কিছু তরুণ-তরুণীর জীবনের থেকে তুলে নেওয়া চোদ্দো মাস এই উপন্যাসের সময়কাল। শহর এর পটভুমি। হাইরাইজার, মাস্টিক অ্যাসফল্ট, শপিংমল আর জমজমাট ট্রাফিকের মাঝে পাক খাওয়া ফুলের হারানাে গন্ধ, বন্ধুর হাত, বাঁশিওলার সুর আর অগণিত রােজকার মানুষ এর অন্বেষণ। উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করা রীপ আর তিথি, অ্যাথলিট পুষ্পল, উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাই, রয়েছে মনমরা পুলু, বিদেশ যেতে না পারা শাক্য, অভিমানী মৌনিকা বা মুখার্জি-বাড়িতে কাজ করা ছেলে বাটু। আলাদা আলাদা হলেও যেন কোথাও এরা এক কোথাও যেন সবাই বদ্ধ, সবাই নিরুপায়। ক্রমশ বদলের হাওয়া লাগে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে থাকে এদের জীবন। একজনের বেঁচে থাকা ক্রমশ জড়িয়ে যেতে থাকে অন্যের বেঁচে থাকার সঙ্গে। রীপের একাকিত্বে ঢুকে পড়তে চায় তিথি। পুষ্পলের দৌড় ট্র্যাক ছাড়িয়ে ঢুকে পড়ে জীবনে। সামান্য সময়ের জন্য হলেও এরােপ্লেন বাটুকে ভুলিয়ে দেয় ওর দারিদ্র। মেনিকার মােবাইলে মধ্যরাতে বেজে ওঠে পুরনাে কবিতা। বাবামায়ের সম্পর্কের মাঝে পুলু দেখতে পায় গভীর শূন্যতা। এই সমস্ত ভাঙচুর সহ্য করেও প্রত্যেকে নিজের ভেতরে টের পায় এক অজানা টান টের পায় এক পাল্টা হাওয়া। যে যার মতাে ঘুরে দাড়াতে চায়। কাহিনির পরতে পরতে এই তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে রােদ-বৃষ্টি আর ধুলাে-মাটির মতাে জড়িয়ে থাকে কল্লোলিনী কলকাতা।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
সদ্য সদ্য আনন্দ পুরস্কার পেয়ে সম্মানীত হলেন স্মরণজিৎ। সেরেমনীর দিন স্টেজে উঠে, পুরষ্কার নিয়ে টুকরো কটা কথা বললেন লেখক। বললেন নিজের কথা, নিজের ট্রেডমার্ক পন্থায়। লাজুক লাজুক। থেমে থেমে। খেই হারিয়ে। ছোটবেলায় স্ট্যামারিংয়ের প্রবলেম ছিল ওনার। ওখান থেকেই এই গেরো।
না চাইতেই, রিলেট করা যায়। আমার নিজের জীবনে অমন সিরিয়াস কিছু না থাকলেও, 'হচ্ছে' দোষ-টুকু পুরোদস্তুর ছিল। ঐ জনসমক্ষে কথা বা কোনো গল্প বলতে গিয়ে ক্রমাগত আটকে যাওয়া। "তারপর হচ্ছে... হচ্ছে তাহলে... হচ্ছে গিয়ে... হচ্ছে এই... হচ্ছে ঐ..."
এভাবে একটা সময় বেজায় ভুগেছি। সাথে ভুগিয়ে মেরেছি পারিপার্শ্বিকের সবাইকে। কথা বলাও যে এত কঠিন, ছোটবেলায় ঠিক বুঝতে পারতুম না। কেবল জ্ঞাতিগুষ্টি মিলে আটকে যাওয়া নিয়ে হাসাহাসি করলে মনটা খারাপ হয়ে যেতো। এই যে লেখক সেদিন স্টেজে উঠে প্রথমেই বলে নিলেন যে উনি ভীত! এত্ত সকল গুণী লোকের সামনে কথা বলতে হবে জেনেই ওনার ক'রাতের ঘুম উড়ে গেছে। এটাও যে রীতিমত রিলেটেবল। এ রিলেটেবিলিটি মেকী নয়। এতে লোকদেখানি "আমি কি পারব?" "স্টেজে উঠলেই আমার হাঁটু কাপে" জাতীয় কোনো ক্যালাস খাদ নেই। দেখনদারির নির্ভেজাল অভাবে এই ভীতির গভীরে ফোবিয়ার বীজ।
বাকপটু না হওয়া সেই আমি, অনেক ছোটবেলা থেকেই ধরেছিলাম লেখার হাত। শিশুহাতের লেখা। ফালতু ও বোকা-বোকা, বলাই বাহুল্য। তবুও কীভাবে যেন বুঝে নিয়েছিলাম যে সদা তৎপর ও বন্ধুবৎসল এই সাদা পাতাদের কোলে নিজেকে মেলে ধরা যায়। এখানে ঠিক 'ওভাবে' স্পিডব্রেকার আসে না। এটাই আমার সুকোমল সেফ জোন। অগত্যা, মনের আনন্দে ছড়া কাটা শুরু হয়। শুরু হয় কমিকস্ আঁকা। ভূতের গল্প লিখে নিজেই ছবি এঁকে, ক্রেয়ন বোলানো গায়ে গায়ে।
ভারী মজা তো! আমায় আর পায় কে? ক্যাবলা সাহিত্যকীর্তি বাড়তে থাকে উত্তরোত্তর।
এন্টার শত্রুপক্ষ।
ইভেনচুয়ালি মঞ্চে ফিরে আসে ফ্যমিলি নামক সেই কুচুটে কাঠিময় দল। যথাসময়ে আমার লেখা পড়ে, আলোচনা করে, শুরু হয় খিল্লির বহর।
"হ্যাঁরে (ডাকনাম) তুই তো দারুন লিখিস! বই কর। বই কর। ছাপাবি কবে? আমাদের ভুলে যাবি না তো?"
সার্কাসম বোঝার মতো পরিপক্বতা তখনও আমার মাথায় আসেনি। গোলমুখো ও গবেট ছিলাম। গ্যাস ট্যাস খেয়ে রীতিমত শূন্যে ভাসছি। অ্যাজ এ রেজাল্ট, খুব সিরিয়াসলি প্রশ্নগুলোকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করলাম। করার পর, একটাই উত্তর যথাযথ বলে মনে হলো...
"এখন ছাপাবো না। ছাপলে যদি স্টেজে উঠে 'স্পিচ' দিতে হয়? আমি 'স্পিচ' দিতে পারবো না!"
হ্যা, বলাই বাহুল্য, সেদিন আমি যথা নিয়মে বেইজ্জত হয়েছিলাম। তবে আমার কাঁচা মনে ওটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভয়। স্পিচ। পাবলিক স্পিকিংয়ের ত্রাস। সেই ভয় যে আজও আমার ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে নেই, সেটা বললে মিথ্যাচার হয়। তখন খাতার পেছনে প্রাণের দায়ে লুকোতাম। এখন ফোনের কিবোর্ডে বাসা বেঁধেছি। অবশ্য, বড় হয়ে এটাও বুঝেছি যে সাহিত্যকীর্তির ট্যালেন্ট আমাতে নেই। শৈশবের গ্যাস-বেলুন আজ ম্যাজিক ট্রিক মাফিক। বহুদিন আগেই ভ্যানিশ।
এখন কেবল অন্যের বইয়ের আলোচনায় গৌরচন্দ্রিকা করে সকলের সময় নষ্ট করি...
কিন্তু না করেও যে উপায় নেই কোনো। এতক্ষণ ধরে এই যে এত কথা বলছি সেটাও তো একটাই কারণে। স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। সাথে ওনার চেনা, মায়াটে প্রতিচ্ছবি ও রিলেটবেলিটি নামক রাতচড়া ফানুস। কী করে রাগ করে থাকি বলুন তো? আপনি হয়তো এর পরে আমায় সরাসরি প্যারাসোশ্যাল বলে দাগিয়ে দেবেন। কিন্তু লেখকের সাথে এই অক্ষরে অক্ষরে পাতানো অসমবয়সী বন্ধুত্বটির কসম, ওনার ওপর রাগ করে থাকা ভার্চুয়ালি অসম্ভব।
আজ্ঞে, হ্যা। 'পাল্টা হাওয়া'-র মতো এই আদ্যোপান্ত পোটেনশিয়াল ভেঁজে খাওয়া উপন্যাসটি পড়ে নিয়েও, ওনার সাথে আড়ি করে থাকার কথা আমি ভাবতেও পারিনা। নইলে মন-খারাপের ঐ বাদামি বিকেলগুলোতে কার কবিতা আমার ধমনীতে স্যালাইন হয়ে ঘুমোবে বলুন দেখি? কার কবিতা আস্তে ধীরে কানে কানে বলবে...
মেঘলা কোনও শহর পড়ে আছে তোমার দেওয়া ছোট্ট বইয়ের কাছে
নীলচে টবে মনখারাপের ছাতা বুক-মার্কে হারানো কলকাতা
দুপুরবেলার দাঁড়িয়ে থাকা ট্রামে হঠাৎ করে বৃষ্টি যদি নামে
ভিজবে শহর... শেডের নীচে একা পাহাড় থেকে মেঘ সরিয়ে দেখার
মতন দূরে তোমার ঘর বাড়ি ইচ্ছে অনেক... কইটুকু আর পারি!
