Jump to ratings and reviews
Rate this book

In a Land Far from Home: A Bengali in Afghanistan

Rate this book
An intrepid traveller and a true cosmopolitan, the legendary Bengali writer Syed Mujtaba Ali from Sylhet (in erstwhile East Bengal, now Bangladesh) spent a year and a half teaching in Kabul from 1927 to 1929. Drawing on this experience, he later wrote Deshe Bideshe which was published in 1948. Ali's young mind was curious to explore the Afghan society of the time and, with his impressive language skills, he had access to a cross-section of Kabul's population, whose ideas and experiences he chronicles with a keen eye and a wicked sense of humour. His account provides a fascinating first-hand insight into events at a critical point in Afghanistan's history, when the reformist King Amanullah tried to steer his country towards modernity by encouraging education for girls and giving them the choice of removing the burqa. Branded a 'kafir', Amanullah was overthrown by the bandit leader Bacha-e-Saqao. 'Deshe Bideshe' is the only published eyewitness account of that tumultuous period by a non-Afghan, brought to life by the contact that Ali enjoyed with a colourful cast of characters at all levels of society-from the garrulous Pathan Dost Muhammed and the gentle Russian giant Bolshov, to his servant, Abdur Rahman and his partner in tennis, the Crown Prince Enayatullah.

262 pages, Kindle Edition

First published January 1, 1948

373 people are currently reading
3786 people want to read

About the author

Syed Mujtaba Ali

82 books444 followers
Syed Mujtaba Ali (Bengali: সৈয়দ মুজতবা আলী) was a Bengali author, academician, scholar and linguist.

Syed Mujtaba Ali was born in Karimganj district (in present-day Assam, India). In 1919, he was inspired by Rabindranath Tagore and started writing to the poet. In 1921, Mujtaba joined the Indian freedom struggle and left his school in Sylhet. He went to Visva-Bharati University in Santiniketan and graduated in 1926. He was among the first graduates of the university. Later, he moved to Kabul to work in the education department (1927–1929). From 1929 to 1932 he studied at the universities in Berlin, London, Paris and Bonn. He earned Ph.D. degree from University of Bonn with a dissertation on comparative religious studies in Khojas in 1932.
In 1934-1935 he studied at the Al-Azhar University in Cairo. Subsequently, he taught at colleges in Baroda (1936–1944) and Bogra (1949). After a brief stint at Calcutta University (1950), Mujtaba Ali became Secretary of the Indian Council for Cultural Relations and editor of its Arabic journal Thaqafatul Hind. From 1952 to 1956 he worked for All India Radio at New Delhi, Cuttack and Patna. He then joined the faculty of Visva-Bharati University (1956–1964).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1,547 (67%)
4 stars
569 (24%)
3 stars
114 (4%)
2 stars
32 (1%)
1 star
27 (1%)
Displaying 1 - 30 of 223 reviews
Profile Image for Rifat.
498 reviews324 followers
November 10, 2021
আলী সাহেবের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছিল এক দশক আগে, নীলনদ আর পিরামিডের দেশ নামের ছোট গল্পের মাধ্যমে। গল্পটি অবশ্য তার ভ্রমণ কাহিনী জলে ডাঙায় থেকে নেয়া। ইচ্ছা ছিল জলে ডাঙায় বইটা পড়বো, এক রকম কথাই দিয়েছিলাম নিজেকে- ঐটাই আগে পড়বো। কথা রাখা হয় নি, দেশে বিদেশে পড়ে ফেললাম (কেউ কথা রাখে না🐸)
Thousands of stars shimmering in the sky at night,
But one moon makes them jealous- shining bright.

এত সব সূক্ষ্ম রসবোধ, অনন্য বর্ণনা দেখে আলী সাহেবকে সাহিত্যাকাশের চাঁদ বলেই মনে হয়। একজনই এমন! একজনই!


শান্তিনিকেতনে পড়া শেষে মাত্র ২৩ বছর বয়সে আলী সাহেব আফগানিস্তানে "কাবুল কৃষি কলেজে" ফারসি এবং ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পাঞ্জাব, খাইবার পাস হয়ে কাবুল যাত্রা এবং কাবুলে থাকাকালীন বর্ণনা সমৃদ্ধ "দেশে বিদেশে" বইটিকে পুরোপুরি ভ্রমণকাহিনী বলায় আমার আপত্তি আছে। ভ্রমণকাহিনী হিসেবে আমি শুধু খাইবার পাস হয়ে কাবুলে পৌঁছানোর অংশটুকুকে বুঝে নিতে পারি, এরপরের বর্ণনায় শুধুই কাবুল; সে হিসেবে স্মৃতিকথা বলতে পারি অনায়াসে। শুধুই কি স্মৃতিকথা! এই বই সেই সময়কার আফগানিস্তানের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, ব্যবসা, রাজনৈতিক অবস্থার দলিল। বড়ভাই ইনায়েতুল্লাহ কে পেছনে ফেলে ছোটভাই আমানুল্লাহ কি করে সিংহাসন পেলেন, কি করে বাচ্চায়ে সাকো'র কারণে আমানুল্লাহ'র পতন হল সেসব বিস্তারিত জানা যায়। আর জানা যায় শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় সজ্জিত আর সুবাসিত কাবুলের কথা। জানা যায় আলী সাহেবের বন্ধুদের কথা, আর খুবই কাছ থেকে দেখা যায় একজন আবদুর রহমানকে, বরফের থেকেও শুভ্রতর যার হৃদয়।
আমি আমার ভাঙা ভাঙা ফারসীতে জিজ্ঞাসা করলুম, সঙ্গীহীন জীবন কি কঠিন বোধ হয় না? বললেন, 'আমার চাকরী পল্টনের, ইস্তফা দেবার উপায় নেই। কাজেই বাইরের কাবুল নদীটি নিয়ে পড়ে আছি। রোজ সন্ধায় তার পাড়ে গিয়ে বসি আর ভাবি যেন একমাত্র নিতান্ত আমার জন্য সে এই দুর্গের দেয়ালে আঁচল বুলিয়ে চলে গিয়েছে।'

নিজ দেশ ছেড়ে গিয়ে আরেক দেশে গিয়ে থাকাটা মুখের কথা নয়, সহজ নয়। আরেকটি দেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলা আর হঠাৎ হঠাৎ দেশের জন্য মন কেমন করা অনুভূতি তারাই জানে যারা বিদেশ-বিভূইয়ে দিন কাটিয়েছে। এ কারণে এই বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের নাম “In A Land Far From Home” আমার বেশি পছন্দ হয়েছে। নিতান্তই খারাপ যে লাগে তা-ও তো নয়। সেখানেও কিছু মানুষ থাকে যারা হয়ে ওঠে আপনারজন। যার ফলে এই সুমধুর স্মৃতিকথা, হাস্যরসে মোড়ানো স্মৃতিকথা শেষে কেমন বরফ শীতল দুঃখবোধে রূপ নেয়! প্রবল হাস্যরস দিয়ে শুরু হলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে করুণ ভাবে শেষ হয় আলী সাহেবের এই কাবুল আখ্যান- দেশে বিদেশে


সবকিছু বাদ দিয়ে আমার মাথায় ঘুরছে- একজন আবদুর রহমান ছিলেন, বরফের থেকেও শুভ্রতর যার হৃদয়...

