Jump to ratings and reviews
Rate this book

গ্রামের নাম কাঁকনডুবি

Rate this book
মেয়েগুলো আমাদের দিকে তাকাল, চোখের দৃষ্টি এত আশ্চর্য যে আমার বুকটা ধক করে উঠল। এত তীব্র দৃষ্টি আমি কখনো দেখিনি, সেখানে কোনো বা আতঙ্ক নেই, দৃষ্টিটা আশ্চর্য রকম তীক্ষ্ম। আমি কী বলব, বুঝতে পারলাম না। ঢোঁক গিলে বললাম, “আপনাদের আর কোনো ভয় নাই। যুদ্ধ শেষ। খোদার কসম। যুদ্ধ শেষ।” লালচে চুলের একটা মেয়ে, যার চোখের দৃষ্টি সবচেয়ে ভয়ংকর, সে আস্তে আস্তে প্রায় ফিসফিস করে বলর, “তোমাদের যুদ্ধ শেষ আমাদের যুদ্ধ শুরু।”

256 pages, Hardcover

First published February 2, 2015

15 people are currently reading
301 people want to read

About the author

Muhammed Zafar Iqbal

401 books1,604 followers
মুহম্মদ জাফর ইকবাল (Bengali)

Muhammed Zafar Iqbal (Bengali: মুহম্মদ জাফর ইকবাল) is one of the most famous Bangladeshi author of Science-Fiction and Children's Literature ever to grace the Bengali literary community since the country's independence in 1971. He is a professor of Computer Science & Engineering at Shahjalal University of Science and Technology (SUST). Before that, Iqbal worked as a research scientist in Bell Communication Research for six years until 1994.

Birth and Family Background:
Iqbal was born on 23 December 1952 in Sylhet. His father, Foyzur Rahman Ahmed, was a police officer. In his childhood, he traveled various part of Bangladesh, because of his father's transferring job. Zafar Iqbal was encouraged by his father for writing at an early life. He wrote his first science fiction work at the age of seven. On 5 May 1971, during the liberation war of Bangladesh, the Pakistan's invading army captured his father and killed him brutally in the bank of a river.

Education:
Iqbal passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1968 and HSC exam from Dhaka College in 1970. He earned his BSc in Physics from Dhaka University in 1976. In the same year Iqbal went to University of Washington to obtain his PhD and earned the degree in 1982.

Personal Life:
Iqbal married Dr. Yasmeen Haque in 1978. Yasmeen is the Dean of the Life Science Department, Head of the Physics Department, Provost of the Shohid Janoni Jahanara Imam Hall and a researcher at SUST. They have two children - son Nabil and daughter Yeshim. Yeshim translated the book Amar Bondhu Rashed (Rashed, My Friend) written by her father. Iqbal's elder brother, Humayun Ahmed, was the most popular author and film-maker of Bangladesh since its independence. Humayun died after a nine-month struggle against colorectal cancer on the 19 July 2012. His younger brother, Ahsan Habib, is the editor of the satirical magazine, Unmad and one of the most reknowned cartoonist of Bangladesh.

Academic Career:
After obtaining PhD degree, Iqbal worked as a post-doctoral researcher at California Institute of Technology (CalTech) from 1983 to 1988. He then joined Bell Communications Research (Bellcore), a separate corporation from the Bell Labs (now Telcordia Technologies), as a Research Scientist. He left the institute in 1994 and joined the faculty of the Department of CSE of SUST.

Literary career:
Iqbal started writing stories from a very early age. Iqbal wrote his first short story at the age of seven. While studying in the Dhaka University Iqbal's story Copotronic Bhalobasa was published in a local magazine. But, a number of readers at that time felt that the story was based on a foreign story. To answer this allegation, he later rewrote the story and published the story in collection of stories named Copotronic Sukh Dukkho. Since then he is the most popular writer both in Bengali Science-Fiction and in Juvenile Leterature of the country.

Other Activities and Awards:
Zafar Iqbal won the Bangla Academy Award, the highest award in literature in Bangladesh, in 2004. Iqbal also played a leading role in founding Bangladesh Mathematical Olympiad. In 2011 he won Rotary SEED Award for his contribution in field of education.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
360 (38%)
4 stars
342 (36%)
3 stars
172 (18%)
2 stars
42 (4%)
1 star
12 (1%)
Displaying 1 - 30 of 62 reviews
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
October 29, 2015
ধরুন যে আপনার বাসার রান্না অনেক ভালো। আর যেহেতু এটা আপনার বাসা তাই ভালো হোক খারাপ হোক আপনাকে খেতেই হবে। কিন্ত পরপর কয়েক দিন খারাপ রান্না হল। তাই বলে কি আপনি খাওয়া বন্ধই করে দিবেন? নাহ আপনি বসে থাকবেন যে আবার কবে সেটা ভালো হবে সে আশায়। কারণ আপনি জানেন যে এটা একসময় ভালো হবেই। জাফর ইকবাল স্যারের বইগুলার ব্যাপারটাও কিন্তু সেরকম, প্রতিবার বইমেলায় উনি যাই লিখুন না কেন আমরা কিন্তু তাই কিনব। তা গত বইমেলাতে উনার প্রকাশিত বইগুলো যেরকম ই হোক না কেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছর এর বইগুলো পড়ার পর এতই অরুচি ধরে গিয়েছিল যে এইবার বই কিনে রেখে দিয়েছিলাম। এতদিনে পড়লাম। আর পড়ার পর? একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম :)
বই এর যে জিনিস টা সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হোল কোন পিচ্চি যদি বইটা পড়ে তাহলে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কএ ন্যুনতম হলেও একটা ধারণা পাবে :) আর বাদ বাকি গল্পে নতুন তেমন কিছু নেই। আগের মতনই। তবে পড়তে অবশ্যই ভালো লেগেছে। শুধু ভালো না, খুব ভালো। :)
Profile Image for Emtiaj.
237 reviews86 followers
March 6, 2015
Update: স্যারকে মেইল করেছিলাম। রিপ্লাই দিল :)
when i was writing the book i needed a bit of charam patra, the book was not
with me, so i gave a google search and this came up. i will replace with an
appropriate piece.

about yousuf shah, (and also other stories) these are all real stories of my
friends, i did not write this book i just put together various real stories. i
gave a lot of thought before i added him in my story, i even talked with my
family members. they let me do it.

thank you for going through this book so carefully!

m. zafar iqbal


১৯৭১ এর শুরুর দিক থেকে ডিসেম্বার। যুদ্ধ শুরুর আগ থেকে যুদ্ধে শেষের গল্প। চমৎকার একটা উপন্যাস।

লেখক সময়ের চেয়ে কিছু এগিয়ে ছিলেন। ব্যাপারটা পজিটিভ কিছু না, নেগেটিভ। একটা উদাহরণ দিই। মুক্তিযোদ্ধারা সবাই মিলে চরমপত্র শুনছে। বাঙালি পোলাপান বিচ্ছুরা দুইশ পঁয়ষট্টি দিন ধইরা বাঙাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মইদ্যে ওয়ার্ল্ড ফাইটিং পজিশন পাইয়া আরে বাড়ি রে বাড়ি!.........

দুইশ পঁয়ষট্টি দিন! Seriously? যুদ্ধ তো তখনও শেষ হয়নি!! এরকম ছোটখাটো ভুলগুলোর প্রতিও নজর খুব ভালোভাবে দেয়া উচিৎ। উনি না মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা বড়-সড় উপন্যাস লিখতে যাচ্ছেন! এরকম ভুল করলে কি চলবে? <খুব খুব কম ভুল, কিন্তু উনি জাফর ইকবাল বলেই.........>

আমার বন্ধু রাশেদ এ বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কিছু ছিল না। উনি এখানে সেটা লিখেছেন। উনি বলছিলেন, বাচ্চাদের বইয়ে এ বিষয়টা দিলে তারা কিভাবে সেটা গ্রহণ করবে, বা কিভাবে এটা করা যায়। আমার মনে হল, খুব ছোট পরিসরে এটা যেভাবে লিখেছেন, সেটাই অনেক কিছু বলে দেয়। তোমাদের যুদ্ধ শেষ। আমাদের যুদ্ধ শুরু। কি ভয়ংকর একটা সত্যি কথা এই এক লাইনে আছে। এই লাইনটা যে পৃষ্ঠায় আছে সেটা, তার আগে পরের কিছু পৃষ্ঠা পড়ে আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, এদেশের মানুষ ছাগু হয় কিভাবে? এই বইয়েই আছে, মানুষ রাজাকার হয় কিভাবে? হায়!!

পাকিস্তানি সৈন্য ইউসুফ শাহের ব্যপারটা আমি বুঝলাম না। পাকিস্তানিদের প্রতি সিম্প্যাথি আমার ভালো লাগেনি। যতই সে বেলুচিস্তানের মানুষ হোক না কেন?

