রুপুর মানুষ খুন করতে হাত কাঁপে না। দক্ষিণাঞ্চলের ছোট শহর মির্জাপুরের সবাই তাকে ভয় পায়, সম্মান করে। সবসময় তার সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকে দুই বন্ধু, শফিক আর মিলন। মাঝে মাঝে রাতে একা লাগলে মোটরবাইকে করে দূরে কোথাও একা একা চলে যায় শহরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী রুপু। অন্যদিকে সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া অনিন্দিতা জানে না তার জীবনে কি দারুন এক ঝড় আসতে চলেছে। কবি হতে চাওয়া তরুণ নিবিড় নতুন এই শহরে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় রত। নতুন বন্ধু-বান্ধব, কবিতা আর প্রেম, সবকিছু মিলে তার জীবনেও চলছে দ্বিধাদ্বন্ধের চিরাচরিত খেলা। শহরের রাজনীতির চালক জামাল খন্দকার, মানিক মিয়া কিংবা শাহান এরাই বা কোন খেলা খেলছে।
ক্ষমতা, লোভ, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, বন্ধুত্ব, হত্যা এই সব কিছু মিলেমিশে কী এক পরিণতি অপেক্ষা করছে এইসব চরিত্রের সামনে তারই দারুন এক আখ্যান এই উপন্যাস।
শরীফুল হাসান’র কলমে নব্বই দশকের নষ্টালজিক সময়ের শেষ অংশটুকু ছোটখাট এক মফস্বল শহরের প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে ‘যেখানে রোদেরা ঘুমায়’ উপন্যাসে। পাঠককে ইফতেখার উদ্দিন রুপুর জীবন পাল্টে দেয়া আখ্যানে স্বাগতম।
Shariful Hasan hails from Mymensingh, Bangladesh. He has spent his childhood by the banks of Brahmaputra river. He completed his Masters in Sociology from University of Dhaka and is currently working in a renowned private organization.
Shariful's first novel was published on 2012 titled Sambhala. With two other books, this captivating fantasy trilogy has received widespread acclimation both within and beyond the borders of Bangladesh. The Sambhala Trilogy was translated in English and published from India.
Although his inception consisted of fantasy and thriller, he has later worked on a variety of other genres. These works have been received fondly by the Bangladeshi reader community. Lot of his works have also been published from different publications in West Bengal.
Award- Kali O Kalam Puroshkar 2016 for 'অদ্ভুতুড়ে বইঘর'
শরীফুল হাসান ভাইয়ের লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় 'সাম্ভালা'-র মাধ্যমে। প্রথম বলেই ছক্কা যাকে বলে। তবে ২০১৩-১৪ এর সাম্ভালার শরীফ ভাই আর ২০২০ এর 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়'-এর শরীফ ভাইয়ের লেখনীর মধ্যে তফাতটুকুই বুঝিয়ে দিবে সাহিত্য যাত্রায় তার অগ্রগতি। সাম্ভালা এখন বাংলা ফ্যান্টাসিতে ক্লাসিক হিসেবে স্বীকৃত। গত বছরের 'ছায়াসময়' এবং সদ্য প্রকাশিত 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়' পড়ার পর বলবো, তার রচিত এই ঘরানার উপন্যাসগুলোও পাঠকমহলে এক সময় ক্লাসিক বলেই বিবেচিত হবে। স্বস্তির বিষয়, ফ্যান্টাসির পাঠক আমাদের দেশে কম হলেও, চিরায়ত সাহিত্যের পাঠক তুলনামূলক বেশি। :) আর এই রচনাগুলো মূলত থ্রিলারের সাথে চিরায়ত সাহিত্যের দারুণ মেলবন্ধন।
প্রথমেই নজরে আসবে উপন্যাসের ঠাস বুনট বর্ণনা। সেই সাথে এমন একটি সময় বেছে নিয়েছেন, যা নস্টালজিয়ায় ভোগাবে অনেককেই। ৯০ দশকের মফস্বল একদম জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে গল্পের ক্যানভাসে। প্রেক্ষাপট দক্ষিণাঞ্চলের ছোট্ট শহর মির্জাপুর। পুরো উপন্যাসে অনেক চরিত্র থাকলেও, মূল চরিত্র একজনই। রুপু। 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়' মূলত রুপুর জীবনেরই আখ্যান। মানুষ খুন করা কোন ব্যাপার নয় তার জন্যে, আশপাশের সবাই ভয়ে রীতিমতো কাঁপে। সীমান্ত এলাকার সবরকম 'ব্যবসা' নখদর্পনে। গল্প সামনে এগোনোর সাথে সাথে দুই বন্ধু মিলন ও শফিকের সঙ্গে রুপুর এই আঁধার জীবনের নানারকম বাঁকের সাথে পরিচিত হই আমরা। তবে গল্পের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া অনিন্দিতা। মা নেই, বাবার সাথে একা থাকে। ছিমছাম জীবন যাকে বলে। ঘটনাক্রমে রুপুর জীবনের সাথে জড়িয়ে যায় তার জীবনের রেখা। নিরীহ একটা মেয়ের সাথে রুপুর মত একজন মানুষের সম্পর্কের রসায়ন কিরকম হবে, তা স্বভাবতই ভাবাচ্ছিলো। তবে এই অংশগুলোর বর্ণনাই ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
ক্ষমতা, লোভ, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, বন্ধুত্ব, বিষণ্ণতা- সবকিছুই গল্পে মূর্ত হয়েছে একে একে। শেষটা পড়ার পর হয়তো অনেকের মনে হবে- এমনটা তো হবার ছিল না। আবার অনেকে ভাববেন- এমনটাই হবার ছিল। আমি কোন দলে, এখনও বুঝতে পারছি না। শরীফ ভাইয়ের জন্যে শুভকামনা। এরকম হারিয়ে যাওয়া সময় আর অতিমাত্রায় বাস্তব চরিত্রগুলো নিয়ে আমাদের লেখা উপহার দিবেন- এই কামনা করছি।
মৃত্যুই নিয়তি। অনিন্দিতা চরিত্রটির প্রতি চরম বিরক্ত। কবিরা অহংকারী হয়, নিবিড় আরও একটু অহংকারী হলে মানাতো। রুপুর উত্থান-পতন বাস্তবসম্মমত। দুটো ছেলের জীবন একটি মেয়ের জন্য বদলে গেল এবং সেজন্য অনিন্দিতা ও তার অনাগত সন্তানের জন্য সমবেদনা। ওরা ভালো থাকুক। আমার পড়া শরীফুল হাসানের সবচেয়ে সুলিখিত বই।
আর হ্যা, শেষমেশ সবাই হারে। জীবনকে যুদ্ধ হিসেবে নিলে, সে যুদ্ধে কারো জয় নেই। সবাই হারে।
লেখকের আটটি বই পড়েছি এ পর্যন্ত,এ বইটা তার মধ্যে সবচেয়ে সুলিখিত। প্রচুর অতিনাটকীয় উপাদান আছে যেগুলো পড়লে বাংলা বা হিন্দি সিনেমার কথা মনে পড়ে যেতে পারে।নায়িকার মুখে "নইলে আমি গলায় দড়ি দেবো" সংলাপটাও আছে!!!কিন্তু এর সবই নায়ক রুপুর উত্থান পতন,রাজনৈতিক কূটকৌশল যা ট্র্যাজেডির পথে গল্পকে অমোঘ নিয়তির মতো টেনে নিয়ে যায়- তা পড়ে নেতিবাচক দিকগুলোর কথা আর মনে থাকে না।উপন্যাসের শেষে মন বিষাদে আক্রান্ত হতে বাধ্য।ট্র্যাজেডি কাহিনির মূল ঘটনাপ্রবাহের সাথে খুব চমৎকারভাবে মানিয়ে গেছে।এই ধরনের কাহিনি লেখার ব্যাপারে লেখকের স্বভাবসুলভ দক্ষতা আছে। বিশেষ দ্রষ্টব্য :শরীফুল হাসানের প্রায় কোনো বইতেই আলাদাভাবে উল্লেখ করার মতো কোনো নারীচরিত্র নেই।সবাই কেমন প্রথামাফিক ভূমিকা পালন করে।এই উপন্যাসেও রুপুর পাশে অনি ম্লান।লেখকের কাছে প্রত্যাশা থাকবে এই ব্যাপারে নজর দিতে।
I love a good love story. There's just something so precious about the 90s when people talked on landlines. No smartphones. It's all very romantic! :') And when two people see each other almost regularly but don't speak but can not stop thinking about each other! It makes my heart sing!
This book is so easy to read. I kept turning the pages because I wanted to know what happened next. That is the best part. It is simple and easy and keeps the reader hooked. I loved the fact that the characters are so realistic. The female lead is quite young and a tiny bit impulsive but she knows what she wants and what she is doing. The male lead has the spotlight most of the time. He is kind of our typical bad boy with a good heart. It's a good story.
