মেডিকেলের জীবন ভালো-মন্দ মিলিয়ে একটা অনন্য অভিজ্ঞতা হলেও, ওর কিছু অস্বস্তিকর ব্যাপার ছিল। ক্লাস শুরুর প্রথম দিনই বহুদিনের মৃত বিকৃত মানব দেহকে সামনে নিয়ে পাঠদান, ল্যাবের জারে গা ঘিনঘিনে স্পেসিমেন, ফর্মালিনের কড়া গন্ধ, পুরনো আমলের হোস্টেল, কাছ থেকে অল্পবয়েসী কিছু ছেলেপিলের দলাদলির নামে মারামারি, হিংস্রতা ইত্যাদির সাক্ষী হওয়া। পড়াশোনাতে একটা ভীতি, কয়েকজন সিনিয়রকে দেখা যারা ডাক্তার হয়ে বের হতে পারছে না, বছরের পর বছর পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, হোস্টেলে উঠেই ফিফথ ইয়ারের একজনকে দেখি সিজোফ্রেনিক, কাল্পনিক কারো সাথে করিডোরে কথা বলছে। হোস্টেলে ভাল রুমে পেতে সুইসাইডের কারনে দু-তিন বছর বন্ধ থাকা একটা রুম, যেটা মূল হোস্টেল থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন, এমন একটা জায়গায় থাকা শুরু করা। ইন্টার্ন ডিউটির একেকটি ওয়ার্ড যেন হাজির হয় রোগীদের বেদনা ক্লিষ্ট মুখ আর অসহনীয় আর্তিতে অভ্যস্ত হওয়া শেখাতে, হাসপাতালের প্রতি ইঞ্চিতে পাতানো বিছানায় থিকথিক করা রোগী নিয়ে সেসব হয়ে দাঁড়ায় যুদ্ধবিদ্ধস্ত কোন ওয়েস্ট্রার্ন ফ্রন্ট, আমরা যেখানে ঘুমহীন, ক্ষুধার্ত পিপাসার্ত সাদাকাপড়ে মোড়া সৈন্যরা কাঠের রাইফেল নিয়ে যুদ্ধে নামি অদৃশ্য কোন অপশক্তির বিরুদ্ধে, যে রোজ রাতে স্ট্রেচারের চাকায় চড়ে হাজির হয়, কেড়ে নেয় আমাদের কাছে আশ্রয় চাইতে আসা নারী পুরুষ শিশুর প্রাণ।
ইত্যাদি নানা কারনে, মেডিকেলের ওই জীবনকে পেছন ফিরে দেখলে এখনও একটা অন্ধকার অবয়ব দেখি, যেন থকথক করছে, হাত বাড়ালে হাতে লেগে যাবে। ভালো সময়, নানা অর্জন, বন্ধু-বান্ধব, কিছু প্রিয় সিনিয়র আর শিক্ষক, সিলেটের ঝুম বৃষ্টিময় রাত আর রোদে মোড়া দিনে ঘোরাঘুরি- এসব সেই অন্ধকারকে ঢেকে রাখে, কিন্তু তারপরও ওরা যেন সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে আসে। কখনো মনে হয় না, ওখানে আর ফিরে যাওয়া উচিত।
সম্ভবত সেসব কারণেই অসচরাচরের গল্পগুলো অবচেতনে তৈরি হয়ে ছিল, ওদের লিখে ফেলার উদ্দেশ্য হতে পারে ওসব অস্বস্তিকর অন্ধকারকে মলাট বন্দী করা, হয়তো ওটাই অন্ধকার থেকে মুক্তির উপায়।
অসচরাচর নাজুক মানসিক অবস্থার একজন তরুণ ডাক্তারের গল্প, যিনি রোগী দেখতে গিয়ে বিচিত্র বিপজ্জনক অতিপ্রাকৃত কিছু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান।
বইটি প্রকাশ করেছে চিরকুট, বইমেলা ২০২৪ এ।
Published on
February 20, 2024 20:35
•
Tags:
অসচর-চর