গল্পটা একজন ডিটেকটিভের; যিনি হতে চেয়েছিলেন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান, কিন্তু নিয়তির পালা-বদলে আজ তিনি জাঁদরেল পুলিশ অফিসার। গল্পটা একজন লেখকের; যিনি প্রিয়জনকে হারানোর স্মৃতি ভুলতে কলম ধরেছিলেন, কিন্তু ভাগ্যচক্রে আজ তিনি বেস্ট সেলার থ্রিলার লেখক। গল্পটা এক সাইকোপ্যাথের; যে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই নৃশংসভাবে খুন করে ভাগ্যবঞ্চিত শিশুদের। তিনজন মানুষের গন্তব্য একসূত্রে গেঁথে দিলো "গাল্লি বয়" নামে একটি উপন্যাস। একের পর এক রহস্য, একটা সমাধান হতেই উঁকি দিচ্ছে আরো দুটো! সব রহস্যের সমাধান হবে একজনকে খুঁজে পেলে। তার আসল নাম কেউ জানে না, ছদ্মনাম- প্রহেলিকা।
নাজিম উদ দৌলার জন্ম ১৯৯০ সালের ৪ নভেম্বর নানাবাড়ি কেরানীগঞ্জে। পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলায় হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার আলো বাতাসের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে বেশ কয়েক বছর বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি করেছেন।বর্তমানে দেশের প্রথম সারির প্রডাকশন হাউজ আলফা আই-এ ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। লেখালেখির চর্চা অনেক দিনের। দীর্ঘসময় ধরে লিখছেন ব্লগ, ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে। ২০১২ সালে প্রথম গল্প “কবি” প্রকাশিত হয় কালান্তর সাহিত্য সাময়িকীতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম থ্রিলার উপন্যাস “ইনকারনেশন”। একই বছর আগস্টে প্রকাশিত হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার “ব্লাডস্টোন” তাকে এনে দেয় বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। এ পর্যন্ত ৬টি থ্রিলার উপন্যাস ও ৩টি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখায় মনোনিবেশ করেছেন। সাম্প্রতিককালে তার চিত্রনাট্যে নির্মিত "সুড়ঙ্গ" সিনেমাটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। শান, অপারেশন সুন্দরবন, দামাল, বুকের মধ্যে আগুন, দ্যা সাইলেন্স, লটারি-এর মতো বেশি কিছু আলোচিত সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। অবসর সময় কাটে বইপড়ে, মুভি দেখে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে। সদালাপী, হাসি খুশি আর মিশুক স্বভাবের এই মানুষটি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর বাংলাদেশের, যেখানে প্রত্যেকটি এক হয়ে মানুষ দেশ গড়ার কাজে মন দেবে।
এসব গল্প ফেসবুকের পোস্টেই মানায়। দুই মলাট এর সত্যিকারের বই তে মানায় না। নড়বড়ে গল্পের বুনন আর খাপছাড়া সংলাপ, সেই সাথে খুবই দূর্বল লেখনী। ক্লাইম্যাক্স ও ভয়ানক অগোছালো।
লেখকের পড়া প্রথম বই ছিল এইটা। পরের কোনো বই পড়ার সাহস অনেকটাই চলে গেছে৷
বুঝলাম না এইরকম ফেসবুক পোস্টকে বই আকারে বের করার জন্য প্রকাশক লেখককে জোড় জবরদস্তি কেনো করলো? প্রকাশকের নিজের আগে পাঠক সত্ত্বা বৃদ্ধি করা উচিত। যা পাই তাইই বের করি, সবই ভালো; এরকম মানসিকতা থাকলেই এ ধরণের গল্প বই আকারে বের হয়। বোধহয় এক ঘন্টাও লাগে নাই বইটা শেষ করতে। অত্যন্ত ফ্লাট লেখনশৈলী। অথচ এর আগে লেখকের ব্লাডস্টোন পড়েছিলাম, সেটা বেশ ভালো লেগেছিলো।
'প্রহেলিকা' আমার পড়া নাজিম উদ দৌলার প্রথম বই। ভূমিকাতে পড়লাম এটাও নাকি ফেসবুকেই লেখা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, ফেসবুকের অন্যান্য গল্পের তুলনায় এটা যথেষ্ট ভালো ছিল। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, ফেসবুকের কোনো গল্পই একটা নির্দিষ্ট সীমার বেশি ভালো হতে পারে না। কেন? প্রহেলিকার গল্প মোটামুটি ইন্টারেস্টিং। একটা সিরিয়াল কিলার পথশিশুদের খুন করছে, সেটাও একজন বিখ্যাত লেখকের বইয়ের আদলে। এরকম একটা বই আগেও পড়েছিলাম, সেটা আমার খুব প্রিয় বই। কিন্তু এখানে বিষয়টা কেনো যেন জমলো না এরকম একটা গল্প কিন্তু তবু মনে হয়েছে যেন আহামরি কিছুই হয়নি। তাছাড়া একটা চরিত্রও মনে রাখার মতো ছিল না। আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে মনসুর হালিমের জন্য। এরকম একটা গল্পের মূল চরিত্র স্ট্রং, না হলে মানায় না, অথচ এর মধ্যেই মনসুরের সব কাজ ভুলে বসে আছি। আরে অযথা জাঁদরেল তুখোড়, একটাও আনসলভ কেস নেই এসব ট্যাগ না লাগিয়ে তার কারণও দেখাতে হবে নাকি? সবমিলিয়ে গল্প ভালো ছিল কিন্তু উপস্থাপনটা জমেনি, সাদামাটা লেগেছে।
'সাইকো কিলার' শুনলেই মনে ভয়ের আবেশ সৃষ্টি হয়। মনের কল্পপটে ফুটে উঠে ভয়ানক কিছু দৃশ্য। কিন্তু কেউ কি রাতারাতি কিলার বনে যায়? অন্ধকার ভয়ানক অতীত কি এর জন্য দায়ী নয়...
● কাহিনি সংক্ষেপ —
ঢাকার বুকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এক নৃশংস খুনি। একের পর এক ঘটে চলেছে হত্যাকান্ড, অসহায় পথশিশুদের। এত নির্দয়ভাবে খুন করা হচ্ছে যেন চেহারা চেনা দুস্কর।
খুনির দৌরাত্ম্যে যখন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট অতিষ্ঠ তখন জাদরেল পুলিশ অফিসার মনসুর হালিমের কাধে পড়ে সাইকো কিলারকে ধরার দায়িত্ব। ভিক্টিমদের পাশে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জিনিস। এসব ক্লু নাকি খুনির পাতানো ফাঁদ। প্রশ্নের বেড়াজাল যখন জাকড়ে ধরতে শুরু করেছে তখন আচমকাই পাওয়া যায় এক অদ্ভুত তথ্য। খুনের বর্ণনার সাথে মিলে যাচ্ছে "গাল্লি বয়" বইয়ের কাহিনি। কিন্তু লেখক নিয়াজের মতে ফাঁসানো হচ্ছে তাকে। কিন্তু কে সে? প্রহেলিকাই বা কে? লেখক ও খুনগুলোর সাথে তার কি সম্পর্ক?
● পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —
দেড় থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে পড়ে ফেলার মতো একটি বই। গল্পের শুরু একটি কিডন্যাপিং দিয়ে। মুখোশ, কালো আলখেল্লা পড়া আগন্তুক হঠাৎ উধাও হয়ে যায় একটি বাচ্চাকে সাথে নিয়ে। তারপর কাহিনি চলে যায় পাঁচ দিন আগে মূল কাহিনিতে।
লাশের বর্ণনা আর খুনির ক্লু ফেলে যাওয়া ব্যাপারের সাথে কিছুদিন আগের দেখা একটি মুভির কথা বারবার মাথায় আসছিলো। খুনির অতীত কাহিনি মুভির সাথে অনেকটা মিলে যায় ; তামিল মুভি "রাতসাসান"। মিল পাওয়ার পর আগ্রহ বেড়ে যায় কারণ মুভি বেশ ভালো লেগেছিল। সাইকো থ্রিলার গল্পের মূল আকর্ষণ থাকে কিলারের উপর। কিলারের দৃষ্টিকোণ দিয়ে ঘটনা জানা এবং খুন হওয়ার সময় কিলার-ভিক্টিম কি ভাবছে এটা নিয়ে স্বভাবতই আগ্রহ কাজ করে। কিন্তু বইয়ে এই বিষয়টা অনুপস্থিত। খুনের সময়কার বর্ণনাও নেয়। বইয়ে কাহিনি যেভাবে বলা হয়েছে তাতে খুনি থেকে নিয়াজ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। কিলারকে নিয়ে গল্প একদম শেষে তাও আবার হঠাৎ করে শুরু হঠাৎ করে শেষ। পড়ে মনে হচ্ছিল লেখক গল্প দ্রুতই শেষ করতে চান।
নিয়মিত থ্রিলার যারা পড়ে তারা সহজেই অনুমান করতে পারবে খুনি কে। গল্পের প্লট খুব একটা স্ট্রং মনে হয়নি।
● লেখনশৈলী ও বর্ণনা —
সহজ সাবলীল লেখনী। গল্পের শুরু চমৎকার ছিল। তবে বেশ কিছু কল্পপটের বর্ণনা পরিষ্কার হয়নি। এক্ষেত্রে বর্ণনা আরও একটু বেশি হলে ভালো হতো। গল্পের সমাপ্তি আশানুরূপ।
● প্রোডাকশন —
বইয়ের পেজ কোয়ালিটি ভালো। তবে বাইন্ডিং কিছুটা দূর্বল ছিল, কিছু পেজ খুলে আসছে। বইয়ের জ্যাকেট আলগা করা এতে পড়তে সুবিধা হয়েছে, খুলে পড়া গেছে। ক্রাউন সাইজ হওয়ার জন্য সহজেই ধরা যায় ইচ্ছে মতো।
● সম্পাদনা এবং বানান —
বইয়ে বানান ও চরিত্রের নামের মধ্যে বেশ ভুলই রয়েছে। বানানের ভুল তাও তেমন সমস্যা করে না কিন্তু নামের ভুলের জন্য বারবার দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছিলাম। পড়ার সময় বেশ বিরক্তই লেগেছে বিষয়টা।
ছোট্ট পরিসরে কীভাবে একের পর এক টুইস্ট দিয়ে হতবাক করতে হয় তা সে দেখিয়ে দিয়েছে। একটা খুদে থ্রিলার নভেলা থেকে যা চাওয়ার সুযোগ আছে তার সর্বোচ্চটাই পেয়েছি। চরিত্রগুলোর ভেতর মনসুরের বাইরে তুলিকে অনেক ভালো লেগেছে। আর ভাবছিলাম, ঈশিতার সাথে মনসুরের কিছু হলে ভালোই হতো। বেচারা অসহায় একজন এএসপি, পুলিশ বলে কি সে মানুষ না?
সতীর্থ প্রকাশনী একেবারেই নতুন, কিন্তু তারা এরই মধ্যে চমৎকার এমবশ/স্পট করা কাভার, ভালো ক্রিম পেপার, ভালোমানের ছাপা, ভেতরে সংযুক্ত অসাধারণ ছবি কোয়ালিটি দিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র একটা অবস্থান তৈরির পথেই আছে। এই বইয়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর হ্যাঁ, প্রকাশকের কাছে অনুরোধ করবো পরবর্তী মূদ্রণে আরেকবার একটু প্রুফ দেখিয়ে নিতে।
বাই দ্য ওয়ে, মনসুরের সাথে এসব কী হয়? বেচারা খুব খারাপভাবে সিচুয়েশনাল আয়রনির শিকার।
এক বসায় পড়ে ফেলার মত ছোট একটা বই। থ্রিলার জনরার এই লেখাট��র প্লট এক সাইকো কিলার, একজন পুলিশ অফিসার, বিখ্যাত একজন লেখক এবং প্রহেলিকা হয়ে থাকা এক রহস্যময় চরিত্রকে নিয়ে এগিয়েছে। ভালই লাগলো। বেশ চনমনে লাগলো। তবে শেষদিকে অনেককিছু একসাথে খুব তাড়াহুড়া করে হয়ে গেলো মনে হলো। অনেকগুলো টুইস্ট দেয়ারও চেষ্টা করেছেন লেখক। কতগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং, তবে অনেকগুলো অতিরিক্ত ও লাগলো বলা যায়।
কয়েকটা লজিক্যাল মিসটেক না থাকলে বইটিকে সাচ্ছ্যন্দেই প্রথম সারির ক্রাইম ফিকশনের তালিকায় ফেলা যায়।তাছাড়া বেশ সুখপাঠ্য বই বলতেই হবে।এবং লেখক পাঠকের জন্য সত্যি ভালোরকম টুইস্ট রেখেছেন। তবে শেষের দিকে গেজ করতে পারছিলাম খুনী কে। যাইহোক, সব মিলিয়ে বেশ ভালো লেগেছে।
এটা নিয়ে নাজিম ভাইয়ের দুইটা বই পড়লাম। বলতে বাধ্য হচ্ছি, তার লেখনি আমার ভাল লাগেনা। ওভারড্রামাটিক লাগে, পড়ার সময় মনে হয় বাংলা মুভির কোনো স্ক্রিপ্ট পড়ছি।
প্লটটা খারাপ না, তবে একদম ইউনিক বা আহামরিও না। বইটা বেশি ছোট কলেবরে লেখা হয়েছে। পড়ে মনে হয়েছে কিছু জায়গা আরেকটু বিস্তারিত লিখলে ভালো লাগতো। নাজিম উদ দৌলার কোনো লেখা আগে পড়িনি। লেখার হাত ভালো উনার। তবে অনেক জায়গায় বড় বেশি নাটকীয় করে ফেলেন যেটা উপন্যাসের সাথে যায় না।
গোয়েন্দা মানেই তাকে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে থাকতে হবে? বিরক্তি নিয়ে তাকাতে বা কথা বলতে হবে? ঠোঁটে বাঁকা হাসিই দিতে হবে? বা অহেতুক কমেডিই করতে হবে?
গোয়েন্দার আশেপাশে যারা থাকবে তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। চমকে উঠবে। অবাক হয়ে যাবে। শক্ত হয়ে থাকবে। হাল ছেড়ে দিবে। কেন? তারপরে কিছু "প্রমাদ গুনলাম" এরকম টাইপের বাংলা লিখতেই হবে?
