ইউক্রেনের মাটিতে মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকা আর রাশিয়া-তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগলো বলে। সেই তপ্ত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে এদেশে আশ্রয় নিলো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক সিআইএ এজেন্ট। সাথে করে নিয়ে এসেছে এমন দুনিয়া-কাঁপানো এক বিস্ফোরক তথ্য। পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠলো যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে আর দেশসেরা স্পাই বাজিকর আহাদসহ ইউক্রেনের আকাশ থেকে হাইজ্যাক করা হলো একটা যাত্রিবাহী বিমান।
জিম্মি উদ্ধারে বাছাই করা ছ’জন এসপিওনাজ এজেন্টকে পাঠানো হলো বটে, কিন্তু ইউক্রেনের মাটিতে পা দিতেই বাঁধলো বিপত্তি। এখন গোটা মিশনের দায়িত্ব এসে পড়েছে দলের সর্বকনিষ্ঠ এজেন্ট আহাদের ওপরে-যার শৈশব কৈশোর কেটেছে এতিমখানায় আর ফুটপাতে, যার ট্রেনিং এখনো শেষ হয়নি।
শত্রুভূমিতে একা একা কতটুকু করতে পারবে আহাদ? অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর বের করতে হবে ওকে - প্লেনটা হাইজ্যাক করেছে কে? শত্রুসেনার দলপতির গ্যাসমাস্কের আড়ালে কার মুখ? পেছনে থেকে গোটা ঘটনাটার কলকাঠি নাড়ছে কোন মহাশক্তিধর গোপন সংস্থা? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন - ওর মিশনের আসল উদ্দেশ্য কি? সত্যিই কি সাধারণ একটা জিম্মি উদ্ধার মিশনে পাঠানো হয়েছে ওকে, নাকি মিশনের লক্ষ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু?
আর সেই লক্ষ্য পূরণে কোন অসাধ্যটা সাধন করতে হবে আহাদকে?
বেশি কিছু বললে অনেকে আবার স্বজনপ্রীতি বলে ধরে বসবেন । তাই এটুকুই বলবো যে ভবিষ্যতে বাংলা অ্যাকশন থ্রিলার বলুন আর এসপিওনাজ থ্রিলার, নাবিল মুহতাসিমের হাত ধরেই সেটা এগিয়ে যাবে অনেকটুকু । :) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত । আর লেখনি! কোন কাহিনীও যদি না থাকে, তবুও আমার নাবিলের লেখা পড়তে ভালো লাগবে ।
মোটের উপর দম আটকে রেখেই পুরো বইটা শেষ করতে হয়েছে; কারণ বইয়ের কোথাও লেখক দম ফেলার ফুরসত রাখেননি। একবার মনে হচ্ছিল, এত চাপ আর নিতে পারছি না। এটাই তো এসপিওনাজ থ্রিলারের প্রাথমিক সার্থকতা, তাই না?
▫️▫️▫️
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার সম্ভাবনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশ্ব। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই বিশ্বযুদ্ধ কীভাবে বাধে, কারা বাধায়, কারা এত এত মানুষের প্রাণহানি উপভোগ করে? আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাই না আমাদের আশেপাশে এক চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে চুপিচুপি–জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নেটওয়ার্ক। বিশ্বের বিশেষ সকল ঘটনায় তাদের কলকাঠি অবধারিত। তাদের সাথে টেক্কা দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাবে এমন কেউ কি আছে? কে আছে?
মারামারির ক্যারিশম্যাটিক ধাঁচটা পছন্দ হয়েছে। ভিলেনদের আরও একটু শক্তিশালী দেখালে ভালো হতো বোধহয়। তবু এত ছোট বইয়ে এমন গভীর বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র তুলে আনাও চমকপ্রদ। দারুণ!
এই বইয়ের প্রতিটি শব্দ আমি উপভোগ করেছি। বইটি হাতে নিয়েছিলাম শেষ রাতে, তাই এক বসায় শেষ করা সম্ভব হয় নি। কিন্তু অসম্পূর্ণ রেখে ঘুমোতে যাওয়ায় আমার রাতের ঘুমটাও মাটি হয়েছে।একশন, থ্রিল সবকিছুরই একটা পারফেক্ট মিক্সচার ছিল বইটি। এক কথায় অসাধারণ!
বাংলা ভাষায় যে এরকম কিছু ভালো থ্রিলার লেখা হচ্ছে এইটাই সবচে' বেশি আনন্দের কথা।
এখন একে একে নাবিল মুহতাসিম এর সবগুলো বই শেষ করে ফেলতে হবে। নইলে শান্তি নেই।
There are a few minus points but a lot more plus points in this book. Plus points includes-! 1. A love-hate relationship between the protagonist and the reader. I liked a few things about him, disliked a few. In short, the character seemed human to me. 2. An extremely crafty and well build universe within the book. 3. Nice action sequences. Author certainly did his home work (as far as a reader like me can tell), which he in turn converted nicely in the book. It did not seem to me that I am reading a thesis paper. 4. The conception and creation of the 'bajikor' myth was very nice and refreshing. Minus points would be- 1. Towards the end, the narration got a bit repetitive, specially regarding Ahad's motive for revenge. 2. Extensive use of 'english' words. Everybody in this book uses english, even when the are talking about trivial matters or giving a pep-talk or boasting! I do not like my bangla novels getting mixed with so much english! 3. There are a few loose ends. What happened to karl or the head of...you know what! Is there going to be a sequel? I also do not like being teased. If there is a plan to write a sequel, I want it to know before hand. To me, it shows that the author is devoted to a book that I myself had spend time on. If there is indecision, I would like to know about the fate of my characters plz.
The minus points are largely because of my own preferences, This should, in no ways, take away from a splendid work done by so young an author. Thank you for a delightful time.
আমি নাবিল মুহতাসিমের লেখার প্রেমে পড়ি 'শ্বাপদ সনে' পড়ার পর। এপার বাংলায় তখনও খুব বেশি পাঠক তাঁর লেখা পড়েননি। ওই বইটা পড়ার পর আমি যখন অনেককেই বলার চেষ্টা করেছি যে বাতিঘরের জহুরি কী দুর্ধর্ষ একটি জহরত তুলে এনেছেন, অনেকেই ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি। অথচ এই লেখক যে কীভাবে বাঙালিয়ানাকে আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তি দিয়ে দেন শ্বাসরোধী থ্রিলারের মধ্যেই তা, জনপ্রিয় মিম-এর ভাষা ধার করে বলতে হয়, বই শেষ হওয়ার আগে "ধরতে পারবেন না!" আলোচ্য উপন্যাসের পটভূমি সর্বার্থে আন্তর্জাতিক। ইউক্রেনের একাংশে বেনামে ঢুকেছে রুশ ফৌজ। সেখানেই অপহৃত হল বাংলাদেশের একটি বিমান। সেই বিমানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী'র মেয়ে, এবং বাংলাদেশের নিজস্ব সিক্রেট সার্ভিস 'দ্য এজেন্সি'-র সেরা এজেন্ট, 'বাজিকর' উপাধি-পাওয়া জনি। কী চায় অপহরণকারীরা? ইউক্রেনে কাজ করতে-করতে কী এমন জেনে ফেলেছিল সি.আই.এ এজেন্ট কার্ল, যে তাকে হুইসলব্লোয়ার হয়ে পালিয়ে আসতে হল বাংলাদেশে? দ্য এজেন্সি তাদের বাছাই করা ছ'জনকে পাঠাল ইউক্রেনে, যাতে অপহৃতদের উদ্ধার করা যায়। প্রথম রাতেই সেফ হাউজে অ্যামবুশ হল। মারা গেল পাঁচজন। পালিয়ে গেল শুধু আহাদ! এতিমখানায় বড়ো হওয়া, পকেটমারি করে পেট চালানো, জনি'র নিজের হাতে গড়ে তোলা অপারেটিভ আহাদ। কিচ্ছু জানে না সে। কাউকে চেনে না সে। কী করবে সে এবার? কী হবে এই গল্পের শেষে? শুধু এক রুদ্ধশ্বাস গতিময় পলিটিক্যাল তথা অ্যাকশন থ্রিলার নয় এই বই। কোনো কনস্পিরেসি থিওরির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সুপারম্যান ও ওয়ান্ডার ওম্যানের কাহিনিও নয় এটি। বরং চোখের জল আর রক্ত যখন চিরতরে শুকিয়ে যায়, শরীরের যন্ত্রণা সহ্য করার সীমা যখন পেরিয়ে যায়, তখনও "বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা" বলে এগিয়ে যাওয়ার উপাখ্যান বাজিকর। এ বই পড়ার। এ বই মনে রাখার।
মাসুদ রানার কেমিও টা যদি আসতো! আহ পুরা ক্রস ইউনিভার্সে অসাধারণ একটা সিচুয়েশন হয়ে যেত! যাই হোক আমার ফ্যান্টাসি বাদ দিই।
কিছু অতিরঞ্জন, কিছু বাচাল আহাদ, অতিরিক্ত সাবরিনা (৩ টাই মাইনর পয়েন্ট) বাদ দিলে অসাধারণ ছিল বাজিকর এর এক্সপেরিয়েন্স। নাবিল ভাই এর লেখনি ছিল দুর্দান্ত ও দারুন সাবলিল!
