পুরনো মায়া সভ্যতা ধ্বংশের কিছুকাল পরের কথা। ইউকাটান পেনিনসুলায় স্প্যানিশদের আগ্রাসন শুরু হয়েছে। পুরনো মায়ান পিরামিড খুঁড়ে পাওয়া গেল একটি ব্রোঞ্জের মাথার খুলি। প্রাচীন মায়ানরা এটি উপাসনার কাজে ব্যবহার করত। ঘটনাক্রমে ফ্রান্সিসকান মোনক ডিয়াগো ডি লান্ডার হাত ধরে তা চলে যায় মার্টিন ও গ্রুভের কাছে। এই দুজন মায়ানদের একমাত্র বেঁচে যাওয়া বই এবং ব্রোঞ্জের মাথার খুলি নিয়ে পালাতে পারেন কি? তারপর ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যিনি শুরু করেছিলেন সেই জোব চার্নকের হাতে কীভাবে এল এই ব্রোঞ্জের মাথার খুলি? এবং বই? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে কি জানতে জোব চার্নক ব্যবহার করেছিলেন খুলি এবং পুরনো মায়ানদের বই? লেখক আফসার উদ্দিনের হাতেই বা কীভাবে এল? আফসার উদ্দিনের বাবা মৌর্য সম্রাট অশোকের যে গুপ্ত সংঘটন নাইন আননোন ম্যানের কথা বলেন সত্যিই কি তার অস্তিত্ব আছে? খুনের সাথে কি এরা জড়িত? নাকী এটা কোন ডিল্যুশন? কারা গ্যাডফ্লাই? নিজেদের কাজের যথার্থতার যুক্তি দেখাতে, প্রচলিত সমাজের রীতি নীতির অসারতার পক্ষে তারা কেন টেনে আনে সক্রেটিস , প্লেটো, এরিস্টটল কিংবা ফ্রেঞ্চ-আলজেরিয়ান দার্শনিক আলবেয়ার কামু কে? কে উজান ফকির? কালো আলখেল্লা পড়ে বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্ত, যেখানে মৃত্যু নিয়ত ওঁৎ পেতে থাকে, সেখানে সে কেন যায়? মারমা জাতির লোক ফ্রু এর সাথে তার কি কাজ? ব্রোঞ্জের মাথার খুলি, মায়ানদের প্রাচীন বই, হত্যা রহস্য এবং কৈলাশপুর গ্রামের অদ্ভুত ধর্ম বিশ্বাসের লোকদের কথা- এসব নিয়েই মূলত গ্যাডফ্লাইয়ের আত্মপ্রকাশ।
এইটা আমার পড়া লেখকের দ্বিতীয় বই। এর আগেরটা কাফকা ক্লাব পড়ে যথেষ্ঠ মজা পেয়েছিলাম, তাই লেখকের কাছ থেকে স্বাভাবিক ভাবেই এক্সপেক্টেশন বেড়ে গিয়েছিল। আগের বইটা ছিল থ্রিলার। ঐতিহাসিক কন্সেপ্ট এ লেখা। তাই আমি ভেবেছিলাম যে একই জনরা এর আরেকটা বই লেখকের কাভহ থেকে পেতে নিশ্চয়ই আগামী বছর তো হবেই। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে এই মাসেই বের হয়ে গেল গ্যাডফ্লাই।
লেখক কি আমার আগের মুগ্ধতা ধরে রাখতে পেরেছেন, উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, পেরেছেন। বলতে গেলে আগের চেয়ে খানিকটা বেশি ই পেরেছেন। এখন বাংলা থ্রিলার উপন্যাস আর এমন পরযায়ে নেই যে যা বের হবে তাকেই বাহবা দিয়ে যেতে হবে, কারণ অনেক ভালো লেখকই এখন আন্তরজাতিক মানের থ্রিলার লিখছেন। আমি মোটামুতি শিওর যে এই বই যদি বাংলাদেশে বের না হয়ে অন্য কোথাও বের হত তাহলে হয়ত আরো বেশি ফোকাস পেত।
বই এর ধরন যদি বলতে চাই তাহলে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা আসলেই খুব কঠিন। কারন একই সাথে থ্রিলার উপন্যাস এর অনেক গুলা এলিমেন্ট লেখক ব্যাবহার করে গিয়েছেন একইসাথে। খুন, একশন, হারানো সভ্যতার ট্রেজার, বিভিন্ন কাল্ট সবই উঠে এসেছে একই সাথে। বইটা পড়লেই বোঝা যাবে যে লিখতে গিয়ে গবেষণার পেছনে অনেক সময় দিয়েছেন লেখক। যারা থ্রিলার এর মধ্যে কেবল নিছক উত্তেজনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যও জানতে চান তাদের জন্য বইটা একেবারে গোল্ডমাইন। মায়ান, ব্রিটিশ সহ বিভিন্ন সভ্যতার পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের ধর্ম আর এর সাথে দরশনের অসাধারণ মিশ্রন লেখক ব্যাবহার করেছেন গল্প সাজাতে।
