Jump to ratings and reviews
Rate this book

সপ্তপদী

Rate this book
বই কেনার আগে প্রিভিউ দেখে নিন।
'সপ্তপদী' বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট সম্পদ ও উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল-রচনার উৎকর্ষে অতুলনীয় উপন্যাস রচিত হয়েছে-এই ক্ষীণ কলেবর উপন্যাসটি তার মধ্যে একটি প্রধান স্থান পাবে বলে বিশ্বাস। বিশ্ব-সাহিত্যেই উজ্জ্বলতম রত্ন হিসেবে স্থান পাবে। 'সপ্তপদী' উপন্যাসটি পুস্তক আকারে প্রকাশের পূর্বে ১৩৫৬ সালের শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ হয়।

128 pages, Hardcover

First published January 1, 1958

22 people are currently reading
396 people want to read

About the author

Tarashankar Bandyopadhyay

130 books286 followers
Tarashankar Bandyopadhyay (Bangla: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) was born at his ancestral home at Labhpur village in Birbhum district, Bengal Province, British India (now West Bengal, India). He wrote 65 novels, 53 story-books, 12 plays, 4 essay-books, 4 autobiographies and 2 travel stories. For his novel Arogyaniketan, he received the Rabindra Puraskar in 1955 and the Sahitya Akademi Award in 1956. In 1966, he received the Jnanpith Award for his novel গণদেবতা. He was honoured with the Padma Shri in 1962 and the Padma Bhushan in 1969.

Tarasankar is one of those writers of the third decades of the twentieth centuries who broke the poetic tradition in novels but took to writing prose with the world around them adding romance to human relationship breaking the indifference of the so called conservative people of the society who dare to call a spade a spade. Tarasankar’s novels, so to say, do not look back to the realism in rejection, but accepted it in a new way allowing the reader to breathe the truth of human relationship restricted so far by the conservative and hypocrisy of the then society.

He learned to see the world from various angles. He seldom rose above the matter soil and his Birbhum exists only in time and place. He had never been a worshipper of eternity. Tarasankar’s chief contribution to Bengal literature is that he dared writing unbiased. He wrote what he believed. He wrote what he observed.

His novels are rich in material and potentials. He preferred sensation to thought. He was ceaselessly productive and his novels are long, seemed unending and characters belonged to the various classes of people from zaminder down to pauper. Tarasankar experimented in his novels with the relationships, even so called illegal, of either sexes. He proved that sexual relation between man and women sometimes dominate to such an extent that it can take an upperhand over the prevailing laws and instructions of society. His novel ‘Radha’ can be set for an example in this context.

His historical novel ‘Ganna Begum’ is an attempt worth mentioning for its traditional values. Tarasankar ventured into all walks of Bengali life and it’s experience with the happenings of socio-political milieu. Tarasankar will be remembered for his potential to work with the vast panorama of life where life is observed with care and the judgment is offered to the reader. and long ones, then any other author. He is a region novelist, his country being the same Birbhum. He mainly flourished during the war years, having produced in that period a large number of novels and short stories.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
153 (32%)
4 stars
215 (46%)
3 stars
76 (16%)
2 stars
14 (3%)
1 star
8 (1%)
Displaying 1 - 30 of 58 reviews
Profile Image for ORKO.
196 reviews197 followers
April 21, 2023

প্রেম তো চোর নয়,ডাকাতের মতো চিঠি দিয়ে আসে
হত্যাকারীর মতো রক্ত নিয়ে যায়।


এই গল্পটা রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামীর। গল্পটা রিনা ব্রাউনেরও। আবার এই দুজনের গল্পে এসে মিশে গেছে জন ক্লেটনের অন্তর্ধান আর প্রত্যাবর্তনের স্রোত। ত্রিকোণ প্রেম? না,এতো সহজে দেগে দিতে পারলে হিসাবটা একটু সহজ হয়ে যেতো। ইংরেজীতে যাকে বলা যেতে পারে,Jumping to conclusions - সেই দশটা সিঁড়ি একবারে ডিঙিয়ে,লাফিয়ে উঠে যাওয়া যেতো ছাদে,সেরকমটা করতে পারলে মন্দ হতো না। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় সম্ভবত এইখানেই চালাকিটা করেছেন। ওই যে,বর্তমান জেনারেশনের মধ্যে একটা ঝোঁক থাকে না? প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে প্রোফাইলে হাদিস শেয়ার দেয়,রাতারাতি সাধুসন্ত হয়ে পড়ে, সপ্তপদীকে যদি কেউ একদৃৃষ্টিতে সেরকমটা বলে, অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে ওই সোজাসাপ্টা ত্রিকোণ প্রেম? এটা বোধহয় বেশি বেশি হয়ে যাবে। যদিও ভালোবাসাই এই গল্পের মূল কারুকাজ করা অজগর, আর এইসব চরিত্রেরা ঘরহীন ঘরের মতো।

সপ্তপদী, ভারতীয় শাস্ত্রমতে একসঙ্গে সাত পা হাঁটলে নাকি মিত্রতা হয়। বিয়েতে অগ্নিসাক্ষী করে সাত পাকে বাঁধা পড়েন স্বামী স্ত্রী। কিন্তু মানুষ যখন ঈশ্বরকে খোঁজে, তখন সে হয় পড়ে একা,হাঁটে না কারোর সাথেই। বন্ধুর সাথেও না। একেবারে একা। রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামীকে যখন বিস্তীর্ণ আরণ্যক ভূমির আদিবাসীদের চিকিৎসায় নিবেদিত দেখি, সেই একাকী ছায়ার মতো তাকেও  ঈশ্বরের নিরবিচ্ছিন্ন সন্ধানে নিয়োজিত মনে হয়। মানুষের মুখেই তিনি ঈশ্বরকে খোঁজেন। এই খুঁজে বেড়ানোর তাড়নার নাড়িপোঁতা আছে অতীতে। নিহত স্মৃতির অতীতে। বারবার জ্বরের ঘোরে দেখা ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্নে আমাদের নিহত স্মৃতিরা যেমন ফিরে ফিরে আসে, কৃষ্ণস্বামীরও স্মৃতির নদীতে একটা চাঁদের ইল্যুশনের মতো ভাসছে রিনা ব্রাউন। বয়ঃসন্ধির প্রেম রিনা ব্রাউন। তেতাল্লিশের মন্বন্তরে দুর্ভিক্ষ পীড়িত ভারত,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে টালমাটাল জীবন থেকে তারাশঙ্কর আমাদের নিয়ে ফেলেন এক অতীতে।
সেন্ট জেভিয়ার্সের মাঠে ছয় ফুটের দীর্ঘ এক কিশোরের কায়াকে ক্রমে ক্রমে স্পষ্ট হতে দেখি। দেখি কী নিপুণতায় সে বল পায়ে ছুটে যাচ্ছে গোলপোস্টের দিকে। পরক্ষণেই বল জালে জড়িয়ে গেলে উল্লসিত জনতার হুল্লোড় কানে আসে। সেই ছয় ফুটি কিশোরের কৃষ্ণ কায়াই যখন স্বর ভাঙা গলায় নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতা আবৃত্তি করতে করতে ক্লাসের বন্ধ দরজায় দুম-দুম শব্দে কিল-ঘুষি বসাতে থাকে,চেতনাও তার পরবশ কম্পনে কেঁপে কেঁপে ওঠে। ফ্লাশব্যাকে রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামীর চামড়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিশোর কালাচাঁদকে আমরা আবিষ্কার করি সেই দুরন্ত কৈশোরে।  সেই ছবির অ্যালবামটায় পা রাখে জন ক্লেটন, আর তারপরের সব ছবিকে যেন এলোমেলো করে দেয় ক্লেটন আর কৃষ্ণস্বামীর নেমেসিস রিনা ব্রাউন।  এক নারীকে অধিকারের জন্য কৃষ্ণস্বামী ধর্মত্যাগ করেন। তবে সেই অধিকারপত্রে কি স্বাক্ষরিত হয় দুজনের হাতের লেখায়? এক অনিবার্য বিচ্ছেদকে আলিঙ্গন করতেই তো সমস্ত প্রেমের গল্প লেখা হয়, তাই না? ক্রমশ সেই নিহত স্মৃতির বন্ধ্যা মাটিতে চাষবাস করে করে সপ্তপদী উপন্যাসের ফসলকে বেড়ে উঠতে দেখা যায়।  সহস্র আলোকবর্ষ দূর থেকে দেখা ঘুমভাঙা নক্ষত্রের স্বপ্ন থেকে উড়ে আসে এক ঐশ্বরিক আলো। সেই ভার্জিন আলোর ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত কিশোর কালাচাঁদ হয়ে ওঠে রেভারেন্ড ড. কৃষ্ণস্বামী। কুষ্ঠরোগের চিকিৎসায় আর ঈশ্বরের খোঁজে তিনি ঘুরে বেড়াতে থাকেন আরণ্যকভূমিতে। তারপরও নিয়তিকে কি এড়ানো যায়? ভালোবাসা তো মরে,কিন্তু পিছুটান? সে তো মরে না...


সপ্তপদী নিয়ে তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় কনফেস করেছিলেন, এই উপন্যাসের প্রায় মেরুদণ্ডটাই দাঁড়িয়ে আছে বাস্তব ঘটনা অবলম্বন করে। দুটো আপাত বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে তিনি জুড়ে দিয়েছিলেন এক সুতোর ফোঁড়ে। সব মিলিয়ে সপ্তপদীকে কালোত্তীর্ণ ধ্রুপদী হিসেবে মানবিচার করতে গেলে অনেক ফাঁকফোকর চোখে পড়বে। ওই যে শুরুতে বলেছি, কেউ যদি মডার্ন টাইমের ক্রাইসিসের সাপেক্ষে একে দেগে দিতে চায়,আমি অন্তত সেখানে দোষের কিছু দেখি না। তবে এই কাঠগড়ায় সপ্তপদীকে দাঁড় করবার আগে কিছু বিষয় পাঠকদের খেয়াল রাখা দরকার। সপ্তপদী কোন সময়টায় প্রকাশিত হয়েছিলো। সেই সময়ের সমাজের সাপেক্ষে ভালোবাসার উদ্দেশ্যে ধর্মান্তরিত হওয়াটা কতটুকু জায়েজ?  নিশ্চয়ই এটা খুব ন্যাক্কারজনক দৃষ্টিতেই দেখা হয়। এমনকি এই সময়ে এসেও। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ভালোবাসার যে ডাইমেনশনটাকে এক্সপ্লোর করেছেন সেই আত্মিক দিকটা হাল আমলের লেখকদের দুএকজনের লেখাতেও দেখি। শুধু ন্যারেটিভ আর সেটাপটাই চেঞ্জ হচ্ছে,গল্পটা কিন্তু একই আছে। সেই হিসেবে সেই ক্লিশে গল্পটাই কিন্তু রি-সার্কুলেট করছে নানাভাবে। তা বাদে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাংলার উপরে যে শুধু অর্থনৈতিক ডামাডোল, দুর্ভিক্ষ হয়েছে এইরকম চিত্র হরদম সাহিত্যিক প্রসঙ্গে আসলেও সে সময় ভারতের  অ্যামেরিকান সোলজারদের ইনভলভমেন্ট হয়েছিলো কিনা,সেই বিষয়টা সন্দেহাতীত হয়ে গেছে। কারণ,সপ্তপদীতে জ্বলজ্যান্ত চরিত্র হিসেবেই এসেছে একজন অ্যামেরিকান সৈন্য।

সপ্তপদীর ন্যারেটিভটা অনেকটা মঞ্চনাটকের মতো। প্রতিটা অধ্যায়ের শুরুতে যাত্রাপালার বিবেকের মতো এক ঝাঁপি দার্শনিক কথাবার্তা, আধ্যাত্মিকতা,ঈশ্বর আর নিয়ত সংক্রান্ত আলাপে জর্জরিত করে মূল গল্পে ঢোকা হয়েছে। তাই শুরুর আবেদনটা পুরো উপন্যাস জুড়ে থাকে না। মেলোড্রামা আর মেলোড্রামা। আর তা এক পর্যায়ে গিয়ে ট্র্যাজেডিতে পর্যবসিত হয়।

এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। ধরা যাক, হ্যামলেট আমরা পড়ি নি। অথচ আমরা কিন্তু হ্যামলেটের গল্প জানি। কীভাবে? নানা মিডিয়ায় হ্যামলেটের অ্যাডাপ্টেশনের মাধ্যমে। সেটা বলিউডি মুভি হায়দারও হতে পারে। আবার হতে পারে আরো অন্য রকম প্রেজেন্টেশন হিসেবে লায়ন কিংও। এই পোস্টমডার্ন যুগে যখন আমরা সিমুলেশনেরও সিমুলেশন দেখছি, তখন খুব কম ক্লাসিক গল্পই আসলে একদম নতুন কিছু মনে হতে পারে। ধ্রুপদী সাহিত্য আসলে আমাদের এমন কোনো কিছু অফার করবে না যেটা আমরা একদমই জানি না। বরং এই সিমুলাক্রার (সিমুলেশন অফ সিমুলেশন) যুগে কোনো না কোনোভাবে গল্প রি-সার্কুলেট করে। সপ্তপদীর গল্পটা তাই খুব নতুন নাহলেও,ক্রাইসিসটা আমাদের চেনাপরিচিত হলেও সময়ের বিচারে এই ডাইমেনশনটা এক্সপ্লোর করবার জন্য সপ্তপদী বেশ মডার্ন একটা অ্যাপ্রোচ।
Profile Image for Akash.
446 reviews150 followers
April 5, 2023
ইন্দ্ৰিয় স্পৰ্শাতীত রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস সপ্তপদী। পার্থিব প্রেম অপার্থিব লোক আশ্ৰয় করে এক অতীন্দ্রিয় জগতে পৌঁছে দিয়েছে। তারাশঙ্করের উপন্যাস গুলো এত মাতাল করে কেন! আসলেই; Truth is stranger than fiction.

ঈশ্বরের জন্য প্ৰিয়তম মানুষকে বর্জন করে। রিক্ততাই সাধারণভাবে মানবিক। পূর্ণতা অসাধারণ। অস্বাভাবিক না হলেও দুর্লভ। কোনো কিছুর আসাটাই স্বপ্ন—আর যাওয়াটা কঠোর বাস্তব। খুব কম জিনিসই কাছে আসে; কিন্তু যায় প্রায় সব কিছুই। পড়া শেষ করে আমি শুধু আপনমনে বলছি আর বলছি ---

"লেট মি লুক অ্যাট ইয়োর আইজ, লুক ইন মাই ফেস্‌ — ইউ আর দি কজ, ইউ আর দি কজ, মাই সোল!—পিস্ অ্যান্ড বি স্টিল, রিনা। লর্ড, আই ক্রাই আন্টু দি : মেক হেস্ট আন্টু মি।".....
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
July 19, 2020
বেশভূষায় আধো সন্ন্যাসী, আধো পাগল আর পেশায় ডাক্তার রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী। চিকিৎসা সেবা দিয়ে বেড়ান অজ গাঁয়ের মানুষগুলোকে। এই গাঁয়ের গরিব আর তথাকথিত সভ্যতার আলো বঞ্চিত মানুষদের অতিপ্রিয় এই ডাক্তার। চিকিৎসক হিসেবে হাতযশ চমৎকার। তবু কেন এই প্রত্যন্ত এলাকায় পড়ে আছেন তা এক বিস্ময় বটে।

সদা শান্ত নদীর মতো প্রবাহে চলতে থাকা রেভারেন্ডের জীবন আচমকা থমকে গেলো এক
আমেরিকান সেনা আর তার সঙ্গিনীকে দেখে। মুহূর্তেই কৃষ্ণস্বামী তার অতীতে ফিরে গেলেন।

কৃষ্ণস্বামী নয়, সে তো ছিলো মেডিকেল ছাত্র সদাউচ্ছ্বল কালা চাঁদ ওরফে কৃষ্ণেন্দু গুপ্ত। পড়াশোনা আর হইহুল্লোড় করে ভালোই কেটে যাচ্ছিল তার জীবন।

পলি ব্রাউন নার্সিং কলেজের মেট্রন। জীবনে উদ্দাম সময় পার করে এখন সে স্থির। তারই সৎমেয়ে ষোড়শী রিনা ব্রাউন। রিনাকে দেখাশোনা করে কুন্তী নামক এক দেশীয় মহিলা। সে তাকে ছোটবেলা থেকেই দেখাশোনা করে আসছে এই কুন্তীর রিনার জন্য যেন একটু বেশিই টান! বেশ সুন্দরী এই মেয়েটির সাথে পলির একসময়ের বন্ধু চার্লসের মেডিকেল পড়ুয়া দাপুটে ছেলে জন ক্লেমনের একটি সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেটি বন্ধুত্বের চাইতে বেশি কিছু।

জন ক্লেমন আর কৃষ্ণেন্দুর সম্পর্ক সাপে-নেউলে। দুজন দুজনকে হেনস্তা করতে গিয়ে রিনার পাল্লায় পড়ে হয়ে যায় বন্ধু। রিনা,জন আর কৃষ্ণেন্দু দিন বেশ কেটে যাচ্ছিল।রিনার বাড়িতে কৃষ্ণেন্দুর যাতায়াত চলতে থাকে। এদিকে,কৃষ্ণেন্দু বাড়িতে সেভাবে যোগাযোগ করেনা। তার বাবা ছেলেকে দেখতে এসে অবাক হয়। সে সাবধান করে রিনা আর ক্লেমনের সাথে সম্পর্ক আর না এগোতে। বাবা বলে তাকে শাস্ত্রে আছে, সাতপা কারো সাথে একসাথে হাটলে সে বন্ধু হয়ে যায়। কৃষ্ণেন্দু ভাবতে থাকে সে কী রিনার সাথে সপ্তপদ হেঁটেছে?

এদিকে,পড়াশোনা শেষ করে জন ক্লেমন চলে গিয়েছে চাকরির ট্রেনিংয়ে।কৃষ্ণেন্দুও বেশ পসার জমিয়েছে ডাক্তারিতে। কিন্তু কোথায় যেন কিছু একটা নেই। কোথায় যেন একটা হাহাকার।সে বেশ বুঝতে পারছে রিনা ব্রাউনকে সে ভালোবাসে। কিন্তু রিনা যে ক্লেমনের বাগদত্তা।

হঠাৎ ক্লেমন জানিয়ে দেয় সে রিনাকে বিয়ে করতে পারবে না। এদিকে, রিনা ক্লেমনকে সবকিছু দিয়ে বসে আছে। এবার উপায়? এগিয়ে আসে কৃষ্ণেন্দু। সে সবজেনেও বিয়ে করতে চায় রিনাকে। রিনা ব্রাউনের অতিখ্রিষ্ট বাবা বেঁকে বসে। সে কৃষ্ণেন্দুকে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে শর্ত দেয়। কৃষ্ণেন্দু পড়ে দোটানায় সে ধর্মে সেভাবে বিশ্বাসী নয়,কিন্তু পিতৃধর্ম ছাড়তে হলে পিতাকেও ছাড়তে হবে এটা সে ভালোকরেই বুঝতে পারে।

"রিনাকে তাকে পেতেই হবে।জীবনের যেকোনো মূল্যে রিনাকে তার চাই।" দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কৃষ্ণেন্দু এবার শর্তমত খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে রিনার কাছে যায়। কিন্তু রিনা তাকে উল্টো বলে,"তুমি ভয়ংকর কৃষ্ণেন্দু। একটি নারীর জন্য তুমি তোমার ঈশ্বরকে ছাড়তে পার।" একথা বলে রিনা তাকে গ্রহণ করতে রাজি হলো না। কৃষ্ণেন্দু বেচারা তার আমও গেল, ছালাও গেল।

আম ছালা হারানো কৃষ্ণেন্দু এবার নিজেকে রেভারেন্ড হিসেবে গড়ে তুলে চলে আসে এই গন্ড গায়ে। আর সেখানেই সে আবার দেখা পায়। কিন্তু এ কোন রিনা?! আমেরিকান সৈন্যটির সাথে সে কেন?

রিনা জানায় সে আগের জীবনের সবকিছুকে ছেড়ে এসেছে। রিনা আরও জানায় সে না খ্রিস্টান,না হিঁদু। তার আসলে পিতৃপরিচয় নেই। তার মা আসলে..... থাক না বলি সেটা একটা টুইস্ট ই বটে। সে জানায় তার বাবা ব্রাউন সবই জানতো। এই পাপিষ্ঠ ব্রাউনই ক্লেমনের সাথে রিনার বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। এই ব্রাউনের জন্য তার জীবন আজ এতো পাপ আর পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ। কথার একপর্যায়ে রিনা নিজেকে হত্যার চেষ্টা চালায় এবং কৃষ্ণেস্বামী রেভারেন্ডের থেকে দূরে আবার পালিয়ে যায়।

আমেরিকান সেনা যার সাথে রিনা এসেছিলো, সে জানায় রিনা হয়তো আসামের দিকে গিয়েছে।এদিকে, রেভারেন্ড খবর পায় আসামের দিকে এক অচেনা মেয়ের লাশ পাওয়া গিয়েছে। চমকে উঠে ভাবে মেয়েটি রিনা নয়তো? না,বর্ননা শুনে রিনাই মনে হচ্ছে। হ্যা,সে অভাগিনী বুঝি সত্যিই এবার ঈশ্বরের পানে যাত্রা করলো। কৃষ্ণস্বামী দীর্ঘসময় কুষ্ঠরোগীদের পরম মমতায় চিকিৎসা করেছেন। এবার সেই মহাব্যাধির শিকার হলেন সে নিজে। তার শরীরে দেখা দিয়েছে সে রোগের লক্ষণ।

কুষ্ঠ নিয়ে এ্যাসাইলামে চলে এসেছে কৃষ্ণস্বামী। চিকিৎসা দেয়া আর নেয়ায় সময় যাচ্ছে কেটে। হঠাৎ একদিন তার সাথে দেখা করতে এলো সেই জন ক্লেমন স্বস্ত্রীক। একি সাথে কে ও?!!

