আবার গোয়েন্দাপীঠ, কিন্তু এবার আর শুধু লালবাজারের চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ নয়। কলকাতা পুলিশেরদুটি মামলার পাশাপাশি এবার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশেরও কয়েকটি বহুচর্চিত ঘটনার রোমহর্ষক নেপথ্যকাহিনি এইবইয়ে মলাটবদ্ধ।কিছু মামলা থাকে, যা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কখনও কমে না। কিছু ঘটনা থাকে, যার ‘কী কেন-কীভাবে’-রআদ্যোপান্ত নিয়ে ঔৎসুক্য চিরকালীন। এরকম একাধিক তুমুল চাঞ্চল্যকর মামলার রুদ্ধশ্বাস বিবরণ ধরা আছে এই বইয়ে।নোয়াপাড়ার সুদীপা পাল থেকে দমদমের সজল বারুই, দেড় দশক ফেরার থাকার পর হুগলির ‘ডন’ হুব্বাশ্যামলের গ্রেফতারি, কিংবা বীজপুরে ডাকাতি করতে এসে গৃহবধূকে চারতলা থেকে মাটিতে ছুড়ে ফেলা। এমনই সাড়া-জাগানো সাতটি মামলাকে লেখক বেছে নিয়েছেন ‘গোয়েন্দাপীঠ’ সিরিজের তৃতীয় বইয়ে। স্রেফঘটনাপ্রবাহ নয়, নয় স্রেফ তদন্তপ্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি, অভিজ্ঞ আই পি এস অফিসার সুপ্রতিম সরকারেরক্ষুরধার লেখনীতে ‘আবার গোয়েন্দাপীঠ’-এর পাতায় পাতায় ঘটেছে অপরাধ-মনস্তত্ত্বের উন্মোচন। প্রকাশ্যে এসেছে মানবমনের সব গহনের, সব দহনের অন্তরমহল। এ বই রহস্যরসিক পাঠকের। এ বই আগামীর তদন্তশিক্ষার্থীরও। বাংলা অপরাধ সাহিত্যকে আরও ঋদ্ধ করার যাবতীয় রসদ মজুত এ বইয়ে। গোয়েন্দাপীঠ, আবার।
সুপ্রতিম সরকারের জন্ম কলকাতায়, ৩০ মে ১৯৭১। আশৈশব কৃতী ছাত্র। ছাত্রজীবন কেটেছে সেন্ট লরেন্স হাই স্কুলে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণির স্নাতক। আনন্দবাজার পত্রিকায় স্বল্প দিনের সাংবাদিকতার পর ১৯৯৭ সালে যোগ দেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে। কর্মজীবনে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এবং কলকাতায় নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে কলকাতা পুলিশে অতিরিক্ত কমিশনার পদে কর্মরত। কর্মক্ষেত্রে প্রশংসনীয় দক্ষতার জন্য ২০১৫-য় সম্মানিত হয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ‘ইন্ডিয়ান পুলিশ মেডেল’-এ, ২০১৭-য় ভূষিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রদত্ত বিশেষ সম্মানপদকে।পেশায় আই পি এস অফিসার, নেশায় আপাদমস্তক ক্রিকেটানুরাগী। লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই ‘গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার’।