~২৩ জুন, ২০২১
Profile Image for Zamsedur Rahman.
Author 10 books161 followers
November 16, 2022
শিক কাবাব, ঢাকাই পরোটা, মুরগী মুসল্লম, আলু গোস্ত, মাংসের কোরমা, পেঁয়াজ-ঘিয়ে দুম্বার মাংস, বোম্বাই সাইজ শামী কাবাব, কোফতা-পোলাও, আস্ত মুরগি রোস্ট... দাঁড়ান, দাঁড়ান! ভাববেন না খাবারের রেসিপি লিখতে বসেছি। এটা শতভাগ বইয়ের রিভিউ। কিন্তু বইটা পড়তে গিয়ে এরকম অসংখ্য খাবারের নাম বারবার সামনে এসেছে। মনোযোগ দিয়ে পড়ার সময় যদি এমন সব খাবারের বর্ণনা চোখে পড়ে, কেমন লাগে বলুন! পেটটা কি খিদেয় মোচড় দিয়ে ওঠে না? আমার বেলায় তো পেটে ইঁদুরের লাফালাফি শুরু হয়েছিল! তবে সত্যি বলতে কী, বইয়ের সবকিছুই ভীষণ উপভোগ্য ছিল। পড়তে কোনো অসুবিধা হয়নি। বরং নেহারিতে থাকা অমৃত সমান মজ্জারসের মতো গিলে-শুষে খেয়েছি প্রতিটি পৃষ্ঠা।

রম্য সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সৈয়দ মুজতবা আলী। তার লেখা ‘দেশে বিদেশে’ বইটি বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ কাহিনি, যা ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সালের আফগানিস্তান ভ্রমণের উপর রচিত। এ বইটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ভ্রমণ কাহিনি হিসেবে গণ্য করা হয়। আজ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে অন্য কোনো ভ্রমণ কাহিনি এর মতো এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।

সৈয়দ মুজতবা আলী মাত্র তেইশ বছর বয়সে শান্তি নিকেতন থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর তিনি আফগানিস্তানের কাবুল কৃষি কলেজে ইংরেজি এবং ফারসী ভাষার শিক্ষক হিসেবে শুরু করেন কর্মজীবন। তার স্বপ্ন- কাবুলে অধ্যাপনা করে যে অর্থ সঞ্চয় হবে, পরবর্তীতে সেটা ব্যবহার করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য জার্মানি যাবেন। দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে এক বাঙালি যুবকের পশ্চিম ভারত থেকে আফগানিস্তান যাত্রাকালের স্মৃতি বিজড়িত, অভিজ্ঞতাপূর্ণ, জীবন গল্পের লিপিবদ্ধ রূপ ‘দেশে বিদেশে’।

কলকাতা হতে পেশাওয়ার, খাইবার পাস হয়ে জালালাবাদ, কাবুল যাত্রা এবং কাবুলে শিক্ষকতা কালীন সময়ের জীবন-যাপন নিয়েই মূল কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। লেখকের যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা, স্থানীয় ইতিহাস ঐতিহ্য এবং কাবুলের স্মৃতিকথা- এই তিনটি বিষয়ের উপর পুরো বইটি রচিত।

হাওড়া স্টেশন থেকে রেলগাড়িতে চড়ে পেশাওয়ার পথের যাত্রা কাহিনি দিয়ে গল্প শুরু। হাস্যরসপ্রিয় তরুণ লেখক একের পর এক বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছেন। স্থান, কাল, পাত্র কিচ্ছু বাদ যাওয়ার জো নেই। এর মাঝেই এক বিলেতি সাহেবের কাছ থেকে ভোজের নেমন্তন্ন। বাঙালি হিসেবে লেখকও কম যান না। নিজের খাবার নিয়ে মিলেমিশে খেতে বসলেন। বাকি পথে সফর সঙ্গী হলেন এক সর্দারজিসহ বেশ কয়েকজন পাঠান। শুরু হলো আড্ডা। দুনিয়ার নানান গল্প পাঠানদের ঝুলিতে। অদ্ভুত সেই গল্পের সত্য-মিথ্যা নিয়ে লেখক যখন সন্দিহান, তখন সর্দারজি দারুণ এক উদাহরণ টেনে বললেন- “গভীর বনে রাজপুত্তুরের সঙ্গে বাঘের দেখা। বাঘ বলল, আমি তোমাকে খাবো। এ হলো গল্প। তাই বলে বাঘ মানুষ খায় সেও কি মিথ্যা কথা?”

তর্ক-গল্পে লেখক কুপোকাত হলেন। সর্দারজির হাত থেকে রক্ষা পেলেন পেশাওয়ার পৌঁছানোর পর। তবে পাঠান মুলুকে প্রবেশ করে বন্ধুবর শেখ আহমদ আলীর জিম্মায় পড়লেন। দু-তিনদিনের সফর গিয়ে দাঁড়ালো এক সপ্তাহে। কোনোভাবেই আহমদ আলীর আতিথিয়েতা উপেক্ষা করার সুযোগ হলো না। পেশাওয়ার শহর, সেখানকার মানুষ, তাদের ইতিহাস কপচে অষ্টম দিনে মুক্তি মিলল।

কিন্তু লেখকের কপাল বলে কথা! পেশাওয়ার থেকে বন্ধু আহমদ আলী তাকে যে মুড়ির টিনে তুলে দিলেন তার ড্রাইভার ষাটোর্ধ্ব বয়সী এক শিখ সর্দারজি, নাম অমর সিং। জানতে পারলেন, অভিজ্ঞ এই ড্রাইভার সাহেব চোখ বন্ধ অবস্থাতেও কাবুল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সমস্যা শুধু একটাই। তিনি রাতকানা মানুষ!

এর পরের যাত্রা রীতিমতো শ্বাসরুদ্ধকর। নুড়ি পাথর, কাঁচা ভাঙা রাস্তা, অসম্ভব গরম, পাহাড় মরুভূমি পেরুনোর যে ভয়ংকর বর্ণনা পাওয়া যায়, তাতে কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে। সর্দারজির পাশে কোনোরকমে জান হাতে নিয়ে বসে লেখক যেভাবে খাইবাস পাস এলাকা অতিক্রম করলেন, তা যেন পুলসিরাত পার করার মতো উত্তেজনায় ভরপুর। স্মরণ করিয়ে দিই, যে সময়কার অভিজ্ঞতা-স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে সেটা আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর পূর্বেকার।

পেশাওয়ারের সুদীর্ঘ এই যাত্রার প্রথম বিরতি পাওয়া গেল জালালাবাদ পৌঁছানোর খানিক আগে। মরুপ্রান্তরে নিরাপত্তা প্রহরী সজ্জিত বিশাল এক দুর্গের সামনে এসে থামলো গাড়ির চাকা। জানা গেল, পাসপোর্ট না দেখিয়ে দুর্গ অতিক্রমের সুযোগ নেই। কৌতুহল এবং আগ্রহ নিয়ে লেখক সাহেব গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে বাঁ পাশের কাবুল নদী দেখে মুগ্ধ হলেন। এরপর দুর্গে ঢুকে কর্মরত অফিসারের ব্যবহার ও আতিথিয়েতায় মুগ্ধ হলেন আরেক দফা। তাদের আলাপচারিতায় বেদনাবিধুর জীবনের কথা উঠে আসে। বিশেষ করে এই অংশটি হৃদয়স্পর্শী-

“আমি (লেখক) আমার ভাঙা ভাঙা ফারসীতে জিজ্ঞাসা করলুম, সঙ্গীহীন জীবন কি কঠিন বোধ হয় না? (অফিসার) বললেন, আমার চাকরী পল্টনের, ইস্তফা দেবার উপায় নেই। কাজেই বাইরের কাবুল নদীটি নিয়ে পড়ে আছি। রোজ সন্ধ্যায় তার পাড়ে গিয়ে বসি আর ভাবি যেন একমাত্র নিতান্ত আমার জন্য সে এই দুর্গের দেয়ালে আঁচল বুলিয়ে চলে গিয়েছে।”

যাত্রাপথে লেখকের বক্তব্যে বিভিন্ন জানা-অজানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। সেসময়ে আফগানিস্তানের ইতিহাস তেমন লেখা হয়নি। তাদের প্রাচীন ইতিহাস পোঁতা আছে সে দেশের মাটির তলায় আর ভারতবর্ষের পুরাণ মহাভারতে। আফগানিস্তান গরীব দেশ। ইতিহাস গড়ার জন্য মাটি ভাঙবার ফুরসৎ আফগানদের নেই। মাটি যদি তারা নিতান্তই খোঁড়ে, তবে সেটা কাবুলী মোন্-জো-দড়ো বের করার জন্য, নয়তো কয়লার খনি পাবার আশায়। পুরাণ ঘাঁটাঘাঁটি করার মত পাণ্ডিত্য কাবুলীর তখনো হয়নি।