ছোট্ট কলেবরের এ উপন্যাসটি মূলত আধো বাস্তব আর আধো কল্পনা যা তারাশংকর নিজেই বলেছেন। উপন্যাসটি শেষ করে ঠিক একটা কথাই বারবার মনে হচ্ছিল,জীবন কীভাবে আপনাকে অবাক করে দিবে তা আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না। জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যেন জীবনকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করে তুলছে নানা আনন্দ বেদনার অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। বারবার রিনা আর কৃষ্ণেন্দু গুপ্ত থেকে রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী চরিত্রদুটি ম্যাসেজ দিয়েছে জীবনপথ বন্ধুর আর মসৃণ এদুয়ের মিশ্রণমাত্র,যত যাই হোক জীবনকে যাপন করে যেতে হবে অবিরাম সংগ্রামকরে।
Profile Image for Ahmed Aziz.
380 reviews69 followers
December 10, 2023
নায়ক কৃষ্ণেন্দু ওরফে কৃষ্ণস্বামী বাংলা সিনেমার সুপারম্যান (খেলায় ফার্স্ট, মারামারিতে ফার্স্ট, পড়াশোনায় ফার্স্ট, খ্যাতিতে ফার্স্ট, পেশাগত জীবনে ফার্স্ট, অভিনয়ে ফার্স্ট, কবিতা আবৃত্তিতে ফার্স্ট, এককালে নাস্তিকতায় আর পরবর্তীতে ঈশ্বর স্মরণে ফার্স্ট, ডাক্তারি পড়ে কিন্তু ওথেলো মুখস্থ, মানবসেবায় ফার্স্ট, ছয় ফুট লম্বা); নায়িকা রিনা ব্রাউন মাথা ঘুরানো ভয়াবহ রূপবতী আর বিশ্বমানের মদ্যপ ও লুইচ্চা, প্রেম প্রেম ভাব নিয়ে একশো রকমের আপঝাপ যুক্তি দিয়ে নায়ক ছাড়া সবার সাথেই শুয়ে নায়কের মাথা খেয়ে শেষমেশ এক খাঁটি সাদা চামড়া বিয়ে করে প্রমাণ করে দিল এত এত ফার্স্ট হলেও নায়ক আসলে বিশাল রামছাগল। সেরা চরিত্র নাম না জানা আমেরিকান অফিসার।
Profile Image for Wasim Mahmud.
357 reviews29 followers
July 31, 2023
"বাহির সংসারে মানুষ মরলে তাকে পুড়িয়ে ছাই করি, মাটির তলায় কবর দি। মনের সংসারে মানুষ জীবিতকেও মাটির তলায় চাপা দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়।"

ভূমিকায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কোন এক ফাঁকে এই অতীব নিষ্ঠুর কিন্তু দরকারি সত্যটি উচ্চারণ করেছেন। ভূমিকাটি সপ্তপদীর।

পূজার আনন্দবাজারে বাংলা বর্ষ ১৩৫৬ সালে এ বিখ্যাত এবং সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ উপন্যাসটি প্রকাশ পেয়েছিলো।

লেখক মূলতঃ তার বেশ পরিচিত একটি চরিত্র এবং প্রায় অপরিচিত আরেক চরিত্রের মধ্যকার ভালোবাসার গল্প এ উপন্যাসে রচনা করেছেন। বাস্তব এবং কল্পনা মিলিয়ে নিয়েছেন।

এ আখ্যান কৃষ্ণেন্দু এবং রিনার‌। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দেয়া নাম‌ই ব্যবহার করেছেন সপ্তপদীতে। ভূমিকায় নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন এ নভেলের তেমন একটা সম্পাদনা ছাড়াই উন্মোচনের।

অ্যাঙ্গলো-ইন্ডিয়ান নারীর সাথে ঘটনাপরিক্রমায় গাঁও-গেরাম থেকে উঠে আসা, মানে শুধু উঠে আসা নয় বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়া পুরুষের এক ধরণের অতৃপ্ত প্রেমের কাহিনী‌ই মনে হতে পারে শুরুতে।

আসলেই কি এ ভালোবাসা অতৃপ্ত? ধর্মে অবিশ্বাসী কাঁলাচাদের রেভারেন্ড কৃষ্ণেন্দুতে রূপান্তর কী পরিমাণ অবিশ্বাস, অনিশ্চয়তা এবং ভগ্ন হৃ��য়ের সারথীর যাত্রা তা লেখক লিখেছেন এক কখনো মুগ্ধ কখনো স্তব্ধ করে দেয়ার মতো গদ্যে।

উপন্যাসে দু'টি চরিত্রের ব্যাপক উত্থান-পতনের মিথস্ক্রিয়ার পর একটি সময়রেখা ধরে এগিয়েছে। টাইমলাইন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের গদ্যেও দেখেছি বিশ্বযুদ্ধকে মহাযুদ্ধ বলতে। আমার কাছে তো মহাযুদ্ধ‌ই বেশি সঠিক অর্থের শব্দ মনে হয়েছে।

সপ্তপদীর মতো উপন্যাসে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পাতাও দু'এক ঝিলিক বা আর একটু বেশি উঁকি দিয়ে যায়।

তাছাড়া ফ্ল্যাশব্যাকে যখন কাহিনী যায় তখন তারাশঙ্কর পাঠককে এমনভাবে হুক করে রাখেন যে বর্তমানে ফিরে আসলে রীতিমতো ধাক্কা খেতে হয়। যেন কোন ডাইমেনশন পোর্টাল দিয়ে লেখক রিডারদের সময় পরিভ্রমণ করিয়েছেন।

ভারতীয় সন্ন্যাসীতে পরিণত সাবেক কালাচাঁদ এবং তাকে আপাত দৃষ্টিতে অদ্ভূত কারণে ফিরিয়ে দেয়া রিনা ব্রাউনের চরিত্রের এরকম এক ধরণের ব্যক্তিত্বের এধার-ওধার হয়ে যাওয়াটা যেভাবে লেখক তার ছোট ছোট বাক্যের যথোপযুক্ত এবং সুন্দর উপমা দিয়ে পুরো নভেল সাজিয়েছেন তা চোখে পড়ার মতো।

শাস্ত্রে আছে এক সাথে সাত পা অগ্রসর হলে সে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য হয়। জন ক্লেটন এবং রিনা ব্রাউন হয়তো একসাথে ৭ পা হেঁটেছেন তবে কৃষ্ণেন্দু রেভারেন্ড যেন আশপাশের জগতের সকলের সাথে দয়া, ভালোবাসা, সেবা এবং মানবতার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছেন।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ উপন্যাসে কৃষ্ণেন্দুকে অতোটা রাজনীতি সচেতন মনে হয় নি। ভারতবর্ষ স্বাধীন হচ্ছে এবং বিভক্ত হচ্ছে এসব‌ই রেভারেন্ড ঈশ্বরের কৃপার বাইরের বিষয়ের উর্ধ্বে কিছু ভাবেন নি।

রিনা ব্রাউন‌ও সময়-ক্ষেত্রের স্রোতে ভেসে বেড়ানো এক সুতোহীন ঘুড়ি যেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য যেরকম হ্যাপি এন্ডিং লেখক দিয়েছেন, যেভাবে মিলিয়ে দিয়েছেন অনেক কিছুই, এবং সেটির সমর্থনে বারবার উচ্চারণ করে গেছেন,

"ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।"

এ বিষয়টি কৃষ্ণেন্দুকে হয়তো এক ধরণের কনসোলেশন প্রাইজ দিয়ে থাকতে পারে, তাকে এক ধরণের সেইন্টের লেভেলে পাঠিয়ে দিয়ে, তবে আমার মধ্যে কেমন যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া কাজ করেছে।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় পড়া শুরু করলাম বহু বছর পর। এ ধরণের ব‌ই কেন ধ্রুপদি বা ক্লাসিক হিসেবে গণ্য করা হয় তা শুধুমাত্র নভেলের সেই ওথেলো নাটকের অংশের কৃষ্ণেন্দু ও রিনার চরিত্রায়ণ এবং ডায়লগের সাথে পুরো উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তারাশঙ্করীয় ভাষায় স্বতস্ফূর্তভাবে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে উপমা হিসেবে জড়িয়ে ফেলাটা পড়লেই সচেতন পাঠক বুঝে নিতে পারবেন।

ব‌ই রিভিউ

নাম : সপ্তপদী
লেখক : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সব্যসাচী হাজরা
ধ্রুপদি মনোগ্রাম ডিজাইন : সোমনাথ ঘোষ
বাতিঘর ধ্রুপদি সংস্করণ : শ্রাবণ ১৪২৯, আগস্ট ২০২২
[ প্রথম প্রকাশ ১৮৬৬ ]
প্রকাশক : বাতিঘর
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
Profile Image for ~Rajeswari~ Roy.
153 reviews41 followers
November 6, 2022
মানুষের ঈশ্বরচিন্তা সাধারণত তার পারিপার্শ্বিক ও পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি ধর্মই কি মানবসেবার কথা বলেনা?যে ঈশ্বরকে কঠোর তপস্যা,উপোসের মধ্যে পাওয়া যায় তাকেই কি মানবসেবা,ভালোবাসার মধ্যে পাওয়া যায়না?
হিন্দু বিয়েতে সপ্তপদীর নিয়ম আছে।সাতটি পদক্ষেপ একসাথে চলে বর-বধূ একে অপরকে সাতটি প্রতিজ্ঞা করেন।৭টি প্রতিজ্ঞা হলো-

প্রথম প্রতিজ্ঞা: স্বামী ও স্ত্রী চান বাড়িতে কখনও খাদ্য বা ধন সম্পত্তির অভাব যেন না হয়। স্বামী স্ত্রীকে খুশি রাখার এবং স্ত্রী দায়িত্বপালনের প্রতিজ্ঞা করেন।
দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা: স্বামী-স্ত্রী দুজনে দুজনকে সমর্থন করার এবং শরীর-মনে একাত্ম হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন।
তৃতীয় প্রতিজ্ঞা: স্বামী ও স্ত্রী ধন সম্পত্তি সামলে রাখার ও বৃদ্ধি করার প্রতিজ্ঞা করেন। তারা প্রতিজ্ঞা করেন সন্তানের সঠিক দেখাশোনা করবেন।
চতুর্থ প্রতিজ্ঞা: সদ্য বিবাহিত দম্পতি প্রতিজ্ঞা করেন তারা পরস্পরের পরিবারকে সম্মান জানাবেন। তাঁদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেবেন এবং মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেবেন।
পঞ্চম প্রতিজ্ঞা: তারা ঈশ্বরের কাছে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান সন্তানের প্রার্থনা করেন। তাঁরা প্রতিজ্ঞা করেন সন্তানের সুশিক্ষার ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন।
ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞা: পরস্পরের সুস্বাস্থ্য ও রোগহীন জীবন কামনা করেন দুজনে।
সপ্তম প্রতিজ্ঞা: শেষ প্রতিজ্ঞা হল এই সম্পর্ক যেন চিরস্থায়ী ও মজবুত হয় তার জন্য দুজনেই সচেষ্ট থাকবেন।
এই ৭পা একসাথে হাটলে জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধুত্ব তৈরি হয়।এইতো গেল নামকরণের কথা।
এই বইটি কৃষ্ণেন্দুর(পরবর্তীতে রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী)উপাখ্যান।অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রিনার জন্য সে ধর্মান্তরিত হয় কিন্তু রিনা তার এ ত্যাগ মেনে নিতে পারেনা।ফলে সন্ন্যাসী হয়ে কুষ্ঠরোগীর সেবায় মন দেন।আকষ্মিক তামসী রিনার সাথে তার সাক্ষাৎ কৃষ্ণনেন্দুর মানসপটে ছায়া ফেলে পাপ পুণ্যের বিচার বসায়।মূলত পৃথিবীর ধর্মচেতনা ও মানবসেবার মধ্য দিয়ে কাহিনীটি পরিপক্কতা পেয়েছে।
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
April 5, 2023
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাংলায় আমেরিকান সৈন্য এসেছিল কিনা এই নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। অরূপ ভাই বললেন, সপ্তপদী পড়নি? সেখানেও তো আমেরিকান সৈন্যদের কথা বলা আছে।

বুড়ো বয়সে এসে সপ্তপদী পড়লাম। ভালো লাগেনি। এমন সেন্টিমেন্টাল রোমান্টিক কাহিনী এখন আর ভালো লাগে না। তবে তারাশঙ্করের গদ্য ভালো লেগেছে। ছোট ছোট বাক্য দিয়ে গাঁথা মালার মত। আর সংলাপে একটা থিয়েটারি ভাব আছে, এই নাটুকেপনা বেশ ভালো লাগে। নায়ক-নায়িকারাও শেক্সপিয়রের ভক্ত, এ ব্যাপারটাও বিনোদিত করে।

একটা নারীর জন্য তুমি তোমার ভগবানকে...। ইউ আর দা কজ, রিনা, ইউ আর দা কজ। নো নো নো, ও নাম তুমি উচ্চারণ করো না।কৃষ্ণেন্দু তুমি চলে যাও। চলে যাও। ডোন্ট টাচ মি, আমাকে স্পর্শ কোরো না। পিস অ্যান্ড বি স্টিল। বি দাও ক্লিন।
(উপরের বিক্ষিপ্ত সংলাপগুলো সব হুবহু কপি পেস্ট না, কাছাকাছি কিছু।)
Profile Image for Abhishek Saha Joy.
191 reviews56 followers
June 13, 2021
গল্পটা রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামীর।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমকালীন ভারতে যিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে কুষ্ঠরোগীর চিকিৎসা করেন।সবাই তাকে ডাকে বাবাসাহেব বলে।হুট করেই একদিন একটা জিপগাড়িতে এক সৈনিকের সাথে দেখেন অতিরিক্ত মদ্যপ এক উচ্ছল তরুণীকে।কৃষ্ণস্বামী তাকে চিনতে পারেন।সে আর কেউ নয়,তার একসময়কার প্রিয়মানুষ রিনা ব্রাউন।অতীতে কি হয়েছিলো রিনার সাথে কৃষ্ণস্বামীর?কেনই তারা আলাদা হলো?ভবিষ্যৎ কি রেখেছে কৃষ্ণস্বামী ও রিনার জন্যে?