বইয়ের শুরুতে প্রকাশকের কথা পড়ে মনে হয়েছিলো না জানি কি পড়তে যাইতেছি। শেষ পর্যন্ত এই আশায় ছিলাম আমিও উনার মতো বলে উঠবো, "এরে খাইছে! কী লিখছে এইটা?" (বলসি ঠিকই তবে এক্সপ্রেশন ভিন্ন ছিলো!😒)
ফেসবুকে পড়ার গল্প হিসাবে খারাপ না কিন্তু বই হিসাবে নট আপ টু দ্যা মার্ক।
প্রচুর তাড়াহুড়া করে শেষ হইছে বুঝা যায়। এই তাড়াহুড়া না করলে প্লটটা আরও জমতো বলে আমার বিশ্বাস।
টুইস্ট আমি সব আগে থেকেই বুঝে ফেলছি। যারা প্রচুর থ্রিলার পড়েন তাদের কাছে এসব টুইস্ট দুধভাত লাগবে।
এইবার কিছু পজিটিভ কথা বলি বইয়ের প্রচ্ছদটা সুন্দর হয়েছে। পেইজ কোয়ালিটিও ভালো। ছোট বই তাই ঘন্টাখানেক লাগবে শেষ করতে। লেখাও ঝরঝরে এবং সাবলীল।
আমি বইটার ভূমিকা পড়ে ভেবেছিলাম ছোট প্যাকেট বড় ধামাকা টাইপ কিছু। পড়তে গিয়ে থ্রিলার পড়ছি অথচ থ্রিল বা মজা কিছুই পাচ্ছিনা এমন অবস্থা। উল্টে গল্পের অবস্থা দেখে বিরক্তই হচ্ছিলাম। না সাইকোকে সাইকো মনে হলো, না ডিটেকটিভকে ডিটেকটিভ মনে হলো না। এটা বুঝলাম না ফেসবুক পোস্ট থেকে বই আকারে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা। বইটা পড়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিলো অপ্রয়োজনীয় চমক দিতে লেখক বেশি ব্যস্ত ছিলেন। মনসুর হালিমকে কখনো গোয়েন্দা মনে হচ্ছিলো না। মানে কারো থেকে গোয়েন্দাগিরি শিখতে এসেছে এমন মনে হচ্ছিলো। অপ্রয়োজনীয় কমেডি যোগ করে এই চরিত্রটাকে নষ্ট করেছে। গোয়েন্দা হওয়ার কোন বিশেষত্ব নেই। ওভারঅল কিছুই ঠিকঠাক নেই।
১০০ পৃষ্ঠায় যা একটু কষ্ট করে পেটে ধরে রেখেছিল, বাকিটায় উগড়ে একদম বমি করে দিয়েছে। শেষটা এত বাজে হবে ভাবিনি। খাপছাড়া ছিল পুরো বই, লেখনীও ভালো লাগেনি। পুরো বই অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শেষ করেছি। কিন্তু মনে হচ্ছে এই বছরের সেরা টাইম ওয়েস্ট!
কাহিনি সংক্ষেপঃ ঢাকা শহরজুড়ে শুরু হয়েছে ভয়াবহ সিরিয়াল কিলিং। কোন এক অজ্ঞাত বিকৃতমস্তিষ্ক খুনি একের পর এক খুন কর�� চলেছে। ভিকটিম ১১-১২ বছরের নিম্নবিত্ত বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা। বীভৎসভাবে মাথা ও মুখ থেঁতলে খুন করা হচ্ছে ওদের৷ টোকাই শ্রেণীর এসব বাচ্চাদের একের পর খুনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসলো পুরো পুলিশ বিভাগ।
ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)-এর এএসপি মনসুর হালিম ও তার টিমের হাতে এলো এই সিরিয়াল কিলিংয়ের কেস। ছাত্রজীবনে স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান হওয়ার স্বপ্ন ছিলো ডিটেকটিভ এএসপি মনসুর হালিমের। কিন্তু হয়েছেন ডিবির ইনভেস্টিগেটর। এর আগে বেশ কিছু জটিল কেস সমাধান করার কারণে এই সিরিয়াল কিলিংয়ের কেসটাতেও তার প্রতি ওপরওয়ালাদের অনেক এক্সপেকটেশন। কিন্তু শুরু থেকেই বেশ কনফিউশনে পড়ে গেলো এএসপি মনসুর হালিম।।
দেশের বিখ্যাত থ্রিলার লেখক নিয়াজ আহমেদ। তাঁর নামটাও একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে জুড়ে গেলো সিরিয়াল কিলিংয়ের কেসটার সাথে। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'গাল্লি বয়'-এর অনুকরণেই সাইকোপ্যাথ খুনি একের পর এক বাচ্চাকে খুন করে চলেছে। তবে কি লেখক নিয়াজ আহমেদ নিজেই দায়ী এই খুনগুলোর জন্য?
এএসপি মনসুর হালিম যেন এই কেসটা নিয়ে এক ধরণের চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে লাগলো। তার সামনে উদয় হলো আরো কিছু কানাগলি যার জন্য দায়ী একটাই নাম - প্রহেলিকা। কে এই প্রহেলিকা? কি তার উদ্দেশ্য? আর কতোগুলো খুন হলে মিলবে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর?
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এই সময়ের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক নাজিম উদ দৌলা বিখ্যাত তাঁর 'ব্লাডস্টোন', 'মহাযাত্রা', 'ইনকারনেশন' ও 'মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া' উপন্যাসগুলোর জন্য। 'প্রহেলিকা' তাঁর প্রথম উপন্যাসিকা। এই উপন্যাসিকার কাহিনি একদম নির্মেদ ও বাহুল্যবর্জিত। 'প্রহেলিকা'-তে বেশ আগ্রহোদ্দীপক একটা প্লট নিয়ে কাজ করেছেন নাজিম উদ দৌলা। সিরিয়াল কিলিং এমনিতেও আমার পছন্দের একটা টপিক। আর এই বইটার কাহিনিও আবর্তিত হয়েছে সিরিয়াল কিলিং নিয়েই। সেই সাথে আরো কিছু রহস্যের অবতারণা করেছেন লেখক। যে কারণে পড়তে গিয়ে বেশ উপভোগ করেছি উপন্যাসিকাটা। এক বসায় পড়ে ফেলার মতো কেউ যদি কোন থ্রিলার খোঁজেন, তাঁর জন্য 'প্রহেলিকা' একটা অপশন হতে পারে।
উপন্যাসিকার প্রধান চরিত্র হিসেবে এএসপি মনসুর হালিমকে অতোটাও চৌকস মনে হয়নি আমার। বিশেষ করে শুরুর দিকের ইনভেস্টিগেশনের সিকোয়েন্সগুলোতে তার কর্মকাণ্ড আলসেমি ও বোকামিতে পূর্ণ বলে মনে হচ্ছিলো। এএসপি মনসুর হালিমের চেয়ে সাব ইন্সপেক্টর ঈশিতা ও ক্ষেত্রবিশেষে কন্সটেবল নাহিদকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান ও ডেডিকেটেড মনে হয়েছে এই বইয়ে। 'প্রহেলিকা'-এর একটা অংশে অন্য একটা ফোন থেকে পাসওয়ার্ড পাল্টে দিয়ে ফেসবুক আইডি 'হ্যাক' করার যে ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে তা রীতিমতো অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। কেন এই কথা বললাম, সেটা এই বইটা পড়লেই বুঝতে পারবেন। এই ব্যাপারটাকে একপাশে সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র সময় কাটানোর জন্য 'প্রহেলিকা' পড়লে উপভোগ করবেন।
এবার আসি বানান জনিত কিছু সমস্যায়। বেশ কিছু ভুল বানান চোখে পড়েছে বইটা পড়তে গিয়ে। যেমন, কামরা (ঘর)-কে কামড়া, কর্কশ-কে কর্কষ, হারামজাদি-কে হারামযাদি ও করুণা-কে করুনা লেখা হয়েছে। নাজিম উদ দৌলা-এর গল্প বলার ধরণ চমৎকার। এসব খুঁটিনাটি ব্যাপারে নজর দিলে তাঁর লেখার মান আরো উন্নত হবে।
'প্রহেলিকা'-এর প্রচ্ছদটা বেশ ভালো লেগেছে। কিউট ছোটখাটো সাইজের বইটার বাঁধাই আর কাগজের মানও বেশ ভালো ছিলো। আগ্রহীরা চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন বইটা।
মানুষের ছয়টি রিপুর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো কাম। এই কাম বা কামুকতা কন্ট্রোল করতে পারলে যেমন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ অনেক বেড়ে যায় তেমনই কন্ট্রোল করতে না পারলে ধ্বংস অনিবার্য। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে যত অপরাধ হয় তার কারণ নারী নাহয় সম্পত্তি। আচ্ছা তো এতো ভাষণ দেবার কারণ হলো "প্রহেলিকা"র মূল কাহিনী ষড়রিপুর এই প্রথম রিপু নিয়েই। অন্ধ প্রেম বা ভালোবাসা আমাদের কতটা ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে?
