Who tells the greatest story — God or Manto? Dozakhnama: Conversations in Hell is an extraordinary novel, a biography of Manto and Ghalib and a history of Indian culture rolled into one. Exhumed from dust, Manto’s unpublished novel surfaces in Lucknow. Is it real or is it a fake? In this dastan, Manto and Ghalib converse, entwining their lives in shared dreams. The result is an intellectual journey that takes us into the people and events that shape us as a culture. As one writer describes it, ‘I discovered Rabisankar Bal like a torch in the darkness of the history of this subcontinent. This is the real story of two centuries of our own country.’ Rabisankar Bal’s audacious novel, told by reflections in a mirror and forged in the fires of hell, is both an oral tale and a shield against oblivion. An echo of distant screams. Inscribed by the devil’s quill, Dozakhnama is an outstanding performance of subterranean memory.
রবিশংকর বল পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৬২ সালে। বিজ্ঞানে স্নাতক। ২০১১ সালে দোজখনামা উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন।
গল্পগ্রন্থ দারুনিরঞ্জন রবিশঙ্কর বল এর গল্প আর্তোর শেষ অভিনয় জীবন অন্যত্র ওই মণিময় তার কাহিনী সেরা ৫০ টি গল্প
উপন্যাস নীল দরজা লাল ঘর পোখরান ৯৮ স্মৃতি ও স্বপ্নের বন্দর পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন মিস্টার ফ্যান্টম বাসস্টপে একদিন মিলনের শ্বাসরোধী কথা নষ্টভ্রষ্ট এখানে তুষার ঝরে দোজখনামা আয়নাজীবন আঙুরবাগানে খুন জিরো আওয়ার
কবিতা ত্রস্ত নীলিমা ঊনপঞ্চাশ বায়ু
প্রবন্ধ সংলাপের মধ্যবর্তী এই নীরবতা কুষ্ঠরোগীদের গুহায় সংগীত মুখ আর মুখোশ জীবনানন্দ ও অন্যান্য
সম্পাদিত গ্রন্থ সাদাত হোসেইন মন্টো রচনাসংগ্রহ
জাহিদ সোহাগ : মানে আমি বলছি এই কারণে যে, আমাদের বাংলাদেশে রবিশংকর বলকে চেনা হচ্ছে দোজখনামা দিয়ে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখবেন? মানে এখানেও একটা ট্যাগ আছে। রবিশংকর বল : এটা বলা কঠিন, তবু যদি বলো তবে আমি বলব, আমার "মধ্যরাত্রির জীবনী" উপন্যাসটা পড়া উচিত, "বাসস্টপে একদিন" উপন্যাসটা পড়া উচিত, "এখানে তুষার ঝরে" উপন্যাসটা পড়া উচিত। "স্মৃতি ও স্বপ্নের বন্দর", "ছায়াপুতুলের খেলা" অবশ্যই। এই কটা লেখা অন্তত। আর "পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন" এই লেখাটা।
Given that it’s a time when there are more and more books that qualify as ‘quick weekend reads’, ‘breezy, one-time reads’, it is an indescribable feeling when one comes across a book like Dozakhnama: Conversations in Hell. Words cannot express the comfort this book provides - I wished that the book would never end. Meant for posterity, this is a book best consumed like a box of sweets you can nibble at everyday, and take joy from the fact that there’s still so much left to devour.
The bonus: You’d want to take the journey all over again, just to experience those literary orgasms that came in paragraphs of sheer brilliance.
A translation of a Bengali novel by Rabisankar Bal, Dozakhnama is a story of the conversations a young writer unearths as he… sets out to translate Sadat Hasan Manto’s unpublished novel that one day, suddenly surfaces in Lucknow.
But these are not ordinary conversations.
They’re between… wait for it… Manto and Mirza Ghalib, two of the most enigmatic figures in literature, both of whom found fame posthumously and who continue to live on in public memory thanks to the power of their words.
Each chapter is like a monologue and all put together, the book is a conversation happening between their graves, through shared dreams. Pal (translated here flawlessly by the very talented Arunava Sinha) makes an ambitious attempt to pen the most imaginatively written biography of Manto and Ghalib, and lets it simmer in the frothy history of Indian culture. Does he succeed? Hell yeah! (no pun intended).
While Ghalib’s story captures a more ancient period in Indian history, Manto goes about sharing his life’s journey in a more modern era. The former’s frustrations and agony compound and give shape to his terrific ability for verse, while the latter’s account is those of his adventures as a struggler in the early days of India’s film industry, socializing with commercial sex workers in Bombay’s red light district.
While neither of them try to outdo the other in the ‘my-story-is-sadder-than-yours’ routine, they incidentally show a shared passion for consuming liquor, gambling and women. There also appears to be a shared worldview about marriage being a tumultuous bed to sleep on, whereas the brothels provide opportunities aplenty for experiencing love and heart-break. (I personally had more sympathies with Ghalib’s condition than Manto’s.)
What also becomes clear, upon reading of this book, is a similar trajectory of their experience facing rejection constantly during their lifetime, and sweet redemption years after their death.
Those who’ve read Manto and Ghalib’s works in depth may find the conversations in Dozakhnama a bit of a repetition of stories they already know, but for the others, this book is an incredibly kind and sorrowful jugalbandi of sorts, that catches two icons in a memorable conversation you’d like to listen to, again and again. Buy the book, and don’t lend it to anybody.
”A story is nothing but a story - it lives alone, it dies alone”.
ہوئی مدت کہ غالبؔ مرگیا، پر یاد آتا ہے وہ ہر اک بات پر کہنا کہ، یوں ہوتا تو کیا ہوتا Ghalib has long been dead, but we remember him Wondering, what if this had happened or that?
খুব বিনীতভাবে বলতে চাই যে কি কারনে এই পুরো ‘উপন্যাসে’ কোন খুঁত নেই। জানি না সেটা পারব কিনা। কারন, রবিশংকর বলের গদ্যের পর সবকিছুই তো ম্যারম্যারে লাগে। তাঁর সেই লেখা নিয়ে আমি আবার সমালোচনা করতে বসছি! কতোকিছুই হচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ায়!
‘দোজখনামা’ এর দুনিয়া এক দাস্তানের ভেতর আরেক দাস্তানের। সেই আরেক দাস্তানের ভেতর হাজারে বিজারে কিসসার। কবরের নিচে শুয়ে মানবরচিত কাঁটাতারের বেড়ার দুপাশ থেকে দুজন গল্প করছেন। দুজনই শুনছেন। একজন কথা বলার সময়ে আরেকজন থামিয়ে কোন পান্ডিত্য দেখাচ্ছেন না। দুজনই যেন এর আগে এর চেয়ে ভালো শ্রোতা পান নি। দুজনের ভুলে ভরা জীবনে প্রতিভাই তঁদেরকে এখনো উঁচু আসনে বসিয়ে রেখেছে, সেটিই তাঁদের অভিশপ্ত জীবনের কারন। দুজনেরই চোখের সামনে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা পাল্টেছে তাঁদের ইচ্ছার বিরূদ্ধে। দুজনই ভেঙে পড়ে কষ্টের মৃত্যু বরণ করেছেন। দুজনেরই ছিল মদের প্রতি আসক্তি আর দুজনকেই সেকারনে খেসারত দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে শেষে কে যে মান্টো আর কে যে মির্জা গালিব, দুজনের দুজনের প্রতি সম্বোধন না পড়লে গুলিয়ে ফেলাই স্বাভাবিক। কারন, হয়তো গল্পটা তাঁদেরকে নিয়ে নয়। এটি হয়তো বারবার জনগনবিমুখ উপমহাদেশের রাজা রাজরাদের জোচ্চুরির কারনে হতে থাকা সাধারণ ও অসাধারণ মানুষদের জীবন নিঃশেষ হবার গল্প। তাই সেসবে মান্টো আর গালিব আছে কি নাই, এক সময়ে নিমগ্ন পাঠকের তা ভুলে যাবারই কথা।
দুজন আমাদেরকে লেখকদের মতোই গল্প শুনিয়ে গেছেন। ইতিহাস আর কিসসা একাকার হয়ে গেছে মান্টোর সব ‘কাঠের পুতুলগুলোর’ মধ্যে। সহজ ভাষায় গড়গড় করে এরপর এটা হল, তারপর ওটা হল বলা যায় না এই উপন্যাস নিয়ে। কারন, স্মৃতিতে তো ছোট ছোট দৃশ্যে সব ফিরে আসে, তা কি কখনো ক্রম অনুসরণ করে? এখানেও লেখক সেদিকে যান নি। পুরোপুরি কালের পরিক্রমার গঠন না ভাঙলেও এগিয়েছেন, পিছিয়েছেন কয়েক শহরের মধ্যে। আর সেটাও করেছেন বাস্তব ও ‘খোয়াব’ কে ওভাবে নির্দিষ্ট না করেই।
রবিশংকর বলের আর কোন উপন্যাস পড়া হয় নি। তাঁর গদ্য ক্ষুরধার। ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসে বাহাদুরির লেশমাত্র নেই। দালানকোঠা বা রাস্তাঘাটের বর্ণনায় যেতেই হল না লোকটাকে! এমন দুইজনকে চরিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন যে কিছুতেই তারা যে এযুগের নয় তা আলাদা করে প্রতিষ্ঠা করতে হয় নি। মাপা নকশার অলংকারময় শব্দে উঠে এসেছে তিন লেখকের নিজের জীবন দর্শন। হ্যা, গালিব, মান্টো ও রবিশংকরের। মানুষ একটি গল্প ফাঁদতে গলদঘর্ম হয়, সেখানে রবিশংকর বল গল্পের পর গল্প বলেন। কখনো তাঁদের জীবনের বয়ান, কখনো তাঁদের জবানীতে তাঁদের বা অন্য কারোর গল্প। আর সব গল্পই গভীরভাবে ভাবায়, টানা পড়ে গেলে মনে হয় কি সাধারণ এই জীবন! এর চেয়ে কিসসাখোর কাল্লুর জীবনও রঙিন। আচ্ছা, এসবের মধ্যে তো মহাভারতও আসল!
