পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ হাসান আজিজুল হক- এর 'ছোবল'

ভূমিকাতেই লেখক জানিয়ে দিয়েছেন, এই বইটি মুখ নয়, মুখোশও নয়, বরং একটা ‘কথামুখ’ এর আদল তৈরি করা হয়েছে কেবল। শেষ পৃষ্ঠার নম্বর ৪৫ হলেও, সব মিলিয়ে আট ন’হাজারের বেশি হবে না শব্দ সংখ্যা। না গল্প, না উপন্যাস, একটা বড় গল্প বরং বলা যেতে পারে এটিকে। তাই বইটির এই ক্ষীণ আকৃতির কারণেই যে লেখকের এই ভূমিকা, তা বলাই বাহুল্য। তবু এর মাঝেই একাধারে সব করকম মুনশিয়ানা দেখালেন হাসান আজিজুল হক। কী দুর্দান্ত সূচনা। আবারও মনে হলো, গল্পের শুরুটা যদি পাঠককে অপেক্ষায় রাখতে পারে শেষটুকুর জন্যে, তাহলেই কেবল সেটা সার্থক গল্প হয়ে উঠতে পারে।  চার দশক আগের ঢাকা। ক্রমশ বাড়ছে এর পরিধি। মূল ঢাকায় যাদের জমি কেনার সামর্থ্য নেই, ঢাকার অদূরেই এক টুকরো জমি কিনতে আসা কিছু মানুষের গল্প এটি। একটা বিষধর সাপের মতন নগর কেমন করে আড়মোড়া ভেঙে ধীরে ধীরে গ্রাস করে চলে এর আশপাশের গ্রাম্যতা, আর সবুজকে,  এবং সবুজ গ্রাম্যতায় পরিপূর্ণ মানুষের জীবনগুলোকে, ‘ছোবল’ তারই একটা আভাস। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। ‘চাঞ্চল্য আর গভীরতা দুই ভয়ানক বিপরীত শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে মুহূর্তের জন্যে ঝুমু হেলালের দিকে তাকায়। আমারটার মতো সাদা রাজহংসী নয়, একটা টগবগে মাদী ঘুড়ী-বিদ্যুতের মতো চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল আর ক্ষুরের মতো ধারালো একটা চাবুক সাঁৎ করে হেলালকে দুই ভাগ করে ফেলে। নিমেষে এটা ঘটে, কারণ তক্ষুনি হেলাল আবার জোড়া লেগে যায়।’ লেখা এমনই হওয়া উচিত আসলে। লেখার আকৃতি ছোট বা বড়তে তেমন কিছুই যায় আসে না। যতক্ষণ পড়লাম, আর পড়ার পরে এই এতক্ষণ ধরে যে ভেবে চলেছি হামিম, ঝুমু, হেলাল বা জাকিয়ার কথা, হাবিবা অথবা তাহমিনা বা তফাজ্জলের কথা, ঠিক এখানটাতেই লেখক হয়ে যান জাদুকর। বইমেলার শুরু থেকেই এবারে দেশে ছিলাম বলে বেশ কিছু বই কেনা হয়েছে, দেশে পাওয়া অবসরের কল্যাণে সেগুলো পড়াও ধরেছি। পড়তে পড়তে কেমন দম বন্ধ লাগছিল, শান্তি পাচ্ছিলাম না। আক্ষেপ করে লিখেছিলাম, “কোথাও একটা দুর্দান্ত গল্প পাই না খুঁজে। খুব আগ্রহ নিয়ে নতুন কেনা বইগুলো হাতে নিই, সেখানে শব্দের চাতুর্য আছে, বাক্য বিন্যাস নিয়ে নিরীক্ষা আছে, জাদুকরের টুপি থেকে উঁকি দেয়া খরগোশের মতন চমক আছে... কিন্ত একটা সুন্দর পরিপাটি মেঘ, অথবা গভীর কালো জলের শান্ত কূয়োর মতন অসামান্য কোন গল্প নেই কোথাও। তারা সব কোথায় হারিয়ে গেছে!’’ ভালো ভালো লেখা পড়াটা যে কী ভীষণ জরুরি! p.p1 {margin: 0.0px 0.0px 10.0px 0.0px; font: 18.0px 'Iowan Old Style'; -webkit-text-stroke: #000000} p.p2 {margin: 0.0px 0.0px 10.0px 0.0px; text-indent: 35.0px; font: 18.0px 'Iowan Old Style'; -webkit-text-stroke: #000000} span.s1 {font-kerning: none}
‘ছোবল’ যেন একটা খড়কুটোর মত আমার হাতে এসে পড়লো, এক মুঠো অক্সিজেন হয়ে আমাকে কেমন বাঁচিয়ে দিয়ে গেলো, মন ভালো করে দিয়ে গেলো। ধন্যবাদ আপনাকে, হাসান আজিজুল হক।  
2 likes ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on March 28, 2018 00:01
No comments have been added yet.


Tareq Nurul Hasan's Blog

Tareq Nurul Hasan
Tareq Nurul Hasan isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Tareq Nurul Hasan's blog with rss.