দেড় মাসের ট্যুর দিয়ে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতিষ্ঠিত অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দিনই দূর্ঘটনার মুখোমুখি হলেন ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট আব্দুল মান্নান। বিভাগের একজন মনোবিদ মোস্তফা জামান নিজ অফিস কক্ষে করেছেন আত্মহত্যা। একজন সিনিয়র প্রফেসর ও মনোবিদ নিজেই আত্মহত্যা কেন করবেন এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যক্তিগতভাবেই হালকা তদন্তে নামলেন আবদুল মান্নান সাহেব। কিন্তু এরপরেই বেরিয়ে এলো চমকপ্রদ সব তথ্য। এই একজনই শুধু নয়, ঢাকা চট্টগ্রাম মিলিয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন নিজের বাসায় বা অফিসে, এবং প্রত্যেকেই ছিলেন মনোবিদ! আত্মহত্যাই ঘটছে নাকি সবটাই সাজানো? ডাক পড়লো সাবেক পিবিআই অফিসার এবং ভাগ্যের জেরে বর্তমানে তিন মাস ধরে কলাবাগান থানার ওসি পদে বসে থাকা দানিয়ালের। শ্রদ্ধেয় প্রফেসরের অনুরোধ ফেলতে পারলো না দানিয়াল, খতিয়ে দেখতে শুরু করলো আত্মহত্যার কেসগুলো। কিন্তু আসলেই কী এগুলো আত্মহত্যা? কি ঘটছে দুই বছর ধরে গোপনে যে কারণে এতজন মনোবিদ আত্মহত্যা করলেন? কেন পোস্টমর্টেম-এ প্রতিটি লাশের শরীরেই পাওয়া গিয়েছে একই ড্রাগের উপস্থিতি? আত্মহত্যার কিছু দিন আগে কেন সকলেরই আচরণে ঘটেছিল পরিবর্তন? আত্মহত্যাই কী ঘটছে প্রতিবার নাকি খুন করা হচ্ছে মনোবিদদের? ঘাড়ের পেছনে শীতল শিহরণ বয়ে গেল দানিয়ালের এক বছর আগের সিরিয়াল কিলিং কেসের কথা মনে করে। আবার কী আগমন ঘটেছে অদৃশ্য কোনো শত্রুর?... নাকি পুরনো কেউই...!! পাঠক, এত সব প্রশ্নের জবাব পেতে হলে বসে পড়ুন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার "দিমেন্তিয়া"র দ্বিতীয় কিস্তি "অ্যাবসেন্টিয়া" নিয়ে। নেমে পড়ুন দানিয়ালের সাথে আরেকবার অদৃশ্য শত্রুর বিরূদ্ধে দুর্বার লড়াইয়ে।
M.J. Babu is an acclaimed author born and raised in Dhaka. M.J. made a remarkable entry into the literary world with his debut book, Dimentiya, published in 2020. This gripping novel quickly became a best-seller in the Bengali language, establishing him as a prominent figure in contemporary Bengali literature.
Following the success of his debut, M.J. continued to captivate readers with his unique storytelling and thought-provoking themes. His book Pinball, published in 2022 from Kolkata, India, received critical acclaim and further solidified his reputation as a versatile and talented writer.
M.J. has authored seven books in Bengali, including the renowned Anarchist Series with titles Dimentiya, Absentiya, and Insentiya. Other notable works include Nirjon Shakkhor, Vrom, and Jinn. His literary works span various genres, showcasing his ability to weave intricate narratives that resonate deeply with readers.
Currently, M.J.'s books are being published from both Dhaka and Kolkata, broadening his reach and influence in the literary world.
শুরুটা বেশ দারুন হয়েছিল ইউনিক প্লটের সাথে। শুধু শুরু বলবনা, মাঝ পর্যন্ত একটা ডিসেন্ট whodunnit & howdunit টাইপ গল্প চলছিল, সেই সাথে মিস্ট্রির একটা আবছা জ্বাল। কম্বিনেশন খারাপ না, রাইট ? হয়তো এইভাবে শেষ পর্যন্ত টানতে পারলে একটা ডিসেন্ট পুলিশ প্রসিডিওর সাথে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পেতাম পারতাম আমরা।
কিন্তু লেখকের যে গল্প বড় করা দরকার ছিল। রাবারের মত টেনে বড় করতে গিয়ে আস্তে আস্তে স্টোরি রিপিট হতে শুরু করে, আর ক্রমান্বয়ে শুরু থেকে লেখকের লেখনী নষ্ট হতে শুরু করে।
হয়তো সেটাও মেনে নেওয়া যেত এন্ডিং স্বাভাবিক থাকতো। কিন্তু লেখক কে যে টুইস্ট দিতেই হবে। আর সেই টুইস্ট দিতে গিয়ে পুরো জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেললেন। ইলজিক্যাল থিওরি , ইলজিক্যাল প্ল্যান , লুপহোল যত রকম এলিমেন্ট আছে যা একটা গল্প কে নষ্ট করার জন্য এনাফ সব গুলো এনে পরিচয় করান লেখক তার সেই বাধ্যতামূলক টুইস্ট দিতে গিয়ে।
সত্যিই ব্যাপার টা আফসোসের। লেখনী আগের থেকে মজবুত, বাক্য গঠন আগের থেকে বেটার , স্টোরি টেলিং ফার্স্ট হাফ এ দারুন কিন্তু এক্সিকিউশনে গিয়ে প্রমিস ধরে রাখতে পারলেন না।
তবে এই ব্যার্থতার পেছনে আসল কারন কি? শুধুই কি লেখকের দিক থেকে? নাকি আমাদের মত পাঠকদেরও? আমরা যারা বই এর পেজে পেজে ননসেন্স টুইস্ট চেয়ে যাচ্ছি লেখকের কাছ থেকে, টুইস্ট কে মানদন্ড বানিয়ে একেকজন লেখক কে মাথায় তুলে নিচ্ছি, সেখানে একজন তরুন লেখক কতটুকু মৌলিক হতে পারছেন এত প্রেসার মাথায় নিয়ে?
সিরিজের ৩ নাম্বার বই এর প্রচুর প্রসংশা শুনেছি, তবে সেটা কি এক্সপেক্টেশন এর কাছাকাছি যাবে ? নাকি জার্নির শেষ হবে, দেখা যাক।
বইতো অনেক পড়ি কিন্তু কয়জন বইয়ের আফটার ম্যাথ নিয়ে ভাবি আর এমন কয়টা বই আছে যেগুলির এন্ডিং আপনাকে ভাবাবে? মাঝরাতে ঘুমের আগে আপনাকে মস্তিষ্কের বেড়াজালে আটকাবে?
কেমন হবে যদি আপনি আপনার বাসায় ফিরে দেখেন আপনার পরিচিত মানুষ আত্মহত্যা করেছে? এই ঘটনা নিশ্চয় আপনাকে মর্মাহত করবে, ভাবে। ঠিক এমনি ঘটেছে ঢাকা ভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর আব্দুল মান্নানের বেলায় এমন ঘটেছে। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে প্রফেসর আব্দুল মান্নান দেখে নিজের কলিগ মোস্তফা জামান ফাসিতে ঝুলে আছে। একটা মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর আত্মহত্যা করেছে, ব্যাপারটা ঠিক মিলাতে পারলো না মান্নান সাহেব। অফিসে গিয়ে বসতেই দেখে উনার আরেক কলিগ দিদারুল ইসলাম আত্মহত্যা করে। খোজ নিয়ে দেখে এমন একজন না অনেকেই আত্মহত্যা করেছে। আর তারা সবাই মনোবিদ। মান্নান সাহেব এটা খতিয়ে দেখার জন্য দানিয়ালকে ডাকে। এদিকে অফিসে বসে বোরই হচ্ছিলো দানিয়াল। কেসটা পেয়ে যেন প্রাণ পেল। তদন্ত করতে গিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার৷ একটা রুম আবদ্ধ, বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এভাবেই নিজের কক্ষ বন্ধ করে আত্মহত্যা করছে একেকজন। কেনই বা করছে? কী আছে তার পিছনে? জানতে হলে অবশ্যই এ বইটি পড়তে হবে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া - কিছুদিন আগেই ক্রিস্টোফার নোলানের ইনসেপশন দেখলাম। এই বইটার সাথে নোলানের ইনসেপশন, কিংবা ট্রাইএঙ্গেলের মত মাইন্ডবেন্ডিং মুভিগুলো যায়। প্লটটা এমন ছিলো যে কোথাও থামার সুযোগ নাই। লেখক প্লট বিল্ডআপ করতে ১২০ পেইজ নিয়েছে। এত সুন্দর প্লট বিল্ডআপ যে এখানে নাক কুচকানোর সুযোগ নেই। আমার জীবনে প্রথমবার আমি টানা একটা বই ২ বার পড়লাম। এত সাসপেন্স আর দুর্দান্ত প্লট আর দেখিনি। সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে লেখকের লেখনশৈলি। কাব্যিক ছোয়া রয়েছে লেখায়। চরিত্রায়ন ছিলো নজরকারা। সোবহান বক্সীকে সবচেয়ে ভালো লাগছে। আপনারা চোয়াল ঝুলানোর জন্য রেডী থাকেন।
পড়া শেষ করে একেবারে তব্দা মেরে বসে ছিলাম খানিকক্ষণ। কি পড়লাম! সব যেনো একেবারে অবিশ্বাস্য লাগতেছিলো। আর এন্ডিংটা এখনো মাথার মধ্যে ঘুরপাক করতেছে। লেখকের প্রথম বইয়ের তুলনায় এইটা সবদিক থেকে ভালো ছিলো। যাদের থ্রিলার পছন্দ সময় নিয়ে এটা ট্রাই করে দেখতে পারেন। সময় ও টাকা বৃথা যাবে না আশা করি।
"......ও তো খুনী নয়। খুনগুলো করেছেন আপনি নিজেই। কেবল ওকে ব্যবহার করেছেন আপনি! সব জেনে বুঝেও দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ও আপনাকে বাঁচাতে চেয়েছিল কারণ সে জানতে পেরেছিল যে আপনিই তার মা। এরপরেও আপনার......আচমকাই হাতের ছুরিটা নিয়ে দানিয়ালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন তিনি....."
একের পর এক আত্মহত্যায় মেতে উঠেছেন স্বনামধন্য সব মনোবিদ। সর্বশেষ ঢাবির এক অধ্যাপকের মৃত্যুর পর টনক নড়ে তাঁর সহকর্মী প্রফেসর মান্নানের। তিনি বিশ্বাস করেন এর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে। এসব স্রেফ আত্মহত্যা নয়! নানা কাঠখড় পুড়িয়ে তদন্তে নামেন পুলিশ কর্মকর্তা দানিয়াল। এরপর থেকে তদন্ত এগুতে থাকে দানিয়ালের হাত ধরে। উঠে আসে অবিশ্বাস্য এক অ্যাখান। ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা। গল্পের এক পর্যায়ে যাকেই আপনি খুনি ধরে নিবেন, পরমুহূর্তে সে নিজেই চমকে দিবে আপনাকে! তদন্ত যখন প্রায় শেষ, তখন ঘটনায় আটকে যায় প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা দানিয়াল নিজেই। অতীতের হ্যাচকা এক টানে বর্তমান থেকে কোথায় হারিয়ে যায় দানিয়াল? এরপরে? জানতে পড়ুন অ্যাবসেন্টিয়া। নিশ্চিত থাকুন, দারুণ একটা জার্নি হতে যাচ্ছে আপনার!
