Jump to ratings and reviews
Rate this book

আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম

Rate this book
১৯৭১ ছিলো ১৯৪৭-এর সংশোধন; আমরা ওই বছর মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। আমাদের অজস্র স্বপ্ন ছিলো—গণতন্ত্রের, সমাজতন্ত্রের, ধর্মনিরপেক্ষতার, বাঙালিত্বের, এবং সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতার। আমরা কোনো স্বপ্নকেই সফল করতে পারি নি। হত্যা করা হয়েছে বাঙলাদেশের স্থপতিকে, রক্তের বন্যা বয়ে গেছে; সামরিক স্বৈরাচারীরা এসে দেশকে পর্যুদস্ত করেছে। বর্তমানে বাঙলাদেশ বাস করছে ভয়াবহ মেঘমালার নিচে। হুমায়ুন আজাদ একান্ত ব্যক্তিগত ভঙ্গি ও ভাষায় বর্ণনা করেছেন বাঙলাদেশের বিপর্যয়ের ইতিবৃত্ত, লিখেছেন একটি বেতনাহত বই। এ-বই বাঙলাদেশের দেহ ও হৃদয়ের অপার বেদনার প্রকাশ;—হাহাকার নয় নিঃশব্দ রোদন।

120 pages, Paperback

First published February 1, 2003

16 people are currently reading
285 people want to read

About the author

Humayun Azad

85 books296 followers
Humayun Azad (Bangla: হুমায়ূন আজাদ) was a Bangladeshi author and scholar. He earned BA degree in Bengali language and literature from University of Dhaka. He obtained his PhD in linguistics from the University of Edinburgh in 1976. He later served as a faculty member of the department of Bengali language and literature at the University of Dhaka. His early career produced works on Bengali linguistics, notably syntax. He was regarded as a leading linguist of the Bangla language.

Towards the end of 1980s, he started to write newspaper column focusing on contemporary socio-political issues. Through his writings of 1990s, he established himself as a freethinker and appeared to be an agnostic. In his works, he openly criticized religious extremism, as well as Islam. In 1992 Professor Azad published the first comprehensive feminist book in Bangla titled Naari (Woman), largely akin to The Second Sex by Simone de Beauvoir in contents and ideas.

The literary career of Humayun Azad started with poetry. However, his poems did not show any notable poetic fervour. On the other hand his literary essays, particularly those based on original research, carried significant value.

He earned a formidable reputation as a newspaper columnist towards the end of 1980s. His articles were merciless attacks on social and political injustice, hypocrisy and corruption. He was uncowed in protesting military rule. He started to write novels in 1990s. His novel Chappanno Hazar Borgomile is a powerful novel written against military dictatorship. Azad's writings indicate his distaste for corrupt politicians, abusive military rulers and fundamentalist Islam. Nevertheless, his prose shows a well-knit and compact style of his own. His formation of a sentence, choice of words and syntax are very characteristic of him. Although he often fell victim to the temptation of using fiction as a vehicle of conspicuous political and philosophical message, he distinguished himself with his unique style and diction.

On August 11, 2004, Professor Azad was found dead in his apartment in Munich, Germany, where he had arrived a week earlier to conduct research on the nineteenth century German romantic poet Heinrich Heine. He was buried in Rarhikhal, his village home in Bangladesh.

In 2012, the Government of Bangladesh honored him with Ekushey Padak posthumously. Besides this, he was honored with Bangla Academy Award in 1986.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
114 (45%)
4 stars
96 (38%)
3 stars
32 (12%)
2 stars
3 (1%)
1 star
3 (1%)
Displaying 1 - 30 of 38 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
January 2, 2023
ছোট্ট একটা বই কিন্তু ভয়ংকর। আজাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সীমাবদ্ধতা আছে কিছু ক্ষেত্রে কিন্তু বাংলাদেশের রক্তাক্ত ইতিহাস আর ক্রমাগত পতনের গল্প এমন তীব্র, তীক্ষ্ণ, শ্লেষাত্মক, শিউরে ওঠার মতো গদ্যভাষায় লিখতে পেরেছেন আর কয়জন? ইতিহাস তো না, এ যেন এক হরর গল্প যেখানে আমরা নিজেরাই ঢুকে বসে আছি।এখন লিখলে আজাদ হয়তো এর নাম রাখতেন "অনাগত শিশুর জন্য শোকগাথা।" এ শোকগাথার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। যতো দিন যাচ্ছে ততো গাঢ় হচ্ছে অন্ধকার। ২০০৩ সালে প্রকাশিত এ বইয়ের শুরুতেই আজাদ লিখেছিলেন,

