Jump to ratings and reviews
Rate this book

অক্ষয় মালবেরি

Rate this book
আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে নিজের জীবনকে কেউ দেখে দূরবিনে, কেউ দেখে অনুবীক্ষণের লেন্সের তলায়। মণীন্দ্র গুপ্ত দেখেছেন নিজের তৈরি এক ক্যালিডােস্কোপে। আপাত-বাস্তবের নেপথ্যে যেন চিরকাল বইছে এক ঘনগহন অন্য বাস্তবের স্রোত। তাঁর দেখা ছায়া গােধূলি মেঘ হাওয়া জল ফড়িং সরীসৃপ পাখি গাছের মধ্যে আসে মানুষী ব্যক্তিত্ব, আর মানুষের মধ্যে দেখা দেয় গুনবতী প্রকৃতির অজ্ঞান সৌন্দর্য। জগৎপটে জীবনের এই সমস্ত অকিঞ্চিৎকর ভাঙা টুকরাে বিন্যাসে বিন্যাসে অন্তহীন ছবির পর ছবি সাজায়। অক্ষয় মালবেরি উপন্যাস নয়, প্রচলিত আত্মজীবনীও নয়, একজন দুঃখী-না সুখী-না মানুষের চিহ্নপত্র। কাঁচা কঞ্চির কলমে বনের সবুজ কালিতে হােগলার পাতায় লেখা—উজ্জ্বল দুরন্ত দুঃখী ক্ষণমধুর অতীত যেন স্তব্ধতা থেকে এসে আবার স্তব্ধতায় ফিরে গেছে।

264 pages, Paperback

First published October 1, 2009

134 people are currently reading
1096 people want to read

About the author

Manindra Gupta

16 books34 followers
মণীন্দ্র গুপ্তর জন্ম ১৯২৬ সালে অবিভক্ত বাংলার বরিশালের গৈলা গ্রামে। কৈশোর কাটিয়েছেন অসমের বরাক উপত্যকায় মামার বাড়িতে। একই সঙ্গে কবি, প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী মণীন্দ্রবাবু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
কবিতা লিখেছেন ১৯৪০-এর দশক থেকে। প্রথম কবিতার বই ‘নীল পাথরের আকাশ’ প্রকাশিত হয় অনেক পরে, ১৯৬৯ সালে। লিখতে এসেই পাঠকের নজর কাড়েন তিনি। বাংলা কবিতার তৎকালীন অভিমুখের সম্পূর্ণ বিপরীতেই অবস্থান করছিল তাঁর রচনা। এর পরে প্রকাশিত হয় ‘মৌপোকাদের গ্রাম’, ‘লাল স্কুলবাড়ি’, ‘ছত্রপলাশ চৈত্যে দিনশেষে’, ‘শরৎমেঘ ও কাশফুলের বন্ধু’ অত্যাদি কাব্যগ্রন্থ। ১৯৯১-এ বের হয় তাঁর আলোড়ন তোলা প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘চাঁদের ওপিঠে’।
১৯৯১-এ প্রকাশিত হয় আত্মজীবনী ‘অক্ষয় মালবেরি’-র প্রথম খণ্ড। তিন খণ্ডে বিন্যস্ত এই লিখন বাংলা সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
সম্পাদনা করেছেন ‘পরমা’ পত্রিকা। ১৯৭০-এর দশকে কবি রঞ্জিত সিংহের সঙ্গে যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘এক বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতা’-র মতো সংকলন। হাজার বছরের বাংলা কবিতা ঘেঁটে সংকলন করেছেন তিন খণ্ডে ‘আবহমান বাংলা কবিতা’।
২০১০ সালে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার। ২০১১ সালে সাহিত্য আকাদেমি।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
331 (67%)
4 stars
119 (24%)
3 stars
28 (5%)
2 stars
5 (1%)
1 star
4 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 144 reviews
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,354 followers
September 6, 2018
অর্ধেক জীবনএ সুনীল লিখেছিলেন যৌবন পেরিয়ে গেলে বাদামি সন্ধ্যেবেলাগুলিতে মানুষের মনে হতে থাকে এই জীবন অন্য রকম হবার কথা ছিল। উঠে আসে হতাশা এবং হাহুতাশের ঢেউ, ফেলে আসা গান, চাপা অভিমান।
কুড়ি কুড়ি বছরের পার কেটে যাওয়ার পরের যে জীবন, তার চবিতচর্বণ, কেবল বেদনাই বাড়ায়, নয়?

মধ্যবয়সে পৌঁছানোর ঢের আগেই অকালপক্ক বিষন্নতার কারণে এ জাতীয় বিষাদে ভুগেছি প্রথম যৌবনে, কৈশোরে, এমনকি খানিকটা শৈশবেও। সেইজন্যেই কী এতোটা পছন্দ হয়েছে অক্ষয় মালবেরি, মণীন্দ্র গুপ্তের খণ্ডিত আত্মজীবনী?
খণ্ডিত এই অর্থে যে শেষ হয়েছে কুল্লে ২২ বছর বয়সে এসেই, ফৌজি প্রশিক্ষণ ছেড়ে সদ্য বেকারত্ব বেছে নিয়ে, যে জীবনের প্রারম্ভ।
কিন্তু গত বাইশ বছরকার উপাখ্যান?

অপার্থিব সুন্দর গদ্য, যদি এক বাক্যে বলতে চাই কেমন লেগেছে পড়তে গিয়ে। নেশাধরানো ঝিম ধরা বর্ণনা, ছবির মতো ভাসিয়ে তুলেছে লেখকের শৈশব, মাতৃস্নেহ বঞ্চিত যদিও।

দশ মাস বয়সে মা'কে হারিয়ে মণীন্দ্র বড় হয়েছেন পিতৃ এবং মাতৃকূলের আত্মীয়দের কাছে, কখনো ঠাকুরদা- ঠাকুমা এবং দিদিমা-দাদামশাই। ভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তিন পর্বে ভাগ করে লেখা এ জীবন আলেখ্য ঠিক প্রচলিত ধারায় আত্মচরিত নয়। বরিশালের গণ্ডগ্রামে বিশাল পারিবারিক অন্দরমহল জুড়ে যে আত্মীয়তার জাল, তার চরিত্রগুলোকে চেনা যেমন চিত্তাকর্ষক তেমনি মুগ্ধকর তার চারপাশের বিবরণ।
সজল জলে ভাসা শাপলা, তেঁতুল আর নারিকেল গাছের ফাঁকেফাঁকে চনচনে রোদ্দুর, আঙুল চেটে খাওয়া নবান্ন, বসন্তকালের রক্তিম পলাশ, থোপাথোপা বেতফল আর জোনাকিমাখা ছায়াছায়া শান্ত বনপথে ভেজা মাটির সোঁদাসোঁদা গন্ধে টইটম্বুর ধূসর মন্থর নিস্তরঙ্গ গ্রামের দিন।
সেসব দিন ছাপিয়ে এক সময় গিয়ে দাঁড়ানো আসামে, মাতামহীর পরিবারে লালিত দলছুট স্নেহকাতর বালক জীবন, নিতান্ত দায়সারাভাবে এসএসসির বেড়া ডিঙিয়ে।

এরপরের গন্তব্য লাকসাম, কুলাউড়া, আখাউড়া.. আধঘুমন্ত সব স্টেশন পেরিয়ে চাঁদপুর, পিতার দ্বিতীয় পক্ষের সংসারে। গন্তব্যহীন দিনযাপন, ফের ভেসে পড়া, সেখান থেকে সেনাবাহিনীতে ঢোকা, তাও ঝোঁকে, ক্ষণিকের সিদ্ধান্তবশে, ফৌজত্যাগ, তাও। যেন জীবনটা কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা যেনতেন ভাবে, স্রোতে গা ভাসিয়ে, কিন্তু পালক না ভিজিয়ে।
এই ভেসে যাওয়ার সময়ে এসেছে দাঙ্গা, পঞ্চাশের মনন্তর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার উৎকট দিনের টুকরো টুকরো ছায়া। যদিও খুব সবিস্তারে নয়।

সব ছায়াকে অস্বীকার করে জলো ম্যালেরিয়ায় পাঙাশ রূপ নেয়া বাদা অঞ্চলের অজগাঁয়ে বসে আত্মবিশ্বাসহীন, আত্মজনহীন সদ্য কৈশোর ডিঙানো সাড়ে পাঁচ ফুটের এক তরুণ নিজেকে ডুবিয়ে রাখে বইতে... শিব্রাম, কোনান ডয়েল, হেমেন্দ্রকুমার, জুল ভার্ন থেকে শুরু করে মৌচাক, রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর, বসুমতী, বিচিত্রা, ভারতবর্ষ, বিশ্বভারতী, প্রবাসী, বনফুলসমগ্র থেকে বিভূতির অনুবর্তন
গোগ্রাসে গেলে পঠনযোগ্য সমস্ত অপাঠ্য বই, যে বইকে সে ভেবে নিয়েছে পালাবার ইগলু, পালাবার ইগ্লুর এক একটা রামধনু ঠিকরানো বরফ-ইট।
এমনকি সৈন্যদলের প্রশিক্ষণ, লাহোর বাসের জীবনেও সদরবাজারের রাস্তায় মাটিতে পসরা সাজিয়ে বসা এক শিখ ফেরিওয়ালার থলি হাতড়ে সে খুঁজে নেয় যুগান্তর; ফেলে আসা কলকাতা আর শরতের ঘ্রাণ মাখা যে সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল প্রেমেন মিত্তিরের সেই বিখ্যাত গল্প, 'তেলেনাপোতা'।

বই তাকে আরো শেখায় দেখতে।
শুধু ছাপার কাগজে ছাপা ছবি নয়, নন্দলাল বা অবন ঠাকুরের তুলির সেই অমোঘ টানের পেছনের গল্প।
অবনীন্দ্রনাথের ছবির রূপের পৃথিবীতে জাগতিক কোন বাসনা তো নেই, অথচ যা আছে তা বাসনার চেয়ে মনকে অনেক বেশি ব্যথিত করে। মণীন্দ্র লিখেছেন এভাবে-
শরীর কি বস্তু, সেই যৌবনে টের পেয়েছিলাম, আর এখন বার্ধক্যে টের পাই- নদীকে মাঝিরা যেমন টের পায় জোয়ার আর ভাটায়। পরে শ্মশানে বসে হয়তো দেখব শরীর ফিরছে তার অঙ্গারে, জলে, ধাতুতে, লবণে। আর তার সূক্ষ্ম বিদেহ আভা চলে যাচ্ছে আকাশে- অালো মেঘ আর শান্তির দেশে। শরীর তো যা পেয়েছিলাম তাই ছিল, কিন্তু অস্তিত্বের ঐ বিদেহ আভা আমিই দিনে দিনে তৈরি করেছিলাম বই পড়ে, ছবি দেখে, গান শুনে।

