পাবলিসিটি স্ট্যান্ট কি?

অনেক বড় একটা ফেসবুক পেইজ একসময় মেন্টেইন করার কারণে অনেক পাবলিসিটি স্ট্যান্ট করা সেলেব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার আমি দেখেছি। কারো নাম নিয়ে কাউকে ছোট করাটা আমার উদ্দেশ্য না, তবে কিছু সত্য শুনে রাখলে ভবিষ্যতে বরং সবার উপকারই হবে। কারণ, এদের সবার সাইকোলজি প্রায় একইভাবে কাজ করে, এবং সুযোগ বুঝে এরা পল্টি মারতে এক সেকেন্ডও লাগায় না।

সরাসরি প্রসেসটা বলি এবার, প্রথমে একটা ভিডিও বানানো। সেই ভিডিও বানানোরও কিছু সিস্টেম থাকে। যেমন ধরুন, দামী ডিএসএলআরে ফুটেজ না নিয়ে মোবাইল দিয়ে ভিডিও করা। এতে লাভ কি হয়? ভিডিওটা র‍্যান্ডমলি কোনো পেইজ থেকে যখন ছাড়া হয়, তখন এমন ক্যাপশন দিয়ে ছাড়া হয় যেনো এটা লুকিয়ে বাইরের কোনো মানুষের তোলা ভিডিও। ‘ভাইয়ের উদার মন’, ‘আপু অনেক ভালো’, ‘গরীবদের দেখলেই কান্না চলে আসে তার, তিনি আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু’, ‘লুকিয়ে লুকিয়ে ভিডিওটা নিলাম, একটা মানুষ কতোটা ভালো হতে পারে তা তাকে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না, রেসপেক্ট’ এই টাইপের ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটা বড় কোনো পেইজ টার্গেট করে ছাড়া হয়। আসলে নিজের পেইজে ছাড়লে নিজের মুখোশ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এই ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে পেইজের মালিককে টাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয় পেইজে ভিডিওটা পাবলিশ করার জন্য।

এরপরে আরো কিছু ঘটনা ঘটে। এই ভিডিও নিজের পেইজে শেয়ার দিলে তো মান-ইজ্জত শেষ। তো এরপর কি করা যায়? এরপরে নিজের চ্যালাপেলাদের দিয়ে শেয়ার দেওয়ানো হয়। ভিডিও তো শেয়ার হচ্ছে, এখন নিজে থেকে ওখানে গিয়ে কমেন্ট করলে তো মানুষ ভাববে তাদের কাজ কর্ম নাই, মান ইজ্জতও যেতে পারে আবার। এর থেকে বাঁচার উপায় কি? লাগাও ট্যাগ! ওই পোষ্টগুলোতে তাদেরকে ট্যাগ করতে বলা হয়। এরপরে সেই সেলেব্রিটি ভাই বা আপু এসে কমেন্ট করেন, ‘ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ভাই, দোয়া করবেন যাতে মানুষদের পাশে এভাবেই থাকতে পারি’। এরপরে যেই পেইজ থেকে ভিডিওখানা ছাড়ালেন, সেখানে গিয়ে তারা একখানা কমেন্ট করেন, ‘আমি তো সারাজীবন বেঁচে থাকবো না, যতদিন বেঁচে থাকবো মানুষের জন্য করতে চাই। জানিনা এই ভিডিওটা কে করলো, তবুও ভালো কাজগুলো এভাবেই প্রমোট হতে থাকুক। সবাই ভালোবাসা নিবেন, আমার জন্য দোয়া রাখবেন।’ ওরে আমার দুঃখ আর ভালোবাসা! একেবারে উতলে পরতেছে! ওই কমেন্ট এখন আবার পিন করাও লাগে। যাতে ভিডিওখানায় ক্লিক করলেই, মানুষ সেই সেলেব্রিটির কমেন্ট খানা দেখতে পান। সেখানে সাধারণ মানুষেরা কমেন্টের রিপ্লাই করেন, ‘ভালোবাসা ভাই, বেঁচে থাকুন, এভাবেই করে যান।’

এরপর তার বদনখানি দেখে তার প্রফাইলে গিয়ে একটা ফলো দিয়ে আসে সাধারণ মানুষ, শেয়ারও দেয় ধুমায়ে, এই ভেবে যে মানুষটা অনেক ভালো! যেই মানুষগুলো ঠিকঠাক জানেওনা কি পরিমাণ গেইম খেলা হলো পুরো প্রসেসটায় তাদের সাথে, কি পরিমান বোকা বানালো হলো তাদের। এইরকম তথাকথিত সেলেব্রিটি দিয়ে আমাদের আশপাশ একদম ভরে আছে। একপাক্ষিক দোষ দেওয়া সম্ভব না, কারণ এতো সূক্ষভাবে মানুষের মস্তিষ্কের জায়গা নেওয়াটাই এদের কাজ। আমরা সাধারণ মানুষরা এই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি, এবং তাদের রেভিনিউ হতে থাকে আকাশ ছোঁয়া। যদিও তাতে কারোই কোনো সমস্যা নেই, যদি তারা সত্যিই সেই মানষিকতার হয়ে থাকেন। তবে প্রশ্ন হলো, যার উদ্দেশ্যই সৎ, সে কি এরকম পাবলিসিটি স্ট্যান্টের পার্ট আদৌতেও হতে চাইবে? চাইবে না।

পাবলিসিটি স্ট্যান্ট যখন বলছি, তখন আপনাদের বুঝতে হবে, ভালো কাজ প্রমোট করা এবং পাবলিসিটি স্ট্যান্ট দুইটা আলাদা জিনিস। একটা হচ্ছে ফেইমের লোভে কোনো কাজ ফেইক করে আপনার সিম্প্যাথি নিয়ে টাকা কামানো, ফেইম বাড়ানো, আরেকটা হচ্ছে মানুষকে ভালোর দিকে উৎসাহিত করা। আমি দ্বিতীয়টার পক্ষে, প্রথমটার নই। এবং আপনাকেও বুঝতে হবে, কাকে ফলো করবেন, কেনো করবেন। মনে রাখতে হবে, কোনো পাবলিসিটি স্ট্যান্ট করা কেউ যেনো আপনার লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, ফলো করাকে কেন্দ্রীভূত করে রেভিনিউ কামিয়ে, আপনার খারাপ সময়ে আপনাকেই লাত্তি মার‍তে না পারে, মানবতার ফেরিওয়ালা থেকে হুট করেই পল্টি মারতে না পারে। তাদের মাত্র একটা সেকেন্ড দরকার খোলস বা মুখোশ যাই বলেন সেটা পাল্টে ফেলতে। তাই আগেই সাবধান!!!

The post পাবলিসিটি স্ট্যান্ট কি? appeared first on সিয়াম মেহরাফ.

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on July 31, 2024 10:21
No comments have been added yet.