Jump to ratings and reviews
Rate this book

কবি

Rate this book
কবি প্রখ্যাত সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা সামাজিক উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৪৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। কবিয়াল, ঝুমুরদলসহ সেই সময়ের জীবনযাত্রার প্রেক্ষিতে এই বিখ্যাত উপন্যাসটি রচিত হয়েছে।

135 pages, Hardcover

First published January 1, 1944

137 people are currently reading
1904 people want to read

About the author

Tarashankar Bandyopadhyay

130 books286 followers
Tarashankar Bandyopadhyay (Bangla: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) was born at his ancestral home at Labhpur village in Birbhum district, Bengal Province, British India (now West Bengal, India). He wrote 65 novels, 53 story-books, 12 plays, 4 essay-books, 4 autobiographies and 2 travel stories. For his novel Arogyaniketan, he received the Rabindra Puraskar in 1955 and the Sahitya Akademi Award in 1956. In 1966, he received the Jnanpith Award for his novel গণদেবতা. He was honoured with the Padma Shri in 1962 and the Padma Bhushan in 1969.

Tarasankar is one of those writers of the third decades of the twentieth centuries who broke the poetic tradition in novels but took to writing prose with the world around them adding romance to human relationship breaking the indifference of the so called conservative people of the society who dare to call a spade a spade. Tarasankar’s novels, so to say, do not look back to the realism in rejection, but accepted it in a new way allowing the reader to breathe the truth of human relationship restricted so far by the conservative and hypocrisy of the then society.

He learned to see the world from various angles. He seldom rose above the matter soil and his Birbhum exists only in time and place. He had never been a worshipper of eternity. Tarasankar’s chief contribution to Bengal literature is that he dared writing unbiased. He wrote what he believed. He wrote what he observed.

His novels are rich in material and potentials. He preferred sensation to thought. He was ceaselessly productive and his novels are long, seemed unending and characters belonged to the various classes of people from zaminder down to pauper. Tarasankar experimented in his novels with the relationships, even so called illegal, of either sexes. He proved that sexual relation between man and women sometimes dominate to such an extent that it can take an upperhand over the prevailing laws and instructions of society. His novel ‘Radha’ can be set for an example in this context.

His historical novel ‘Ganna Begum’ is an attempt worth mentioning for its traditional values. Tarasankar ventured into all walks of Bengali life and it’s experience with the happenings of socio-political milieu. Tarasankar will be remembered for his potential to work with the vast panorama of life where life is observed with care and the judgment is offered to the reader. and long ones, then any other author. He is a region novelist, his country being the same Birbhum. He mainly flourished during the war years, having produced in that period a large number of novels and short stories.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1,510 (58%)
4 stars
783 (30%)
3 stars
221 (8%)
2 stars
38 (1%)
1 star
18 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 322 reviews
Profile Image for Shafaat.
93 reviews113 followers
August 7, 2014
অনুভূতিরা কোথায় জন্ম নেয়? নাটক,সিনেমা,রকস্টারের কনসার্টে? প্রেমিক-প্রেমিকার আলিঙ্গনে? হয়তো। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অনুভূতিরা মনে হয় জন্মায় বইয়ের পাতায়। সাদা কালো লাল নীল ধূসর আর নাম না জানা কত অজানা রঙের অনুভূতি যে বইয়ের অক্ষর থেকে উঠে এসে মগজে আঘাত করে,এই পৃথিবীর ভাষায় তাদের সবার নাম দেয়াও সম্ভব নয়। এই পৃথিবীতে তারা জন্মায় না।

মানুষের মনে হয় অনেক রকম দুঃখ হয়। একরকম দুঃখ আছে,যেটা মানুষকে দুঃখবিলাসের আনন্দ দেয়। মানুষ এক মুভি বার বার দেখে,এক বই বার বার পড়ে দুঃখ পায়। দুঃখ পেয়ে কাঁদে । কেঁদে আনন্দ পায়। এ তাদের দুঃখ আনন্দ মেশানো কান্না। দুঃখের জন্য কান্না। দুঃখকে অনুভব করতে পারার আনন্দ।

আমার ব্রেনে অন্য পৃথিবীর এক দুঃখের জন্ম হয়েছিল তারাশংকরের 'কবি' পড়ার পর। বইটা পড়ার পর কয়েকদিন যে ভয়াবহ বিষাদের অনুভূতি আমার পৃথিবী নীল করে রেখেছিল, আজকেও সেই কথা মনে পড়লে মন খারাপ হয়ে যায়। এই বিষাদ চোখে কান্না আনে না,কান্নাকাটিকে সিরিয়াস ধরনের ফাইজলামি মনে হয়। এই বিষাদ নিয়ে নিয়ে দুঃখবিলাস করা যায় না,সে এতো সস্তা না । ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার মত এই বিষাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। হে বিষাদ,তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও।

এখনো নীলক্ষেতে গেলে ফুটপাতের এক পাশে তারাশংকরের সমগ্র চোখে পড়ে। আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বইটার দিকে তাকিয়ে থাকি। দাম জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থমকে যাই,সাহস হয় না। তারপর সামনের দিকে হাঁটা দেই।

ক্ষমা কর গুরু। তোমার একটা বইয়ের ভারই আমার কাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
February 2, 2022
ঝমঝম শব্দে ট্রেন চলিতেছে। সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিও নামিয়াছে। মধ্যে মধ্যে মেঘের উপর ঘনাইয়া আসিতেছে সন্ধ্যাবেলার কাজলদীঘির জলের রঙের মতো রঙ- যতবার এই জায়গাটা পড়ি, নিজেকে নিতাইয়ের জায়গায় কল্পনা করি। ইচ্ছে আছে বিদেশ যাব। তখন কি এভাবে মায়ের কাছে ফিরতে ইচ্ছে করবে?
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
April 7, 2024
কবি উপন্যাস শুধু নিতাই, বসন, ঠাকুরঝির সাথে মিলে মিশে একাকার হয়নি। হয়েছে আমার জীবনের সাথেও।

বাচ্চাকালে বাংলা ব্যাকরনের মাত্র একটা রচনা পড়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পার করেছি তা হলো ❝ সময়ের মূল্য ❞। যদিও অতদিন পর্যন্ত শুধু রচনা টাই কাজে লেগেছিল কিন্তু পড়েছিলাম মনে হয় চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেনীতে। আর যতবার পড়েছি, যতবার লিখেছি, শিক্ষক জীবনে এসে যতবার পড়িয়েছি সব সময় একটা বাক্য যুক্ত করতাম।

তারাশঙ্করের কবি উপন্যাসে নিতাই এর মত বলতেই হয় ❝ জীবন এত ছোট কেন? ❞

না তারাশঙ্কর সম্পর্কে তখন জানা হয়েছে, না কবি সম্পর্কে। কিন্তু ❝ জীবন এত ছোট কেন ❞ এই বাক্যের প্রতি যে ফ্যাসিনেশন তা কখনো কমে নি৷ শিশুকাল থেলে যৌবন পর্যন্ত জীবনের পরতে পরতে আমিও নিতাই এর মত জিজ্ঞাসা করেই গেছি জীবন এত ছোট কেন?

ইচ্ছা ছিল পূর্নাঙ্গ কথোপকথন তুলে দেওয়ার যেখানে থেকে জন্ম এই লাইফ ডিফাইনিং লাইনের।


“এই খেদ আমার মনে মনে ।
ভালবেসে মিটল না আশ—কুলাল না এ জীবনে
হায়, জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?”


মুহূর্তে একটা কাণ্ড ঘটিয়া গেল। বসন্ত স্থির দৃষ্টিতে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া গান শুনিতেছিল । গানটা শুনিয়া সে যেন পাথর হইয়া গেল ।
নিতাই সচকিত হইয়া প্রশ্ন করিল—বসন! কী হল বসন? বসন!
ধীরে ধীরে দুই চোখের কোণে হইতে দুইটি জলের ধারা গড়াইয়া আসিল বসনের ।
সে বলিল—এ গান তুমি কেনে লিখলে কবিয়াল? –কেনে বসন? ক্লান্ত বিষণ্ণ কণ্ঠে সে বলিল-আমি তো এখন ভাল আছি কবিয়াল—তবে তুমি কেনে লিখলে, কেনে তোমার মনে হল জীবন এত ছোট কেনে?

