Jump to ratings and reviews
Rate this book

কারাগারের রোজনামচা

Rate this book
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তিনি তার দল আওয়ামী লীগকে ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী করেন। তার এই অর্জন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম প্রেক্ষাপট রচনা করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” ঐ সংগ্রামের জন্য তিনি জনগণকে “যা কিছু আছে তাই নিয়ে” প্ৰস্তুত থাকতে বলেন। তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। তারা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্ৰ জারি করেন এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন হলে শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি বীরের বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। বাঙালির অবিসম্বাদিত নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান জীবদ্দশায় কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী সদস্যের হাতে তিনি নিহত হন।

332 pages, Hardcover

Published March 17, 2017

88 people are currently reading
901 people want to read

About the author

Sheikh Mujibur Rahman

9 books116 followers
Sheikh Mujibur Rahman (Bengali: শেখ মুজিবুর রহমান Shekh Mujibur Rôhman‎), (March 17, 1920 – August 15, 1975) was a Bengali politician and statesman who was the founding leader of the People's Republic of Bangladesh. He headed the Awami League and served as the first President of Bangladesh, and later as Prime Minister. He is popularly referred to as Sheikh Mujib (shortened as Mujib or Mujibur, not Rahman), with the honorary title of Bangabandhu (বঙ্গবন্ধু Bôngobondhu, "Friend of Bengal"), and widely revered in Bangladesh as the founding father of the nation. He was assassinated by a group of junior army officers on August 15, 1975, along with most of his family, while acting as President of Bangladesh.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
188 (47%)
4 stars
139 (35%)
3 stars
45 (11%)
2 stars
7 (1%)
1 star
15 (3%)
Displaying 1 - 30 of 37 reviews
93 reviews18 followers
March 23, 2017
কারাগারের রোজনামচা-বুক মিভিউঃ

অনেকে আজ হাতে মাইক পেলেই বঙ্গবন্ধুকে দেবতার আসনে বসান। অথচ বঙ্গবন্ধু একজন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন। তারও সংসার ছিল-রাসেল তার গলায় ঝুলে পড়ত। ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধু একদিনে তৈরি হন নি। জীবনের অনেকসময় তিনি কাটিয়েছেন জেলে জেলে। থালা বাটি কম্বল যার জেল খানার সম্বল ছিল।
ভূমিকা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বইতে আছে জেলখানা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা, যার অনেকই হয়তো এখন বদলে গিয়েছে। আওয়ামী নেতাদের জেলের দিনগুলি, ছয়দফার জন্য তাদের ত্যাগ, তার পাশের পাগলা গারদ সেলের সুখ দুঃখ। তার একাকীত্বের সঙ্গী হলুদ পাখি, মুরগী গুলো, তার যত্নের বাগান। সযত্নে বলেছেন কাকের বাসার বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের কথা-হেহে।
“অসমাপ্ত আত্মজীবনী বাঙ্গালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের পথপ্রদর্শক, ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের সোপানগুলি যে কত বন্ধুর পথ অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয়েছে এর কিছুটা এই কারাগারের রোজনামচা বইতে পাওয়া যাবে”
সাহিত্যিক বিচারে অসমাপ্ত জীবনী হয়তো অনেক ভালো মনে হবে। সেখানে আছে হাসি কান্না, মজার নানা কাহিনী। তবে ছয় দফার মত ঐতিহাসিক ভিত্তিতে কারাগারের রোজনামচা সংগ্রহে রাখার মত।
জেলখানার আত্মিক বিবরণ আছে বইটিতে। মনের মধ্যে ঢাকা জেলখানা ঘুরে আসার ইচ্ছা জাগতে পারে এই বইটি পড়লে। যে কল্পনার সাথে মিলিয়ে নেই-আরে ওই তো ওইখানে বঙ্গবন্ধু থাকতেন, ঐখানে বসতো হলুদ পাখি, তার সামনের বাগান। বঙ্গবন্ধু বসে বসে খিচুড়ি রান্না করছেন-পরে মুরগীর মাংস দিয়ে বিলিয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে। অথচ তিনিও বন্দী। অদূরে হাসপাতালের দিকে তাকিয়ে তিনি নজর বিনিময় করতেন। জেলখানা কর্তৃপক্ষ কি সেই সুযোগ করে দিবে? জায়গা-মত বঙ্গবন্ধু এর উক্তি গুলো একে দিয়ে খুব সুন্দর ঐতিহাসিক মোহ তৈরি করবার সুযোগ কিন্তু আছে। কারাগারকে আপনি তখন দেখবেন অন্য চোখে। সবার আত্মত্যাগেই যে আজকের এই স্বাধীনতা-তাদের কথা ভাববার সুযোগ মিলবে তখন।
Profile Image for Mahbuba Sinthia.
133 reviews97 followers
April 15, 2021
শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতির মানুষ, তিনি লেখক নন। তাই স্বভাবতই তাঁর লেখনী খুব সুখপাঠ্য নয়। কিন্তু তা বলে এই বইয়ের মূল্য কমবে না একটুও।

ছয় দফা দাবি থেকে শুরু করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পর্যন্ত কারাগারে থাকা দিনগুলো তিনি টুকে রেখেছেন ডায়েরিতে। এখানে সবিস্তারে তিনি বর্ণনা করেছেন কারাগারের হালহকিকত, কয়েদি থেকে শুরু করে জেলার পর্যন্ত সবার। তবে আমার সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে তাঁর ও তাঁর সহযোদ্ধাদের ওপর তৎকালীন সরকারের নির্যাতন। মাসের পর মাস একজন মানুষকে একা আটকে রাখা কোন আইনে আছে, তা আমার জানা নেই।

এই বইয়ের আরেকটি দিক আমাকে মুগ্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু কত সুন্দর করে তাঁর পোষা মুরগির বর্ণনা করেছেন, কত আশা নিয়ে প্রতিদিন অপেক্ষা করেছেন দুটো হলদে পাখির জন্যে। এই ভুক্তিগুলো তাঁকে আরও বেশি মানবিক করে তুলেছে।
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
July 23, 2023
থালা বাটি কম্বল,
জেলখানার সম্বল।

বঙ্গবন্ধু ও জেলখানা দুইটি শব্দ যেন সমান্তরালে চলে গিয়েছে। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত বহুবার জেল খাটতে হয়েছে তাঁকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের লড়াইয়ে কখনো মাথানিচু করেন নি। মাথা পেতে নিয়েছেন স্বৈরশাসকদের জুলুম নির্যাতন; আবার সময়মতো সেই জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেছেন। জেলে থাকাকালীন বই পড়া, বাগান করা আর লেখালেখি ছাড়া কোনো কাজ ছিল না বঙ্গবন্ধুর। বসে বসে তিনি তাঁর ভাবনাগুলোকে লিখতেন। ষাটের দশকে জেলে থাকাকালীন দুইটি খাতার লেখা দিয়েই বইটিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভূমিকায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খাতাগুলো উদ্ধার ও প্রকাশের ঝড়-ঝঞ্ঝার বিবরণ দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাহিত্যিক নন, তাই লেখাগুলো সুখপাঠ্য নয়, এমন চিন্তা আসা স্বাভাবিক। তবে এই লেখাগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য মাপা যায় না।

বইটির প্র‍থম কিছু অংশ গদ্যাকারে লেখা। বাকিটুকু দিনলিপি হিসেবে লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই গদ্যাকারে লেখাটুকুই বেশি আকর্ষণীয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে যেন আরেকটি দেশ। এখানে টাকা হলে সবকিছুই পাওয়া যায় এবং সরবরাহ করে স্বয়ং পুলিশেরা। তবে একটি জিনিস পাওয়া যায় না, তা হলো মেয়ে মানুষ। কারাগারের মধ্যে প্রচলিত কিছু ভাষা রয়েছে, যা নতুন কয়েদিদের বোধগম্য হয় না। তেমনই দুইটি শব্দ 'কেসটাকল' ও 'সিকম্যান'; জেলে কিছুদিন থাকলেই বিভিন্ন শব্দের অর্থ জানা যায়। জেলের ভেতরের কাজকর্ম কয়েদিরাই করে। তাদের কাজ অনুসারে ভাগ করে দেওয়া আছে। যে কাজে যে নিযুক্ত তাকে 'দফা' বলা হয় এবং বিভিন্নরকম দফা রয়েছে জেলের ভেতরে। এই দফার মধ্যে একটি হলো পাগল দফা। এই দফার কয়েদিরা মানসিকভাবে অসুস্থ।

জেলখানায় রাজনৈতিক বন্দি হওয়ায় বঙ্গবন্ধু আলাদারকম সম্মান পেতেন এবং একা থাকতেন। একা থাকতে থাকতে তাঁকে অনেক সময় একাকীত্বে ঘিরে ধরতো। অন্যান্য কয়েদিদের সাথে কথা বলার অনুমতি ছিল না। পাহারাদাররা বঙ্গবন্ধুর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকলেও শাস্তির ভয়ে কেউ বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলতো না। জেলের মধ্যে প্রায়ই বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় সহকর্মীদের আসতো। তাদের সাথেও বঙ্গবন্ধু যোগাযোগ করতে পারতেন না। অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখানো হয় এবং গুরুতর হলে জেল হাসপাতালেই বিছানা নেয় কয়েদিরা। সেখানেও ডাক্তারের অপ্রতুল সংখ্যার ব্যাপারটা দৃষ্টিগোচর করেছেন বঙ্গবন্ধু।