আমার বিষন্নতম সপ্তাহটাকে আরো বিষন্ন করে দিলো উপন্যাসের শেষ টা। আমাদের যে প্রজন্ম কিংবদন্তি স্পাই থ্রিলার পড়ে বেড়ে উঠেছে আমি সেই জেনারেশানের। স্বভাবত ই স্পাই থ্রিলারের প্রতি আবেগ টা অন্যরকম কাজ করে। স্টোরিটেলিং ঠিকঠাক। কিছু জায়গায় ভাগ্যের অতি সহায়তা লাক ফেভার, কাকতাল ব্যতীত সুখ-পাঠ্য মৌলিক স্পাই থ্রিলার। জয়তু বাংলা মৌলিক স্পাই থ্রিলার <3
প্রথমে মাসুদ রানা পড়ছি ��নে হল। পরে কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেল। আবেগ অনেক বেশী। চমক খারাপ না হলেও অবিশ্বাস্য ঘটনা খুব বেশী হয়ে গিয়েছে। প্রফেসনাল খুনীরা এত সহজে একজন লোয়ার লেভেল অপারেটিভ এ কাছে হার মেনে যাবে ব্যাপারটা মেনে নেওয়া কঠিন। বাজিকর থিওরিটা ভাল লেগেছে। সর্বশেষে বাঙালী হিসেবে শেষ পৃষ্ঠার আবেগ আমাকেও ছুয়ে গেল।
এই রিভিউটা এককভাবে 'বাজিকর' বইটির নয়, বরং পুরো ট্রিলজির কমবাইন্ড রিভিউ। যেহেতু ট্রিলজি হিসেবে রিভিউ এড করার সুযোগ নেই গুডরিডসে, তাই প্রথম বইটিতে এড করে দিলাম। ক্রমান্বয়ে বাকি দুটো বইয়েও এড করার ইচ্ছা আছে।
ঘটনা প্রবাহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
ঘটনাটার শুরু ইউক্রেনে, বিস্তার লাভ করলো বাংলাদেশের মাটিতে(!) আর মীমাংসা হলো উত্তর কোরিয়ায়।
ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ লাগলে সেটার রেশ থাকবে ইউক্রেন আর রাশিয়ায়, বড়জোর ইউক্রেন সমর্থনকারী আর দশটা ইউরোপীয় দেশে এবং সেই যুদ্ধের ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হবে বাংলাদেশে (যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা!)।
কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশে বাজি পটকা ফুটবে, তা মানা যায় না৷ না মানলেও ঘটনাটা ঘটলো সিআইএর হুইসেল ব্লোয়ার কার্ল হাসান সেভার্সের জন্য!
দুটো আমেরিকান নামের মাঝে একটা বাংলা নাম দেখেই বুঝছেন কার্লের সাথে বাংলাদেশের সংযোগ আছে কাকতালীয়ভাবে। হ্যাঁ, কার্লের মা বাংলাদেশী। সেটা বাদেও, তিনমাস আইটি প্রশিক্ষণের সুবাদে বাংলাদেশী এজেন্ট সাব্বিরের সাথে পরিচয়ের অধিকারে কার্ল সোজা চলে এলো বাংলাদেশে।
এদিকে বাংলাদেশে এসে সে সুবোধ বালকের মতো বসে থাকেনি। একটা ওয়েবসাইট খুলে সিক্রেট অর্গানাইজেশন দ্য অক্টোপাসের একের পর এক গোপন নথি ফাঁস করে চলেছে! এই ফাঁসাফাঁসি ঠেকাতে পারে কেবল কার্ল নিজে!
কার্ল কে থামানোর জন্য দুটো উপায় আছে। তার প্রথমটা নিয়ে সিরিজের প্রথম বই বাজিকর। এবং দ্বিতীয়টা নিয়ে দ্বিতীয় বই বাজি।
প্রথমটাই প্রথমে এপ্লাই করলো দ্য অক্টোপাস । বাংলাদেশ সরকারের কাছে কার্ল সেভার্সকে দাবি করলো তারা! কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্লকে ফেরত দেবেন না মর্মে সিদ্ধান্ত নিলেন।
এদিকে দ্য অক্টোপাস এদেশের গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইতে থাকা তাদের পোষা লোককে বললো কার্লকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে। সেটাও সম্ভব হয়নি। সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।
এরপর বাংলাদেশের পিএম এর মেয়ে সহ দেশীয় কিংবদন্তীতুল্য গোয়েন্দা সংস্থা দ্য এজেন্সির বাজিকর জনিকে কিডন্যাপ করে ইউক্রেনে রেখে দিলো তারা। কার্লকে ফেরত না দিলে পিএম এর মেয়ে আর জনিকে ছাড়া হবে না।
পিএম হার মানলেন না। দ্য এজেন্সির বেস্ট সিক্স কে পাঠালেন রেসকিউ মিশনে। পাঁচজন ফুলটাইম এজেন্ট, একজন নবিশ অপারেটিভ ; বাজিকর আহাদ!
পাঠক, ফ্ল্যাপ পড়ে আপনারা জানেন, এই রেসকিউ মিশনের দায়িত্ব শেষমেশ এসে চাপে বাজিকর আহাদের উপরে!
যাহোক, আহাদ শেষ পর্যন্ত পিএম এর মেয়েকে উদ্ধার করে ফেলে, এবং ঘটনাপ্রবাহ আরও গভীরে যায়।
এরপর দ্বিতীয় উপায় এপ্লাই করে দ্য অক্টোপাস। ঝাঁকে ঝাঁকে এসপিওনাজ এজেন্ট পাঠাতে থাকে বাংলাদেশে! আর তাদেরকে ঠেকানোর জন্য বাজিকর বাবুকে কোমা থেকে ওঠানো হয়, কারণ রাষ্ট্রের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।
বাজিকর বাবু, দ্য এজেন্সির চিফ স্ট্রাটেজিস্ট মাস্টার সিফাতের সহায়তায় একের পর এক এজেন্টের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে কতল করে, কার্ল-সাব্বিরকে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দেয়।
এবারেও কার্ল কে ধরতে ব্যর্থ হয়ে দ্য অক্টোপাস পিএম কে এলিমিনেট করার প্ল্যান করে। তাদের এই প্ল্যানও সফল হয় না। বাজিকর বাবু আর আহাদ মিলে ঠেকিয়ে দেয় এই হামলা!
ঘটনার প্রায় শেষ অঙ্কে উপস্থিত আমরা। তুরুপের তাস অনেকের হাতেই, অনেকের আস্তিনেই রুমাল লুকানো, কিন্তু বাজিমাত করবে একজনই!
ঘটনার সমাপ্তি একটা নিউক্লিয়ার এয়ার ক্রাফটে। এই এয়ার ক্রাফট থেকেই হামলা চালানো হবে উত্তর কোরিয়ায়। লাগিয়ে দেয়া হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ; এটাই চায় সিক্রেট অর্গানাইজেশন দ্য অক্টোপাস।
বাজিমাত করতে জাহাজে উপস্থিত দ্য লুনাটিক ট্রাভিস আরভাইন আর বাজিকর আহাদ। তাদেরকে মোকাবিলা করতে হবে পুরনো এক শত্রুর সাথে।
সামগ্রিক বিশ্লেষণ :
বাজিকর ট্রিলজি পাঁচে পাঁচ পাওয়া একটা সিরিজ, অধিকাংশের কাছেই। কয়েকজন আপত্তি জানিয়েছিলেন সিরিজটির এসপিওনাজ কলা কৌশল নিয়ে। কারণ মাসুদ রানার সাথে এর বিস্তর ফারাক রয়েছে। তবে এই ফারাকটার জন্যই আসলে বাজিকর ট্রিলজি পাঁচে পাঁচ পাবে।
মাসুদ রানা মূলত কনক্রিট ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন বেজড মিশন এক্সিকিউট করা প্লটের। এসপিওনাজ এজেন্টরা কীভাবে কাজ করে, কীভাবে একেকটা ইনফরমেশন কালেক্ট করে মিশনের দিকে এগিয়ে যায়, তাদের উপরে কীভাবে কাউন্টার এসপিওনাজ করা হয়; এসব নিয়েই মাসুদ রানা।
অপরদিকে বাজিকর ট্রিলজিতে লেখক এসব ইনভেস্টিগেশন এড়িয়ে কালারফুল সুররিয়েলিস্টিক অ্যাকশন বেজড একটা প্লটের উপরে লিখেছেন। বাজিকর ট্রিলজির সাফল্য এবং আপত্তির জায়গা এটাই।
প্লট:
রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল এক্সাইটমেন্টের সাথে সিক্রেট অর্গানাইজেশন, স্পাই এজেন্সি, ডাবল এসপিওনাজ, দেশিয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মিলে প্লট টা বেশ ইউনিক। সরকারের অনুগত স্পাই এজেন্সির বাইরে নাবিল মুহতাসিম লিখলেন স্পাইয়ের অন্য এক জগত নিয়ে।
লিখনশৈলী:
এই বইয়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হলো এর স্টোরিলাইন। নাবিল মুহতাসিম সামনাসামনি বসে গল্প শোনাচ্ছেন, আর পাঠক সেটা ভিজুয়ালাইজ করছে; ব্যাপারটা ঠিক এরকম।
পরিমিত স্ল্যাং, স্যাটায়ার, নিজস্ব কিছু পাঞ্চলাইন; প্রায় প্রতি চ্যাপ্টারেই এসবের উপস্থির জন্য পাঠক পরের চ্যাপ্টার পড়েছেন আগ্রহ নিয়ে।
"অমুক তো ঘাস খেয়ে মো সা দের এজেন্ট হয়নি যে এক ঘুষিতেই কাবু হবে।" এরম কিছু লাইন পড়তে গিয়ে কখনো হেসে ফেলেছি, কখনো মুগ্ধ হয়েছি।
তবে কিছু কিছু লাইন একটু মেলোড্রামাটিক লেগেছে। "আধ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুরলো", "সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে ঘুষি চালালো।"
তবে বু লে ট ফায়ার করা নিয়ে কিছু লাইন প্রথমে মেলোড্রামাটিক লাগলেও পরে সত্যতা পেয়েছি। যেমন সেকেন্ডের মধ্যে গুলি করা।
হাইলি ট্রেইন্ড একজন শ্যুটারের জন্য এটা স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে সদ্য অফিসার হিসেবে কমিশন পাওয়া আমার এক বন্ধু।
চরিত্রায়ন:
বাজিকর ট্রিলজির সাফল্যের অন্যতম কারণ এর চরিত্রায়ন। চরিত্রগুলো আমাদের আশেপাশের হলেও তারা থাকে অন্য জগতে।
বাজিকর আহাদ আর বাজিকর বাবু ট্রিলজির অন্যতম প্রধান দুই চরিত্র। এছাড়াও সময়ে সময়ে দ্য এজেন্সির চিফ স্ট্রাটেজিস্ট মাস্টার সিফাতকে দেখা গেছে বিভিন্ন চ্যাপ্টারে।
আহাদের পার্কুর টেকনিক মুগ্ধ করার মতো বিষয়। তার ফাইটিং স্কিল আর দশটা এসপিওনাজ এজেন্টের মতোই। কিন্তু আহাদ জিতেছে তাদের সাথে কারণ সে শেষ পর্যন্ত লড়তে জানে।
একজন নবিশ ইয়াং এজেন্টের মতোই আ��াদ ভয় পায়, শঙ্কিত হয়, কষ্ট পায়। কিন্তু সে শেষ পপর্যন্ত লড়তে জানে।
বাজিকর বাবু তর্কসাপেক্ষে সিরিজের বেস্ট ক্যারেক্টার। এরোগেন্ট, কনফিডেন্ট, আ গুড ফাইটার এন্ড শ্যুটার, অলসো অ্যান ইথিকাল পারসন। বাজি'তে মাস্টার সিফাত তার উপরেই বাজি ধরে কারণ বাজিকর বাবুকে কিনে নেয়া সম্ভব না।
বাজিতে বাবু একের পর এক বিদেশী এজেন্টের সাথে লড়াই করে। প্রায় প্রতিবারই মৃত্যুর মুখ থেকে বিজয় ছ��নিয়ে আনে বাবু। কারণ সে ভয় না কোনো কিছু বা কাউকে।
বাবুর এরোগেন্ট ক্যারেকটারটাই ভালো লাগে। মুড না থাকলে এজেন্সির ডিরেক্টর আতিয়ার রহমানেরও প্রশ্নের উত্তর না দেবার রেকর্ড আছে বাবুর!