প্রথমেই প্রশ্ন আসে "সপ্তপদী" কথাটার মানে কি?হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে সাধারণত অগ্নিসাক্ষী রেখে সাত পাঁক ঘুরে বিবাহ সম্পন্ন হয়।শাস্ত্রানুসারে বিয়ে এক চিরজীবনের বন্ধন।আবার শাস্ত্রে বলে কারোর সাথে যদি সপ্তপদ হাঁটা হয় তাহলে তারা বন্ধু হয়।গল্পে একসময় কৃষ্ণস্বামী তথা কৃষ্ণেন্দু নিজেকে প্রশ্ন করে - সে কি রিনার সাথে সপ্তপদ হেঁটেছে?

কৃষ্ণেন্দু গুপ্ত থেকে রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী হওয়ার যে ঘটনাপ্রবাহ এতে স্পষ্ট কৃষ্ণেন্দুর সপ্তপদী রিনা ব্রাউন নয় বরং যে মানবসেবায় সে নিয়োজিত সেই মানবের স্রষ্টা-ই তার সপ্তপদী।গল্পের ঘটনাপ্রবাহ আপনাকে পদে পদে অবাক করবে।এখানে কোন নায়ক নেই,কোন নায়িকা নেই।এই গল্পের নায়ক জীবন স্বয়ং।বেঁচে থাকলে জীবনে ভালো কিছু হবেই...

আই অ্যাম হেয়ার টু বি ক্রুসিফাইড এগেন,রিনা...
Profile Image for তিথি.
29 reviews18 followers
September 23, 2023
ভাঙা পা বালিশের উপর 'এলিভেট' করে রেখে পড়ে ফেললাম, সপ্তপদী।
"সাত পা একসঙ্গে পথ হাঁটিলে অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্ব হয়। " জীবনে কতজনের সাথে কত পদ চলেছি কখনো হিসাব করা হয় নি। তবে হিসাবে যদি কোনো সপ্তপদী বন্ধু মিলে যায়, তাদের সাথে আরো সহস্র পদ হাঁটতে চাই।
রাত দশট��� চল্লিশে শুরু করে, মাঝে বিরতি দিয়েও দুইটার মধ্যে শেষ করার মতো পিচ্চি একটা বই। কাহিনীও খুব আহামরি মনে হচ্ছিল না শুরুতে। কিন্তু ঐ যে, লেখনী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে কোনো লেখা ই কেন জানি গ্রোগ্রাসে গিলতে ইচ্ছে করে।
কুষ্ঠ রোগের চেয়েও ভয়ানক যেসব মূল্যবোধের ব্যাধি আমাদের সমাজকে ঘিরে রেখেছে, সেসব দূর করতে অনেক জন পাগলা পাদরী আসুক। যে প্রেম পাপকে সরিয়ে নতুন জীবন দেয় মানুষকে, তার জয় হোক, পৌঁছে যাক সব আর্তের দুয়ারে।
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
September 8, 2025
উফফ! এতোকাল আগে কী লিখে গেছেন জনাব!
একজন জন্ম থেকে পেয়েছিল ঈশ্বরকে আর তাই কৃষ্ণেন্দুকে ফিরিয়ে দেবার সময় তার সেই ঈশ্বরকে নাস্তিক কৃষ্ণেন্দুকে দিয়ে কাঙাল হয়ে গেল রিনা! ❤️❤️❤️
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,736 reviews355 followers
March 17, 2025
মম হৃদয়রক্তরাগে তব চরণ দিয়েছি রাঙিয়া,
অয়ি সন্ধ্যাস্বপনবিহারী।
তব অধর এঁকেছি সুধাবিষে মিশে মম সুখদুখ ভাঙিয়া--
তুমি আমারি, তুমি আমারি,
মম বিজনজীবনবিহারী॥

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সপ্তপদী’ কেবল এক প্রেমকাহিনি নয়, এটি সামাজিক গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এক গভীর প্রতিবাদ, প্রেম ও মুক্তির এক অনন্য ব্যাখ্যা। হিন্দু-ব্রাহ্মণ কিরণময়ী ও খ্রিস্টান কৃষ্ণেন্দুর প্রেমকাহিনি যেখানে সমাজের প্রচলিত নিয়মকানুনকে চ্যালেঞ্জ জানায়, সেখানে তারাশঙ্কর কেবলমাত্র একটি ব্যক্তিগত ভালোবাসার গল্প বলেননি, তিনি তুলে ধরেছেন এক বৃহত্তর মানবিক সংকট।

"জীবন যখন শুকায়ে যায়, করুণা ধারা এসো..."

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কিরণময়ী—একজন দৃঢ়চেতা, আত্মনির্ভরশীল নারী, যিনি একদিকে প্রেমে আত্মসমর্পণ করেন, আবার অন্যদিকে সমাজের রক্তচক্ষুকে অবহেলা করে নিজের পথ বেছে নেন। কিরণের চরিত্রচিত্রণ এতটাই বাস্তব, এতটাই প্রাণবন্ত যে তিনি এক রক্ত-মাংসের মানুষ বলে মনে হয়।

কৃষ্ণেন্দু—একজন আধুনিক, প্রগতিশীল যুবক, যে ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে ভালোবাসাকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে চায়। এই দুই চরিত্রের প্রেমকাহিনি একদিকে যেমন আবেগপূর্ণ, তেমনি বেদনাময়।

"ওগো তুমি যে আমার, এমনি করিয়া জ্বালাও!"

ধর্ম ও সমাজ এই প্রেমের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেওয়া কিরণ কীভাবে একজন খ্রিস্টান যুবকের প্রেমে পড়ে এবং সেই প্রেম কীভাবে তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, তারাশঙ্কর অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে তা দেখিয়েছেন। এখানেই ‘সপ্তপদী’ শুধু প্রেমের গল্প থাকেনি, এটি হয়ে উঠেছে এক গভীর সামাজিক বিশ্লেষণ।

"জয় হোক, জয় হোক, অনন্ত যাত্রার জয় হোক!"

উপন্যাসের পরিণতি পাঠকের মনে মিশ্র অনুভূতির জন্ম দেয়। কিরণময়ীর আত্মত্যাগ, কৃষ্ণেন্দুর একাকীত্ব—এ যেন এক গভীর ট্র্যাজেডি, কিন্তু এর মধ্যেও এক ধরনের মুক্তি আছে। এই পরিণতি দেখিয়ে তারাশঙ্কর আমাদের প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন—প্রকৃত জয় কি সমাজের, নাকি ভালোবাসার?

"আকাশ আমায় ভরল আলোয়, নতুন প্রাণের জোয়ারে..."

‘সপ্তপদী’ শুধু তারাশঙ্করের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস নয়, এটি এক সামাজিক দলিল। প্রেমের জন্য সংগ্রাম করা, পরিচয়ের সংকটকে অতিক্রম করা এবং আত্মপরিচয়ের সন্ধান—এই সবকিছুর সমন্বয়ে উপন্যাসটি চিরকালীন হয়ে উঠেছে।

এটি কেবল রীনা ও কৃষ্ণেন্দুর গল্প নয়, এটি আমাদের সবার গল্প—যারা ভালোবাসতে চেয়েও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির সামনে হার মেনে নিই।
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
July 29, 2021
পরিশিষ্ট পড়ার পূর্বাবধি তিন তারায় ছিলাম, তারপর একটা তারা বাড়িয়ে দিতেই হলো—হাজার হোক, আবেগী মানুষ! কিছু নতুন বইয়ের প্রচারণা দেখে আজ সকালেই বসে ভাবছিলাম, এত এত মানুষ, এত এত বই লেখে, এতসব কী নিয়ে লেখে? কতশত বছর জুড়ে কতশত লেখক মানুষের জীবনকেই উপজীব্য করে কতশত কল্পকাহিনি লিখে আসছেন—মৌলিক, অভিনব, বিচিত্র সেসব গল্প! মানুষের জীবন কি তবে আসলেই এতটা বৈচিত্র্যময়? সপ্তপদী বইখানার পরিশিষ্ট পড়ে মনে হলো, হয়তো তাই! কালাচাঁদ থেকে কৃষ্ণেন্দু থেকে রেভেরেন্ড কৃষ্ণস্বামী হওয়ার বৃত্তান্ত বইয়ের পাতায় যতটা অসম্ভব বলে ঠাওর হচ্ছিলো, তারাশঙ্করের স্বীকারোক্তিতে এমন মানুষের বাস্তবিক উপস্থিতির প্রমাণ যেন হঠাৎই সবকিছুকে ঠিক ততটাই সম্ভাব্য হিসেবে প্রতীয়মান করে তুললো! আশ্চর্য না? মানুষের জীবন বাস্তবিকই নাটকীয়তাপূর্ণ, ঘটনাবহুল, আকস্মিক বিহ্বলতায় ভরা! তাই হয়তো লাখ-কোটি বছর পেরিয়ে গেলেও লেখার শেষ হবে না, গল্পের শেষ হবে না, জীবনোপলব্ধির শেষ হবে না।
শীর্ষেন্দু মশাইয়ের সেই উক্তিখানা আবার মনে পড়ে গেল। এই বন্ধ্যা স্মৃতিশক্তির গর্ভেও সেই ছোট্ট উক্তিখানা নিজের অস্তিত্বের সঞ্চারণ করে চলেছে প্রতিটাদিন।
দুঃখময় পৃথিবীতে মানুষ কত পুরোনো হয়ে গেল! তবু মানুষের জন্ম এখনো কী রোমাঞ্চকর!


সপ্তপদীর এই প্যারাটুকু খুব মনে ধরেছে। এটুকু এখানে জমা থাক।
রাত্রি তামসী নয়। রাত্রির অন্ধকারে জীবনের মধ্য থেকেই তামসী বেরিয়ে আসে। বস্তু-জগতে, স্থান-জগতে ক্ষোভের কারণ না থাকলে, অনিয়ম না ঘটলে সে জাগে না। ক্ষোভ মিটলেই সে শান্ত হয়, স্থিত হয়। জীবনের মধ্যেই সে সদাজাগ্রত, চেতনার মধ্যে অহরহ সে সক্রিয়। সুপ্তির মধ্যে সে দুঃস্বপ্ন, অবসর-বিশ্রামের মধ্যে সে কুটিল কল্পনা। শান্তির পথে, সুখের পথে, চৈতন্যের পথে মানুষকে এগুতে সে দেবে না। নিষ্ঠুর আক্রোশে পিছন থেকে অজগরের মতো আকর্ষণ করছে। গ্রাস করতে চাইছে৷ একবার জড়িয়ে ধরতে পারলে গ্রাস না করে ক্ষান্ত হবে না।
Profile Image for Saranya ⋆☕︎ ˖.
991 reviews259 followers
July 10, 2025
সপ্তপদী aka Saptapadi (The Seven Steps)

Utterly captivating, tragically ironic and relatable💞💞💞💞

This book was sooooo BEAUTIFUL!
A love story of Krishnendu and Rina...

