সেতু বন্ধনের গল্প- ৪র্থ পর্ব

৪র্থ পর্বের অতিথি পরিচিতি

এবারের অতিথি দুইজনেরই ব্যাচেলর করেছেন কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ। কিন্তু বরাবরের মতোই তাদের এখনকার পথ আলাদা, তাই তাদেরকে একসাথে আনা।

উম্মে ইব্রাহিম আপু কিছুদিন উনার ফিল্ডে চাকরি করলেও পরে উপলব্ধি করেন যে ওটাতে মন টানছে না আর। ফিল্ড বদলিয়ে Higher Education কে বেছে নেন, International Open University (IOU) থেকে দ্রুততম সময়ে Bachelor of Arts in Islamic Studies (BAIS) ও Master of Arts in Islamic Studies (MAIS) সম্পন্ন করেন। সমসাময়িক সময়ে ড: আকরাম নদভী পরিচালিত কেমব্রিজ ইসলামিক কলেজ থেকে দুটো ডিপ্লোমাও শেষ করেন আলহামদুলিল্লাহ।
IOU তে ব্যাচেলর করার সময়ই সেখানে ভলান্টিয়ার হিসেবে বিভিন্ন কাজে যোগ দেন, সেটার মাধ্যমেই IOU Global এর সাথে কাজ করার সুযোগ মেলে। সেখানে Higher Education Administration এ আসলে কী ধরনের কাজ হয়, আরো কী কী কাজের সুযোগ আছে সেগুলোও আপু ব্যাখ্যা করেন ওয়েবিনারের সময়। সে এক এক অজানা অধ্যায় আমাদের অনেকের জন্য।

আমরা যখন একটা ইউনিভার্সিটির কথা ভাবি সবার আগে ফ্যাকাল্টিদের কথাই মনে হয় শুধু। কিন্তু তারা আসলে বিশাল কর্মযজ্ঞের ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র। Admission, Credit Transfer, Graduation, Student Counseling, Proctoring, Help Desk এ নানা তথ্য দেয়া, Payment Processing, Accreditation, Exemption Portal দেখা কত ধরনের যে কাজ!

IOU তে কাজ করার সময়ই আপু আবিষ্কার করেন যে Higher Education Management, Policy, Quality Assurance, Governance এগুলোতে দারুন আগ্রহ পাচ্ছেন। এই ফিল্ডে মাস্টার্স এর সুযোগ খুঁজছিলেন,মনমত পাচ্ছিলেন না। আল্লাহ, আল ফাত্তাহ (The opener of the door) সুযোগ করে দিলেন। ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন, যেটা তখন বিশ্ব রাঙ্কিং এ শীর্ষ পাঁচ এ অবস্থান করছিল, সেখানে Tertiary Education Management (খুব দূর্লভ একটা সাবজেক্ট) এ প্রথমে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন, তারপর মাস্টার্স সম্পন্ন করলেন সম্পূর্ন অনলাইনে (প্রোগ্রামটা অফারই করা হয় এভাবে), আলহামদুলিল্লাহ।

উম্ম ইব্রাহিম আপুর এই ফিল্ডে রিসার্চেরও আগ্রহ আছে। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পেপার উপস্থাপনা করেছেন।

আচ্ছা এইটুকু পড়ে কি মনে হচ্ছে যে আপুর জীবনে সব কিছু ঠিকঠাক ছিল তাই এত কিছু করার সুযোগ পেয়েছেন? নাহ, এই সব কাজের অনেক কিছুই ছিলো বিয়ের পর, back to back 2টা বাচ্চাকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। এসব রেগুলার চ্যালেঞ্জ ছাড়াও আপুর জীবনের বহু উত্থান পতন রয়েছে। আপু বরং পড়া, কাজ এইসব কিছুকে coping mechanism হিসেবে গ্রহণ করেছেন। জীবনে যখন আর কোনো কিছু ঠিকমত যাচ্ছিল না, তখনও পড়াটা যেন ঠিক থাকে সেই চেষ্টা করেছেন। যা কিছু করেন, তীব্র ভালোবাসা নিয়ে করেন বলেই প্রতিদিনের জীবনের অসংখ্য ব্যর্থতা, চ্যালেঞ্জ, হতাশাকে অতিক্রম করে ফিনিক্স পাখির মত ধ্বংসাবশেষ থেকে বারবার উঠে দাঁড়াতে পারেন আলহামদুলিল্লাহ, বারাকাল্লাহু ফী হা।

আপুর কাছ থেকে এইসব diverse অভিজ্ঞতা, প্রোডাক্টিভিটি টিপস, একটি ইসলামী প্রতিষ্ঠানে এত বছর ধরে কাজ করে পাওয়া উপলব্ধি সব কিছু জেনেছি এই পর্ব থেকে।