গল্প নিয়ে দুয়েকটা কথাঃ বেশ অনেকদিন পর চমৎকার একটা বই পড়ে ফেললাম। বইটা শুরুর সময়ে এক্সপেকটেশন যতটা ছিল, সেটা ছাড়িয়ে গেছে। হিপনোটিজম এবং এই ঘরানার বিষয় নিয়ে এরকম বই আগে এই প্রথম পড়লাম। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে এ ব্যাপারে লেখক বিস্তারিত বলেছেন। ঘটনার গাঁথুনি নির্মানে হোমওয়ার্ক করেছেন যথেষ্ট। দুয়েক জায়গায় শব্দের বহুল ব্যবহার ছাড়া তেমন কোন ভুল চোখে পড়েনি। লেখকের জন্য শুভকামনা অনেক। এমন লেখা আরও যোগ হোক আমাদের ভান্ডারে। ❤️ সবশেষে, এই বইটি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া উচিৎ। পাঠক সমালোচনায় অ্যাবসেন্টিয়া উঠে আসুক অনেকদিন। হ্যাপি রিডিং!
গরীবের ক্রিস্টোফার নোলান বলেন আর যা বলেন। লেখক কিন্তু প্রশংসা করার মত একটা কাজ করছে। মানে আমার মত চুপচাপ থাকা পাঠিকাও মাঝরাতে ২ লাইন বলে তাহলে বুঝুন কী বই!
দিমেন্তিয়া নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে যার ফলে আমি দিমেন্তিয়া কিনি। আসলে খারাপ ও লাগেনি আবার ভালোও লাগেনি।
বাট, এই বইটা ভীষণ ভালো লাগছে। দিমেন্তিয়াতে যে কাঁচা হাতের ছাপ পাওয়া গিয়েছে এটাতে একদম নাই বললে চলে। গল্পের বুনন থেকে শুরু করে চরিত্র উন্নয়ন, সিকুয়েন্স ঠিক রাখা এবং ফিনিশিং সব কিছুই ছিলো যথাযত। মানে পড়লে কেউ ধরতেই পারবে না যে এটা লেখকের ২য় বই।
যাদের দিমেন্তিয়া ভালো লাগছে তাদের কাছে তো এটা ভালো লাগবেই। আর রিজন ভাইয়ের প্রচ্ছদটা ছিল পার্ফেক্ট। তবে ব্যকরণগত আর বানানগত কিছু ভুল রয়েছে কিন্ত সেটাও সামান্য। এই বইটার সবচেয়ে বড় গুণ হলো এন্ডিং যেটা আপনাকে নিজের মত পুরো বইয়ের জন্য একটা হাইপোথিসিস তৈরি করতে সাহায্য করবে। আর যাদের কাছে ভালো লাগে নাই তাদের কাছেও লাগবে। তৃতীয়ভাগের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
আচ্ছা, এমন একটা ব্যাপার যদি হয় যে আপনি সব কাজ করছেন যেমন খাওয়া-দাওয়া,চলাফেরা, বন্ধুদের সাথে মেশা এমনকি নিজের ব্যক্তিগত সময়টুকুও অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নিয়ন্ত্রিত বললে ভুল হবে যে আপনার সব কিছু তার আদেশেই হয়... অনেকে ভাববেন আমি হয়ত ইশ্বরের কথা বলছি। মোটেও তা না।
বলছিলাম হালের জনপ্রিয় লেখক এম. জে. বাবুর অ্যানার্কিস্ট সিরিজের ২য় বই অ্যাবসেন্টিয়া নিয়ে। বইটা আমি অনেক আগেই শেষ করেছি কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আর রিভিউ দেয়া হয়নি।
গল্প শুরু হয় ক্রিমিনোলজির একটা ক্লাস দিয়ে। ইন্ট্রো চ্যাপ্টারে আমরা সিরিয়াল কিলিং নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। সে ক্লাস নেই ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট আব্দুল মান্নান সাহেব। ক্লাস শেষে অফিসে ফিরে দেখে নিজের কলিগ আত্মহত্যা করেছে যেটা রীতিমত তার কাছে দুঃস্বপ্ন লাগলো। একজন মনোবিদ আত্মহত্যা করবে সেটা নিশ্চয় এমনি এমনি ভুলার কথা না। উনি খোজাখুজি শুরু করতেই অনেক কিছু বের হয়ে আসলো। এরকম একজন না। অনেক মনোবিদ এভাবে আত্মহত্যা করেছে। প্রমাণ হিসেবে রেখে গেছে একটা ফিনিক্স পাখির পেপারওয়েট। মান্নান সাহেব বুঝতে পারলো এই মৃত্যুর মিছিল এখানেই থামবে না। বাধ্য হয়ে ডাক দেয় দানিয়ালকে। শুরু হয় খেলা, বেজে যায় মৃত্যুধ্বনি। দানিয়াল কিছু বুঝার আগেই হোচট খেতে থাকে। আত্মহত্যার আড়ালে ষড়যন্ত্র ভয়ংকর রূপ ধারণ করে যেটা দানিয়ালের পরিবারের উপর ও আছড়ে পড়ে। দানিয়াল কী পারবে নিজের পরিবারকে রক্ষা করে রহস্যের সমাধান করতে?
🗣️পাঠ অনুভূতি কনসিস্টেন্সি কাকে বলে এই লেখক দেখিয়ে দিয়েছে। দিমেন্তিয়াতে যে ভালোলাগাটা কাজ করেছে, এই বইয়ে তার থেকে বেশি ভালো লাগা কাজ করেছে। ৩৩৬ পৃষ্ঠার বই একদিনে পড়ে শেষ করেছি।
প্লট আমার কাছে বেশ লেগেছে, একদম ইউনিক আর আগ্রহ জাগানিয়া। প্লটকে কেন্দ্র করে চরিত্রায়ন ছিলো লা-জবাব। দানিয়ালকে এখানে খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। ভিলেইনের কথা বলে তো লাভ নেই...আসলে ভিলেইন নিজে একটা বড় প্যারাডক্স 😁 পড়লেই বুঝবেন।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে এ্যান্ডিং, মানে ওপেন এ্যান্ডেড এ্যান্ডিং। পাঠকদের ভাবতে হবে যে আসলে ভিলেইন কে? কী ঘটেছে। সত্যি বলতে আমি দুইবার পড়েছি, কিন্তু কোন হাল করতে পারিনি।
গল্পের সাসপেন্স আর টুইস্ট এর উপর টুইস্ট আপনাকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নিয়ে যাবে, আর সাসপেন্স সেটা এক সমুদ্র পাবেন।
প্রচ্ছদ আর প্রোডাকশন, দুটোই ছিলো নজরকাড়া। ভাগ্যিস বইটা বের হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে, নাহয় আমাকে আরও ৭ মাস অপেক্ষা করতে হতো।
যারা পড়েননি তাদের জন্য বলবো অনেক বড় কিছু মিস করে যাচ্ছেন। এত সুন্দর আর ম্যাচিউর একটা ক্রাইম থ্রিলার উপভোগ করতে আজই পড়ে ফেলেন। ব্যাক্তিগত ভালো লাগা পুরুটা, মানে ৫/৫
❝প্রতিশোধের সাথে খুনের সম্পর্ক বেশ পুরানো হতেই পারে কিন্তু আত্মহত্যা? এটা কি নিজের ওপর নেওয়া প্রতিশোধ না-কি ঘটে যাওয়া কোনো অঘটনের সূত্রপাত!❞
লেখকের ❛অ্যানার্কিস্ট❜ সিরিজের দ্বিতীয় বই দিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। প্রথম বই ❛দিমেন্তিয়া❜ এখনও পড়া হয়নি, তবে লেখকের বিচক্ষণতায় আমি মুগ্ধ। যে কনসেপ্ট নিয়ে তিনি পুরো উপন্যাসের প্লট সাজিয়েছেন এবং যেইভাবে প্রত্যকটা বিষয়বস্তুর উদাহরণ টেনে নিয়ে এসে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন এক কথায় দারুণ। গল্প গাঁথুনির গভীরতা বৃদ্ধি করতে নিয়ে এসেছেন রিসার্চের অনেক বিষয়বস্তু।
খুনের মোটিভ থেকে শুরু করে গল্পের প্রধান টুইস্ট সবকিছু বেশ গোছানো। পরিচিত কারণ হলেও উপস্থাপনায় রয়েছে ভিন্ন স্বাদ। পরিষ্কার ভাবে বর্ণনা করে গিয়েছেন একই সাথে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব আলোচনা টেনে নিয়ে এসেছেন সেগুলো লেখতে অনেক বেশি ধৈর্যশীল হওয়া লাগে। শ্রমের কোনো কমতি রাখেনি এইটুকু বিনা দ্বিধায় বলে দিতে পারি। যেহেতু গল্পের আবহ কাল্পনিক ভাবে আখ্যায়িত করা তাই বেশি বাস্তবতা খোঁজা এইখানে বোকামি, গল্পের সাথে বাস্তবতার সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার জন্য অনেক কিছু বাদ দিয়ে ফেলতে হয়। পরবর্তীতে সেগুলোর লজিক খুঁজতে গিয়ে না পেলে লেখককে দোষারোপ করা হয়, যা কোনোভাবেই উচিত নয়। তাই গল্পকে গল্পের মতো করে রাখা ভালো।
উক্ত উপন্যাসে আলোচনা করার মতো বিষয়ের অভাব নেই। একটি বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা করা যায় তবে রিভিউতে এতকিছু লেখতে গেলে বিরক্ত এসে যাবে সেদিক থেকে প্রতিক্রিয়া জানাব শুধু আর টুকটাক পর্যালোচনা করব।
➲ আখ্যান—
দেড় মাসের ট্যুর দিয়ে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতিষ্ঠিত অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দিনই দূর্ঘটনার মুখোমুখি হলেন ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট আব্দুল মান্নান। বিভাগের একজন মনোবিদ মোস্তফা জামান নিজ অফিস কক্ষে করেছেন আত্মহত্যা। একজন সিনিয়র প্রফেসর ও মনোবিদ নিজেই আত্মহত্যা কেন করবেন এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যক্তিগতভাবেই হালকা তদন্তে নামলেন আবদুল মান্নান সাহেব। কিন্তু এরপরেই বেরিয়ে এলো চমকপ্রদ সব তথ্য। এই একজনই শুধু নয়, ঢাকা চট্টগ্রাম মিলিয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন নিজের বাসায় বা অফিসে, এবং প্রত্যেকেই ছিলেন মনোবিদ! আত্মহত্যাই ঘটছে নাকি সবটাই সাজানো? ডাক পড়লো সাবেক পিবিআই অফিসার এবং ভাগ্যের জেরে বর্তমানে তিন মাস ধরে কলাবাগান থানার ওসি পদে বসে থাকা দানিয়ালের।
শ্রদ্ধেয় প্রফেসরের অনুরোধ ফেলতে পারলো না দানিয়াল, খতিয়ে দেখতে শুরু করলো আত্মহত্যার কেসগুলো। কিন্তু আসলেই কী এগুলো আত্মহত্যা? কি ঘটছে দুই বছর ধরে গোপনে যে কারণে এতজন মনোবিদ আত্ম��ত্যা করলেন? কেন পোস্টমর্টেম-এ প্রতিটি লাশের শরীরেই পাওয়া গিয়েছে একই ড্রাগের উপস্থিতি? আত্মহত্যার কিছু দিন আগে কেন সকলেরই আচরণে ঘটেছিল পরিবর্তন?