মানুষী স্মৃতির এই ক্ষণমধুর অতীতচারণ বড্ড হতাশ করে হঠাৎ করে ফুরিয়ে গিয়ে, অপরিণামদর্শী যে বালকবেলার গল্প পাঠের আরামসুখ আর অনিবর্চণীয় গভীর বিষাদে দু'ভাগ হয়ে চিরে মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা এক দূরতম নক্ষত্রের জীবন।

IMG_0422

১০/৫, সানন্দে।
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews771 followers
December 25, 2019
যে কবির নাম কিছুদিন আগেও না-জানা, না-শোনা ছিল, উথাল-পাথাল মন কেমন করা দিনে যার লেখা দু'লাইন কবিতা কখনো গুঞ্জরিত হয়নি, যে লেখকের কাজ কখনো চিরায়ত কথাসাহিত্যের ছায়ায় স্থান পায়নি, বাংলার বিখ্যাত রায় পরিবার কিংবা ঠাকুর পরিবারেও যার জন্ম আর বেড়ে উঠা নয়, যে শত শরদ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করা আদর্শ কোনো ব্যক্তি নয় - এমন একজন ভীষণ সাদামাটা মানুষের আটপৌরে নিস্তরঙ্গ জীবনগাঁথা অত তারিয়ে তারিয়ে পড়ব কোনোদিন ভাবিনি, ভাবতে পারিনি।

থোকা থোকা কালচে রঙের ঠসঠসে মালবেরি ফল কীভাবে অক্ষয় হয় তা ভাবতে ভাবতে, প্রতিদিন একটা-দুটো শব্দ নাড়িয়ে চারিয়ে দেখতে দেখতে গোটা মাস দুই লাগিয়ে পড়ে ফেললাম অক্ষয় মালবেরি, মণীন্দ্র গুপ্ত -এর অখণ্ড আত্মজীবনী। কিংবা বলা যায় মনের মধ্যে গেঁথে নিলাম একটু একটু করে। কী অদ্ভুত সুন্দর গদ্য! খানিকটা ঘোর লাগা ধাঁধার মতো সাধারণত কিছু দৃশ্য আর সময়ের অসাধারণ বর্ণনা। পড়তে পড়তে ঝিমঝিমে নেশা ধরে যায়। গলার মধ্যে কেমন একটা চাপা অনুভূতি আটকে থাকে। মনটা অকারণ বিষন্নতায় হুহু করে উঠে।

"আমি তখন থেকেই নিজেকে চিনি। আমার মতো মানুষকে দিয়ে কোনো কীর্তি সম্ভবপর নয়। যতটুকু না হলে নয় ততটুকু, যতটুকু না হলে নয় ততটুকু - এইভাবে খুদে খুদে হাতে একটু একটু নিয়ে, একটু একটু দিয়ে, পৃথিবীকে বিরক্ত না করে এতদিন কাটল। ছবি আঁকার সময় মিনিয়েচারের থেকে একটু বড় আঁকি। লিখবার সময় ছোট ছোট বই লিখি - একটি একটি শব্দ ভেবে সময় কাটাই। বেশ লাগে। পৃথিবীর আলোবাতাসের সঙ্গে শব্দগুলি কেমন দোয়েলের মতো, চড়ুয়ের মতো, কাঁচপোকার মতো মেশে, দেখি। বেশ লাগে।

আমি কি পাহাড়ের বাঁকে অজন্তা এলোরা বানাতে পারতাম? অসম্ভব। আমি উদয়গিরির চেয়েও অনেক ছোট একটি গুহা বানিয়ে ছেড়ে দিতাম। সেখানে বসে মেঘে- বর্ষায় বৃষ্টির রেখা, শীতে অস্তমান সূর্যের রেখা দেখতাম।"


অদ্ভুত সুন্দর সুর‍্যরিয়াল বাস্তবতার কথা পড়তে পড়তে নিজেকে আরও ক্ষুদ্র আর তুচ্ছ মনে হয়। আমিও বেশ বুঝতে পারি- "আমার হবে না, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ!"

পরমুহুর্তেই রূপকথা রাজ্য সম্মুখে ভেসে উঠে -

"প্রত্যেক ফুলের পাপড়ির কেন্দ্রে একটা সূক্ষ্ম ফুটো আছে, সেই ফুটো গিয়ে শেষ হয়েছে বোঁটার প্রান্তে। ঐ পথটুকু জাদুপথ। কেউ যদি সূক্ষ্ম ��য়ে ছূঁচের মতো ঐ পথের এক মুখ দিয়ে ঢুকে অন্য মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে তবে সে পৌঁছবে এক অন্য রাজ্যে। এক এক ফুলের পথের শেষে এক এক রাজ্য। শি��লিফুলের ফুটো দিয়ে বেরুলে পাওয়া যাবে সাদা মেঘের দেশ। লাল সন্ধ্যামণির ফুটোর ওপারে আছে খুব সুন্দরী, আবছায়ায় চলাফেরা করা মেয়েদের দেশ। জ্যোৎস্না ফোটা হাসনুহানা ফুলের সূক্ষ্ম পথটুকু পেরুলেই ঝাড়লন্ঠব নিবে আসা এক চাঁদিনী জলসার দেশ। আর গ্রীষ্মের তাপে শুকিয়ে মুচমুচে হয়ে যাওয়া স্বর্ণচাঁপার ফুটো দিয়ে বেরুলেই মুনশিবাড়ি।"


কমলা বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামলেই আমার আয়তাকার বেলকনি হাসনাহেনার মাতাল ঘ্রাণে ভরে থাকে। অথচ এভাবে তো কোনোদিন ভাবিনি! এমনি চিত্তাকর্ষক বর্ণনায় মণীন্দ্র গুপ্তের মাতৃহীন শিশুকাল, শিশুবেলার গন্ধমাখা সবুজ গ্রাম, স্নেহকাতর বালকের পাঠ্যবইয়ের ভাঁজে লুকানো অপাঠ্যবইয়ের প্রতি ভালোবাসা, দায়সারাভাবে শেষ করে ফেলা স্কুলজীবন, ঝোঁকের মাথায় সেনাজীবন অর্জন-বর্জন, অতঃপর বেকারত্ব বরণ - সবকিছু ছবির মতো উঠে এসেছে। অক্ষর ছুঁয়ে দিলেই ফেলে আসা অতীতকে অনুভব করতে পারছি। পরক্ষণেই গভীর বিষাদে ডুবে যাচ্ছি, তলিয়ে যাচ্ছি!

এমন মন কেমন করা অপার্থিব সুন্দর লেখনী কতকাল পড়িনা!
Profile Image for Shuhan Rizwan.
Author 7 books1,107 followers
July 7, 2021
অন্যসব স্মৃতিকথার মতোই, পেছনের কথা বলতে গিয়ে ‘অক্ষয় মালবেরি’ স্বপ্নের মতো কিছুটা দূরত্ব রেখে চলেছে। কিন্তু তফাৎ যেখানে হয়, মণীন্দ্র গুপ্ত যেন কোনো রুঢ় বা কঠোর শব্দের ব্যবহার করতেই জানেন না। স্মৃতিকথা পড়তে গিয়ে পাঠকের মনে হয় সে পড়ছে কোনো দীর্ঘ কবিতা। বিভূতিভূষণের মতো মায়া আর মাহমুদুল হকের মতো উপমা থিকথিকে জীবনীও যে লেখা যায়, ভারি আনন্দ হয় সেটা আবিষ্কার করে।

মানুষ আমি আগাগোড়া শহুরে। মনীন্দ্র গুপ্তের গ্রামবাংলার নির্জন দুপুরের পুকুর নয়, আমার কাছে রহস্যে ঘেরা বরং শহরজীবন। কুমোরের হাতে মূর্তি গড়ার দৃশ্যের বদলে আমি পেয়েছি ফাঁপানো ম্যানিকুইন, যৌথ পরিবারে থেকে এক ধরনের অবাধ গ্রামে ঘোরার স্বাধীনতার বদলে আমার ছিলো স্কুলব্যাগ পিঠে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানে ঘুরে বেড়ানো। তবু, ‘অক্ষয় মালবেরি’ পড়তে গিয়ে অনুভব করি, আণবিক বিস্ফোরণে গ্রামবাংলা ধ্বংস হয়ে গেলেও ঢেঁকিশাক, নৌকাবাইচ আর নির্জন মুনশিবাড়ির চাতালকে আবার জীবিত করা সম্ভব মণীন্দ্রের বর্ণময় বর্ণনায়। এমন নিখুঁত করে তিনি রঙের উপমা দ্যান, যে জিনিসটাকে আমাদের আর দূরের বলে মনে হয় না। বিশেষ করে বইটার প্রথম পর্ব, যেখানে লেখক তার পরিবারের লোকেদের আর শৈশবের গ্রামের বর্ণনা দিয়েছেন, সেখানে যেন রঙের এই ব্যবহার সবচেয়ে উজ্জ্বল। পরের পর্বগুলোয় সেটা ক্রমাগত ক্ষয়ে আসে।

Facebook , Website
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews621 followers
August 13, 2019
খুব অসাধারণ কিছু নিয়ে আসলে বলা কঠিন। যাই বলতে চাই মনে হয় ঠিকমত বইয়ের প্রশংসা করা হল না। এই বইটির জন্য একই কথা প্রযোজ্য।

মণীন্দ্র গুপ্ত নাম কোনদিন শুনি নি। এই বইটির খোঁজ পেলাম গুডরিডসে এবং অবশ্যই রিফাত আপুর রিভিউয়ের কল্যাণে। এত ভালো রিভিউ পড়ে ঠিক করে ফেললাম পড়ে ফেলতে হবে। আমার ননফিকশনের লিস্ট আরও একটু লম্বা করতে পড়েও ফেললাম।