তাদের পূর্বসূরীদের তথ্য ঘাটতে গেলেও বিপদ। দক্ষিণে (আধুনিক) মধ্য ও দক্ষিণ-আফগানিস্তান তথা পশ্চিম-ভারতের গ্রীক রাজাদের কোনো ভালো বর্ণনা পাবার উপায় নেই। শুধু এক বিষয়ে ঐতিহাসিকের তৃষ্ণা তাঁরা মেটাতে জানেন। কাবুল থেকে ত্রিশ মাইল দূরে বেগ্রাম উপত্যকায় এঁদের তৈরি হাজার হাজার মুদ্রা প্রতি বৎসর মাটির তলা থেকে বেরোয়। খ্রীষ্টপূর্ব ২৬০ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১২০ রাজ্যকালের ভেতর অন্তত ঊনত্রিশজন রাজা ও তিনজন রানির নামচিহ্নিত মুদ্রা এযাবৎ পাওয়া গেছে। এগুলোর উপরে গ্রীক ও খরোষ্ঠী এবং শেষের দিকের মুদ্রাগুলোর উপরে গ্রীক ও ব্রাহ্মী হরফে লেখা রাজারানির নাম পাওয়া যায়।

ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির কথা পুরো বইজুড়েই। তবে লেখকের সাবলীল বর্ণনা আর প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় সেগুলো পড়তে বেগ পেতে হয় না। সেইসাথে প্রবল রসবোধ আর হাস্যরসাত্মক ঘটনা তো আছেই। বইয়ের চৌদ্দতম অধ্যায় পর্যন্ত ভ্রমণ যাত্রার বর্ণনা পাওয়া যায়। মূলত পনেরোতম অধ্যায় থেকে কাবুলের গল্প শুরু। এখান থেকে বইটিকে আর ভ্রমণকাহিনি মনে হয় না। বরং পরিণত হয় স্মৃতিকথায়। তখনকার মানুষের সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থার বিশদ বিবরণ মেলে। একারণেই হয়তো বইটিকে বলা হয়েছে আফগানিস্তানের লিখিত দলিল।

এবার কাহিনি যত এগোয়, কাবুলের রূপরস ততটাই সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। আফগানদের জাতি-উপজাতি, সংস্কৃতি, ভূ-প্রকৃতির বর্ণনার পাশাপাশি তাদের জীবন-যাপন, ভাষা, খাদ্যাভাস, ইত্যাদির সঙ্গে পরিচয় মেলে। লেখক যখন ফুল-ফলের বর্ণনা দেন, তার ঘ্রাণও যেন নাকে এসে লাগে। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সী, আরবিসহ যতগুলো ভাষার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়; সবগুলোর মাঝে লেখক এক অদ্ভুত মেলবন্ধন তৈরি করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ওমর খৈয়াম, কবি সাদী, বৈষ্ণব পদাবলীসহ অসংখ্য চেনা-অচেনা ব্যক্তিবর্গের কবিতা, গান, প্রবাদ, বক্তব্যকে প্রাসঙ্গিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

লেখক কাবুল শহরে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। যার কারণে বিভিন্ন দেশের শিক্ষক, গভর্নর, ক্ষমতাশীল মানুষদের সঙ্গে তার ওঠা-বসা ছিল। তখনকার শিক্ষা ব্যবস্থার দৃশ্য অতটা সহজ স্বাভাবিক ছিল না। সভ্য দেশের শহরবাসীরা গ্রামের জন্য স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তা-ঘাট বানিয়ে দিয়েছিল। কাবুলের গ্রামে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। কতকগুলো ছেলে সকালবেলা গাঁয়ের মসজিদে জড়ো হয়ে গলা ফাটিয়ে আমপারা মুখস্থ করে- এই হলো বিদ্যা চর্চা। তাদের তদারককারী মোল্লাই গাঁয়ের ডাক্তার। অসুখ-বিসুখে তাবিজ-কবচ তিনিই লিখে দেন। ব্যামো শক্ত হলে পানি-পড়ার বন্দোবস্ত করেন আর মরে গেলে তিনিই তাকে নাইয়ে ধুইয়ে কবর দেন। মোল্লার ভরণ-পোষণ করে গাঁয়ের লোকজনই। এই ছিল তখনকার অবস্থা।

আফগানিস্তানের শাসন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন রাজা-বাদশারা। ক্ষমতাশীলদের মাঝে দ্বিধা দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে সবসময়। লেখকের বর্ণনাতেই সেসময়কার ক্ষমতার পালাবদলের বীভৎস দৃশ্য ফুটে উঠেছে। বাদশাহ হাবিবুল্লাহ, রাজা আমান উল্লাহ, রাজার বড়ভাই মুইন-উস-সুলতান যে যেভাবে পেরেছে ক্ষমতার কলকাঠি নেড়েছে। বিশেষ করে আমান উল্লাহর ইউরোপ ভ্রমণ এবং পরবর্তীতে ইউরোপের আদলে আফগানিস্তান সংস্কার শুরু করলে লেজে-গোবরে অবস্থা তৈরি হয়। তার অদ্ভুত সব নিয়ম-কানুনের কাছে কাবুলের সাধারণ জনগণ অসহায় বোধ করে। সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। কাঠের শেষ পেরেক ঠুকে দেয় বাচ্চা নামক ডাকাত সর্দার। তার আকস্মিক আক্রমণে কাবুল শহর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।

ডাকাতের ক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়ে রাজা আমান উল্লাহ পালিয়ে যায়। শাসন ক্ষমতা কিছুদিন মুইন-উস-সুলতান এর উপর সোর্পদ হলেও শেষ পর্যন্ত সেও পালিয়ে যায়। শহরে লুটপাট ও অচলাবস্থা তৈরি হবার পর বিদেশি কূটনৈতিক যারা ছিলেন তারা একে একে দেশ ছাড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশি শিক্ষকেরা আটকা পড়ে যান। এই সময়টাতে তাদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত রইল না। একদিকে যেমন খাদ্য সংকট, অপরদিকে মৃত্যুভয়। এমন দুর্বিষহ অবস্থার ভুক্তভোগী ছিলেন লেখক নিজেও। পরবর্তীতে বহু কষ্টে নিজের দেশে ফেরার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু যে ভ্রমণের শুরুটা হয়েছিল অতি আনন্দে, সেটা শেষ হয়েছে কষ্ট এবং লাঞ্ছনায়।

আফগানিস্তান ও তার শহর কাবুল পর্বের ইতি টানবো একজন বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের পরিচয় দিয়ে। তার নাম আবদুর রহমান। সহজ সরল অথচ শত গুণের অধিকারী এই মানুষটি লেখকের কাবুলে পদার্পণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাশে ছিল। বিশালদেহী আবদুর রহমানের উচ্চতা ছ’ফুট চার ইঞ্চি, যা লেখক নিজের হাতে ফিতা দিয়ে মেপে দেখেছেন। রান্নাবান্না, ঘরের কাজকর্মসহ প্রায় সবকিছু দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল তার একার কাঁধে। বিনা প্রশ্নে বিনা সঙ্কোচে যেকোনো কাজ সাফল্যের সঙ্গে সম্পাদন করতো। তার কাছে অসাধ্য বলতে কিছুই ছিল না। লেখক তাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেছেন ‘হরফন-মৌলা’ বা ‘সকল কাজের কাজী’। আবদুর রহমান শুধুমাত্র লেখকের কর্মচারী ছিল না। সে ছিল বন্ধু বা ভাইয়ের সমান। যার হৃদয় বরফের থেকেও শুভ্রতর।