গল্পের শুরু হয় একজন ডিটেকটিভকে নিয়ে। বীভৎস মার্ডার সীনে তার এন্ট্রির মাধ্যমে। শহরে পরপর কয়েকটা বাচ্চা হত্যার কেস সমাধানের দায়িত্ব এএসপি মনসুর হালিমের উপর। তদন্তের এক পর্যায়ে সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ে থ্রিলার লেখক নিয়াজ আহমেদের উপর। কিন্তু পরক্ষণেই নতুন নতুন তথ্য আর টুইস্টের বদৌলতে সন্দেহের তীরে বিদ্ধ হতে থাকে অনেকে। আসলে নিয়াজ আহমেদের বইয়ের হুবহু বর্ণনা অনুযায়ী শহরজুড়ে একেক পর এক কমবয়েসী বাচ্চা খুন করে চলেছে কে? বইয়ের কাটতি বাড়াতে নিয়াজ নিজেই কলকাঠি নাড়ছে নাকি পেছন থেকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্ঠা করছে নিয়াজকে?
প্রকাশকের ভূমিকায় লেখককে বলা হয়েছে টুইস্ট মাস্টার। লেখক এই নামের মর্যাদা রেখেছেন। একের পর এক টুইস্টে কাহিনী এগিয়েছে। একদম শেষ পর্যন্ত ছিলো টুইস্টে ভরপুর। এয়ারপোর্ট নভেলা পড়া হয়নি আগে। এই ক্যাটাগরির বইগুলো সাধারণ হয় ধর তক্তা মার পেরেক টাইপের। কোনো বাহুল্যতা নেই, অতিরিক্ত বর্ণনা নেই। সোজা কাহিনীতে। এদিক থেকে পুরোপুরি সফল। তবে বর্ণনা কম বলে যে গল্পে তা কোনো ইফেক্ট ফেলেছে এমন কিছুনা। কাহিনী দুর্দান্ত ফাস্ট এবং গ্রিপি হওয়ায় এক বসাতেই শেষ করা সম্ভব। আরেকটা লক্ষণীয় ব্যাপার ছিলো প্রোটাগনিস্টের বিচক্ষণতা। মোটামোটি কোনো ক্লু-ই মিস করেননি আমাদের ডিটেকটিভ সাহেব। একটু সাহসের সাথে তুলনা করা যায় আগাথা'র পোয়ারোর সাথে। গোয়েন্দার দক্ষতা উপভোগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিবে।
তবে সম্পাদকের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বইয়ের কিছু কিছু ভুল খুবই চোখে লেগেছে। যেমন ৪৩ নাম্বার পেইজে ডিটেকটিভ তার উপরওয়ালাকে বললো নিয়াজের উপর কোনো মনিটরিং নাই। অথচ দু পেইজ পরেই বলা হলো দু'জন ইনফর্মার লাগানো আছে ওর পেছনে। আবার ৬০ নাম্বার পেইজে প্রথমে বলা হলো তুলি ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে দিছে ফুলিকে কিন্তু কয়েক লাইন পরেই আবার ম্যাডামকে সব জানিয়ে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে। যদি ম্যাডামকে জানিয়ে থাকে আগেই তাহলে আবার সব জানানোর ভয় কেনো? ১১৪ নাম্বার পেইজে ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড চেইঞ্জ করার কথা বলা হয়েছে। এটা মনে হয় সবারই জানা নতুন পাসওয়ার্ড দিতে হলে পুরনো পাসওয়ার্ডও জানা থাকা লাগে। ভালো লেখকের বই পড়ার সময় মনোযোগ এমনিতেই কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ ধরনের মারাত্মক ভুল বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দেয় অনেকটাই। কয়েকটা টাইপিং মিসটেকের পাশাপাশি ১০৭ নাম্বার পেইজে নামজনিত একটা একটা বড়সড় টাইপো আছে। সম্ভবত সুবর্ণা লিখতে গিয়ে রুমন লেখা হয়েছে।
আগেই বলেছি ফাস্ট পেসড নভেলাটি মারাত্মক রকমের পেজ টার্নার। পরবর্তী এডিশনে এই ভুলগুলো ঠিক হয়ে/আরো ক্লিয়ার বর্ণনা নিয়ে আসলে আরো ভালো হবে। হ্যাপী রিডিং।
This entire review has been hidden because of spoilers.
যদিও বইটা সাইকো থ্রিলার জনরায় লেখা, তবে সবাই যেটা বলতে ভুলে যায় তা হল সাইকো থ্রিলারের পাশাপাশি কিছু প্রেমে ব্যার্থ মানুষের গল্প এটি। ব্যার্থ প্রেম+থ্রিল দুটোর স্পর্শ আছে এই বইয়ে। ব্যাক্তিগতভাবে গল্পটি এভারেজ লেগেছে। তবে বইয়ের কোয়ালিটি পছন্দ হয়েছে আমার। পকেট সাইজ থ্রিডি প্রিন্ড, দেখতে ভালই লাগে। পড়ে দেখা যায় বইটি, এভারেজ লাগার কারন হতে পারে আমার ব্যাক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা।
This entire review has been hidden because of spoilers.
মাঝে মাঝে আমাদের রিডিং লিস্টে এমন কিছু বইয়ের দরকার হয়, যেগুলো ‘ভারী ভোজ’ নয়, বরং ‘বিকেলের নাস্তা’র মতো। খুব বেশি চিন্তাভাবনা ছাড়াই গপগপ করে গিলে ফেলা যায়। নাজিম উদ দৌলার ‘প্রহেলিকা’ বইটা আমার কাছে ঠিক তেমনই একটা অভিজ্ঞতার, যা অনেকটা হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর মতো—প্রচণ্ড গতি, কোনো ট্রাফিক নেই, একদম গড়গড় করে শেষ। এক বসায় পড়ে ফেলার জন্য এর চেয়ে আদর্শ বই আর হতেই পারে না। কিন্তু সমস্যা হলো, হাইস্পিডে গাড়ি চালালে যেমন রাস্তার আশেপাশের অনেক সৌন্দর্য মিস হয়ে যায়, এই বইটাতেও ঠিক তাই হয়েছে। গল্পটা আপনাকে দৌড়াতে বাধ্য করবে ঠিকই, কিন্তু দৌড় শেষে যখন থামবেন, তখন মনে হবে—রাস্তাটা বোধহয় আরেকটু মসৃণ হতে পারত, আর কিছু কিছু জায়গায় গর্ত না থাকলে যাত্রাটা হতে পারত পারফেক্ট।
কাহিনি সংক্ষেপঃ ঢাকা শহরের বুকে নেমে এসেছে এক অমানবিক ত্রাস। একজন সাইকোপ্যাথ কিলার রাতের আঁধারে একের পর এক খুন করে চলেছে অসহায় পথশিশুদের। খুন করার ধরনটা এতটাই নৃশংস যে, ভিকটিমদের চেহারা চেনারও উপায় থাকছে না—ইট বা পাথর দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হচ্ছে মাথা। পুলিশ প্রশাসন যখন দিশেহারা, তখন এই জট খোলার দায়িত্ব পড়ে ডিবি’র জাঁদরেল অফিসার এএসপি মনসুর হালিমের কাঁধে। মজার ব্যাপার হলো, এই সিরিয়াস পুলিশ অফিসারটি একসময় স্বপ্ন দেখতেন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান হওয়ার! কিন্তু ভাগ্যের ফেরে এখন তাকেই সামলাতে হচ্ছে শহরের সবচেয়ে বীভৎস কেস। তদন্ত করতে গিয়ে মনসুর হালিম আবিষ্কার করেন এক হাড়হিম করা তথ্য। খুনি কোনো সাধারণ পরিকল্পনা করছে না, বরং হুবহু অনুকরণ করছে দেশের বিখ্যাত থ্রিলার লেখক নিয়াজ আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘গাল্লি বয়’-এর কাহিনি! বাস্তবের খুন আর বইয়ের পাতার কাল্পনিক খুনের এই অদ্ভুত মিল পুলিশকে ধাঁধায় ফেলে দেয়। লেখক নিয়াজ কি তবে নিজেই এই খুনের নেপথ্যে? নাকি তাকে ফাঁসানো হচ্ছে? এর মধ্যেই উদয় হয় ‘প্রহেলিকা’ নামের এক রহস্যময় অনলাইন আইডেন্টিটি, যে কি না লেখককে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে লেখকের বাড়িতে উদয় হয় সন্দেহজনক এক গৃহকর্মী। সব মিলিয়ে, তদন্তের প্রতিটি মোড়ে অপেক্ষা করছে নতুন প্রশ্ন। কে এই প্রহেলিকা? আর এই খুনের মিছিল থামবে কোথায়?