অত্যন্ত সুখপাঠ্য বই। ঈদের দিন করার কিছু না পেয়ে সারাদিন বসে পড়ে ফেললাম। যদিও আমার মনে হয়েছে বইটি আসলে একটানে না পড়ে আস্তে ধীরে সময় নিয়ে পড়লে খুব ভালো হত। লেখক যেমন গাছের নিচে শুয়ে বই পড়তেন, এক প্যারা পড়ে চারপাশের প্রকৃতি উপভোগ করতেন আর সে এক প্যারা নিয়ে চিন্তা করতেন, তেমনি করে যদি মনোরম প্রকৃতি শোভার মাঝে বসে এই বইটি নিয়ে হারিয়ে যাওয়া গেলে ভালো হত। কিছু উদাস, কিছু বিষন্ন ভাবের মাঝে কাটানো যেত।

লেখক শুধু যে নিজের কথাই লিখেছেন তা নয়, সেই সময়ে গ্রামের সামাজিক জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন কলকাতার কথা, বলেছেন তার সৈনিক জীবনের কথা, পঞ্চাশের মন্বন্তরের কথা। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক বইটির লেখনী। গদ্যের মত। যারা আমার মত ফিকশন পড়তে ভালোবাসেন তাদের মনে হবে কোন উপন্যাসই পড়ছেন।

***সবার জন্য রিকমেন্ডেড।***
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
September 22, 2019
' শত শরদ মানুষের আয়ু। কিন্তু দুঃখী -সুখী - ভ্রষ্টাচারী ততদিন বাঁচে না। মরণের আগে বোকাচোখে তাকিয়ে দেখে: সমস্তই অসম্পূর্ণ, তার রাকাশশী অসংলগ্ন বালি হয়ে উড়ে যায়। তবু এইটুকু জীবনের মধ্যে কত কি যে ঘটেছিল - কত মুগ্ধতা, সন্তাপ, উল্লাস, দ্রবণ! ভোলা যায় না। '

কবি মণীন্দ্র গুপ্তের আত্মকথা শেষ করে নিজেই নিজেকে সওয়াল করছি, সবকিছু কি ভোলা যায়? জওয়াব আপনাআপনি চলে এল। 'না'। দুই দশকের কিছু বেশি অর্থহীন জীবনে আমারই তো সব ভুলে থাকবার জো নেই। হৃদয়পটে অমোচনীয় অক্ষরে শৈশব, কৈশোর আর নিত্যকার জীবনের কত স্মৃতিই তো হঠাৎ ঘাঁই দিয়ে ওঠে।

সাত দশক পেরিয়ে আসা মণীন্দ্র গুপ্তও ভুলতে পারেন নি নিজের বিগত হওয়া দিনগুলির কথা। অম্লানবদনে তাই লিখেছেন অমৃত-গরল যুগের কথা।

অবিভক্ত ভারতের খুলনার এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে নিজের বেড়ে ওঠা। চারপাশের দুঃখী, সুখি মানুষগুলোকে ঘিরে নিজের জীবনকে কোনক্রমে টেনেটুনে বয়ে নিয়ে যাওয়া। মা মরা ছেলে। আসামে নানা-নানির গৃহে আশ্রয় জুটলো। খাওয়া,পড়ার নিশ্চিন্ত বন্দোবস্ত। আসামের স্কুল পড়ুয়া কিশোর অমনোযোগী মণীন্দ্র গুপ্তের কথকথা তো ঢেউহীন নদীর জলের মতো নিশ্চল, স্থির নয়৷ আচমকা জলের বান ডাকে শান্তস্নিগ্ধ মণীন্দ্র গুপ্তের জীবনে। আবার হঠাৎই অসম্ভব ধীরতা।

থার্ড ডিভিশনে পাশ করলেন মাধ্যমিক। কলেজে কে পড়াবে? পিতৃগৃহে ফিরলেন। আবিষ্কার করলেন পিতার সামর্থ্য দিনমানে তেল,নুন,লকড়ি আনতেই ফুরোয়।

নানাবাড়ির সকলে চলে এসেছে কলকাতায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের তোড় চারদিকে। ব্রিটিশসরকার সৃষ্ট ভয়ংজর দুর্ভিক্ষ তখনও আঘাত হানেনি বাংলায়। চাউলের মজুত চলছে লুকিয়ে ছাপিয়ে।দুর্ভিক্ষ খুশিতে দাঁতে শাণ দিচ্ছে লোকক্ষয় করতে।বোমাতঙ্কে কলকাতা উজার। যুদ্ধের বাজারে চাকরির রমরমা।

মাধ্যমিক পাশ মণীন্দ্র ঢুকলেন কেরানি অফিসে। সে চাকরি বেশিদিন রইল না। কপাল বুঝি এত সুখ সইতে পারছিল না। দেবী শীতলা মুখদর্শন করলেন মণীন্দ্রের। সপ্তাহতিনেক ভোগান্তি চলল। দেবীপক্ষ বিদায়ের সাথে সাথে চাকরিখানাও সঙ্গে নিয়ে গেলেন।

ঝাড়া হাত-পা মণীন্দ্র গুপ্ত। সিদ্ধান্ত নিলেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভোকেশনাল ট্রেনিং নেবেন। ভর্তিও হলেন। কিন্তু মন বেচারা টিকতে চাইবে কেন? তাই এলেন পালিয়ে।

বাঙালি সন্তানদের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ এক সুযোগ এনে দিয়েছিল৷ ইংরেজ সরকার নিজেদের প্রয়োজনেই দলেদলে লোক ভর্তি করছিল সেনাদলে। নানা প্রলোভনে অনেকে যোগও দিচ্ছিলেন। এই রিক্রুট তথা রংরুটেদের কথা বরেন বসুর কালজয়ী উপন্যাস 'রংরুটে' অত্যন্ত উজ্জ্বলতর ভঙিতে আছে। আমাদের মণীন্দ্র গুপ্তও রংরুট হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে যুক্ত হলেন।

এই বইয়ের সবচেয়ে সুখপাঠ্য অংশ হলো মণীন্দ্র গুপ্তের সেনাবাহিনীতে অবস্থানের বর্ণনা। কিছুদিন কলকাতায় পর লাহোরে সেনাজীবনের প্রস্তুতিপর্ব খুবই ভালো লেগেছে। কবি মণীন্দ্র গুপ্ত তাঁর মুগ্ধতা সৃষ্টিকারী গদ্যের জাদুতে একেবারে মাত করে দিয়েছেন৷ আমরা যারা ব্রাত্যজন। সেনাবাহিনীর কাঠখোট্টা জীবন সম্পর্কে ভাসাভাসা জ্ঞানে ভাসি। তাদের কথা ভেবেই হয়তো মণীন্দ্র গুপ্ত এতটা সাবলীলভাবে লিখে গেছেন নিজের কয়েকটি বছরের সেনাজীবনের ভালো-মন্দের মিশেলে অভিজ্ঞতার কথা।

কবি মণীন্দ্র গুপ্তের শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের কিয়দাংশই 'অক্ষর মালবেরি'। এত সহজবোধ্য লেখনী নিঃসন্দেহে পাঠককে হিপনোটাইজ করে রাখবে। পাঠক হয়তো বুঝতেই পারবেন না, কখন শেষ হলো 'অক্ষ���় মালবেরি '৷
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
January 23, 2021

আমি জীবনী কিংবা আত্নজীবনী যাই-ই পড়ি না কেন তা রেখে দিই স্টোরি অফ লাইফ নামের শেলফে। জীবনেরই গল্প, তাই না? অক্ষয় মালবেরি আত্নজীবনী হিসেবে কেমন?


ধরে নিই,
টেবিলের উপরে একটা সুদৃশ্যমান বাটিতে পাউরুটি রাখা আছে যা একজন মানুষের জীবনকে রিপ্রেজেন্ট করছে। আমরা সাধারণ দর্শক মাত্র! টেবিলের প্রান্ত থেকে ঐ বাটির রুটিখানাকে কতই আর ভাল দেখা যায়! এরই মাঝে অন্য কেউ এসে পাউরুটিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখান। কিন্তু এভাবে কি আর ভেতরের অংশ দেখা যায়? বোঝা যায় কেমন সেটা!?

এরপর মালিক নিজেই আসেন। আহা লোকগুলোর এতো আগ্রহ! তাই হয়তো রুটিখানাকে টুকরো করে কাছ থেকে দেখানোর চেষ্টা করেন। হয়তো একটু পরেই রুটিখানাকে তিনি মাখন কিংবা অন্যকিছু দিয়ে সাজিয়ে মুখে পুরবেন; কিন্তু নাহ! সেটা আর আমরা দেখতে পেলাম কই!

আর শেষে যিনি আসেন তিনি ঐ মালিকই কিন্তু একটু ভিন্ন রকমের। তিনি অতো কিছু নিয়ে ভাবেন না। নিজে যেভাবে মাখন কিংবা আরও খাদ্যোপাদান দিয়ে সাজিয়ে পাউরুটি খানা টুকরো করে খাবেন ঠিক সেভাবেই সবাইকে দেখান।



এই পাউরুটি গল্পের প্রথম অংশ টা হচ্ছে মোটামুটি বেরসিক জীবনী। দ্বিতীয়টা হচ্ছে আত্নজীবনী। আর তৃতীয় অংশটাই হচ্ছে মণীন্দ্র গুপ্তের অক্ষয় মালবেরি।
অক্ষয় মালবেরি: গদ্যের আড়ালে বৃক্ষের শাখা-প্রশাখার মতো বিস্তৃত পদ্য💚
লেখক যেভাবে নিজের জীবন নিয়ে ভেবেছেন ঠিক সেভাবেই বলেছেন পাঠকদের; শৈশবের কিংবা কৈশোরের কথা ভাবলে তার সামনে যা ভেসে ওঠে তাই-ই পাঠকদের দেখিয়েছেন।


"কলকাতায় ফিরে, ধোবার পরেও, বোতলটাতে বহুদিন রামের গন্ধ লেগে ছিল। ভালো লাগত। একটা দূরে রেখে আসা জীবনের কথা মনে পড়ত।"
এই তো! প্রতি বছর বসন্তের ইষদুষ্ণ বাতাস আসে, বসন্তের বিকালে একটি বাচ্চা মেয়ে ডে-কেয়ার থেকে ঘরে ফেরার সময়: কোকিলের সাথে সমস্বরে কুউ কুউ করতে করতে হঠাৎ করেই মনের ভেতরে উদাস হয়ে যায়!

স্মৃতিরা বড় অক্ষয় কিংবা বইয়ের শুরুতে কবিতায় উল্লেখিত মালবেরির ঝোপের মতো Evergreen!