এই উপন্যাস টানা পড়ে ফেলার ক্ষমতা ছিল না আমার। এতো কিসসার সমারোহে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবনায় হারাবার বিরতি লাগতো।
আর কি কারনে এটি নিখুঁত? খুঁজে খুঁজে সেটা বের করতে গিয়ে আমি আপাতত দিশেহারা। মনে হচ্ছে, খুব অন্যায় করে ফেলছি।
একটু আগেই শেষ হল। সেই শেষটুকুও এই ঘোর থেকে বের হতে দেয় না। লেখক নিজে সেই দায়িত্ব নিয়ে কাহিনীর বাইরে নিয়ে যেতে চাইলেও বুঝতে পারছি যাওয়া মুশকিল। মনে হয়, বইয়ের শেষে সহায়ক গ্রন্থের বিশাল তালিকাটা যেন আমার মতো লোকদের জন্যই করা হয়েছে যারা এই উপন্যাস ফেলে সহজে কোথাও যেতে চাইবে না।
শেষ হবার আগে বারবার চেয়েছি যাতে আরো ধীরে শেষ হয় এই বয়ান। কিন্তু, হায়, প্রথমবার ‘দোজখনামা’ পড়ার অভিজ্ঞতা শেষ হয়ে গেল…
১. উর্দু সাহিত্য ঠিক কবে শুরু হয়েছিল, তা সঠিক বলতে পারবেন উক্ত বিষয়ে পণ্ডিত কোন ব্যক্তি। তবে, একথা বললে হয়ত অত্যুক্তি হবে না যে উর্দু সাহিত্যকে প্রথম সবচেয়ে ঋদ্ধ যিনি করেছিলেন, তিনি কবি গালিব। এবং গালিবের প্রায় একশ বছর পরে আরেকজন মানুষ উর্দুকে উপহার দিয়েছেন কিছু গল্প। তিনি সাদাত হাসান মান্টো। সেই দুজনকে নিয়ে গল্প ফেঁদেছেন রবিশঙ্কর বল।
২. মান্টো আর গালিব দু’জন দুই সময়ের মানুষ। তাদের দেখা হয়নি। কিন্তু দুজনের ভেতর ব্যথা ছিল। সে ব্যথার বাখান কেমন? কেমন হতো যদি দু’জন কথা বলতে পারতেন?
মান্টো শুয়ে আছেন পাকিস্তানে, গালিব ভারতে। ব্রিটিশের পুঁতে দেওয়া তারকাটায় তারা আজ দুই দেশের বাসিন্দা। অথচ, মান্টো নিজে একসময় ছিলেন ভারতে। বোম্বে থেকে যার যাত্রা শুরু। অথচ তাঁকে চলে যেতে হলো অন্য কোথাও। তাই দু’জন কবরে শুয়ে কথা বলছেন একে অপরের সঙ্গে। মৃতের তো আর ভিসা, পাসপোর্ট লাগে না।
৩. রবিশঙ্কর গল্প শুরু করেছেন উত্তম পুরুষে। লেখক একদিন এক আধপাগলা বুড়োর কাছ থেকে একটি পাণ্ডুলিপি পান, উর্দুতে লেখা। সংরক্ষকের দাবী, পাণ্ডুলিপিটি মান্টোর। গালিবের জীবনী নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন তিনি। অথচ, লেখক জানেন, মান্টো কোন উপন্যাস লেখেন নি। তবু মলিন পাণ্ডুলিপিটি গ্রহণ করলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে উর্দু শেখার জন্য পেয়ে গেলেন তবসুম নামের এক নারীকে। কিন্তু শেখার বয়স লেখকের নেই। তাই তবসুম যখন উর্দু পড়ে অনুবাদ করে দেয়, তিনি লিখে নেন নিজের ভাষায়। আর লেখক আমাদের নিয়ে যান ছায়ার জগতে।
ছায়ার জগত, কেননা মান্টো এবং গালিব উভয়েই মৃত। তা��ের কথোপকথনে আমরা জানবো তাদের গল্প, তাদের সময়ের কথা। সে সময়ও আমরা দেখিনি। অর্থাৎ সবকিছুই আমাদের অদেখা, অন্য ভুবনের গল্প। তাই ছায়ার জগত। সেই সঙ্গে ছায়ার জগতের আরেকটি ব্যাখ্যা আছে। মান্টো এবং গালিব, একজন গল্পকার, একজন কবি। দুজনেই নিজের মনের ভেতরে একটা জগত পুষে রেখেছিলেন, যা বাস্তব জগতের সমান্তরাল এক পরাবাস্তব জগত। সে জগতে কখনও মান্টোর চরিত্রেরা তার সাথে গল্প জুড়ে দিতো, কখনও গালিব মিশে গিয়েছেন তার অতীতে ইতিহাসে, অদেখায়।
৪. মান্টো এবং গালিব, সাহিত্যের ইতিহাসের অন্যতম দুই ছন্নছাড়া পাগলাটে মানুষ। অথচ উভয়ের দেখার চোখ ছিল দারুন, প্রকাশের ভাষা ছিল অনবদ্য। একজন দেখেছিলেন মোগল আমলের পতন, ভারতের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা। আরেকজন দেখেছিলেন ব্রিটিশদের বিদায়ের কাল, ভারতের আপাত জেগে ওঠার কাল। গালিব দেখেছিলেন সিপাহী বিদ্রোহ, মান্টো দেখেছিলেন দেশভাগ-দাঙ্গা। রক্ত চিনতেন দুজনেই। কবি গালিবের মনের গহনে ছিল পূর্বপুরুষের জাঁহাবাজ দুর্দান্ত রক্তের ছলকানি, মান্টোর ভেতরে ছিল কাশ্মিরি হাওয়া, স্বাধীনতার পিপাসা।
এরকম দু’জন মানুষকে নিয়ে গল্প লেখা হয়, তখন নিশ্চিত ভাবে সেখানে উঠে আসে সেই দু’জন মানুষের কাল। তাদের সমসাময়িক সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা। ইতিহাসের একটা দলিল। যদিও উপন্যাসে ইতিহাস লেখার প্রয়োজনীয়তা কিংবা সুযোগ, কোনটাই নেই। তা কাম্যও নয়। তবে মোটা দাগে, সেই সময়ের একটা রেখাচিত্র ঠিকই ফুটে ওঠে।
এই উপন্যাসও তার ব্যতিক্রম নয়। গালিব আর মান্টোর জীবন ফুটে উঠেছে উপন্যাসে। সেই সঙ্গে তাদের যাপিত জীবনের সমসাময়িক ভারতের কথা। এই উপন্যাস পড়ে আমরা জানতে পারবো গালিব আর মান্টোর জীবন, তাদের মনোভাব। তাদের সংগ্রাম, তাদের স্বপ্নের কথা।
৫. কিন্তু ‘দোযখনামা’ ঠিক কতোটা উপন্যাস, আর কতোটা রবিশঙ্করের নিজস্ব সৃষ্টি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা আবশ্যক।
লেখক শুরু থেকে শেষ অবদি গালিব আর মান্টোর জবানীতে তাদের জীবন কাহিনী বলে গেছেন। যেহেতু মান্টো, গালিবের পরবর্তী সময়ের মানুষ, তাই কখনও কখনও আমরা মান্টোর জবানীতে গালিবের জীবনের কাহিনী শুনি। সেই সঙ্গে গালিব বলে যান তাঁর সময়ের কথা। মোগলদের পতনের কথা, সম্রাট বাহাদুর শাহ-র কথা। স্ত্রীর সাথে গালিবের সম্পর্কের কথা। তাঁর মনের গভীরে চলে দ্বন্দ্ব আর তাঁর লেখার কথা। সিপাহী বিদ্রোহের কথা আসে, আসে ব্রিটিশ রাজের কথা।