আত্মহত্যাই কী ঘটছে প্রতিবার নাকি খুন করা হচ্ছে মনোবিদদের? ঘাড়ের পেছনে শীতল শিহরণ বয়ে গেল দানিয়ালের এক বছর আগের সিরিয়াল কিলিং কেসের কথা মনে করে। আবার কী আগমন ঘটেছে অদৃশ্য কোনো শত্রুর?... নাকি পুরনো কেউই...!!
পাঠক, এত সব প্রশ্নের জবাব পেতে হলে বসে পড়ুন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার "দিমেন্তিয়া"র দ্বিতীয় কিস্তি "অ্যাবসেন্টিয়া" নিয়ে। নেমে পড়ুন দানিয়ালের সাথে আরেকবার অদৃশ্য শত্রুর বিরূদ্ধে দুর্বার লড়াইয়ে।
➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
প্রধানত এই গল্পের মূল বিষয় হচ্ছে ❛হিপনোটিজম❜ অর্থাৎ সম্মোহন বিদ্যা প্রক্রিয়া নিয়ে। ফ্ল্যাপের অংশ পড়ে হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন যে মনোবিদ ও সম্মোহনী বিদ্যার মিশেলে লেখক দুর্দান্ত প্লটের সৃষ্টি করেছেন। গল্পের প্রধান অংশ হিপনোটিজম থাকলেও লেখক কাহিনি বিল্ডাপে কোনো কার্পণ্য করেননি। সাসপেন্স ক্রিয়েট থেকে শুরু করে টুইস্ট সবকিছু পর্যাপ্ত রেখেছেন। এইবার সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।
● প্রারম্ভ—
গল্পের শুরুতে দেখা যায় একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তার পরিচয় খুবই ক্ষীণ ভাবে দেওয়া রয়েছে। কেন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন বা কী কারণে সেটা ধীরেধীরে জানতে পারবেন। কাহিনির শুরুতে পাঠকের মনে যে ইমপ্যাক্ট ফেলার প্রয়োজন ছিল সেটা ভালোভাবে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন লেখক। এরপরে কিছু বছরের গ্যাপ দিয়ে মূল গল্পে প্রবেশ করে। এইখানে লেখক সিঙ্গেল টাইমলাইনে গল্প টেনে নিয়ে গেছেন, শুরুতে শুধু বিশেষ এক ঘটনার ইন্ট্রো দিয়েছেন যাতে পাঠকের মনে আগ্রহ তৈরি হয় ওই ঘটনার মূল কারণ কী সেটা জানার জন্য। এইজন্য বইয়ের গভীরে প্রবেশ বাঞ্ছনীয়।
● গল্প বুনন—
এই কাজে পারদর্শীতা দেখাতে লেখকদের বেগ পেতে হয়। গল্পের বুনন যদি সাবলীল না হয় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে পাঠক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এই উপন্যাসে মাঝের কিছুটা সময় গল্প ধীরগতির মনে হয়েছে। কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত ডিটেইলস। পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা বাদ দিয়ে মূল কারণের ওপরের নানান তত্ত্ব দেওয়ার ফলে এক সময় মনে হবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ লেকচার শীট পড়ছি। লেকচার শীট উল্লেখ করার পেছনে বইয়ের মূল কনসেপ্ট দাঁড়ানো। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে যেতে হবে খুবই সীমিত সময়ের জন্য। যদিও এক্ষেত্রে কিছুটা বিরক্তবোধের সৃষ্টি হবে। কারণ কাহিনির মূল অংশের বাইরে কনসেপ্ট নিয়ে একনাগাড়ে ব্যাখ্যা স্বাভাবিকভাবে পাঠককের রিডিং স্পিডকে ধীরগতির করে দিবে। অবশ্যই এই ব্যাখা বা ব্যবচ্ছেদের দরকার ছিল কারণ কাহিনি শেষে এইসব টপিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাকি সময় স্বাভাবিক গতিতে গল্প এগিয়ে গিয়েছে।
● লেখনশৈলী—
লেখকের লেখনশৈলী তে মাত্রাতিরিক্ত ডিটেইলিং একেবারে ছিল না। অর্থাৎ মেদহীন লেখা রাখতে চেয়েছেন যেটা থ্রিলার জনরার উপন্যাসের জন্য কার্যকরি ভূমিকা রাখে। সাধারণ ভাবে গল্পের প্রেক্ষাপট থেকে চরিত্রের সংলাপ সবকিছু পরিচিত ফ্লেভার রেখেছেন। তাই যে-কোনো পাঠক সহজে লেখকের লেখার সাথে সংযুক্ত হতে পারবে।
● বর্ণনাভঙ্গি—
গল্পের শুরুতে লেখকের বর্ণনাভঙ্গি ছিল খুবই মন্থরগতির। ধীরে ধীরে একজন চরিত্রের কাজের বর্ণনা দিচ্ছেন। কিন্তু মূল গল্প যখন ট্র্যাকে ফিরে আসে তখন দ্রুতগতির হয়। যেটা হওয়াটা প্রয়োজনীয় ছিল, একইভাবে মাঝে এসে কিছুটা থমকে যায়। অবশ্য প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা যখন আসে তখন ধীরেসুস্থে এই অংশ পার করা উত্তম। গল্পের পারিপার্শ্বিক বর্ণনা না থাকলেও চরিত্রের কার্যবিধির ওপর বেশ ফোকাস দিয়েছেন লেখক। একজন চরিত্রকে জীবন্ত করার যে প্রক্রিয়া সেটা করতে সফল তিনি। কাজের বর্ণনা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
তদন্তের ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কিছু টার্ম তুলে ধরার যে প্রয়াস করেছেন সেগুলো পরবর্তীতে আবার সমাধান করে দেখিয়েছেন। পাঠক সে বিষয়গুলো ঠিকঠাকভাবে খেয়াল না করলে উপন্যাস শেষে অনেক কিছু বুঝে উঠতে কষ্ট হয়ে যাবে। তখন কারণ খুঁজতে গিয়ে এই সমস্যার সম্মুখীন হবে। কেন বা কী কারণে হয়েছে এই টাইপের প্রশ্ন অটোমেটিক মনে চলে আসবে। তাই বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়লে অনেক কিছু সহজে বোঝা হয়ে যাবে।
গল্পের চলমান অধ্যায়ের সাথে পরবর্তী অধ্যায়ের যোগসূত্র ভালো ছিল। ন্যাচারাল ভাবে যেরকম তদন্ত করা হয় একই সাথে প্রশ্ন করার ভঙ্গিমা সেগুলো সহজ সাবলীল লেগেছে। উদ্ভট তেমন কিছুই ছিল না।
● চরিত্রায়ন—
লেখক সবচেয়ে দুর্ধর্ষ যে কাজগুলো করেছেন সেটা হচ্ছে চরিত্র গঠন করতে, চরিত্রের কাজের ধরণ ব্যাখা করতে এবং চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরিতে। এত এত চরিত্র নিয়ে আসার পরেও দক্ষ হাতে সামলানোর যে প্রয়াস তিনি করেছেন বেশ প্রশংসনীয়। গল্পের মূল স্তম্ভ একদিকে যেমন ছিল মূল কারণ তেমনই অন্যদিকে চরিত্রের গঠন। এই দুইয়ের কম্বোতে উপন্যাসের পুরোটা সময় জুড়ে প্রাণবন্ত ছিল। কাজের দিক থেকে একই হলেও উপস্থাপনা বেশ ভালো ছিল।
এই দুর্দান্ত কাজের মধ্যেও দুইটি স্ট্রং চরিত্রকে লেখক নিজ হাতে… বলব না। আরেকটি চরিত্রকে পুরোপুরি দুর্বল করে দিয়েছেন অথচ সে চরিত্রের পদের দিকে তাকালে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। অর্থাৎ লেখক চরিত্র নিয়ে যে খেল দেখিয়েছেন পাঠক সেখানে আকৃষ্ট হবে। এতসব সিরিয়াসনেস চরিত্রের মধ্যেও একটি মজার চরিত্র আছে, আমি কিছু সময়ের জন্য সে চরিত্রের সংলাপে হেসেছি। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে চরিত্রের যাবতীয় কার্যক্রম।
● সমাপ্তি—
ফ্ল্যাশব্যাক! সমাপ্তির আগে সমাপ্তি হয়েছিল কিন্তু কাহিনি শেষ হয়েও হয়নি। লেখক পাঠকদের ধোঁকা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আশা করছি সেখানেও তিনি সফল হয়েছেন। শুধু কি টুইস্টের জন্য? কখনোই না, এই জায়গায় লেখক মূল অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন। কী সে অস্ত্র সেটা নাহয় বই পড়ে জেনে নেওয়া ভালো। লেখন এমনভাবে সমাপ্তি দাঁড় করিয়েছেন যেটা আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করবে। এবং এইজন্য লেখক স্বার্থক সাথে বইটিও।
সব মিলিয়ে উপন্যাসটি গল্পের মধ্যে আরও অনেক গল্প, চরিত্রের সাথে চরিত্রের স্নায়ুযুদ্ধ থেকে শুরু করে সবকিছু রয়েছে। তাই সেই স্বাদ গ্রহণ করার ইচ্ছে হলে এই জগৎ থেকে একবার হলেও ঢুঁ মেরে আসুন।
.
এছাড়াও গল্পে গ্রিক মিথলজি থেকে ধর্মীয় অনেক বিষয় যুক্ত করে প্লট আরও শক্ত করেছেন। মানবজীবনের খারাপ কাজেরও উদাহরণ টেনেছেন গল্পের প্রেক্ষিতে এবং কাহিনির শেষে ক্লিফহ্যাঙার রেখে দিয়েছেন পরবর্তী উপন্যাসের জন্য। সবকিছু মিলিয়ে বইটি অবশ্যই পড়া উচিত।
➢ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
লেখকের পূর্বের দুইটি বই দিমেন্তিয়া ও ভ্রম বেশ আলোচিত। সেই দ্বারা বজায় রেখে অ্যাবসেন্টিয়াও লেখকের তুরুপের তাস বলে মনে করছি। আশা করছি এই বইয়ের আবহে অনেকে লেখার মতো টপিক ও আগ্রহ খুঁজে পাবেন। সবশেষে লেখকের জন্য শুভকামনা রইল আগামী প্রকাশিতব্য বইয়ের জন্য। যেহেতু লেখকের পূর্বের কোনো বই পড়া হয়নি তাই লেখনশৈলীর জায়গায় উন্নতি কেমন করেছে সেটা বলা সম্ভব না। তবে যতটুকু পড়েছি ভালো মনে হয়েছে।
● বানান—
টুকটাক জায়গায় বানান ভুল ছিল। যেমন— নেয় কে নেই, নেমপ্লেটে কে নেমপেট, গেল কে গেলো। এইরকম ছোটোখাটো ভুল থেকে গিয়েছে। তবে পুরো বইতে না সামান্য কিছু পাতায় এইগুলা চোখে পড়েছে। পড়ার সময় এইরকম সামান্য ভুল এড়িয়ে যাওয়া যায়। অনেক ভালো ভালো লেখকের বইতে প্রতি পৃষ্ঠায় ভুল পাওয়া যায় সেদিক থেকে এই বই অনেকটাই ভালো অবস্থানে রয়েছে।
● প্রচ্ছদ, নামলিপি—
প্রচ্ছদ করেছেন হালের জনপ্রিয় লেখক, অনুবাদক ও প্রচ্ছদশিল্পী আদনান আহমেদ রিজন। গল্পের সকল মোটো প্রচ্ছদে জায়গা দেওয়ার দারুণ চেষ্টা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ সব এলিমেন্ট দিয়ে সুন্দর প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন সাথে নামলিপিও ভালো লেগেছে।
● মলাট, বাঁধাই, পৃষ্ঠা—
ঈহা প্রকাশের প্রোডাকশন ভালো লেগেছে। বেশ শক্ত বাঁধাই হওয়ার কারণে হাত দিয়ে পৃষ্ঠা ভাঁজ করে রেখে এরপরে বই পড়া লাগে। কাগজের ওজন ও মান দুটোই ভালো, পূর্বের ১০০ গ্রাম কাগজের থেকেও ক্রিম কালারের ৮০ গ্রাম কাগজ ভালো লেগেছে৷ ফন্ট স্পেস, লাইন গ্যাপ এইসব কিছু ঠিকঠাক, পড়তে আরাম লেগেছে। মলাটও ঠিকঠাক তবে আমার বইটির প্রচ্ছদ মলাটের ওপর কলমের একটা দাগ পড়ে গেছে। অনিচ্ছাকৃত ভুল বোঝা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে ভালো।
➠ বই : অ্যাবসেন্টিয়া | এম. জে. বাবু ➠ জনরা : সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ➠ প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২১ ➠ প্রচ্ছদ : আদনান আহমেদ রিজন ➠ প্রকাশনা : ঈহা প্রকাশ ➠ মুদ্রিত মূল্য : ৫২০ টাকা
লোমহর্ষক কাহিনিগুলো মন থেকে এত সহজে মুছে যায় না। জোকের মত মস্তিষ্কে চেপে বসে থাকে। এক বছর আগে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাগুলি কেউ ভুলে যায়নি। খুনগুলি যখন হচ্ছিলো তখন আড়ালে এক অদ্ভুত খেলা খেলছিলো প্রকৃতি। নিজেদের কক্ষে ফাসি নিয়ে আত্মহত্যা করছে মনোবিজ্ঞানিরা। যারা মনের চিকিৎসা করে তারাই মনের চাপ না নিতে পেরে আত্মহত্যা করছে। অদ্ভুত না?