~২৩ জানুয়ারি, ২০২১


(যারা লেখিকা লীলা মজুমদারের আত্নজীবনী আর কোনোখানে পড়েন নি, তারা পড়ে দেখতে পারেন)
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,860 followers
September 18, 2019
যে সীমিত সংখ্যক বই পড়ে মনে হয়েছে যে হ্যাঁ, আমি অমৃতের স্বাদ পেলাম, এ তেমন একটি বই। অজস্র হাইপ, অজস্র মানুষের ভালো-ভালো কথা - এ-সব শুনলে আমাদের স্বভাবত সিনিক মন বেঁকে বসতে চায়। আমিও বইটা কিনেছিলাম বহু আগে, কিন্তু কেন যেন, পড়িনি। তারপর একদিন দেখলাম বইটা শেলফে আর পাচ্ছি না। ভাবলাম, তবে কি বইয়েরও অভিমান হয়? স্রেফ ওই ভাবনাটাই আমাকে প্রাণিত করল বইটা আবার কিনতে, এবং এবার এক দফায় পড়ে ফেলতে।
বিশ্বাস করুন, যত ভালো কথাই শুনে থাকুন না কেন এই বইয়ের সম্বন্ধে, সেগুলো কম পড়ে যেতে পারে আপনার নিজের মনোভাব ব্যক্ত করতে গিয়ে।
কী নিয়ে এই বই?
আমরা প্রায়ই অতীতচারণ প্রসঙ্গে একটি কথা ব্যবহার করি - স্মৃতিচিত্রণ। এই বই হল যথার্থ স্মৃতিচিত্রণ। সবাই, এমনকি সব কবি এভাবে নিজের কথা, নিজের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা বলতে পারেন না। লেখক পারলেন। সেই স্মৃতিচিত্রণ যে কত মধুর আর কতটা সতেজ - তা বোঝানোর মতো দক্ষতা আমার নেই।
বাঙালি নাকি নস্ট্যালজিয়া ভালোবাসে। কিন্তু এই বই নস্ট্যালজিয়ার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এতে শুধু ফেলে আসা সময় বা মানুষেরা নেই, আছে তার বাইরেও অনেক-অনেক কিছু, যাদের কথা বইটি না পড়লে আপনি কিছুতেই বুঝবেন না।
বইটা পড়ুন প্লিজ।
Profile Image for হাঁটুপানির জলদস্যু.
299 reviews228 followers
February 21, 2023
অক্ষয় মালবেরির নাতিপ্রশস্ত পরিসর অনেকটা বান্দরবানের পাহাড়সারির মতো, একটি চূড়ার অদূরে আরেকটি চূড়ায় পৌঁছতে গেলে পার হতে হয় গভীর খাদঘেঁষা পথ। বইটার প্রথম তেহাই পড়ে একটু পরপর নামিয়ে রেখেছি, অনতিদূরে একেকটি চরণ, একেকটা ছিন্ন স্তবক কখনও তিরের মতো এসে বিঁধেছে বুকে, কখনও পাথর হয়ে চেপে বসেছে। লেখককে মনে হয়েছে নির্মম কোনো কাঠঠোকরা, নিজের শৈশবস্মৃতিকে তিনি ঠুকরে চলেছেন অনিয়ত লয়ে, আর সেই স্মৃতিবৃক্ষ ক্রমাগত ক্ষরণ করে চলেছে অলঙ্ঘ্য বিষাদের রজন; পাঠক কিছুক্ষণ পরপর অনুভব করবেন, সে রজনে তিনি আটকা পড়ে আছেন মধুমণির ভেতরে প্রাচীন পতঙ্গের মতো। প্রায় বছরতিনেক পর দ্বিতীয় তেহাইটি পড়তে বসে দেখি, কৈশোরের স্মৃতিচারণে মণীন্দ্র গুপ্ত আরও নিষ্ঠুর হয়েছেন, তাঁর তুলনারহিত টুকরো বর্ণনায় একেকটা চরিত্র আমাকে থমকে দিয়েছে কিছুক্ষণ পরপর। তৃতীয় তেহাইটি অনেক খাপছাড়া, কিছুটা দায়সারাও মনে হয়েছে, প্রথম দুটির সান্দ্র-অথচ-রাজিত বিষাদ সেখানে অনুপস্থিত।

মণীন্দ্র গুপ্তের অতীতচারণ অনেকটা মাইনপোঁতা সৈনিকের মতো। প্রতিটি স্মৃতিকথাই এক চিরতরে হারানো দেশকাল ভ্রমণের অদ্ভুত যান, গুপ্তসাহেব পাঠককে সে যানে চাপিয়ে নিয়ে গেছেন এক বিষাদের বোমাখেতে; সেখানে একটু পরপর অনুকম্পায়ী পাঠক বিদ্ধ হবেন অতর্কিতে ছিটকে আসা টুকরো শোকে। তারপরও, কুর্নিশ।
Profile Image for Sneha.
56 reviews96 followers
May 6, 2023
সারাজীবনের এতো এতো স্মৃতি শুধুমাত্র কাগজে নিখুঁত ভাবে চিহ্ন করে রাখা যায়?  যায়, মনীন্দ্র গুপ্ত রেখে গেছেন, তার হৃদয়ের বিচিত্র ভাব অনুভূতি সব আগলে রেখেছেন, জীবনের এতো রকম বিচিত্র সব স্মৃতি কেমন কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন! এমন সহজ স্নিগ্ধ করে নিজের স্মৃতি কজন আগলে রাখতে পারে! এ লেখকের গুণ, দুর্লভ গুণ!
এইখানে কোথাও একটা ঘর নেই, বাড়ি নেই, গাছ নেই, পাখি নেই, ঘাস পাতা কিছুই নেই, অথচ চোখের সামনে সব কেমন ছবির মতো রঙিন হয়ে ধরা দিলো, এমনকি বাতাসের শব্দ পর্যন্ত যেন শুনতে পেলাম! বিশেষ করে শৈশবের পর্বে। লেখক তার আত্মজীবনীকে তিনটি পর্বে তার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের আত্মকথা বলে গেছেন। অসাধারণ শব্দচয়নের এই তিন পর্ব পাঠ শেষ করে অন্যান্য পাঠকের মতো আমার মনেও এর পরে কি হলো জানার এক তীব্র কৌতুহল বোধ হচ্ছে।
Profile Image for Zihad Saem.
123 reviews6 followers
November 26, 2025
যদ্দুর মনে পড়ে 'অক্ষয় মালবেরি' প্রথম পড়েছিলাম গুডরিডস একাউন্ট খোলার বেশ আগে। এরপরও বার দুয়েক পড়েছি। আসলে 'অক্ষয় মালবেরি' আমার ভীষণ প্রিয় বই। প্রিয় বই সম্পর্কে লেখতে গেলে কেমন যেন আমার সব গুলিয়ে যায়। তবে এতটুকুই বলতে ইচ্ছে করতেছে 'অক্ষয় মালবেরি' একদম 'সন্দেশের মতো'।
Profile Image for Zohuruzzaman.
3 reviews9 followers
February 11, 2022
অপার্থিব সুন্দর একটা লেখা। পড়ার সময় মনে হচ্ছিল যেন এই বুঝি শেষ হয়ে গেল! প্রতি পাতায় পাতায় যেন মাটির সুঘ্রাণ, গ্রামের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের সুবাতাস পাচ্ছিলাম,প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে যাচ্ছিল যেন!
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
March 14, 2021
অমৃত!


*এক শব্দের রিভিউ।
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
April 5, 2022
''যেগুলো সর্বসাধারণের অভিজ্ঞতা, এগুলো যে হঠাৎ এক জায়গায় এসে বিশেষ হ'য়ে ওঠে, যেন তুলনাহীন, এইটেই শিল্পপ্রক্রিয়ার মূল রহস্য। জীবনের অতি সাধারণ তথ্যের রূপান্তর ঘটে সেখানে; তারা অর্থ পায়, দ্যোতনা পায়, দূরস্পর্শী ইঙ্গিতে আলোকিত হয়ে ওঠে। আমরা যখন সাহিত্য পড়ি তখন আমাদের দৈনন্দিন অস্তিত্বের তথ্যগুলোকেই চিনতে পারি সেখানে কিন্তু ঠিক সেগুলোকেও নয়। সেইসব তথ্য, যা বাস্তব জীবনে অস্পষ্ট, এলোমেলো, যোগসূত্রহীন, কিংবা অভ্যাসে পরিজীর্ণ, সেগুলোকে যেখানে সুসংবদ্ধরূপে দেখতে পাই, স্বচ্ছ এবং সম্পূর্ণ করে উপলব্ধি করি, তাকেই আমরা বলি আর্ট, বলি শিল্পকর্ম। "