বিশাল এই পৃথিবী অসংখ্য সীমারেখায় বিভক্ত। প্রতিটি সীমারেখার মাঝে আবার অসংখ্য মানুষের বসবাস। জাতিগত, প্রথাগত, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা-দীক্ষা, আচার ব্যবহার, অভ্যাসে কত শত ভিন্নতা। কিন্তু ভিন্নতার মাঝেও মিল থাকে। থাকাটাই স্বাভাবিক। দিনশেষে আমরা মানুষই তো। তবে ভূ-খণ্ড আর প্রকৃতির যে পরিবর্তন, সেটা মানুষকে এবং তাদের জীবনকে করেছে বৈচিত্রময়, রহস্যময়। সেই রহস্য ও বৈচিত্র কারও নজর এড়ানোর সুযোগ নেই। মানবজীবনে এগুলো এক ধরনের অভিজ্ঞতা। যা জীবনকে পরিণত করে। লেখক তার ভ্রমণ জীবনের এমন অভিজ্ঞতাকে অবহেলায় হারিয়ে যেতে দেননি। বরং যত্নের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করেছেন।

সময়, স্থান ও কালের আপন মহিমায় ‘দেশে বিদেশে’ ভ্রমণ কাহিনি হওয়া সত্বেও এটি আফগানিস্তানের লিখিত ইতিহাসের একটি অনবদ্য দলিল হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। লেখকের রম্য রসাত্মক বর্ণনা, পরিচিত কিংবা অপরিচিত মানুষের সাথে রসালাপ, ঘটনার চমৎকার উপস্থাপন, ভ্রমণের সময় বিভিন্ন স্থানের বর্ণনা এবং শেষ পর্যায়ে এসে আফগানিস্তান ছেড়ে আসার করুন স্মৃতি অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই ভ্রমণ কাহিনিতে।

সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘দেশে বিদেশে’ বাংলা সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি কুঁড়িয়েছে কালজয়ী সাহিত্যের খেতাব। জীবনে একবার হলেও চমৎকার এই বইটি সকলের পড়া উচিত। হ্যাপি রিডিং।
.

বই: দেশে বিদেশে
লেখক: সৈয়দ মুজতবা আলী
প্রচ্ছদ: খালেদ চৌধুরী
ধরন: ভ্রমণকাহিনি
প্রকাশনী: স্টুডেন্ট ওয়েজ
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২০৮
মলাট মূল্য: ২৫০ টাকা
Profile Image for Rumana Nasrin.
159 reviews7 followers
April 4, 2018
এই বই আমি প্রথম পড়ি ক্লাস ফোরে পড়ার সময়, স্কুলের লাইব্রেরী থেকে এনে (ফেব্রুয়ারিতে বাড়ি গিয়ে দেখলাম সেই বইটা এখনো ���ছে!)। তখনো জানতাম না সৈয়দ সাহেব কে, আর কতোবড় মাপের লেখক!!! 'এসো যা পাই সব পড়ে ফেলি' স্বভাবের কারণে পড়তাম তখন। পড়তে গিয়ে মুগ্ধতা পেয়ে বসলো, যদিও অজান্তেই। আবার পড়লাম, তারপর আবার। এরপর সৈয়দ সাহেবের যা লেখা পাই পড়ে ফেলি। চাকরী পেয়ে রচনা সমগ্র কেনা হয়েছে, পড়াও হচ্ছে। তবে সেই ক্লাস ফোরে পড়ুয়া মেয়েটার মুগ্ধতা এখনো আছে!! মেয়েটা এখনো চোখ বুঁজলেই আবদুর রহমানকে দেখতে পায়, তাঁর রান্না করা মাংসের ঝোলে ডুবে মরতে চাওয়া আলুর টুকরো দেখতে পায়।

আমি সম্ভবত একটা স্বপ্নই দেখেছি জীবনে, বিশ্বভ্রমণ করার। জানি না কতোদূর কি করতে পারবো তবে এই স্বপ্নের বীজ কিন্তু সৈয়দ সাহেবের বোনা। দেশে বিদেশে আমার জীবনের প্রথম আর শেষ বই যা আমাকে লেখকের প্রেমে পড়তে শিখিয়েছে! আমরণ থেকে যাওয়া প্রেম যাকে বলে। আমি কখনো এই বইয়ের রিভিউ লেখার চিন্তা করিনি, আজ যা লিখলাম তাকে রিভিউ বলা ঠিক হবে না। অনেক অনেক খারাপ থাকা মেজাজকে কিছুটা ভালো করার প্রয়াস সম্ভবত।
Profile Image for Abu Rayhan Rathi.
108 reviews
December 26, 2020
বইটা পড়ে আচ্ছা একটা ঝামেলায় পড়া গেলো তো।আমাকে এর আগে যদি কেউ জিজ্ঞেস করতো সবচেয়ে প্রিয় বইটার নাম বলতে তবে চোখ বন্ধ করে পথের পাঁচালি নামটা বলে দিতাম।কিন্তু এখন থেকে মনে হয় না আর তা হচ্ছে।উত্তর দেওয়ার আগে বেশ ভালো করে ভাবতে হবে।আর ভেবেও কোনো কূল-কিনারা খুঁজে বের করতে পারবো কিনা তা নিয়েও বিস্তর সন্দেহ আছে।

নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন পাঠ্যবইয়ে 'প্রবাস বন্ধু' নামে একটা গদ্য ছিলো।ঐটা আবার 'দেশে বিদেশে' বইয়েরই একটা অংশ।তখনই ইচ্ছা জাগে বইটা পড়ার। কিন্তু আর পড়া হয়ে উঠেনি।অবশেষে পড়ে নিলাম।আর

কেমন লেগেছে?তাহলে বলতে হয়, কোনো কোনো গান শোনার পর তার সুরের মূর্ছনা যেমন মাথায় অনেকক্ষণ ম ম করে তেমনি সৈয়দ সাহেবের প্রতিটা বাক্যের ব্যঞ্জনা যেনো আমার মাথায় এখনো ম ম করছে।

এই বইয়ের ভালোমন্দ সম্পর্কে লেখা সম্পূর্ণ নিষ্প্রয়োজন।তাই শুধু পাঠ্যানুভূতিটা জানালাম।শেষে আর একটা কথা বলার আছে।লেখকের ভৃত্য আব্দুর রহমান হয়তো এতোদিনে বেঁচে নেই।তবে যে গভীর মমত্ববোধে সৈয়দ সাহেব তার ছবি আমাদের মনে এঁকে দিয়েছেন, আমার মনে হয় বাংলা সাহিত্য যতদিন থাকবে বাঙালি পাঠকদের মাঝে আব্দুর রহমান ঠিক ততদিন বেঁচে থাকবে।

বত্ব: যারা বইটা এখনো পড়েন নাই কিংবা 'টু রিড' এ আছে তাদের জন্য বইটা হাইলি রেকমেন্ডেড।এটা ফেলে রাখা ঠিক না।আর বিমুক্তি, ধন্যবাদ তোকে।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২০
Profile Image for Syeda Ahad.
Author 1 book130 followers
July 3, 2015
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এতখানি মুগ্ধতা নিয়ে আর কোনো বই পড়েছি বলে মনে পড়ছে না। সবটা ঠিক বুঝেছি তাও না। আরবী-ফার্সি ভাষার দৌড় দু-চারটা শব্দ পর্যন্তই বলে মাঝেমাঝেই থমকে গিয়েছি। বেশ কিছু যায়গা কয়েকবার করে পড়েছি, কিছু শেষ পর্যন্ত শুধু ভাবটুকুই বুঝেছি, কিন্তু তারপরেও ভাষার মাধুর্যে কাবু ছিলাম। অনেকদিন আগে থেকে পড়ার ইচ্ছা ছিলো। অনেকদিন ধরেই পড়েছিও। তাতে ভালোলাগার কমতি হয়নি। অসাধারণ-অসামান্য একজন লেখক আর তাঁর অসাধারণ এক বই! এখন বাবুরনামা পড়ার ইচ্ছে আগেরচেয়েও বেড়ে গেল। কেন যে এবার বইমেলায় নিলাম না!
Profile Image for Amit Das.
175 reviews116 followers
August 9, 2020
আহা, এ যেন অমৃত!
গত দু'সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই অল্প অল্প করে পড়লাম আর অমৃতের স্বাদ নিলাম প্রাণভরে। সৈয়দ মুজতবা আলীর স্বভাবসিদ্ধ রসাত্মক বর্ণনাভঙ্গির কথা অনেক আগে থেকেই শুনে এসেছি। শান্তিনিকেতনে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে মাত্র ২৩ বছর বয়সে আফগানিস্তানের কাবুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তাঁর কলকাতা থেকে পেশাওয়ার হয়ে কাবুল যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে শুরু হয় এই ভ্রমণলিপি।

