Jump to ratings and reviews
Rate this book

পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল

Rate this book
চয়নবিলের তলা থেকে আবিষ্কৃত হল পাথরে খোদাই করে ১৪০০ সালের কথ্য বাংলা ভাষায় ও লিপিতে লেখা পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য। কিন্তু সেখানে কেন পঞ্চানন ঠাকুরের পূজার মন্ত্রে আমাদের পূর্বপুরুষরা লুকিয়ে রেখেছিল অজস্র আধুনিক অঙ্কের সূত্র?

ছ’শ বছর আগেকার বাঙালীর অজস্র অজানা পারদর্শিতার আলেখ্য দেখে গর্বে বুক ফুলে উঠবে, কিন্তু এক অশুভ বৈদেশিক শক্তি পঞ্চাননমঙ্গল ধ্বংস করার জন্য কেন উন্মত্তপ্রায়? বখতিয়ার খিলজি নালন্দা ধ্বংস করে তিন মাস ধরে মহামূল্যবান পুঁথি পুড়িয়ে আমাদের অতীত মুছে দিয়েছিল। তবে কি পঞ্চাননমঙ্গলের সংগে সঙ্গে হারিয়ে যাবে প্রাচীন বাঙালীর বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শনের শেষ দলিল?


সদানন্দ ভট্টাচার্য পাঁচমুড়ো গ্রামের সঙ্গতিহীন জমিদার। কিন্তু বাংলার প্রাচীন সাহিত্য এবং পুঁথিপাটা নিয়ে ভদ্রলোকের বেশ নাড়াঘাঁটা আছে। বিদেশ থেকে এক ভদ্রলোক আসেন ওঁর কাছে, যাঁর নাম মিঃ ধাড়া। এঁর নাকি লন্ডনে একটা মিউজিয়াম আছে, সেখানে তিনি বাংলা সাহিত্যের পুরোনো সব পুঁথি সংগ্রহ করে রাখেন। এই পুঁথির কাজেই তাঁর এদেশে আগমন এবং সদানন্দ ভট্টাচার্যের কাছে নাড়া বাঁধা। কালাচাঁদ নামে এক পুঁথি চোর ধাড়াকে চন্ডীদাসের এক নকল পুঁথি বিক্রী করতে এসে সদানন্দের হাতে ধরা পড়ে। সদানন্দ যখন পুঁথির নকলনবীশীর ব্যাপারে জ্ঞান দিতে ব্যস্ত, সেইসময় খবর পাওয়া যায়, পাঁচমুড়ো গ্রামের প্রায় মজে যাওয়া পুকুর চয়নবিলের নীচে থেকে নাকি কিছু পাথর পাওয়া গেছে, যাতে পুরোনো কীসব অক্ষর খোদাই করা আছে। পাথরের ওপর খোদাই করা লেখা পাঠ করে সদানন্দ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন – পঞ্চদশ শতাব্দীর বাংলা ভাষায় এক অনন্য রচনার অংশবিশেষ!
এই পঞ্চাননমঙ্গলের অস্তিত্ব নাকি অনেকটা নেক্রোনমিকনের মত। আরব মুসলমানদের কাছে এই বই নাকি, "শয়তানের পুঁথি"

পঞ্চাননকাব্য? মানে পঞ্চাননমঙ্গল? কিন্তু সেরকম তো কিছুর সন্ধান পাওয়া যায় না বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে...পঞ্চাননমঙ্গল আদৌ ছিল কিনা কে জানে? কিন্তু এই কাব্য মোটেই অন্যান্য মঙ্গলকাব্যের মত গূঢ় জীবনদর্শন বা দেবস্তুতি নয়। এতে লুকানো ছন্দের মধ্যে অঙ্ক।

গল্প এগিয়েছে এদিক ওদিক করে। কখনো ইতিহাস, কখনো বর্তমানকে ঘিরে। জালালুদ্দিনের সময়ের পঞ্চমুন্ডি গ্রামের ইতিহাসের ওপর ভর করে চলেছে পঞ্চাননমঙ্গল। তাতে যেমন এক বিয়োগান্তক মঙ্গলকাব্য আছে, তেমনি আছে এক অসম্ভব প্রতিভাবান বাঙালী কবিরাজের রচনায় গণিতের সাথে কাব্যের মেলবন্ধন। পড়লে চমৎকৃত হতে হয়।

লুপ্ত এক মঙ্গলকাব্য ঘিরে পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল এক অসাধারণ থ্রিলার।

প্রচ্ছদ – দেবাশীষ রায়

232 pages, Paperback

First published April 1, 2015

22 people are currently reading
485 people want to read

About the author

Pritam Basu

11 books75 followers

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
151 (44%)
4 stars
125 (37%)
3 stars
47 (13%)
2 stars
12 (3%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 58 reviews
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
March 10, 2021
বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত, পুঁথি আর মঙ্গলকাব্য মিশেলে একখান অপূর্ব ককটেল! রবীন্দ্রনাথ যথার্থ বলেছেন, ".... দেখিতে গিয়েছি পবর্তমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু, দেখি নাই শুধু চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপরে, একটি শিশিরবিন্দু"৷ পশ্চিমাদের এমন ককটেলে করতালি দিতে দিতে মারহাবা উল্লাসের মাঝে বাংলা সাহিত্যর এমন রত্ন বেশ দেরিতেই পড়লাম বৈ কি!
চণ্ডীদাস, গোবিন্দদাস, বিদ্যাপতি, গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট, ব্রক্ষগুপ্ত — আহা কি সব দারুণ কীর্তি৷ শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে যায়৷
বাংলা সাহিত্যর আদি নিদর্শন চর্যাপদ আর দ্বিতীয় নিদর্শন বড়ু চণ্ডীদাসে শ্রীকৃষ্ণবর্তন — এদ্দিন শুধু এইটুকু জেনেই যুগ আর তাদের সময়কালে কোণঠাসা হয়ে ' ছেঁড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি ' এজাহার ছিল, পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল পড়ে বোধদয় হলো সাহিত্যর যুগ আর সেই সময়কার কবিদের নিয়ে আরো বিশদ পড়াশোনা করতে হবে৷ (নাহ, BCS এর জন্য না!)

গল্পের শুরু করা যায় পাঁচমুড়োর জমিদার বৃদ্ধ সদানন্দ ভট্টাচার্যের পরিচয় দিয়ে৷ পেশায় এন্টিক ব্যাবসায়ী৷ ভগ্নপ্রায় জমিদারি কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছে আর কি৷ হঠাৎ একদিন পাঁচমুড়োর চয়নবিল থেকে পাওয়া যায় কয়েকশ বছর পুরানো এক মিথের সত্যতা — পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য৷ শিবের পাঁচ মাথার মূর্তি৷ ছোটবড় পাথরের গায়ে খোদাই করা পুঁথির আড়ালে আভাস দেয় হরেক রকমের অঙ্ক৷ সেইসব অঙ্কের সমাধান নিয়ে যায় বিজ্ঞান আর ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন তথ্যর — যেমন পাইয়ের মান নির্ণয়, আলোর বেগ পরিমাপ, আলজেব্রা, এলগরিদম ইত্যাদি প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞরা পশ্চিমাদের শতাব্দী আগেই লিখে গেছেন৷ সদানন্দ ভট্টাচার্য বিলেত থেকে ডেকে আনলেন ব্যবসায়ী অংশুমান ধাড়াকে৷ কিন্ত এই রহ্যসের ঘ্রাণ ধরে হাজির হলো আরব শেখ, যার ইচ্ছা যেকোন মূল্য পুঁথিগুলো পুড়িয়ে ফেলা হোক কারণ পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য হলো ' শয়তানের পুঁথি '৷ কারণ?
অন্যদিকে আছে কালাচাঁদ চোর, নকল লিপিলেখক হরু ঠাকুর আর ভাগ্নে গণিতবিদ চন্দ্রবদন৷ হরু ঠাকুর আর বদনের সাহায্য কালাচাঁদ শিলালিপির জট খুলতে থাকে৷
প্রাককথনে জানা যায়, কয়েকশ বছর পূর্বে রাজা জালালুদ্দিন সৈন্য পাঠিয়ে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলেন পঞ্চমুণ্ডের পঞ্চানন মন্দির৷ সাথে পুড়িয়ে দেওয়া হত প্রাচীন সব লিপি৷ কিন্তু রীতিমতো হাওয়ায় মিলিয়ে যায় সেই মন্দির৷ সৈন্যরা বৌদ্ধ-বিহারে আক্রমণ চালিয়ে খুঁজেছিল পঞ্চানন মন্দিরের পূজারীকে৷ কি নিগূঢ় রহস্য এই পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য?

রহস্য-রোমাঞ্চ আর ঐতিহাসিক তথ্য ভরপুর উঁচুমানের একটা বই৷ ফিকশনের চেয়ে বরং নন-ফিকশন ই ভালো ঠেকে৷ এমন বিষয় নিয়ে লিখতে, লেখক প্রীতম বসু বিস্তর গবেষণা করেছেন সেটা সহজেই অনুমেয়৷ তাছাড়া লেখকের সহজবোধ্য বর্ণনা, বাক্যগঠন তৃপ্তিদায়ক লেগেছে৷ এতসব গাদাগাদা তথ্য মাথায় জট পাকানোর মাঝে সদানন্দ আর কালাচাঁদের কথোপকথনে হিউমার দারুণ লেগেছে৷ অবশ্যই রেকমেন্ডেড!

(রিভিউটা যুতসই হলো না! তাও পড়েন বইটা৷)
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
July 29, 2021
সারঙ্গ নয়ন বচন পুন সারঙ্গ তনু মধুপানে।
সারঙ্গ উপর উগল দশ সারঙ্গ কেলি করথি মধ্যপানে।


‘অলঙ্কারের মাস্টার’ খ্যাত বিদ্যাপতির লেখা এই দুটি চরণে ‘সারঙ্গ’ শব্দটির অর্থ কোথাও হরিণ, কোথাও পদ্ম, তো কোথাও ভ্রমর, আবার কোথাও কোকিল কিংবা মদন। কোথায় ঠিক কোনটা বসবে ভাবছেন? বাংলা ভাষার আসল সৌন্দর্যই হয়তো এই রহস্যময়তায়। আর এই রহস্যময় ভাষার ইতিহাসের একটি দুষ্প্রাপ্য অধ্যায় হলো ‘পঞ্চাননমঙ্গলকাব্য’
"১২০০ হইতে ১৪৫০ অব্দের মধ্যে বাঙ্গালা সাহিত্যের কোনো নিদর্শন তো নাই-ই, বাঙ্গালা ভাষারও কোনো হদিশ পাওয়া যায় না।"—ডঃ সুকুমার সেন।


তাহলে ঠিক কেমন ছিল সে যুগের বাংলা ভাষা? কীভাবে লিখতো তখন এদেশের মানুষ? সেসব হারিয়েই বা গেল কোথায়? নাকি এর পেছনে আছে কোনো নিপাট ষড়যন্ত্র? বাংলা সাহিত্যের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের গূঢ় রহস্যের উদঘাটন নিয়েই একটি চাঞ্চল্যকর থ্রিলার লিখেছেন প্রীতম বসু। বলা চলে, মেধা এবং পরিশ্রম মিলিয়ে যে অসাধারণ কিছু তৈরী করা সম্ভব তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন এই বইতে।

কাহিনিসংক্ষেপ:

‘পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল’ বইটির কাহিনি আবর্তিত হয় চৌদ্দশ সালের হারিয়ে যাওয়া বেগবতী নদীর পার্শ্ববর্তী বল্লালগ্রামকে ঘিরে—যা আবার কালের পরিক্রমায় ‘পঞ্চমুণ্ড’ থেকে ‘পাঁচমুড়ো’ নাম নিয়েছে। পাঁচমুড়ো গ্রামের বহু পুরোনো চয়নবিলের তলা থেকে একদিন আবিষ্কৃত হলো পাথরে খোদাইকৃত ১৪০০ সালের কথ্য ভাষায় ও লিপিতে লেখা ‘পঞ্চাননমঙ্গলকাব্য’

কিছুদিন আগের ভূমিকম্পে চয়নবিলের নিচে থাকা চোরাগুহার মুখ ফেটে যাওয়ায় গুহা থেকে অনেক শিলালিপি এবং পাথরের খণ্ডাংশ বেরিয়ে আসতে দেখেন পাঁচমুড়োরই জমিদার সদানন্দ ভট্টাচার্য। ইংরেজ আমলে তার বাবার রমরমা পুঁথিব্যবস্যার দরুণ সদানন্দ নিজেও একজন দক্ষ পুঁথি বিশারদ। বাবার কাছেই তিনি এবং তার সৎভাই চিদানন্দ, পুঁথি যাচাইয়ের সকল দীক্ষা নেন। কিন্তু একসময় বুড়ো সদানন্দকে ধোঁকা দিয়ে চিদানন্দ বেশ কিছু প্রাচীন পুঁথি আর মূল্যবান নিদর্শন নিয়ে কলকাতা পারি দেয়। সদানন্দ যেতে পারেন না, তিনি থেকে যান এই পাঁচমুড়োর জমিদার বাড়িতে, পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে। আর তাই ব্যবস্যার এমন মন্দায় চয়নবিলের তলা থেকে অকস্মাৎ শিলালিপি ভেসে ওঠায় সদানন্দ যেন লক্ষ্মী হাতে পেলেন! লোকমুখে চলে আসা পঞ্চাননমঙ্গলকাব্যের মিথ আর শিলালিপিতে থাকা বাংলা ভাষার নমুনা দেখে এর মূল্য বুঝে উঠতে বিচক্ষণ সদানন্দের একমুহূর্তও দেরি হলো না। বাংলাসাহিত্যের এই দুর্মূল্য নিদর্শন বিদেশের মাটিতে সর্বোত্তম উপায়ে সংরক্ষণের ইচ্ছা কিংবা নিজের পকেটের পোয়াবারো দেখার লোভ, যে কারণেই হোক না কেন, সদানন্দ খবর দিলেন ‘লন্ডনে নিজের মিউজিয়াম থাকা’ ডঃ ধাড়াকে। সদানন্দ ডঃ ধাড়ার সাথে এসব নিয়েই কথা বলছিলেন এমন মুহূর্তে সেখানে এসে হাজির কালাচাঁদ পণ্ডিত ওরফে কালাচাঁদ চোর। চোর বলতে ঠিক সিঁদ কেটে ঢোকা চোর নয়, কালাচাঁদের কাজ জালপুঁথি বিক্রি এবং আসল পুঁথির হাতবদল। একাজে যে সে খুব পারদর্শী, এমনটাও নয়। এই যেমন শেষবার যখন সে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে লালশালুতে জড়ানো ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলের একটা পুঁথি বগলদাবা করে নিয়ে তিরের বেগে পালাতে গেল, অমনি সদ্য সাবান-পানিতে মোছা সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে শেষতক এক বেলা হাসপাতালে এবং তারপরের তিনমাস জেলে কাটাতে হলো। তবে এবেলায় তার চৌর্য-ইন্দ্রিয়ের জোরেই কালাচাঁদ বুঝে ফেললো সদানন্দ এবং ডঃ ধাড়া যা নিয়ে আলাপ করছেন তার বাজারমূল্য নেহায়েতই কম হবে না! আর তাই সুযোগ বুঝে সদ্য তুলে আনা শিলালিপিটা থেকে উদ্ধারকৃত বাংলা ভাষার সম্ভাব্য সেই পঞ্চাননমঙ্গলকাব্যের চরণদুটো অন্তঃকরণে চটপট তুলে নিয়ে সোজা চলে এলো হরু ঠাকুর আর তার ভাগনে-বদনের বাড়িতে। সেযুগের ম্যানুয়াল পুঁথি-ফটোকপিয়ার এবং বর্তমানে সেসব নকলে সিদ্ধহস্ত হরু ঠাকুর তার এযাবতকালের অভিজ্ঞতা দিয়ে তৎক্ষণাৎ চরণদুটির ছন্দ উদ্ধার করে ফেললেন। কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিলো যখন অঙ্কে পারদর্শী এবং সদ্যপাশকৃত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বদন সেই চরণদুটো থেকে আবিষ্কার করে ফেললো ছন্দের সাথে অঙ্কের এক অভূতপূর্ব মিশ্রণ! শব্দের অভাবনীয় কারুকার্যে লুকিয়ে আছে হাজার বছর আগে আবিষ্কৃত অঙ্কের নানান সূত্র। ছন্দ আর অঙ্ক যেন তাতে পাখির ডানার দুটোদিক, একপাশে অঙ্ক তো আরেকপাশে ছন্দ নিয়ে সেই পাখি যেন সাহিত্যের অন্ধকার আকাশে আলোর সন্ধানে উড়ে চলেছে!

