হিরন্ময় কথকতা Quotes
হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
by
Mahmudul Haque22 ratings, 3.95 average rating, 6 reviews
হিরন্ময় কথকতা Quotes
Showing 1-4 of 4
“সাহিত্যের জগৎটিকে আমি যেভাবে আবিষ্কার করেছি সেটা আমার জন্য খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা হয় নি। এ জগতের অধিকাংশ লোককে আমি যেভাবে চিনেছি সেটা আমার একেবারেই ভালো লাগে নি…আমি এই জগৎটির সঙ্গে এত গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম যে, বহু লেখকের হাঁড়ির খবর আমার জানা হয়ে গিয়েছিলো। মানুষ হিসেবে যে এঁরা কতটা অসৎ, ভণ্ড, বদমাশ হতে পারে তা আমি দেখেছি।...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে, ধ্যান-মগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?”
― হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
― হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
“আসলে ঈশ্বরের সর্বজনস্বীকৃত কোন ইন্টারপ্রিটেশন তো আজও তৈরি হয়নি, মানুষ তাকে কল্পনা করে নেয়। সবার কল্পনা যেহেতু একরকম নয়, একএকজনের ঈশ্বরও তাই একেকরকম। এজন্য ঈশ্বর সম্বন্ধে কোন ধারণার কথা বলা বিপদজনক। ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বরের ধারণা খুব পরিষ্কারভাবে পাওয়া যায় না, যেটা পাওয়া যায় সেটা বিভ্রান্তিপূর্ণ। ঈশ্বর যে তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত আমি এ কথা বিশ্বাস করি, কারণ তাঁর কোন রূপ নেই, তাঁর কোন বাসস্থানও নেই। ঈশ্বর আকাশে বাস করেন এ কথা নিশ্চয় কেউ বলবে না! সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তিনি যেমন প্রকাশ করেন নিজেকে, তেমনি বসবাসও করেন সৃষ্টির মধ্যেই। তাই যদি হয়, তাহলে, মানুষের মধ্যে দিয়েও তিনি প্রকাশিত এবং বলা যেতে পারে মানুষের মধ্যে দিয়ে তিনি সর্বোত্তমরূপে প্রকাশ করেন নিজেকে এবং বাস করেন মানুষের মধ্যেই। এবং সেক্ষেত্রে তাঁকে মানুষের সমস্ত যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়, হয়েছে। মানুষের রোগ-শোক-দুঃখ-কষ্ট-হাসি-কান্না-সুখ-যন্ত্রণা এমনকি মৃত্যুর স্বাদও তাকে গ্রহণ করতে হয়েছে। যে মানুষের মধ্যে দিয়ে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেছেন, সেই মানুষের মৃত্যুতে কি তাঁরও মৃত্যু ঘটে যায়নি? এভাবে বহুবার তাঁকে জন্ম ও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে। আমার কাছে ঈশ্বরের ধারণাটি এমনই-তাকেও সমস্ত মানবিক অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়।”
― হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
― হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
“ডাক্তার নন্দী নামে এক ভদ্রলোক আমার মায়ের চিকিৎসা করতেন। খুব অদ্ভুত মানুষ ছিলেন তিনি। পশুপাখির সঙ্গে কথা বলতেন, মনে হতো তিনি ওদের ভাষা বোঝেন, অন্তত তাঁর কথা বলার ধরণটা ওইরকমই ছিলো। তাঁর পোষা কুকুর ছিলো, সেগুলোকে তিনি সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। আমি তখন টিয়েপাখি পুষতাম, তিনি আমাদের বাসায় এসেই আগে টিয়েকে আদর করতেন, কথাবার্তা বলতেন। তো ওই ভদ্রলোক আমার কাছ থেকে বই নিয়ে যেতেন পড়ার জন্য। একদিন তিনি বললেন-'আমার কি মনে হয় জানো? মনে হয় আমরা সময় কাটাবার জন্য, ক্লান্তি দূর করার জন্য এসব বইটই পড়ি, অথচ এগুলো যারা লেখেন তাঁদেরও একসময় আর এগুলো ভালো লাগে না। বুঝলে, ক্লান্ত লাগে ক্লান্ত লাগে।' তাঁর এই কথাটা আজকাল আমার খুব মনে পড়ে। আমারও এখন ক্লান্ত লাগে ক্লান্ত লাগে। জীবনটাকে ভীষণ অর্থহীন মনে হয়। আর তাছাড়া, লিখে কি হয়? লেখালেখি করে কি কাউকে কমিউনিকেট করা যায়? মিউজিক বরং অনেক বেশি কমিউনিকেটেবল ল্যাংগুয়েজ। লেখালেখিতে যা কিছু বলতে চাই তা বলা হয়ে ওঠে না, আমি অন্তত বলতে পারিনি। যেটুকু বলেছি তা-ও বোঝাতে পেরেছি বলে মনে হয় না। যাকে বলে ব্রেকডাউন অব কমিউনিকেশন সেটা আমাদের সবার জীবনে ঘটে, আমার জীবনেও ঘটেছে।”
― হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
― হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
“দেশভাগের সময় আমার বাবা এখানে চলে এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু আমরা আসতে চাইনি। মা তো আসার ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। এখানে আসার আগে তিনি দুবার ঢাকায় এসেছিলেন বাবার সঙ্গে, এবং ফিরে গিয়ে বলেছিলেন ওটা বর্বরদের দেশ। কারণ কী জানো? যে দুবার তিনি এসেছিলেন কোনোবারই রাস্তাঘাটে কোন মেয়েকে চলাফেরা করতে দেখেননি। তখন তো ঢাকা শহরে মেয়েরা বাইরে বেরুতোই না, দু-একজন বেরুলেও রিকশা পর্দা দিয়ে ঘিরে বেরুতো। তো এইসব দেখে মা'র নাকি মনে হয়েছিলো, যে দেশে মেয়ারা বাইরে বেরুতে পারেনা সেটা একটা বর্বর দেশ। তিনি ব্যাপারটা এতই সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন যে, ফিরেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন-কিছুতেই তিনি পাকিস্তান যাবেন না। এমনকি ওখানে বাস করার জন্য নতুন বাড়ি পর্যন্ত বানানো শুরু করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা থাকতে পারিনি। আব্বা এখানে চলে আসার পর ওখানকার অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে, সবাই আমাদেরকে দেখতে থাকে সন্দেহের চোখে, এমনকি আমাদের সঙ্গে মেলামেশাও বন্ধ করে দেয়। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি একসময় এমন এক অবস্থায় পৌঁছায় যে আমরা চলে আসতে বাধ্য হই। এখন বলো, যে জন্মভূমি তার সন্তানদের দেশত্যাগে বাধ্য করে সেই জন্মভূমির প্রতি কোন প্রেম থাকে?”
― হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
― হিরন্ময় কথকতা : মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