বই এর অনেক গুলো টাইমলাইন আছে। তবে মূল গল্পের টাইমলাইন বরতমান সময়ে এই বাংলাদেশেই। শুরু হয় মায়ানদের পতন এর মাধ্যমে এরপ্রে ব্রিটিশ দের বাংলায় আগমন ও এর পরে এখনকার সময় এর কাহিনী। এক সময় গিয়ে মারডার মিস্ট্রি তে পরিণত হয় কাহিনী। একজন লেখক নিরজনে এক গ্রামে বই লিখতে গিয়ে উন্মাদ হয়ে যান। এরপর হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পরে আত্মহত্যা করেন। এটা কি শুধুই আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু। ঘটনাক্রমে এতে জড়িয়ে পড়ে সাইদুর রহমান নামের এক জাঁদরেল পুলিশ অফিসার। যার মূল যুদ্ধ একটা নিরদিষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠন এর বিরূদ্ধে যার সদস্যদের সবার নাম আবার দার্শনিক দের নামানুসারে। বই এর নাম করণ এর রহস্য জানতে হলে পুরো বই পড়তে হবে।
বই এর লেখকের লেখার হাত নিঃসন্দেহে অনেক ভালো । তবে বইটা এর এলিমেন্ট গুলার তুলোনায় অতিরিক্ত ছোট বলে আমার মনে হয়েছে। আরেকটা জিনিস আমার মনে হয় যে প্রয়জনের তুলনায় অধ্যায় সংখ্যাও কম হয়ে গিয়েছে। যার ফলে মাঝে মাঝে গিয়ে একটু একঘেয়ে লাগতে পারে, তবে ভালো বর্ণনার কারণে তা হয়ত বেশী কিছু মনে হবে না। আশা করি লেখকের কাছ থেকে সামনে এরকম আরো থ্রিলার পাব। শুভকামনা রইল।
বই - গ্যাডফ্লাই লেখক -মুরাদুল ইসলাম প্রকাশনী - আদী গায়ের দাম - ১৬০টাকা। আদী প্রকাশনী এর বইয়ের দাম নিয়ে আমি খুব বেশি কনফিউজড জনেরা - এই বইয়ের জনেরা নিয়ে আরো বেশি কনফিউজড। মিস্ট্রি থ্রিলার নাকি হিস্টোরিককাক থ্রিলার নাকি হিস্টোরিকাল ফিকশন?
কাহিনী সংক্ষেপ - স্প্যানিশ দের দখলদারি তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে মায়া সভ্যতা। মানুষ অচেনাকে গ্রহন করতে ভয় পায় আর এই ভয় থেকে ধ্বংস করা হয়েছে মায়া সভ্যতার মূল্যবান দলিল ,তাদের ধর্মগ্রন্থ, দেবদেবীদের মূর্তি, মন্দির। তবে অদ্ভুত ভাবে টিকে যায় এক বই আর এক খুলি।প্রাচীন মায়ান সভ্যতার এই বইটা ধারন করছে এক সিক্রেট কিভাবে মায়ানরা খুলিটিকে ব্যবহার করত। সেই বই আর খুলি হাজার বছরের পথ পরিক্রমায় আসে এক বিখ্যাত লেখকের কাছে অন্যদিকে আবার ফিরে এসেছেন প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত দার্শনিকরা আর তাদের মধ্যমনি হয়ে আছেন "গ্যাডফ্লাই অফ এথেন্স " সক্রেটিস। তার পর থেকেই শুরু হয় গোয়েন্দা বিভাগের চৌকশ কর্মকর্তা সাইদুর রহমানের অ্যাডভেঞ্চার!! সাথে আছে বাংলাদেশের এক অখ্যাত গ্রামের এক পরিবারের অদ্ভুত ধর্মবিশ্বাস।
ভাল দিক খারাপ দিক ২টাই একই বইটায় এত বেশি ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে এত বার সময়কাল,পটভূমি পরিবর্তন করা হয়েছে যে শুরুর দিকে কিছুটা হলেও বিরক্ত লেগেছে আবার শেষের দিকে এসে বিরক্তিটাই ভাল লাগায় পরিনত হয়েছে । বিশাল পটভূমি লেখা এই উপন্যাসে বোধহয় চেনা জানা অনেকেই চলে আসছে সক্রেটিস,প্লেটো, এরিস্টটল, গ্রিক মিথ, মায়ান সভ্যতা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, অল্প সময়ের জন্য নবার সিরাজ উদ দৌলা ,সম্রাট অশোক, অর্ডার অফ দ্যা সোলার টেম্পল এর মত কাল্ট এর কথা আরো অনেক কিছু। এই জায়গা গুলার জন্য মনে হয়েছে বইয়ের পরিধি আরেকটু বাড়ানো যেত। সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা ভাল লেগেছে সেটা হল বইয়ের শেষ এর রেফারেন্স। ইদানিং ননফিকশনে বেশ মজা পাচ্ছি।
এইবার দুক্ষের কথা বলি গ্রুপে + গুড রিডসে ২বার বই দেবার প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম ফলাফল শূন্য। আমার লটারির ভাগ্যটা এত খারাপ কেনু :'( ন্যাড়া বহুবার বেল তলায় যায় এইটা প্রমাণ করার জন্য আজকে আবার আদী প্রকাশনী আয়োজিত কুইজে অংশ নিলাম :/