আমি শুরুতেই বলেছি এটি একটি থ্রিলার। কিন্তু এতদূর এসে পাঠক হয়তো ভাবছেন এখানে থ্রিল কোথায়? সদানন্দ-ডঃ ধাড়া-কালাচাঁদ-হরু ঠাকুর আর বদনের এই চক্রে থ্রিল নিয়ে আসে আরবের এক পাগলা শেখ, যে নিজেকে পরিচয় দেয় আল-খোয়ারিজমি নামে। প্রাচীন নিদর্শনের অবৈধ কেনাবেচাকারী ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়া চক্রের বড়ো চাঁই এই শেখের প্রাচীন পুঁথি দিয়ে নিজ সংগ্রহশালা সুসজ্জিত করার কোনো সদিচ্ছা নেই, বরং সেসব হাতে পেলেই সে তা ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আর তাই অর্থলোভী ডঃ ধাড়া যখন শেখকে পঞ্চাননমঙ্গলকাব্যের আবিষ্কারের কথা জানালো, তখন লেখকের ভাষ্যে,

“কুর্ম অবতারের পিঠে মেদিনী যেন দুলে উঠলো।”
ডঃ ধাড়ার কথা শুনে কালাচাঁদ এবং হরু ঠাকুরও গিয়ে পৌঁছালো সেই শেখের ডেরায়। সেখানেই নিজের বেঈমান দালালের বুকবাহিত রক্তের স্রোতে দাঁড়িয়ে শেখ হুমকি দিল, "সাতদিনের মধ্যে আমার পঞ্চাননমঙ্গল চাই। না হলে—"। আর ঠিক এখান থেকেই আবিষ্কারের সাদাসিধে গল্পটার ভোল পাল্টে জীবনমরণের দোলাচলে থাকা টানটান উত্তেজনার থ্রিলার হিসেবে যাত্রা শুরু।

চরিত্র বিশ্লেষণ:

উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র কালাচাঁদ পণ্ডিত উপন্যাসটির অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ছিল আদ্যোপান্ত। চরিত্রটির গঠন বেশ নিরীক্ষণধর্মী, লেখকের যত্নের ছাপ এতে স্পষ্ট। লেখক এই চরিত্রকে ভালো-খারাপের বাঁধাধরা ছাঁচে ফেলতে চাননি, কিংবা বোকা-চতুরের কাঠগড়াতেও ফেলেননি। সময়ের প্রয়োজনে থরে থরে কালাচাঁদ নানা আঙ্গিকে পাঠকের সামনে আসতে থাকে। কখনো সে কার্যসিদ্ধির জন্য আচারের তেলকে মহামাঁষের তেল বলে সদানন্দকে পট্টি পড়ায়, তো কখনও বুড়ো সদানন্দের হরিণের মাংস আর দেরাদুন চালের ভাতের তৃপ্তিভোজে বিপত্তি বাঁধানোয় আক্ষেপ করে। কখনো সে বদনের অঙ্কের বই নিয়ে পালায় তো কখনো বদনের ব্যবস্যার জন্য নিজের ভাগের সব টাকা দিয়ে দেয়। কালাচাঁদ চরিত্রের এমন ধোঁয়াশা আবহই পুরো উপন্যাসকে আরও সুখপাঠ্য এবং বাস্তবিক করে তুলেছে।

এরপর চলে আসে সদানন্দ ভট্টাচার্যের কথা। পাঁচমুড়োর একসময়ের প্রতাপশালী জমিদারের সর্বশেষ বংশধর হিসেবে সদানন্দ বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। জমিদারি ঠাঁটবাট বর্তমানে না থাকলেও তার ব্যক্তিত্বকে এসবের কোনো কিছুই স্পর্শ করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, বাইরের শক্ত খোলসের ভেতরে থেকেও তার চরিত্রের নানান কোমল দিক উঠে এসেছে উপন্যাসের পরতে পরতে। তিনি কখনও কালাচাঁদকে শংকর মাছের চাবুকটা দিয়ে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন, তো আবার ক্রোধের মাত্রা কমে এলে নিজেকে সামলাতে ঠিকই বলে উঠেছেন, "তোর হরিণের মাংসের দামটা দিতে ভুলে গেছিরে কালা।" টাকার লোভে ডঃ ধাড়ার কাছে পুঁথি বেচতে যাওয়া থেকে ভুল বুঝতে পেরে নিজের মূল্যবোধে অটল থেকেই কালাচাঁদকে সাহায্য করার মধ্যে দিয়ে সদানন্দের চরিত্রের পূর্ণাঙ্গ পরিস্ফুটন হয়েছে।

এছাড়া হরু ঠাকুর, বদন, ডঃ ধাড়াসহ অন্যান্য চরিত্রগুলো উপন্যাসের সাথে বেশ ভালোভাবে মিশে গেছে। কোনো চরিত্রকে উটকো বা গল্পে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়নি।



যত যা ভালো-মন্দ:

ভাষা-ইতিহাসের প্রতি দূর্বলতা থাকলে এমন একটা নিরীক্ষাধর্মী এবং তথ্যবহুল বই শেষপাতে মিষ্টির মতো মনে হয়। বইটির সবথেকে আকর্ষণীয় দিক হলো এর হালকা আমেজ এবং সকৌতুক পরিবেশনা। খুব সাধারণ কিছু ঘটনাও লেখকের বুদ্ধিমত্তা এবং ভাষার কারুকার্যে বেশ আনন্দদায়ক হয়ে উঠেছে। যেমন কালাচাঁদ, হরু ঠাকুর আর বদন—এই তিনটি চরিত্রের নাম নিয়ে বেশ মজার একটা অংশ আছে। তিনজনকে প্রথম দেখে সদানন্দ বলেন,

তা বেশ করেছে, নচেৎ বামে কালাচাঁদ, মধ্যে হারুচন্দ্র, ভাগ্নে বদন যদি চাঁদ জোড়ে তাহলে তো এই ক্যাটক্যাটে সকালে আমার বাড়িতে চাঁদের হাট বসে যাবে।

এই অংশটুকু পড়তে নিয়ে মনে হয়েছে যেন শুধুমাত্র এই কৌতুকের জন্যেই তিনটি চরিত্রের এমন ছন্দবদ্ধ নামকরণ! ছোটোখাটো ঘটনার সাথে এমন চমকপ্রদ কিছু কৌতুকের মিশেল উপন্যাসকে অনেক উপভোগ্য করে তুলেছে।

উপন্যাসের গঠন নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই নজরে পড়ে ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্যপূর্ণ আলোচনা যা গল্পের স্বার্থেই চরিত্রদের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে এসেছে। ‘কথায় কথায় বলে যাওয়া’র মতো করে চরিত্রগুলোর মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেছেন চর্যাপদের কাহিনি, করেছেন ভাষার ব্যবচ্ছেদ, এনেছেন ইতিহাস ও লোককাহিনির অজস্র উদাহরণ এবং সবকিছু একসুতোয় এনে উপন্যাসে বেঁধেছেন বেশ শক্তপোক্তভাবে। তিনি তুলে ধরেছেন এদেশের নিদর্শন রক্ষার অপারগতার কথা, কীভাবে শুধু এই অপারগতার দোহাই দিয়ে ইংরেজরা আমাদের সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ নিজেদের কাছে নিয়ে গেছে, তাও রীতিমতো দিনেদুপুরে ডাকাতি করে। সেই সাথে উঠে এসেছে পুঁথিসহ নানা প্রাচীন মূর্তি পাচারের ঘটনা। গল্পচ্ছলে উঠে এসেছে কীভাবে এশিয়াটিক সোসাইটির সংগ্রহশালা থেকে অসংখ্য পুঁথি ইংরেজরা চুরি করে নিয়ে যায়। সেই সাথে নিজস্ব ইতিহাস সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের খানিকটা গাফিলতিও নজরে আসে। এসব কারণেই হয়তো বাংলা সাহিত্যের অনেক অমূল্য নিদর্শনই এখনও পাশ্চাত্যে সংরক্ষিত। অতীন্দ্র মজুমদারের ‘চর্যাপদ’ বইটিতেও তিনি এমনকিছুর উল্লেখ করেছেন—
“কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ভূতপূর্ব প্রধান অধ্যাপক প্রয়াত ডক্টর শশিভূষণ দাশগুপ্ত নেপাল থেকে একশোটি নতুন চর্যাপদ ১৯৬৩ সালে সংগ্রহ করে আনেন। এই চর্যাগুলির সন্ধান তিনি পান লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর আর্নল্ড বাকেরের কাছ থেকে। ডক্টর বাকের নিজস্ব সংগ্রহ থেকে ডঃ দাশগুপ্ত কুড়িটি চর্যাপদ টেপ রেকর্ডারে তুলে নিয়ে আসেন।”


একদিকে বাঙালির অজস্র বিষয়ে জ্ঞান এবং পারদর্শিতার আলেখ্য যেমন পাঠককে রোমাঞ্চিত করে, তেমনই অন্যদিকে এসব গৌরব হারানোর কলঙ্ক হতাশায় আচ্ছন্ন করে রাখে। লেখক শুধু এটুকুতেই থেমে থাকেননি, তিনি সেই চৌদ্দশ শতকের বাংলার একটি প্রতিচ্ছবির সাথেও পাঠককে পরিচিত করেছেন। চৌদ্দশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া নদী বেগবতীর কোলে ভেসে আসা বল্লালগ্রামের নন্দীধন, তার মেয়ে ভানুমতি আর পঞ্চমুণ্ড শিবমূর্তি, সেখানকার সেনাপতি জটামদন, আর রোমথা বলরামের জীবনগাথা নিয়ে যে মঙ্গলকাব্য সেসময়ের বাংলা ভাষার আদলে লেখক সাজিয়েছেন তা সত্যিই অভাবনীয়। বাংলা ভাষাসাহিত্য নিয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য সেই মঙ্গলকাব্যে সুস্পষ্টরূপে প্রস্ফূটিত হয়েছে। কালাচাঁদের ভাষ্যে বলতে হয়, “আরিব্বাস! এতো সেই হান্ডিকুন্ডি ভাষায় লিখে ফেললে!”

একজন লেখকের চিন্তাশক্তির সাথে পরিশ্রমের মিশেল ঘটলে কতটা সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্ম হতে পারে তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ এই ‘পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল’

তবে বইতে মুসলিমদের প্রতি একটা চাপা আক্রোশ বেশ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সময়ে-অসময়ে। বখতিয়ার খিলজির নালন্দার সংগ্রহশালা পোড়ানোর সেই ঘৃণ্য-ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়, তবুও পুরো বইতে মুসলিম শাসক এবং কর্ণধারদের নিয়ে লেখকের কিছুটা একতরফা বিরূপ প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ে, যার ছাপ ভিলেনরূপী শেখ চরিত্রের অতিরঞ্জিত নাটকীয়তার মাঝে দেখা যায়। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে বর্তমানের থেকে ইতিহাসের ঘটনায় থ্রিল ধরে রাখার প্রচেষ্টা তুলনামূলক বেশি বলে মনে হয়েছে। কিন্তু যেহেতু এটা একটা হিস্টোরিকাল ফিকশন, সেদিক বিবেচনায় এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণও নয়।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। যারা শুধুমাত্র রহস্য উপন্যাস হিসেবে কিংবা থ্রিলার হিসেবে পড়তে নেবেন তারা খানিকটা আশাহত হতে পারেন। তাদের ক্ষেত্রে বইটিতে বর্তমান প্রেক্ষাপট, অর্থাৎ কালাচাঁদ-সদানন্দ-হারুঠাকুর-বদন-শেখের আর্কের থেকে ইতিহাসের তথ্যসূত্র বেশি এসেছে বলে মনে হতে পারে। তবে আমার এমনটা মনে হয়নি।

স্বার্থকতা:

নিরীক্ষাধর্মী এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যনির্ভর এই হিস্টোরিকাল ফিকশনটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম মাইলফলক। ছোটোবেলার রসকসহীন ইতিহাসের বুলি মুখস্ত করে প্রজন্মের পর প্রজ���্মে ইতিহাস নিয়ে যে বিতৃষ্ণা জন্মেছে, তার তিতকুটে স্বাদ কমাতে বইটি মধুর মতোই কাজে দেয়। বইটি পড়ার পর যে কারো বাঙালি এবং বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহ তৈরী হবে। সেইসাথে বইয়ের শেষ কয়েক পাতায় সংযুক্ত রেফারেন্সসমূহ জ্ঞান-অন্বেষণের কাজটা আরেকটু সহজ করে দেয়। এছাড়া বইয়ের মলাট, কাগজ, বাঁধাই সবকিছুই অত্যন্ত মানসম্মত। বিশেষভাবে প্রচ্ছদের জন্য দেবাশীষ রায়েরও ধন্যবাদ প্রাপ্য। বইয়ের প্লট এবং কাহিনিবিন্যাসের সাথে এর থেকে ভালো প্রচ্ছদ হয়তো করা সম্ভব হতো না।