জেলখানায় বিচিত্র রকমের মানুষ আসে। কেউ চুরির আসামি, কেউ খুনের আবার কেউ বা ধর্ষণের। সবার পরিচয় একটাই, তারা আসামি। জেলখানায় লুদু নামে এক সিনিয়র কয়েদির সাথে পরিচয় হয়। একাধিক চুরির মামলায় দীর্ঘদিন জেল হয় তার। এই লুদুর থেকেই গলার মধ্যে খোকড় করার বিষয়টি জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু। সাধারণ যারা পাকা চোর, তারা যখন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তখন টাকা দিয়ে ছুটে যেতে চায়। অনেকসময় সেটা না হলে জেলেই যেতে হয় তাদের। জেলের মধ্যে ত টাকা নেওয়ার আইন নেই তাই গলার মধ্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় একটি গর্ত তৈরি করে তারা। অনেকে ডাক্তারের সাহায্য নিয়েও গর্ত করে এবং সেখানে টাকা রেখে দেয়। যাতে করে জেলের মধ্যে টাকার বিনিময়ে সুবিধা লাভ করতে পারে।

জেলের মধ্যে কয়েদিদের একা কিংবা কয়েকজনকে একই কামরায় রাখা হয়। কখনো দুইজন কয়েদি একই কামরায় থাকে না। থাকলে তাদের মধ্যে ব্যভিচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং হয়ও। অনেক বয়স্ক কয়েদি কিশোর আসামিদের 'ছোকরা' হিসেবে রাখে এবং এই ছোকরা রাখা নিয়েও মারামারি হয় জেলের মধ্যে।

বিনা বিচারেই আটক হয়েছেন বঙ্গবন্ধু বেশিরভাগ সময়। সবসময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন জনগণের মুক্তি লাভের জন্য। বঙ্গবন্ধু একজন প্রকৃত পাঠক ছিলেন, তা ডায়েরিগুলোতে উল্লেখ পাওয়া যায়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম সারির নেতা। ভাসানীর সাথে একসময় বঙ্গবন্ধুর মতবিরোধ দেখা দেয় এবং সেই মতবিরোধ ও ভাসানী সাহেবের কর্মকান্ডের সমালোচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে সকল কয়েদিই সমীহ করতো এবং ভাবতো বঙ্গবন্ধুর খালাস দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাই অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করতো যেন তাদের শাস্তি কমানো হয়। বঙ্গবন্ধু তখন নিজের অবস্থা বর্ননা করে তাদের স্বান্তনা দিতেন। যতটা পারতেন কয়েদিদের সুবিধার ব্যাপারে জেলার সাহেবকে অবগত করতেন। জেলের মধ্যে থেকেও মানুষের সুবিধা অসুবিধার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বরাবরই তাঁর পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন। স্ত্রী পুত্ররা যখন দেখা করতে আসতো তিনি অনেক খুশি হতেন। অপেক্ষায় থাকতেন কবে আসবে তাঁরা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে গিয়ে জেলে যেতে হয়েছে বারবার। বইটি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সংগ্রামের পথকে পাঠকের নিকট উন্মুক্ত করে। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Salawat Ullah.
29 reviews32 followers
June 23, 2020
অসমাপ্ত আত্মজীবনী শেষ করে একটা অতৃপ্তি ছিল যে বঙ্গবন্ধু জীবনীটা শেষ করতে পারেননি। এই বইটা পড়ে অতৃপ্তি কিছুটা ঘুচেছে।

বইয়ের ভুমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাহিনা অত্যন্ত চমৎকার এবং প্রাঞ্জল ভাষায়। আর চমৎকার নামটি রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা।

বইয়ের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু জেলখানার নানা বিষয়ের বর্ননা দিয়েছেন। এর মধ্যে সমকামীতা থেকে ছোকরাবাজীর কথাও বাদ যায়নি।
এরপরে রয়েছে তার দুই পর্যায়ের ডায়েরি ; প্রথমে ২জুন,১৯৬৬ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬; দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ জানুয়ারি,১৯৬৭ থেকে ৩১ মে,১৯৬৭ পর্যন্ত। এর মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হতে পারি সাথে ততকালীন পাকিস্তানের অস্থির রাজনীতি নিয়ে তার ভাবনা এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা অজানা নানা তথ্য পাওয়া যায়।
আমরা সবাই জানি যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সাতটি ধাপে বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনের ফলাফল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তবে এগুলোর মধ্যে ৬৬'র ৬ দফা ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং টার্নিং পয়েন্ট। ছয় দফার প্রচারে বিভিন্ন যায়গায় বক্তৃতা করার পর পরই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ওই সময়েই তিনি জেলে বসে এই লেখা লিখেন। অধিকাংশ লেখাই ঢাকা জেলে বসে লেখা। শেষের দিকে কিছু লেখা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে কুর্মিটোলা সেনানিবাসের অফিসার মেসের একটি কক্ষে আটক থাকাকালীন।

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন তা তার লেখা থেকে বুঝা যায়। পাকিস্তানের রাজনীতি সম্পর্কে তিনি যে যে ভবিষ্যতবাণী করেছেন তার প্রত্যেকটি সত্য হয়েছে।

বইয়ের শেষে বঙ্গবন্ধুর কিছু দুর্লভ ছবি এবং ৬ দফার সমর্থনে বঙ্গবন্ধুর লেখা আমাদের বাচাঁর দাবী ছয় দফা যোগ করা হয়েছে যা পাঠকের জন্য অতিরিক্ত পাওয়না।
Profile Image for Mosharaf Hossain.
128 reviews99 followers
April 30, 2017
"৮ই ফেব্রুয়ারী ২ বৎসরের ছেলেটা এসে বলে, "আব্বা বালি চলো"। কি উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম ওতো বোঝে না আমি কারাবন্দি।... দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলেমেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু তাসেল এখনও বুঝতে শিখে নাই।"

ঠিক এভাবেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর ডায়েরির সংকলন কারাগারের রোজনামাচা। একটার পর একটা লাইন যখন মগজে গেঁথে যাচ্ছিল, নিজেকে আবিষ্কার করছিলাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সেই ছোট্ট কামরায়। চোখের সামনে ভেসে উঠছিল তখনকার দিনগুলো। মুখোমুখি হচ্ছিলাম একটা জাতির বেড়ে উঠার সংগ্রামী দিনগুলির আর জীবনের অর্ধেকটা সময় বন্দী হয়ে থাকার একজন নেতার।

আজকে যখন কথায় কথায় মুজিবের সৈনিক দাবি করা মানুষগুলো তাকে বসায় দেবতার আসনে। অথচ শেখ মুজিব ছিল একজন রক্ত মাংসে গড়া সাধারণ জনগনের নেতা। ১৯৬৬-৬৮ সালে সেই দিনগুলোতে লেখা তাঁর প্রতিটা বাক্যে বারবার উঠে এসেছে এইদেশ, আর বঞ্চিত মানুষগুলোর কথা। পাঠক আবিষ্কার করবে, বঙ্গবন্ধুকে একজন পিতা হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে, একজন বন্ধু হিসেবে আর সবথেকে বড় কথা একজন নেতা হিসেবে, যিনি জন্ম নিয়েছেন সংগ্রাম করতে করতে।

অসমাপ্ত আত্নজীবনি থেকে বইটির অন্যরকম স্বাদ। পুরো বই জুড়েই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বন্দীজীবনের গল্প। সেখানেই বসেই তিনি লিখেছেন তার ভাবনাগুলোকে। বলেছেন তাঁর একাকীত্বের গল্প। তিনিও মাঝেমধ্যেই তীব্র ভয় পেয়েছেন, নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, "আর কত অত্যাচারিত হব আমি? আমি হাল ছেড়ে দিব?"।

বিরোধী আদর্শকে দমন নিয়ে শেখ মুজিব বলেন, "মতের বা পথের মিল না হতে পারে,তার জন্য ষড়যন্ত্র করে বিরুদ্ধ দলের বা মতের লোককে হত্যা করতে হবে এ বড় ভয়াবহ রাস্তা । এ পাপের ফল অনেককেই ভোগ করতে হয়েছে" (২ জুন ১৯৬৬)

নিজের কামরায় বসেই শেখ মুজিব দেখছিলেন তাঁর দলের কর্মীদের একের পর এক জেলে ঢুকানো হচ্ছে। তখন তিনি বলেন, "আরও আটজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বিভিন্ন জায়গায় । দমননীতি সমানে চালাইয়া যাচ্ছে সরকার।নির্য়াতনের মধ্য দিযে গণদাবী দাবাইয়া দেওয়া যায় না । গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক পথেই মোকাবিলা করা উচিত।" (৫ জুন ১৯৬৬)

শেখ মুজিবকে পুরোটা সময় জুড়েই রাখা হয়েছিল একদম বিচ্ছিন করে আলাদা কক্ষে, একাকীত্বের যন্ত্রনায় তিনি বারবার ভেঙ্গে পড়েন। অসহায়ের মত তিনি লেখন, "আমি একা থাকি, আমার সাথে কাহাকেও মিশতে দেয়া হয় না । একাকী সময় কাটানো যে কত কষ্টকর তাহা যাহারা ভুক্তভোগী নন বুঝতে পারবেন না । ……ফুলের বাগানটিকে নতুন করে সাজাইয়া গোছাইয়া করতে শুরু করেছি । বেশ সুন্দর হয়েছে । আজকাল সকলেই প্রশংসা করে । নতুন জীবন পেয়েছে ফুলের গাছগুলি (৬ জুন ১৯৬৬)।

বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় প্রায় উঠে এসেছিল গনমাধ্যম আর সাংবাদিকদের নির্যাতন। তাঁর থেকে কয়েক সেল দূরে রাখা হয়েছিল ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া। যার গ্রেফতার তাকে খুবই আহত করে। বাক স্বাধীনতার পথ বন্ধ করতে পাকিস্তান সরকারের করা তথ্য আইনের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, "খবরের কাগজ এসে গেল- দেখে আমি শিহরিয়া উঠলাম। এদেশ থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ চিরদিনের জন্য এরা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে! জাতীয় পরিষদে, 'সরকারী গোপন তথ্য আইন সংশোধনী বিল' আনা হয়েছে।" (৪ জুন ১৯৬৬)