গ্যাডফ্লাই মানে ডাঁশপোকা, যা ঘোড়াকে বিব্রত করে। প্রাচীন গ্রীসে সক্রেটিসকে এথেন্সের গ্যাডফ্লাই বলা হতো, কারণ তিনি এথেন্সের গণ্য মান্য ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে বিব্রত করতেন। তো এই বিশিষ্ট গ্যাডফ্লাই এইখানে কি করতেছে?... বইয়ের নামকরণ যথেষ্ট যৌক্তিক মনে হয় নাই। অনেকটা জোর করেই প্রাচীন 'দার্শনিকদের' টেনে আনা হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
গল্পের শুরুটা অসাধারণ। ঝরঝরে লেখা, এক বসাতেই শেষ করার মতো। তবে অনেক অনেক ইতিহাস আর দর্শনকে এক সুতোই বাধতে যেয়ে শেষমেশ লেখক কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছেন বোধহয়। দুর্দান্ত প্লট, লেখকের মধ্যে নতুন কিছু লেখার ভালো রকমের প্রচেষ্টা চোখে পড়েছে। তবে আইডিয়া-এক্সিকিউশন মনে হয় আরেকটু ভালো হতে পারতো।
পরিশেষে, মুরাদুল ইসলামের লেখা বেশিরভাগ বই পড়া হয়েছে। উনার লেখার হাত বেশ ভালো এবং উনার অতিরিক্ত রকম ইতিহাস-দর্শন কপচানো ব্যক্তিগত ভাবে আমি বরং পছন্দই করি! সমস্যাটা দেখা যায় অন্য জায়গায়- 'দুনিয়ার হাজারটা বিষয়কে এক সুতোতে বাঁধতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলার তো কোন মানে হয় না, এটি পাঠকদের মনে বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়!'
____________কাহিনী সংক্ষেপ( বই এর ফ্ল্যাপ থেকে)______________
পুরনো মায়া সভ্যতা ধ্বংশের কিছুকাল পরের কথা। ইউকাটান পেনিনসুলায় স্প্যানিশদের আগ্রাসন শুরু হয়েছে। পুরনো মায়ান পিরামিড খুঁড়ে পাওয়া গেল একটি ব্রোঞ্জের মাথার খুলি। প্রাচীন মায়ানরা এটি উপাসনার কাজে ব্যবহার করত। ঘটনাক্রমে ফ্রান্সিসকান মোনক ডিয়াগো ডি লান্ডার হাত ধরে তা চলে যায় মার্টিন ও গ্রুভের কাছে। এই দ���জন মায়ানদের একমাত্র বেঁচে যাওয়া বই এবং ব্রোঞ্জের মাথার খুলি নিয়ে পালাতে পারেন কি? তারপর ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যিনি শুরু করেছিলেন সেই জোব চার্নকের হাতে কীভাবে এল এই ব্রোঞ্জের মাথার খুলি? এবং বই? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে কি জানতে জোব চার্নক ব্যবহার করেছিলেন খুলি এবং পুরনো মায়ানদের বই? লেখক আফসার উদ্দিনের হাতেই বা কীভাবে এল? আফসার উদ্দিনের বাবা মৌর্য সম্রাট অশোকের যে গুপ্ত সংঘটন নাইন আননোন ম্যানের কথা বলেন সত্যিই কি তার অস্তিত্ব আছে? খুনের সাথে কি এরা জড়িত? নাকী এটা কোন ডিল্যুশন? কারা গ্যাডফ্লাই? নিজেদের কাজের যথার্থতার যুক্তি দেখাতে, প্রচলিত সমাজের রীতি নীতির অসারতার পক্ষে তারা কেন টেনে আনে সক্রেটিস , প্লেটো, এরিস্টটল কিংবা ফ্রেঞ্চ-আলজেরিয়ান দার্শনিক আলবেয়ার কামু কে? কে উজান ফকির? কালো আলখেল্লা পড়ে বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্ত, যেখানে মৃত্যু নিয়ত ওঁৎ পেতে থাকে, সেখানে সে কেন যায়? মারমা জাতির লোক ফ্রু এর সাথে তার কি কাজ? ব্রোঞ্জের মাথার খুলি, মায়ানদের প্রাচীন বই, হত্যা রহস্য এবং কৈলাশপুর গ্রামের অদ্ভুত ধর্ম বিশ্বাসের লোকদের কথা- এসব নিয়েই মূলত গ্যাডফ্লাইয়ের আত্মপ্রকাশ। ____________________________________________________