সর্বোপরি, স্বদেশের ভাষা এবং সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে গড়পড়তার বাইরে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে জানতে হলে বইটি পড়তে পারেন, আশা করি সময় ভালো কাটবে।
Profile Image for Kaushik Majumdar.
Author 37 books599 followers
July 21, 2018
ঐতিহাসিক বা বৌদ্ধিক থ্রিলার বলতে যা বোঝায়, বাংলায় তাঁর অভাব ছিল অনেকদিন। The name of the rose, Daughter of time, Morality play দূরে থাক, নিদেনপক্ষে ড্যান ব্রাউনের উপন্যাসগুলোর মত বই বাংলায় পড়িনি।
ফেবু বন্ধুদের পরামর্শে প্রথমেই পড়লাম এই বই। সত্যি বলতে বেশ আশা জাগাল। এমন বই খুব একটা পড়েছি বলে মনে হয় না। বাংলার প্রাচীন লিপি, মঙ্গলকাব্য, ভাষা সবকিছু মিলেমিশে এক হয়ে গেছে…স্বভাবতই কাহিনির আকারে বাংলার এক সমান্তরাল ইতিহাস রচনার চেষ্টা করেছেন লেখক এবং তিনি তাতে সম্পূর্ণ সফল। পঞ্চাননমঙ্গলের মত একটা কাব্য সেই যুগের ভাষায় লেখা যে কি কঠিন, তা সহজেই অনুমেয়…অনেক প্যাস্টিশে দেখেছি, কিন্তু মঙ্গলকাব্যের এত সুন্দর প্যাস্টিশে দেখে মন ভরে গেল।
একটাই অনুযোগ। এটাকে থ্রিলার আখ্যা দিতে আমার আপত্তি আছে। কাহিনি থেকে তথ্যের অংশ বাদ দিলে যা পড়ে থাকে, তা হল অতি দুর্বল এক প্লট…বোঝাই গেল লেখক আগে ঠিক করে নিয়েছেন তিনি পাঠকদের কি কি জানাবেন, আর তারপর সেই মত প্লট বুনেছেন; ফলে শুধু গল্পের গতি বারবার ব্যাহত হয়েছে। কাহিনির শেষটিও যেন তাড়াহুড়োতে করা…যে অধ্যাবসায় কাহিনির অঙ্গসজ্জায় আছে,তা মূল কাহিনিতে নেই।
কিন্তু তবু বলব এমন বই আরও হওয়া উচিত। বাংলা উপন্যাসের নামে যে সব গর্ভস্রাব কয়েক বছর ধরে পড়তে বাধ্য হচ্ছি (অবশ্যই দু একটি ব্যাতিক্রম আছে) সেখান থেকে প্রীতম বসু খানিক মুক্তি দিলেন
Profile Image for Shotabdi.
819 reviews194 followers
September 10, 2020
ঘটনা বর্তমানের কিন্তু ঘটনার বীজ চোদ্দশ সালের। চলনবিলের নীচ থেকে বের হওয়া পাথর আর তার গায়ের লেখা থেকে পঞ্চাননমঙ্গল কাব্যের হদিশ পেয়ে গেলো এক মার্কামারা চোর কালাচাঁদ! বৃদ্ধ জমিদার সদানন্দ এর কাছে এল অংশুমান ধাড়া, এক এন্টিক ডিলার। তিনশো বছর আগের কবিয়ালের নামে নাম রাখা হরুঠাকুর যে আসলে পুঁথি নকলে ওস্তাদ, আর তার ভীষন মেধাবী ভাগ্নে চন্দ্রবদন যে যেকোন অংকের সমাধান মুখে মুখেই করে দিতে পারে তারাও যোগ দিলো এই রহস্য আর বিপদের খেলায়।
জমিদার সদানন্দ এবং তাঁর সৎ ভাই চিদানন্দ উভয়েই প্রাচীন পুঁথি বিশেষজ্ঞ। এদিকে আরব থেকে নিজেকে পুনরায় জন্ম নেয়া 'আল খোয়ারিজমি' ভাবা এক অর্ধোন্মাদ হিংস্র খুনীও পেতে চাইলো পুঁথি। শুরু হলো রহস্য-খুন-মিথ্যে-ধূর্ততার সাথে বাংলার ইতিহাসের এক প্রাচীন গলিতে সন্ধান।

কে কবে খেয়াল করেছিল চৌদ্দশ সালের ভাষাতে 'চ' উল্টোভাবে লেখা হতো? আর সে ধারাবাহিকতাতেই যুক্তাক্ষরে আজও 'চ' (অঞ্চল) উল্টোই রয়ে গেছে?
একজন ডাক্তার হিসেবে আমি লজ্জিত বোধ করছি যে আমি জানিনা, কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইনের আবিষ্কারক একজন উপমহাদেশীয় বিজ্ঞানী উপেন্দ্রমাথ ব্রহ্মচারী, যিনি ১৯২৯ সালে নোবেল প্রাইজের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন!

সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষাতে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগ আর মধ্যযুগ অপরিহার্য বিষয় হওয়াতে আমি বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ এবং তৎকালীন সাহিত্য সম্পর্কে কিছু জানি। নয়তো পুরো বিষয়টিই হয়ে থাকতো আরো অনেক বিষয়ের মতো আমার কাছে একেবারেই অভিনব!

মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যকে ঘিরে ইতিহাস আর কল্পনার মিশেলে গড়ে তোলা এমন চমকপ্রদ থ্রিলারের জন্য লেখককে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ! এই ২৩০ পৃষ্ঠার মধ্যে উনি কী তুলে আনেননি?

প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাটা এতো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন, একই সাথে শিক্ষণীয়ভাবে। মধ্যযুগের কাব্য অনুসরণ করে লিখে ফেলেছেন আস্ত এক মঙ্গল কাব্য। গভীর প্রজ্ঞা আর অধ্যবসায় না থাকলে অসম্ভব এই বিষয়টা। এর মাঝে আবার শ্লোকে শ্লোকে গুঁজে দেয়া হয়েছে অংকের ধাঁধাঁ! ভাবা যায়?

মধ্যযুগের কাল্পনিক কাহিনীতে এসেছে প্রেম, এসেছে তৎকালীন সমাজব্যবস্থা। ১৩শ-১৫শ সালের ইতিহাসের ঘোড়ায় চেপে হাজির হয়েছেন বাবর থেকে শেরশাহ, জালালুদ্দিন থেকে প্রতাপাদিত্য। এসেছে বড়ু চণ্ডীদাসের হাত ধরে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, এসেছেন চৈতন্যদেব।

উপমহাদেশীয় রহস্যাবলি খুঁড়ে এনেছেন আর্যভট্টকে। দেখাতে চেয়েছেন, আমাদের প্রাচীন মেধা কত অনায়াসে পৃথিবী জয় করার ক্ষমতা রাখে! আবার মন্দির নির্মাণে মুসলিম শ্রমিকের মুখের একটা কথার মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন অসাম্প্রদায়িকতা। আবার পরবর্তী ভাবনাতেই চলে এসেছে রাজনৈতিক উন্মোচিত মুখোশ।

লেখার স্টাইল সরস। কালাচাঁদের মতো এক চোর আবার অতি বুদ্ধিমান চরিত্রকে দিয়ে এনেছেন কমিক রিলিফ। কিছুটা যেন শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। নৃশংস আরব শেখ, চলন বিলের উত্তোলিত পাথরের ইতিহাস, মিথ্যের পশরা বুনে শয়তানকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা একই সাথে বদনের বাবার মৃত্যুর গল্পে মানবিকতা, সবই ছুঁয়ে গেছেন লেখক।

ইতিহাস-দেশ-ঐতিহ্যকে ভালোবেসে এমন অভিনব স্বাদের রোমাঞ্চকর স্বাদ বাংলা সাহিত্যে সুদৃশ্য এক পালকই যোগ করে দিলো। বইয়ের শেষে গ্রন্থপঞ্জি এবং লিপিমালার কালক্রম যোগ করে আরেকটা অসাধারণ কাজ করেছেন লেখক। প্রকাশক ও তিনি নিজেই। এমন বই আরো লেখা হোক, আরো সামনে আসুক বাংলার সম্পদ। গল্পের ছলে পাঠকেরা জেনে যাই কীভাবে আজকের আমরা!
Profile Image for Avishek Bhattacharjee.
370 reviews79 followers
April 15, 2024
প্রাচীন এক পুথিকে ঘিরে পুরো গল্পটা সাজানো। এ পুথির মধ্যে ভক্তির সাথে সাথে অংক শাস্ত্রের বিভিন্ন সমীকরণ বর্ননা করা আছে। সূদূর আরব থেকে আসা এক পাগলা শেখের এই পুথি চাই। এর জন্য রক্তগঙ্গা বয়ে দিতেও আপত্তি নেই এ শেখের।

মূল গল্পটা আসলে খুব বেশী বড় না। প্লট ছোট হলেও লেখক খুব সুন্দর করে প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। পেয়াজের মত পরতে পরতে গল্পটা খুলেছেন। চরিত্রের কথা বলতে গেলে কালাচাদ আর হরু ঠাকুর অসাধারণ সৃষ্টি। লেখক চাইলে এ দুটো চরিত্র দিয়ে সিরিজ বানাতে পারেন। বদন শেষে দিকে এসে তুরপের তাস হয়ে গেল। লেখকের প্রকৃতির বর্ননা অসাধারণ। এত সুন্দর যেন চোখের সামনে ভাসছিল সব। মন্দির এক রাত্রে গায়েব হয়ে যাওয়াটা অলৌকিক লাগলেও পরে সেটার ব্যাখাটা চমৎকার হয়েছে। তবে ভারতীয় গণিতবিদদের খুব বেশী গ্লোরিফাই করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। আর ইসলামিক শাসকদের বেশ অত্যাচারী দেখানো হয়েছে। এগুলার সত্য মিথ্যা আমি জানি না। লেখক প্রচুর পড়াশোনা করেছেন বলে মনে হল। এমনকি রেফারেন্সগুলাও বইয়ের শেষে দিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং ডাউট থাকলেও পুরাপুরি অস্বীকার করাও যাচ্ছে না।

সবশেষে বলি, গদ্য বেশ ঝরঝরে। আরাম করে পড়ে ফেলেছি৷ এমনকি অনেক কঠিন বিষয়ও লেখক খুব সহজ সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন। সবমিলিয়ে আমার বেশ লাগল পড়তে।
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
July 5, 2020
দারুণ!
ইতিহাস, ফিকশন, থ্রিল, সবকিছুরই সংমিশ্রণ। প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে ছিল বইটা নিয়ে, তাই ১ তারা কম দিলাম। তবে ওভারঅল খুব ভালো বলতে হয়। বাই দ্য ওয়ে, হরিণের মাংসের সুন্দর রেসিপিও আছে দেখলাম বইটাতে! 😁
Profile Image for DEHAN.
275 reviews86 followers
May 14, 2020
এই বইটিতে হরিণের মাংসের রেসিপি দেওয়া আছে ।
Profile Image for Momin আহমেদ .
112 reviews50 followers
June 26, 2020
বই টা পড়ে মনে হচ্ছে এ পর্যন্ত যা পড়েছি তার মধ্যে নতুন কিছু যোগ হোল।
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews238 followers
September 15, 2019
প্রাচীন বাংলার সব বাঘা বাঘা ইতিহাসবিদদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চয়নবিলের তলা থেকে আবিষ্কৃত হলো একটা আজব লিপি। পাথরে খোদাই করা লিপি। প্রাচীন ভাষা নিয়ে জানাশোনা আছে বুড়ো সদানন্দ আর তার সৎ ভাই চিদানন্দের (এই দু'জনের মাঝে আবার ব্যাপক খটাখটি) ইনারা পুঁথি দেখেই বলে দিতে পারে কোনটা কোন শতকের লেখা। এই সদানন্দ বুড়োর পূর্বপুরুষরা আবার ছিলেন জমিদার। জমিদারি এখন আর নাই কিন্তু বুড়োর ভাবসাব আর জমিদারি মেজাজটা আছে ঠিক আগের মতোই। তো যা বলছিলাম... সেই পাঁচমুড়ো গ্রামের চয়ন বিলের নীচ থেকে পাথরে খোদাই করা লিপিটার গায়ে লেখা ভাষা থেকে যা বোঝা গেলো এইটা সেই অন্ধকার যুগের বাংলা ভাষার নিদর্শন। আবার এই পাঁচমুড়ো গ্রামের সাথে জড়িয়ে আছে এক কিংবদন্তি, বাবা পঞ্চানন। শিবের পাঁচমাথার মূর্তি। কথিত আছে, রাজার নির্দেশে মন্দির ভাংতে এসে অবাক হয়ে যায় সেনাদল। রাতারাতি ভ্যানিশ! যেন জাদুমন্তর! ভানুমতীর খেল। অবশ্য মন্দিরের পুরোহিত আর পুরোহিতের মেয়ের খোঁজও কেউ পায় না আর। শেষ নয় এখানেই, সেই আমলে লেখা পঞ্চানন মঙ্গল কাব্যটাকে রহস্যজনক কারণে দেখতে পারতো না তখনকার মুসলিম শাসকেরা। পঞ্চানন মঙ্গলের নাম দেয় শয়তানের পুঁথি, যেখানে যা পাবে সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস করে ফেলার নির্দেশ। মন্দির ভ্যানিশ হয়ে যাবার সাথে সাথে হারিয়ে যায় সেই রহস্যজনক পুঁথিটিও। রয়ে যায় কিংবদন্তি...

আবার আসি বর্তমানে। সদানন্দ বুড়ো টু-পাইস কামাবার ধান্দায় যোগাযোগ করে এক এজেন্টের সাথে। বুড়ো কি আর জানতো গায়ে পড়ে সে ঝামেলা ডেকে আনছে!! ঘটনার সাথে জড়িয়ে যায় চোর কালাচাঁদ, লিপিকর হরু ঠাকুর আর হরু ঠাকুরের ভাগ্নে বিশিষ্ট অঙ্কবিদ বদন। গল্পে তো একজন ভিলেন লাগে। লেখক প্রীতম বসু এক্কেবারে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মরুভূমির দেশ থেকে হাজির করেন আমাদের গল্পের ভিলেন এক আরব শেখকে। নামটাও অদ্ভুত আল খোয়ারিজমি। খুন-গুম তার কাছে কোন ব্যাপারই না! ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। দুই দিক থেকেই টাকা খেতে যেয়ে ফেঁসে যায় চোরা কালাচাঁদ। ভাগ্নে বদনের কল্যাণে একটু একটু করে উদ্ধার হতে থাকে সেই প্রাচীন লিপির রহস্য। কী এমন আছে এই লিপিতে? কেনই বা তখনকার শাসকেরা মরিয়া হয়ে এভাবে ধ্বংস করে দিত বাংলার সমস্ত পুঁথি, গবেষণার নিদর্শন কিংবা হানা দিতো লাইব্রেরিগুলোতে?

