বিদেশের বৃষ্টি

বাড়িতে থাকলে মা খিচুড়ি বানাত এমন দিনে। সোনা মুগের খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা। কিন্তু বিদেশে সোনা মাসুরি চালের ভাতই ভরসা। গত সপ্তাহে ইন্ডিয়ান স্টোর থেকে রুই মাছ এনেছিলাম। এখন ফ্রিজের বরফে জমে কাঠ। বের করে নিয়ে ভেজে নিলেও হয়। কিন্তু এরকম মন উদাস করা সকালে কি রাঁধতে ভাল লাগে?
কলকাতায় হলে আজ নিশ্চয়ই স্কুলে রেইনি ডে হত। সামনের রাস্তাটা হয়ত নদী হয়ে গিয়ে বয়ে চলতো, আর রঙ বেরঙের কাগজের নৌকোরা সেই নদীতে এঁকেবেঁকে বেরিয়ে পড়তো অজানা সব অ্যাডভেঞ্ছারে। গরম গরম চা আর সিঙ্গারা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখতাম বা ভুতের গল্প পড়তাম, কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে শুয়ে। কলকাতার বৃষ্টির আলাদাই সৌন্দর্য, আলাদাই মজা।
কার্পেটে শুয়ে শুয়ে বৃষ্টি ভেজা সকালটার শোভা দেখছি, দেখছি বারান্দার কালো রেলিঙে লেগে থাকা শেষ জলের ফোঁটাগুলোকে টুপ টুপ করে ঝরে পড়তে, হঠাৎ দেখি একটা হলুদ রঙা পাখি বারান্দার রেলিঙে এসে বসলো। হলুদ শরীর, লাল মাথা, আর কালো পাখা। ছোট একটুখানি। কে তুমি পাখি? আগে তো কখনও দেখিনি!
পাখি আমার দিকে তাকিয়ে ঘাড় কাত করে কিচিরমিচির করলো কিছুক্ষণ। তারপরে উড়ে চলে গেল। আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত বেরিয়ে এলাম বারান্দায়। ভেজা কাঠের মেঝের উপর পড়ে আছে একটা ম্যাপল পাতা। শুকনো না, অকালে ঝরে পড়া ঝকঝকে সবুজ একটি পাতা। কি মনে হল হাতে তুলে নিলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি, আমার চেনা জঙ্গলটা কেমন করে যেন রাতারাতি বদলে গেছে। সবুজেরও যে এত রঙ হয় জানতাম নাতো আগে! হাল্কা ঘন মাঝারি নানা ধরনের সবুজের ভিড় যতদূর চোখ যায়। আর সেই ঘন সবুজের মাথার উপর খেলছে অসংখ্য হলুদ পাখি। ডানা ঝাপটে একে অপরকে জল ছিটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে কিছুক্ষণ বাদে। কি মজা।
আমি তাকিয়ে আছি, চোখ ফেরাতে পারছি না। হঠাৎ সেই পাখি এসে আবার আমার রেলিঙে বসলো আর কিচিরমিচির করে অনেক কথা বলল। আমি বুঝতে পারলাম – ও আমাকে বলছে, সব দেশই বৃষ্টি তে সুন্দর, শুধু সেই সৌন্দর্য কে খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা।
Love,

© copyright 2014 – All rights reserved
Riot of Random

Published on July 30, 2014 14:09
No comments have been added yet.