শিল্পকর্ম কিংবা সাহিত্য সম্পর্কে এই বাক্যগুলো বলে গিয়েছেন আমাদের বিখ্যাত সাহিত্য সমালোচক বুদ্ধদেব বসু। তার বলা কথাগুলোর প্রতিটি লাইন আমার কাছে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়। অক্ষয় মালবেরি নিয়ে এই বাক্যগুলো আরো বেশি সত্য বলে মনে হয়।
অক্ষয় মালবেরি লেখক মনীন্দ্র গুপ্তের স্মৃতিকথা কিংবা আত্মজীবনী বলা হয়। অসম্পূর্ণ একটা আত্মজীবনী। দীর্ঘায়ু এই লেখকের বয়স এখন প্রায় পঁচানব্বই কিন্তু অক্ষয় মালবেরিতে লেখক তাঁর জীবনের প্রথম বাইশ বছর জীবনের কথা লিখেছেন। লেখক বলেছেন যতদিন তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন ততদিন তিনি অসীম মুগ্ধতা, বিস্ময় এবং অপরিণামদর্শিতা নিয়ে অনন্য ছিলে। তারপরের জীবন বাকি সবার মতো। অন্য পাঁচ জনের মতো হয়তো একই স্রোতে চলেছে তাঁর জীবন। কিন্তু অন্য পাঠকের মতো আমারও অক্ষয় মালবেরির পরের খন্ড পড়ার তীব্র তৃষ্ণা জন্মেছে। যা সৃষ্টি করেছেন লেখক তার অসাধারণ লেখনীর দ্বারা। অক্ষয় মালবেরি প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত। যার প্রথম ভাগটি জন্মের পর থেকে শুরু করে লেখকের কিশোরকাল শুরু আগের কথা। এই পর্বটির মূলকেন্দ্রে ছিলো লেখকের জন্মভূমি পূর্ববঙ্গ। মূলত বরিশাল। কী অসাধারণ ভাবে প্রকৃতিকে লেখক অবলোকন করেছেন তার চোখ দিয়ে তা বলা অসম্ভব। তার জীবনকে দেখার সুক্ষ্ম দর্শন, ছোটবেলায় কাটানো প্রকৃতির অমোঘ স্মৃতি কত অদ্ভুত! আমার নিজের ছোট বেলার কথাই যেন লেখক বলে গিয়েছেন। খুব বেশি মিল পেয়েছি আমি আমার শৈশবের সাথে। দূরন্ত শৈশবে তার অফুরন্ত ছোট্ট প্রাণ যেন বারবার ঘুরেফিরে তার পূর্ণবয়স্ক স্মৃতির দরজায় কড়া নাড়ছিলো। যে ডাক মানুষ নিজের অন্তরাত্মা থেকে শোনে সেই ডাক কী উপেক্ষা করা যায়? সৃষ্টি হলো অক্ষয় মালবেরির মতো একটি বই। যার প্রতিটি ছোট ছোট অধ্যায় আমাকে নিয়ে গিয়েছে আমার দূরন্ত শৈশবে। লেখকের সাথে মিশে গিয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে আমার অন্তরাত্মা। মা হারা ছোট্ট শিশুটি বড় হয়েছেন ঠাকুমা ঠাকুরদার হাতে।
আঁতুড়ঘরে নিজের জন্ম সময় নিয়ে বলেছেন, "আমি খুব পৌরাণিক আদরের মধ্যে ভূমিষ্ট হলাম। ডাক্তার নেই, দাই নেই, ছুরি-কাঁচি নেই। শুধু একদল পাড়াগেঁয়ে অভিজ্ঞ বর্ষীয়সী যেন হুল্লোড় করে হাতে হাতে নামিয়ে নিলেন। ডাক্তারী ছুরির বদলে আমাদের পশ্চিমপুকুরপারের নির্জন বাঁশঝাড় থেকে কেটে আনা কাঁচা বাঁশের চোঁচ দিয়ে আমার নাড়ী কাটা হয়েছিলো, একথা জেনে অন্যরকম লাগে। কাঁচা বাঁশের চোঁচ ব্লেডের চেয়েও ধারালো, তাতে টিনেসাসের বীজ না থাকলেও বনের সবুজ বিষ ছিলো।"
দ্বিতীয় পর্বটি লেখকের মামা বাড়ির যাত্রা আর মামার বাড়িতে লেখাপড়া নিয়ে কেন্দ্র করে। আসামে মামার বাড়ি ছিলো। বরাক উপত্যকায় নিজের বড় হওয়াকে নিয়ে লেখকের এই পর্বের সাথে আমার নিজের খুব মিল। লেখকের মতো আমিও কিশোরের শুরুর সময়ে পারি দিয়েছিলাম মামার বাড়ি। আর তাঁর মতোই সেখানে অবস্থান করেছিলাম কিশোরের শেষ পর্যন্ত। কিছুকিছু জিনিস দেখে সত্যি অবাক লাগে। সেই আশি-নব্বই বছর আগের লেখকের কৈশোরের সাথে যেমন বিরাট গড়মিল তেমনই সুক্ষ্ম মিলও দেখা যায়। আর আমি কোনো বইয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে ফেললে সেই বইকে আপনার ভেবে ভালোবেসে ফেলি। আমিও গিয়েছিলাম তাঁর মতো পাহাড়ে, রাঙ্গামাটি শান্ত পাহাড়ের কোলে। যাই হোক লেখকের সুখের পাশাপাশি ক্ষুদ্র কষ্টের মুহুর্তগুলোও দেখিয়েছেন। যদিও তা সামান্যই। তিনি নিজের স্মৃতিকে খুব ভালো ভাবে রোমন্থন করেছেন বলেই জানি।
তৃতীয় পর্ব উনার চাকরি জীবনের শুরু কিছু বছর আর সৈনিক জীবনের কাহিনী। এই পর্বটা অন্য দুই পর্বের চেয়ে বেশি বাস্তবতা প্রখর। কারণ এখানে তার জীবনের নতুন সুরের সৃষ্টি হয়েছে। নিজের ঘানি নিজে টানার জন্য নেমেছেন পৃথিবীর কঠোর পিঠে। তবে তাট সৈনিক জীবনের স্মৃতিগুলো আমাদের সৈনিক জীবন সম্পর্কে অন্য ধারণা দেয়। রুক্ষ তথাকথিত সৈনিক জীবন ছেড়ে এখানে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আর অন্যরকম জীবনের দেখা মেলে।

অক্ষয় মালবেরি নিয়ে যতই কথা বলি কম হবে। একজন পাঠক কখনোই আমার রিভিউ পড়ে অক্ষয় মালবেরি সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আপনি নিজে সেই রস আস্বাদনের জন্য অক্ষয় মালবেরির দোরগোড়ায় যাচ্ছেন। অদ্ভুত এক মোহ বইটাকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। যদিও কিছুটা ধীরলয়ে লেখা এই বই। তবুও একঘেয়েমি আসবে না, কারণ লেখকের লেখার টোন প্রথম থেকে পাঠককে স্তব্ধ করে দেয়। শান্ত পুলকিত আবেশে জড়িয়ে রাখে। অক্ষয় মালবেরি আরো অনেকজনে পড়বে, ভালো-খারাপ উভয়ই লাগবে পাঠকের। কিন্তু আমার এই ভালোলাগা, ভালোবাসা কখনোই কমবে না। স্মৃতির অতলে হারাবার জন্য আমি হয়তো আবার কখনো কখনো বইটি হাতে নিবো। উল্টেপাল্টে পড়বো পছন্দের জায়গা গুলো। স্মৃতির রোমন্থন করবো। তবুও অক্ষয় মালবেরি প্রথমবারের মতো পড়ার যে শান্ত শীতল আবেশ, মুগ্ধতা তার ক্ষয় হবে বলে মনে হয় না। কারণ অক্ষয় মালবেরি, অক্ষয়।
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
September 16, 2019
"শরীর কি বস্তু, সেই যৌবনে টের পেয়েছিলাম, আর এখন বার্ধক্যে টের পাই- নদীকে মাঝিরা যেমন টের পায় জোয়ার আর ভাটায়। পরে শ্মশানে বসে হয়তো দেখব শরীর ফিরছে তার অঙ্গারে, জলে, ধাতুতে, লবণে। আর তার সূক্ষ্ম বিদেহ আভা চলে যাচ্ছে আকাশে- অালো মেঘ আর শান্তির দেশে। শরীর তো যা পেয়েছিলাম তাই ছিল, কিন্তু অস্তিত্বের ঐ বিদেহ আভা আমিই দিনে দিনে তৈরি করেছিলাম বই পড়ে, ছবি দেখে, গান শুনে।"

কি মায়ামাখা একটা বই! ননফিকশন কিন্তু মনেহয় যেন ফিকশনই পড়তেসি।সংগ্রহে রাখার মতো অসাধারণ একটা বই।
Profile Image for Maria Alam.
23 reviews88 followers
July 5, 2022
অক্ষয় মালবেরি- মণীন্দ্র গুপ্ত

কবিতার মতো স্নিগ্ধ অক্ষয় মালবেরি মণীন্দ্র গুপ্তের তিন পর্বের আত্মজীবনী। লেখকের জন্মের পর তার ১৯ বছর বয়সী মা মারা যান। তাঁর বেড়ে ওঠা ঠাকুমা আর দাদুর কাছে। বাবা অনেক জোরে ২য় বিয়ে করেন। লেখকের মতে 'বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্কের মধ্যে জন্ম থেকেই কোনো গ্রহবৈগুণ্য ছিল'। ফিঙে পাখির মতো কাকা, ছোট ভাই,ছোটমা তাঁদের সবাইকে নিয়ে তাঁর বেড়ে ওঠা। লেখক কত সুন্দর করেই না তার গ্রাম্যজীবনের বাল্য কাল ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁদের দুর্গাপুজো, নবান্ন, ঋতুতে ঋতুতে অ্যাডভেঞ্চার এসব পড়ে আমার শহরে জীবনের বাল্যকালের প্রকৃতির সাথে সখ্যতার অভাব টের পাচ্ছিলাম। তারপর ঠাকুমার মৃত্যুর পর লেখককে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁর দিদিমার বাড়ি। সেখানে স্কুল জীবনের অভিজ্ঞতা, নরসিংদী স্কুল, গভঃ স্কুল, আর সাথে নানা সাধু সন্ন্যাসীর কাহিনী নিয়ে কি বৈচিত্র্যময় একটা সময় লেখক পার করেছেন! দিন শেষে মেট্রিকুলেশন পাশ করে শেকড়ের কাছে আবার গমন। জীবনের ভার পরে তারপর লেখকের উপর। দুটো চাকরি ছেড়ে শেষে আর্মি জয়েন করেন। সেই আর্মি জীবনের বর্ণনার সাথে বিভিন্ন জটিল অভিজ্ঞতার মিশ্রণ বেশ সহজ করে কাগজের পাতায় তুলে ধরেছেন। তাঁর বাইশ বছরের জীবনকে খন্ড খন্ড করে ২৫৮ পৃষ্ঠায় তুলে ধরেছেন। শেষে লেখকের মতো বলব অক্ষয় মালবেরি উপন্যাস নয়,প্রচলিত আত্মজীবনীও নয়, একজন দুঃখী- না সুখী - না মানুষের চিহ্নপত্র। কাচাঁ কঞ্চির কলমে বনের সবুজ কালিতে হোগলার পাতায় লেখা- উজ্জ্বল দুরন্ত দুঃখী ক্ষণমধুর অতীত যেন স্তব্ধতা থেকে এসে আবার স্তব্ধতায় ফিরে গেছে।
Profile Image for Ummea Salma.
125 reviews121 followers
September 19, 2020
এই বইয়ের রিভিউ লেখার কে আমি!?!
এত বড় দুঃসাহস দেখানোর মত সাহস এখনো হয়নি আমার!
Profile Image for Akash.
446 reviews150 followers
December 21, 2024
অক্ষয় মালবেরি শুধু আত্মজীবনী নয়; স্মৃতিচারণ কিংবা ইতিহাস গ্রন্থ বললেও ভুল হবে না। এমন সুরম্য গদ্য পড়ার অভিজ্ঞতা পূর্বে হয়নি। প্রতিটা শব্দ যেন মুগ্ধতা আর বিস্ময় জন্ম দিয়েছে। অক্ষয় মালবেরি তাই পাঠকের হৃদয়ে আমরণ অক্ষয় হয়ে থাকবে।