তেমনি মান্টো বলে চলেন তাঁর নিজের কথা। বোম্বে এসে তাঁর কাটানো সময়ের কথা। তাঁর সংগ্রাম, সাহিত্য আর পথের অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর বন্ধুদের কথা, ছন্নছাড়া জীবনের কথা। সেই সঙ্গে আসে ভারত ভাগ, দাঙ্গার কথা। পথের মানুষদের কথা। যাদের মান্টো দেখেছেন খুব কাছ থেকে।
কখনও গালিব বলেন, কখনও মান্টো। তাদের নিজেদের কথার মাঝে ইতিহাস, পুরাণ ঘুরে ফিরে আসে। কিন্তু, তাঁরা কেবল বলেই যান।
এই বলে যাওয়াটাই সমস্যা। আমি বলছি না যে উপন্যাসের কোন নির্দিষ্ট ‘ধারা’ থাকতে হবে, যা অনুসরণ করে লেখক লিখবেন। কিন্তু ‘দোযখনামা’-য় রবিশঙ্কর কেবল দুটি চরিত্রকে দিয়ে কথা বলিয়েছেন। তাঁরা বলে গেছেন একঘেয়ে সুরে। যদিও দু’জনের জীবন নানা অভিজ্ঞতায় ভরপুর হওয়ার কারনে সে বয়ান ‘একঘেয়ে’ লাগে না।
কিন্তু রবিশঙ্কর নিজে এখানে কি দিলেন? গালিব, মান্টো ছাড়া গালিবের চাকর কাল্লু-কে এই উপন্যাসের একটা চরিত্র বলা যায়। বাকি সব চরিত্র সাময়িক। তাদের কেউ এই গল্পে থাকে না। কোন চরিত্রকে রূপদান করার প্রয়োজন রবিশঙ্করের হয়নি। এমনকি গালিব, বা মান্টোকেও তাঁর আঁকতে হয়নি। অবশ্য, একারনেই হয়ত শুরুতেই বলে গিয়েছেন যে এ গল্প, ছায়া-মানুষদের জগতের গল্প।
তবু যে গল্প বলা হয়েছে সেখানেই লেখকের নিজের সৃষ্টি তেমন কিছু নেই। মান্টোর একটার পর একটা গল্প সুযোগ মতো গেঁথে দিয়েছেন নিজের লেখায়, মান্টোর যবানীতেই। অর্থাৎ, মান্টোর কাহিনী তিনি বলেছেন মান্টোর গল্পের আশ্রয় নিয়ে। গালিবের কাহিনী যখন আসে, গুলজারের লেখা গালিবের জীবনীর ছাপ সেখানে দেখা যায়। ছাপ আছে ‘দস্তাম্বু’-র। সেটা থাকবে, কেননা দস্তামু তো গালিবের জীবনের একটা অংশই।
৬. গালিব এবং মান্টো, দু’জনেই খুব জটিল বাস্তব চরিত্র। তাদের সম্পর্কে যারা তেমন কিছু জানেন না, তাদের এ বই পড়তে খুবই ভালো লাগবে। কেননা তাঁরা ‘মানুষ’ মান্টো এবং গালিবকে চেনেন না। তাই ‘দোযখনামা’-র চরিত্র হিসেবে তাদের দেখতে সুবিধা হবে। অসুবিধা হয়ত কিছুটা তাদের হবে, যারা আগেই গালিব এবং মান্টোকে গুলে খেয়েছেন (আমার মতো)।
পাকিস্তানের সাথে আমাদের একটা পুরনো ‘শত্রুতা’ থাকার কারনে উর্দুর সাথেও সে শত্রুতা হয়ে গেছে। তাই উর্দু সাহিত্যের খনি সম্পর্কে আমাদের ধারনা প্রায় শুন্যের কোঠায়। এমনকি যারা কিছুটা হলেও সাহিত্য চর্চা করে, তাদেরও। ‘দোযখনামা’ আমাদের সবাইকে উর্দু সাহিত্যের সাথে কিছুটা পরিচয় করিয়ে দেবে। আগেই বলেছি, উপন্যাসে ইতিহাস লেখা কোন স্বাভাবিক বিষয় না। তাই বইয়ের বিজ্ঞাপনে যতোই বলা হোক যে 'দোযখনামা' '৪৭ এর দেশভাগ, সিপাহী বিদ্রোহের কথা বলে, তা কিছুতেই ঠিক না। এ বইয়ে দেশভাগ ফোটেনি, কিছুটা ফুটেছে হয়তো সিপাহী বিদ্রোহ।
‘দোযখনামা’-র সবচেয়ে সুন্দর অংশ এবং আমার মতে এই উপন্যাসে রবিশঙ্করের একমাত্র কীর্তি, উপন্যাসের ভাষা। সরাসরি উর্দু কিংবা উর্দু-আশ্রিত শব্দ, বাক্যাংশের সঠিক প্রয়োগ এ উপন্যাসের প্রাণ বলা চলে। প্রতি অধ্যায়ের শুরু মীর, কিংবা গালিবের ‘শের’ দিয়ে।
৭. গালিব এবং মান্টোকে জড়িয়েই হয়ত কেবল লিখতে চেয়েছিলেন রবিশঙ্কর। লিখেছেনও তাই। ভাষা আর গল্পের ভেতর অনেক বারই আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়, কিন্তু পড়ার মাঝে মাঝে, এবং পড়া শেষে বারবার মনে হয়, রবিশঙ্কর নিজে কি লিখলেন? এ তো মান্টোর অনেকগুলো গল্পের অনুবাদের ফাঁকে ফাঁকে গালিবের জীবনকে বসিয়ে দিয়েছেন কেবল। সেই সাজানোটা অবশ্য প্রায় নিখুঁত। তাই, স্বাদ লেগে থাকে অনেকক্ষণ।
একটা বই যখন ভারতবর্ষের আমাদের নিয়া, মান্টো গালিব আর আম নিয়া, ৪৭ আর ১৮৫৭ নিয়া কথা বলে, তখন আমার উপায় থাকে না ভালো না লাগার।
ঊর্দুর আর বাংলার যে ভাষা পর্যায়ে ডুয়ালটা সম্ভব, সেটার চমৎকার সদ্ব্যবহার ছিলো বল সাহেবের এই লেখায়। প্রচুর এদিক সেদিক করে গল্প আগায়ে গেছে, গালিবের জীবনীগ্রন্থ থেকে আর মান্টোর গল্প থেকে পাতার পর পাতা তিনি আনমনে উদ্ধৃত করে গেছেন, সেইসব উদ্ধৃতি স্বতঃগুণে তাঁর নিজের লেখায় পরিণত হইছে। আমি শিক্ষিত ঊর্দু প্রায় বুঝিই না, তাই বয়েত পড়তে, শায়েরী পড়তে যা একটু কষ্ট, কিন্তু গালিবের শক্তিকৃত বাংলা অনুবাদ যেমন ভোগাইছিলো, এই বইয়ের মূল থেকে বিচ্যুত অনুবাদগুলি তার উল্টা পথে গিয়ে বরং কিছুটা খুশি করে দিছে, হয়ত প্রেক্ষাপট প্রচণ্ড স্পষ্ট ছিলো বলে।
লেখকের নিজেরে উপন্যাসের চরিত্র করে তোলার বিষয়টা শেষ মুহূর্তে ঝুলে গেলেও, আমার বইটা অসম্ভব ভালো লাগছে, কিন্তু আমি আসলে কাউরে এই বই সুপারিশ করতে ভয় পাবো, কারণ আমার কাছে ৪৭ সংখ্যার চেয়ে বেশি, আমার কাছে মান্টো - মান্টো কেমন আমার কাছে? আমি খোদার লেখা খুব বেশি পড়ি নাই, তাই মান্টোর কবরে লেখা সেই বক্তব্য - কে বড় গল্পকার, খোদা না মান্টো, এর উত্তর আমি দিতে পারি না। কিন্তু আমি ত ভাই মান্টো পড়েছি, মান্টোর গল্প যেখানে পেয়েছি, পড়েছি, তাই আমি হয়ত কবরের উপর এইটুক লেখার ধৃষ্টতা দেখায়ে যাবো, কে বড় গল্পকার, মান্টো না মানব? আরে মান্টো ত আসলেই খুদাঈ লেখক, তাঁর গল্প পড়ে আমি কেঁপে গেছি, এই জমানায় এসেও, যখন আমার ধারণা ছিলো মানুষ কাঁপে শুধু রোগেশোকে আর এসির বেমক্কা বাতাসে, গল্প পড়েও যে কাঁপা যায়, সে কথা মান্টো ছাড়া আমি কী করে জানতাম?