ড্যান ব্রাউন তো ইতিহাস, কালচার, আর্ট ইত্যাদি ইত্যাদি মিক্স করে কী সুন্দর আস্ত একেকটা বই লিখে ফেলেন। আমাদেরই ভাষার ইতিহাস, প্রাচীন পুঁথি, মঙ্গল কাব্য সঙ্গে একটুখানি ইতিহাসের মিশেল আর মিথ মিলিয়ে যে এত্তো সুন্দর একটা বই লিখে ফেলা যাবে-পড়ার আগ পর্যন্ত কল্পনাই করিনি। ভাইরে ভাই! লেখক প্রীতম বসুকে হ্যাটস অফ! বিস্তর পড়াশোনা, গবেষণা আর ঘাঁটাঘাঁটি যে করতে হয়েছে বইয়ের পিছনে নির্ঘন্ট দেখেই টের পাওয়া যায়। যাকগে! বলার কিছু নাই.. ভাষা যেমন পরিবর্তন হচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে পরিবর্তন হচ্ছে লেখার স্টাইল আর তার কন্টেন্টও। 'কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল, চঞ্চল চীএ পইঠো কাল'-থেকে হালের 'পাট ক্ষেতে পাট গাছ চিকন চিকন পাতা ,তুমার কথা মনে পড়লে বুকে লাগে বেতা'-তো তারই প্রমাণ। :P

বই-পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল

লেখক-প্রীতম বসু

#বই_হোক_অক্সিজেন

#happy_reading
Profile Image for Shreyashi Bhattacharjee Dutta.
81 reviews9 followers
December 14, 2021
খুন ছাড়া থ্রিলার। একটু সাজিয়ে বলতে গেলে- হাস্যরসে মুড়ে, টানটান উত্তেজনায় ভরে, এক আশ্চর্য জ্ঞানভান্ডারের ভেতর পাঠককে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে- পোশাকি নাম তার হয়েছে 'থ্রিলার'। আমি প্রথমবার এমন থ্রিলার পড়েছি।

পাঁচমুড়ো গাঁয়ের এক সঙ্গতিহীন জমিদার সদানন্দ ভট্টাচার্য। পুরনো বইপত্র ও পুঁথি নিয়ে তাঁর বেশ জ্ঞান রয়েছে। একদিন তাঁর কাছে পুঁথি যাচাই করাতে ডঃ ধাড়া নামে একজন এলেন। তাঁর নাকি লন্ডনে একটি মিউজিয়াম আছে যেখানে তিনি পুরনো পুঁথি সংগ্রহ করে রাখেন। সেই সময়ে খবর পাওয়া গেল যে চয়নবিল পুকুরের নিচে অনেক পাথর পাওয়া যাচ্ছে, পুরনো অক্ষরে অনেক কিছু লেখা রয়েছে সেই পাথরে। সেই লেখাগুলি দেখে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন সদানন্দ। তাঁর মনে হয় এই সেই ৬০০ বছর আগে বিদেশী শাসকদের ধ্বংসলীলার সময়ের হারিয়ে যাওয়া পুঁথির একটি, 'পঞ্চাননমঙ্গল'।

এবারে শুরু হয় আসল গল্প। ধাড়ার মুখে এই পঞ্চাননমঙ্গলের খবর পেয়ে মরিয়া হয়ে এই দেশে ছুটে আসে এক আরব শেখ। কালাচাঁদ ও হরুঠাকুর এই সাংঘাতিক খুনীর হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে কথা দিয়ে ফেলে যে তাঁরা সাতদিনের মধ্যে এই পঞ্চাননমঙ্গল এনে দেবে।

কিন্তু এবার কী হবে?
কেনই বা এই কাব্যটি এত গুরুত্বপূর্ণ?

এই কাব্যে নাকি মন্ত্রের ভেতরে অঙ্কের সুত্র লুকিয়ে আছে যা থেকে বোঝা যায় যে বহু বহু বছর আগেই ভারতীয়রা পাইথাগোরাস থিওরেম, জিওমেট্রি, অ্যালজাব্রার মত অঙ্কের সুত্র আবিষ্কার করে গেছিল।
এবারে হরু ঠাকুর, কালাচাঁদ, বদল আর সদানন্দবাবু মিলে নিজের প্রাণ বাঁচাতে নিজেরাই সেই মঙ্গলকাব্য বানাতে চেষ্টা করে।
---
এটা স্পষ্ট যে এই উপন্যাসটি ঠিক তথাকথিত ডিটেকটিভ বা থ্রিলারের মত নয়। এখানে লেখক মঙ্গলকাব্য, পুঁথি, সেই সময়কার ভাষা, অঙ্ক, ইতিহাস, বিজ্ঞান, এসব দিকেই নজর দিয়েছেন বেশি। আর তার জন্য এই বইয়ের মজাটা কিছুমাত্র কমে যায়নি।

বোঝা যায় যে লেখক অনেক পড়াশোনা করে এই বই লিখেছেন। তিনি কতটুকু ঠিক বা ভুল লিখেছেন তার মুল্যায়ন করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে বইটি খুবই উপভোগ্য। একটু অন্যরকম যেন।

পড়তে পড়তে অনেক কিছু জানা যায়। ভারতীয় হিসেবে গর্বে বুক ফুলে ওঠে। এর মধ্যে আবার লেখক হরু ঠাকুরের স্বপ্নের ঘোরের মাঝে ৬০০ বছর আগের এক ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন, সাথে একখানা ছোটখাটো মঙ্গলকাব্যও দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন! তাও আবার সেই যুগের ভাষায়!
ধন্যি ছেলের অধ্যাবসায়।

ফিকশন ও নন ফিকশনের মিশেল এই বইটি সব বয়সের পাঠকের জন্য উপভোগ্য হবে। বৃদ্ধ জমিদার, চোর, কবি ও এক বেকার কিন্তু জিনিয়াস গণিতজ্ঞ একসাথে কীভাবে বাংলার এক সম্পদকে বাঁচাতে চেষ্টা করলো তার এক মজাদার, সুন্দর গল্প এই 'পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল'। লেখকের থেকে আরো বই পাব আশা করছি।
Profile Image for Soumyabrata Sarkar.
238 reviews40 followers
December 29, 2017
নামটা শুনলেই অনেকে মুখ সিটঁকে উঠবেন। ও বাবা। এটা আবার কোন পাঁচালির বই? এক ক্ষেত্রে পাঁচালির বই-ই বটে। তবে তার থেকেও অনেক বেশি কিছু এই বইয়ে আছে। মাত্রাধিক ভাবে আছে এক অনবদ্য সাহিত্য। প্রকাশক এখানে লেখক নিজেই। এবং সেই হেতু তাঁর প্রাপ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও আন্তরিক সাধুবাদ। আর পাঠকের প্রাপ্য একটি অমূল্য সাহিত্যরত্ন : ইতিহাস, কাব্য, গদ্য, ধর্ম, সমাজব্যবস্থা, কিংবদন্তি, গণিতের মত বিষয় যেমনি সন্নিবিষ্ট হয়ে আছে এই একমেবাদ্বিতীয়ম লেখনীতে, তেমনি কৌতুক, রহস্য, অশেষ গবেষণা, সাবলীল ভাষা ও মজবুত বাঁধুনীর এই কাহিনী।

অনবদ্য আলেখে লেখক ফিরিয়ে এনেছেন হারিয়ে যাওয়া বাংলার ভাষা ও গল্পকে। চোর, জমিদার, কবি ও চাকরিয়বিহী��� গণিতজ্ঞ : এই চারমূর্তির চেষ্টায় গড়ে ওঠা দুর্ভেদ্য রচনা, এবং সেই বুনোটের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা ছবির টুকরো। পুরোহিত নন্দীধন, আর্যভট্ট, রাজা গনেশ, কন্যা ভানুমতি, শীলভদ্র, রোমথা বলরাম, বখতিয়ার খিলজি, ব্রহ্মগুপ্ত, জমিদার জটামদনেই মতো কাল্পনিক ও বাস্তব চরিত্রের সংমিশ্রনে উঠে এসেছে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি ও তার দৈনন্দিন জীবন, রূপ, তার লিপি ও তৎকালীন সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম। অসাধারণ অভিজ্ঞতা এই পাঠের। পড়তে শুরু করলে, শেষ না দেখে থামা কঠিন।
লেখক যে লুপ্ত ভাষারূপ গবেষণা ও ধৈর্য ধরে আয়ত্ত করে প্রাচীন বাংলায় এই সমগ্র কাব্য লিখেছেন এবং তার সাথে গণিতের মাত্রা জুড়েছেন, এখানেই তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। পড়তে ও বুঝতে সহজ হলেও, এর রচনা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
যদিওবা বইটির গল্প 'পঞ্চাননমঙ্গল' নামে কাল্পনিক মঙ্গলকাব্যকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, লেখক কিন্তু শুধুমাত্র মঙ্গলকাব্যের সীমায় বইটিকে না রেখে তাকে এক রহস্যে ঠাসা fiction-এর কাঠামোতে মুড়ে পাঠকের কাছে পরিবেশন করেছেন। গদ্য-পদ্যের ঠাসবুনুনিতে, বিজ্ঞান-সাহিত্য-ইতিহাসের মেলবন্ধনে এ এক স্বতন্ত্রশ্রেণীর সাহিত্যের ঘরানা হয়ে উঠেছে। যারা fiction-এর রহস্য-রোমাঞ্চ পড়ে আনন্দ পেতে চান এ-বই তাদের আনন্দ দেবে, আবার যারা আরো গভীরে নেমে বাংলাভাষার হারিয়ে যাওয়া অতীতের স্বাদ পেতে চান তাদেরও এ-বই তৃপ্তি দেবে।

একটি অবশ্য-পাঠ্য বই।
Profile Image for Rito.
38 reviews
January 28, 2019
This book should not be viewed as just another book. This book is an intellectual thriller.

So what? There are lots of thrillers of this kind.

Yes, in other languages. Not in Bengali.

For an ethnicity that has been around for thousands of years, finds its mentions in from Ain-e-Akbari to the Mahabharata, has a language that has been there for north of a thousand years, the list of books like this is pretty thin- some would say- non-existant.

This book fills the void. The book is rich in the true stories of the past glories of the Bengalis, the author tells the tale of an imaginary Mangal-kabya and through the tale, he tells us a lot more.

Only, the only fault of this almost perfect book?
Sometimes, I felt that information has been force-fed (not that I mind reading them, but one has to keep the matter of continuity in mind). Sometimes it was visible that the author deliberately tried to make the book accessible to all.

That's all. I can understand the amount of caliber needed to write a book like this.

Hats off and thank you, Basu babu.

A book like this was needed. The Bengali people deserved this.
Profile Image for Arijit Ganguly.
Author 2 books31 followers
October 4, 2019
#পাঁচমুড়োর_পঞ্চাননমঙ্গল
লেখক ও প্রকাশক~ প্রীতম বসু

এই বই দু বছর আগে প্রকাশিত হলেও হঠাৎই দেখলাম এর চর্চা খুব বেশিই হচ্ছে লেখকের সাম্প্রতিকতম বই "চৌথুপির চর্যাপদ" বেরনোর পর থেকে। শুনছিলাম মঙ্গলকাব্য নিয়ে নাকি বাংলা থ্রিলার লিখেছেন প্রবাসী এই লেখক, আর নিজেই প্রকাশ করেছেন এই বই। স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি যে বইটা তবুও পড়বার কোনও ইচ্ছে করছিল না। সাধারণ পাঠক হলে যা হয়, মনে হচ্ছিল নিজে প্রকাশ করা বইয়ের ভালো হওয়ার চান্স কম। কিন্তু ১৫০ টাকা দাম দেখে অর্ডার করেই ফেললাম, দেখাই যাক না কী এমন আহামরি লিখেছেন।

রাত ১২টা থেকে আমি বই পড়া শুরু করি। পাঁচমুড়ো ধরলাম যেদিন, সেদিন ৭০% পড়ার পর বই রাখতে গিয়ে দেখি ভোর চারটে বেজে গেছে। জোর করে বইটা রেখে শুলাম, কিন্তু ঘুম আর এলো না। পরের দিন দুপুরে বাকিটা পড়ে শেষ করলাম বলব না, জাস্ট গোগ্রাসে গিললাম। "পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল" সুপার ডুপার হিট!

বাংলা মঙ্গলকাব্য নিয়ে এমন গ্রিপিং থ্রিলার প্রথমবার পড়লাম, আর প্রীতম বাবুর ফ্যান হয়ে গেলাম। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন, এটা মঙ্গলকাব্য নিয়েই থ্রিলার। এক জায়গায় পড়েছিলাম ঐতিহাসিক তথ্যের ভারে ক্লান্ত এই বই, জোর করে সব ইনফো ঢোকানো। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একবারও মনে হল না সেই কথা। গল্পের ছলেই বিভিন্ন চরিত্রের মুখে এমনভাবে তথ্য সাজানো হয়েছে, যে তাতে গল্পের গতি আরও বেড়েছে, আর থ্রিলার মেটেরিয়ালও যুক্ত হয়েছে। গ্রাম বাংলার এমন নিখুঁত বর্ণনা আর চরিত্রের চিত্রায়ণ দেখে অদ্ভুতুড়ে সিরিজ মনে পড়তে বাধ্য।

সদানন্দ হচ্ছেন পাঁচমুড়োর জমিদার, অংশুমান ধাড়া একজন লন্ডন নিবাসী আর্কিওলজিস্ট, কালাচাঁদ হল একটা চোর, একটা অঙ্কপাগল ছেলে আর তার কাকা, আর একজন খতরনাক আরব শেখ - এদের নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে গেছে গল্প। ১২০০ থেকে ১৪৫০ অব্দের মধ্যে বাংলা সাহিত্য বা ভাষার কোনও হদিশ পাওয়া যায় না। এদিকে পাঁচমুড়ো গ্রামের চয়নবিলের তলা থেকে আবিস্কৃত হল পাথরে খোদাই করে ১৪০০ সালের কথ্য বাংলা ভাষায় ও লিপিতে লেখা পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য। কিন্তু সেখানে পঞ্চানন ঠাকুরের পূজার মন্ত্রে লুকানো অজস্র আধুনিক অঙ্কের সূত্র। বক্তিয়ার খিলজি নালন্দা ধ্বংস করে
তিনমাস ধরে মহামূল্যবান পুঁথি পুড়িয়ে আমাদের অতীত মুছে দিয়েছিল। ঠিক সেইরকমই এক অশুভ বৈদেশিক শক্তি পঞ্চাননমঙ্গল ধ্বংস করার জন্য উন্মত্ত। শুরু হল এক সম্পূর্ণ অন্য স্বাদ আর ঘরানার থ্রিলার।

নাহ্, আর স্পয়লার দেব না। একটা দুর্দান্ত বাংলা বই পড়লাম এটুকু হলফ করে বলতে পারি। এই বই কোনও প্রকাশনা সংস্থা হাতে পেলে যে কী করত, ভেবেই অবাক হচ্ছি। প্রীতমবাবুকে কুর্ণিশ জানাই বাংলা ভাষার ইতিহাসকে এমন সুকৌশলে পরিবেশন করার জন্য। এই বই স্কুলে পেলে আমরা ধন্য হতাম ছোটবেলায়।