বইয়ের প্রচ্ছদটা অনেক সুন্দর না? এই প্রচ্ছদের মর্মার্থ বুঝতে হলে কিন্তু অনেকগুলো পৃষ্ঠা পড়ে ফেলতে হবে :D
Profile Image for Nusrat Mahmood.
594 reviews737 followers
October 28, 2015
একুশে বইমেলা ২০১৫ এর সমালোচিত,সর্বাধিক বিক্রিত এবং প্রশংসিত বইয়ের তালিকা করলে যে নামটি অবধারিত ভাবে উঠে আসবে প্রথম দশে তা হলো মুহাম্মদ জাফর ইকবালের গ্রামের নাম কাঁকনডুবি।প্রকাশিত হবার প্রথম থেকেই বইয়ের মূল্য নিয়ে যেভাবে সবার সমালোচনার শিকার হয়েছে,সে অনুসারে বইয়ের বিক্রিতে তার প্রভাব দেখা যায় নি। এর কারণ হতে পারে বইটি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা তাই, অন্য আরেকটি কারণ হয়তো এটিই যে বইটি মুক্তিযুদ্ধ এর সময়কে নিয়ে লেখা এবং জাফর ইকবাল স্যারের মতো করে এত সুন্দর , সহজ অথচ একই সাথে যুদ্ধের পাশবিকতা ছোটদের জন্য তুলে ধরতে আমার মতে এ দেশে আর কোন লেখক পারেন না।


এই বই নিয়ে বলতে গেলে কোন জায়গা থেকে বলা শুরু করবো আর কোথায় গিয়ে শেষ করবো তা সত্যি জানিনা। 'গ্রামের নাম কাঁকনডুবি' কি মায়াময় নাম! সম্পূর্ণ বইটাই তার নামের মতো মায়াময়। একদম প্রথম পৃষ্ঠা থেকে পাঠককে মায়ায় জরিয়ে ফেলতে সক্ষম।প্রধান চরিত্র কাঁকনডুবিতে থাকা কিশোর রঞ্জুর জবানিতে পুরো গল্পটা শুরু হয়েছে যুদ্ধ শুরু হবার বেশ কয়েক মাস আগে থেকে শেষ হয়েছে বিজয়ের পর পর সময়ে এসে। আর দশটা বাংলার গ্রাম যেমন হয় , সেই রকমই সাধারণ একটা গ্রাম কাঁকনডুবি। এখানে অন্য গ্রামের মতোই একজন পাগল মানুষ আছে, একজন ফালতু মানুষ আছে, একটা চায়ের দোকান আছে যেখানে গাঁয়ের মানুষ বসে রাজনৈতিক আলাপ করে, একটা বিরাট স্কুল আছে, কালী গাং নামে একটা রাক্ষুসী নদী আছে। এ গ্রামে হিন্দু মুসলমান মিলেমিশে থাকে, একসাথে উঠে বসে খায়, সবাই সবাইকে চিনে এমনকি গ্রামের গরু ছাগল কুকুর গুলো পর্যন্ত সবার সাথে পরিচিত। শান্তির দিনগুলো তে রাজনৈতিক হাওয়াবদল কিশোর রঞ্জুদের মনে না লাগলেও একসময় সময়ের দাবীতেও তারা ঠিকই সচেতন হয়ে উঠে। বড়দের ভাবনার কারণ গুলো তাদেরকেও ভাবায়। একসময় শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। যে বয়সটায় ধান কেটে ফেলা শুন্য ক্ষেতে রঞ্জুদের নির্ভয়ে খেলবার কথা ,সেই সময়টায় তারা সব বন্ধ করে মানুষের আতঙ্ক দেখে, মানুষরূপী জানোয়ারদের নির্মমতা দেখে, বেঈমানি দেখে। তারপর বদলে যাওয়া সময়টাকে টেক্কা দেবার গল্প জানতে হলে বইটার পাতায় ডুবে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখিনা।


প্রথমে আসি বইয়ের লেখার কথায়। জাফর ইকবাল স্যারের লেখার ধরণ নিয়ে কথা বলাটা আমার কাছে ধৃষ্টতা মনে হয়।সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ কে নিয়ে লেখাটা ওনার সবেচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য এর জায়গা। আমার বিশ্বাস ওনাকে এই বিষয়ে মাত্র এক প্যারা লিখতে বলা হলেও উনি তার মধ্যেই যুদ্ধের গভীরতা সব বয়সের সবার কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। ওনার পরবর্তী প্রজন্মদের ছোট থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ছোট বড় বিষয় এর প্রতি সংবেদনশীল করে গড়ে তুল্বার পেছনে ওনার অবদান ভুলবার মতন নয়। তাছাড়া বইটি এত ভাল লাগবার পেছনে অন্যতম কারণ হলো তার বর্ণনাশৈলী। এমন ভাবে উনি কাঁকনডুবির প্রতিটা জায়গার বর্ণনা দিয়েছেন মনে হবে যেন রঞ্জু, মামুন, মাসুদ ভাই এর সাথে সাথে পাঠক নিজেও গ্রামের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বলাই কাকুর দোকানের চা হোক বা কাজী বাড়ির ফুলের বাগান , শহীদ মিনার বানানোর জন্য ইট সংগ্রহ হোক বা পাকিস্তানীদের ক্যাম্প আক্রমণ -পড়ার সময় মনে হবে প্রতিটা জায়গায় আমি নিজে ছিলাম। একটা বই একজন পাঠকের তত বেশি ভাল লাগবে যত বেশি সে কল্পনা করতে পারবে।। আর এই কল্পনাকে উশকে দেবার জন্য লেখকের লেখার- বর্ণনা করবার ধরণ টা প্রভাবকের মতো কাজ করে। একদিকে যেমন প্রচণ্ড আনন্দ পেয়েছি মজার মজার ঘটনা পড়ে, তেমনি পাকিস্তানি টর্চারসেলে অত্যাচারের বর্ণনার কথা পড়ে গা শিউরে উঠেছে, একসময় পৃষ্ঠা উলটোতেও ভয় পেয়েছি। খুব কম লেখক আছেন যারা তার পাঠককে কল্পনার নেশায় বুঁদ করে ফেলতে পারেন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সেই অল্প কয়েকজন সৌভাগ্যবান লেখকদের মধ্যে একজন তা তিনি আবার এই বইটার মাধ্যমে প্রমাণ করলেন।


'প্রথমে দর্শনধারী, তারপর গুনব���চারি' বলে একটা কথা আছে না? এই কথাটা কতখানি সত্য তা এই বইখানা হাতে নিলে বোঝা যায়। কি সুন্দর প্রচ্ছদ। মনকাড়া রঙ, সেইসাথে বন্দুক নিয়ে দুজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার ছবি।এখানেই শেষ না। বইয়ের পাতায় কিছুদূর পর পর সুন্দর সুন্দর ইলাসট্রেশন যা কল্পনাকে আরও উশকে দেয়। ছবিগুলোর খুব বেশি দরকার ছিল নাহলে হয়তো বইটা আরেকটু কম উপভোগ করতাম। কখনো কিছু ছবি দেখে আনন্দিত হয়েছি, কখনো ক্ষোভ হয়েছে, কখনো খুব কান্না পেয়েছে। ছবিগুলো না থাকলে বোধয় ভোঁতা হয়ে যাওয়া অনুভূতিটা সেভাবে নাড়া খেতোনা।


পাতার পর পাতা লিখলেই তো লেখক হওয়া যায়না তার সাথে সাথে কাহিনীর অগ্রসরতা, চরিত্রের পরিপক্বতা , প্লট হোল এসব বিষয়েও খেয়াল রাখতে হয়। যুদ্ধ যে মানুষকে কিভাবে বদলে দিতে পারে তার প্রভাব লেখক খেয়াল করে তার চরিত্র অংকনে যেভাবে তুলে ধরেছেন তা মনকে শান্তি দেয়। রঞ্জু বা কলেজ এর ছাত্র মাসুদ এর প্রথম দিকে যেভাবে সামনে এসেছে এবং পরে তাদের চরিত্রে যে আমূল পরিবর্তন ও আচার ব্যাবহার কথাবার্তায় যে পরিপক্বতা দেখা দিয়েছে তা প্রশংসনীয়। কাহিনী পড়তে গিয়ে একটুও মনে হয়নি অযথা টেনে টেনে লম্বা করা হয়েছে বরং মনে হয়েছে আরেকট্য থাকলে কি ক্ষতি হতো। চরিত্র তা মাইনর হোক বা মেজর কোনটিই হারিয়ে যায়নি একে অন্যের ছায়ায়। ঠিক যতটুকু যেখানে দরকার সেইখানে সেইভাবে উপস্থিত করেছেন লেখক - এটি বইটির অন্যতম চমৎকার একটা দিক।রাজাকারের মতো শ্লীল-সম্মানসূচক শব্দ কিভাবে অবস্থা এবং ব্যবহারের প্রেক্ষিতে গালিতে পরিণত হয় তা ধরা পরে একটি মাত্র হতাশাময় লাইনে,- 'মানুষ রাজাকার হয় কিভাবে?' একটা কিছু ছোট খাটো ভুল তো আছেই তা অভারলুক করে যাওয়া যায় গল্পের ভাল দিকগুলোর জন্য। চরমপত্র শুনবার এক জায়গায় লেখা আছে, "বাঙালি পোলাপান বিচ্ছুরা দুইশ পঁয়ষট্টি দিন ধইরা বাঙাল মুলুকের কেদো আর প্যাকের মইদ্যে ওয়ার্ল্ড ফাইটিং পজিশন পাইয়া আরে বাড়ি রে বাড়ি!" -যুদ্ধ তো তখনও শেষ হতে অনেক দেরি, ২৬৫ দিন কিভাবে হলো। এই ভুলটা সংশোধন করবার দরকার নাহয় জানায় একটা গলদ থেকে যাবে।


