বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ

‘মা, বাবা কার সাথে গল্প করতেছিল এতক্ষণ?’ বেশ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করল পূরবী। খুব বেশি কৌতূহল যেন প্রকাশ না পায় সেই চেষ্টা করল।
‘ঢাকা থেকে আসছে,’ পূরবীর মা চামেলি সাহা বলল।
‘এইখানে কি?’
‘কি জানি,’ চামেলি সাহা বলল, ‘তোর বাবা বলছিল হাতের কাজ নাকি খুব ভালো। নতুন সব ডিজাইন করে। আর কি কি জানি ব্যবসা আছে ওর কাছে।’
‘লোকটাকে তো দেখে কেমন ধুরন্ধর লাগল আমার কাছে।’
‘চেহারা দেইখা কি মানুষ বুঝা যায় পাগলি,’ চামেলি বলল, ‘তোর বাবাকে দেখলে মনে হয় ভাঁজা মাছ উল্টাইয়া খাইতে জানে না। অথচ দেখ, কতো চালাক তোর বাবা।’
‘বাবা আবার কি চালাকি করল!’ ঠোঁট ফুলিয়ে বলল পূরবী। যজ্ঞেশ্বর সাহাকে নিয়ে সে কোন বাজে কথা শুনতে রাজি নয়।
‘ফুসলাইয়া ফাসলাইয়া আমারে বিয়ে করলো, আমার চেহারা দ্যাখ, গায়ের রঙ দ্যাখ, তোর বাপের লগে যায়!’
পূরবী হাসল। এটা ঠিক তার বাবা যজ্ঞেশ্বর যমদূতের মতো কালো আর অন্যদিকে মা, মা-দূর্গার মতো টুকটুকে ফর্সা। মা’র বয়স এখন চল্লিশের দিকে, কিন্তু এখনো চাইলে সিনেমার নায়িকা হতে পারবে। সে মায়ের মতো দেখতে হয়েছে এটা সবাই বলে। বাবার মতো দেখতে হলে যে কী হতে কে জানে!
‘কিন্তু বাবার মতো ভালো মনের মানুষ কই পেতে?’
‘এইটা ঠিক কথা,’ চামেলি টিভিটা রিমোট চেপে বন্ধ করল, পূরবীর দিকে ঘুরে বসল, ‘আমার এই কথাটা মন দিয়ে শোন। কোনদিন চেহারা দিয়া কাউরে বিবেচনা করবি না। মন দেখবি, মনটা পরিষ্কার কিনা, বুকে সাহস আছে কিনা, ভালোবাসা আছে কিনা। চেহারা, টাকা-পয়সা এইগুলা হইলো পরের জিনিস। বুকভরা সাহস আর ভালোবাসা থাকলে পুরুষ মানুষ হয় দেবতার মতো। বুঝলি? চেহারা কিছু না।’
পূরবী মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল অপলক। তার বুকের মধ্যে একটা আলোড়ন হচ্ছিল। একটা মানুষ ভালো কী মন্দ, এটা বুঝবে সে কিভাবে? সে তো অন্য কিছু চায় না। পড়াশোনা শেষে বুদ্ধিমান, হৃদয়বান একটা মানুষকে পাশে চায়, যাকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। এরকম একটা মানুষ সে কই পাবে? গৌরহরি সাহা কি এরকম কেউ?
#বাতাসেবৃষ্টিরঘ্রাণ (অংশবিশেষ)
6 likes ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on November 20, 2021 08:48 Tags: ব-ত-স-ব-ষ-ট-রঘ-র-ণ
No comments have been added yet.