এদিকে ডিরেক্টর আতিয়ার, আনডিফিটেড বাজিকর, স্বল্পস্থায়ী একটা চরিত্র হলেও তার ইম্প্যাক্ট প্রথম দুটি বইয়ে বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায়। এবং তৃতীয় বইটায়ও কিছুটা রেশ পাওয়া যায়।
স্বল্পস্থায়ী আরও কয়েকটি চরিত্র মন জিতে নিয়েছে। প্রেজেন্স কম হলেও ওয়েল বিল্ড ক্যারেক্টারাইজেশনের জন্য চরিত্রগুলো মনে দাগ কাটে। একজন পাকা লেখকের মতোই নাবিল মুহতাসিম স্বল্প সময়ে চরিত্রগুলোকে স্থায়িত্ব দিয়েছেন।
বাজিকর জনি, ট্রাভিস আরভাইন, মাস্টার সিফাত যখনই বইয়ের পাতায় এসেছে, আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। তাদের অন্তর্ধান পরবর্তী চ্যাপ্টারগুলো পড়ার আগ্রহ জাগিয়েছে "আবার কখন পাব ট্রাভিসকে?" এটাও একরকম ক্লিফহ্যাঙ্গার বলা চলে।
টুইস্ট:
বাজিকর, বাজি, বাজিমাত; তিনটা বইয়েই সতন্ত্র টুইস্ট আছে।
বাজিকরে ক্যারেক্টার টুইস্ট বেশ ভালোই লেগেছে।
বাজিতে প্লট+ক্যারেক্টার টুইস্ট দুটোই ছিল। এবারে টুইস্ট প্রথম বইয়ের তুলনায় আরও জোরালো।
বাজিমাতে কয়েকটি টুইস্ট ছিল। এরমধ্যে একটা প্রায় বুঝতে পেরেছিলাম পড়ার সময়ে, আরেকটির স্পয়লার দিয়েছিল এক হাড়ে-বজ্জাত ছোট ভাই!
এন্ডিং:
বাজিকরে এন্ডিং ঠিকঠাক ছিল, একটু বিষন্নতায় মোড়ানো।
বাজিতে এন্ডিং হয়েছে একগাদা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে।
বাজিমাতে এন্ডিং একটু নাটকীয় লেগেছে।
বাজিকর ৪.৫/৫
বাজি ৫/৫
বাজিমাতের রেটিং ৪/৫
বাজিকর, বাজি পড়ে অ্যাকশন সিন গুলো নিয়ে একটু বেশিই অবসেসেড হয়ে গেছিলাম। বাজিমাতেও এরকম হাই অকটেন অ্যাকশন সিন আশা করেছিলাম তাই। তবে বাজিমাত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া আর নাটকের সমাপ্তি বলে অ্যাকশন সিন একটু কমই ছিল। শেষে একটা জবরদস্ত একশন ছিল বলে আক্ষেপ তেমন নেই। তবুও এক তারা রেটিং কেটে নিলাম একশন সিন কম বলে (!)
পরিশিষ্ট:
বাংলা মৌলিক থ্রিলারে বাজিকর ট্রিলজি একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷ আর কোনো বই না লিখলেও নাবিল মুহতাসিম থ্রিলার লেখক হিসেবে টিকে যাবেন।
বাজিকর ট্রিলজি বাদেও বাংলা ভাষায় লেখা আরও কিছু মৌলিক স্পাই থ্রিলার পড়া হয়েছে আমার। সেগুলো অন্য দিক থেকে অনন্য, তবে আমি যেহেতু অ্যাকশন থ্রিলারের ভক্ত তাই আমার কাছে বাজিকর ট্রিলজিই শ্রেষ্ঠ মনে হয়েছে।
বাজিকর। ইংরেজ আমলে গুপ্তচরবৃত্তির সেরাকে উপমহাদেশে এই উপাধি দেয়া হত। ভাষার তারতম্যের কারণে দেশভেদে উপাধি ভিন্ন নাম পায়। তবে অর্থ একই থাকে, সেরা এসপিওনাজ এজেন্ট।
ভূরাজনৈতিক সমীকরণে ইউক্রেন বনাম রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এর মাঝে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গাজী সোবহানুল হকের মেয়ে আনিলা হক বিমান হাইজ্যাকের শিকার হয়ে যান। অপহৃত আনিলা হককে উদ্ধার করতে জটিল ঐ স্থানে বাংলাদেশের সেরা "দ্য এজেন্সি" কে পাঠানো হয়।
"দ্য এজেন্সি" বাংলাদেশের সেরাদের সেরা ইন্টেলিজেন্স সংস্থা। তাদের মটো হল "আমরা এটম বম্ব বানাই না, মানুষ তৈরি করি।" অমানবিক এবং কঠোরতম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সবচেয়ে দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক গুপ্তচরদের। তাছাড়া এই রেসকিউ মিশনে আনিলা হকের সাথে ছিলেন ঐ এজেন্সির সবচেয়ে মূল্যবান অ্যাসেট, বাজিকর জনি।
এরূপ ঘোলাটে জিওপলিটিক্যাল পরিস্থিতিতে আরো ঘটনা ঘটে যায়। বাংলাদেশি রক্তধারা ধমনীতে বইছে এরকম এক সিআইএ এজেন্ট ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসেন এদেশে। পৃথিবীজুড়ে রাজত্ব করে আসা এক গুপ্তসঙ্ঘ সম্পর্কে এমন কী জেনে গেছেন কার্ল? যেকারণে রহস্যময় কর্নেল সেবাস্তিয়ান প্রধানমন্ত্রীর মেয়ের পরিবর্তে কার্লকে চান।
"দ্য এজেন্সি" এর দ্বিতীয় সেরাকে কোমা থেকে সঠিকভাবে তুলতে পারেনি সংস্থাটি। তৃতীয় সেরাকে লিডার বানিয়ে ছয়জনের এক টিম গঠন করা হয় এই রেসকিউ মিশনে। বিহাইন্ড দ্য এনিমি লাইনে বাংলাদেশের খুব সম্ভবত শেষ ভরসা পাঁচজন ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে এক্সপার্ট এজেন্ট এবং একজন হাই পারফর্মেন্স অপারেটিভ আহাদ।
ভূরাজনৈতিক নৈরাজ্যের সুযোগ নিয়েছে রাশিয়াপন্থী ইউক্রেনের মিলিশিয়ারা। তাঁরা এমনসব জঘন্য কাজ করে বেড়াচ্ছে যে খোদ মাদার রাশার কর্তাব্যক্তিদের জানা নেই। বাজিকর জনির পোষ্যপূত্র আহাদ শত্রুদেশে পৌছেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখে পড়ে যান। কারণ তাদের ছয়জনের টিমের বিপরীতে আছে কর্নেল সেবাস্তিয়ানের নেতৃত্বে এক নৃশংস ছয়জনের দশ। যেখানে দুইশ আইকিউর মাস্টারমাইন্ড, বোমাবিশেষজ্ঞ, দানবীয় এজেন্ট, সুপার সোলজার, লক্ষ্যভেদি এবং সেবাস্তিয়ান স্বয়ং। "দ্য এজেন্সি" এর ছয়জন যেন কিছু নয় এই বিশ্বসেরাদের সামনে।
রেসকিউ অভিযানের সাথে যুক্ত হয় "সার্চ" এর কাজও। বিদেশবিভুয়ে একদম কোনঠাসা হয়ে পড়া আহাদ যেন ডেভিড হয়ে কমপক্ষে ছয়জন গোয়ালিয়াথের মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন। বাজিকর জনির কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আহাদের সামনে এক অসম্ভব অভিযান যেন জগদ্দল পাথরের মত দাড়িয়ে আছে।
নাবিল মুহতাসিমের লিখার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে "স্বাপদ সনে" এর গ্রাফিক নভেল অ্যাডাপ্টেশনের কারণে। এছাড়া "গল্পগাথা" সংকলনে তাঁর "তাম্বুল হৈল রাতুল" গল্পটি আমার খুব ভালো লেগেছিলো। একদম নিজস্ব স্টাইলে গল্পকথন করে গেছেন নাবিল। তাঁর স্টোরিটেলিং এ চলে আসে ঐতিহাসিক চরিত্রদের খানিক ঝলক, কবিতা, গান এবং দারুন উইট। দ্রুতগতির এই রহস্যরোমাঞ্চ ভর্তি আখ্যান এক বসায় পড়ার মত। বিশেষ করে মানুষের সুপ্ত ব্যক্তিসত্ত্বার তীব্র জাগরণ যেমন পাওলো কোয়েলহোর বইয়ে পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি নাবিল মুহতাসিম এসপিওনাজ নভেলের মোড়কেও একইধরণের কাজ করেছেন। তাছাড়া একশন দৃশ্যগুলোর চিত্রায়ণ লেখক করেছেন দারুনভাবে।
ক্রিটিকেরও কিছু জায়গা আছে। মুদ্রণপ্রমাদ নিয়ে আমার তেমন সমস্যা নয় না তবে দু'টি জায়গায় চরিত্রের ক্ষেত্রে একজনের জায়গায় আরেকজনের নাম চলে আসায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। আশা করছি পরবর্তি সংস্করণে ঠিক করে নেবেন লেখক-প্রকাশক। বেশ গতি সম্পন্ন গল্পের এই প্লট কোন আহামরি বা গ্রাউন্ডব্রেকিং নয় তবে নাবিলের একধরণের ক্যাওটিক স্টোরিটেলিং আমার খুব ভালো লেগেছে। কোন কিছুর প্রতি প্যাশনেটলি লেগে থাকাটা একধরণের মোটিভেশনও দিতে পারে পাঠকের মনে অজান্তেই।
বাজিকর ট্রিলজির তিনটি বই-ই আমার সংগ্রহে আছে। মিনিমালিস্ট এপ্রোচে, অদরকারি তথ্য-তত্ত্ব না এনে এক প্রিসাইজ আখ্যান লিখেছেন নাবিল মুহতাসিম। আমি অদূর ভবিষ্যতে বাকি দু'টির রিভিউ লিখতে পারি, পড়া শেষে। আমার মনে হয় দুর্দান্ত এক ট্রিলজির শুরুটা করলাম মাত্র।
জীবন অনেক সময় জুয়ায় পরিণত হয়। সবকিছু হারানোর ঝুঁকি থাকার পরও মানসিক শক্তির বলে নিজের সুপ্ত ব্যক্তিসত্ত্বার জাগরণের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই কেউ কেউ পরিণত হয়ে যান বাজিকরে।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তাহা বহুদূর? মানুষের মাঝে স��বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসার। — কবি শেখ ফজলল করিমের এই কবিতার পঙ্ক্তি অদ্ভুতভাবে মিলে যায় নাবিল মুহতাসিমের লেখা ❛বাজিকর❜ উপন্যাসের সাথে। তবে লেখক ভিন্নভাবে এই পঙ্ক্তির উপস্থাপনা করেছেন, ঠিক এইভাবে—
❝পৃথিবীর কোথাও স্বর্গ নেই। তবে নরক আছে। এই গোটা পৃথিবীটা একটা নরক। সূর্যের তৃতীয় গ্রহটার নাম হাবিয়া দোজখ।❞
রাগের বহিঃপ্রকাশ করতে যে কয়েকটি লাইন তিনি লিখেছেন, সেখানে শুদ্ধতার থেকে বাস্তবতার ছোবল মাত্রাতিরিক্ত ছিল। যে দৃশ্যকল্প বাস্তবায়ন করতে এই উক্তির আবির্ভাব; তার পেছনে লুকিয়ে আছে কঠিন এক সংকল্প!