আরেকজন অতিথি উম্ম মারইয়াম। আমাদের অধিকাংশের মত ওর বেড়ে ওঠাও মধ্যবিত্ত, রক্ষণশীল পরিবারে। একসময় ভার্সিটিতে প্র্যাক্টিসিং এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে সত্যিকারের ইসলামের রূপের সাথে পরিচিত হলো, সেই অভিজ্ঞতায় রীতিমত অবাক হবার পালা।নতুন আবিষ্কৃত জগতে একটু একটু করে ডুবে যেতে লাগল সে।
ইসলাম নিয়ে যেসব প্রশ্ন ছিল যেগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য ও বেছে নিয়েছিল একটা অসাধারণ বিশ্লেষণী মেথড – proof by contradiction। যেমন ফ্রি মিক্সিং কেন হারাম।চিন্তা আসলো হারাম না হলে কী হত। ইসলামের বিধান ছাড়া অন্য কোনভাবে কি যেকোন সমস্যার সমাধান করা যায় ? চিন্তা করত…… কিছুতেই মিলাতে পারতনা।একসময় উম্ম মারইয়াম নিজের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হল যে মেনে চলি আর না চলি, ইসলামই সত্য। এই প্রক্রিয়ার মাঝেই নামাজে রেগুলার হয়ে গেল, শুরু হল পর্দা করে চলা। এভাবেই ইসলামের পথে চলা শুরু

ভালো ছাত্রী হিসেবে, মা-বাবার অনুগত সন্তান হিসেবে দারুন সুনাম ছিল পরিবারে। তাই তার ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে পরিবারের সাপোর্ট মোটামুটি পেয়েছে বলা যায়।
খুব ভালো রেজাল্ট করে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করে উম্ম মারইয়াম। কিন্তু সেখানকার পরিবেশ দ্বীন পালনের জন্য অনুকূল মনে হচ্ছিল না,তাই সরে আসে, বেছে নেয় একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি যেটাতে ঘরে বসেই কাজ করা সম্ভব।
ঠিক এইসময়েই জীবনে কিছু কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। সরলরেখায় চলা জীবনটাতে ঘটে হঠাৎ ছন্দপতন। সমাজের চোখে ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত এমন কিছু অভিজ্ঞতার মাঝ দিয়ে যাওয়ার পর উম্ম মারইয়াম টের পেলো তাকে নিয়ে সবার মাঝে তীব্র অসন্তোষ, অথচ একসময় সে ছিল সবার আশার আলো! দ্বীনের পথে থেকে কিভাবে পরিবারকে বোঝানো যায় যে তার জীবনে সব শেষ না!?
সিদ্ধান্ত নিলো জব এর পাশাপাশি রিসার্চ শুরু করার কারণ এটাই একমাত্র কাজ যা ঘরে বসে জবের পাশাপাশিও করা সম্ভব। ডিপার্টমেন্টের একজন বেশ রিলিজিয়াস প্রফেসর যিনি কিনা হাজ্জ সম্পর্কিত কিছু কাজ করেছেন বলে শুনেছিল, তার সাথে যোগাযোগ করল। কথা প্রসঙ্গে সে জানাল যে ওর নিজের ফোকাস দ্বীন পালনে, কিন্তু সবাই আশা করে ক্যারিয়ারগত সাফল্য। প্রফেসর ওকে একটা জীবন বদলে দেয়া প্রশ্ন করলেন – কেন তুমি তোমার দ্বীন পালন এবং পেশাগত দক্ষতাকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছ? এরা কি একে অন্যের পরিপূরক হতে পারে না? (Why are you making your deen and career orthogonal? Align them! )

আলহামদুলিল্লাহ, একটা বাক্য, একজন শিক্ষকের মুখে, ব্যস শুরু হয়ে গেলো জীবনের একটা সম্পূর্ণ নতুন অধ্যায়ের, আমরা পেয়ে গেলাম এমন একজনকে যার মাথায় এখন সারাক্ষণ কিলবিল করতে থাকে অজস্র আইডিয়া আলহামদুলিল্লাহ। উম্ম মারইয়াম যেসব প্রজেক্ট কাজ করছে এবং করতে চায় কিন্তু উপযুক্ত সময় আর লোকবলের অভাবে করতে পারছে না সেগুলো সত্যি অসাধারণ।

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on February 13, 2022 23:01
No comments have been added yet.


Hamida Mubasshera's Blog

Hamida Mubasshera
Hamida Mubasshera isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Hamida Mubasshera's blog with rss.