বইটি শেষ করে আমি আবিষ্কার করি সৌম্যদর্শন বিশাল উচ্চতার মানুষটির এক ভিন্ন রূপকে। কীভাবে পারেন একজন নেতা এতটা ত্যাগ স্বীকার করতে? সবথেকে বড় কথা বঙ্গবন্ধুর সেইদিনের আশংকাগুলোর সাথে আজকের বাংলাদেশের অনেক মিল।

'অসমাপ্ত জীবনীতে' থেকে এটা বেশ আলাদা। এখানে রয়েছে জেলখানার এক আত্নিক বর্ণনা। জীবন আসলে কেমন, কতটা কঠিন জেলখানায় গেলে বোঝা যায়। মনের মধ্যে হয়ত ইচ্ছে জাগবে একবার ঘুরে আসি 'দুনিয়ার জাহান্নাম' থেকে।

বঙ্গবন্ধুকে দেখবেন খিচুরি রান্না করতে, আর খিচুরির মন মত স্বাদ হওয়ায় নিজের উপর রাগ করতে। তিনি অপেক্ষা করতে ছোট্ট একটা হলুদ পাখির জন্য, নিজের একাকীত্ব দূর করার জন্য মুরগি পুষতেন। আর সব থেকে বড় প্রশ্ন জাগবে বই শেষে, "আদৌ কি এই বাঙলায় এমন নেতার জন্ম হবে?"
Profile Image for Payel Nusrat.
89 reviews16 followers
April 23, 2021
কারাগারের রোজনামচা-শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধু তার ৫৫ বছরের জীবনের ৪৬৮২ দিনই কাটিয়েছেন জেলে,গ্রেফতার হয়েছেন ২১ বার।
এই বইটিতে অবশ্য পুরো ৪৬৮২ দিনের রোজনামচা নেই।বেশিরভাগটা জুড়ে ৬-দফা আন্দোলন পরবর্তী জেলজীবনের কথাই আছে।বইয়ের শুরুতে আছে Jail-slang বা সাধারণ জিনিসকে জেলে কী নামে ডাকা হয় তার বর্ণনা।
রোজনামচা বা ডায়েরী লেখা শুরু হয়েছে ২ জুন ১৯৬৬ থেকে।এই অংশে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন-"তবে রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়।সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়।বুকে আর মুখে আলাদা না হওয়াই উচিত।"
অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে একটা ব্যাপার দেখা যায়,যারা বঙ্গবন্ধুর বিরোধী তারা যদি তার সামনে এসে বলেন সেটা,উনি সেটাকে শ্রদ্ধা করেন,কিন্তু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ও ছলছাতুরী করা মানুষ নিজের দলের হলেও অপছন্দ করেন।
সরকার থেকে নির্দেশ তাকে solitary confinement এ রাখতে হবে,কেউ যদি যেচে কথা বলতে যায় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।মোটকথা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে একাকীত্বের যন্ত্রণা দিয়ে তার স্পৃহা ভেঙে দেয়াটাই ছিলো মূল লক্ষ্য।ডায়েরী জুড়ে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর নিজেকে সুস্থ রাখা ও স্পৃহা অটুট রাখার লড়াই।দিনের বেলা পত্রিকা পড়ে,বাগান করে সময় কাটান,সন্ধ্যার পরেই রুটিন করে বই পড়া প্রতিদিন,রাতে ঘুমাতে পারেন না কারণ তার সেলের কাছেই পাগল কয়েদিদের সেল,সারারাত তারা তারস্বরে চিৎকার করে।তার পড়া বইগুলোর মধ্যে শহীদুল্লাহ কায়সারের "সংশপ্তক" ও এমিল জোলার Theresa Raquin এর কথা উল্লেখ করেছেন।একাকী জেল জীবনে জেলে বড় হওয়া একটা মুরগী ও গাছে প্রতিদিন এসে বসা দুটি পাখি তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।নিজের ভাগ্নে শেখ মণি একই জেলে আছে,কিন্তু তার সাথেও দেখা করার অনুমতি নেই।কিছুদিন পরপর স্ত্রী আর ৫ সন্তান এসে দেখা করে যায়,ছোট রাসেলের ধারণা জেলটা তার "বাবার বাড়ি" আর যেখানে সে থাকে সেটা তার মায়ের বাড়ি।বেগম সাহেবা দেখা করতে আসলে প্রচুর খাবার নিয়ে আসেন,সেখান থেকে খাবার বাঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু আবার তা জেলের অন্য কয়েদীদের মধ্যে বিলিয়ে দেন।
এদিকে যত দিন আগাচ্ছে আওয়ামী লীগের সকল কর্মীকে জেলে পোড়া হচ্ছে।এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো পত্রিকা লিখলে তাদের সাংবাদিককে তো জেলে দিচ্ছেই সাথে সেই পত্রিকা ছাপানোর প্রেসগুলোকেও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।তাই যত ডায়েরী এগোতে থাকে জেলের ভেতর থেকেই সরকারের উপর জমা হওয়া ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে।৮ জুলাইয়ে তিনি লিখেছেন-"মনকে শক্ত করতে আমার কিছু সময় লাগল।ভাবলাম সকল সময় ক্ষমা করা উচিত না।ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ,কিন্তু জালেমকে ক্ষমা করা দুর্বলতারই লক্ষণ।"আবার ২৩ জুলাই লিখেছেন-"নীচতার সাথে যুদ্ধ করতে হলে নীচতা দিয়েই করতে হয়,তাহা যখন পারব না তখন নীরবে খোদার ওপর নির্ভর করেই জেল খাটতে হবে।"

খাতার এই অংশটুকু আগস্ট মাসে শেষ হয়।পরের অংশ শুরু হয় ১ জানুয়ারি ১৯৬৭ থেকে।জেলের ভেতর নতুন বছরের সূচনা,জেলের ভেতরেই ঈদ।কয়েক জায়গায় দেখা যায় তিনি খোন্দকার মোশতাকের জেল হয়েছে সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন।আহা তখন যদি জানতেন এই বন্ধুরূপী সাপ একদিন বিষধর ছোবল মারবেন!

শেষ অংশ হলো ১৯৬৮ সালের জানুয়ারী মাসের।৬ দফার মামলা থেকে মুক্তি দেয়া হয় তাকে কিন্তু জেলগেট থেকেই আবার আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে আর্মিদের রিমান্ডে নেয়া হয়।সেখানে দেখা যায় দীর্ঘদিন পাকিদের সাথে তারও রুটি খেতে হয়,একটু ভাতের জন্য হাহাকার,একটু বাংলায় কথা বলার জন্য হাহাকার কারণ আশেপাশে কোনো বাঙ্গালীকে ঘেষতে দেয়া হয়না।এক জায়গায় লিখেছেন-"এখানে থাকবার সুযোগ পেয়ে দেখলাম বাঙালিদের তারা ব্যবহার করতে প্রস্তুত,কিন্তু বিশ্বাস করতে রাজি নয়।আর বিশ্বাস করেও না।সকলকেই সন্দেহ করে।তাদের ধারণা প্রায় সকলেই নাকি আমার ভক্ত।মনে মনে সকলেই নাকি আলাদা হতে চায়।পূর্ব বাংলায় বাঙালির মুখ দেখতে পারি নাই কয়েকমাস এ কথা কি কেহ বিশ্বাস করবে?"
Profile Image for Raihan Atahar.
120 reviews26 followers
October 19, 2017
পড়ে ফেললাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ "কারাগারের রোজনামচা"। বইটির বিশেষত্ব হল- এর নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং ভূমিকা লিখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বইটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে, যার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জেলে কেটেছে। এমনও হয়েছে যে এক মামলায় জামিন পেয়ে বের হয়ে আসার পথে পুনরায় জেলগেটে অন্য আরেক মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার (যাকে বঙ্গবন্ধু 'রেণু' বলে ডাকতেন) দূরদর্শিতায় বঙ্গবন্ধু নিজের কারাজীবন নিয়ে লেখা শুরু করেন। পরবর্তীতে এই লেখাগুলো অনেক চেষ্টায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয় এবং সেগুলোই হয়ে যায় ইতিহাসের এক অনন্য দলিল।

বইটি মূলত ঐ খাতাগুলোরই মুদ্রিত সংস্করণ। বঙ্গবন্ধু বইটিতে জেলের খুঁটিনাটি সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। অধিকাংশ সময়ে তাঁকে 'solitary confinement' অর্থাৎ একাকী বন্দী জীবনযাপন করতে হয়েছে। শারীরিকভাবে দূর্বল হয়েছেন, কিন্তু মনের শক্তিকে পুঁজি করে বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।

এসব কথাই উঠে এসেছে বইটিতে। বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা দেখার দুর্লভ সুযোগ আছে বইটিতে। এছাড়া বইটির শেষে ১৯৫৫-১৯৭৫ সালব্যাপী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী, টীকা অংশে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের দুর্লভ কিছু ছবি এবং ৬ দফার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে; যা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চমৎকার ধারণা পাওয়া যায়।

একটি অনুরোধ করে লেখাটি শেষ করি। আমাদের দেশে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তির লেখা পড়লেই ধরে নেয়া হয় পাঠক ঐ রাজনৈতিক দল সমর্থন করে, যেটা ভুল ধারণা। সব মতবাদের সবার বই পড়া উচিত। এক পক্ষের বই পড়লে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সবাইকে অনুরোধ করবো, সব মতবাদের সবার বই পড়ে সিদ্ধান্ত নিন।

বি.দ্রঃ "কারাগারের রোজনামচা" নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার নেই। তারপরেও নিজের অনুভূতি জানানোর চেষ্টা করলাম। যে কোন সমালোচনা গ্রহণযোগ্য। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ :)
Profile Image for Ummay Sabah Tabassoom Shuddhota.
25 reviews
December 15, 2020