অনেকেই এটাকে "আমার বন্ধু রাশেদ" এর সাথে তুলনা করছেন। আমার মতে দুটো বই নিজ নিজ মহিমায় ভাস্বর। এটি 'আমার বন্ধু রাশেদ' এর সমতুল্য কিনা সেই তর্কে জাচ্ছিনা কিন্তু সমানে সমানে টেক্কা দিয়েছে তা বলা বাহুল্য।আমার মতে তুলনায় যাওয়াও উচিত না কারণ দুটো কাহিনীর প্রেক্ষাপট এক হলেও ঘটনার অবস্থান ভিন্ন এবং গ্রামের নাম কাঁকনডুবি অপেক্ষাকৃত আরেকটু বড়দের জন্য লেখা। তাই এখানে বীরাঙ্গনাদের কথা অল্প পরিসরে উঠে আসলেও মাত্র কয়েকটা লাইনে লেখক তাদের মানসিক অবস্থা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন- 'মেয়েগুলো আমাদের দিকে তাকাল, চোখের দৃষ্টি এত আশ্চর্য যে আমার বুকটা ধক করে উঠল। এত তীব্র দৃষ্টি আমি কখনো দেখিনি, সেখানে কোনো বা আতঙ্ক নেই, দৃষ্টিটা আশ্চর্য রকম তীক্ষ্ম। আমি কী বলব, বুঝতে পারলাম না। ঢোঁক গিলে বললাম, “আপনাদের আর কোনো ভয় নাই। যুদ্ধ শেষ। খোদার কসম। যুদ্ধ শেষ।” লালচে চুলের একটা মেয়ে, যার চোখের দৃষ্টি সবচেয়ে ভয়ংকর, সে আস্তে আস্তে প্রায় ফিসফিস করে বলর, “তোমাদের যুদ্ধ শেষ আমাদের যুদ্ধ শুরু।"'
যারা বলেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এর কলমের জোর কমে যাচ্ছে, উনি একই পল্টে বারবার দিস্তার পর দিস্তা লিখে যাচ্ছেন এবং প্রকাশ করছেন প্রতি বছর তাদের মত পাল্টাতে আশা করি এই বইটা সাহায্য করবে আর খাঁটি আনন্দ ও দুঃখের যে মিশ্রণ পাওয়া যাবে তার কথা নাই বা বললাম।
Profile Image for Ismail.
Author 66 books204 followers
March 9, 2015
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, এই রিভিউ অপ্রয়োজনীয়। এই বইটি নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই রিভিউ দিয়েছেন, তারপরেও কেন এই আতিশয্যের কাজটা করতে যাচ্ছি, তার ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে আমি রিভিউ লেখায় খুব একটা আগ্রহী নই, কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু বই পড়ে এতই আলোড়িত হই যে, ভাল লাগাটা আর দশজনের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আকুল হয়ে পড়ি। একাধিক চমৎকার রিভিউ থাকা সত্ত্বেও এ-কারণেই আবার লিখতে বসলাম। ভাল জিনিসের প্রশংসা বার বার করলে কোনও ক্ষতি তো নেই, তাই না?

~কাহিনিসংক্ষেপ~
১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে এই উপন্যাস। বাংলাদেশের অনির্দিষ্ট কোনও স্থানে ছোট্ট এক গ্রাম কাঁকনডুবি। সেখানকার অধিবাসী এক পিতৃমাতৃহীন কিশোর রঞ্জু এই গল্পের নায়ক ও সূত্রধর। ছায়া-সুনিবিড় শান্তিময় এই গ্রামে রয়েছে বর্ণময় অসংখ্য চরিত্র। তাদের সহজ-স্বাভাবিক প্রাত্যহিক জীবন আচমকাই তছনছ হয়ে যায় স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে। সুযোগ বুঝে ভোল পাল্টায় গ্রামের কিছু অসৎ লোক, হানাদার বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে শুরু করে ত্রাসের রাজত্ব। গ্রামে ক্যাম্প বসায় পাকিস্তানি মিলিটারি, তাদের হাতে প্রাণ হারাতে শুরু করে নিরীহ মানুষ। এই সময় রঞ্জু বন্ধু হিসেবে পায় ডোরা নামে সমবয়েসী একটি মেয়েকে, যার বাবা মিলিটারির হাতে খুন হয়েছে। এখন ডোরার মাথায় শুধুই প্রতিশোধের চিন্তা - মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে পিতৃহত্যার বদলা নিতে চায় ও। রঞ্জুরও ইচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা হবার। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝ দিয়ে কীভাবে ওদের ইচ্ছে পূরণ হলো... কীভাবে কাঁকনডুবি মুক্ত হলো, তারই এক অসামান্য আখ্যান এই উপন্যাস।

~পাঠ-প্রতিক্রিয়া~
মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাম্প্রতিক বইগুলোর বিষয়ে পাঠকদের হাজারো অভিযোগ রয়েছে। তিনি নতুন কিছু দিতে পারছেন না, তাঁর বইগুলোর আগের মত হৃদয়গ্রাহী হচ্ছে না... এমনতরো প্রচুর অসন্তোষ রয়েছে পাঠকদের মাঝে। কিছু কিছু ব্যাপারে আমিও একমত, তাই বলে আমার অন্যতম প্রিয় লেখকের ব্যাপারে পুরোপুরি হতাশ আমি কখনোই হইনি। আর কাঁকনডুবি পড়ে সত্যিকার অর্থেই ধৈর্যের চমৎকার প্রতিদান পেলাম... এবং নিজে লেখক হওয়া সত্ত্বেও অনেক নতুন জিনিস শিখলাম। জাফর ইকবাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের মত স্পর্শকাতর এবং সিরিয়াস বিষয় নিয়েও কীভাবে একটা কিশোর উপন্যাস লেখা যেতে পারে, এবং সেটার মাধ্যমে কীভাবে বড়দেরও আলোড়িত করা যেতে পারে। রঞ্জুর জবানিতে কাহিনি পড়তে গিয়ে আমি নিজেও যেন কিশোরবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম, স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ না দেখেও অংশীদার হয়ে গিয়েছিলাম সেই কঠিন সময়ের। ডোরা, মাসুদ, পাইকার, নানি, নীলিমা, বলাই কাকু... প্রত্যেককে মনে হচ্ছিল অতি আপন। তাদের কর্মকাণ্ডে, তাদের পরিণতিতে হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সবই অনুভব করেছি পদে পদে। বীভৎস এবং ভয়ঙ্কর কিছু ঘটনার বিবরণ এমনভাবে লেখা হয়েছে, যাতে বিবমীষার উদ্রেক হয়নি, বরং কাতর হয়ে পড়েছে হৃদয়। লিখে এসব অনুভূতি প্রকাশ করা মুশকিল। আমার কাছে কাঁকনডুবিকে জাফর ইকবালের বর্ণাঢ্য লেখালেখির ক্যারিয়ারের সেরা কাজ বলে মনে হয়েছে। হ্যাঁ... আমার মতে এটি তাঁর অন্যান্য সমস্ত কিশোর উপন্যাস ও সায়েন্স ফিকশনের চেয়ে উৎকৃষ্ট।

প্রোডাকশনের দিক থেকেও বইটি একেবারে প্রথম শ্রেণীর। আরাফাত করিমের প্রচ্ছদটি অপূর্ব সুন্দর, ভিতরের ইলাস্ট্রেশনও মনোগ্রাহী ও মানানসই। মুদ্রণপ্রমাদ বা বানানভুল নেই বললেই চলে। বাঁধাই-কাগজ সবই উন্নতমানের। সব মিলিয়ে বইটির পিছনে লেখক-প্রকাশকের যত্নের ছাপ খুব ভালভাবেই প্রতীয়মান। একমাত্র অভিযোগ দাম নিয়ে। বইয়ের মূল পাঠক যেহেতু কিশোর-কিশোরীরা, তাদের পক্ষে ৪০০ টাকার একটি বই (কমিশনে যত কমই হোক না কেন) কেনা সত্যিকারভাবেই দুঃসাধ্য। তবে আশা করছি এই চমৎকার বইটি ওদেরকে কষ্ট করে টাকা জমিয়ে কিনতে হবে না, অভিভাবকেরাই কিনে দেবেন... এবং নিজেরাও পড়বেন। সবার জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য। কাজেই এখনও যদি পড়ে না থাকেন, এখুনি বসে যান বইটি নিয়ে, কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যান কাঁকনডুবি গ্রামে, পাড়ি জমান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে। অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার ভাগীদার হবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
Profile Image for Kamruzzaman Kamrul.
16 reviews22 followers
October 21, 2018
বেশ বড়সড় বিরতিতে জাফর ইকবাল স্যারের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা বই পড়লাম!

অনেকদিন পরে সম্ভবত এতটা ভালো একটা বই পড়লাম।

ডোরা, রঞ্জু, কি দুর্দান্ত সাহস। রঞ্জুর মধ্যে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অভিজ্ঞতা নাই, কিন্তু অই দৃঢ়তাটুকু আছে, ক্যাম্পের এই নির্যাতনের মুখেও সে মুখ খোলে নাই। ডোরার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা পুরো বই জুড়ে, একটু ধাক্কা খেতে হয়।

পাইকার ভাইয়ের কৌতুক, গাঁজাখুরি গল্প, ভূতের গল্প, এগুলো পড়তে পড়তে দম ফেটে হাসি এসেছে। পাইকার ভাইয়ের শেষ কথাগুলো, মুহূর্তগুলো পড়ে চোখে কখন যেন পানিও চলে এসেছে।

মা!
আমাদের সবার মা। বীরাঙ্গনা এক মায়ের কথা আছে এখানে, পাকিস্তানিরা অত্যাচার করেছিলো বলে যাকে সমাজ মেনে নেয় নি, তিনি ক্যাম্পে এসে হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সবার মা। তিনি মায়ের মতই মুক্তিসেনাদের যত্ন নেন, খাবার দাবারের ব্যবস্থা করেন, কোনো অপারেশনে যাবার আগে মুক্তিযোদ্ধারা তার দোয়া নিয়ে তারপরে যুদ্ধে যায়।

ছোট ছোট অনেকগুলো চরিত্র আছে, যেগুলো গল্পে হয়তো বেশি জায়গা করে নেয় নি, কিন্তু ভারী গুরুত্ববহ।

কিছু ছোট গল্প, যেমন, এই লাশটি মাটি চাচ্ছে।
কাক, শেয়াল, কুকুরের লাশ খুঁড়ে খাবার গল্প।
কিংবা এক গ্রামের মানুষদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসা বাস্তুহারাদের সাহায্যের গল্প।

ভারী সুন্দর। ভারী সুন্দর। চোখ মুখ বুঝে পাঁচতারা। জাফর স্যারের মুক্তিযুদ্ধের ফিকশনে আমার বন্ধু রাশেদের পরেই এর অবস্থান থাকবে!

