What do you think?
Rate this book


135 pages, Hardcover
First published January 1, 1944
"মরণ তোমার হার হল যে মনের কাছে
ভাবলে যারে কেড়ে নিলে সে যে দেখি মনেই আছে
মনের মাঝে বসে আছে।
আমার মনের ভালোবাসার কদমতলা —-
চার যুগেতেই বাজায় বংশী আমার বংশীতলা।
বিরহের কোথায় পালা —
কিসের জ্বালা?
চিকন — কালা দিবস নিশি রাধার যাচে।"
"এই খেদ মোর মনে——-
ভালবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়— জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?"
'বসন্ত চলে গেল হায়
কালো-কোকিল আজি কেমনে গান গায়
বল — কেমনে থাকে হেথায়!
শুধু দস্তুরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল।
কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?
মোহন্ত হাসিয়া হাত তুলিয়া ইঙ্গিতে নিতাইকে বাধা দিলেন, বলিলেন- প্রভুর সংসারে নীচ কেউ নেই বাবা। নিজে, পরে নয়- নিজে নীচ হলে সেই ছোঁয়াচে পরে নীচ হয়। নীল চশমা চোখে দিয়েছ বাবা? সূর্যের আলো নীলবর্ণ দেখায়। তোমার চোখের চশমার রঙের মতো তোমার মনের ঘৃণা পরকে ঘৃণ্য করে তোলে।
রাত্রির শেষ প্রহর অদ্ভুত কাল। এই সময় দিনের সঞ্চিত উত্তাপ নিঃশেষে ক্ষয়িত হইয়া আসে, এবং সমস্ত উষ্ণতাকে চাপা দিয়া একটা রহস্যময় ঘন শীতলতা ধীরে ধীরে জাগিয়া ওঠে। সেই স্পর্শ ললাটে আসিয়া লাগে, চেতনা অভিভূত হইয়া পড়ে। ধীরসঞ্চারিত নৈঃশব্দ্যের মধ্য দিয়া একটা হিমরহস্য সমস্ত সৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, নিস্তরঙ্গ বায়ুস্তরের মধ্যে নিঃশব্দসঞ্চারিত ধূমপুঞ্জের মতো। মাটির বুকে মধ্যে, গাছের পাতায় থাকিয়া যে অসংখ্য কোটি কীট পতঙ্গ অবিরাম ধ্বনি তুলিয়া থাকে, তাহারা পর্যন্ত অভিভূত ও আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে রাত্রির এই শেষ প্রহরে। হতচেতন হইয়া এ সময় কিছুক্ষনের জন্য তাহারাও স্তব্ধ হয়। মাটির ভিতরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই হিম-স্পর্শ ছড়াইয়া পড়িতে চায়। জীব জীবনের চৈতন্যলোকেও সে প্রবেশ করিয়া সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলোকে অবশ করিয়া দেয়। আকাশে জ্যোতির্লোক হয় পাণ্ডুর; সে লোকেও যেন হিম-তমসার স্পর্শ লাগে। কেবল অগ্নিকোনে ���কধক করিয়া জ্বলে শুকতারা-অন্ধ রাত্রিদেবতার ললাটচক্ষুর মতো।
“কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?
কালো কেশে রাঙা কুসুম হেরেছ কি নয়নে?”
সে যে স্পষ্ট দেখিতেছে, ওই যেখানে রেলের লাইন দুইটি একটি বিন্দুতে মিলিয়া বাঁকিয়া চলিয়া গিয়াছে দক্ষিণ মুখে নদী পার হইয়া, সেইখানে মাথায় সোনার টোপর দেওয়া একটি কাশফুল হিলহিল করিয়া দুলিতেছে, আগাইয়া আসিতেছে যেন! সে আছে, আছে। এখানকার সমস্ত কিছুর সঙ্গে সে মিশিয়া আছে। এই কৃষ্ণচূড়ার গাছ। হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল - এইখানে বসন আসিয়া প্রথম শুইয়া বলিয়াছিল- "কই হে! ওস্তাদ না-ফোস্তাদ!" চকিতের মত মনেও হইল- বসনও যেন শুইয়া আছে! ঠাকুরঝি, বসন- দুইজনে যেন পাশাপাশি দাঁড়াইয়া আছে। মিশিয়া একাকার হইয়া যাইতেছে।
" ভালবাসিবে বলে ভালবাসি নে।
আমার স্বভাব এই , তোমা বই আর জানি নে।"
ভালবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এতো ছোট কেনে?
এ ভুবনে?"
