত হয়ে যায়। বোঝা গেল, পাতুরিতে তাকে এমন নরম-সরম মেজাজে বশ করার মন্ত্র যিনি আয়ত্ত করেছেন, তিনি ওস্তাদ রাঁধিয়ে। গরম ভাতে এবার পড়ল মাখন নরম ভাপা ইলিশের গাদা। হাবেভাবে ঠিক যেন অভিমানী শুয়োরানি। আঙ্গুলের ডগায় বিগলিত তার মখমলি শরীর। কাঁচা সর্ষের তেলের টপিংয়ের দৌলতে জিভের ডগা থেকে টাকরা পর্যন্ত অনবদ্য সূক্ষ্ম সোয়দার মিহি ঝিলমিল। এর পর লঙ্কা ফোড়ন দেওয়া ঝোল। তেল ভাসা সোনালি দরিয়ায় টুকরো ঝিঙের ডিঙি ঘাই মারছে। পেটির বহর চোখ ট্যারা। স্টিলের থালায় ঝিলিক দেয় দেমাকি রূপোলি ছটা। তর্জনী ডুবিয়ে পেটির কোল থেকে উঠে এল গাঢ় বাদামি মখমলি পেস্ট। তার স্বাদে টেস্টবাডে ঘোর লাগে। অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় চিত্ত!"
আমি আর পারছি না। এই সব একসঙ্গে বরদাস্ত করতে পারব না বলে এমন সুখপাঠ্য বইটা আমি তিন চার মাস ধরে পড়ছি। না পারি একটানা পড়তে, না পারি ছাড়তে। খ্যাটনসঙ্গী পড়ে মনের অবস্থার কী হয়, সে কথা লিখে বোঝানো আমার কম্ম নয়। এই বইটার ভাষা, বর্ণনা, গবেষণা নিয়ে কথা বলা একেবারেই টাইম ওয়েস্ট। চমকপ্রদ ইলাস্ট্রেশনের কথাও না হয় নাই বললাম। দুর্গাপুজোয় কোথায় গিয়ে খাবেন, শহরের কোন প্রান্তে আসল চিজ পাওয়া যাচ্ছে, কাবাব আর বিরিয়ানির ঠিকানা নিয়ে যে লেখা হয়েছে সেটাও আপনারা নিজেরাই সন্ধান করুন। মোদ্দা কথা, বইটা পড়লে নিজে দায়িত্ব নিয়ে পড়বেন। এই সময়ে পাগল-ফাগল হওয়া মোটেও কাম্য নয়। আর সবচেয়ে দরকারি কথা, সঙ্গে কিছু মুখরোচক খাবার না থাকলে বইটা না খোলাই ভাল। সেই কষ্টের কোন নিদেন নেই। অন্ততপক্ষে সুইগি-জোমাটো থেকে কাবাব-পিজা-স্টিক সঙ্গে নিয়ে রাখলে একটু ভরসা পাওয়া যেতে পারে। ব্যস, পড়া না থাকলে অবিলম্বে পকেটস্ত করুন। এই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হলে আপসোস করেও লাভ হবে না। রসনাবিলাসের অভিজ্ঞতাকে এরকম মুচমুচে ভাষায় খেতে... থুড়ি...পড়তে ভাল না লাগলে খাওয়াদাওয়া নিয়ে কথা না বলাই ভাল।
পুনশ্চ-
১) গুগল ম্যাপ সঙ্গে রাখবেন। সব জায়গাগুলো সেভ করে রাখুন। আমি কমপক্ষে পঞ্চাশটা জায়গা টার্গেট করেছি। ট্রেনটা একবার চালু হোক। তারপর দেখাচ্ছি মজা।
২) বেশি স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা ভাবলে বই পড়তে হবে না। অম্বল আমাশা আর পেট খারাপের ভয়ে যারা চিঁড়ে দুধ খেয়ে খুশি, তারা এই শক বরদাস্ত করতে পারবেন না। ভাল মন্দ একটা কিছু হয়ে গেলে আমি দোষ নিতে পারব না।
৩) ছ্যাবলামি করতে গিয়ে আসল কথা বলতে ভুলে গেছি। বইটায় টিকা নিয়ে যে অসামান্য কাজ করা হয়েছে, সেটা আলাদা করে নজর কাড়ে। তামাম দুনিয়ার তাবড় তাবড় ফুড রাইটারদের নাম আর কাজ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা আছে। লীলা মজুমদার থেকে সামরান হুদা, বীর সাংভি থেকে চিত্রিতা ব্যানার্জী, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত থেকে বিবেকানন্দ -- কেউই বাদ পড়েনি। এর ফলে বইটা বিশেষ করে সংগ্রহযোগ্য হয়ে উঠেছে।
এইগুলো পড়ে আমি কয়েকটা বই পড়ব বলে বেছে রেখেছি। লিস্টে প্রথমেই আছে রাজিকা ভাণ্ডারীর The Raj on the Move: Story of the Dak Bungalow.