অকারণে নিতাইয়ের বুকটা ধড়াস করিয়া উঠিল।


আরেকটি প্রিয় যায়গা হবুহু বই থেকে তুলে দিচ্ছি৷ সত্যি বলতে এ তো রিভিউ না, নিজের এত প্রিয়, নিজের জীবনের সাথে মিশে যাওয়া একটা বই নিয়ে লিখছি। না রিভিউ, না পাঠপ্রতিক্রিয়া।

কিছুক্ষণ পরে মুখ ফুটিয়াই বলিল—আর বাঁচব না।

তারপর হঠাৎ বলিয়া উঠিল—আমি জানতাম কবিয়াল। যেদিন সেই গান তোমার মনে এসেছে—সেই দিনই জেনেছি আমি
—কোন্ গান বসন?
—জীবন এত ছোট কেনে—হায় !
ঝরঝর করিয়া সে কাঁদিয়া ফেলিল ।

❝ভালবেসে মিটল না আশ, কুলাল না এ জীবনে ।
হায়! জীবন এত ছোট কেনে,
এ ভুবনে?❞

Profile Image for Akash.
446 reviews150 followers
February 17, 2023
আমি জন্ম রোমান্টিক। শবনমের পর আমার প্রিয় প্রেমের উপন্যাস 'কবি'। রোমান্টিক উপন্যাস আমার উত্তপ্ত মনকে শীতল করে। এ জীবনে যতগুলো রোমান্টিক উপন্যাস পড়েছি সবগুলো আমায় অসহ্য শান্তি দিয়েছে।

'সোনালী দুঃখ, শবনম্‌, কাগজের বউ, শেষের কবিতা, শেষ বিকেলের মেয়ে, কপালকুন্ডলা, কবি' এ সাতটি রোমান্টিক উপন্যাস যেন আমার জীবনে রংধনুর সাত রং, নীল আকাশের সাত সাতটি ধ্রুবতারা, মহাবিশ্বের সপ্তাচার্য, সাতটি মহাদেশ-সমুদ্র, আমার মনের সাত আকাশ।


"মরণ তোমার হার হল যে মনের কাছে

ভাবলে যারে কেড়ে নিলে সে যে দেখি মনেই আছে

মনের মাঝে বসে আছে।

আমার মনের ভালোবাসার কদমতলা —-

চার যুগেতেই বাজায় বংশী আমার বংশীতলা।

বিরহের কোথায় পালা —

কিসের জ্বালা?

চিকন — কালা দিবস নিশি রাধার যাচে।"


কৃঞ্চচূড়া গাছের তলায় বসে যেখানে রেলের লাইন দু'টি এক বিন্দুতে মিলে যেয়ে স্বর্ণকেশী কাশফুল (ঠাকুরঝি) হয়েছে, সেই কাশফুলের জন্য নিতাই হয়ে অপেক্ষা করছি, কবিতা রচনা করছি—

"এই খেদ মোর মনে——-

ভালবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে!

হায়— জীবন এত ছোট কেনে?

এ ভুবনে?"


আর বসন্‌ (বসন্ত) এর জন্য আমার মন কেমন করছে। চোখের অশ্রু ঝড়ে সাত সাগর-তেরো নদী হয়ে গেছে। সেই জলে
সবাই ভেসে যাবে। ভেসে থাকতে পারবে না কেউ, ডুবে যাবে সবাই।

'বসন্ত চলে গেল হায়

কালো-কোকিল আজি কেমনে গান গায়

বল — কেমনে থাকে হেথায়!


যুক্তির খেলায় পরাজিত ছেলে আবেগের সাগরে ভাসে। আমার কাছে জ্ঞানের চেয়ে প্রেম-ভালোবাসার শক্তি বেশি বলে মনে হয়। প্রেম-ভালোবাসা ও তো একপ্রকার জ্ঞান।
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
373 reviews274 followers
February 24, 2015
আহ মরণ!! এই শূন্যতা আমার না। এই বিষাদ ও যে আমার না। আমি কেন তাহলে এই ভার বইবো??? নাকি এই শূন্যতা আমারও? এই বিষাদ আমারও?? তাহলে কেন তাকে ধরা ছোঁয়া যায় না? আমার হলে তো তাকে হাতের মুঠোয় পেতাম। চোখের তারায় পেতাম। আর আমার না হলেও বা দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে না কেন? আমাকে আঁকড়ে ধরে আছে কেন? ছাড়ে না কেন আমাকে...
Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
June 20, 2023
ক্লাস ইলেভেন কিংবা টুয়েলভে পড়ার সময় "কবি" পড়ে কেঁদেছিলাম। এবারে ভালো লাগলো না ক্যানো? আমি কি সিনিক হয়ে গেছি?

বর্ধমান জেলার যে-গ্রামটিতে গল্পের সূচনা হয়— "অট্টহাস" — এই তো গত শীতে সেই গ্রামের মন্দিরে ঘুরে এলাম (মূলত দুপুরের অসাধারণ ভোগ প্রসাদ খাওয়ার লোভে)। ২০২১-এর শীতেও গেছিলাম। খুব মনোরম একটা গ্রাম। বললে বিশ্বাস হবে কিনা জানিনা, এই উপন্যাসটা লেখার পরে কতো বছর কেটে গেছে, গ্রামটা কিন্তু এখনও প্রায় চোদ্দো আনা একইরকম রয়ে গেছে। অন্তত কাহিনির স্থানিক বিবরণ পড়ে যতটুকু আন্দাজ করা যায়। আরো যে সমস্ত জায়গার বিবরণ আছে, কাটোয়া, অগ্রদ্বীপ— এই জায়গাগুলো আমার বাড়ি থেকে খুব কাছে। আমি এই জায়গাগুলোর বর্ণনা আরো একটু আন্তরিকভাবে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, প্রেক্ষাপট এবং পরিবেশ নির্মাণ বাদ দিয়ে সারাক্ষণ ইমোশনের জাল বুনতে ব্যস্ত রইলেন তারাশঙ্কর।

এবং এই ইমোশনও আমার কাছে পাকা ইমোশন বলে মনে হয়নি। একরকম হাসির গল্প আছে, সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানো হয়। এই উপন্যাসে চিমটি কেটে চোখ দিয়ে জল বের করার বন্দোবস্ত করেছেন লেখক। আমি কি এখনও ইলেভেনে পড়ি নাকি?

উপন্যাসের একটা চরিত্রকেও আমার স্বাভাবিক মানুষ বলে মনে হয়নি। সারাক্ষণ এই প্রেম প্রেম ভালোবাসা ভালোবাসা নিয়ে প্যানপ্যানানি আর ভালো লাগেনা। আবার পাশাপাশি বউকে ঠ্যাঙানোর বৃত্তান্ত এমনভাবে লেখা হয়েছে যেন ব্যাপারটা নেহাতই জলভাত। তারাশঙ্করকে এতোটা ইন্সেন্সিটিভ হতে আমি আর কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। উপন্যাসের শেষের দিকে জীবন এতো ছোট কেনে ছোট কেনে ছোট কেনে করে মাথা খেয়ে নিয়েছে! জীবন যখন এতোই ছোটো, তাহলে অকারণে ঢং দেখিয়ে সেই মেয়েটাকে ছেড়ে এলে ক্যানো বাপু, যে তোমাকে সত্যিকারের ভালোবাসে? এইরকম ন্যাকাচরণ পুরুষমানুষ আমার সহ্য হয়না। (তাই বলে আবার বাইনারি নিয়মে এই চিন্তা করে বসবেন না যে পুরুষ বলতে আমি শুধুই "দিওয়ার" সিনেমার অমিতাভ বচ্চনকে বুঝি!)

বাংলার লৌকিক সমাজ ও লৌকিক সংস্কৃতির অভিজ্ঞান তারাশঙ্করের অন্যান্য লেখায় যতটা বাস্তবসম্মতভাবে প্রকাশ পেয়েছে, এই উপন্যাসে সেটা পায়নি। বরং বলা যেতে পারে বিকৃতভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ঝুমুর-এর মতো প্রাচীন এবং ঐতিহ্যশালী একটা সংগীতশৈলীর চর্চাকারীদের এই উপন্যাসে ভ্রাম্যমাণ দেহপসারিনী হিসেবে দেখানো হয়েছে। তারাশঙ্কর নিজে রাঢ় বাংলার মানুষ ছিলেন। তিনি কীভাবে ঝুমুর শিল্পীদের এভাবে অসম্মান করতে পারলেন তাঁর উপন্যাসে? পাঠককে রসগোল্লার চ্যাটচ্যাটে রসমাখানো অবাস্তব "লাভ স্টোরি" গেলানোর চক্করে এটা না করলেই হতো না?

