Jump to ratings and reviews
Rate this book

অনার্য দেব

Rate this book
উত্তর দেখো চাহি
জানে নাহি পশ্চিম, দেখে নাহি প্রাচ্য।
কোন মহারাজা গড়ে নাহি
হেন মহারাজ্য!

একটা হেঁয়ালির আড়ালে লুকিয়ে আছেন মহান অনার্য দেব, যার রাজ্যাভিষেক হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে। তিনি বদলে দিয়েছিলেন পশ্চিম থেকে প্রাচ্য, সমগ্র বিশ্বকে। কিন্তু কে এই অনার্য দেব?

উত্তরের খোঁজে বেরিয়ে এলো গা হিম করা সত্য। ভারতবর্ষের জন্মলগ্নের গুপ্ত ইতিহাসের সাথে একই সুতোয় গাঁথা পড়েছে একশত সত্তর কোটি মানুষের বর্তমান-ভবিষ্যৎ। জড়িয়ে আছে বিশ্বের প্রাচীনতম গুপ্তসংঘ আর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংগঠন। কি সেই রহস্য যার ব্যাপ্তি ইউরোপ থেকে এশিয়া, দুটো মহাদেশ? রুদ্ধশ্বাস সময়। ইন্দ্রিয়ের আগায় টের পাচ্ছে এমন এক আসন্ন বিপর্যয়, যার ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন স্বয়ং হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)।

এ যাত্রা অনিশ্চয়তার। অপেক্ষারত অবিচ্ছিন্ন ইউরেশিয়ার লোককথায় প্রচ্ছন্ন এক প্রাচীনা দেবী, মধ্য এশিয়ার প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা, বিদ্রোহী গিরিশাদুল আর 'জাতের যাত্রাভঙ্গ' করতে উদ্ধৃত গ্যাংস্টার।

অচেনা বর্ণমালার কম্বিনেশন লক। আর সূত্র ধরে ছুটে বেড়াচ্ছেন কিংবদন্তী ভাষাতত্ত্ববিদ প্রফেসর ইমেরিটাস আর এক প্রতিভাধর তরুণ পদার্থবিদ। পথের বাঁকে বাঁকে আছে ধর্ম, পুরাণ, বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব, কোড, সিম্বোলজি আর মানবসভ্যতার ইতিহাসের অজানা এক অধ্যায়।

যেতে হবে হাজার বছর আগে। খুঁজতে হবে কোথায় এর শুরু, কোথায় এর শেষ। এক হাতে অজস্রশত প্রশ্ন, আরেক হাতে তার সমস্ত উত্তর নিয়ে অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে রয়... 'অনার্য দেব'।

592 pages, Hardcover

14 people are currently reading
195 people want to read

About the author

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
43 (37%)
4 stars
45 (38%)
3 stars
22 (18%)
2 stars
4 (3%)
1 star
2 (1%)
Displaying 1 - 30 of 46 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews417 followers
May 4, 2022
ইতিহাস পড়তে পড়তে থ্রিলার, থ্রিলার পড়তে পড়তে ইতিহাসের গল্প হচ্ছে "অনার্য দেব।" ড্যান ব্রাউনের রবার্ট ল্যাংডন সিরিজের জনপ্রিয়তার পর থেকে সিম্বলজি আর ইতিহাস সংমিশ্রিত থ্রিলার বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু অনার্য দেবকে ঠিক এই তালিকায় ফেলা যাচ্ছে না। ৫৯২ পৃষ্ঠার সুবিশাল বইটির প্রায় অর্ধেক জুড়ে আছে মিথলজি, কোড, বিজ্ঞান, সিম্বলজি আর অতীত ঘটনার ব্যবচ্ছেদ। গল্পের প্রয়োজনে সত্য ঘটনার সাথে কল্পনারও মিশেল রয়েছে। দীর্ঘ ও প্রলম্বিত এসব আলোচনা আপনি উপভোগ করতে পারবেন কি না তার উপরে নির্ভর করছে বইটি ভালো লাগা না লাগা। আমি নিজে পুরাণের বিরাট ভক্ত। পুরাণকে বলা যায় ছদ্মবেশী ইতিহাস। এই কাহিনিতে ছদ্মবেশী ইতিহাসের গুরুত্ব অনেক। যে কারণে পুরো বইটি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি, বিশেষত শেষ ১০০ পাতা। লেখকের পরিশ্রম ও গবেষণার প্রমাণ বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে।

অবশ্যই অনার্য দেবে নিটোল গল্প আছে,আছে টানটান উত্তেজনা, অপ্রত্যাশিত সব মোচড় আর মনে রাখার মতো চরিত্র। কিন্তু কাকতালীয় ঘটনা একটু বেশিই ঘটে, ডিকেবি আর জায়েদের অনুমানশক্তি এতো বেশি প্রখর যে মাঝেমধ্যে তা গোঁজামিল মনে হয়। তবে সব মিলিয়ে খুব উপভোগ্য বই। গল্পের জন্য নয়, পুরাণের দুর্দান্ত বিশ্লেষণের জন্য বইটির কাছে আবার ফিরতে হবে আমার।
Profile Image for ORKO.
196 reviews197 followers
June 10, 2022
মাস্টারক্লাসে থ্রিলারের অ্যানাটমি শেখাতে গিয়ে ড্যান ব্রাউন লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন এইভাবে,
"The harder you work at researching, the luckier you will get."
অনার্য দেবে সেই রিসার্চের ছাপ পাওয়া যায় প্রায় পুরোটা জুড়ে। কিন্তু ড্যান যেইটা পষ্টাপষ্টি বলেছিলেন, বিষয়গুলো বাড়াবাড়ি রকমের ইনফো ডাম্পিংয়ের পর্যায়ে চলে যায় সেটা অনেক বেশি ইন্টারেস্টিংই হোক না কেন বইয়ে রাখা যাবে না,অনার্য দেব কিন্তু সেইটা এড়ায়ে যাইতে পারে নাই।

হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার নিয়ে এদেশে পাঠকদের মাঝে অনেক মাতামাতি দেখি,কিন্তু একটা হিস্টোরিক্যাল থ্রিলারকে একই সাথে হিস্ট্রির পাশাপাশি আরও কয়েকটা দিক স্পর্শ করতে হয় সেইটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানুষ কম।
অনার্য দেবের ত্রুটিটা এইখানেই।
লেখকের রিসার্চ দারুণ, লেখনী ভালো,কিন্তু লেকিন পারান্তু কীভাবে সিকোয়েন্স মেইনটেইন করে পুরো কাহিনীটা পাঠকের সামনে উপস্থিত করতে হবে সেইটা উনি পারেন নাই। উনার মেটামরফিক নিশীথে প্রথম বই হিসেবে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছিল,এক্সপেরিমেন্টাল ওয়ার্ক।
কিন্তু স্টোরিটেলিংও একটা ক্রাফট।
অন্য অনেক থ্রিলারের মতো অনার্য দেবেও আমরা দুই ধারার টাইমলাইন পাই। কিন্তু তার মাঝে গতির সুতো ছিঁড়ে যায় বারবার।
যেভাবে একদম শুরু থেকে হড়বড় হড়বড় করে বর্তমান সময়ের কাহিনী এগিয়েছে মনে হচ্ছিলো লেখক পুরো সেটাপটা একবার লিখে পরে কেটে ফেলে দিয়েছেন অনেকটুকু অংশ।
এতো উচ্চাভিলাষী দারুণ একটা প্রজেক্টকে এভাবে গতানুগতিক ছাঁচে ফেলা আর তার উপর দুটো টাইমলাইনকে না গুছিয়ে পাঠককে কাহিনীর মেজাজের সাথে একাত্ম না হতে দেয়া এতো কষ্টে দাঁড় করানো রিসার্চের প্রতি বড় বেশি অন্যায়......বড় বেশি অবিচার....
Profile Image for Peal R.  Partha.
211 reviews13 followers
April 8, 2022
▌স্পয়লার-ফ্রি রিভিউ⚊ ❛অনার্য দেব❜ [৪.৮/৫]

❝ওরা কখনও জানবে না—কী নিশ্চিত মৃত্যুর তলোয়ারের তলে ছিল তাদের গর্দান, কী রক্ত হোলি, রক্তাক্ত আশুরা আর রক্তিম খড়গের নগ্ন নাগাল থেকে ফিরে এসেছে এক একজন মানু্ষ। জানলো না কারও রক্তের গহীনের গহীনে ঘুমন্ত প্রাচীন, প্রাগৈতিহাসিক সেই ত্রাণকর্তা আবার, আরও একবার পরাক্রম প্রাচীর হয়ে আগলে রাখল অনার্য জনপদ। নিচে কৈশিক জলিকার মতো শতপথ।❞

Quō vādis?

দ্বন্দ্ব থেকে দাঙ্গা। বিশ্বাসঘাতকতার সংজ্ঞা যৌক্তিকভাবে দিতে গেলে, ইতিহাসের আনাচেকানাচে তাকালে তা অহরহ দেখতে পাওয়া যায়। একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা মনুষ্য রূপে আবির্ভাব হওয়া ঈশ্বরের সাথে এমন কাজ ঠিক মেনে নেওয়া যায় কি? আচ্ছা, ইতিহাস কী বলে? কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা? শান্ত পুকুরে কোনো এক বালকের ছুঁড়ে দেওয়া পাথরের কণা, যে আলোড়ন সৃষ্টি করে; সেই আলোড়ন পুরো পুকুরে ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য এক পাথর—পুরো পুকুরের ঘুম ভাঙানোর শক্তি কীসের অর্থ বহন করে? তাই হয়তো গণিতবিদ ও আবহাওয়াবিদ ‘এডওয়ার্ড লরেঞ্জ’ একটি বিশেষ প্রশ্নের উত্থাপন করেছিলেন। সেখানে বলেছিলেন, ব্রাজিলে যদি কোনো একটি প্রজাপতি তার ডানা ঝাপটায়, তবে সেটা টেক্সাসে টর্নেডো হিসেবে প্রতিফলিত হবে কী করে? জবাব দিতে গিয়ে পরবর্তীতে তিনি সেটাকে প্রমাণিত করেন; যা বিজ্ঞানের ভাষায় বা তত্ত্বের নামানুসারে ‘বাটারফ্লাই ইফেক্ট’ নামে পরিচিত। তেমনই ‘ছোটো ছোটো বালু কণা, বিন্দু বিন্দু জল—গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল’—উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া সেই সারাংশের প্রথম লাইনটি নিশ্চয়ই মনে আছে? থাকলে ভালো, কারণ এই বইয়ের সাথে এমন তত্ত্ব আর প্রবাদের যোগাযোগ কিন্তু অবিচ্ছেদ্য।

❝অনুগামী অনুচরে লিপ্ত অনর্থে
প্রাচীনা সে নগরীর ধ্যান হলো ভঙ্গ
বহাইলো স্রোতঃস্বিনী নিষ্প্রাণ মর্ত্যে,
পবিত্র জলাধরে পড়িল কলঙ্ক।❞

কনটেমপোরারি ফিকশনের কোনো বই পড়তে নিলে, প্রথমত মনের যত ইতস্তত ভাব তা দূরীকরণ করতে হয়। এমন বইয়ে বিতর্কিত কথোপকথন আর যুক্তি দিয়ে মস্তিষ্ক সঞ্চালন খুব বেশি করা হয়। লেখককে পাগল ঠাওরানো এবং নিজের বিশ্বাসকে ধূলিসাৎ করার এমন প্রক্রিয়া সাহিত্য অঙ্গনে খুব একটা দেখা যায় না। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব, তার ভেতরে মিথের অজস্র ফাঁকফোকর, খোঁড়া যুক্তি দিয়ে লুকানো ইতিহাসের প্রোপাগাণ্ডার ছড়াছড়ি; এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

বিশ্বে এমন বইয়ের সংখ্যা গণনার বাইরে থাকলেও মৌলিকে হাতে গোনা। যদিও প্রায় অনেক বইয়ে জোর করে তথ্য চাপিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ খেতে না চাইলেও খেতে হবে এমন। কিছু আছে অপক্ব; সদ্য ফোঁটা গোলাপের মতো। তবে এই আক্ষেপ পুরোপুরি ঘুচিয়ে দিতে লেখক ❛অনার্য দেব❜-এর মতো বিশাল কলেবরের এই উপাখ্যান অথবা বলা যায়—মিথ্যার চাদর সরিয়ে সত্যের সূর্যোদয় ঘটাতে যে অমানবিক পরিশ্রম করেছেন; তার জন্য সাধুবাদ জানাতে হয়। সত্যের সূর্য কতটা আলোকিত তার বিচার ভার একান্ত পাঠকের। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচালে দুলতে দুলতে বরং আলোচনা করি, অনার্য দেব কে আর কী তার রহস্য?

আর্য-অনার্য নিয়ে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু না। নানান মতে, ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষে আসে তখন স্থানীয়দের গৌরব আর বৈভব দেখে তারা হিংসালু হয়ে পড়ে। তখনই তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে, গাত্র বর্ণের পার্থক্য দিয়ে ‘বর্ণবাদ’ প্রথা তৈরি করে। শুধু কি এইটুকু? আঠারো শতকের দিকে এই তত্ত্ব নিয়ে তোলপাড় হলেও এর গোড়াপত্তন হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০-১১০০ অব্দের দিকে। যখন ককেশীয় মহাজাতি গোষ্ঠীর একটা অংশ প্রাচীন ভারতে প্রবেশ করে। সিন্ধু সভ্যতা শেষ হওয়ার পরপর। ভারতীয় পণ্ডিতরা বিশ্বাস করে—ভারতই আর্যদের আদি নিবাস, অন্য দিকে ইউরোপীয়ানরা দাবি করে ইউরোপ-ই প্রকৃত আর্যভূমি! কোনটা গ্রহন করবেন আপনি? এই জন্য, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’ এই প্রবাদ বাক্যটি এমন বইয়ের জন্য যথোপযুক্ত। তর্কে নামতে হলে আগে বইটি পড়তে হবে, ব��শ্বাস-অবিশ্বাসের দোকান আপাতত শাটারের পেছনে আবদ্ধ থাক।

কেন পড়বেন ❛অনার্য দেব❜?

পৃথিবীতে সম্ভবত ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্র সবচেয়ে বেশি করা হয়। ধর্মের অনেক ধারাকে বিজ্ঞান অনুসরণ করে প্রমাণ করার তোড়জোড় চালানো হয়। দর্শনের সাদা পৃষ্ঠায় লাল-নীল কালিমা লেপনের উৎসবও পালন করতে দেখা যায়। ❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসে যেসব দিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করা হয়েছে তা হচ্ছে—ধর্ম! ধর্মের স্রষ্টা আর তাঁদের স্বরূপ। সনাতন ধর্ম নিয়ে যত বিতর্ক রয়েছে, লেখক প্রায় সবকিছু এই বইয়ে তুলে ধরেছেন। এছাড়া, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা কেন হয়; এর পেছনে কারা কলকাঠি নাড়াচাড়ায় ব্যস্ত এবং কালারিজম নিয়ে কেন এত তর্ক—উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে পুরো বইয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে।

শুধু আলোচনা অথবা কথোপকথনে কি উপন্যাসের সমাপ্তি লেখা? —না। এখানে গুপ্ত সংঘের মিশ্রনে গল্প আছে। কিছু অলৌকিক মিথস্ক্রিয়াও রয়েছে। বিশ্বাসের বস্তু যেমন আছে, অবিশ্বাস করার মতো নাটকীয় কাণ্ডকারখানাও রয়েছে। যার বেশিভাগ বেছে নেওয়ার দায়িত্ব একান্তই পাঠকের। তবে হিন্দু পুরাণ নিয়ে তর্কবিতর্ক বা ইতিহাসের যুক্তিতর্ক নিয়ে যদি আগ্রহ তুঙ্গে থাকে; তবে বইটি অবশ্যই পাঠ্য। আর্য আর অনার্য দেব নিয়ে কোন্দলের পাশাপাশি স্বস্তিকা চিহ্নের ধর্মীয় সামঞ্জস্য, সিন্ধু-মহেঞ্জদারো, ইন্দ ইউরোপীয়-গোড়া ইন্ডিয়ান ইতিহাস নিয়ে সংঘর্ষ, নাৎসি পার্টি, জঙ্গী সংগঠন, চেঙ্গিস খান, চাণক্য, জুডাস, ব্রুটাস, সাল্লাম বিন মিশকাম, সুর-অসুর, বেদ-পুরাণ ইত্যাদি যত আলোচিত কিংবা বিতর্কিত শিরোনাম আছে—সব নিয়ে ব্যাখা পাবেন এই ❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসে।

❝ইউহদে, ব্রুতে, এঙ্গিরে, সাল্লাম।❞

এই জনরায় এমন বই পড়লে, মৌলিকে দ্বিতীয় কোনো বই আপাতত না পড়লেও চলবে। অবশ্য জানার কোনো শেষ নেই, শেখার কোনো বয়স নেই।

◆ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—

প্রমান নেই, পাইনি, বিশ্বাস বা ধারণা। ❛অনার্য দেব❜ বইয়ে যতগুলো বিষয় এসেছে সব বিষয়ের শেষে বিশ্বাস বা ধারণার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ লেখক দিয়েছেন বটে। এই দিকটা ইতিবাচক একইসাথে লেখকের কৌশল খাটানোর উপযুক্ত কারণ হিসেবে বিবেচনা করছি। ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাসের জায়গা, সেখানে যদি কেউ অযাচিতভাবে আঘাত হানে সেটা কখনও সুফল বয়ে নিয়ে আসে না। তবে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন প্রক্রিয়া সাধন করা অন্য বিষয়।

ধর্মের থেকে বড়ো সম্ভবত মানব সভ্যতার সৃষ্টির রহস্য। হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আমাদের পূর্ব পুরুষদের জন্ম আজ থেকে দুই লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকার কোনো এক স্থানে। আদতে আমরাই কি একমাত্র ‘হোমো’? এর বাইরে কি অন্য কোনো প্রজাতি ছিল না? তবে তারা কোথায়? ধর্ম আর বিজ্ঞান এখানে কী বলে? এই প্রজাতি আর পদ নিয়ে ❛অনার্য দেব❜ বইয়ে দারুণ কিছু কথোপকথন আর অধ্যায়ের প্রকটন হয়েছে। এর পূর্বে কিছু মিথলজিক্যাল বইয়ে ‘ইন্দ্র’ (সনাতন ধর্মে দেবরাজ ইন্দ্র, বৃষ্টি ও বজ্রের দেবতা) একটি পদ, যে ওই পদে বসবে তাকে ইন্দ্র বলে বিবেচিত করা হবে। তেমনই এই বইয়ে সেটা ডালপালা মেলে আরও বৃহত্ত্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একেবারে পিওর বাটারফ্লাই ইফেক্ট। ঘুরপাক সবচেয়ে বেশি সনাতন ধর্মকে ঘিরে হয়েছে।

যাহোক, এই বই পড়ে জানার যেমন অনেক কিছু ছিল, অজানা তার চেয়ে বেশি ছিল। লেখক খুবই দক্ষভাবে প্রতিটি বিষয় যাচাই-বাছাই করে লিখেছেন। তথ্যের ঘাটতি এই বইয়ে দেখা যায়নি, তবে দর্শন বিচার একান্ত পাঠকের ভাবনা। খ্রিষ্টধর্মের ক্রুশবিদ্ধ করা যীশু আসলে কে? বৌদ্ধধর্মের বুদ্ধ কি আসলে বিষ্ণুর নবম অবতার? মহানবি (সা.)-কে উৎখাত করার পেছনে মূল হোতা কে? বৈষ্ণব ও শৈবদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কেন লেগে থাকে? স্বস্তিকা চিহ্ন কি শুধু সনাতনের ধর্মের প্রতীক? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বসতে হবে ❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসের সাদা পাতার সাগরের কালো কালির নৌকায়।

এই বইয়ের লিখনপদ্ধতি বেশ শক্তপোক্ত, বাংলিশ সংলাপের কারণে মাঝেমধ্যে বিরক্ত তৈরি হতে পারে তবে সেটা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায়। একজন পদার্থবিজ্ঞানী আর একজন নৃবিদ্যায় পারদর্শী প্রফেসরের কথোপকথনে এমন ভ্যারাইটি ভাব থাকাটা বাঞ্ছনীয়। তবে বর্ণনা শৈলী আর দর্শনের মিশেল এই বইকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। লেখকের দর্শন নিয়ে বলা কথাগুলোর তারিফ বারবার করলেও কম করা হবে।

এই বইকে যদি পাঁচ ভাগে ভাগ করি, তাহলে আপনি যদি এর ২০% বোঝেন তবে এক তারা দিবেন আর যদি পুরো একশ শতাংশ পুরোপুরি নিজের মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারেন তবে পাঁচ তারা দিতে কোনো কার্পণ্য করবেন না। এমন পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় ঠাসা বই পড়েও আলাদা এক প্রশান্তি রয়েছে। মিথলজির সাথে ইতিহাসের মিশ্রণ, বিজ্ঞানের ধারা, পুরাণের কথা, দর্শনের মারপ্যাঁচ যদি একসাথে পড়ে বুঝতে কোনো দ্বিধাবোধ না থাকে তবে এই বই আপনার জন্য। সামসময়িক অনেক লেখকের উপন্যাস থেকে এই বইয়ের বিশালতা অনেক এগিয়ে। শুধু গল্পতে এই উপন্যাসের চাকা থেমে থাকেনি। কী বলে এই বইকে আখ্যায়িত করব, তেমন কোনো শব্দ আপাতত ব্যবহার না করি। লেখকের শ্রমের মূল্য যদি তুলনার নিক্তিতে মাপা হয়, সেটাকে অনেকটা অপমানিত করা হয় বলে—আমার মনে হয়।

● গল্পের শুরু এবং কিছু প্রশ্ন—

❝উত্তর দেখো চাহি
জানে নাহি পশ্চিম, দেখে নাহি প্রাচ্য।
কোন মহারাজা গড়ে নাহি
হেন মহারাজ্য।❞

একটা হেঁয়ালির আড়ালে লুকিয়ে আছেন মহান অনার্য দেব, যার রাজ্যাভিষেক হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে। তিনি বদলে দিয়েছিলেন পশ্চিম থেকে প্রাচ্য, সমগ্র বিশ্বকে। কিন্তু কে এই অনার্য দেব?

