অন্তর্ধান হয়ে যাও

“আয় আয় চাঁদমামা টি দিয়ে যা” থেকে চাঁদে যাওয়া অবধি; “চাঁদের পাহাড়” থেকে এলন মাস্ক-এর চাঁদে বসতি অবধি; আমাদের এই আশীর দশকের প্রজন্মই বোধহয় প্রযুক্তির পাথর সবথেকে বেশি ভেঙ্গেছে। ঠাম্মার কুসংস্কার এবং শুচিবাইগ্রস্ত হেলাফেলা-ছেলেবেলা থেকে, আজকের যুক্তিতর্কের ফেরে ভগবানের প্রায়-বিলুপ অস্তিত্বর জটাজালে পড়ে এই প্রজন্মের যাত্রাটা বোধহয় সবচেয়ে দুর্গম। বিশাল বিশাল বিশ্বাসের পাথর ভাঙ্গতে-ভাঙ্গতে আজ তারা প্রায় ভঙ্গুর, ছেলে-বন্ধু যে যুগে মানা হতনা, সেই আমরাই মেয়ে-বন্ধু মেনে নি আমাদের মেয়েদের সঙ্গি হিসেবে। পলক ঝাপ্টানো মানে তুমি দুর্বল।  সঙ্কির্ন মনের।


আমরা কলকাতার ভিস্তি জীবন দেখেছি, রেডিও তে নাটক শুনে কল্পনার জাল বুনেছি, ছাদের  পাঁচিলে মাথা রেখে নিজের মনে কত কথা বলেছি। আজ প্রতি মুহুর্তে একটা–না–একটা যান্ত্রিক পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকি। হয় কম্প্যুটার, নয়ত টিভি, নয় স্মার্টফোন। কেন যানিনা… কিসের ভয়? যদি সব বন্ধ করে রাখি সারাদিন, কি হবে? যদি পিছিয়ে নিয়ে যাই জীবনকে বছর ত্রিশ আগে, কি হবে? যদি বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকি আকাশের দিকে চেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, কি হবে? যদি একটা বই পড়ি সারাদিন ধরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে, কি হবে? একদিন যদি পাহাড়ে বেড়াতে যাই আর ছবি না তুলি, কি হবে?


কি হবে জানো? পাশের বাড়ির লোকে পুলিশ ডাকবে, বলবে সামনের বাড়ির ভদ্রমহিলা “স্টকার” – সারাদিন বারান্দা থেকে সকলের ওপর নজর রাখে। স্বামী, সন্তান রা ফোন না পেয়ে হুড়মুড় কড়ে বাড়ি ঢুকবে, বলবে, “ফোন অফ করে রেখেছ কেনো?…” মানে বেঁচে আছো তো?


আর পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়াটা তো মনেই থাকবেনা।


এলন মাস্ক এর মঙ্গলাভিযান এবং মঙ্গল-বসতি যখন আসন্ন, তখন আর কথা না বাড়িয়ে বরং এই তীব্রগতির যুক্তি-প্রযুক্তির তালে তাল মিলিয়ে চলাই ভালো।


কিন্তু আমার মন বলে, এ কি সত্যি? কত যায়গায় তো বেড়াতে যেতাম আগে, যেটার ভাল ছবি নেই। কিন্তু মনের মধ্যে চোখ বুজলেই আজও দেখতে পাই। যুক্তি-তর্কের তোড়ে ভগবান-কে মন দিয়ে ডাকতেও শঙ্কা-বোধ হয়। আছে, না কি তেমন কেউ নেই? যেমন নীল টাইসন বলেন। কি জানি, উনি-ও তো প্রায় আমার-ই বয়সি। আমার-ই প্রজন্ম। উনি এতো সহজে উড়িয়ে দেন কি করে?


যত দিন যাচ্ছে, ততো মন বলছে এবার একটু থামো, মানবজাতি । এবারের আইফনে নতুন কিছছু নেই। একটু ভাবো। প্রযুক্তিকে একটু কম গ্রাজ্যি কর। সপ্তাহে অন্তত দুটো দিন ফোন, টিভি, কম্প্যুটার বন্ধ রাখো। অন্তর্ধান হয়ে যাও। ধিরে ধিরে নিজের প্রযুক্তিগত অস্তিত্বকে মিটিয়ে দাও। আর আসল অস্তিত্ব কে জাগাও। পাহাড়ে ফোন/ক্যামেরা না নিয়ে বেড়াতে যাও দিকি। শুধু দুজন বন্ধু মিলে। গান করো গলা ছেড়ে। কবিতা লেখো। বই পড়ো কাউকে না জানিয়ে। যা ইচ্ছে তাই করো। ময়দানে শুয়ে থাকো। লোকে পাগল বলে বলুক।


তা না হলে আসন্ন রোবোটিক প্রজাতি ধিরে ধিরে তোমার গলা টিপে ধরবে যে!


 


 


 


 

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on October 27, 2017 18:55
No comments have been added yet.