আমার প্রেমপত্রেও আমার না দেখা দিল্লী ঢুকে যায়, মান্টোভাই ঢুকে যায়, আর তাই এই বই আমার আগাগোড়া ভালো লাগে, এবং এই জন্যই দেরী হওয়ার আগে স্বীকার করে নেই, ক্রুর একটা বায়াস এক্ষেত্রে আমার না থেকে যায় না।
শফিক বহিনের শুকরিয়া। সে শুধু ভালো ভালো বই পড়তে দেয়।
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে, ধীরেসুস্থেই পড়লাম বইটা। মনে দাগ কেটে যাওয়ার মত বই। বই না বলে ভারতবর্ষের দুই শতকের দুই তারকার শোকগাথা বলাই ভালো। কবরে শুয়ে থেকে নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা, দুঃখ, সংগ্রাম নিয়ে আলাপ করেছেন দুই মহারথী-মির্জা গালিব ও সাদাত হোসেন মানটো। তাদের কথপোকথনের উঠে এসেছে দুইটি ভিন্ন দশকের ভারতবর্ষের প্রতিচ্ছবি। কিভাবে মির্জা গালিব ও মান্টো মত দুজন কবি ও লেখকের জন্ম হল, তাদের একাকীত্ব, সংগ্রাম, হাহাকার, জীবনভর খুঁজতে থাকা সেই হারানো সত্তা, প্রেম, দুঃখ, ধর্মবিশ্বাস, রাজনীতি এসবই চলেছে পুরো বইজুড়ে। এছাড়াও ছিল সিপাহীবিদ্রোহ, শেষ মোঘলের শোচনীয় অবস্থা, সাতচল্লিশের দেশভাগ, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার ইতিহাস। নিজ নিজ কবরে শুয়ে বইজুড়েই পালা করে নিজেদের কিসসা বলে গিয়েছেন গালিব ও মান্টো। আর সেটা দক্ষতার সাথেই নিজের কল্পনার মিশেলে উঠিয়ে এনেছেন রবিশঙ্কর বল। মাঝেমধ্যে অবশ্য কল্পনা কিছুটা লাগামছাড়াও হয়েছে, সেটা গণনার বাইরেই রাখলাম। তবে গালিব ও মান্টোর এই আখ্যান হাসি, কান্না, সংগ্রাম, কবিতা, কিসসা, জাদুবাস্তবতায় ভরপুর।
সাদাত হোসেন মান্টো এবং মির্জা গালিব — উর্দু সাহিত্যের দুইজন শ্রেষ্ঠ মানুষের কথোপকথনের আজিব দস্তান হলো রবিশঙ্কর বলের 'দোজখনামা'৷ মান্টো — উর্দু সাহিত্যে ছোটগল্পের চার স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ, যিনি শায়িত আছেন লাহোরের টন টন মাটির নিচে, আর ভাবছেন কে সেরা গল্পলেখক? খোদা নাকি সে? অন্যদিকে, মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ খান, উর্দু সাহিত্যের বিশুদ্ধতম কবি মির্জা গালিব নামে যিনি পরিচিত, চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন দিল্লীতে৷ দুইদেশের কাঁটাতারের রেখা ভেদ করে কবরের ভেতর মুখোমুখি বসে দুইজন কথোপকথনে নিজেদের জীবনের দস্তান বলতে থাকেন৷ যে জীবন শুধু দুখ-দুর্দশার, দারিদ্র্য, মোঘল সাম্রাজ্যের অন্তিমকাল ও দেশভাগ দাঙ্গার, ব্যর্থতা, গ্লানিবোধ আর পরাজয়ের আখ্যান — যা বেঁচে থাকাকে দোজখের ওমের সমতুল্য করে তোলে৷
"দোজখনামা" - মির্জা গালিব ও সদত হোসেন মান্টোর কাল্পনিক কথোপকথন। কবরের ভিতরে শুয়ে দুই মহান কবি তাদের জীবনের গল্প করছেন। তাদের জীবনের গল্পগুলো যেন নিঃসঙ্গতার গল্প, জীবন নিয়ে দুই কবির আক্ষেপ। আরও এসেছে , সিপাহি বিপ্লব ও দেশভাগের কথা।
লেখক রবিশঙ্কর বল এর লেখার সাথে প্রথম পরিচয় হল "দোজখনামা" পড়তে গিয়ে। লেখক যেভাবে দুইজন নন্দিত( নাকি নিন্দিত?) সাহিত্যিককে একই সুতায় বেধেছেন , তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। উপন্যাসটির প্লট অসাধারণ। আর প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুর গজল/ শের গুলো প্রাণ ছুঁয়ে দিল, এত সঠিক বিন্যাস খুব কমই দেখা যায়।
তবে এই উপন্যাস সব ধরনের পাঠকের জন্য নয়। মির্জা গালিব ও সদত হোসেন মান্টোকে নিয়ে আগে থেকে অল্প হলেও জানলে বইটি উপভোগ্য হবে আরও বেশি। Suggested reading: সদত হোসেন মান্টোর ছোটগল্প সমগ্র( সংকলক রবিশঙ্কর বল)
মনে রাখার মতো হাজারটা কারণ ছিল আমার, তবুও ভুলে যাওয়ার জন্য একটা কারণ খুঁজে হয়রান হচ্ছিলাম আমি। ধুলো পড়া তাকের পিছে অথবা হাজারটা পড়ে ফেলা বইয়ের ভীড়ে আমি হারিয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম তাকে। আমি ভুলতে চেয়েছিলাম 'দোজখনামা' নামে আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ কোনো বই আমি পড়েছিলাম। বিস্মৃত হতে চেয়েছিলাম কতবার আমি আঁটকে গেছি এ বইয়ের পাতায় পাতায়, ছত্রে ছত্রে।
ভুলে যাওয়ার অজুহাত খুঁজতে গিয়ে কখন আবার গালিবের পাশে গিয়ে বসলাম আমি টের পাইনি। বুঝতে পারিনি কখন মান্টোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম আমি। কবরে শুয়ে গল্প করতে থাকা দুই কিংবদন্তীর গল্পের স্রোতে আমিও যে কখন গা ভাসালাম বাকি মুর্দাদের সাথে, টের পাইনি।
দুই দেশের দুই কবরে শুয়ে থাকা দু'জন মুর্দার মধ্যে আবার গল্প হয় নাকি? হয়, চাইলেই হয়। আমার মতো, আপনার মতো, আমাদের মতো কিছু শ্রোতা পেলে; রবিশংকরের মতো লেখক পেলে হাজার মাইল দূরে শুয়েও, গলে যাওয়া কাফন গায়ে জড়িয়েও গল্প করা যায়। মেলে ধরা যায় সেসব কিসসা যা আগে কাউকে বলা হয়নি, যা বলাও হবে না আর কাউকে।
এ গল্প-ঝড়ের পূর্বাভাস না পেলেও কোত্থেকে যে এত আয়োজন জানি না, এতকাল কবরে শুয়ে থাকা নির্জীব দেহগুলো জেগেছে গালিবের কিসসা শুনতে, মান্টোর গল্প শুনতে। সাথে জাগিয়েছে মর্ত্যে হেটে বেড়ানো রক্তমাংসের মানুষদেরও। তারা দোজখে যাবেন কি না সে হিসাব অজানা, তবে দুনিয়ার বুকে দোজখের যে আঁচ তাদের গায়ে লেগেছিল, যে ক্ষত জোব্বার নিচে ঢেকে আজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন তারা সেগুলো দেখে আর শুনেই দিন পার হয়ে যাওয়ার কথা!
