ওবায়েদ হক এসময়ের লেখকদের মধ্যে ধীরে ধীরে আমার প্রিয় লেখক হয়ে উঠছে তা বেশ বুঝতে পারছি। সহজ কিন্তু গভীর, হিউমারাস কিন্তু সমাজের অসংগতি নিয়ে যৌক্তিক স্যাটায়ার কয়জন করতে পারে বর্তমান সময়ে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। "নেপথ্যে নেমকহারাম" বইটা ১২ টি ছোট গল্প নিয়ে সংকলিত। প্রতিটা গল্পই আলাদা কিন্তু প্রতিটা গল্পের সুর অনেকটা একই। প্রেম, ভালোবাসা, না পাওয়ার ব্যথা, দরিদ্রতা, হিপোক্রেসি এবং আমাদের সমাজের নানা অসংগতি খুব সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন ওবায়েদ হক। কিছু গল্প আপনাকে ভাবাবে খুব। বিষাদে ভরে দেবে মন। কিছু আপনি হেসে উড়িয়ে দিতে গিয়েও দেখবেন মনে বিধে রয়েছে কাটার মতন। লেখার ধরন খুব সহজ, হয়তো এক বসাই আপনি পড়ে ফেলতে পারবেন। কিন্তু এত সহজে যে তিনি কিভাবে এত গভীর বিষয়বস্তু তুলে ধরেছেন তা আসলেই প্রশংসারদাবী রাখে।
আমার একটাই আক্ষেপ গল্পগুলা আসলেই অনেক ছোট! আরেকটু বড় করাই যেত। :/
তিন/চারটি গল্প বাদে সবগুলো গল্পই ভালো লেগেছে। ফ্যাকাশে লাল ফুল - এই সংকলনের সেরা গল্প। এছাড়া 'অ-সুখ' এবং নামগল্প 'নেপথ্যে নিমকহারাম' গল্প দুটোর কথাও আলাদাভাবে উল্লেখ করার মতো।
তবে হ্যাঁ, "যত্ন নিলে গল্পগুলো সত্যিই রত্ন হয়ে উঠতে পারত।"
ওবায়েদ হক কখনো ঠকায়নি এখন পর্যন্ত, সেই "নীল পাহাড়" থেকে এই "নেপথ্যে নিমকহারাম" পর্যন্ত। হুমায়ুন আহমেদ এর অভাব পূরণ করবে লেখক দারুন ভাবে। সহজ কথায় হৃদয়ের গভীরে আঘাত দিতে এতো ভালভাবে শুধু হুমায়ন স্যারই পারতো।
১২ টা ছোট গল্পের সংকলন এই "নেপথ্যে নিমকহারাম"। প্রতিটা গল্পই দারুন। তবে "ফ্যাকাশে লাল ফুল" গল্পটি অসাধারন। শেষ কয়েকটা লাইন হৃদয় সাগরে সুনামি সৃষ্টি করে।
কয়েকটি গল্প বেশ ভাবিয়েছে। তবে বইয়ের শুরুতে লেখকের কয়েকটা কথার সাথে আমিও একমত - যত্ন নিলে গল্পগুলো রত্ন হয়ে উঠতে পারত। ওবায়েদ হকের আরও তিনটি বই পড়ে প্রত্যাশার পারদ উর্ধ্বমুখী হয়েছিল বলেই হয়তো এই বইয়ের সব গল্প দাগ কাটতে পারেনি। বেশ কয়েক ধাচের গল্প আছে, তবে সবগুলোরই মূল উপজীব্য হলো জীবনবোধ। সব মিলিয়ে সাড়ে তিন।
দুই তিনটি গল্প অতটা ভাবাবে না, কিন্তু প্রায় সব গল্পই অনুভূতি জাগাবে। কিছু অসাধারণ গল্প শিহরণ জাগাবে রক্তকণিকায়। আমি তৃপ্ত। লেখকের লেখনীতে তো আমি মুগ্ধই, মানসিকতায় তিনি যেনো সর্বোচ্চ উচ্চতায়....