সেই উত্তর খুঁজতে জায়েদ আরাফাত একটি ক্রিপ্টেক্স নিয়ে হাজির হয় প্রফেসর ইমেরিটাস দীপেশ কুমার বিশ্বাসের কাছে। যে প্রফেসর দুনিয়ার কাছে মৃত! কোথায় আর কীভাবে পেল জায়েদ তাঁর ঠিকানা? আর ক্রিপ্টেক্স, কী লেখা তাতে? অশোকলিপিতে কীসের ধাঁধায় বন্দি এটা? আর হলো কীভাবে জায়েদের মামা মাহমুদুল হাসানের সাথে এই ক্রিপ্টেক্সের সন্ধি? উত্তর অজানা। তার পূর্বে অতর্কিত হামলা! ক্রিপ্টেক্স ছিনিয়ে নিতে উদয় হলো এক ছায়ামূর্তি! ওদিকে প্রফেসরের সতর্কতা অবলম্বন করতে ‘ট্রেইটর’ খ্যাত অবসরপ্রাপ্ত আর্মি লেফটেন্যান্ট তাহেরকে স্মরণ করতে ভুলল না, কিন্তু কেন?

‘দ্য টেম্পল আশ্রম’ থেকে ইলা শর্মার ফোন। প্রফেসর আর জায়েদকে তারা বাঁচাতে চায়। বাঁচতে হলে যেতে হবে ইন্ডিয়ায়। উপায় নেই দু’জনের কারও কাছে। কিন্তু মূল্যবান ক্রিপ্টেক্সের ফাঁদে পড়ে তারা এখন ফেরারি আসামি, দেশদ্রোহী এবং মোস্ট ওয়ান্টেড টেরোরিস্টের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। একমাত্র তাহের বাঁচাতে পারে তাদের। উপায় না দেখে যেতে হলো তাহেরের সাথে। ঢুকতে হলো কুখ্যাত এক সন্ত্রাসী ডেরায়! তারপর?

দিল্লীতে শিবাজির ভাসনে উত্তাল জনগণ। গেরুয়া ঝাণ্ডাধারীরা ফুঁসছে অজানা এক আক্রোশে। বসে নেই বেলুচিস্তানের জঙ্গীরা। তারা কষে চলছে দিল্লী দখলের ছক। দুই গুপ্তসংঘের সদস্যরা কীসের নেশায় ঘুরছে? কী তাদের উদ্দেশ্যে?

সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে মহাকাব্যিক এক যাত্রার সঙ্গী আপনাকে হতেই হবে।

══════════════════════════

উপন্যাসের শুরু পূর্বকথা অনুসারে এক বৈদ্য আর শবদেহের মধ্যকার ঘটনা থেকে। তারপরে মূল পর্ব শুরু। অযাচিত কোনো বর্ণনা না দিয়ে লেখক সরাসরি কাহিনিতে ঢুকে পড়ে। খুব দ্রুতই দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। পরিচিত হতে থাকে গল্পের মূল হোতাদের সাথে। বাংলাদেশের মাটিতে এই গল্পের স্থায়িত্ব খুবই সীমিত। পুরোটা জুড়ে রয়েছে ভারতের মুম্বাই আর দিল্লী। কাহিনির কারণে ঘুরে আসতে হয়েছে ইতালি, তুরষ্ক ��র পাকিস্তান থেকে। তবে সে-সব ঘটে ধীরে সুস্থে।

কাহিনির মূল ফোকাসে থাকে ক্রিপ্টেক্স। যা রক্ষা করার দায়িত্বে থাকে জায়েদ আর প্রফেসর দীপেশ বিশ্বাস। কিন্তু শত্রুদের থেকে এত সহজে নিস্তার তারা পায় না। সাত দিনের একটা ক্যায়োসকে ঘিরে এই উপন্যাস চলতে থাকে। এই সাত দিনে উপমহাদেশের যত ইতিহাস আর তত্ত্ব সবই প্রফেসর আর জায়েদের কথোপকথন এবং কিছু বাকি চরিত্রদের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে।

শুরুটা দারুণ। ঝরঝরে বর্ণনা আর পোক্ত লেখনশৈলীতে ভরপুর।

● গল্প বুনট » লিখনপদ্ধতি » বর্ণনা শৈলী—

লেখকের কাহিনি সাজানো অমায়িক। কোনো প্যাঁ�� নেই। কমপ্লেক্স তৈরি হওয়ার মতো কোনো অবস্থা তিনি তৈরি করেননি। লেখক গল্প বুননে পারদর্শী, না-হয় এত এত তথ্যের সম্মিলনে নতুন নতুন শব্দের মিশেলে বাক্য গঠন তৈরি করা চাট্টিখানি কোনো কথা নয়। ওনার দূরদর্শি চিন্তাভাবনা কতটা প্রখর এই বই যারা পড়েছেন বা পড়বেন তা সহজেই বুঝতে পারবেন।

লিখনপদ্ধতিতে সব রকম লেখার ছোঁয়া রয়েছে। সংলাপ নিয়ে একটু আলোকপাত করি; যেহেতু উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে পার্থক্যটা একটু চোখে লাগে। সংলাপের উদাহরণ টানতে গেলে চরিত্ররা আসবে, তাদের আচরণ আর ভাষা নিয়ে লেখককে আলাদা স্টাডি করাটা স্বাভাবিক। তবে কিছু চরিত্র বাদ দিলে প্রায়ই চরিত্রের ভাষা-শৈলী একই রকম মনে হয়েছে কিছু কিছু জায়গায়। স্বকীয়তা যে ছিল না তা বলব না, তবে দেশের গণ্ডি পার হওয়া বাংলা ভাষার টান আর ধরন কিছুটা আলাদা দেখালে ভালো হতো। বিশেষ করে ভারতীয় বাংলা ভাষার সুরে। এই দিকটা আরেকটু পোক্ত করা যেত।

এমনিতে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি এবং বাংলা; সব ভাষার মিশ্রণ এই বইয়ে রয়েছে। ভয় পাওয়ার দরকার নেই, লেখা সব বাংলাতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু সংলাপে ইংরেজ বলাটা কিছুটা কমালে আরও আকর্ষণীয় হতো। তবে সংলাপগুলো দারুণ আর বেশ তাৎপর্যবহ, ভাষার মিক্সারের জন্য স্বাদে এসেছে ভিন্নত্ব।

বর্ণনা শৈলী প্রাঞ্জল। বিশেষ করে দর্শন অংশে এই সাবলীল ভাবটা অনেক সহযোগিতা করেছে। নতুন কোনো পাঠক এই বই পড়লে, খুবই ভালোভাবে কানেক্ট করতে পারবে। বিরক্ত লাগবে কোন ঘটনা নিয়ে আলোকপাত হচ্ছে সেটা না বুঝলে। বোদ্ধা পাঠকদের এই বই পেজ টার্নার। এখানে নতুন আর বোদ্দা পাঠক নিয়ে বৈষম্য করছি না; এই বই এমনিতে সব ক্যাটাগরির পাঠকের জন্য না। দর্শনের কথোপকথন আর গোঁড়া ধর্মবিশ্বাসী পাঠকদের জন্য তো একেবারেই না। লেখক উক্ত উপন্যাসে শব্দ নিয়ে রীতিমতো হোলি খেলেছেন; যা শব্দ প্রেমী পাঠকদের নতুন বা অপ্রচলিত শব্দের চাহিদা যোগানে অনুপম আনন্দ দিবে।

যদি শুধু জানার আগ্রহ আর লেখকের দর্শনের সাথে পরিচিত হতে ইচ্ছুক হলে, তবেই বইটি নিয়ে বসুন।

উক্ত উপন্যাসে অ্যাকশন দৃশ্যের কমতি নেই, আছে সম্মুখ সম্মেলনের বিস্ফারিত ভাষণ। ধাঁধা ও চিহ্ন সমাধানের বিষয়টিও রয়েছে। এই উপন্যাসে বৈজ্ঞানিক একটি থিওরি যা গল্পে বিরানির মধ্যে এলাচির স্বাদ এনে দিলেও, পরবর্তীতে সেটা মানিয়ে যায়। গালাগালি যেমন আছে, তেমনই কিছু স্যাটায়ার দৃশ্য আর সংলাপও সাজানো রয়েছে।

নৈসর্গিক দৃশ্য ও স্থাপত্য নিয়ে অবতারণা করতে লেখক পিছু হাঁটেননি। কী দারুণ বর্ণনা! ভ্যাটিকান সিটির ঐতিহাসিক সিস্টিন চ্যাপেল, মঙ্গোলিয়ায় আদিবাসীদের বুর্খান খালদুন থেকে পাকিস্তানে অবস্থিত তক্ষশীলার দৃশ্যায়ন; সবকিছু বেশ উপভোগ্য ছিল।

● যেমন ছিল গল্পের চরিত্ররা—

মূল চরিত্র যে শুধু জায়েদ আর প্রফেসর ছিল তেমন না। ট্রেইটর তাহেরের ভূমিকা এই উপন্যাসে অকল্পনীয় ছিল। একেবারে মন জয় করে নেওয়ার মতো। বাদ নেই কুখ্যাত সন্ত্রাসী, জঙ্গী, ধর্ম ব্যবসায়ী-সহ অনেকে। সব কয়টি চরিত্র তাদের জায়গা থেকে অনবদ্য। লেখক প্রতিটি চরিত্র খুবই দক্ষতার সাথে বইয়ের বাঁকে বাঁকে প্রতিস্থাপন করেছেন।

এমন কিছু চরিত্র লেখক এই গল্পে নিয়ে এসেছেন, যাদের অস্তিত্ব বাস্তবে রয়েছে। সেদিক থেকে ভাবলে, বেশ সাহসিক এক পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন। কিছু ঘটনা আর অজানা সত্যের মিশ্রণ আর গণমাধ্যমগুলো সে-সব ঘটনাকে কীভাবে প্রচার করে; তাও স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এই উপন্যাসের সবচেয়ে বেশি আলোকপাত করা চরিত্র অনার্য দেব। সেই অনার্য দেবের আদি থেকে অন্ত উপস্থাপনে কোনো ঢিলেমি লেখক করেননি। যত ধরনের তথ্য দিয়ে এই চরিত্রকে ক্ল্যারিফাই করা যায় করেছেন। কিছু ভুল ধারণাকে সঠিকভাবে দেখানোর কাজটা অত্যন্ত সহজভাবে বোঝানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করতে তিনি দ্বিধাবোধ করেননি। ধাপে ধাপে সে-সকল বিষয় উন্মোচন করতে যে হ্যাপা পোহাতে হয়েছে—তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

অনার্য দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী আর্য দেব নিয়ে লেখক এক একটা বোম ব্লাস্ট করেছেন; যা পড়ে বেশ মজা লাগল। শুধু তাই না, এই আর্য দেবের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কম আলোচনা এই বইয়ে হয়নি। পক্ষপাতিত্বের একটা দিক লেখকও যে বেছে নিয়েছেন তা স্পষ্ট বোঝা যায়। এক্ষেত্রে লেখককে একটা চ্যালেঞ্জ দিতে পারি, এই বইয়ের প্রেক্ষাপটের ঠিক উলটো কাজটা লেখক যদি করে দেখান, অর্থাৎ আর্য দেবকে নিয়ে; তাহলে ‘পক্ষপাতিত্ব’ করার ট্যাগটা তুলে নিতে পারি।

● শেষের গল্প বলা প্রয়োজন—

এমন ঘরনার বইগুলোতে হুটহাট বা তাড়াহুড়োয় শেষ করার একটা মেলা বসে থাকে। ❛অনার্য দেব❜ এই আক্ষেপের বিপ্লব ঘটাতে পেরেছে। ‘যেখানে শেষ, সেখানে শুরু’ কথাটি এই বইয়ের ক্ষেত্রে পুরোপুরি জায়েজ। মূল কাহিনি যেখানে সমাপ্তি হয় আদতে সেখান থেকে এই বইয়ের রহস্য উন্মোচনের আয়োজন শুরু হয়। কপালে ভাঁজ পড়ল মনে হলো?

অনার্য দেবের কাহিনি মূলত চলতে থাকা গল্পের পরবর্তী রূপ। লেখক উক্ত বইয়ে তিনটি কবিতা টাইপ ধাঁধা রাখেন। যে-ই ধাঁধাগুলোর সমাধানে একটি বিশেষ ঘটনার দ্বার খুলে যেতে থাকে। কিন্তু শেষে গিয়ে সব ওলটপালট হয়ে যায়। তিন কবিতার নায়ক কিন্তু একজনই। এখন কীভাবে, সেটা তো বই পড়ে জানতে হবে।

সব মিলিয়ে বলব, যে ক্ষুধা নিয়ে বইটি পড়তে বসেছি তা পুরোপুরি মিটে আরও বেশি খাওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মস্তিষ্ক-মনন কোনো দিক থেকে অপূর্ণতার কমতি লেখক রাখেননি। এমন বই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেক করা যায় ইচ্ছা হলে; তেমনই বারবার পড়তেও অসুবিধা নেই। সংগ্রহে রাখার মতো একখানা বই।

বইয়ের সাসপেন্স আর টুইস্ট নিয়ে যদি একটু বলি, খুব অবাক করার মতো কিছু নেই। তবে শেষে এসে একটা ধাক্কা পাঠক অবশ্যই খাবে। শেষের ব্লাডলাইনের টুইস্টে আরও বিস্তারিত আনা যেত। যুক্তিসঙ্গত লাগেনি। গল্পের সাথে ফ্যাক্ট মেলাতে গিয়ে লেখক হয়তো এমন এক সন্ধি করার ফাঁদ বেছে নিয়েছেন, যা না দেখালেও উপন্যাস দিব্যি হিট খেত।

● খুচরা আলাপ—

❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসে আকর্ষণীয় দিক নিয়ে লিখতে গেলে এই লেখা শেষ হওয়ার না। কত কত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় বলেন? এই বই পুরোটা যেন একটা প্রত্নতত্ত্ব এলাকা। আর আমি ভিজিট করতে আসা কোনো এক নৃতাত্ত্বিক। এক পাশ খুঁড়তে গেলে তো অন্য পাশ দিয়ে খরগোশের মতো তথ্য এসে উঁকি দেয়। অনবরত এই চাকা যেন ঘুরছে তো ঘুরছে... সময়ের চাকা কি কখনও থেমে থাকে?

বর্তমানে হট টপিক কি বলতে পারবেন? ধর্ম ব্যাবসা? রাজনীতি? সিক্রেট সোসাইটি? বিশ্বযুদ্ধ? ওয়ার্মহোল? অ্যান্টিমেটার? ওয়েট... কী এই অ্যান্টিমেটার? কখনও নাম শুনেছেন? কাজ কী জানেন? ওয়ার্মহোলের দিয়ে যে টাইম ট্রাভেল করা যায়; এই আবিষ্কারের ফর্মুলা নিয়ে কখনও ভেবেছেন? আপাতত বিজ্ঞানের দিকে না যায়। সিক্রেট সোসাইটি নিয়ে এই বইয়ে ভালো রসদ রয়েছে। তাই এই নিয়ে সামান্য বকবক করি। তবে হালের ক্রেজ ইলুমিনাতি, ফ্রিম্যাসন্স বা আশোকের নবরত্ন তো মোটেই না।

একেবারে আনকোরা বলব না; কখনও হয়তো শুনেননি এমন সব গুপ্তসংঘের নাম তিনি অকপটে নিজ উপন্যাসে ব্যবহার করেছেন। তারা এক একটা যেন কিলবিল করা রাঘব-পোকা। একবার ধরলে আর যেন ছাড়ে না। এদের না শেষ; কিন্তু আছে শুরু। খুবই প্রাচীন সেই ইতিহাস। শুরুর ইতিহাস আবার সবার থাকে, যেমনটা আছে এই সৃষ্টির, ধর্মের, মানুষের। এই বিশ্বে বর্ণ নিয়ে যত ফ্যাসাদ। লেখক তাই মন খুলে এই বৈষম্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। একেবারে দিল খুলকে।

বিশেষ বা আলোচিত কোনো ব্যক্তির নাম ও কামের উল্লেখ করা সম্ভবত বাদ দেয়নি লেখক। যাকে যেমন ভাবে পেরেছে ব্যবহার করেছেন। তবে খুবই মার্জিত ভাবে। এমন নয় যে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে হাহাকার করে উঠেছে। তবে একজনকে ঠিকই করেছেন... নাম বললে মাইন্ড করতে পারেন।

লেখক বলেছেন, এই বই পড়ার পর গুপ্তসংঘ নিয়ে আর কোনো সঙ্কট থাকবে না। পরিচিতির ক্ষেত্রে না থাকলেও, কাজের দিক থেকে থেকে যেতে পারে। লুকানো এখন কিছুই নেই, সবকিছু আমাদের চোখের সম্মুখে জ্বলজ্বল করছে। শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখার বাকি। ❛অনার্য দেব❜ বিজ্ঞানকে না নাড়াতে পারলেও, ইতিহাস ও ধর্মের পুরো শ্রাদ্ধানুষ্ঠান অবশ্যই করেছে। সাধু, সাধু, সাধু।

সম্রাট আশোককে তো এই বইয়ে আচ্ছা মতো নিকৃন্তন করা হয়েছে। যেখানে অন্যান্য লেখকরা তাঁকে তোষামোদের জোয়ার স্নান করিয়েছে। চাণক্য অথবা কৌটিল্যকে যে মর্যাদা অন্যান্য লেখক ফুটিয়ে তুলতে পারেনি, ❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসে সেটা খুব ভালোভাবে করেছেন লেখক। সব মিলিয়ে উপভোগ্য আর আমি লিখতে লিখতে ক্লান্ত।

◆ লেখক নিয়ে কিছু কথা—

লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই ‘মেটামরফিক নিশীথে’ গত বছর পড়তে গিয়ে খুঁজে পাইনি। পরবর্তীতে আর নিব নিব করে নেওয়া হয়নি। তবে আমার জন্য ❛অনার্য দেব❜ ছিল এই বইমেলায় সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত বই। গত বছর থেকে এই বইয়ের অপেক্ষা আর আপডেট জানার জন্য প্রায় এদিক-সেদিক চেকা-চেকি করতাম। অবশেষে বই প্রকাশিত হলো, কিন্তু নানান সমস্যার কারণে বইমেলায় এই বই নেওয়া না হলেও; হাল ছাড়িনি। অবশেষে নিলাম আর পড়েও শেষ করলাম!