কী সেটা তা না-হয় বই পড়ে জানতে পারবেন। এখন আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, শেষ কবে নিজের সংকল্প নিয়ে নাড়াচাড়া করতে বসেছেন? একচিত্তে যে শপথ আজ থেকে বহুদিন আগে নিজ মনের পক্ষে-বিপক্ষে গিয়ে যুক্তিতর্কের খাতিরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হয়েছেন; তা আজ কোন রূপে আপনাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে? মনে পড়ছে কিছু—না ভুলে গেলেন সবকিছু? সফলতা পেতে গেলে যে নিজের সংকল্পের কথা ভুলে যেতে হয় না। শুধু বাজিকর’রা এই নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য না; যে-কোনো পেশা অথবা নেশাখোরেরও স্ব স্ব উদ্দেশ্য থেকে থাকে। যা তারা মেনে চলে, নিজের ভেতরের বাজিকর সত্তাকে জীবিত রাখার জন্য।
বাজিকর—বাংলার বাজিকর। স্পাই বা গুপ্তচর টাইটেলের সাথে আমরা কমবেশ সবাই পরিচিত। এসপিওনাজ (Espionage) স্প্যানিশ শব্দ হলেও, ইংরেজিতে রূপান্তর করলে সেটা দাঁড়ায় ‘স্পাইয়িং’ অর্থাৎ গুপ্তচরবৃত্তিতে। কারা এরা অথবা কী তাদের কাজ—তা অজানা নয় কারও। দেশ-বিদেশে এ-রকম অনেক স্পাই রয়েছে। যারা বাস্তব থেকে বইয়ের পাতায়—সমানভাবে সমাদৃত। দেশিয় প্রেক্ষাপটে ‘মাসুদ রানা’ কিংবা বিদেশি পটভূমিতে ‘জেমস বন্ড’-এর নাম শুনলে এক হিরোয়িক অবয়ব চোখের মণিতে ভেসে ওঠে। যাদের রয়েছে দুর্ধর্ষ লড়াইয়ের ক্ষমতা, বুদ্ধি দিয়ে শত্রু কুপোকাতের দক্ষতা-সহ নানান সব অলীক কর্মকাণ্ডে পারদর্শিতা।
ঠিক সেইরকম কয়েকজন বাজিকরদের নিয়ে লেখা দারুণ উপভোগ্য এক এসপিওনাজ থ্রিলার ❛বাজিকর❜। ••⚊•• বছর শেষে আমি যখন পড়া বইগুলোর পছন্দের তালিকা সাজাতে বসব, ❛বাজিকর❜ সেই তালিকার নির্দ্বিধায় ওপরের সারিতে থাকবে। একটি উপন্যাস, যেটা পড়ে আপনি সর্বোচ্চ মজা পাবেন—আবারও বলছি ‘মজা’ বা ‘উপভোগ’ করবেন; সেখানেই লেখকের সার্থকতা। ❛বাজিকর❜ তেমনই একটা উপভোগ্য উপন্যাস, যা লেখা হয়েছে অতি যত্নে; একেবারে রয়েসয়ে। এসপিওনাজ জনরার সাথে পুরোপুরি জাস্টিস করেছে এই উপন্যাস। অনেক পাঠকের নিকট অতি নাটকীয় অথবা ‘লাইফ-সেভিং মোড অলওয়েজ অন’ মনে হলেও, লিখনপদ্ধতির গুণগত মান এবং প্রাঞ্জল বর্ণনার মেলবন্ধনে পুরো উপন্যাস হয়েছে প্রাণবন্ত।
কয়েকজন দেখলাম অভিযোগ করেছেন—যে বইটি হলিউড সিনেমা লেগেছে! এইটা অভিযোগ কাম প্রশংসা বেশি মনে হয়েছে। লেখক সফল হয়েছেন তার কর্মে—এই অভিযোগ-ই হলো তার প্রকৃত উদাহরণ। . . ➲ আখ্যানপত্র—
গুডরিডস অথবা কমেন্ট বক্সের প্রথম কমেন্ট চেক করুন। . . ➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
❛বাজিকর❜ উপন্যাস নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া একেবারে নিট অ্যান্ড ক্লিন। শুরু থেকে গল্প হুকড হওয়ার মতো ঘটনা, পারফেক্ট ক্যারেক্টর বিল্ডাপ, পর্যাপ্ত ইমোশন এবং মাঝেমধ্যে দম আটকানো সাসপেন্স। অন্তত আমার সে-রকমই লেগেছে। কাহিনি লেখার আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে এতক্ষণ বললাম, এ-বার মূল বিষয়ে আসা যাক।
এসপিওনাজ থ্রিলারে চিরাচরিত একটি মিশন থাকে। যে মিশনের ওপর নির্ভর থাকে পুরো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। ❛বাজিকর❜ উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশের এক স্পাই এজেন্সি নাম—দ্য এজেন্সি। যারা কি-না পৃথিবীর চৌকস ও দুঃসহ কয়েকটি এজেন্সির মধ্যে বিখ্যাত। তাদের রয়েছে অকুতোভয়, সাহসী এবং ঠান্ডা মাথার বেশ কয়েক জন অ্যাজেন্ট ও অপারেটর। সেই অ্যাজেন্ট-দ্বয়ের মধ্যে একজনের খেতাব থাকে—বাজিকর নামে। মূলত এই স্পাই বা বাজিকরের খেতাব নিয়ে লেখক ❛বাজিকর❜ উপন্যাসের নামকরণ করেছেন; যা যথাযথ মনে হয়েছে।
শুধু বাজিকরের ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি পর্যন্ত উপন্যাস সীমাবদ্ধ থাকেনি। রয়েছে রাশিয়া-আমেরিকা’র দ্বন্দ্ব নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার শঙ্কা। যার মধ্যস্থলে রয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু কোনো এক ঘটনাক্রমে সেই জালে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশও! লেখকের ‘বিভং’ উপন্যাসে এই রাশিয়া-আমেরিকা নিয়ে বিবাদের স্পষ্ট চিত্র দেখেছি। ❛বাজিকর❜ উপন্যাস যেহেতু তারও আগে লেখা—তাই বোঝা যায়, লেখকের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ইন্টারেস্ট অন্য মাত্রায়। ভবিষ্যতে রাশিয়া-আমেরিকা দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি যে আরও গল্প লিখবেন—তা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায়।
যাহোক, হট ফেভারিট দুই মহাদেশের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটানোর কলকাঠি নাড়ছে এমন এক গুপ্ত সংঘ—যাদের মিল পেয়েছি ‘ইলুমিনাতি’ ওরফে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের ‘হাইড্রা’র সাথে! অক্টোপাসের ছয় বা আট পা রহস্য নিয়ে না। ইলুমিনাতি’র কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ও উপযুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই কন্সপিরেসি থিওরি নিয়ে ❛বাজিকর❜ উপন্যাসের গল্প সম্পাদন। লেখক নিজেও বলেছেন সংগঠনের নাম ম্যানশন না করে—সবটুকু বানানো নয়। এর অর্থ আসলেই কি এমন কিছু ঘটতে পারে ভবিষ্যতে? ওয়েল, দেখা যাক।
বাজিকর খেতাবের উপস্থাপন, ইউক্রেনের মাটি দখলের রাশিয়া ও আমেরিকার কারণ, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক সিআইএ অ্যাজেন্ট, একটি মিশন, দুঃসাহসিক এক অপারেটর অ্যাজেন্টের লড়াই এবং এর পেছনে থাকা এক গুপ্ত সংগঠনের স্বার্থ হাসিলের ষড়যন্ত্র নিয়ে পুরো উপন্যাস লেখা। এসপিওনাজ থ্রিলার পছন্দ হলে—বইটি অবশ্যই অবশ্যই পড়া উচিত।
● সূত্রপাত—
গল্পের শুরুটা বাজিকর পরিচয়ের মাধ্যমে। যেখানে জনি ও আহাদের কথোপকথনের কিছু অংশ উঠে আসে। এর পরে বিভিন্ন চরিত্র পরিচিতির মাধ্যমে ঘটনা এগিয়ে যেতে থাকে।
আগেই বলছি, প্রথম থেকে গল্পে ঢুকে যাওয়ার রসদ সংগ্রহে ছিল। শুধু প্রয়োজন মতো লেখক সেগুলোকে খাপে খাপে বসিয়ে দিয়েছেন।
● গল্প বুনট • লিখনপদ্ধতি • বর্ণনা শৈলী—
যেহেতু লেখকের লেখার সাথে পূর্ব পরিচয় রয়েছে; তাই অনায়াসে সেই একই প্রশংসা আমি আবারও করব। এই উপন্যাসের গল্প বুননের কৌশল আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। এত ধীরে আর ধাপে ধাপে কাহিনি টেনেছেন; যা গল্পের উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। ভালো লিখনপদ্ধতি যেন লেখকের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ। খুব বেশি সাহিত্যিক শব্দচয়নের মুখোমুখি না হলেও, প্লট অনুযায়ী শব্দ চয়ন ও বাক্যগঠন যথার্থ মনে হয়েছে।
হলিউড ফ্লেভার নিয়ে কয়েক জন যে অভিযোগ করল—তা করতে পেরেছে পোক্ত বর্ণনা শৈলীর কারণে। অ্যাকশন সিকোয়েন্স এত বাস্তব; মনে হচ্ছে আমি নিজেই ফাইট করছি। রক্তক্ষরণ আমার হচ্ছে; ব্যথায় আমার প্রাণ যাচ্ছে এমন-ই অবস্থা। ভাবুন একটু। এ-রকম টানটান উত্তেজনার জন্য এই বই—আরও কয়েক বার পড়ে ফেলা যায়। যদিও ট্রিলজির আরও দুটো বাকি; তাই আপাতত সেগুলো পড়ে স্বাদ মিটাতে পারব।
এই বইয়ের সংলাপের পাশাপাশি পাঞ্চ লাইনের কমতি নেই। ওজনদার সব ডায়লগ; যার রেশ অনেক দিন মাথায় আটকে থাকার মতো।
● চরিত্রায়ন—