গোয়েন্দাপীঠ সিরিজের বইগুলো আমার ভীষণ ভালো লাগে। ঠিক ভালো লাগা বললে ভুল হবে, আসলে গল্পের বানানো থ্রিলারের চাইতে বাস্তবে ঘটা অপরাধগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ, মোটিভ আমাকে ভাবায়, চিন্তার খোরাক যোগায়। আবার গোয়েন্দাপীঠও সুখপাঠ্য একটা বই, তবে এই সিরিজের অন্য বইগুলোর তুলনায় কেস স্টাডি তুলনামূলকভাবে কম। তারপরেও 'হাতে মাত্র ৯৬ ঘন্টা', 'যে গেছে সে যাক' এবং 'সিনেমাতেও এমন হয় না' এই তিনটা কেসের জন্যই বইটা বারবার পড়া যায়।
এই সিরিজটাও বেশ ভালো। যদিও কেস স্টাডি অন্য বইগুলোর তুলনায় কম মনে হয়েছে। গোয়েন্দাপীঠ সিরিজটা অনেকদিন ধরেই পড়ব পড়ব ভাবছিলাম কিন্তু পড়া হচ্ছিল না। কিছুদিন আগে মোশাররফ করিম অভিনীত কলকাতার একটা মুভির টিজার রিলিজ পায়.. মোশাররফ করিম যেখানে এক ডনের চরিত্রে অভিনয় করেছে। সেই হুব্বা শ্যামলের কাহিনি দিয়ে এই বইয়ের শুরু। আর আমি বইটা শুরু করি একদম প্রথম পর্ব থেকে। আসলে আমরা যে ব্যোমকেশ, ফেলুদা, পোয়েরো বা শার্লক পড়ি.. সেখানে যে ক্রাইমগুলো হয় সেগুলো যে কতোটা কল্পনার আর কতোটা বাস্তব.. বাস্তব অনেক ঘটনা পড়লে মনে হয় বুঝিবা গল্প পড়ছি। রিয়েলিটি আর ফিকশনে যেখানে প্রভেদ সামান্যই। কিছু কিছু কেস আছে.. যেগুলো খুব ভাবায়। ওপার বাংলার সুলেখা আর হালের এপার বাংলার ঐশী.. তফাৎটা খুব সামান্য।
গত কয়েকবছরে ‘’গোয়ান্দাপীঠ লালবাজার’’ পাঠকমহলে ভালো সাড়া পেয়েছে । পুলিশ রে নাকানিচুবানি খাওয়ানো কিছু দুর্ধর্ষ (দুর্ধর্ষ বানান ভুল হতে পারে) চোর, ডাকাত, ধর্ষক, খুনিদের ধরার কাহিনি গুলো পড়তে পড়তে বেশ একটা গা ঝাড়া দেওয়া ভাব আসে । কাল্পনিক অপরাধ আর সত্যি অপরাধের বিষয়ে জানার মধ্যে বিস্তর ফারাক । অপরাধ জানার ব্যাপারে যাদের আগ্রহ অধিক , এজন্যই এ ধরনের বইগুলো তাদের টানে বেশি । যাই হোক ‘’আবার গোয়েন্দাপীঠ’’ এ বেশ কিছু রহস্যময় ও অকারণ হত্যা মামলার সুরাহা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা আছে তাও অপরাধীর জবানবন্দী সহ। প্রথমেই আছে শ্যামল নামের এক লোকের বড়লোক ও বিখ্যাত হওয়ার আশায় একটার পর একটা খুন করে অপরাধ জগতে নিজের জায়গা করে নেওয়ার কাহিনী । মানুষ খুন করা তার নেশার পর্যায়ে ছিলো । শ্যামলের খুন করার স্টাইল টা খুব ইউনিক । সে ভিক্টিম কে পৈতে করে ছেড়ে দিতো । মানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাঁধ থেকে কোমড় অব্দি নামায় দিতো । যেখানে ছোট খাটো হুমকিতেই কাজ হয়ে যায় সেখানেও শ্যামল পৈতে থেরাপি এপ্লাই করতো । পুলিশ কিন্তু বহু চেষ্টা করেও