Now would I recommend this book? Yes, if you are a hopeless romantic. No, if everything you read has to be of great literary value.
সকালে ঘুম ভেংগে গেল হঠাৎ, ঘুম আর হবেনা বুঝতে পেরে পড়ে ফেললাম শরীফুল হাসান ভাইয়ার সর্বশেষ উপন্যাস 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়'।অনেকগুলো চরিত্রের মধ্যে রুপু,অনি কিংবা নিবিড় সবগুলো চরিত্রকেই পছন্দ হয়ে গিয়ছিল। পড়া শেষে কার জন্য বেশি খারাপ লাগছিল আমি নিজেও দ্বিধায় আছি এটা নিয়ে। আমার কাছে এই ধরনের বইগুলো বেশ ভালো লাগে। মনে হয়ে গল্পগুলো যেন নিজেদের পরিচিত গন্ডির মধ্যেই ঘটছে।মফস্বল শহরের বর্ণনা গুলো দেখে নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। যদিও গল্পটির সবকিছুর পরিনতি বইয়ের শেষ দুটি পৃষ্ঠায় শেষ হয়েছে কিন্তু বইটার শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমি উপভোগ করেছি। আমি অন্যদের মতো সুন্দর করে রিভিউ লিখতে পারিনা,বই পড়ে ভালো লাগা কিংবা খারাপ লাগা গুছিয়ে বর্ণনা করতে পারিনা। কিন্তু শরীফুল ভাইয়ের ছায়া সময় কিংবা যেখানে রোদেরা ঘুমায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এত বেশি উপভোগ করেছি, আশা করব লেখক মাঝে মধ্যেই নব্বই দশকের নস্টালজিক সময়ে আমাদের বিচরণ করাবেন তার সামনের লেখাগুলোর মাধ্যমে।
চিরকুট প্রকাশনীর অবশ্যই প্রশংসা করতে হয়। বইয়ের সুন্দর প্রডাকশন এবং সম্পাদনা দুইদিকেই ভালোমতো সফল এই বইটির ক্ষেত্রে।
বইয়ের নামঃ যেখানে রোদেরা ঘুমায় লেখকঃ শরীফুল হাসান চিরকুট প্রকাশনী
'রুপুর মানুষ খুন করতে হাত কাঁপে না। দক্ষিণাঞ্চলের ছোট শহর মির্জাপুরের সবাই তাকে ভয় পায়, সম্মান করে। সবসময় তার সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকে দুই বন্ধু, শফিক আর মিলন। মাঝে মাঝে রাতে একা লাগলে মোটরবাইকে করে দূরে কোথাও একা একা চলে যায় শহরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী রুপু। অন্যদিকে সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া অনিন্দিতা জানে না তার জীবনে কি দারুন এক ঝড় আসতে চলেছে। কবি হতে চাওয়া তরুণ নিবিড় নতুন এই শহরে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় রত। নতুন বন্ধু-বান্ধব, কবিতা আর প্রেম, সবকিছু মিলে তার জীবনেও চলছে দ্বিধাদ্বন্ধের চিরাচরিত খেলা। শহরের রাজনীতির চালক জামাল খন্দকার, মানিক মিয়া কিংবা শাহান এরাই বা কোন খেলা খেলছে।
ক্ষমতা, লোভ, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, বন্ধুত্ব, হত্যা এই সব কিছু মিলেমিশে কী এক পরিণতি অপেক্ষা করছে এইসব চরিত্রের সামনে তারই দারুন এক আখ্যান এই উপন্যাস।
শরীফুল হাসান’র কলমে নব্বই দশকের নষ্টালজিক সময়ের শেষ অংশটুকু ছোটখাট এক মফস্বল শহরের প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে ‘যেখানে রোদেরা ঘুমায়’ উপন্যাসে। পাঠক��ে ইফতেখার উদ্দিন রুপুর জীবন পাল্টে দেয়া আখ্যানে স্বাগতম।'
সুন্দর বিষণ্ন একটা গল্প। যেখানে প্রেম, তারুণ্য, রক্তের গরম, রাজনীতি সবই আছে। প্রেমের গল্প না বলে ত্রিভুজ প্রেমের গল্প বলা ভালো। আর ত্রিভুজ প্রেম মানেই ট্র্যাজেডি। বইটা শেষ করার পর অদ্ভুত বিষণ্নতায় মন ছেয়ে গেল। চরিত্রগুলোর পরিণতিও মনে দাগ কাটার মত। মফস্বলের গল্প বর্তমানে সুলেখক শরীফুল হাসান অনেক সুন্দরভাবে বলেন। সর্বশেষ ছায়া সময় বইটাও একইভাবে দাগ কেটেছিল। লেখকের গল্প বলার স্টাইলে একধরণের জাদু আছে। পাঠককে যা টেনে রাখে, উত্তেজনা দেয়, বিষাদে মন ভরিয়ে দেয়। যেখানে রোদেরা ঘুমায় বেশ উপভোগ করেছি। ব্যস্ততার ফাঁকে যখনই সময় পেয়েছি হারিয়ে গিয়েছি রুপুর জগতে। রুপু বাঁধ না মানা এক তরুণ, নিয়ম শৃঙ্খলা ভাঙায় যার জুড়ি মেলা ভার, তার জীবন ও প্রেম নিয়েই গল্পটা। রুপুর পরিণতি জানতে ও নস্টালজিয়ায় হারাতে চাইলে পড়তে পারেন যেখানে রোদেরা ঘুমায়। খারাপ যাবে না সময়টা।
কাহিনী সংক্ষেপ: ৩০০ পেইজের এই কাহিনী ঘিরে যে চরিত্র সে হলো রুপু। ইফতেখার উদ্দিন রুপু। মির্জাপুর এলাকার একজন গণমান্য খুনি, গুন্ডা, মাস্তান। গনমান্য এই কারণে যে গুন্ডা হলেও সর্বক্ষন এলাকার মানুষদের সাহায্যে তৎপর ছিল। কিন্তু একটি ভুল গুলির নিশানার কারণে তার জীবনের অনেক অধ্যায় কালো হয়ে যায়।
অন্যদিকে গল্পের নতুন অধ্যায়ে আছে নিবিড়। কাব্যপুরুষ। ভুল সঙ্গের কারণে ধোয়াঁর মাঝে যার জীবন কাটছিল। এই সদ্য যুবককে একদিন একটি কঠিন পরিণতির শিকার হতে হয়।
এই দুইয়ের মাঝে যার কাহিনী সে হলো অনিন্দিতা। ডাক নাম অনি। একেবারে ছিমছাম পরিবেশে বড় হওয়া মেয়ে। কিন্তু এই নতুন পরিবেশ তার জীবনের অনেকটুকুই বদলে দেয়। পরিচয়-প্রেম-পরিণতি তাদের কতটুকু এগিয়ে নিয়ে গেল?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: গল্পের শেষটা এমন হওয়া উচিত ছিল কী! স্বাভাবিক ভাবেই স্বাভাবিক পরিণতি হতে পারত, কিন্তু এই শেষটার কারণে গল্পটি যেন আরও বলিষ্ঠ হলো। যেভাবেই হলো সব হিসেব-নিকেশ মিটিয়ে গেছে। শেষদিকে এমন মোড় নিতে পারে ভাবিনি। গল্পের সাইড ক্যারেক্টার গুলোও এত নিখুঁত ছিল, এরা তুলে ধরে পলিটিক্স এর টক্সিসিটিতে অনেক জীবন কীভাবে ধূলিসাৎ হয়, ভুল সঙ্গে পথ মাড়ানোর পরিণতি কী । তেমনি আবার কৃতজ্ঞতা, বন্ধুত্বের মত সুন্দর সম্পর্কের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় কিছু চরিত্র। সবমিলিয়ে ভীষণ সুন্দর রুপুর জীবনের এই আখ্যান।
নব্বইয়ের দশকের ঘ্রাণ পাবার উত্তম উৎস শরীফুল হাসানের বই। দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা মির্জাপুর। এখানের এক মাস্তানের জীবনের গল্প নিয়ে এই বই। অনেকটা নব্বইয়ের দশকের সিনেমার মতোই। মফঃস্বলের ত্রাস, ব্যক্তিগত কিছু সংস্কার ও দর্শন মেনে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের ব্যবসা চালাতো। হঠাৎ জীবনে এলো প্রেম, এরপর ক্ষমতার পালাবদলে জীবন প্রবাহে পরিবর্তন এলো। পাঠকের ধারণামাফিক পরিণতি এলো, তবে পরিপূর্ণতা এলো কী? আমাদের জীবনটাও তো এরকমই, "যাহা চাই, তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না"
ছায়া সময়, বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ এর পাশাপাশি এই বইটাও সুন্দর লিখেছেন লেখক। রিডিং ব্লক কাটানোর অব্যর্থ ওষুধ।