© অরিজিৎ গাঙ্গুলি
Profile Image for Nisha Mitra.
141 reviews39 followers
November 24, 2019
পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল


ওপরে উদ্বৃত বইটার নাম এর মধ্যে খেয়াল করার বিষয়টি হলো "ঞ্চ" অক্ষরটি। যেটি তে 'চ' লেখা আছে উল্টানো 'ব' এর আকারে। খ্রীষ্ট পরবর্তী ১৪০০ অব্দ ও তার কাছাকাছি সময়ে 'চ' লেখার এই কায়দা পরবর্তী কালে লোপ পেলেও 'ঞ্চ' তে আদিযুগের বাংলা ভাষাটি অবিকল একই রয়ে গিয়েছে বাঙালির বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাস হয়ে ।
গল্পের শুরু এখান থেকেই। গল্পের থেকে বলা ভালো ইতিহাস। ১২০০ থেকে ১৪৫০ অব্দ বাংলা সাহিত্যে এক কালা যুগ।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সহ গ্রামাঞ্চলের ছোটোখাটো মন্দির এও বখতিয়ার খিলজীর দলবল মূল্যবান পুঁথি পুড়িয়ে দিচ্ছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে সোনার ইতিহাস।
এই চূড়ান্ত অব্যবস্থায় হারিয়ে গেলো পঞ্চানন মঙ্গল পুঁথিটিও। সাথে সাথে বাঙালির সেই যুগের ইতিহাস। তারপর প্রায় ৬০০ বছর পর পাঁচমুড়ো নামক গ্রামে হঠাৎ প্রাচীন এক জলাশয় থেকে উঠে এলো এক নরকঙ্কাল - শিকল দিয়ে পাথরে জড়ানো। আর সঙ্গে সাধারণের অজ্ঞাত বাংলা ভাষায় খোদাই করা পাথরের টুকরো।
তারপর ধীরে ধীরে যখন পঞ্চানন মঙ্গলের ধাঁধার মধ্যে থেকে অঙ্কের সূত্র উন্মোচিত হলো , পাঠকের তখন উত্তেজনায় রোম খাড়া হয়ে উঠতে বাধ্য।


প্রথমত বলে রাখা ভালো এটি আদন্ত্য থ্রিলার নয়। তাই এখানে থ্রিলার এর মত খুঁটিনাটি ডিটেলস এ লেখক বেশি দৃষ্টি দেননি। বরং গ্রামবাংলার ঐতিহ্য কে লেখক সূচারু রূপে বর্ণনা করেছেন।
এতটাই যে, ইতিহাস বলতে গিয়ে লেখক কখন সমাজ সংসার এক করে জাদু বাস্তবতায় হারিয়ে গিয়েছেন তা কাগজের পুঁথি হজম করে উপভোগ করা যাবেনা। দরকার গভীর মননের।
এখানেই,
সাহিত্য সমালোচকের মত এই বই পড়তে গেলে খালি চোখে অনেক ভুল ধরা পড়েছে। কিছু অত্যাশর্য জিনিস লজিক এ বাধ সেধেছে তবুও শেষ পৃষ্ঠা উল্টে কখন যে মুগ্ধতায় চোখের কোণে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে আসলো বুঝতে পারলাম না। লেখকের মুন্সিয়ানা বিশেষ করে বাংলার অমূল্য সম্পদ বাঁচানোর জন্য চার মানুষের লড়াই এর কাছে বড়ো দরিদ্র এই সমালোচনা গুলো।

আর যাই হোক কোনো আধুনিক লেখক কে আমি মঙ্গলকাব্য লেখার সাহস করে উঠতে দেখিনি।
Profile Image for Umma Jannat.
43 reviews14 followers
December 13, 2020
হায়ারোগ্লিফ,কিউনিফর্ম,ক্রিপ্টোগ্রাফ,সাইফার কোড,মিশরীয় সভ্যতা ,গ্রীক পুরাণ,রোমক পুরাণ,নর্স পুরাণ,মায়ান,ইনকা সভ্যতা ইত্যাদি অনেক অজানা রহস্য তো জানা হলো,এবার বাংলায় আসা যাক।
বাংলা ভাষা বা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন বিভিন্ন শিলালিপি-তে পাওয়া যায়।সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে অন্নদামঙ্গল কাব্য,চণ্ডীমঙ্গল,ধর্মমঙ্গল কাব্য,মনুসংহিতা,চর্যাপদ আরো কত কি।কালের বিবর্তনে কত কিছুই হারিয়ে গেছে।রুপকথা/উপকথা হয়ে কত গল্প,ইতিহাস,কিংবদন্তী আজও মানুষের মুখে মুখে রূপান্তরিত হয়ে ঘোরে ফেরে।
এমনি এক ইতিহাস হলো "পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য"।পাঁচমুড়োর মানুষ তাদের পূর্বপুরুষের কাছ থেকে তার গল্প শুনে আসছে কিন্তু সাপের মাথার মণির মত তা অদৃশ্য।কিন্তু একদিন হঠাৎ পাঁচমুড়োর বিলে চৌদ্দশ শতকের শিলালিপি পাওয়া গেলো!!!
শিবের বন্দনায় পাওয়া গেলো হেঁয়ালি,যা সমাধান করলে পাওয়া যায় বীজগণিতের সূত্র,জ্যামিতি,ত্রিকোণমিতি,গ্রিক পাই-এর মান,আলোর গতি!!!কিন্তু চৌদ্দশ শতকের নাকি বাংলা ভাষার কোনো নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় না।শয়তানের পুঁথি বলে বিদেশীরা সেসব ধ্বংস করে দেয়।প্রাচীন পন্ডিতরা কি আবিষ্কার করেছিলো বীজগণিত,ডিভাইন নাম্বার বা মহাকাশ বিজ্ঞান??
পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য কি অন্যান্য সভ্যতার চেয়েও উন্নত প্রাচীন নিদর্শন??আসলেই কি তার অস্তিত্ব ছিলো??
পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল বইটিতে মুখ গুঁজে রহস্যের পর্দা ভেদ করুন তাহলে।হতাশ হবেন না সে নিশ্চয়তা দিতে পারি।❤


Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
July 10, 2021
বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ হিসেবে পরিচিত ১২০০-১৪৫০ সালের কোনো সাহিত্যের খোঁজ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তবে ধারণা করা হয় ঐ সময়ে পঞ্চাননমঙ্গল নামে একটা কাব্য রচিত হয়েছিল যা পরে হারিয়ে যায়। এই আভাসটুকু দিয়েই লেখক শুরু করেছেন বর্তমান রচনাটি। সেখানে দেখা যাচ্ছে সেই হারিয়ে যাওয়া পঞ্চাননমঙ্গল কাব্যের অংশবিশেষ খুঁজে পেয়েছেন এক পুঁথি বিশারদ জমিদার সত্যানন্দ। লন্ডনের এক জাদুঘরেরর মালিক মি. ধাড়া তার জাদুঘরের জন্য কিনতে আগ্রহী পুঁথিটা। এদিকে প্রাচীন ভারতের কাব্য ও গনিতের অসাধারণ সমন্বয় এক গ্রন্থটি যেকোনো মূল্যে নিজের হাতে পেতে চায় এক পাগলাটে আরবীয় আল খোয়ারিজমি। ‘ শয়তানের পুঁথি' হিসেবে বিবেচনা করলেও যা পেতে সে রক্তের গঙ্গা বইতে দিতেও রাজি। এই যখন অবস্থা তখন সদানন্দের দলে যোগ দেয় চোর কালাচাঁদ, পুঁথি নিয়ে কাজ করা হরু ঠাকুর আর অঙ্কবিদ চন্দ্রবদন যারা যেকোনো মূল্যে অমূল্য এই পুঁথিটা দেশে রাখতে চায়।

ড্যান ব্রাউনের বইগুলো পড়া না থাকলেও এটা জানি যে তাঁর বইয়ে বিজ্ঞান, ইতিহাস, থ্রিল হাত ধরাধরি করে চলে। বইটা পড়ার সময় আমার সেই কথাটাই বারবার মনে হয়েছে। অতীতের এক রহস্যময় পুঁথি, বর্তমানে তার সন্ধানলাভ এবং তা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের কাড়াকাড়ি – বইটা পড়া শুরু করতে এটুকুই যথেষ্ট। অতীত ও বর্তমানের এবং পুঁথিসাহিত্য ও থ্রিলারের এই সমন্বয়টাই বইটার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। বাংলা সাহিত্যে সম্ভবত এটাই এই ধারার প্রথম বই। বইটার আরেকটা চমৎকার দিক হলো পুঁথিসাহিত্যের সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। আমাদের যে একটা ঐশ্বর্যপূর্ণ পুঁথিসাহিত্য ছিল আর আমাদের অমনোযোগের জন্যই যে সেসব হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে এমন একটা উপলব্ধি দিয়েছে বইটা।

বইটা লিখতে লেখক প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। সেটা বইয়ের শেষে সহায়ক গ্রন্থতালিকা দেখে বা বইটা পড়ার সময়ও বোঝা যায়। আর কবিতাগুলোর কথা কি আর বলব! চৌদ্দ শতকের ভাষার সাথে মিল রেখে এমন বুদ্ধিদীপ্ত কবিতা লেখা আসলেই দারুণ একটা ব্যাপার। শিব ভক্তি আর বিজ্ঞানের নানা শাখা যেমন জ্যামিতি, বীজগনিত, ত্রিকোণমিতি, পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদির মৌলিক আলোচনা - উভয় অর্থ দেওয়া কবিতাগুলো অসাধারণ ছিল। চরিত্রগুলোও দারুণ এঁকেছেন লেখক। কালাচাঁদ চোরের মতো এত ধূসর একটা চরিত্র আঁকা বেশ কঠিন একটা ব্যাপারই বটে।

একটু অন্যদিকে আসলে প্রথমেই বলতে হয় ইতিহাস অংশটুকুর কথা। যদিও বইটা সরাসরি ইতিহাস থেকে নেওয়া না তবু যেটুকু লেখক ইতিহাস হিসেবে এঁকেছেন তার সাথে বর্তমানের ( বইয়ের) সাথে মিশ্রণে বেশ সমস্যা দেখা যায়। মাঝে মাঝেই পৃষ্টার পর পৃষ্ঠা একটানা কোনো এক চরিত্রের সুখে ইতিহাস শুনতে কারই বা ভালো লাগে! আবার থ্রিলার যে অংশটুকু সেটাও ততটা জমেনি বিশেষ করে শেষটা এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে একটা অতৃপ্তি থেকেই যায়। মানে যেভাবে সময় নিয়ে ভিতটা গড়েছেন লেখক সেই অনুপাতে এন্ডিংটা টানতে পারেননি মনে হয়েছে। চরিত্রগুলো বিশেষ করে হরু ঠাকুর আর বদন বেশি অতিমানবীয় হয়ে গিয়েছে। আরেকটা লক্ষ্যণীয়
ব্যাপার হলো লেখক মুসলিম শাসকদের প্রতি রীতিমতো বিতৃষ্ণাভাব পোষণ করেছেন পুরো বই জুড়ে।

এই আর কি। বেশ কয়েকটি নেতিবাচক দিক থাকলেও এর নতুনত্বের ( অন্তত আমার কাছে) জন্য বইটা পড়ে ভালো লেগেছে। চর্যাপদ নিয়ে লেখা লেখকের পরবর্তী বইটা পড়ার ইচ্ছা রইলো।
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
March 27, 2022
''ছান্দে অঙ্কে পক্ষী পঙ্খ বান্ধে নন্দীধন।
পঞ্চমুন্ডে পঙ্কে গুপ্ত কাব্য পঞ্চানন।।"

পাঁচমুড়ো গ্রামকে ঘিরে আবর্তিত এক উপন্যাস। যার ভিত্তি পুরাণ, প্রাচীন বাংলার পুঁথি আর হালকা রহস্য। সব মিলে তৈরি হয় অসাধারণ এক উপন্যাস। যার পরতে পরতে মিশে আছে প্রাচীন বাংলার অসাধারণ কাব্য এবং ছন্দ। পঞ্চানন দেব এই বইয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপস্থিত। সর্বপরি তার গুণগানে এক মহিমান্বিত মধুর ঢংয়ের আবেশ ছড়িয়ে আছে পুরো বই জুড়ে। প্রাচীন বাংলার মঙ্গলকাব্য সম্বন্ধে আমরা সকলেই জানি। লেখক সেই মঙ্গলকাব্যের চিরপরিচিত রূপকে আরেকটু খুলে সুগভীর ভাবে বিশ্লেষণ করে পাঠকের সামনে উন্মোচন করেছেন। তাছাড়া উঠে এসেছে সেই সময়ে বাইরের শাসকদের আক্রমণ, তাদের তাণ্ডবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রাচীন বাংলার হাজার হাজার পুঁথির কথা। সব মিলিয়ে কখনো সামন্য ধীর লয়ে আবার কখনো কখনো দ্রুত পদে এগিয়ে চলা এক আখ্যান এই বই।