কাবুলে তিনি অনেকের সাথেই পরিচিত হন এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম রসবোধের সাহায্যে তাদের সাথে কথোপকথন ও দৈনন্দিন জীবনের কার্যকলাপ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ও নানাবিধ বিষয় সম্পর্কে তিনি তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন। কাবুলে অবস্থানের শেষ পর্যায়ে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন শুরু হয় এবং বাচ্চায়ে সাকোর আক্রমণে বিপর্যস্ত কাবুল ত্যাগের করুণ কাহিনীর মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই আখ্যান।

গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোর মধ্যে লেখকের ভৃত্য আবদুর রহমানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। পুরো কাহিনী জুড়ে হাস্যরসাত্মক ও বিচক্ষণতা মিশ্রিত ঘটনার জন্ম দিলেও শেষ পর্যায়ে লেখকের সাথে তার বিদায়ের মুহূর্তে মর্মান্তিক এবং করুণ পরিণতি প্রতিটি পাঠকের মন খারাপ করে দিতে বাধ্য।

এ যাবৎ পড়া সবচেয়ে প্রিয় গ্রন্থগুলোর তালিকা বানালে সেটা খুব বেশি বড় হবে না। আর সেই তালিকায় অনায়াসে জায়গা করে নিলো সৈয়দ মুজতবা আলীর 'দেশে বিদেশে'। একটি ভ্রমণলিপি হওয়া সত্ত্বেও এটি যেন হয়ে উঠেছে আফগানিস্তানের লিখিত ইতিহাসের একটি অনবদ্য দলিল।
100 reviews27 followers
June 25, 2016
আব্দুর রহমানের জন্য মায়া জন্মে গেল। যখন মুজতবা আলী কাবুল ছেড়ে চলে আসছিলেন তখন যেন আমিও তার সাথে সেই প্লেনের যাত্রী। জানালা থেকে চোখে পড়ছিল সাড়ে ছয় ফুটের বিশালকায় বপু, শ্মশ্রুমন্ডিত, পাগড়ী পরিহিত সহজ সরল মনের আব্দুর রহমান। ছলছল চোখে পাগড়ীর ন্যাজ নাড়িয়ে সে বিদায় জানাচ্ছে।

"বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আব্দুর রহমানের পাগড়ি ময়লা। কিন্তু আমার মনে হল চতুর্দিকের বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ি, আর শুভ্রতম আব্দুর রহমানের হৃদয়।"
Profile Image for Mahbuba Sinthia.
133 reviews98 followers
June 12, 2021
কি চেয়েছিলাম, আর কি পেলাম?
মানবজীবনের ধর্মটাই তো এমন, " যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না "। এই প্রবাদের প্রথম অর্ধাংশ আমার জন্য সঠিক হলেও শেষাংশ ডাহা মিথ্যা। কারণ আমি চেয়েছিলাম হাস্যরসে ভরপুর একথালি পিঠে, কিন্তু পেয়েছি কষ্টের আগুনে পোড়ানো রুটি, নুন আর দুধ চিনি ছাড়া চা।
ওহে গুনী, যা চেয়েছিলাম তা ভুল করে চেয়েছিলাম, কিন্তু যা পেয়েছি, তার দাম পরিশোধ করব কিভাবে?

ভ্রমণ কাহিনী খুব বেশি পড়িনি, আর নিজের ভ্রমণ কাহিনীর পাতাটা শুন্য। তাই প্রথম থেকেই ভালো লাগছিল। মুজতবা আলীর লেখনীর কোন তুলনা হবে না। হাস্যরসের মাঝখানে বক্রোক্তি ঢোকাতে পারদর্শী লেখক বাংলা সাহিত্যে কমই আছেন।

বইয়ের প্রথম দিকেই আছে দেশের বর্ননা, মানে তৎকালীন ভারতবর্ষের। পাতায় পাতায় মোড়ানো অনবদ্য লেখনী, তার মাঝে মাঝে উঁকি দেয় পরাধীনতার গ্লানি আর স্বাধীনতার ইচ্ছে।

তারপরে খাইবারপাস পেরোনোর আখ্যায়িকা। পড়তে পড়তে লেখকের রসবোধে হাসব, না তার দুরাবস্থায় কাঁদব, বুঝতে পারছিলাম না।

এরপরের অংশ লেখকের আফগানিস্তানে কাটানো দিনগুলো নিয়ে। তার বর্ননায় লব ই দরিয়া, চিনার গাছের সারি, আর নরগিস ফুলের ঘ্রাণ জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু দৃশ্যপট বদলাতে সময় নেয়নি। কাবুলে কাটানো লেখকের শেষ দিনগুলো আমাকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছে। এ যে শুধু সাহিত্য নয়, সত্যি! জানি, কখনো অনুভব করতে পারব না, তবু চেষ্টা করেছি - অনাহারে, প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে আটটা রাইফেলের নলের মুখোমুখি হতে কেমন লাগে।

আমার পড়া নন ফিকশন বইয়ের মধ্যে এই বইটা অনেক ওপরে থাকবে।
Profile Image for Aishu Rehman.
1,082 reviews1,057 followers
Read
October 2, 2020
ইচ্ছা করতাছে খাটে দিয়ে দিই নিজের মাথায় একটা বাড়ি। অবশ্য রেটিং করলে নিজে বাড়ি না দিলেও অন্য কেউ যে দিব সে আমি নিশ্চিত।
Profile Image for Farhana Sufi.
493 reviews
August 17, 2021
সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯২৭-১৯২৯ এর দেড় বছরের মতো সময় কাটান কাবুল-এ। অধ্যাপক হিসেবে বাদশাহ আমানুল্লাহ-র সংস্কারপন্থী কাবুলে তিনি হাজির হন পেশওয়ার-খাইবারপাস-জালালাবাদ হয়ে। শান্তিনিকেতন থেকে পাশ করবার পরে ইচ্ছা ছিলো কাবুলে অধ্যাপনা করে কিছু সঞ্চিত হলে তা নিয়ে জার্মানি যাবেন উচ্চতর শিক্ষায়।

এই ভ্রমণ কাহিনি প্রায় শত বছর পূর্বের। এই কাহিনির শুরু ভারতের রেলগাড়িতে এক বাঙালির প্রথম পশ্চিম (ভারতের পশ্চিমাংশ) যাত্রার শুরু দিয়ে। আর শেষ এক বিদ্রোহ বিক্ষুব্ধ কাবুলে অনাহারে আটকে পড়া এক গরিব শিক্ষকের দুর্দশা থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যমে।

বইটা আমার কাছে ভ্রমণ কাহিনি কম, মেমোয়ার বা জীবনি বেশি মনে হয়েছে। মুজতবা আলী তার স্বভাবসিদ্ধ নিয়মে হাসিয়েছেন, মুগ্ধ করেছেন আফগানিস্থানের আবহাওয়া আর প্রকৃতির প্রাঞ্জল বিবরণে, খাবারের, ফলের, ফসলের ঘ্রাণ নাকে এসে লেগেছে। পাশাপাশি ফার্সী, উর্দু, আরবি মিলিয়ে মুজতবা আলী করে গেছেন শায়েরি, এসেছে অনেক কাব্য আর পাশাপাশি খটমটে অ্যানেকডোটও যা আজকের পাঠকের মন জয় নাও করতে পারে।