পার্সোনাল রেটিং : 6.5/10 ( গ্যাডফ্লাই মূলত একটি হিস্টোরিক্যাল ফিকশন। বেশ বড় টাইমলাইন নিয়ে (মায়া সভ্যতা থেকে এখনকার সময় )এটি নিয়ে লিখা। বইটি লেখার আগে লেখক মায়া সভ্যতা আর এর পরের ইতিহাস নিয়ে বেশ ভালোই পড়ালেখা করেছেন যা প্রশংসা পাওয়ার মত। গল্পের মূল থিম ভালো আর টুইস্টগুলো ও দারুন। তবে পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে গল্পটি লিনিয়ার ভাবে না লিখে নন - লিনিয়ার ভাবে লিখলে (মূল কাহিনী শুরুই হয় ৫০ পৃষ্ঠার পরে ) আরো আকর্ষণীয় হতো। যেহেতু কাহিনীর সাথে সক্রেটিস বিভিন্ন ভাবে জড়িত , তাই দর্শন নিয়ে কিছু লেখা আশা করছিলাম ,সে লেখাগুলো গল্প- উপন্যাস এর মত না হয়ে প্রবন্ধের মত হয়ে গেছে।চরিত্র গুলি কেমন যেন সাদামাটা। আর শেষদিকে মনে হল জোর করে শেষ করা হচ্ছে।এরকম বেশ ভালো মানের প্লটের গল্প থেকে আরেকটু ভালো এন্ডিং আশা করেছিলাম। যাই হোক,লেখক শেষ দিকে সিক্যুয়াল এর বেশ বড় একটি হিন্ট দিয়েছেন,আশা করি পরের বইগুলো থেকে এর চেয়ে আরো ভালো মানের থ্রিলার লেখা পাব । )
প্রচলিত দেশীয় সাহিত্যে থ্রিলার উপন্যাসের আগমন কিন্তু খুব বেশি দিনের নয়। অনেক এক গল্প শুনানো হয়ছে ,এক প্লট দেখানো হয়ছে ,একই রকম ঘটনা লেখা হয়ছে এবার নতুন গল্প গুলো শুনানো হোক ! একমুখী ঘটনা ও একক কেন্দ্রীয় চরিত্রের ধারণাকে ভেঙে এই উপন্যাসে লেখক আগমন ঘটান একসাথে অনেক গুলা এলিমেন্টের। হত্যা, হারানো সভ্যতার ট্রেজার, বিভিন্ন কাল্ট। বইটা পড়লেই বোঝা যাবে যে লিখতে গিয়ে এর পেছনে অনেক সময় দিয়েছেন লেখক।
প্লট বেশ চমৎকার। খুঁটিনাটি যতদূর সম্ভব জেনেই প্লট সাজানো হয়েছে। পড়াশুনা কখনো প্রচুর হয় না। অতএব প্রচুর পড়াশোনা, গবেষণা করে বইটি লিখা হয়েছে, সেটা বলাও ঠিক হবে না। তবে এই কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, খুব তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হয়েছে বইটা। প্রথমদিকে দারুণভাবে শুরু হলেও বইয়ের শেষের দিকে এসে একটু হতাশ হতে হয়েছে। সবমিলিয়ে মনে হয়েছে লেখক হয়ত কাহিনীটা সাজিয়েছিলেন অন্য ভাবে কিন্ত তেমনভাবে শেষ করতে পারেন নি। মনে হয়েছে তাড়াহুড়ো করে খুব দ্রুত শেষ করে দিয়েছেন।
আশা করি পরের বইগুলো থেকে এর চেয়ে আরো ভালো মানের থ্রিলার লেখা পাব...
কাহিনীর synchronization এ সমস্যা আছে।শুরুটা বেশ ভালো লেগেছে কিন্তু শেষটায় মনে হয়েছে লেখক খেই হারিয়ে ফেলেছেন।ইতিহাস নিয়ে কচকচানি কম হলে খারাপ হতে না ।চরিত্রগুলো আরো সুন্দর ভাবে চিত্রায়িত হতে পারত।কিন্তু হয়নি।সবমিলিয়ে মনে হয়েছে লেখক হয়ত কাহিনীটা সাজিয়েছিলেন অন্য ভাবে কিন্ত তেমনভাবে শেষ করতে পারেন নি।
অশুদ্ধ বাংলার দেদার ব্যবহার, ইনফোডাম্পিং, গল্পের গতির বারোটা বাজিয়ে হঠাৎ করে তাত্ত্বিক আলোচনা, সর্বোপরি ইতিহাস-আশ্রিত রহস্যকাহিনি হিসেবে শুরু হয়ে পরে গল্পকে ঘেঁটে ঘ করা। এই বইটি প্রসঙ্গে লিখতে গেলে এই কথাগুলোই মাথায় আসছে। অথচ ব্যতিক্রমী থ্রিলার হয়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা ছিল গল্পটার মধ্যে। আমারই দুর্ভাগ্য, বইটা হতাশ করল।
নতুন লেখকদের লেখা বাংলা রোমাঞ্চপন্যাসে রোমাঞ্চ থাকুক অথবা না থাকুক যে জিনিসটা আছে বলে ঠিক ধরে নেয়া যায় সেটা হচ্ছে হাজারটা ভুল বানান। বাংলা থ্রিলার আর বানান ভুল যেভাবে সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মূল্য হয়তো একসময় এর লেখক পাঠক উভয়কেই দিতে হবে!
বই পড়ে আশাহত হয়েছি। অন্তর্জালে যা প্রশংসা দেখেছি তার কিছু অংশ যদি বইতে পেতাম তাহলে হয়তো বানান ভুলের বিরক্তিটা কাটিয়ে উঠতে পারতাম। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি!