সবমিলিয়ে হতাশ হয়েছি। ঔপন্যাসিকের হঠকারিতায় এবং চরিত্রদের আদিখ্যেতায়— দুইভাবেই হতাশ হয়েছি। আমি কি সিনিক হয়ে গেছি? ঝুমুর গায়িকা মদ খেয়ে একটার পর একটা কাস্টমারের কাছে নিজের দেহ বিক্রি করছে, আর ঠিক সেইসময় গায়িকার দরদিয়া প্রেমিকটি নির্বিকার চিত্তে গাছের তলায় বসে কবিগান বাঁধছে, এইসব দেখলে সিনিক হবো না তো কী হবো?
Profile Image for Pranta Dastider.
Author 18 books329 followers
December 31, 2016
শুধু দস্তুরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল।


প্রথম দুই লাইনেই আটকে গেলাম গল্পের সঙ্গে। একটু দূর যাবার পরেই বুঝলাম, এ কাহিনী এক ডোমবংশজাত(যারা মরা পোড়ায়) ছেলের কাহিনী, তার তিনকুলে চোর, চিটিংবাজ, খুনি আর দস্যু ছাড়া কোনও আত্মীয় নেই। সেই ছেলের কবি হয়ে যাওয়া রীতিমত অঘটনই বটে! মুখে হাসি টানলাম- নাহ একটা মজার গল্প পড়তে যাচ্ছি বোধহয়। গ্যাঁট হয়ে বসে শুরু করলাম বই। কিন্তু হাসি কই? যতই এগিয়ে চললাম বইয়ের পাতায় মুখের হাসিটা ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে এল, ধীরে ধীরে তা বদলে গেল বিষাদের ছায়ায়। তারপর অশ্রুধারা চোখ থেকে মুক্তি পাবার জন্য ক্রমাগত আঁকুপাঁকু করল, ঠোঁট কাঁপল, দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বুক চিরে। নাহ এই গল্প সুখের নয়। তবে কি অপ্রাপ্তির? কিছুটা হয়তো, কিন্তু প্রাপ্তিরও। দুঃখের? অবশ্যই। তবে সোজাসুজি বলতে গেলে এই গল্প অসামান্য জীবনবোধের, শিল্প সত্ত্বার জাগরণের, প্রেমের, বিরহের, অসহায় পরিস্থিতির এবং নিজেকে আবিষ্কারের।

শুরু থেকে শেষ অবধি দেখা গেছে গল্পের মূল চরিত্র নিতাইয়ের আত্ম-অনুধাবনের দৃশ্য। এক একটি কবিতা তার মনে বাসা বেঁধেছে এক একটি প্রেক্ষাপট কেন্দ্র করে। কখনও তার কাব্যের প্রেরণা প্রথম প্রেম ঠাকুরঝি, কখনও প্রকৃতি, কখনওবা চঞ্চলা-লাস্যময়ী বসন্ত, কখনও অপমান, কখনও বিয়োগ জ্বালা। তবুও প্রতিটি উৎস থেকে স্রোতের মতো কাব্য এসে ভরিয়ে দিয়েছে তার মনপুকুর। দরাজ গলায় সাজিয়েছে সুরের সম্ভার।

কাব্যের মধ্যে দিয়ে সত্যভাষণ উঠে এসেছে অকপটে-
কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?


সত্যিই তো! আমরা কালো ত্বক দেখলে বিরূপ হই, কিন্তু আবার সেই কালো চুলের ভিড়েই খুঁজে নিতে চাই নারীর সৌন্দর্য। গ্রীষ্মের দাবদাহে জর্জরিত হয়ে কালো মেঘ না দেখলে বরং শঙ্কিত হই। তবে কি কালো সত্যিই খারাপ? না। পৃথিবীতে ভাল-মন্দ, খারাপ-সঠিকের বিষয়গুলো বড় আপেক্ষিক, পরিস্থিতি সাপেক্ষে পরিবর্তনশীল। সেজন্যই দেহোপজীবিনীকেও মন্দ বলে তুচ্ছ করা উচিৎ নয়, শিল্পীসত্ত্বা নিতান্ত অংকুরে থাকলেও তাকে কপিবর(হনুমান) বলে উপহাস করা অন্যায়। গল্পের বিচারবোধ অন্তত সেকথাই বলে। লেখকের ভাষায়-
মোহন্ত হাসিয়া হাত তুলিয়া ইঙ্গিতে নিতাইকে বাধা দিলেন, বলিলেন- প্রভুর সংসারে নীচ কেউ নেই বাবা। নিজে, পরে নয়- নিজে নীচ হলে সেই ছোঁয়াচে পরে নীচ হয়। নীল চশমা চোখে দিয়েছ বাবা? সূর্যের আলো নীলবর্ণ দেখায়। তোমার চোখের চশমার রঙের মতো তোমার মনের ঘৃণা পরকে ঘৃণ্য করে তোলে।


সত্যিই তাই। আমাদের মনের আঁধার অপরের নোংরাটুকু কেবল চোখের সামনে সাজিয়ে ধরে। তখন আর উৎকৃষ্ট কাজগুলো দেখা যায় না, বরং কেবল নিকৃস্ততর ভূমিকার জন্যই তাকে ঘৃণা হয়। এই ঘৃণা ত্যাগ করা সহজ নয়। যারা ত্যাগ করতে পারে কেবল তারাই পেতে পারে মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠতর আসন। গল্পের প্রধান চরিত্র নিতাই সেই আসন স্পর্শ করেছে নিজের সুরে, কাজে, কথায় এবং দৃষ্টি ভঙ্গীতে।

গল্পে দেখা গিয়েছে রাজার মতো স্নেহশীল বন্ধু, যে নিতাইয়ের পাশে থেকেছে নিরন্তর। পৃথিবীতে এমন বন্ধু না থাকলে জীবনের পথে চলা বড় কঠিন হয়ে যায়। এই বন্ধুত্ব এমনই যে মুখরা স্ত্রীর শত কটুকথাতেও তা টলে না। অযাচিত অপবাদেও তা ম্লান হয় না। বরাবর দৃঢ়, স্পষ্ট থাকে।

লেখক তারাশঙ্কররের প্রকৃতি, পরিবেশ ও পরিস্থিতির বর্ণনাও অনবদ্য। সে হোক ঠাকুরঝির ঘটিতে করে গরুর দুধ নিয়ে আসার মুহূর্ত, কিংবা মেলার বিবরণ, কিংবা পালা গানের আসর অথবা শ্মশানঘাট, মাঠ, কিংবা অচেনা পথ-প্রান্তর। অথবা নিছক দিনের কোনও সময়ের বর্ণনা। উদাহরণ স্বরূপ-
রাত্রির শেষ প্রহর অদ্ভুত কাল। এই সময় দিনের সঞ্চিত উত্তাপ নিঃশেষে ক্ষয়িত হইয়া আসে, এবং সমস্ত উষ্ণতাকে চাপা দিয়া একটা রহস্যময় ঘন শীতলতা ধীরে ধীরে জাগিয়া ওঠে। সেই স্পর্শ ললাটে আসিয়া লাগে, চেতনা অভিভূত হইয়া পড়ে। ধীরসঞ্চারিত নৈঃশব্দ্যের মধ্য দিয়া একটা হিমরহস্য সমস্ত সৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, নিস্তরঙ্গ বায়ুস্তরের মধ্যে নিঃশব্দসঞ্চারিত ধূমপুঞ্জের মতো। মাটির বুকে মধ্যে, গাছের পাতায় থাকিয়া যে অসংখ্য কোটি কীট পতঙ্গ অবিরাম ধ্বনি তুলিয়া থাকে, তাহারা পর্যন্ত অভিভূত ও আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে রাত্রির এই শেষ প্রহরে। হতচেতন হইয়া এ সময় কিছুক্ষনের জন্য তাহারাও স্তব্ধ হয়। মাটির ভিতরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই হিম-স্পর্শ ছড়াইয়া পড়িতে চায়। জীব জীবনের চৈতন্যলোকেও সে প্রবেশ করিয়া সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলোকে অবশ করিয়া দেয়। আকাশে জ্যোতির্লোক হয় পাণ্ডুর; সে লোকেও যেন হিম-তমসার স্পর্শ লাগে। কেবল অগ্নিকোনে ���কধক করিয়া জ্বলে শুকতারা-অন্ধ রাত্রিদেবতার ললাটচক্ষুর মতো।