ঠিক এমনটাই মনে হয় মান্নান সাহেবের কাছে যখন তিনি দেখেন তার কলিগ গলায় ফাস নিয়ে আত্মহ্লত্যা করেছে। ব্যাপারটা তাকে এতই পেরেশান করে যে তিনি এটা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হলেন। ভাবতে ভাবতে কেচু খুড়তে বের হয়ে আসলো সাপ। বাধ্য হয়ে কল দিলো দানিয়ালকে।
দানিয়াল আয়েশ করেই সময় পার করছিলো। কিন্ত এরকম আয়েশের মাঝখানে যেন অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করছিলো। বেকার থাকার অস্থিরতা। সেটা কাটাতেই দানিয়াল একটা দমদার কেইস খুজছিলো ঠিক এমন মুহূর্তেই সেটা নিয়ে হাজির হয় মান্নান সাহেব।
প্রত্যেকটা মনোবিদ আত্মহত্যা করে রেখে যাচ্ছে একটা ফিনিক্স পাখির পেপারওয়েট। পুণর্জাগরণের প্রতিক ফিনিক্স পাখির সাথে কী সম্পর্ক আছে এই আত্মহত্যাগুলির? সবাই বা কেন এই অদ্ভুতভাবে প্রকৃতির বাইরে গিয়ে আত্মহত্যা করছে? জানতে হলে অবশ্যই অ্যানার্কিস্ট সিরিজের ২য় বই অ্যাবসেন্টিয়া পড়তে হবে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া- বই পড়ার ক্যারিয়ারে এমন হয়নি যেটা এটা পড়ে হয়েছে। ট্রায়াঙ্গেল,কোহেরেন্স,ইনসেপশন কিংবা মেমোরিজ অফ মার্ডারারের মত মাইন্ডবেন্ডিং ছবিগুলোর এন্ডিং এক্সপ্ল্যানেশন ইউটিউবে পাওয়া যায়। কিন্তু কোন মাইন্ডবেন্ডিং বইয়ের টুইস্টেড এন্ডিং এক্সপ্লেনেশন কোথাও পাওয়া যায় না। ফলাফল মাথা নষ্ট করে বসে থাকতে হয়। যাহোক কাল রাতে এক আপুর কল্যানে শান্তি পেলাম।
বইয়ের সবচেয়ে ভালো লাগা দিক হলো ইউনিক প্লট। এত ইউনিক আর জটিল প্লট যেটা প্লট নিজেই বইটাকে একটা আলাদা স্থানে জায়গা করে দিবে। চরিত্র উন্নয়ন ছিলো পার্ফেক্ট পাশাপাশি পার্শ্বচরিত্রগুলোকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে কাজ করা যায়। দানিয়াল সহ ফোকাস ক্যারেক্টার যেমন মোয়াজ্জেম আলি, মনোজ, নির্মল চন্দ্রকে খুব ভালোভাবে ফোকাস করা হয়েছে। সবচেয়ে ভালো লাগছে লেখকের মেদহীন বর্ণনা। দিমেন্তিয়াতে যে বাজে লেখনী ছিলো এটাতে তেমন ভালো লেখনী।
প্রোডাকশন নিয়ে কোন অভিযোগ নাই। প্রচ্ছদটা ছিলো পার্ফেক্ট। পুরো গল্পকেই ফুটিয়ে তুলেছে। দিমেন্তিয়া পড়ার সময় একটা বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিলো সেটা হলো ভারী পেইজের জন্য উল্টাতে ভীষণ ঝামেলা হতো। এক পৃষ্টাকে কয়েক পৃষ্ঠার মত লাগতো। ঈহা এটা থেকে বের হতে পেরেছে।
আমার অভিজ্ঞতা আছে সিকুয়েল কোনদিন প্রথম বইয়ের মত হয় না। কিনে ধরা খাই। কিন্তু এটার বেলা উলটো। Absentiya is far bettet than dimentia. পরিশেষে বলতে চাই এটা মাস্ট রিড একটা বই।
"সেজদায় পড়লে মানুষের সব দুশ্চিন্তা আল্লাহ দূর করে দেন। আল্লাহ মানুষের কাছে শুধু এটাই চান। আল্লাহর সাথে একটু কথা বলুক মানুষ। সব দুশ্চিন্তার কথা আল্লাহকেই খুলে বলুক। কিন্তু মানুষ সেটা ভুলে যায়। বিশেষ করে মানুষ যখন সুখে থাকে তখন সে নিজের আশেপাশের মানুষ সহ আল্লাহকে ভুলে যায়। সেজন্য আল্লাহ কাউকেই দুনিয়াবী সুখ চিরস্থায়ী করে দেন না।"
"সমাজের আড়ালে অনেক ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত হয়। সেগুলোর আড়ালে অনেক সময় কোনো রাঘব বোয়াল লুকিয়ে থাকে আবার অনেক সময় থাকে কোন ছোট মাছ। রাঘব বোয়ালের অপরাধ তার দাপটের আড়ালে ফিকে হয়ে যায়। আর ছোট মাছেরা এত সহজেই জাল থেকে বেড়িয়ে পড়ে যে তাদের অপরাধ আর ধরাই পড়ে না। সমাজের শিরোনাস্ত্র যেসব চুনোপুটিরা নিজেদের মেধার জোরে সবার অলক্ষে ভয়াবহ পাপ করে আসছে। তাদের পাপ তাদের সুনামের আড়ালে দমবন্ধ করে আত্মহত্যা করে। কিন্তু সেটা আর কতক্ষণ? এক সময় না এক সময় সেই পাপ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে মুক্তির জন্য। পাপীকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমেই যে পাপের মুক্তি মিলে। জন্ম নেয় নতুন এক সৎ আত্মার।"
'মাঝেমধ্যে ধূর্ত শ্রেণির মানুষেরা সহজেই বিপদে পড়ে যায়। যদি তাদের ধূর্ততা ঠিক সময়ে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করতো তাহলে তাদের পায়ের নিচে ভালো মানুষেরা পদদলিত হয়ে থাকতো জীবনভর। কিন্তু বুদ্ধির বিশ্বাসঘাতকতাই তাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।'
দেড় মাসের একটা ট্যুর এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের গুরুদায়িত্ব পান ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট আব্দুল মান্নান। কিন্তু প্রথম দিনেই বিভাগের মনোবিজ্ঞান বিভাগের একজন সিনিয়র প্রফেসর আত্মহত্যা করেন। একজন মনোবিজ্ঞান এর প্রফেসর এর কাছ থেকে এমন দূর্ঘটনা আশা করেননি আব্দুল মান্নান। দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শন করে মেনে নিতে পারেননি তিনি কিন্তু পরবর্তীতে তিনি খোঁজ নিয়ে জানলেন ঠিক এভাবেই আরো কয়েকজন স্বনামধন্য মনোবিদ যারা শিক্ষকতার সাথে সম্পৃক্ত তারা ঠিক একই পদ্ধতিতে আত্মহত্যা ঘটিয়েছে। এসব জানার পরে তার মনে সন্দেহ হলো এগুলো আদৌ আত্মহত্যা নাকি একেকটি খুন কে এভাবে আত্মহত্যা বলে মঞ্চস্থ করা হয়েছে। সন্দেহের কারণে খবর দিলেন নিজের ছাত্র দানিয়াল কে যে এক বছর আগে এক দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার কে ধরতে সক্ষম হয়েছে। আনঅফিসিয়াল তদন্তে নেমে দানিয়াল খুঁজে পেলো আরো কয়েকজন ভিক্টিম কে যারা একইভাবে আত্মহত্যা করেছে যাদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এ লাশের সাথে পাওয়া গিয়েছে এক ধরনের বিশেষ ড্রাগ। ধীরে ধীরে কেস খোলাসা হতে শুরু করে দানিয়ালের কাছে আর সেই সাথে তারা হারিয়ে যেতে থাকে এক কানাগলিতে। খুনি খুবই ঠান্ডা মাথার একজন নিখুঁত খুনি যার খুনের সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে সিরিয়াল কিলিং এর। খুনের গুরুদায়িত্ব শেষ পর্যন্ত পড়লো দানিয়ালের উপরেই। আবারো তাকে মুখোমুখি হতে হবে একজন সিরিয়াল কিলারের যে সবার অলক্ষ্যেই নৈপুণ্যতার সাথে একেকটি খুন করে যেতে পারে।
লেখকের "অ্যানার্কিস্ট" সিরিজের দ্বিতীয় বই "অ্যাবসেন্টিয়া" যার প্রথম বই হচ্ছে "দিমেন্তিয়া"। আগেই বলে রাখি প্রথম বই যদি কারো পড়া না থাকে তবে এই বই বুঝতে খুব একটা সমস্যা হবেনা তবে এখানে প্রথম বই এর চরিত্র আর এক বছর আগের সিরিয়াল কিলিং এর ব্যাপার জানার জন্য প্রথম বইটা পড়া জরুরি।
সিরিজের দ্বিতীয় বই হিসেবে বেশ ভালো ছিল অ্যাবসেন্টিয়া। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে প্রথম দিক বেশ ধীরে ধীরে এগিয়েছে কাহিনী। মূল তদন্ত শুরু হতে মোটামুটি ১৩০ পেজ পর্যন্ত যেতে হয়েছে। পরে বুঝলাম লেখক এই প্রথম দিকে স্লো করেছেন একেকটা কেস গুছিয়ে এক সুতোয় গাঁথার জন্য। সাধারণত সিরিয়াল কিলার বলতে আমরা বুঝি খুব বিভৎস ভাবে একটা প্যাটার্ন মেনে খুন করতে থাকা এক পাগলাটে খুনি কিন্তু এখানে খুনি একটু অন্য পদ্ধতিতে তার শিকার পাকড়াও করায় একটু অন্যরকম লেগেছে ব্যাপারটা তবে সেটা যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং ছিল। শেষ দিকে এসে বইটা বেশ গতি পেয়েছিল তবে আমি এই গতিটা আরো আগে আশা করেছিলাম যদিও এধরনের কেস এর জন্যই হয়ত সেটা করা হয়েছে তবে আরো আগে হলে বইটা আমার কাছে আরো বেশি উপভোগ্য হতো। কিন্তু এতে কাহিনী ঝুলে যায়নি কোথাও বরং যথেষ্ট উপভোগ্য ছিল। আর একদম শেষ ভাগে এসে যখন সব গিট গুলো আস্তে আস্তে লেখক খুলেছেন তখন অবাক না হয়ে উপায় ছিলোনা।
কেসের তদন্তের খাতিরে লেখক বেশ কিছু তথ্যও দেয়া হয়েছে তবে লেখক সেগুলো সম্পর্কে শেষ পৃষ্ঠাতেই তা পরিষ্কার করেছেন।
বইতে চরিত্র অনেক ছিল। প্রথম দিকে যা একটু কম মনে হচ্ছিল তবে শেষ দিকে এসে অনেকগুলো চরিত্র এসেছে। সিরিজের প্রথম বইয়ের কিছু চরিত্র বাদেও নতুন কেসের খাতিরে আরো বেশ কিছু নতুন চরিত্র যুক্ত হয় আর সেই সাথে ভিক্টিম দের সাথেও বেশ কিছু চরিত্র জড়িত থাকায় মাঝে মধ্যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। তাই পাঠকরা শেষ দিকে একটু মনযোগী হবেন নাহলে হয়ত চরিত্র বুঝতে সমস্যা হতে পারে। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বইতে 'সোবহান বক্সী' চরিত্র টা লেখকের আরো আগে আনা উচিত ছিল কেননা এ ধরনের বইতে অমন কমেডি ধাচের একটা ক্যারেক্টর থাকলে বেশি উপভোগ্য হয়।