কোনো কিসসা সহজে শেষ হতে চায় না, তাদেরও একটা দাবি আছে। সে তো আর এতিম নয় যে যেখানে সেখানে তাকে ফেলে চলে আসা যাবে! কিসসার হাত ধরে তাকে নির্দিষ্ট একটা ঠিকানা দিতে হয়, একটা সুন্দর ঠিকানা। 'সন্ধ্যা কাটতে চায় না অথচ দিব্যি বছর কেটে যাচ্ছে' বলা গালিবের বছরগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যায়নি। বাসি কাবাব ঠান্ডা পরোটায় মুড়ে মুখে পুরে দেওয়ার মাঝের সময়টুকুতেই যতবার দীর্ঘশ্বাস পড়েছে তার হিসাব কোনো কিসসাতে নেই। এত এত কাসিদা, শের, গজলেও নেই তার হিসাব।
'ঠান্ডা গোশত'র গল্প শুনিয়ে তাজা রক্তের লজ্জাশীল পুরুষদের গোশত গরম করে দেওয়া মান্টোর নিজের গল্পও কোথাও নেই। অশ্লীলতার দায়ে বারবার আঘাতে জর্জরিত হওয়ার গল্পগুলোর অস্তিত্ব নেই। কারবালার কাহিনি ছাড়া নাকি মার্সিয়া লেখার কথা ভাবা যায় না! মান্টোর জীবন কারবালার চেয়ে কম ছিল না তো! গল্প লিখতে গিয়ে জীবনকে অন্তঃসারশূন্য বানানো, ইসমত চুঘতাইকে পেয়েও না পাওয়ার চাপা কষ্ট; এত করুণ জীবন কাটিয়েও নিজের জন্য একটা মর্সিয়া লিখে যাননি তিনি। তার হয়ে লিখেও দেয়নি কেউ। গালিব আর মান্টো তাই নিজের গল্প শুনাতে বসেছেন, আজ দোজখনামা পাঠ হবে, আজ নরকগুলজার হবে!
"আমি কেউ নই, বলতে পারেন অনন্তকাল ধরে পড়ে থাকা একটা ঘুম আমি।" মৃত্যুকে সহ্য করা গেলেও স্মৃতিকে সহ্য করা যায় না। স্মৃতি ভুলতে বহু আয়োজনের পরেও মনে হয় সবকিছু বৃথা, কিছুই হচ্ছে না যেন! তার চেয়ে অনন্তকাল ধরে ঘুম হয়ে পড়ে থাকাই ভালো। সে ঘুম যেন না ভাঙে, আর ভাঙলেও যেন ভাঙে দোজখনামা পাঠের আসরে, গালিবের সামনে। তার কাছ থেকে শুনতে চাই কালে হাভেলির গল্প, কাল্লুর গল্প, গোরা সিপাহীদের কামানের আঘাতে মরতে বসা দিল্লির গল্প। এ ঘুম যেন ভাঙে মান্টোর ���ামনে। তার থেকে শুনতে চাই তার আফসানাদের গল্প, শূন্যস্থানে পড়ে থাকা টোবা টেক সিংয়ের গল্প, বম্বের খোলিতে কাটানো স্যাঁতসেঁতে দিনগুলোর গল্প।
"গজল মানে সুন্দর সুন্দর শব্দ নয়, ছন্দ নয়, হৃদয় থেকে রক্ত না ঝরলে গজল লেখা যায় না।" কতটা রক্ত ঝরিয়ে গালিব তার গজল লিখে গেছেন তা আমরা জানি বোধহয়। কতটা আঘাতে ভেঙে পড়েও উঠে দাঁড়িয়ে মান্টো তার গল্প লিখেছেন তাও অজানা থাকার কথা না। গল্প আর গজলের নান্দনিকতা আমাদের যাতে ভুলিয়ে না দেয় রক্তঝরা আঘাতের কিসসা-কাহিনি, সেজন্যই দোজখনামার আয়োজন।
তবুও আমি ভুলে যেতে চাই, ভুলে যেতে চাই গালিবের সব গজল, তার না বলে যাওয়া কিসসা। ভুলে যেতে চাই মান্টোর বিষাদমাখা দিনগুলো। তা-না হলে চতুর্থবারের মতো 'দোজখনামা' আমি খুলে বসবো কী করে?
I finally managed to complete this book after being in a whirlwind for about a year. Not because I was too lazy to finish, but because it’s so overwhelming. Basically, it’s about conversations in hell between Mirza Ghalib, a connoisseur of poetry; and Sadaat Hasan Manto, the master of words! Both of which, I have been adoring since my childhood. Dozakhnama takes you on a sweet agonist ride, where you can’t help but feel all the emotions, pain, recklessness and truth behind each and every word. The haphazard lives and vagabond existences of Ghalib and Manto. The tone of the book is so sensible, gripping and enthralling. The mighty Mughal Era, the scenario of a subcontinent, and the aftermath of 1858’s traumatic events in words of Ghalib, and the tales of partition through the eyes of Manto, portraits a whole universe in a grain. The tales and anecdotes of Dervish, Fakirs and Sufis throughout the whole book is what keeps it utterly, contemplatively and profoundly interesting. One thing which I adored the most is Shers and Verses by all the famous Urdu and Farsi poets in the book. Brings back a sense of attachment and belonging to one’s own long-lost but mostly adored culture!
This book was a big EUPHORIA for me!!! And I’m just sitting here after finishing the book, and don’t know what to do with my life anymore, so here’s translated version of some of the verses from the book which have been stuck in my mind, and painted on my heart:
I shall not give up on my desire if it remains unfulfilled My heart will either reach my lover, or leave my body When I’m dead dig up my grave, you’ll find my shroud Covered in smoke, for the fire is still burning inside❤️
Dozakhnama is a read that I will not forget for a very long time to come.
‘কিস্সা লিখলে বড় একা হয়ে যেতে হয়, জনাব। আল্লা যাকে কিস্সা লেখার হুকুম করেন, তার জীবন জাহান্নম হয়ে যায় জি।’
কবরে শুয়ে কথা বলছেন সাদাত হাসান মান্টো ও মির্জা গালিব। কথা বলছেন কবিতা, শের, গজল, কিস্সা নিয়ে। অদৃশ্য, চোখের আড়ালে থাকা মানুষের গল্প বলছেন, বলছেন বাদশাহ্র দরবারের কথাও। আর তার প্রায় সবই বলা হচ্ছে গভীর বেদনা ও যন্ত্রণা নিয়ে।
তাঁদের দুজনের জীবনকথার মাঝে মাঝে মুক্তোর মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য শের। কবিতা বিষয়ে মির্জা বললেন, ‘কবিতা তো মসজিদে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেওয়া নয়; খাদের কিনারে এসে দাঁড়ানো, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শেষ কয়েকটা কথা বলা।’
বার বার পড়া হলো বিলকিসের কথা, ইউসুফের কথা। ‘এ কে? বেহেস্তের কোন ফুল?...বাহার তো এসে গেছে, ফুলও ফুটেছে গাছে গাছে, তবু হে প্রিয় বাগান আমার, তাকে কেন এভাবে কেড়ে নিলে?’ এদের গল্পটা খুব মনে গেঁথে গেল। এমন ছোট ছোট অন্য গল্পগুলোও।
ইশ্ক নিয়ে বলা অনেক কথার মাঝে এটা আমার কাছে বিশেষ দামী : ‘মানুষ সবচেয়ে আনন্দ পায় তার পাশের মানুষকে অপমান করতে পারলে। কী ঢং-এ করে জানেন? তোমাকে আমি খুব ভালবাসি, এই কথা বলতে বলতে। লিখে নিন, আমি কাউকে ভালবাসতুম না। তাই অপমান করে গেছি, ঠাট্টা-মশকরা করেছি। কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসি বলে কাউকে নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলিনি।’
এরপর আছে যুদ্ধ দাঙ্গার কাহিনি। গায়ে কাঁটা দেয় সেসব। আর আছে সীমাহীন দুর্দশা, অসম্মানে কাটানো সময়ের কথা। পড়তে পড়তে তাঁদের জানাতে ইচ্ছা করে, শুনতে পাচ্ছি। বেশ অনেকদিন সময় নিয়ে বইটা পড়লাম। মাথার ভেতরের উথাল-পাথাল বইয়ের লাইনগুলোর সাথে কেমন মিলে মিলে যাচ্ছিল। কিস্সাগুলো ধার করে নিলাম, সময়ে সময়ে শোনাবো।
সবসময় মনে থাকবে 'দোজখ্নামা'য় পড়েছিলাম, ‘মৃত্যুকে সহ্য করা যায় শফিয়া। স্মৃতিকে নয়।’
5+ I hate it when you find some fallacies in a book you liked, while reviewing it. And I hate it more (to the extent of loving it :P), when the book turns out to be so impeccable devoiding you of that chance! Dozakhnama is that beauty. Read it for around 3 months (took a lot of effort!) and I am sad now that it is over.
What I loved : 1. Unique style of combining two biographies - In the form of conversations between Mirza Ghalib and Saadat Hasan Manto from their graves. 2. Sooooooper language. Its very beautifully crafted. Marvellous editing! 3. Kisse Kisse and many more Kisse - The deviations are such that the main plot itself looks like a deviation.
What I hated: 1. Lots of homework. 2. While the ghazals did sound melodious and beautiful, couldn't make much sense out of them without referring the English translations. 3. Had to scribble at every couple of pages in the paperback, and that ruined it (blame it on my handwriting!) 4. There were many external references - Manto stories, Ghalib ghazals, some works of Ismat Chughtai... While catching up on the references in between did break the momentum many a times, but it immensely enriched the reading experience.