এক শহরেই অনেক দূরে থাকো তুমিও আমায় নির্বাসনে রাখো
আমিও বুঝি বুকের চারাগাছে মেঘলা কোনও শহর ফুটে আছে
সেদিন থেকে নিজের করতলে... বৃষ্টি আরও স্পষ্ট করে বলে
জন্ম আমার মনখারাপের টবে একাই জীবন কাটিয়ে দিতে হবে
দ্বীপের জীবন কাটিয়ে দিতে হবে
তাই রাগ নয়। একে অভিমান বলা যায়। বিগত অনেক বছর ধরে 'পাল্টা হাওয়া' নিয়ে কম তো কথা শুনিনি। লেখকের তথাকথিত ম্যাগনাম ওপাস। প্রায় সাড়ে ছশো পাতার সুবৃহৎ কন্টেম্পরারি উপন্যাস। দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশিত লেজেন্ডদের ভিড়ে অন্যতম বেস্টসেলিং নাম। সাহিত্যিকের জীবনে একটি যথাযথ ল্যান্ডমার্ক। তবুও, লেখাটি আমায় অল্প হলেও হতাশ করলো আজ। এই এতগুলো সাদা-কালো চরিত্র। এত ঘটনার ঘনঘটা। কোনো শেয়ার্ড ইউনিভার্সের মতো ক্রমাগত একে অপরের সাথে সিনেমাটিক ক্রসওভার। সাথে লেখকের সুন্দর, ভ্যানিলা এসেন্স গদ্য।
তবুও উপরি খোলসের নিচে ‘পাওয়া’ বনাম ‘না পাওয়ার’ সার্বিক দ্বন্দ্বে, পাল্লা ডান দিকেই ঝুকলো বেশি। বড় বেশি শূন্য এই উপলব্ধি। যা শেষ অবধি পাঠককে রিক্ত করে ছাড়ে।
বইটার বয়স অবশ্য কম হলো না। প্রায় পনেরো বছর। সেই এসএমএসের যুগের নিরিখে সদ্য যৌবন প্রাপ্ত একটা গোটা জেনারেশনের কাছে এই বইয়ের মূল্য আজকে আমি ২০২৫-এ বসে অনুধাবন করতে পারবো না, সেটা স্বাভাবিক। তবে রয়েসয়ে সঠিক বয়সেই পুরোটা পড়লাম, এটাও ঠিক। স্কুলে থাকতে সেই যে প্রথম 'মোম কাগজ' পড়েছিলাম, তখন পড়লে হয়তো বইটার প্রতি অসম্মানই হতো। আজ এই তেইশ বছরে 'নট সো ইয়ং অ্যাডাল্ট' আমি, 'পাল্টা হাওয়া'-র চরিত্র হিসেবে সেঁধিয়ে গেলেও কেউ আর আটকাতে পারবে না আমায়।
এটাও এক প্রকারের সান্তনা, তাই নয় কী?
তবে লেখকের প্রথম দিকের লেখাগুলোতে যেই কার্ডিনাল গণ্ডগোলটি বারংবার ঝাঁকুনি দিয়ে যেত, এটাতেও সেই দোষ পুরো মাত্রায় বিদ্যমান। ব্যালেন্সের কাঁচা অভাব। উপন্যাস রচনা মানেই অনেকগুলো চরিত্রদের নিয়ে জাগলিংয়ের খেল। তাও আবার এটার মতো হিউম্যান এলিমেন্টে সিক্ত একখানা বিশালবপু নাটকের। লেখক আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যা চোখ বুঝে করে ফেলতে পারেন তা ক্যারিয়ারের শুরুতে খুব একটা পারফেক্টলি পারতেন না। ব্যাপারটা ওনার প্রথম দিকের কটা বই পড়লেই অল্পবিস্তর বোঝা যায়।
অগত্যা, উপন্যাসের পাতায় রীপ, রাই, পুষ্পল, মৌনিকা, নিদেনপক্ষে বাটুও যেই যত্নটুকু পায়, তুলনায় শাক্য, পুলু, আয়ান বা তিথিদের কপালে জোটে যৎসামান্য বঞ্চনা। আপনি অবশ্য এই পয়েন্টে আমার সাথে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতেই পারেন। নিজেদের পছন্দ নিয়ে নিজেরা সরব হবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। ব্যক্তিগতভাবে পুলুর উদাসীনতাটা আমার ভালো লেগেছে। ছেলেটার কপালে আরেকটু স্পটলাইট প্রাপ্য ছিল হয়তো। বিশেষত যেখানে ওর ট্র্যাকটা এত গুরুগম্ভীর ও মেঘলা। খারাপ লাগে যখন পুলুর পাশে অহনাকে ডেভেলপ না করে, স্রেফ অনেকটা পথচলা স্কিপ করে দেন লেখক।
এই একই কথা বলা যায় শাক্যকে নিয়েও। সেই চশমা-পড়া, বিদেশ যেতে চাওয়া, নার্ভাস ছেলেটা। শাক্যর দোনামোনা পার্সোনালিটি, সাথে ওর পারিবারিক উচাটন ও অভ্যন্তরীণ ফাঁকফোঁকরগুলি আমার বহুদিনের চে���া। ছেলেটার চাপা কষ্টে একটা আস্ত উপন্যাসের মশলা মজুদ ছিল। লেখা হলে, ওকে আর 'পাল্টা হাওয়া'-র এই সামুদ্রিক ট্রাফিক জ্যামে হারিয়ে যেতে হতো না��� পাঠক হিসেবে আমরাও ইরানীকে (দীর্ঘশ্বাস) আরেকটু সবিস্তারে দেখতে পেতাম, এই আরকী…
এছাড়াও আছে বাস্তবের গণ্ডি ডিঙিয়ে লেখকের ঘুরেফিরে সিনেমার শরণাপন্ন হওয়া। রীপ-মৌনিকার ভুল বোঝাবুঝিটা অত্যন্ত বোকা বোকা। এ ধরনের ফালতু কনফ্লিক্টে স্মরণজিৎ পাঠকেরা অভ্যস্ত। কেবল খারাপ লাগে, দুজনের কেমিস্ট্রির অভাব পোষাতে তিথিকে প্রায় কোনো সিনেমার ভিলেনের পর্যায়ে নামিয়ে আনাটা। ভীষণ আরোপিত, নাটুকে এই ট্র্যাকটি। লেখকের এই এক মুদ্রাদোষ। চাইলেই লিখতে পারতেন একটা ধূসর বাস্তবসম্মত লাভ ট্রায়াঙ্গেল। তার বদলে বারবার ভিলেনরূপী একমাত্রিকতা এনে (অতনু, মিস্টার রায়, ইত্যাদি) নিজেই নিজের গল্পের গাম্ভীর্য ক্ষুণ্ন করেছেন দায়িত্ব সহকারে।
ওদিকে আবার মৌনিকার ফিয়ন্সে, পরাগ। কে না জানে যে কোনো প্রেমের গল্পে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ক্যান্ডিডেটের থেকে বড় খলনায়ক আর দ্বিতীয়টি নেই। কিন্তু বইতে পরাগের ব্যবহার ও কথপোকথনের ধরণ এতটাই হাস্যকর ও অতিরঞ্জিত যে নুয়ান্সের অভাবটা রীতিমত গায়ে পড়ে ছ্যাঁকা মারে। সবই সিনেমা। মৌনিকার ভাইয়ের সাথে বিয়ে সম্পর্কিত কথপোকথনটা পড়ে দেখুন একবার। ঠিক যেন 'জানে তু ইয়া জানে না'। সেই জিনিলিয়া আর প্রতীক বব্বর! শালা তুই একে বিয়ে করবি? করতে পারবি, দিদি?