পাঠ প্রতিক্রিয়া; বইয়ের শুরুতে কিডন্যাপিং আর মুখোশ পরা আগন্তুকের দৃশ্যটা বেশ গা ছমছমে। পড়ার সময় বারবার আমার তামিল মুভি Ratsasan-এর কথা মনে পড়ছিল। যারা ওই মুভিটা দেখেছেন, তারা হয়তো খুনির পেছনের গল্পের সাথে কিছুটা মিল খুঁজে পাবেন। এই সিনেম্যাটিক ফ্লেভারটা বেশ উপভোগ্য। তবে বইটা শেষ করে আমার প্রথম রিয়েকশন ছিল—‘‘কী হলো এটা? শেষ?’’ কারণ বইটা পড়তে আমার সময় লেগেছে মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টা। কোনো বাড়তি মেদ নেই, একদম কাট-টু-কাট এগিয়েছে কাহিনী।
গল্পের হিরো, ডিবি অফিসার মনসুর হালিমকে নিয়ে আমার এক্সপেক্টেশন ছিল আকাশচুম্বী। লেখক তাকে ‘জাঁদরেল’, ‘বিচক্ষণ’ বলে পরিচয় করিয়ে দিলেও, পুরো গল্পে ভদ্রলোককে আমার বেশ অলস আর কনফিউজড মনে হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, কেস সলভ করার আসল ক্রেডিট কিন্তু তার সহকারী ঈশিতা আর কনস্টেবল নাহিদের প্রাপ্য। মনসুর যেন পুরো ঘটনায় একজন প্যাসেঞ্জার, যাকে গল্প টেনেহিঁচড়ে ক্লাইম্যাক্সে নিয়ে গেছে। একজন মেইন লিড যদি তদন্তের চেয়ে বোকামি বেশি করে, তখন থ্রিলারের মজাটাই মাটি হয়ে যায়। তবে গল্পের প্লটটা দুর্দান্ত ছিল—বিখ্যাত বইয়ের কাহিনি নকল করে বাস্তবে খুন! আইডিয়াটা শুনেই নড়েচড়ে বসেছিলাম। কিন্তু এক্সিকিউশনে গিয়েই যেন তালটা কেটে গেল। পড়তে গিয়ে বেশ কয়েকবারই ভ্রু কুঁচকে ফেলতে হয়েছে। সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছে গল্পের সেই ফ্যানগার্ল মোমেন্টটা। লেখকের লেখার প্রেমে পড়ে, তার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য বড়লোকের মেয়ে ছদ্মবেশে তার বাড়িতে কাজের বুয়া হয়ে ঢুকে পড়েছে—এটা কি এই যুগে বসে বিশ্বাসযোগ্য? এটা পড়তে গিয়ে আমার মনে হচ্ছিল কোনো বাংলা সিনেমার মেলোড্রামা দেখছি, যা বাস্তবতার সাথে একদমই বেমানান।
একটা সাইকো থ্রিলারের প্রাণ হলো তার ভিলেন বা কিলার। অথচ এখানে কিলারের মনের ভেতরটা উঁকি দেওয়ার সুযোগই নেই পাঠকের। লেখকের ফোকাস কিলারের চেয়ে বেশি ছিল লেখক নিয়াজ আহমেদের ওপর। আর সবচেয়ে বড় খটকা লেগেছে ক্লাইম্যাক্সে—একজন ভয়ানক সিরিয়াল কিলার এত সহজে, সুড়সুড় করে সব দোষ স্বীকার করে নিল? এই জায়গাটা বড্ড বেশি 'বেখাপ্পা' লেগেছে।
আপনি যদি নিয়মিত থ্রিলার পাঠক হন, তবে বইয়ের মাঝপথেই বুঝে যাবেন খুনি কে। টুইস্টগুলোতে সেই চমকে দেওয়ার মতো বারুদ ছিল না। মনে হয়েছে, লেখক রহস্য জমানোর চেয়ে গল্পটা দ্রুত শেষ করার দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। শেষটা এতটাই তাড়াহুড়ো করে টানা হয়েছে যে, মনে হলো লেখক নিজেই যেন গল্পটা শেষ করতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন!
শেষ কথা; নাজিম উদ দৌলার লেখার হাত ভালো, গল্প বলার ভঙ্গিটা সাবলীল। সব মিলিয়ে, ‘প্রহেলিকা’ আমার কাছে একটা ‘মিশ্র অনুভূতি’। এটাকে একটা পূর্ণ থ্রিলার না বলে, একটা ‘উইকএন্ড টাইম পাস’ বলাই ভালো। তবে নতুন পাঠকদের জন্য বা যারা থ্রিলার জগতে মাত্র পা রাখছেন, তাদের জন্য এটি ভালো একটা এন্ট্রি হতে পারে। কিন্তু বই পড়ে যদি আপনি ভাবতে চান, চরিত্রের মনের গভীরে ডুব দিতে চান—তবে এই বই আপনার তৃষ্ণা মেটাবে না, বরং অতৃপ্তিই বাড়াবে।
বই পরিচিতি— বইয়ের নাম: প্রহেলিকা লেখক: নাজিম উদ দৌলা প্রকাশনী : প্রিমিয়াম পাবলিকেশন্স পৃষ্ঠা: ১২৬ মূল্য: ১৭৫৳ (গায়ের রেট)
ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এর এএসপি মনসুর হালিম প্রহেলিকা উপন্যাসিকার প্রোটাগনিস্ট। চলুন তার মুখেই শুনে নেই গল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ…
মনসুর হাসিমুখে বলে যাচ্ছে, “জব্বর একটা কেইস সমাধান করলাম রে ভাই! একে তো শহরে সিরিয়াল কিলিং হচ্ছে বইয়ের কাহিনি অনুযায়ী, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে লেখকের ব্যবহৃত জিনিস, লেখককে আবার অনলাইনে ফেক আইডি থেকে থ্রেট…”
“বড়ো একটা রহস্য কিন্তু এখনও রয়ে গেছে মনসুর ভাই।” নিয়াজ বলল।
মনসুরের মুখের হাসিটা মুছে গেল, “আবার কী রহস্য?”
