প্রিয়তমেষু প্রিয়তমেষু discussion


14 views
পাঠপ্রতিক্রিয়া

Comments Showing 1-1 of 1 (1 new)    post a comment »
dateUp arrow    newest »

রিফাত সানজিদা একজন শিক্ষানবিশ 'নারী ' চিকিৎসককে হত্যার বিচারের দাবিতে এই মুহূর্তে উত্তাল পুরো কলকাতা, বলতে গেলে সমগ্র ভারতও। নারী উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে লেখার কারণ হত্যার আগে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
৩৬ ঘন্টা টানা ডিউটির পর কর্মস্থল আর জি কত হাসপাতালের সেমিনার রুমের এককোনায় তিনি একটু বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। পরদিন সকালে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এবং খুবই ন্যাক্কারজনকভাবে হাসপাতাল কতপক্ষ এই দায় অস্বীকার করে আত্মহত্যার গল্প বানায়। সেই থেকে পশ্চিমবংগে চলছে প্রতিবাদ, আন্দোলন আর চিকিৎসকদের কর্মবিরতি।

সমসাময়িক এই ইস্যুতে উত্তেজিত হয়ে বহুদিন আগে পড়া এক উপন্যাসের কাছে ফিরি। স্বাধীনতা উত্তরকালীন সময়ে জনপ্রিয় বাংলাদেশি লেখকদের মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিলেন হূমায়ুন আহমেদ। জেনারেশন এক্সের কাছে হুমায়ূনের প্রিয় উপন্যাস নন্দিত নরকে, মিলেনিয়ালরা চিনেছে রূপা, হিমু, মিসির আলিকে। জেনারেশন জেড মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসেবে চিহ্নিত করেছে জোছনা ও জননীর গল্পকে। ব্যক্তিগতভাবে আমার দৃষ্টিতে হুমায়ুনের সেরা কাজ তাঁর ছোট গল্পগুলো। চোখ নামে অসাধারণ একটা ছোট গল্প আছে, যেটা নিয়ে পরবর্তীতে নাটক হয়েছিল। মূল ভূমিকায় ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর।

হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম সেরা লেখা এবং ঘরানার বাইরের ব্যতিক্রমী লেখা প্রিয়তমেষু। নাম শুনে পুতুপুতু প্রেমের গল্প ভাববেন না আশা রাখছি, পড়েন নি যারা!

হুমায়ূনের যে উপন্যাস নিয়ে তূলনামুলকভাবে অনেক বেশি আলোচনা হবার কথা ছিল, উচিত-ও, কিন্তু যতদূর চোখে পড়ে,হয়নি, সে খানা 'প্রিয়তমেষু'। হু. আ লিখেছেন প্রচুর, সেই অতিদীর্ঘ তালিকায় শঙ্খনীল কারাগারের মতো মাস্টারপিস আছে, আছে শেষবয়সে ওগড়ানো মধ্যাহ্ন বা নীল মানুষের মতো অখাদ্য। কিন্তু প্রিয়তমেষুর লেভেল একটু আলাদা। বাংলাদেশে মেয়েরা যে আপ্তবাক্যটি মন ও মননে গেঁথে নিয়ে বড় হয়, সেটা শুনতে খুব সরল, মেনে নিতে নয়। গলির মোড়ের বখাটে ছোঁড়া বলেছে কিছু কোচিং ফিরতি পথে? পাশের রিক্সা থেকে ছিটিয়েছে নোংরা কোন মন্তব্য? পাশের ডেস্কের কলিগ অশালীন ইঙ্গিত করে কিংবা বস? স্যার, টিউশন বা ইউনির? বাসে, গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করেছে মাঝবয়সী দাড়িওয়ালা আংকেল? দূর সম্পর্কের চাচা/মামা আদরের ছলে কিলবিলে স্পর্শ বুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে শরীরময়? 'চুপ চুপ, কেউ যেন কিচ্ছু জানতে না পারে'।


এক অনলাইন গ্রুপে পড়েছিলাম, এক নারী নিপীড়িত হয়েছিলেন তার পিতৃসম শ্বশুরের হাতে। বাল্যবন্ধুটি কমিউনিটি ব্লগসাইট সচলায়তনে সাহস করে লিখেছিল নিজের অভিজ্ঞতা, পড়ে ঘুমোতে পারিনি ঐ রাতে, রাতভর দেখেছি দু:স্বপ্ন। কোথায় নিরাপদ, 'মেয়েমানুষ'? পুষ্পের মতো সাধারণ ঘরোয়া মেয়ে, ঘা খেয়ে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর সাহস করে দাঁড়িয়েছিল বিচার চাইবে বলে। রকিব, অর্ধাঙ্গ, পাশে ছিলো না, তাও। নিশাত, সুশিক্ষিতা তরুণী, সেই সাহসটুকু-ও জুটিয়ে উঠতে পারলো কই? দূরের কেউ তো নয়, আপনা লোক, ঘরের-ই, আপন দুলাভাই! কী চমৎকার, হাসিখুশি, জমাটি একজন পিওর ফ্যামিলিম্যান!
একদিন দুপুরে ঢুকে পড়েছিলো কলেজপড়ুয়া নিশাতের ঘরে, জোর করে! তারপর কতগুলো বছর..নিশাতের নিজের কাছেই নিজেকে ভুলে থাকতে হয়েছে সেইসব! মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, অন্তত বলা তো হয় তাই। সেই শ্রেষ্ঠতর মানুষ আবার স্বীয় পৌরুষ প্রমাণ করে গায়ের জোরে। এবং সেই পিশাচ, পশুপুরুষের ব্যাটাগিরির জেরে উল্টো নারীকে ট্যাগ দেয়া হয় অপমানিতা, ধর্ষিতা, সম্ভ্রমহীনা ইত্যাদি।
আকারে এবং শক্তিতে কম জোরালো বলে মুরগি জবাই করে কেটেকুটে খাই আমরা, মানুষেরা। তেমনি শরীরে জোর এবং সামাজিক বর্মের আড়াল আছে বলে পুরুষসিংহটি (!) বুক ফুলিয়ে হাঁটেন, ক্রস এক্সামিনেশনের নামে কদাকার সব বাক্য আর প্রশ্নে পুনঃ পুনঃ নির্যাতিত নারীটি ওড়নার আড়ালে মুখ লুকিয়ে সাংবাদিকদের এড়াতে দ্রুত হেঁটে যান অন্ধকার কোণে। রামায়ণ-মহাভারত যুগের সীতা দিয়েছিলেন আদিম অগ্নিপরীক্ষা, 'পাকসাফ' আছেন কিনা প্রমাণ দিতে। আর ২০১৬তে এসেও টিউশনি সেরে একা বাড়ি ফেরার পথে তনুরা মৃত পড়ে থাকে ঝোপের আড়ালে। ছোঃ, মঞ্চনাটক করা মেয়ের আবার চরিত্র কিসের, শুনতে হয় একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে জীবন্মৃত মা-বাবা'কে। নো ওয়ান কিলড তনু, নো বডি রেপড হার। সব মিডিয়ার সৃষ্টি।

অতএব, দু'দিন পর আমরাও সব ভুলে যাই, সব...
হা ঈশ্বর!


back to top