এই বইটার জন্য pretentious নাম দিয়ে নতুন একটা ট্যাগ বানালাম। বই এর কাভার এবং নাম দুটোই মিসলিডিং। বইতে জ্ঞানের অনেক কচকচানি আছে এবং সেটা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। ফ্যাক্ট যে শুধু নন ফিকশনেই থাকতে হবে এমন কোন নিয়ম কেউ বেঁধে দেয়নি। কিন্তু সেই কচকচানিটাকে বই এর কাহিনীর সাথে রিলেট করতে হবে তো? বলা হল সক্রেটিস কে গ্যাডফ্লাই বলা হত কারণ তিনি এমন সব প্রশ্ন করতেন যার উত্তর দিতে না পেরে সমাজের গণ্য মান্য ব্যাক্তিরা বিব্রত হয়ে পড়তেন। তো গ্যাডফ্লাই এবং সক্রেটিস এবং অন্যান্য আর যার যার নাম নেয়া হয়েছে তাদের সাথে এই বই এর সম্পর্ক কি? উত্তর নেই। পড়তে পড়তে আমি আশা করছিলাম বইতে এমন কোন চরিত্র থাকবে যা সমাজের প্রচলিত রীতি নীতি কে প্রশ্ন করে রিএ্যাক্ট করবে। সেরকম কিছু পাইনি।
আর কাহিনী ও সাদামাটা। শুরুর দিকটা আগ্রহ ধরে রাখার মত হলেও পরের দিকটায় লেখক কেবল বর্ণনা করে গেছেন যে এ এটা করেছে, ও ওটা করেছে। রহস্যোপন্যাসে এত সাদাসিধে বিবরণ ভালো লাগেনি। বোরিং। আর শেষের দিকে হাসিব নামক চরিত্রটির ব্যাকস্টোরি আউট অব কন্টেক্সট মনে হয়েছে।
নতুন লেখকদের বই আগ্রহ নিয়েই পড়ি। গুডরিডসে কাহিনী সংক্ষেপ পড়েই (Historical Fiction আমার প্রিয় genre) বইটি সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু পাঠ-পরবর্তি প্রতিক্রিয়া মিশ্র। প্রচুর পড়াশোনা করে বইটি লিখা হয়েছে, সেটার রেফারেন্স বইয়ের শেষে দেয়া আছে। প্রথমদিকে দারুণভাবে শুরু হলেও ���ইয়ের মাঝামাঝি এসেই হতাশ হতে হয়েছে। বইয়ের চরিত্রগুলো যে যার কাজ ঠিকমতোই করছে, কিন্তু তাতে যেন কোন প্রাণ নেই। একটি বই গবেষণা করে, পরিশ্রম করে লেখা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার, কিন্তু পাঠকের বিরক্তির উদ্রেগ না করে সেই তথ্যগুলো সুনিপুনভাবে কাহিনীতে সমন্বয় করাটাও অনেক বেশি জরুরি। লেখকের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ। এর চাইতেও অনেক ভালো কাহিনী তিনি লিখবেন আশা করি। রেটিংঃ ২.৫/৫
বইটা যত সুন্দর ভাবে শুরু হয়েছিল ততই বাজে ভাবে শেষ হয়েছে। কাহিনী বিস্তৃত করে জট আর ঠিকভাবে খুলতে পাড়েননি লেখক। শেষের দিকে লেখক মনে হয় আর লেখার ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি। তারাহুরোর ছাপ স্পষ্ট। তবে যেটা ভাল ছিল সেটা হল দারুন কিছু ইনফো। লেখক দারুন গবেষণা করেছেন বইটি লিখতে গিয়ে তার ছাপ স্পষ্ট।
মুরাদুল ইসলামের বহুমাত্রিক লিখালিখির সাথে অনলাইনে অনেকের পরিচয় আছে। নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং সাবস্ট্যাকে তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন লেন্সে দেখা, ক্ষুরধার বিশ্লেষণী রাইটিং এর কারণে অনেক সময় মুরাদুলের আরেকটি পরিচয় হয়তো অনেকে ভুলে যায়।
সেটি হলো কাগজের মলাটবদ্ধ বইয়ের লেখকও মুরাদুল ইসলাম। দীর্ঘ সময় ধরে তার চিন্তার সাথে নানান প্লাটফর্মে পরিচিতি লাভ করতে পেরে উপকৃত এই আমি প্রথম মুরাদুল ইসলাম রচিত কোন কাগজের বই পড়ে শেষ করলাম।
'গ্যাডফ্লাই' পাঠকালে অবশ্য একটা কথা মাথায় রেখে এগিয়েছি। তা হলো বইটি ২০১৫ সনে প্রকাশিত। ২০২৪ এর মুরাদুল ফিকশন লেখার বেলায় অনেক অনেক ইমপ্রুভড একজন রাইটার।
মায়ান সভ্যতার এক ব্রোঞ্জ নির্মিত জাদুকরী মাথা এ হাত ও হাত ঘুরে এসেছে বাংলাদেশে। বেশ ক'জন ঐতিহাসিক চরিত্রের কাছে গিয়ে অদ্ভুত বস্তুটি ধরা দিয়েছিলো ভাগ্যচক্রে। এই মাথাটির ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা আছে।