উক্ত উপন্যাসের ভালো দিকের আরও একটি উত্তম দিক হচ্ছে এর চরিত্রায়ন। এত এত চরিত্র অথচ সবগুলোই স্বতন্ত্র। বিশেষ অনেকেই থাকলেও আহাদ চরিত্রটি সবচেয়ে বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে। একজন স্পাইয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিক যে-রকম হওয়া দরকার; সেই পদ্ধতি লেখক অবলম্বন করেছে। তবে অভিযোগের একটি দিকও রয়েছে। দুর্ধর্ষ কিছু চরিত্র থাকার পরেও তারা সে-ভাব�� দ্যুতি ছড়াতে পারেনি বলে অনেকের অভিযোগ। ওয়েল, অভিযোগ অনুযায়ী ঠিকাছে। কিন্তু ’অতি চালাকের গলায় দড়ি’ প্রবাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। অথবা আত্মবিশ্বাস যখন চরমে থাকে তখনই মানুষ ভুল করে। তাই অভিযোগ থাকলেও লেখক সেই দিকটি মেইনটেইন করে চরিত্রগুলো নিয়ে খেলেছেন।
এ-ছাড়া ট্রাভিস আরবাইন চরিত্রটি কাহিনিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। একেবারে বিস্ফারিত হওয়া যা-কে বলে। দুটো মেয়ে চরিত্��ের আবির্ভাব ঘটে এই উপন্যাসে। দুজনের উপস্থিতি কম হলেও ভালোই ছাপ ফেলেছে।
● অবসান—
শেষটা চমৎকার। তবে এই চমৎকারের পেছনে বিষণ্ণতা লুকিয়ে আছে অধিকতম। এমন সমাপ্তি অনেক দিন মনে রাখার মতো হলেও গল্পের শেষ দিকে অজানা যে শঙ্কা মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল—শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কার জয় হলো। যা আসলেই মন খারাপ করে দেওয়ার মতো। এক কথায় বললে—মন খারাপ করে দেওয়া সুন্দর সমাপ্তি।
● খুচরা আলাপ—
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কীভাবে ঘটতে পারে; এই নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন জনরার লেখকরা মিথ চালু করে দিয়েছেন। হয়তো একটা সময় যখন যুদ্ধের দামামা বাজবে—তখন কোনো এক লেখক ক্লাসে রুল কলের সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীর মতো ‘হাতে তুলে’ দাঁড়িয়ে বলবে, এই থিওরি তিনি নিজ উপন্যাসে প্রয়োগ করেছেন। তখন সেটা নিয়ে না আবার ‘রাইটার্স ওয়ার’ লেগে যায়। এমনিতে দেশে-বিদেশে ‘ফ্যান ওয়ার’ দারুণ জনপ্রিয়।
❛বাজিকর❜ উপন্যাস আমার দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সফল এসপিওনাজ থ্রিলার। এই বইয়ের ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রকে মেলানোর কোনো প্রয়োজন। অথবা আপনি শুধু মাসুদ রানাকে চিনেন বলেই বইটি পড়বেন—সেই চিন্তাও ঝেড়ে ফেলুন। তা-ছাড়া দেশে আরও অনেক এসপিওনাজ থ্রিলার থাকলেও সবগুলো নিজ নিজ জায়গায় স্বাধীন। দেশের লেখকরা চেষ্টা করছেন, ওনাদের উৎসাহ দেওয়া আমাদের কাজ।
শুধুমাত্র এসপিওনাজ থ্রিলারের ভক্ত হলেও বইটি হাতে তুলে নিতে পারেন। এমনকি যে-কোনো শ্রেণির পাঠকরা বইটি নির্দ্বিধায় পড়ে ফেলতে পারেন। রেকোমেন্ডেড রইল।
➣ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
লেখকের ‘বিভং’ পড়ে ভালো-মন্দের মিশ্র অনুভূতি ঘিরে ধরেছিল। ❛বাজিকর❜ দিয়ে সেই অনুভূতি পুরোপুরি ইতিবাচক হিসেবে মনের ওপর ভালোই প্রভাব ফেলেছে। আশা করছি ট্রিলজির বাকি বই দুটোই এই প্রভাব বজায় রাখতে সক্ষম হবে। লেখকের ‘সসেমিরা’ পছন্দের বই থাকলেও ❛বাজিকর❜ এখন প্রথম স্থান অধিকার করে নিয়েছে।
● সম্পাদনা ও বানান—
সম্পাদনা ভালো হয়েছে কিন্তু প্রচুর টাইপো থাকার কারণে বেশ কয়েকবার থামতে হয়েছে। প্রচলিত বানান ভুল থাকলেও, গল্পের আবহে ডুবে থাকার কারণে অনেক কিছু চোখ এড়িয়ে গেছে।
● প্রচ্ছদ • নামলিপি—
দারুণ প্রচ্ছদ। নামলিপিটাও বেশ পছন্দ হয়েছে।
● মলাট • বাঁধাই • পৃষ্ঠা—
মলাট শক্তপোক্ত, বাঁধাইও ভালো ছিল। হোয়াইট প্রিন্ট পৃষ্ঠা হলেও পড়তে আরাম লেগেছে।
⛃ বই : বাজিকর • নাবিল মুহতাসিম ⛁ জনরা : এসপিওনাজ থ্রিলার ⛃ প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ⛁ প্রচ্ছদ : নিউটন ⛃ প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী ⛁ মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ টাকা মাত্র ⛃ পৃষ্ঠা : ২৫৬
বলে রাখি, এই রিভিউ বাজিকরের থেকে পুরো বাজি ট্রিলজির উপরেই ফোকাস করবে বেশি।
"বাজিকর" পড়েছিলাম বের হবার পরপরই। লেখকের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ হবার পর জানতে পারি, এর দুটো সিকুয়েল বেরিয়েছে - পঁচিশতম জন্মদিনে প্রিয়তমা বইদুটো গিফট করলো আমাকে। "বাজি" আর "বাজিমাত" পড়তে পড়তেই দ্রুত রি-রীড দিলাম বাজিকর।
বইটা একদম বাংলা সাহিত্যের মণিমাণিক্য হয় নি। কাহিনী খুবই লিনিয়ার - একের পর এক শত্রুর সাথে আহাদের দেখা - আর boss fight এর মতো তাদের পরাজিত করা। ফর্মুলায়িক প্লট - শেষ টুইস্টটাও চমকপ্রদ কিছু না। অনেক খাপছাড়া জিনিস পরের বইগুলোতে ক্লিয়ার হয়েছে - অনেকগুলো হয় নি। তবে খারাপ বলা যাবে না কোনোভাবেই।
গল্পটা কেমন বা কি হয়েছে তা অন্যান্য রিভিউগুলোতে বেশ বর্ণনা দেয়া হয়ে গেছে। ইলুমিনাটি টাইপ গুপ্তসংঘ আর নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার জাতীয় কনসেপ্ট ইদানীং বাংলা থ্রিলারে বেশি চোখে পড়ছে, কারণটা বোধহয় এই যুগের ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের আদার ব্যাপারি হবার কারণে প্লটের সংকট। আমার কাছে নজর কেড়েছে অন্য দিকটা - নাবিল মুহতাসিমের লেখনীশক্তি, চিন্তাধারা আর তার world-building।
বাঙলায় স্পাই থ্রিলার যে লেখা হয় নি, তা না। মাসুদ রানার যুগ ছাপিয়ে ওয়ার অন টেররের পটভূমিতে অনেকেই লিখেছেন। পড়েছিও তার দুয়েকটা। কাষ্ঠভাষায় লেখা থ্রিলারগুলো উপন্যাস কম আর টেকনিক্যাল ম্যানুয়ালই বেশি লাগে। এখানেই লেখকের সার্থকতা - পাঠককে তার এনগেজ করার ক্ষমতা অসাধারণ। সুপাঠ্য বাংলায় পাঠককে একদম নিয়ে ফেলেছেন দোনেৎস্কে - রুশ স্পেটসনাজ, ইউক্রেনের স্বাধীনতাকামী আর অন্যান্য ফ্যাকশনগুলোর মাঝে। অ্যাকশনের বর্ণনাও অত্যন্ত পরিষ্কার - একটা ক্লাসিক অ্যাকশন-থ্রিলারের মূল গুণ - এই ব্যাপারটাই বাজিকরকে দিয়েছে অন্য মাত্রা। সোজা বাংলায় - পড়ে আরাম।
দ্বিতীয় জিনিসটা লেখকের চিন্তাধারা। সরাসরি বলতে গেলে 'লিবারেল' চিন্তাধারার থ্রিলার লেখক খুব বেশি নেই এদেশে। স্পাই থ্রিলার লেখেন এরকম তো আরও কম। বেশিরভাগই ভারতবিদ্বেষ, সেনাবাহিনীর পাহাড়ের অত্যাচারকে জাস্টিফাই করা, সিভিলিয়ানদের কমিক রিলিফ বা কাপুরুষ হিসেবে দেখানো ইত্যাদির উপর ভর করেই চলে। ভারতকে নিরপেক্ষ/মিত্র হিসেবে দেখিয়ে, আমেরিকাকে কমিক্যাল ব্যাড গাই হিসেবে না দেখিয়েও যে থ্রিলার ক্যারি করা যায়, চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন লেখক। ট্রাভিস আরভাইনের মতো সাইডকিক বহুদিন বাংলা থ্রিলারে দেখি নি - হয়তো ববি মুরল্যান্ড বা ভিটেলা রেমারিকের পর।
তবে বাজিকরকে, ইন ফ্যাক্ট পুরো ট্রিলজিকেই আর সবকিছুর থেকে আলাদা করে দেয় একটাই জিনিস, অসাধারণ world-building। উপমহাদেশের সেরা স্পাইয়ের একটা উপাধি থাকবে, সেটা নিয়ে অন্তর্নিহিত কোন্দল - ইগোর লড়াই - এই অভিনব আইডিয়ার কারণেই গল্প দশে দশ। দ্য এজেন্সি যে মাসুদ রানার বিসিআইয়ের উপর বেসড - এটা যেকোনো রানা পাঠক বুঝবেন। চীফ আতিয়ার (রাহাত খান/রানার সংমিশ্রণ), মাস্টার সিফাত (সলীল সেন), ইত্যাদি চরিত্রকেও সহজেই চিনতে পারবেন। এরপরেও উপমহাদেশীয় এসপিওনাজের যে একটা বর্ণিল চিত্র এঁকেছেন লেখক, এভাবে আর কেউ ভাবেনি বলেই মনে হয় আগে।