শ্যামল কে ধরতে পারছিলো না । শুধু তাই নয় শ্যামল পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই এমনভাবে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতো যে শ্যামল কো পাকাড়না মুশকিল ই নেহি না-মুমকিন হ্যায় কথাটা তখন লোকমুখে চালু হয়ে যায় । তাইলে শ্যামলকে কি কেউ থামাতে পারবে না ? এরপরের কাহিনী টা , তারপরের টা এবং তারও পরের টা অতো উপভোগ্য ছিলো না। কিন্তু তারপরের পরের টা বেশ চাঞ্চল্যকর ঘটনা । মায়েরা সাধারনত টিনএজ মেয়েদের নিয়ে একটু বেশিই উদ্বিগ্ন থাকেন বলে ঐ সময়ে তাদের কড়া শাসনে রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু মাত্রাতরিক্ত কোন কিছুই যে কারু জন্য ভালো না সেটা আবারো প্রমাণ করে দিলো গৃহশিক্ষকের প্রেমে পড়া এক বিভ্রান্ত কিশোরীর চক্রান্ত করে পরিবারের সবাইকেই খুন করার ঘটনাটি । কিন্তু প্রশ্ন হলো এতটুকু একটা মেয়ে কিভাবে এতজন কে খুন করলো ! এরপরের ঘটনা টা বেশ মজার ও দুঃখজনক । এক বিদেশিনী ভারতে আসে মাদার তেরেসার কর্মকান্ড দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজ সেবার উদ্দেশ্যে । সমাজ সেবা করতে করতে সে ঠিক করে খুব ঘটা করে বন্ধুদের নিয়ে ভারতে জন্মদিন পালন করবে । স্পয়লার শুরু তো ভদ্রমেম নাইট ক্লাবে গিয়ে বার্থডে পার্টিতে আকন্ঠ মদ পান করার পর নেশাসক্ত অবস্থাতে এক ভারতীয় যুবকের দ্বারা ধর্ষিত হয় । স্পয়লার শেষ এইটুকু দুঃখজনক । তাহলে মজার কোনটুকু ? সবার শেষের ঘটনা টা আমার খুবই ভালো লেগেছে । ( তিন তারকা দিতাম , এটার জন্য আরেক তারকা বাড়ায় দেওয়া হলো ।) একদিন বারাসতের আদালতের সামনে একটা প্রিজন ভ্যান এসে থামলো । এটা এমন কোন বিশেষ ঘটনা না। কোর্টে যখন তখন প্রিজন ভ্যান আসতেই পারে আবার রায় ঘোষণার পর অপরাধীদের নিয়ে হাজতে চলেও যেতে পারে কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো অভিযুক্ত কয়েকজন কিশোর আসামীদের যখন প্রিজন ভ্যানে উঠানো হচ্ছে তখন তারা খুব খোশমেজাজে একসাথে শাহরুখ খানের বাজিগর সিনেমার গান ‘’ ইয়ে কালি কালি আঁখে ‘’ গাচ্ছে আর শিস দিচ্ছে । প্রিজন ভ্যান হতভম্ব হয়ে দাঁড়ায় আছে । ভ্যানের ড্রাইভার বুঝতে পারতেছে না এদের নিয়ে জেল হাজতে যাবে নাকি কোন পিকনিক স্পটে চলে যাবে । জিজ্ঞাস করে জানা গেলো এরা সকলেই খুনের আসামী । এদের মধ্যে একজনের সাজা মৃত্যুদণ্ড আর বাকিদের যাবজ্জীবন কারাবাস । ব্যাপারটা কেন যেন তাদের কাছে খুবই হাস্যকর মনে হয়েছে ।