ছোট ছোট গল্প, মোট ১২টা। ২/১টা হালকা ধরনের হলেও বেশিরভাগই অসাধারণ ছিল! অনেক ভাল লেগেছে। এই লেখকের কাছে বরাবরই ভাল লেখা আশা করি, এবং কোন বারেই হতাশ হই না... এই বছরের নতুন বইতেও তার অসাধারণ মুনশিয়ানা ছিল। সামনে এমন আরো ভাল লেখা আশা করতেছি ...
অসাধারণ, ১২টি ছোট গল্প নিয়ে এই বইটি। প্রত্যেকটা গল্প পড়ছিলাম আর শেষটা কেমন হবে তা অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম। এক একটা গল্পের শেষ আমাকে একদম অবাক করে দিয়েছে। প্রত্যেকটা গল্পের শেষ, আপনাকে গল্পটাকে নিয়ে কিচ্ছুক্ষণ ভাবাতে বাধ্য করবে।
আমার পড়া ওবায়েদ হক এর দ্বিতীয় বই 'নেপথ্যে নিমকহারাম'। মোটা বারোটি ছোট গল্প এই বইটিতে। ফ্যাকাসে লাল ফুল, অধর্ম, অ-সুখ সহ নামগল্প'টি যেমন আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে; ঠিক তেমনি একজোড়া জীবন্ত চোখ এবং চশমা গল্প দুইটা একদমই ভাল লাগে নাই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে লেখকের লেখনী। **3.5 to be exact**
সংকলনের ১২ টি গল্পের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় "ফ্যাকাশে লাল ফুল'' গল্পটি। অবশ্য ওবায়েদ হকের প্রায় সব গল্পে মেলানকনিক্যাল টোন বেশ ভালো রকম দেখা যায়। তবু্ও এই গল্পটি আমাকে ছুয়ে গেছে একটু বেশিই। এছাড়া ২-৩ টা গল্প বাদে বাকি গল্পগুলোও ভালো। ৩.৫/৫
"নেপথ্যে নিমকহারাম" একটি গল্পগ্রন্থ। মোট বারটি ছোট গল্প দিয়ে বইটি সাজানো হয়েছে। বইটা প্রকাশের সাথে সাথে সংগ্রহ করেছিলাম। তবে তখন জানতাম না এটা গল্পগ্রন্থ। গল্প আমি খুব কম পড়ি কিনা। কিন্তু এই বইয়ের গল্পগুলো পড়ার সময় একটা ভাল লাগা কাজ করছিল। লেখকের উপন্যাসগুলো আমার অসম্ভব ভাল লেগেছিল, তাই হয়ত...
সবগুলো নিয়ে আলোচনা করলে রিভিউ অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই যেগুলো পড়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি সেগুলো একটু করে বলি...
অধর্মঃ ছেলের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত মোতালেব মিয়া এতিম মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে প্রথমে রাজি ছিল না, কিন্তু মেয়ের সহায় সম্পত্তির পরিমাণ হিসেব করে রাজি হয়ে গেল সে। জীবনেতো পাপ কম করে নাই আর এই পাপ কাটাতে হজে তাকে যেতে হবেই। কিন্তু মেয়ে দেখতে গিয়ে মেয়ের মৃত বাবা মায়ের ছবি দেখে আঁতকে উঠল মোতালেব মিয়া।।।
ফ্যাকাশে লাল ফুলঃ খেয়ালী নদীর পারের আট বছরের ছোট্ট মেয়ে কুসুম শুধু একটা লাল কুচি দেয়া হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। একটা সুন্দর ফ্রক ছিল তার, কিন্তু খেয়ালী নদীর আপন খেয়ালে ভেসে গিয়েছে সেটা। আর একটা ফ্রক নেই বলে মির্জা বাড়ির নাতনি তাকে খেলার যোগ্য মনে করে না। বরং শহরের রিকশাচালকের মেয়ে আমেনাকে তারা খেলার বস্তু বানায়। শেষ পর্যন্ত একটা লাল ফুলের ফ্রকের আশা মিটেছিল কি কুসুমের???