In retrospect, whatever I hated is what makes this so much more special and a 5+ star read. Highly highly recommended for Hindi book lovers.
P.S.- Many thanks to Arvind for recommending this book. Your suggestion to read this in Hindi worked wonders!
As the author prepares the paranormal backdrop for his narrative to spring out of graves at the very start of the book, you get biographies woven together into a single fabric that is free from all hindrances of normalcy. The nomadic narration is the soul of Dozakhnama. Stories start at one point and sprout in various stories. History and Fantasy mingle to create an unique blend of language. But then undoubtedly that's the language the two legendary literary figures Mirza Ghalib and Manto would have loved to talk to each other in.
When Mirza Ghalib and Manto who are quite apart from each other in life and death by time and distance, meet on the common ground of literature to share their experiences, the ground realities of Indian history chapters like Mughal rule, British invasion, Sepoy mutiny, Partition take shape from the point of view of a poet and a story writer who lived through those times and weren't much appreciated while they were still living.
Dozakhnama gives us tales of tortured souls told in an innovative way. Though originally written in Bengali by Rabisankar Bal and translated in English by Arunava Sinha, the effect of the original seems to have come through. I cannot know how effective the original must have been due to my language barrier but the English translation doesn't seem lost in what it wants to convey. Garnished with witty lines and Ghalib's poetry, Dozakhnama is a one of those books that you come across only once in a while. Personally I think Indian and Pakistani readers will be able to relate to Dozakhnama in a better way than readers from other countries because of the shared culture and history. Having said that Dozakhnama is still a journey worth taking.
"He who cannot leave his home and go out on the road will never find happiness."
It certainly had errors in Urdu text. I wonder that being a writer of a rather regional language like Bengali in India, Bal had excellent imagination to bring an unique piece of literature which was worth translating in other languages. As I hear that after English, it already has been translated in Urdu language (with again, a lot of errors too). It seemed result of vast and long research about both literary figures. Sometimes events associated with both persons seem fictional. However it makes us to believe it anyway. I didn't have read Ghalib and Manto thoroughly. That's why I didn't have much praise for latter. This book introduced a whole different Manto. I could see that Manto was more than a writer of obscene and lustful stories.
যাক বছর শেষে দারুণ একটা বই পড়ার অভিজ্ঞতা হল। সবাই বলে শেষ ভালো যার সব ভালো তার। তো বলাই যায় ভালো একটা বছর শেষ হলো বইয়ের সাথে। নতুন বছরে আরও অনেক ভালো বই পড়ার কামনা থাকলো।
কবরে শুয়ে আলাপ, গল্প বলা, নিজেদের জীবনের নানা ঘটনা ও স্মৃতিচারণ করে যান কবি মির্জা গালিব ও গল্পকার সাদাত হাসান মান্টো । এরকম একটা আইডিয়ায় উপন্যাস লেখায় লেখক রবিশংকর বল স্মরণীয় হয়ে রইবেন । ইতিহাসের পট পরিবর্তনের বিভিন্ন বাঁকে দুই শতকের দুই জন কবি ও গল্পকারের সময় কি করে দোজখখানা হয়ে ওঠে তার চিত্রায়ন আসে দোজখনামায় । ১৮৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন থেকে বৃটেনের রানীর হাতে শাসনের হাত বদলের কালে ভারতবর্ষ জুড়ে খুন, যখম চুড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছায় নবাবপন্হী বিদ্রোহী বনাম বৃটিশ সেনাবাহিনীর মধ্যে । সেই কথন ফুটে ওঠে গালিবের বিবরণীতে এবং ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পটভূমি আসে মান্টোর বয়ানে । এছাড়া নিজেদের দরিদ্রতা, সংগ্রাম ও ক্ষেপাটে জীবনযাত্রার ভেতর দিয়ে নানান সুখকর ও অসুখী ঘটনাও বলা হয় এ রচনায় । মান্টোর সম্বোধন 'মির্জাসাব' আর গালিবের সম্বোধন 'মান্টোভাই'য়ে সংলাপ প্রাণবন্ত রূপ ধারণ করে । অতঃপর, লেখাটাকে লেখক উপন্যাস বললেও তা প্রধাণত চরিত্রগণের আত্মজীবনী ও নিজ নিজ রচনার উদ্ধৃতি, সমকালীন ইতিহাসচারণ ও মনের খেয়ালে কথার তুবড়ি ছোটানো ব্যতিক্রমী এক রচনা ।
Ghalib & Manto meet in hell(Dozakh), and discuss about the worldly matters of their era. Women,wine,ishq, dastans, Sufism, Indian history, people, culture with each one judging the other and sharing the lessons learnt in their respective lives. And from these discussions, the plot of the book is borne, bearing the two centuries of history of our country.
Dozakhnama(Conversations in hell) with its ghazals, poetry and plot leaves us completely spellbound. Manto's narration is top notch, and at times it renders Ghalib's narration ordinary.After reading the book.all I wished that the book must go on and on. But, alas, all good things come to an end, and so has this book. A must read for everyone.
খবরের কাগজের লেখা সংগ্রহে গল্প কথক গিয়েছিলেন লখনৌতে। লখনৌর সেই শান-শওকত আর কিছু নেই। কঙ্কালসার অবস্থা তখন শহরটির।লেখা খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে একসময় তিনি হাজির হন ফরিদ মিঞা নামক এক ব্যক্তির কাছে। তিনি দাবি করেন তার কাছে মান্টোর শেষ জীবনের একমাত্র উপন্যাসের পান্ডুলিপি রয়েছে। এই পান্ডুলিপি কীভাবে তার হাতে আসলো সেই সম্পর্কে বিস্তারিত না জানলেও কথককে পান্ডুলিপি দিয়ে দেন এবং প্রকাশ করতে অনুরোধ করেন। কথক উর্দুভাষা জানতেন না বিধায় এই উপন্যাস অনুবাদের জন্য ভাষা শিখতে যান তবসুম নাম্নী এক শিক্ষিকার কাছে। শেষ পর্যন্ত উর্দু শেখা আর হয়নি। বিকল্প হিসেবে তবসুম অনুবাদ করে মুখে বলে যেত এবং কথক খাতায় তুলে নিতেন।
বইটি প্রথমত উত্তম পুরুষে লেখা। গল্পের কথক এর জবানিতে উপন্যাসের কয়েকটি পরিচ্ছেদ লেখা হয়েছে। বাকিটুকুতে আমরা সাদাত হাসান মান্টো ও মির্জা গালিবের কাল্পনিক কথোপকথন দেখতে পাই। যেখানে উঠে এসেছে উভয় ব্যক্তির জীবন-যাপন, সাহিত্য চর্চা, রাজনৈতিক আবহে জীবনের উত্থান পতনের ইতিহাস। মান্টো শুয়ে ছিলেন পাকিস্তানে অন্যদিকে গালিব ভারতের মাটিতে শুয়ে পারস্পরিক ভাব বিনিময় করেছেন। গালিব যেখানে ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ; অন্যদিকে মান্টো ছিলেন ছন্নছাড়া গোছের । উপন্যাসটিতে প্রধান চরিত্র এই দুইটিই, পাশাপাশি কিছু চরিত্র এসেছে তবে সেগুলোর বিস্তার কম। ধারাবাহিকভাবে মান্টো ও গালিবের ভাষায় উপন্যাস এগিয়ে চলেছে।