উপন্যাসে বিভিন্ন দার্শনিক, ঐতিহাসিক ব্যক্তি এবং ঘটনাবলীর বর্ণনা রয়েছে। যদিও ঐসব ঘটনা এ নভেলের অংশ মাত্র, মূল নয়। ফিকশন যেহেতু একজন রিডারকে বেশি তাড়িত করে তাই নন-ফিকশনের বিষয়-আশয় ফিকশন ফরম্যাটে আসাটা ভালোই।
'গ্যাডফ্লাই'এর শুরুটা বেশ আগ্রহোদ্দিপক মনে হয়েছে। কৌতুহলী অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে মিথ, মিথলজির বিভিন্ন অনুসঙ্গ এবং ঐতিহাসিক চরিত্রসমূহের কোন অতি নাটকীয়তা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে আখ্যানে হাজিরা দেয়াটা।
মুরাদুল ইসলাম বইটি রচনা করার পূর্বে নানামুখি লেখাপড়া করে প্রস্তুতি নিয়েছেন বেশ তবে এত এত তথ্য-তত্ত্বের সমারোহের মাঝে যুৎসই সামঞ্জস্য খুঁজে পাই নি। তাছাড়া 'গ্যাডফ্লাই' অর্থাৎ ডাঁশপোকা যা অতি ক্ষুদ্র আকার-আয়তনের অধিকারী হওয়ার পরও তুলনামূলকভাবে অতিকায় ঘোড়াকে বিব্রত করে এই থিমটি উপন্যাসে প্রতিষ্ঠা পায় নি। তাছাড়া উক্ত নভেলে সম্পাদনার দুর্বলতা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একদম ফ্ল্যাট গদ্য এবং একটা সময়ের পর নিদারুণ তাড়াহুড়ো অনেক সম্ভাবনাময় এক উপন্যাসকে সঠিক জায়গায় নিতে পারে নি। 'গ্যাডফ্লাই'এ চোখে পড়ার মতো বেশ বড় এক প্লটহোল নজরে এসেছে।
মুরাদুল ইসলামের 'ফকির ফয়জুল্লাহ' নভেল সাবস্ট্যাকে পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছিলো। তাঁর কাগজে ছাপা বইসমূহ একসময় পড়ে শেষ করার ইচ্ছা রাখি।
ইন্ট্যালেকচুয়াল মুরাদুল ইসলামকে অনলাইনে আমি ফলো করি। তাঁর চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি বেশ ইনসাইটফুল।
লেখকের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।
বই রিভিউ
নাম : গ্যাডফ্লাই লেখক : মুরাদুল ইসলাম প্রকাশক : আদী প্রকাশন প্রকাশকাল : মার্চ ২০১৫ প্রচ্ছদ : নির্ঝর নৈঃশব্দ্য জনরা : থ্রিলার রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
ওভার অল বইটাকে একটা ডিশ হিসেবে কল্পনা করলে কিশমিশ এর মতো ছড়িয়ে আছে ফিলোসোফির জিনিসপাতি। মূল প্লটটা যথেষ্ট ইন্টারেসটিং লাগলেও প্লটে মোটিভটা ঠিক এখনও বুঝিনি। থ্রিলার হিসেবেও বইটা একটু পিছিয়ে থাকবে আমার মতে। তারপরও বইটা রেকমেন্ড করবো শুধুমাত্র ইনসাইট এবং ইনফ্লুয়েন্স এর কারণে। মুরাদুল ইসলাম বরাবরই আমাকে একজায়গায় ইনফ্লুয়েন্স করে- বই পড়াতে৷ বিশেষত নন-ফিকশন, ‘জ্ঞানের বই’ পড়াতে। জগৎ বুঝার বই পড়াতে। এই বইটাও তার ব্যতিক্রম না।
বইয়ে কি হয়? সেরকম কিছুই না। খুনটুন হয়, খুনী ধরতে পুলিশের সাইদুর রহমান আদাজল খেয়ে লাগে। একটা গুপ্তগোষ্ঠী থাকে.... এই পর্যন্ত এসে অনেকে নাক সিটকাবেন যে এরকম বই তো অনেক হয়েছে, কিন্তু না। মজাটা এখানেই। এই গুপ্তগোষ্ঠী অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা।
বইয়ের শেষটা, মানে যবনিকাপাত ঠিক যুতসই হয়নি বলেই মনে হয়েছে। একটা খাপছাড়া ভাব আছে। এটা বাদ দিলে ওভার অল ভালো লেগেছে।
বইটার বিশেষগুণ হচ্ছে আঠার মতো আটকে রাখতে পারে, ফলে ২৫১ পৃষ্ঠার বই শেষ হয় স্বাভাবিক এর চেয়েও দ্রুত।
জন্রা ঠিক কি বলা উচিত জানি না। থ্রিলার তো অবশ্যই, সাথে হিস্টোরিকাল বা মিথিকাল লাগানো যায় কি না সন্দেহ আছে, তবে আমি সুররিয়াল বিশেষণটা ব্যক্তিগতভাবে লাগাবো।
বইয়ের একটা কবিতা ভালো লেগেছে, সৌমিত্র দেব এর নামে লেখা, সৌমিত্র দেব নামে কারও কবিতা যদিও পেলাম না গুগলে- ‘সেও তখন হাসছিল মহাশূন্যে ভাসছিল চোখের কাচে ঘুম পাতানো প্রিয়জনের লাশ ছিল।’
এখন বলুন তো, কি করে পৃথিবীতে প্রথম কিছু মানুষের কাছে অর্থ জমা হতে শুরু করলো আর কিছু মানুষ নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে শ্রমিকে পরিণত হলো?
