ইম্পসিবল ক্রিচার্স


 




 আমার বলতে সংকোচ নেই, উনিশ কুড়ি বছর অব্দি আমি নব্বই পার্সেন্ট শিশুকিশোর পাঠ্য বই পড়েই থেকেছি, অন্ততপক্ষে বাংলায়। তাই এখন যখন বেশিরভাগ লেখাই হতাশ করে, সত্যিই মন খারাপ হয়। তারপর আবার শুনি, বয়স বেড়েছে বলেই নাকি ছোটদের লেখা তেমন মন টানছে না। ছোটদের আসলে দিব্যি লাগছে। সেটা হতেই পারে, কিন্তু আমি মাস দুয়েক পর পর 'কালো পর্দার ওদিকে' আর 'টংলিং' তাহলে পড়ছি কেন আর 'ম্যাকেঞ্জি বাংলোয় রাত' বা পেনেটির ভূতের জন্য ইউটিউব খুঁজছি কেন? শুধু পুরোনো অবশ্য নয়, নতুনের মধ্যেও মাঝেমধ্যে দিব্যি লেখা  পাওয়া যায়। আলাদা করে আর নাম নিলাম না। তবে ওই শারদ সংখ্যার প্রকাশের সময় ছাড়া বাকি বছরে কতজন নতুন শিশুকিশোর বই নিয়ে আলোচনা করে আর কতজন সময় নিয়ে একটা ষাট হাজারি ছোটদের উপন্যাস বা নতুন গল্প সংকলন বার করতে চায়, সে কথা আলাদা করে না বললেও চলবে।

একটু ভূমিকা করতেই হল, কারণ এই বইটা ঠিক বড়দের নয়। তবে বড় ছোট মেজো সেজো সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ক্যাথেরিন রুন্ডেলকে লোকে এ যুগের টলকিন বলে ফেলছে। স্টিফেন কিং থেকে নীল গাইমান, আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া, দুনিয়া জুড়ে ইম্পসিবল ক্রিচার্সদের নিয়ে মাতামাতি চলছে। এহেন আমি পড়ব না, তা তো চলে না। 

কোনোরকম ঢং না করে বলি, ইম্পসিবল ক্রিচার্স আমার ফাটাফাটি লেগেছে। গল্পে এমন কিছু নতুনত্ব নেই, শিশুসাহিত্যে ম্যাজিকের দুনিয়া দিয়ে দশটার মধ্যে আটটা গল্প লেখা হয় আজকাল। কিন্তু লেখিকা অসম্ভব মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়ে একটা হাই ভোল্টেজ কোয়েস্ট ড্রামা তৈরি করেছেন, যার সমস্ত সূত্র আসলে লুকিয়ে আছে অসম্ভব মানে ইম্পসিবল সব ক্রিচার্সদের কাছে। তারা কখনও সেন্টুর্স, কখনও গ্রিফিন, কখনও স্ফিংস। যথারীতি চমৎকার ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, মজাদার সব চরিত্র, আর স্টেকও বড় কম নয়। নিয়ম মেনেই আন্ডার দ্য লাইন গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় নিয়ে কথা উঠেছে, গল্প মাঝেমধ্যে গম্ভীরও হয়েছে, কিন্তু গতি থমকায়নি একচুল। একদম হুড়মুড়িয়ে পড়ে যেতে হয় আর পড়া শেষ হলেও রেশ লেগে থাকে।  কে বলে, বড় হয়ে গেলে ছোটদের বই ভালো লাগে না? (হুঁকোমুখো রাগী বুড়োবুড়িদের ধরছি না, নমস্কার) 

হাইলি রেকামেন্ডেড। বাংলা না জানা অল্পবয়সীদের বই উপহার দিতে হলে এই বইটা পার্ফেক্ট গিফট হতে পারে।

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 20, 2024 21:41
No comments have been added yet.