অনেক দিনের অপেক্ষায় পাওয়া কোনো বস্তুকে আরও অপেক্ষায় রাখা আমার ধাতে সই না। তাই হাতে পাওয়া মাত্র পড়া শুরু করে দিলাম। আর অবশেষে শেষ করে প্রতিক্রিয়া জানালাম। দারুণ সময় কেটেছে বইটির সাথে। নাওয়াখাওয়াও মনে হয় কিছু সময়ের জন্য ভুলে ছিলাম। লেখকের সার্থকতা হয়তো এইখানে। পাঠক হিসেবে আমার সর্বোচ্চ মনোযোগ কেড়ে নিতে তিনি সক্ষম।

ওনার পরিশ্রম সফল হোক এই দোয়া করছি। মৌলিকে এমন বিষয় নিয়ে বই লেখা অনেক ধৈর্য আর সাহসের কাজ। তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন। আগামীতে এমন বই যেন আরও লিখেন; তেমন একটা আশ্বাস লেখক থেকে আবারও চাই। শুভকামনা রইল।

● বানান ও সম্পাদনা—

কোনো-কে ‘কোন’, কি/কী বিভ্রাট, হ্রস্ব-ই কার ও দীর্ঘ-ই কারের ওলটপালট, লক্ষ-কে লক্ষ্য, জানেন না জানেই? এ-কার (ে) এর বদলে '☨' চিহ্ন, পরা-কে (পরিধান) পড়া, জানাশোনা-কে জানাকোনা; এমন বেশ কিছু বানান ভুল আর টাইপোর দেখা গিয়েছে।

পশু আর পাশু’র এর মধ্যে লেখক না গুলিয়ে ফেললে ভালো হতো। বারবার পশু-পশু বলে, পাশু-কে জোর করে পশু বানানোর প্রয়োজনীয়তা ছিল না। ইচ্ছাকৃত ভুল কি-না জানি না।

সম্পাদনার তথ্যের দিক থেকে যাচাই করার মতো কোনো রেফারেন্স যেহেতু দেওয়া হয়নি তাই আলাদা করে তেমন কিছু নিয়ে বলার নেই। কারণ দর্শন আর সমাধানের সমীকরণ ব্যতীত অন্যান্য সব ঘটনা প্রায় জানা। তবে শেষের দিকে কন্যা সন্তান না পুত্র সন্তানকে হাতে তুলে দেওয়া আর একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের ব্যাকস্টোরি আরেকটু খোলাসা করে দেখানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। স্পয়লারের কারণে এড়িয়ে যেতে হচ্ছে বিষয়গুলো।

● প্রচ্ছদ » নামলিপি » অলংকরণ—

প্রচ্ছদের বিষয়টা পুরো বইয়ের কনসেপ্ট লুকিয়ে রাখতে দারুণ কাজ করেছে। ফ্রন্টে যা দেখাচ্ছে আসলে তা নয়। তবে ব্যাকে যে ক্রিপ্টেক্স দেখানো হয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নামলিপিতে এই বইয়ের মাহাত্ম্য লুকানো আছে। চাইলে খুঁজে দেখতে পারেন। ক্লু দিলাম একটা।

অলংকরণগুলো পুরো বইয়ে আলাদা শোভা বর্ধন করেছে। প্রতিটি বিষয় আরও সহজভাবে বিচারের জন্য অলংকরণের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি ছিল।

● মলাট » বাঁধাই » পৃষ্ঠা—

প্রকাশনার দিক থেকে বাতিঘর প্রকাশনীর বই নিয়ে অভিযোগের কমতি নেই। তবে এই বইটি যেন অভিযোগের বোঝা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে বাঁধাই পুরো মাখন। মলাট চকচক না করলেও দেখে অনেক ভালো লাগছে। পৃষ্ঠা বেশ ভালো আর সবচেয়ে ভালো হলো খুলে আরাম করে পড়া যায়। লাইন গ্যাপ, ফন্ট স্পেস চোখে আরাম দেয়। বাহ্যিক প্রোডাকশন এমন দামে সেরা, অভ্যন্তরীণ নিয়ে সন্তুষ্ট। এখন পর্যন্ত পড়া বাতিঘরের টপনচ বই। দামে, মানে, গুণে।

≣∣≣ বই : অনার্য দেব • আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য
≣∣≣ জনরা : কনটেমপোরারি মিথলজিক্যাল থ্রিলার।
≣∣≣ প্রথম প্রকাশ : মার্চ ২০২২
≣∣≣ প্রচ্ছদ : সাদিয়া ইসলাম ইফতি
≣∣≣ অলংকরণ : লেখক ও ফাইযাহ্ রাফসান রীনিতা
≣∣≣ প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী
≣∣≣ মুদ্রিত মূল্য : ৬৮০ টাকা মাত্র
≣∣≣ পৃষ্ঠা : ৫৯২
Profile Image for Rifat Shohan.
34 reviews17 followers
April 5, 2022
"মিথলজি ইজ হিস্ট্রি ইন ডিজগাইস"

অসাধারণ..অনবদ্য..অকল্পনীয়!! আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য এই বইটির মাধ্যমে রীতিমতো এক অসাধ্য সাধন করেছেন। মিথলজি, ধর্ম, থিওলজি, অ্যান্থ্রপলজি, ইতিহাস, গণিত, কোয়ান্টাম ফিজিক্স, ভাষাতত্ত্ব, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জিও-পলিটিক্স কি ছিলো না বইটিতে! এতগুলো উপাদানের সাথে রয়েছে ধাঁধা, সিম্বোলজি আর কোডিংয়ের মানানাসই সমন্বয়। নিঃসন্দেহে ২০২২ এর অন্যতম সেরা বইটি পড়ে ফেললাম।

"যুগে যুগে শতরূপে রয় যিনি ভাস্বর,
জগতে বিরাজে যে রূপ খ্যাতিশ্রেষ্ঠে
মানবের মস্তকে হয়ে অবিনশ্বর।"
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
September 26, 2022
বইটিতে কী নেই সেটাই ভাবছি। মিথলজি, ধর্ম, থিওলজি, অ্যান্থ্রপলজি, ইতিহাস, গণিত, কোয়ান্টাম ফিজিক্স, ভাষাতত্ত্ব, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জিও-পলিটিক্স সব মিলেমিশে একাকার। গল্পের থেকে এইসব আলোচনা আরো দ্বিগুণ উপভোগ করেছি। মানতেই হবে বাংলা সাহিত্যের অনন্য সংযোজন এটি। শুধু গল্প উপস্থাপনের ধরণটা ভুগিয়েছে খানিক। আরো সুশৃঙ্খল হতে পারতো বলে মনে করি।

পুনশ্চঃ বারংবার এই বই আমাকে টানবে। এবং মুগ্ধ করবে। তখনকার জন্য একটি তাঁরা রেখে দিলুম।
Profile Image for Rafid Ul.
3 reviews
April 11, 2022
"যুগে যুগে শতরূপে রয় যিনি ভাস্বর,
জগতে বিরাজে যে রূপ খ্যাতিশ্রেষ্ঠে
মানবের মস্তকে হয়ে তিনি ঈশ্বর।"

"Mythology is history in disguise."

অনার্য দেব। শব্দটা দেখার সাথে সাথেই মনের মাঝে কেমন ভাবনা উঁকি দিতে পারে? A Deity related to non-aryan. Then, the question is, who are "Aryans"? And why it'd have to be in term of "non-aryan"?
আর্যরা কারা ছিলো? তাদের রুট কোথায়? তারা কি আদৌ কোনো নির্দিষ্ট জাতি ছিলো?
আর্য শব্দটার সাথে আমরা সর্ব প্রথম পরিচিত হয়ে থাকবো হাই স্কুলের সমাজ বইতে, ভারতবর্ষের প্রাগৈতিহাসিক সিন্ধুসভ্যতার সাথে সাথে যাদের নাম চলে আসে। সিন্ধু সভ্যতা বা, ইন্দাস-ভ্যালি সিভিলাইজেশনের সাথে আর্যদের সম্পর্ক কি ছিলো? আর্যরাই কি প্রকৃতিপক্ষে এই সভ্যতার সূচনা করে?
ওয়েল, আর্যরা কোনো জাতি ছিলো নাকি ভাষাগোষ্ঠী ছিলো এই নিয়ে নানান জনের মতভেদ আছে। তবে, বহুল প্রচলিত মতবাদ এই যে, আর্যরা কোনো সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের জাতি ছিলোনা, বরং তারা একটি নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠীই ছিলো যে ভাষার নাম "Archaic Indo-European Language"। তারা মূলত যাযাবর জীবনযাপন করতো, আর নদী বিধৌত অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বসতভিটে গড়ে তুলতো। কিন্তু তাদের অরিজিন কোথায়, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ধোয়াশাই রয়ে গেছে৷ ধারণা করা যায়, বেশ লম্বা সময় জুড়ে আর্যরা মধ্য এশিয়ায় অবস্থান করে। তারপর একদল ইউরোপের দিকে এবং আরেকটা দল ইরান হয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে এবং বৈদিক পিরিয়ডের সূচনা করে। এ সময়ের মধ্যেই সনাতন ধর্মের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরী হয় এবং এ ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়গ্রন্থ বেদ রচিত হয়। তারপর, রামায়ণ-মহাভারতের মতো মহাকাব্যের জন্ম হয়। তাহলে প্রশ্ন উঠে যে, আর্যরা আসার আগে ভারতবর্ষে কারা ছিলো? আদতে কি আর্যদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে সভ্যতার নতুন বিপ্লব শুরু হয়, নাকি আর্যরাই প্রকৃতপক্ষে অনুপ্রবেশকারী? ভারতবর্ষের সভ্যতা আর্যরা আসার আগে থেকেই কি অনেক উন্নত ছিলো?
নৃতত্ব বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্সরা আফ্রিকা অঞ্চল হতে পরিভ্রমণ শুরু করে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে যায়। প্রায় পঞ্চাশ হাজার বছর আগের সময়ের মাঝে ইতোমধ্যে হোমো সেপিয়েন্সদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব ঘটে। তখন পর্যন্ত সেপিয়েন্সদের কাজিনভুক্ত শ্রেণী নিয়ান্ডারথাল, ইরেক্টাস তাদের সাথেই সহাবস্থানে ছিলো। কিন��তু প্রায় ৩০,০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের মধ্যে বাকিদের বিলুপ্তি ঘটে যায়৷ এরপর শুরু হয় সেপিয়েন্সদের রাজত্ব। কৃষি বিপ্লবের পর হতে বিশ্বজুড়ে সভ্যতার সূচনা হয়। এদের মধ্য হতে আর্যরা কিভাবে একটা স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে পরিচয় লাভ করে ক্রমশ তাদের প্রভাব বিস্তার করে? কেন আর্য শব্দটাকে "self designation" হিসেবে হিস্টোরিয়ানরা আখ্যায়িত করেন? এই শব্দটি কি এমন দর্শনকে লালন করে যার মতাদর্শ হিটলারের মতো ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত খলনায়কের জন্ম দেয়? পাঠক, আর্য-অনার্যের এই মহা সংঘাতে আপনাদের স্বাগতম। এই সংঘাতের বাঁকে বাঁকে হাতছানি দেবে ইতিহাস ও মিথোলজির নানান উপাখ্যান। মানুষের মাঝে ঈশ্বরের আবির্ভাব কীভাবে হলো, কেন হলো এরও উত্তর পাবেন এই মহাযাত্রায়।

গুপ্তসংঘ, এ নামটির সাথে সাথেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ইলুমিনাতি, ফ্রিম্যাসনারি বা প্রায়োরি অফ সায়োনের মতো বাঘা বাঘা নাম। এরকম সিক্রেট সোসাইটিগুলোকে ঘিরে বহির্বিশ্বে রচিত হয়েছে কন্সপাইরেসি থ্রিলারের নানারকমের সাহিত্য। সে হিসেবে আমাদের এই উপমহাদেশে এর অভাব খুব ভালোভাবেই পরিলক্ষিত হতো। হাতের কাছে ছিলো এক "9 Ashoka's mysterious men"। তবে প্রিয় পাঠক, এই অনার্য দেব আপনাদের সামনে প্রকাশ করবে অনেক চমকপ্রদ তথ্য, পরিচিত হবেন এই উপমহাদেশকে ঘিরেই গড়ে ওঠা আরও রহস্যময় কিছু কাল্ট বা সিক্রেট সোসাইটির সাথে। কি সেগুলো? তাদের কার্যক্রম কেমন? তারা কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিক্রেট হাজার বছর ধরে বহন করে আসছে? উত্তর জানতে আপনাকে পড়তেই হবে এই বিশাল কলেবরে রচিত " অনার্য দেব" বইটি।

"এই সিক্রেটটা পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী বোমার চেয়েও ভয়ংকর প্রফেসর। এটা ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্ম, বিশ্বাস প্রত্যেককেই ধাক্কা দেবে..."

খ্রিষ্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে হতে এক গোপন সত্য লালন করে আসতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি গুপ্তসংঘ। যে সত্য প্রকাশ হয়ে গেলে কেবল ভারতবর্ষ না, সমগ্র বিশ্বই কেঁপে উঠবে। আবারও নতুন করে লিখতে হবে ইতিহাস। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এক নিমেষেই বিশৃঙ্খলায় রূপ নেবে। তাই যেকোনোভাবেই হোক, সত্যটি গোপন রেখে এর সুরক্ষায় সদা জাগ্রত এই সংঘ।
হঠাৎই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন মাহমুদুল হাসান, তবে মৃত্যুর আগে তার আপন ভাগ্নে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত থিওরেটিক্যাল ফিজিসিস্ট জায়েদ আরাফাতের জন্য রেখে গেলেন একটা রহস্যময় ক্রিপ্টেক্স, যা তাকে পৌঁছে দিলো প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী, কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন এন্ড কালচারে ইমেরিটাস প্রফেসর দীপেশ কুমার বিশ্বাসের নিকট।
অতঃপর ক্রিপ্টেক্সের হেঁয়ালিপূর্ণ ছন্দ, ধাঁধা তাদের বাধ্য করলো পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াতে। কিন্তু বিধির বাম, ইতোমধ্যেই তাদের নাম চলে আসে ইন্টারপোলে, ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট ট্যাগ দেওয়া হয় তাদের নামের সাথে। কিন্তু কেন? অগত্যা, ছদ্মবেশ ধারণ করে পথের বাঁকে বাঁকে ধর্ম, পুরাণ, বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব, সিম্বোলজি, কোড, মিথোলজির মারপ্যাচ সলভ করতে করতে অবশেষে তারা সম্মুখীন হয় ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায়ের দুয়ারে, যে দুয়ারের অপর প্রান্তে অপেক্ষা করছে ভারতবর্ষের জন্মলগ্নের এক গুপ্ত ইতিহাস, যে ইতিহাস পরবর্তীতে সনাতন ধর্মের ভিত্তি রচনা করে।
এদিকে, বেলুচিস্তান ও দিল্লীতে গড়ে ওঠেছে দুটো আলাদা আলাদা ধর্মীয় মতাদর্শী জঙ্গী সংগঠন। এক প্রলয়ঙ্কারী দাঙ্গা সৃষ্টি করতে যারা বদ্ধপরিকর। কিন্তু এ দাঙ্গার পিছনে কলকাঠি নাড়ছে কারা? এসবের পেছনে তাদের আসল উদ্দেশ্যটাই বা কি? সবকিছুর সাথে প্রফেসর, আর জায়েদের সম্পর্কটাই বা কোথায়?
পাঠক, এই বইটি ভারতবর্ষের, মানবজাতির আইডেন্টিটির ইতিহাস। একটি হেঁয়ালির আড়ালে লুকিয়ে আছেন মহান অনার্য দেব। কে সেই অনার্য দেব? কিভাবে তিনি বদলে দিয়েছিলেন সমগ্র বিশ্বকে? পাঠক, এই রহস্যের চাদরে মোড়ানো অনার্য দেবের সন্ধ্যানে প্রফেসর আর জায়েদের সাথে ছুটে বেড়াতে হবে বাংলাদেশ বিশ্বের নানা প্রান্তে। উন্মোচিত হবে ইতিহাসের বিভিন্ন রহস্য। এই সুবিশাল যাত্রায় আপনাকে স্বাগতম।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এবারের বইমেলায় প্রকাশিত মৌলিক থ্রিলারগুলোর মধ্যে এই একটা বই নিয়ে আমার জল্পনাকল্পনা, আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিলো। কেনোই বা থাকবেনা? পছন্দের জনরায় বাংলায় প্রথমবারের মতো কোনো রাইটার একইসাথে এতগুলো সাবজনরার কম্বিনেশনে ঢাউস সাইজের একটি বই তুলে ধরেছে, আমাদের মতো ড্যান ব্রাউন, স্টিভ বেরি, রোলিন্স ভক্তদের জন্য অনেক সুখবরই বটে। এখন, বইটা কতটুকু তেষ্টা মেটাতে সক্ষম হয়েছে তা দেখা যাক।
শুরুতেই একটা বিষয় বলে নেওয়া ভালো, এ বইয়ের আনুমানিক ৭৫% অংশ হচ্ছে কথোপকথনের মাধ্যমে ইতিহাসের অধ্যায় ঘাটাঘাটি করা৷ অনেকটা লম্বা সময় জুড়ে সিক্রেট কোড, ধাঁধা সলভ করার জন্য ইতিহাস, মিথ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। বাকি ২৫% সাসপেন্স মেকিং, একশন। তাই ইতিহাস, মিথোলজি এসবের প্রতি আগ্রহ নেই যাদের, তাদের জন্য খুব একটা সুখপাঠ্য নাও হতে পারে৷ তবে, পারসোনালি আমি হিস্টোরিক্যাল-মিথোলজিক্যাল থ্রিলার ভক্ত৷ এসব কিছু আমি তাই বেশ ভালোই এনজয় করেছি।
তবে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত তথ্য আমার মতে বইটাতে ছিলোনা৷ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য যতটুকু হিস্ট্রি এক্সপ্লেইন করা প্রয়োজন, লেখক এটুকুই করেছেন। বইয়ের যে প্লট, নিঃসন্দেহে হাই কনসেপচুয়াল। ফার্স্ট লুকে বইটাকে কেবল ভারতবর্ষ আর হিন্দু পুরাণের মাঝে সীমাবদ্ধ মনে হলেও অচীরেই সেই ধারণাকে ভেঙ্গে দেবে। বইটির সাথে জড়িয়ে আছে মিশরীয়, সুমেরীয়, রোমান, গ্রীক মিথ হতে শুরু করে আব্রাহাম রিলিজিয়নগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ধর্মগুলো সম্পর্কে নতুন একটি ভিউ ইন্ট্রোডিউজ করাবেন লেখক। আছে ইতিহাসের অধ্যায়জুড়ে বিখ্যাত চরিত্রদের অজানা রহস্য৷ কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন বিষয়ে আগ্রহীরা লুফে নিতে চাইবেন আশা করি৷ সবশেষে লেখক সিক্রেটটার আদলে যে হাইপোথিসিস দাঁড় করালেন তা রীতিমতো চমকপ্রদ!!
ভাষার ওপর ভিত্তি করে কিভাবে সভ্যতা থেকে সভ্যতায়, মিথ থেকে মিথের মাঝে ইন্টারকানেকশন তৈরী হতে পারে, এ সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পাবেন বইটিতে। বইটি দাঁড় করাতে লেখকের যে সাইন্স, হিস্ট্রি, রিলিজিয়ন, মিথোলজি, লিঙ্গুইস্টিকসে প্রচুর রিসার্চ ওয়ার্ক করতে হয়েছে তা বেশ বোঝাই যাচ্ছে। সেজন্য লেখককে সাধুবাদ জানাই।
তবে, সর্বোপরি, এটি একটি ফিকশনাল বই। আর একটি স্বার্থক থ্রিলার ফিকশন নির্ভর করে গুড স্টোরি টেলিং, সাসপেন্স মেকিং, ওয়েল ডিটেইলিং, ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট এসব ফেক্টরের উপর। এই দিক থেকে যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে বলবো, গল্পে ডিটেইলিং এ লেখকের ঘাটতি দেখা গিয়েছে। লেখক হয়তো কথোপকথনে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে এই দিকটার প্রতি অবিচার করে ফেলেছেন। গল্পের প্লট ওয়ার্ল্ড ক্লাস। কাহিনীর অনেকটা অংশ জুড়ে এক দেশ হতে অন্য দেশে প্রোটাগনিস্ট দুইজন ছুটে বেড়িয়েছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও কাহিনীর আবর্তিত প্লেসগুলো ক্যারেক্টারদের সাথে সাথে ভিজুয়ালাইজ করতে কিছুটা কষ্ট পোহাতেই হয়েছে যথেষ্ট ডিটেইলিং এর অভাবে। যেমন, মেঘালয়ে পাহাড়ের পাদদেশে অজানা গন্তব্যের পানে হাঁটার সময় দুইজনে মিলে আলোচনা করছেন ইতিহাস নিয়ে ঠিক আছে, কিন্তু একই সাথে ধাঁধা সমাধান করার তাড়না অন্যদিকে অজানা-অচেনা একটা পরিবেশে অচেনা কিছু মানুষকে ভরসা করে দুই ভদ্রলোকের এগিয়ে যাওয়ার যে মিশ্র একটা প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়ে ওঠা উচিত ভিন্ন এক পরিবেশের সাথে সাথে, এই ব্যাপারটা আমি মিস করেছি খুবই। এ ধরনের আরও বেশ কিছু সিন আছে কাহিনী জুড়ে।
তবে সাসপেন্স মেকিং এ লেখক যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। ক্লাইমেক্সের একশন সিনগুলোর এক্সিকিউশন পারফেক্ট। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টর আউটপুট ও মোটামুটি ভালোই। এইবার একটু স্পয়লার হয়ে যাক!!!