প্রায় একশ বছর আগে আফগানিস্তান ছিলো এখনকার মতোই নানান উপজাতিতে বিভক্ত আর তাদের মাঝের দন্দ্বে লিপ্ত। বাদশাহ হাবিবুল্লাহ ইংরেজকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন, গদি আমানউল্লাহ-র কাছে গেলে তিনি ইউরোপের ছায়ায় ঢালাও সংস্কার শুরু করেছিলেন, শিক্ষার দিকে ঝুঁকলেও তৎকালীন ইউরোপীয় শিক্ষিত হাতে গোনা কাবুলী আর সাধারণ আফগান উপজাতিদের মাঝে ছিলো না কোন সেতুবন্ধন। একদিকে আমানুল্লাহর আজব সব ফরমান, জোর করে সুটেড কোটেড করার চেষ্ট কাবুলের পথচারীকেও অন্যদিকে ধর্মীয় মোল্লাদের সহজেই নানান গোষ্ঠীকে উশকানি দিয়ে কাবুল দখলের ষড়যন্ত্রের মাঝে পড়ে শেষদিকে আটকে গেছিলেন ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশী প্রফেসরেরা। পরবর্তীতে আফগানিস্থানের ইতিহাসে আসলে খুব একটা ব্যতিক্রম নেই, যার ফায়দা পশ্চিমারা সবসময়েই লুটে এসেছে।

কিন্তু দেশে বিদেশে পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। মন ভালো হয়ে গেছে কৃষকের চাষের পন্থা শুনে, উত্তরের বরফের রাজ্য থেকে আসা চাকর আবদুর রহমানের ভালোবাসায়, খাবারের বর্ণনায় জিভে জল আসা যাকে বলে - তা হয়েছে, মন ভারাক্রান্ত হয়েছে মানুষের দৈনতা আর কষ্টে।

একদিন আফগানিস্তান বেড়াতে যাবার একটা প্রচ্ছন্ন ইচ্ছা আছে, সেটা প্রাচীণ Silk Road এর কারণে, খালেদ হুসেইনির A Thousand Splendid Suns পড়ে, নাকি মুজতবা আলীর 'শবনম' পড়ে আমি ঠিক জানি না। তবে তা আজকের ভগ্নদশা আফগানিস্তান না, যে আফগানিস্থান একটা সময়ে ইউরোপের সাথে সত্যিই তাল মিলিয়েছে, সেই কাবুল দেখার জন্যে। আপাতত একবার খাইবার পাসের উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময়ে প্লেন থেকে স্পষ্ট দেখেছি সেটাই পাওনা। এ বছর এপ্রিলে পাতাগোনিয়ার এল কালাফাতে-তে এক পোলিশ ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হয়েছিলো, সত্যিকার সিল্ক রুট পুরোটা ভ্রমণ করেছেন বছর কয়েক বছর আগে। হয়তো একদিন একটা নিরাপদ টুরিস্ট ডেস্টিনেশন হবে Silk Route এর পুরোটা সবার জন্যে, অগণিত মানুষ সেই পথে ভ্রমণ করবে অভিজ্ঞতার জন্যে, যে খাইবার পাসের পথ মুজতবা আলী প্রায় একশ বছর আগে ভাঙা একটা মুড়ির টিন এক চোখা বাসে পাড়ি দিয়েছিলেন সে পথ পাড়ি দেব আমিও।
Profile Image for Muhammad Kamruzzaman.
33 reviews8 followers
February 7, 2017
দেশে বিদেশে বোধ করি বাংলা ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ ভ্রমণ কাহিনী। বেশীরভাগ ভ্রমণ কাহিনীতে থাকে তাত্ত্বিক কথার ফুলঝুরি আর ভৌগোলিক বিশদ বিবরণ। অন্য সব ভ্রমণ কাহিনী থেকে মূল যে জায়গাটিতে এই বইটি অন্য আসনে আসীন, তা হল কাবুলের মানুষের জীবনের মধ্যে তিনি তার লেখা দিয়ে প্রবেশ করতে পেরেছেন। ভ্রমণ কাহিনী ও যে মানবিক হতে পারে, মানুষে-মানুষে ভালবাসার জয়গান গাইতে পারে, দেশে-বিদেশে তার অনন্য দলিল। সৈয়দ মুজতবা আলীর রসবোধ নিয়ে আলাদা কিছু বলবার নেই, বইয়ের পরতে পরতে রয়েছে হাসির খোরাক। অবশ্য পাঠ্য একটি বই।
Profile Image for Adham Alif.
323 reviews76 followers
December 12, 2023
একে ভ্রমণকাহিনী জনরায় কেন ফেলা হয়? ভ্রমণের গল্পের ব্যাপ্তি তো সামান্য। তার চেয়ে বিস্তর আকারে এসেছে আফগানিস্তানের মানুষ, তাদের চালচলন, খাদ্যাভ্যাস আর রাজনীতির গল্প। এই বইয়ের নাম “আফগানিস্তানের দিনগুলি” কিংবা “কাবুলের দিনরাত্রি” ধরণের কিছু হলে বেশি যুক্তিযুক্ত হত।

মুজতবা আলী বেশ রসিক মানুষ ছিলেন। তার লেখাতেও সেই ধারা রয়েছে। বেশ জটিল পরিস্থিতিকেও তিনি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন। শুরুতে আফগান যাত্রার যে অভিজ্ঞতার গল্প আমরা পাই তা শতবর্ষ পেরিয়ে পুনরায় পাওয়া অসম্ভব। সেখানে যাত্রার আনন্দ যেমন আছে তেমনি যন্ত্রণাও আছে। কাবুলের মানুষজনের সংস্কৃতি, আচরণের সাথে আমাদের মিল-অমিল এবং ইউরোপীয় প্রভাব নানানভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে আফগানিস্তানের বর্ণনায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় হিসেবে উঠে এসেছে আবদুর রহমান এবং রাজনীতির অন্দরের গল্প। রন্ধনশীল্পে নিজের পারদর্শিতার পাশাপাশি মনিব সেবায় নিমগ্ন আবদুর রহমানকে ভালো লাগতে বাধ্য। একদম শেষে তাকে নিয়ে উক্তিটা মনে দাগ কাটার মতো,

“বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ি ময়লা। কিন্তু আমার মনে হল চতুর্দিকের বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ি, আর শুভ্রতম আবদুর রহমানের হৃদয়।”
Profile Image for Fatema-tuz    Shammi.
125 reviews20 followers
March 7, 2021
"বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ি ময়লা। কিন্তু আমার মনে হলো চতুর্দিকে বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ি, আর শুভ্রতম আবদুর রহমানের হৃদয়। "
বরফে ঢাকা শুভ্র কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত আর চরম দূর্দশা পীড়িত এই দেশটির প্রতি এত মায়া জন্মে গেল জানিনা। আফগানিস্তানে আবার সুদিন ফিরে আসবে এই কামনা ই করি।
আগে বসে বসে অনেক মুগ্ধতা নিয়ে ভাবতাম জীবনে অনেক টাকা হলে কিভাবে, গ্রীস,মিশর, ইতালি ঘুরবো।সেই তালিকায় এখনো আফগানিস্তান ও যুক্ত হলো।কান্দাহার, কাবুল, জালালাবাদ সবই যেন মনে আচড় কেটে রেখে গেছে। ভালোবাসা আফগান বাসীর জন্য!
Profile Image for ~Rajeswari~ Roy.
153 reviews40 followers
March 8, 2021
আকাশে আকাশে বাতাসে তাহারা
আমাদের চারি পাশে
তোমার বিরহ ছড়ায়ে চলেছে
সৌরভ নিঃশ্বাসে