Krishnendu is the kind of fellow who, if he existed today, would probably be a very successful personality while simultaneously sabotaging every genuine human connection he makes.
He's earnest, he's artistic and he's utterly infatuated with Rina.
Rina, on the other hand... is a force of nature– intelligent, independent and possessing a knack for keeping Krishnendu perpetually on his toes... usually by doing the exact opposite of what he expects.

Their courtship is less a gentle dance and more a series of emotional wrestling matches each round punctuated by declarations of love, profound misunderstandings and enough dramatic irony to fuel a small theatre company.

Seven is a very holy number for Hindus. The Saptapadi here isn't just a ritual... it's a metaphor... a looming shadow and ultimately... a cruel trick of fate:(
Yes, the title promises unity... but the narrative is a masterpiece... in the exquisite agony of two souls constantly orbiting each other, never quite achieving perfect synchronicity. There is so much psychological depth in this story. This book peels back the layers of societal expectations, personal demons and the ever-present specter of ego that prevent Krishnendu and Rina from simply, you know, being happy. I was screaming "just talk to each other!"
Thankfully, everything worked out in the end:)
Profile Image for Nuhash.
221 reviews8 followers
April 28, 2023
ভালোবাসা এতটা নিঃর্স্ব করে দেয় কেন মানুশকে! হাত বাড়ালে যদি প্রিয় মানুশটাকে ছোঁয়া না যায় এর থেকে দুঃখ অন্য কিছুতে নেই। বৃষ্টি আসলে তার কথা মনে পড়ে, রোদ্দুর্র স্পর্শ করলে তাকে ধরতে ইচ্ছে করে, আকাশ দেখলে তার হাসির ঝলক ভাসে এত এত স্মৃতি গুলো নিয়ে মানুষ কখনো বাঁচতে পারে কী! তারাশঙ্করে আমি বলব না তিনি অসামান্য একটি বই লিখেছেন, তিনি হয়তো ���েখার সময় খুব কেঁদেছেন এই অমিল ত্রিকোণ প্রেমের সাক্ষী হয়ে। তার খুব করে কাঁদা উচিত রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামীর দুঃখে।

এই যে প্রিয় মানুষটাকে হঠাৎ দেখা, তাকে পুনরায় নিজের করতে চাওয়ার মতো অনুভূতি কতটা কষ্টকর কাউকে বুঝানো যাবে না। কৃষ্ণস্বামী তোমার দুঃখে আমি বৃষ্টি যদি হতে পারতাম। একটা বার আমাকে ডাক দাও, আমি তোমার মত প্রেমিকের পায়ের নীচের মাটির হতে চাই। তোমার স্পর্শে মাটি বুঝে ভালবাসার সৌন্দর্য, আমি তো ছাই, আগুনে পোড়া ভস্ম একটা। তুমি কেমন করে পারলে পল্লীগ্রামে ঐ সৌন্দর্যে সারাদিন তাকে কল্পনা না করে থাকতে। ঐ নারীর রুপ যে বুঁকে বিঁধে কৃষ্ণস্বামী।

রিনা ব্রাউন মাতাল করা রুপ নিয়ে ভালোবাসা চাইলে পেলে না, তোমাকে চাইলো অন্যের হতে দিলে না! কেন নারী? নারী শোন, ভালোবাসায় বিলীন হয়ে যদি তুমি ধ্বংস হয়ে যাওয়া পুরনো বাড়িও হও তোমাকে সম্মানের চোখে দেখবে প্রেমিক। যেমন করে মমতাজ আজো বুকে থাকে মানুষের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। তুমি তো গল্পে থাকা ভালোবাসা নও, তুমি পল্লীগ্রামে আনাচে কানাচে ফোঁটা করমচা, আর দোঁতরা ফুলের মিশেল সৌন্দর্য। ভালোবাসা দাও, না হয় নিজেকে আত্ম অহামিকায় বির্সজন দাও।

জন ক্লে্টনকে কি বলব! নদী কি কখনো সাগরে মিশে, সাহেব! সৌন্দর্য যতই অনাদর হোক, তবুও তোমার মত নীচ, উইপোকার সাথে তাদের মিলন না হোক।
Profile Image for Raihan Atahar.
120 reviews26 followers
May 30, 2019
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৭১) বাংলা সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য কথাসাহিত্যিক। তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পগ্রন্থ, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণ কাহিনী। মূলত ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। তাঁর রচিত 'সপ্তপদী' উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে।

'সপ্তপদী' উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতবর্ষের মেদেনীপুর - বাঁকুড়া জেলার কোন এক গ্রামে। কুষ্ঠরোগের মহামারি চলছে তখন আশেপাশের গ্রামগুলোতে। তাদের সেবায় নিয়োজিত আছেন একজন ডাক্তার, যাকে সবাই 'পাগলা পাদরী' নামে চেনে। ডাক্তারের ভাল নাম রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী। মানুষের সেবা করে তার দিন কাটে। একদিন তার কাছে এক মাতাল এংলো-ইন্ডিয়ান নারীকে নিয়ে আসা হয়। তাকে দেখে ডাক্তার সাহেব চমকে ওঠেন, ফিরে যান তার মেডিকেল কলেজে পড়ার দিনগুলোতে।

মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র কৃষ্ণেন্দু। দুরন্তপনা তার বৈশিষ্ট্য। খেলার মাঠে প্রতিপক্ষকে এক বিন্দু ছাড় দিতে সে নারাজ। ফুটবল খেলতে যেয়ে জন ক্লেটন নামের এক ইংরেজ ছাত্রকে অপদস্থ করে সে৷ বিষয়টি নিয়ে ক্লেটনের বাগদত্তা ও সহপাঠিনী রীনা ব্রাউনের সাথে তর্ক লেগে যায় কৃষেন্দুর। এক পর্যায়ে ক্লেটন ও রীনার সাথে বন্ধুত্ব হয় তার৷ রীনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে কৃষ্ণেন্দু। কিন্তু বন্ধুর ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে রীনাকে তার ভালোবাসার কথা জানায় না সে৷ কিছুদিন পর ক্লেটন রীনাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করলে কৃষ্ণেন্দু তাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। রীনাও তাতে সম্মতি জানায়। রীনার বাবার কাছে কৃষ্ণেন্দু বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলে মিস্টার ব্রাউন তাকে খ্রিস্টান হবার শর্ত জুড়ে দেয়। ভগবান বা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী কৃষ্ণেন্দু তা মেনে নিয়ে খ্রিস্টান হয়। তার পরিবর্তিত নাম হয় রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী। তার বাবা বিষয়টি জানতে পেরে মেনে নেয় না৷ অন্যদিকে ধর্ম পরিবর্তন করায় রীনা রেগে যায়। তার যুক্তি, একজন মেয়ের জন্য যে ধর্ম ত্যাগ করতে পারে, অন্য কোন সুন্দরী মেয়ের জন্য সে তাকেও ত্যাগ করতে পারবে৷

এরপর পেরিয়ে যায় অনেকগুলো বছর। রীনার প্রত্যাখ্যান কৃষ্ণেন্দুর চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনে। বিলাসী জীবন ছেড়ে সে চলে আসে অজপাড়াগাঁয়ে। কিন্তু রীনার সাথে কী এমন ঘটেছিলো যে সে এমন উন্মত্ত জীবন বেছে নিয়েছিলো? দু'জনের দেখা হবার পর তাদের ভাগ্যে কি কোন পরিবর্তন এসেছিলো? এসব কিছুর উত্তর মিলবে 'সপ্তপদী' উপন্যাসটিতে।

'সপ্তপদী' একটি সমাস নিষ্পন্ন শব্দ যার অর্থ সপ্ত বা সাত পা আছে যার। কিন্তু এর একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার আছে। সনাতন ধর্মমতে, একসাথে সাত পা হাঁটলে চির বন্ধন অর্থাৎ বিয়ে হয়। বিবাহ বন্ধনের আনুষ্ঠানিকতা বুঝাতে 'সাত পাঁকে বাঁধা' বা 'সপ্তপদী' ব্যবহৃত হয়। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইংরেজদের শোষণ, শিক্ষিত যুবকদের ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং সর্বোপরি নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারাকে উপজীব্য করে 'সপ্তপদী' উপন্যাসটি রচনা করেছেন।

উপন্যাসের মূল দুটি চরিত্র কৃষ্ণেন্দু ও রীনা ব্রাউন। প্রথম জীবনে কৃষ্ণেন্দুকে নাস্তিক হিসেবে দেখানো হলেও পরবর্তীতে তাকে দেখানো হয়েছে মানবধর্মে দীক্ষিত একজন নিষ্ঠাবান ডাক্তার হিসেবে। অন্যদিকে যে রীনা ব্রাউন ধর্মত্যাগী কৃষ্ণেন্দুকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো, সময়ের পরিবর্তনে সে হয়েছে মাতাল দেহপসারিনী।

উপন্যাসের আরো দুটি ছোট চরিত্র দেখতে পাই আমরা। এর মধ্যে একজন কৃষ্ণেন্দুর বাবা, সন্তানের জন্য যে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এই বাবাই ধর্মত্যাগ করায় কৃষ্ণেন্দুর প্রতি কঠোরতম সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হননি৷ অন্যদিকে, কুন্তী চরিত্রটির মাঝে আমরা মায়াময়ী একজন মাকে দেখতে পাই, মা হয়েও যে কিনা 'মা' ডাক শুনতে পায়নি।

উপন্যাসে বাড়তি প্রাপ্তি শেক্সপিয়রের 'ওথেলো' ট্রাজেডির সংলাপগুলো। কৃষ্ণেন্দু ও রীনা ব্রাউনের মুখে 'ওথেলো'র সংলাপগুলো উপন্যাসটিকে আরো প্রাণবন্ত করেছে৷ শুরুর দিকে একটু ধীর গতি সম্পন্ন মনে হলেও পৃষ্ঠা যত বেড়েছে, উপন্যাসে তত গতি এসেছে। সব মিলিয়ে ক্লাসিক এই উপন্যাসটি রুচিসম্পন্ন পাঠকের চিন্তার খোরাক যোগাবে৷