বইয়ের সমাপ্তি বেশ তৃপ্তিদায়ক ছিল। প্রথম দিকে প্রত্যেক কেস যেমন ধোয়াশার ভেতরে ছিলো শেষ দিকে এসে সেটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়েছে আর ভিক্টিম দের সাথে তাদের অতীতের যে সম্পর্ক সেটাও খুব সুন্দরভাবে খোলাসা করা হয়েছে।
তবে আমার কাছে ভালো লাগার দিক থেকে সিরিজের প্রথম বই দিমেন্তিয়াই এগিয়ে থাকবে।
বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন আদনান আহমেদ রিজন যেটা আমার কাছে মোটামুটি ভালো লেগেছে। ঈহা প্রকাশনীর বাধাই বেশ শক্তপোক্ত হয় এটাও তাই তবে মোটামুটি ৯০° তে খুলে পড়া গিয়েছে। পেজ এর মান ও বেশ ভালো। বইতে দু এক জায়গায় প্রিন্টিং মিসটেক চোখে পড়েছে তবে তা খুব বেশি নয়।
"The only solution for bad and violent people is to make them realize that when good people do something bad to them that are more artistic and they are more skilled in violence." The second book in the Anarchist series is Absentia. Fertilizer Summary - Suddenly one of the psychology department of Dhaka University Psychologist's suicide. Criminal psychologist Abdul Mannan cannot accept the suicide of a cheerful mind. A few days later you find out that 1 month ago another psychologist committed suicide with a rope around his neck. Abdul Mannan doesn't know how to know everything. Why do so many psychologists commit suicide themselves? When you go to investigate on your own to find the answers to these questions, you will know that they are not both. Similarly, two more psychologists committed suicide in the country a year ago. This time he was compelled to call Daniel. Daniel's investigation revealed that a phoenix birdweight was found in the hands of all those who were committing suicide. So these are not just a suicide? Is there a serial killer in town who is just targeting psychologists and plotting suicide? If you want to know, you have to read the author's absentia. Lesson Response - In a word, great! From the beginning, there was a lot of excitement towards the story. The whole story is not boring for a moment. In particular, the plot chosen by the author was very unique and the writing style was really very admirable. There were many examples of mythology in the story which made the story more vivid and explained it very nicely. The author has given us a beautiful book after overcoming the mistakes in the previous book. In the end, the author has kept the twist after the twist for the reader and the writer has also given the idea that the story is not over but is about to start anew. The next book will be released soon.
সর্বশেষ পড়া বই ছিলো ধনুর্ধর, ওটার বিস্তারিত আলোচনাও করেছিলাম। তারপর চন্দ্রহাস পড়তে গিয়ে রিডার্স ব্লকে পড়ে গেলাম। অনেক বই ধরা হলো কিন্তু শেষ করা হলো না। অবশেষে অ্যাবসেন্টিয়ার মাধ্যমে রিডার্স ব্লক কাটলো।
গল্পসংক্ষেপ- নিজের রুমেই গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মোস্তফা জামান। বিষয়টা সবাই স্বাভাবিকভাবে নিলেও, নিতে পারেনি ওনার কলিগ আব্দুল মান্নান। একটু খুঁজতেই কেঁচু খুড়তে সাপ বের হয়ে আসলো। এরকম একজন না, অনেক মনোবিজ্ঞানি আবদ্ধ রুমে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সবখানেই ছিল এক আগুনপাখির পেপারওয়েট। রহস্য যখন উনার মাথায় জট পাকাচ্ছিলো তখন তিনি ডাকলেন দানিয়ালকে। দানিয়াল কেসে নামতেই যেন অথৈ সাগরে পড়ে গেলো। তদন্ত শুরু হতে না হতেই এরকমভাবে লোক মরতে শুরু করলো। শহরে যেন এক অদ্ভুত অন্ধকার নেমে আসলো যেটা একে একে ঘ্রাস করে নিচ্ছে সবাইকে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া- ওয়েল, বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এরকম নিখুত বই শুধু অনুবাদেই পড়েছি, মৌলিকে অনেক কম- বিশেষ করে ক্রাইম থ্রিলার জনরায় পড়েছি। বইটার কোন কমতি নেই। কালেবরে এত বড় ক্রাইম থ্রিলার যেটা এক মিনিটের জন্য আমাকে বোর করেনি। সবচেয়ে ভালো লাগলো লেখকের ঝরঝরে বর্ণনা। সেজন্য এত তথ্যও হজম করতে কষ্ট হয়নি।
চরিত্রায়নে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে ভিলেনের চরিত্র। এত শক্ত প্রতিপক্ষ যে হিরো অপেক্ষা তিনগুণ ব্রিলিয়ান্ট। সাইড ক্যারেক্টারগুলো সমান পোটেনশিয়াল নিয়ে এগিয়েছে। দানিয়াল এখানে বিকশিত হয়েছে।
বইটার সবচেয়ে আকর্ষনীয় আর অনন্য দিক হলো প্লট আর সমাপ্তি। এরকম অদ্ভুত প্লট আর এত সুন্দর এক্সিকিউশন যেটা আসলেই গল্পকে পরিপূর্ণ করে দেয়। আর অ্যান্ডিং? সেটা ছিলো চোয়াল ঝুলানো আর মস্তিষ্ক নাড়ানো৷ অবশেষে বলতে চায়, বইটা যারা পড়বেন তারাই হয়ত বুঝতে পারবেন এটা কেমন। তবে সবাইকেই রেকোমেন্ড করবো।
পরিশেষে- খারাপ দিক পাইনি। ইহার প্রোডাকশন আর বইয়ের লে-আউট ছিল খুবই ভালো। দামটা আরেকটু নাগালের মধ্যে হলে ভালো হতো।
সারসংক্ষেপ- দেড় মাসের ট্যুর দিয়ে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতিষ্ঠিত অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দিনেই দূর্ঘটনার মুখোমুখি ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট আব্দুল মান্নান। বিভাগের কলিগ মোস্তফা জামানের লাশ নিজের চোখের সামনেই প্রত্যক্ষ করে সে। আবদ্ধ রুমে ফাসি দিয়ে আত্মহত্যা করেন উনি। একজন মনোবিদের আত্মহত্যার কারণ খুজতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, এরকম একজন না আরও অনেক মনোবিদ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রত্যেক ক্রাইম সিনে একটা ফিনিক্স পাখির পেপারওয়েট ছিলো। উনার কাছে ব্যাপারটা মোটেও ভালো ঠেকালো না। এটার তদন্ত করতে উনি দানিয়ালকে ডাকেন। এদিকে ১ বছর সিআইডি থেকে বোল্ড আউট হয়ে নিজের পুরনো থানায় বেকার সময় কাটাচ্ছে দানিয়াল। প্রফেসরের থেকে এরকম ডাক পেয়ে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারেনি। কোমর বেধে নেমে পড়লো তদন্তে। কেন মনোবিদরা আত্মহত্যা করছে, কেনইবা তাদের কাছে পাওয়া গিয়েছে পেপারওয়েট? আসলেই কি সেগুলো আত্মহত্যা নাকি খুন? পাঠক এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে আপনি বসে পড়ুন এম জে. বাবুর টান টান উত্তেজনাপূর্ণ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, দিমেন্তিয়ার দ্বিতীয়ভাগ অ্যাবসেন্টিয়া নিয়ে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া-- সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছে এটা ভেবে যে এই বইটার ফ্ল্যাপ পড়ে যা বুঝেছিলাম, বই পড়ে তা উলটো হলো। মানে এমন একটা টপিক নিয়ে লেখা যেটা সিনেমাতেও দেখা হয়না, হলেও অনেক কম। এটার বাস্তবতা যে এত কঠিন সেটা এই বই না পড়লে বুঝতাম।
বইয়ের প্লটের প্রয���োজনে লেখক অনেক তথ্য দিয়েছে, তথ্যের সুন্দর উপস্থাপনের জন্য বইটা একটুও বোরিং হয়নি৷ আমি আগেও বলেছি প্লটের কনসেপটা অনেক ইউনিক আর ইন্টারেস্টিং।
চরিত্রায়ন বিশেষ করে দানিয়াল আর ভিলেইনের মধ্যে যে মাইন্ড ওয়ারটা চলছিলো সেটা যথেষ্ট লোম নাড়ানো ছিলো। লেখক এমন একটা সাসপেন্সড পরিবেশ তৈরি করেছে যে আমি পড়তে গিয়ে বারবার শিহরিত হয়েছি।
অ্যান্ডিংটা ছিলো যথেষ্ট ভাবনা উদ্রেককারী। লেখকের সাথে ভালো সম্পর্ক হওয়ার পরও আমি অ্যান্ডিং জানতে পারিনি। ওভার-অল বইটা এতই স্ট্রং প্লট, ডেপথ ক্যারাক্টাইরেজশনের মাধ্যমে লেখা যে এটা নিয়ে আঙ্গুল তুলার মতো কিছু পাইনি। টুইস্ট এর উপর টুইস্ট আর ক্লিফহ্যাংগারের কারণে ৩৩৬ পৃষ্ঠার বই একদিনেই পড়ে ফেলেছি।
হ্যা, আদনান ভাইকে ধন্যবাদ দিতেই হয় এত সুন্দর কাভারের জন্য। কাভারটাতে পুরো বই ফুটে উঠেছে। প্রোডাকশন ও ছিলো ভালো। গতবার ২৭২ পেইজের বই উল্টাতে গিয়ে বিরক্ত বোধ করেছি। এবার ৩৩৬ পৃষ্ঠার বই পড়তে গিয়ে সেটা হয়নি আর।