কাহিনি সংক্ষেপঃ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক মফস্বল শহর মির্জাপুর। এই শহরের সবচেয়ে প্রভাবশালী যুবক ইফতেখার উদ্দিন রুপু। মির্জাপুরের এমপি জামাল খন্দকারের মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সমস্তটাই নিয়ন্ত্রণ করে রুপু। ওর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শফিক ও মিলন। পুরো মির্জাপুর জুড়ে রুপু'র অনেক সম্মান। না, ভয়ে না। মানুষ সত্যিই তাকে ভালোবাসে, সমীহ করে। মানুষ খুন করতে এতোটুকুও হাত না কাঁপা রুপু যতো ভয়ঙ্করই হোক না কেন, নিজস্ব কিছু নীতিতে সবসময়ই অটল থাকে সে।
অনিন্দিতা হোসেনকে তার কাছের মানুষরা চেনে অনি নামে। মেয়েটা মির্জাপুর কলেজের ছাত্রী। ডাকসাইটে উকিল সাজ্জাদ হোসেনের একমাত্র মেয়ে সে। মেয়েটা যেদিন প্রথম রুপুকে দেখলো, সেদিন থেকেই যেন রুপু জায়গা করে নিলো ওর মনে। এদিকে রুপুও মজে গেলো অনি'র সুন্দর দুই চোখের মায়ায়। সারাজীবন পিস্তল, মাদক আর খুনোখুনি নিয়ে পড়ে থাকা দুঃসাহসী রুপু অনি'র প্রেমে পড়লো। শুরু হলো নতুন এক গল্প।
নিবিড় কবিতা লেখে। পছন্দ করে সহপাঠী অনিকে, কিন্তু বলতে পারে না। নতুন নতুন অনেক বন্ধু জুটেছে ইদানীং তার। আর তাদের হাত ধরেই নিবিড় জড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ বিভ্রান্তি আর অন্ধকারে পরিপূর্ণ এক জগতের সাথে। নিজেকে বোঝার ও খোঁজার চেষ্টা করতে এসে কবি নিবিড় ধীরে ধীরে কোথায় হারাতে লাগলো, তা সে নিজেও বুঝতে পারলো না।
এদিকে মির্জাপুরের রাজনীতিতে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। রুপু, শফিক আর মিলন এটা বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে। জামাল খন্দকার আর তার মাস্টারমাইন্ড সহযোগী মানিক মিয়া কোন খেলার ছক কষছে? বহুদিন আগে মির্জাপুর থেকে বিতাড়িত শাহান আবারো কেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো? আর এই সমস্ত কিছু ছাপিয়ে যে অনিশ্চয়তাটা রুপু'র জীবনে কাঁটার মতো বিঁধতে লাগলো তা হলো অনি'র সাথে ওর মিলন।
মির্জাপুরের কিংবদন্তিতুল্য যুবক ইফতেখার উদ্দিন রুপু'র অভাবনীয় উত্থান-পতনে ভরা উপাখ্যানে বাকি আছে আরো অনেক কিছুই।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ নব্বই দশকের এক মফস্বল শহরকে কেন্দ্র করে এগিয়ে গেছে শরীফুল হাসানের 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়' উপন্যাসের কাহিনি। সুলেখক শরীফুল হাসান এর আগেও থ্রিলার ঘরানা থেকে বেরিয়ে 'মেঘ বিষাদের গল্প', 'জনারণ্যে একা কয়েকজন' ও 'ছায়া সময়'-এর মতো ভিন্নধর্মী সমকালীন ও সামাজিক উপন্যাস তাঁর পাঠকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার এলো 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়'।
বেশ সহজ-সরল ভাবে শুরু হয়েছে গল্পটা। এটাকে শুধুমাত্র রুপু নামের অকুতোভয় ও বেপরোয়া এক তরুণের জীবন পাল্টে দেয়া উপাখ্যান বললে ভুল বলা হবে৷ বরং 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়'-কে নব্বই দশকের পুরো একটা মফস্বল শহরের বুকের ভেতরের গল্প বললেই যথাযথ হয়৷ যা আবর্তিত হয়েছে রুপুকে কেন্দ্র করে, কিন্তু ছুঁয়ে গেছে এই গল্পের সব চরিত্রের ভেতর আর বাহিরকে। প্রেম মানুষের জীবনকে কিভাবে আর কতো রকম ভাবে পরিবর্তিত করে দিতে পারে, তা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে এই উপন্যাসে। কিছু কিছু প্রেম কাহিনি দীর্ঘদিন মনের গভীরে থেকে যায়। অনি-রুপু'র প্রেম কাহিনিটাও আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছে।
এই উপন্যাস থেকে বেশ পরিস্কার একটা ধারণা পেয়েছি নব্বই দশকের লোকাল পলিটিক্স সম্পর্কে। শাহান, জামাল খন্দকার ও মানিক মিয়ার মতো চরিত্ররা মূল গল্পে বেশ গভীর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলো৷ বইটা শেষ করার পর নিবিড় চরিত্রটার জন্যও সৃষ্টি হয়েছে গভীর দুঃখবোধ। ভালো লেগেছে রুপু-শফিক-মিলন ত্রয়ীর নিষ্কলুষ বন্ধুত্ব। সব মিলিয়ে 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়' ছিলো প্রেম, বন্ধুত্ব, সংঘাত, বিশ্বাসঘাতকা আর প্রতিশোধের এক অসাধারণ উপন্যাস।
নব্বই দশকের আবহ চমৎকার ভাবে এই উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন শরীফুল হাসান। তাঁর চমৎকার গল্প বলার ধরণ��র কারণে একটাবারের জন্যও বিরক্তি আসেনি বইটা পড়তে গিয়ে। বইটা প্রকাশের আগে থেকেই আলাদা এক ধরণের আগ্রহ কাজ করছিলো আমার মধ্যে। আর পড়ার পর একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি, হতাশ হইনি। মন খারাপ লাগছে। কেন, সেটা বলতে চাই না। এই মন খারাপ ভাবটা কতোক্ষণ থাকবে, জানি না। দুই-একটা টাইপিং মিসটেক পেয়েছি এই বইয়ে। শরীফুল হাসানের উচিৎ এমন ভিন্নধর্মী উপন্যাস নিয়ে আরো কাজ করে যাওয়া।
সজল চৌধুরী'র করা 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়'-এর প্রচ্ছদটা এতোটাই চমৎকার লেগেছে যে আমার ধারণা যারা সচরাচর বইপত্র পড়ে না তারাও বইটা কোথাও দেখলে একবার হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে আগ্রহী হবে। নিঃসন্দেহে তাঁর সেরা কাজ গুলোর একটা এই বইয়ের প্রচ্ছদ। চিরকুটের নান্দনিক প্রোডাকশন নিয়ে আসলে নতুন করে বলার কিছু দেখছি না। কাগজের মান, বাঁধাই আর মূল্য নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। আমি সন্তুষ্ট।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব কম বই-ই মানুষকে রিকমেন্ড করি ইদানীং। তবে এই বইটা রিকমেন্ড করবো৷ 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়' আশা করি হতাশ করবে না।
কিছু কিছু বই থাকে, যেগুলোর শেষটুকু আগেভাগে জানার পরেও ভালোলাগাটা কমে না। বরঞ্চ পড়ার পর একধরনের বিষন্নতা আর হাহাকার মনকে ঘিরে ধরে। ঠিক এই ধরনের একটি বই হলো 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়'।
নব্বই দশকের প্রেম নিয়ে কি আপনার কোনো ধারণা আছে? তখনকার প্রেম ছিল জানালা দিয়ে, কলেজের সামনে আর ল্যান্ডফোনে। কখনোসখনো কবিতার মাধ্যমে প্রেম নিবেদন।
গল্পের মূল চরিত্র রুপু। রুপুর পরিচয় হচ্ছে সে একজন সন্ত্রাসী। মাদকের চোরাচালান, খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসবাদ সব তার নখদর্পণে। খুন করতে তার হাত না কাঁপলেও, প্রেমের ব্যাপারে সে নিতান্তই ছেলেমানুষ। কিন্তু সন্ত্রাসী যে আমাদের সমাজব্যবস্থার কারণেই তৈরি হয়, তা লেখক চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। মির্জাপুরের রাজনীতি জামাল খন্দকার নামের এক মন্ত্রী চালালেও, এই অঞ্চলে রুপুর ক্ষমতা এবং দাপটও অনেক বেশি। ভয় আর সম্মান দুটোই সে পায়।