নিয়াজ কোনো উত্তর দিলো না।
• চরিত্র বিশ্লেষণঃ (স্পয়লার মুক্ত রাখতে ফ্রন্টের দিকের চরিত্রগুলো রাখছি শুধু।)
• মনসুর হালিমঃ ডিবি এএসপি গল্পের মূল চরিত্র। লেখক তাকে বিচক্ষণ গোয়েন্দা হিসেবে বর্ণনা করলেও গল্পের রহস্য বিশ্লেষণে তার বুদ্ধিমত্তার থেকে বোকামির পরিচয় বেশি পাওয়া গেছে।
ডিটেকটিভ হিসেবে তার একটিভি তেমন লক্ষণীয় ছিল না। মার্ডার স্পটেও সে সব কিছু ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের উপর ছেড়ে দিছেন, নিজে কিছু খুটিয়ে দেখে নাই। বেশিরভাগ সূত্র সাব-ইন্সপেক্টর ঈশিতাই খুঁজে বের করেছ।
মূল চরিত্র এবং গোয়েন্দা হিসেবে প্রবল পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং চিন্তাশক্তির পরিচয় দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে এই চরিত্রটি তুলনামূলক অলস প্রকৃতির। যেখানে মূল চরিত্রকে গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে মনে হয়েছে যেন গল্প নিজেই তাকে টেনেহিঁচড়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
• ঈশিতাঃ গল্পের পার্শ্ব চরিত্র। এই কেসে মনসুর হালিমের সহযোগী সাব-ইন্সপেক্টর। এই কেস নিয়ে মনসুর হালিম যতটা না কনসার্ন ছিল তার থেকে বেশি ছিল এই চরিত্রটি।
• নিয়াজ আহমেদঃ গল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এক প্রকাল ভিক্টিমই বলা চলে। তার মনস্তাত্ত্বিক দিকটা লেখক মোটামুটি ভালো ভাবেই তুলে ধরেছেন।
• সামগ্রিক পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ লেখকের লেখার শৈলী যথেষ্ট সাবলীল ছিল এবং তার ভিজুয়াল স্ট্রোরিটেলিং এর দক্ষতার ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বিস্তারিত আবহ ও আশেপাশের পরিবেশের বর্ণনায় তেমন মনোযোগ না দেওয়ায় গল্পটি যথেষ্ট প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেনি।
গল্পে কিছুক্ষণ পর পর টুইস্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক, তবে গল্পটি টুইস্টগুলো সহজেই অনুমেয় ছিল তাই রহস্য এবং সাসপেন্স তেমন একটা জমেনি।
গল্পে প্রধান চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের তেমন উপস্থিতি নেই। লেখক চরিত্রগুলোর মানসিক অবস্থার সূক্ষ্মতাগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেননি। ফলে চরিত্রগুলোর, বিশেষ করে খলচরিত্রের অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম এবং তার মানসিক অবস্থা যথাযথভাবে ফুটে ওঠেনি।
এটা বইয়ের নবম প্রকাশ। তবুও একাধিক জায়গা বানান ভুল রয়েছে, অনেয় জায়গা নামের ভুল রয়েছে। তুলির জায়গা ফুলি, ফুলির জায়গা তুলি - এমন অনেক ভুল চোখে পড়েছে। আগের অনেক র��ভিউতে সেগুলো অনেকেই উল্লেখ করেছে দেখেছি। এখনো একই ভুল গুলোই রয়েগেছে কীভাবে কে জানে।
কিছু জায়গা অনেক খাপছাড়া লেগেছে। এই যেমন, টয়লেটে আটকে রেখে তুলির ফোন ঘাটতে অনেক সময় লাগার কথা। এতে তুলিকে যে আটকে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে তুলির সতর্ক হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো আর আইডি হারানোর পরেও তার কোনো রকম প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।
পরিশেষে বলব, গল্পের প্লট তুলনামূলক সাধারণ লেগেছে এবং প্রেডিক্টেবেল মনে হয়েছে। যতটা আশা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম ততটাই হতাশ হয়েছি। তবে সিরিজটির নতুন বই নিয়ে আমি একটু আশাবাদী। তাই পরের দুটো বইও পড়ার ইচ্ছা আছে।
যেহেতু এটি উপন্যাসিকা তাই মেইন প্লটে ফোকাস করে গল্প এগিয়ে গেছে। মূল চরিত্র মনসুর হালিমের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। তবে এটা যেহেতু সিরিজ তাই আশা করছি পরের বই গুলোতে প্রোটাগনিস্টের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কেও কিছু থাকবে।
• যদি আপনি থ্রিলার বই পড়ে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তবে আমি এই বইটি আপনাকে রিকমেন্ড করবো না। আর যদি বইয়ের জগতে নতুন হন, তাহলে পড়তে পারেন, আশা করি আপনার ভালো লাগবে।
শহরে একের পর এক খুন খুন হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে খুন স্বাভাবিক হিসেবে নেওয়া গেলেও চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো খুলগুলো হচ্ছে বিখ্যাত এক থ্রিলার লেখকের বইয়ে দেখানো খুনের মতো। পুরো বিষয়টা কি নিতান্তই কাকতালীয় নাকি এর পেছনে রয়েছে ভিন্ন কোনো রহস্য?
◼️ কাহিনী সংক্ষেপ -
গল্পটা এক সাইকোপ্যাথের; যে শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই নৃশংসভাবে খুন করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। খুনগুলো করা হচ্ছে বিখ্যাত লেখক নিয়াজ আহমেদের 'গাল্লিবয়' বইয়ের খুনগুলোর মতো করে। তদন্তে নামে ডিবি অফিসার মনসুর হালিম। বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। হঠাৎ করেই লেখককে 'প্রহেলিকা' নামক আইডি থেকে থ্রেড দিতে থাকে। কে এই প্রহেলিকা? অন্যদিকে লেখকের বাড়িতে কাজ করতে আসে নতুন এক কাজের লোক, তার চালচলনও সন্দেহজনক। ভিন্ন কয়েকজন মানুষ যাদের জীবনধারাও ভিন্ন কিন্তু সকলেই গেঁথে আছে একই সুতোয়।
◼️ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা -
গল্প শুরু হয় রহস্যজনকভাবে হত্যার মাধ্যমে। একের পর এক খুন প্রত্যেক জায়গায় লেখকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। শুরু থেকে যেই সাসপেন্স দিয়ে বইটা শুরু হয়েছিল লেখক খুব তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দিয়েছে তা মাঝপথে। থ্রিলার গল্পে মূল আকর্ষণ থাকে অফিসারের তদন্তের কার্যক্রম। তবে এই বইয়ে মনসুর হালিমের তেমন কোনো নজরকাড়া কার্যক্রম চোখে পড়েনি। শুরু থেকে যতোটা সাসপেন্স ধরে রেখেছিল কাহিনীতে তবে খুনী খুব সহজেই তার সব অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। সিরিয়াল কিলিং এ অপরাধী নিজেই সব দোষ সহজে স্বীকার করে নিলো বিষয়টা আমার কাছে বেখাপ্পা লেগেছে।