মির্জা আসাদুল্লা গালিব ছিলেন উর্দু ও ফারসি ভাষার অন্যতম কবি। তাঁর কলমে আধ্যাত্মিক কিংবা সুফি ধারার অনেক পঙক্তি সৃষ্টি হয়েছে। পিতা ছিলেন বেতনভুক্ত সেপাই। বিভিন্ন রাজা-বাদশাহের অধীনে কাজ করতেন এবং একসময় যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন। মির্জা গালিবের ভাষায় তিনি নিজেকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়কালকে তাঁর জীবনের দূর্বিষহ সময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মোঘল সাম্রাজ্যের জৌলুশ তখন আর কিছু বাকি ছিল না কিন্তু বাদশাহ শাহ জাফর তখনও সিংহাসনে । প্রাসাদ এবং অল্প কয়েকটি এলাকায় তাঁর বাদশাহি চলতো। সেই দরবারের কবি হিসেবে চাকরি করতেন মির্জা গালিব। মোঘল বাদশাহর অ-সাহিত্যসূলভ কবিতাকে সংশোধন এর মতো বিরক্তিকর কাজ করতে হয়েছে শুধু টাকার জন্য। ব্রিটিশ সরকারের ভাতা বৃদ্ধির জন্য কলকাতা পর্যন্ত এসেছিলেন, তবুও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ধারদেনা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে, পাওনাদারদের ভয়ে রাস্তায় বের হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সাদাত হাসান মান্টো উর্দু সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় সাহিত্যিক। ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও দেশভাগের সময় পাকিস্তানে চলে যেতে বাধ্য হন। ভাগ্যের উন্নতির জন্য এসেছিলেন মুম্বাইতে। সেখানে চিত্রনাট্য লেখার কাজ করতেন। পাশাপাশি ছিলেন পত্রিকার সম্পাদক। গিঞ্জি এক কোঠার মধ্যে বসবাস করতেন। মদ খেতেন প্রচুর। মদ না হলে নাকি কলম দিয়ে লেখা বেরোয় না। তাঁর লেখায় অশ্লীলতার দায়ে ছয়বার মামলা হয়েছিল এবং জেল-জরিমানাও করেছিল আদালত। তবে তিনি বরাবরই এই অভিযোগকে অস্বীকার করে এসেছেন।
অসাধারণ এক উপন্যাস। শুধু মান্টো ও গালিবের জীবন নয়, পাশাপাশি বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে শিক্ষনীয় অনেক ব্যাপারই উঠে এসেছে। যেগুলোকে এখানে 'কিসসা' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। কিসসাগুলোও দারুণ ছিল। বাদশা সিকান্দর হতে শুরু করে খলিফা ওমর ফারুক(রা) এর বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে উপন্যাসের প্রতি আগ্রহ বজায় রেখেছেন লেখক। মান্টো কিংবা গালিবের জীবনের কাহিনি পড়তে পড়তে একঘেয়েমি যাতে না আসে সেজন্য লেখক মাঝেমধ্যে মান্টো বা গালিবের জবানিতে বিভিন্ন কিসসার অবতারণা করেছেন। বইটিতে অনেক উর্দু-ফারসির 'শের' আছে। অধিকাংশ শের'র অনুবাদ থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় অনুবাদ নেই। এই জিনিসটা ভালো লাগেনি। বইটির প্রথমদিকে কাহিনি ধীরগতির হলেও পরবর্তীতে সেই সমস্যাটা আর ছিল না। তাই নির্দ্বিধায় পড়তে পারেন মান্টো ও গালিবের এই অসাধারণ জীবন আখ্যান। হ্যাপি রিডিং।
দোজখনামা বইটি পড়ে আমার অনুভূতি মিশ্র, কারণ লেখক, রবিশঙ্কর বল, মির্জা গালিব এবং সাদাত হাসান মন্টোর মধ্যকার কথোপকথনে উঠিয়ে এনেছেন গালিব এবং মন্টোর জীবন কাহিনী যেখানে আছে
একদিকে উর্দু এবং ফার্সি ভাষার সেরা কবি মির্জা বেগ আসাদুল্লাহ খান ওরফে মির্জা গালিব
অন্য দিকে ছোট গল্পের অন্যতম সেরা স্রষ্টা সাদাত হাসান মন্টো
একদিকে অসাধারণ এবং অন্যান্য প্রতিভাধর গালিব এবং মন্টো
অন্যদিকে দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করতে থাকা গালিব এবং মন্টো
একদিকে ভালোবাসার তৃষ্ণা নিয়ে কবিতা ও গল্প লিখে যাওয়া গালিব এবং মন্টো
অন্যদিকে মাদকাসক্ত এবং পতিতাসক্ত গালিব এবং মন্টো
একদিক মোঘল রাজত্বের সমাপ্তি এবং ইংরেজ শাসনের শুরু
অন্যদিকে ইংরেজ শাসনের অবসান এবং দেশ ভাগ
একদিকে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাওয়া গালিব এবং মন্টো
অন্যদিকে দিকে মরে গিয়ে বেঁচে যেতে চাওয়া গালিব এবং মন্টো
কবিতা আমি তেমন বুঝি না তাই ভবিষ্যতে মন্টোর ছোট গল্প পড়ার ইচ্ছা রইলো।
শুরু করেছিলাম মান্টোর 'গাঞ্জে ফেরেশত' দিয়ে। স্মৃতিকথামূলক বই, পড়তে পড়তে মান্টোকে জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে। অবশেষে রবিশংকরের 'দোজখনামা' পড়া শুরু করি।
'দোজখনামা' মূলত মান্টো আর গালিবের কথোপকথন। পুরো উপন্যাসে কবরে দুজনের কথালাপের মাধ্যমে বেড়িয়ে আসতে থাকে তাদের জীবন, দুঃখ, দুই লাইনের শায়ের, গজল, কিস্সা, সূফীবাদ, দর্শন।
মান্টো ছয়বার জেল খেটেছিলেন গল্প লেখার জন্য। এজন্যই হয়তো তার এপিটাফে হেঁয়ালী করে লেখা, "Under tons of earth he lies, still wondering who among the two is greater short-story writer: God or he?" সাতচল্লিশের দেশভাগ, তৎকালীন দাঙ্গায় মানুষের নিঃশেষ হয়ে যাওয়া বোধ হয় মান্টোর মতো কাউকে ছোঁয় নি। এইসব দুঃসহ স্মৃতি, টানাপোড়েন মান্টোর লেখাকে ধারালো করেছে। অশ্লীলতার জন্য বারবার দায়ী করা হতো, অথচ সে বিকার। আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলো, "If you find my stories dirty, the society you are living in is dirty. With my stories, I only expose the truth."
উর্দু ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মির্জা গালিবের বয়ানেও উঠে আসে তার জীবনগাঁথা, অপমান, লাঞ্চনা, স্বজন হারানোর ব্যথা। এই বিষাদগাঁথা আমার উপন্যাসের প্রথম দিকের কথা মনে করিয়ে দেয় ফরিদ মিঞার কথনে, "কিস্সা লিখলে বড় একা হয়ে যেতে হয়, জনাব। আল্লাহ যাকে কিস্সা লেখার হুকুম করেন তাঁর জীবন জাহান্নাম হয়ে যায়।" জীবন দোজখ হওয়ার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সম্ভবত মান্টো আর গালিব!
দোজখনামা পড়ার সময় কয়েকদিন ঘোরে ছিলাম। যাদের দেশভাগ, সিপাহী বিদ্রোহ, মান্টো আর গালিবে আগ্রহ আছে তাদের জন্য হাইলি রিকমেন্ডেড।
Starting on an intriguing note with the author apparently discovering Manto's unpublished script in Urdu about Ghalib's life written as an account of conversations between Manto and Ghalib when they come across each other in Hell, it loses it's pace after a few hundred pages and seems to drag. Delightful as it comes out as in bits and pieces, the USP is the excerpt of Ghazals by Ghalib, Mir, Hafiz and others throughout the book in Urdu with their literal translations.
সুফিয়ানা গজল, শায়েরী সবে বরাবর আমার ঝোক থাকলেও কখনো সবর করে বসে পড়ার সবর ছিল না। তার উপর দোজখ্নামা তো পুরোই দুই দেশের দুই মহারতী মির্জা গালিব আর সাদাত হাসান মান্টোর কাহিনী। কাহিনী না বলে বয়ান কিংবা দস্তান বলাটাই দোজখ্নামার সাথে মানানসই। তাও আবার কবরে শায়িত দুই লেখকের সংলাপ। সুফিয়ানা ঘরানার লেখা এই বই বেশ অদ্ভুত ই ঠেকেছে আমার কাছে। এই সবকিছু হ-য-ব-র-ল তো এই বুঝে এত গভীর চিন্তায় চলে যাই। মান্টোর টোবাটেক সিং পড়েছিলাম, মান্টোর লেখা বুঝতেই যেখানে আমি ভিমরি খেয়ে পড়ি সেখানে আবার গালিব। তবে বইটা পড়তে আমার বেশ স্বাচ্ছন্দ্যই লাগছিল। শেষের কথা কী দিয়ে শেষ করব জানিনা। তবে, বইটা এমন যে ভর দুপুরে ঘুম না এলে উল্টিয়ে যেকোনো পাতা খুলে দু-পাতা পড়া, কাহিনীর কিসসু মিল না থাকুক, যাই পড়েন না কেন সেটা ঠিক পড়তে ভালো লাগবে। মির্জা আর মান্টো বলে কথা।
Actual Rating 4.5 “Anyone can write history. All it needs is memory. But to write a story you must have the power to dream.”
This book is so famous in my country like I was seeing it on every bookshop which made me not to read it, Last year I saw it with one relative and opened it and after a few glances I knew I have to read it, So finally I did. It took me solid 5 days to finish it but it was worth it.
It is a story about a writer who found an old manuscript of Saadat Hussain Manto’s unpublished novel, which is in Urdu so he decided to learn the Urdu language. The novel of Manto’s novel is the communication between Saadat Hussain Manto and Mirza Asadullah Baig Khan aka Mirza Ghalib, in the grave.