অসাধারণ, অনন্য, অনবদ্য। সত্যিই, এই না হলে সাহিত্যরস? এই না হলে একটি বই পড়ার আনন্দ? এই প্রকৃত সাহিত্য। যে সাহিত্যকে আমরা প্রায়শই নিজেদের অজ্ঞানতাবশত অবজ্ঞা করি, সাধু ভাষা বলে এড়িয়ে চলি, অতি কথন বলে উপেক্ষা করি, অহেতুক একটি ছোট বাক্যকে পেঁচিয়ে বলা হয়েছে দাবি তুলে প্রশ্নবিদ্ধ করি। আমরা আসলে ভুলে গেছি বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত রূপ ও রসের স্বাদ; তাই, বোতলে ভরা প্রিজারভেটিভ দিয়ে কোনওক্রমে বাঁচিয়ে রাখা কমলার রস খেতেই বেশি ভাল লাগে, প্রকৃত ফলটি দেখলে খোসা ছাড়িয়ে এক একটি কোয়া খাবার ব্যাপারটা অহেতুক পরিশ্রম বলে অনীহা জাগে মনে।

অনেক কিছুই লিখলাম "কবি" সম্পর্কে, কিন্তু কিছুই লেখা হল না। সবটা লিখে ফেললে আত্মআবিষ্কারের আনন্দটুকু হারিয়ে ফেলবে বইটির নতুন পাঠক। তাই বর্ণনার লাগাম টানলাম। শুধু বলি, বইটি নিতাই কবিয়ালের। তৎকালীন কবিগান এবং তা উপজীব্য করে কবি হতে ইচ্ছুক এক যুবকের সংগ্রামকে ভিত্ত করে আবর্তিত। যেখানে তার প্রেমের বিষয়গুলোও কবিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ, কেন না কবির চরিত্র নির্মাণে সমস্তই সহায়ক। তৎকালীন সমাজের খাপখোলা চিত্রও দেখতে পেয়েছি স্পষ্ট। এক কথায়, এই উপন্যাস একটি জীবন্ত দীর্ঘশ্বাস। বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি, "কবি", যা একবার নয় বহুবার পড়া যায়, এবং প্রতিবারেই নিত্যনতুন আবিষ্কারের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব।
Profile Image for Shimin Mushsharat.
Author 1 book369 followers
March 5, 2022
'এ আকাশে যে চাঁদ ডোবে─সে চাঁদ কি সেখানকার আকাশে উঠে? এ ভুবনে যে ফুলটি ঝরিয়া পড়ে, সে ফুল কি সে ভুবনে─পারিজাত হইয়া ফুটিয়া উঠে?'
Profile Image for Mahbuba Sinthia.
133 reviews97 followers
July 20, 2021
“কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?
কালো কেশে রাঙা কুসুম হেরেছ কি নয়নে?”
Profile Image for Abu Rayhan Rathi.
108 reviews
January 17, 2021
অসাধারণ একটা বই,যাকে বলে সুপাঠ্য।যখনই পড়া শুরু করেছি, তখনই একটা ঘোরের মধ্যে ডুবে গিয়েছি।আবার বসন্তের পরিণতির জন্যেও মনটা বিষাদে ভরে উঠেছে।
Profile Image for Shakil Mahmud.
90 reviews40 followers
June 23, 2021
সে যে স্পষ্ট দেখিতেছে, ওই যেখানে রেলের লাইন দুইটি একটি বিন্দুতে মিলিয়া বাঁকিয়া চলিয়া গিয়াছে দক্ষিণ মুখে নদী পার হইয়া, সেইখানে মাথায় সোনার টোপর দেওয়া একটি কাশফুল হিলহিল করিয়া দুলিতেছে, আগাইয়া আসিতেছে যেন! সে আছে, আছে। এখানকার সমস্ত কিছুর সঙ্গে সে মিশিয়া আছে। এই কৃষ্ণচূড়ার গাছ। হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল - এইখানে বসন আসিয়া প্রথম শুইয়া বলিয়াছিল- "কই হে! ওস্তাদ না-ফোস্তাদ!" চকিতের মত মনেও হইল- বসনও যেন শুইয়া আছে! ঠাকুরঝি, বসন- দুইজনে যেন পাশাপাশি দাঁড়াইয়া আছে। মিশিয়া একাকার হইয়া যাইতেছে।

বিশেষ কিছু ব্যাক্তিগত কারণে কিছুদিন যাবত আমি এমনিতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তার উপর এই বইয়ের পাতা থেকে জলজ্যান্ত খুনী ট্রাকের মতো উঠে আসা এমন মর্মান্তিক অন্ধকারের ধাক্কা! অসহ্য! এমন মায়ামাখা সারি সারি পাহাড়ের মতো বিষাদের গল্প অনেকদিন হলো পড়িনি। এমন বিক্ষিপ্ত অবসাদে আমি অনেকদিন হলো ভুগিনি। মন পরিণত হয়েছে লক্ষ বছর ধরে পাহাড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে রূপান্তরিত হওয়া পাললিক শিলায়। নিজের মনের বিষাদের দুর্গে আমি নিজেই অন্তরীণ। নিজের কাছ থেকে নিজের মুক্তি চাই আমার - কবিয়াল নিতাই যেভাবে মুক্তি খুঁজতে বেরিয়ে গিয়েছিল একদিন - ঠিক সেইভাবে। কোথায় গেলে বলো মিলবে এমন মুক্তি?
Profile Image for Blind Alley.
8 reviews36 followers
February 5, 2021
ঠাকুরঝি, বসন না নিতাই? কে বেশি দুর্ভাগা?
Profile Image for অ্যালেন সাইফুল.
Author 2 books19 followers
November 2, 2017
"এই খেদ আমার মনে-
ভালোবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?"

পৃথিবীটা যেখানে ভালোবাসাহীন, রুক্ষ হয়ে উঠছে দিনদিন- সেখানে ভালোবেসে সাধ মিটছে না কারো কারো!?

আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। প্রতিদিন ভাবি, তাকে নিয়ে এটা করবো- ওটা করবো! কিন্তু হায়! একদিনও ভাবিনি, জীবন খুব ছোট। এই ছোট জীবনে তার মত এত চমৎকার একজনকে ভালোবেসে সাধ মেটা তো অসম্ভব। তাহলে কী হবে!? আক্ষেপ নিয়ে মরতে হবে? হ্যাঁ, আক্ষেপ নিয়ে মরতে হবে। ভীষণ আক্ষেপ নিয়ে আমাকে মরতে হবে।

বইটা শেষ করেছি প্রায় ৬ দিন হয়েছে। হ্যাঁ, ৬ দিন। ৬ টা দিনই আমি এক নীল রঙা পৃথিবীতে বাস করেছি। যেখানে বিষাদ ছাড়া আর কিছুই নেই।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে যাচ্ছি- আমার নিতাই কে মনে পড়ছে। বেচারা না জানি কতখানি আক্ষেপ নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে আছে। কী করছে ও এখন? সেই রেললাইনের ধারে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে আছে? নাকি গান তৈরি করছে ঠাকুরঝিকে নিয়ে? নাকি বাসন্ত? কাকে ওর বেশি মনে পড়ছে?

দুপুরে খেতে বসছি- ঠাকুরঝিকে মনে পড়ছে। নিতাই চলে যাবার পরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অতগুলো বিষাদী বিকেল কী করে পার করেছে এই মেয়েটা? সে কি নিতাইকে দেখতে নিজের অজান্তে ছুটে যায়নি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে? গ্রামে দুধ বিক্রি করতে যাবার সময় ভুল করে এক মগ দুধ নিয়ে যায়নি নিতাইয়ের ঘরের দিকে? রাতে বিছানায় যাবার আগে আয়নার সামনে বসে নিজেকে সাজায়নি নিতাইয়ের জন্য?