পুরাণ, পৌরাণিক কাহিনী, পুরাণ ভিত্তিক কাহিনী আমার পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে থাকে সবসময়। সেই সাথে ঐতিহাসিক বিষয়ও। 'পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল' বইয়ে যেমন পৌরাণিক কাহিনির বিস্তারিত আছে তেমনই আছে ইতিহাসের ছোঁয়া। তবে লেখক যে কাজটা করে এই বইকে এক অনন্য স্থানে নিয়ে গিয়েছেন তা হলো নিজের সৃষ্টি করা মঙ্গলকাব্য। ১৪০০ সালে বাংলাভাষার যে রূপ পাওয়া যায় তা দিয়েই সৃজন করেছেন পঞ্চাননের মঙ্গলকাব্য। বিষয়বস্তু কী সেটা পাঠক পড়লেই বুঝতে পারবেন। সেই কাব্যে দেবতাকে তুষ্ট করার আরাধনা ছাড়াও একটি অসাধারণ জিনিস স্থান পেয়েছে। লেখকের এই অদ্ভুত সৃষ্টি প্রক্রিয়া বেশ ভালো লেগেছে। এইরকম ছোট ছোট কাব্য সৃষ্টি করে ধাঁধা তৈরি করা গল্প আগেও পড়েছি। কিন্তু এই বইয়ের কাব্য এক কথায় অনবদ্য সৃষ্টি। লেখকে��� মেধার প্রশংসা করতেই হয় স্থানে। লেখায় কাব্য বেশ শক্ত স্থান দখল করে আছে। তবে গল্প বলার।ধরণে লেখকের থেকে আরেকটু বেশি আশা করা অপরাধ হবে কিনা জানি না। তবে এই বইটাকে যথাযথ বললে ভুল হবে না। অতিরিক্ত ঘটনার বর্ণনা করে জোর করে টেনে লম্বা করা হয়নি। বরং যতটুকুর প্রয়োজন ততটুকই ছিলো। যারা অতিরিক্ত মেদহীন বই পছন্দ করেন তারা পড়ে দেখতে পারেন। তাছাড়া বইতে অসংখ্য তথ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যেটা আমার বেশ ভালো লাগে। সব মিলেই এই মঙ্গলকাব্য আমাকে অনেকখানি প্রতিভাত করেছে।
Profile Image for Farhan.
725 reviews12 followers
April 23, 2021
গ্রাম্য জমিদার, চোর, ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র, পুঁথির চোরাকারবারি, পাগলা শেখ, আর লেখার ধরণ, সব মিলিয়ে শুরুতে মনে হচ্ছিল শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের কোন বই। লেখার ধরণে শীর্ষেন্দুর ভাবটা থাকলেও (যেটা লেখকের পরের বই 'চৌথুপীর চর্যাপদ' থেকে আর নেই) কাহিনী এরপর ঘুরে গেছে লেখকের নিজের মতই। ইতিহাসাশ্রয়ী থ্রিলার। আগা থেকে গোড়া বেশ ভাল মিলেছে। লেখকের পড়াশোনা প্রশংসার যোগ্য। গল্প বলার ভঙ্গিটাও আকর্ষণীয়। শুধু দু'টো সমস্যা। তিনি মনে হয় সিরিয়াস থ্রিলারই লিখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু চরিত্রগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে তেমন কিছু নেই বলে টোনটা অনেকটা হালকা হয়ে গিয়েছে। আরেকটা সমস্যা ইদানিংকার পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের মাঝে প্রকট--ইতিহাস বা মীথাশ্রয়ী উপন্যাস লিখতে গিয়ে তারা এত বেশি লেকচার দেন যে, সেটাকে উপন্যাস না মনে হয়ে পরীক্ষা পাশের গাইডবই মনে হতে থাকে। এই বইয়েও সে সমস্যা প্রবলভাবে বিদ্যমান। ইতিহাস বা মীথসমৃদ্ধ উপন্যাসও শেষ পর্যন্ত একটা গল্পই, সেখানে পাতায় পাতায় নিজের পড়াশোনা আর জ্ঞান ফুটে বেরোতে থাকলে গল্পের খেই হারিয়ে যায়। রেটিং ৩।
Profile Image for Rihan Hossain.
109 reviews2 followers
March 28, 2021
অসাধারণ! অসাধারণ!! খুবই চমৎকার একটা গল্প পড়লাম। বাংলা সাহিত্যের এক বিতর্কিত সময় নিয়ে লেখা। বাস্তব আর কল্পনার দুর্দান্ত মিশেল ঘটিয়েছেন লেখক প্রীতম বসু। সাথে টক-ঝাল মশলা হিসেবে পরিমিত থ্রিল আর হিউমারও পাওয়া গেল। ঝরঝরে লেখনি।
অনেকদিন পর ওপার বাংলার কোন লেখকের বই পড়ে আনন্দ পেয়েছি।
Profile Image for Little Blezz.
70 reviews21 followers
August 27, 2017
“টেডি, তুমি এই বইটা পড়ো; unputdownable!”
ঘন্টারামের এই আনপুটডাউনেবল বইএর লিস্টি অনেক বড়! সে ব্যাটা বাউল, দেহতত্ব, তন্ত্রসাধনা নিয়ে phd করার ধান্ধায় মক্ষোম কঠিন কঠিন বই পড়ে। তার প্রতিভা ধরতে পারি, আমার কি সাধ্য! সুতরাং পড়ছি-পড়বো করে বেশ কিছুদিন আটকে রেখেছিলাম। ইতিমধ্যে নাগাড়ে কঠিন বই পড়ে পড়ে বেশ কিছুটা ক্লান্তি এসে গেছিল। তাই সাধারন ও অখাদ্য কিছু থ্রিলার গলদ্ধকরন করছিলাম টেস্ট ফিরিয়ে আনতে। আমার আবার মাঝে মাঝেই রীডারস্ ব্লক এসে গলা টিপে ধরে। তা সেটা আসার আগেই কিছু বই সাবড়ে নেওয়ার চেষ্টা করি আর কি! তা ভাবলাম, সেই ভদ্দরলোক যখন এখনোও এসে পৌঁছাননি, পড়ে ফেলি বইটা। অল্প পাতার ছোট বই, কতই বা সময় খাবে! সুতরাং ওয়ান ফাইন নাইট পড়া শুরু হল। সাধারনতঃ আমি একসাথে সাত-আটটা বই পড়ি। সত্যি বলছি, শিয়ালের দিব্যি! গুডরীডস্ সাক্ষী! তারমধ্যে যেটা মনে ধরে যায়, গোগ্রাসে গিলে নি। তো এই বইটা আক্ষরিক অর্থেই গেলা শুরু হলো।

'পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল'- এমন খাজা নাম যেন লক্ষীর পাঁচালী। এমনিতেই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আমার জঘন্য লাগতো। এমনই জঘন্য লাগতো যে মাধ্যমিক না উচ্চমাধ্যমিকে পড়েছি মনে পড়ে না; কেউ জিজ্ঞাসা করলে খাবি খাওয়ার উপক্রম হয়। ভয়ে ভয়ে পাস মার্কসটা পেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতাম। সেই বান্দার হাতে এসে পৌঁছল কিনা পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য! ঘন্টা বলেছিল, এটা নাকি থ্রিলার। নাম শুনেই এত থ্রিলড হলাম যে বলার নয়! তবু মনে মনে প্রবোধ দিলাম নিজেকে, আই শ্যাল ওভারকাম। প্রাককথনটা খাসা। বেগবতী নদী, বল্লামগ্রাম, সুলতানের রণোপোত, অদৃশ্য মন্দির ও বিগ্রহ, শয়তানের পুঁথি... ভাবছিলাম, হবে নেম অফ দ্যা রোজেস টাইপের বই। হায়, পড়া শুরু করতেই গেলাম ভেবলে! শুরুতেই কালাকাঁদ থুড়ি কালাচাঁদ চোর! নির্ঘাৎ অদ্ভুতুরে সিরিজ! কান্না পেতে লাগলো। সকালে ঘন্টাকে কি কি গালি দেওয়া যায় তার তালিকা তৈরী করতে করতে আর সদানন্দ নামক তলানিতে ঠেকা জমিদার ও ডঃ ধারার ধারাবিবরনী শুনতে শুনতে পাতা ওল্টালাম। একি! চয়নবিলের তলা থেকে উঠে আসছে কঙ্কাল, একটার পর একটা পাথর, তাতে খোদাই করা লিপি। তাতে ১৪০০ সালের বাংলায় লেখা শ্লোক। তাতে শিবের বন্দনা। তাতে....?দৌড়তে দৌড়তে চতুর্থ অধ্যায়ে গিয়ে দেখি, অঙ্ক! প্রাচীন ভারতভূমিতে আর্যভট্টাদির প্রমানিত তথ্য। এরপর কাহিনী সম্পুর্ণ অন্যদিকে ঘুরে গেল। গল্পেরও, আমার তিনটে দিনেরও। এত ছোট বই মাত্র দেড় দিনই যথেষ্ট শেষ করার জন্য, কিন্তু আরও দেড়টা দিন লাগলো ব্যাকস্ক্রল করতে। প্রতিটা শ্লোক ও তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অর্থ। তিনদিনের দিন যখন বই থেকে মাথা তুললাম, তখনো চোখের সামনে ভাসছে এক মুছে যাওয়া অতীত, আর সেই অতীত ও বর্তমানে কালাচাঁদের নিজের প্রাণকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াস। আরে সেই সুলতানের রণোপোত যে এখন এক আরব শেখের হাত ঘুরে এসেছে আর সেই সাথে সে পুড়িয়ে চলেছে একের পর এক প্রাচীন পুঁথি। তার হাতে আসা বাকী শুধু পঞ্চাননমঙ্গল। খেপ খেলতে গিয়ে কালাচাঁদ জড়িয়ে পড়েছে এক বিশ্রী জালে। একচুল ভুলভ্রান্তি মানেই মৃত্যু। এরপর শুধু টানটান উত্তেজনা। জাল পুঁথি, চোর-পুলিশ খেলা, খুন-জখম, সাপ, অলীকদর্শন কি নেই! ঠাসবুনোট ঘটনায় সমস্তরকম মশলাই সমপরিমাণে মজুত।

প্রশ্ন অবশ্যই কিছু রয়ে গেছে।

বেশ বুঝছি, বইটা আরও দু বার পড়তেই হবে। হয়তো তখন কিছু প্রশ্নের উত্তর নতুন করে পাবো, হয়তো আরও কিছু প্রশ্ন নতুন করে উঠবে। তখন সুযোগ পেলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাবে। ঘন্টারাম বলছিল, বইয়ে যত শ্লোক, সমস্ত প্রীতমবাবু নিজে রচনা করেছেন! এমনিতেই এই বই পড়ে কেমন ঘেঁটে গেছি, ওটা শুনে থেকে আরও শিরশিরানি অনুভব করছি। সামান্য পাঠক আমি। অতদূর বিশ্লেষন করার স্পর্ধা আমার নেই। আপনি প্লিজ আরও লিখুন। আমাদের মত পাঠকদের ঘিলু নিয়ে চচ্চড়ি বানান। সেই নারায়ণভোজে আবার আসবো আপনার ব্যঞ্জন লুঠতে।
Profile Image for Ishita Karmakar.
16 reviews13 followers
June 1, 2021
#পাঁচমুড়োর_পঞ্চাননমঙ্গল
#প্রীতম_বসু
মূল্য-১৫০ টাকা
প্রকাশনা-সেল্ফ পাবলিশড

বাঙালি জাতির ইতিহাসে যেকটি গর্ব করার মত সৃষ্টি রয়েছে মঙ্গলকাব্যের ধারা তার মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম।কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চন্ডীমঙ্গল,বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল,ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল থেকে বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন..আখ্যানকাব্য যুগে যুখে তার জায়গা বজায় রেখেছে।মঙ্গলকাব্য বা আখ্যানকাব্য ঠিক কি?বলা হয়,দেবদেবীর মাহাত্ম্যবিষয়ক যে কাব্য পঠনে,শ্রবণে এমনকি বাড়িতে রাখলেও গৃহস্থের মঙ্গল,তাই মঙ্গলকাব্য।গদ্যভাষার জন্ম না হ‌ওয়ায় উপন্যাস লেখার সুযোগ তখন ছিলনা,ফলে কাব্যের মাধ্যমে কাহিনী বর্ণনাই ছিল একমাত্র পথ।খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে ষোড়শ শতাব্দী ছিল মঙ্গলকাব্যের স্বর্ণযুগ।কাব্যের আধারে সেসময়কার সামাজিক চালচিত্র চমৎকার ভাবে ফুটে উঠতে দেখা যায় এই রচনাগুলিতে।ফলে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব‌ও অপরিসীম।এখন এই প্রাচীন পুঁথিতে যদি লুকিয়ে থাকে অঙ্কের আশ্চর্য সব আবিষ্কারের কথা,যা পালটে দিতে পারে কোনো একটি দেশের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসকে,তাহলে সেই পুঁথি হস্তগত করার জন্য যে হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য।পাঁচমুড়ো গ্রামের চয়নবিলের তলা থেকে উদ্ধার হয় পাথরে খোদাই করা,১৪০০ খ্রিস্টাব্দের কথ্য বাংলা ভাষা ও লিপিতে লেখা পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য।অঙ্ক ও ছন্দ যেন হাত ধরাধরি করে চলেছে এই কাব্যে।কিন্তু অতদিন আগে লিখিত পুঁথিতে লিপিকার কেন আধুনিক অঙ্কের সূত্র লুকিয়ে রেখে গেলেন?একটি বিশেষ বৈদেশিক শক্তি বারবার এই পুঁথিকে "শয়তানের পুঁথি" বলে উল্লেখ করছে..মনে করা হচ্ছে বখতিয়ার খিলজির বাংলা আক্রমণের সময় সমস্ত হিন্দু ও বৌদ্ধ মঠের পুঁথি পুড়িয়ে দেবার পিছনে বিধর্মী আক্রোশ ছাড়াও অন্য কোন‌ও কারণ ছিল।লোভী অ্যান্টিক শিকারীদের হাত থেকে শেষপর্যন্ত বাঁচানো গেল কি এই অমূল্য আবিষ্কারটিকে?

প্রবাসী প্রীতমবাবুর কলমে উঠে এসেছে প্রাচীন বাংলা সাহিত্য ছানবিন করে তুলে আনা থ্রিলারধর্মী এই উপন্যাস।চমকে দিয়েছেন লেখার বিষয়বস্তু নির্বাচন ও সুপাঠ্য গদ্যে।পদ্যেও যে তিনি সমান পারদর্শী তা ব‌ইটি পড়লেই মালুম হবে।পুঁথিবিশারদ পঙ্গু বুড়ো জমিদার সদানন্দ,কালাচাঁদ চোর,নকলনবীশ হরু ঠাকুর,অঙ্কবিদ ভাগ্নে বদন প্রভৃতি কয়েকটি প্রধান চরিত্রের অভিনব চরিত্রাঙ্কন গল্পটিকে একটি আলাদা স্বাদ দিয়েছে।প্রাচীন বাংলা সাহিত্য ও পুঁথি বিষয়ক তাঁর অগাধ জ্ঞান পরিবেশন করেছেন এমনভাবে যে তা কখনোই পড়ার গতিকে ভারাক্রান্ত করেনি,বরং পূর্বপুরুষের এই কৃতিত্বে বুক ভরে ওঠে গর্বে।একটা জায়গায় খটকা রয়েছে,বলা হয়েছে যে পঞ্চাননমঙ্গল সম্ভবত তেডালায় লেখা হয়েছিল।কিন্তু পুঁথি বিশারদ চিদানন্দের কাছে যেটা যাচাই করতে নিয়ে যাওয়া হলো সেটা তো তালপাতা বলেই উল্লেখ রয়েছে,যদিও তাদের কাছে তালপাতা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় ছিলনা তাও এতটা ভুল চিদানন্দের‌ই বা চোখ এড়াল কিকরে?গল্পের শেষে বেশি প্রত্যাঘাত ছাড়াই আল খোয়ারিজমির হার মেনে যাওয়াও হতাশ করেছে,এইখানটায় আরেকটু অন্যরকম আশা করেছিলাম।যাই হোক,বাংলা মঙ্গলকাব্য নিয়ে এমন একটি দুর্লভ গবেষণামূলক থ্রিলার পড়তে পাওয়ার কাছে বাকিসব ম্লান হয়ে যায়।টানটান উত্তেজনাপূর্ণ উপন্যাস শেষে বাবা পঞ্চাননদেবের অপার মহিমায় ঠগ জোচ্চোর কালাচাঁদের‌ও চোখ দিয়ে জল নেমে আসে,তার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে ইচ্ছা হয়,