চশমাঃ প্রায় দশ বছর পর দেখা হল দুজনের। না দশ বছর না, এগারো বছর তিনমাস সাত দিন। দিনগুলো কতইনা তাড়াতাড়ি চলে যায়। সেই সময় চোখের চশমা অদলবদলা করেছিল তারা ভালবাসার প্রকাশে। আর আজ???
একজোড়া জীবন্ত চোখঃ হানিফ দেখতে একদমই কুৎসিত। জন্মের সময় থেকেই ধবল ও পশমবিহীন একটা প্রানীর মত দেখতে ছিল সে। সমাজ ও পরিবারের কোথায় জায়গা না পেয়ে তার স্থান হয় রাস্তায়, ভিক্ষাবৃত্তি হয় তার পেশা। কিন্তু একজোড়া জীবন্ত চোখ তার অন্তরের সব জ্বালা দূর করে তাকে ভালবাসার মায়ায় ভরিয়ে দিল।।।
আংটিঃ সোনার গয়না বলতে মাত্র একটা আংটিই অবশিষ্ট আছে রুমালীর। বাকি সব গেছে অপদার্থ স্বামীর কল্যাণে। শেষ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিল রুমালী। সেই টাকায় টিভি আর দিনের বাজার করল তারা। আর কয়েকদিন পর থেকেই শুরু হল আরো বিপদ। মাসের কিস্তির টাকা কোথা থেকে দিবে রুমালী। এই আংটিটাই আছে তার অতিতের এক ঘটনার সাক্ষী হিসেবে। আজ সে কি পারবে স্মৃতির একমাত্র চিহ্ন এই আংটিটা বিক্রি করতে???
নেপথ্যে নিমকহারামঃ নসিব মিয়ার গরু দুটি একদম যেন হাড্ডির দোকান। হাড়ের খাঁচার উপর কেবল চামড়ার প্রলেপ আছে শুধু। প্রবীণ গরু দুটোর সৌন্দর্য হয়তো আর নেই কিন্তু নাম টিকে গেছে-কালা আর ধলা। দিনে রাতে নসিব মিয়া তার গরুর গাড়িতে বসে থাকে যাত্রীর আশায়। এমন সময়ে তার গাড়িতে এসে উঠে এক যাত্রী...
এরকম আরো ছয়টি গল্পের (হয়তো, দুরারোগ্য দূরদর্শন, একটি শৌচাগারের আত্মকাহিনী, রমজান, শিরায় তোমার কার রক্ত ও অ-সুখ) সমাহার এই গল্পগ্রন্থটি।
ছোট গল্প আমি কোনদিনই তেমন একটা গুরুত্ব দেইনি। এই বইটা পড়ে অবাক হয়েছি বলা যায়। ছোট গল্পের মাহাত্ম্য যেন এতদিন বাদে এসে ধরা দিল আমার কাছে। এত জীবনবোধ আর মানবিকতা জড়িয়ে আছে একেকটা গল্পে ভাবতেই আমার অবাক লাগলো। মানব মনের গতি প্রকৃতি, হৃদয়ের উত্তাপ, কান্না-বেদনা সব যেন ছড়িয়ে আছে গল্পগুলোতে। পড়ার আমন্ত্রণ রইল...