বিকেলে চা খাচ্ছি- বসন্তের কথা মনে পড়ছে। এই মেয়েটা জীবনের শেষদিকে এসে যে ভালোবাসাটুকু পেয়েছিলো তা সে কী করে ভুলবে!? মৃত্যু এত নিষ্ঠুর ক্যানো? মানুষের সকল স্বপ্ন কেড়ে নেয় ক্যানো?

এসবের উত্তর নেই। সবকিছুর উত্তর জানতে নেই। আমি বরং তারচেয়ে বিষাদে ডুবে থাকি।
প্রিয় তারাশঙ্কর, এতটা বিষাদী গল্প লিখতে নেই- যাতে দ্বিতীয়বার পড়ে দ্যাখার সাহস হারিয়ে ফেলি।
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
November 28, 2023
মানুষ! বড় অদ্ভুত সৃষ্টি। পৃথিবীতে এই একটি মাত্র জাতি যারা নিজের জ্ঞাতি গোষ্ঠীর স্বভাবের ঊর্ধে যেতে পারে।কিন্তু মানুষ বোধহয় মায়া আর ভালোবাসাটা উপেক্ষা করতে পারে না। ঘুরে ফিরে মানুষ মায়া-মমতা আর ভালোবাসার পিছনেই ছোটে আর শেষে আবার তার প্রত্যাবর্তন।
" ভালবাসিবে বলে ভালবাসি নে।
আমার স্বভাব এই , তোমা বই আর জানি নে।"

নিতাই নিজের ডোম পরিবারের ঊর্ধে গিয়ে হয়ে ওঠে কবিয়াল। একাকী জীবনে দরদ মাখা কৃষ বসনা ঠাকুরঝির মমতা ফেরাতে পারে নি তাকে। আদতে মানুষের চোখ ঘৃণা লুকাতে পারলেও ভালোবাসা লুকাতে পারে না। বোধ করি তাই ঠাকুরঝির মমতা মাখা সলজ্জ অবনমিত চোখের ভাষাও জানান দিয়েছিল নিতাইয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা।কিন্তু তা কি আর সম্ভব! এই মায়ার টান ছিন্ন করার চেষ্টায় নিতাইয়ের জীবনে বসন্তের আগমন ঘটে।
কিন্তু ঐ যে -
ভালবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এতো ছোট কেনে?
এ ভুবনে?"

এই কবি পড়তে গিয়ে যে অনুভূতি হলো! একটা চাপা বেদনা মনের ভেতর আটকা পড়ে গেল!
আবার যখন প্রিয় জায়গাটায় যাবো কেমন লাগবে জানি না!কিন্তু প্রিয় কৃষ্ণচূড়া গাছে চোখ পড়তেই মনে হবে,''ঐ তো কবি'র সেই কৃষ্ণ বর্ণের মেয়েটি বুকভরা মায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার রুক্ষ কালো চুলে লাল কৃষ্ণচূড়া পরিপূর্ণ গৌরবে আকাশের তারার মত জ্বলছে!''
আহারে কি মায়া !!
Profile Image for Jahid Hasan.
135 reviews160 followers
November 7, 2016
কবি উপন্যাসের পাতা উল্টাতে উল্টাতে আমার বারবার একজন প্রাচীন প্রসিদ্ধ কবিয়ালের কথা মনে পড়ছিল। কবিয়াল অ্যান্টনী ফিরিঙ্গী।
প্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জী তাঁর "জাতিস্মর" সিনেমাটিতে সেই প্রাচীন কবিকে তুলে এনেছিলেন। আগ্রহীরা সিনেমাটি দেখতে পারেন। কবিগান সম্মন্ধে বেশ ধারণা পাওয়া যাবে।
বইয়ের এক পর‍্যায়ে দেখা গেল গল্পের নায়ক নিতাই প্রাচীন কবিয়ালগণের লেখা সংগ্রহ করে ফেলেছেন। মজার ব্যাপার হলো, এর ভেতর অ্যান্টনী ফিরিঙ্গীর নামেরও উল্লেখ আছে।

লেখক তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় ছেলেবেলা থেকেই কবিতা লিখতেন। তাই একজন কবির জীবনে কবিতার আবির্ভাবের বিষয়টি তিনি নিপুণভাবেই এখানে তুলে ধরেছেন।

"জীবনে যা মিটল নাকো মিটবে কি তা মরণে?
হায়-- জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভূবনে?"

একজন শক্তিশালী কবিয়ালের এই অভূতপূর্ব উচ্চারণ আশা করি চিরকাল মানুষের স্মরণে থাকবে।
Profile Image for Moumita Hride.
108 reviews65 followers
June 30, 2016
কাহিনী তেমিন জটিল না... আমার কাছে লেখকের জীবনবোধের উপলব্ধি টা ভালো লেগেছে! আর কিছু কিছু লাইন আসলেই কোট করার মত। :)

যদিও, সাধু ভাষা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে :/
Profile Image for Shakirul Khan.
53 reviews9 followers
March 3, 2022
"হায়- জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?"

এই বই এত সুন্দর কেনে? ❤️
Profile Image for Zahidul.
450 reviews93 followers
January 27, 2022
এই খেদ মোর মনে
ভালবেসে মিটল না আশ- কুলাল না এ জীবনে।
হায়, জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?”

গভীর জীবনবোধের এক বই, খুবই ভালো লাগলো পড়ে।
Profile Image for Ashkin Ayub.
464 reviews228 followers
August 27, 2022



আজিব এক অদৃশ অলীক ঘ্রাণে বুদঁ হয়ে থাকা মন - মিহি মিহি শ্বাসকষ্ট জড়ায় ধরে ভাবে তুমি বুঝি বহুদূরে আছো - নিজেরে আদর করে কান্নার বাঁধ ভেঙে জিগায় - ও আমার আপনার চেয়ে আপন কই নিয়ে যাও? বনটিয়া উড়ি গেলে সবুজ কিছু কম হয়ে যায় গাছে? কিন্তু গাছে কোন পাতা নাই ভাবো- ধরো তাতে বনটিয়া বসে আছে। চমৎকার, তাইনা? কতবার ভাবি এমন চলি আসবা তো - ক'টা দিন বাদে জোয়াড় - ক'টা দিন বাদে নাচানাচি জল - বৃষ্টিতে পবিত্র দীঘি কাছে পাইবো মাছেরা আবার।

শালার জীবন! না হয় তোমার, না হয় আমার- সে থাকে তার কারবারে। বটগাছের ছায়া দেখে- দেখে ঘরের টিকটিকি কী খুঁজে পোকা মাকড় নাকি সেক্স পার্টনার? তাহাদেরও আছে প্রেম ঢেড়- পোকাদেরও শোক আছে- নিজস্ব ঘ্রাণ। আমি ঘ্রাণহীন লোক সব পারফিউম তোমার শরীরে ডিপোজিট। অনেক তো হইলো বেলা- ফিরতে নাই আসো- অন্তত কিছু না কিছু ফেরত দিতে আসো।

তোমাকে পড়তে গিয়ে কিছুই পড়তে পারি নাই অনেকদিন। আমি জানি, এ এক তীব্রতম অসুস্থতা। এ কেবল মনের অপূর্ণাঙ্গতা। কিন্তু আমি চাই তোমাকে। যার প্রাণ ভালোবাসে কবিতাকে, কবিকে আর নিজেকে। যে প্রাণ মিহি রোদ আর বৃষ্টির আশায় বসে থাকা পাখি। ঘরের সন্ধানে যে ঘর ভেঙ্গে বেড়ানোর অজুহাত খুঁজে বেড়ায়।