সবাইকে পড়বার অনুরোধ জানিয়ে গেলাম।
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
January 4, 2020
ছোটবেলার প্রিয় লেখক জাফর ইকবাল স্যার। এখন আর কিশোর উপন্যাস কেনা হয় না। যা পড়ি তার সবই ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি থেকে নেওয়া। লাইব্রেরিতে থাকা স্যারের প্রায় সব বই ই পড়া। গতদিন হঠাৎ এই বইটা চোখে পড়ল। হাতে নিয়ে বুঝলাম এ বছর কিছু নতুন বই লাইব্রেরীতে আ্যড করেছে। এটিও তার মধ্যে একটা । বাসায় এসে পড়লাম আর ঠিক ছোট্টবেলার মতো মুগ্ধ হতে থাকলাম।

আমাদের বাংলা সাহিত্যের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। স্বাধীনতাযুদ্ধকেন্দ্রিক লেখার একটি প্লাটফর্মই তৈরি হয়ে গেছে। যেমন মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, মুক্তিযুদ্ধের নাটক, উপন্যাস, ছোট গল্প, ছড়া, কিশোর গল্প এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কিশোর উপন্যাস।আর এসব বিষয়ে লেখার পরিমাণ খুব কম নয়। বাংলাদেশের অনেক খ্যাতিমান লেখক, যারা মুক্তিযুদ্ধকে লেখার মূল উপজীব্য বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম দক্ষ কথাকার মুহম্মদ জাফর ইকবাল। যিনি দেশ ও স্বাধীনতা আন্দোলন এবং দেশভাবনায় সারাটি জীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বিবেকের তাড়নায় দংশিত হয়ে কালো কালির আশ্রয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে শিশু মানসলোকে উন্মোচন করাটা খুবই জরুরি। তাইতো শক্তিশালী এই কথাশিল্পী শিশু, কিশোরদের জন্য নিরন্তর লিখে যাচ্ছেন। হ্যাঁ। তিনি অনেকটা সচেতনভাবেই লিখলেন আরেকটি কিশোর উপযোগী আখ্যান ‘গ্রামের নাম কাঁকনডুবি’। এখানে লেখক গ্রামের এক দুরন্ত কিশোর এবং যুদ্ধে পিতৃহারা শহর-ফেরত এক কিশোরীকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাসটির বাতাবরণ তৈরি করেছেন। নৈপুণ্যের সাথে এঁকেছেন মুক্তিযুদ্ধকালীন চিত্র। উপন্যাসটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের ভাবনাই প্রাধান্য পেয়েছে। তাই ‘গ্রামের নাম কাঁকনডুবি’ উপন্যাসটি পূর্ণতা পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর আখ্যান হিসেবে।
Profile Image for Pranta Dastider.
Author 18 books329 followers
March 1, 2015
কয়েকদিন আগে বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম, প্রথম ৭০ পাতার মতো এক ধাক্কায় পড়ে ফেললাম, তারপরে মেলায় যাবো বলে রেখে দিলাম সেদিন। এরপর গত কাল আবার রাতে তুলে নিলাম হাতে, এক টানে চলে গেলাম ১৯৬ পাতার মতো। এবং আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে এক দৌড়ে বইয়ের শেষ পাতা পাড়ি দিলাম অনায়াসেই।

এক কথায় বলতে হয় বইটি অসাধারণ!! ... না স্বাধীনতা যুদ্ধ সরাসরি দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়নি। হলে সম্ভবত খুব একটা খুশি হতে পারতাম না। যুদ্ধ কখনই আনন্দের হয়না, সেখানে জোড়া থাকে বেদনা, হতাশা, ব্যর্থতা, জয় পরাজয়। সাধারণ মানুষগুলোই বেঁচে থাকার তাগিদে হয়ে ওঠে জন্তুর মতো ভয়ংকর। কারও কারও মনুষ্যত্ব লোপ পায় জীবনের তাগিদে। এই বইতে সেসব দৃশ্যই ক্রমশ উঠে এসেছে।

কে কিভাবে অত্যাচারিত হল, কেন হল, কারা অত্যাচার করলো, তার সুস্পষ্ট চিত্রায়ন লেখক করেছেন সুলেখনির মধ্যে দিয়ে। স্বল্প পরিসরে কারা কিভাবে বিপক্ষ শক্তির সাথে আঁতাত করলো, এবং কিভাবে সামান্য পদমর্যাদা কিংবা সুবিধার জন্য হাজার হাজার মানুষের সাথে বেঈমানি করে তাদের জীবনাবসানে ভূমিকা রাখলো, সেটাও দেখানো হয়েছে।

কিভাবে মানুষের সাথে মানুষের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে, কিভাবে ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে সমস্ত বাংলাদেশ, এসবের এত সুন্দর দৃশ্যায়ন সম্ভবত মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর থেকে ভালো আর কারও পক্ষে করা সম্ভব ছিলোনা।

এই উপন্যাসটিকে আমি মূলত এর বিষয়বস্তু এবং সমস্ত কিছু সমন্বয়ের ভিত্তিতে ইয়ং-এডাল্ট ক্যাটাগরিতে ফেলতে চাই। মুলত এটা কিশোরদের জন্য, কিন্তু তা উচ্চতর মাত্রায় তাদের দৃষ্টিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

গল্পের মূল চরিত্র রঞ্জু তো বটেই, মামুন, ডোরা, বলাই, মাসুদ, পাইকার, এমনকি মতিও যে যে যার যার মতো নিজের স্থানে মানানসই। গল্পের প্রতিটি চরিত্রই তা ঘৃণিতই হোক, কিংবা ভালোই হোক, মনে দাগ কেটেছে। আর একটা চরিত্রকেও সেভাবে বাড়তি বলে মনে হয়নি। তাছাড়া বইয়ের মধ্যে আঁকা বেশ কিছু ছবি চরিত্রগুলোকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে।

