মারিয়াম আল ইজিলিয়া: সিরিয়ার মুসলিম নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানী

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মহাকাজাগতিক বস্তুর প্রকৃতি ও অবস্থান নির্ণয়ে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোল্যাব। এই যন্ত্রগুলোর দ্বারা সূর্য ও গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের অবস্থান জেনে সময় এবং নেভিগেশান নির্ণয় করা যায়।

মুসলিমদের জন্যও অ্যাস্ট্রোল্যাবস অনেক উপকারী। কারণ এগুলো ব্যবহার করে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সঠিক সময় জেনে সালাতের সময় নির্ধারণ করা যায়। এগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে মক্কার সঠিক অবস্থান জেনে কিবলা নির্ধারণ করা যায় , রমাদান মাস শুরুর দিন এবং ঈদের দিনও নির্ণয় করা যায়।
মুসলিমদের উপকারের জন্য তাই মুসলিম বিজ্ঞানীরা অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণ ও এই সম্পর্কিত গবেষণায় আগ্রহী হয়েছিলেন। মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নারী অ্যাস্ট্রোল্যাবার হিসেবে ইতিহাসের পাতায় যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে তিনি হলেন মারিয়াম আল-ইজিলিয়া।

মারিয়াম আল-ইজিলিয়া দশম শতাব্দীর দিকে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের অধিবাসী ছিলেন। তিনি একটি প্রকৌশলী পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তার বাবা ছিলেন একজন বিখ্যাত অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাতা । তিনি তাঁর অর্জিত জ্ঞান তাঁর কৌতূহলী কন্যা মারিয়ামের সাথে শেয়ার করতেন। ধীরে ধীরে মারিয়ামও আস্ট্রোল্যাব তৈরীর কৌশল আয়ত্ব করেন এবং এতে আরও উৎকর্ষতা আনয়ন করেন।

তাঁর সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি যেসব নতুন নকশা প্রণয়ন করেন সেগুলো ছিল পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সঠিক ফলাফল প্রদানে সক্ষম। এজন্য তাঁকে অনেক জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হতো। এছাড়া তিনি নৌবিদ্যা এবং সময় সংরক্ষণ কৌশলেও দক্ষ ছিলেন। তাঁর কাজের সুখ্যাতি এতটাই বিস্তৃতি লাভ করে যে, আলেপ্পো শহরের আমীর সাইফ আল দাওলাহ তাকে চাকরীতে নিযুক্ত করেন। তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করেন ৯৬৭থেকে ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

জোতির্বিজ্ঞানের মতো জটিল একটি শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ মারিয়ামের নামানুসারে ১৯৯০ সালে পালোমার অবজারভেটরিতে হেনরি ই-হোল্ট কর্তৃক আবিষ্কৃত মূল-বেল্ট গ্রহাণুর নামকরণ করা হয় ‘7060 আল-ইজিলিয়া ।’

এছাড়াও নাইজেরিয়ান আমেরিকান লেখক নেদিওকোরাফর বিজ্ঞানের এই জাদুকরী প্রতিভার জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘বিন্তি’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল মারিয়ামকে ঘিরে। এই উপন্যাসটি নেবুলা পুরস্কার অর্জন করে।

বর্তমান যুগেও অনেকে বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের দ্বন্দ্বের অজুহাত টেনে মুসলিম নারীদের শিক্ষাগ্রহণের বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট করে দিতে চায়। অথচ সেই দশম শতাব্দীতে মারিয়াম আল-ইজিলিয়া একজন মুসলিম নারী হয়ে জোতির্বিজ্ঞানের মতো জটিল বিষয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন করেছেন এবং মুসলিমদের ইবাদতের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সঠিকভাবে নির্ণয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন।

সেই সাথে এটাও প্রমাণ করেছেন যে, নারীরা যে কোনও ধরনের জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহর জন্য অবদান রাখতে পারেন, হোক সেটা বিজ্ঞান বিষয়ক বা অন্য কোনো সাধারণ বিষয়। মারিয়াম আল-ইজিলিয়া তাই আজও বিজ্ঞানমনস্ক ও নতুন গবেষণায় আগ্রহী মুসলিম নারীদের জন্য একজন অনন্য রোল মডেল।

অনুবাদ: তানজিলা শারমিন

তথ্যসূত্র: https://www.whyislam.org/muslim-heritage/astrolabes-and-early-islam-mariam-al-astrolabiya-al-ijliya/

https://nustscienceblog.wordpress.com/2013/12/28/mariam-al-astrulabi/

https://mvslim.com/mariam-al-astrolabi-a-female-scientist-or-a-wish-upon-a-star/

1 like ·   •  1 comment  •  flag
Share on Twitter
Published on February 13, 2022 07:51
Comments Showing 1-1 of 1 (1 new)    post a comment »
dateUp arrow    newest »

message 1: by Shahadat (new)

Shahadat Hussain Can we share this article to other website/facebook page?


back to top

Hamida Mubasshera's Blog

Hamida Mubasshera
Hamida Mubasshera isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Hamida Mubasshera's blog with rss.