লেখক খুবই দক্ষতার সাথে তার আফগানিস্তান প্রবাসজীবনের গল্পগুলো তুলে ধরেছেন।প্রচুর পরিমাণ ঐতিহাসিক তথ্য ও রাজনীতিক কৌশল এ বইটিকে রত্নভাণ্ডারে পরিণত করেছে।
আবদুর রহমানের সরলতা আর প্রভুভক্তি সত্যিই চমক লাগিয়ে দেয়।আমার মনে প্রশ্ন জাগে আবদুর রহমানের সাথে লেখকের কোনদিন কি আর দেখা হয়েছিল?
Profile Image for Imam Abu Hanifa.
115 reviews27 followers
July 25, 2021
বাংলা সাহিত্যে যদি হাতেগোনা কয়েকটি ভ্রমণ সাহিত্যের নাম বলা হয় তবে সৈয়দ মুজতবা আলীর “দেশে-বিদেশে” থাকবে একেবারে প্রথম সারিতে। আমি খুব বেশি ভ্রমণ সাহিত্য পড়ি নাই। তবে যেটুকু পড়েছি তার মধ্যে ব্যাতিক্রম ছিলো এই বইটি।
১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সালের আফগানিস্তান ভ্রমণের উপর রচিত। এটি ১৯৪৮ সালের মার্চ মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এই বইটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ভ্রমণ কাহিনি হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্য কোন ভ্রমণ কাহিনি আজ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে এর মতো এতোটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।
একটি ভ্রমণলিপি হওয়া সত্ত্বেও এটি আফগানিস্তানের লিখিত ইতিহাসের একটি অনবদ্য দলিল।

সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সরাসরি ছাত্র। বিশ্বভারতীর প্রথম দিকের ছাত্র ছিলেন তিনি, তখনও বিশ্বভারতী পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়নি। ১৯২৬ সালে বিশ্বভারতী থেকে স্নাতক পাশ করে তিনি আফগানিস্তানে কাবুল কৃষি কলেজে ফারসি ও ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সেখানে কিছু অর্থ উপার্জন করে জার্মানে উচ্চশিক্ষার জন্য যাবেন।

বইটা হাতে নিয়েছিলাম ভ্রমণ কাহিনী জেনে। অথচ পড়তে গিয়ে দেখি এ তো শুধু ভ্রমণ কাহিনী নয়। ভ্রমণ কাহিনীর সাথে এ যেন জীবন্ত ইতিহাস। জীবন্ত ইতিহাস বললাম এ কারণে যে, লেখকের বর্ণনা পড়ার সাথে মনে হচ্ছিলো আমি নিজে সেই সময়ে উপস্থিত। আমি নিজেই যেন সাক্ষী হয়ে থাকলাম এক দেশের ইতিহাসে পালা বদলের।

যাত্রা শুরু হলো হাওড়া স্টেশন থেকে। সেখান থেকে পেশোয়ার, খাইবার গিরিপথ, জালালাবাদ হয়ে কাবুল। পথের বর্ণনাও চিত্তাকর্ষক। লেখকের সাথে নিজেও পথের মানুষগুলোকে আপন করে নিয়েছি। খাইবার গিরিপথের লোমহর্ষক বর্ণনা পড়ে স্বাধ জেগেছে গিরিপথে যাওয়ার। এও কি সম্ভব? হয়তো লেখকের লেখায় একটু বেশিই ডুবে গিয়েছিলাম। লেখক আফসোস করে বলছিলেন যে, আফগানিস্তান নিয়ে লেখার মত তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তাতেই লিখে ফেলেছেল কালজয়ী এক সাহিত্য। আর যদি লেখার পর্যাপ্ত রসদ পেতেন, তবে?

বইয়ের প্রথম অর্ধেক বেশ হালকা মেজাজের। বারবার হেসে উঠেছি লেখকের রসিকতায়। কত ভাবে যে রসিকতা করা যায় তা যেন লেখকের কাছ থেকেই শিখতে হয়। ধীরে ধীরে বইয়ের যত ভিতরে ঢুকেছি ততই যেন চিন্তা দানা বেধে উঠছিলো। ঠিক যেন আফগানিস্তানের রাজনৈতিক আবহাওয়ার মত। আফগানিস্তানের আবহাওয়া, পরিবেশ, বাজার-ঘাট, মানুষের চাল-চলন, রাজনৈতিক উথান-পতন; সব যেন ছবির মত দেখিয়ে দিলেন আমাকে।

যারা এই বইয়ের অংশবিশেষও পড়েছেন তারা চিনবেন আব্দুর রহমানকে। কলুষিত এই পৃথিবীতে আব্দুর রহমান যেন এক টুকরো ধবধবে সাদা আলো। নিজেকে যতই ঢেকে রাখুক, তা যেন হবার নয়। “ঝিলাম নদীর দেশ” পড়ে কেউ যদি নাজনীনে মুগ্ধ হয়ে থাকেন, তবে এখানে অপেক্ষা করছে আগা আব্দুর রহমান। যে নাজনীনের মত কাল্পনিক নয়। রক্ত-মাংসের মানুষ। লেখাটা শেষ করবো আব্দুর রহমানে সাথে বিদায় পর্ব দিয়ে।
“বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ী ময়লা। কিন্তু আমার মনে হল চতুর্দিকের বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ী, আর শুভ্রতম আবদুর রহমানের হৃদয়!”
Profile Image for Akash.
440 reviews143 followers
October 16, 2022
বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে লেখা সেরা বই। আফগানিস্তান ভ্রমণের (১৯২৯-১৯৩১) পুরো সময়টা লেখক এই বইয়ে তুলে ধরেছেন। মনে হয়েছে লেখকের সাথে আমিও ভ্রমণ করেছি।

আফগানিস্থানের শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ভাষা, আবহাওয়া, উত্থান-পতন সবই যেন সৈয়দ মুজতবা আলী বর্ণনা করেছেন।

আর ভৃত্য আব্দুর রহমানের কথা আর কি বলব। মনিব-ভৃত্য সম্পর্কের আদর্শ হয়ে থাকবে তারা। সৈয়দ মুজতবা আলীর আফগানিস্থান ত্যাগ করার সময় তাদের দুজনার হৃদয়ের কষ্টটা আমি পড়ার সময় তিনজনাতে পরিণত হয়েছে। যেন আমাদের তিনজনার অশ্রু দিয়ে লেখা 'দেশে বিদেশে'।

সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রতিটা বই আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। ওনার লেখায় জাদু আছে, রসবোধ আছে, তবে নিরপেক্ষতা নেই।

সৈয়দ মুজতবা আলীর সকল বই ২০২২ এর মধ্যে পড়ে শেষ করব। যদিও সব পড়া প্রায় শেষ।
Profile Image for Ihsan.
95 reviews13 followers
January 11, 2017
Bias Disclaimer - The author is a "grandparent" of mine.

There's two things I really loved about this book - the character development of some of the characters (Abdur Rahman especially) & the description of Afghanistan. Both were wonderful.

The plot was a little thin for the first half of the book, but it picks up in the second half.

