কথক-এর আয়োজন 'প্রতিধ্বনি শুনি'

p.p1 {margin: 0.0px 0.0px 10.0px 0.0px; font: 18.0px 'Iowan Old Style'; -webkit-text-stroke: #000000} p.p2 {margin: 0.0px 0.0px 10.0px 0.0px; text-indent: 35.0px; font: 18.0px 'Iowan Old Style'; -webkit-text-stroke: #000000} span.s1 {font-kerning: none}
    কবিতার ভার অনেক, ধারও অনেক। গানের সাথে তুলনায় যাওয়া হয়তো উচিত হবে না, তবু খানিকটা ধৃষ্টতা দেখিয়ে বলেই ফেলা যায়, গান অনেক বেশি বারোয়ারি, বা পরিশীলিত ভাষায় বলা যায়, সার্বজনীন। চন্দ্রিল ভট্টাচার্য যেমনটা বলেছেন, গানের ব্যাপার অনেকটা রিফ্লেক্সের মতন, কেউ আপনার দিকে একটা টেনিস বল ছুঁড়ে মারলো তো আপনি না চাইলেও সেটা পট করে ধরে ফেলবেন। গানও তেমনি, বাজলো তো শুনবেন। 
     অবশ্য গানের সার্বজনীন হবার আরও বড় কারণ, গান আসলে বড় বেশি মায়াময় একটা ব্যাপার। সুরের সম্মোহন মিশিয়ে কেউ যখন গান গায়, কার হৃদয়ের কোন যে তারে সেটা টুং করে বেজে উঠে এমন অদ্ভুত মায়ার সৃষ্টি করে, সে মায়ায় কখনও ভালো লাগার মেঘে সব ভেসে যায়, কখনও বুক ফুঁড়ে হু হু করে কান্না পায়। মোদ্দা কথা হলো যে, গানের জন্যে পাগল না হয়ে পারা যায় না, গানের জন্যে ভালোবাসাটাও তাই স্বতঃস্ফূর্ত।     কবিতা, সে তুলনায়, খানিকটা বুঝবার ব্যাপার, কবিতাকে ভালোবাসাটাও আচমকা কিছু নয়, বরং বেশ অনেকটা প্রস্তুতির ব্যাপার।     মেলবোর্নে গানের আয়োজনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আনন্দের এবং আশার কথা, সে সব আয়োজনের অধিকাংশই এখন বেশ মন কাড়া, মানসম্মত। কিন্তু সে তুলনায় কবিতার আয়োজন একেবারেই নগণ্য। তাই যখন জানলাম ‘কথক’ এবারে কবিতার আসরের আয়োজন করছে, রীতিমতন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলাম। ‘কথক’ সত্যিকার অর্থেই মেলবোর্নের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক দল। সর্বশেষ তাঁদের আয়োজন করা ‘যাত্রা’ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ভিনদেশের অডিটরিয়ামে সত্যি সত্যিই যাত্রার মঞ্চ, আর সেই মঞ্চে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার ঝলমলে পদচারণাই মুগ্ধ করে দেবার জন্যে যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু সেই সাথে উপরি পাওনা ছিল সেই চিরাচরিত ‘বিবেক’ এর উপস্থিতি, আর মঞ্চের পাশে অবিরত সংলাপ বলে যাওয়া প্রম্পটার। সব মিলিয়ে দারুণ! 