যাহক, অনেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে হতাশ৷ তবে, আমার মনে হয় এটলিস্ট নতুন থ্রিলার লেখকরা এত সব দূর্দান্ত কাজ করছে যেগুলো আসলেই বিশ্ব সাহিত্যের সাথে তুলনা দেয়া যাবে। অনেকের মনে হবে বাড়িয়ে বলছি। আসলে,যদি সেটা আপনার মনে হয়, তাহলে অ্যাবসেন্টিয়া পড়ে দেখুন, খারাপ লাগলে নিজের মতামত তুলে ধরুন।
বইটা যখন শুরু করি তখন প্রত্যাশা একটু নিচু করেই রেখেছিলাম। আজকাল ফেসবুক বিজ্ঞপ্তি দেখে অনেক লেখকের বই কিনে ধরা খেতে হয়। দিমেন্তিয়া নিয়ে আমার মিশ্র অনুভূতি। এই বইটার আগে প্রত্যাশা নিচু করে রেখেছিলাম।
যাহক, গল্পের শুরুতে একটা মৃত্যু দেখা যায়। সেই মৃত্যু দেখে ভেবেছিলাম লকড রুম মিস্ট্রি মনে হয়।
যাহক, কিছু গল্পে স্ট্রিং ক্যারাক্টার থাকে যারা গল্প শুরু করে। এই বইয়ের স্ট্রিং চরিত্র আব্দুল মান্নান। উনার কলিগের আত্মহত্যার কারণ খুজতে গিয়ে উনি সিরিয়াল মৃত্যুর খোজ পান। এক অদ্ভুত রহস্য যেন ঢাকা শহরে বাধতে শুরু করলো। ঘটনার ভবিষ্যত আচ করতে পেরে দানিয়ালকে ডাক দেয়।
কেসে নেমেই যেন অকাল সমুদ্রে পড়ে দানিয়াল। কেস সলভ করার আগেই খুনী তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে। খুনীদের সাথে যেন দানিয়ালকেও টার্গেটে পরিণত করে ভিলেইন।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
থ্রিলারের ফুল প্যাকেজ একটা। দুর্দান্ত একটা প্লট সাথে গতিশীল লেখনী। চরিত্র উন্নয়ন ছিলো নজরকারা, বিশেষ করে এখানে দানিয়ালকে আরও এক্সপ্লোর করা যায়। ভিলেইন ১০০% বুম। অ্যান্ডিং নিয়ে যদিও কনফিউশনে আছি। তবে বইটা পড়ে লেখকের পরবর্তী বইয়ের জন্য মুখিয়ে আছি।
দিমেন্তিয়া র পরবর্তী পর্ব। কাহিনি সংক্ষেপঃ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে বেশ কয়েকজন মনোবিদ আত্নহত্যা করেন। কিন্তু সবার আত্নহত্যার ধরন আর ভিক্টিম বিবেচনায় এক সময় এই সন্দেহে উপনীত হয় যে এসব কি আসলেও আত্নহত্যা?নাকি অন্য কোনো রহস্য এর পেছনে? নাকি আরেকটা সিরিয়াল কিলিং কেস?এই রহস্য সমাধানে আবার ডাক পড়ে দানিয়ালের যে গতবারের সিরিয়াল কিলিং কেস সলভের প্রধান নায়ক।
কিছু কিছু বই পড়ার পরেও বেশ অনেক্ক্ষণ ধরে রেশ রয়ে যায় এইটা সেরকম একটি বই।বইয়ের ভাললাগার বিষয়গুলো উল্লেখ করে বললে প্রথমত আসে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্যের উপস্থিতি, গল্প ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য রয়েছে যা গল্পের খাতিরে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তারপর প্রতিটি ক্যারেক্টর কে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা।বইয়ের কোনো চরিত্রকে অপ্রয়োজনীয় বা বিরক্ত লাগে নি। তবে বেশ কয়েকটি বিষয় ক্লিয়ার করা প্রয়োজন ছিল।লেখক সাসপেন্স রেখে বইটা শেষ করতে চেয়েছিলেন তবে এই ক্ষেত্রে শেষের অংশটা বেশ দ্রুত শেষ করা হয়েছে।আশা করা যায় পরের পার্টগুলো পরে ক্লিয়ার হবে শেষের অংশটা।
তবে এইবছর এখন পর্যন্ত পড়া অন্যতম সেরা একটি থ্রিলার। Must Read.
দিমেন্তিয়া পড়ার পর আমার সত্যিকার অর্থেই পরের পার্ট পড়ার আশা দমে গিয়েছিল। তবুও টাকা দিয়ে কিনে যখন এনেছি, পড়ে না দেখে থাকতে পারলাম না৷
এবসেন্টিয়ার পড়তে শুরু করে কিঞ্চিৎ ধাক্কা খেলাম। মনে হলো ছন্দ কিংবা অন্ত্যমিল ছাড়া গদ্যের স্টাইলে কবিতা পড়ছি৷ এবং এখানেই বাঁধতে শুরু করলো বিপত্তি৷ সিরিয়াল কিলার বইয়ে যদি আপনি পারিপার্শ্বিক বর্ণনা দিতে গিয়ে হাস্যকর কিছু উপমা ব্যবহার করে ফেলেন তখন তা যথেষ্ট বিরক্তির কারণ বটে৷ তবে সেই কবিতার স্টাইলে বর্ণনা করার ধরনটা পালটে যেতে শুরু করে সামনের দিকে৷ তবে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, পূর্বের বইয়ের থেকে এই বইটাতে লেখকের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ভাষাশৈলী, বানান, বর্ণনা ইত্যাদি বেশ যথার্থভাবেই ব্যবহার করতে পেরেছেন বটে৷ তবে অতিরিক্ত জ্ঞান দেওয়ার প্রবণতা দেখতে পেয়েছি এটিতেও৷ 'জ্ঞান দেওয়ার বিষয়টা' আদতে খারাপ না যদি আপনি উপভোগ্য ভাবে তা দিতে পারেন৷ যেমন মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সাইফাইগুলোতে শিশু কিশোরদের উপযোগী করা হলেও সেখানে যে সায়েন্টিফিক বিষয়গুলোর অবতারণা হয় সেগুলো শিশুকিশোররা মজার সাথেই গ্রহণ করে৷ কিন্তু এই ধরনের ক্রাইম রিলেটেড বইয়ে আপনি যদি অনেক বেশী ডিটেলিং দিয়ে দেন ল' রিলেটেড তখন আইনের বা অপরাধবিদ্যার ছাত্রের মতো টেক্সবুক পড়ার মতোন মনে হবে৷
ওভারঅল, এই উপন্যাসটি যথেষ্ট ইমপ্রুভড৷ টুইস্ট, ঘটনার ব্যাপকতা ভালোভাবেই দেখিয়েছেন। কিন্তু ঐ যে প্রথমটাতে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশী বিরক্তির কারণ ছিল "lack of uniqueness" এই দোষে এটিও দুষ্ট৷ সিরিয়াল কিলিংয়ের প্যাটার্নটা কেন যেন আর্থার কোনান ডয়েলের "A study in scarlet" এর সাথে মিলে যায়৷ যদিও টুইস্ট,সমাপ্তি ভিন্ন৷
যাই হোক, ওভারঅল, আগের কিস্তির চেয়ে এটা মোটামুটি ইমপ্রুভড৷ তবে লেখকের প্রতি আহবান থাকবে যেন মৌলিকত্ব নিয়ে আনেন এরপরের লেখাগুলোতে৷
প্রথমে ভেবেছিলাম গতানুগতিক ধারার থ্রিলারের মতন হবে। ধীরে-সুস্থে আমার মন নিয়ে খেলছিল বইটা, যেন স্লো পেসড পয়জন! তবে এই পয়জন বিষক্রিয়ায় মৃত্যু ঘটায়নি আমার, বরং গল্পের মাঝে অমোঘ টানে আটকে রেখেছিল প্রতিমুহূর্তে। সম্মোহনী বিদ্যা নিয়ে বলব সফলভাবে লেখা একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, এর আগে তাকরিম ফুয়াদের ‘বৃত্তবন্দি’তে এমনই কাছাকাছি (তবুও পুরো ভিন্ন!) কনসেপ্টের দেখা পেয়েছিলাম, বলতে বাধ্য হচ্ছি, দুটোই নিজ কাহিনী আর এণ্ডিংয়ের দিক থেকে অনন্য। তবে বৃত্তবন্দি পুলিশ প্রসেডিওরাল ও স্টোরি বেইজড আর বাবু ভাইয়ের বইটা টপিকবেইজড(সম্মোহনীবিদ্যা)। বইটার চরিত্রায়ন এত পার্ফেক্ট দিমেন্তিয়া না পড়েও দানিয়াল চরিত্রটাকে উপলব্দি করছিলাম। প্রতি মুহুর্তে সামনে কী হতে পারে আঁচ করতে পারছিলাম, তাই মনে হচ্ছি গড়পড়তা মানের সুখকর পাঠ-অনুভূতি হবে। তবে শেষ এণ্ডিংটা, বিশ্বাস করুন সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! এখনো বুঝে উঠতে পারিনি! এমন এণ্ডিং অপ্রত্যাশিত ছিল, ক্ষণিকেই সব ভুলিয়ে আতঙ্ক চাপিয়ে দিয়েছে যেন গল্পে। আমি আবার পড়ব, বারবার পড়ব, এবং এণ্ডিংয়ের মর্ম উদ্ধার করবই( উদ্ধার করলে এডিট করে জানিয়ে দিব এণ্ডিং উপলব্ধির পরের অনুভূতি)। এই অপ্রত্যাশিত এণ্ডিংয়ের জন্যে বইটা অনেকদিন মনে থাকবে। শত ঘটনার ধার না ধেরে কেবল একটা দৃশ্যপট যে কোনো চরিত্রের অন্ধকারতম দিক প্রকাশ করে গল্পের আবহ-ই বদলে দিতে পারে, এই বই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
(এটা রিভিউ নয়, পাঠপ্রতিক্রিয়া। বইয়ের সমৃদ্ধ কাহিনীর সম্পূর্ণটা উপলব্দি না করে রিভিউ দেয়া অনুচিত আমি মনে করি)
ডার্ক সাইকোলজি, ভায়োলেন্স এবং গোর। প্রথম পার্টের প্রধান তিনটি এলিমেন্টই মিসিং এখানে। সোজা কথায়, "অ্যাবসেন্টিয়া" পড়ে পাঠক "দিমেন্তিয়া" থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদ পাবে।
প্রথম বইয়ের মতো এটাতেও রয়েছে চমৎকার একটি প্লট এবং গতিশীল স্টোরি টেলিং। টুইস্ট শ্বাসরুদ্ধকর না হলেও, খারাপ ছিলনা। সাইকোলজি এবং হিপনোটিজমের ব্যাপারে অনেক তথ্য দিয়েছেন লেখক।
প্রথম বইয়ের তুলনায় খাপছাড়া বাক্যগঠন, টাইপিং মিস্টেক এবং বানান ভুল এখানে অনেক কম। ভুল-ত্রুটি যা একটু আছে সেগুলো সহজেই ইগনোর করা যায়। প্লটের ওপর কোনো মেজর ইফেক্ট ফেলে না সেগুলো। (অন্তত আমার চোখে কোনো মেজর মিস্টেক ধরা পরেনি এবার।)
পরিশেষে, লেখকে ধন্যবাদ আবারও সুন্দর একটি বই আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।
এরকম বই-ই তো আমি পড়তে চাই,কোনো বিরক্তি ছাড়াই একটানে ৩০০+ পেজের বই পড়া আমার জন্যে এত সহজ না, আমি ১২০পেজ পর্যন্ত একটানে পড়ার মানুষ। আর এই বই ৩৩৪ পেজ পর্যন্ত শুধু টানতেই থাকলো,টানতেই থাকলো।
রোমান্টিক বইয়ের মধ্যে ডুবে ছিলাম প্রায় ২ মাস,হঠাৎ করেই থ্রীলার বই ধরে পড়ে ফেলা মোটেও সহজ কথা না(আমার জন্য)
আর এই বইটা পড়ার সময় তো কয়েকটা পেজ ২ বার পড়া লেগেছে বুঝার জন্য।তাও কোনো বিরক্তি নাই!শেষ না করে উঠার উপায় নাই।বইটা শুধু টেনে নিয়ে যাবে আবার চমক দিতে থাকবে।
শেষের ২ পেজ পড়ে মনে হলো হয়তো সিরিজের ৩ নম্বর বইটা(...