Really enjoyable read, but I cannot call it a masterpiece. Doesn't blow me away enough.
Profile Image for Prithvi Shams.
110 reviews105 followers
April 23, 2017
Syed Muztaba Ali's memoir on Afghanistan is rich with scholarship, flavoured with the perfect dose of humor. The human side of Afghanistan, a country ravaged by violence of man and nature since time immemorial, acquires flesh and blood in his words. Muztaba Ali accomplishes the herculean task of a travel writer of nurturing interest in a foreign culture without being judgemental. This is something the writers of our supposedly enlightened times often lack.
Profile Image for Rani  Chatterjee.
60 reviews
February 26, 2025
দারুণ লাগল। মুজতবা আলীর সাথে ঘুরে এলাম দেশ বিদেশের নানা প্রান্তে। এর আগে চাচা কাহিনী পড়েছিলাম। এখন এই বইটি পড়লাম। অত্যন্ত সাবলীল লেখা- সহজে, আনন্দে পড়া যায়। তৃপ্তি পাওয়া যায় পড়ে। বেশ ভালো লাগলো, অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন।
Profile Image for Tahsina Syeda.
207 reviews61 followers
March 31, 2016
দাঁড়াও, পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে! 'দেশে বিদেশে' পাঠ না করিয়া মরিও না।
Profile Image for Saim Uddin.
32 reviews12 followers
July 5, 2023
বইয়ের নাম 'দেশে বিদেশে' হলেও এই বই মূলত আফগানিস্তানের গল্প, সাথে অন্যান্য দেশের কথাও উঠে এসেছে প্রসঙ্গক্রমে। ভ্রমণপিয়াসু মুজতবা আলী আফগানিস্তান গিয়েছিলেন শিক্ষকতার কাজ নিয়ে। সেখানে থাকাকালীন সময়ে তিনি দেখেছেন রাজনৈতিক উত্থান-পতন, ঋতু পরিবর্তন, পড়েছেন দুঃসহ পরিস্থিতিতেও। তবে সবচেয়ে মুখ্য হয়ে উঠে এসেছে নানাবিধ মানুষের গল্প। চরিত্রগুলোর সাথে সম্পৃক্ততা আস্তে আস্তে গাঢ় হয়ে ওঠে, ঘুরে আসা হয় সেই সময়ের আফগানিস্তানে। সাথে লেখকের বাচনভঙ্গি এবং রসবোধ এতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
Profile Image for Hridi.
19 reviews22 followers
October 3, 2024
পুরোটা সময় মনে হচ্ছিলো সৈয়দ মুজতবা আলীর সাথে কাবুলেই আছি। 💝
Profile Image for Kaushik Sarkar.
11 reviews1 follower
May 7, 2020
বইটা কেন এত দেরিতে পড়লাম কে জানে।কিন্তু পড়তে পড়তে এমনই নেশা লেগে গিয়েছিল যে এক পর্যায়ে মনে হতে থাকে বইটা যেন শেষ না হয়!
Profile Image for Galib.
276 reviews69 followers
November 21, 2019
অনেক শব্দের অর্থই বুঝতে পারি নাই । ইতিহাস জানা না থাকায় অনেক কৌতুকও ধরতে পারি নাই । কিন্তু তারপরও প্রিয় বইয়ের তালিকায় জায়গা করে থাকবে ।
খাইবার পাস হয়ে আফগানিস্তানে যাওয়ার বর্ননা শুনে এডভেঞ্চারটা নিজের করে নিতে মন চাচ্ছে ।

( শেষের দিকে আফগান রাজ পরিবারের পতন নিয়ে লেখা । এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলেছি ওই অংশটুকু )
Profile Image for Jubair Sayeed Linas.
81 reviews9 followers
August 2, 2021
বাংলা সাহিত্যে কেন একে শ্রেষ্ঠ ভ্রমণ কাহিনী বলা হয় তা বুঝলাম।
শুধু ভ্রমণ নয়, তার সাথে হিউমার, দর্শন আর ইতিহাস মিলে এক অবিনশ্বর সৃষ্টি।
সামজিক দিক বিচার করাও তার অনবদ্য সংযোজন।

যদিও কিছু জায়গা বেশ পড়তে বেগ পেয়েছি, তবে শুরুর আনন্দ আর শেষের বেদনাই বইয়ের মূল আরাধ্য। মাঝপথে যদিও খেই হারিয়েছে।

সবাইকে পড়তে হবে যদি ভ্রমণ পিয়াসী হোন অথবা শব্দের বুনন জানতে চান।
Profile Image for Kumar Anshul.
203 reviews40 followers
May 6, 2016
This book is translation of the Bengali travelogue "Deshe Bideshe" written by Syed Mujtaba Ali, a Bengali Muslim scholar from Shantiniketan and a disciple and student of Tagore, when he went to Afghanistan in 1927-29 to teach at the Kabul University.

An extremely interesting account, full of folklores, poems and anecdotes, this makes up for an extremely satisfying read. Ali went to Afghanistan when it was at the crux of a major political upheaval- Abdication of the liberal King Amanullah , who was overthrown by the bandit leader Bacha-e-Saqao. The author has taken great interests in describing the demeanor and daily life of Pathans and other Afghans and it is a painful account too of how the country suffered after Amanullah was overthrown.

One thing that really baffled me was the intricate knowledge of the author about Hindu Mythology and history, the references of which he keeps giving every here and there. But then I realized that he studied in Bengal, the epitome of Education and Secularism during that time (No wonder he shifted back to India from his hometown Dhaka post partition).

We all have known Afghanistan during the Taliban era (thanks to the media, Bin Laden and Khaled Hosseini). This book will take you back to the era when Afghanistan was "Independent Afghanistan" (while India was British India) and give you the first hand account of this arid, cold and unfortunate country.

A Must Read!
Profile Image for Kajori.
1 review10 followers
September 18, 2013
The best Travelogue till date by any author from the Indian sub-continent.
Profile Image for Turna Dass.
133 reviews
Want to read
June 4, 2025
"আমি এক যাযাবর,আমি এক যাযাবর,
পৃথিবী আমাকে আপন করেছে,ভুলেছি নিজের ঘর...."

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে,
এই যে উনি দেশে-বিদেশে যাযাবরের মতোন ঘুরে বেড়িয়েছেন, পৃথিবীর অপার বিস্ময়কে সানন্দে আস্বাদন করেছেন....

উনি কী নিজেকেই ভুলে গিয়েছিলেন?!

(আমার সাদা মনের সাদা প্রশ্ন)
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews15 followers
October 30, 2023
বেশি প্রত্যাশা নিয়ে কোনো বই পড়া ঠিক না। এটা আরেকবার প্রমানিত হলো আমার কাছে।
Profile Image for Nayeem Samdanee.
58 reviews14 followers
July 14, 2020
দীর্ঘকাল ধরে না-পড়ে জমিয়ে রাখা আরেকটি ধ্রুপদী গ্রন্থ পড়ে ফেলা গেল। শেষ করবার পর একটু খারাপই লাগলো; এই লেখা অনন্তকাল চলতে পারতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে লেখক এরচেয়ে বেশিদিন কাবুলে থাকতে সম্মত হলেন না। সম্ভবও ছিলো না।

আফগানিস্তান দেশটাকে যথেষ্ট বিপজ্জনক মনে করবার যে যথেষ্ট কারণ আছে, আবার দেশের সাধারণ মানুষকে ভালোবাসবারও কারণ বিস্তর—তা এই বইতে অনেকটাই বোঝা যায়। তবে আফগানিস্তানকে নিয়ে ভ্রমণকাহিনী লেখাই বোধহয় লেখকের সবচেয়ে বড়ো মুন্সিয়ানা। এই রুক্ষ, দুর্গম আর সেই সময়ের বিচারেও শিক্ষা-সভ্যতা আর প্রযুক্তিতে যথেষ্ট পিছিয়ে থাকা দেশটাকে নিয়ে এরকম দীর্ঘ, স্বাদু রচনা চাট্টিখানি কথা নয়। মুজতবা আলীর জায়গায় অন্য কেউ হলে পারতেন না, হলফ করে বলা যায়। পদে পদে হাস্যরস তৈরির ক্ষমতাই বলি কিংবা পরিপার্শ্বকে গভীরভাবে দেখতে পাওয়া শক্তিমান চোখই বলি, কোনোটারই অবদান কম নয়। তবে আমার দীর্ঘকালের ভুল ছিলো এই বইকে একটা নিপাট ভ্রমণকাহিনী বলে ধরে রাখা। নিঃসন্দেহে কাজটা অন্যায় হয়েছিলো। অবশ্য কেই-বা জানতো যে এতে আফগানিস্তানের এক রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের চাক্ষুষ বর্ণনা আর দুঃসহ অভিজ্ঞতাও এসে জুড়বে!

খুব বিস্ময়ের একটা বিষয় হলো, লেখকের এই সমস্ত অভিজ্ঞতা—যে-অভিজ্ঞতা এক জন্ম মাথা খুঁড়ে মরলেও পাওয়া শক্ত—জুটেছিলো মাত্র বাইশ-তেইশ বছর বয়সেই। ইতিমধ্যে বিশ্বভারতীতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠও চুকিয়ে এসেছিলেন। আজকালকার দিনে লোকজন এত পিছিয়ে যাচ্ছে কেন, কে জানে।
Displaying 1 - 30 of 223 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.