উয়ো ভি কোই দেশ হ্যায় মহারাজ

 


বছর চারেক আগে অনিল যাদবের হিন্দি রিপোর্টাজ 'উয়ো ভি কোই দেশ হ্যায় মহারাজ' হাতে এসেছিল। দুই কলেজ পাসআউট ওয়ানাবি পলিটিকাল জার্নালিস্ট আশায় আশায় গিয়ে পৌঁছেছে অসমে। উদ্দেশ্য, নয়ের দশকের টালমাটাল অবস্থা সম্পর্কে নর্থ ইস্ট থেকে ফিল্ড রিপোর্টিং করবে! প্রথম দিন থেকেই নাজেহাল অবস্থা। এই ভূভাগের জটিল ইতিহাস, সংস্কৃতি আর রাজনীতির জড়িয়ে যাওয়া জালের ভিতর থেকে সত্তিকারের তথ্য বের করা মানে বালির পাহাড় থেকে ছুঁচ খুঁজে আনা। তারপর নর্থ ইস্ট মানেই অন্য দুনিয়া। সে কি আর আমাদের দেশ? ওরা আমাদের বিশ্বাস করে না, আমরা ওদের বিশ্বাস করি না... এই মনোভাব একদিন, এক সপ্তাহ, এক মাসে বদলানোর নয়! সঙ্গী পিটটান দিয়েছিলেন পরদিনই। থেকে গিয়েছিলেন অনিল। দিনের পর দিন বাসে ট্রেনে ঘুরে, লোকাল মানুষ আর নেতাদের সঙ্গে দোস্তি করে, ইন্সার্জেন্ট গ্রুপ আর টেররিজমের হাঁড়ির খবর বের করে আনা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জীবনের কথা... সবই উঠে এসেছিল বইটায়। ভাগ্য ভালো, বইটা ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। 


আজ মনে হল, এর চেয়ে ভালো নাম আর দেওয়া যেত না অনিল যাদবের বইয়ের। মণিপুরে যা হচ্ছে আর সে নিয়ে সংবাদমাধ্যম আর সরকারের যে মনোভাব চোখে পড়ছে, তাতে মনে হয় না মেরিকমের জন্মস্থান বাদ দিয়ে মণিপুরকে কেউ আমাদের দেশ বলে মনে করে। এককালে পাঁচ ছটা ইন্সার্জেন্সি গ্রুপ ছিল, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে সত্তর আশিতে পৌঁছে গিয়েছে। হিন্দু-মুসলিম মেজোরিরি মায়েতি কমিউনিটি আর পাহাড়ে বসবাস করা ক্রিশচান কুকি ছাড়াও একগাদা এথনিক গ্রুপ, প্রত্যেকে নিজের নিজের সশস্ত্র দল খুলে বসে আছে। এদের অনেককেই সরকারি ইন্টেলিজেন্স অস্ত্র আর অর্থ দিয়ে পুষেছে নিজেদের স্বার্থের জন্য। এ ওকে মারছে, ও একে মারছে। কে যে কাকে মারছে, কেন মারছে, বুঝতে গেলে চোয়াল ঝুলে যাবে। পুরো সিরিয়ার মতো অবস্থা, তাও শুধু একটা স্টেটে। সে নিয়ে কারো মাথাব্যাথাও নেই। 


দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নার্কো ট্রেড, বেআইনি অস্ত্র ব্যবসা, হিউম্যান ট্রাফিকিং, বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ, পরিবেশ বদল, ইল্লিগাল মাইনিং, সন্ত্রাসবাদ, আফস্পা, আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, পপুলেশন ইঞ্জিনিয়ারিং... আর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আছে নেতাদের ছড়ানো হেট স্পিচ আর ফেক নিউজের গার্নিশিং। ডিভাইড অ্যান্ড রুলের প্রতিযোগিতায় এখন মনে হয় আমাদের নেতারা ব্রিটিশদেরও ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে গোটা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে আদিপুরুষ এর মিম চোখে পড়ছে শুধু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ছাড়া একটা কনভেনশনাল নিউজ আউটলেটের ইনডেপথ রিপোর্টিং নেই, সবাই ক্যাসুয়ালিটি জানিয়ে দিয়েই দায় সেরে ফেলেছে। এই ভালো। মণিপুর নিয়ে অত মাথা ঘামিয়ে লাভই বা কী? ওই তো এক কোণে বনপাহাড়ে পড়ে থাকা কতগুলো মানুষ! স্ট্র‍্যাটেজিক লোকেশন বটে, তবে সভ্য মানুষ কি ওখানে থাকে? মরলে মরুক! উয়ো ভি কোই দেশ হ্যায় মহারাজ?

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on October 14, 2023 06:45
No comments have been added yet.