কারাগারের রোজনামচার লেখক আমাদের আজকের বাংলাদেশের রূপকার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বইয়ের প্রচ্ছেদ অত্যন্ত সাবলীল ও সুন্দর ভাষায় লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বইয়ের নামকরণ করেছেন আরেক কন্যা শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলেই মাথায় মনে কল্পনায় ভেসে উঠে একজন নির্ভিক নেতার প্রতিচ্ছ্ববি কিন্তু এর বাহিরেও তাঁর নিজেস্ব একটা জীবন ছিল,পরিবার ছিল,ভালো লাগা ভালোবাসার জায়গা ছিল। আজকের বঙ্গবন্ধু তিনি রাতারাতি হন নি। ৭ই মার্চের ভাষণ, ৬ দফা আর আজকের বাংলাদেশও শুধু এক মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে হয় নি। এর পেছনে ডানে বাঁয়ে আরও অনেক খন্ড কাহিনী আছে আরও অনেক মন খারাপ হওয়া কথা আছে। বঙ্গবন্ধু যে কিনা আমাদের জাতির পিতা তিনিও আমাদের মতোই রক্তে মাংসে গড়া মানুষই ছিলেন। কোনো দেবতা কিংবা আধাত্মিক শক্তির অধিকারী ছিলেন না। তিনিও ���িন রাত জেলে থেকে তার পরিবার নিয়েও ভাবেছেন । নিজের মা অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও তার কাছে জেতে না পারার কষ্ট ব্যক্ত করেছেন । ছোট্ট রেহানার তার সাথে জেলে থাকার আকাক্ষা ব্যক্ত করেছেন । ব্যক্ত করেছেন তার পরিবারের সাথে আর কিছু সময় না থাকতে পারার কষ্ট । আরও বলেছেন তার স্ত্রী আমাদের বঙ্গমাতার নিরলস বিভিন্ন দূরদর্শী পদক্ষেপের কথা।

যা বলছিলাম আজকের বাংলাদেশ এক দিনে হয় নি। এই বাংলাদেশের রূপরেখা আঁকতে গড়তে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছে বারবার। আর তার জেল জীবনের ছোট খাট ঘটনা থেকে শুরু করে তৎকালীন দেশে চলা আরাজকতা অনিয়ম দুর্নিতী কুটনিতী সহ যাবতীয় সকল ভালো মন্দ বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সহজ ভাষায়। এমনকি তুলে ধরেছেন জেলের সমকামীতা ছোকরাবাজিসহ ধর্ষণের মতো নিম্ন গর্হিত বিষয়ও । এরপরে রয়েছে তার দুই পর্যায়ের ডায়েরি ; প্রথমে ২জুন,১৯৬৬ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬; দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ জানুয়ারি,১৯৬৭ থেকে ৩১ মে,১৯৬৭ পর্যন্ত। আরও তুলে ধরেছেন জেল খানার বিভিন্ন সেলের বিভিন্ন কয়েদির বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট। তাদের আবার মজার মজার নামও আছে। রাইটার দফা, জলভরি দফা, ঝাড়ু দফা, বন্দুক দফা, পাগল দফা, শয়তানের কল ইত্যাদি। জেলের খাবার খেতে পারতেন না বলে নিজে রেধে অন্য কয়েদিদের খাবার বিলিয়ে দিতেন তিনি অথচ তিনি নিজেও কয়েদি । তার হলুদ এক জোড়া পাখির সাথে ভীষণ ভাব হয়েছিল আবার তাদের না আসাতে তার মনও খারাপ হতো। তার একটা পালিত মুরগি ছিল বাগান ছিল। সেই বাগানের ছোট খাট বর্ণনাও তিনি দিয়েছেন । আবার আওয়ামীলীগের কোনো কর্মী জেলে আসলে তাকে নিয়ে তার অস্থিরতা তার প্রত্যেক কথায় ছিল সুস্পষ্ট।

এই বই পড়ার পর থেকে আমার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যাইতে মন চাচ্ছে । ওহ আরেকটা কথা, এই বইটা পড়ার অনুরোধ রইলো। মিলিয়ে নিয়েন নিজ দায়িত্বে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান আর আজকের বাংলাদেশ ।
Profile Image for Afia Jahin Mow.
162 reviews48 followers
February 6, 2022
শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি বই-ই মুগ্ধ হয়ে শেষ করলাম। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' শেষ করে যেই অতৃপ্তি কাজ করছিল, এ বইটি পড়ার পর তা অনেকাংশে কেটে গেছে। বেশ কিছু জায়গায় পাকিস্তান সরকারের উপর তাঁর ক্ষোভের কারণগুলার সাথে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তুলনা করে অবাক হয়েছি বৈকি!
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
December 28, 2020
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ বাঙালির বাঁচার দাবি' ছয় দফা ঘোষণা করার পরে তাঁর উপর তৎকালীন পাকিস্তানি সরকারের ক্রোধ বেড়ে যায় বহুগুণ। পাকিস্তান ও ইসলামের শত্রু, ভারতের দালাল, বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রভৃতি অপবাদ দিয়ে অচিরেই তাঁকে ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জেলে ঢোকায় সরকার। উদ্দেশ্য একটাই, জেলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তাঁকে ও নেতাকর্মীদেরকে ছয় দফা দাবি থেকে সরানো। সেজন্য টানা দেড় বছর ‘ সলিটারি কনফাইনমেন্ট'-এ রাখা হয় তাঁকে, আর দেড় বছর পর জেল থেকে বের হওয়ার পরেই জেলগেট থেকেই তুলে নেওয়া হয় সেনানিবাসে, কেননা ততদিনে যে আগরতলা মামলা প্রস্তুত! নির্জন কারাবাসের সেই সময়টাকেই ভবিষ্যতের জন্য খাতায় লিপিবদ্ধ করেন বঙ্গবন্ধু, যার গ্রন্থিত রূপ আলোচ্য বইটি।

যেহেতু বইটা একটা জেল ডায়েরি, তাই জেল জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাই বইয়ে স্থান পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। জেলে তিনি কি করতেন, কি খেতেন, কোথায় ঘুমাতেন, কিভাবে সময় কাটাতেন, কি পড়তেন ইত্যাদি আছে বইটার বড় অংশ জুড়ে। কিন্তু তিনি তো সাধারণ এক কয়েদি না, তাইতো এর পাশাপাশি এসেছে দেশের রাজনীতি, দেশের ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি, পাকিস্তান সরকারের দমননীতির কথা, তাঁর আত্মবিশ্লেষণ, চলতি বিশ্বের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তাঁর মতামতের কথা।

বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন জেলে। ফলে জেলকে তিনি চিনতেন হাতের তালুর মতো! আর এর প্রমাণ পাওয়া যায় বইয়ের শুরুতেই জেলের গঠন, কার্যপ্রণালী আর কয়েদিদের কাজের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা থেকে। কোন পাশে কোন বিল্ডিং আছে আর সেখানকার রুমগুলোতে কি কি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় তা যেমন তিনি জানতেন তেমনি জানতেন জেলে চলা অনিয়মের কথাও। জেলে যে টাকা থাকলে মেয়ে ছাড়া সব পাওয়া যায়, বিনা অসুখেই হাসপাতালে আরাম করা যায়, জেলে যে ব্যভিচার আর ছোকরাবাজি চলে হরদম সেসব তিনি সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। আর কয়েদিদের কাজের শ্রেণিবিভাগ বা দফার বর্ণনা যেভাবে দিয়েছেন তাতে তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার পরিচয়-ই ফুটে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধুর দরদী আর আবেগী মনটারও পরিচয় পাওয়া যায় বইটা থেকে। যেভাবে তিনি পোষা মুরগির মৃত্যুতে ব্যথা পান, হলদে পাখিকে খুঁজে বেড়ান, কাকের দলকে বাসা বাঁধতে সাহায্য করেন তাতে বিস্মিত হতে হয। আবার জেলখানাকেই ‘ আব্বার বাড়ি' মনে করা বছরখানেক বয়সের শেখ রাসেলকে আদর করতে না পারার কষ্ট, স্ত্রী রেণুর সাথে একান্তে কথা না বলতে পারার বেদনা, অসুস্থ মাকে দেখতে না পারার হতাশা থেকেও তাঁর চরিত্রের ভিন্ন দিকটা বোঝা যায়। এছাড়া জেলে থেকেও প্রতিটা কয়েদির সুখ-দুঃখে শরিক হওয়া, বাবুর্চি/ধোপাকে নিয়ে খাবার খাওয়া, সহযোদ্ধাদের জন্য রান্না করা, পরীক্ষার্থী কয়েদির জন্য সুপারিশ করা, পাগলদের জন্যও চিন্তা করার ব্যাপারগুলো এসেছে নানা জায়গায়।

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বকে জানার জন্য বেশ সহায়ক একটা বই এটা। তাঁর জনগণের জন্য করা রাজনীতি, তাঁর আদর্শ, লক্ষ্য ও সংগ্রামকে কাছ থেকে জানা যায় বইটা থেকে। শত নির্যাতন আর প্রলোভনের সাথে লড়াই করে যে তিনি নিজ আদর্শে অবিচল থেকেছেন তা উপলব্ধি করা যায়। নিজের চেয়ে আদর্শকে বড় করে দেখা, নিজেকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাবার বিনয়, রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে বিপদকে ভয় না করার চেতনা, মনে-মুখে এক থেকে আপোষহীন লড়ে যাওয়ার মনোভাব, শত্রুকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করার সৎ সাহস, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ইত্যাদির পরিচয় পাওয়া যায় বইয়ের প্রতিটা পাতায় পাতায়। সাথে সরকারের ক্রমাগত নির্যাতন ও ভন্ডামিতে যে মাঝে মাঝে হতাশ হয়েও পড়তেন সে চিত্রও পাওয়া যায় এখানে। আমাকে ফাঁসি দিলেই তো পারে, মনে হয় এ পথ থেকে ফিরে আসি, নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছি যা হবার হবে – এমন হতাশাজনক কথাও এসেছে তাঁর মনে।