দেড়মাস বিদেশে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান সদ্য চালু হওয়া অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস করে ফিরবার সময় জানতে পারে তার কলিগ বিহেভিয়ারাল সাইকোলজিস্ট মোস্তফা জামান আত্মহত্যা করেছে। দেশের অন্যতম একজন সাইকোলজিস্ট, মানুষের মন সারানো যার কাজ, সেই কেন আত্মহত্যা করেছে এই নিয়ে চিন্তা করতে করতে আব্দুল মান্নান জানতে পারেন তার আরেক সহকর্মী দিদারুল ইসলামও কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছিল।
পরপর দু'জন মনোবিদের আত্মহত্যা কি কাকতালীয়, নাকি সেটা কোনো সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? বদ্ধ ঘরের ভেতর কিভাবেই বা হত্যা করবে খুনি, আর সেটা যদি নাই হয় তাহলে প্রত্যেকটা মৃত্যু স্থানে একইরকম ফিনিক্স পাখির পেপারওয়েট পাওয়া যাচ্ছিল কেন? বিষয়টা নিয়ে মান্নান সাহেব একটু ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে জানতে পারেন, ঠিক একইভাবে গত এক বছরের মধ্যে সারা দেশের বেশ কয়েকজন মনোবিদ আত্মহত্যা করেছে, এবং সেখানে পাওয়া গিয়েছে একইরকম ফিনিক্স পাখির পেপারওয়েট।
তবে কি এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ? মান্নান সাহেব বিষয়টা জানালেন তার পরিচিত পুলিশ অফিসার দানিয়ালকে। দানিয়াল, দেশের প্রথম সিরিয়াল কিলার 'ভ্যালেন্টাইন কিলার'কে আটকে পাকড়াও করে যে গোয়েন্দা পুলিশ হিসেবে পেয়েছিল সুখ্যাতি। পরবর্তীতে সে সি.আই.ডি. আর সদ্য প্রতিষ্ঠিত পি.বি.আই. এ গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করলেও এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে সততার পরিচয় দেওয়ায় তাকে পেতে হয়েছিল অপমানজনক ডিমোশন। বর্তমানে সে আবার পূর্বের কলাবাগান থানায় ওসি পদে ফিরে আসে।
শ্রদ্ধেয় আব্দুল মান্নানের অনুরোধে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে গিয়ে দানিয়াল টের পাই এক অদৃশ্য ছায়াশ্বাপদের অস্তিত্ব। মরীচিকার মতো রহস্যময় এই ঘাতক নিজের কাজ করে যাচ্ছে পর্দার অন্তরাল থেকে। কি তার উদ্দেশ্য, কোন উপায়েই বা সে করছে এসব? এই খুনিকে আটকানোর জন্য আবার তৈরি করা হলো টাস্কফোর্স। কিন্তু এবারের প্রতিপক্ষ গতবারের মতো কোনো নৃশংস উন্মাদ নয়, বরং খুবই ঠান্ডা মাথার একজন যে কিনা তার কাজে ব্যবহার করে আসছে মানব ইতিহাসের এক অন্যতম নিষিদ্ধ জ্ঞান। শেষ পর্যন্ত কি হয় তা জানতে পড়তে হবে এম. জে. বাবুর 'অ্যানার্কিস্ট' সিরিজের জনপ্রিয় ও প্রশংসিত বই 'অ্যাবসেন্টিয়া'।
এর আগে 'অ্যানার্কিস্ট' সিরিজের ১ম বই 'দিমেন্তিয়া' পড়তে গিয়ে খুব হতাশ হয়েছিলাম, তাই এই বইটা থেকে এক্সপেকটেশন একটু কম রেখেছিলাম। কিন্তু বইটা পড়তে গিয়ে একটু অবাক হলাম, কারণ লেখক প্রায় সবক্ষেত্রেই 'দিমেন্তিয়া' থেকে তুমুল উন্নতি করেছে। প্রথমে গল্প নিয়েই বলি, খুব যে আউট অব দ্য বক্স তা নয়, তবে দিমেন্তিয়ার মতো বেশী সাদামাটা নয়, সেই তুলনায় কিছুটা ইউনিকই বলা যায়। লেখক যেভাবে একটা বিশেষ টপিককে ভিত্তি করে প্লটটা বানিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। আর তাতে সিরিয়াল কিলার, পুলিশ প্রসিডিওর, মাইন্ড গেম, চরিত্রগুলোর পুরনো পাপভিত্তিক নানা টুইস্ট দিয়ে গল্পটাকে লেখক বেশ ভালোভাবেই গড়েছে লেখক ।
আগেই বলেছি লেখকের সাবলীলভাবে গল্প বলার সহজ জাত দক্ষতা আছে, এই বইয়ে তা আরও পরিপক্কভাবে প্রকাশ পাই। সেইসাথে বর্ণনাভঙ্গির দূর্বলতাও এই বইয়ে অনেকটাই কেটে গিয়েছে। তাই লেখনীকে মেদ বিহীন বলা যায়, যা পাঠককে বইয়ের সাথে আটকে রাখতে সক্ষম। এইজন্য চরিত্রায়নও মোটামুটি ভালো হয়েছে। লেখকের করা প্রতিটি চরিত্রের গঠন চলনসই হয়েছে। এরমাঝে দানিয়াল চরিত্রটি এই বইয়ে ভালোমতোই বিকশিত হয়েছে। গল্পের ভিলেইন চরিত্রটি স্টিরিওটাইপের হলেও ভালোই ছিল।
দিমেন্তিয়ায় তদন্তকার্যে বিস্তর প্লটহোল ছিল, সাথে গতানুগতিক গল্পকে অযথা জটিল করতে গিয়ে লেখক অনেক দূর্বল করে তুলেছিল সেটাকে। এই বইয়ে সেই ক্ষেত্রেই লেখক সবচেয়ে বেশী উন্নতি করেছেন। গল্পে ভালোই রহস্য ছিল, সেই রহস্যকে সামনে রেখে দানিয়াল আর দলের করা ইনভেস্টিগেশনগুলো ছিল উপভোগ্য। বরাবরের মতো বইয়ের শেষ দিকে কাহিনী জটিল করে টুইস্ট দিয়েছেন লেখক, তবে সেটা দিমেন্তিয়ার মতো বিরক্তিকর হয় নি। হয় নি 'পিনবল' বইয়ের মতো আরোপিতও। বরং গতানুগতিক হলেও কিছু ভালো মানের টুইস্ট ছিল এতে।
সেই সাথে গল্পের নানা বিষয়গুলোর উপর লেখক বেশ পড়াশোনা করে আলোচনা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে আবার প্রোটাগনিস্ট অ্যান্টাগনিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পে রেখেছে ধর্মীয় জ্ঞান আর ডার্ক দর্শন। আর শেষে একটা বড় ক্লিফ হ্যাঙ্গার আছে, সেটা সিরিজের পরবর্তী বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগায়। খারাপের মধ্যে বললে দিমেন্তিয়ার অনেক অসঙ্গতি এই বইয়েও রয়েছে। মাঝে মাঝে লেখক বইয়ের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছে একই দৃশ্যের, কাহিনীর পুনরাবৃত্তি করে। সেইসাথে গল্পের মূল কনসেপ্টটা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক মাত্রাতিরিক্ত ইনফো ডাম্পিং করেছে।
তথ্যগুলো যদি গল্পের প্রয়োজনে আসতো, ভালোভাবে উপস্থাপন করা হতো তাহলে সমস্যা হতো না। কিন্তু উইকিপিডিয়া পেজের বাংলা লেখার মতো করে তথ্য গল্পে ঢোকানো হয়েছে, যার অনেক কিছু না থাকলেও তেমন একটা সমস্যা হতো না, ফলে এটা অনেক জায়গায় বিরক্তির সৃষ্টি করে। শেষদিকে কাহিনী জটিল করে একগাদা টুইস্ট দিতে গিয়ে লেখক এবারও কিছু প্লট হোলের সৃষ্টি করেছে। সেইসাথে সিরিয়াল কিলারের মোটিভটা তেমন একটা ভালো হয় নি। সবমিলিয়ে থ্রিলার বই হিসেবে 'অ্যাবসেন্টিয়া'কে ভালো বলবো। কিছু সমস্যা আছে, তবে প্রথম বইয়ের তুলনায় লেখকের উন্নতি চোখে পরার মতো। আশা করি সিরিজের পরের বইটা সেসব অসঙ্গতি কাটিয়ে আরও ভালো হয়ে উঠবে।
বই : অ্যাবসেন্টিয়া লেখক : এম. জে. বাবু প্রকাশনী : ঈহাপ্রকাশ পৃষ্ঠা : ৩৩৬ মুদ্রিত মূল্য : ৫২০ টাকা
গল্পবাঁক -------------------
দেড় মাসের ট্যুর দিয়ে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতিষ্ঠিত অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দিনই দূর্ঘটনার মুখোমুখি হলেন ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট আব্দুল মান্নান। বিভাগের একজন মনোবিদ মোস্তফা জামান নিজ অফিস কক্ষে করেছেন আত্মহত্যা। একজন সিনিয়র প্রফেসর ও মনোবিদ নিজেই আত্মহত্যা কেন করবেন এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যক্তিগতভাবেই হালকা তদন্তে নামলেন আবদুল মান্নান সাহেব। কিন্তু এরপরেই বেরিয়ে এলো চমকপ্রদ সব তথ্য। এই একজনই শুধু নয়, ঢাকা চট্টগ্রাম মিলিয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন নিজের বাসায় বা অফিসে, এবং প্রত্যেকেই ছিলেন মনোবিদ! আত্মহত্যাই ঘটছে নাকি সবটাই সাজানো? ডাক পড়লো সাবেক পিবিআই অফিসার এবং ভাগ্যের জেরে বর্তমানে তিন মাস ধরে কলাবাগান থানার ওসি পদে বসে থাকা দানিয়ালের।
শ্রদ্ধেয় প্রফেসরের অনুরোধ ফেলতে পারলো না দানিয়াল, খতিয়ে দেখতে শুরু করলো আত্মহত্যার কেসগুলো। কিন্তু আসলেই কী এগুলো আত্মহত্যা? কি ঘটছে দুই বছর ধরে গোপনে যে কারণে এতজন মনোবিদ আত্মহত্যা করলেন? কেন পোস্টমর্টেম-এ প্রতিটি লাশের শরীরেই পাওয়া গিয়েছে একই ড্রাগের উপস্থিতি? আত্মহত্যার কিছু দিন আগে কেন সকলেরই আচরণে ঘটেছিল পরিবর্তন?