আর সব শেষে বলতে হয়, গ্রামের নাম কাঁকনডুবির মতো বই দাম দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। এই বই সাধারণ ফেরিয়ালার মতো ফেরি করে মানুষকে জোর করে খাওয়ানোর মতো বইও নয়। গ্রামের নাম কাঁকনডুবি আপন মহিমায় ভাস্বর, এই বই মানুষ খুঁজে পড়বে, কিনে পড়বে, একজন আরেকজন থেকে নিয়ে পড়বে। যেভাবে সেভাবে পড়বে। কারণ এই বই না পড়ে কারও থাকা উচিত নয়, আর কেউ থাকবেও না। কিছুতেই না।
Profile Image for Ranendu  Das.
156 reviews63 followers
March 5, 2015
অনেক দিন পরে একটি ভাল বই পড়লাম। তাই প্রথম ধন্যবাদ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সাহেব কে আর দ্বিতীয় ধন্যবাদ আরাফাত করিম কে। এই দ্বিতীয় জনের চিত্রাবলী ওই ছোট্ট গ্রাম কাঁকনডুবি আর তার চরিত্রদের কে বইএর পাতা থেকে তুলে এনে মনের দাওয়ায় বসিয়ে দিয়েছে।
বইটি বেশ কিছু কারনে উল্লেখের দাবীদার।
প্রথমত এই বইটি ১৯৭১ সালের বিপ্লবের উপর লিখিত আর একটি বই। তবু ভিড়ের মাঝে নিশ্চিত ভাবে স্বতন্ত্র। ইকবাল সাহেব ইতিহাস কে অনুসরন তো নিশ্চয়ই করেছেন কিন্তু বই্টিতে প্রতি ঘটনার সাথে তার দিনাঙ্ক উল্লেখ করে করে একে নিছকই দিনপঞ্জী বানিয়ে ফেলেন নি। এটা দেখাবার চেষ্টা করেন নি যে দেখ আ্মার ইতিহাসবেত্তা কত তীক্ষ্ণ!
দ্বিতীয়ত, বইটি প্রায় ২৫০ পৃষ্ঠার কিন্তু এর পরিসর একটি ছোটো গ্রাম কাঁকনডুবি তেই আবদ্ধ। পরিসর ছোটো হলেও পড়তে গিয়ে কখনও একঘেয়েমী এসে পড়েনি, কারন অবশ্যই লেখকের হাতযশ। কাহিনীর একদম শুরুতে ২৫ শে মার্চ ও ঢাকার ঘটনাবলী বা ঢাকা থেকে পলায়নপর মনুষের কথা থাকলেও বাকি বইটা কাঁকনডুবি গ্রামের ঘটনা দিয়েই সংপৃক্ত। ছোট���টো রঞ্জুর চোখ দিয়ে বর্নিত এই ছোট্টো গ্রাম নিজেই এক দেশের ছায়া হয়ে ফুটে উঠেছে। সময়ের সাথে সাথে পরিচিত মানুষের বদলে যাওয়া, দীর্ঘদিনের হৃদয়ের নৈকট্য অস্বীকার করে হিন্দু-মুসলমানের আপন ধর্ম আঁকড়ে ধরা, চেনা কালীগাং এর ঘোলা জলে অচেনা লাশের ভেসে যাওয়া আর সবশেষে বিস্ময়াহত মানুষের প্রতিরোধের ডাক দেওয়া- এই সবিস্তার দৃশ্যপট অনুসরন করলে বাকী দেশের হাল হকিকত মালুম করতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না।
তৃতীয়ত রঞ্জুর অভিব্যাক্তি! এক অপাপবিদ্ধ বালকের নজরে দেখা এই মর্মান্তিক সময় কখনও বুকে ভার হয়ে চেপে বসে না। তার দুরন্তপানার সাথে সাথে, তার আর ডোরার ছোটা-ছুটির গতির সাথে পাল্লা দিয়ে এই নিদারুণ সময় কখন পার হয়ে যায়, টের পাওয়া যায় না। সার্থক অর্থেই রঞ্জুর সরল দৃষ্টি সব ভয়ঙ্করের মধ্যে থেকে সুন্দর কে খুজে বার করে, আমাদের মনে আশার সঞ্চার ঘটায়।
চতুর্থত, লেখক তার পরিমিতি বোধ ভোলেন না কখনও। তাই কাহিনী শেষে মাসুদ পড়াশোনা করতে যায়, মন্ত্রী হয়ে বসে না; কাজী বাড়ির মেয়ে ডোরা যুদ্ধ শেষে শহরে ফিরে যায়, বড় হয়ে রঞ্জুর কাছে ফিরে আসবে-এমন আজগুবি প্রতিশ্রুতি দেয় না; তুলসী তলা খুড়ে, নীলিমার প্রেম পত্র নয়, নিছকই তার ডায়েরী বেরয়। এই পরিমিতি বোধ বইটিকে বাস্তবের সীমানায় আটকে রাখে আগাগোড়া।
সবশেষে, বইএর প্রথম পর্যায়ের একটা জায়গার কথা বলা মনে হয় বিশেষ দরকার। সেটা হল মাসুদ কর্তৃক স্কুলে শহীদ মিনার তৈরীর প্রস্তাবনার জায়গা। মাসুদ যখন বলে, ২১ শে ফেব্রুয়ারী খালি পায়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে হয়, রঞ্জু ভাবে তারা তো এমনিই খালি পা থাকে, এতে আর বিশেষত্ব কি! মাসুদ যখন বাশ দিয়ে মিনার বানায়, রঞ্জু ভাবে শহীদ মিনার বানানো এতো সোজা! এতো আমারাও বানাতে পারতাম। মাসুদ মিনার বানিয়ে তৃপ্তি ভরে বলে, এবার ২১ শে ফেব্রুয়ারী ফুল দিতে হবে। রঞ্জু বলে, ব্যাস খালি ফুল দিলেই হবে!
রঞ্জুর এই আশ্চর্যান্বিত প্রশ্নগুলি কি শধুই সারল্য জনিত? নাকি, এসব লেখকের কৌশলী প্রশ্ন পাঠকের কাছে।
প্রথমে এক বিপ্লব, সেই বিপ্লব জাত ভয়ঙ্করতা; তারপর সময়ান্তে সেই বিপ্লব ছেনে রোমান্টিসিজম খুজে আনা; আর দীর্ঘকাল বাদে বিপ্লব নয়, পড়ে থাকা শুধুই রোমান্টিসিজম! আমাদের দায়িত্ব দাঁড়ায় শুধু সেই বচ্ছরকার দিনে খালি গানে-গল্পে, ফুলে-মালায়, বর্ন-বাহারে সেই রোমান্টিসিজম কে উদ্‌যাপন করা। শুধুই উদযাপন, উপলব্ধি নয় মোটেও।
কেউ যদি ভ্রু কোঁচকান এটা পড়ে, প্রতিবাদ করে বলার চেষ্টা করেন, না,আমরা সেই ইতিহাস ভুলি নি। তাহলে এটা ভেবে দেখার সময় এসেছে যে সত্যি যদি মানুষ সেই ইতিহাস কে, সেই মার্মান্তিক ঘটনাবলী কে তার হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে থাকে,তাহলে আজও কেন এতো অসূয়া চতুর্পার্শ্বে! প্রতি দিন কেন হাজারো ছুতো ধরে এতো বিষের,এতো গরলের আদান প্রদান পরস্পরের মধ্যে?
রঞ্জুর এই সরল প্রশ্নের জবাব আছে আমাদের কাছে?
Profile Image for Amimul Ahsan.
38 reviews1 follower
September 25, 2021
ইকবাল স্যারের লেখাগুলো পড়লে আগে থেকেই অনুমান করা যায় গল্পের শেষে কি হতে যাচ্ছে, তবে তার লেখা যদি খাওয়া যেত, তবে, বাচ্চারা এই বই খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলত।
Profile Image for Shafaet Ashraf.
Author 1 book119 followers
February 24, 2015
এই বইটাকে আমি জাফর ইকবাল স্যারের সেরা বইগুলোর তালিকাতে রাখবো। হ্যা "আমার বন্ধু রাশেদ" এর থেকে কোনো অংশে কম নয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা এই বইটি, বরং অনেক অংশে বেশি বলা যায়। বাচ্চাদের কোনো বইতে মুক্তিযুদ্ধের এত বিস্তারিত, বাস্তব, হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা আগে কেও লিখেছে বলে আমার জানা নেই। এই বইটা বীরাঙ্গনাদের কথা ভাবাবে, বিজয়ের আনন্দে হাসাবে, আবার কখনো পড়তে পড়তে চোখ ভিজে আসবে।
স্যারের প্রতি আকাশছোয়া শ্রদ্ধা আরো দশগুণ বেড়ে গেল।
Profile Image for Henry Ratul.
64 reviews116 followers
January 12, 2018
জাফর ইকবাল বরাবরই খুউব পছন্দের একজন লেখক। কলেজ লেভেল পর্যন্ত উনার বই খুব রেগুলার পড়তাম। এরপর বই পড়াটাই কমে গিয়েছিল। আর একটা সময় ছিল তখন উনার লেখা বই ছাড়া আর কারো বই পড়তামই না। বইটার নাম শুনে বইটা পড়বার ইচ্ছা জাগে। ছোটদের জন্য ১৯৭১ বিষয়ক খুব সুন্দর একটা বই। উনার গতানুগতিক লেখার থেকে বেশ ভিন্নও বটে। কিশোর বয়সী কাউকে যদি কখনো উপহার দেবার প্রয়োজন হয় তবে চোখ বন্ধ করে বইটা উপহারযোগ্য।

পাঠকদেরকে বাকি বই সমন্ধে জানতে হলে বইটা পড়ে দেখবার অনুরোধ করা হল। ☺
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
April 15, 2021
২০১৫ সালেই পড়া। এখন তেমন কিছু মনে নাই তবে কিশোর উপন্যাস হিসাবে ভালোই লাগছিল
Profile Image for Tarik Mahtab.
167 reviews3 followers
July 22, 2021
আমার পড়া জাফর ইকবালের সেরা বই।খুবই ভালো।
Profile Image for Ahana's  Reading  Stories .
55 reviews22 followers
December 22, 2020
#সাত_দিনে_সাত_রিভিউ

বইয়ের নামঃ গ্রামের নাম কাঁকনডুবি
লেখকঃ জাফর ইকবাল
রেটিংঃ 🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩

"আমি পরিষ্কার করে চিন্তা করতে পারছিলাম না। গোলাগুলির প্রচন্ড শব্দ, বারুদের গন্ধ আর ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে আছে। মিলিটারিরা গুলি করতে শুরু করেছে, আমাদের ওপর দিয়ে গুলি ছুটে যাচ্ছে, গাছের ডাল ভেঙে পড়ছে,গাছগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে। এই তাহলে যুদ্ধ? যুদ্ধ তাহলে এরকম? এই রকম যুদ্ধ করে আমাদের বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে? এই যুদ্ধে কেউ কি মারা যাবে? আমি কি মারা যাব? " —— গ্রামের নাম কাঁকনডুবি, জাফর ইকবাল।

সারসংক্ষেপঃ
————————
"যুদ্ধ " শব্দটা নিজের মধ্যে একটা কঠিন শব্দ । দেখতে ও কঠিন, লিখতেও কঠিন। আর এর অর্থ ও ঠিক সেরকম জটিল। দুই শব্দের যুদ্ধের পেছনে থাকে কত কিছু৷ তা সম্পর্কে পড়ার সময় বড়দের কলিজা কাঁপে। সে জায়গায় বাচ্চাদের কেমন অবস্থা তা ভাবা যায়। অথচ ১৯৭১ এর সে যুদ্ধে নাম না জানা কত বাচ্চা ই না গিয়েছিল বাংলাদেশ কে স্বাধীন করতে। সে রকম মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চাদের গল্প জানাতে ই হয়ত জাফর ইকবাল স্যারের "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" উপন্যাস টি লিখা।

উপন্যাসটি হলো বাংলাদেশের অনেক গুলেো সাধারণ গ্রামের মতো ই একটি গ্রাম নিয়ে। গ্রামটির কাঁকন ডুবি। যেখানে মানুষ গুলো ও ছিল অতিমাত্রা সহজ সরল। শহরের কোনো কিছু ই যেন তাদের ছুঁতে পারে নি। ১৯৭১ সালে যখন ঢাকা শহরের থমথমে অবস্থা চলছিল পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ নিয়ে। ঠিক সেসময় কাঁকন ডুবি গ্রামেট সহজ সরল মানুষ গুলো দেশে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ছিল সম্পূর্ণ অবচেতন। সেখানকার বেশির মানুষে কাছে যুদ্ধ জিনিস টা ছিল অজানা। বিশেষ করে বাচ্চা দের কাছে। এসব বাচ্চা�� মধ্যে একজন বাচ্চা হলে রঞ্জু। বাবা মা মারা যাওয়ার পর নানির কাছে থেকে বড় হয় রঞ্জু। সেখানকার স্কুলে লিখাপড়া করে।। যদি লিখা পড়ার প্রতি তার আগ্রহ যথেষ্ট কম। একদিন হঠাৎ করে স্কুলের ইংরেজি মাস্টার অসুস্থ হয়ে গেল। তখন শহরের কোনো কলেজে পড়ুয়া ছাত্র মাসুদ কে হেড মাস্টার নিয়ে আসে রঞ্জুদের পড়ানোর জন্য। আর এই মাসুদ ভাই এর মাধ্যমেই রঞ্জুরা ধীরে ধীরে বুঝতে শিখে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা, দেশের অবস্থা, একুশে ফেব্রুয়ারি আর শহীদ মিনারের গুরুত্ব। এরই মধ্যে হুট করে একদিন গ্রামের সবচেয়ে শিক্ষিত পরিবারের ছোট ছেলে, পেশায় ইন্জিনিয়ার,মিলিটারির হাতে ঢাকা শহরে নিহত হন৷ আর তার পরিবারকে তার বুড়ো বাবা গ্রামে নিয়ে আসে। সে পরিবারের ছোট মেয়ে হলো ডোরা।। যার মনে পাকিস্তানি মিলিটারির প্রতি তীব্র ক্ষোভ আর মিলিটারি মারার তীব্র ইচ্ছা। এই ইচ্ছার কথা সে রঞ্জুর কাছে বলে। শহরের বড় ঘরে বেড়ে ওঠা মেয়েটা কি মিলিটারি মারার মতো সাহস জোগাতে পারবে? রঞ্জু কি প্রকৃত যুদ্ধের মর্ম বুঝতে পারবে? আর মাসুদ ভাই কি একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন সত্যি করতে পারবে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বইটি পড়তে হবে। 🇧🇩🇧🇩

পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
————————
ইন্সটাতে এই বইটার ছবি দেখার পর পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগে। মূলত কভার টা আমাকে বেশি আকর্ষণ করে আমি তখন ও জানতাম না যে এটা যুদ্ধ বিষয়ক। কিন্তু জানার পড় ও পড়তে ইচ্ছা করেছিল। অজানা কোনো কারণে পড়ব পড়ব বলে পড়া হয় নি। বহুব্রীহি র আনন্দ পাঠ এ বইটি দেখে এবার পড়ার সিদ্ধান্ত নেই। যাই হোক, বই টি পড়ার সময় ও আমি তেমন কোনো কিছু ভাবি নি। তবে পড়া শেষ করে অনেক বেশি সন্তুষ্ট হলাম। । স্যারের লেখা আমি দ্বিতীয়বারের মতো পড়েছি। প্রথমবার তেমন ভালো লাগে নি। কিন্তু এই বইটা পড়ে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করেছে।

যুদ্ধের মতো জটিল একটা বিষয় জাফর ইকবাল স্যার অতি সবলীল ভাষায় লিখার চেষ্টা করছেন। আমরা সকলেই জানি যুদ্ধ জিনিস টা কত কঠিন, আর কত কুৎসিত । এর সম্পর্কে বিস্তারিত যে কারো আত্মা কেঁপে উঠবে। সে জায়গায় বাচ্চাদের উপর কেমন প্রভাব পড়বে তা আমরা সকলে অবগত। কিন্তু ১৯৭১ এর যুদ্ধ এমন একটি বিষয় যা সম্পর্কে এই দেশের ছোট বড় নির্বিশেষে সবার জানা দরকার। আমাদের দেশের সব বয়সের মানুষ কিভাবে একটা কঠিন মূহুর্তে একজোট হয়ে বাংলাদেশ নামক একটা দেশেকে পৃথিবীর কাছে পরিচয় করিয়েছিল, তা জানা এই দেশের প্রতিটা মানুষের জন্মগত অধিকার। কিন্তু যুদ্ধের কুৎসিত বিষয় গুলো বাচ্চাদের সামনে তুলে ধরা সকলের জন্য খুবই কঠিন ব্যাপার। কারণ বাচ্চা মন এই কঠিন জিনিস গুলো নিতে পারবে না৷ তবে "গ্রামের নাম কাঁকনডুবি" বই টি তে গল্পের মাধ্যমে অতি সহজ সাবলীল ভাষায় লেখক ১৯৭১ এর পিচ্চি মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প তুলে ধরছেন। যা পড়ে বাচ্চা সহজে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে পারবেন। যুদ্ধ সম্পর্কে বোঝা থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার তীব্র আগ্রহ জাগানো পর্যন্ত ক্ষুদ্র,ক্ষুদ্র অনুভূতি গুলো জাফর ইকবাল স্যার গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। তাই বাচ্চাদের জন্য এটা অনেক বেশি রিকমান্ডেড বই।

পছন্দের লাইনঃ
—————————
★মাসুদ ভাই সবসময় বলে,যুদ্ধ আসলে অস্ত্র দিয়ে হয় না,যুদ্ধ হয় মনের জোর দিয়ে। আমাদের মতো মনের জোর এখন আর কারো নাই।
★মনে হয় দুঃখের সৃয় মানুষের কথা বলার জন্য একটা লোকের দরকার হয়।
★"রঞ্জু, যুদ্ধ খুব খারাপ জিনিস। কত খারাপ সেইটা আমি আগে বুঝিনি। এখন বুঝেছি। গত সপ্তাহেই আমার বয়স ছিল বাইশ। এখন আমার বয়স কত জানো? এখন আমার বয়স একশ বাইশ। এক সপ্তাহে আমার বয়স কেন একশ বছর বেড়েছে জানো?"
আমি কিছু বুললাম না। মাসুদ ভাই বলল,"তার কারণ এই সপ্তাহে আমি প্রথম যুদ্ধ করেছি।
★ নানি হতাশ মাথা নাড়তে নাড়তে বলল,"এই মইত্যা হারামজাদা হচ্ছে বেকুবের বেকুব। এইটা একটা কথা হলো? বিপদের কি হিন্দু -মুসলমান আছে?বিপদের সময় একটা কুত্তা বিলাইকে সাহায্য করলেপ আল্লাহপাক খুশি হন।
★পৃথিবীতে যুদ্ধ থেকে ভয়ংকর কিছু নেই। কখনো ছিল না। কখনো থাকবে না।

happy reading. ❤️
Profile Image for Faraa.
25 reviews
January 1, 2021
#qotd: কোন বইটি পড়ে আপনি হাউমাউ করে কেঁদেছেন? আমি ' গ্রামের নাম কাকনডুবি ' বইটি এক রাতে পড়া শেষ করেছি এবং এরপর দুইরাত হাউমাউ করে কেঁদেছি।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা এই বইটির গল্পকথক স্কুলছাত্র রঞ্জু, আর তার শান্ত মায়াময় গ্রাম কাকনডুবি। এই গ্রামের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা জানেনা যুদ্ধ কি, কেন হচ্ছে, কেন শেখ সাহেব কে ক্ষমতা় দেয়া হয়নি, আর স্বাধীনতাই বা কি। রঞ্জুদের স্কুলে ভারপ্রাপ্ত বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে আসেন মাসুদ ভাই, ঢাকায় এমএসসি করছেন। তিনি রঞ্জুদের বলেন বঙ্গন্ধুর কথা, পূর্ববাংলার ইলেকশনের কথা আর দেশের স্বাধীনতার সম্ভাবনার কথা।

"আমরা স্বাধীন হলে দেশটার নাম কি হবে মাসুদ ভাই?"
একজন বলল, "পূর্ব বাংলা"
মাসুদ ভাই মাথা নাড়ল, বলল, "না। বাংলাদেশ। দেশটার নাম হবে বাংলাদেশ।"

এর মধ্যে গ্রামের কাজী বাড়ির ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকে পাকিস্তানীরা মেরে ফেলে আর তার দুই মেয়েসহ স্ত্রী চলে আসেন কাকনডুবি গ্রামে। ছোট মেয়ে ডোরা, বাবার মৃত্যুর পরই সিদ্ধান্ত নেয় তাকে মিলিটারী মারতে হবে, অন্তত একটা মিলিটারী সে নিজ হাতে শেষ করতে চায়।

গ্রামে মিলিটারী বাহিনী আস্তানা গড়লে , পুরো বদলে যায় কাকনডুবি গ্রামের চেহারা। মুসলিম লীগের আধিপত্য বাড়তে থাকে, অমুসলিমদের উপর শুরু হয় অত্যাচার। হিন্দু পাড়ার বাড়িঘর লুট করে নিতে থাকে, সাধারণ মানুষ জীবন কাটাতে থাকে ভয়ে আতঙ্কে।

বইটিতে একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্য আর দেশপ্রেমের মর্মার্থ প্রকাশ পেয়েছে, একই সাথে গ্রামের বিভিন্ন সংস্কৃতি আর জীবনধারা তুলে ধরেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার। এখানে আমার কাছে সব চেয়ে সাহসী চরিত্র মনে হয়েছে ডোরা কে, ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ছোট মেয়ে। লতিফাবু চরিত্রটি গ্রামবাংলার অধিকাংশ মেয়ের জীবনেরই ছায়া, যদিও লতিফাবু অনেকটাই জোরালো। এছাড়া ফালতু মতি চরিত্রটিও বেশ বাস্তব। যে চরিত্রটি আমাকে কাদিয়েছে সেটি হল পাইকার ভাই।

রঞ্জু আর ডোরা কি পারবে মুক্তিবাহিনী তে যোগ দিতে? মাসুদ ভাই কোথায় গেলেন? কতদিন লাগবে যুদ্ধ শেষ হতে?

হঠাৎ আমি উঠে দাড়িয়ে চিৎকার করে বললাম, "জয় বাংলা!"
Profile Image for Akash.
446 reviews150 followers
November 2, 2022
ছোটদের জন্য লেখা অসম্ভব ভাল একটি বই। বাচ্চাদের হাতে জাফর ইকবাল সমগ্র তুলে দেয়া উচিত। বাংলাদেশের প্রতিটা শিশু যদি জাফর ইকবালের বই পড়ে পড়ে বড় হয় তবে তারা নিশ্চিত ভাল বুদ্ধিমান মেধাবী মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠবে।

বর্তমান প্রজন্ম যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছে এবং তার পরিণতি যে কতটা ভয়ানক হচ্ছে তা আমরা সবাই ঢের পাচ্ছি। ভবিষ্যতে সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি প্রতিটি শিশুকে বোকা, মেধাশূন্য করে বড় করে তুলবে। জাফর ইকবালের উচিত বাচ্চাদের জন্য আরও প্রচুর বই লেখা। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব এবং বই পড়ার উপকারিতা নিয়ে।

জাফর ইকবালের অনেক বইতে অনেকে ২,৩ রেটিং দেয়; যা আমার কাছে বিরক্তিকর। তার বই তো ছোটদের জন্য লেখা; আপনাদের মত প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য না। আপনার ছোটদের বই পড়তে ভাল লাগবে না কিংবা গভীরতা পাবেন না এটাই তো স্বাভাবিক। একমাত্র শিশুমন এবং ছোটবেলায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে যদি বই পড়েন তবে বইয়ের আসল বার্তা বা মজা পাবেন।