তো শুরুতে যা নিয়ে কথা বলছিলাম, প্রেম। প্রেমে আমাদের রুপুও পড়েছিল। ওই একবারই। পড়ার চেয়ে আছড়ে পড়েছিল বললে মনে হয় বেশি ভালো হয়! মেয়েটির নাম অনিন্দিতা। মাত্রই কলেজে ভর্তি হওয়া শান্ত একটি মেয়ে। মা মারা যাওয়ায় বাবাই তাকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে। ঘটনার গ্যাঁড়াকলে এই অনিও রুপুর প্রেমে পড়ে যায়। অনির প্রেমে আরো একজন পড়েছিল, সে হলো নিবিড়। নিবিড়কে শুরুতে কবিসুলভ নিপাট ভদ্র ছেলে মনে হলেও, সঙ্গদোষে তার বিগড়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি। সে জানে যে ক্ষমতায় নিবিড়ের সাথে কখনো পেরে উঠবে না, কিন্তু ওই যে সঙ্গদোষ আর নেশা করা- এই দুইটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। রুপুর জন্যও একটা বিষয় কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়৷ কিন্তু তাদের পরিণতি শেষমেশ কী হয়? . . . এককথায় বইটার কাহিনি বলতে হলে, আমি বলবো 'ক্লিশে'। প্রেম, বন্ধুত্ব, পারিবার, রাজনীতি, ক্ষমতা, লোভ, হিংসা, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতিশোধ- সব আছে এখানে। বইটির কাহিনি সিনেম্যাটিক ধাঁচের। এই একই প্লটে অনেক সিনেমা দেখা হয়ে গেছে। শাহরুখ খানেরই বোধহয় এমন একটা সিনেমা ছিল। গল্পটা অনেকাংশে ত্রিভুজ প্রেমের। আর ত্রিভুজ প্রেম মানেই হিংসা, টুইস্ট, ট্র্যাজেডি। এর কমতি ছিলো না। কিন্তু বইটা সুন্দর। বইয়ের প্রথম অংশ সকালের নরম মিষ্টি রোদের মতো মনে হলেও, শেষটুকু দুপুরের কাঠফাটা রোদের মতো মনে হবে, উত্তপ্ত, অসহ্যকর। শরীফুল হাসান এমন কিঞ্চিৎ প্রেডিক্টেড ক্লিশে ঘটনাকে এত সুন্দরভাবে বুনেছেন! এত মায়া আর আবেগ নিয়ে তিনি বইটা লিখেছেন। কভারটাও ডিমের কুসুমের মতো চমৎকার।
যারা ৯০ দশকে কিশোর-কিশোরী ছিলেন, তারা বোধহয় বইটা পড়ে ভালোই নস্টালজিক হবেন। তাছাড়া প্রতিটি চরিত্রের ক্যারেকটার ডেভলপমেন্টে লেখক বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। সাথে সঠিক শব্দচয়ন, উপমা, ঘটনাপ্রবাহ মুগ্ধ করার মতো। অতিরঞ্জিত কিছু নেই। আর চিরকুটের বইয়ের প্রোডাকশন দারুণ, বলাই বাহুল্য।
যেখানে রোদেরা ঘুমায় - শরীফুল হাসান (প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী) ↓ গল্পটা খুব আহামরি কিছু নয়। শূন্য থেকে উঠে আসা বখাটে এক ছেলের এলাকার ত্রাসে রূপান্তরিত হওয়া, তারপর প্রেমে পড়ে আবারও ভালো হওয়ার চেষ্টার ফাঁকে ফাঁকে ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়নের সঙ্গে বোঝাপড়া– এসব নিয়েই গল্প। খুব সাধারণ এই গল্পের মূল কাঠামো এটুকুই। এরসাথে মালমশলা হিসাবে যোগ হয়েছে হত্যা, রাহাজানি, বন্ধুত্ব, রাজনীতি, বিশ্বাসঘাতকতা ও স্নেহ-মমতার আখ্যান। সাধারণ কিছুকে শুধু উপস্থাপনার জোরেই অসাধারণ বানিয়ে ফেলা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে জনপ্রিয় যে কয়েকজন লেখক আছেন, তাঁদের মধ্যে শরীফুল হাসানের নাম নিঃসন্দেহে একদম প্রথম সারিতে থাকবে। এই লোকটার বই হাতে নিলে কোন দিক দিয়ে সময় চলে যায়, নিজেও বুঝতে পারি না। মেঘ বিষাদের গল্প, ছায়াসময়, যেখানে রোদেরা ঘুমায় এই তিনটা বইয়ের ধাঁচটা একইরকম হলেও প্রত্যেকটা গল্পই স্বতন্ত্র। কোনোটাই ঠিক রুদ্ধশ্বাস গতির নয়। কিন্তু সাইরেনের মতোই অদ্ভুত সুন্দর এক মূর্ছনা আছে এগুলোতে। যে সুরে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ক্রমাগত পাতা উল্টাতে বাধ্য হয় পাঠক। একসময় আবিষ্কার করে, গল্পটা শেষ। ততক্ষণে অজান্তেই চরিত্রগুলোর সাথে মিশে গেছে, বুকের একপাশে সৃষ্টি হয়েছে বড়োসড়ো একটা শূন্যস্থান, চোখ দিয়ে পড়ছে অযথা অশ্রু।
বইটা পড়তে গিয়ে আমি বারবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি, "এটা কী পড়ছি?" কখনো মনে হয়েছে এটা তো খুবই সাধারণ গল্প। এতো সরল গল্পে এমন কী আছে, যার জন্য আমি বইটা হাত থেকে রাখতে পারছি না? অদ্ভুত সুন্দর এই লেখার কারণে জাঁদরেল এই অ্যান্টি-হিরোর প্রতি মমত্ববোধ জন্মেছে, বেখেয়ালি কবি থেকে উচ্ছন্নে যাওয়া সাইডকিকের প্রতি কখনো রাগ এসেছে, কখনো ভালোবাসা। শফিক ও মিলনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছি বন্ধুত্বকে। জাহাঙ্গিরের মতে ছেলেটার প্রতিও মায়া জন্মে গেছে অকারণেই। অনিন্দিতাকে আবিষ্কার করেছি একইসাথে গতানুগতিক ও শক্তিশালী এক নারী চরিত্রের জায়গায়। বইয়ের প্রত্যেকটা চরিত্র কী জীবন্ত ছিল! গল্পের সমাপ্তিতে এসে খারাপ লাগছিল খুব। বুঝতে পারছিলাম, প্রত্যেকটা চরিত্রের পারপাজ ঠিক রাখার জন্য জাহাঙ্গিরকে দিয়ে ঐ কাজটা করানো হয়েছে। কিন্তু না করালেও কি খুব বেশি অসুবিধা হতো? সবকিছু পেছনে ফেলে এসে তো নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিল ওরা। অবশ্য, লাইফ এজ নেভার ফেয়ার। শরীফুল হাসান আমার প্রিয় লেখকের তালিকায় ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।
***স্পয়লার অ্যালার্ট*** বই ভালো লাগলে শেষ করার পর অতো ভাবি না। পাঠপ্রতিক্রিয়ায় খুঁটিনাটি লিখে রচনার মতো করার মতো ধৈর্যও এখন হয় না। তবে একটা ব্যাপার খোঁচাচ্ছে। রুপুকে যখন বান্দরবানে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন পথের ঘটনাটার পর দেখা যায়, ও হোটেল ভাড়া করছে এবং আদিবাসী ঐ পরিবারকে টাকা দিতে চাচ্ছে তাদের আতিথেয়তার জন্য। ওর কাছে টাকা এলো কোথা থেকে? মানে, এক জেল থেকে আরেক জেলে যাওয়ার সময় বা জেলে আসার পর স্বাভাবিকভাবে ওর পকেট খালি করার কথা না? জানি না বলেই জিজ্ঞেস করছি।
বইয়ের স্টার্টিংটা সবচেয়ে দারুণ। বইয়ে শুরুতেই একটা চমক দিয়ে দিয়েছেন লেখক, যাতে একদম প্রথম থেকেই পাঠকের মনে একটা আগ্রহের জায়গা তৈরি হয়। শরীফুল হাসানের অন্য উপন্যাসগুলো শুরু হয় সাধারণত ধীরে সুস্থে, এমনকি থ্রিলারগুলোও। কাহিনী আর চরিত্রের ভিত তৈরি হয়, তারপর কিছু টুইস্ট।
এই গল্পের বিল্ডাপ দারুন ছিল। চোখের সামনে যেন কাহিনি সব দেখা যাচ্ছিল। গল্পের চরিত্রগুলোর কথা যদি বলি, প্রত্যেকটা চরিত্রই স্ব স্ব স্থানে পারফেক্ট। কাউকে একদম God’s rightous man মনে হয়নি, আবার কাউকে একদম কাঠখোট্টা ভিলেন বানানো হয়নি। রুপু, তার পরিবার, অনিন্দিতা, নিবিড়, এমনকি পার্শ্ব চরিত্র জাহাঙ্গীর, মিলন-শফিক, সবাইকেই অনেক বেশী প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। আর যার যার চরিত্রে দারুণভাবে মানিয়েছে। বইয়ের সবচেয়ে স্ট্রং পার্ট এটাই।
রুপুর আরেকভাই অপু গল্পে আছে, কিন্তু একদম না থাকার মতোই। এদিকে আরেকটু নজর দেয়া যেত।
এছাড়া বাকি সবকিছু আমার কাছে ভালো লেগেছে। কাহিনী যেভাবে এগিয়েছে, অসাধারণ! টিনেজ কিশোরি-কিশোরীদের মানসিক উত্থাল-পাতাল অবস্থাটা, আবেগটা ফুটিয়ে তুলাটাও দারুণ হয়েছে। একেবারে, Nailed it!