দুটো কিশোর অপরাধের কেস বেশ মন খারাপ করা। সেদিন কোথায় যেনো দেখেছিলাম একজন বলছে, প্যারেন্টিং খুবই গুরুদায়িত্ব, এর লাইসেন্স থাকা উচিত, একদম ভুল বলেনি। সুদীপার কেসটা পড়ে নেটফ্লিক ডকুমেন্টারি 'হোয়াট জেনিফার ডিড' এর কথা মনে পড়েছে। অবশ্য জেনিফার মূল পরিকল্পনাকারী, সুদীপা তা নয়।
এছাড়া লেখক সুপ্রতীম সরকারের ঝরঝরে লেখনীর প্রশংসা শেষ খন্ডে এসেও না করাটা অনুচিত।
কাল্পনিক অপরাধের গল্পের স্বাদ একরকম। বর পুলিশের লেখনিতে তাদেরকে নাকানিচুবানি খাওয়ানো কেসের কথা পড়ার স্বাদ আরেকরকম। প্রায় প্রতিটি ঘটনাই খুব সাধারণ অপরাধের প্যাটার্নেই পড়, কিন্তু পড়তে ভালো লাগে কারণ এখানে পুলিশি কার্যপ্রণালীর বর্ণনা পাওয়া যায়। পাঠকদের জন্য চোখ বন্ধ করে রেকমেন্ড করা যায়।
পেশায় পুলিশ হলে কি হবে, সুপ্রতিম সরকারের লেখনীর মধ্যে একটা অদ্ভুত টানটান উত্তেজনা থাকে শুরু থেকে শেষ অব্দি। এই বইটি ��োয়েন্দাপীঠ লালবাজার সিরিজের তৃতীয় বই। তবে এবারের গল্পগুলি পুরোটাই 'স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড অব দি ইস্ট' কলকাতা পুলিশকে কেন্দ্র করে নয়।এতে থাকা সাত সাতটি রুদ্ধশ্বাস গল্পের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করা কিছু ঘটনা,যার তদন্ত করেছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং সিআইডি। উল্লেখযোগ্য তথ্য হল এবার কলকাতা পুলিশের মহিলা তদন্তকারী অফিসারদের একটি কাহিনীও রয়েছে। হুগলীর ডন 'হুব্বা শ্যামল'কে পাকড়াও করার ঘটনা থেকে দমদমের সজল বারুই এর ঘটনাগুলোর প্রত্যেকটিই পড়তে পড়তে যেন চোখের সামনে ছবির মতো ভেসে ওঠে দৃশ্যপট, পড়তে পড়তে মনে হয় আমিও প্রত্যক্ষদর্শী। এখানেই লেখকের মুন্সিয়ানা। একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও কোন কাহিনীকেই অতিরঞ্জিত বলে মনে হয় নি। থ্রিল কোন অংশে কম নয়। রহস্যপ্রেমীদের অবশ্যপাঠ্য। পরিশেষে একজন থ্রিলারপ্রেমী হিসেবে বলি, চলতে থাকুক গোয়েন্দাপীঠ সিরিজ, কল্পনার ফেলুদা থেকে বাস্তবের পুলিশের অফিসাররা কম যান না,সেটা আরও নতুন নতুন কাহিনীর মধ্যে দিয়ে উন্মোচিত হোক আমাদের মধ্যে।
বছর দুই আগে, ইউটিউবে একটা বইয়ের কথা শুনেছিলাম যার নাম ' গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার '। তারপর আরেকদিন এই বইয়ের লেখক শ্রী সুপ্রতিম সরকারের একটা সাক্ষাৎকার দেখে বইটি পড়ার আগ্রহ হয়। রুদ্ধশ্বাস, একটু বেশিই যেন রুদ্ধশ্বাসে পড়েছিলাম গল্পগুলো। এত উত্তেজনার প্রথম কারণ এই যে আমি জানতাম আমি যা পড়ছি সেটা নিছক কল্পনাপ্রসূত নয়, দিনের আলোর সত্যি!