অনেক আত্মজীবনী পড়া হয়েছে। কিন্তু কোনো লেখক তাঁর জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিচিত্র চরিত্রদের নিয়ে এমন বিশদভাবে লিখেননি। এমন সরলভাবে বিচিত্র অনুভূতিকে ব্যক্ত করতেও পারেননি। পুববাংলার একটা নির্জন গ্রাম আর বাড়িকে এমনভাবে কেউ অনুভব করতে পারেননি। নিজের শৈশব আর কিশোরকালকে এমনভাবে ভাষা দিতে পারেননি। ভণিতা বিহীন পেশাজীবনের এমন বর্ণনা পড়ে পাঠকও অনেককিছু জানতে আর শিখতে পারে।

কী ছিল মণীন্দ্র গুপ্তের ঈপ্সিত জীবন?
ভোরে স্নান করে সকালের খাবার খেয়ে শ্মশানে বসে দুপুর অবধি বই পড়া, দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দিনের আলোয় ছবি আঁকা, আর সন্ধ্যায় আকাশ দেখা— এই ছিল তাঁর কাঙ্ক্ষিত জীবন। কিন্তু তাঁকে জীবনের প্রয়োজনে একজন দুঃখী-না সুখী-না মানুষ হতে হয়েছে। আমাদের সবারই হতে হয়।

এই বইটা যেকোনো পাঠকের জন্য অবশ্যপাঠ্য। বারবার পড়তে হবে। বছরের সমাপ্তি অথবা আরম্ভ অক্ষয় মালবেরির সাথে হোক। অবভাস থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
May 2, 2022
আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা সাধারণত পুরো জীবনের আলোচনা। "অক্ষয় মালবেরি " পুরো জীবনী নয়। তবে আমার মনে হয় এটা স্মৃতি কথা বা আত্মজীবনী এর থেকে অনেক বেশি আত্মদহন।
জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা। একটু একটু কবে চারপাশের পরিবেশের পরিবর্তন সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটে কাছের মানুষের। মা ছাড়া একটি শিশুর শৈশব, কৈশোর এমন কি যৌবনের উদ্দেশ্য ও বন্ধনহীন এক জীবনের কি নিদারুণ অভিজ্ঞতা।

সুখ স্মৃতি যেখানে হাতড়ে ফিরতে হয়, দুঃখের দহনে জীববের প্রতি পদক্ষেপে যার অভিজ্ঞতা ঝুলি হয়েছে পূর্ণ। এই জীবন একটূ মানুষ বহন করে চলেছে যা এতো মাধুর্য্য দিয়ে লেখে কিভাবে সম্ভব তা বলে বোঝানো যাবে না। সাধারণ এক জীবনের অসাধারণ এক বর্ণনা মণীন্দ্র গুপ্তের "অক্ষয় মালবেরি "।
Profile Image for Shojib Saha.
18 reviews5 followers
August 26, 2023
অক্ষয় মালবেরি মণীন্দ্র গুপ্তের আত্মজীবনী মূলক বই।এই বইয়েরই কোনো একটি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন "ভাসমান সস্তা শব্দে কী করে বোঝানো যাবে অনির্বচনীয় গভীরকে!" একথা বললেও আমার মতে তিনি সেই অসম্ভব কাজের অনেকটাই সম্ভব করে দেখিয়েছেন এই বইয়ে।

শৈশবে মাতৃহীন লেখকের জীবনের একাংশ কেটেছে পিতামহ ও পিতামহীর সান্নিধ্যে। সেসময়ে পিতামহী ও মাতামহীর মধ্যে লেখকের ভাসায় "প্যাক্ট" হয় যে বড় বেয়ানের দেহরক্ষার পর লেখক ছোটো বেয়ানের কাছে তিনি হস্তান্তরিত হবেন। সেই জের ধরেই শৈশবের আরেক অংশ ও কৈশর কেটেছে মাতামহ ও মাতামহীর সান্নিধ্যে।

মণীন্দ্র বাবুর প্রাকৃতিক নৈসর্গিক রুপের বর্ণনায় প্রকৃতির অলস মর্মর বহুমাত্রিক অসংখ্য চিত্র মানসপটে ভেসে উঠতে বাধ্য। সেইসব বর্ণনা পড়তে পড়তে যেমন আনমনা এক ভাবালুতা মনকে আঁকড়ে ধরেছে। তেমনই বিষন্নতার দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়েছে বইকি আমায়! শহুরে এই চোখে প্রাকৃতিক নৈসর্গকতা কতোটুকুই বা দেখেছি। আর এই অভিজ্ঞতাহীন মানসপটে লেখকের বর্ণনার কতোটুকুই বা কল্পনার তুলি দিয়ে মানসপটে আঁকতে পেরেছি জানি না।

শুধু প্রাকৃতিক বর্ণনাই নয়। কতো সম্প্রদায়, জাতিগোষ্ঠী, সেকেলে গ্রাম বাংলার কতো উৎসব, আচার-অনুষ্ঠান যে উঠে এসেছে এই বইয়ে। পাশাপাশি কতো রকমের কতো ধাঁচের স্বতন্ত্র চরিত্র যারা লেখকের মনে দাগ কেটেছিলেন বিশেষ কোনো ঘটনার মাধ্যমে বা বিশেষ কোনো মুহূর্তে। আর সেইসব চরিত্রগুলোর খন্ড খন্ড চিত্রায়ণ জুড়ে দিয়ে লেখকের জীবনের এই স্মৃতিচারণা।

এই বইয়ের বহুমাত্রিক দিকগুলোর সবগুলোর বর্ণনা সীমিত শব্দে করা সম্ভব নয়। লেখক এমন পরিব্রাজকের ভূমিকা পালন করেছেন যে পরিব্রাজক তার পরিভ্রমণকৃত পথকে ভোলে নি। প্রকৃতির অপার ঐশ্বর্য দুচোখে দেখেছেন। পথে সহসা কতো রকমের পথিকের সাথে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন। কতোরকমের ঘটনাবলীর মুখোমুখি হয়েছেন। সেসব ঘটনা যেমন বিষাদে মনকে ভারাক্রান্ত করে। তেমনই অনেক ঘটনা মনে পুলক আর বিস্ময় জাগায় বইকি! লেখকের সৈনিক জীবনের গল্প সেখানকার অভিজ্ঞতার সরস বর্ণনা পড়ার পর তার রেশ কাটেনি বেশকয়েকদিন। এই বইয়ে তিনি তার জীবনকাহিনী বাইশ বছর বয়স অব্দি সীমাবদ্ধ রেখেছেন। কতোরকমের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তার জীবনের অতটুকু অংশ। সেসব তিনি কিছু সময় কথকের মতো কিছু সময় মজলিশি আমেজে বর্ণনা করেছেন। আমার মতো গল্পখোরদের জন্য এই বইটি বেশ সুপাঠ্য হবে আশা করি।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews192 followers
October 31, 2020
দীর্ঘদিন ধরেই আমি বইটি খুঁজছিলাম। অনেক নাম শুনেছি বইটির, অনেক প্রশংসা। আর নামটাও একটু অন্যরকম, কেমন যেন মিষ্টি গন্ধমাখা। তাই খুব আগ্রহী হয়েছিলাম।
আমি আত্মজীবনী পড়তে ভালোবাসি, এটা আমার পছন্দের একটি জনরা। বেশ কিছু ভালো আত্মজীবনী পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে৷ তবুও, অক্ষয় মালবেরি আমার এখন অব্দি পড়া সেরা ৫টা আত্মজীবনীর একটি নিঃসন্দেহে।
তিন খণ্ডে বইটি লেখা হয়েছে। শৈশব-কৈশোর-যৌবন, এই মোটাদাগে তিন ভাগ৷
প্রতি পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে একই সাথে প্রাচীন কিন্তু চিরন্তন এক ধারণা, শব্দগুলো যেন মধু দিয়ে মাখা। কেবলই দৃশ্যের জন্ম দেয়-এমন সব বর্ণনা। পড়তে পড়তে আমিও হারিয়ে যাচ্ছিলাম, আমিই যেন লেখক হয়ে উঠেছিলাম।
লেখকের পরিচিত সকল মানুষ যেন আমারই কাছের মানুষ, তাঁর জীবনে বড় হয়ে উঠার পথে নানান অভিজ্ঞতা, গাঁয়ের জীবন-শহুরে জীবন-সৈনিক জীবন, যেন অপার বিস্ময়ের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষা করছিলো আ��ার জন্���। আমার মতো অসংখ্য পাঠকের জন্য৷
আমি মণীন্দ্র গুপ্তের অনুবাদ ছাড়া আর কিছু পড়িনি, তাঁর আর কোন লেখা পড়িনি, তাঁর জীবনের বিচিত্র যাপন সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিলো না। আর এটাই যেন আরো বেশি মুগ্ধ করছিলো আমাকে। আমি পরতে পরতে আবিষ্কার করছিলাম একজন মানুষকে, যিনি জীবনকে দেখেছেন এক নিস্পৃহ চোখে।
অন্যান্য অনেক আত্মজীবনীর মতো বইটি কেবল লেখকের আমিত্বে ভরা নয়। বরং প্রকৃতি-গাছপালা-নদী-পুকুর-গাঁয়ের সোঁদা মাটির ঘ্রাণ-কলকাতার ট্রামলাইন-সৈনিকের ব্যারাক সবই হয়ে উঠেছে এক একটি চরিত্র। লেখকের নির্লিপ্ত অবলোকনটাই তাই হয়ে উঠেছে বড্ড মিষ্টি, বড্ড দুঃখছোঁয়া সুখের আকর।
সৈনিকরা যে কেবল কাঠখোট্টাই নন, নানান ধরনের নির্দোষ আনন্দে ছেলেমানুষের মতো মেতে থাকতেন তাঁরা, এর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা পড়ে পুলকিত হয়েছি।
সেখানে কোন বিভেদ ছিলো না, ছিলো না ছোঁয়াছুঁয়ি। কয়েক লাইনে কেমন সুন্দর ছুঁয়ে গেলেন আমাদের দেশভাগ। বলে গেলেন আসলেই যে আমরা এক, তা যতই সীমারেখা দিয়ে ভাগ করা হোক না কেন। কত সাধারণ মানুষেরও যে বাংলার প্রতি কেমন টান, তা একটি মিষ্টি ঘটনায় উঠে এসেছে।
শেষে আনন্দবাজার পত্রিকার জবানেই বলি,

' প্রচলিত আত্মজীবনী নয়, উপন্যাস নয়, একজন দুঃখী-না সুখী-না মানুষের চিহ্নপত্র।'
Profile Image for Manzila.
166 reviews159 followers
January 9, 2024
৪.৫/৫
এই বইয়ের এতো সুন্দর সুন্দর রিভিউ আছে গুডরীডসে যে আর না লিখলেও চলে। শুধু তাই না, word of mouth এও সবচেয়ে বেশি রিকমেন্ডেশন মেলা বইগুলোর মধ্যে এই বইটা থাকবে। তাই শেষ পর্যন্ত যখন পড়েই ফেললাম মণীন্দ্র গুপ্তের আত্মজীবনী "অক্ষয় মালবেরি", দুকলম না লিখলে কেমন হয়!