তবে বইটাকে সামাজিক থ্রিলার বলতে নারাজ আমি। শুরুর দিকে একটা চমক দিয়ে রাখায় অনেকবার মনে হচ্ছিল, “আচ্ছা, এখনই বোধহয় কিছু ঘটবে!”আমার কাছে বইটা দারুণ একটা উপন্যাস।
পুরো গল্পটা ধীরে ধীরে বিল্ডাডেড আপ। গতিও কম। থ্রিলার টাইপ ভেবে শুরু করায় আমি মাঝেমাঝেই টুইস্ট, স্পিড এগুলোর জন্য অপেক্ষা করতিছিলাম। কিন্তু তেমন হয় নি৷ এভাবে অপেক্ষার পালাটা বেশ দীর্ঘই রয়ে গেছে। লাস্টের ৩০% গল্পেই মোটামুটি স্পিড পায়। রাজনীতির দারূন মাইরপ্যাচ শুরু হয়।
বইয়ের শেষটা সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে চাচ্ছি না। শেষাংশের আবেগটুকু কেন যেন ঠিক ছুঁয়ে যেতে পারে নি। গল্প খুব বেশি Depth ছিল না, কিন্তু ইমোশন ছিল যথেস্ট।
সব মুভি/বইয়ে প্রথম দেখায় প্রেম, মেয়েদের ব্যাডবয়দের প্রতি দুর্বল হয়ে যাওয়া - এত বেশি হাইলাইট করা হয়! এজন্য আমার ব্যক্তিগতভাবে গল্পের এই পার্টটুকু খানিকটা ক্লিশে লাগছে।
তবে ওভারঅল বলতে গেলে, বইটা ভালো লেগেছে। সামাজিক থ্রিলার না, বরং উপন্যাস হিসেবে। লেখকের বই পড়ে যাদের পূর্বঅভিজ্ঞতা আছে, তাদের ধারণা আছেই শরীফুল হাসানের দারুণ লেখনী নিয়ে।
বইয়ের প্রোডাকশন কোয়ালিটির ব্যাপারে কথা বলে শেষ করি। চিরকুটের বই বরাবরই সেরা কোয়ালিটির প্রোডাকশনই দিচ্ছে। প্রচ্ছদ সুন্দর। ৩০০পৃষ্ঠার বইটির প্রচ্ছদ মূল্যও মানানসই। সবমিলে প্রোডাকশনের দিক থেকে বইটি 10/10.
লেখকের দুইটা বই পড়েছি এই বইটা পড়ার আগে। তৃতীয় অর্থাৎ এই বইটা অন্য দুইটা বইকে ছাড়িয়ে গেছে। ক্লাসিক যাকে বলে তাই মনে হয়েছে পড়ে। তবে মন বড্ড বিষণ্ণ হয়ে গেল।
আমাদের সমাজে অনেক নিবিড় আছে যারা এই উপন্যাসের নিবিড়ের মতো মানবেতর জীবনযাপন করে। নিজেকে একজন নিবিড় বলে মনে হয় আমার। আর নিবিড়'রা যে স্বভাবকবি এবং জাত প্রেমিক সেটা সবাই হয়তো জানে।
রুপুর জন্য আমার কষ্ট হয়নি একদম। তবে অনিন্দিতা'র জন্য ভীষণ খারাপ লেগেছে। অনি'র মতো মানুষদের সব কষ্ট সহ্য করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অসহ্য যন্ত্রণা গ্রাহ্য করে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। আর অনাগত শিশুটা বিষণ্ণ পৃথিবীর আলোয় জন্ম নিয়ে অন্ধকারে পুড়তে থাকে।
শরীফুল হাসান-এর থেকে আরো ভালো ভালো এমন উপন্যাস আশা করছি। "মৃত্যুফাঁদ" বইটা বইমেলা থেকে সংগ্রহ করেছি লেখকের লেখার প্রতি ভালোবাসা থেকে। আশা করছি ভবিষ্যতে লেখক আমাদের জন্য এমন আরো ভালো ভালো বই উপহার দিয়ে যাবে। আর বর্তমান সময়কে আমরা ভালোভাবে উপলদ্ধি করতে পারব তার বই পড়ে।
(৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩)
This entire review has been hidden because of spoilers.
গুডরিডসে মানুষের রেটিং দেখে বই কিনে খুব একটা ফেঁসে যাই না, তবে মাঝে মধ্যে ধরা খাই আর কি। এই যেমন এই বইয়ের ক্ষেত্রে হয়েছে। ৩০০ পাতার এই প্যাঁচপ্যাঁচে, বাংলা সিনেমা মার্কা বইটা আমি কেন যে কিনলাম এবং পড়লাম, বুঝতে পারছি না! তবে বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হয় নি। এক পাতার শুরুর লাইন আর শেষ লাইন পড়লে ওই পাতায় কি হয়েছে বুঝে ফেলা যায়।
এক কথায় চমৎকার গল্প। রুপু, অনিন্দিতা, নিবির সব চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়া যায়। নব্বই দশকের সময়ের সামাজিক উপন্যাসে যা যা দরকার তার সব উপাদানই বইতে রয়েছে। তবে নিজে হয়তো সেই দশকের মফস্বল শহরে বড় না হওয়ায় তেমন একটা নস্টালজিক ফিল করিনি। প্রেম ভালোবাসা বিষয়ক কিছু কমন ট্রোপ বাদে বইটি পড়তে বেশ ভালোই লাগলো। চিরকুট প্রকাশনীর প্রোডাকশন কোয়ালিটিও ভালো। যারা বিগত নব্বই দশক আবারো Re-live করতে চান তাদের কাছে বইটি রিকমেন্ড থাকলো।
৯০ দশকের মফস্বলের সমকালীন রাজনৈতিক হালচাল, বন্ধুত্ব, প্রেম ভালোবাসা,বিশ্বাসঘাতকতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে লেখা বই৷
শরীফুল হাসান টানা কয়েকটি বই লিখেছেন বিগত দুই দশক আগের ঘটনা নিয়ে। বরাবরের মত এবারের বইটিও অত্যন্ত সুপাঠ্য হয়েছে।
৯০ ৮০ ৭০ এর দশক নিয়ে আরো বই লিখবেন। আপনার হাতে এই লেখা গুলা যেন নিজের চোখে দেখা দিনপঞ্জি মনে হয়৷ যে দশক গুলা নিজে দেখতে পারি নাই কিন্তু অন্যের লেখনীতে দেখা যায় তা বেশি বেশি লেখা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পার করে বহুদিন পর রাত জেগে একটা বই পড়লাম৷
#নিবিড় এর কবিতাগুলি ভাল্লাগছে #কখনো নিবিড় কে ভালো লেগেছে আবার কখনো লাগে নাই। #জাহাঙ্গীর আলম কে কেন যেন ভালো লাগছে। #মেইন চরিত্র রুপু কে নিয়ে ভালো লাগা কিংবা মন্দ লাগা কোনো টাই কাজ করে নাই!! # অনিকে বিরক্ত লাগছে,, #মাঝপথে এসে অনির কান্ডকারখানা আর গল্পের মোড়ে কিছু টা হতাশ হইছিলাম। কিন্তু গল্প শেষ করার পর হতাশা এখন আর নাই তবে কিছু টা দুঃখবোধ হইতেছে............... #আরেকটা বিষয় রুপুর সন্ত্রাসী হওয়ার পেছনে আমি জোড়ালো কারণ পাই নাই। যেটা দেখানো হইছে সেটা অতি সাধারণ মনে হইছে। এ জন্য ই মনে হয় রুপু দাগ কাটে নাই এমনকি অনিও!!