সবমিলিয়ে দুর্দান্ত থ্রিলার "বাজিকর"। এই ট্রিলজি দিয়ে লেখক নিজেকে বাংলায় লেখা স্পাই থ্রিলারের স্তম্ভ বানিয়ে ফেলেছেন। চাইব সিরিজ হিসেবে কন্টিনিউ হোক বাজি - স্পিন-অফ আসুক, সমশের-গৌতম-রোখসানা বা নতুন কোনো এজেন্টকে নিয়ে। চলতে থাকুক, চলতেই থাকুক। এমন সুখপাঠ্য থ্রিলার মাতৃভাষায় বড়ই দুষ্প্রাপ্য।
২০১৭ সালেই বইটা কিনেছিলাম। কিছুটা পড়েওছিলাম, কিন্তু ট্রিলজি হবে জানার পরে রেখে দেই। (একটা প্রশ্ন ছিল আমার। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে কিডন্যাপ হয়েছে, অথচ এজেন্টরা প্রস্তুতি নিতে দুইদিন সময় লাগিয়ে দিচ্ছে - কেন? প্রশ্নটা এখনো আছে৷ যাই হোক, ফেসবুকে পোস্ট করার পর, কথায় কথায় জেনেছিলাম, আসবে ট্রিলোজি।) এখন পড়ছি। মাত্র শেষ করলাম বাজিকর।
গল্প, চমৎকার। অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো দুর্দান্ত। বিগ রিভিল- গুড। খামের তথ্যটা হালকাভাবে আড়াল করে দেয়া হয়েছে যদিও। তবে এটা মন্দ লাগেনি শেষে এসে। আহাদের বাজিকর হয়ে ওঠার গল্পটা সব মিলিয়ে বেশ লেগেছে। আর, পরিণতি? কৌতুহল বাড়িয়ে দিচ্ছে পরের বই দুটো পড়ে যাওয়ার।
এসপিয়োনাজ নিয়ে আমাদের দেশে মৌলিক কাজ একদমই কম। বাজিকর সেখানে বেশ ভাল একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
কাহিনি সংক্ষেপঃ বাজিকর। এই উপাধিটা দেয়া হয় উপমহাদেশের সবচেয়ে চৌকস এ���পিওনাজ এজেন্টকে। বাংলাদেশের ইন্টেলিজেন্স সংস্থা দ্য এজেন্সিতে বাজিকর একজনই। বাজিকর জনি।
অস্থির একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র রাশিয়া মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছে সেখানে। চিরশত্রু আমেরিকার মুখোমুখি হতে চলেছে তারা। বাধিয়ে দিতে চায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক দখল করে নিয়েছে রাশিয়ান সেনাবাহিনী। আর ওদেরকে সহায়তা করছে ইউক্রেনের এক রাশিয়াপন্থী সামরিক সংগঠন, যার নাম দোনেৎস্ক পিপল'স রিপাবলিক (ডিপিআর)। এই সংগঠনের৷ নেতৃত্ব দিচ্ছে নীল স্যুট পরিহিত মুখে অদ্ভুত এক ধাতব গ্যাস মাস্কধারী কর্নেল জন সেবাস্তিয়ান। নিষ্ঠুরতার সমস্ত পূর্ব ইতিহাসকে যেন ছাপিয়ে ফেলেছে লোকটা।
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটা প্লেন হাইজ্যাক করলো কর্নেল সেবাস্তিয়ান ও তার সার্বক্ষণিক সহচর পাকিস্তানি মার্সেনারি সুলেমান মালিক, স্নাইপার আন্দ্রেই গুলিন, অ্যানালিস্ট সার্গেই গুসেভ, বোমারু কাজেমির ব্লাতব ও আমেরিকান সুপার সোলজার জ্যাক ইভান্স। সমস্যাটা এটা না। সমস্যাটা হলো হাইজ্যাককৃত প্লেনে রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র মেয়ে আনিলা ও স্বয়ং বাজিকর জনি। গ্যাস মাস্কধারী কর্নেল সেবাস্তিয়ান একটা জিনিসই চায়। আর তা হলো সম্প্রতি বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া সিআইএ এজেন্ট কার্ল হাসান সেভার্সকে।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ও বাজিকর জনিকে উদ্ধার করতে দ্য এজেন্সি পাঁচজন অভিজ্ঞ এসপিওনাজ এজেন্ট ও একজন আহাদ নামের একজন শিক্ষানবিশ অপারেটিভকে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত দোনেৎস্কে পাঠালো। আর সেখান থেকেই যেন ঘটতে লাগলো একের পর এক অঘটন। এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়লো আহাদ। নানা পরস্থিতিতে একাধিকবার ভয়াবহ নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হলো ওকে কর্নেল সেবাস্তিয়ান ও তার দলের অন্যান্যদের দ্বারা। তারপরো দাঁতে দাঁত চেপে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে জিম্মি আনিলা ও বাজিকর জনিকে উদ্ধারে বদ্ধপরিকর রইলো আহাদ।
এদিকে গোপন এক সংগঠন পর্দার আড়ালে থেকে সমগ্র বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার অপচেষ্টায় আছে। তাদেরকেও থামানো দরকার। ধীরে ধীরে দ্য এজেন্সির এই অনভিজ্ঞ অপারেটিভের সামনে এমন কিছু লুকানো সত্য আত্মপ্রকাশ করলো, যা একেবারে নাড়িয়ে দিলো ওর ভেতরটা। জিম্মি উদ্ধারের মিশনটা যেন পরিণত হলো ভয়াবহ এক ষড়যন্ত্রতত্ত্বের গল্পে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো সবকিছু।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ অনেকদিন পর জমজমাট একটা এসপিওনাজ থ্রিলারের স্বাদ পেলাম 'বাজিকর' পড়ার মাধ্যমে। এই বইটা লেখক নাবিল মুহতাসিমের দ্বিতীয় উপন্যাস৷ ২০১৭ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে 'বাজিকর'। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় এর সিক্যুয়েল 'বাজি'।
নাবিল মুহতাসিম তাঁর 'বাজিকর'-এ দারুন একটা প্লটকে ডেভেলপ করেছেন। কিভাবে একটা হস্টেজ সিচুয়েশনকে রাতারাতি কন্সপিরেসি থ্রিলারে পাল্টে দিয়েছেন, তা সত্যিই ভালো লেগেছে। অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো খুবই উত্তেজনাকর ছিলো এই উপন্যাসে৷ বইটা পড়তে গিয়ে বেশ কিছু জায়গায় আহাদের ভেতরের পুঞ্জিভূত রাগটাকে যেন আমিও ঠিক তার মতো করেই অনুভব করতে পারছিলাম। বিশেষ করে সাশা নামের মেয়েটার সাথে ঘটে যাওয়া সিচুয়েশন আমাকে ভয়াবহ কষ্ট দিয়েছে। প্রত্যেকটা সিকোয়েন্সের বর্ণনা এতো রিয়েলিস্টিক ছিলো যে কাহিনির ভেতরে ঢুকে যেতে কোন ঝামেলাই হয়নি বইটা পড়তে গিয়ে।
আহাদের একটা ব্যাপার আমার কাছে একটু অদ্ভুতই লেগেছে বলতে গেলে। যে বেরেটা পিস্তলটাকে ও সাবরিনা বলে ডাকে, সেটার প্রতি ও অবসেশন একটু মাত্রাতিরিক্তই লেগেছে আমার কাছে। আর এমন একটা ইন্টারন্যাশনাল ও বিপজ্জনক মিশনে আহাদের মতো অনভিজ্ঞ একজন অপারেটিভকে পাঠানোর ব্যাপারটাও কিছুটা অদ্ভুত লেগেছে আমার কাছে। তবে কাহিনির শেষের দিকের ট্যুইস্টটা সত্যিই মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে আমার। পড়ার মজাটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাপারটা। দ্রুতগতির থ্রিলার হিসেবে 'বাজিকর' নিঃসন্দেহে সফল।
বেশ ভালো পরিমাণে টাইপিং মিসটেক ছিলো বইটাতে। শুধু বইয়ের ভেতরেই না, ব্যাককভারের সিনোপ্সিসেও ভুল পেয়েছি। বেশ কয়েক জায়গায় জনিকে আহাদ লেখা হয়েছে। ব্যাপারটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও কনফিউজড করে দিয়েছিলো আমাকে।
শীঘ্রই 'বাজিকর'-এর সিকুয়েল 'বাজি' পড়ে ফেলার ইচ্ছা আছে। আর আমি যতোদূর জানি আসন্ন ২০২০-এর বইমেলায় এই ট্রিলোজির শেষ বই 'বাজিমাত' প্রকাশিত হবে। ওটাও সংগ্রহ করার ইচ্ছা রইলো। নিউটন সাহেবের করা প্রচ্ছদটা চমৎকার লেগেছে।
খুবই এন্টারটেইনিং, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ক্লিশে ডায়লগ এবং ওভার সিনেম্যাটিক। যেমনঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রীর শেষ মুহূর্ত পুরাই বাংলা সিনেমা।
সিলেটের শহরতলীতে এসে হাজির হলো আধা বাঙালী আধা ককেশিয়ান কার্ল হাসান সেভার্স। উদ্দেশ্য বন্ধুর কাছে যাওয়া। তার বন্ধু সাব্বির কায়সার। পরিচয় হয়েছিল আমেরিকায় একটা ট্রেনিং এ। এই স্বল্প-পরিচয়েই ইউক্রেন থেকে বিপদ মাথায় করে পালিয়ে আসা কার্ল আশ্রয় নিতে দ্বিধাবোধ করে না।
অন্যদিকে ইউক্রেনের মাটিতে দুই পরাক্রমশালী শক্তি আমেরিকা আর রাশিয়া মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যুদ্ধ লাগলো বলে। এরমাঝেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে আর দেশের সেরা এসপিওনাজ এজেন্ট জনি, বাজিকর জনি যাত্রীবাহী বিমানসহ অপহরণ হল ইউক্রেনের আকাশে।
