What do you think?
Rate this book


264 pages, Paperback
First published October 1, 2009
শরীর কি বস্তু, সেই যৌবনে টের পেয়েছিলাম, আর এখন বার্ধক্যে টের পাই- নদীকে মাঝিরা যেমন টের পায় জোয়ার আর ভাটায়। পরে শ্মশানে বসে হয়তো দেখব শরীর ফিরছে তার অঙ্গারে, জলে, ধাতুতে, লবণে। আর তার সূক্ষ্ম বিদেহ আভা চলে যাচ্ছে আকাশে- অালো মেঘ আর শান্তির দেশে। শরীর তো যা পেয়েছিলাম তাই ছিল, কিন্তু অস্তিত্বের ঐ বিদেহ আভা আমিই দিনে দিনে তৈরি করেছিলাম বই পড়ে, ছবি দেখে, গান শুনে।
"আমি তখন থেকেই নিজেকে চিনি। আমার মতো মানুষকে দিয়ে কোনো কীর্তি সম্ভবপর নয়। যতটুকু না হলে নয় ততটুকু, যতটুকু না হলে নয় ততটুকু - এইভাবে খুদে খুদে হাতে একটু একটু নিয়ে, একটু একটু দিয়ে, পৃথিবীকে বিরক্ত না করে এতদিন কাটল। ছবি আঁকার সময় মিনিয়েচারের থেকে একটু বড় আঁকি। লিখবার সময় ছোট ছোট বই লিখি - একটি একটি শব্দ ভেবে সময় কাটাই। বেশ লাগে। পৃথিবীর আলোবাতাসের সঙ্গে শব্দগুলি কেমন দোয়েলের মতো, চড়ুয়ের মতো, কাঁচপোকার মতো মেশে, দেখি। বেশ লাগে।
আমি কি পাহাড়ের বাঁকে অজন্তা এলোরা বানাতে পারতাম? অসম্ভব। আমি উদয়গিরির চেয়েও অনেক ছোট একটি গুহা বানিয়ে ছেড়ে দিতাম। সেখানে বসে মেঘে- বর্ষায় বৃষ্টির রেখা, শীতে অস্তমান সূর্যের রেখা দেখতাম।"
"প্রত্যেক ফুলের পাপড়ির কেন্দ্রে একটা সূক্ষ্ম ফুটো আছে, সেই ফুটো গিয়ে শেষ হয়েছে বোঁটার প্রান্তে। ঐ পথটুকু জাদুপথ। কেউ যদি সূক্ষ্ম ��য়ে ছূঁচের মতো ঐ পথের এক মুখ দিয়ে ঢুকে অন্য মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে তবে সে পৌঁছবে এক অন্য রাজ্যে। এক এক ফুলের পথের শেষে এক এক রাজ্য। শি��লিফুলের ফুটো দিয়ে বেরুলে পাওয়া যাবে সাদা মেঘের দেশ। লাল সন্ধ্যামণির ফুটোর ওপারে আছে খুব সুন্দরী, আবছায়ায় চলাফেরা করা মেয়েদের দেশ। জ্যোৎস্না ফোটা হাসনুহানা ফুলের সূক্ষ্ম পথটুকু পেরুলেই ঝাড়লন্ঠব নিবে আসা এক চাঁদিনী জলসার দেশ। আর গ্রীষ্মের তাপে শুকিয়ে মুচমুচে হয়ে যাওয়া স্বর্ণচাঁপার ফুটো দিয়ে বেরুলেই মুনশিবাড়ি।"
আমি জীবনী কিংবা আত্নজীবনী যাই-ই পড়ি না কেন তা রেখে দিই স্টোরি অফ লাইফ নামের শেলফে। জীবনেরই গল্প, তাই না? অক্ষয় মালবেরি আত্নজীবনী হিসেবে কেমন?
ধরে নিই,
টেবিলের উপরে একটা সুদৃশ্যমান বাটিতে পাউরুটি রাখা আছে যা একজন মানুষের জীবনকে রিপ্রেজেন্ট করছে। আমরা সাধারণ দর্শক মাত্র! টেবিলের প্রান্ত থেকে ঐ বাটির রুটিখানাকে কতই আর ভাল দেখা যায়! এরই মাঝে অন্য কেউ এসে পাউরুটিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখান। কিন্তু এভাবে কি আর ভেতরের অংশ দেখা যায়? বোঝা যায় কেমন সেটা!?
এরপর মালিক নিজেই আসেন। আহা লোকগুলোর এতো আগ্রহ! তাই হয়তো রুটিখানাকে টুকরো করে কাছ থেকে দেখানোর চেষ্টা করেন। হয়তো একটু পরেই রুটিখানাকে তিনি মাখন কিংবা অন্যকিছু দিয়ে সাজিয়ে মুখে পুরবেন; কিন্তু নাহ! সেটা আর আমরা দেখতে পেলাম কই!
আর শেষে যিনি আসেন তিনি ঐ মালিকই কিন্তু একটু ভিন্ন রকমের। তিনি অতো কিছু নিয়ে ভাবেন না। নিজে যেভাবে মাখন কিংবা আরও খাদ্যোপাদান দিয়ে সাজিয়ে পাউরুটি খানা টুকরো করে খাবেন ঠিক সেভাবেই সবাইকে দেখান।

"কলকাতায় ফিরে, ধোবার পরেও, বোতলটাতে বহুদিন রামের গন্ধ লেগে ছিল। ভালো লাগত। একটা দূরে রেখে আসা জীবনের কথা মনে পড়ত।"এই তো! প্রতি বছর বসন্তের ইষদুষ্ণ বাতাস আসে, বসন্তের বিকালে একটি বাচ্চা মেয়ে ডে-কেয়ার থেকে ঘরে ফেরার সময়: কোকিলের সাথে সমস্বরে কুউ কুউ করতে করতে হঠাৎ করেই মনের ভেতরে উদাস হয়ে যায়!