পঞ্চাননমঙ্গল যা কবিরাজ ভণে।
পঞ্চানন নামে দৈবেঁ শতেক সুখ মনে।।
বাঢ়িবেঁ মান-কুল লভিবেঁ সগর্গধাম।
যোড় হাথে বোলহ সহ্মে পঞ্চানন নাম।।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,808 reviews359 followers
February 19, 2025
প্রীতম বসু রচিত এই ব্যতিক্রমী উপন্যাসে বাংলার লোকাচার, বিশ্বাস, এবং সমাজজীবনের এক গভীর পর্যবেক্ষণ প্রতিফলিত হয়েছে। লেখকের ভাষাশৈলী, কাহিনির বিন্যাস এবং চরিত্রচিত্রণে এক অনন্য দক্ষতা পরিলক্ষিত হয়। উপন্যাসটি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং লোকসংস্কৃতি ও আধুনিক বাস্তবতার মধ্যে এক সেতুবন্ধন রচনা করেছে। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট মূলত পাঁচমুড়ো নামক একটি কাল্পনিক গ্রাম, যেখানে লোকবিশ্বাস এবং আধুনিকতা পাশাপাশি বিদ্যমান। গ্রামের মূল আধ্যাত্মিক কেন্দ্র পঞ্চানন মন্দির, যার সাথে জড়িয়ে আছে বহু পুরাণ, কিংবদন্তি, এবং স্থানীয় দেবতার অলৌকিক কাহিনি। প্রধান চরিত্ররা হলো—বিজন, এক তরুণ গবেষক, যে লোকসংস্কৃতির ওপর গবেষণা করতে এসে গ্রামটির রহস্যের মুখোমুখি হয়। তার পাশাপাশি রয়েছেন গ্রামের প্রবীণ বটতলার পণ্ডিত, অঘোরী সাধু, এবং একদল যুবক যারা আধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে আসতে চায়।

উপন্যাসটি মূলত লোকসংস্কৃতি ও আধুনিকতার সংঘাতকে উপজীব্য করে রচিত। লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে প্রাচীন বিশ্বাস ও আধুনিক যুক্তিবাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং কীভাবে সমাজ সেই দ্বন্দ্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। পঞ্চানন দেবতার উপাসনার আড়ালে গ্রামের ক্ষমতাকাঠামো ও মানুষের জীবনযাত্রার যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা সমকালীন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। উপন্যাসের চরিত্ররা অত্যন্ত জীবন্ত এবং বাস্তবসম্মত। বিজন চরিত্রটি শিক্ষিত শহুরে মানুষের প্রতিনিধি, যে যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গ্রামের সংস্কৃতিকে বোঝার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, গ্রামের পুরোহিত, সাধু, এবং সাধারণ মানুষ তাদের নিজস্ব বিশ্বাসের মধ্যে আবদ্ধ, তবে তারা বিজনের যুক্তিবাদকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানও করে না। লেখক সূক্ষ্মভাবে চরিত্রদের দ্বন্দ্বময় অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন।

প্রীতম বাবুর ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ, কাব্যময়, এবং লোকজ উপাদানে ভরপুর। উপন্যাস জুড়ে আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার, গ্রাম্য সংলাপ, এবং অলৌকিকতার মিশ্রণে এক বিশেষ আভা সৃষ্টি হয়েছে। বর্ণনারীতির ক্ষেত্রে তিনি পরিবেশচিত্রণে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, বিশেষ করে পাঁচমুড়ো গ্রামের বর্ণনা পাঠককে বাস্তবিক অভিজ্ঞতার অনুভূতি দেয়।

উপন্যাসের দুর্বলতা কেবল দুটি জায়গায়। প্রথমত কোথাও কোথাও কাহিনির গতি মন্থর হয়ে পড়ে. দ্বিতীয়ত, কিছু চরিত্রের বিকাশ আরও বিস্তারিত হতে পারতো

পরিশেষে বলতেই হয়, 'পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল' শুধু একটি কাহিনি নয়, এটি বাঙালি লোকাচার, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক শক্তিশালী উপস্থাপনা। এটি পাঠকদের ভাবায়, লোকবিশ্বাস ও আধুনিক যুক্তির সংঘর্ষকে নতুনভাবে অনুধাবন করায়। প্রীতম বসু তার গবেষণাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি ও কাহিনির সংবেদনশীল বিন্যাসের মাধ্যমে একটি স্মরণীয় উপন্যাস উপহার দিয়েছেন, যা পাঠকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এই উপন্যাসটি শুধু সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্ব���র ছাত্রদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য হতে পারে। যারা বাংলার লোকসংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য।
Profile Image for Arnab Pal.
51 reviews9 followers
July 19, 2018
পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল

একজন লেখক তার সৃষ্ট চরিত্রদের দিয়ে যাই করান না কেনো, আসলে তো লেখক নিজেই সেটা করছেন, তাই না? তাই হরি ঠাকুর যখন এক নৃশংস ভ্যান্ডালের হাত থেকে একটা সুপ্রাচীন পুঁথি বাঁচাতে তার নকল তৈরী করছেন নিজের হাতে, নিজের হাতে লিখছেন কাব্য, তখন সেই কাব্য তো আসলে লেখকের নিজেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। লেখক প্রীতম বসু, তাঁর অসামান্য জ্ঞান ও প্রতিভা দিয়ে লিখেছেন এক কাব্য। না, কোনও রহস্য করছিনা, কোনও দ্যর্থবোধক কথাও বলছিনা। বাংলাভাষার আদি ও অকৃত্রিম রূপকে অবলম্বন করে, সন্ধ্যাভাষায়, মানে চর্যাপদে লেখক লিখেছেন একটি আস্ত মঙ্গলকাব্য! এক লাইন নয়, দশ লাইন নয়, এই এত্তো বড়, গোটা একটা মঙ্গলকাব্য, পুরোটাই চর্যাপদে, পুরোটাই পয়ার ছন্দে* (৮-৬। / ৮-৬।।)! আমার মনে হয় এই একটা বৈশিষ্টই যথেষ্ট কাউকে বইটা কিনে পড়ার সম্পর্কে মোটিভেট করার জন্য।

তবু কিছু কথা যোগ করে দি। ধরা যাক, কেউ কোনও ভাষা শিখতে চাইছে। প্রত্যেক ভাষা শেখারই স্টেজ থাকে: বিগিনার, ইন্টারমিডিয়েট, এরকম। প্রাচীন বাংলা ভাষা, মানে তার শৈশবে বাংলা ভাষা আসলে যেরকম ছিল, সেইটা ধরা যাক কেউ জানতে চায়, শিখতে চায়, বুঝতে চায়। চৌথুপীতে এটার ইন্টারমিডিয়েট স্টেজ আছে, কিন্তু খুব সহজ ভাবে। তাই, কেউ বুঝতে না চাইলেও, কিছু পার্ট খুব সুন্দর ভাবে বুঝে যাবে। হ্যাঁ, পুরোটা হজম করতে না পারলেও কিছুটা হজম হবেই হবে, আর কিছু শব্দের পুরোনো রূপ মাথায় গেঁথে যাবেই। সাথে বোনাস, অত ভালো একটা থ্রিলার প্লট (যারা আমার 'চৌখুপীর চর্যাপদ' এর রিভিউ পড়েছে তারা বুঝবে কতটা ভালো https://www.facebook.com/iamArnabPal/... )। পাঁচমুড়ো প্রাচীন বাংলা ভাষার আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে, থ্রিলার এর পুকুরে খুব বেশী গভীরে ডুব দেয় না। তবে 'পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল' যেটা করায়, সেটা যদি ইস্কুলজীবনে পেতাম, কানমলা অনেক কম খেতে হতো। পাঁচমুড়ো একদম বিগিনার স্টেজ থেকে শুরু করে চর্যাপদ শেখানো। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে লেখক এমন ভাবে নিয়মকানুন ঢুকিয়ে দিয়েছেন যে কখন যে শিখতে আরম্ভ করে দিয়েছি বোঝাই যায়না।

*লেখকের গদ্য আর চর্যাপদ-পদ্য।
বইটাকে পড়া শুরু করে দিন অদ্য।।
দয়া করে কিনে নিয়ে পড়বেন বই।
আরো লেখা পেয়ে যাতে ধন্য মোরা হই।।
Profile Image for Hossain Ahmed.
27 reviews1 follower
June 22, 2022
Not a thriller from cover to cover but can be considered as a historical one. That's why the writer of this book didn't pay much attention to the details but he has described the tradition of rural Bengal in a subtle way. What if an unexpected archeological discovery reveals information that would rewrite the history of a nation's civilization? This novel written by "Pritam Basu" is based on that fantasy. The book deals with the history of Bengali literature, the history of the evolution of the Bengali language and ancient Indian mathematics. Stories and information are woven into one thread with great skill. Never felt that history was being forcibly swallowed up. At the very end of the book you will find a well-made chart of the evolution of the Bengali letter. As the story progresses, history sometimes revolves around the present. "Panchananmangal" (name of the book) - in Bengali (পঞ্চাননমঙ্গল) is based on the history of Panchamundi village in the time of Jalaluddin. Just as there is a tragic Mangalkavya (মঙ্গলকাব্য) in it, there is also a combination of poetry with mathematics in the composition of an impossibly talented Bengali Kabiraj.

There's a Bangla letter in the title "n-cha" (ঞ্চ) which has "cha" (চ) written in the form of inverted "ba" (ব). Although this practice of writing ''cha" (চ) disappeared later of 1400 AD but the Bengali language of the earliest times remained exactly the same in "n-cha" (ঞ্চ) as a forgotten history of the Bengalis. This is where the story begins. It's better to tell history rather then addressing as story. 1200 to 1450 is a black age in Bengali literature. Bakhtiyar Khilji's team is also burning valuable books in small temples in rural areas including Nalanda University. The Panchanan Mangal book was also lost in this final mess. Along with the history of that era of Bengalis. Then, almost 600 years later, in the village of Panchmuro, suddenly a skeleton, bound with rocks, emerged from an ancient pond. And also a piece of stone engraved in Bengali language which is unknown to the common people.

Story summary:

Discovered from the floor of Choyanbil is the "Panchananmangal Kavya" (পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য) written in 1400 spoken Bengali language and script engraved in stone. But why did the ancestors hide innumerable sources of modern numbers in the worship mantra of Panchanan Tagore? It would be heartbreaking to see the countless talents of the Bengalis of six hundred years ago, but why is it that an evil foreign power is almost mad to destroy Panchananmangal? But will the last document of ancient Bengali science, literature and philosophy be lost with Panchananmangal.

Feedback:

The history of Bengali literature has been divided into three eras. Ancient, Middle and Modern era. The earliest examples of ancient literature are the Charyapadas (চর্যাপদ), the instrumental music of the Sahajia Buddhist community; which was discovered by "Harprasad Shastri" in 1905 from the royal court of Nepal. The first 150 years of the Middle Ages (1200-1600), controversially the 250 year period is called the 'Dark Ages', as no significant traces of Bengali literature can be found during this period. The only exceptions are Ramai Pandit's "Shunya Purana" (শূণ্য পূরাণ) & Halayudha Mishra's "Sek Shubhodaya"(সেক শুভোদয়া). The next literary gem of this era is "Srikrishnakirtan" (শ্রীকৃষ্ণকীর্তন) by Badi Chandidas, later "Vaishnava Padavali" (বৈষ্ঞব পদাবলী) composed by various great poets. Then comes "Mangalkavya" (মঙ্গলকাব্য) Another great resource of the Middle Ages was the poetry of Mukundaram Chakraborty's "Chandimangal" (চন্ডীমঙ্গল), Bharatchandra Raigunakar's "Annadamangal" (অন্নদামঙ্গল), Kanaharidatta's "Manasamangal" (মনসামঙ্গল), Mayur Bhatta's "Dharmamangal" (ধর্মমঙ্গল) and many more. In such poems, poets used to narrate their own words, society and customs by resorting to different stories. It can be said that he used to express his words through the mouths of others, taking refuge in religion.

At the beginning of the story, it is seen that a general from Gaur came to destroy a temple on the orders of the Sultan, but when he did not find it, he burned down the innumerable books of a nearby Buddhist monastery. Then the story moved to 1998 at the old zamindar house of Panchmuro. There, in the house of Sadananda Vatchaj, the successor of the zamindar, Kalachand, a thief, was seen trying to sell ancient books. For a British gentleman named Dr. Anshuman Dhara, Sadananda works to test whether the book is real or fake. Then came the news that a skeleton was recovered from the floor of Choyanbil with a stone engraved on it.

Kalachand then brings a piece of paper from a stone inscription recovered from Panchmuro to Haru Thakur, a man who is adept at forging the inscription. Badan's nephew Haru Thakur was seen there. He read the poem in the script from the paper brought by Kalachand and found out that behind the poem there is a formula for arithmetic. Immediately Kalachand realizes that a gold mine has been discovered. Sadananda believes that these stones are the mysterious "Panchananmangal Kavya" (পঞ্চাননমঙ্গলকাব্য) heard by the people, which was lost long ago without any clue. This is where the story becomes complicated. A foreign fanatic came to capture the poem. The other two including Kalachand got trapped in his net. Then the story progresses towards the end of Kalachand's various activities and tricks.

The Panchananmangalakavya that is created in the story is the author's own writing. He wrote it in a mixture of ancient spoken Bengali and script, which is a very difficult task. The author has shown great skill in storytelling and syntax. I was most attracted to the writer's subtle sense of humor. He did not give a chance to be bored in the crowd of theory and history. Kalachand, Haru Thakur and Sadananda all gave 'comic relief' or 'breathing space' through their words. What I like most is the character of Kalachand, the main protagonist of the story. Humorous, especially flattering, opportunistic, risk-taking, benevolent - these qualities make him a 'gray character' between good and bad.