তুলনায় রাইকে অনেক বেশি মানুষ মানুষ মনে হয়েছে। সাদা, কালোর মিশেলে এক উচ্চাকাঙ্খী বরফখন্ড। গভীরতার নিরিখে সার্ফেস লেভেল হলেও, রাইয়ের মারফত কলকাতার শিল্পী জগৎটাকে বাজিয়ে দেখতে পেরে দিব্যি লাগলো। একই সাথে কষ্ট লাগলো বাটুর দারিদ্র্যে। শান্তি পেলাম জেঠিমার সান্নিধ্যে। রাগ হলো সোনাদাদুর প্রতি। ক্ষেপে গেলাম লাটিমকে দেখে। তবুও এদের সবাইকে আপন করে নিতে পারলাম কই? সমস্ত রাগ, অভিমান, কমপ্লেন শুধু জমা হয়ে রইলো মাথার কাছে। দেখুন বইয়ের একমাত্র সমকামী চরিত্রটি। নাম নেব না। তবে প্লটপয়েন্টটির এক্সিকিউশন বীভৎস রকমের ক্রুড। মাথা চাপড়াতে ইচ্ছে হয়।
অগত্যা, অভিমানের লিস্ট, পাহাড় সমান।
কিন্তু ফিরবি দিল মাঙ্গে মোর। বাকি পাঁচজন পাঠকের ন্যায় ওনার 'একঘেয়ে' গল্পগুলো নিয়ে আমার কোনও রকম বিরূপতা নেই। আগে হয়তো ছিল। এখন আর নেই। এখন আর আমি সব্জির বাজারে মাছ খুঁজে না পেয়ে মুখ ফুলোতে বসি না। সত্যি বলছি, এসব লেখা খুব জরুরি। হয়তো বা বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণালী পরম্পরার প্রতি এসব বেস্টসেলার বিশ্বস্ত নয়। তবুও কী সুপাঠ্য, সহজ, মার্শমেলো হৃদয় স্মরণজিতের কলমের। এই বইটা অসাধারন লাগলো না। তাতে কী? উসেন বোল্টের মতো পড়ে তো ফেললাম। হাসলাম, রাগলাম, দিলাম দুটো গালি। ফাঁকা মনে জায়গা করে নিলো বসন্তের গাছ। চেরিফুল ফুটলো ঠিক তার পাশে।
উপন্যাস হিসেবে বইটা আমার পড়া সেরা স্মরণজিৎ নয়। ওনার অনেক ছোট-ছোট লেখাতে এর চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ পেয়েছি আমি। হালফিলের 'ছাতিম' এহেন ভালো লাগার বড়সড় দৃষ্টান্ত। তাই এই বুড়ো প্রবৃদ্ধ বড়দাটিকে নিয়ে অল্প হলেও মায়া হয়। ইচ্ছা করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে আদর দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে ক্যালেন্ডারের দাগ। উপন্যাসটির গভীরতা হাঁটুজল মাত্র। কটা বাড়তি চরিত্র কম থাকলে আখেরে ভালোই হতো। কোনো সজাগ এডিটরের নির্ভীক প্রক্ষেপণে হয়তো বা কেটেকুটে একটা স্ট্রিমলাইনড কাঠামো তৈরি করা যেতো। হয়তো তাহলে স্রেফ সমকালীন থেকে চিরকালীনের পথে দু-এক পা এগিয়ে যেত ‘পাল্টা হাওয়া’… হয়তো...
তবে আজ এসব থাক। হয়তো হয়তো করে এত বছর বাদে কোনো লাভ নেই আর। এ যেন শূন্যে ঘুষি মেরে ছায়ার সাথে লড়াই করা। বন্ধু আমার স্মরণজিৎ। দিয়েছেনও তো অনেক।
রীপ, শাক্য, আয়ান, পুষ্পল। অন্ধ বাঁশিওয়ালা। আলোবাবার গান। ধুপকাঠি প্রেম। বৃষ্টিভেজা কলকাতার অভিমানী মনখারাপ। চকলেট রোদ। মেন্থল কুয়াশা। ক্ষণিকের প্রেমে লঘু উদারতা। চাঁচাছোলা ভাষায় দুর্দমনীয় চাহিদা। দ্যা স্মরণজিৎ স্পেশাল। কেবল একটু মিতব্যয়ী হয়ে, রয়েসয়ে গল্পটি বললেই হতো। মাইরি বলছি। যখনই বইয়ের পাতায় কালজয়ী কোনো উপাখ্যানের ঘূর্ণি-তাগিদের বাইরে বেড়িয়ে দু-দণ্ড নিশ্বাস নিয়েছেন লেখক, তখনই পরতে পরতে ফুটে উঠেছে কবিতার কুড়ি। মিলেছে আমার চেনা প্রিয় কবির দেখা... এবারে যদি এই কনসিস্টেন্সির গোলাপী রঙটা গোটা উপন্যাস জুড়ে দেখতে পেতাম, তাহলে আজ তিনটে তারার বেশি দিতে আমার দুবার ভাবতে হতো না।
প্রায় ৭০০ পেজের বই। কিন্তু পড়তে গিয়ে একটুও বিরক্তি লাগেনি। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখায় একটা অদ্ভুত সারল্য,সহজবোধ্যতা আছে। সেটাই আমাকে আটকে রেখেছিল পাতার পর পাতায়। আর এই বইয়ে যে গল্পটা তিনি বলেছেন,সেটা অচেনা কারো গল্প নয়। আমার অথবা আমাদেরই গল্প। গল্পটা বন্ধুত্বের,গল্পটা পাওয়ার,না পাওয়ার। আবার সবকিছু ছাপিয়ে গল্পটা জীবনের জয়গানের ও বটে।
"পাল্টা হাওয়া" বিশালায়তন উপন্যাস; আয়তনের দিক দিয়ে কিন্তু গভীরতার দিক দিয়ে নয়। এক উপন্যাসে এতো এতো চরিত্র! মাঝেমধ্যে তো গুলিয়ে ফেলছিলাম কে কোনটা। মনে হোলো, বইয়ের আকার বাড়ানোর জন্য অনেক চরিত্র আনা হয়েছে। কয়েকটা ছোট উপন্যাস জোর করে জোড়া দিলে যা হবে, "পাল্টা হাওয়া" তাই। আলাদাভাবে গল্পগুলো মোটামুটি ভালো, গল্পগুলোর মাঝে ভাবগত ঐক্য খুব একটা নেই। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে পুষ্পলের অধ্যায়টা। অরূপের কাছে জানলাম, "দেশ" পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার সময় এই উপন্যাস তুমুল আলোড়ন তুলেছিলো। তরুণ পাঠকরা আক্ষরিক অর্থেই নাকি উপন্যাসের চরিত্রদের কথা ও কাজের মাঝে নিজেদের আবিষ্কার করে বিস্মিত, আনন্দিত ও হতবিহবল হয়েছিলো। যার অনিবার্য ফলশ্রুতি, স্মরণজিৎ এর তুমুল জনপ্রিয়তা। তরুণদের মনের এক্কেবারে ঠিক জায়গাটি লেখক স্পর্শ করতে পারেন এটা ভালো কথা। কিন্তু যে আলাদা অন্তর্ভেদী দৃষ্টি একজন লেখককে মহিমান্বিত করে, সে গুণটা লেখকের খুব কমই আছে। মনে হয়, তিনি তার চরিত্রদের চিন্তার সীমিত পরিধি ছাড়িয়ে নিজেই বের হতে পারেন না। তবে বইটা সুখপাঠ্য, এটা তো স্বীকার করতেই হবে। তরতর করে পড়ে ফেলা গেলো। কিন্তু আদৌ এতো বড়ো আয়োজনের প্রয়োজন ছিলো না। ছোট উপন্যাসই স্মরণজিৎ ভালো লেখেন।
বৃষ্টির ঝাপটা,ঠান্ডা হাওয়া,আকাশে হেলে পড়া চাঁদের সাথে অগুনতি তারাভরা রাতের আকাশ কিংবা মেঘেদের দল ছুট হয়ে ছোটাছুটি করা দেখতে দেখতে এই বইটা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল মুদিয়ালি রোডে, রাসবিহারী মোড়ে,দেশপ্রিয় পার্কে,গ্ৰিক চার্চে আরো নাম না জানা অদেখা অজানা কলকাতার হাজারো রাস্তায় হাজারো মোড়ে
বইয়ের কলেবর দেখলে আপনি একটু দ্বিধায় পড়ে যেতেই পারেন, শেষ পর্যন্ত শেষ হবে কি না ভেবে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তেই পারে,সবচেয়ে বড় কথা হলো এত এত চরিত্র দেখে মনে হতেই পারে আরে এ না আবার অধিক সন্ন্যাসীতে গাজঁন নষ্ট হয় কিন্তু সব সন্দেহ দুশ্চিন্তাকে অমূলক প্রমাণ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত আপনি যদি বলে উঠেন এই চাঁদের হাট এত তাড়াতাড়ি কিভাবে ভেঙ্গে গেল,অবাক হয়ে ভাবতে থাকেন এদের কথা কাজের ফাঁকে তবে আমি মোটেও আশ্চর্য হব না