উপন্যাসটিকে উপজীব্য করে উত্তম কুমার প্রযোজিত, অজয় কর পরিচালিত এবং উত্তম-সুচিত্রা জুটি অভিনীত 'সপ্তপদী' (১৯৬১) সিনেমাটি তৈরি হয়। উপন্যাসের সাথে বেশির ভাগ কাহিনী মিল থাকলেও সম্পাপ্তির দিকে এসে কাহিনী সম্পূর্ণ বদলে গেছে সিনেমাটিতে। এই পরিবর্তনটুকু দর্শকদের কথা চিন্তা করে আনা হয়েছে। উত্তম-সুচিত্রা জুটি এখানে যে দারুণ প্রাণবন্ত অভিনয় উপহার দিয়েছেন, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। "এই পথ যদি না শেষ হয়"- এই জনপ্রিয় গানটি এই সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে। উপন্যাস এবং সিনেমা দুটিই উপভোগ করার আমন্ত্রণ রইলো।
Profile Image for Tanxeena Milee.
4 reviews7 followers
August 31, 2018
বই পাগলা মানুষজন বই নিয়ে ফ্যাসিনেটেড হবে এটাই স্বাভাবিক। কোন একটা বই পড়ে কান্না আসবে, কোন বই পড়ে হাসি, কোনটায় বেদনায় তার মন আর্দ্র হবে। বই পড়তে ভালোবাসি, তাই বই পড়ি। কোন কোন সময় আনন্দে ভাসি, কোনদিন বেদনায়.. কখনো হাসিতে ফেটে পড়ি। কিন্তু খুব কম বই-ই আছে আমার মধ্যে ঘোর লাগা অনুভূতি তৈরী করতে পারে। যে ঘোরের পেছনে আমি কোন অনুভূতি কাজ করছে বলতে পারবনা। এই অনুভূতিটার ব্যাখ্যা, নাম বা সংজ্ঞায়ন করবার লেখনী ক্ষমতা আমার নেই। ‘সপ্তপদী’- উপন্যাসটি আমার মনে এই ’অদ্ভুত অনুভূতি’ তৈরী করতে পেরেছে। সব উপন্যাস পড়ে মায়া জন্মে না। কিছু বই আছে যা আপনাকে নতুন করে ভাবাতে, নতুন করে জানতে সাহায্য করবে। ’প্রেম, ঈশ্বর, মানবতা, মুক্তি’র মায়ায় আমাকে খুব কম উপন্যাসই টানতে পেরেছে। আমার পড়ার পরিধি হয়তো ব্যাপক না। কিন্তু এই যে একিসাথে এই এতোকিছুর মায়ায় বাঁধতে পারা উপন্যাসের তালিকায় ‘সপ্তপদী’ যে একধাপ এগিয়ে থাকবে তা লিখে দিতে পারি।
একজীবনে খুব ছোট ছোট অনেকগুলো ইচ্ছের মধ্যে একটা হলো ভালো ভালো বই পড়া। এমন বইগুলো পড়তে পারলে তখন নিজেকে খুব ‘রিচ’ মনে হয়।
তারাশঙ্কর আমার ছোটবেলা থেকেই প্রিয় লেখক। ’কবি’ দিয়ে পরিচয়। ’সপ্তপদী’ দিয়ে আবারো নতুন করে চেনা। উপন্যাসের চরিত্রগুলো বাস্তব বলেই মনে হচ্ছিলো। লেখক পরিশিষ্টে লিখেছেন; "Truth is stranger than fiction!’- একটা সুন্দর আর সত্যের মিশেল অনুভূতি উপন্যাসের মাধ্যমে দেয়ার জন্য ’সপ্তপদী’ আমার নিজের সেরা বইয়ের তালিকায় বেশ উপরেই থাকবে। <3 <3
Profile Image for Sourav Das.
42 reviews76 followers
September 17, 2015
সত্য আপেক্ষিক।সাথে তার সাধনাও।জীবন নামের আলো-অন্ধকারে যাবার এই খেলার মাঝে সত্য থাকে শুধু মানুষের মাঝে।মানব সত্য।নদী পার হবার অবলম্বন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু ঘুরে-ফিরে সেই অপর পারেই যাওয়া।“It is the cause, it is the cause my soul”…
Profile Image for Asif Khan Ullash.
143 reviews8 followers
July 1, 2024
ক্ল্যাসিক পড়ার সবচেয়ে বড় বাঁধা হচ্ছে সময়। সব ক্ল্যাসিক উপন্যাসই ঠিক ওই অর্থে “টাইমলেস” নয়। সপ্তপদী যদি ২০২৪ সালে না এসে ৬০/৭০ এর দশকে পড়তাম তাহলে এটার প্রভাব হতো প্রশ্নাতীত। যে সাহস ও আকাঙ্ক্ষা কৃষ্ণেন্দু চরিত্রের মাধ্যমে তারাশঙ্কর দেখিয়েছেন সেটা সেসময়ের সমাজে অব্যশই অকল্পনীয় ছিল।


তবে, না আছে সে রাম না আছে অযোধ্যা। এতগুলো দশকের ব্যবধানে মানুষ, সমাজ, দেশ, পৃথিবী সবকিছু আমূল পালটে গিয়েছে। এই সময়ে এসে উপন্যাসটির- চরিত্র, সংলাপ বা পারিপার্শ্বিকতা কোনকিছুর সাথেই রিলেট করা যায়না ঠিক, কিন্তু যে “ডিভাইন কানেকশন” আমরা দেখি চরিত্রগুলোর মধ্যে সেটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই, যদিও এর প্রকাশ অত্যন্ত মেলোড্রামাটিক তবে সেটা তো তখনকার সময়ের দাবী, লেখকের দোষ নয়।


যদিও খুব অল্প তবে তখনকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কালচার, ব্রিটিশদের শঠতা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা- উদ্দামতার কিছু টুকরো টুকরো উদাহরণ চোখে পড়ে; বইয়ের মূল প্লটটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লেখা বলে সেই অংশগুলোর একটু হলেও ঐতিহাসিক গুরুত্ব তো আছে।
Profile Image for Abdul Ahad.
58 reviews
June 9, 2024
দু’মাস তো হবেই কোনো বই ছুঁয়েও দেখিনি। এর মধ্যে অবশ্য বেশ কিছু মুভি দেখা হয়েছে।
যাহোক টেবিলে বেশ কিছুদিন ধরে পরে থাকা বাতিঘর ধ্রুপদি সিরিজের এই চমৎকার মলাটের বইটির উপর হঠাৎ চোখ পরায় মনে হলো কেন নয়?

সত্য বলতে খুব ভালো লাগেনি। তবে শেষের দিকে রিনা আর কৃষ্ণেন্দুর কথোপকথন ভালোই লেগেছে। সেখানকার একটা সংলাপ আমার কাছে বেশ মেটাফোরিক্যাল মনে হয়েছে। কৃষ্ণেন্দুকে প্রত্যাক্খান করার পরে নিজের সম্পর্কে অপ্রিয় সত্য জানার পর তার ভুল বুঝতে পেরে রিনা বলেছিল,
"আমাকে চাও তুমি? প্রেম নেই। দেহ দিতে পারি। প্রাণ নেই। মন নেই। মনও গেছে। প্রেমও গেছে। চাও তুমি প্রাণহীন, মনহীন শুধু কোমল মাংসপিণ্ডের এই দেহ?
Profile Image for Aaneela_reads.
65 reviews2 followers
June 21, 2022
সত্য কাহিনী অবল্বনে তবে চরিত্রগুলো লেখক এর বাস্তব নানান অভিজ্ঞতার সম্মিলন কেবল। কলমের জাদুতে জড়িয়ে একত্রিত মাত্র। তবে তাই বলে তাদের নিজস্বতা যেমন অটুট,তেমনি তাদের মেলবন্ধন।
ছোট কাহিনী, কিছুটা predictable ও তবে সময় ভালো ভাবে কেটে যাওয়ার মত।
Profile Image for K. R. B. Moum .
209 reviews17 followers
October 14, 2017
"রিক্ততাই সাধারণভাবে মানবিক। পূর্ণতা অসাধারণ। অস্বাভাবিক না হলেও দুর্লভ।" [পৃঃ ৭৯]
Profile Image for Naima Ferdous.
15 reviews8 followers
March 30, 2020
মানুষের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ তার আত্ম প্রবঞ্চনায়। নিজেকে সে যতো বেশি প্রবঞ্চনা করেছে তার চাইতে বেশি প্রবঞ্চনা আর কেউ করেনি।💙
Profile Image for Mahmuda Monika.
14 reviews2 followers
May 27, 2021
এই কোয়ারেন্টাইনে যেসব বই পড়া হয়েছে তাতে আমি খানিকটা ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম।যে লেখকের বই পড়ছি তার কয়েকটা পরিচিত বই পড়ে ফেলবো,এরকম।পুরোপুরি সফল হইনি।তো সেটা মাথায় নিয়ে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় পড়তে গিয়ে "সপ্তপদী" উপন্যাসের সন্ধান পাওয়া।

প্রাথমিকভাবে এটাকে প্রেমের উপন্যাস মনে হলেও এর মধ্য দিয়ে দৃঢ় জীবনদর্শনের পরিচয় দিয়েছেন লেখক।ধর্মবোধের ব্যাপারটাকে অন্যভাবে তুলে ধরেছেন।

ব্রাহ্মণের ঘরে জন্ম নেয়া ঈশ্বরে বিশ্বাসহীন প্রাণপ্রাচুর্যে পরিপূর্ণ মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র কৃষ্ণেন্দু।ঘটনাক্রমে সে প্রেমে পড়ে খ্রিস্টান ধর্মানুরাগী রিনা ব্রাউনের।কিন্তু রিনা ব্রাউনের বাবা শর্ত দেয় যে কৃষ্ণেন্দু যদি ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয় তবে রিনার সাথে তার বিয়ে দেবে।ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকার পরও এ কথায় কৃষ্ণেন্দু ধাক্কা খায়।সেই ধাক্কা সামলে উঠে নিজের বাবার কাছে মৃত বলে গৃহীত হবেন জেনেও রিনা ব্রাউনের প্রতি তার প্রচণ্ড ভালোবাসা তাকে ধর্মান্তরিত হওয়ার পথেই চালনা করে।কিন্তু খ্রিস্টান হয়ে যখন সে রিনার সামনে যায় রিনা তার ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা শুনে আঁতকে ওঠে,রিনার মনে হয়, কৃষ্ণেন্দু ভয়ঙ্কর। বিভিন্নরকম চিন্তা রিনার মাথায় জেঁকে বসে এবং সে কৃষ্ণেন্দুকে ভালোবাসলেও তাকে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে কৃষ্ণেন্দুকে ফিরিয়ে দেয়।
সবকিছু হারিয়ে কৃষ্ণেন্দু স্তব্ধ হয়ে যায়....এখানে এসে উপন্যাসের কাহিনি নতুন দিকে মোড় নেয়।
রিনার কথা কৃষ্ণেন্দুর জীবনবোধে নাড়া দেয়,গৃহত্যাগী হয়ে সে ঈশ্বরকে খুঁজতে বের হয় এবং নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে খুঁজে পায়ও-মানুষের মধ্যে।কিন্তু রিনা? এমন কি ঘটে যার জন্য রিনার মনে হয় যে মৃত ঈশ্বর তার নিজের মধ্যে পঁচছে,সেটার গন্ধ উঠছে!
কাহিনির এই অংশটায় বই রেখে ওঠা যায় না,লেখক রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী(কৃষ্ণেন্দু) এবং রিনা ব্রাউনের কথপোকথনের মধ্য দিয়ে এমনভাবে তাদের জীবনদর্শনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন যা পাঠককে কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে নিজের জীবনবোধ নিয়ে ভাবানোর উপযোগী।

এছাড়াও এই উপন্যাসের শুরুর দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব বাংলার মানুষদের জন্য কতোটা ভয়াবহ ছিল তার চিত্র এঁকেছেন।প্রাচীন আমলের মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলার বসবাসরত জনগোষ্ঠীদের বিশে�� করে ছত্রীদের জীবনযাপনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা আমার বরাবরই পছন্দ।এই উপন্যাসের আরেকটা সুন্দর দিক হচ্ছে ওথেলো ট্রাজেডির কিছু লাইন রিনা এবং কৃষ্ণেন্দু চরিত্রের মুখ দিয়ে লেখক বারবার প্রকাশের মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলেছেন।"It is the cause.. It is the cause, my soul!","Let me look at your eyes,look in my face.."

