Hamida Mubasshera's Blog, page 3
February 13, 2022
মারিয়াম আল ইজিলিয়া: সিরিয়ার মুসলিম নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানী

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মহাকাজাগতিক বস্তুর প্রকৃতি ও অবস্থান নির্ণয়ে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোল্যাব। এই যন্ত্রগুলোর দ্বারা সূর্য ও গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের অবস্থান জেনে সময় এবং নেভিগেশান নির্ণয় করা যায়।
মুসলিমদের জন্যও অ্যাস্ট্রোল্যাবস অনেক উপকারী। কারণ এগুলো ব্যবহার করে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সঠিক সময় জেনে সালাতের সময় নির্ধারণ করা যায়। এগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে মক্কার সঠিক অবস্থান জেনে কিবলা নির্ধারণ করা যায় , রমাদান মাস শুরুর দিন এবং ঈদের দিনও নির্ণয় করা যায়।
মুসলিমদের উপকারের জন্য তাই মুসলিম বিজ্ঞানীরা অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণ ও এই সম্পর্কিত গবেষণায় আগ্রহী হয়েছিলেন। মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নারী অ্যাস্ট্রোল্যাবার হিসেবে ইতিহাসের পাতায় যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে তিনি হলেন মারিয়াম আল-ইজিলিয়া।
মারিয়াম আল-ইজিলিয়া দশম শতাব্দীর দিকে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের অধিবাসী ছিলেন। তিনি একটি প্রকৌশলী পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তার বাবা ছিলেন একজন বিখ্যাত অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাতা । তিনি তাঁর অর্জিত জ্ঞান তাঁর কৌতূহলী কন্যা মারিয়ামের সাথে শেয়ার করতেন। ধীরে ধীরে মারিয়ামও আস্ট্রোল্যাব তৈরীর কৌশল আয়ত্ব করেন এবং এতে আরও উৎকর্ষতা আনয়ন করেন।
তাঁর সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি যেসব নতুন নকশা প্রণয়ন করেন সেগুলো ছিল পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সঠিক ফলাফল প্রদানে সক্ষম। এজন্য তাঁকে অনেক জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হতো। এছাড়া তিনি নৌবিদ্যা এবং সময় সংরক্ষণ কৌশলেও দক্ষ ছিলেন। তাঁর কাজের সুখ্যাতি এতটাই বিস্তৃতি লাভ করে যে, আলেপ্পো শহরের আমীর সাইফ আল দাওলাহ তাকে চাকরীতে নিযুক্ত করেন। তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করেন ৯৬৭থেকে ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
জোতির্বিজ্ঞানের মতো জটিল একটি শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ মারিয়ামের নামানুসারে ১৯৯০ সালে পালোমার অবজারভেটরিতে হেনরি ই-হোল্ট কর্তৃক আবিষ্কৃত মূল-বেল্ট গ্রহাণুর নামকরণ করা হয় ‘7060 আল-ইজিলিয়া ।’
এছাড়াও নাইজেরিয়ান আমেরিকান লেখক নেদিওকোরাফর বিজ্ঞানের এই জাদুকরী প্রতিভার জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘বিন্তি’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল মারিয়ামকে ঘিরে। এই উপন্যাসটি নেবুলা পুরস্কার অর্জন করে।
বর্তমান যুগেও অনেকে বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের দ্বন্দ্বের অজুহাত টেনে মুসলিম নারীদের শিক্ষাগ্রহণের বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট করে দিতে চায়। অথচ সেই দশম শতাব্দীতে মারিয়াম আল-ইজিলিয়া একজন মুসলিম নারী হয়ে জোতির্বিজ্ঞানের মতো জটিল বিষয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন করেছেন এবং মুসলিমদের ইবাদতের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সঠিকভাবে নির্ণয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন।
সেই সাথে এটাও প্রমাণ করেছেন যে, নারীরা যে কোনও ধরনের জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহর জন্য অবদান রাখতে পারেন, হোক সেটা বিজ্ঞান বিষয়ক বা অন্য কোনো সাধারণ বিষয়। মারিয়াম আল-ইজিলিয়া তাই আজও বিজ্ঞানমনস্ক ও নতুন গবেষণায় আগ্রহী মুসলিম নারীদের জন্য একজন অনন্য রোল মডেল।
অনুবাদ: তানজিলা শারমিন
তথ্যসূত্র: https://www.whyislam.org/muslim-heritage/astrolabes-and-early-islam-mariam-al-astrolabiya-al-ijliya/
https://nustscienceblog.wordpress.com/2013/12/28/mariam-al-astrulabi/
https://mvslim.com/mariam-al-astrolabi-a-female-scientist-or-a-wish-upon-a-star/
কর্ডোভা’র লুবনা

জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো—জন্ম যেখানেই হোক না কেন কর্মদক্ষতারগুণে একজন নারী হয়ে উঠতে পারেন শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্রী। লুবনা ছিলেন এমনই একজন নারী যিনি কৃতদাসী হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীকালে নিজ মেধা ও যোগ্যতার গুণে আন্দালুসিয়ান রাজসভার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।
দশম শতকে জন্মগ্রহণকারী লুবনা সুলতান তৃতীয় আবদ আল-রাহমানের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন, সুলতানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্রের প্রধান সচিব হিসেবেও কাজ করেন। অভিজাত পরিবারের সদস্য না হওয়া স্বত্বেও একজন নারীকে রাষ্ট্রীয় এত গুরুত্বপূর্ন পদের দায়িত্ব প্রদান ছিল তাঁর দক্ষতার প্র্রতি আস্থার বহি:প্রকাশ।
তিনি রাজদরবারের পাঠাগারও দেখাশুনা করতেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিল প্রায় ৫০০,০০০ বই। পাঠাগারের বই সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি কায়রো, দামাস্কাস ও বাগদাদে সফর করেছিলেন। তাঁর পাঠাগারটি তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত পাঠাগারগুলো মাঝে অন্যতম ছিল।
তিনি ছিলেন একজন ভালো অনুবাদক। ইউক্লিড ও আর্কিমিডিসসহ বিখ্যাত অনেক ব্যক্তিবর্গের গুরুত্বপূর্ণ লেখা তিনি অনুবাদ করেছিলেন। মূল লেখার সাথে তিনি নিজস্ব ব্যাখ্যাও সংযুক্ত করতেন। এ থেকেই বোঝা যায় তার জ্ঞানের পরিধি।
গণিতের প্রতি ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। তিনি গণিত এতটাই পছন্দ করতেন যে, আন্দালুসিয়ার পথেঘাটে চলতে ফিরতে থাকা ছোট বাচ্চাদের তিনি গণিতের মূলনীতি ও গুণ করা শেখাতেন। এ থেকেই বোঝা যায়, তিনি বিষয়টি কী পরিমাণ আনন্দ নিয়ে করতেন! এছাড়াও তিনি ছিলেন কবি, দর্শনিক ও ক্যালিগ্রাফার।
তাঁর বিবিধ গুণাবলীর স্বীকৃতি দিয়ে প্রখ্যাত আন্দুলুসিয়ান আলেম ইবনে বাসকুওয়ালের বলেন, “লুবনা লেখালেখি, ব্যকরণ ও কাব্যরচনায় পারদর্শী ছিলেন। গণিতে তাঁর সুগভীর জ্ঞান ছিল একইসাথে তিনি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও সুদক্ষ ছিলেন। রাজদরবারে তাঁর মতো জ্ঞানী আর কোনো নারী ছিলেন না।”
এককথায় সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া লুবনা ছিলেন “সেল্ফ মেইড উইমেন “ এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যারা পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবকে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় মনে করেন তাদের জন্য লুবনা হতে পারেন অনুপ্রেরণার উৎস।
অনুবাদক : শারিকা হাসান
মূললিঙ্ক :
কোভিড সাপোর্ট ফান্ড- ২০২০, ২০২১
কোভিড সাপোর্ট ফান্ড- ২০২০
২০২০ সালে ’করোনা’ নামক এক ভয়াবহ সংক্রামক রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশও এই রোগের সংক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। ফলশ্রুতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সংক্রমণ কমাতে ’লকডাউন’ দেয়া হয়। এই ’লকডাউনে’ বিত্তশালীরা খাদ্য মজুদ করে রাখলেও বিপদে পড়ে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের লোকেরা।
মানবতার এই কঠিন সময়ে Mubashera Sisters গঠন করে ‘Covid support Fund ২০২০’ ।
দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে এবার চেষ্টা করা হয় সারা দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের মাঝে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেয়ার। আমাদের পরিচিত কিছু স্বেচ্ছাসেবক ভাইদের সহায়তায় গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। এছাড়াও কিছু বিশ্বস্ত বোনদের সহায়তায় এমন কিছু পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়, যাদের পক্ষে প্রকাশ্যে সাহায্য চাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাদের পরিচয় প্রকাশ না করে অর্থ সাহায্য দেয়া হয়।
এভাবে পাঠক ও শুভাকাঙ্খীদের সহায়তায় আমরা বেশ কিছু গৃহবন্দী পরিবারকে সাহায্য করতে সক্ষম হই আলহামদুলিল্লাহ।
কোভিড সাপোর্ট ফান্ড – ২০২১
২০২১ সালেও বিশ্বে করোনার প্রকোপ কমেনি বরং ভাইরাসের নতুন ধরন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই বছরেও আবার লকডাউন দিতে হয়। এবারের লকডাউনে নিম্নবিত্ত ও দিনমজুরের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত, বেসরকারী চাকুরিজীবী, ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্মহীন হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ। এসব মানুষকে সাহায্য করার জন্য Mubashera Sisters এর পক্ষ থেকে ১ম বারের মতো আয়োজন করা হয় Webinar. এই Webinar থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রদান করা হয় কোভিড সাপোর্ট ফান্ডে।
এছাড়া বরাবরের মতো দেশ, বিদেশ থেকে অনেকেই অর্থ সাহায্য পাঠান।
এই অর্থ আমরা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা এবং ভোলার করোনা আক্রান্ত এবং করোনার কারণে কর্মহীন নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে সফলভাবে বিতরণ করি আলহামদুলিল্লাহ। অর্থ বিতরণ প্রক্রিয়ায় আমাদের সহায়তা করেন এইসব জেলায় বসবাসরত আমাদের নিকটাত্মীয়রা ।

Hamida Mubasshera's Blog
- Hamida Mubasshera's profile
- 16 followers