বইটা তিনভাগে ভাগ করা। একদম কাঁথায় শোয়ানো ছেলেবেলা থেকে কৈশোরের শুরুর দিক পর্যন্ত প্রথম ভাগটা। মজার ব্যাপার হল, যেমনটা মনে হয় যেন জীবন কাহিনী বলেই জীবনের গল্প ধ্যাড়ধ্যাড়ে আবেগে বলে যাবে কেউ, এই বইটা একেবারেই সেরকম না। বেশির ভাগ পাতার জুড়েই বন ও প্রকৃতি আর গ্রামীণ জীবনের কী যে সুন্দর সব বর্ণনা! পরের পর্বে আছে সিলেটের দিকে লেখকের কিশোর থেকে প্রায় যুবক কালীন সময়ের গল্প। শেষভাগের আছে কলকাতা, আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের "রঙরুট"দের কথা। তাই বলা যায়, নানান স্বাদে, নানান আবেগে জড়িয়ে আছে এই আত্নজীবিনী - এক না সুখী, দুঃখী মানুষের উপখ্যান। তবে আত্নজীবনীর চেয়ে "Coming of Age" ঘরানাতে একে ফেললে মনে হয় ভালো হবে।

অত্যন্ত সুখপাঠ্য, বই ভালোবাসে এমন সব পড়ুয়ার জন্য অবশ্যপাঠ্য!
Profile Image for Jenia Juthi .
258 reviews64 followers
April 11, 2023
কোনো মানুষ সংসারে একা হয়ে যাওয়ার জন্য কোনো বয়স বা সময় কি আছে? কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই যারা একা হয়ে যায়, তারা সুখ-দুঃখ বলে ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পারে না! শুধু এতটুকু বুঝতে পারে, কোনো অজানা কারণে তারা একা। নিজেকেই নিজের ভার একা টেনে নিয়ে যেতে হয়, সুখ-দুঃখ বোঝার সময় কোথায়??


অক্ষয় মালবেরি উপন্যাস নয়, প্রচলিত আত্মজীবনীও নয়, একজন দুঃখী-না সুখী-না মানুষের চিহ্নপত্র। কাঁচা কঞ্চির কলমে বনের সবুজ কালিতে হোগলার পাতায় লেখা--উজ্জ্বল দুরন্ত দুঃখী ক্ষণমধুর অতীত যেন স্তব্ধতা থেকে এসে আবার স্তব্ধতায় ফিরে গেছে।
Profile Image for Amlan Hossain.
Author 1 book67 followers
December 7, 2018
কিছু কিছু বই চট করে পড়ে ফেলা যায়। কিছু বই পড়তে হয় তারিয়ে তারিয়ে, প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু একটু করে চেখে। অক্ষয় মালবেরি নিয়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখার সাধ্য আমার নেই। আমি বরং আগ্রহী পাঠকদের জন্য কিছু লাইন তুলে দেই

** মানুষী স্মৃতিই মানুষ। স্মৃতিই জটিলতা। মরণের পরে আমাদের নির্বাণ হয় না সে কেবল স্মৃতি আছে বলেই না! পুনর্জন্ম সবচেয়ে বড় ম্যাজিক- ধুয়ে মুছে সব পরিষ্কার করে দেয়।
**সেই বয়সে, আমি এতো স্পষ্ট করে বুঝি না, শুধু বোধের গোধুলিতে দ্বিতীয়ার চাঁদের ধূসর সোনার আবছামতো রেখায় কত লেখা পড়ে। মন সুখ আর বিষাদে দুভাগ হয়ে চির হয়ে যায়। অনুভূতির চাপে আমি জলের মধ্যে মাছের মতো স্থির হয়ে ডুবতে থাকি, আবার কখনো আকুবাঁকু করে উঠি-মহামৎসের মতো ঘাঁই মারতে চাি অনন্তে।
** মৃত্যুর পরে শ্মশানে বসে হয়তো দেখব শরীর ফিরছে তার অঙ্গারে, জলে, ধাতুতে, লবণে। আর তার সুক্ষ্ম বিদেহ আভা চলে যাচ্ছে আকাশে- আলো, মেঘ আর শান্তির দেশে
**সময় আমাদের নশ্বরদের জন্য তৈরি অদ্ভুত এক মায়া- দেখতে না দেখতে, স্বাদ নিতে না নিতে ফুরিয়ে যায়।
Profile Image for Anjuman  Layla Nawshin.
85 reviews144 followers
January 12, 2024
থাকে না, কোন বই পড়ার সময় খুব বেশী ভালোলাগার লাইনগুলো আমরা আন্ডারলাইন করি বা মার্ক করে রাখি। এই বইয়ের প্রতিটা লাইনই এমন মার্ক করে রাখার মত।
Profile Image for Arifur Rahman Nayeem.
205 reviews106 followers
April 10, 2025
আর সব আত্মজীবনীর মতো নয়। বেশ আলাদা। কী রকম আলাদা, তা অবশ্য পুরোপুরি বুঝিয়ে বলা শক্ত। তবে পড়লেই বোঝা যায়। সিলেটি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় কাটানো লেখকের কিশোরকালের কথা অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্ব আমার বেশি ভালো লেগেছে, নিজে সিলেটি বলেই শুধু নয়, ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে এই পর্বে বর্ণিত লেখকের ভাবনার সঙ্গে নিজের ভাবনা মিলে যাওয়াও অন্যতম কারণ। মাঝেমধ্যে এমন প্রশ্ন দেখা যায়, এতদিনের জন্য কোথাও যাচ্ছেন, সঙ্গে নিতে পারবেন একটি মাত্র বই, কোন বইটি হবে সে বই? এখন থেকে এই প্রশ্নে আমার তৎক্ষণাৎ উত্তর হবে, ‘অক্ষয় মালবেরি’।
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews135 followers
August 13, 2025
'অক্ষয় মালবেরি' জন্ম থেকে বাইশ বছর পর্যন্ত জীবনের লেখক মণীন্দ্র গুপ্তের আত্মজীবনী অথচ আয়ু পেয়েছিলেন দীর্ঘ ৯২ বছর। জন্ম ও শৈশব পিতৃভূমি বরিশালের গৈলা গ্রাম। কৈশোর কেটেছে মাতুলালয় আসামের শিলচরে। আর যৌবনের প্রারম্ভিক পদ কেটেছে লাহোরের সেনা ছাউনিতে।

২২ বছর পূর্ণ করে সৈনিক জীবন ছেড়ে কলকাতায় অনিশ্চিত যাত্রা। তারপর বাকি দীর্ঘ ৭০ বছরের কোন কথা অক্ষয় মালবেরিতে 'অক্ষয়' করতে চান নি। সেজন্য হয়তো বইটার শেষ কয়েক লাইনে লেখক যেন একটু কৈফিয়তের সুরে বলে গেছেন,

'যতদিন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলাম ততদিন অসীম মুগ্ধতা, বিস্ময় এবং অপরিণামদর্শিতা নিয়ে আমি অনন্য ছিলাম। বয়স্ক হবার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ অন্যান্যদের মতোই হয়ে গেছি। এখন আপনার আমার সবারই তো এক গল্প। অতএব অক্ষয় মালবেরির কাহিনী আমার বাইশ বছর বয়সে এসে শেষ হয়েছে। বাইশ বছরেও নিজেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলছি- এটা আদুরেপনা নয়। হয়তো অতীতের একটা সময়ে কিছু কিছু মানুষের ছেলেবেলাটা একটু বেশি সম্প্রসারিত ছিল।'

এ যেন মাটি থেকে বেড়ে ওঠা গোলাপের চারা, নতুন শাখা সবুজ, পেলব, নমনীয় কিন্তু আগা শক্ত হবার আগেই ছেঁটে দিয়েছেন। কিন্তু অসম্পূর্ণ সে চারা বিন্দুমাত্র অপুষ্ট নয়। পত্রে পল্লবে ফুলে ফুলে আকীর্ণ।
Profile Image for Monika Ghosh.
183 reviews37 followers
October 13, 2019
এত সুন্দর করে লেখা বই অনেক দিন পড়িনি। লেখকের মনের সৌন্দর্য বইয়ে ফুটে উঠেছে। লেখকের চোখেই উপলব্ধি করে মুগ্ধ হয়েছি এই বনবাদাড়ে ঘুরে বুনো ফল খাওয়া আর বুনো ফুলের গন্ধ নেয়া, সবুজের মাঝে সবুজ মন নিয়ে বেড়ে ওঠা। এত সুন্দর করে গ্রামবাংলার সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন প্রতি শব্দে, প্রতি বাক্য। অসাধারণ!
33 reviews3 followers
January 20, 2022
প্রকৃতি আর বই এর চেতনায় ডুবে গিয়ে, বই পড়তে পড়তে মণীন্দ্র গুপ্ত যেমন মাঝেমাঝে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখতেনঃ জগৎ।
আমিও তেমনি এই বইটির শেষ পৃষ্ঠাটুকু বন্ধ করে মুখ তুলে চারপাশে তাকিয়ে হতাশ হয়ে দেখলামঃ হায় হায়! জগৎ!