★স্পয়লার ডিস্কাশনঃ
টেম্পল আশ্রমের দিল্লী শাখার কড়া সিকিউরিটি ব্রেক করে তাহেরের প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কব্জা করাটা গল্পের অনেক ইম্পোরটেন্ট একটা ঘটনা, কিন্তু কিভাবে ব্রেক করলো, কিভাবে গোপন তথ্যটার সন্ধান পেলো, তা বর্ণনা করা হয়নি। অথচ, এ জায়গাটার মাঝেও যথেষ্ট থ্রিলিং একটা এনভায়রনমেন্ট ক্রিয়েট করলে আরও বেশি ইফেক্টিভ হতো, যেখানে তাহের গল্পের অন্যতম একটা প্রধান ক্যারেক্টার।
আর, একটা প্রশ্ন আছে, ক্রিপ্টেক্সটা দ্বারা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন লোকেশন সিক্রেটটার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার সাথে সাথে ব্রহ্মাত্র-৩ এর এক্টিভেশন হিসেবেও কাজ করে। তারমানে, জায়েদদের সিক্রেটটা প্রাপ্তি হলেও একইসাথে মানবজাতির ভবিষ্যত হুমকি মুখে পড়ার পথ আরও সুগম হয়ে যাচ্ছে বোমাটি এক্টিভেট হলে। জায়েদের মামা এটা জেনেশুনেই ওদের পাঠিয়েছেন সিক্রেট উদ্ধারে?

প্রাচীন মিথোলজির আড়ালে কোনো দেশ, জাতি বা সভ্যতার ইতিহাস লুকিয়ে থাকতে পারে এই কনসেপ্টে এর আগেও দশগ্রীব, বিন্দুবিসর্গের মতো বই রচিত হয়ে বাংলা থ্রিলার সাহিত্যে। আর এইবার উপস্থিত আপনাদের সামনে এখন পর্যন্ত বাংলার সবচেয়ে বড় মৌলিক থ্রিলার অনার্য দেব। মাস্টারপিস কিনা জানিনা, কিন্তু বইটা মাস্টরিড তা বলার আর বাকি থাকেনা। হিস্টোরিক্যাল, মিথোলজিক্যাল, পলিটিক্যাল, সাসপেন্স, সিম্বোলজি, কন্সপাইরেসি ইত্যাদি সাবজনরায় মিক্সড এই কাজটি অনেক আলোচনার
দাবি রাখে নিঃসন্দেহে। আর, প্রফেসর-জায়েদের জুটিটা পারসোনালি বেশ পছন্দ হয়েছে আমার, লেখকের কাছে আবদার থাকবে পরবর্তীতে এই গল্পের আরও কিছু উপাখ্যান নিয়ে আসার৷ শুভ কামনা রইলো।

"খুঁজিছো যারে দ্বন্দ্বে, সেই অভিসন্ধে
বহুবিদ্যাজ্ঞের ওল্টানো স্কন্ধে
প্রাচীন শ্লোকে বন্দে, তারকার ছন্দে,
প্রাণ পাবে পিতা আজি এক স্নায়ুসন্ধে..."

বইয়ের নামঃ অনার্য দেব
লেখকঃ আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য
প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী
জনরাঃ হিস্টোরিক্যাল, মিথোলজিক্যাল, কন্সপাইরেসি, কাল্ট, পলিটিক্যাল থ্রিলার
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫৯২
মুদ্রিত মূল্যঃ ৬৮০ টাকা

হ্যাপি রিডিং..... 💗💗💗
Profile Image for musarboijatra  .
283 reviews346 followers
July 18, 2022
অনার্য দেব। কে এই অনার্য দেব- যারা নাম শুনে আন্দাজ করতে পারবেন, তাদের এই ৫৯২ পৃষ্ঠা পড়তেও ভালো লাগবে। কারণ?

সহজে বুঝাতে বলা যায়, অনার্য দেব পুরোপুরি ড্যান ব্রাউনের ছাঁচে তৈরী হয়েছে। পৃথিবীর ক্রান্তিকাল উপস্থিত, জড়িয়ে পড়ে মূল চরিত্ররা, একাধিক পক্ষের ধাওয়া খেয়ে প্রাণ রক্ষা করার মাঝে রহস্যভেদ করে যেতে হয় তাদের। এই প্রক্রিয়ার মাঝে গভীর ঐতিহাসিক আলাপ চলে, অল্টারনেট হিস্টরিতে ডুব দিতে হয়, অবধারিতভাবে এমন সব তথ্য আসে যা প্রকাশ পেলে ইতিহাস পাল্টে যাবে।

আগ্রহের বিষয় হলো, অনার্য দেব বইটার প্রাণ হলো ভারতীয় পুরাণ, এবং নৃতাত্ত্বিক-প্রত্নতাত্ত্বিক-ভাষাতাত্ত্বিক পাঠ। অনার্য ইতিহাস, আর্য আগমণ, আর্য জাতির জার্মান-য়ুরোপীয় সংযোগ, এই সবই এসেছে। এর বাইরেও পারস্যের জরথুষ্ট্রবাদের সাথে সনাতন ধর্মের বৈপরিত্য, রোমান এম্পায়ার এবং গ্রীক মিথলজির সাথে যোগসূত্র, এই সব মিলে অনেক লম্বা পাঠ চলে এসেছে রহস্যভেদের খাতিরে, যেটা ড্যান ব্রাউন বা একই জনরার অন্যান্য লেখকদের বইয়ের তুলনায় অনেক বেশিই।

এত এত বিষয়ের ওপর আলোকপাত হয়েছে যে, যদি এর মাঝের একাধিক বিষয়ে পাঠকের আগে থেকে আগ্রহ এবং ঘাঁটাঘাঁটি করা না থাকে, তাহলে হাঁফিয়ে পড়া অবধারিত। আর তার ওপর বইয়ের দুর্বলতার দিক- তার প্রেজেন্ট ডে স্টোরি সুনির্মিত না। যতটা দূরান্তের থিওরি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলোকে গল্পের বর্তমান সঙ্কটের সাথে মিলিয়ে দেওয়াটা আমার কাছে আরোপিত-ই মনে হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে।

তদুপরি, লেখক দীর্ঘদিন এই বিপুল গবেষণার মাঝে ডুবে ছিলেন বলে একটা ভুল করে ফেলেছেন : পাঠকের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে নিপুণ হতে পারেননি, অনেক ক্ষেত্রেই বুঝতে পারেননি কতটা দিলে পাঠক গিলতে পারবে। অন্তত, আবেস্তা'র সাথে বেদের সাদৃশ্য, আবার মিশরের সর্পদেবীর সাথে আর্য সংযোগ, এসব বিষয় যেমন হুট করে এসে পড়েছে গল্পে, তা সম্বন্ধে আগে থেকে ধারণা না থাকলে, লেখকের দেওয়া থিওরি হজম করে আবার গল্পের রহস্যে মাথা খাটানো পাঠকের জন্য সহজ হবে না।

সর্বোপরি, এত বড় বইটা পড়ার একেক পর্যায়ে আমার বিভিন্ন মনোভাব জন্মেছিল। কখনো উপভোগ করেছি, কখনো বিরক্ত হয়েছি। এবং বিরক্ত হয়েছি মূলত বর্তমান সময়ের গল্পের দুর্বলতা দেখে, এবং অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করে।

তবে আমার কাছে বইটার যত আবেদন, তার সবটুকুর মূলে ছিল "Myth is history in disguise."~ পুরাণের মহারণ্যে যুক্তিগ্রাহ্য ইতিহাস খুঁজে ফেরা আমারও পছন্দের, এবং এই বইয়ের অধিকাংশ পৌরাণিক অধ্যায় আমার খুব পছন্দের বলে।

বইটা শুরু করেছিলাম ঈদের দিন, সন্ধ্যায়। আমি আর @aadritas_bookishthoughts একসাথে পড়েছিলাম, তাই নিজেদের কখন কেমন লেগেছে সেটা তুলনা করা গেছে। ইন্টারেস্টিংলি, ৪০ পেইজের মাথায় আমি বলেছিলাম "বইটা ছাদে উঠে ছুঁড়ে মারতে ইচ্ছা হচ্ছে," ১০০ পেইজ পড়ে বলেছি "আদৃতা কষ্ট করে হলেও ধরে রাখ, it gets better," ২০০ পেইজেও আমি হুকড ছিলাম, ৪০০ পেইজ অব্দি যেতে যেতে আবার সর্বোপরি বইটাকে গোঁজামেলে মনে হচ্ছিল। ততক্ষণে আদৃতার পুরো বই শেষ, এবং ভালো লাগেনি।

একদম শেষ অংশে, যখন থেকে অনার্য দেব-এর পরিচয় প্রকাশিত হয় (আমি এটা বলে দিয়ে পাঠকদের মজা নষ্ট করছি না), তারপর থেকে আমার অসম্ভব ভালো লাগতে শুরু করে, কারণ যে সময় থেকে আমি হিন্দু মিথলজি নিয়ে জানতে শুরু করেছি, অনার্য দেব তখন থেকেই আমার অন্যতম ফ্যাসিনেশন। এবং যেসব থিওরি এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে তাঁকে নিয়ে, (যা তাঁর পৌরাণিক উপস্থাপন এবং দেবত্বের অনুরূপ নয়), সেসব আলোচনাও আমি আগ্রহের সাথে জেনে এসেছি অনেকদিন ধরে।

আমি থ্রিলার খুব একটা পছন্দ করি না, এবং অনার্য দেব বইটা আমার ভালো লাগার কারণও সেটা না। আমার কাছে বইটা ভালো লেগেছে, কারণ বইটা ছিল আমার পুরাণ-প্রেমী সত্ত্বার প্রতি একটা উপহার।

এবং দীর্ঘকাল ধরে এত এত গবেষণা করার পর (অথবা পুরাণ সম্বন্ধে এতটুকু জানা-র মধ্য দিয়ে যাবার পর), একটা বই লিখতে পারা সম্ভবত কারো জন্য সবথেকে ভালো একটা পাওয়া। এবং আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য তা করতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এই বইয়ের জ্ঞানটুকু গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে উপস্থাপন করতে হতো, সেক্ষেত্রে অবধারিতভাবে লেখকের প্রোফাইল নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। এবং আমাদের মতো ছাত্র থাকাবস্থায় কোনো একটা বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে গভীর পড়াশোনার পরও সেটা নিয়ে বক্তব্য রাখা সমীচীন হয় না (নেহাত বন্ধুমহল ছাড়া) কেবল রিসার্চ ব্যাকগ্রাউন্ড অথবা প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাবে। সেক্ষেত্রে একটা রাস্তা থাকে, ফিকশনের মাঝে নিজের বক্তব্য/থিওরি উপস্থাপন।

[ এখানে বলে রাখি, সৌহার্দ্য যেসব *থিওরি* এখানে টেনেছেন তার অধিকাংশ কিন্তু *লেখকের উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত* না। বিস্তর পড়ার বই পাবেন এই নিয়ে। ]


ব্যক্তিগতভাবে আমি সৌহার্দ্য'র লেখার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম অলৌকিক অতিপ্রাকৃত গল্প সংকলনে তাঁর 'নোনা' গল্পটা পড়ে। এবং আশাবাদী ছিলাম, বাংলাদেশে আরেকজন ভরসা রাখার মতো লেখক পেলাম বোধহয়। সে জায়গা থেকে অনার্য দেব-এর গল্প নির্মাণ আমার অনেকটাই দুর্বল মনে হয়েছে। হতে পারে লেখক এটা লেখার পর থেকে 'নোনা' লেখার মাঝে আরো পরিণত হয়েছেন। এবং বেটা রিডিং ও সম্পাদনার ঘাটতি ছিল।

সবটুকু আপনাদের সামনে রইলো। কেন ভালো লাগতে পারে বইটা, তা সবিস্তারে জানালাম। যদি একদমই ভালো না লাগে পড়ে, সেটাও বোধগম্য।

অনার্য দেব
লেখক : আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য
জনরা : অল্টারনেট হিস্টরি, মিথলজিকাল থ্রিলার
প্রকাশক : বাতিঘর
প্রকাশকাল : বইমেলা ২০২২
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৫৯২
মুদ্রিত মূল্য : ৬৮০ টাকা
Profile Image for Nusrat Mahmood.
594 reviews737 followers
April 8, 2023
আমি লেখকের রিসার্চ করবার পরিশ্রমকে সম্মান করি। কিন্তু ইনফরমেশন ডাম্পিং একটু বেশি হয়ে গেছে। মানে এক পর্যায়ে এটা ফিকশন না হয়ে নন-ফিকশনে রুপ নেয়। ভয়ানক ব্যাপার হলো, ফিকশন এবং নন-ফিকশনের মাঝে যে লাইন তা খুঁজে দেখার মতো ধৈর্য ছিল না এত বেশি ইনফো ছিলো। ড্যান ব্রাউন এর আদলে লেখা বইট উতরে যাবে লেখকের প্লট তৈরির পেছনে তার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য যা বোঝা যায় উনি অনেক খেটেছেন। কিন্তু দিন শেষে আমাকে এটাও বুঝবার সুযোগ দিতে হবে এখানে কতটুকু ফিকশন আর কতটুকু কল্পনার মিশেল এবং প্লটের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে যত তথ্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় উঠে আসছে তার কতটুকু আমি পাঠক হিসেবে নিতে পারছি।

৩.২ তারা।
Profile Image for Adnan Arsalan.
3 reviews12 followers
March 19, 2022
Wow!

বইটার ব্যাপারে যখন প্রথম পোস্ট দেখেছিলাম বাতিঘরের ফেসবুক গ্রুপে দুইটা জিনিস মাথায় এসেছিল: ১) হুমম, ইন্টারেস্টিং; ২) এত বিশাল বই, নতুন লেখক কি পারবেন এত বিশাল ব্যাপ্তির সাবজেক্টকে ঠিকমত এক্সিকিউট করতে?

বইটা পড়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু লেখকের কোন কাজ আগে পড়া হয়নি, পরিচিত কেউ বলতেও পারল না কিছুই। গুডরিডস, ফেসবুক কোথাও একটা রিভিউ নেই। কিনব কি কিনব না করতে করতে বাতিঘরের স্টলে যখন গিয়ে উপস্থিত হলাম স্ত্রী তখন একপ্রকার ঘাড় ধরে বইটা কিনে দিল।

বইটার ব্যাপ্তি বিশাল। বিভিন্ন অঞ্চলের মিথোলজিতে হাত দিয়েছেন লেখক এবং বেশ ভালোমতই লিখেছেন। অল্পসল্প না, বেশ ভালোমতই বর্ননা করেছেন। লেখার স্টাইল ভালো, মিথোলজি আর থ্রিলার বর্ননার মাঝে বেশ ভালোই কমিক এলিমেন্টও আছে। পড়তে ভালোই লাগবে।

যাইহোক, আমি সন্দেহে ছিলাম শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক শেষ করতে পারবেন কিনা লেখক নাকি জগাখিচুড়ি হয়ে যাবে। পার্সোনালি আমার মনে হয়েছে লেখক সফল হয়েছেন তার ভিশনটাকে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করতে। শেষের দিকে একটু প্রলংড মনে হয়েছে, না হলেও সমস্যা ছিল না কোন আবার থেকেও খারাপ হয়নি।