"এতো বদ্ধ অবস্থায়, এমন কারাগারে, এমন বন্দীশিবিরে আমি আগে কখনো বাস করি নি- একাত্তরেও নয়, সেটি ছিলো মুক্তির বছর, বিদেশি খুনিদের দিয়ে আক্রান্ত থেকেও আমরা মুক্ত ছিলাম । এভাবে আমার দম আগে কখনো বন্ধ হয়ে আসে নি।....সুড়ঙ্গের পরপারে এখানে কোনো আশার আলো দেখি না।"

এখন বেঁচে থাকলে আজাদ কি এই বইটা লিখতে পারতেন?অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস কি এখনো থাকতো তার? খুব জানতে ইচ্ছে হয় মাঝেমধ্যে।
Profile Image for Mosharaf Hossain.
128 reviews99 followers
August 23, 2016
প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ন আজাদের এই এক অনবদ্য রচনা। স্বাধীনতার পর থেকে কীভাবে এই দেশ হায়নাদের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, লেখক বলেছেন তাদের। লেখক তার লেখায় কোন প্রত্যাশার বানী শোনায় নি, করেননি কোন অভিযোগ। লেখক স্রেফ ধুয়ে দিয়েছেন সবাইকে। কাউকে বাদ দেয়নি, মহানয়ক থেকে শুরু করে ইতর প্লেবয় কিংবা কোদালবিপ্লবী কেউ বাদ যায়নি।

লেখক প্রকাশ করেছেন হতাশা, আর রেখেছেন কিছু প্রশ্ন,
"বিংশ শতক থেকে ঠিক কতটা পিছিয়ে গেলে মানুষ একবিংশ শতকে পৌঁছোয়?"

স্বাধীন বাংলাদেশ ক্রমশ হয়ে উঠছে একটি নির্মম হাজত।
এই অবস্হায় আমি কি করে বটছায়াতলে বসে ধ্যান করি?
শুধু হাহাকার জাগে: আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
এইকি আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ, সোনার বাংলা?

এই মানবাধিকারহীন বন্দীশিবির? এই কুস্ঠাগার? এই ভাগাড়? এই নরক? এই ডাকাতপল্লী? এই দুষিত ডোবা? এই দুর্বৃত্তকবলিত চর?

মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, মানবাধিকারই হয়ে উঠেছে রাস্ট্রের কাছে সব চেয়ে আপত্তিকর, শিল্পকলা তো এখন ময়লায় পরিনত হয়েছে।
এমন বদ্ধ অবস্হায়, এমন কারাগারে, এমন বন্দিশিবিরে আমি আগে কখনো বাস করিনি- একাত্তুরেও নয়, সেটি ছিল মুক্তির বছর।"
Profile Image for Shuvo.
84 reviews3 followers
July 27, 2024
আমি হুমায়ুন আজাদের সমালোচনা করতে পারি। তার নৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, সীমাবদ্ধতা, চিন্তাচেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারি। কথায় কথায় আমেরিকাকে আইডোলাইজ করার তার যে মনোভাব, সেটার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারি।

কিন্তু আমি তাকে অস্বীকার করতে পারি না।
আমাদের একজন হুমায়ুন আজাদ ছিলেন, যিনি হলুদকে হলুদ মনে করলে অক্লেশে হলুদই লেখতেন, লেখতে পারতেন। আমি তার নিজের কথা অকপটে সোজা ভাষায় স্পষ্ট করে বলার যে ক্ষমতা, এটাকে ঈর্ষা করি, ভালোবাসি।