কারন স্মরণজিৎ এর ম্যাজিক তো এখানেই, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমনভাবেই বুঁদ করে রাখবে টের পাওয়াই মুসকিল হয়ে যাবে কখন সময়গুলো পাখির মত ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে কখনো অভিমানী মৌনিকা-রীপ, মুখচোরা শাক্য আর উচ্ছল ইরানী,ক্ষ্যাপাটে আয়ানের রানী মুখার্জি,প্রীতি জিনতা, অসম্ভব সুন্দর পুম্পল,শিরিন গৌরিক, উচ্চাভিলাসী রাই আর তার ভাঙনধরা সংসারের সঙ্গী রাজু, বদমেজাজি অতনু, অর্জুন তিথি,প্লেন চালানোর স্বপ্নে বিভোর গ্ৰাম থেকে আসা রীপের বাসায় কাজ করা বাটু,নাপিত যুগল,তার বৌ নীতু,পপি,কিংবা রঞ্জনা-অর্ক,শিরিনের পিছনে হনে্য হয়ে ছোটা পুলু আর পুলুর জন্য দিওয়ানা অহনা,তপু তমসা মানস ভুটান,বডি বিল্ডার লোহাদা,ঢপবাজ চিনিদা,কোচ ভুলুদা,ইতিহাসের বেলা টিচার,হাড় কিপটে সোনাদাদু,মধুদি আলোবাবা, সুযোগ সন্ধানী প্রণব,গোল বাঁধানো গোগোল,আল্ট্রা মর্ডান দিশা,তিথির মুখচোরা মা আর ভালোমানুষ বাবা,শাক্যর বদরাগী বাবা আর জন্মদুঃখী মা,পুম্পলের ভাঙা পরীর মত মা, বাঙালি খ্রিস্টান শিখীর প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া দক্ষিণী রঘু, স্বার্থপর যূনীদি,অরুনকুমার কিংবা রাস্তায় ধূপকাঠি বিক্রি করা প্রবল আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন বৃদ্ধা সহ আরো অনেক চরিত্র যদি মনের অজান্তেই গেঁথে যায় একটুও তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই,এ যে হওয়ার ছিল আগে থেকেই,ঠিক যেন অঘোম নিয়তির মত যা পাল্টাতে গেলে নিজেকেই পাল্টা হাওয়ায় হারিয়ে ফেলতে হয়
সেই বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরে হারিয়ে যেতে যেতে আপনাআপনিই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠবে ঠোঁটে এই বইয়ের কথা মনে হলে,একরাশ শান্তি আর তৃপ্তি থাকবে মনে অনেকসময় ধরে রেটিং 🌠🌠🌠🌠.৫০
এতো বিশাল কলেবরের বই আগে কখনও পড়িনি তা না, পড়া হয়েছে কতোই। কিন্তু পড়ত পড়তে কখনও মাঝপথে এমন হাঁপিয়ে উঠিনি। বইয়ের শুরুটাও খারাপ না, প্রথম ছয়/সাতটা চ্যাপ্টার গেছে নতুন নতুন চরিত্রের কথা পড়তে পড়তেই। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট কলকাতা শহর। আর বইয়ের মূল চরিত্র? বোধহয় মানুষেরা৷ শহরের নানান বর্ণের, নানান স্তরের মানুষেরা।
স্পেসিফিকভাবে বললে, চার বন্ধুর গল্প। রীপ, আয়ান, শাক্য আর পুষ্পল। তাদের সূত্র ধরে একে একে এসেছে মৌনিকা, তিথি, অর্জুন, রাই, রাজু, মুন, বাটু, যুগল, নীতু বৌদি, লাটিম, সোনাদাদু, ইরানী, মধুদি, শিরিন, গৈরিক, পুলু, অহনা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি... হাঁপিয়ে গেছি নাম বলতে বলতে। কলকাতা মোটেও ছোট কোন শহর না৷ কিন্তু তারপরেও সুবিশাল এ শহরে এই মানুষগুলোর মাঝে আশ্চর্য যোগাযোগ। একেকটা মানুষ, তার পরিবার, পারিপার্শ্বিকের গল্প। বলা ভালো তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, টানাপোড়েন, হেরে যাওয়া আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা সবকিছু। লেখক এখানে জীবনের গল্প বলেছেন, স্বাভাবিকভাবেই গল্পের শেষটা মোটেও নাটুকে হয়নি। কেউ বা জেতে আর কেউ বা হেরে যায়... আর ঠিক এ কারণেই গল্পের শেষে মাঝপথের বিরক্তিটি ক্রমশ পরিণত হয়েছে ভালোলাগায়।
রেকমেন্ড করব কি? বুঝতে পারছি না। লেখকের পাতা ঝড়ার মরশুমে উপন্যাসটা যেরকম ভালো লেগেছিল, মোহগ্রস্ত করে রেখেছিল, এটা অতোটা না। অবশ্য দুইটা বই দুই টাইপ। খারাপ লাগেনি। হয়তো দুই বা তিন স্টার দিতাম, এন্ডিঙের জন্য পাক্কা চার তারা। জীবনটাও বোধহয় এমনই।
'পাতারঝরার মরশুমে' স্মরণজিৎ চক্কত্তির সাথে পরিচয়। মূলত তিনি তরুণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে লেখেন। যুবসমাজের মনস্তত্ত্ব, ভালোলাগা আর ভালোবাসা বরাবরই তাঁর লেখার উপজীব্য। এবারও একইরকম হয়েছে। কিন্তু ৭শ পাতায় যে কাহিনি তিনি লিখেছেন, সেই ঘটনা মাত্র দু'শ পাতাতেই শেষ করা যেতো। অযথা টেনে বড়ো করেছেন।
যাহোক, স্মরণজিৎ চক্কত্তির বইগুলোর চরিত্রের নাম ভীষণ অদ্ভুত হয়। এবার রীপ, শাক্য ইত্যাদি নামকরণের মধ্য দিয়েও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন।
স্মরণজিতের বই পড়তে চাইলে আকারে ছোটো যে-কোনো লেখা পড়ুন। এই ফাইলেই যথেষ্ট।
কলকাতা এলেই, কাছের বাজারের আনন্দ পাবলিশার্স-এর দোকানটায় একবার ঢুঁ মেরে আসার স্বভাব আছে আমার, দোকানটি পৈতৃক বাড়ি থেকে খুব একটা দূর নয় - প্রায় দশ বছর আগে প্রথমবার গিয়ে প্রোপ্রায়েটার ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম - ' কলকাতা বড় একটা আসা হয় না, নতুন বাংলা লেখার সঙ্গে চর্চা চলে গেছে - একটি বই রেকমেন্ড করুন তো' . ভদ্রলোক স্মরণজিতের পাল্টাহাওয়া ধরিয়ে দিয়ে বলেন - ' এই যে এই বইটা চলছে খুব - আপনার ভালো লাগবে কি না জানি না ' .
ঢাউস বই, তার ওপরে দেশে ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছে, আমি বেশ প্রথম আলো, পার্থিব, কাছের মানুষ টাইপের কিছু একটা হবে ভেবে তো ড্যাং ড্যাং করে কিনে নিয়ে এলাম.. তারপর ... এই একটা ভালো উদাহরণ দিচ্ছি - রিভিউটা লিখতে লিখতেই মাথায় এলো । রাস্তার Delhi Belly মার্কা ভেজিটেবল চপ , মোনোসোডিয়ামগ্লুটামেটে ভর্তি - মুখে পুরে যখন চিবোচ্ছি তখন খারাপ লাগছে না হয়তো, কিন্তু পরের দিন সকালে অম্বল কী পেটখারাপ হতে বাধ্য। এবার যদি ওরকম পনেরোটা চপ খান - খেতেই পারেন। কিন্তু তারপর শুধু পেট ছাড়বে না, টাকা খরচ আর সময় নষ্ট করার জন্যে দুঃখও হবে.