সপ্তপদী নাম দেয়ার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে।শাস্ত্রে বলা হয়,উপনয়নের সময় তিন পায়ের বেশি অগ্রসর হতে নেই,তাতে আর ফেরার উপায় থাকে না।আর সাত পা একসঙ্গে হাঁটলে অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্ব তৈরি হয়।তো,পরোক্ষভাবে দুইটি ভিন্ন জীবনবোধের মধ্য দিয়ে রিনা আর কৃষ্ণেন্দুর পাশাপাশি সপ্তপদ হাঁটা হয়ে গিয়েছিল,ফলে না চাইতেও এরা পরস্পরের জীবন বদল করে নিয়েছিল এবং আজীবনের জন্য একটা অদৃশ্য বন্ধনে একে অপরের সাথে থেকে গিয়েছিল যা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে গিয়ে তারা উপলব্ধি করতে পারে।
এই উপন্যাসের একটা উক্তি হচ্ছে-
"মানুষের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ তার আত্ন-প্রবঞ্চনায়। নিজেকে সে যত বঞ্চনা করেছে তার চেয়ে বেশি বঞ্চনা আর কেউ করেনি।"
আরেকটা পছন্দের উক্তি আছে-"উরা বলে মাঝি, জাত আমার নাই।তবে মানুষ তো বটি।তুইও মানুষ, আমিও মানুষ,ওই মেয়েটাও মানুষ।"
একটা উপন্যাস যেটা পড়তে গেলে পড়ার চেয়ে বেশি অনুভবের ব্যাপার থাকবে, অদ্ভুতরকমের ভালো লাগা কাজ করবে,অস্থিরতা কা�� করবে -এমন কিছু পড়তে চাইলে নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের "সপ্তপদী" উপন্যাসটিকে।
ওহ!আরেকটা কথা!এটা পড়ার পর ইচ্ছে হলে এই উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বন করে অজয় কর নির্মিত,উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমা "সপ্তপদী" দেখে নিতে পারেন যেই সিনেমা থেকে আমরা পাই "এই পথ যদি না শেষ হয়……."
Profile Image for Ruma Chaudhuri.
1 review
September 24, 2024
সপ্তপদী ~ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়


সপ্তপদী এক উত্তরণের গল্প। সামাজিক, মানসিক তথা আধ্যাত্বিক উত্তরণ। কালাচাঁদ থেকে কৃষ্ণেন্দু আর কৃষ্ণেন্দু থেকে কৃষ্ণস্বামী হয়ে ওঠার গল্প। এক জীবন আদর্শের গল্প যেখানে প্রাচীন ভারতীয় প্রজ্ঞা , পাশ্চাত্যের আধুনিকতার মন্ত্রে প্রজ্জ্বলিত হয়েছে ত্যাগের মহিমায়,  মানবিকতার আদর্শে। 

খ্রীষ্ট মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েও গেরুয়া পোশাকে গ্রাম্য অশিক্ষিত গরীব মানুষের সেবা যেন মনে করিয়ে দেয় প্রাচীন ভারতীয় আদর্শের কথা।  

ব্রিটিশ ভারতের বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর অঞ্চলের লালমাটির আদিবাসী গ্রামীণ পল্লীতে তার আশ্রম। কৃষ্ণস্বামী গ্রামের মানুষের দিন রাতের ভরসা আশ্রয় - বাবাসাহেব,  যেন সেই উপনিষদের ঋষি  যিনি সকল মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করে। 

 এঁদের মধ্যেই তিনি তার ঈশ্বরের সেবা করেন।  


পাড়াগাঁয়ের ছেলে কালাচাঁদের জন্ম এই বাংলারই এক পল্লীগ্রামের এক বৈদ্য পরিবারে । বাবা পারিবারিক বৈদ্যের পেশায় না থেকে চাষবাসেই জীবন যাপন করেছেন। কিন্তু তিনি চান ছেলে ডাক্তার হোক। সেই কারণেই কালাচাঁদ  কলকাতায় সেন্টজেভিয়ার্স কলেজে পড়তে আসে। তার গ্রাম্য স্বভাব,  গ্রাম্য উচ্চারণ,  কথাবার্তা আচার আচরণ কাটিয়ে সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে সে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে কৃষ্ণেন্দু। কালাচাঁদ গুপ্ত থেকে কৃষ্ণেন্দু। সে ছিল পাহাড়ী নদীর মতো বন্য। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,  " সে ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করতো না কিন্তু বিশ্বাস করত তার প্রাণশক্তিকে। "  সে যেন,  খাঁটি ইস্পাতে গড়া দা য়ের মতো ধারালো তীক্ষ্ণ অনমনীয় দৃঢ়। কিন্তু, ঘষা মাজা ঝকঝকে পালিশ না, মলিন। 


আর কৃষ্ণেন্দু, মেডিক্যাল কলেজের সেরা ছাত্র। একদিকে ফুটবল অন্যদিকে নাটক,  ডাক্তারী পড়ার সাথে সাথে সব বিষয়য়েই তার সাচ্ছন্দ্য চলাচল। লাট সাহেব জেমস ব্রাউনের বাড়িতে তার অবাধ গতি। তার বন্ধু সামরিক অফিসার ( ডাক্তার)  জন ক্লেটন ও ক্লেটনের বাগদত্তা রিনা ব্রাউন তার বন্ধু। এই  কৃষ্ণেন্দু, কালাচাঁদের মতো কথায় কথায়  গ্রাম্য উচ্চারণে 'ক্যানে, ক্যানে ' বলে কথার মাঝখানে বিরক্তি উৎপাদন করে না।  কলকাতার ধর্মতলায় তার নতুন চেম্বারে সে সেই ফিরিঙ্গীদের চিকিৎসা করে। তার আভিজাত্য ফুটে উঠেছে তার পোশাকে কথা-বার্তায় ব্যক্তিত্বে।


কৃষ্ণস্বামীর পরম প্রেম মানবতার সেই পূর্ণতায় উত্তীর্ণ  যেখানে আমরা আমাদের সাধারণত্ব দিয়ে তার নাগাল পাই না।  তাঁর একলা চলার পথ ঈশ্বরের পথ। সেবা ত্যাগ ও তিতিক্ষার মন্ত্রে চলার পথ। তিনি স্থানীয় মানুষের বাবাসাহেব আর রীনা ব্রাউনের কাছে স্বয়ং ঈশ্বর।  


তামিলনাড়ুর কুম্বাকোনম লেপার এসাইলাম ( kumbakonam leper asylum) এ কৃষ্ণস্বামী কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ,  তার চেহারায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কুষ্ঠ রোগের চিহ্ন,  তখনও তিনি অন্যান্য 

কুষ্ঠ রোগীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।  অন্তরের শূন্যতায় অনুভব করেছেন পরমেশ্বরের পূর্ণতা -  সঁপেছেন নিজেকে ঈশ্বরের সেবাব্রতে। নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বৃহতের মাঝে।    

পড়তে পড়তে চোখের সামনেই ভেসে ওঠে কুম্বাকোনম লেপার অসাইলামের  (kumbakonam leper asylum) এক রোদ ঝলমলে সকাল। 


এইরকম সময় একদিন রিনা ব্রাউন আর জন ক্লেটন তার সাথে দেখা করতে আসেন।  কৃষ্ণস্বামীর কাছে রিনা, আজও স্ফটিকের মূর্তির মতো পবিত্র কুমারী যাকে দেখে কৃষ্ণস্বামীর মন ভরে যায়। 


সাত পা একসাথে হেঁটে বন্ধুত্বের সীমা পেড়িয়ে  সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নবদম্পতি রীনা ও ক্লেটন কে কৃষ্ণস্বামী দু'হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন।  আর স্বয়ং এগিয়ে চলেছেন একলা পথে ঈশ্বরের খোঁজে।


----------------------রুমা চৌধুরী
Profile Image for Monisha Mohtarema.
86 reviews2 followers
February 24, 2024
সপ্তপদ কিংবা সাত পা একসঙ্গে পা হাঁটিলে হিন্দু শাস্ত্রমতে অবিচ্ছেদ্য বন্ধু হয় । উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কৃষ্ণেন্দু’র উদ্দেশ্যে মন ক্ষুন্ন হয়ে কথাটি ছুঁড়ে দেয় তার বাবা , যেখানে নিজের জাত হিন্দু বাক্ষ্মণ হয়েও তার পুত্র একজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ানের প্রেমে পড়ে সব ভুলে। নিজের সমাজ থেকে অনেক দূরে সরে যেতে থাকে কৃষ্ণেন্দু। যে নারীর প্রেমে সে নিজেকে সমর্পণ করে ধর্ম ভুলে, সেই খ্রিস্টান রিনা ব্রাউন ভালোবাসে ক্লেটন নামের এক ইংরেজকে । কৃষ্ণেন্দুর মেডিকেল কলেজের বন্ধু ।


 রিনা ব্রাউনের সাথে ক্লেটনের বিয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ইংরেজ খ্রিস্টান জাতের বিশুদ্ধতার জন্যে থেমে যায় অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রিনা ব্রাউনের সাথে ইংরেজ যুবক ক্লেটনের বিয়ে ।ক্লেটনের বিয়ের পর কৃষ্ণেন্দু রিনা ব্রাউনের বাবা মিস্টার ব্রাউনের কাছে তার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মিস্টার ব্রাউন তাকে খ্রিস্টান হওয়ার শর্ত দেয় । সেই শর্তে রাজি হয়ে রিনা ব্রাউনের জন্যে সে খ্রিস্টান হলেও রিনা ব্রাউন আর তাকে গ্রহণ করেনি , ফিরিয়ে দেয় কৃষ্ণেন্দুকে । যে নিজের ধর্ম এবং ঈশ্বরকে ছেড়ে আসতে পারে , সে একদিন অন্য নারীর জন্যে আমাকেও ত্যাগ করবে এ বাক্য কৃষ্ণেন্দু’র উদ্দ্যেশে ছুঁড়ে দেয় রিনা ব্রাউন ।



 এরপর থেকে ঈশ্বরকে খোঁজার চেষ্টায় বাঙালি কৃষ্ণেন্দু খ্রিস্টান পাদ্রী হয়ে যায় মানুষের কাছে । পাদ্রীর গেরুয়া ছোপানো পোশাকে গ্রামের মানুষের কাছে পাগলা পাদ্রী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে , যে নিজের ডাক্তারি সেবা দিয়ে মানুষের চিকিৎসা করে বেড়ায়।গ্রামের সহজ-সরল মানুষগ��লোকে প্রতিদ��ন সাইকেলে চেপে সেবা দিয়ে বেড়ায় এবং উনিশশো চুয়াল্লিশ সাল যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দুর্ভিক্ষ মহামারী আকার ধারণ করে তখন দুর্বল চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষগুলোকে সেবা দিয়ে ব্রতী হয় মানব ধর্ম পালনে।

যে নারীর জন্যে ধর্ম এবং নিজের সমাজকে ত্যাগ করে কৃষ্ণেন্দু হয়ে গিয়েছিল পাদ্রী রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামী , সেই কৃষ্ণেন্দু’র আর কখনো পাওয়া হয়নি রিনা ব্রাউনকে।



ভালো লাগার মতো কিছু লাইন -

•'পৃথিবী মাটির। পৃথিবী কঠিন। সূর্যের আলো সোনা নয়, বড় উত্তপ্ত। মানুষের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ তার আত্মপ্রবঞ্চনায়। নিজেকে সে যত বঞ্চনা করেছে তার চেয়ে বেশি বঞ্চনা আর কেউ করে নি। অলীককে সত্য বলে ধারণা করে তার পিছনে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে একদিন সে মুখ থুবড়ে পড়ে হাহাকার করে মরে। সেই অলীকের মোহে সোনাকে বলে মাটি। মুখের খাদ্য ঠেলে দিয়ে উপবাসে নিজেকে পীড়িত করে।'

•'গুণের আসরে মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রতিযোগিতা যেমন তার স্বভাব, প্রতিযোগিতার পর গুণগ্রাহিতাও তার তেমনি প্রকৃতি-ধর্ম।'

• 'বাহির সংসারে মানুষ মরলে তাকে পুড়িয়ে ছাই করি, মাটির তলায় কবর দি। মনের সংসারে মানুষ জীবিতকেও মাটির তলায় চাপা দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়।'
Profile Image for Shahriar  Fahmid.
113 reviews15 followers
October 24, 2025
রোজ বাড়ি ফিরি রাত করে। সকালে বেরোই, খাপছাড়া ক্লাসের দেয়ালে মাথা রেখে ঝিমাই। জীবন এখনই কত ব্যস্ত। আর ক'টা বছর পর পড়াশোনা থেকে হাতে-কলমে ইস্তফা দেবো, তারপর আরেক যুদ্ধ, তারপর আরেক, তারপর, তারপর আরোও। মৃত্য। ডিকিনসন যেমন বলেছিলো,