বইটা রচনার করার প্রেক্ষাপট ২০০৩, তখন বিএনপি-জামাতের শাসনামল চলছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় হতে সেই সময় পর্যন্ত যা কিছু দেখেছেন, পর্যবেক্ষণ করেছেন সবকিছু অকপটে বলেছেন। তিনি একনায়কতন্ত্র দেখেছেন , স্বৈরতন্ত্র দেখেছেন, গণতন্ত্রের নামে প্রহসন সবকিছু দেখেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রকে মূলমন্ত্র ধরে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে গড়ে ওঠা এক নতুন দেশকে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে দেখেছেন।
সবকিছুই বর্ণনা করেছেন একটা আশাহীন, ব্যর্থ , হতাশ কণ্ঠে।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে দাড়িয়ে তার লেখা পড়তে গিয়ে, নিজেকে বারবার প্রশ্ন করতে বাধ্য হয়েছি, এতবছরে আমাদের অবস্থার কি আদৌও কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষালাভ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর আমরা বারবার ইতিহাসকে তুড়ি মেরে সাইডে রেখে পশ্চাৎ গমন করছি। এ কারণেই বোধহয় সেই একইরকম ভয়ঙ্কর, ক্রান্তিকালীন সময় আমাদের কিছুকাল পরপর আক্রান্ত করে।
Profile Image for Abid.
135 reviews23 followers
December 19, 2025
যুগে যুগে হুমায়ুন আজাদরা বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন। যখন দেখি, তৌহিদি জনতার ব্যানারে একজন নারী নিপীড়ককে কুরআন হাতে দিয়ে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়, যখন ডিসেম্বরের এক তারিখে ভরা মজলিসে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়া হয়, যখন ছায়ানটে ভাঙচুর চালানো হয়- সেই হারমোনিয়াম আর সেতার ভাঙা হয় যা দিয়ে একটা ছয় বছরের পবিত্রতম নিষ্পাপ শিশু তার গলায় প্রথম সুর ভাজে। এভাবেই, বারবার ফিরে আসে একই দুরূহ সময় আর সাথে নিয়ে আসে আজাদের প্রাসঙ্গিকতা।
Profile Image for Aishwarja.
6 reviews
January 7, 2025
“বাংলাদেশে মজার ব্যাপার হলো রক্ত দেয় সাধারণের আর সুবিধা ভোগ করে অসাধারণেরা” ।

হুমায়ুন আজাদের মতন সাহসী, শক্তিশালী লেখক বাংলাদেশ হয়তো আর পাবে না। অসৎ নোংরা কালে সাহসী মানুষেরও উদ্ভব হয় না। হুমায়ুন আজাদ বেঁচে থাকার কালেই লিখেছিলেন - ‘আমি জন্মেছিলাম অন্যদের সময়ে’ ।