তারপর এই সিরিজের চারটে বই মুক্তি পেয়েছে। এবার যেটা পড়লাম সেটা এই সিরিজের বই, ' আবার গোয়েন্দাপীঠ '। লেখকের কথায়, এবার শুধুমাত্র কলকাতার ঘটনা নয় বরং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের বুকে ঘটে যাওয়া কিছু মনে দাগ কেটে দেওয়া অপরাধের ও তাদের কিনারা করার গল্প উঠে এসেছে এই বইয়ে।
তার সাথে এখানে আরও দুটি জিনিস একটু ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। এই গল্পগুলোতে কে অপরাধ করেছে সেটা আপনি শুরুতেই বুঝতে পারবেন। কিন্তু আসল যে ব্যাপারটা আপনাকে বই থেকে চোখ সরাতে দেয় না সেটা হচ্ছে অপরাধীকে ধরার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, বারবার ব্যর্থ হতে হতে অবশেষে অপরাধীকে বাগে পাওয়ার রোমহর্ষক কাহিনী। এরপর অপরাধ কিভাবে ঘটলো তার বিবরণ সব শেষে এইযে অপরাধী, তার মধ্যে কিভাবে এই অপরাধের মনস্তত্ত্বের জন্ম হলো তার কাহিনী।
হাতে অবসর সময় নিয়ে বইটি পড়তে বসবেন। গোগ্রাসে না গিলে থাকা যায় না। গোয়েন্দা গল্পের পাঠকদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য বই।
পুলিশে চাকরি করেও যে কারো মাঝে সাহিত্যসত্ত্বা থাকা সম্ভব এবং কলমের আঁচড়ে সেই সত্ত্বাকে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব তা সুপ্রতিম সরকারের লেখা গোয়েন্দাপীঠ সিরিজের বইগুলো পড়লে অনুধাবন করা যায়।
বাস্তবের অনেক কেসেই রহস্য তেমন থাকে না। ঘটনার সাথে সাথেই ঘটনার নেপথ্যে থাকা অপরাধীর চেহারা উন্মোচিত হয়ে যায়৷ তবুও সেই কেসের কথা, তার আদ্যোপান্ত এমন সহজ সাবলীলভাবে উপস্থাপন করে পাঠককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা অনেক বাঘা বাঘা লেখকের দ্বারাও হয়ে উঠে না। আর ঠিক এই কারণে এই সিরিজের ৩টা বই-ই আমাকে মুগ্ধ করেছে। মুগ্ধতা মূলত লেখনীর অর্থে। কিন্তু অপরাধের বৃত্তান্ত পড়ে ফেলেছি দীর্ঘশ্বাস। বিশেষ করে এই খন্ডে দুটো কেস ছিলো কিশোর অপরাধ নিয়ে।
যখনই এরকম কোনো কিশোর অপরাধের খবর সামনে আসে একটা প্রশ্ন অবধারিতভাবে উঠে আসে৷ বর্ন ক্রিমিনাল নাকি আফটার বর্ন ক্রিমিনাল? কিশোররা কেন অপরাধে জড়িয়ে যায়? কোনো সুনির্দিষ্ট ছকে কি আদৌ ফেলা যায় সেই অপরাধকে? আমি জানি না৷ সম্ভবত কেউই জানে না৷ গবেষণা হয়তো খানিকটা আলোকপাত করতে পারে। ওই পর্যন্তই। কিন্তু গবেষণা করে কারো মনের হদিস কখনো পুরোপুরি পাওয়া যায় না। কেউ কি নিজেই জানে সে আসলে কী চায়?
পরিশেষে লেখকের ভাষাতেই বলতে হয়, মনই কি কখনো পায় মনের সম্পূর্ণ মালিকানা?