একটা সাধারন গল্প!এতো অসাধারন লেখনশৈলীর মাধ্যমে তুলে ধরেছে।মনে হলো আমার সামনে ঘটনা গুলো ঘটতেছে। সত্যিই বইটা শেষ করে কিছু সময় ভিষণ্নতায় কেটেছে।খুবই ভালো লেগেছে!সারাটা সময় বইয়ের ভিতর বুঁদ হয়ে ছিলাম।
শরীফুল হাসান আমার প্রিয় লেখকদের একজন। তার হাতের কলমে এর আগে আরো চারখানা বই পড়েছি। লেখার ধরনের এই পরিবর্তন তাই চোখে পড়ার মতো। এবার বইয়ের প্রসঙ্গে আসি। বরতমান লেখকগণ আবার অপরাধীর দৃষ্টিকোণ থেকে লিখে পাঠকদের মাঝে তাদের জন্য মায়া, মমতার জন্ম দিচ্ছেন। এই বইটাও একই টাইপের। পুরো বইটা যথেষ্ট উপভোগ করেছি।
~স্পয়লার অ্যালার্ট ~ কিছু জিনিস খুবই অদ্ভুত ছিল। যেমন- রাত তিনটার দিকে কোন খাওয়ার হোটেল খোলা থাকে, তাও আবার তখন কিনা ট্রিট দিয়ে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে খাওয়াবে! রুপুকে খুন করার জন্য জেল থেকে যখন ধরে নিয়ে গেছে, তখন মারমাদেরকে দেওয়ার জন্য তার কাছে এত টাকা-ই বা আসবে কোত্থেকে! আর, বইয়ের এন্ডিংয়ে যদি অনি'কে এভাবে পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার মতো অবস্থা করারই ছিল, তবে রুপুকে ভালো মানুষ বানিয়েছে টাই বা কেন! ( এই ব্যাপারগুলোই বইটাকে চার তারা থেকে টেনেহিঁচড়ে তিন তারায় নামিয়ে এনেছে।)
অনবদ্য একটি উপন্যাস! "যেখানে রোদেরা ঘুমায়" এইটা জীবনের গল্প, এইটা সুন্দর প্রেমের গল্প, ৩ জনের বন্ধুত্বের গল্প, সব মিলেমিশে একাকার। এই গল্পের বিল্ড আপ দারণ ছিলো। চোখের সামনে যেনো কাহিনী সব দেখা যাচ্ছিলো এবং নিজের স্কুল জীবনের কিছু ঘটনা মনে পড়ে গেলো (মারামারির)। লেখক গল্পটা ৯০ দশকের সময়কাল নিয়ে লিখেছেন। ঐ সময়ে মাদক দিয়ে দেশের কি অবস্থা ছিলো সেটা বোঝা যায় (আমার এলাকাতেও একই অবস্থা ছিলো)। উপন্যাসে এতোই মগ্ন হয়েছিলাম যে খুব একটা নেগেটিভ কিছু চোখেই পড়েনি। দুই একটা বানান আর শব্দের এদিক ওদিক হলেও তা বই পাঠে কোনো সমস্যা তৈরী করে নি।
আগেই বলে রাখি, যা লিখবো তা ঠিক রিভিউ নয় বরং ব্যক্তিগত কিছু উপলব্ধি আর অনুভূতির একটা লিস্ট হয়ে দাঁড়াবে। তবু জেনে বুঝে নিজের এলোমেলো কথাগুলো লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। এর জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। . . "যেখানে রোদেরা ঘুমায়" বইটার সবচেয়ে সুন্দর দিকটা প্রথমে বলি। এই বইয়ের পুরো ৩০৪ পাতার লিখনি এতো সহজ, এতো সাবলীল যে, কোনো কচিকাঁচা পাঠককেক এক বারের জন্য বেগ পেতে হবেনা । বরং একবার পুরো বই টা শেষ করে ফেললে পাঠক পরবর্তীতে নতুন বই পড়ার আগ্রহ পাবেন।এখন নিজের কথা বলি... আমি গতকাল বিকেলে বইটার প্রথম ২০ পাতা পড়ি। এরপর বাকি অংশটুকু রাত ১ টা থেকে সকাল ৮.৪০ অবদি একটানা পড়েছি। মাঝে সম্ভবত শুধু চা বানানো আর ওয়াশরুমে যাবার জন্য বড়জোর মিনিট বিশেকের সময় কাটা পড়েছি। আজ আমার আর সাত সকালের প্রাইভেট টাতে যেতে মন টানেনি এই মায়ার লেখনি ছেড়ে ৷ কিছুটা বকাবকি শুনেও চুপচাপ একমনে পড়ে গেছি। পড়েছি, তার কারণ বইটা পড়তে গিয়ে একটা আদর, একটা আরাম পেয়েছি। যেটা লিখে বোঝাতে পারবোনা। . . এবার বই এর কাহিনীপ্রবাহ নিয়ে কিছু বলি। গল্পটা খুব সাধারণ। এরকম দৃশ্য বোধয় ছোটবেলায় ইন্ডিয়ান বাংলা সিনেমা গুলোতে অহরহ দেখেছি। সেগুলোর নাটকীয়তার কথা ভাবলে এখনো মাঝে মাঝে হাসিতে লুটিয়ে পড়ি।তবে সেই একই গোত্রের একটা ঘটনাকে বইয়ে উপস্থাপিত হতে দেখে বেশ অবাক হয়েছি৷ ইদানীং টিভিতে যেসব ড্রামাটিক ব্যাপার স্যাপার দেখে মুখ টিপে হাসি, সেই ব্যাপার গুলো সাদা-পাতায় সাজানো শব্দের বুননে ভীষণ বাস্তব আর আপন বলে মনে হয়েছে। এক সময়ে রাজনীতির আড়ালে চলা ত্রাস, এলাকার পাতি মাস্তান দের লোকচক্ষুর আড়ালের আসল ভয়াবহ জীবন, মানুষকে যুগ যুগ ধরে পেয়ে বসা ক্ষমতার নেশা! সবকিছু যেন কত বাস্তব, যেন খুব কাছের আর চেনা কারো গল্প কোনো লেখক মনের মতো করে লিখে দিয়েছেন আমার অনুরোধে। তবে এসবকিছুকে ছাপিয়ে ছিল ৯০ এর দশকের সাড়া জাগানো প্রেম গুলোর মতোই এক দুর্ধর্ষ প্রেমের মিষ্টি গান। নর্দমার মতো নোংরা, পশুর মতো হিংস্র মানুষের মাঝে বেড়ে ওঠা একটা প্রেমও কত পবিত্র হতে পারে সেটা এ যুগে দাঁড়িয়ে বোধয় আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। কিন্তু ৯০ এর দশকে বুঝি এমনটায় হতো। তখন ভালোবাসা ছিল, এখনো আছে (হয়তো)! . . এবার পুরোপুরি নিজের কতগুলো কথা বলি। বইটা পড়ার সময় অনিন্দিতা চরিত্রের আগমনের শুরু থেকেই কেন যেন নিজেকে অনিন্দিত ভাবতে শুরু করে ফেলেছিলাম। সম্ভবত আমি নিজেও একজন ইন্টার পড়ুয়া বলে এমনটা হয়েছে। বিপত্তির শুরু টা এখানেই! নিজেকে অনি ভাবতে ভাবতে আমি গল্পের এতোটা গভিরে ঢুকে পড়েছি যে এখন চাইলেও আর বের হতে পারছিনা। বইটার ১২ তম অধ্যায়ের ৭২ নম্বর পৃষ্টার শুরুর দিকে একটা বাক্যে হঠাৎ রুপুকে (গল্পের নায়ক) নিজের কলেজে দেখে অনির মনের অবস্থা বোঝাতে লেখা হয়েছে "একটা হার্টবিট মিস করলো অনি"। এইটা পড়তে গিয়ে আমি নিজেই একটা হার্টবিট মিস করে গেছি। আমার বাড়িতে একটা টেলিফোন নেই বলে একটু মন খারাপই হয়েছে৷ টেলিফোন থাকলে নিশ্চয়ই আমিও সেটার পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে একটা অন্য রকম অপেক্ষার স্বাদ নিতাম। অনির বাবা, মন্ত্রী জামাল খন্দকার, শাহান এই চরিত্র গুলোকে খুব অপছন্দ করেছি, খুব বেশি। শফিক আর মিলনের মতো দুজন বন্ধু পেলে হয়তো জীবনে আর বিশেষ কোনো আক্ষেপ থাকতো না। মাঝে মাঝে গল্প উপন্যাসে এরকম চরিত্রের দেখা পেলে বন্ধুত্ব ব্যাপার টাকে নতুন করে ভালো লাগতে শুরু করে। . . বইটা শেষ করে আমি অনেকটা সময় নিয়ে ভেবেছি... রুপুর অনিন্দিতা কি করবে এরপরে? কি হবে ওর জীবনের পরিনতি? কেউ বুঝি এতোটা কপালপোড়াও হয়?! আচ্ছা, আমি অনির জায়গায় থাকলে কি করতাম? আমি কি রুপুকে ভালোবেসে ফেলেছি? হ্যাঁ, আমি রুপুকে ভালোবেসে ফেলেছি। বাস্তবে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি এমনই এক কাল্পনিক চরিত্রের প্রেমে আমি আপাতত হাবুডুবু খাচ্ছি, আমার নিজেকে অনির মতো দুঃখী বলে মনে হচ্ছে। বিগত আট ঘন্টা যাবত আমার মাথা জুড়ে শুধু "যেখানে রোদেরা ঘুমায়" নামের হলুদ মলাটে মোড়ানো একটা দুঃখ ছটফট করছে। একটা লেখা, একটা বই, একজন লেখকের স্বার্থকতা আর কি সে হতে পারে? "যেখানে রোদেরা ঘুমায়" আমার কাছে লেখকের স্বার্থক সৃষ্টি। তবে পাঠক হিসেবে আমি বইটার দ্বিতীয় খন্ড পেতে চাই। যেখানে অনি সুখী হবে, রুপু জীবনটা আরেকবার বদলে যাবে, যার শেষটা হবে সুখের।
আচ্ছা কি কি ভাল লাগেনি তা দিয়েই শুরু করা যাক। রুপু ক্যারেক্টারটা আগা টু গোড়া পুড়াই বাকের ভাইয়ের কার্বন কপি মনে হইছে...জাস্ট ডিজিটাল যুগের কোনো লেখকের লেখা বাকের ভাই। উপন্যাসটাও কোথাও কেউ নেই ধাঁচের তাই সদৃশ্যটা আরো বেশি চোখে লাগছিলো। আর আরেকটা ব্যাপার... বইয়ে নেশা দ্রব্যের ব্যাপক ইউজ দেখানো হয়েছে। বারবার বলা হয়েছে দুঃখ কষ্ট ভুলতে নেশার কোনো বিকল্প নাই হ্যান ত্যান। উপন্যাসে কিছু ক্যারেক্টার এসব বলতেই পারে। বাট পড়ে অন্য ক্যারেক্টার দিয়ে বা কোনো ভাবে এই কথা গুলো যে ভুল তা দেখানো যেত, এমনিতেই আজকালকার বেশিরভাগ পোলাপান আসমানে থাকে, এসব পড়লে বাকিরাও উৎসাহিত হবে।
এবার আসি কি কি ভাল লেগেছে! শুরুতেই উপন্যাসটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম যে এটা ধীরে সুস্থ্যে পড়বো নাকি তাড়াতাড়ি পড়ে শেষ করে ফেলবো। কোনো বই শুরুতেই ভাল লাগলে বা প্লট আমার পছন্দের হলে আমি একটু ধীরে পড়ি, তাড়াহুরা করলেই তো শেষ তাইনা?