ভীষণ নিরপেক্ষ, নির্মোহ এক সমালোচনা গ্রন্থ। ২২ বছর আগে লেখায় বলেছেন ৪২ বছরের একনায়কত্ব আর বাঙালির অসহায়ত্বের ইতিহাস। বইটি যেনো বর্তমানের প্রতিচ্ছবি। তাই দীর্ঘশ্বাসের সাথে আজো প্রতিদিন কোনো না কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অজান্তেই বেরিয়ে আসে “ আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?” পরিস্থিতি এখনো বদলায় নি। বরং বইয়ে বলা কথাগুলো অনুযায়ী দিনকে দিন পরিস্থিতি আরো দুর্বিষহ হচ্ছে । সুদিন হয়তো আসবে। কিন্তু কবে?
Profile Image for Jesan.
141 reviews5 followers
April 23, 2021
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ যে চারটি মূল নীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র,গনতন্ত্র ও ধর্মনিরেপক্ষতা এর উপর ভিত্তি করে তৈরী, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ সেই নীতিগুলো নষ্ট করে ফেলেছে।জাতীয়তাবাদের অপপ্রয়োগ যুদ্ধ শেষ হতেই শুরু হয়,সমাজতন্ত্রর বৈশিষ্ট্যও নষ্ট হয়।গনতন্ত্র কোমায় থাকলেও আস্তে ধীরে ৭৩ এর নির্বাচনে এর মৃত্যু ঘটে।ধর্মনিরেপক্ষতা আস্তে ধীরে কিছুটা আগালেও জিয়া শাসনামলে শয্যাশায়ী হয় আর মৃত্যু হয় এরশাদ আমলে। হয়তো মনে হতে পারে এরশাদ পতনের পর গনতন্ত্র আবার পুনরুদ্ধার হয়েছে কিন্তু আসলে কিছুরই পরিবর্তন ঘটেনি।ক্ষমতার খালি পালাবদল হয়েছে দেশের দুই বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দলের মধ্যে।এখন চারটি মূলনীতি শুধু নামেই আছে,বাস্তবে এর প্রয়োগ নাই আর অবাস্তব।মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পূর্ণ রুপ যে তখনো পাওয়া যায় নি(লেখাটা বিএনপি আমলে) সেটা লেখক দেখিয়েছেন।অবশ্য এ আমলে আসলে হয়তো আবার এই বই এর সেকেন্ড পার্ট বের করে আওয়ামী অধিক খারাপ বানাই দিতেন যেমনটা এই বই এ বিএনপিকে তুলোধনা করেছেন, আওয়ামীর থেকে বেশি খারাপ বলেছেন।নাহ���ে জাফর স্যার হতেন😶
Profile Image for Mohiuddin Imran.
13 reviews9 followers
December 20, 2017
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাস নিয়ে সচরাচরই আমার আগ্রহ প্রবল। ছোটবেলা থেকেই 'একাত্তর', 'স্বাধীনতা', 'বিজয়', 'বিএনপি', 'আওয়ামী লীগ'- এই কয়টা মুখস্থ শব্দই কেবল হড়বড় করে বলতে শুনেছি মানুষের মুখে। বিএনপি এলে জিয়া ঈশ্বর, আওয়ামী এলে মুজিব সর্বময়- এই হল আমাদের প্রজন্মের সবকটা হরিণশাবকের জ্ঞান। ৭১ থেকে ৯১ পর্যন্ত ইতিহাসটা ঠিক করে বলতে পারেনি কেউই। স্বাধীনতার মতন এত বড় একটা ঘটনার পর ২০ টা বছর হাওয়া হয়ে যাবে- এটা কেমন কথা? বয়স হলে তাই চিন্তা হল- জানতে হবে ইতিহাসটা। যেই দেশে জন্মালাম, বড় হলাম, দাবড়ে বেড়ালাম- সেই দেশের সত্য ইতিহাস জানা একরকম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অতীত না জেনে মুখে মুখে দেশপ্রেম দেখিয়ে কেবল শাহবাগে গলা ফাটিয়ে ছাগশিশু হয়ে থাকতে গায়ে লাগত খুব। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল করা গাদাখানেক বন্ধুবান্ধব আমার। কিন্তু তাদের জ্ঞানের বহর(!) দেখে বুঝলাম কি সুকৌশলে নিজের অতীত ইতিহাসটাকে বাইপাস করে অন্ধবিশ্বাসে ফাঁকা ময়দানে ন্যাংটা দৌড়ে বেড়াচ্ছে আজকের শিক্ষিত বেকুবসমাজ। কি সার্কাস! একটা পুরো দেশের নাড়ি-নক্ষত্র সর্বত্র সার্কাস। এই সার্কাসের মাঝেও কিছু মানুষ জন্মে অল্প সময়ের জন্য। তাদের জন্মের উদ্দেশ্য থাকে ইতিহাসের স্থানচ্যুত ক্রোনোলজিকে জায়গামত বসিয়ে যাওয়া। হুমায়ুন আজাদ এমন একজন। অনেকদিনের একটা না জানার হাহাকার পূরণ করে গেলেন তিনি। যাদের নিজেদের অতীত নিয়ে অল্পবিস্তর জানার ইচ্ছা, তারা দয়া করে পড়ে ফেলবেন বইটা। এই দমবন্ধ দলাদলি, খুনোখুনির সময়ে এমন একটা লেখা লিখে যেতে পারা অনেক বড় ব্যাপার। আরো দুটো বই থাকুক রিকমেন্ডেশনেঃ

১. সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ- সুহান রিজওয়ান
২. ক্রাচের কর্ণেল

বইদুটো এটার মতন নিউট্রাল না মোটেও। তবু ইচ্ছা থাকলে ছেঁড়া ছেঁড়া গল্প নিয়ে দুয়ে দুয়ে চার মেলানো কঠিন কি হওয়া উচিৎ খুব?
Profile Image for Shoroli Shilon.
164 reviews71 followers
September 20, 2024
কোন এক সময় জেনেছিলাম, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’। তখন এই কথাটার মর্মোদ্ধার করতে পারলে হয়তো বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসে এতটা অবাক হতাম না।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় কাটে শঙ্কায়, হতাশায়। রাজনৈতিক নেতাদের দলীয় কোন্দল, স্বেচ্ছাচারিতা আর চরম দুঃশাসনের পর একটা দলে নেমে আসে ধ্বস। এর রেশ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় জলপাই বাহিনীর সামরিক ব্যাকরণ চর্চা। একের পর এক একনায়কতন্ত্রে তলিয়ে যেতে থাকে সমগ্র দেশ।

হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” শিরোনামের অল্প পৃষ্ঠার এই বইটাতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালের সেইসব ভয়ংকর চিত্র। রাজনৈতিক বিরোধ, ধর্ম ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উগ্রতা এবং ইতিহাসের সব কঠিন সময়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।

শুধুমাত্র লেখকের কিছু ব্যাপারে দ্বিমত এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে সীমাবদ্ধতা ছাড়া রাজনীতির ইতিহাসের ধারণা পেতে এই বইটি বেশ ভালো। তিনি কোন ধর্মে বিশ্বাসী কিংবা অবিশ্বাসী সেটা আলোচনার বিষয় নয় কিন্তু তার ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব একটু বেশিই চোখে পড়ার মতন। তবে বইয়ের প্রতিটা লাইন খুব তীক্ষ্ণ! এমন তীব্র ক্ষোভ আর নগ্ন সত্যকে সাবলীল গদ্যে প্রকাশ করতে পারাটা খুব একটা সহজ নয়।

আমরা কেমন বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম তাতে কি বিতর্কের শেষ আছে? আমরা চেয়েছিলাম স্বাধীনতা। যেটা নামেমাত্র নয়; আমরা চেয়েছিলাম একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, আমরা চেয়েছিলাম গণতন্ত্র। যার বিনিময়ে প্রাণ দিয়েছিল সাধারণেরা আর ফায়দা লুটেছে অসাধারণেরা।

২০২৪ এর ৫ আগস্টের স্বাধীনতার পেছনে যে বর্বরতার দৃশ্য রয়েছে তা অনেকটাই পর্দার আড়ালে। বাড়তি কথা হিসেবে কেউ কেউ দু'য়েকবার ঘর পোড়া সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ টানে, কথা ওখানেই ফুরায়। এ বই পড়ে তেমন স্মৃতিচারণাও হলো। বহুবার স্বাধীন হয়েছে এ দেশ, কেবল সংস্কার হয়নি মানুষের। ক্ষমতা পেলেই কেবল আসল রুপে বেরিয়ে আসে তারা।
Profile Image for Shakil Mahmud.
90 reviews40 followers
June 21, 2020
'৭১ থেকে ২০০২ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর নির্ভেজাল বিবরণ। বইটা পড়ার সময় আজাদকে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের দিকে পক্ষপাতিত্ব করতে দেখিনি। এজন্যই আরো বেশি ভালো লেগেছে বইটা।