Mirza Ghalib is considered as the last great poet of Mughal Era, his ghazals are still reading and singing by people in Indo-Pak.
Saadat Hussain Manto was an Indian-Pakistan writer, Manto was known to write about the hard truths of the society that no one dared to talk about, in other words, his stories were highly controversial and considered bold.
It is the first time I read a book which has the same style as in Urdu, or because it is about people I’ve been known for all of my life, the poetry we use in our daily conversation and studies in school/college.
“Their lives are like measuring tapes, and they want to trim the lives of other people to same measurements”
I loved the writing and the way both communicate with each other their style, use of all those local tellings, afsansa, poetries, and history. Ghalib was from Era of Mughals he watched the journey greatness of Culture to Sepoy of Mutiny when the Mughal Era was taking its last breath to the dark time where all that culture was on the edge of being banished from the world. How it affects the people what were the actions and emotions of people, How it changed Ghalib’s life from a Turkish descendent proud aristocrat to a poet who was just trying to save his and his family’s skin by selling his pen. It was really heartbreaking.
“I’m not the flowering of a song, nor the flow of melody I am the echo of the shattering sound of my defeat”
Manto, a unique and alcohol addicted struggling writer who falls in love with Bombay, watched partition and all the horrors, wrote controversial and bold stories which lead him to courts. How his family suffered because of him or how he suffered because of him.
“And by then I had understood that any ghazal that could not pierce your heart completely and instantly, like an arrow, had no value as a work of art.”
It is so hard to decide either Ghalib was more stubborn or Manto, but one thing is crystal clear both of these characters are too unique to find others like them.
মীর্জা গালিব আর মান্টো, বিশ্ব সাহিত্যের দুই অত্যাশ্চর্য ভাগ্যবিড়ম্বিত দিকপালদের নিয়ে এইভাবে উপন্যাস রচনা করার চিন্তা রবিশংকর বলের মাথায় কেমন করে এসেছিল কে জানে! এইভাবেও ভাবা যায়? এই ভাবেও জীবনীমূলক উপন্যাস রচনা করা যায়? অদ্ভুত রকমের ইউনিক। বইটা নেশা ধরানো, অনেকটা যে নেশা ধরায় গালিবের গজল বা মান্টোর ছোট গল্প। মান্টোর গল্প পড়তে গিয়ে যেমন নিজের ভেতরটা দেখে বারবার শিউরে উঠি তেমনি মান্টোকে নিয়ে পড়তে গিয়েও সৃষ্টি হয় এক অফুরন্ত হাহাকার! জীবন এইরকম করেই কেটে যায় এইসব ক্ষণজন্মা মনীষীদের। আর আমরা পাঠকেরা কেবল তাঁদের দূর থেকে অবলোকন করতে পারি, ছুঁতে পারি না। মীর্জা গালিবের গজল এর একেকটা লাইন যেন চোখে জল আর মুখে হাসি এনে দেয়। পড়ার অনুভূতি কেন যেন কলমে আসতে চায় না। মনে হয় প্রেমিক হৃদয়ের সমস্ত কথা ভদ্রলোক নিঙড়ে নিয়ে নিজে বলে চলে গেছেন। দুই মহারথীর সৃষ্টির সময়টাও কত অদ্ভুত! একজনের জীবনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কালো ছায়া তো অন্য জন দেখে গেছেন উপমহাদেশের ঘৃণ্যতম ঘটনা দেশভাগ। দুইজনের জীবনেই পারিপার্শ্বিক এর প্রভাব খুব বেশি, তাই দুজনেই ইতিহাসকে বুকে নিয়ে নিজেদেরকে শেষ করে গেছেন। আরেক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ইসমত চুঘতাই, মান্টোর উপযুক্ত বন্ধু বটে। কিংবা মান্টোই ইসমতের উপযুক্ত সাথী। দুজনে যা ঘটিয়ে গেছেন উর্দু সাহিত্যে আসলেই বিস্ময়কর। ওদিকে মীর্জার শেষ জীবন পড়লে মনটা খারাপ না হয়ে পারে না। এত গুণী লোকজনদের এমন পরিণতি কষ্ট দেয় ভীষণ, মনে হয় এঁদের তো আরো অনেক কিছু পাওনা ছিল জীবন থেকে। রবিশংকর বল সময়োচিত শব্দ ব্যবহারে এই দুই গুণী ব্যক্তির জীবনকে এক সমান্তরালে যেভাবে বয়ে নিয়ে গেছেন তা আসলে এত অভিনব যে পাঠকমাত্রই দোজখনামা পড়া উচিত বলে একটা মত দিয়ে দেয়া যায়। মান্টো আর গালিব যাদের পছন্দ, পরিবেশনের গুণে দোজখনামা তাদের পছন্দ হয়ে যাবেই। তীব্রতা তো তাদের হজম হয়ই, কারণ, মান্টোর সাহিত্যের তীব্রতা তো তাঁর জীবনকথায় থাকবেই। থাকবে মীর্জার অনন্ত দুঃখছোঁয়া প্রেমের প্রতিধ্বনি।
মান্টো আর গালিবের কথা আড়ি পেতে শুনে ফেললাম সব। আর তারপর আমি আর আগের মানুষটি রইলাম না। ভেবেছিলাম আমি সংবেদনশীল। কিন্তু দেখলাম আমি বেজায় স্পর্শকাতর। সারাক্ষণ হাসছিলাম, তবু একটা কান্নার চাদর আমাকে সর্বক্ষণ জড়িয়ে ধরেছিল। বইটা পড়ানোর জন্যে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের কাছে আমি ঋণী।
I was seeking to read something different , a book consists stories of many people . It doesn't matter if they are true or false , real or fake . I just wanted to read about people and their stories . Stories about life , death , love , hatred , yearnings , fears , in short , I was seeking a book capturing simple human emotions .
And eventually this seeker came through this marvellous piece of literature named as "Dozakhnama : Conversations In Hell" , written by Rabisankar Bal . When I read the blurb of this book I was completely astonished . The book is about conversations of two of the most celebrated names in the world of literature - Mirza Ghalib and Saadat Hassan Manto .
These two greats talk to each other from their graves about their lives . But these conversations are not only about their lives they are also about the people and people's lives they met during their lifetime . There exists a bond between Manto and Ghalib even they existed two completely different points of time . To be precise , they are mirror reflection of each other . The stories in the book blurs the line between reality and fiction as they are the stories about lives which no one has witnessed that they even existed or not . The question is that whether these stories are true or are just figments of either Manto's or Ghalib's imagination . In my opinion this is the best thing about the stories in this book . Even after reading this book I realised that there are countless people around us and so are the stories . Author Rabisankar Bal has done an excellent job in building these stories and has written them in a such a great manner that the reader will feel that Manto and Ghalib themselves are telling these stories .
It usually happens with a translated book that the translator fails to get the essence of the original language in which the book is written , but Arunava Sinha excelled his job . The translation was top-notch .
One of the greatest and the most beautiful reading experience of my life .
It has been quite a while since I completed reading Dozakhnama, and I have been struggling ever since. I was perplexed, I didn’t know how to put my thoughts into words. Now I feel like it’s time, so here goes the review. . .
Dozakhnama is a “Dastaan” inscribed by the devil’s quill. It is about a conversation between two literary masterminds, Sadat Hasan Manto and Mirza Asadullah Beg Khan Galib. Both are already dead by then, Manto lying in Lahore and Galib in Delhi, and they converse about their agonies, amalgamating with historical conditions.
Now, what is Dastaan? It is an Urdu word which implies “story” but definition in Urdu gives a connotative notion, which is, “Dastaan toh daastan’i hotein hain voh akelepaan mein jeetein hain, aur phir akelepaan mein maar jaate hain”. Denotatively translated, Dastaan is dastaan, they live in loneliness and then die in loneliness.
Why is it called Dastaan? Simple. The story has no ending at all. Galib was describing how Delhi was taken over by the Mughals and its preceding events. Manto was telling the stories of partition of Bengal. Both lying in different places barbed with wires share the same agony; the change of geography, how it affects people, what were the actions and emotions of people. The story of agony is always a never-ending tale.
Also, the word ‘Dozakh’ is a metaphor that in a way summarizes what their lives were like in reality. As a postcolonial literature it brings historical realities that we want to forget as a nightmare but unfortunately, we can’t get rid of it. Novelist meticulously preserved culture and literature (Urdu poetry, sheers and gazals), and it feels like we are delving into a story which is blended with a dream-like sequence, surrealism, rather than reading a piece of history.
Although this read will be bitterly slow as it unfolds stories after stories in between conversations, it might pressurize you to disembark the ride. Yet it’s a worthy read since it makes you question and provoke thoughts. It is a book for those who have thirst for knowledge and the essence will make you yearn for more.