এই উপন্যাসটাও শুরুতেই খুব ভাল লাগা শুরু করলো। কিন্তু তবুও ইচ্ছা করছিলো খুব যেন জলদি জলদি পড়ে বইটা শেষ করে ফেলি। কারন বইটা আমার সেই ফেলে আসা মধুর/ভয়ংকর স্মৃতি গুলো বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। যেই দিন গুলি ছিল আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর দিন কিন্তু তবুও সেই দিনগুলোর কথা আমি ভাবতে চাইনা...সেই দিন গুলোতেই বারবার নিয়ে যাচ্ছিলো বইয়ের প্রতিটি শব্দগুলো। সেই একজনের মুখটা বারব��র ভেসে উঠছিলো চোখের পাতায় একসময় যার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম প্রতিদিন, একদিন তাকে না দেখলে ঘুম আসতো না। কখন যে সে বেড় হবে, একটা বার তাকে দেখবো শুধু দুচোখ ভরে আর কিছুই চাইনা জীবনে... দীর্ঘশ্বাস!!!
ছোট বেলায় বয��সে বড় ও ট্যাটনা ছেলেদের কাছে মাইর খাইয়া রুপুর জিদ উঠে জীবনে আর মাইর খাবো না, মাইর দিবো। সেই মারমুখী স্বভাবের হাত ধরে বড় হয়ে শহরের মাস্তান হয়ে উঠে রুপু। মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় হয়ে উঠে ড্রাগ লিডার, মন্ত্রীর ইশারায় খুন-খারাবি চালালেও সে খুবই ভালোবাচ্চা। কারো ওপর অন্যায় করে না, জুলুম করে না, গরীবের উপকার করে, মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকায় না, তার এলাকায় কোন মেয়েরে কেউ ত্যক্ত করলে তার খবর করে ছাড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি।
দিনকাল ভালোই কাটছিল...হঠাৎ কলেজ পড়ুয়া অনিকে দেখে প্রেম + বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলো। মেয়ে মুখের ওপরে মানা করে দিলো। ছেলে গিয়ে মেয়ের বাবার কাছে প্রস্তাব পেস করে বসলো। এইসব নিয়াই এগিয়ে চললো বই।
আমার মতন নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে সপ্তাহে একদিন শুক্রবার বিকালে যারা বাংলা সিনেমা দেখে বড় হইছেন তাদের কাছে এই কাহিনী খুবই চেনা লাগার কথা। আমারো লাগছে....😁
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ রবীন্দ্রনাথের কবিতার কথা মনে পড়ছে বইটি পড়েঃ প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ শরীফুল ভাইয়ের 'ঋভু, সাম্ভালা ট্রিলজি, অন্ধ জাদুকর আর অদ্ভুতুড়ে বইঘর' এর ফ্যান্টাসির স্বাদের পর উনার সামাজিক উপন্যাস পড়লাম। কি নেই এই বইয়ে। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, কিশোর-তারণ্যর চঞ্চলতা, মাদকাসক্তি, রাজনীতি,খুন,ক্ষমতার লোভ অনেক কিছুর দুর্দান্ত মিশ্রণ। বইটা পড়ে মনে হচ্ছিলো মির্জাপুর নিজের চোখের সামনে ভাসছে। শেষের দিকে অনেক মন খারাপ হয়েছে। রুপুর জন্য বেশি খারাপ লেগেছে। বইয়ে '' সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে ' আদর্শ উদাহরণ আছে বইয়ে। লেখনী অনেক ভালো হয়েছে। নব্বই দশকের প্রেক্ষাপটে লিখা বইটিতে অনেকে নস্টালজিয়ায় ভুগবেন। শরীফুল ভাইয়ের সামাজিক উপন্যাস সামনে আরো পড়ব এবং পাবো আশা করি।
যা ভালো লাগে নিঃ বইটিতে মাদকাসক্তি নিয়ে একটু বেশি কথা বলা হয়েছে। এইটা একটু বিরক্ত করেছে। বিশদ ভাবে বলতে পারছি না বলে ক্ষমা করবেন।
বইয়ের নাম: যেখানে রোদেরা ঘুমায় লেখক: শরীফুল হাসান জনরা: সামাজিক উপন্যাস মুদ্রিত মূল্য: ৪০০ টাকা প্রকাশনী: চিরকুট প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর,২০২০ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩০৪
কিছু কিছু বই থাকে, যেগুলো পড়ার পর এক ধরনের বিষন্নতা, এক ধরনের হাহাকার মনকে ঘিরে ধরে। এ যেনো চোরাবালির মত, কোনোভাবেই বের হয়ে আসা যায় না। তখন ইচ্ছে করে কিছুই হয়নি ভাব ধরে চলতে থাকা এই পৃথিবীটা উল্টে-পাল্টে দিতে। নিজের ভেতরের হাহাকার ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে চারপাশে। ঠিক এই ধরনের একটি বই হলো যেখানে রোদেরা ঘুমায়।
◻️পাঠ সংক্ষেপ
গল্পের মূল চরিত্র রুপু, ইফতেখার উদ্দিন রুপু। রুপুর পরিচয়, এক কথায় যাকে বলা যায় সন্ত্রাসী। মাদক, অস্ত্রের চোরাচালান, মানুষকে ভয় দেখানো কিংবা খুন কোনো কিছুতেই তার হাত কাপে না। মির্জাপুরের মত মফস্বল এলাকার রাজনৈতিক চালক জামাল খন্দকারের ডানহাত সে। কোনো মানুষই সন্ত্রাসী, খুনি কিংবা মাদক ব্যবসায়ী হয়ে জন্মায় না। এই সমাজই তাদের তৈরি করে। এই বিষয়টি লেখক খুব সহজে এবং দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন। মির্জাপুরের রাজনীতি জামাল খন্দকার চালালেও, এই অঞ্চলে রুপুর ক্ষমতা এবং দাপটও কিন্তু অগ্রাহ্য করার মতো নয়। মানুষ রুপুকে যেমন ভয় পায় তেমনি সম্মানও করে। কেনোই বা করবে না! অঞ্চলে একটি খারাপ কাজও রুপু থাকতে হতে পারবে না। তার সবচেয়ে বড় শত্রুও তার চারিত্রিক দিক দিয়ে তাকে ১০০/১০০ নম্বর দিবে। এই সন্ত্রাসী রুপুর জীবনেও প্রেম এসেছিল আর তা একবারই। মেয়েটির নাম অনিন্দিতা। সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া সাহসী, শান্ত একটি মেয়ে। মা ছোট বেলায় মারা যাওয়ায় একা বাবার কাছেই বেড়ে ওঠা তার। শ্যামলা শান্ত এই মেয়েটির কাছে একদিন হঠাৎই যেনো রুপু সবচেয়ে আপন মানুষ হয়ে যায়। গল্পে আরো আছে নিবিড়। সে জাত কবি, জাত প্রেমিক। কিন্তু উঠতি বয়সে ভুল মানুষের পাল্লায় পড়েই, হয়তোবা কবি কিংবা প্রেমিক কোনোটাই আর হয়ে ওঠা হলো না তার। এছাড়া শফিক ও মিলন, রুপুর সবচেয়ে কাছের দুই বন্ধু, যারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দিয়ে গেছে রুপুর প্রতি তাদের অকৃত্রিম বন্ধুত্বের নজির। অপু, বিপু, রুপুর মা, নিবিড়ের বাবা মা, মানিক মিয়া, জামাল খন্দকার, শাহান, জাহাঙ্গীর প্রত্যেকটি চরিত্রের গুরত্ব গল্পে ছিল অনবদ্য । ভিলেন কে তা জিজ্ঞাসা করলে এক বাক্যে সে উত্তর দেওয়া যাবে না। কিন্তু যাই হোক, জামাল খন্দকার, মানিক মিয়া কিংবা জাহাঙ্গীর প্রত্যেকেই নিজেদের মত করে, আলাদা চোখে পৃথিবীকে দেখেন। আমার বা আপনার সেটার সাথে মত নাইবা মিলতে পারে।