পিবিএসকে ধন্যবাদ এমন বিচিত্র কিছু বই সংগ্রহে রাখার জন্য। হয়তো জানতামই না এর কথা। অসাধারণ একটা বই। বিচিত্র সেটিং! তথ্যবহুল। যদিও অসংখ্য বানান ভুল ছিল। বাংলাদেশের সম্পাদনা-ছাড়া বই প্রকাশের আরেকটা উদাহরণ। ড্যান ব্রাউনের সাথে সাথে কি বিশেষ কোনো কাল্ট নিয়ে লেখার প্রবণতা থ্রিলার লেখকদের মধ্যে বেড়েছে? যাই হোক, বইটি পড়তে গিয়ে ভালোই অ্যাড্রেনালিন ক্ষরেছে। লেখকের 'কাফকা ক্লাব' পড়ব ভাবছি।
প্লট নিঃসন্দেহে চমৎকার।বেশ গবেষণা করে খুঁটিনাটি যতদূর সম্ভব জেনে প্লট সাজানো হয়েছে এবং এটি অবশ্যই খুবই ভালো একটি বৈশিষ্ট্য।অন্য কিছু ব্যাপার বাদ দিলে কেবল এই প্লট তৈরিতেই লেখকের মুন্সিয়ানা খুঁজে পাওয়া যায়,অন্তত আমি পেয়েছি।
তবে "অন্য কিছু ব্যাপার"ও আছে।লেখক কাহিনীতে গতি আনতে চেয়েছেন বলেই সম্ভবত অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কাহিনী এগিয়ে নিয়েছেন।তবে গতি সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই কাহিনী উত্তেজনা এবং চমক নিয়ে আসা।থ্রিলারে গতি না থাকলে সেটা ঠিক সুখপাঠ্য হয়ে ওঠে না।কাহিনী সত্যিই এগিয়েছে,তবে সেটাকে গতি না বলে তাড়াহুড়ো বলা উচিত হবে।উত্তেজনার বদলে এটি বরং বিরক্তি উৎপাদন করেছে কিছু ক্ষেত্রে। মনে হয়েছে এরকমঃলেখককে সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং অল্প কিছু পৃষ্ঠার মাঝে পুরো কাহিনী শেষ করতে বলা হয়েছে! এজন্য তিনি এত সুন্দর একটি প্লটের অবতারণা এবং সমাপ্তি তাড়াহুড��ো করে দ্রুত শেষ করে দিয়েছেন।বইয়ের প্রথম দিকে গতি স্বাভাবিক থাকলেও মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনা সব সাঁ সাঁ করে ঘটে গেছে।থ্রিলারে গতি জরুরী হলেও,একেকটা ঘটনা ঘটে যাবার পর পাঠকের নার্ভকে সুক্ষ্মভাবে কিছুটা সময় বিশ্রাম দেয়াটা অনিবার্য।লেখক এ কাজটি এড়িয়ে যাবার কারণে কাহিনীর আবেদন অনেকটা কমে গিয়েছে।
এ প্লটে এই লেখকই যদি আরেকটু ধীরেসুস্থে এগিয়ে পুরোটা লিখতেন,আমার বিশ্বাস,এ বইটি সাম্প্রতিক সময়ের সেরা বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিত।
এটার চরিত্রগুলির মুখ থেকে হরহামেশাই বিভিন্ন জনরার দার্শনিকদের কৌট পাওয়া যায়—আদতে উপন্যাসটা দার্শনিকরূপী সন্দেহভাজন কিছু মানুষদের নিয়েই; যাদের নামই "গ্যাডফ্লাই", ডাশঁপোকা; এরা সক্রেটিসের গ্যাডফ্লাই উপাধির অনুকরণ করে বর্তমানেও চলমান বিব্রত সত্যগুলোকে উপস্থাপন করতে চায়; হয়তো এটা তাদের ফিলোসোফি অথবা তারা হতে পারে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ, যারা দর্শনকে শুধুমাত্র ইউজ করে, প্রকাশ্যে।
নোট-১: উপন্যাসটা তো বড়ো কলেবরের করা যাইতো, প্রথমদিকে কাহিনি সেভাবে এগুলেও সমস্ত জটগুলো শেষে খুবই তাড়াতাড়ি ছাড়িয়ে দিয়েছেন লেখক; অনেকটা শুধু একটি চাপ্টারেই।
নোট-২: উপন্যাসে দেওয়া বেশ অজানা কিছু ইনফরমেশন, আর সুন্দর একটা কভার।
নোট-৩: এডামস ফ্যামিলির অনুরূপ কাহিনির একটা ক্ষুদ্র পার্ট ছিলো, এটায়। যেইটা নিয়ে আমার ইন্টারেস্ট অতিমাত্রায় সেজন্যই আরো পছন্দ হয়েছে 'প্রথম চ্যাপ্টার' থেকে টানা অংশটা। দিল্লির বুরারি ডেথ আর এইটা নিয়ে জানতে হবে আরও।
নোট-৪: লেখক, আমার পড়া "গ্যাডফ্লাই" এবং "কাফকা ক্লাব" দুটো উপন্যাসেই প্রচুর তথ্য দিয়েছেন, সরাসরি আর্টিকেলের লেখবার মতোন। এটা একইসাথে ফিকশন পড়াকালীন: বিরক্তিকর, একঘেয়েমিপূর্ণ এবং উপকারী।