আত্মহত্যাই কী ঘটছে প্রতিবার নাকি খুন করা হচ্ছে মনোবিদদের? ঘাড়ের পেছনে শীতল শিহরণ বয়ে গেল দানিয়ালের এক বছর আগের সিরিয়াল কিলিং কেসের কথা মনে করে। আবার কী আগমন ঘটেছে অদৃশ্য কোনো শত্রুর?... নাকি পুরনো কেউই...!!
পাঠক, এত সব প্রশ্নের জবাব পেতে হলে বসে পড়ুন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার "দিমেন্তিয়া"র দ্বিতীয় কিস্তি "অ্যাবসেন্টিয়া" নিয়ে। নেমে পড়ুন দানিয়ালের সাথে আরেকবার অদৃশ্য শত্রুর বিরূদ্ধে দুর্বার লড়াইয়ে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া ---------------------------- প্লট বেশ ইন্টারেস্টিং। দেশজুড়ে মনোবিদরা আত্মহত্যা করছেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মনে হলেও সকলের দেহে একই ড্রাগস্ পাওয়া যাচ্ছে, পায়ের বুড়ো আঙুলে ক্ষতও দেখা যাচ্ছে সকলেরই। আর তার থেকেও বড় প্রমাণ হচ্ছে সবগুলো মৃতদেহের পাশেই পড়ে আছে অদ্ভুতদর্শণ এক পেপারওয়েট যার ভেতরে একটা ফিনিক্স পাখির প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। এটা কি নিছক আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু ? প্লট অনেকটা লকড্ রুম মিস্ট্রির মত। আর ফিনিক্স পাখির রহস্যটা ই বা কী? কোন ফিনিক্স আবার এতদিন পরে নিজের পূণর্জন্ম ঘটাচ্ছে তাহলে? প্লট ধীরে ধীরে জটিল হয়েছে এবং শেষমেষ জটিলতর হয়ে সমাপ্তি ঘটেছে। চরিত্রায়ন নিয়ে বলতে হলে বলব মূল চরিত্র দানিয়াল যথেষ্ট ডেভেলপড্ ছিল। দিমেন্তিয়াতে এই চরিত্রটির নাজুকভাব অ্যাবসেন্টিয়াতে অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন লেখক । অন্যান্য চরিত্রগুলো যেমন আব্দুল মান্নান চরিত্রটিও বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে । অন্যান্য পার্শ্বচরিত্রগুলো মোটামুটি ভালোই ডেভেলপড্ ছিল। ভাষাশৈলী নিয়ে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বইটির কোথাও কোথাও ভাষাশৈলী খুবই ভালো, আবার কোথাও সেটা বেশ ভঙ্গুর। বিশেষত প্রথম চ্যাপ্টারটা অনেকটাই কাব্যিক হয়ে গিয়েছে। ড্যান ব্রাউনীয় ধাচ এসে গিয়েছে কিছুটা। তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি প্রথম অধ্যায়ের বিল্ডাপ ঠিক থাকলেও ভাষাশৈলী আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা একটু পরে করছি। তবে ধীরে ধীরে লেখক সেটা ওভারকাম করেছেন। অনেক দিমেন্তিয়ার মতই। স্টোরিটেলিং দিমেন্তিয়ার থেকে ফার বেটার স্বীকার করতেই হবে। দিমেন্তিয়ার ত্রুটিগুলো এই বইতে লেখক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। গল্প বলার ধরণ , গল্পের বুণন সবকিছু ঠিকঠাক ই লেগেছে। গল্প বেশ গতিশীল ছিল - এটা একটা অন্যতম ভালো দিক। শুরুতেই লেখক সরাসরি গল্পে প্রবেশ করেছেন। সেজন্য ন্যূনতম সময়টুকু ই নিয়েছেন তিনি। এটা বেশ ভালো লেগেছে। গল্পের পরিণতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আপাতত ভালো দিকটা বলছি ; মন্দটা পরে আলাপ করা যাবে। ফিনিশিং যারপরনাই ভালো। ফিনিশিং এর জন্য লেখক হোমওয়ার্ক বেশ ভালোমতন ই করেন সেটার প্রমাণ তার পূর্ববর্তী বইতে (দিমেন্তিয়া, ভ্রম) বেশ কয়েকবার পেয়েছি। এখানেও একই ব্যাপার। ফিনিশিং বেশ ভালো এবং লজিক্যাল। যদিও বরাবরের মত এক্সপ্লেনেইশনে যাননি লেখক পুরোপুরি । তবু কিছু উত্তর অজানা রাখাটা মন্দ নয়। পাঠকের ভাবনার জায়গা তৈরি হয় তাতে । এছাড়া ঈহাপ্রকাশের পৃষ্ঠার মান, বাঁধাই সবকিছু ছিল চমৎকার । আদনান আহমেদ রিজনের করা প্রচ্ছদটি বেশ ভালো লেগেছে আমার। ডিটেইলিং ছিল বেশ।
● এই বইতে সবকিছু ছাপিয়ে আমার যেটা ভালো লেগেছে যা সেটা হল দানিয়াল চরিত্রটির বিল্ডাপ। মূল চরিত্র হিসেবে দিমেন্তিয়াতে সে বেশ নির্জীব ই ছিল বটে। কিন্তু এই বইতে সে ছিল রীতিমত প্রাণবন্ত ও স্ট্রং। আর যেটা বেশি ভালো লেগেছে তা হল লেখক প্লট ���্রাইভ করে গিয়েছেন । তাই গল্পের ছন্দপতন খুব বেশি ঘটেনি।
অনেক তো ভালো দিক নিয়ে আলাপ হল। এবার বইটার মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক।
পুরো বইজুড়ে প্রুফজনিত ত্রুটি ছিল চোখে পড়ার মত। ব্যাকরণগত ভুল ছল অনেক। এমনিতে প্রথম চ্যাপ্টারের কাটখোট্টা ভাষাশৈলীতে পাঠকমাত্রই ভ্রু কুঁচকে তাকাবেন , তার সাথে যুক্ত হয়েছে ব্যাকরণজনিত ভুল। এগুলো নিয়ে কিছু বলা যাক:
১। প্রথম পৃষ্ঠায় ধোঁয়াকে তুলনা করা হয়েছে বিভীষিকার সাথে। উপমার ভুল প্রয়োগ। ২। আবারো প্রথম পৃষ্ঠা। 'আকাশের পানে'- এখানে আকাশ শব্দটার সাথে বিভক্তি সম্ভবত যুক্ত হবেনা আমি যতদূর জানি। ৩। পৃষ্ঠা নম্বর ১১ - পাশাপাশি তিনটি বাক্য শেষ হয়েছে দাঁড়ালো, দাঁড়ালো, থামলো - এভাবে। এটা একটু দৃষ্টিকটু দেখায়। যৌগিক বাক্য আনা যেত এখানে। পাশাপাশি বাক্যে একইরকম শব্দের রিপিটেশন দৃষ্টিকটু ই বটে। ৪। আবারো পৃষ্ঠা নম্বর ১১ - লেখা আছে 'একটা পুলিশের গাড়ি' - ব্যাকরণগত ভুল। ঠিক সিকোয়েন্স হবে 'পুলিশের একটা গাড়ি' ।
আমি বিস্তারিত তে যাচ্ছি না আর। তবে এটুকু বলছি পৃষ্ঠা নম্বর - ৩৬, ৫২, ৫৭, ৬৯, ৭০, ১৩১, ২১৬ , ৩০১, ৩২৯ এগুলোতে কারেকশন(ব্যাকরণগত/বানান) করার জায়গা আছে। আমি খুব বেশি সিরিয়াসলি বইটার কাঁটাছেঁড়া করিনি। একবার স্বাভাবিক দৃষ্টিতে পড়েছি তাতে যা খুত চোখে পড়েছে সেগলো তুলে ধরেছি মাত্র। আশা করি এগুলো পরবর্তী মুদ্রণে ঠিক করে নেওয়া হবে। লেখকের বর্ণনাভঙ্গি কিছু কিছু জায়গায় দৃষ্টিকটু লেগেছে। বিশেষত একনাগাড়ে জ্ঞানগর্ভ তথ্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে দেওয়া হয়েছে দেখে খারাপ লাগলো। অল্প অল্প করে সেগুলো বললে হয়তো আরো ভালো হত। যদিও সেগুলো প্রাসঙ্গিক ছিল সবই তবু একনাগাড়ে বলে গেলে তা অবশ্যই বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়।
শেষের কথা ----------------------- অ্যানার্কিস্ট সিরিজের প্রথম বই দিমেন্তিয়া ছিল গতবছরের অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত বই। আমি নিজেও রিভিউ করেছিলাম আগের বইটির। আগের ত্রুটিগুলো লেখক কাটিয়ে উঠেছেন এই বইতে সেটা দেখে ভালো লাগলো। তবু কিছু ত্রুটি রয়ে গিয়েছে। আশা করি সেটাও লেখক শীঘ্রই ওভারকাম করবেন তার পরের বইয়ের মাধ্যমে। তার পরবর্তী বইয়ের জন্য শুভকামনা রইল।
অ্যাবসেন্টিয়াও সাথে সাথে পরে ফেলেছি। হিপনোটিজম বেসড বই টেকনিকাল ইস্যুতে যাওয়া আমার কম্য নয় তবে এই বইয়ের বেলাতেও ডিটেইলিং এ কিছু খামতি চোখে পড়েছে। দিমেন্তিয়ার চেয়ে অ্যাবসেন্তিয়া অনেক অনেক কমপ্লিকেটেড। এঞ্জয়েবল হইতে নিয়েও হইল না আরকি।
অফটপিক প্রশ্ন
২০০৯ সালে নীলক্ষেত টু ধানমন্ডি রিক্সাভাড়া কত ছিল?
নাহ্ থ্রিলার জন্রারে আরেকটু রেস্পেক্ট করতে হবে। এই কয়েকদিন আগেও থ্রিলার জন্রার কিছু একটা ধরলেই রিডার্স ব্লকে চলে যেতাম। আর ইদানিং থ্রিলার জন্রা দিয়া রিডার্স ব্লক কাটাতে হচ্ছে। আত্মপক্ষ সমর্থন হিসেবে বলা যায়, এক চেস্টনাট ম্যান আর সাইলেন্ট পেশেন্ট ছাড়া হাতে নেওয়ার অন্য কোন বিদেশি থ্রিলারই তেমন ভাল লাগেনি। কিন্তু বাংলা ভাষাতেই যে কত মৌলিক রত্ন লুকিয়ে আছে তার নমুনা জাদুকর, চন্দ্রাহত, শতী সহাস্রননা পড়ার পর কিঞ্চিৎ পেয়েছিলাম। এরপর এই এনার্কিস্ট সিরিজ হাতে নেওয়া। দিমেন্তিয়া পড়ে খুবই ভাল লেগেছিলো, সেই সাথে সিরিজের দ্বিতীয় বই অ্যাবসেন্টিয়ার উপর এক্সপেকটেশন ও বেড়ে গিয়েছিলো। এক্সপেকটেশন ফুলফিলড। শেষের টুইস্ট যদিও এক্সপেক্টেড ছিলো, তারপরেও কাহিনীর এক্সিকিউশন অসাধারন! অসাধারন!! অসাধারন!!! থার্ড বই ইন্সেন্টিয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে। অ্যাবসেন্টিয়া এক্সপেক্টেশন আবার বাড়িয়ে দিয়েছে। . থ্রিলার জন্রার এইটাই মেবি প্রথম পাঁচতারা প্রাপ্ত বই