কলকাতায় পরেরবার এসে প্রোপ্রায়েটারমশাইকে ধরলাম - কী মশাই সোপ অপেরা/ বাংলা সিরিয়াল মার্কা একটা বই ধরিয়ে দিলেন? পয়সা নষ্ট সময় নষ্ট ! ভদ্রলোক যারপরনাই অপদস্থ - 'বুঝতে পারিনি, আমারই আরো দুয়েকটা প্রশ্ন করে পছন্দ অপছন্দ বুঝে তারপর রেকমেন্ড করা উচিত ছিল ' তারপর দু একটা চমৎকার রেকোমেন্ডেশন দিলেন। এখনো যখন যাই, সময় নিয়ে লেখা রেকমেন্ড করেন, দুম দাম ডিসকাউন্ট ধরিয়ে দেন।
সেই ডিসকাউন্টগুলোর জন্যই একটা স্টার বেশি দিলাম যা পাওয়া উচিত তার থেকে।
বহু, বহু বছর আগে পরশুরাম “প্রেমচক্র” গল্পে সন্ধান দিয়েছিলেন “হোপ্লেস হেকসাগনের” যা কি না ইটারনাল ট্রায়াঙ্গলের বাবা। একই ছক রাজশেখর বাবু ব্যবহার করেন “ভূসুনডির মাঠে” গল্পটিতে। স্মরনজিত বাবু এই হাসোচ্চলে লেখা কনসেপ্টটা বড্ড সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছেন তা এই বইটি পড়লেই বোঝা যায়।
একরাশ ন্যাকা, থ্যাস থ্যাসে (টু কোট সঞ্জীব চাটুজ্যে) চরিত্র যাদের প্রেম করা ও প্রেম নিয়ে বিলাপ করা ছাড়া কোন কাজ নেই। মেয়েরা সবাই দারুন সুন্দরী, ছেলেরা সবাই সুপুরুষ। ভবানীপুর থেকে আনোয়ার শাহ অব্দি সবাই একটি নিটোল কম্পার্টমেনটালাইজড বুদবুদে বাস করে। বুদবুদটি এতই নিটোল যে ভারতের অন্যতম জনবহুল শহরের অন্যতম জনবহুল এলাকায় বাস করা চরিত্ররা নিয়ম করে একই অন্ধ বাঁশিওয়ালা বা একই পঙ্গু ভিখারি ছেলে বা একই ধুপ বেচা বুড়ি দেখতে থাকে। হোপ্লেস হেকসাগনের উপরের লেভেল বোধহয় “দুর্দান্ত ডোডেকাগন” যার পাল্লায় পড়ে এই গল্পের মানুষদের মধ্যে এইসা লতায় পাতায় সম্পর্ক যে মনে হয় কলকাতা নয়, দশ ঘর গ্রামের কুড়িটি মানুষের গল্প। তাই পুষ্পল জগিং করতে গেলে হাজার মানুষের মধ্যে বারবার দিতির বাবাকেই দেখে আবার সাক্য ব্যাংকে গেলেও একই ভদ্রলোক আউট অফ কন্টেক্সট এসে হাজির হন।
অন্তরীপ ও মৌনিকা দুটি অত্যন্ত বিরক্তিকর চরিত্র। এদের দুরন্ত প্রেমও রয়েছে অথচ একে অপরের সাথে স্বচ্ছ আলোচনা করার সৎ সাহস নেই। তাই অন্যের কথায় অবলীলায় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বাংল�� সিরিয়ালের কুখ্যাত লিনা গঙ্গপাধ্যায় কি এইসব পড়েই প্রেরণা পান? স্কুল এবং কলেজে আমিও চুটিয়ে প্রেম করেছি। এদের মতো অবস্থা ছিল না - সব সময় প্রেম প্রেম চিন্তা (যেরকম বিভূতি মুখুজ্যর গণেশের দল বিয়ে নিয়ে চিন্তা করত) কিন্তু আসল সময়ে সবাই চূড়ান্ত ইনডিসাইসিভ। এ সবের মধ্যে লেখক গুঁজে দিয়েছেন অতনু বা মিস্টার রায়ের মতো চূড়ান্ত একমাত্রিক ভিলেনাস চরিত্র। অহনা মারিও ভারগাস লোসা দিয়ে শুরু করায় ভাবলাম ইন্টারেস্টিং চরিত্র হবে, স্মরনজিত বাবু ওকে পাপশ বানিয়ে ফেললেন। মাঝে মাঝে আলোবাবা মূর্তিমান বিবেকের মতো উদয় হলেন।
তবে সব খারাপ হলে এই রেটিং দিতাম না। স্মরনজিত বাবুর চরিত্রদের মুখের ভাষা একদম সময়োপযোগী, কলকাতায় কমবয়সী ছেলে মেয়েরা এরকম ভাষাতেই কথা বলে। পুষ্পলের সাব প্লটটি আমার মনে দাগ কাটলো, শংকরের “জনঅরণ্য” উপন্যাসের সোমনাথের কাহিনীর সাথে কিছুটা মিল রয়েছে। বাটুর কাহিনী প্রেডিক্টেবল হলেও মোটের উপর ভালোই। তাছাড়া স্মরনজিত বাবুর লেখায় একটা চুম্বক আকর্ষণ রয়েছে, সাধারণ ঘটনা নিয়ে পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা আছে, গজেন্দ্রকুমার মিত্রের মতো।
Again স্মরঞ্জিত চক্রবর্তী। পাল্টাহাওয়া। আনন্দ publisher থেকে প্রথম প্রকাশ 2009। নামটা শুনেই মনে হয় একটু অন্য রকম কিছু। হাওয়াবদল বলতেই যেন রাজনৈতিক ব্যাপার মনে হয়। কিন্তু এই উপন্যাস কল্পনার বাইরে - বাস্তবের গল্প বলে যায়। সত্যি কি গল্প? কি করে গল্প হতে পারে এই চরিত্রের ভিড়ে বারবার যে নিজেকে খুঁজে পায় যায়। খুঁজে পাওয়া যায় তাকে যাকে আমি লুকিয়ে রেখেছি কেবল আমার জন্য আর আমার প্রিয়তমর জন্য। অন্তরীপ-শাক্য-আয়ান-পুস্পলের বন্ধুত্ব তো আর পাঁচটা ছেলেবেলার বন্ধুদের মতোই। একসময় উপন্যাসটি মাঝপথে ছেড়ে দেব মনে হচ্ছিল। কারণ অন্তরীপের প্রত্যেকটা নিদ্রাহীন রাত আমাকেও কষ্ট দিচ্ছিল বারবার মনে হচ্ছিল কেন কি দরকার ছিল মৌনিকার অন্য একজনকে বিশ্বাস করে এত দিনের সম্পর্কে একঝটকে ইতি টানার?? রাগ ধরছিল তিথির উপর। সম্পূর্ণ উপন্যাসে কঠিন বাস্তব সর্বদা। বাতুর উড়োজাহাজ চালানোর স্বপ্নরা পুস্পলের চাকরি পাওয়ার মতোই পরে থেকে যায়। শিরিনের চলে যাওয়া মন খারাপ নিয়ে আসে। পুলুর জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সাথে রাইয়ের আমেরিকা পালানো যেন একই মুদ্রার দুই পিঠ। সব কিছুর সাথে সব কিছু কোথাও না কোথাও জড়িয়ে আছে। যা এই লেখকের সর্বাধিক লেখার মধ্যে পাই। চরিত্রের এত রং সম্পূর্ণ উপন্যাসে এনে দিয়েছে আলাদা মাধুর্য। উপন্যাসের শেষে মনে একটু হলেও ভাবনা থাকে শাক্য সত্যি ইরানীর কাছে ফিরবে তো?মন খারাপ থেকে যায় পুস্পলের জন্য। বাটুর জন্যেও।
এই বি...শা..আ...আ...ল আকৃতির বইটা যখন পড়ার সির্ধান্ত নিই,ভাবছিলাম আদেও শেষ করে উঠতে পারবো তো !!৫দিনে শেষ করেছি।দেশ পত্রিকায় যখন ধারাবাহিক ভাবে বেরোয় তখন হাতের কাছে পেয়েও পড়া হয়নি, অনেককাল পর এখন পড়ার সুযোগ হল।পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে বিরক্তও হয়েছি,কোথাও কোথাও ভালোও লেগেছে, কোথাও মনখারাপ করেছে।এত্ত চরিত্র যে মাঝে মাঝে তো সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল।কিছু কিছু জায়গার প্রিন্টিং খুব খারাপ ছিল, খুব কষ্ট করে পড়তে হয়েছে। যাই হোক এটুকুই বলতে চাই যে লেখকের অন্যান্য লেখার তুলনায় পাল্টা হাওয়া খুব একটা ভালো লাগবে না। উফফ শেষ করে যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
এত চরিত্র নিয়ে কোনো উপন্যাস আগে পড়িনি। চলুন নায়ক নায়িকা দের সাথে নামপরিচয় করিয়ে দিই - ১)তিথি > অন্তরীপ(রীপ) > মৌনিকা ২) পুষ্পল > শিরিন ৩)আয়ান > মেঘলা ৪) শাক্য > ইরানী
অন্তরীপ, অায়ান, পুষ্পল, শাক্য - মূলত এই চার বন্ধুর গল্প।এদের সূত্রেই এসেছে বাকি চরিত্ররা। রীপের সোনাদাদু - তার কথা না বললেই নয়, তাকে সোনাদাদু এইজন্যই বলা হয়, তিনি সারাজীবনের রোজকার সোনায় পরিণত করে রেখেছে। রীপের বাড়ির চাকর বাটু(বটকৃষ্ণ) অভাবের সংসারে বড় হলেও স্বপ্ন তার অনেক বড়ো - ভাবে যে সে একদিন পাইলট হবেই। রীপের বন্ধু আয়ান একটু পাগল পাগল - সরিসৃপ প্রেমী আর পুষ্পল তাদের পড়ে যাওয়া সংসারের হাল সামলাতে অস্থির। আর শাক্যের জীবন যেনো তার নিজের না, তার বাবার, বাবার অনুমতি ছাড়া সে কিছুই করতে পারে না। এছাড়াও আরও অনেক অনেক চরিত্র আছে, সব নাম বলতে গেলে পেজ শেষ হয়ে যাবে🤭 । এত চরিত্র কিন্তু অদ্ভুতভাবে এরা একে অপরের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। কেউই তার ভালোবাসাকে নিজের মতো করে আপন করে পায় না। যেমন - অহনা ভালোবাসে পৌল্যন্তকে কিন্তু পৌল্যন্ত পছন্দ করে শিরিনকে আবার শিরিন অন্যকাউকে। আবার রীপ যাকে ভালোবাসে সে অন্যকাউকে বিয়ে করছে। এইসকল চরিত্রদের আশা- ভালোবাসা, আকাঙ্ক্ষা,হতাশা,দুর্বলতা এসব নিয়েই 'পাল্টা হাওয়া'।
"প্রেমের মতো খারাপ আর কিছু নেই।....মানুষ কত কষ্ট পেলে নিজেকে শেষ করে দেয় ?খুব খারাপ জিনিস প্রেম,ভীষণ খারাপ।" 😔
খুব সুন্দর এক উপন্যাস, এবং লেখকের ভক্তরা খুবই বলে থাকেন এই বইটির ব্যাপারে। মিষ্টি কিছু মুহূর্ত, তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা, জীবনের ভরপুর উথাল পাতাল স্রোতের হেঁচকা টানে তরতর করে এগিয়ে চলে কাহিনী। এই লেখকের বৈশিষ্ট্য, সব লেখাই পাঠককে শেষ অব্দি পড়তে বাধ্য করে। ৬০০-৭০০ পাতার বই আমি ৩ দিনে হাজার কাজের মাঝে পড়ে শেষ করেছি। ভাবা যায়??? 😝😝😝
ব্যাক্তিগত মতামত - এটা ৪০০ পাতাতেই শেষ হতে পারত। বেশ কিছু জায়গা মনে হয়েছে বড়ো বেশি টানা হচ্ছে, এছাড়া বাকি সবটাই খুবই সুন্দর।
এনার লেখা মানেই হাজার খানেক চরিত্র আর তাদের বিচিত্র নাম - ব্যতিক্রম ঘটেনি তার এখানেও। শেষ করলাম রে মা Chandra Sinha 🙏 খ্যামা দে এবার 🙏
ভালোবাসা কি? কোনো দূর ফুটপাথ থেকে ভেসে আসা অচেনা মানুষের বাঁশির সুর? কোনো এক সিগন্যালে আটকে পড়ে থেমে থাকা প্রেম? নাকি সব কিছু কে পিছনে ফেলে, নিজের ছায়া কেও পিছনে ফেলে দৌড়ে চলা কোনো শিল্পীর যাত্রা? কেউ চায় পাইলট হতে, কেউ চায় নিজের দেশকে ফেলে, দুঃখ ভুলতে বিদেশের পথে পারি দিতে, কেউ শুধুই একটু ভালো জীবন, কিন্তু রীপ? শুধু কিছু বকুল ফুল আর তার ঘ্রাণের মতো মন ভালো করে দেওয়া মৌ!! আর বাকি যা রইলো আয়ান....এক আপনভোলা মানুষ, এমন মানুষ থাক, এদের থাকা দরকার। আর এই সব মানুষের জীবন উড়ে চলে কোনো এক পাল্টা হওয়ায়!!