নীতি ও কর্মসূচি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মূল্যায়ন করেছেন বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের। চাঁচাছোলা সমালোচনা করেছেন মওলানা ভাসানীকে তাঁর ছয় দফার বিরুদ্ধতা, আয়ুবপন্থী চিন্তাধারা, দেশ বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করা নিয়ে। সাথে পদ, লোভ আর নিষ্কৃয়তার জন্য সমালোচনা করেছেন মোনায়েম খান, মশিউর রহমান, সবুর খান, নুরুল আমিন আর আতাউর রহমানদের। বাঙালিকে যে তিনি হাড়ে হাড়ে চিনতেন তারও প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর কিছু বক্তব্য থেকে। ভন্ড রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে সোনার ফসল আর আগাছার উপমা, বাঙালির অনৈক্যকে কাকের অনৈক্যের সাথে তুলনা আর বাঙালির পরশ্রীকাতরতা, লোভ আর আলস্যের কথা তিনি বলেছেন অকপটে।

হাস্যরস আর স্যাটায়ারের কথাও বলতে হয়। বন্দুক দফা, খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদ প্রভৃতি নিয়ে তিনি যেমন মজা করেছেন তেমনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক অসুখ, সলিটারি কনফাইনমেন্ট নিয়ে বিদ্রুপ করতেও ছাড়েন নি। একটার কথা না উল্লেখ করতে পারছি না। একবার ডিআইজি সাহেবের সাথে ধর্মীয় আলোচনার এক ফাঁকে প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানকে ইঙ্গিত করে তিনি মন্তব্য করেন দাজ্জাল তো এসে গিয়েছে, ইমাম মাহদি কত দূর!

নেতিবাচক একটা বিষয়ের কথা না বললেই নয় আর সেটা হলো বইয়ের বিন্যাস ও ভাষা। বইয়ের বিন্যাস যে তেমন একটা ভালো হয় নি সেটা বোধহয় সবাই স্বীকার করবে, আলোচনা কেমন যেন অগোছালো, আর পুনরাবৃত্তি তো আছেই। আর ‘যেতেছে’, ‘হতেছে’ জাতীয় শব্দের ব্যবহার বা গুরুচন্ডালী দোষ তো আছেই।

ওহ, একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলতে ভুলে গিয়েছি। বইটা কিন্তু একটা পারিবারিক প্রযোজনা! বঙ্গমাতার অনুপ্রেরণা ও কাগজ সরবরাহে বইটার পান্ড���লিপি রচিত, রচনাকার বঙ্গবন্ধু, ভূমিকা লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী আর নামকরণ করেছেন শেখ রেহানা!

বঙ্গবন্ধু তো জেলে থাকাকালে বইটা লিখেছেন তাইতো খুব বেশি প্রত্যক্ষ রাজনীতির কথা আসে নি বইটাতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামকে বুঝতে, ছয় দফার শক্তিটাকে বুঝতে দারুণভাবে সাহায্য করে বইটা।
31 reviews1 follower
January 21, 2023
ইতিহাস আমরা দুই ধরণের উৎস ( source) থেকে পড়তে পারি। Primary source বা মুখ্য উৎস এবং Secondary source বা গৌণ উৎস। প্রথম ধরণের উৎসের ক্ষেত্রে লেখকের সরাসরি সময়টার সাথে সম্পৃক্ততা থাকে। যেমন বলা যায় আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি বইটার সাথে। অন্যদিকে দ্বিতীয় উৎসের ক্ষেত্রে লেখক সরাসরি আলোচ্য সময়টার সাথে সম্পৃক্ত থাকেন না বরং ঐ সময়ের বিভিন্ন লেখা, বক্তৃতা, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিজে একটা বয়ান তৈরি করেন। অর্থাৎ গৌণ উৎস সবসময় মুখ্য উৎসের উপর নির্ভর করে তৈরি হয়। যেমন বলা যায় প্রাচীন বাংলা নিয়ে লিখিত যেকোনো বইয়ের কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “কারাগারের রোজনামচা” আমাদের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা দলিল যেখানে তিনি তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দ্বারা একটা সময়কে তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ বইটা আমাদের ইতিহাসের অন্যতম একটা মুখ্য উৎস।

বিষয়বস্তুর কথা বলতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে বইটার নামে। কারাগারের রোজনামচা নামটাই আমাদের বলে দিচ্ছে বইটা কি ধরণের বই আর কোথা থেকে বইটা লেখা হয়েছে। হ্যাঁ, এটি একটি রোজনামচা বা ডায়েরি যেটি বঙ্গবন্ধু তাঁর জেলে অবস্থানকালে লিখেছিলেন। ছয় দফা দাবি যখন সমগ্র পূর্ব বাংলায় আলোড়ন তুলে ফেলে তখন আন্দোলনকে বানচাল করতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে জেলে বন্দী করে। সেই সময়টাতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার সরবরাহ করা রুল টানা খাতাতেই লিখিত হয়েছে এই রোজনামচা। ফলে বইটাতে স্বভাবতই আলোচিত হয়েছে ছয় দফা দাবির কথা, আওয়ামী লীগের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা, সরকারের দমন-পীড়নের কথা আর জেলে বঙ্গবন্ধুর কাটানো সময়টার কথা। দুই অংশে বিভক্ত বইটার প্রথম অংশে ঢাকা জেলে থাকাকালীন ১৯৬৬ সালের জুন থেকে ১৯৬৭ সালের জুন পর্যন্ত সময় এবং দ্বিতীয় অংশে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কুর্মিটোলা সেনানিবাসে বন্দী থাকাকালীন স্মৃতিকথা স্থান পেয়েছে।

বইটার প্রথম অংশে বঙ্গবন্ধু জেলজীবনকে তুলে ধরেছেন। জেল কি, কারা থাকে সেখানে, জেল কিভাবে চলে ইত্যাদি বিষয়গুলো এসেছে। এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ জেলে কাটিয়েছেন ( ৪,৬৮২ দিন সর্বসাকুল্যে!) ফলে তিনি জেল-জীবনকে একদম খুঁটিয়ে বর্ণনা করতে পেরেছেন। জেলের নিজস্ব ভাষা যেমন কেসটাকোল, বন্দুক দফা, শয়তানের কল, সিকম্যান, আইন দফা ইত্যাদি বিষয়গুলো যেমন তিনি বর্ণনা করেছেন ঠিক তেমনি জেল সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাও তিনি বাতিল করেছেন। জেলের ভিতরে জেলের উপস্থিতি, টাকা থাকলে মেয়ে ব্যতীত সবকিছু পাওয়ার নিশ্চয়তা, জেলে তথ্যের ছড়িয়ে পড়া এসব দিকগুলো তুলে আনার পাশাপাশি তিনি সমালোচনা করেছেন পুরো জেল ব্যবস্থাকেই। তাঁর মতে, “ জেল দিয়ে লোকের চরিত্র ভালো হয়েছে বলে আমি জানি না।“ তিনি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে সরকার ও প্রভাবশালীরা মানুষজনকে অন্যায়ভাবে জেলে পুরে রাখে বা জেলে এসে ছিঁচকে অপরাধীরা আরও বড় অপরাধী হয়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধুকে জেলে রাখা হয়েছিলো সলিটারি কনফাইনমেন্টে বা নিঃসঙ্গ অবস্থায়। ফলে বই আর কাগজপত্র পড়েই তাঁকে দিন কাটাতে হতো। আর যখন পড়তেন না তখন তিনি ভাবতেন আর লিখতেন। তাঁর এই চিন্তা থেকেই আমরা তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার প্রমাণ পাই। তিনি সরস বর্ণনা, রূপক ও ব্যঙ্গের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের সমাজচিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর সরস বর্ণনার প্রমাণ পাই পাগলের অন্য পাগলদের পাগল বলার ঘটনা, দাঁড়িওয়ালা ডাক্তারের ঘুষ খাওয়া, খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদ, ভন্ড মওলানা বা লেদু চোরের কাহিনীর মধ্য দিয়ে। এছাড়া আগাছা ও তাঁর ফুলের গাছের অবস্থা তুলে ধরে তিনি তুলে ধরেছেন তৎকালীন রাজনীতিবিদদের প্রকৃত অবস্থা। ব্যঙ্গতেও তিনি কম যান না ; তাঁর অসাধারণ হিউমারের প্রমাণ পাই বেশকিছু ঘটনা বর্ণনার মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান যখন নিজ দেশের অভাব-অনটনের মধ্যে ইন্দোনেশিয়াকে সহায়তা করে তখন তিনি শাসকদের ব্যঙ্গ করেন এভাবে, “নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ানো তো ইসলামের হুকুম” বা পুলিশের উপস্থিতি ছেলে রাসেলের সাথে কথা বলার সময় বলেন, “….ভাববে একুশ মাসের ছেলের সাথে রাজনীতি নিয়ে কথা বলছি!” এছাড়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, শাসকদের মহাজ্ঞানী হয়ে পড়া, ভাসানীর রাজনৈতিক অসুখ ইত্যাদি বর্ণনাতেও তিনি ব্যঙ্গ করেছেন।