সে প্রত্যেক রাজনীতিবিদদের ই তাদের যার যার কৃতকর্ম অনুসারে ইচ্ছামত সমালোচনা (সমালোচনা না বলে ধুয়ে দিয়েছে বললেই বেটার :D) করেছে।
'৭১ পরবর্তী মুজিব থেকে জিয়া হয়ে এরশাদ হয়ে খালেদা('৯১), হাসিনা('৯৬) এবং খালেদা (২০০১) পর্যন্ত কাউকেই সে ছাড় দেয় নাই। বিশেষ করে এরশাদ সাহেবের চ্যাপ্টারে উনাকে আজাদ যেভাবে ধুয়ে দিয়েছে সেটা অত্যন্ত সুখপাঠ্য এবং প্রশংসার যোগ্য। কিছু কিছু জায়গায় হাসি আটকে রাখা দায় হয়ে পড়েছিল।

সমালোচনা টাইপের লিখায় আজাদ বরাবরই আমার মোস্ট ফেভারিট। এই বইতেও সে বরাবরের মতোই টপ নচ।

ওভারল, দিস ইস এ রিয়েলি ওয়াইল্ড রাইড। হাইলি রিকমেন্ডেড।
Profile Image for Abdul Ahad.
58 reviews4 followers
July 28, 2024
০১.
আমি যখন এই বইটি সম্পর্কে কিছু লেখব বলে মনস্থির করেছি এবং যে মূহুর্তে কলম নিয়ে কথাগুলো লিখছি— তখন সময়টা ও দিনটা বহুল তাৎপর্যপূর্ণ। আজ বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী।
সত্যই আমরা তবে পঞ্চাশ বছরে পা রেখেছি?
একটু আশ্চর্য, বিস্ময়, অবিশ্বাস আর উত্তেজনার মিশ্রণে আমার ভেতরে যে আনন্দস্রোত বয়ে চলছে ঠিক সে মূহুর্তে 'আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম' বইটা সম্পর্কে লিখতে বসা হয়ত নিজের কাছেই বেশ বেমানান।
তবু কেন লিখতে বসেছি?
হয়ত আজ বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর।
হয়ত না চাইতেও মনের অন্দরমহলে ঠিক এই প্রশ্নটাই উঁকি দিচ্ছে যে, পঞ্চাশ বছরে তো পা দিল বাংলাদেশ; আমরা বা আমি নিজেই কি এই বাংলাদেশ চাই, চেয়েছি, চাইছি?

বইটির লেখক 'হুমায়ুন আজাদ'। নামের আগে অবশ্য কুখ্যাত অথবা বিখ্যাত বিশেষণের কমতি নেই। নিন্দুকেরা তাঁর বই ছেড়ে ব্যক্তিকে যতটা তুলোধুনা করেন, অনুরাগীরা অনেকটা বিপরীতরকম বই রেখে ব্যক্তির বন্দনায় মেতে উঠতেই অধিক পছন্দ করেন। সুতরাং, উভয় পক্ষের মধ্যে একটা রেষারেষির ভাব বিদ্যমান। তবে হুমায়ুন আজাদ কে বা কেমন তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুমায়ুন আজাদ কী লিখেছেন অথবা তাঁর লেখায় কী বলতে চেয়েছেন। আমি অন্তত্য ছাপার আকারে তাঁর লেখার চিন্তাভাবনাগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারি; কেননা আমার মনে হয় লেখাটাই মূখ্য, লেখক নন।