উপসংহারে বলব, গুড রিড, ফাস্ট রিড, ফান রিড। নি:সন্দেহে বইমেলা ২০২২ এর বেস্ট থ্রিলারের একটা।
Profile Image for Mohtasim Hadi Hadi.
Author 11 books54 followers
June 23, 2022
লেখক প্রচুর হোমওয়ার্ক করেছেন বইটার জন্য নি:সন্দেহে। পুরো বইয়েই তার প্রতিফলন দেখা যায়। কিছু কিছু জায়গায় সেটা বাড়াবাড়ি পর্যায়েও। স্টোরি টেলিং পছন্দ হয়নি, সিকুয়েন্সে খেই হারিয়েছি বারবার। মেদ কমানো যেতো অনেক জায়গায়। দু'টো পরস্পর বিরোধী স্টেটমেন্ট দেয়া যায় বইটি নিয়ে। আজ থেকে কয়েকবছর পর বইটি লেখা হলে লেখক তার এই ছোট ছোট খুঁতগুলো বেশ সুন্দর করে ওভারকাম করে আসতেন। কিন্তু দশ বছর পর যে বইটি লেখা হবে তার জন্য এক্সপেরিমেন্টের ক্ষেত্র যদি এই বইটি হয় তাহলে সামনে অনবদ্য কিছু যে আসবে সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
Profile Image for Zahidul.
450 reviews93 followers
May 8, 2022
❝ইন্দ্র প্রস্থ ভেঙেছি আমরা, আর্যাবর্ত ভাঙি
গড়েছি নিখিল নতুন ভারত নতুন স্বপনে রাঙি!❞
―জীবনানন্দ দাস
-
❛অনার্য দেব❜
-
জায়েদ আরাফাত, পদার্থবিদ্যায় বেশ ভালো পরিমাণে জ্ঞান এবং দক্ষতা সম্পন্ন এক ব্যক্তি। তার মামার মৃত্যুর পরে এক অদ্ভুতুড়ে উইল পায় সে। সেই উইল এবং উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এক বিশেষ বস্তুর রহস্য উদঘাটনে নেমে পরে সে। সেই রহস্য উদঘাটনের জন্য পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছোটাছুটি শুরু হয় তার। এ কারণে জায়েদ আরাফাতের পেছনে লাগে বেশ কিছু গুপ্তদল।
-
প্রফেসর ইমেরিটাস দীপেশ কুমার বিশ্বাস, যে কিনা ডিকেবি নামেও পরিচিত। এই ব্যক্তি জনসাধারণের চোখ থেকে অনেক আগেই নিভৃতে চলে গিয়েছেন। কিন্তু প্রফেসরের সেই নিভৃত জীবনযাত্রা বাধাপ্রাপ্ত হয় যখন তার দরজায় কড়া নাড়ে জায়েদ আরাফাত। রহস্যের গন্ধ পেয়ে অবসর ভেঙে জায়েদের সাথে প্রফেসর ডিকেবিও যোগ দেয় সেই রহস্য উদঘাটনে, তাদের সঙ্গী হয় তাহের নামের এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।
-
আজ থেকে হাজার বছর আগে বৃহত্তর ভারতের এক বৈদাচার্যকে ডাকা হয় বিশেষ এক গোপনীয় কাজের জন্য। যেই গোপনীয় কাজ হাজার বছর পরে পরিণত হয় এক কিংবদন্তিতে। কেউ কেউ আশংকা করেন যে এই কিংবদন্তি প্রকাশ পেলে হয়তো বদলে যেতে পারে ভারতবর্ষের হাজার বছরের ইতিহাস।
-
এখন জায়েদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বিশেষ সেই বস্তুর আসল রহস্য কী? অনার্য দেব আসলে কে আর কেনই বা এ বিষয়ক কিংবদন্তির রহস্য উদঘাটনে নেমেছে নানা ধরনের গুপ্তসংঘ? জায়েদ আরাফাত আর প্রফেসর দীপেশ কুমার বিশ্বাস কী পারবে হেঁয়ালির বেড়াজাল ভেঙে এই সকল রহস্যের সমাধান করতে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য পড়তে হবে লেখক আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য এর প্রায় ৬০০ পাতার বিশাল কলেবরের মৌলিক কন্সপিরেসি থ্রিলার ঘরানার উপন্যাস ❛অনার্য দেব❜।
-
❛অনার্য দেব❜ বইটি মূলত প্রায় ৬০০ পেইজের, বিশাল কলেবরের কন্সপিরেসি থ্রিলার ঘরানার উপন্যাস। এছাড়াও বইটির ভেতরে ঘটনার কালচক্রে উঠে এসেছে হিস্টোরিক্যাল, পলিটিক্যাল, মিথোলজিক্যাল, কাল্ট থ্রিলারের নানা উপাদান। বিশ্বব্যাপী এ ধরণের কলেবরের কন্সপিরেসি থ্রিলার বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় এক ঘরানা হলেও আমাদের দেশে এ ধরণের বিশাল কলেবরের উপন্যাস আমার চোখে খুব একটা ধরা পড়েনি। তাই বাংলা ভাষায় কন্সপিরেসি থ্রিলার ঘরানার এত বড় উপন্যাস হওয়ার কারণে বইটির ব্যপারে আমার আগ্রহ প্রথম থেকেই ছিলো।
-
❛অনার্য দেব❜ বইটির কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর প্লটের কথা। বইয়ের কলেবরের মতো এর প্লটও অনেক বিস্তৃত। ‟পুরো পৃথিবী বিপদের মুখে, শুধুমাত্র কয়েকজন বা একটি টিমের হাতেই রয়েছে পৃথিবী রক্ষার দায়িত্ব” এ জাতীয় গ্লোব ট্রটিং থ্রিলারের পারফেক্ট উদাহরণ বলা যায় বইটিকে।অনেকের কাছে এ ধরনের থিম ক্লিশে লাগলেও টানটান ঘটনাপ্রবাহ এবং দারুণ বর্ণনাশৈলী হলে এই ধরণের উপন্যাস পড়তে ভালোই লাগে আমার কাছে, যেমন হালের রবার্ট ল্যাংডন কিংবা সিগমা ফোর্স সিরিজ। ❛অনার্য দেব❜ বইটিও কমবেশি এ ঘরানার কাতারেই পড়ে। গুপ্তসংঘ, তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব এবং ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, মিথোলজি, সিম্বোলজি- মোটকথা এ জাতীয় থ্রিলারের মোটামুটি সবগুলো চেকবক্সেই টিক মার্ক দেওয়ার মতো করেই লেখা হয়েছে বইটা।
-
❛অনার্য দেব❜ বইটি লেখকের প্রকাশিত দ্বিতীয় বই হলেও মাত্র দ্বিতীয় প্রকাশিত বইতেই লেখক যে পরিমাণ হিস্টোরিক্যাল এবং মিথলজিক্যাল রেফারেন্স এনেছেন তা আসলেই প্রশংসা যোগ্য। তাই এই বইয়ের পেছনে লেখক যে কী পরিমাণে পরিশ্রম করেছেন তা পড়ার সময়ই স্পষ্ট বোঝা যায়। বইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সব ক্লু হেঁয়ালির ছন্দে দেওয়া ছিলো যা পড়ার সময় ভালোই লাগলো, কিছুটা মগজ খাটানোর চেষ্টাও করেছিলাম সে সময়ে। কাহিনির প্রয়োজনে নানা সময়ের, নানা দেশের, নানা জাতের প্রচুর রাজা-মহারাজা-কীর্তিমানের কথা উঠে এসেছে বইতে। সেই সাথে বর্তমান সময়ের অনেকগুলো ধর্মে প্রচারিত নানা ঘটনাও কাহিনিকে প্রভাবিত করেছে যার কয়েকটা আসলেই ধাক্কা দেওয়ার মতো। বইয়ের প্লটে এর সাথে যুক্ত হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান এবং ইতিহাসের বুকে ঘটা বিতর্কিত কিছু ঘটনা। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এই বইয়ের প্লটটি আসলেই সুবিশাল এবং এই ধরণের বই যারা পড়েন তাদের জন্য আগ্রহোদ্দীপক।
-
❛অনার্য দেব❜ বইটিতে প্লটের দিক থেকে কোন ধরণের কার্পণ্য করা না হলেও বইয়ের বর্ণনাভঙ্গি কিছু জায়গায় ফ্লাট লেগেছে। এ ধরণের টানটান থ্রিলারের প্লটের সাথে যে ধরণের দুর্দান্ত বর্ণনাভঙ্গি দরকার তা মাঝে মধ্যেই বইয়ের ভেতরে মিসিং মনে হয়েছে। তবে বইয়ের অন্যতম প্রধান ড্রাইভিং ফোর্স- জাতিগত বিভেদের ব্যাপারগুলো বেশ সাহসিকতার সাথে বইতে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রায় পুরো বইয়ের ঘটনাপ্রবাহ সংলাপের মাধ্যমে বর্ণনা করায় এ বইতে সংলাপের গুরুত্ব ছিলো অনেক। এদিক থেকে মনে হয়েছে বইটা কিছুটা লেটডাউন করলো। বিশেষ করে কয়েক জায়গায় প্রফেসর এবং জায়েদের সংলাপ আরো সুচারুরূপে বর্ণিত হলে মনে হয় আরো দুর্দান্ত হতে পারতো বইটা।
-
❛অনার্য দেব❜ বইয়ের চরিত্রায়ণের কথা বলতে গেলে বইতে অনেক ধরণের চরিত্র আসলেও প্রধান চরিত্র ছিলো জায়েদ আরাফাত আর দীপেশ কুমার বিশ্বাস- এই দুজনই। বইতে তাদের যুগলবন্দী ভালো লাগলেও তাদের ব্যাকস্টোরি আরো ডেভেলপ করা যেতে পারতো বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া বইতে যে পরিমাণ ভাগ্যের সহায়তা তারা পেয়েছে তা বিশ্বাস করাও একটু কষ্টসাধ্য। বইতে যেভাবে নানা ধরণের গুপ্তসংঘ দেখানো হয়েছে তা অবশ্য আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। বাংলা মৌলিক থ্রিলারে গল্পের ভেতরে গুপ্তসংঘগুলোর এত চমৎকারভাবে স্থাপন আমি এর আগে কখনো দেখতে পাইনি। তবে তার ভেতরে কয়েকটি গুপ্তসংঘের মূলনীতি এবং অরিজিন পাঠকভেদে কিছুটা বিতর্কিত মনে হতে পারে, তাই বইটি পড়ার সময় সেগুলো ফিকশনাল স্টোরি হিসেবেই পড়ার আহবান থাকবে।এছাড়াও যেভাবে বইতে একের পর এক ক্লু দেওয়া হয়েছে এবং এর সমাধান করা হয়েছে তা পড়তে গিয়ে এঞ্জয়েবল মনে হলেও কিছু জায়গায় রহস্যভেদের প্রক্রিয়াগুলোর ব্যপারে পাঠক মনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটাও অস্বাভাবিক কিছু না।
-
❛অনার্য দেব❜ বইয়ের প্রোডাকশনের দিকে তাকালে বাহ্যিকভাবে এই বইয়ের প্রোডাকশন বাতিঘরের অন্যান্য বইগুলোর মতোই টিপিক্যাল। আমার জানামতে বইটি উক্ত প্রকাশনীর সবচেয়ে বড় একক মৌলিক থ্রিলার, তাই যে সুবিশাল কলেবর এবং প্লটের মাধ্যমে গল্পটি বর্ণিত হয়েছে, সে হিসেবে বইয়ের দাম রিজনেবলই লেগেছে। বইতে কাহিনির প্রয়োজনে প্রচুর ছবি এসেছে এবং এ ছবিগুলো বইয়ের মেকাপে বসানোর ব্যপারে কিছুটা অসন্তুষ্টি রয়েছে আমার। বইয়ের ছবিগুলো কখনো মিডল অ্যালাইনে, কখনো রাইট অ্যালাইনে, কখনো ছবির প্রয়োজনীয়তা যেখানে রয়েছে সেখান থেকে দূরে, একেক সময়ে একেক সাইজে বসানো হয়েছে- এই ব্যাপারটা আমার কাছে হ-য-ব-র-ল এর মতো মনে হয়েছে। বইয়ের মেকাপে ছবি এবং অলংকরণগুলো আরো যত্নের সাথে বসানো গেলে হয়তো আরো চমৎকার প্রোডাকশন পেতে পারতো বইটা। বইয়ের সামনের প্রচ্ছদটি মোটামুটি লাগলো, তবে ব্যাক কভারটা আমার কাছে মূল কভারের থেকে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। তাই ব্যাককভারটি সামনের কভার হিসেবে ব্যবহার করলে আমার মতে আরো চমৎকার প্রচ্ছদ হতে পারতো। এছাড়াও বইতে বানান ভুল আর টাইপো টুকিটাকি ছিলোই, বিশেষ করে এ-কার এর পরিবর্তে অদ্ভুত এক সাংকেতিক চিহ্ন এসে পড়েছে কয়েক জায়গায়। আশা করি পরবর্তী সংস্করণে এই টাইপিং মিস্টেকগুলো প্রকাশনী কর্তৃক ঠিক করে ফেলা হবে।
-
এক কথায়,প্লটের বিচারে আমার পড়া সবথেকে বিশাল কলেবরের একটি বাংলা মৌলিক কন্সপিরেসি থ্রিলার উপন্যাস হচ্ছে ❛অনার্য দেব❜, যার কিছু ব্যাপার বাদ দিলে মোটাদাগে ভালোই লাগলো। তাই রবার্ট ল্যাংডন কিংবা সিগমা ফোর্স সিরিজ টাইপের গ্লোব ট্রটিং থ্রিলার যাদের পছন্দ তাদের ❛অনার্য দেব❜ বইটি কোনভাবেই মিস করা উচিত হবে না। বাংলা মৌলিক থ্রিলারের প্রেক্ষাপটে এত বিশাল কলেবরের এক মৌলিক কন্সপিরেসি থ্রিলার পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো লেখকের পরবর্তী বইয়ের জন্য।
Profile Image for Parvez Alam.
306 reviews12 followers
May 19, 2022
এক ছেলে অংক করতে চাইত না, এমন কি যে ১,২,৩ গুনবেও না। তাই তার বোন একদিন বড়ই গাছে উঠে বলে ভাই আমি তোমাকে একটা একটা করে বড়ই দিবো তুমি গুণে গুণে রাখবা। একটু পরে তার ভাই বলে ও বুজতে পেরেছি তুমি আমাকে ১,২,৩ শিক্ষা দিচ্ছো। অনার্য দেব বইটা মূলত তেমন একটা বই, গল্পের নাম করে ইতিহাস খাওয়ানো হইছে। সব কিছু ভালো ছিলো কিন্তু শেষ দিকে Mumbai ঘটনার পরের কাহিনী একঘেয়েমি লেগেছে, সেই হিন্দু দেবতা, শিব নিয়ে প্যাচাল। কোন seriousness নাই, এতবড় একটা ঘটনা থেকে ফিরে সবাই দিব্বি গল্প করে যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছে বইটা বড় করতে গিয়ে লেখক অনেক স্থানে খেই হারায় ফেলে, বইটা আরো ছোট করে নিয়ে আসলে আরো সুন্দর গুছানো হত। ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস আমার সব থেকে বেশি পছন্দের কিন্তু এইটা শেষ দিকে এসে আর নিতে পারতেছিলাম না। অনেক নামকরা বই এইটা আর সবার সব বই ভালো লাগবে সেটাই ঠিক না।
Profile Image for MD Mijanor Rahman Medul  Medul .
178 reviews42 followers
June 24, 2022
প্রদীপ যখন জ্বালাবেন প্রদীপের আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হতে সময় নেবে না , কিন্তু প্রদীপ জ্বালানোর আগে যে সলতা পাকাতে হয় তা না হলে প্রদীপ ঠিক মতো জ্বলবে না। প্রতিটা প্রদীপের নিচেই থাকে তেলে ভেজানো সলতা। যা জ্বলে সেই শুরু থেকেই। আর আলো দিচ্ছে দিবে শেষ পর্যন্ত।
ভারত- বড় বিচিত্র এই উপমহাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশে রয়েছে ত্রিশ কোটি দেব-দেবতা। আর তাদের মিথ মিথোলজি। কারো বিশ্বাস তো কারো অবিশ্বাস। একের কাছে যিনি পূজনীয় বীর, অন্যের কাছে তা বিচিত্র খলনায়ক। তাই তো ভারতে লেগেই আছে দ্বাঙ্গা মহাদাঙ্গা। হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িক ব্যবচ্ছেদ যেন পুরো ভারতের মর্নিং নিউজ। আর অনার্য-আর্য দাঙ্গাও নতুন কিছু না। ভারতীয় উপমহাদেশে আর্যদের আগমনের ফলে ঢেকে যায় তারও আগের কিছু ইতিহাস কল্প কথা। কিন্তু কোন একজন রয়ে যায়, যুগে যুগে শত রুপে রয়, যিনি ভাস্বর। যার কথা সেই শুরু থেকে পুরান তুরানে বলে কয়ে আছেন । তিনি দেবকা দেব–অনার্য দেব। কে এই অনার্য দেব?

বলছি ২০২২ সালের বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নতুন কন্সপাইরেসি থ্রিলার বই অনার্য দেব নিয়ে, লেখক আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য।

অনার্য দেব বইটি প্রকাশ হওয়ার পরই যা সবচে বেশি সারা দিয়েছে তা হলো এ যাবত কালের বাতিঘর প্রকাশনীর সবচেয়ে বড় কলরবের বই। প্রায় ৬শত পেজ। কি আছে এই ছয়শত পেজে তা নিয়েই আলোচনা করছি।
কন্সপাইরেসি ঘরনার থ্রিলার মানে ইনফরমেশন এর পাহাড়। লেখক-এর গল্পের শুরুটা ড্যান ব্রাউন স্টাইলের৷ জায়েদ আরাফাত একজন পদার্থ বিজ্ঞানী, মেধাবী স্কলার৷ তার মামা মৃত্যুর আগে তাকে দিয়ে গেলো এক হেয়ালি। একটি ক্রিপ্টেক্স, আর তার অপরিচিত কিছু বর্ণমালা। জায়েদ-এর কাজ এই ক্রিপ্টেক্স খোলা এবং এটা থেকে তার উত্তরাধিকার নিশ্চিত হওয়া। যার পিছনে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের লুকানো ইতিহাস।
জায়েদের সাথে যোগ দেন প্রফেসর ইমেরিটাস দীপেশ কুমার বিশ্বাস। জায়েদ আর প্রফেসরের খেলায় জড়িয়ে যায় আরো অনেকে।
তারপর শুরু হয় তাদের রহস্যের জট খোলা কিন্তু শুরু হলেও এর শেষ কোথায় কেউ জানে না৷ একের পর এক হেয়ালি এদেশ থেকে অন্য দেশ ছুটে বেড়ানো। কখনো ইউরোপ, কখনো এশিয়া, ভ্যাটিক্যান থেকে মঙ্গোলীয় বলতে গেলে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ। রহস্যের পর রহস্য। তার উপর তাদের পিছনে লেগেছে আন্তর্জাতিক চক্র, আর ঐদিকে বোম ব্লাস্টের আশঙ্কা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধানে আসতে হবে নতুবা বিস্ফোরণে ধ্বংস হবে ভারত-পাকিস্তান। আর এসবের পিছনের সত্যকে আনতে হলে জানতে হবে অনার্য দেব এর রহস্য যার সাথে জড়িত ধর্ম, ইতিহাস, মিথ, মিথোলজি, ভাষা, বিজ্ঞান, কোড, সিম্বোলজি সব। শেষটা কোথায় তাহলে?

এবার পাঠ প্রতিক্রিয়ায় আসি। আগেই জেনেছি অনার্য দেব এ-যাবৎকালের বাতিঘরের সবচেয়ে বড় বই৷ তো এই বই নিয়ে পাঠকদের আকর্ষণ ছিলো তুঙ্গে। আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশন হলো প্রচ্ছদ। ইরোটিক স্টাইলে প্রচ্ছদ টা দেখার মতো। যেন প্রচ্ছদ বারবার বলছে সর্বোত্তম পুরুষ সত্যতাম সত্য৷ তারপর বইয়ের ভিতরে বাঁকে বাঁকে একে চলা চিত্র গ্রাফিক্স গুলোর রহস্য জানাটা খুব আর্কষনীয় ছিলো। এতো চিত্র ছিলো বই তে সত্যি বলতে চিত্র না থাকলে গুলিয়ে যেতাম। লেখক এই বইটি লিখতে গিয়ে বেশ স্টাডি করেছে। তার দীর্ঘদিনের ফসল। এক্ষেত্রে তিনি স্বার্থক। তারপর গল্পের কথা বললে, গল্পটা অতি সাধারণ। আসলে এখানে গল্পের চেয়ে তথ্য বেশি বড় মনে হয়েছে। এতো বেশি ইনফরমেশন যে একটা পর্যায়ে আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি। আবার ধরেছি৷ অর্থাৎ বইতে চৌম্বকীয় শক্তি টা ছিলো না। লাস্ট দিকে এসে আবার ভালো লেগেছে। আর ইনফরমেশন এর বিষয় বলব হুম প্রতিটা সত্য, তথাপিও ফিকশন ইজ ফিকশন৷ এর উপর ভিত্তি করে বাস্তব সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না৷ তো ভালো লাগার বিষয় বস্তু হলো লেখকের শ্রম তার কষ্টের ফসল স্বার্থক। বেশ কিছু পুরান ইতিহাস মিথ সম্পর্কে জানতে পেরেছি, নানা মিথগুলোর ব্যাখ্যা পেলাম, বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায় ঘুরার অভিজ্ঞতা হয়েছে জায়েদ আর প্রফেসরের সাথে। নানা জিনিস দেখেছি, জেনেছি আরো যে কত কিছু ছিলো। সত্যি বলতে বোম ব্লাস্টিক বই ছিলো। এতো এতো ছিলো, ভাবছিলাম কি ছিলো না এতে। এক কথায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো। লেখকের জন্য শুভ কামনা রইলো। আশা করি আরো ভালো কিছু সামনে পাবো।


বাতিঘর প্রকাশনীর বই-এর সাথে আমি জড়িত ২০১৬ সাল থেকে। তখন থেকে বাতিঘরের নানান লেখকদের বই পড়লেও আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য এর কোন বই পড়িনি। তার প্রথম বই ছিলো মেটামরফিক নিশীথে। কিন্তু অনার্য দেব তার প্রথম প্রয়াস আর ড্রিমি প্রজেক্ট ছিলো। এর বাইরেও আরো জানলাম অর্নায দেব নাকি প্রায় নয়শত পেজ হওয়ার কথা ছিলো। কাট ছাঁট করে ছয়শতে নেমেছে৷ সে যাই হোক, বলছিলাম বাতিঘর সম্পর্কে। বাতিঘর বই নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ২০২০ সাল থেকে বাতিঘরের বইয়ের মান ভালো হয়েছে, মানে পেজের মান, বাঁধাই বেশ নজর দিয়েছেন তারা। ক্রিম কালার পেজ হার্ড বাইন্ডিং আর বানান ভুল তেমন নেই বললেই চলে।
তাছাড়া বইয়ের চিত্র গুলো একটু এদিক সেদিক ছিলো। আশাকরি পরের মুদ্রনে ভালো হবে। বই এর মান আর দাম হিসাবে কিছু বলব না আসলে লেখকদের পরিশ্রম কে অর্থ দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। তথাপি পাঠক যদি পরে বইটি মনে লাগাতে পারে তাহলে দাম বেশি হলেও স্বার্থক। আর প্রচ্ছদ শিল্পীর কথা না বললেই নয় সাদিয়া ইসলাম ইফতি আপুকে। প্রচ্ছদই ছিলো আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশন। সর্বোত্তম পুরুষ সত্যতাম সত্য।

যাই হোক ইতি টানি, পাঠক মিথ মিথোলজির জাগতে হারিয়ে যেতে চাইলে ধরতে পারেন অনার্য দেব।।


ফিরে দেখা
বইয়ের নাম : অনার্য দেব
লেখক : আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য
প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী
প্রকাশকাল : মার্চ ২০২২
প্রচ্ছদ : সাদিয়া ইসলাম ইফতি
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৫৯২ পেজ
মূল্য : ছয়শত আশি টাকা।
Profile Image for Wasim Mahmud.
357 reviews29 followers
June 4, 2022
Find your father

লালন-পালনকারী মামার মৃত্যুর পর এই রহস্যময় বার্তা পান তরুন পদার্থবিদ জায়েদ আরাফাত। ফিজিসিস্ট হিসেবে ইউনিক তত্ত্ব প্রদান কারণে আন্তর্জাতিকভাবে নামকরা জায়েদ আরো একটি জিনিস পান। একটি স্ক্রিপ্টেক্স।

এলিয়েন এক ভাষার কম্বিনেশন সমৃদ্ধ এই অদ্ভুত যন্ত্রে আছে হাজার হাজার বছরের লুকোনো ইতিহাস। ধর্ম, পূরাণ, সিম্বোলজি, মিথলজি, ইতিহাস, ভূরাজনীতি, এমনকি বিশ্বের ভবিষ্যত সুন্দরভাবে সাজানো আছে এই স্ক্রিপ্টেক্সে। জায়েদ আরাফাত সাহায্য নিতে হাজির হলেন এমন একজনের কাছে যিনি পৃথিবীর কাছে মৃত।