এবার আসা যাক বইটা থেকে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যায় সেদিকটাতে। বঙ্গবন্ধু যে আপোষহীন নেতা ছিলেন সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু কতটা? বইয়ের পরতে পরতে তার প্রমাণ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু জেলে গিয়েছিলেন ছয় দফা দাবির সপক্ষে বক্তব্য রাখায়। ঐ সম্পর্কিত বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য তাঁর নামে বিভিন্ন জায়গায় মামলা করা হয় দশের অধিক। কিন্তু তিনি জানতেন শাসকরা এটাই করবে, তাইতো তাঁর মুখ দিয়ে বের হয়েছে, “ সাগরে শয়ান যার, শিশিরে ভয় কি তার!” কতটা আপোষহীন হলে মামলার পর মামলাকে এমন হাসিমুখে মেনে নেওয়া যায়! তিনি জানতেন তিনি কি করছেন, তিনি জানতেন ছয় দফা দাবি ছাড়া বাঙালির মুক্তি নেই এবং তার জন্য তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তাঁর ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, “……আমি যে পথ বেছে নিয়েছি তা কষ্টের” বা “নিজেকে ভাসায়া দিয়াছি যা হবার হবে!” নিঃসঙ্গ কারা প্রকোষ্ঠে রেখে যখন তাঁকে পাগল করে ফেলার চেষ্টা করছিলো শাসকগোষ্ঠী তখনও তিনি স্থির ছিলেন, তিনি উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁকে পাগল করা যাবে না বরং শাসকরাই পাগল হয়ে যাবে! এমন সমূহ বিপদের দিনেও তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভোলেননি, তাঁর অবস্থা বর্ণনা করেছেন কবিগুরুর পঙক্তিতে, “ বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে যেন না করি ভয়!” এমনই ছিলো তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা।

রাজনীতিবিদ হওয়ার প্রথম শর্ত যে দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোভাবে জানা সেটা বোধহয় সবাই স্বীকার করবেন। আর এই শর্ত বঙ্গবন্ধু পূরণ করেছিলেন সম্পূর্ণভাবে। তিনি বাঙালিকে হাড়ে হাড়ে চিনতেন, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের হাড়ে হাড়ে চিনতেন, তিনি দেশের প্রতিটা অংশের খোঁজ রাখতেন। বাঙালির অতি মাত্রায় দৈব সহযোগিতার আশা, পরশ্রীকাতরতা, একতার অভাব ও বিশ্বাসঘাতকতার দিকগুলো তিনি তুলে ধরেছেন বিভিন্ন প্রসঙ্গে। নেতাদের কাছে বন্যা নিয়ন্ত্রণের দাবি না করে আল্লাহর উপর দায় দেওয়া বা মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস তিনি এনেছেন প্রসঙ্গক্রমে। সহ রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের সম্পর্কেও তাঁর স্পষ্ট ধারণা ছিলো। তিনি ভাসানীর দোদুল্যমানতা, মানিক মিয়ার দৃঢ়তা ও ইত্তেফাকের মাধ্যমে বিরুদ্ধ রাজনীতি বাঁচানো বা মোনায়েম খানদের চাটুকারিতার কথা নিঃসঙ্কোচে বলে গিয়েছেন। আবার দেশ যে কিছু পশ্চিম পাকিস্তানি পুঁজিপতিদের হাতে বন্দী হয়ে গিয়েছিলো সেটাও তিনি দেখিয়েন বাজেট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ছয় দফার ব্যাখ্যার মাধ্যমে।

আত্মবিশ্বাস ছাড়া কখনও কোনো বিপ্লব সফল হয় না। বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন নিজের এবং কর্মীদের উপর বিশ্বাস, দূরদৃষ্টি ও সঠিক পরিকল্পনা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন বিপ্লবী। বাঙালিদের তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে তিনি নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস ছিলো প্রচন্ড, তাইতো তিনি বলতে পেরেছেন, “ জেলের ভিতর আমি মরে যেতে পারি তবে এ বিশ্বাস নিয়ে মরব যে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার একদিন আদায় করবে।“ তিনি ইতিহাসের মনোযোগী পাঠক ছিলেন, তিনি জানতেন ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। তাইতো তিনি আউয়ুব খানকে সতর্ক করে বলেছিলেন, “কংগ্রেসের ভুলে দুই দেশ হলো, আইয়ুব খান সাহেব ভুল করলেও তাই হবে।“ কতটা দারুণভাবেই না মিলে গেল তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী! জেলে থাকাকালীন কখনোই তিনি আশা হারাননি, সর্বদা তিনি ত্যাগের জয়গান গেয়েছেন এবং জয়ের ব্যাপারে আত্মপ্রত্যয়ী থেকেছেন। তাঁর ভাষায়, “ আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে, সহ্য করার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন। ভাবি শুধু আমার সহকর্মীদের কথা।... ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনোদিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে যেতে নাও পারি, তবে ভবিষ্যৎ বংশধররা আজাদী ভোগ করতে পারবে।... জয়ী আমরা হবই। ত্যাগের মাধ্যমেই আদর্শের জয় হবে।“

বঙ্গবন্ধু ছিলেন পুরোপুরি রাজনীতির মানুষ। ফলে বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কেও তাঁর নিজস্ব মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো। বইয়ের নানা স্থানে তাঁর এমন সচেতন মনের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার আগ্রাসন, কঙ্গোতে লুমুম্বার বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান, চীনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কৌশল বা পাকিস্তান-প্রীতি, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সমস্যা প্রভৃতি সম্পর্কে নিজস্ব মতামত দিয়েছেন। আবার এর বিপরীত দিকটাও আমরা দেখতে পাই তাঁর চরিত্রে। একদিকে বহির্বিশ্বের রাজনীতি নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আবার অন্যদিকে তিনি মাথা ঘামান ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ে। একটি হলদে পাখির জন্য অপেক্ষা, তাঁর পোষা মুরগির মৃত্যুতে মন খারাপ করা, কাকদের সাথে ‘জমিদখলের’ লড়াই ইত্যাদি ঘটনা উঠে এসেছে বইটাতে।

যদিও বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির মানুষ তবুও তাঁর লেখনী যথেষ্ট ভালো। প্রমিত বাংলা লেখার কোনো চেষ্টা তাঁর মধ্যে ছিলো না, যেমনভাবে তিনি বক্তৃতা দিতেন ডায়েরিও লিখেছেন সেভাবেই। ফলে গুরুচন্ডালী দোষ, বাহুল্য দোষ ইত্যাদি নানা ধরণের অসঙ্গতিই আছে বইটাতে তবে বইটা সুখপাঠ্য। বইটা পড়ার সময় মনে হয় যেন কেউ একজন আমার কাছে তাঁর জীবনের গল্প বলছে! ফলে ভাষার সামান্য এদিক-সেদিক তেমন একটা প্রভাব ফেলে না বইটার রস আস্বাদনে।

জেলখানা রাসেলের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর জন্য হয়ে গিয়েছিল “আব্বার বাড়ি”। রাজনৈতিক জীবনের একটা বড় অংশই তিনি কাটিয়েছেন জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কিন্তু তিনি কখনও জেলে যেতে ভয় পাননি বা জেল তাঁর ভেতরের আগুনকে নেভাতে পারেনি। তিনি প্রতিবার জেল থেকে বের হয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন বাংলার জন্য, বাঙালির জন্য। আবার জেলেও তিনি ছিলেন সকলের নেতা, জেলের সব সমস্যা সমাধানের দ্বায়িত্ব যেন তাঁর উপর! এভাবে জেলই তাঁকে বাবা-মায়ের ‘ছোট্ট খোকা' থেকে বাঙালির ‘বঙ্গবন্ধু’ বানিয়েছে! সেই মহাকাব্যিক যাত্রার একটা ক্ষুদ্র অংশ এই রোজনামচা। বঙ্গবন্ধুকে জানতে, তাঁর চিন্তা বুঝতে, তাঁর স্বপ্ন অনুধাবন করতে তাই এই বইটা সবারই পাঠ করা উচিত।
Profile Image for Abhishek Saha Joy.
191 reviews56 followers
June 12, 2020
অস্বীকার করার উপায় নেই যে বইটির লেখনী অগোছালো।কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান তো একজন সাহিত্যিক নন,তিনি বাংলাদেশ নামক দেশটির এ যাবৎ কালে জন্ম নেয়া সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব যার নিজের হাতের লেখনী আমরা খুব একটা পাইনি।সেজন্যে এই বইটি আমার কাছে সাহিত্যের থেকেও অনেক বেশি ঐতিহাসিক দলিল যাকে পাঁচ তারার কম দেয়া সম্ভব নয়।

#তিন_লাইনের_রিভিউ
Profile Image for Asiful Nobel.
27 reviews
June 13, 2023
A large portion of the book portrays the human side of Sheikh Mujibur Rahman and his thinking. It felt nice to learn about this.