জানিনা এটা কী পড়লাম, কবিতা নাকি গদ্য! শেষ করে অভিভূত হয়ে আছি। পড়া শুরু করে, প্রথম বাক্য থেকেই নেশাগ্রস্থর মত আটকে গেছিলাম।

"শত-শরদ মানুষের আয়ু। কিন্তু দুঃখী-সুখী-ভ্রষ্টাচারী ততদিন বাঁচে না। মরনের আগে বোকা চোখে তাকিয়ে দেখেঃ সমস্তই অসম্পূর্ণ, তার রাকাশশী অসংলগ্ন বালি হয়ে উড়ে যায়"

আহা! এই ক'টা বাক্যই ঝরনার মত কলকল করে বয়ে গেল আমার ভেতরে! বহুদিন পর আবার ঝনঝন করে উঠলো আমার ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবেদনা!
"অক্ষয় মালবেরি" পদ্যের মত এক আত্বজীবনী।

মানুষের জীবনটাই বা কিসের মতন আসলে? কবিতার মতন নাকি কবিতাই জীবনের মতন?
এই যে দো-পেয়ে একটা প্রাণীর জীবন মানুষের, এই জীবনটা এত বেশি অর্থপূর্ণ কেন মনে হয়? অনুভূতির কাটাছেড়ায় আর বুদ্ধির দৌড়ে অন্য দো-চার পেয়ে প্রাণীর চেয়ে এগিয়ে থাকা বলেই তো?
তবুও আবার মাঝেমাঝেই, যখন তেতুল পাতার ফিনফিনে কাঁপনের মাঝখান দিয়ে নিশুত রাতে জোছনা বের করে দেয় তার হলদেটে মুখ, কিংবা মাথার ওপর নক্ষত্রপুঞ্জ, বিরাট ছায়াপথ জ্বলজ্বল করে সরু হয়ে মিলিয়ে যায় আরও আরও দূরে, বিশাল এক শূন্যতায়, তখন সেই অসীম শূন্যতার মুখোমুখি হয়ে বুকের ভেতর ওরকম বোকা বোকা, ওলটপালট আর অর্থহীনই বা কেন লাগে? নিজেকে অত ক্ষুদ্র আর বিশাল কেন যে লাগে! দ্বৈত অনুভূতি দুই পাশ থেকে গলা চেপে কেন ধরে?
ঘর ছেড়ে চলে যেতে সাধ হয়, আবার শুধু ঘরে ফিরবার টানেই জীবনও দিয়ে দিতে সংকল্প হয়।
আসলে জীবনটা তবে কী?

রৌদ্রজ্জ্বল দিনে পুকুরের টলমলে জলে শরীরকে চিৎ করে, চোখ মুদে নির্ভার ডুবেও ভেসে থাকার অনুভূতির মতন প্রাঞ্জল লেখনী! পড়তে পড়তে আবেশে বুজে আসে চোখ!
উপমার বাহারে রঙিন লাগে সকল শৈশবস্মৃতি।
নিজের পরমায়ুর কথা এত স্বচ্ছন্দ গভীরতায় বলে যাওয়া যায়?
নিজের প্রখর অনুভূতিশক্তিকে কি সাবলীলভাবে শব্দবন্দী করেছেন তিনি!





"পরিত্যক্ত থাকার কষ্ট এবং অসহায় ক্রোধ" এই দুটো বিষয়কে নিজের জীবনের সারসংকলন বলেছেন মণীন্দ্র গুপ্ত। অথচ সেই জীবনকেই কি চমৎকারভাবে অলংকৃত করে ধরেও রেখেছেন পৃষ্ঠায়-কালিতে।
অক্ষয় মালবেরি তার শৈশব থেকে শুরু হয়ে মাত্র বাইশ বছরের জীবনের আলেখ্য! অথচ যেন বটবৃক্ষের শেকড়ের মত অভিজ্ঞ ও পক্ক। এত অলংকারময় শব্দে অথচ সাদামাটা বর্ণনায় নিজের জীবনপটও এত অনুপুঙ্খ ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, তা তো এই ২৫৮ পাতার বইটি না পড়লে আমার জানাই হত না! আত্বজীবনীর প্রতি আগ্রহ নিয়ে দৃষ্টিপাতও করা হতো না!

এত ভালো একটা বই নিয়ে এত কম হৈ-চৈ কেন আমি ঠিক জানিনা। গুন মান সম্পন্ন জিনিস কম লোকে চেনে বলেই হয়ত বা।
তিন পর্বের বইটিতে শৈশব, কৈশোর আর যৌবন (২২ বছর অব্দি) এর গল্প।
গতানুগতিক আত্বজীবনী থেকে ভীষন বেয়াড়া আর গভীর জলের মত ঠান্ডা এক আত্বজীবনী এটি। তার শৈশব এবং যৌবনকালের বর্ণনা আমাকে বেশি মুগ্ধ করেছে। বিশেষত, শৈশবকাল।




তিনি যেমন অবহেলায় আর অভিমানে একটু একটু করে নীরবতা শিখেছেন, খুব কাঁচা বয়সেই, আমিও নীরবতা শিখে গেছিলাম, বিষাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল, তাই আজও সেসব নিয়ে বড্ড বিপদে পড়ে যাই!
তার মতন আমিও কষ্ট এড়াতে অসাড় থাকার অভ্যেস করতে করতে হয়ে গেছি মুখ থুবড়ে জলাধারের পাশে পড়ে থাকা পাথরের মতন। সেই পাথরে রোদ-জল-বায়ু সব কিছু ছুঁয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু হৃদয়কে আর বিদ্ধ করতে পারে না সহজেই!
খেয়ালী পথিক এসে পাথরে বসে জুড়িয়েও যায় দুদন্ড, কিন্তু পাথরকে সাথে নিয়ে যাবার মত শক্তি পথিকের নেই।
তাই সুখ দুখ কিছুই অত আর যুত করে উঠতে পারে না আমার সঙ্গে।

প্রকৃতি, বই আর ছবির ওপর মণীন্দ্র বাবুর অবিচ্ছেদ্য ভালোবাসা আর আগ্রহের সূত্রপাতের জায়গা গুলোতে আমার পড়ার গতি আরও বেড়ে চলছিল। এই তিন জিনিসে যার ভালোবাসা, তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা হয়।

এসব কারনেই হয়ত মণীন্দ্র গুপ্তের আত্বজীবনীটা এত ভালো লাগলো।
প্রকৃতি-বই-ছবি এই তিনটে না থাকলে আমিই বা আমি হয়ে উঠতাম কী করে?


আধশুকনো তুলির ডগায় একটুখানি রঙ নিয়ে একেবেকে কয়টা আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের জীবনের চারপাশের গল্প, অভিজ্ঞতার গল্প, জীবনের ঘূর্ণিপাকে আবর্তিত হয়েছেন যেসব মানুষের সাথে, তাদের সক্কলকে জ্যন্ত করে তুলেছেন। দশ মাস বয়সে মা কে হারাবার পর থেকে ফানুসের মত ভেসে ভেসে চলেছে তার জীবন। নানা জায়গায় বাধা পেয়ে, ভেসে গেছেন অন্যদিকে। যখন যেদিকে প্রবাহ তাকে নিয়ে গেছে, ভেসে গেছেন।
এদিকে সেদিকে ভাসতে ভাসতে ১৮ তে যোগ দিয়েছেন ফৌজে।
পঞ্চাশের মন্বন্তর দেখলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু কিছু ভয়াবহতা ও নিষ্ঠুরতা দেখলেন।
ফৌজদারিতে তার শিক্ষানবিশ সৈনিক জীবনের রোজকার ঘটনা, ট্রেনিং, চার দিক থেকে আসা মানুষের নানান মিশেলের বর্ণনায় মুখর ছিল তার যৌবনকাল।
কত মানুষ কত দিক থেকে এসে মিশে গেছে এক সাথে।
তুচ্ছ সাম্প্রদায়িকতা ও সংকীর্ণতা যে একটি বড়সড় অসুখ মাত্র তার মস্ত বড় উদাহরণ ভিন্ন জাতি-ধর্মে মিলমিশ হয়ে থাকা তার শিক্ষানবিশ সৈনিকজীবন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার খেয়ালী আচরনে ফৌজ ছেড়ে অনির্দিষ্ট জীবনে পাড়ি দিলেন। আর, স্বপ্নের মত এই লেখাটুকু তখনই হঠাৎ শেষ হয়ে গেল, তার বাইশ বছরে এসেই। বেশ হতাশ হয়ে বইটা বন্ধ করলেও একটা আবেশে ঝিম ধরে বসে রইলাম বেশ খানিকটা সময়।

তার জীবনের আলেখ্য আমার জীবনের খন্ড খন্ড কালপ্রবাহের ওপরও সূর্যরশ্মির মত আলোকপাত ফেলে গেল। সেই আলোকরশ্নিতে নিজের এই জীবনটাকেও নেড়ে-চেড়ে একবার ভিন্ন চোখে পরখ করে দেখার চেষ্টা করি।
আমার ভেতরের পরিযায়ী স্বত্বার দুমদাম কড়া নাড়তে থাকা আবারও টের পাই।
নিমজ্জিত হই তারই লিখে যাওয়া শব্দে- "ভিতরে একা, সুখী না, দুঃখীও না।"
Profile Image for Jannatul Firdous.
89 reviews178 followers
October 24, 2022
অক্ষয় মালবেরিকে বলা হয় আড়াইশ পাতার একটা কবিতার ব‌ই। আদতে এটি আত্নজীবনী। এটিতে একজন লেখক তার জন্ম,মা কে হারাবার পর একা একা বেড়ে ওঠা সর্বোপরি তার পুরো জীবনকে তুলে ধরেছেন কাব্যিকভাবে। লেখনী,বাচনভঙ্গি,সাবলীল বর্ণনা, গল্পে গল্পে একটা আস্ত জীবনকে নিজের অজান্তেই কখন পড়ে ফেলেছি নিজেই জানি না।

আমি প্রচুর রিভিউ লিখি। কিন্তু কিছু কিছু ব‌ই পড়ার পর এমন হয়, নিজেকে অযোগ্য লাগে। এই ব‌ইটাও তেমন। এর রিভিউ লেখা,এর প্রতি আমার ভালোলাগা,এটা পড়ার প্রতিটা মুহূর্ত আমার জন্য কতটা স্পেশ���ল ছিলো কিছুতেই আমি লিখে বোঝাতে পারবো না।‌


বৃষ্টির রাতে একাকী বসে অক্ষয় মালবেরি পড়ুন। লেখকের জগতে হারিয়ে যান,তার শব্দের মাধুর্যে মুগ্ধ হবেন। তাড়াহুড়ো করবেন না,আস্তে ধীরে বুঝে বুঝে পড়ে চলুন লেখকের আড়াইশ পাতার এই কবিতার ব‌ইটি।

♥️♥️
Displaying 1 - 30 of 144 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.