বেশ কিছু বছর যাবত দুর্বোধ্য কারণে মৃত লেখকদের লেখায় যতটা ভরসা পাই জীবিতদের লেখায় পাই না। অতিদুর্বোধ্য কারণে দেশীয় লেখকদের মৌলিক লেখায় স্বস্তি পাই খুব কম। তবু মাঝে মাঝে পড়ি এবং তারা ভয়কে প্রায়ই দূর করে।
বইটা সম্পর্কে আগ্রহ ছিলো না। হঠাত পিডিএফ চোখে পরলো আর পড়লাম। অনেকটা রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস পকেটে নেয়ার মতো। গুডরিডসে রিভিউ মিক্সড। আমার পুরোটাই ভালো লাগছে। প্রাক দুপুরের প্রচন্ড ঘুমকে তাড়িয়ে এক বসায় শেষ করেছি।
কাহিনীর টাইমলাইন অনেকগুলো। মূলত দেশীয় প্রেক্ষাপট হলেও টাইমলাইন কখনো সম্রাট অশোকের সময়কাল, কখনো মায়ান সভ্যতা, কখনো ব্রিটিশ ভারত। গতি দারুণ কিন্তু মাথায় চাপ দেয়ার মতো না। লেখক প্রচুর পড়াশোনা করে লিখেছেন বোঝা গেছে। কাহিনীর চেয়েও আকর্ষণীয় ছিলো বিভিন্ন সভ্যতা, অপ্রচলিত ধর্ম, বিভিন্ন কাল্ট আর দর্শনের কথাগুলো।
তরুন লেখক মুরাদুল ইসলামের লিখা বইগুলোর মধ্যে এইটা আমার পড়া দ্বিতীয় বই। "রহমান সাহেব ও তিনটি রহস্য" থেকে এই বইটা বেশ ভালো। হ্যা, বই দুইটো দুই জনরার। কিন্তু লেখকের লেখনী এই বইয়ের ক্ষেত্রে বেশ ভালো। কথপোকথন রচণা ও চরিত্রগুলো গঠনে আরো একটু নজর দিতে পারলে হয়ত আরো ভালো হইতো। কিছু লুপ হোল আছে, যেইটা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নাহ। তবে, প্রত্যেক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিজস্ব কিছু প্রটোকল আছে। কিছু পরিভাষা আছে। আমার মতে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেন্দ্রিক কোন চরিত্র বা ঘটণা থাকলে সেইটাতে অবশ্যই সেই সব পরিভাষা ও প্রটোকলগুলোটিক ভাবেই লিখা উচিত। নাইলে মনে হয় অত্যন্ত দায়সারাভাবে লেখা হয়েছে। বইয়ের শেষে রেফারেন্সের জন্যে লেখককে ধন্যবাদ।
নতুন লেখক হিসাবে বইটা খারাপ না কিন্তু অনেক ভালো হতে পারতো। মায়ান সভ্যতা, জোব চার্নক, নবাব সিরাজউদ্দৌলা এইসব ইতিহাস নিয়ে খুব বেশি টানাটানি করার দরকার ছিলনা। তার উপর সংগঠনটির লোকজনের গ্রীক পোশাক পড়াটাও খুব একটা বাস্তবসম্মত হয়নি। বাহুল্য মনে হয়েছে। তবে রহস্যটা বেশ জমাট ছিল কিন্তু শেষের দিকে টের পাওয়া যাচ্ছিল কে বা কারা। প্রুফ রিডিং টাও খুব সুবিধার হয়নি, যেমন "ডিমবাজি", "দাড়োয়ান" আর কিছু কিছু বাক্য খাপছাড়া লেগেছে। তবে এটা ঠিক যে লেখকের মধ্যে প্রতিশ্রুতি আছে এবং সামনে আরো পরিপক্ক লেখা আশা করি।
বইটা আমি "মিনিমালিস্ট" পড়ার পর পরই শুরু করেছিলাম। বইটা অন্য সব থ্রিলার বইয়ের মত করে আগাননি লেখক। অন্তত মিনিমালিস্ট এর প্যাটার্ণে। তাহলে পড়তে গিয়ে মজা টা তেমন পেতাম না হয়ত। কিন্তু, বইটা এগিয়েছে একেবারে কাহিনী শুরু যেখান থেকে সেখান থেকে শুরু করে একেবারে বর্তমানে ঘটনাপ্রবাহ পর্যন্ত। লেখক কেন যেন কোন ইচ্ছায় কোন ফ্ল্যাশব্যাক আনেননি গল্পের মাঝখানে। তাই প্রথমে এক দুই অধ্যায় একটু খাপছাড়া ভাবে পড়ে যেন কি পড়ছি তার "কই বুঝছি" এমন কিন্তু... যখন থেকে লেখক সাহেবের ঘটনা শুরু হয়, বইটার পুরো রহস্য জানার আগ পর্যন্ত কারো পক্ষে উঠা সম্ভব নয় বলে আমার মনে হয়...
শুরু থেকে শেষের আগ পর্যন্ত ভালো লেগেছে, কিন্তু শেষ অংশটা ভালোলাগে নী। তবে বইটা লেখতে লেখক বিপুল তথ্য ব্যবহার করেছেন, তার আরু দুটা বই পড়েছি। এটা নিয়ে ৩ টা। মনে হয় মিসরিয় বা প্রাচীন সভ্যতা ও কবিতার প্রতি তার বিশেষ দূর্বলতা আছে বা ছিলো।