স্মরঞ্জিত চক্রবর্তী মানেই আমার কাছে প্রেমের উপন্যাস আর তার সাথে নানারকম প্রেক্ষাপট।।এই বই টা যে আমার কাছে কতোটা প্রিয় তা বলে বোঝাতে পারব না।।পড়ার পর প্রায় এক সপ্তাহ অন্য কোনো কাজ এ মন দিতে পারিনি। সবসময় শুধু চরিত্র গুলির সাথে কল্পনায় ভেসে গেছি। সব চরিত্র গুলি মন ছুঁয়ে যায়।আর তার সাথে দক্ষিণ কলকাতার অসাধারণ আমেজ। দেশপ্রিয় পার্ক ,বিবেকানন্দ পার্ক, কালীঘাট, মুদিয়ালি, southern avenue, ভাবলেই শিহরিত হতে হয়।প্রতিটি চরিত্রই যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত। অন্তরিপ আর মৌনিকা র বিরহ বেদনা যেমন একদিকে মন ছুঁয়ে যায় তেমনি অন্যদিকে পুষ্পল, shakyo, সবার জীবনেই রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা।বাটু র পাইলট হওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যাওয়া , উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাই র নানা স্তর প��রিয়ে আমেরিকা যাত্রা, তিথির মনোবাসনা পূরণের জন্য মৌনিকা কে মিথ্যে বলা, পুলু র মনের ভিতর টানাপোড়েন এই সব এ যেন কোথাও একটা মিলিত হয়ে যায়।।সব চরিত্র ই একে অপরের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত । মাঝে পড়ার সময় রিপ র জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল, তার নিদ্রাহীন রাত যেন সবাইকে সাড়া জাগায়। রাগ হচ্ছিল প্রচন্ড তিথি র উপরেও, পাশাপাশি মৌনিকা র জন্য ছিল তীব্র অনুশোচনা, কেন ও সমস্যা টাকে রিপ র সাথে আলোচনা ক��েনি তাই।।কিন্তু শেষ এ সত্যি ই এই দুই চরিত্রের মিল হয়েছে।।যদিও সব চরিত্র র শেষ নাটকীয় নয়।এখানে যেমন একদিকে ভালো শেষ ও আছে।তেমনি অন্যদিকে কোথাও ব্যর্থতা ও আছে। র রিপ,আয়ান, পুষ্পল, shakyo, এই চারজনের বন্ধুত্ব সত্যি ই নজর কাড়ার মতো। যাই হোক এই উপন্যাস টি আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব এ ভালো লেগেছে।।অসাধারণ ।।এখনো যেন আমার কাছে সব চরিত্র জীবন্ত মনে হয়
The bestseller book, though not convincing enough. Many characters, complexity of their lives, cinematic (read : lustrous and sometimes lecherous) dialogues and scenes, cliche climax made it a bestseller book. Definitely a page turner just because it does not induce any meaningful thought to churn on. I personally found it to be a depth-less, very predictive and commonly plotted novel. It could be handled in a better way. It makes me numb when I see people comparing the author with Sunil Gangopadhaye or with any other senior literary person. One can buy this book spending 400 or something bucks, but trust me you can buy many other meaningful books spending the same amount. But, for an experience, one can read this, but of course, before that please register yourself with a library or ask the book from a friend.
অন্যতম প্রিয় ও সেরা বই আমার পড়া। এই বইটা যতদিন ধরে পড়ছিলাম, মনে আছে আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না। যেন আমিও যেন ওই বইটার একজন চরিত্র। আর উপন্যাসের প্রতিটা চরিত্র কী ভীষন জীবন্ত!❤️ পুলুর জন্য কেঁদেছিলাম,পুষ্পলের কষ্ট আমার হয়ে উঠেছিল। এছাড়া অন্তরীপ, শাক্য... কাকে ছেড়ে কার কথা বলবো? প্রতিটা চরিত্র জীবন্ত। একটা উপন্যাসে এতো কিছু কীভাবে যে থাকে! বন্ধুত্ব, প্রেম, প্রত্যাখান, লড়াই মিলিয়ে দু'মলাটের মধ্যে আস্ত জীবনের গল্প। স্মরণজিৎ চক্রবর্তী জীবনের গল্প লেখে😌❤️
reminded me to some extent with the "hideous hexagon" by the great Rajshekhar Basu........but the attempts of Smaranjit Chakrabarti is neither that crisp not that enjoyable. the plot can be described as "diffused" at the best.....and the climax comes in a bit of "too little, too late" fashion. in all a little disappointing and nothing memorable. hence just 3 stars.
🔹স্মরণজিৎ চক্রবর্তী এর আলোর গন্ধ পড়েছিলাম গতবছর, তার রেশ বেশ অনেকদিন ধরে ছিল। ইচ্ছা ছিল এই উপন্যাসটি পড়ার, বইটির প্রচ্ছদ টি এতো colorful যে সেটি আমাকে অনেকদিন ধরে আকর্ষিত করছিল। তাই এবার বইমেলা তে গিয়ে যখন দেখলাম লেখক স্বয়ং উপস্থিত তখন বইটি কিনে লেখকএর অটোগ্রাফ নিয়ে নিলাম। যদিও এটি লেখকএর প্রথম দিকের(২০০৯) উপন্যাস হলেও আমি পরে শেষ করলাম গতকাল। একটানা দু হপ্তা গোগ্রাসে গিলছিলাম বইটা এইবারের বইমেলা থেকে কেনার পর। রোজ রাতে অফিস এর পর নিয়ম করে পড়তাম, আসলে পড়তে বাধ্য হতাম।