বই #নেপথ্যে_নিমকহারাম লেখক : ওবায়েদ হক প্রকাশক : বিদ্যানন্দ পরিবেশক বাতিঘর প্রকাশকাল : ২০১৭ বইমেলা প্রচ্ছদ : রাজিব দত্ত বর্ণ ও বই অলংকরণ : সজল চৌধুরী মলাট মূল্য : ১৬০ পৃষ্ঠা : ১১১
নেপথ্যে নিমকহারাম একটি গল্পগ্রন্থ, নিছক কোন গল্পগ্রন্থ ভাবার সুযোগ নেই। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া প্রীতিকর অপ্রীতিকর সব কিছুই গল্পের ঢং এ তুলে ধরেছেন ওবায়েদ হক, আর শেষে এমন একটি পরিণতি দিয়েছেন যে ভাবতে হয় মানুষ যদি এতটুকু চিন্তা করত তাহলে তার জীবন অন্যভাবেও মোড় নিতে পারত। প্রতিটা কাজ চাই ভালো হোক আর খারাপ তার একটি ফলাফল আছে। আর দুঃখের বিষয় হল আমরা কাজ করি কিন্তু তার ফলাফল কি হবে চিন্তা করি না তাই দেখা যায় কেউ সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে , কেউ সমাজের মাথা হয়েও ধর্ষণ করছে। জগতের ঐসব মানুষগুলোই দূর্গতি বয়ে বেড়ায় যারা অন্যের দূর্দষার কারণ হয়। আপনি হয়তো অবলীলায় আপনার এলাকার অসহায় মেয়েটিকে অন্যের কাছে বিক্রি করে কিছু টাকা হাতে নিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করবেন বলে কিন্তু এমনোও হতে পারে বাড়ি গিয়ে দেখলেন আপনার অসুস্থ ছেলে আর নেই। মানুষকে তার সব কর্মফলই ভোগ করতে হবে। কিন্তু হায়! মানুষ যদি বুঝতো! তাই শুধু একার না। বাঙালীর সবার হয়ে ওবায়েদ হক নির্মান করেছেন এমন কিছু কাজের যেগুলো হয়তো আপনার পরিবেশে থেকে বুঝতে পারবেন না কিন্তু সেটার উপলব্ধি পাবেন। কখনোও বা গভীর মমত্ব বোধ জেগে উঠবে কখনোও ঘৃণায় মুখ বেকে উঠবে। এসবই তো আমাদের ঘুণে ধরা সমাজের চিত্র। বইতে ১২টি গল্প আছে। সমাজের এমন বেহাল দশাকে চিত্র করে লেখক সবার কাছে বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। তাই আলাদা করে প্রতিটি গল্পের পরিচয় দিচ্ছি না। শৌচাগার নিয়েও যে একটি শিক্ষণীয় গল্প বলা যায় সেটাও দেখালেন তিনি।
নেপথ্যে নিমকহারাম পড়ে আমার একটাই অনুভূতি, লেখককে নবীন বলে ছেড়ে দেওয়ার উপায় নেই। তদুপরি যারা এখনোও লেখককে চিনেননি তাদের জন্য আমার বড় আফসোস। এতদিন ভাবতাম গল্পগ্রন্থ হয়তো মরেই গেছে। সাহিত্যের এই দিকটা মনে হয় ঝিমিয়ে গেছে কিন্তু ওবায়েদ হকের বই পড়ে সেটা আর ভাবার দরকার নেই। লেখকের পরিচয় পেতে গেলে আরোও অবাক হবেন। বইয়ের শেষে হয়তো আপনি পরিচয় খুঁজতে যাবেন কিন্তু তার বদলে পাবেন তার পরিচয় পাওয়া সম্ভব না। লেখক শুধু বইয়ের কালো অক্ষরগুলোকে সন্তানের চোখে দেখেন। তার বাবা হিসেবেই পরিচিতি পেতে চান। এমন যার অনুভূতি তার লেখা দিয়ে পাঠক মুগ্ধ করতে কয়েকটা বই লাগে না। একটি বই যথেষ্ট।
১২ টা গল্পের জন্য ১২ বার অসাধারণ বলার চেয়ে ১ বারেই বলে দেওয়া সহজ। সব গুলোই গল্প ভাবনার খোঁড়াক যোগায়। লেখক এর লেখনি নিয়ে কিছু বলার নেই ... মায়ার জালে বেধে রাখা যাকে বলে।
এক কথায় অসাধারণ। অনেক দিন পর দারুণ কিছু গল্প পড়লাম। ছোট ছোট লেখায় সাহিত্যের মুগ্ধতা যেমন আছে তেমনি সমাজের অসংগতিগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।