The author did not deprive the novel of its literary quality just by immersing it in information. Arranged stories, explained information in simple language like water. The great asset of that novel is the use of proper dialogue. Can unified with the characters like Sadananda, Kalachand, Haru Thakur very easily. This is the skill of Pritam Basu's writing.
Profile Image for Dhiman.
177 reviews14 followers
December 17, 2024
ভাইরে ভাই এটা কী পড়লাম! উপন্যাসের খাতিরে লেখক একখানা মঙ্গলকাব্য তৈরি করে ফেলেছেন! শুধু মঙ্গলকাব্যই না সেগুলোর সাথে যে ছন্দ এঁকেছেন, যে ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং যেভাবে গণিত ঢুকিয়েছেন ছন্দে ছন্দে, মঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে পুরো ঘটনাটা বর্ণনা করেছেন উফফ!! এক কথায় অসাধারণ, অসাধারণ, অসাধারণ। আমি ভাবছি উনি পদ্য গুলো লিখলেন কিভাবে! বার যখন লিখছিলেন তখন তার মাথায় কি ঘুরছিল!হয়তো সত্যি সত্যি বাবা পঞ্চাননের (শিব) আশীর্বাদ ছিল তার মাথায়। শিল্পের প্রতি অতীন্দ্রিয় ভালবাসা না থাকলে এসব জিনিস বের হয় না। তাই লেখককে কুর্নিশ।
Profile Image for Dibyendu Singha Roy.
76 reviews4 followers
August 10, 2018
নাম শুনে যেমন গুরুগম্ভীর ব্যাপার ভেবেছিলাম পড়ে দেখলাম বইটা মোটেই তেমন নয়। হাসি মজার মিষ্টি আবরণে লেখক ত্রয়োদশ - চতুর্দশ শতকের বাংলা সাহিত্যের, ইতিহাসের (অঙ্কেরও) অপূর্ব বর্ণনা করেছেন। একজন চোর ,একজন পড়ন্ত জমিদার , কয়েকটা ঠগ, পাগলাটে খুনে , পুলিশ, কবি মামার অঙ্ক পাগল ভাগ্নে আর তাদের অদ্ভুত এডভেঞ্চার যেন অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বড়দের ভার্সন।
তবে শেষটা একটু তাড়াহুড়োয় হয়ে গেলো।
স���সব থাক, আমি ভাবছি লেখকের পড়াশুনোর কথা। ছন্দ নিয়ে এমন কারিকুরি এক কথায় অবিশ্বাস্য।
পড় বাঙালি পড়।
Profile Image for Wriju Ghosh.
81 reviews5 followers
April 6, 2020
Star for the mangal kabya. I felt it too much of educational than of fiction
Profile Image for Ariyan Shuvo.
77 reviews1 follower
April 22, 2021
বই : পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল
লেখক : প্রীতম বসু
পৃষ্ঠা : ২৩০
মুদ্রিত মূল্য : ১৫০ ভারতীয় রুপি

ব্যক্তিগত রেটিং : ৪/৫



কাহিনীসূত্র

চয়নবিলের তলা থেকে আবিষ্কৃত হল পাথরে খোদাই করে ১৪০০ সালের কথ্য বাংলা ভাষায় ও লিপিতে লিখিত পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য। কিন্তু সেখানে কেন পঞ্চানন ঠাকুরের পূজার মন্ত্রে আমাদের পূর্বপুরুষেরা লুকিয়ে রেখেছিল অজস্র আধুনিক অঙ্কের সুত্র?

ছয়শত বছর আগেরকার বাঙ্গালির অজস্র অজানা পারদর্শীতার আলেখ্য দেখে গর্বে বুক ফুলে উঠবে, কিন্তু এক অশুভ বৈদেশিক শক্তি পঞ্চাননমঙ্গল ধ্বংস করার জন্য কেন উন্মত্তপ্রায়? বখতিয়ার খিলজী নালন্দা ধ্বংস করে তিনমাস ধরে পুথি পুড়িয়ে আমাদের অতীত মুছে দিয়েছিল। তবে কি পঞ্চাননমঙ্গলের সাথে সাথে হারিয়ে যাবে প্রাচীন বাঙ্গালির বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শনের শেষ দলিল?


পাঠ_ প্রতিক্রিয়া_

এখন অবধি যতগুলো রিভিউ দেখলাম বইটার সবাই ই বলেছেন বইটা তাদের খুব বেশি ভালো লেগেছে। আমার সত্যি বলতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যাহোক, বইটি
আমার কাছে কেমন লেগেছে তা বইটির ভালো-মন্দ দিকগুলো সহ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

● প্লট

সদানন্দ ভট্টাচার্য পাঁচমুড়ো গ্রামের সঙ্গতিহীন জমিদার। বাংলার প্রাচীন সাহিত্য এবং পুঁথিপাটা নিয়ে বিস্তর জ্ঞান রয়েছে তার। পাশাপাশি নকল পুঁথি ধরতে তার জুড়ি নেই। বিদেশ থেকে  মিঃ ধাড়া এসেছেন তার কাছে। লন্ডনে নাকি একটা মিউজিয়াম আছে, সেখানে তিনি বাংলা সাহিত্যের পুরোনো সব পুঁথি সংগ্রহ করে রাখেন। এই পুঁথির কাজেই তাঁর ভট্টাচার্য মশাইকে দরকার। 

এদিকে তখনই সদানন্দ ভট্টাচার্য এর অধিকৃত চয়নবিলের তলা থেকে আবিষ্কৃত হল পাথরে খোদাই করে ১৪০০ সালের কথ্য বাংলা ভাষায় ও লিপিতে লেখা পঞ্চাননমঙ্গল কাব্য।
বিলুপ্ত ইতিহাসের এ নমুনা দেখে টনক নড়ে সবার।
ঘটনাক্রমে অতি চালাক এবং অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী চোর কালাচাঁদ এই ঘটনায় নিজেকে তো বটেই, সাথে জড়িয়ে ফেলে বুদ্ধিমান গণিতজ্ঞ বদন এবং  প্রাচীন পুথির জালিয়াত হরু ঠাকুরকে।

ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে রহস্য।
কেন পঞ্চানন ঠাকুরের পূজার মন্ত্রে আমাদের পূর্বপুরুষরা লুকিয়ে রেখেছিল অজস্র অঙ্কের সূত্র?

এই পুঁথিতে কী এমন আছে যা একটা পুরো জাতির জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে?

কী আছে এই প্রাচীন পুঁথিতে যার জন্য হন্যে হয়ে আরব দেশ থেকে ছুটে এসেছে এক ধনকুবের। কেন ই বা সে কোটি টাকা দিয়ে এই পুঁথি কিনে পুড়িয়ে ফেলতে চায়?

আর সবথেকে বড় প্রশ্ন প্রাচীন বাঙলার বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শনের শেষ দলিল এই পঞ্চাননমঙ্গল শেষ অবধি কার হবে? 


অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং প্লট। প্রাচীন বাংলা, ও বর্ণমালার ইতিহাসে বরাবরে আমার অনেক আগ্রহ। তাই এমন একটা আগ্রহোদ্দীপক প্লট রীতিমত গোগ্রাসে গিলেছি আমি।

● ভাষাশৈলী ও স্টোরিটেলিং

লেখকের ভাষাশৈলী বেশ ভালো। স্টোরিটেলিং চলসই বলবো। দু'টো টাইমলাইনে - অতীত ও বর্তমানের আঙ্গিকে গল্প সামনে এগিয়েছে। তবে বেশ কিছু জায়গায় বাক্য দীর্ঘায়িত করেছেন যেটা একটু দৃষ্টিকটু। পাশাপাশি গল্পের ছলে লেখক ইতিহাসের অনেক কথা ই পাঠককে বলতে চেয়েছেন। তবে ঢালাওভাবে এত বেশি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা দেখলে পাঠকমাত্র একটু বিরক্ত হবেন ই। আমিও হয়েছে। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন লেখক। যখন যে চরিত্র আসে সে ই ঢালাওভাবে জ্ঞানগর্ভ আলাপচারিতা শুরু করে। এগলো পড়ে অনেক অজানা তথ্য জেনেছি ঠিকই তবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ঢালাওভাবে জ্ঞান না দিয়ে একটু গল্পে মনোযোগী হতে পারতেন লেখক। কিংবা ধীরেসুস্থে সময় নিয়ে সেটা করা যেত।

● চরিত্রায়ন

ঢালাওভাবে জ্ঞান বিতরণের কারণে চরিত্রায়ণে কিছুটা ভাঁটা পড়েছে। চরিত্রের তারতম্য ও গাম্ভীর্য একদম ই অনুপস্থিত ছিল। তবে মূল প্রোটাগনিস্ট কালাচাঁদের স্ক্রিনটাইম অনেক বেশি হওয়ায় তাকে যথেষ্ট উপভোগ করেছি। বিশেষত তার দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণ ক্ষমতা, ডিসিশন মেকিং সবকিছু ছিল দূর্দান্ত। তবে চোর হিসেবে তাকে কল্পনা করতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। মাভৈঃ মাভৈঃ ! চোরেরও যে এত জ্ঞান তা আমি আগে জানতাম না। আর সবথেকে ভালো লেগেছে সদানন্দ চরিত্রটি। অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রগলো আরো ডেভেলপ করা যেত যদি না বইটার পরিসর আরো বড় হত। এত অল্প পরিসরে এতটা বিস্তারিত প্লটের একটা গল্প বলা আসলেই কঠিন কাজ। তবে লেখক তাতে সফলই বলবো। শুধু পরিসরে আরেকটু দীর্ঘ হলেই বইটা সোনায় সোহাগা হয়ে যেত।

● উপস্থাপন কৌশল ও বর্ণনাভঙ্গি

লেখকের বর্ণনাভঙ্গি বেশ ভালো লেগেছে। বর্ণনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাহুল্য, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি চোখে পড়েছে। অতীতের বর্ণনায় আরো ডিটেইলিং আশা করেছিলাম।

● বিবিধ

বইটা পেপারব্যাক মোড়কে এসেছে। পেপারব্যাক কোয়ালিটি মোটামুটি । পৃষ্ঠা ও বাঁধাইয়ের মান চলনসই। তবে তেমন কোনো বানান ভুল পাইনি। এটা একটা ভালো দিক।
ইতিহাসের অনেক রেফারেন্স আর তথ্য উপাত্ত আছে   বইয়ের শেষে, পাশাপাশি অসংখ্য টিকা যুক্ত করা হয়েছে - যা বইটা পড়তে আরো সহজ করেছে। এই ব্যাপারগুলো আমার বেশ ভালো লেগেছে।

সব মিলিয়ে এই ছিল প্রীতম বসুর পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল নিয়ে আমার আলোচনা। আপনি যদি ইতিহাস ও বাংলা ভাষায় আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে এটা আপনার জন্য মাস্ট রিড একটা বই। রেকমেন্ডেড!
18 reviews1 follower
July 31, 2021
গ্রন্থ – পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল
লেখক – প্রীতম বসু
মূল্য- ১৫০ টাকা
পত্রসংখ্যা - ২৩০

চরিত্র – কালাচাঁদ চোর, সদানন্দ ভট্টাচার্য, হরু ঠাকুর, বদনচন্দ্র, চিদানন্দ, ডঃ ধারা, আরবের শেখ
নন্দীধন, বলরাম, ভানুমতী, জটামদন

নিজস্ব প্রতিক্রিয়া - (একটু বেশিই বড় হয়ে যায়)

চৌথুপীর চর্যাপদ পড়ে প্রীতম বসুর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। সাথে সাথেই বসে যাই পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল পড়তে। আসলে ইতিহাস ভালো লাগেই, তার ওপর যদি তা হয় বাঙালির ইতিহাস তাহলে তো কোনও কথাই নেই। আর চৌথুপীর চর্যাপদ পড়েই মনে হয়েছিলো লেখক ইতিহাসটা বলতে জানেন। যেটা সবাই পারেন না। চৌথুপীর চর্যাপদে জোর করে থ্রিলার টাচ্ দিতে গিয়ে একটু ধেড়িয়েছেন সেকথা মানতেই হবে, কিন্তু এখানে তিনি ফিরে এসেছেন স্বমহিমায়। এখানে যা আছে তা নিখাদ নির্মেদ উত্তেজনাপূর্ণ কাহিনী। আর আছে ১৪০০ সালের বাংলার চালচিত্র। চৌথুপীর চর্যাপদের মতো এখানেও বাংলার নৌকা, বাংলার শাসনব্যবস্থা, সমাজ ব্যাবস্থা নিয়ে ভূরি ভূরি তথ্য, তবে কোথাও গিয়ে মনে হয়নি যে তথ্যের ভারে কাহিনীর গতি শ্লথ হচ্ছে। তবে পুরো মঙ্গলকাব্য গ্রন্থের মধ্যে দেওয়াতে কোথাও একটু হলেও যেন রসভঙ্গ হচ্ছিল। প্রথমে আধুনিক বাংলায় কাহিনী বলে দিয়ে পরে ১৪০০ সালের বাংলায় পয়রা ত্রোটক ছন্দের পুরো মঙ্গলকাব্য বলে চলেছেন এটা কতটা রসোত্পত্তি করবে বা কতটা রসহানী করবে তা পাঠকের নিজস্ব পচ��ছন্দ, কিছু জায়গায় আমি তো স্কিপ করে গেছি। তবে লেখকের তত্কালীন বঙ্গের ওপর জ্ঞান দেখে আমি অবাক হচ্ছি। অসাধারণ ছন্দের জ্ঞান, নাহলে এভাবে লেখা যায় না। এক নির্মেদ দুর্ধষ কাহিনীর মধ্যে দিয়ে পঞ্চাননমঙ্গলের কাহিনী ভীষণ আকর্ষণ করেছে আমাকে। রাজা গণেশ মুসলিমধর্ম গ্রহণ করে জালালুদ্দিন নাম নিয়ে হিন্দু কাব্যগ্রন্থ, হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে মিশরের প্রভাবশালীদের নেক নজরে আসতে চাইছেন। আরব গণিতবিদ্ আল খোয়ারজিমি ভারতীয় গণিত পুস্তক অধ্যয়ন করে পশ্চিমের দুনিয়ার কাছে দাবি করিছিলেন আ্যালগারিদম্ নাকি তার আবিষ্কার। আর তার পর থেকেই ভারতের প্রাচীন পুঁথির ওপর আরবীয়ানদের আক্রোশ আর পঞ্চাননমঙ্গলকাব্যে ছিল ছন্দের সাথে মিলিয়ে অঙ্কের সূত্রসমূহ, তাই এই গ্রন্থ ছিলো তাদের কাছে শয়তানের পুঁথি। তাই ১৪০০ খ্রীস্টাব্দে তারা যত জায়গায় এই পুঁথি ছিলো সব জ্বালিয়ে দিতো। নন্দীধর কবিরাজ তার মন্দিরের গাত্রে পাথরে এই কাব্যগ্রন্থ খোদাই করিয়েছিলো। জালালুদ্দিনের সাগরেদ্ জটামদন এই মন্দির ধ্বংস করতে এসে দেখে রাতারাতি মন্দিরের পুরোহিত নন্দীধর সহ সম্পূর্ণ মন্দির উধাও। একরাতে মন্দির কোথায় হাওয়া হলো জানার জন্য পড়তেই হবে আপনাকে এই গল্প।
এই গল্প থেকে প্রাচীন বাংলার নৌবহর সম্পর্কে অনেক তথ্য পাবেন।
প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ্যা সম্পর্কে আগ্রহ জন্মাবে, বৈদিক শুল্বসূত্র যা এখনকার জ্যামিতিশাস্ত্র তার সম্পর্ক জানবেন।
হস্তীবিদ্যা সম্পর্কে বাঙালির জ্ঞানের কথা জানবেন।
পাথরের ওপর লেখার জন্য নাকি বাংলা থেকে কারীগর যেতো সারা ভারতে। এমন এমন তথ্যে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থ যা কেবলই একটা কাহিনী হয়ে নয় একটা গবেষণাপত্র হিসাবে মনে রয়ে যাবে।

ওনার লেখা ছিরিছাঁদ পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
Displaying 1 - 30 of 58 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.