🔹এবার আসি গল্পের, মানে ওই উপন্যাস এর কথায়। যেহেতু উপন্যাস এর সময়কাল ২০০৮-২০০৯ ওই সময় এর এবং আমার কলেজ লাইফ এর সময়কাল ওটা তাই হটাৎ করে যেন একযুগ পিছনে চলে গেলাম। দক্ষিণ কলকাতা ঘিরে পুরো উপন্যাস এর বেড়ে ওঠা আর এতো সুন্দর কলকাতার বর্ণনা আমাকে একযুগ আগের কলকাতায়(দক্ষিণ) যেতে বাধ্য করল। ১২ বছর আগেকার সাউদার্ন এভিনিউ, রাসবিহারী, মুদিয়ালী, গড়িয়াহাট, ভবানীপুর, লেক যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল। কিছু তরুণ তরুণী দের জীবনএর নানা টানাপোড়েন, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, ভুলবোঝা, ফ্যামিলি, প্রেম, পাওয়া, না পাওয়া সব কিছুর মধ্যে গল্প গড়িয়ে চলল নিজের মতো, এবং শেষে সবাই সবার মতো ঘুরে দাঁড়াল, এটাই হয়েতো পাল্টাহাওয়া। কেউ কিছু ফিরে পেল, কেউ হয়েতো কিছু শুরু করল, বা কেউ কিছু ত্যাগ করল বা কেউ হারিয়ে ফেলল। সে বুড়ি ধূপকাঠি বিক্রেতা হোক, বা অন্ধ বাঁশিওয়ালা, বা গুন্ডা লাটিম , অথবা বড়লোক বাড়িতে কাজ করা বাটু সবার কিন্তু সর্বমোট কাহিনির শেষে পাল্টাহাওয়া লাগবেই, কিন্তু কীভাবে? ভালোরদিকে না খারাপের দিকে? সেটার জন্য তো বইটা পড়তে হবে। আর ১৪ মাসের এই উপন্যাসের সময়কাল এ লেখক যেভাবে কলকাতা এবং কলকাতার ঋতু পরিবর্তন এর বর্ণনা দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই সব চরিত্রের জীবন পাল্টেছে, একজনের সাথে অন্যজন এর বেঁচেথাকা জড়িয়েছে। সেইসময়কার বন্ধুত যে কতটা স্বার্থহীন ছিলো সেটা রীপ, সাক্য, আয়ান, পুষ্পল দের বন্ধুত দেখলেই বোঝা যায়।
🔹লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী এর একটা নিজস্ব স্টাইল আছে সেটা হলো অনেক চরিত্র আর তাদের মধ্যে গোল করে কোথাও না কোথাও ঠিক কানেকশন আছে। এইরকম টেস্ট আমি আলোর গন্ধে তেও পেয়েছি। আর লেখক এর চরিত্রগঠন এতো ভাল যে, উপন্যাস এ এতো চরিত্র হওয়া সত্ত্বেও সব যেন জলের মতো সরল। আর কী সব সুন্দর নাম। অন্তরীপ, তিথি, মৌনিকা, আয়ান, শাক্য, পৌলস্ত, অহনা, রাই, পুষ্পল, ইরানী। তবে আমার ভাললাগার চরিত্র হলো - রীপ, তিথি ও তিথির বাবা, এই ভদ্রলোক এই পৃথিবীর মানুষ নন, এতো সুন্দর একটা চরিত্র লেখক কিভাবে গঠন করলেন।সত্যি আসল জীবনে এরম একজন লোককে পেলে জীবন দেখার ধরন টাই পাল্টে যেত।
🍂মোটকথা পাল্টাহাওয়া আমায় উল্টে পাল্টা হাওয়া দিয়েছে, সেই হাওয়া এর তোড়েই এই রিভিউ লিখছি, ভাবলাম আমার এই উপন্যাস পড়ার অভিজ্ঞতা যদি সবার সাথে ভাগ করে নেওয়া যায়।
করোনা-লকডাউনের অস্থিরতার মধ্যে হাতে তুলে নিয়েছিলাম স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর বেশ কয়েকবছর আগের লেখা উপন্যাস - পাল্টা হাওয়া । এর পরে প্রকাশিত ফিঙে, ফানুস, সেফটিপিন আগেই দেশ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যার পৃষ্ঠায় পড়ে ফেলেছি । সেগুলি অনেক পরিণত লেখা হলেও একটু পুরনো পাল্টা হাওয়া আমার ভালো লেগেছে সহজ সাবলীল ভাল লেখার জন্য । টানটান গতিময় তাঁর লেখা , সাড়ে ছশো পৃষ্ঠার বই ছয়-সাত দিনের মধ্যেই পড়ে ফেললাম । প্লটে (প্রায় প্রতিটি চরিত্র প্রেম করছে বা করতে চাইছে) এবং কিছু কিছু চরিত্রের গঠনে সামান্য দুর্বলতা/ অবাস্তবতা আছে, কিন্তু সার্বিক ভাল লেখার গুণে সেসব গুরুত্বহীন হয়ে যায় । কবিতার মতো সুন্দর সুন্দর উপমায় আর হাল্কাভাবে গভীর কথা বলার ক্ষমতায় স্মরণজিৎ স্মরণজিৎই । তিনি পাঠককে বোকা ভেবে 'ও শ্যামাদাস আয় তো দেখি' বলে লেখার মধ্যে সবকিছুই বুঝিয়ে দিতে গুরুতর প্রবন্ধ ফাঁদেন না, পন্ডিতি করেন না, নিজের মেধা, অহম্, দুঃখকে তাঁর উজ্জ্বল সহজসরল বুদ্ধির দীপ্তিতে লুকিয়ে ফেলে হাল্কাভাবে জীবনের গভীর সত্যকে তুলে ধরেন । এটাই 'আর্ট' । এই ক্ষমতা সমকালীন বেশিরভাগ লেখকেরই নেই, থাকে না, তাই পাঠক দূরে সরে যান । তাঁর আর একটি অস্ত্র হল সেন্স অফ হিউমার । এই বইয়ের একটি পৃষ্ঠাও পড়তে বোরিং লাগবে না । খুব একটা ভাল উপমা না হলেও বলি - সত্যজিতের ছবি, রবীন্দ্রনাথের চিঠি, সুনীলের গদ্য যেমন কখনও বোর করে না, আবার নিজের লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না একইসঙ্গে, এ লেখা তেমনই । এ এক মহৎ গুণ, ঈশ্বরপ্রদত্ত, কারণ এ জিনিস (হিউমার এবং মানুষকে বোর না করে শিল্পসৃষ্টির ক্ষমতা) জোর করে ধরেবেঁধে কোনও লেখকই আনতে পারেন না । সার্বিক জীবন সম্পর্কে পজিটিভ তিনি, তাঁর লেখার পাতায় পাতায় সেই অমল আনন্দের ঝর্ণা । যাঁর নিজের কলমের (এখন অবশ্য আঙুলের) এত ক্ষমতা তাঁকে নিশ্চিত নিজের গোষ্ঠী তৈরি, ফেসবুকে সলজ্জ বা নির্লজ্জ প্রচার ইত্যাদি অশৈলী অসাহিত্যিক কাজকর্ম কখনও করতে হবে না, এখন চারদিকে যেগুলো আমরা দেখি । মহাকালের বিচারের কথা আমরা কেউ জানি না, কিন্তু এটাই আপাতত সুখবর যে বহুকাল পরে বাংলা সাহিত্য এমন একজন লেখক পেল যিনি পাঠককে ধরে টেনে বেঁধে রেখে তাঁর মোটাসোটা উপন্যাসটি পড়িয়ে নেবার ক্ষমতা রাখেন । প্রকৃতই আনপুটডাউনেবল বই 'পাল্টা হাওয়া' ।
“পাল্টা হাওয়া” — একখানা উপন্যাস না, যেন চরিত্র ও ক্লিশের মহাকুম্ভমেলা
চারপাশে হাইরাইজ, মাস্টিক অ্যাসফল্ট, শপিংমল, আর ট্রাফিক জ্যামে ঠাসা শহর — এই দমবন্ধ করা প্রেক্ষাপটে বসে কল্পনা করো, চোদ্দো মাস ধরে কিছু দুঃখবিলাসী যুবক-যুবতীর জীবন কেমনভাবে হাওয়াচালিত হয়ে ওঠে। আর হ্যাঁ, গল্পটা একটার না, অনেকগুলোর — এবং সেগুলোকে জোর করে এক কাঁসার কড়াইয়ে ফেলে “পাল্টা হাওয়া” নাম দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে।
বইটা আসলে কী? স্মরণজিৎ এই বইতে এমন একটা কাজ করেছেন যা স্বপ্নেও ভাবা যায় না — একই বইয়ে ছোট ছোট পাঁচটা আলাদা উপন্যাস জোড়া দিয়ে একটাকে বানিয়ে ফেলেছেন!
ভাবগত মিল নেই, সুরগত ঐক্য নেই, কিন্তু সব চরিত্র একে অপরের জীবন দখল করে নিচ্ছে এমনভাবে যেন নাটকের রিহার্সালে সবাই একসাথে মঞ্চে উঠে গেছে।
মাঝে মাঝে তো মনে হচ্ছিল বই পড়ছি না, চরিত্র গণনা করছি। কে কোথায় যাচ্ছে, কার কার প্রতি মনখারাপ — এই টেনেটুনে কাহিনি চালানোর চাইতে বলিউড সিরিয়ালের পুনঃসম্পাদিত সংকলনও বোধহয় কম বিভ্রান্তিকর।
চোখ বুলিয়ে পড়া যায়, মানতেই হবে — কিন্তু পড়া শেষে যে গভীর ছোঁয়া থাকা উচিত, সেটা কই?