অসম্ভব উৎকৃষ্ট মানের বই। লেখককে কুর্নিশ। 'হত্যাকারী কে' এটা কাহিনীর শুরু থেকেই পাঠকের অবগত থাকা সত্ত্বেও কিভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে পাঠককে বইয়ের পাতায় বন্দি করে রাখা যায় এটা সত্যিই বিস্মিত করার মতো।
এই বইয়ে সাতটি কাহিনী লিপিবদ্ধ হয়েছে যার মধ্যে দুই তিনটি বিখ্যাত ঘটনা পাঠকের নিশ্চয়ই মনে থাকবে, যেমন সুদীপা পাল-রণধীর বসু কিংবা সজল বারুইয়ের ঘটনা। যেটা পাঠকের অবগত নয় সেটা হলো কিভাবে ধাপে ধাপে হত্যাকান্ডগুলি সম্পন্ন করা হয়েছিল। মোটিভ কি। কিভাবে ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে প্রতিহিংসার বীজ বপন করে সেটার পরিচর্যা করতে থাকলে একসময় তা পরিপূর্ণতা লাভ করে যার ফলে মানুষ ছাড় দেয়া না নিজের পরিবারকেও.. অসম্ভব মুন্সিয়ানার সাথে লেখক উপস্থাপিত করেছেন।
এবারে লালবাজারের গন্ডী পেরিয়ে রাজ্য পুলিশের তদন্তকাহিনীও স্থান পেয়েছে এই বইয়ে। সাতটি ঘটনাই মোটামুটি সাম্প্রতিক। এমনকি বলা যায় না.. হয়তো চমকেও যেতে পারেন, এই সাতটি ঘটনার মধ্যে কোনো ঘটনা হয়তো আপনার এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল😁
পেশায় আই পি এস অফিসার সুপ্রতিম সরকার পশ্চিমবঙ্গে ঘটে যাওয়া একাধিক রোমহর্ষক কাহিনীকে নিয়ে লিখেছেন চারটি বই। এই বইটি অন্যতম একটি।
" আবার গোয়েন্দাপীঠ " এ মোট সাতটি কাহিনী রয়েছে। তাতে অপরাধ জগতের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকটি কাহিনীই গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো। পৃথিবীতে এত এত অপরাধ হয়ে চলেছে দিনরাত। তার মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা মানুষের মনকে নাড়া দিয়ে যায় যার কিনারা না হওয়া পর্যন্ত যেন শান্তি নেই। কি করে ঘটনা ঘটে, কি করে তার কিনারা করা হয়, কতটা চাপে থাকতে হয় পুলিশি কর্তাদের তা সবই বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। এখানে আরেকটা কথা বলা দরকার যে "আবার গোয়েন্দাপীঠ" এ লালবাজার বা কলকাতা পুলিশ নয়, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা কীর্তিও এই বইয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এটি এমন একটি বই যা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। অন্তত আমার তো তাই হয়েছে। পড়ে ফেলুন ঝটপট। খুব ভালো লাগবে।
সাতটি কাহিনি এবারের গোয়েন্দাপীঠে। বরাবরের মতোই অসাধারণ। অপরাধীদের পেছনের কাহিনি অর্থাৎ তাদের অপরাধী হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত লেখক তার স্বাধীনতায় বাস্তব প্রমান, সেই সময়ের তথ্য প্রমাণ ও তদন্তকারীর বয়ানে সাজিয়েছেন। এটা ছিলো এই বইয়ের সবচে মুগ্ধকর দিক। সাথে বরাবরের মতো স্বাদু ও আকর্ষক গদ্য তো আছেই। এ এক এমন সিরিজ পড়ে শেষ করার পরই এর পরের বই পড়তে ইচ্ছা করে। পাঠক হিসেবে আশা করি সুপ্রতিম সরকার তার কলমের যাত্রা জারি রাখবেন
এই বইতে লেখা সাত কাহিনীতে এবারে কলকাতা পুলিশ ছাড়া রাজ্য পুলিশের কাহিনীও তুলে ধরা হয়েছে, সঙ্গে মহিলা গোয়েন্দার ছবিও প্রতিফলিত হয়েছে এই বইতে। অবশ্য অনেকে বলে থাকেন যে গোয়েন্দাপীঠ বইগুলোতে শুধু facts থাকে, আমার তো facts ই বেশি ভালো লাগে। তবু এই বইটি পড়লে সেই অভিযোগ দূর হবে। কাহিনীগুলো গল্পের আকারেই এবার লেখা হয়েছে, তাই আরো ভালো লাগবে।