লেখকের লেখা পড়ে ভক্ত হয়ে তার সান্নিধ্যে থাকার জন্য বড়লোকের মেয়ের তার বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে থাকাটা বোধহয় নাটক সিনেমাতেই মানায়। সেই সাথে নিয়াজের সাথে তুলির এন্ডিংটাও বেশ নাটকীয় লেগেছে আমার কাছে।
গল্পের মূল প্লট লেখক খুব সুন্দরভাবে সাজিয়েছে। সেই সাথে এক জিনিসের সাথে আরেক জিনিসের যোগসূত্র স্থাপন করার পদ্ধতিও ভালো ছিল। শুধু এইসব নাটকীয় বিষয়টা না থাকলে আর কাহিনী এতো দ্রুত এগিয়ে না নিয়ে একটু ধীরস্থির ভাবে শেষ করলেই আরো দারুন থ্রিলার বই হতো এটা।
◼️ বানান ও অন্যান্য -
৫/৬ টার মতো বানান ভুল চোখে পড়েছে বইতে। তবে কয়েক জায়গায় 'স্লামালেকুম' বলে সালাম দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা আমার কাছে দৃষ্টিকটু এবং ঠিক মনে হয়নি। যেহেতু ধর্মীয় বিষয় এটা তাই ঠিকঠাক থাকা দরকার ছিল। একবার হলে টাইপিং মিস্টেক মানা গেলেও বোধহয় দুই জায়গায় এরকমটা দেখেছি। একই শব্দ রিপিট হয়েছে একজায়গায় আবার আরেক জায়গায় সংলাপ যে বলছে তার নাম না দিয়ে অন্যজনের নাম দেওয়া হয়েছে। আশাকরি পরবর্তী সংস্করণে এই জিনিসগুলো ঠিক করে নেওয়া হবে।
'প্রহেলিকা' একটি সাইকো থ্রিলার নোভেলা। লেখক নাজিম উদ দৌলার প্রথম প্রকাশিত বই এটি। ভূমিকায় লেখক জানিয়েছেন এই গল্পটি ফেসবুকে তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিলেন,যদিও গল্পটির তখন অন্য শিরোনাম ছিলো।
সেরকম স্টোরি বিল্ডআপ করতে পারলে এক সাইকো থ্রিলার লিখেই লেখক যথেষ্ট নাম কামাতে পারেন। প্রথম বই হিসেবে লেখক নাজিম উদ দৌলার 'প্রহেলিকা' সেরকমই এক বার্তা দেয়। গল্পের প্লটটা একদম ফেলনা নয়, তবে একেবারে আহামরিও কিছু না। এই ধরনের প্লটের গল্প আরো আছে,উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী সিরিজের দ্বিতীয় গল্প 'নিশীথিনী' তেও এই রকম এক সাইকো কিলারের বর্ণনা আছে এবং কাকতালীয় ভাবে ঐটিই এখন পড়ছি।
যাইহোক এই গল্পটি অনেক সাজানো এবং অত্যন্ত গতিশীল,যেই জিনিসটা থ্রিলার বইতে অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু বইয়ের কলেবরটা ছোট, বিশেষ করে শেষটা খুব দ্রুত শেষ হয়েছে। লেখক আরেকটু জমিয়ে শেষ করতে পারতেন।
গল্পটা একজন সরকারি ডিটেকটিভের; যিনি হতে চেয়েছিলেন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান, কিন্তু নিয়তির পালা-বদলে আজ তিনি ডিবির একজন জাঁদরেল পুলিশ অফিসার। গল্পটা একজন থ্রিলার লেখকের; যিনি প্রিয়জনকে হারানোর স্মৃতি ভুলতে কলম ধরেছিলেন, কিন্তু ভাগ্যচক্রে আজ তিনি বেস্ট সেলার লেখক। আবার তার এই খ্যাতির বিড়ম্বনাই তাকে জড়িয়ে ফেলে ভয়ংকর এক সাইকো খুনির সাথে। তার লেখা বই 'গাল্লিবয়' তে যেভাবে কিলার খুন করে ঠিক সেভাবেই বাস্তবে একের পর এক খুন করে যাচ্ছে কোন এক সাইকো কিলার, শেষ পর্যন্ত কি লেখক বেরোতে পেরেছিলো এই কেসের পাকচক্র থেকে? গল্পটা এক সাইকোপ্যাথের; যে কালো আলখাল্লা আর মুখোশ পড়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই নৃশংসভাবে খুন করে গরিব অসহায় শিশুদের। কেন খুন করে সে? কি তার জীবনের ইতিহাস? লেখক নিয়াজ আহমেদের প্রতিই বা তার এত আক্রোশ কেন? আর প্রহেলিকা নামের ঐ রহস্যময়ীই বা কে? যেহেতু বইয়ের নাম প্রহেলিকার নামে,তার মানে সে এই বইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রধান চরিত্র। এত গুলো প্রশ্নের উত্তর আর প্রহেলিকার রহস্য জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে এই বইটি।
বইটি এক বৈঠকে পড়ে ওঠার মত, ১২৬ টা পৃষ্ঠা মাত্র। আর যেহেতু কাহিনী যথেষ্ট গতিশীল, তাই পাঠক বইটি না শেষ করেও উঠতে পারবে না। পেপারব্যাক বই হলেও পেইজ কোয়ালিটি একদম ফার্স্ট ক্লাস। ওভারঅল প্রোডাকশন, বাইন্ডিং সবই ভালো, কিন্তু কিছু জায়গায় বানান ভুল এবং প্রিন্টিং মিস্টেক বিরক্তির কারণ হয়েছে। এছাড়াও বাড়তি বর্ণনা, যথেচ্ছ আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ গল্প সুলভ মনে হয়নি। আশা করি পরবর্তী এডিশনে এই ভুল গুলো থাকবে না।
ঢাকায় খুনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে যারা খুন হচ্ছে তারা সবাই টোকাই বা রাস্তায় বস্তিতে বেড়ে ওঠা শিশু। কিন্তু কেন তাদের খুন করা হচ্ছে। কেই বা খুন গুলো করছে৷ খুনের উদ্দেশ্য কি। সব কিছুই একটা গোলকধাধা। . নিয়াজ আহমেদ এখন বাংলাদেশের জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক৷ তার লেখা প্রতিটি বই বেস্ট সেলারের তালিকায় থাকে। নিঃসঙ্গ মানুষ। পরিচয় হয় ফেসবুকে এক ফ্যানের সাথে। এরপর ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। ঘটতে থাকে খুনের ঘটনা। তবে কি এর পেছনে নিয়াজ সাহেব এর হাত আছে। . তুলি নিয়াজ আহমেদের অনেক বড় ফ্যান। কিন্তু তাকে এর মাশুল দিতে হবে জানা ছিল না। অনেক বড় ফাদের মধ্যে জড়িয়ে পরেছে সে। এ থেকে উদ্ধার পাবে কিভাবে। . এএসপি মনসুর হালিম খুনের ঘটনা তদন্ত করছেন। তার সাথে সাব ইন্সপেক্টর ঈশিতা। কিন্তু খুনের মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে যারা খুন হচ্ছে তারা কেউ বড় কোন পরিবার থেকেও উঠে আসা নয়। তাহলে তাদের খুন কেন করা হচ্ছে। সব কিছুর পেছনে কি রয়েছে। . পর্যালোচনা - নাজিম উদ দৌলা এর লেখা "প্রহেলিকা'' পড়ে শেষ করলাম। বইটি বেশ ছোট। পকেট বুক সংস্করণ বলা যায়। তাই পড়তে বেশি সময় লাগেনি। এটা থ্রিলারের ছোট সংস্করণও বলা যেতে পারে। . এবার কাহিনীর দিকে নজর দেয়া যাক। খুব বেশি আহমরি কাহিনী নয়। গভীরতা বা সাসপেন্সের দিক থেকেও বেশ দুর্বল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে বই লেখা খুব দ্রুত। মানে কাহিনীর সাথে ঘটনা এত দ্রুত এগিয়েছে যে এটা ফাস্ট ফিউরিয়াস এর চেয়েও দ্রুত লেগেছে। . এখন কিছু দিক না বললেই নয়। আমি যতদূর জানি পুলিশের অভিজ্ঞ যারা আছেন তারা অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে অনেক বেশি এগিয়ে থাকেন। কিন্তু এখানে এএসপি মনসুর সেই দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ।