◻️পাঠ প্রতিক্রিয়া
কি নেই এই গল্পটিতে? গভীর প্রেম, অকৃত্রিম বন্ধুত্ব, পারিবারিক জীবন, ডানপিটে কৈশোর-তারুণ্য এবং সেই সময়ে করা ভুল, ক্ষমতার লোভ, মাদক ব্যবসা, খুন, সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক কূটনীতি - প্রতিটি বিষয় এই একটি বইতে লেখক কি চমৎকার ভাবেই না তুলে ধরলেন! পাঠকের অভিযোগের কোনো জায়গাই তিনি রাখেননি। ৯০ দশকের উপর ভিত্তি করে লেখা এই বইয়ে উঠে আসা সেই সময়ের স্মৃতি, পাঠককে (৯০ দশকের পাঠক যারা) নস্টালজিক করে তুলতে বাধ্য। এত মায়া, এত আবেগ দিয়ে তিনি লিখেছেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়েছি! যেনো আমার চোখের সামনেই সব ঘটছে। আমি এখন মির্জাপুরে। রুপু, অনিন্দিতা, নিবিড় সবাই আমার কত্তদিনের চেনা। আমার কত্ত আপন তারা। হুমায়ূন আহমেদের পরে ঠিক কবে এতোটা আবেগঘন লেখনী পড়েছি ঠিক মনে করতে পারি না। কিন্তু তাই বলে কেউ বলতে পারবে না একটুখানি অংশও হুমায়ূন আহমেদের আদলে লেখা বা তার লেখনশৈলী কপি করে লেখা। এ লেখা স্বতন্ত্র ও কোনো ধরনের প্রভাবমুক্ত। বইটির শেষ পড়ে আমি কেঁদেছি, অনেকক্ষণ কেঁদেছি। আমি জানি না এই বিষন্নতা কতদিন আমার মাঝে থাকবে। ইচ্ছে করছিলো লেখককে যদি কোনোভাবে অনুরোধ করতে পারতাম শেষটা পাল্টে দিন। কিন্তু আবার মনে হয়, শেষটা অন্যরকম হলে হয়তোবা বইটি এত দাগ আমার মনে কাটতো না, বইটি আমার এতটা প্রিয় হয়ে উঠতো না।
◻️চরিত্রায়ন
বইয়ের প্রতিটি চরিত্র যার যার জায়গায় গুরত্বপূর্ন এবং আলাদা। প্রতিটি চরিত্রকে যেনো লেখক বেশ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেই তুলে এনেছেন। চরিত্র গুলোর বড় দিক ��িল তাদের স্বকীয়তা, তাদের ভিন্ন ভিন্ন জীবনদৃষ্টি, চিন্তা চেতনা। গল্পে প্রত্যেকটি চরিত্রের গুরত্ব ছিল অনবদ্য। প্রতিটি চরিত্রের ক্যারেকটার ডেভলপমেন্টে লেখক বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
◻️লেখনশৈলী
লেখকের লেখনশৈলী দুর্দান্ত! শব্দচয়ন, ঘটনার ফ্লো ধরে রাখা, বাক্য বিন্যাস এবং উপমার প্রয়োগ মুগ্ধ করার মতো। প্রতিটি চরিত্রকে তিনি যেনো তার কলমের জাদুতে জীবন্ত করে তুলেছেন। মুহূর্তেই পাঠকের কল্পনাতে মির্জাপুর মফস্বল এবং এখানের বাসিন্দাদের নিয়ে আসতে পারছেন। সংলাপে কোনো বাহুল্য নেই, যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই। সন্ত্রাসীর প্রেমে কিশোরী, ভাবলে হয়তোবা একটু ক্রিঞ্জ লাগে কিন্তু বিশ্বাস করুন, এটা একটুকুও তেমনটি নয়। কোনো ধরনের অতিরিক্ত কিছু কিংবা কোনো বাড়াবাড়ি নেই, কিন্তু কি দারুণভাবে লেখক উঠিয়ে এনেছেন একটি সুন্দর, অমায়িক ভালোবাসাকে।
◻️প্রচ্ছদ এবং নামকরণ
এবার আসি প্রচ্ছদ এবং নামে! বইটির নাম আর প্রচ্ছদ দুটোই এত মায়াকাড়া! এই প্রচ্ছদ এবং নামেও যেনো এক ধরনের বিষন্নতা লুকিয়ে আছে। প্রচ্ছদটি সুন্দর, ছিমছাম। বইটির বিষন্নতাকে যেনো অল্প অল্প তুলে আনে।
পরিশেষে বললে, যেখানে রোদেরা ঘুমায় মূলত মির্জাপুরের মত মফস্বলের গল্প। যেখানে রুপুরা ক্ষমতার দাপটে সবাইকে তটস্থ করে রাখতে জানে আবার অনিন্দিতাদের ভালোও বাসতে জানে। যেখানে নিবিড়রা কবি হয়ে উঠার আগেই ঝড়ে যায়। যেখানে শফিক-মিলনরা বন্ধুর জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা বোধ করে না। যেখানে নিবিড়ের মায়েরা ছেলের জন্য কেঁদে কেটে বুক ভাসায়। যেখানে মানিক মিয়ারা, জামাল খন্দকাররা দিনশেষে ঠিকই ভালো থাকে। যেখানে অনিন্দিতারা অপেক্ষা করে যায় কিন্তু রূপুরা আর কোনোদিনও ফিরে আসে না।
🌻প্রিয় একটি অংশ
আমি তোমাকে ঠিক সেখানেই নিয়ে যাবো যেখানে বাতাস খোঁজে মুক্তির ঘ্রাণ ফাল্গুন খোঁজে অগ্রহায়ণের গন্ধ জোছনা বিলাসে মত্ত একদল কাকের সাথে তুমি আর আমি মেতে উঠবো আনন্দের গানে তারপর সব ক্লান্তি শেষে তুমি আর আমি যাবো অনেক দূর কোনো দেশে যেখানে পাখিরা হাসে যেখানে জোছনা নিভে গেলে চাঁদ নেমে আসে নিচে যেখানে রোদেরা ঘুমায় অনেক দূর কোনো দেশে অনেক রাত্রি শেষে ক্লান্ত হয়ে এক বিষন্ন রোদ ঘুমায়।
Happy Reading 🌻
This entire review has been hidden because of spoilers.
ক্ষমতা, লোভ, বিশ্বাসঘাতকতাকে ছাপিয়ে আমার কাছে উপন্যাসটি মনে হয়েছে ভালোবাসার আখ্যান। তা কখনো বন্ধুর প্রতি বন্ধুর কিংবা বাবার প্রতি মেয়ের নয়তোবা কখনো প্রেমিকার প্রতি প্রেমিকের। পুরো উপন্যাস জুড়েই একটি বারবার ছাপিয়ে যেতে চেয়েছে অন্যটিকে। কোনটা পেরেছে কিংবা পারেনি তা নিয়ে দ্বিধায় আছি। শেষটা ব্যথিত করছে ভীষণ ভাবে। শরীফুল হাসান ভাইয়ার বর্ণনাভঙ্গি বরাবরের মতোই দুর্দান্ত।
Probably one of the worst book I've read this year.I read "Shamvala" by this writter before and it was really great.So I had huge expectation. But the writter let me down.It wasn't as good as I expected.
টানা পড়ে শেষ করলাম, এমন একটা মায়ায় পরে গেছিলাম যে পুরো বই শেষ না করে শান্তি পাচ্ছিলাম না। কিন্তুু, গল্পের শেষ টা !!! হতভম্ব হয়ে গেছি পুরো, এমনটা কল্পনাও করি নাই। একটু ধাতস্থ হয়ে নেই, বিস্তারিত রিভিউ দিব।