    কথক- এর এবারের আয়োজন ছিল ‘প্রতিধ্বনি শুনি’। ‘বিগত কয়েক শতক ধরে শান্তির খোঁজে মানুষের বিরামহীন সংগ্রামের গল্প নিয়ে’ আয়োজিত।     চ্যান্ডলার কম্যুনিটি সেন্টারে ঢুকে দর্শকদের রুগ্ন উপস্থিতি দেখে খানিকটা মন খারাপ হলো। আবার এটাও মনে হলো, যারা এলো না তাঁরা যদি জানতে পারতো কি মিসটা করছে!     মৃণাল-এর করা মঞ্চসজ্জা সুন্দর ছিল অনেক। আয়োজনের সাথে মানানসই দেয়ালচিত্র সুন্দর সঙ্গত দিয়ে গেছে পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই। কয়েক মুহূর্তের জন্যে প্রায় এক যুগ আগের ফেলে আসা শিল্পকলা একাডেমি আর পাবলিক লাইব্রেরির মঞ্চের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো।     এনি আজিম এর সাবলীল উপস্থাপনা দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু, তারপরের দুটি ঘণ্টা কেবলই মুগ্ধতা, কেবলই ভালো লাগা। কবিতাগুলোর নির্বাচন যথার্থ হয়েছে। প্রত্যেকেই এত সুন্দর আবৃত্তি করেছেন...,  রাজীবুল ইসলাম, নাজনীন আনোয়ার, জহিরুল মল্লিক- প্রত্যেকেই দুর্দান্ত। ঠিক কতদিন পরে ভাস্কর চৌধুরীর নিরঞ্জনকে শুনতে পেলাম মনে করতে পারছি না, কিন্তু যতবারই ‘মানুষ’ শব্দটির উচ্চারণ শুনলাম, ততবারই কেঁপে কেঁপে উঠলাম। ভালো লেগেছে বাবু-র আবৃত্তি, শুভ্রের গল্প পাঠ তো অসাধারণ। বুকের ভেতরের কোথাও যেন কেউ আচমকা মুচড়ে দিয়ে গেল। আর মৌপিয়া-র কথা কী বলবো, আবৃত্তির সাথে সাথে তাঁর সমস্ত সত্তা যেন জ্বলজ্বল করছিলো মঞ্চে। অনুষ্ঠান শেষে আমি থাকতে না পেরে ওনাকে গিয়ে বললাম, “আপনি হচ্ছেন বস ক্যাটাগরির মানুষ!”      কবিতার সাথে সাথে মানানসই গানও ছিল বেশ কিছু। খুব ভালো লেগেছে শায়লা-র গান। ওঁর কণ্ঠে মৌসুমি ভৌমিকের ‘এখানে তুমি সংখ্যালঘু’ গানটি মনে হয়েছে নতুন জীবন পেয়েছে যেন। হিমানীর নিখুঁত কণ্ঠের গানও ভালো লেগেছে। পুরো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিল মুনশিয়ানার ছাপ।     শুধু একটা ব্যাপার, পর পর দুটি কবিতার মাঝের বিরাম খানিকটা অপ্রতুল মনে হয়েছে। কেমন মিলে মিশে মনোটোনাস হয়ে যাচ্ছিলো বার বার। দর্শক শ্রোতাদেরকে কবিতাটি অনুধাবনের জন্যে আরেকটু সময় দিলে ভালো হয়। আর কবি এবং কবিতার নাম জানান দেয়ার কোন উপায় রাখা হলে আরও ভালো হতো।     পুরো আয়োজন শুনতে শুনতে সত্যিই মনে হচ্ছিল এ যেন শেষ না হয়, চলুক সারা রাত ধরে। মাথার ভেতর অসংখ্য প্রিয় কবিতারা কেবলই ভিড় করে যাচ্ছিলো, সময়ের সাথে সাথে আরও কবিতা শুনবার তৃষ্ণা বেড়েই যাচ্ছিলো শুধু।     খানিকটা হলেও সুখের ব্যাপার, অনুষ্ঠান শুরুর বেশ কিছু পরে আরও কিছু দর্শক-শ্রোতা যোগ দিয়েছিলেন। গ্যালারি ভরে উঠেছিলো ক্রমশ।     মেলবোর্নের সংস্কৃতি-প্রিয় মানুষদের বলি, গানের অনুষ্ঠানে গিয়ে সুরের মায়ায় জড়িয়ে যান যেমন করে, তেমনি করে কবিতার আসরেও আসুন আরও বেশি বেশি। এসে হৃদয়টাকে, নিজের অস্তিত্বকে, নিজের চিন্তা-চেতনা-বোধকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে যান।      আর কথক-এর কাছে দাবি, আরও নিয়মিত কবিতার আয়োজন চাই আপনাদের কাছ থেকে, আরও অনেক বেশি বেশি। 
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on August 15, 2017 05:24
No comments have been added yet.


Tareq Nurul Hasan's Blog

Tareq Nurul Hasan
Tareq Nurul Hasan isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Tareq Nurul Hasan's blog with rss.