প্রফেসর ইমেরিটাস দিপেশ কুমার বিশ্বাস। সংক্ষেপে ডিকেবি। ইতিহাস, নৃবিজ্ঞান, সিম্বোলিজম, তূলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব সহ আরো বহু বিষয়ের উপর ব্যাপক জ্ঞানী একজন "জীবন্ত এনসাইক্লোপেডিয়া"। বাংলাদেশের সাহিত্যের নক্ষত্র আহমদ ছফার সমসাময়িক এই পন্ডিত ব্যক্তির সাহায্য ছাড়া রহস্যের উন্মোচন অসম্ভব।

জায়েদ এবং ডিকেবি প্রথম থেকেই একদম দৌড়ের উপর থাকেন ঐ রহস্যময় স্ক্রিপ্টেক্সের কারণে। দু'জনে দেশের টপ ফিউজিটিভে পরিণত হন। মিস্ট্রি সলভ করতে তারা পাড়ি জমান ভারতে।

তরুন এবং প্রবীনের এই যুগলবন্দি বেরিয়ে পড়েন এমন এক অ্যাডভেঞ্চারে যার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে হাজার বছরের রহস্য। দু'জন টেনিসবলের মত বিভিন্ন প্লেয়ারের কোর্টে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। পিছন থেকে স্ট্রিং নাড়াচ্ছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গুপ্তসঙ্ঘ। গ্যাংস্টার, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা, পাকিস্থানে ওঁত পেতে থাকা উগ্রপন্থী, এবং আরো অনেকের লন টেনিস কোর্টে ঘুরপাক খেতে থাকেন জায়েদ এবং দিপেশ।

টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এই গল্পে ভারতীয় উপমহাদেশের আজকের এবং সহস্র বছরের জিওপলিটিক্স সাবলীলভাবে চলে এসেছে। ঐ স্ক্রিপ্টেক্সের বিভিন্ন ধাঁধা তাদের পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে নিয়ে যায়। প্রচন্ড ভয় এবং বিস্ময়ের সাথে তারা আবিস্কার করতে থাকেন এক একটি অপ্রত্যাশিত সত্যকে। পারবেন কি তারা ১৭০ কোটি মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে? ভারতীয় উপমহাদেশে যে বিভিন্ন বৈষম্য এবং চরম ডানপন্থার উত্থানের সময়ে এই ডায়নামিক ডুয়োকে মুখোমুখি হতে হবে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার।

প্রায় ছয়শ পৃষ্ঠার এই ব‌ইয়ের মধ্য দিয়ে সচেতন পাঠক বিভিন্ন রহস্যের উন্মোচন, থ্রিলার, সাসপেন্স, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাথে প্রতিনিয়ত ধাক্কা খেয়ে এগুতে থাকবেন। ড্যান ব্রাউনের ব‌ই যাদের পছন্দ তাদের জন্যে তো এই ব‌ই একটি "পেইজ টার্নার"। যারা ব্রাউন সাহেবের লিখা তেমন পছন্দ করেননা তাদের‌ও ভালো লাগতে পারে। ‌একবার তো কেন জানি আমার মনে হয়েছে যেন আহমদ ছফা এবং তাঁর গুরু আব্দুর রাজ্জাক অভিযানে বেরিয়েছেন।

লেখক আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য এক প্রায় অমানষিক কার্য সম্পাদন করেছেন। তার বহুমাত্রিক প্রতিভার ছটা এই গ্রন্থের পুরোটা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। এত তথ্য, কোডিং-ডিকোডিং, ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস, মিথলজি, আমাদের দেশের এবং বিদেশের সমসাময়িক এবং ঐতিহাসিক বিভিন্ন চরিত্রের এরকম সাবলীল মিথষ্ক্রিয়া এক উপন্যাসে নিয়ে এনেছেন তিনি। ব্যাপক গবেষণা, পরিশ্রম এবং এক‌ইসাথে স্টোরিলাইন যেন ঝুলে না পড়ে সেদিকে সুন্দর খেয়াল রেখেছেন তিনি। এই বছর আমার পড়া সেরা ব‌ইগুলোর একটি বলা যায়।

ব‌ইয়ের ভিতরের বিভিন���ন ইলাস্ট্রেশন সুন্দর। লেখকের স্টোরিটেলিং চমৎকার। জায়েদ এবং আরাফাতকে বাচানোর জন্যে ছুটে আসে অনেকেই। আবার অনেকে ভান করে রক্ষাকর্তা সাজার। এক্স লেফটেনেন্ট আবু তাহের খালেদের চরিত্রটি যেভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। এমনকি সমতলের দ্বারা নির্যাতিত জনগোষ্ঠির সাহায্য নিয়েও, তা গল্পে এক দারুন ডাইমেনশন নিয়ে এসেছে।

এক ভয়ানক বিপর্যয়ের প্রফেসি করে গেছেন স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। পদার্থবিদ জায়েদ এবং নৃবিজ্ঞানের প্রফেসর ইমেরিটাস এক আসন্ন ক্যাওসের ঠিক কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে যাচ্ছেন।

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী টিম সুপার সেভেন কার পক্ষ নিবে? তাদের থেকে ব্যাটার সাহায্যকারী কি কেউ আছে?

সহস্র বছর ধরে উদ্ভাবন, উন্নয়ন, এবং নির্মম রহস্য নিয়ে পর্দার পিছন থেকে সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট রোল প্লে করে যাচ্ছেন এক রহস্যপুরুষ। অনার্যদেব।

বুক রিভিউ

অনার্য দেব

লেখক : আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য

প্রথম প্রকাশ : মার্চ ২০২২

প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী

প্রচ্ছদ : সাদিয়া ইসলাম ইফতি

অলঙ্করণ : আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য
ফাইযাহ্ রাফসান রীনিতা

জনরা : ঐতিহাসিক থ্রিলার, সাসপেন্স, মিস্ট্রি, সিম্বোলিজম, ডিটেক্টিভ স্টোরি।

রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
Profile Image for রায়হান রিফাত.
255 reviews8 followers
January 24, 2023
অনার্য দেব
- আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য

হিস্টরিকাল থ্রিলার বই গুলো শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দূর্দান্ত লাগে কিন্তু শেষের কাছাকাছি এসে যখন আস্তে আস্তে ইতিহাস রিভিল হয় তখন বেশ বেক্ষাপ্পা লাগে আমার কাছে।

এই বই এর ক্ষেত্রেও সেইম।
পুরো একটা রোলার কোস্টার রাইড পার করলাম কিন্তু শেষে এসে মনে হল - ইতিহাস একটু বেশি কপচানো হইছে।

অনায়াসে আর ও ৫০পেইজ কমানো যেত!!
যাইহোক লেখকের যেভাবে ভাল লেগেছে তাই ই করেছেন।

তবে আরেকটু কাটাছেঁড়া করলে বোধয় ভাল লাগতো।


রেটিং: ৭/১০
Profile Image for Aadrita.
276 reviews228 followers
July 15, 2022
একটা বই লিখতে লেখক যে পরিমান গবেষণা করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার৷ কিন্তু সেই তুলনায় প্রেজেন্টেশনটা বেশ দূর্বল।

স্টেরিওটাইপিং করে সোজা কথায় বলতে গেলে বইটা দেশী প্রেক্ষাপটে ড্যান ব্রাউনের রবার্ট ল্যাংডনের মতো এডভেঞ্চার। যেখানে উঠে এসেছে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি। একজন লিঙ্গুইস্ট ও একজন ফিজিসিস্ট ছুটে চলেছেন রহস্য উন্মোচন করতে ও বিশাল বিপদ থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে।

ইতিহাস, মিথ, গুপ্তসংঘের পিঠে গুপ্তসংঘ, ধর্মীয় দাঙ্গা, রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াই, ভারত-পাকিস্তান কোন্দল, বাংলাদেশের পাহাড়ি-বাঙালি দ্বন্দ্ব - এতশত বিষয় মাঝে মধ্যেই মিলেমিশে জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে। লেখনী বেশ সাবলীল তবে কিছু চ্যাপ্টার বাহুল্যদোষে দুষ্ট, বইয়ের আকার কিছুটা ছোট করা যেত হয়তো। আমি বিশ্বাস করি নবীন লেখক আরো কয়েকবছর পরে বইটা লিখলে এই সমস্যাগুলো থাকতো না। তবে শেষটা খারাপ লাগেনি। সব সুতো এক করতে আর সব জট খুলতে সফল হয়েছেন লেখক।

সব মিলে বইটা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করতে বা মনে দাগ কাটতে ব্যর্থ। থ্রিলার বইয়ের প্রতি ব্যক্তিগত অনাগ্রহও এর জন্য কিছুটা দায়ী।
Profile Image for শুভাগত দীপ.
274 reviews47 followers
July 20, 2025
"শত শত সংঘে করিতে নারে ধ্বংস

রক্ত শিরায় বহে অধুনা কতো প্রাণে

চতুর্দিকে দেখিবে তাহাদেরই বংশ।"


মামার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে তরুণ ফিজিসিস্ট জায়েদ আরাফাতের হাতে এলো একটা ক্রিপ্টেক্স। সেই সাথে তার মৃত মামার শেষ দুই নির্দেশ। এক, নিজের পিতাকে খুঁজে বের করতে হবে। আর দ্বিতীয় নির্দেশটা এতোই অদ্ভুত যে জায়েদ নিজেও বিশ্বাস করতে পারলো না। রহস্যময় ক্রিপ্টেক্সটা নিয়ে সে যখন প্রফেসর ইমেরিটাস খ্যাত কিংবদন্তি ভাষাতত্ত্ববিদ দীপেশ কুমার বিশ্বাসের সাথে দেখা করলো দ্রুত কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। জায়েদ আর প্রফেসর দীপেশের ওপর হামলা করে ক্রিপ্টেক্সটা ছিনিয়ে নিতে চাইলো কোন এক অজ্ঞাত গোষ্ঠী। 


জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া হিসেবে খ্যাত প্রফেসর দীপেশ কুমার বিশ্বাস AKA প্রফেসর ডিকেবি আর তরুণ পদার্থবিজ্ঞানী জায়েদ আরাফাত যখন তার মামার রেখে যাওয়া ক্রিপ্টেক্সটার রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চালালো, লক্ষ্য করলো পুরোটাই একটা কয়েক লেয়ারের ধাঁধা। তাদেরকে সাহায্য করতে আসলো সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো লেফটেনেন্ট কর্নেল আবু তাহের খালেদ। ক্রিপ্টেক্সের কবিতারূপী হেঁয়ালির সমাধান করতে তাদেরকে পাড়ি জমাতে হলো প্রতিবেশী দেশ ভারতে।


এদিকে জায়েদ আর প্রফেসর দীপেশের পেছনে লেগে গেছে জাতের যাত্রাভঙ্গ করতে চাওয়া হুলো নামের এক দাঙ্গাবাজ সন্ত্রাসী। পাশাপাশি মহানাম সাধুসংঘ নামের এক প্রাচীন গুপ্তসংঘও মরিয়া হয়ে উঠেছে জায়েদদের কাছ থেকে ক্রিপ্টেক্সটা হাতিয়ে নেয়ার জন্য। প্রফেসর দীপেশ আর জায়েদকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো দ্য টেম্পল আশ্রম। ধীরে হলেও এই দুই অসমবয়সী প্রতিভাধর মানুষ বুঝতে পারলো, ক্রিপ্টেক্সটা এমন একটা কিছুর সন্ধান দেবে যা হয়তো পাল্টে দেবে পুরো আর্য সভ্যতার ইতিহাস। সবকিছু হয়তো আবার নতুন করে সাজানোর, নতুন করে লেখার প্রয়োজন পড়বে এসবের এক বিন্দুও যদি সত্য হয়।


ক্রিপ্টেক্সের মধ্যেকার ধাঁধাগুলো হাতে নিয়ে জায়েদ আর প্রফেসর দীপেশের যাত্রা অব্যাহত রইলো দিল্লী থেকে ভ্যাটিকান সিটি, আবার কখনও ঊষর মঙ্গোলিয়ার প্রান্তরে। হাজার হাজার বছর আগে লুকিয়ে রাখা যে সত্যটার খোঁজে ওরা ছুটছে ঠিক একই লক্ষ্যে ওদেরকে ধাওয়া করে চলেছে ভয়ঙ্কর আর্যসংঘ। যাদের মূল মন্ত্র 'ইউহদে ব্রুতে এঙ্গিরে সাল্লাম'। দুই অসম্ভব প্রতিভাধর মানুষ যে রহস্যের পেছনে ছুটছে সেটার সমাধান হোক বা না হোক, ধর্মকে কাজে লাগিয়ে বিশাল এক ধর্মীয় ও জাতিগত দাঙ্গার রূপরেখা রচিত হয়ে চলেছে কোথাও। সবকিছু ছাপিয়ে একটা প্রশ্নই জায়েদ আর প্রফেসর দীপেশের মনে ধাক্কা দিতে থাকলো। কে এই অনার্য দেব? এসবের সাথে তাঁর সম্পর্কই বা কি?


'অনার্য দেব' শেষ করার পর আসলে কি লিখবো বা কি লেখা যায়, বুঝতে পারছিলাম না। মাথাভর্তি যেন অনেক চিন্তা, অনেক কথা, কিন্তু কিভাবে লিখবো সাজিয়ে উঠতে পারছিলাম না। যাই হোক, শেষ করলাম চমৎকার একটা হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার। এটাকে একই সাথে একটা উৎকৃষ্ট মানের কন্সপিরেসি থ্রিলারও বলা যায়। ইতিহাস, পুরাণ, সিম্বোলজি, পদার্থবিদ্যা, প্রাচীন গুপ্তসংঘ, অ্যাডভেঞ্চার আর সেসবকে ব্লেন্ড করে অবতারণা করা কন্সপিরেসি থিওরি - এসব মিলিয়েই 'অনার্য দেব'-এর কাহিনি।


আমি ব্যক্তিগত ভাবে ইতিহাস আর পুরাণ সম্পর্কিত টেকনো থ্রিলারের ভক্ত। এই জনরায় জেমস রলিন্সের সিগমা ফোর্স নভেলগুলো আমার খুব পছন্দের৷ আর ক্রিপ্টেক্স আর সিম্বোলজির সাথে আমার পরিচয় ঘটিয়েছিলেন ড্যান ব্রাউন। 'অনার্য দেব'-এর লেখক আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য তাঁর এই বিশাল কলেবরের উপন্যাসে এই সবগুলো উপাদানেরই সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। এমন এক ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে কেন্দ্র করে তিনি প্লটটা সাজিয়েছেন যার বিস্তৃতি পশ্চিম থেকে প্রাচ্য, ইভেন সমগ্র ইউরেশিয়া জুড়েই। 


প্রচুর তথ্���ের সমাবেশ ঘটিয়েছেন আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য তাঁর এই উপন্যাসে। প্রফেসর ইমেরিটাস দীপেশ কুমার বিশ্বাস আর তরুণ ফিজিসিস্ট জায়েদ আরাফাতের মধ্যকার ইতিহাস বিষয়ক কথোপকথন থেকে জেনেছি অনেক অজানা বিষয়। বেশ কিছু থিওরি আমাকে গভীর ভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার বিশাল এই উপন্যাসের একটা বড় অংশ জুড়েই ছিলো ঐতিহাসিক ঘটনাবলী আর মিথোলজি নিয়ে আলাপ-আলোচনা। এই ব্যাপারটা হয়তো সবার কাছে ভালো লাগবে না৷ তবে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। 'অনার্য দেব'-এর পুরোটাই আমি চমৎকার ভাবে উপভোগ করেছি। পড়তে গিয়ে বিস্মিত হয়েছি বারবার। আর এভাবেই বইটা আমি শেষ করে চরম এক ধরণের তৃপ্তি নিয়ে।


প্রচুর ছবি সংযুক্ত করেছেন আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য এই বইয়ে। ছবিগুলো বইটা পড়ার সময় বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। 'অনার্য দেব' নিয়ে আমাদের দেশের পাঠক সমাজে কোনরকম হইচই দেখি না। অথচ বইটা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হওয়া উচিৎ। মনেপ্রাণে চাই, 'অনার্য দেব' এমন আন্ডাররেটেড না থাকুক। লেখকের লেখার ধরণ চমৎকার। পাঠককে কিভাবে আটকে রাখতে হয় তা তিনি ভালোভাবেই জানেন। লেখালেখিতে তাঁর আরো নিয়মিত হওয়া উচিৎ। 


এই যে এতোটা লিখলাম, তাও মনে হচ্ছে কতো কিছু লেখা হলো না বইটা নিয়ে। সেই বরং ভালো। পাঠক বইটা পড়ুক। তারও এমন অনুভূতি হোক। ছোটখাটো কিছু টাইপিং মিসটেক বাদে বড় কোন ভুলভ্রান্তি চোখে পড়েনি আমার। 'অনার্য দেব'-এর প্রচ্ছদটাও বেশ ভালো লেগেছে আমার কাছে। পরিশেষে বলি, শুধু থ্রিলারের থ্রিল পেতে না, আপনি যদি ইনফরমেটিভ কিছু পড়তে চান বইটা আপনার জন্য। পড়লে ঠকবেন না৷ হাইলি রিকমেন্ডেড। 


'অনার্য দেব'-এর প্রিয় একটা লাইন দিয়ে শেষ করি। "পুরাণ হচ্ছে ছদ্মবেশী ইতিহাস।"


ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫


বই: অনার্য দেব

লেখক: আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য 

প্রকাশক: বাতিঘর প্রকাশনী 

প্রকাশকাল: মার্চ, ২০২২

ঘরানা: হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার/কন্সপিরেসি থ্রিলার/অ্যাডভেঞ্চার

প্রচ্ছদ: সাদিয়া ইসলাম ইফতি

অলঙ্করণ: আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য ও ফাইযাহ রাফসান রীনিতা

পৃষ্ঠা: ৫৯২

মুদ্রিত মূল্য: ৬৮০ টাকা

ফরম্যাট: হার্ডকভার 


(২০ জুলাই, ২০২৫; নাটোর)
Profile Image for Habiba   Sultana Maria.
21 reviews
November 12, 2025
বইটা শেষ করার পর সবার আগে ড্যান ব্রাউনের লেখা ভিঞ্চি কোড বইয়ের কথা মনে পড়েছে!অনেকটা ওই ধাঁচের!
কি নেই বইতে!কোডিং,ইতিহাস, মিথোলজি,কোয়ান্টাম ফিজিক্স, ম্যাথমেটিক্স,ভাষাতত্ত্ব, এন্থ্রোপলজি,জিও-পলিটিক্স,জ্যােতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি সব রয়েছে!বইটা লিখতে গিয়ে লেখকের যে কি পরিমাণ রিসার্চের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে কিছু কিছু জায়গায় তথ্যের অনেক বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে! বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলাম! স্টোরিটেলিং অনেকটা কাটখোট্টা টাইপের লেগেছে!

শুরুতে জায়েদ নামে একজন পদার্থ বিজ্ঞানীর হাতে এসে একটা ক্রিপ্টেক্স পড়ে যা তার মামা মৃত্যুর আগে তাকে দিয়ে যায় এবং প্রফেসর দীপেশ কুমার বিশ্বাসের কাছে যেতে বলে!দীপেশ কুমার বিশ্বাস শুরুতে সাহায্য করতে চায়নি কিন্তু পরবর্তীতে রাজি হয়!কিন্তু হঠাৎ করেই এক আগন্তুক সেই ক্রিপ্টেক্স টা হাতাতে আসে প্রফেসরের বাসায়! ওই ক্রিপ্টেক্স এ একটা কোড দেয়া ছিলো যেটা সলভ করে পৌছাতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায়!কি সেই জায়গা?কেন এইটা সলভ করতে হবে?ক্রিপ্টেক্স সলভ করতে গিয়ে জায়েদ বারবার একটা প্রশ্ন সম্মুখীন হচ্ছিলো,"who is your Father?" কিন্তু জায়েদ জানে তার বাবার নাম যিনি তার জন্মের আগেই মারা যান এবং তাকে জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা যান!পরবর্তীতে সে তার মামার আশ্রয়ে মানুষ! ক্রিপ্টেক্স সলভ করতে করতে তারা পৌছায় অনার্য দেবের কাছে!কে এই অনার্য দেব?
Profile Image for Farzana Reefat  Raha.
39 reviews14 followers
June 21, 2025
I would have given it a 1.5 but giving it a rounded 3 only for the extensive research the writer has done.

An excellent research work but veryyyy poorly written fiction.