প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে কার্লকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আর পদত্যাগ করার জন্য। কথা না মানলে মেয়েকে আর কখনো দেখবেন না তিনি। শেষ চেষ্টা হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল রেসকিউ মিশন চালানো হবে।
জিম্মি উদ্ধারের জন্য বাছাই করা হল স্পেশাল এজেন্ট আলী হায়দার, ডেমোলিশন এক্সপার্ট শামসুল আলম, ফায়ারআর্ম এক্সপার্ট শংকর সাহা, ফ্রি হ্যান্ড কমব্যাট এক্সপার্ট রুস্তম আলী, মেডিকেল স্পেশালিস্ট সাইফ ফারহান আর হাই প��রফরমেন্স অপারেটিভ আহাদকে। ছয়জনের দল। প্রত্যেকে তাদের নিজের অবস্থানে সেরা।
কিন্তু ইউক্রেনের মাটিতে পা দিয়েই শুরু বিপত্তি। গোটা মিশনটাই ভেস্তে গেল। শুধু অপারেটিভ আহাদের উপর দায়িত্ব পরল মিশন চালিয়ে নেয়ার। শত্রু পিছু নিয়ে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগল তাকে। অর্ডার তাকে জ্যান্ত ধরে নিয়ে যাওয়ার।
কিন্তু কেন? কে দিয়েছে এই অর্ডার? নাটের গুরু কে? গ্যাস মাস্কের আড়ালে কে লুকিয়ে আছে? পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে কে? তার মিশন কি শুধুই জিম্মি উদ্ধার? নাকি এর মাঝে আরো কোন রহস্য লুকিয়ে আছে?
আমার কথা :
এসপিওনাজ শব্দটা শুনলেই আমার মাসুদ রানার কথা মনে হয়। সেই কোন ছোট্টবেলায় মাসুদ রানা দিয়েই আমার বইপোকা জীবন শুরু হয়। তার আগে আম্মু রূপকথার গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াত, ভাত খাওয়াত। আর নিজে যখন থেকে পড়া শুরু করলাম তখন মাসুদ রানা দিয়েই হাতেখড়ি।
তাই প্রথম থেকেই একটা এক্সপেকটেশন ছিল। আমাকে হতাশ হতে হয়নি। নাবিল ভাই চমৎকার লিখেছেন। উনার লেখা পড়া এটাই প্রথম আমার। কাহিনী ভালো লেগেছে এটাই বলব।
সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে আহাদকে।সাধারণ এক তরুণের অসাধারণ হয়ে উঠাটাকে। আহাদের বিপদে ভয় পেয়ে পিছিয়ে না পড়াটাকে। তীব্র হতাশার মাঝে আশার আলোটাকে নিভতে না দেয়াটাকে। সর্বোপরি তার আত্মত্যাগ আর কর্তব্যনিষ্ঠাকে।
একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শুধু অনুবাদ থ্রিলারই পড়ে গেছি। মৌলিক অত একটা পড়া হয় নাই। কিছুদিন ধরে নাজিম ভাইয়ের বই পড়ছি। এর বাইরে আজকে এই বইটা শেষ করলাম। খুব মুগ্ধতা নিয়ে শেষ করলাম আজ এই "বাজিকর" বইটি। মৌলিক থ্রিলারে বোধহয় আমরা এখন নতুন সময় পার করছি। কে জানে হয়তো কোন সময়ে এসে দেখবো আমাদের লেখা থ্রিলার গুলোই অনুবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ভাষায়।
থ্রিলার প্রিয় পাঠকদের কাছে সুপাঠ্য হবে অবশ্যই। না পড়ে থাকলে হাতে নিতে পারেন অবশ্যই।
বইয়ের নাম:বাজিকর(ই-বুক ফরম্যাট) লেখক:নাবিল মুহতাসিম ই-বুক প্ল্যাটফর্ম:বইঘর ব্যাক্তিগত রেটিং:৪.৪/৫
ফ্ল্যাপ: ইউক্রেনের মাটিতে মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকা আর রাশিয়া-তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগলো বলে। সেই তপ্ত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে এদেশে আশ্রয় নিলো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক সিআইএ এজেন্ট। সাথে করে নিয়ে এসেছে এমন দুনিয়া-কাঁপানো এক বিস্ফোরক তথ্য। পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠলো যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে আর দেশসেরা স্পাই বাজিকর আহাদসহ ইউক্রেনের আকাশ থেকে হাইজ্যাক করা হলো একটা যাত্রিবাহী বিমান।
জিম্মি উদ্ধারে বাছাই করা ছ’জন এসপিওনাজ এজেন্টকে পাঠানো হলো বটে, কিন্তু ইউক্রেনের মাটিতে পা দিতেই বাঁধলো বিপত্তি। এখন গোটা মিশনের দায়িত্ব এসে পড়েছে দলের সর্বকনিষ্ঠ এজেন্ট আহাদের ওপরে-যার শৈশব কৈশোর কেটেছে এতিমখানায় আর ফুটপাতে, যার ট্রেনিং এখনো শেষ হয়নি।
শত্রুভূমিতে একা একা কতটুকু করতে পারবে আহাদ? অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর বের করতে হবে ওকে - প্লেনটা হাইজ্যাক করেছে কে? শত্রুসেনার দলপতির গ্যাসমাস্কের আড়ালে কার মুখ? পেছনে থেকে গোটা ঘটনাটার কলকাঠি নাড়ছে কোন মহাশক্তিধর গোপন সংস্থা? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন - ওর মিশনের আসল উদ্দেশ্য কি? সত্যিই কি সাধারণ একটা জিম্মি উদ্ধার মিশনে পাঠানো হয়েছে ওকে, নাকি মিশনের লক্ষ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু?
আর সেই লক্ষ্য পূরণে কোন অসাধ্যটা সাধন করতে হবে আহাদকে?
লেখনী: বাজিকর;ইন্টারন্যাশনাল পলিটিকাল এসপিওনাজ থ্রিলার।যেখানে আমাদের দেশীয় পলিটিক্স এর আঁচ আর সিক্রেট অর্গানাইজেশনও ছিলো।তবে সেটা মেটাফোর টাইপ লেগেছে।যেন লেখকের স্বপ্ন সিআইএ,এফবিআই এর মতো অর্গানাইজেশন আমাদেরও হবে।যদিও আমাদের অনেকেরই তেমনটা...
বইতে লেখকের বর্ণনার ধরন,বইয়ের স্টোরিলাইন ভালো ছিলো।টুইস্টগুলো ছিলো টুইস্টের মতোই।প্রায় পুরোটা জুড়েই সাসপেন্স'র উপস্থিতি ছিলো।যা,গল্পে ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।গল্পে স্যাটায়ার,পাঞ্চলাইনগুলো পড়াতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।ফাইটিং এর বর্ণণাগুলো দারুণ ছিলো।গুসেভ এর সাথে আহাদের লড়াইটা দারুণভাবে আগাচ্ছিলো,তবে কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছিলো লাস্ট মোমেন্টে।
গল্পে লেখকের চরিত্রায়নের ব্যাপারে আলাদা করে বলতে হয়।এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন,যা দাগ কেটে যায়।কিছু চরিত্রের বিস্তারিত না জানিয়ে পরবর্তী বইয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়েছেন।
অপরিচিত শব্দগুলোর ব্যাপারে একটু-আধটু ধারণা দিলে ভালো হতো।কারণ,অপরিচিত একটা সেক্টর নিয়ে কাহিনী।
বানান: কিছু টাইপিং মিসটেক আছে। নামের ভুল ভুগিয়েছে।এক জায়গাতে 'আলী হায়দার' এর জায়গাই 'আলী আহাদ'লেখা ছিলো।
তবে,আমি যেহেতু 'হার্ডকপি' পড়িনি,তাই এগুলো ই-বুকের মিসটেকও হতে পারে।
After Masud Rana and James Bond , I get to experience a totally different kind of spy named Ahad. Who is not the best and certainly not the most courageous spy. Still he overcomes all the hurdles with his persistence. There were some hints toward the end about a sequel, which I'm looking forward to reading as soon as possible. The writer has definitely become one of my new favorite Bangla thriller writer.
অনেকদিন পর একটা ভাল বাংলা থ্রিলার পড়লাম, লেখকের একদম প্রথম দিককার কাজ দেখে পরিপক্কতার একটু অভাব ছিল, কিন্তু সেটা লুক ওভার করা যায় সহজেই। নাটকীয়তা মাঝে মাঝে একটু বেশি মনে হলেও গল্পের জন্য তা জরুরী ছিল। গল্পের নতুনত্ব, কাহিনী আর আহাদ চরিত্রটি মনোযোগ ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট।
এবছর পড়া অন্যতম সেরা বই। আগের রাতে শুরু করে পরের সকালে শেষ... এমন সাধারণত ঘটে না আমার ক্ষেত্রে। তবে এই বইয়ের কাহিনী, আর লেখকের লেখনশৈলী চুম্বকের মতো ধরে রেখেছে। মুভি হলে মন্দ হতো না।
Quite a good book. Lots of action-adventure. Plot line was expensive and can be expand furthermore with sequels. I liked the hero, and plot twists. Overall I appreciate the effort author put together in this one, and I am waiting to read his next work. I guess that's enough to declare how much I liked his writing.