❝Because I could not stop for death
He kindly stopped for me-❞

"তারাশঙ্করের নাম পড়লেই আমার চোখে কোনো থুত্থুরে বুড়ো, যার হাঁটতে গেলে লাঠি লাগে আর চোখে ছানি পরে গিয়েছে, ছবি ভেসে উঠে। কিন্তু তার লেখা মডার্ন। ফিলোসফিতে পোস্ট-মডার্নিজমের ছাপ স্পষ্ট যদিও তিনি এই সময়কার নন। সপ্তপদী-কে কলোনিয়াল আর পোস্ট-কলোনিয়াল দুটো সাহিত্যযুগের আওতায়-ই ফেলা যাবে। ❝ভারতীয় শাস্ত্রমতে একসঙ্গে সাত পা হাঁটলে নাকি মিত্রতা হয়। বিয়েতে অগ্নিসাক্ষী করে সাত পাক ঘুরে বাঁধা পড়েন স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু মানুষ যখন ঈশ্বরকে খোঁজে, তখন সে হয় পড়ে একা, হাঁটে না কারোর সাথেই, বন্ধুর সাথেও না। একেবারে একা।❞ এটাই সপ্তপদী।
নিখাঁদ প্রেমের উপন্যাস। এটা বললে ভুুল হবে। অপোজিট জেন্ডারের প্রতি আকাঙ্ক্ষা এখানে মুখ্য বিষয় না, বরং খোদা বা ইশ্বরকে পাওয়া না পাওয়া কিংবা এক্সিসটেনশিয়াল ক্রাইসিসটাই মুখ্য। প্রথাগত ধর্ম মেনে মেনে মানুষ একসময় মানবধর্মে বিশ্বাসী হয়ে উঠে; তারাশঙ্কর তাই বলতে চেয়েছেন। আবার রেভারেন্ড কৃষ্ণস্বামীর শুধু রিনা ব্রাউনকে বিয়ে করার জন্য ধর্মান্তরিত হওয়াটা নেহায়েত ভালোবাসায় মানে কোনো বাঁধা টাইপ কিছু না বরং তারাশঙ্কর ধর্মের প্রভাব সত্যিকার অর্থেই কতটা ক্ষীণ মানুষের জীবনে সেটা বলতে চেয়েছেন। আবার পারিবার, সমাজ থেকে প্রাপ্ত কষ্ট-যন্ত্রণা কিভাবে একজন মানুষকে আল্লাহ অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে ইন্ডাইরেক্টলি প্রভাবিত করে সেটাও আমরা দেখি রিনা ব্রাউনের টিনেজ পেরুনো মিড এইজের সময়গুলোতে। উপন্যাসে সবাই সবকিছু পেলো, রেভারেন্ড কিছুই পেলো না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে রেভারেন্ড তো গড বা খোদা কে পেয়েছে কিন্তু আদৌ কি কখনো আল্লাহকে পুরোপুরি পাওয়া যায়!"

টিউশন করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে যখন দেরি হয়ে যায়, তখন বাতাসে মৃদু মৃদু শীতের ঘ্রাণ জমে থাকে। ছাতিম গাছ নাই এখানে, অন্তত যেই গ্রামটাতে আমরা থাকি। থাকলে ভালো হতো। বয়স পঁচিশ ছুঁই ছুঁই। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, কেউ আমার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে থাকুক, যেমনটা রিনা ব্রাউন চেয়েছিলো কৃষ্ণেন্দু যেন ওই বাংলো ছেড়ে চলে যায়! কিন্তু কৃষ্ণেন্দু গেলো না, স্থির দাঁড়িয়ে রইলো।
Profile Image for Pathok Bolchi.
97 reviews5 followers
March 14, 2023
“এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?…”

বাঙলায় জন্মে এই কালজয়ী গান শোনে নি এমন বাঙালি আছে কী না, জানি না। উত্তম সুচিত্রা জুটির কালজয়ী সিনেমা 'সপ্তপদী' অনেকের অদেখা থাকতে পারে কিন্তু প্রেমিক প্রেমিকা একসাথে বের হয়ে পথের গন্তব্য জেনেও ঈশ্বরের কাছে, “এই পথ যেন শেষ না হয়,,” এমন প্রার্থনা করে নিজেদেরকে উত্তম সুচিত্রা ভাবে না, এমন কপটকপটী না থেকেই পারেই না। আর এই অমর গল্পটি লিখেছিলেন, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সমস্ত সাহিত্য কর্মেই দেখিয়েছেন অসাধারণ মুন্সিয়ানা, জীবনবোধ যা তাঁর সাহিত্যকে করেছে বিষয়গত আর মন্ময়। 'সপ্তপদী'ও তেমনি তাঁর সাহিত্যমূল্য সমৃদ্ধ একটি মৌলিক রচনা। সেখানে দেশের সামগ্রিক শ্রেণি, বোধ ও ব্যক্তির সংকটকে অনুভব করে তিনি উপন্যাসটি রচনা করেছেন। দেশ-জিজ্ঞাসা, বিশ্বরহস্য-জিজ্ঞাসা অথবা ব্যক্তির মানসিক টানাপড়েন সুন্দরভাবে এসেছে এই 'সপ্তপদী' উপন্যাসে।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যে সময় আঞ্চলিক উপন্যাস রচনায় অগ্রসর হন, সেই সময় বাংলা সাহিত্যে গ্রামীণ জীবন কেন্দ্র করে আধুনিক উপন্যাস রচনায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে তারাশঙ্কর সারাজীবন পরিচিত ভূখের জনজীবন থেকেই নিজের উপন্যাসের উপাদান সংগ্রহ করে গিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁর উপন্যাসে কল্পনার অবকাশ থাকলেও এগুলো প্রধানত বাস্তব জীবন ও সমাজচিত্রের আধারে গড়ে উঠেছে যা 'সপ্তপদী ও কবি' উপন্যাসে দেখতে পায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অরবিন্দ ঘোষ তাঁরা নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। কিন্তু তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ও যে নোবেলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সেই তথ্য অবশেষে আমরা গতবছরের শেষ নাগাদ জেনেছি। ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল জেতেন পাবলো নেরুদা। সেবছর যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন তারাশংকরও। ৫০ বছর আগের সেই তালিকা আবার বাঙালির জন্য বয়ে এনেছে সুখবর। বিশেষ কোন সৃষ্টির জন্য লেখক মনোনয়ন পেয়েছিলেন জানা যায় না।
কিন্তু আমার মনে হয় 'আরোগ্য নিকেতন,কবি ও সপ্তপদী ' নিঃসন্দেহে নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।

'সপ্তপদী' বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট সম্পদ ও উল্লেখযোগ্য উপন্যাস যা বিশ্ব-সাহিত্যেই উজ্জ্বলতম রত্ন হিসেবে স্থান পেয়েছে।
Profile Image for Bonnie.
24 reviews
March 9, 2024
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ভূমিকাতে লিখেছেন
"কিন্তু যিনি ফিকশন রচনা করেন তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সত্য অবশ্যমভাবিরুপে তাঁর ফিকশন ভুক্ত বা তার অঙ্গীভূত হয়ে বসে থাকে "
কৃষ্ণেন্দু এবং রিনার চরিত্র টা লেখকের বাস্তব জীবন এর দেখা দুইজনের অনুকরণে নির্মিত। এতোটুকুই আসলে এনাফ আমার মতো কিউরিয়াস মাইন্ড এর কাউকে গল্পে ধরে রাখতে ।
বইটায় আছে দুইটা গল্প।
কৃষ্ণেন্দু যে বলেছিলো,
"কারণ কোনো একটা ধর্মকে মানুষ অবলম্বন করে, রিনা, ওই ধর্মকে অতিক্রম করে সর্বজনীন মানব ধর্মে উপনীত হবার জন্য। এই ধর্মের গোঁড়ামি আর বন্দনের মধ্যে বন্দীর মতো বাঁধা থাকবার জন্য নয়।"
থেকে সেই কৃষ্ণেন্দু যে বললেন, "জীবন সে ঈশ্বরে�� অংশ। সৃষ্টির মধ্যে মানুষের জীবনেই ভগবান কথা কন, হাসেন, কাঁদেন, ভালোবাসেন, নিজেকে নিজে বলি দেন,মানুষের মধ্যেই তিনি প্রত্যক্ষ। মানুষের মধ্যে জীবন, শে যেখান থেকেই উদ্ভুত হোক, সে সমান পবিত্র। ব্রাহ্মণ নেই, চণ্ডাল নেই, ক্রিশ্চান নেই, হিদেন নেই, ধনী নেই, দরিদ্র নেই। গোত্র কুল ইতিহাস পরিচয় থাক না থাকা, মানুষ সমান পবিত্র, তার মধ্যে ঈশ্বর সমান মহিমায় অ্যাথপ্রকাশের জন্য ব্যাকুল।"
অন্যটা রিনা ব্রাউন এর যে একদিন বিশ্বাস করতো এবং বলেছিলো,
"একটি নারীর জন্য তুমি তোমার ঈশ্বরকে ছাড়তে পার। কৃষ্ণেন্দু, আমার চেয়ে সুন্দর নারী অনেক আছে। তা হলে তাদের কাউকে যখন দেখবে, সংস্পর্শে আসবে, সেদিন আমাকেও তুমি ছেড়ে ফেলে দেবে তুচ্ছ বস্তর মতো। তোমার যে ঈশ্বরকে তোমার একান্ত আপনার বলে এতদিন জেনে এসেছি, ভালবেসেছ বিপদে ডেকেছ অভয় পেয়েছ -"
থেকে
"সব মিথ্যা। ঈশ্বর নেই। কোনোদিন ছিল কি না জানি না। থাকলে সে মৃত। মানুষ তাকে মেরে ফেলেছে। আমার দিকে দেখো। আমি তার সমাধি। আমার বাবা সভ্য ইংরেজ, ধর্মবিশ্বাসী ক্রিশ্চান তাকে মেরে আমার মধ্যে সমাধি দিয়েছে। আমি তোমাকে বলছি। যা মৃত তা বাঁচে না। ঈশ্বর বিশ্বাসের গলিত শবটা ছেড়ে দাও।" বলা রিনা ব্রাউন হয়ে উঠার গল্প ।
Profile Image for Mohammed Minhazz.
279 reviews13 followers
September 11, 2023
“চারপাশে বর্ষার ঘনশ্যাম শালবনে জোৎস্নার আভা প্রতিফলিত হয়েছে। দূর দিগন্ত পর্যন্ত বনের মাথায় মাথায় চলে গেছে। নিঃশব্দ নয়, নিস্তব্ধ‌ও নয়। কিন্তু যেন থমথম করছে। গাছে গাছে কুড়িঁগুলো পরিপুষ্ট হচ্ছে। কাল সকালে ফুটবে। পরশু যারা ফুটবে তারা বাড়ছে। আজ সকালে যারা ফুটেছিল, তাদের গন্ধ এখনো ছড়িয়ে রয়েছে বাতাসে। মাটির গভীর অন্ধকারে মূল পচন রস পান করছে কৃমির মত লক্ষ লক্ষ সূক্ষ্ণাগ্র মুখ বিস্তার করে। অবিরাম চলছে বিচিত্র জীবন তপস্যা। পঙ্করস পুষ্প হয়ে ফুটেছে।”

“.......মাটির তলায় যে বীজ ফাটে, সে মাধ্যাকর্ষণধৃত থেকেও উপরের দিকে মাথা ঠেলে উঠে। গাছের মূল থাকে মাটির নিচে, ফুল ফুটে আকাশে। পাখি ডানা মেলে আকাশে উড়ে ‌। আকাশে উঠে আরো আরো উপরে উঠতে চায় কিন্তু তার নীড় মাটির বুকে আটকানো গাছের ডালে, সেখানে তাকে নামতে হয়। সরীসৃপ থাকে মাটির বুকে অন্ধকার গহ্বরে; তাকে উঠে আসতে হয় মাটির উপরে, বায়ুর জন্য, আহারের জন্য, আলোর জন্য।”


It is the cause— it is the cause my soul—
Let me not name it to you, you Chaste stars—
It is the cause.
Yes I will not shed her blood.
Not scar that whiter skin of her's then snow.
Displaying 1 - 30 of 58 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.