লেখক এ বইটি গল্পচ্ছলে বলা ইতিহাস না বানিয়ে শুধুই ইতিহাসের বর্ণনা আকারে লিখলেই ভালো করতেন। তাহলে কোয়ালিটি এতটা ড্রপ করতো না হয়তো।
গল্পের অনেক জায়গা এতই বাজেভাবে লেখা যে কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝলামই না। এক পর্যায় তো মনে হচ্ছিল ইচ্ছেকৃতভাবে গল্পকে টানাই হচ্ছে তো টানাই হচ্ছে।
ভাগ্যিস বইটা এক বন্ধুর থেকে ধার করা, নিজে কিনি নি। নাহলে এত দাম দিয়ে এত মোটা বই কিনে এমন চুইংগাম দেখলে আরো খারাপ রেটিং আর রিভিউ বের হত। -_-

তবে, লেখকের রিসার্চওয়ার্ক দারুণ!!
.
.
.
জুন ২১, ২০২৫ | ঢাকা, বাংলাদেশ
Profile Image for Asikul Islam  Himel.
39 reviews5 followers
June 15, 2022
৩.৫/৫
ভালো লাগলো পড়তে। বিশাল ক্যানভাসে ছড়ায়ে আছে কাহিনী, যেখানে মিথোলজির ছড়াছড়ি, এর ভিতর হেঁটে চলেছে দুইজন সত্যান্বেষী, আসল সত্যের কাছে পৌছানো চাই। কিন্তু উপমহাদেশের জটিল মিথগুলোকে একসাথে করে একটা সুনির্দিষ্ট রূপ দিয়ে জমজমাট গল্প বলার জন্য চাই শক্তিশালী লেখনি এবং টাইমলাইনের সংবদ্ধতা যেটা এই বইয়ের একটা দুর্বল জায়গা। কয়েক জায়গায় গল্পের সাথে সময়ের হিসাব মিলে না, যার ফলে থ্রিলার পাঠকমাত্রই বিরক্ত হবেন। আবার ক্লাইম্যাক্স আগে এনে বইয়ের শেষের ৮০-১০০ পেইজ ভর্তি টানা মিথ,দেব-দেবীর আলাপ ইন্টারেস্টিং হলেও জুতসই হয়নি। আমার মনে হয়, লেখক যদি আরো পাঁচ বছর পর অনার্যদেব লিখতেন তাহলে এই দুর্বলতা টা থাকতো না, লেখার গাঁথুনি আরো বেশি শক্ত হতো। এটা বাদ দিলে বেশ উপভোগ্য বই, রিকমেন্ডেড।
Profile Image for Sakib A. Jami.
332 reviews36 followers
May 15, 2022
"ইন্দ্র প্রস্থ ভেঙেছি আমরা, আর্যাবর্ত ভাঙি
গড়েছি নিখিল নতুন ভারত নতুন স্বপনে রাঙি!"

মানবজাতির ইতিহাস কেমন? কীভাবে এ মানবজাতির প্রসার? এই উপমহাদেশেই বা কীভাবে মানুষে মানুষে গড়েছে ইতিহাস? আর্য, না অনার্য? কার প্রভাব কতটা? কেই বা এগিয়েছে, কেই বা পিছিয়েছে? কার প্রভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে এই মনুষ্য জাতি?

আর্য-অনার্য যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। প্রাচীনকাল থেকেই এর রেশ চলেছে যুগ থেকে যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। রামায়ণ, কিংবা মহাভারত, অথবা নানান সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে মুখ্য হয়ে উঠেছে আর্য-অনার্যের লড়াই। কেউ জেনে বুঝে, কেউ বা খেয়ালের ছলে এ যুদ্ধে শামিল হয়েছে। এই আর্যরা কারা? কোথা থেকে এসেছিল তারা? উপমহাদেশের মাঠেঘাটে লেখা আছে আর্যদের ইতিহাস। তবে ওরা যে এই তল্লাটের নয়। বহিরাগত এক জাতি হঠাৎ-ই এসে রাজ করা শুরু করে এই প্রাচীন ভূমিতে। আর অনার্য? কোন ভিত লুকিয়ে আছে সুবিশাল অনার্য জাতির ইতিহাসের পেছনে? ইতিহাসের ছলে গল্প হবে। পুরাণের আড়ালে উন্মোচন হবে সত্যের রূপরেখা। কেননা, পুরাণ-ই যে ছদ্মবেশী ইতিহাস! যার যেমন সত্য আছে, তেমনই মিথ্যার আড়ালে রং ছড়ানো গল্পও আছে। সত্য-মিথ্যার এ বিভেদে কোনটা আসল, কে জানে?

বলা হয়ে থাকে, ইতিহাস লেখা হয় বিজয়ীদের দ্বারা। যারা বিজয়ী, তারা-ই সেরা। তারা-ই বীর। ইতিহাস জুড়ে কেবল তাদের-ই গুণকীর্তন। সেসব গুণকীর্তনে কত যে রং ছড়িয়েছে তার হিসেব নেই। আচ্ছা, শুধু কি তারা-ই বীর? যাদের হারিয়ে তাদের এই বিজয় নিশান, সেসব সৈনিকদের মধ্যেও তো বীরদর্পে লড়াই করা কেউ না কেউ হয়তো ছিল। ইতিহাসে তারা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গিয়েছে। কেননা পরাজিতদের কেউ মনে রাখে না। আলেকজান্ডার দি গ্রেট, সম্রাট নেপোলিয়ন, সম্রাট অশোক, চেঙ্গিস খান, তৈমুররা ইতিহাসে অমর। তাদের বীরত্বগাঁথার পরিচর্যা চলে সবখানে। তারা কি সত্যিই নায়ক? না-কি কখনো খলনায়ক হিসেবেও আবির্ভাব হয়েছিল? ইতিহাস কী বলে?

ইতিহাস হোক, কিংবা মিথ! এ এক অন্যরকম যাত্রা। এ যাত্রার প্রতিটি বাঁকে রহস্য, চমকে যাওয়ার উপাখ্যান। এমন এক রোমাঞ্চকর যাত্রায় স্বাগতম...

▪️কাহিনি সংক্ষেপ :

ঘটনার শুরু মাহমুদুল হাসানের মৃত্যু দিয়ে। মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা, তাকে যেন পোড়ানো হয়। কিন্তু মুসলমানের লাশ তো আগুনে পোড়ে না। তাহলে, এমন ইচ্ছায় পেছনে রহস্য কী? মৃত্যুর আগে তিনি তার ভাগনেকে দিয়ে গেলেন একটি খাম। যেখানে আছে একটি স্ক্রিপ্টেক্স আর দু'টি মৃত মানুষের ঠিকানা। মৃত মানুষকে খুঁজবে কী করে জায়েদ আরাফাত?

ভারতীয় 'র' এজেন্সির দুই জাঁদরেল অফিসার কঙ্গনা রানী সিং আর সারতাজের কাছে জঙ্গি সন্দেহে বন্দী আসিফ আসগর নামের এক যুবক। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রবল অত্যাচারেও মুখ খুলেনি আসিফ। ধৈর্য হারিয়ে অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, আসিফের মুখ খোলানো যায়নি। শেষে শুধু একটা বাক্যে শেষ আসিফ আসগর। "যাব ইকবাল হুসেইনকা ঘোড় সাওয়ারকে আয়েগা ইনসাফ। ইনসাআআআআআফ!" কে এই ইকবাল হুসেইন? ভারতীয় 'র' এজেন্সির ঘুম হারাম। তবুও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কঙ্গনা বা সারতাজ, সামাল দিবে কীভাবে?

মামার দেওয়া ঠিকানা অনুসন্ধান করে জায়েদ আরাফাত খুঁজে বের করেছে প্রফেসর ইমেরিটাস দীপক কুমার বিশ্বাসকে। যিনি কয়েক বছর আগেই লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। জায়েদের হতে অচেনা বর্ণমালার কম্বিনেশন লক! কিছুটা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে সাহায্য করতে রাজি হন প্রফেসর। তখন কী আর জানতেন, এই রহস্য সমাধানে ছুটতে হবে ইতিহাসের পেছনে। জানা যাবে এমন কিছু অজানা তথ্য, যা হয়তো পৃথিবীর অতীত ইতিহাসই পাল্টে দেবে। আর এই ইতিহাসেই আগ্রহ প্রফেসর ইমেরিটাসের। তাই জায়েদকে ফিরিয়ে দিতে পারেননি। জায়েদকে সাথে নিয়ে ছুটেছেন এ দেশ থেকে ও দেশে। আর তাদের পেছনে ছুটে আসছে মৃত্যু। কীভাবে বাঁচবে ওরা?

ইলা শর্মা, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম আশ্রমের অধিপতি। একা হাতে সব সামাল দেন। তার একটা ফোনকলে ওলটপালট হতে পারে অনেক কিছুই। তার কল এলো প্রফেসর ইমেরিটাস দীপক কুমার বিশ্বাসের কাছে। সাহায্য করতে চায় ওরা। যেই রহস্য দিয়ে গিয়েছেন মাহমুদুল হাসান, সেই রহস্যে ভাগ আছে ওদেরও। সাহায্যের আশায় জায়েদ আরাফাত ও প্রফেসর এমেরিটাস উড়ে গেলেন ভারতে। এবার হয়ত সাহায্য পাবেন। সমাধান করতে পারবেন রহস্যের।

আবু তাহের খালেদ, সাবেক ��েফটেন্যান্ট কর্নেল। এই সাবেক হওয়ার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে। যেই ইতিহাস করুণ, যেই ইতিহাস বেদনার। নামের সাথে লেগেছে ট্রেইটর। সবাই বলে আবু ট্রেইটর খালেদ। নামে বেঈমান হলেও কর্মে মোটেও তেমন নয়। শিক্ষক প্রফেসর দীপক কুমার বিশ্বাসের একটি ফোনকলে আগুনে ঝাঁপ দিতেও প্রস্তুত সে। বাংলাদেশ থেকে উড়াল দিলো সুদূর ভারতের উদ্দেশ্যে। কে জানত, সাহায্য করতে গিয়ে মৃত্যুর দুয়ার খুলে যাবে! তাহের কি পারব�� জায়েদ ও প্রফেসরকে বাঁচাতে? না-কি বিদেশ বিভুঁইয়ে নিজেই নিঃশেষ হয়ে যাবে?

হাভিয়ের গ্যাব্রিয়েল মড্রিচের লক্ষ্যটা বিশাল। এই লক্ষ্যের কাছে যে করেই হোক পৌঁছাবে। আর তাতে মানবজাতির ক্ষতি হলেও সে পরোয়া করে না। তার এই বেপরোয়া লক্ষ্যে খুলে গিয়েছে মৃত্যুর দুয়ার। নরকের দুয়ারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে শেষ চেষ্টায় জায়েদ আরাফাত ও প্রফেসর ইমেরিটাস। মানবজাতিকে রক্ষা করতে হলে এ চেষ্টায় সফল হতেই হবে। আর যদি ব্যর্থ হয়.....?

রাজনীতির মারপ্যাঁচ, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাপিয়ে লড়াইটা ইতিহাসের বা পুরাণের, সত্য-মিথ্যার, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের, ভালো-খারাপের। এ লড়াই জিতবে কে?

▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া :

"অনার্য দেব" বইটা শেষ করার পর যে কয়েকটি ইংরেজি শব্দ মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেগুলো হলো - "মাইন্ডব্লোইং"... "আউটস্ট্যান্ডিং"... "ব্রিলিয়ান্ট"... দুর্দান্ত এক কন্সপিরেসি থ্রিলার এই "অনার্য দেব"। আমি ড্যান ব্রাউনের "রবার্ট ল্যাংডন সিরিজ" আর জেমস রলিন্সের "সিগমা ফোর্স সিরিজ"-এর অনেক বড়ো ভক্ত। সেসব বিদেশি লেখকের বই পড়তে পড়তে আমার খুব ইচ্ছা ছিল, যদি কোনো দেশি লেখক এমন এক মাস্টারপিস লিখতেন! আমার সেই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য লেখক আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্যকে অনেক ধন্যবাদ। লেখক বইটি লিখতে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছেন। প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। নিজের তাত্ত্বিক জ্ঞান খুব সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ইতিহাসের সাথে পুরাণের মিশেল, সেই সাথে বর্তমানের ছুটে চলা লেখক যেভাবে চিত্রায়িত করেছেন, এর জন্য তাকে সাধুবাদ জানাতে হয়। এক অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি।

"অনার্য দেব" শুধু ইতিহাসের গল্প নয়। এতে উঠে এসেছে ভারতীয় পুরাণ। এমন এক গল্প, যার জানার মাঝেও কিছু অজানা ভিড় করেছিল। উপন্যাস শুধু ইতিহাস কিংবা মিথের নয়, দেশে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা লেখক অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ধর্মীয় বিদ্বেষ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সেটার নমুনাও দেখিয়েছেন লেখক। প্রায় ছয়শ' পৃষ্ঠার বইটিতে একে একে উঠে এসেছে ইতিহাস, মিথলজি, ভাষাতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, দর্শন, সিম্বলজি, গুপ্তসংঘ; বিদেশি থ্রিলারের ক্ষেত্রে খুব জনপ্রিয় উপদান হলেও বিশাল কলেবরের এ ধারার উপন্যাস আমাদের দেশে খুব একটা চোখে পড়ে না। লেখক প্লটের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কার্পণ্য করেননি। এত এত জিনিসকে একসাথে এক সূত্রে বাঁধা সহজ কোনো বিষয় না। এক্ষেত্রে লেখকের তারিফ করতেই হয়।

"অনার্য দেব" লেখকের রচিত দ্বিতীয় বই। দ্বিতীয় বইয়ে এসে লেখক যেভাবে তথ্য, উপাত্তের সমন্বয় ঘটিয়েছেন, তা প্রশংসা করার মতো। এত এর তথ্যের ভিড়ে খেই হারিয়ে ফেলা অসম্ভব কিছু না। কখনো খেই হারিয়েছি, ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে। তবে আকর্ষণ হারাইনি। এত বড়ো থ্রিলারের ক্ষেত্রে পাঠকের আকর্ষণ ধরে রাখাও তো একটি অর্জন বটে। লেখকের ভাষাশৈলী চমৎকার, বর্ণনাশৈলী অসাধারণ। বিশাল কলেবরের এ ধারার উপন্যাসের ক্ষেত্রে ভাষাশৈলী খুব গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। সাবলীল লেখনী না হলে বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। লেখক এ দিক দিয়ে সফল। তবে কিছু ক্ষেত্রে বর্ণনা দুর্বল লেগেছিল। বিশেষ করে আক্রমন দৃশ্যগুলোতে। হয়তো আরো ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন।

"অনার্য দেব" উপন্যাসে সংলাপের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সংলাপের মধ্য দিয়েই লেখক তার পরিশ্রমের ফল, সকল তথ্য-উপাত্ত জানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিছু কিছু সংলাপ সত্যি অসাধারণ ছিল। হৃদয়ে দাগ কেটে যাওয়ার মতো। আবার কিছুক্ষেত্রে আরেকটু পরিণত সংলাপ আশা করেছিলাম। বিশেষ করে জায়েদ আরাফাত আর প্রফেসর ইমেরিটাসের মধ্যে কথোপকথনের সময় কিছু জিনিস বাড়তি মনে হয়েছে। যার আসলে প্রয়োজন ছিল না।

"অনার্য দেব" উপন্যাসের শুরু একটা স্ক্রিপ্টেক্স দিয়ে। যা রহস্য এগিয়ে যাওয়ার চাবিকাঠি। এর মধ্য দিয়ে হেঁয়ালির ছন্দে গল্প এগিয়েছে। সব সূত্র সেই হেঁয়ালিতেই দেওয়া ছিল। নিজের মগজ খাটানোর ব্যবস্থাও ছিল পুরো বই জুড়ে। তাই বইটি শুধু পড়ে আনন্দ পাওয়ার ক্ষেত্র শুধু না, ছিল নিজেকেও ওদের সাথে একই যাত্রায় শামিল করার উপাদান।

"অনার্য দেব" বইয়ের ক্ষেত্রে লেখক যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছেন তার পুরো ছাপ ছিল বইয়ের প্রতিটি পাতায়। কিছু বিষয় সত্যি ভালো লেগেছে। বিশেষ ���রে দিনের শুরুতে বারের নাম ও তার বর্ণনা ভালো লেগেছে। আমরা এর কতটা জানি? আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, বইটি পড়ার সময় কিছু জায়গায় অনেক প্রশ্ন মাথায় এসেছিল। কয়েক পৃষ্ঠা পর সেসব প্রশ্নের উত্তর লেখক দিয়েছেন। বা গল্পের খাতিরেই সেসব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। লেখক প্লট হোল না রাখার সবরকম চেষ্টাই করেছেন।

▪️চরিত্রায়ন :

সারা পৃথিবীর মানবজাতি হুমকির মুখে। এদের রক্ষা করতে হবে। বাঁচাতে হবে পৃথিবীর প্রাণ। - এই ধরনের উপন্যাসের ক্ষেত্রে মুখ্য চরিত্র থাকে দুয়েকজন বা একটি দল। "অনার্য দেব" উপন্যাসে সারা পৃথিবী ঘুরে মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করে গিয়েছেন তরুণ পদার্থবিদ জায়েদ আরাফাত আর নৃবিজ্ঞানী, ভাষাবিদ প্রফেসর ইমেরিটাস দীপক কুমার বিশ্বাস। গল্পে ছোটখাটো অনেক চরিত্র এলেও এ দু'টি চরিত্রই প্রধান।

উপন্যাসে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল একজন মুসলিম আর একজন অমুসলিম, দুইজন একসাথে রহস্য সমাধানে ছুটছেন। একজন বিশ্বাস দিয়ে সমস্ত কিছু ধারণ করেন, আরেকজন যুক্তিতর্কে আস্থা রাখেন। লেখকের এই দিকটি প্রশংসনীয়, তিনি সকল ধর্মকে পাশাপাশি রেখে গল্পের রথ ছুটিয়েছেন। তবে চরিত্র ডেভেলপের ক্ষেত্রে লেখকের আরেকটু মনোযোগী হতে পারতেন। জায়েদ আরাফাতের অতীতের অনেককিছু জানতে পারলেও তো যথেষ্ট মনে হয়নি। আরেকটু জানানো যেত বলে মনে হয়েছে। ওদিকে প্রফেসর ইমিরিটাসের সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। তার লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যাওয়ার রহস্য জানার ইচ্ছা ছিল। বিশাল এ উপন্যাসে লেখক যেহেতু বর্ণনার দিকে নজর দিয়েছিলেন, এই দিকে আরেকটু নজর দিতে পারতেন।

এছাড়া উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র স্বতন্ত্র, মূল্যবান। সবার ক্ষেত্রে চরিত্রগুলো ডেভেলপ করার প্রয়োজন ছিল না। লেখক সে চেষ্টাও করেননি। তবে প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সবার একটু একটু অবদান এই উপন্যাসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে।

"অনার্য দেব" উপন্যাসে একজন অনার্য দেবের কথা বলা হয়েছে। হাজার হাজার বছর আগে এই উপমহাদেশে একজনের আবির্ভাব হয়েছিল, যার প্রভাবে বদলে গিয়েছিল ভারতের একাংশের ইতিহাস। লেখক সেই চরিত্রের মূল সুন্দরভাবে ফুটিয়েছেন। এছাড়া আর্য জাতির রাজা, যোদ্ধা, দেব-দেবী; ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক চরিত্রের সমন্বয় খুব দক্ষতার সাথেই করেছেন।

"অনার্য দেব" উপন্যাসে আমার প্রিয় চরিত্র আবু তাহের খালেদ। সাবেক হয়ে যাওয়া একজন আর্মি অফিসারের ফেলে আসা জীবনের গল্প, হতাশা-বিষাদে জর্জরিত কিন্তু লক্ষ্য না হারানো একজন মানুষকে লেখক এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন; মন ছুঁয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমি শেষ পরিণতি মানতে পারিনি। এমন না হলেও পারত!