However, some edited portions felt very annoying.
Profile Image for Ahmad Muddasser.
16 reviews6 followers
November 24, 2017
একদিকে তিনি কারাগারে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছে। আরেকদিকে তাঁর পারিবারিক অন্তরঙ্গতা, আরেকদিকে দেশ ও রাজনীতির ভাবনা এই বইয়ে অধিকার করে আছে। বইটাতে বঙ্গবন্ধুর ভেতরের কোমল মানুষটাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
শক্তিমান বঙ্গবন্ধু জেল জুলুম সহ্য করেও আপন চরিত্রে উজ্জ্বল। আমরা তাই দেখে অভ্যস্থ। কিন্তু এই বঙ্গবন্ধু যখন জেলের মধ্যে কবুতর আর মুরগীর পারস্পরিক অন্তরঙ্গতা দেখে মুগ্ধ হন বা পোষা মুরগীটার মৃত্যুতে শোকাতুর হন, তখন আমাদের মন অন্যরকম হয়ে উঠবে। নিশ্চিত।
তবে বইটা ২০১৭ বা ১৮ তে পড়লে মনের মধ্যে তুলনা চলে আসবে। শাসন ব্যাবস্থা, যার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত লড়াই করে এলেন বঙ্গবন্ধু, সেই একইরকম ব্যাবস্থা অনেকটা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়।
বইটাতে বঙ্গবন্ধু এক জায়গায় আফসোস করে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে এত উন্নতি হচ্ছে, তিনটা রাজধানী করে ফেললো, কিন্তু আমাদের এদিকে উন্নয়নের কোন চিনহ নাই। উদাহরণ হিসেবে তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইন ডাবল লেন করার কথা বলেছে। তারপর প্রায় ৬০ বছর কেটে গেছে, আমরা স্বাধীন হয়েছি ৪৭ বছর। এখনো ডাবল লেন চালু হয় নাই। আমরা করতে পারি নাই। তাই বইটা পড়ে আফসোসও হতে পারে।
বইটাতে একটা উচ্চমানের ভূমিকা আশা করেছিলা। (অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মত। ভূমিকাকার জেলে বসে ভূমিকাটা লিখে ছিলেন। এরপর হয়ত এমন অবসর পাননি।) আশা পূরণ হয় নাই। তবে শিল্পের পর্যায়ে উন্নত হওয়া বঙ্গবন্ধুর লেখা সব পূরণ করতে পেরেছে বলেই মনে হয়েছে।
Profile Image for Raisul Sohan.
125 reviews20 followers
December 19, 2018
এই বইয়ের কোন রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার নেই। তবে নিজের অনুভূতিতো প্রকাশ করাই যায়। বইটি মূলত বঙ্গবন্ধু নিজের কারাজীবন নিয়ে লেখা। শেখ ফজিলাতুন্নেসার উৎসাহে বঙ্গবন্ধু এসব লিখে রাখতেন। বইটি মূলত ঐ খাতাগুলোরই মুদ্রিত সংস্করণ। বঙ্গবন্ধু বইটিতে জেলের খুঁটিনাটি সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। পরবর্তীতে এই লেখাগুলো অনেক চেষ্টায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয় এবং সেগুলোই হয়ে যায় ইতিহাসের এক অনন্য দলিল।

বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা দেখার দুর্লভ সুযোগ আছে বইটিতে। এছাড়া বইটির শেষে ১৯৫৫-১৯৭৫ সালব্যাপী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী, টীকা অংশে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের দুর্লভ কিছু ছবি এবং ৬ দফার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে; যা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চমৎকার ধারণা পাওয়া যায়।
Profile Image for Ashikur Khan.
Author 4 books7 followers
February 28, 2023
আত্মজীবনী বলতে সাধারণত কোনো ব্যক্তির আত্মকথনকে বোঝানো হয়। লেখক যখন তাঁর নিজের জীবনের ইতিহাস ও তৎকালীন সময়ের কথা নিজস্ব বাচনে তুলে ধরেন, সেটাকেই আমরা সাধারণত আত্মজীবনী বলে থাকি। সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, লেখক সাধারণত তাঁর আত্মজীবনীতে নিজের ঢাকঢোল পেটানোর দিকে নজর দিয়ে থাকেন। কিন্তু কারাগারের রোজনামচায় বইটিতে তার সম্পূর্ণ বিপরীত কাজটি করা হয়েছে। এই বইটিতে তিনি ব্যক্তিগত জীবনের কথা যতটা না বলেছেন, তার চেয়ে বেশি বলেছেন কারাগারে কাটানো দিনগুলোর নানা খুঁটিনাটি দিক।

বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পঞ্চান্ন বছরের জীবনে বারোটি বছর (৪১৭৫ দিন) কেবল কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। কখনো কখনো মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে, আবার কখনোবা সন্দেহভাজন হিসেবে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কারাগারে তিনি দিনাতিপাত করেছেন। এ সময় কারাগারের নানা অভিজ্ঞতার কথা তিনি এই বইটিতে অত্যন্ত সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন। এর সঙ্গে প্রসঙ্গক্রমে জাতীয় রাজনীতির নানা আলোচনা বইটিকে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে। উল্লেখ্য যে, বইটির নাম বঙ্গবন্ধু রেখেছিলেন "থালা বাটি কম্বল/ জেলখানার সম্বল"। পরবর্তীতে তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বইটির নামকরণ করেন "কারাগারের রোজনামচা"। আলোচ্য বইটির ভূমিকায় বঙ্গবন্ধুকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যাপারে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।

নিজ বয়ানে বর্ণিত এই বইটিতে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় কারাজীবনের বর্ণনা করে গিয়েছেন। স্বরচিত অন্য দুইটি গ্রন্থের ন্যায় এখানেও তিনি স্বকীয়তার সুস্পষ্ট ছাপ রেখেছেন। আপন ঢঙে লিখে গিয়েছেন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। এই সাবলীল উপস্থাপনায় কারাজীবনের বর্ণনার পাশাপাশি লেখকের ব্যক্তিগত দর্শন বারবার স্বগতোক্তির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে। যেমনঃ
* জেলের ভিতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে।
* আল্লাহ কোনো মানুষকে চোর ডাকাত করে সৃষ্টি করে না।
* রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়৷ সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়। বুকে আর মুখে আলাদা না হওয়াই উচিত।
* মানুষ যখন অমানুষ হয়, তখন হিংস্র জন্তুর চেয়েও হিংস্র হয়ে থাকে।
* 'পরশ্রীকাতরতা' দুনিয়ার কোনো ভাষায় খুঁজিয়া পাওয়া যাবে না, একমাত্র বাংলা ভাষা ছাড়া।
* ডিকটেটরের কোনো ধর্ম নাই। সে শুধু নিজকে চেনে এবং নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে কাহাকেও ছাড়ে না।

প্রতিটি বইয়ের কিছু ইতিবাচক দিক যেমন থাকে, তেমনি কিছু নেতিবাচক বা খারাপ লাগার দিকও থাকে। এই বইটিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রনায়ক ও মহান স্বাধীনতার সংগঠক হিসেবে বঙ্গবন্ধু যেমন সারা বিশ্বে অনন্য, তেমনি লেখক হিসেবেও তিনি অসাধারণ। সে হিসেবে তাঁর লিখনির সমালোচনা করার মতো দুঃসাহস আমার মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সাহিত্য সমালোচকের নেই। এককথায়, এই বইটির নানা দিক যেমন আমার ভালো লেগেছে, তেমনি কোথাও কোথাও সাধুভাষা রীতির প্রয়োগ আমার কাছে সাধারণ পাঠক হিসেবে কিছুটা জটিল মনে হয়েছে। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহৃত আঞ্চলিক শব্দের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বা প্রমিত সংস্করণ বইটিতে উল্লেখ করে দিলে তাতে সাধারণ পাঠকের জন্য সুবিধাজনক হত বলে আমি মনে করি। এ বিষয়টি মাথায় রেখে পড়লে বইটি একজন পাঠকের জন্য সুখপাঠ্য ও আদর্শ একটি বই হতে পারে।

পাঠ অনুভূতি আনন্দের হোক!

এক নজরে বইটি সম্পর্কিত তথ্যঃ
বইয়ের নামঃ কারাগারের রোজনামচা
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
বইয়ের ধরনঃ আত্মজীবনী
প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমি
প্রথম প্রকাশকালঃ মার্চ, ২০১৭
প্রচ্ছদঃ তারিক সুজাত
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩৩২
মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০ টাকা
ISBN No: 984-07-5898-5
4 reviews1 follower
August 29, 2020
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বড় একটি অংশ কেটেছে কারাগারে। ছয় দফা দাবি তোলার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। এমন ও হয়েছে এক মামলায় জামিন পেয়ে, বের হয়ে আসার পরে পথে পুনরায় অন্য আরেক মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার দূরদর্শিতায় বঙ্গবন্ধু নিজের কারাজীবন নিয়ে লেখা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই লেখাগুলো অনেক চেষ্টায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। বইটি মুলত ওই লেখা গুলোরই মূদ্রিত সংস্করণ। বইটির নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং ভূমিকা লিখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর জেল-জীবন, জেল-যন্ত্রণা, কয়েদীদের অজানা কথা, অপরাধীদের কথা, কেন তারা এই অপরাধের জগতে পা দিয়েছিলো, তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা, শাসক গোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাস ঘাতকতা এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
বইটির ভূমিকায় বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন-
“ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের সোপানগুলো যে কত বন্ধুর পথ অতিক্রম করে এগোতে হয়েছে, তার কিছুটা এই বই থেকে পাওয়া যাবে। বাংলার মানুষ যে স্বাধীন হবে, এ আত্মবিশ্বাস বারবার তাঁর(বঙ্গবন্ধু) লেখায় ফুটে উঠেছে। এত আত্মপ্রত্যয় নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো নেতা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছেন কিনা আমি জানি না”।
একাকী বন্দী রেখেও পাকিস্তানি শাসক বঙ্গবন্ধুর মনোবলে চিড় ধরাতে পারেনি। তাঁর প্রতিদিনকার বর্ণনাতেই এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন ১৯৬৬ সালের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু লিখেছেন-
“তিনি (মোনায়েম খান) ভুলে গেছেন এটা পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাকিস্তান নহে! আন্দোলন করা এবং নির্যাতন সহ্য করার ক্ষমতা এরা রাখে।”
ওই সময় শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের প্রায় সবাইকে জেলে নিয়েছিল সরকার। উদ্দেশ্য, ছয় দফা বানচাল করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী। সরকারের দমন-পীড়ন, ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ছয় দফার বিষয়ে শেখ মুজিব ছিলেন অনড়। তিনি লিখেছেন,
“৬ দফা বাদ দিয়া কোনো দলের সাথে আওয়ামী লীগ হাত মেলাতে পারে না। আর করবেও না।’ ‘৬ দফা ছাড়তে পারব না। যেদিন বের হব ৬ দফারই আন্দোলন করব।”
জন্মের পর থেকে বেশির ভাগ সময় শিশু রাসেল দেখছে তার বাবা বাসায় থাকেন না। থাকেন কারাগারে। অবুঝ শিশু মনে করেছিল, কারাগারটাই তার ‘আব্বার বাড়ি’। মাঝেমধ্যে মায়ের সাথে ‘আব্বার বাড়ি’তে গিয়ে বাবাকে দেখে আসত। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন,
“৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলাটা এসে বলে, ‘আব্বা বালি চলো’। কি উত্তর আমি দেব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম, ও তো বুঝে না আমি কারাবন্দী। ওকে বললাম, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও আমি আমার বাড়িতে থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো। ও কি বুঝতে চায়! কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে!...... শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলেমেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনও বুঝতে শিখে নাই। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।”
কারাগারে থাকাটা অভ্যাসে পরিণত হলেও উৎসবের দিনে সবারই মন কাঁদে। ১৯৬৭ সালের ২২ মার্চ বঙ্গবন্ধু লিখেছেন,
“আজ কোরবানির ঈদ। গত ঈদেও জেলে ছিলাম। এবারও জেলে। বন্দী জীবনে ঈদ উদ্যাপন করা একটি মর্মান্তিক ঘটনা বলা চলে।”
কারাগারের ভেতরে একাকী বন্দিজীবন, সেভাবে কারও সঙ্গে কথা বলার, দেখা করার সুযোগ নেই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও চাইলে দেখা করার সুযোগ পেতেন না। সব সময় পরিবারের সদস্যরা দেখা করার সুযোগ পেতেন না। তিনি অপেক্ষায় থাকতেন। অধিকাংশ সময় তাঁকে ‘solitary confinement’ অর্থাৎ একাকী বন্দী জীবনযাপন করতে হয়েছে। শারীরিকভাবে দূর্বল হয়েছেন কিন্তু মনের জোর কখনও হারাননি। মনের শক্তিকে পুঁজি করে বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।
এসব কথাই উঠে এসেছে বইটিতে। বঙ্গবন্ধু�� হাতের লেখা দেখার দুর্লভ সুযোগ আছে বইটিতে। এছাড়া বইটির শেষে ১৯৫৫-১৯৭৫ সালব্যাপি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী, টীকা অংশে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কিছু দূর্লভ ছবি এবং ৬ দফার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চমৎকার ধারণা পাওয়া যায়।
For more book reviews visit my blog
Profile Image for অ আ ক খ  - OAAKAKHA.
3 reviews
January 1, 2023
"কারাগারের রোজনামচা - শেখ মুজিবুর রহমান"