Go ahead read it if you like action and adventure.
এডওয়ার্ড স্নোডেনের কথা মনে আছে তো! সিআইডির সেই পালাতক এজেন্ট। যে বিপুল তথ্য ফাস করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এবার ভয়াবহ তথ্য চুরি করে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সিআইডির এজেন্ট কার্ল হাসান সেভার্স। যে তথ্য প্রকাশ পেলে পুরো দুনিয়া কেঁ���ে উঠবে। বাংলাদেশে এসে কি ঠিক করলো! নিজেকে শত্রুর হাতে তুলে দিলো না তো! ইউক্রেনের মাটিতে পরষ্পরের মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকা আর রাশিয়া। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে একটা চক্র। এই অবস্থায় ইউক্রেনের আকাশ থেকে হাইজ্যাক হলো বাংলাদেশি বিমান। বিমানের যাত্রী কারা জানেন? প্রধানমন্ত্রীর কন্যা অ্যানিলা ও দেশসেরা এজেন্ট বাজিকর জনি। তাদেরকে জিম্মি রেখেছে একটা দল। জিম্মি উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশের অতি গোপনীয় একটি এজেন্সির বাছাই করা ছয়জন এসপিওনাজ এজেন্টকে পাঠানো হলো। মিশন শুরু করার আগেই সেফহাউসে এমবুশে মারা গেলো পাঁচজন দুর্ধর্ষ এজেন্ট। বেচে গেলো টিমের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য আহাদ। যে এখনো এজেন্ট হতে পারে নি। অপারেটিভ। ট্রেনিং চলছে। এমন একজনের উপর পুরো মিশনের দায়িত্ব এসে পড়লো। তবে আহাদ যে তার চেষ্টায় কমতি করবে না সেটা বলাই যায়। কারন রাস্তার ফুটপাত থেকে তাকে তুলে এনেছিলো এই বাজিকর জনিই। সেই জনি আজ বিপদে। কিন্তু কিভাবে অগ্রসর হবে সে? যেখানে রাস্তাঘাটই চেনে না সেখানে এতবড় মিশন কমপ্লিট করা অলিক কল্পনা ছাড়া কি হতে পারে? তাছাড়া জমা হয়েছে একগাদা প্রশ্ন। কোন গ্রুপ হাইজ্যাক করলো প্লেনটা? তাতে তাদের স্বার্থ কোথায়? নীল স্যুট আর গ্যাস মাস্ক পড়া এই কর্ণেল সেবাস্তিয়ান কে? কি তার পরিচয়? এত ক্ষমতা কার কাছ থেকে পায় সে? আমেরিকা? রাশিয়া? নাকি এর পিছনে হাত আছে মহাশক্তিধর কোনো সংস্থার! এই মিশনের মুল উদ্দেশ্য কি? শুধুই কি জিম্মি উদ্ধার?
নামকরনঃ বাজিকর একটা উপাধি। যেটা একটা ট্রেডিশন। এক দেশে একজনই বাজিকর হয়। দেশের সবচেয়ে সেরা এজেন্টকে বলা হয় বাজিকর। একজন বাজিকর যদি রিটায়ার করে বি স্কিলে অন্য স্পাইয়ের কাছে হেরে যায় বা হেড টু হেট লড়াইয়ে অপর এজেন্টের হাতে মারা যায় তাহলে সেই জয়ী স্পাই বাজিকর খেতাব পাবে। পড়ার শুরুতে মনে হচ্ছিল বাজিকর জনি যখন জিম্মি তখন গল্পটার নাম বাজিকর রাখা কি দরকার। কিন্তু গল্পটা আসলে বাজিকর জনির না। একজন সামান্য অপারেটরের বাজিকর হয়ে ওঠার গল্প। বইটা শেষ করার পরে মনে হবে এটাই এই বইয়ের জন্য পারফেক্ট নাম।
ব্যাক্তিগত মতামতঃ ছোটবেলা থেকে মাসুদ রানার ভক্ত। মাসুদ রানার বাইরে বাংলায় এসপিওনাজ নভেল পাই নি। এটা পুরোপুরি একটা এসপিওনাজ নভেল। তবে ভিন্ন স্বাদে ভালোই লাগলো। পুরো বইটা টানটান উত্তেজনা নিয়ে শেষ করছি। টুইস্ট খুব বেশি ছিলো তা বলবো না কিন্তু যা ছিলো তাতেই যথেষ্ট। লেখকের লেখনি ছিলো অসাধারন। একশনের বর্ণনাগুলো চমৎকার ছিলো। বানান ভুল খুব চোখে পড়ে নি। এক জায়গায় বাজিকর জনির স্থানে বাজিকর রাসেল লেখা হয়েছে। বইয়ের ফ্লাপেও ভুল ছিলো একটা। সেখানে বাজিকর জনির স্থানে বাজিকর আহাদ লেখা হয়েছে। সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর একটা নভেল। যারা আমার মত একসময় মাসুদ রানার ডাইহার্ড ফ্যান ছিলেন বা আছেন তাদের জন্য বইটা পড়া বাধ্যতামুলক। এবছর বইমেলায় আসা বইগুলোর প্রায় প্রত্যেকটি বইয়ের প্রচ্ছদ নজর কেড়েছে। বাজিকর তার ব্যাতিক্রম না। এজন্য নিউটন ভাইয়ের ধন্যবাদ প্রাপ্য।
বাংলা সাহিত্যে স্পাই থ্রিলার বা এসপিওনাজ থ্রিলারের সাথে যে নামটি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত আছে তা হলো মাসুদ রানা। কাজী আনোয়ার হোসেনের এ কালজয়ী চরিত্র বাংলা সাহিত্যের এক নতুন দিক উন্মোচন করেছিল। এক সময়ে এই জনরায় শুধু মাসুদ রানার আধিপত্য থাকলেও বর্তমানে মাসুদ রানা বাদেও আমরা বেশ কিছু ভালো মানের স্পাই থ্রিলার পেয়েছি। আর এই লিস্টের এক নতুন সংযোজন হলো লেখক নাবিল মুহতাসিমের স্পাই থ্রিলার " বাজিকর " . - বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া আর আমেরিকা মুখোমুখি অবস্থানে। চারদিকে যুদ্ধের দামামা বাজছে। এদিকে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসে এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সি আই এ এজেন্ট কার্ল। এর পরিণতি হয় ভয়াবহ। ইউক্রেন থেকে এক প্লেনে থাকা অবস্থায় কিডন্যাপ হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে আর বাংলাদেশের তথা উপমহাদেশের সেরা এজেন্ট , " বাজিকর " খ্যাত জনি। - মাঠে নামে বাংলাদেশের স্পাই সংস্থা " দ্যা এজেন্সি " . তাদের উদ্ধারের জন্য পাঠানো হয় এক টিমকে । কিন্তু ইউক্রেনে গিয়ে এই টিম পরে বিশাল ঝামেলায়। মিশন শেষ করার দায়িত্ব এসে পরে রুকি এজেন্ট আহাদের উপর। - এখন কার্লের কাছে কি এমন তথ্য আছে যা বিশ্ব রাজনীতিকে পাল্টে দিতে পারে ?ঠিক কি কারণে কিডন্যাপ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কন্যাকে ? এ সব কিছুর পিছনে আসলে কারা রয়েছে ? রুকি এজেন্ট আহাদ কি পারবে তার মিশন শেষ করতে ? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে পড়তে হবে শ্বাসরুদ্ধকর স্পাই থ্রিলার " বাজিকর " . - বিশ্ব সাহিত্যে স্পাই থ্রিলার বেশ জনপ্রিয় আর জেমস বন্ড , জেসন বর্নরা তো আইকনিক চরিত্র। এতদিন বাংলাদেশে স্পাই থ্রিলার বলতে মাসুদ রানার লেখাকেই বুঝতাম আর অনেকদিন পরে মাসুদ রানা বাদে বাংলা ভাষায় এক পরিপূর্ণ স্পাই থ্রিলার পড়লাম। তুফান গতির এ লেখার বাঁকে বাঁকে রয়েছে দুর্দান্ত টার্ন - ইউটার্ন যা বাড়ে বাড়ে পাঠককে অবাক করবে । - বইয়ের চরিত্রগুলোর ভিতরে সবচেয়ে ভালো লেগেছে এজেন্ট আহাদকে। স্পাই এজেন্ট হলেও এ জেমস বন্ড বা মাসুদ রানার মতো না ,যেন আমাদের মতোই এক সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন পর্যায়ে এজেন্ট আহাদের চরিত্রের ট্রান্সফরমেশন আর এর মাঝে তার ব্যাক গ্রাউন্ড জানানোর ব্যাপারটা ছিল দারুন। সেবাস্তিয়ান সহ মার্সেনারিদের সাথে তার যুদ্ধের সময়কার ট্যাকটিকস গুলো ছিল খুবই উপভোগ্য। - যেহেতু স্পাই থ্রিলার , তাই বিভিন্ন ধরণের টেকনিক্যাল টার্ম ব্যবহার করা হলেও তা বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি। বিভিন্ন ধরণের কমব্যাট ফাইটিং বেশ ভালো। শুরু থেকেই গল্পটি এক দারুন স্পাই থ্রিলার এর ইঙ্গিত দেয় আর শেষটাও অসাধারণ। তবে পুরো গল্পকে আহাদের উপর ফোকাস করাতে বাকি চরিত্রগুলোকে কেমন যেন ফেকাসে লেগেছে। - এক কথায় , বাংলা সাহিত্যের স্পাই থ্রিলার জনরার এক দুর্দান্ত নতুন সংস্করণ বাজিকর যা লেখকের প্রথম লেখা শ্বাপদ সনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এবং আরো পরিণত। যাদের স্পাই থ্রিলার/কন্সপিরেসি থ্রিলার /মাসুদ রানার বইগুলো পড়তে পছন্দ তাদের জন্য মাস্ট রিড বই " বাজিকর " .