ছোট করেও যদি বলি রুমন যার পা ভাঙ্গা সে তার হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছে একজন কনস্টেবল কে আহত করে। প্রথমত এখানে তার আগে অপরাধী ধরার কথা। মানবিক দিক থেকে যদি মেনেও নেই আরকি। . এরপর আসে হ্যাকিং এর বিষয়। যেহেতু টেকনিক্যাল বিষয় এটা দ্রুত করা সম্ভব যদি ইমেলের পাসওয়ার্ড নিজের কাছে থাকে। কিন্তু সেটাও পরিবর্তন করতে হলে অনেক সময় লাগবে। যেটা আসলে কিছুটা হলেও পাঠকের কাছে ধাক্কা লাগতে পারে৷ যদিও ফ্লো এর কারণে বিষয়টি হয়ত অনেক ধরতে পারবে না। . সবশেষে বইটির ব্যাপারে বলব যে আমার কাছে খুব বেশি ভাল লাগেনি। যদিও অনেকেই প্রশংসা করেছেন তবে বইটার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় ভাল একেবারেই লাগেনি৷
প্রহেলিকা উপন্যাসটি এক অনন্য রহস্য-রোমাঞ্চ, যা পাঠককে প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই ধরে রাখতে সক্ষম। এটি এমন এক গল্প যেখানে ডিটেকটিভ মনসুর হালিম, এক জনপ্রিয় লেখক এবং এক ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার—তিনটি ভিন্ন চরিত্রের কাহিনি জটিলভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
উপন্যাসটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এর কাহিনির প্রবাহ এবং চরিত্রগুলোর গভীরতা। লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দিক তুলে ধরেছেন। রহস্যের স্তরবিন্যাস এতটাই নিখুঁত যে, পাঠক প্রতিটি নতুন অধ্যায়ের সঙ্গে নতুন মোড়ের সম্মুখীন হন। গল্পের বুনন যত এগোয়, ততই রহস্য আরও ঘনীভূত হয়, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
তবে, উপন্যাসটির শেষভাগে কিছু অংশ অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে। বিশেষ করে খুনির আত্মহত্যার মুহূর্তে তার কথোপকথন কিছুটা অপ্রয়োজনীয় নাটকীয়তায় ভরা বলে মনে হয়। একইভাবে, কুহলিকা বা তুলির মাঝরাতে লেখকের বাড়িতে পালিয়ে আসার দৃশ্যটি বাস্তবতাবোধ থেকে খানিক দূরে চলে গেছে। এসব অংশ গল্পের সার্বিক গাম্ভীর্য কিছুটা ক্ষুণ্ন করলেও, সামগ্রিকভাবে এটি উপন্যাসটির আকর্ষণকে ম্লান করেনি।
শেষ পর্যন্ত, প্রহেলিকা এমন একটি উপন্যাস, যা রহস্যপ্রেমী পাঠকদের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা এনে দেবে। লেখকের বর্ণনাশৈলী, উত্তেজনাপূর্ণ টুইস্ট, এবং বাস্তবধর্মী চরিত্রায়ণ এই বইকে স্মরণীয় করে তুলেছে। কিছু অংশ অতিনাটকীয় মনে হলেও, উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পাঠ-অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
সামগ্রিক বিচারে, আমি প্রহেলিকা উপন্যাসটিকে ৫-এর মধ্যে ৪ স্টার দেব।
✔ গল্পের আকর্ষণীয়তা ও রহস্য: ⭐⭐⭐⭐⭐ (৫/৫) ✔ চরিত্রের গভীরতা: ⭐⭐⭐⭐ (৪.৫/৫) ✔ লেখার গতি ও বিন্যাস: ⭐⭐⭐⭐ (৪/৫) ✔ বাস্তবতাবোধ ও সংলাপ: ⭐⭐⭐ (৩.৫/৫) ✔ সমাপ্তির প্রভাব: ⭐⭐⭐ (৩/৫)
💥 লেখক নাজিম উদ দৌলা এর লেখা "ব্লাডস্টোন" এবং "মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া" উপন্যাস দুইটির পরে ‘’প্রহেলিকা’’ আমার পড়া তার ৩য় বই, যদিও এই উপন্যাসিকাটি লেখকের প্রকাশিত ৭ম বই।
💥 প্রহেলিকা মাত্র ১২০ পাতার একটি উপন্যাসিকা। বইতে সম্পূর্ণ ফোকাস ছিলো গল্পে, চরিত্রায়নের পেছনে বাড়তি সময় দেওয়া হয়নি। যে কারনে, একদম প্রথম থেকেই গল্পে ঢুকে যাবেন পাঠক। এক বসায় পড়ে ফেলার মতো মজার কাহিনী। একটানে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় বইটিতে পড়া শেষ হয়ে যাবে।
💥 মেদহীন চমৎকার লেখনশৈলীতে খুব সহজেই; সুন্দর এবং সাবলীল একটি উপন্যাসিকা লিখেছেন। প্লট টুইস্টে ভরপুর এবং এই কারণেই আগ্রহ ধরে রাখা গেছে একদম শেষ পর্যন্ত। গল্পে বাংলাদেশ পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের এএসপি মনসুর হালিম চরিত্রটি বেশ ভালো লেগেছে। শেষটাও চমৎকার ছিল।
* * * * * * * * * * * * * * * * * *
💠 বইয়ের প্রোডাকশন চমৎকার। ছোটখাটো বই, বাঁধাই, পেজের মান, সবই ভালো। ক্রাউন সাইজের বই হাতে নিয়ে পড়তে আরামই লাগে। অল্প কিছু ভুল ভ্রান্তি থাকলেও তা এড়িয়ে যাওয়া যায়। আশা করি, সামনের সংস্করণে সব সংশোধন করে নেয়া হবে। নাজিম উদ দৌলা ভাইয়ার নিজের করা প্রচ্ছদটিও বেশ চমৎকার হয়েছে।
মনসুর হালিম, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের একজন এএসপি। তার টিমের কাছে এসে পড়ে এক ভয়াবহ সিরিয়াল কিলিং এর কেস যেখানে ছোট বাচ্চাদের নৃশংস ভাবে খুন করা হচ্ছে। এই কেসের সাথে কাকতালীয় ভাবে জড়িয়ে পড়েন লেখক নিয়াজ আহমেদ। এখন কে এই সিরিয়াল কিলার এবং কেন এই খুন গুলো হচ্ছে তা নিয়েই লেখক নাজিম উদ দৌলা এর থ্রিলার ঘরানার 'প্রহেলিকা' বইটি লেখা। - 'প্রহেলিকা' বইটি পুলিশ প্রসিডিওরাল এবং সিরিয়াল কিলিং ভিত্তিক একটি থ্রিলার। পকেট বুক সাইজের ১২০ পেইজের এই বইটি শুরু থেকেই খুবই দ্রুততার সাথে আগাতে থাকে। এই গল্পের প্লট এবং লেখনশৈলীতে তেমন কোন নতুনত্ব পাইনি। বইয়ের বেশিরভাগ চরিত্র কাহিনিতে ছাপ ফেলতে ব্যর্থ মনে হয়েছে, কিছু যায়গা অতিরিক্ত সিনেমাটিক লাগলো। তবে বইয়ের সাস্পেন্স পার্টগুলো থ্রিলার প্রেমীদের ভালো লাগবে। বইয়ের শেষদিকের কিছু ঘটনা যেভাবে কাহিনির সাথে মেলানো হয়েছে তা বাস্তবতা বিবর্জিত মনে হলো। বইয়ের সাইজ কিউট হলেও প্রচ্ছদ এবং অন্যান্য দিক মোটামুটি লাগলো, সাথে কিছু বানান ভুলও ছিল। এক কথায়, যারা সব ধরনের থ্রিলার বই পড়তে পছন্দ করেন তাদ��র জন্য ওয়ান টাইম রিড হতে পারে বইটা।