জেলে যারা যায় নাই, তারা জানে না জেল কি জিনিস। চারিদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা সেই জেল
জীবনের দিনগুলি! একটা বদ্ধ জীবন, সত্যিকার সব ভয়ংকর ঘটনা! মূলত একটি দেশের সামগ্রিক অবস্থার চিত্র দেখা মেলে জেলখানাতে! সেই জেলের ভেতর অাবার বহু জেল থাকে। জেলখানার এইসব গল্পদের দেখা মিলবে বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচায়! যা
অামদের উৎসুক মনের বাসনা মেটানোর সাথে ইতিহাস ফ্রী!

জেল জীবন, অপরাধীদেরর অজানা সব কথা, অপরাধ জগতে অাগমনের হেতু, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণমাধ্যমের অবস্থা, শাসক গোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রকৃতি, প্রেম, সুখ- দুঃখ, হাসি-কান্না দের সত্যিকারের গল্প। কিন্তু অামি বলবো বইতে বঙ্গবন্ধুর বিলাসী জেল জীবনের গল্প সুস্পষ্ট! অার অাপনি বলবেন জেল কখনো বিলাসী হয়!

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের বড় একটি অংশ কাটিছেছেন কারাগারে। জীবনের এই অধ্যায়টি তিনি লিখে গেছেন জেলে বসেই। সেই গল্পের নাম ‘কারাগারের রোজনামচা’। এই বইয়ে শুধু কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অত্যাচার -নির্যাতনের নানান চিত্র। একজন বন্দী বাবার আকুতি, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, সহ রাজনৈতিক দর্শন ফুটে উঠেছে এই বইয়ের মধ্য।

১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর ঐ বছরে বঙ্গবন্ধু মোট আটবার গ্রেপ্তার হন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ মূলত তাঁর ঐ সময়ের কারা জীবনের দিনলিপি। এই দিনলিপির নাম দিয়েছেন কারাগারের রোজনামচা। কিন্তু ডায়েরি থেকে রোজনামচা হওয়ার ইতিহাস অবশ্যই সকলের জানা দরকার। একটা কারাবন্দী জীবনের গল্প। যে গল্পের নামকরণ করেন ছোট কন্যা রেহানা। শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্ম বার্ষিকীতে গ্রন্থটি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। মূলত ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ঘটনাবহুল জেল-জীবনচিত্র এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।

বইঃ কারাগারের রোজনামচা
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
প্রকাশনীঃ বাংলা একাডেমি
মূল্যঃ চারশত টাকা।
Profile Image for S M Shahrukh.
127 reviews67 followers
July 24, 2017
Not as engrossing as his 'Unfinished Biography' but still an important book. Written in formal as well as informal language, Sheikh Mujib wrote from the heart and his empathy for the hardships faced by his countrymen is clear to see, his compassion, undeniable. His political differences with Maulana Bhashani are well documented as he spent month after month in jail during the mid to late sixties, so are his differences in approach, with other players, about how to go about the emancipation of the people of East Bengal. In amongst his descriptions of the various political and 'common' criminals in the jail, as well as the poor treatment of inmates etc one gets glimpses of his family life as he describes his short meetings with his wife and five children at the jail house reception area. However, one cannot but not feel that the leader considered his various prison times as trophies of his political career, a sort of a 'Stockholm Syndrome', even, as one gets the feeling that he was quite 'at home' inside the walls of incarceration. This may give one an insight as to why he decided to embrace arrest during 'Operation Searchlight' instead of fleeing to lead his fledgling nation in her 'war of genesis'. Just a feeling I get from reading this 'prison diary'.
1 review
December 29, 2019
I thoroughly enjoyed reading this fantastic memoir by Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman. The descriptions of the events of that time has been nicely written by the great leader . It will enrich the knowledge of the reader about the true history of Bangladesh . Furthermore, it will provide the reader with a clearcut view about the dedication and determination of Bangabandhu to liberate his country and country people. I highly recommend this great memoir to everyone irrespective of his/her nationality . Thank you all. Joy Bangla .
Profile Image for Shuvescha De.
40 reviews2 followers
June 29, 2021
বেশ সুন্দর। একজন রাজনীতিক এর থেকে এমন গুছানো লেখা যথেষ্ঠ প্রশংসার দাবিদার। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু তার কারা জীবনের আলেখ্য তুলে ধরার মধ্য দিয়ে জেলের বিভিন্ন দিক তুলে এনেছেন। কিভাবে একজন মানুষ অপরাধী হয়ে ওঠে তার জন্য কারাভোগ কে দায়ী করেছেন। সেই সাথে জেলে কারাবন্দীদের শ্রেণীবিভাগ ও শ্রেণী বৈষম্য, কর্মবন্টন, রাজবন্দিদের দুর্দশা সবই লেখার আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। ব্যাক্তি বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ করে দেয় বইটি। বঙ্গবন্ধু জেলে মুরগি পুষতেন, বাগান করতে পছন্দ করতেন, সুযোগ পেলেই গোপনে মানুষকে খাওয়াতেন। পনের দিন পরপর স্ত্রী, সন্তানদের দেখার সুযোগের জন্য মুখিয়ে থাকতেন।
Profile Image for Nuzhat Islam.
9 reviews
Read
March 20, 2020
He was no Avatar but a simple human being. Who had a heart that wept for others. He was not highly intellectual but a man made of flesh and bone whose soul belonged to mass people.
He made mistakes and he was the W first to understand his shortcomings. At the same time had a phenomenal power to lead people and overcome any obstacles.
In the current days and time a lot of people misusing his image which bringing awkwardness to his legend.
Let his teaching do the talk rather his murals!
Profile Image for Fahad Julkarnin.
6 reviews3 followers
May 14, 2022
এই বইটি কারাগারের অদ্ভুত জীবন সম্পর্কে জানিয়েছে। তৎকালীন রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে অনেক৷ একাকী থাকলে মানুষের মনে কত কথা আসে তাও জানা যায় এই বইয়ে। নিশ্চিতভাবেই এই বইটি যেকোনো পাঠককে সমৃদ্ধ করবে।
Profile Image for শুভ.
109 reviews4 followers
April 5, 2023
অসাধারণত লেখনি, বঙ্গবন্ধু একজন অনন্য প্রতিভাধর মানুষ ছিলেন। লেখক হলেও তিনি সফল হতেন। কারাগারে রাজবন্দী হিসেবে থাকার পরও যেভাবে গুছিয়ে তিনি ঘটনাগুলো লিখেছেন তার তারিফ করতে হয়। সেসঙ্গে wit এবং humour এর ব্যবহারও অনবদ্য। এই বইটি সব বাঙালির অবশ্য পাঠ্য।
1 review
May 5, 2019
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for MD Moshiur.
38 reviews2 followers
February 27, 2020
আপনার ঋণ শোধ করা সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে।ভালো থাকুন।
Profile Image for Abdullah Kaisar.
16 reviews2 followers
May 26, 2020
Part memoire, part observation part predictions and mostly philosophy. And THE last part of The Ultimate Trilogy.
1 review
Read
June 22, 2020
❤❤❤❤❤❤❤❤❤
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for নূর.
67 reviews
November 10, 2020
রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার নাই।
Displaying 1 - 30 of 37 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.