▪️বানান ও সম্পাদনা :

বাতিঘর প্রকাশনীর বানান নিয়ে নতুন করে বলার নেই। তাদের বইয়ে বানান ভুল বা মুদ্রণ প্রমাদ না থাকলে মনে হয় না, বইটি বাতিঘরের। তবে সস্তির বিষয়, বানান ভুলের সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। তবে যেগুলো মানতে পারি না, সেগুলো হলো - কি/কী এর ভুল ব্যবহার। লেখক বইয়ের সব জায়গায় কি এর ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও মত/মতো, হত/হতো, হল/হলো এর কখন কোনটা ব্যবহার হবে সেটা জানা থাকা জরুরি। নাহলে অর্থ বিভ্রাটের সুযোগ থাকে। কয়েক জায়গায় এ-কারের পরিবর্তে অদ্ভুত ধরনের এক চিহ্ন এসে পড়েছিল। শেষ দিকে কিছু জায়গায় যুক্তবর্ণ ভেঙে যাওয়া লক্ষ্য করেছি।

প্রায় ছয়শ' পৃষ্ঠার বইয়ের কিছু জায়গায় সম্পাদনার প্রয়োজন অনুভব করেছি। উপন্যাসের প্রয়োজনে কিছু ছবি এসেছে। যার অনেকগুলোর নিচে বর্ণনা থাকলেই, কিছু ছবিতে তা ছিল না। এতে কিছুটা বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল। অনেক ছবি গল্পের প্রয়োজনে যে জায়গায় ছবির প্রয়োজন, তার থেকে কিছুটা দূরে ছিল। একেক ছবি একেক সাইজে, আবার অ্যালাইনেও গড়বড় ছিল।

▪️প্রচ্ছদ ও বাঁধাই :

বাতিঘরের বইয়ের ক্ষেত্রে অভিযোগ থাকে, বাঁধাই ঠিক মতো হয় না। পৃষ্ঠা খুলে আসার সম্ভাবনা থাকে। "অনার্য দেব" বইয়ে সে সমস্যা একবারেই ছিল না। বিশাল বইটি খুলে পড়তে অসুবিধা হয়নি। বাঁধাই দুর্দান্ত। সে হিসেবে দামটা পাঠকের নাগালের মধ্যে থাকা আরও বেশি সস্তি দেয়।

প্রচ্ছদ ঠিক মনমতো হয়নি। মোটামুটি ঠিক আছে, তবে আরও ভালো হতে পারত। সামনের প্রচ্ছদের চেয়ে আমার পেছনের প্রচ্ছদ বেশি আকর্ষণীয় লেগেছে। মনে হয়েছে ব্যাক কভারের ছবিটা সামনে ব্যবহার করা গেলে প্রচ্ছদটা আরও ভালো চমৎকার হতে পারত।

▪️পরিশেষে, "অনার্য দেব" একটি ফিকশন উপন্যাস। যেখানে সমন্বয় ঘটেছে ইতিহাস, পুরাণ, ভাষাতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, সিম্বলজি, বিজ্ঞান, গুপ্তসংঘ-এর। এরই সাথে উঠে এসেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় বিদ্বেষ আর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা। এর অনেকটুকু সত্যি হলেও সবটা নাও হতে পারে। কখনো কখনো সত্যের আড়ালে থাকে মিথ্যা। আবার মিথ্যার আড়াল থেকে উঁকি দেয় ভয়ংকর কোনো সত্য। কোনটা বিশ্বাসযোগ্য, আর কোনটা না; তা জানতে হবে। আর জানতে না পারলে খেই হারাতে হবে। হারিয়ে যেতে হবে অতল গভীরে!

▪️বই : অনার্য দেব
▪️লেখক : আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য
▪️প্রকাশনী : বাতিঘর প্রকাশনী
▪️পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৫৯২
▪️মুদ্রিত মূল্য : ৬৮০৳
▪️ব্যক্তিগত রেটিং ৫/৫
Profile Image for Farhan Sobhan.
11 reviews2 followers
May 11, 2022
এই বছরে এখন পর্যন্ত পড়া বেস্ট বই
Profile Image for R.M.Talukder.
1 review
April 5, 2022
বই পড়ার সময় ভাবছিলাম ড্যান ব্রাউন এর বই পড়ছি কি না ! রহস্য ,মিথ,ইতিহাস ,এডভেঞ্চার সব মিলেমিশে একাকার। এই বই এর ইংরেজি অনুবাদ হওয়া দরকার
Profile Image for সাঈদ আনাস.
Author 7 books8 followers
March 29, 2022
"মিথ ইজ হিস্টোরি ইন ডিজগাইস"

এই বইয়ের রিভিউ লেখা আমার কম্ম নহে।

যে পরিমাণ রিসার্চ লেখকের করা লেগেছে, কেবল সে কারণেই তার ফাইভ স্টার প্রাপ্য।
যে পরিমাণ তথ্য লেখক সার্ভ করেছেন, কেবল সে কারণেই তার ফাইভ স্টার প্রাপ্য।
যে পরিমাণ সাসপেন্স লেখক তৈরি করেছেন, কেবল সে কারণেই তার ফাইভ স্টার প্রাপ্য।

লেখার ধরনের কারণে কারো কারো হয়তো সামান্য বিরক্তি লাগতে পারে, কারণ পুরো বইয়ের আশি শতাংশ কথোপকথন। অনেক নাজুক পরিস্থিতিতে এমনকি প্রাণ সংশয়ে থাকা অবস্থায়ও ডায়ালগ এগিয়েছে। কেবল এই একটা জিনিস সামান্য পাশ কাটাতে পারলেই এই সলিড হিস্টোরিকাল থ্রিলার আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে শেষ পাতা অবদি।

অনার্য দেব
লেখক: আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য
প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশনী
প্রচ্ছদ সাদিয়া ইসলাম ইফতি
প্রকাশ: মার্চ ২০২২
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫৯২
মুদ্রিত মূল্য: ৬৮০৳
Profile Image for AFROZA CHOITY .
29 reviews10 followers
July 23, 2022
#বুক_রিভিউ

বই: অনার্য দেব
লেখক : আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য
জনরা : মিথোলজিকাল, হিস্টোরিক্যাল, পলিটিকাল কন্সপিরেসি থ্রিলার
প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী
প্রচ্ছদ : সাদিয়া ইসলাম ইফতি
পৃষ্ঠা : ৫৯২
মূল্য: ৬৮০

ইন্দ্র প্রস্থ ভেঙেছি আমরা, আর্যাবর্ত ভাঙি
গড়েছি নিখিল নতুন ভারত নতুন স্বপনে রাঙি!
-জীবনানন্দ দাশ

হতাশ জায়েদের মাথায় এখন একটাই ভাবনা, "মুসলমানের লাশ ��গুনে পোড়ে না।" কিন্তু এটাই তার মামার শেষ ইচ্ছে। সাথে একটি ক্রিপ্টেক্স এবং একটি খাম। যাতে দুজন মৃত ব্যক্তির ঠিকানা দেওয়া এবং একটি নির্দেশনা- Find your Father. এভাবেই শুরু হয়ে একে একে গল্পে যুক্ত হয় প্রফেসর দীপেশ‌ কুমার বিশ্বাস, গুপ্তঘাতক, টেম্পল আশ্রম, মহানাম সংঘ, আর্চ-আরিয়ান, টাইগার চাকমা, অ্যাপোসিস সহ আরো অনেকে। বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম আর সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিশ্রণ যা এককথায় বলতে গেলে দারুণ।
প্রথম ৫০ পৃষ্ঠা পড়ে আগাতে অনেক বিরক্ত লাগছিলো। দুই দিন লেগেছে। তারপর ১০০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়তে আরো একদিন। তখন একটু একটু ভালো লাগা শুরু হয়েছে মাত্র। সেই টানেই আরো ১০০ পৃষ্ঠা পড়ার পর থামা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। যেহেতু ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস আমার ভালো লাগে তার উপর যুক্ত হয়েছে ধর্ম আর বিজ্ঞান। গল্পের মাঝে ছিল বিভিন্ন টুইস্ট আর তাতে মিশে ছিল ভাষা, কোড, পুরাণ, ইতিহাস, ধর্ম, ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব, বিভিন্ন গুপ্তসংঘ আর বিজ্ঞান।
প্রচ্ছদ এর কথা বলতে গেলে আমার কাছে ভালো লেগেছে। প্রডাকশন ভালো তবে বানান এর ক্ষেত্রে ভুল চোখে লেগেছে।
তবে ইতিহাস এর পাঠ আর একটু কম হলে ভালো লাগতো। তবে গল্পের সাথে ইতিহাস খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে তাই খারাপ লাগেনি।
নিঃসন্দেহে লেখকের অনেক গবেষণার ফসল। এর পরবর্তী পার্ট এলে ভালোই লাগবে।

এক কথায় বলতে গেলে দারুণ একটা ব‌ই 'অনার্য দেব'।
আশা করি সকলের ভালো লাগবে।
রেটিং - ৪/৫( প্রথম দিকের স্লো বিল্ড, বানান ভুল আর ইতিহাস অতিরিক্ত আলোচনা)
Profile Image for Elin Ranjan Das.
88 reviews5 followers
May 19, 2024
উত্তর দেখো চাহি
জানে নাহি পশ্চিম, দেখে নাহি প্রাচ্য।
কোন মহারাজা গড়ে নাহি
হেন মহারাজ্য!
অবশেষে পড়ে ফেললাম সাম্প্রতিক সময়ের অতিআলোচিত হিস্টোরিকাল থ্রিলার "অনার্য দেব"। বিশাল কলেবরের এই বইয়ে সমান সমান ভাবে পজিটিভ নেগেটিভ দিক দুটোই চোখে পড়েছে।
পজিটিভ দিকঃ
১। লেখকের গল্প বলার ধরন খুবই ভালো। এক বসাতে অবলীলায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে ফেলেছি। চোখের পলকে শয়ে শয়ে পাতা কখন শেষ করেছি, সময়ই খেয়াল করি নি। গল্প সুষম গতিতে এগিয়েছে, কোথাও শৈথিল্য নেই। ইনফর্মেশন ডাম্পগুলোতে আগ্রহ বেড়েছে, বিরক্তি জাগে নি।
২। চরিত্র আর সংলাপ, দুটোই জমাতে লেখক মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। একদম ছোট্ট উপস্থিতিতেও আম্বাজি, জগেন্দ্র, শম্ভুজি এরা মনের মধ্যে স্থায়ী দাগ কেটে যায়। প্রতিটা চরিত্র উপস্থিতিতে সাবলীল ছিল।
সংলাপগুলো অত্যন্ত রসপূর্ণ ছিল। হুলো আর তাহেরের সংলাপগুলো পড়ে হেসে গড়িয়ে পড়েছি।
৩। আরেকটা জিনিস হলো প্রেক্ষাপটের সাপেক্ষে লেখার ধরন চেঞ্জ হয়েছে। যখন পাকিস্তানে, তখন উর্দু নির্ভর বর্ণনা; আবার প্রথম অধ্যায় পুরোটা সাধুভাষায় লেখা। আবার কলকাতায় গেলে খাস কোলকাতাইয়া ভাষায় বাতচিত। এটা মেইনটেইন হয়েছে পুরো বই জুড়ে।
নেগেটিভ দিকঃ
১। সবচেয়ে চোখে পড়া জিনিস হলো, বইয়ের ফরম্যাট "দ্য দা ভিঞ্চি কোডের" হুবহু কপি। এত বেশি প্যারালেল দুই বইয়ের যে এটাকে দা ভিঞ্চি কোডের বাংলা এডাপ্টেশন বললেও অত্যুক্তি হবে না।
২। প্রথম সংস্করণ পড়েছি। এত বানান ভুল যে অনেক সময় ধরতেও কষ্ট হয়েছে কি বলা হচ্ছে। যেমন জানেন হয়ে গেছে জানেই।
৩। অনেক জায়গায় মনে হয়েছে তথ্য উহ্য হয়ে গেছে। মহানাম সাধুসঙ্ঘ কালারিপায়াত্তু জানে এটা কোথায় লেখা ছিল দেখলাম না। এরকম অনেক জায়গায় দুই পাতা এগিয়ে মনে হয়েছে মাঝে কোথাও কোনো না কোনো সিন মুছে গেছে। যেমন মঙ্গোলিয়াতে কী ঘটলো সেটা অস্পষ্ট লেগেছে বর্ণনায়।
৪। আবার অনেক সময় এক পাতা আগে জায়েদ কিছু একটা জানলো, সেটা প্রফেসর আবার বললেন, জায়েদ না জেনে বিস্মিত হলো। বর্ণনার দ্বিরুক্তি করতে গিয়ে এই ঝামেলাটা বেঁধেছে।
ওভারঅল "অনার্য দেব" বেশ ভালো লেগেছে। বাংলা ভাষায় এরকম থ্রিলার আগে পড়েছিলাম "দশগ্রীব"। মাইকেল মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্য" যে হিস্টোরিকাল থ্রিলারের একটা বিশেষ ধারা সৃষ্টি করেছে, যেখানে উপমহাদেশের ইতিহাসের অন্য দিকটা উন্মোচিত হচ্ছে, সেটা আরো চলমান থাকুক।
Profile Image for Zauad Mahmud.
37 reviews7 followers
October 1, 2025
বইয়ের শুরুটা খুব ধীরলয়ের। আস্তে-ধীরে বিল্ড আপ করছিলো গল্প। ৫৯২ পৃষ্ঠা তো নিতান্ত কম কথা নয়!! ভারতবর্ষের জন্মলগ্নের গুপ্ত ইতিহাস, প্রচ্ছন্ন সব লোককথা, জাতের যাত্রাভঙ্গ, অচেনা বর্ণমালার কম্বিনেশন, ধর্ম, পুরাণ, বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব, কোড, সিম্বল আর উপমহাদেশের ইতিহাসের অজানা এক অধ্যায়। ইতিহাস এবং থ্রিলারের মিশ্রণ বেশ ভালোই লাগলো। এ বই পড়তে গিয়ে ড্যান ব্রাউনের রবার্ট ল্যাংডন সিরিজের কথা মনে পরলো। তবে এ লেখায় অরিজিনিলাটি আছে। এ বইয়ের মেরুদণ্ড বলায় যায় পুরাণকে। পুরাণ কিন্তু ছদ্মবেশী ইতিহাস। লেখকের পরিশ্রম ও গবেষণা বইয়ের পাতায় পাতায় দেখতে পাই। বিশেষত শেষ ভাগে।

ইনফো ডাম্বিং এর ব্যাপারটা এড়াতে পারেননি লেখক। তবে ব্যক্তিগতভাবে এ দোষটা আমার বরং ভালোই লেগেছে। সভ্যতার সংমিশ্রণ ও ধর্মগ্রন্থ নিয়ে বিশ্লেষণ ছিলো দারুণ। স্টোরি টেলিং এ একটু ঘাটতি ছিলো সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। উপন্যাস কিংবা থ্রিলার হিসেবে উঁচু দরের কিছু বলার সুযোগ নেই। ভাষার ব্যবহারে বেশ ঘাটতি দেখা যায়, এমনকি প্রচুর বানান ভুলের ও দেখা পাওয়া যায়। ভালো উপন্যাসের গুণ থেকে বেশ খানিকটা দূরে আছে বইটা। প্লট বিল্ড করায় তেমন মাধুর্য নেই। থ্রিল তৈরি করার মতো প্রত্যক্ষ উপাদানের অভাব ছিলো। 

কিন্তু এত কিছুর পরেও বইটা পড়ে আমি বেশ তৃপ্তি পেয়েছি। নতুন লেখক হিসেবে ভালো লেগেছে। সে কারণেই সম্ভবত রেটিং এত বেশি দিয়ে ফেললাম।
Profile Image for Tusar Abdullah  Rezbi.
Author 11 books55 followers
June 8, 2022
বইটার গল্পের রেশ এখনো কাটেনি। শেষ করে বারবার মনে হয়েছে, কী পড়লাম! দারুণ, অনবদ্য, অকল্পনীয়। এই বইটা দিয়ে লেখক এক অসাধ্য সাধন করেছেন। কী ছিল না বইটাতে!
চমৎকার...! বইটা আমাকে এক পাতা থেকে অন্য পাতায় রিতীমত টেনে নিয়ে গেছে। এত দ্রুত এত বড়ো বই শেষ করতে পারব ভাবিনি, কিন্তু বইটার গল্প এমন ভাবেই লেখা, যে শেষ না করিয়ে ছাড়ল না।
আমি বিস্ময়ে ঘেরা এক জগতে ছিলাম, এখনো আছি, জানি না কতদিন লাগবে এই বিস্ময়য়ের জগত থেকে বের হতে!
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
July 6, 2022
পুরাণ হলো ছদ্মবেশী ইতিহাস; একথা অনেকেই বলেন। আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্যর বইয়ে এ কথাটা বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। আসাটাই স্বভাবিক। কেননা সে লিখছে পুরাণ কেন্দ্র করে আর তার সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়েছে ইতিহাসের। ড্যান ব্রাউনের বই যারা পড়ে থাকেন তারা এই ধারাটা বেশ ভালো বুঝবেন। একালে একটা ঘটনার মধ্য দিয়ে এক বা একাধিক মানুষ যুক্ত হয়েছে একটি রহস্যের সঙ্গে। সেই রহস্য সমাধানে সামনে এসেছে ইতিহাসের নানা অংশ। সৌহার্দ্যর উপন্যাসে এসেছে অবশ্য পুরাণ।

বইটা সুখপাঠ্য। রহস্য জমাতে বা গল্প বুনতে অনেক জায়গায় লেখক অবশ্য পুরাণ বা ইতিহাস থেকে সরে গেছেন। অনেক জায়গায় নিজের মতো করে গল্পও তৈরিও করেছেন। ফিকশনে সেটা করাও যায় কিন্তু কিছু জায়গায় একটু চোখে লাগে। অনেকে এ বই পড়ে বলতে পারেন যে তথ্যের ভার অনেক বেশি হয়ে গেছে কিন্তু আমার মনে হয় তথ্য যেভাবে এসেছে তাতে পড়তে ক্লান্তি লাগে না। লেখকের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকায় জানি, লেখার পর সে বেশ কয়েকবার কাটাছেঁড়া করেছে। অনেকটা মেদমুক্ত হয়েছে তাতে।

কাহিনী, রহস্য, রহস্যের কিনারা এবং যে উপসংহার এখানে সৌহার্দ্য টেনেছে তাতে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে কিন্তু তার সৃষ্ট কয়েকটি চরিত্র ভালো লাগতে বাধ্য। মূল চরিত্র জায়েদ এবং প্রফেসর দীপেশ কুমারকে তো ভালো লাগবেই, কিন্তু আমার নিশ্চিত বিশ্বাস তাহেরকে কেউ ভুলতে পারবে না। যদিও তাহের কিছুটা বেশি নাটকীয় চরিত্র কিন্তু তার মধ্যে এক ধরনের সরলতা আছে।

আরেকটা বিষয় না বললেই না। মূল গল্পের ভেতরে সৌহার্দ্য কিছু মেসেজ রাখার চেষ্টা করেছে। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতির কথা নতুন না। এখানে সেই বিষয়টায় একটা খোঁচা দেওয়ার পাশাপাশি মানবিক আচরণ ও সত্য খোঁজার দিকে মন দিতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে এসেছে বাকস্বাধীনতা, মানুষের মুক্তি। আর টাইগার চাকমাকে এনে সৌহার্দ্য আমার আশা বাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে আদিবাসী ও বিপ্লব বিষয়ে সে লিখলে আমি খুশি হবো। সে রকম কিছু লেখার যোগ্যতা তার আছে কেননা যেভাবে এ বইয়ে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান, ইতিহাস, পুরাণ ও ভাষাতত্ত্ব এসেছে তাতে মনে হয় এই ছেলে অনেক কিছুই মাথায় নিয়ে বসে আছে।

ড্যান ব্রাউনের লেখা যারা পছন্দ করেন তাদের এ বই ভালো লাগবে তবে বলে রাখি 'অনার্য দেব' উপন্যাসে যা যা বলা হয়েছে ভারতীয় পুরাণ সম্পর্কে তার সবটা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করলে ভুল হবে। কেননা গল্প বানাতে অনেক কিছু যুক্ত করতে হয়।

*বইয়ের 'কৃতজ্ঞতা স্বীকার' অংশে আমার নাম রেখে লেখক আমারে ঋণী করে দিছে।
Profile Image for শুভ্র.
70 reviews9 followers
May 13, 2022
অসাধারণ। এত বিশাল পটভূমি নিয়ে লেখা শুধু কঠিনই না, সমসাময়িক মেজরিটি মানুষের মানসিকতার বিচারে অনেক সাহসী ও বটে। এমন একটি বই এত বিশাল কলেবরে লিখতে ধী শক্তি লাগে অনেক। তরুণ লেখককে অভিনন্দন ও ভালোবাসা। খালি একটা জিনিস একটু চোখে লেগেছে। সবাই উত্তেজিত হলে বা রেগে গেলে পুরান ঢাকাইয়া স্ল্যাং ব্যবহার করছে এমনটা কি হয়? বিশেষ করে একজন প্রফেসর ইমেরিটাস এর মুখে খাস স্ল্যাং ঠিক যায়না। একটা দুইটা চরিত্র এমন করতেই পারে কিন্তু হরে গড়ে সবাই দিলে মানায় না।
Displaying 1 - 30 of 46 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.