যে গল্পে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায়, যে গল্প মানুষের ছায়ার মতো, শরীরের দৈর্ঘ্যপ্রস্ত জুড়ে থাকে। তারাশংকরের গল্পগুলো ঠিক এমনই। কবি পড়ে মনে যে ছায়া তৈরি করে দেয়, যে ছায়া জীবনময়।

description
Profile Image for Farhana Sultana.
94 reviews72 followers
October 5, 2019
সব ভালো লাগার বহিঃপ্রকাশ ভাষাতে হয় না। এই বই পড়ার ভালো লাগাও তেমনি। এত দেরীতে পড়েছি বলে আফসোসের অন্ত নেই। আর কি লিখবো। আমার শব্দভাণ্ডারের সব শব্দ আজ যেন ফিকে হয়ে গেছে আমার এই ভালোলাগার অনুভূতির কাছে...।
Profile Image for Samanta Alam.
28 reviews21 followers
August 24, 2024
আচ্ছা শুরুতেই বলি, আমি বইয়ের গতানুগতিকভাবে 'রিভিউ' বলে যা লেখালেখি করা হয়, তার ধারে কাছে দিয়েও লিখি না।আমি বইটা কেনা থেকে পড়ে শেষ করা অব্দি যেসব ঘটনা ঘটে সেসবই বেশি বকবক করি।বই কেনার অবশ্যই কোনো না কোনো কারন থাকে,যখনই বই অর্ডার করি বা কিনে আনি,সেসবই মুলত লিখে রাখি।ডিজিটাল মিডিয়াতে লিখে দস্তখত করে রাখার কারণ বাস্তবে ডাইরিতে লেখার অভ্যেস আমার নেই, খুঁজে পাওয়া নিয়েও আমার নিজেকে নিয়ে সংশয় আছে 😶‍🌫️
যাক এবার 'কবি' তে আসি। কবি- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।। বইটা যেদিন কিনে আনি সেদিন বই কেনার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়নি বরং পরীক্ষা ছিলো তাই বের হয়েছিলাম।পথে ছোটখাটো একটা দুর্ঘটনায় ডান হাত প্রায় ভেঙে যেতে বসেছিল! এ কারণে মুলত বুক স্টোরে গিয়ে নিজেকে উপহার দিয়েছিলাম। কবি বইটা লিস্টে ছিলোই।তাই নিঃসংকোচে নিয়ে এসেছিলাম। তখন ব্যাপারটা ছেলেমি মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে এটায় সঠিক ছিলো।বইটা আমার পড়া সেরা কিছু বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।বিশেষ জায়গা যা নতুন আবেগ আর শেখার জায়গা।জীবনকে যে আঙ্গিকে ভেবে ও দেখে আসছিলাম তা যে সুদূর অজানা জীবন পথের বাঁক মাত্র, তার পাকাপোক্ত ভীত।। নিতাই সে পথে চলা “চান্দেরগাড়ির” যাত্রী মাত্র যে প্রতি বাঁকে ভালো কিছুর আশা করে। নিতাইয়ের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক।। তারাশঙ্কর বাবুর চরিত্র গড়ায় জুড়ি নেই। নিতাইকে বলা মোহন্ত বাবুর বলা কিছু লাইন এখানে না বললেই নয়--

"নীল চশমা চোখে দিয়েছ বাবা?সূর্যের আলো নীলবর্ণ দেখায়।তোমার চোখের চশমার রঙের মত তোমার মনের ঘৃনা পরকে ঘৃন্য করে তোলে।মনের বিকারে এমন সুন্দর পৃথিবীর উপর রাগ করে মানুষ আত্মহত্যা করে মরে"
নিতাইকে বলা এসকল কথা দ্বিধা দন্দে থাকা নিতাই যে ঝুমুর দলে বসন্তের সাথে থাকবে নাকি সব ছেড়ে ফিরে যাবে, শুধু নয় বরং সকলের জন্য সত্য। মনের বিকার আর মস্তিষ্কের বিকার আকাশপাতাল তফাত। মস্তিষ্কের বিকার দেহকে গ্রাস করে আর মনের বিকার মস্তিষ্ক - দেহ উভয়কেই। বসনের জন্য ঝুমুর দলে থেকে যাওয়া নিতাইয়ের কাছে ছিলো 'ভালোবাসার জন্য ভালোবাসা '। ঠাকুরঝি কে সে ভালোবাসত, সম্মান করত,আবার তার ভালোর জন্যই সব ছেড়ে ঝুমুর দলের বসন্তকে কাছে টানা এবং ভালোবাসতে শুরু করা।নিতাইয়ের জীবন বহুমাত্রায় বহুদিকে চলেছে। শেষ মেষ আবার নিজের পরিচিত ��্থানে ফিরে এসেছে। নিতাই চরিত্রের এই আশা-নিরাশার নদীতে পালহীন নৌকা চালানোর মানসিকতায় এই বইয়ের সার্থকতা বলে আমি মনে করি।শত বাধা সত্ত্বেও নিতাই নিজের ব্যক্তিত্ব ও সম্মানবোধ বিসর্জন দেয়নি।এমন কঠোর মানসিকতা ধরে রাখা মানুষের মধ্যে ব্যতিক্রম।
পরিশেষে একটু হেয়ালি -
কবিয়াল নিতাইচরণ কে কাল্পনিক চরিত্র হিসেবে বলতে চায় না,উপমা হিসেবে আক্খায়িত করলাম।কবিয়াল নিতাই ছোট্ট ফড়িংয়ের মতো এক উপমা, যারা উভয়ই নিজের গল্পের সন্ধানী। নিতাই ঘরে ফিরে ছিলো, স্বপ্নের কবিয়াল হয়ে নয়, স্টেশনে রাজার আশ্রয়ে থাকা পরিচিত নিতাই হয়ে, ছোট্ট ফড়িং তার স্বপ্নের ঘর,দিগন্তের পারে ঘাসফুলে ভরা সবুজ জমিন- -এ কি ফিরবে??? ফিরলেও কোন চরিত্রে? অপেক্ষারা প্রহর গুনছে সাথে ফড়িং ও।।।
"হায় জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?""
🌻🌷🌷
Profile Image for Fatema-tuz    Shammi.
126 reviews21 followers
January 25, 2021
অদ্ভুত এক জীবনবোধের গল্প!
এক সাধারণ ঘরের ছেলের কবিয়াল হয়ে উঠার গল্প।

এত কিছুর ভিতরেও নিতাই এর বিনীত আর সবার থেকে আলাদা ব্যবহার,ভদ্রলোক হওয়ার আকাঙ্খা, কবিয়াল হলেও অন্য সবার মতো দর্শককে আকৃষ্ট করতে আজেবাজে গান না গাইতে চাওয়া, ভালো কবিগান লেখার বাসনা, মদ না পান করতে চাওয়া এসব ব্যাপারগুলো সুন্দর দিক।
আর__ ছোট জাত,খারাপ কর্ম, গায়ের রং এরকম আরও অনেক কিছু নিয়ে যে আসলে কাউকে ঘৃণা করা অবহেলা বা ছোট করা উচিত নয় এ মেসেজ টা অনেক ভালো লেগেছে। সে সময়কার লেখা হিসেবে খুব ভিন্নধর্মী একটা বই।

বছরের প্রথম বই হিসেবে অসাধারণ একটা বই পড়লাম বলা চলে।বহুত আচ্ছা তো বলা ই যায়-

"এই খেদ আমার মনে ___
ভালবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়___ জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?"

নিতাই এর সবচেয়ে বড় খেদ ছিল যা!......
Profile Image for Nu Jahat Jabin.
149 reviews241 followers
October 30, 2016
জীবনে যা মিটল না কো মিটবে কি তা মরনে?
হায় জীবন এত ছোট কেনে
এ ভুবনে?

পুরো বইটা মনে কি রকম শূন্যতা, হাহাকার তৈরী করে সেটা শুধুমাত্র উপরের কথা গুলাই বুঝাতে পারে।
Profile Image for পীয়্যান নবী.
52 reviews87 followers
February 14, 2017
"এই খেদ আমার মনে-
ভালবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এতো ছোট কেনে?
এ ভুবনে?"
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
August 14, 2021
জানতে ইচ্ছে করছে- সমগ্র উপন্যাসে তারাশঙ্কর বাবু সমাজের নিম্নবিত্ত ও সর্বহারা ভাসমান মানুষের সম্পর্কের মানবিক দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়ানের দুঃখ ও বিচ্ছেদে জরাজীর্ণ জীবনের অপূর্ণতা, আক্ষেপ, ভালোবাসা-বৈরাগ্যের দোলাচল, পৃথিবীতে 'পাওয়া' না হওয়া সব 'চাওয়া', ওপারের জীবনে পূর্ণতার সম্ভাব্যতা খুজতে গিয়ে এক মহাকাল অনুসন্ধ্যান করেছেন। তারাশঙ্কর বাবু কি তার জীবদ্দশায় পেয়েছিলেন সেই মহাকালের সন্ধ্যান! তার সেই আক্ষেপের যন্ত্রণাক্লিষ্ট প্রশ্নগুলার উত্তর!


ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি উপন্যাসের পৃষ্ঠায়। কারন পৃথিবীতে বিশুদ্ধ অনুভূতি আর কোথাও মৌলিক রূপে পাওয়া সম্ভব না। এই উপন্যাস, লেখনশৈলী আমার মাঝে যে অনুভূতির সঞ্চার করেছে বা আমি যে অনুভূতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তা দুঃখ-কষ্ট কিছুই না। কিন্তু তীব্র বিষাদের। এইটা অদ্ভুত বিষাদ। আপনার কষ্ট হবে না, হতাশ লাগবে না, শুধু মনে হবে কী যেনো নাই। কিন্তু যা নাই সেইটার জন্য কান্নাকাটি করাটাও বিরক্তজনক মনে হবে। ইচ্ছা হবে, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে, ঈশ্বর এই অসীম শূন্যতা, কিছু একটা না থাকার অনুভূতি থেকে আপনাকে মুক্তি দিক। এই বিষাদ হারিয়ে যাক আপনার কাছ থেকে এতো দূরে যে, আপনার শহরের ধূলাবালিও যেনো তাকে খুজে না পায়। কী বলবো, উপন্যাসে আটকে গেছি এক্কেবারে প্রথম লাইনে বর্ণনাভঙ্গি পড়ে!


শুধু দস্তুরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল।


এই না হলে সাহিত্য মাইরী! প্রথম লাইনের বর্ণনা ভঙ্গিতেই খেই হারিয়ে ফেলতে আমি বাধ্য! হিন্দু সমাজের পতিততম ডোম বংশে নিতাই চরণের জন্ম। এই ডোমরা একসময় বাংলার নবজাগরণের বিখ্যাত লাঠিয়াল ছিল। প্রাচীনকাল থেকেই পেশী শক্তির জন্য তাদের নাম ডাক ছিলো। কিন্তু কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠার পর নবাবদের জমিদারী ঐতিহ্য ও আশ্রয় চ্যুত হয়ে এরা ডাকাতে পরিণত হয়,নিতাই এই বীরবংশী ডোম বংশেরই উত্তরাধিকারী। তারাশঙ্করবাবুর কবিয়াল নিতাইচরণ চরিত্রটি চট্টগ্রামের পটিয়ার বিখ্যাত কবিয়াল রমেশ শীলের জীবনছায়া অবলম্বনে রচিত বলে অনেকে মনে করেন। ১৯৩৯ দিকে কংগ্রেসের এক সম্মেলনে যোগ দিতে এসে তারাশঙ্করবাবু কবিয়াল রমেশশীল সম্পর্কে অবগত হন। উৎসাহী তারাশঙ্কর রমেশীলের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন বলে অনেকের মত। তবে এ ঐতিহাসিক সূত্রের যথাযথ প্রমাণ মেলেনি এখনো পর্যন্ত। নিতাই এর জীবন একজন কবিয়ালের জীবন। সে পড়তে ভালোবাসে, গাইতে ভালোবাসে বাপ দাদার পেশা ডাকাতি সে করতে রাজি নয়। তাইতো বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেই এক বন্ধুর কাছে। সেখানেই সে প্রেমে পড়ে ঠাকুরঝি’র। প্রেমের বিভিন্ন পর্যায়ে কবি মনের আকুলতা, অনুভূতিগুলো যেন স্পষ্ট ধরা দিয়েছে প্রত্যেক কবিতায়। নিতাই এর ব্যক্তিজীবনের অনুধাবন লেখক ধারাবাহিক ভাবে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে নিতাই এর পাশাপাশি প্রত্যেক টা অনুধাবন গভীরভাবে ছুয়ে গেছে এই নগণ্য পাঠককেও-

আলকাতরার মত রঙ। ছি, ঐ কথাই কি বলে। কালো? ঐ মেয়ে কালো? রাজনের চোখ নাই। তা ছাড়া কালো কি মন্দ। কৃষ্ণ কালো, কোকিল কালো। চুল কালো- আহা হা! আহা হা! বড় সুন্দর বড় ভালো একটি কলি মনে আসিয়া গিয়াছে রে। হায় হায় হায়। কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে? কালো চুলে রাঙ্গা কুসুম হেরেছো কি নয়নে?

সিরিয়াসলি? আজ থেকে ৮১ বছর আগের অনুভূতির আকুলতার বর্ণনাভঙ্গি এইটা! ভাবা যায় না। সত্যি বলছি মাইরী, আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম রেলের দুই লাইন এক বিন্দুতে মিলে বেকে চলে গেলো, সেইখানে মাথায় সোনার টোপর দেয়া ঠাকুরঝি হেটে আসছে! সেখানে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছ! নিতাই বুঝলো, সব কিছু পাইতে হয় না। ছন্দায়িত করে ফেললো অকপটে!

চাঁদ দেখে কলঙ্ক হবে বলে কে দেখেনা চাঁদ?
তার চেয়ে যাওয়াই ভালো ঘুচুক আমার দেখার সাধ।
ওগো চাঁদ তোমার নাগি-
ওগো চাঁদ তোমার নাগি-না হয় আমি হব বৈরাগী
পথ চলিব রাত্রি জাগি সাধবে না কেউ আর তো বা


প্রত্যেকটা বাক,ঘাত-প্রতিঘাতের বর্ণাভঙ্গি এত অসাধারণ, পুরো উপন্যাস ই কোট করে দিয়ে দিলেও তা টিকে যাবে হয়তো! তারপরে আসে প্রিয়জন হারিয়ে ফেলার তীব্র বেদনার কি অনন্য উপস্থাপন!

মরণ তোমার হার হলো যে মনের কাছে
ভাবলে যারে কেড়ে নিলে সেযে দেখি মনেই আছে!


এই বর্ণনাটুকু পড়ে আমি ধপ করে বইটা বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। জ্বালিয়েছি একটা চারমিনার। এত সুস্পষ্ট সুই এর মতো তীক্ষ্ণ পিন-পয়েন্ট অনুভূতির প্রকাশ করতে বিধাতা প্রদত্ত মেধার প্রয়োজন। তারাবাবু তা দেখিয়েছেন সূচারুরূপে। শ্রেণী বিভেদ, ঝগ্রা-ঝাটি, হানাহানি,মারামারি পারস্পরিক ঘৃণা এই সমস্ত অশুচিকর কর্মের সৃষ্টি ও পরিত্যাগের উপায় খুজতে গিয়ে লেখক এর অনুসন্ধ্যান এবং তত্ত্ব শুনে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছি আমি। সমাজের শ্রেণী সংঘাত এর উৎস, প্রতিকার বা প্রতিরোধ খুজতে গিয়ে তারাবাবু যে দর্শন মহাকালের গহ্বরের ভেতর খুজে পেয়েছেন তা আমার মনে থাকবে সারাটাজীবন। কাউকে ঘৃণা করতে গেলে মনে আসবে আমার এটা বরাবর!

প্রভুর সংসারে নীচ কেউ নেই বাবা। নিজে, পরে নয়- নিজে নীচ হলে সেই ছোঁয়াচে পরে নীচ হয়। নীল চশমা চোখে দিয়েছ বাবা? সূর্যের আলো নীলবর্ণ দেখায়। তোমার চোখের চশমার রঙের মতো তোমার মনের ঘৃণা পরকে ঘৃণ্য করে তোলে।

তারাবাবুর প্রকৃতির বর্ণনার প্রশংসা না করলেই নয়। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়বার মতোই। বিশেষত শেষরাতের যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা যে পাঠকে দাগ কাটবে না এমন পাঠক সম্ভব নাহ!