দয়া করে জাফর ইকবালের বই প্রাপ্ত বয়স্ক মন নিয়ে পড়ে কম রেটিং দিবেন না। মনে রাখবেন, আপনার জন্য না; ছোটদের জন্য সে বই লিখে এবং লিখে যাবে।
Profile Image for Depro Das.
26 reviews6 followers
December 26, 2016
কাঁকনডুবির মত ছোট্ট ছোট্ট গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ কেমন হয়েছিল তা স্কুলে পড়ুয়া এক শিশু রঞ্জুর কিশোরখচিত দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক পথ-পরিক্রমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বইটা পড়তে পড়তে কখনও হাসি চলে আসে- কখনও কান্না, কখনও বেশ রাগ হয়- কখনও জেদ এবং সর্বশেষে বইটার প্রতি এক অদম্য ভালবাসার সঞ্চার হয়। রঞ্জু আর ডোরার মত আন্ডা-বাচ্চাদের সাবলীলতা আর সাহস, মা-বাবা হারা রঞ্জুর প্রতি নানীর তীব্র স্নেহ, বলাই কাকুর স্টলের 'পায়েস', মাসুদ ভাই এসে ফালতু মতি আর সুলেমানকে শায়েস্তা করা, ইউসুফ শাহ'র মত বেলুচী সৈন্যের এগিয়ে আসা, পাইকারের উদ্ভট মজার মজার সব গল্প বলা, কিংবা 'মা'এর মত বলিষ্ঠ নারীচরিত্র- এইগুলোকে অসম্ভব রকম ভালবেসে ফেলেছি। বইটা পড়া শেষে ঠিক এইজন্যই মন খারাপ হচ্ছে যে এখন বাস্তব জগতে ফিরে যেতে হচ্ছে।
Profile Image for Suraia Munia.
67 reviews41 followers
April 23, 2015
কিছু বই আছে একবার হাতে নিলে শেষ না করে রাখা যায়না আর শেষ হয়ে গেলে মনে হয় কেন শেষ হয়ে গেল! ঠিক তেমন একটা বই
Profile Image for Bookreviewgirl_xo.
1,169 reviews98 followers
May 9, 2025
Re-Read

This is a novel about a village named কাঁকনডুবি in the liberation war. This book was written from a child, রঞ্জু's perspective. This is the story of how from leading a normal life he ended up becoming a মুক্তিযোদ্ধা, how cruel the Pakistanis were, how our freedom fighters freed our country from the enemies despite having so little training and weapons, how the women had to lose their dignity, how a child has to give up his innocence and pick up a rifle instead of books and watch someone he/she knew getting killed, and so on. This is a story about loss, unity, and love.

This book might have one or two flaws. However, the portrayal of the liberation war here seemed perfect to me considering from a child's perspective. My tutor let me read the book when I read it the first time and I just loved it then and a few years later, I still ended up loving it now. I was holding my breath the whole time in case রঞ্জু had the same fate as রাশেদ from আমার বন্ধু রাশেদ Anyway, I love this book, the characters, world-building, as well as the plot— everything was well-put.
Profile Image for Syeda Ahad.
Author 1 book131 followers
July 20, 2015
নানান কারণেই মাথার ভেতরটা পেঁচিয়ে আছে গত দুইদিন ধরে। এমনকি পড়তেও পারছিলামনা কিছু। মাথায় এই সেই দুশ্চিন্তা। তার মধ্যে কি মনে করে ১২টার দিকে বইটা ধরলাম। টানা পড়ে শেষ করলাম মোটামুটি। কিছু অনুভূতি কখনো বদলে যায়না। তাই এই অনুভূতিগুলো ফিরে ফিরে আসলে হারিয়ে গেলেও নিজেকে খুঁজে বের করে আনা যায়। সেই নিজেকে খুঁজে আনার অনুভূতি হল। জাফর ইকবাল স্যারের মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা প্রতিটা বইই অনেক অনেক প্রিয়, এটাও ব্যতিক্রম হয়নি। কয়েক পাতা পড়তেই সেই ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের উপর কোনো বই পড়লে যেমন লাগতো, তেমন লাগা শুরু করলো। রঞ্জু আর ডোরার মত আমিও স্কুলে ফিরে গেলাম। অনেকদিন পর সেই স্কুলের বয়সের মত একটা বই পড়ে হাসলাম, রাজাকারদের মেরে ফেলার তীব্র ইচ্ছা ফিরে আসলো, হাউমাউ করে কাঁদলাম, প্রথম দেশের পতাকা তোলা, মুক্তির গান আর চরমপত্র শোনার অনুভূতি কখনও না থেকেও পেলাম আর বই শেষে সবসময়ের মত স্বাধীন হওয়ার খবরে উত্তেজনা আর আনন্দে চোখ ভিজে আসলো। জানি, আমারপক্ষে কখনোই বোঝা সম্ভব না আসলেই সে সময়ের মানুষের অনুভুতিগুলো কেমন ছিল। আর এটাও জানি মুক্তিযুদ্ধের নানান ছোটবড় সত্যি এই বইয়ের চেয়ে আরও অনেক ভালোভাবে অনেকেই, এমনকি জাফর ইকবাল স্যারও বেশ কিছু বইতেই ফুটিয়ে তুলেছেন। কিন্তু আমার জন্য এ মুহূর্তে এরচেয়ে ভালো বই আর হত না।
Profile Image for Gulzar Choudhury.
37 reviews32 followers
June 6, 2015
আমার পড়া জাফর ইকবাল স্যারের ২য় বই। ভালই লাগল মুক্তিযুদ্ধের এতো হৃদয় বিদারক বর্ণনা এক কিশোরের জবানি তে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের মতো বিষয় নিয়েও যে এমন সুন্দর এবং সাবলীল কিশোর উপন্যাস লিখা যায় তা দেখে লেখকের প্রশংসা না করে পারলাম না। উনার লেখা আর ও পড়ে দেখার ইচ্ছা আছে।
Profile Image for Zaki.
16 reviews16 followers
December 16, 2016
আমার বন্ধু রাশেদ-এর পর অনেক বছর পর আবার জাফর ইকবাল-এর লেখা মুক্তিযুদ্ধের গল্প পড়ে কাঁদলাম। পড়ে মনে হয়েছে খুব যত্ন নিয়ে লেখা হয়েছে বইটা। আর ভিতরের অলঙ্করণ এক কথায় দারুণ।
Profile Image for Ariyan Shuvo.
77 reviews1 follower
April 24, 2021
বই : গ্রামের নাম কাঁকনডুবি
লেখক : মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রকাশনী : তাম্রলিপি
মুদ্রিত মূল্য : ৪০০ টাকা
পৃষ্ঠা : ২৫৬
ব্যক্তিগত রেটিং : ৪/৫

গল্পবাঁক
------------------

কালী গাঙের তীরের ছোট্ট এক গ্রাম কাঁকনডুবি। গ্রামের নামটা কাঁকনডুবি কেন এটা নিয়ে ভিন্নমত আছে। তবে গ্রামের স্কুলে সদ্য যোগদান করা মাসুদ ভাই বলেছেন কাঁকন মানে চুড়ি ; হয়তো বহুকাল আগে কোনো রাজকন্যা গোসলে নেমে তার হাতের কাঁকন হারিয়ে ফেলে নদীতে। সেখান থেকেই নামটা কাঁকনডুবি। এটা অভ্রান্ত কারণ কিনা কেউ জানেনা। জানতেও চায় না। তবে মামুন মনে করে এককালে এখানে অনেক কাক ছিল তাই নামটা এমন।
সাজানো গোছানো গ্রামের ই এক কিশোর ছেলে রঞ্জু। বাবা মাকে হারিয়ে বড় হয়েছে নানীর কাছে। তার মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে, বন্ধু মামুনকে নিয়ে গল্প করতে ভালো লাগে, আর ভালো লাগে বলাই কাকার স্পেশাল চা পান করতে - তবে পড়ালেখা তার একদমই পছন্দ না। এছাড়াও রেডিও শুনতে তার বেশ ভালো লাগে। সে শুনতে পায় দেশে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে, পাকিস্তানী মিলিটারি ঢিকার অজস্র মানুষ মেরে ফেলেছে। রঞ্জুর অবশ্য ভয় নেই। যুদ্ধ তো ঢাকা শহর এলাকার ব্যাপার ; ওদের ছোট্ট গ্রামে মিলিটারি কেন ই বা আসবে!

কিন্তু একদিন সত্যি মিলিটারি এলো। দ্রুত পাল্টে যেতে লাগলো রঞ্জুর রোজকার জীবনটা, এখন আর সে আগের মত স্কুলে যেতে পারেনা - স্কুলে ক্যাম্প করেছে মিলিটারি বাহিনী । রাতে হঠাৎ হঠাৎ গুলির বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তার ; কালী গাঙ সে এছন আর এক ডুবে পার হতে পারেনা। ওটার তীর ধরে রোজ ভেসে আসে অসংখ্য লাশ। কী অদ্ভুত দেখায় লাশগুলোকে! এই বুঝি কথা ববে উঠবে ওর সাথে। কিন্তু লাশ কথা বলেনা ; ভেসে যায় দিগন্তে । রঞ্জু তাকিয়ে থাকে আর ভাবে, " সত্যিকারের যুদ্ধ দেখতে তাহলে এরকম?"