স্মরণজিৎ সেই লেখক, যিনি তরুণদের আবেগ ঠিকঠাক ধরতে পারেন — কিন্তু তিনি নিজেই তাঁর চরিত্রদের সীমাবদ্ধ মানসিক গণ্ডি থেকে বেরোতে পারেন না। তাই পাঠক মুগ্ধ হলেও, পাঠক-সচেতন কেউ কেউ বলবেই — এই গল্পগুলোর মধ্যে সাহিত্যিক অন্তর্দৃষ্টি কম।
পুষ্পলের অংশটাই সবচেয়ে ভালো — কিন্তু বাকিগুলো অনেকটাই “একই শহরে, একই দুঃখে, একটু অন্য ভঙ্গিতে” ঘোরাঘুরি। এমনকি এক জায়গায় মনে হলো, এই বইটা লেখকের ফাইলের “Unfinished Drafts” ফোল্ডার থেকে কপি-পেস্ট করে তৈরি।
শেষকথা এটুকুই যে "পাল্টা হাওয়া" একটি আয়তনে বৃহৎ, কিন্তু গভীরতায় অগভীর উপন্যাস। চরিত্রের ভিড়ে গল্প হারিয়ে গেছে, এবং এমনকি হাওয়াও ঠিক কোথা থেকে পাল্টাচ্ছে সেটা বোঝা মুশকিল। এটা একটা ছোট উপন্যাস হলে বোধহয় অনেক বেশি জোরালো হতো।
স্মরণজিৎ ছোট ফর্ম্যাটে ভালো লেখেন — “দেশ” পত্রিকার ধারাবাহিকতায় জমে যায়। কিন্তু এ বইটায় তিনি রীতিমতো ছড়িয়ে গেছেন — জুতা নানান ডিজাইনের হলেও, সব পায়ে একসাথে পরা যায় না, ভাই।
পাঠ্য আনন্দ আছে, কিন্তু পাঠ-পরবর্তী অনুরণন কম। চরিত্র আছে, চেতনা কম। গল্প আছে, কিন্তু গভীরতা? সাইলেন্ট মোডে বোধহয়।
এতো বাজে কোনো বই এর আগে বোধহয় পড়িনি, এটি আমাকে একজন পড়ার জন্য বলেছিল ,এটা নাকি অসাধারন একটা ' CULT CLASSIC', আমিও রিভিউ পরে টরে ভাবলাম পরেই দেখি ,কিন্তু সত্যি বলছি যাদের রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভষণ, তারাশঙ্কর, মানিক, শঙ্কর, সমরেশ বসু, বুদ্ধদেব বসু, সরদিন্দু, শীর্ষেন্দু, সুচিত্রাভটটাচার্য,নবনীতাদেবসেন,সুকুমার,লীলা , পরে বাংলা সাহিত্যে হাতেখড়ি তাদের কাছে এই বই মূর্তিমান বিভীষিকা। অনেকে বলবে যে এটা নাকি আধুনিক সাহিত্য তাই অন্যরকম, কিন্তু আমার মতে এটা সাহিত্যেই নয়।।
বই টা পড়তে গিয়ে এত গা ঘিনঘন করেছে যে আর সাহস করে শেষ করা হয়নি ,তাও ৫০০ পাতা মত পড়েছি,কি আর বলবো । প্রতিটা চরিত্র এত বাজে , মেয়েগুলো সবকটাই একেবারে ডাকসাইটে সুন্দরী,ছেলেগুলো সবকটাই সুপুরুষ, কারুর জীবনেই প্রেম করা আর ব্রেকআপ করা ছাড়া কোনো কাজ নেই ,তিথি নামের মেয়েটির চরিত্র অত্যন্ত বিরক্তিকর , আর মেয়েদেরকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিও কি বাজে ছেলেগুলোর, আর সর্বোপরি ভাষা , তবে কলকাতার ছেলে মেয়েদের মুখের ভাষা হয়তো এরকমই ,এদিক থেকে এক রকম ঠিকই আছে ...কিন্তু তাও বলবো একটা লেখা যখন ছেপে বই হয়ে বেরোচ্ছে তখন টা ছোট বড় সবার কাছেই পৌঁছচ্ছে তাই যাদের মুখের ভাষা এখনও এরকম ঘিনঘিনে হয়ে যায়নি তাদের অন্তত যেনো না হয় সেদিকে একটু খেয়াল রেখে লেখা উচিৎ ,কারণ সাহিত্য যেমন সমাজের দর্পণ সেরকম সমাজ তৈরিও হয় সাহিত্য এর ওপর । আর যাদের এই বই পড়ে মনে হয়েছে যে জীবন সার্থক তাদের একটা বড় নমস্কার।
কিছু তরুণ তরুণীর জীবনের থেকে তুলে নেওয়া চোদ্দো মাস এই উপন্যাসের সময়কাল। জীবনের অনেক টানাপোড়ন সহ্য করেও প্রত্যেকে নিজের ভেতরে টের পায় এক অজানা টান। টের পায় এক পাল্টা হওয়া। যে যার মতো ঘুরে দাঁড়াতে চায়। কাহিনির পরতে পরতে এই তরুণ তরুণীদের সঙ্গে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলো-মাটির মতো জড়িয়ে থাকে কল্লোলিনী কলকাতা। গৃহীত- পাল্টা হাওয়া লেখক- স্মরণজিৎ চক্রবর্তী.....
এখনকার সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটি একটি যুগোপযোগী রচনা।এই গল্পটিতে লেখক সুন্দরভাবে প্রত্যেকটি চরিত্রের সঙ্গে প্রত্যেকটি চরিত্রের এক সংযোগ ফুটিয়ে তুলেছেন যেটা পড়তে পড়তে আপনারা বুঝতে পারবেন যে গল্পের মোড়টি কোথায় ঘুরে যাচ্ছে। অনেক চরিত্র কিন্তু তবু পড়তে পড়তে একবারও মনে হয়নি যে ঘেঁটে যাচ্ছে পুরো ব্যাপারটা। পড়তে পড়তে কখন আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন তা বুঝতেও পারবেন না ।
✨📖উপন্যাসের নাম - পাল্টাহাওয়া📖✨ ✍️লেখক - স্মরণজিৎ চক্রবর্তী 🎉প্রকাশিত - আনন্দ পাবলিশার্স 💰মূল্য - 500₹ 📖পৃষ্ঠা সংখ্যা - 665
💫📚কিছু তরুণ - তরুণীর জীবনের থেকে তুলে নেওয়া চোদ্দো মাস এই উপন্যাসের সময়কাল । জীবনের অনেক টানাপোড়েন সহ্য করেও প্রত্যেকে নিজের ভেতরে টের পায় এক অজানা টান । টের পায় এক পাল্টা হাওয়া । যে যার মতো ঘুরে দাঁড়াতে চায় । কাহিনির পরতে পরতে এই তরুণ - তরুণীদের সঙ্গে রোদ - বৃষ্টি আর ধুলো - মাটির মতো জড়িয়ে থাকে কল্লোলিনী কলকাতা ।📚💫
💫📚কিছু তরুণ - তরুণীর জীবনের থেকে তুলে নেওয়া চোদ্দো মাস এই উপন্যাসের সময়কাল । শহর এর পটভূমি । হাইরাইজার , মাস্টিক অ্যাসফল্ট , শপিংমল আর জমজমাট ট্রাফিকের মাঝে পাক খাওয়া ফুলের হারানো গন্ধ , বন্ধুর হাত , বাঁশিওলার সুর আর অগণিত রোজকার মানুষ এর অন্বেষণ । উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করা রীপ আর তিথি , অ্যাথলিট পুষ্পল , উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাই , রয়েছে মনমরা পুলু , বিদেশ যেতে না পারা শাক্য , অভিমানী মৌনিকা বা মুখার্জি বাড়িতে কাজ করা ছেলে বাটু । আলাদা আলাদা হলেও যেন কোথাও এরা এক কোথাও যেন সবাই বন্ধ , সবাই নিরুপায় । ক্রমশ বদলের হাওয়া লাগে । ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে থাকে এদের জীবন । একজনের বেঁচে থাকা ক্রমশ জড়িয়ে যেতে থাকে অন্যের বেঁচে থাকার সঙ্গে । রীপের একাকিত্বে ঢুকে পড়তে চায় তিথি । পুষ্পলের দৌড় ট্র্যাক ছাড়িয়ে ঢুকে পড়ে জীবনে । সামান্য সময়ের জন্য হলেও এরোপ্লেন বাটুকে ভুলিয়ে দেয় ওর দারিদ্র্য । মৌনিকার মোবাইলে মধ্যরাতে বেজে ওঠে পুরনো কবিতা । বাবা মায়ের সম্পর্কের মাঝে পুলু দেখতে পায় গভীর শূন্যতা । এই সমস্ত ভাঙচুর সহ্য করেও প্রত্যেকে নিজের ভেতরে টের পায় এক অজানা টান । টের পায় এক পাল্টা হাওয়া । যে যার মতো ঘুরে দাড়াতে চায় । কাহিনির পরতে পরতে এই তরুণ - তরুণীদের সঙ্গে রোদ - বৃষ্টি আর ধুলো - মাটির মতো জড়িয়ে থাকে কল্লোলিনী কলকাতা ।📚💫
I don't know what to say! I myself can't figure out what is so extraordinary about the book that kept me so captivated while reading it....I forgot everything and was busy finishing the book. But the plot of the book is very simple... that's the magic of smaranjit chakraborty. After reading the book, you will feel that even though the world is vast, how limited our boundaries are... What an amazing book!
বইটার নাম চক্র হলে সম্ভবত বেশি ভালো হতো। চক্রের মত চক্রাকার চার বন্ধুর গল্প রীপ, আয়ান, পুষ্পল আর শাক্য। চার জনার চার রকমের গল্প দিয়ে বিশাল সাইজের এই বইটা। সাথে প্রচুর চরিত্র আর গল্প মিলে সম্পূর্ণ বইটা এক চরিত্রের সাথে আরেক চরিত্র জড়িয়ে আছে। অতি আধুনিক ধাঁচে গল্প গুলো এগিয়ে গেছে। প্রচুর বড়দের কথাবার্তা ও তাদের জীবন নিয়ে পড়তে পড়তে হারিয়ে যাবেন একটা চক্রে।
It has the common briliant feature of all Smaranjit Chakrabarty's books - the story starts with multiple dispersed characters and then eventually they are glued with one another. Every character of this book has been portrayed very nicely and precisely. A very good read. ❤️❤️❤️