রাত্রির শেষ প্রহর অদ্ভুত কাল। এই সময় দিনের সঞ্চিত উত্তাপ নিঃশেষে ক্ষয়িত হইয়া আসে, এবং সমস্ত উষ্ণতাকে চাপা দিয়া একটা রহস্যময় ঘন শীতলতা ধীরে ধীরে জাগিয়া ওঠে। সেই স্পর্শ ললাটে আসিয়া লাগে, চেতনা অভিভূত হইয়া পড়ে। ধীরসঞ্চারিত নৈঃশব্দ্যের মধ্য দিয়া একটা হিমরহস্য সমস্ত সৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, নিস্তরঙ্গ বায়ুস্তরের মধ্যে নিঃশব্দসঞ্চারিত ধূমপুঞ্জের মতো। মাটির বুকে মধ্যে, গাছের পাতায় থাকিয়া যে অসংখ্য কোটি কীট পতঙ্গ অবিরাম ধ্বনি তুলিয়া থাকে, তাহারা পর্যন্ত অভিভূত ও আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে রাত্রির এই শেষ প্রহরে। হতচেতন হইয়া এ সময় কিছুক্ষনের জন্য তাহারাও স্তব্ধ হয়। মাটির ভিতরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই হিম-স্পর্শ ছড়াইয়া পড়িতে চায়। জীব জীবনের চৈতন্যলোকেও সে প্রবেশ করিয়া সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলোকে অবশ করিয়া দেয়। আকাশে জ্যোতির্লোক হয় পাণ্ডুর; সে লোকেও যেন হিম-তমসার স্পর্শ লাগে। কেবল অগ্নিকোনে ধকধক করিয়া জ্বলে শুকতারা-অন্ধ রাত্রিদেবতার ললাটচক্ষুর মতো।

বলতে চেয়েছিলাম অনেক কিছু। পারলাম না তৃপ্তি করে একটা কিছু লিখতে। হইলো না। এখন আমি আরো লিখলে নতুন পাঠক নিতাই এর নিজেকে খুজে পাবার আত্মোপোলব্ধির যাত্রার স্বাদটুকু থেকে বঞ্চিত হবে।

যা ভালো লাগে নাই বলতে চাই একটুখানি। বসন্ত নিতাই এর ঘর থেকে যাবার পরে পরের দিনেও মনে রেখেছিলো নিতাই এর মনের মানুষ আছে, ঠাকুরঝি ঘরে উকি দিয়েছে কিন্তু বসন্তের সাথে গাটঝড়া বাধবার সময় বসন্ত একবার ও জিজ্ঞ্যাসা করলো না সেই সম্পর্কে। বিষয়টা ভাবায় আমাকে। ক্ষুরধার নারীমাত্রই ভোগ বিলাসী স্বার্থপর? বসন্তের ক্যারেক্টারের ব্যাকগ্রাউন্ড বক্তব্যের অভাব কিছুটা অনুভব করেছি। তারাবাবু আক্ষেপ রাখতে চেয়েছিলেন, হয়ে গিয়েছে আফসোস।


এক কথায় কবি একটা জ্বলন্ত দীর্ঘশ্বাস। ছুড়ে ফেলে দেওয়া সিগারেটের মাথায় জ্বলতে থাকা আগুনটার মতো-


“এই খেদ মোর মনে
ভালবেসে মিটল না আশ- কুলাল না এ জীবনে।
হায়, জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?”
Profile Image for Abu Sufian Adnan.
5 reviews6 followers
June 12, 2020
কবি লেখক শ্রী তারাশঙ্কর বন্দ্যাপাধ্যায়ের অনন্য সৃষ্টি। উপন্যাসটিতে তৎকালীন সমাজব্যবস্থার নিগূঢ় বাস্তবতাকে ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে পরতে পরতে। উপন্যাসের বিখ্যাত লাইনগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
"ভালবেসে মিটলো না সাধ, কুলালো না এ জীবনে!
হায় জীবন এত ছোট কেনে? এ ভুবনে"। কি়ংবা সেই বহুল প্রচলিত, অনবদ্য, প্রবাদসম লাইন-
"কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?
কালো চুলে রাঙা কুসুম হেরেছে কি নয়নে"।
Profile Image for Nadia Jasmine.
213 reviews18 followers
July 15, 2023


শেষমেশ আমিও কবি পড়লাম। নিতাইয়ের জন্য হয়তো কাঁদলাম। নাকি ঠাকুরঝির জন্য? নাকি বসনের জন্য? জানি না।

বইটা পড়া নিজের জন্য কঠিন করে ফেলেছিলাম। কঠিনতর করেছি পিছিয়ে। তারপর একদিন তপন সিংহের জীবনী পড়ছিলাম। সেখানে তারাশঙ্করের হৃদ্যতার কথা জানলাম। আরেকদিন সত্যজিতের কলমে ‘জলসাঘর’ বানানোর গল্প পড়তে গিয়ে আবার জানলাম তারাশঙ্করের অতল হৃদয়ের গল্প।

মানুষটার ছোটগল্প ‘ডাইনী’ বাদে অধমের আর কিছুই কখনো পড়া হয় নি। শেষমেশ ভাগ্য খুলে গেল, কবি পড়া হল। যাদের খুব প্রিয় বই, তাদের একজন আজকেই বলছিল যে সে শেষ করে কেঁদেছিল। আমিও স্বীকার করলাম যে শেষ করে চোখের পানি ফেলেছি। আর তা যে আসবেই, ‘জীবন এতো ছোট কেনে?’ কথাটা পড়ার আগে এমন কোন আভাস পাই নি।

কি জানি আছে এই কথায়! সবার জন্য খারাপ লেগে ওঠে। নিজের জন্য নাকি কাল্পনিক চরিত্রগুলোর জন্য বেশি, এটাই ঠাহর করতে পারি নি এখনো। থাক, না পারলে নাই।

কিছু বই মনে করিয়ে দেয় যে বাংলা পড়তে ও লিখতে জানি বলে আমি কতো ভাগ্যবান। এই বই শুধু যে সেটা করল তা না, নতুন করে বাংলা সাহিত্যের অনুরাগী বানিয়ে দিল।

‘এতো সুন্দর কেনে?’
Profile Image for Shadman.
23 reviews6 followers
May 13, 2013
" জীবন এত ছোট কেনে ? " - লেখকের এই ভাবনাটি বারবার গভীরভাবে ভাবিয়েছে । তারাশংকরের জীবন দর্শন অসাধারণ । চোর ডাকাত বংশের একজন মানুষের ভেতর কবি সত্তা, তার শুদ্ধ চিন্তা , তার স্বপ্ন,তার কল্পনা, গোপন ভালোলাগা, প্রতিকুল পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়ার তাগিদে নিজেকে ভেঙে চুরমার করে নতুন করে গড়া, বিবাগী জীবন বেছে নেয়া, কিন্তু সবশেষে সেই পরিচিত চক্রেই ফিরে আসা - সবকিছুই পাঠককে আলোড়িত করবার মতো । নিতাই- চরিত্রটি খুব সাদামাটা/সাধারণ হয়েও সত্যিকারের এক নায়ক।
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
February 2, 2021
বইটা নিয়ে কিছু বলতে গেলেই ভাষা কোথাও একটা হারিয়ে যায় আমার। শুধু পড়তে ইচ্ছে করে, নিতাইয়ের জীবনপ্রবাহে বুদ হয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ঠাকুরঝি, বসন, রাজন সব মিলিয়ে নিতাইয়ের জীবনটা খুব সহজ-সরল মনে হয়। সবকিছু মেনে না নিলেও, মানিয়ে নিয়ে চলার নামই হয়তো জীবন_লেখকের সৃষ্ট এ জগৎ থেকে অন্তত তাই মনে হয়েছে আমার।
ছোট্ট একটু বই, অথচ এতটা মাধুর্য এতে আছে তা ভাবনার উর্দ্ধে। সবার জন্য অবশ্যপাঠ্য।
Profile Image for Sumaiya.
37 reviews3 followers
October 10, 2023
নিতাইয়ের বুক-ভরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস এতক্ষণে ঝরিয়া পড়িল। যে কথাটা বলা হইল না সেই কথা গান হইয়া বাহির হইয়া আসিল।
” বলতে তুমি বলো নাকো, (আমার) মনের কথা থাকুক মনে।
(তুমি) দূরে থাকো সুখে থাকো আমিই পুড়ি মন – আগুনে।”

কবিয়াল আসলে ভালবেসেছেন দুই নারীকে। তবুও সে তার চাওয়াকে পূর্ণতা দিতে পারেনি। তাইতো গেয়েছেন......
‘এই খেদ আমার মনে
ভালোবেসে মিটল না এ সাধ, কুলাল না এ জীবনে!
হায়- জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?'
Displaying 1 - 30 of 322 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.