পাঠ প্রতিক্রিয়া
------------------------------
মুহম্মদ জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের চিত্রটা একজন কমবয়সী কিশোরের চোখে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা যে একটা কিশোরের মনে কীরকম প্রভাব ফেলতে পারে সেটা এই উপন্যাসে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

● বইটির ভালো দিক

প্লটটা মুক্তিযুদ্ধের হলেও লেখক সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন রঞ্জু নামক কমবয়সী এক কিশোরের দৃষ্টিকোণে। গল্প এগিয়েছে উত্তম পুরুষে। এটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে ।
চরিত্রায়নের কথা বলতে গেলে রঞ্জু চরিত্রটি সবথেকে বেশি স্ক্রিনটাইম পেয়েছে এবং বেশ বাসতবসম্মতও হয়ে উঠেছে। এছাড়া আনুষঙ্গিক সকল চরিত্র ই লেখক বেশ ভালোভাবে ডেভেল করেছেন। বিশেষত অন্যতম মূখ্য চরিত্র মাসুদ ভাই চরিত��রের গভীরতা বেশ উপভোগ করেছি। অন্যদিকে আনুষঙ্গিক চরিত্র যেমন : ডোরা, রঞ্জুর নানী, পাইকার কিংবা ফালতু মতি - সবাইকেই লেখক বেশ ভলোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন বলেই মনে হল আমার। তবে ফালতু মতি চরিত্রটি পুরোপুরি গোছানো ছিল না। রাজাকারে রূপান্তরিত হবার পরের দৃশ্যগুলোতে তাকে আরো নৃশংস হিসেবে কল্পনা করেছিলাম। কিন্তু চরিত্রটি তখন প্রায় সাদামাটা ই ছিল।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের স্টোরিটেলিং বরাবরই আমার পছন্দ। একটা হালকা ধাচে গল্প শুরু হয়ে ধীরে ধীরে পরিণতি পেয়েছে। এই বইটির স্টোরিটেলিং আমার বেশ ভালো লেগেছে।

বইটি এসেছে তাম্রলিপি প্রকাশনীর ব্যানারে । তাম্রলিপির প্রোডাকশন ভালো লেগেছে। বিশেষত আরাফাত করিমের করা প্রচ্ছদ ও অলংকরণ আমার বেশ ভালো লেগেছে। এছাড়া বইটির বাঁধাই ও পৃষ্ঠার মান যথেষ্ট ভালো।


● বইটির মন্দ দিক

মন্দ দিকের কথা বলতে গেলে শুরুতেই বলব গল্পটা একদমই বায়াসড্ হয়ে গিয়েছে। লেখক একপাক্ষিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বারবার জয়ী দেখিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের দলিল আমাদের বলে আদতে মুক্তিযুদ্ধ অতটাও সহজ ছিল না। তাই আমার মতে আরেকটু ট্রাজেডি আনা যেত বইটিতে। তাহলে গল্পটা আরো পরিণত হত। বিশেষত রাজাকার বাহিনীর নৃশংসতা, মিলিটারির পাশবিক আক্রমণ ইত্যাদি প্রায় অনুপস্থিত ছিল।
রঞ্জুর দৃষ্টিকোণে গল্প এগোনোতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। লেখক রঞ্জুর জবানিতে প্রথমদিকে বেশ কিছু রাইফেলের নাম বলে ফেলেছেন - একজন কমবয়সী কিশোর ছেলের জানার কথা নয় কোন বন্দুকের নাম এলএমজি আর কোনটা থ্রি নট থ্রি।

বইয়ের পাতায় গল্পের ছন্দে বেশ কিছু অলংকরণের দেখা পেয়েছি। এটা বেশ ভালো লাগলেও অধ্যায় ৮ এ খেয়াল করলাম রঞ্জুর নানীর চিত্র আঁকা হয়েছে একদমই বৃদ্ধা হিসেবে ; অথচ অধ্যায় ১১ তে রঞ্জুর নানীকে বৃদ্ধা হিসেবে আঁকা হয়নি। এটা কিছুটা দৃষ্টিকটু লেগেছে।


শেষের কথা
------------------------
মুক্তিযুদ্ধ যে কতটা প্রভাব ফেলেছে এদেশের মানুষের ওপরে সেটা এই বইটা পড়লে কিছুটা বোঝা যায়। সবসময় একটা কাঁচুমাচু ভাব, একটা অজানা আতঙ্ক ঘিরে রেখেছিল এদেশের মানুষের মনে ; এই বুঝি মিলিটারি এল - গর্জে উঠলো বন্দুক ; ঝরে পড়লো আরেকটি তাজা প্রাণ। সেই আতঙ্ক থেকে একজন ছোট্ট কিশোরও যে ছাড় পায়নি সেটাই এই বইয়ে দেখিয়েছেন লেখক। পাশাপাশি অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেছেন লেখক। আর তাই আজ এত বছর পরে এসে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি একাত্তরের সেই বীর যোদ্ধাদের , সকল মাসুদ, পাইকার ভাইদের - যারা সেদিন ছিল বলেই আমরা আছি। শ্রদ্ধা জানাই দেশের সেইসব অগ্রন্থিত নায়ক রঞ্জু, ডোরাদের যারা একাত্তরের রক্তঝরা কোনো একটা দিনে প্রতিজ্ঞা করেছিল দেশটাকে স্বাধীন করতেই হবে।

সর্বোপরি লেখককে ধন্যবাদ এত সুন্দর ও সাবলীল বর্ণনায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে দুই মলাটে তুলে ধরার জন্য।

1 review
August 19, 2018
Gramer Nam Kakondubi

Today, I finished a book written by Muhammed Zafar Iqbal. The book’s name is Gramer Nam Kakondubi. It is a Bengali book. Though the book is Bengali I like the book. It is about the war in 1971 between Bangladesh and Pakistan. The plots in this book is arranged so nicely. The story starts with a boy whose mother and father died before he was born, and he was raise up by his grandmother. The name of the boy was Ranju. He studied in a simple school in his village. He felt the school boring, but everything changed when a teacher came in the school named Masud. He made the students to exercise, make then play and let them build a Shahid Minar an celebrated International Mother Language Day. Then the story of the war slowly reached the village where Ranju lived. The Pakistani army tortured them. The Pakistani army killed the people and wanted them to leave the country. Then the teacher named Masud made Muktibahini. One day Masud met the boy named Ranju. He told him about his secret plans. But then Pakistani army knew that the teacher, Masud was the teacher of the school where Ranju studied. They also captured the school. So, they took Ranju to the commander of Pakistani army and questioned him, he refused to say, so they beat him up. They thought that he was dead and had thrown him at lakeside. But he was not dead. By this time he had made a friend and they both were anxious to join Muktibahini. But nobody took them because they were small kids. But when Ranju was tortured, Muktibahini took Ranju and his friend to their camp for their safety. Ranju and his friend met some Muktibahini at the camp. But still nobody took them for their safety. Then one day a rajakar in disguise came secretly in the Muktibahini camp. But then, Ranju saw that, at night the rajakar wrote secret information about Muktibahini camp in a notebook. Then he also saw a bottle of kerosene to burn the weapons of Muktibahini. Then he threw the kerosene out of the bottle and then kept the bottle in the bed where the rajakar slept. At midnight Ranju was awake because of a noise. When he got up from his bed he saw that the rajakar was trying to burn the weapons of Muktibahini! Ranju then started shouting and saying ‘ Rajakar! Rajakar!’ Everybody was awake but the rajakar escaped. Then the Muktibahini knew that Pakistani army was going to attack them. Muktibahini was prepared. But in this war Ranju and his friend also participated! It was a dengerous war! Bullets was coming out of the guns. At last Muktibahini won the war. But one Muktijoddha was shahid. Like this they participated in many wars and Bangladesh won the war! There were flags of Bangladesh in every house, even in the school. The book is very nice. This is one of the best book I ever read.
Profile Image for Ayesha Mashiat.
187 reviews23 followers
January 11, 2022
আমার পড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সেরা বই এটি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা অনেক বই অতিরঞ্জিত ভাবে আবেগগুলো তুলে ধরেছে, কিন্তু এখানে জাফর ইকবাল স্যার মুক্তিযুদ্ধের আসল আবেগগুলো খুবই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

এ উপন্যাসে যে জিনিসটা আমার সবচাইতে ভালো লেগেছে সেটা হলো সাধারণ দিনের গল্পগুলোর মাঝে যুদ্ধটাকে ধীরে ধীরে তুলে ধরা। গ্রামের পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধের আভাসের দারুন এক মিল দেখা যায় এ বইটিতে। সেই সাথে শহরের খন্ডচিত্রগুলোও সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন স্যার।

আবেগ ফুটিয়ে তোলার ভঙ্গিমাও ছিল অসাধারণ। কোথাও সৈনিকের স্বাধীন বাংলায় গান গাওয়ার আশা চুরমার করেছেন তো কোথায় আলতো করে ধর্ষনের কথাও বলেছেন। এ অংশগুলোর গাম্ভির্য বইটা পড়ার অনেক পরে বুঝতে পেরেছি, এতটা নিখুত ছিল।

মূক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত কিশোর বই/উপন্যাস পড়তে চাইলে এ বইটার কথা অবশ্যই বলবো <3
Profile Image for Mubtasim  Fuad.
316 reviews41 followers
May 31, 2024
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যেকোন বই আমাকে দারুণ ভাবে স্পর্শ করতে পারে। এই বইটাও তার ব্যতিক্রম নয়।
লেখক স্যার জাফর ইকবাল। আমি ওনার তেমন বই পড়ি নাই, শুধু একটা পড়েছিলাম ছোটবেলায়, "আবারো টুনটুনি, আবারো ছোটাচ্চু"। সেটা ডিটেকটিভ টাইপ বই ছিল, আর আজ পড়লাম মুক্তিযুদ্ধ ভিওিক এক কিশোর উপন্যাস।
বইটা অসাধারণ ছিল।
একটা শান্তিপ্রিয় গ্রাম কাঁকনডুবীতে পাকবাহিনী আসা ও গ্রামের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা, পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গল্পের main protagonist রঞ্জুর অংশগ্রহণ। একএে যুদ্ধ, এবং গ্রাম থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করা এটাই মূলত গল্প। কিন্তু লেখক যেভাবে বর্ণনা করেছেন, এতে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাদের যে ভয়াবহতা তা অনুভব করা যায়। দেশের মানুষ কতটা কষ্ট সহ্য করছে সেটাও অনুভব করা যায়।
আমার আরো মুক্তিযুদ্ধ ভিওিক বই পড়ার ইচ্ছা আছে। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে পড়ব।
Profile Image for Lasit Mehjabin.
94 reviews2 followers
May 12, 2021
এত ভালো বই আমি কখনো পড়িনি! এই বইটি পড়ে আমি নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ কি সেটা জানলাম। ইস.... তখন কত কষ্টই না হয়েছিল!জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত কষ্ট সহ্য করে ছিলেন। আর যদি এই গল্পটির কথা বলি তাহলে বলবো ..... It's amazing! আর ছোটো রঞ্জু ও ডোরা (খোকন) কত সাহসী! আমি হলে তো তখুনি বাবাগো মাগো বলে দিতাম দৌড়!
Displaying 1 - 30 of 62 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.