০২.
'আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম' বইয়ে হুমায়ুন আজাদ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্রের সঙ্গে স্বাধীনতা পূর্ববতী গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার, চাওয়া-পাওয়ার, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির স্বপ্নকে কীভাবে ক্ষমতা ও শাসকরা পদদলিত করে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিয়েছিল; এবং এখনও সেই মনোভাব কীভাবে শাসকশ্রেণির মধ্যে বিরাজমান সেই কথকথাই তিনি বইয়ে তুলে ধরেছেন। হুমায়ুন আজাদ বইটি ���িখেছেন আজ থেকে আঠারো বছর পূর্বে–২০০৩ সালের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে–স্বাধীনতার তখন ৩২ বছর, দেশের শাসন ক্ষমতায় বিএনপি। '৭২ থেকে '৭৫ পর্যন্ত মুজিব শাসন, তারপর সামরিক শাসকদের কবলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, আর স্বপ্ন যখন লাঞ্চিত, অবমানিত, বাকরুদ্ধ— তখন বেঁচে থাকা ছোটো নিঃশ্বাসের মধ্যে লেখকের একটাই প্রশ্ন: 'আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম।'

মুজিব শাসনের সফলতা ও ব্যর্থতা এবং ঘাতকদের হত্যাযজ্ঞ, জিয়ার নাটকীয় উত্থান পতন, এরশাদের স্বৈরাচার, প্রধান বিচারপতিদের ন্যাক্কারজনক পদলেহন, '৯০ এর গণআন্দোলনের এই দীর্ঘ রক্তার্ত পথ অতিক্রম করে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আশা করেছিল জনগণ— সেই আশাই অচিরে যখন দুরাশা, হতাশা, আক্ষেপ আর ক্ষোভে পরিণত হয়েছে; পূর্বের মতো স্বপ্নের বাংলাদেশ কাচ ভাঙার মতো সশব্দে ভেঙে গিয়েছে, বেঁচে থাকা এই দূর্বিষহ দূষিত নিঃশ্বাসের মধ্যে হুমায়ুন আজাদ একটাই প্রশ্ন ছুড়েছেন: 'আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম।'

০৩.
১৯৭১ সালে যে শেখ মুজিবের আহ্বানে ও নেতৃত্ত্বে আমারা বর্বর, শোষক আর নিপীড়ক পাকিস্তানির বিরুদ্ধে সোনালি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে নেমেছিলাম, হুমায়ুন আজাদের নিজস্ব ভাষায়– "...মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাই ছিল মুজিবের দ্বিতীয় সত্তা...।" সেই শেখ মুজিবকে '৭২ পরবর্তী কার্যকালাপের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও দ্বিধাহীন কণ্ঠে তাঁর সমালোচনা করতে বইয়ের পাতায় লেখক সামন্যতম কুণ্ঠাবোধ করেননি।
'৭২ এর পর সুবিধাবাদীদের আক্রমণে, পূজারীদের স্তবের পুষ্পতে, স্বার্থপর আওয়ামি নেতাদের এবং ক্ষতিকর আত্মীয়বর্গের কর্মকাণ্ডে মুজিব জনতার সম্মানের মসনদ থেকে ক্রমশ খসে পড়তে থাকেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে হুমায়ুন আজাদের ভাষায়— "...বাঙলাদেশ স্বাধীন, মুক্ত কিন্তু হয়ে ওঠে ঘাতকদের শিকার...।"
মুজিবও একসময় সেইসব ঘাতকদের শিকার হন।
হুমায়ুন আজাদ আরেক জায়গায় লিখেছেন: "...মুজিব পরিবৃত্ত ছিলেন দুষ্টু রাজনৈতিক, বিশ্বাসঘাতক ও স্তাবকদের দ্বারা, স্বার্থপরতা আর কৃতঘ্নতা ছাড়া যাদের আর কোনো প্রতিভা ছিল না...।"
'৭৩ এর নির্বাচন ও সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীই কি জনতার মঞ্চ থেকে মুজিবকে আরেক ধাপ নিচে নামিয়ে দিয়েছিল? সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে মুজিব কি সত্যই নিজের আত্মহত্যা করেছিলেন? চতুর্থ সংশোধনীই কি হয়ে ওঠেছিল মুজিবের ঘাতকদের মাঝে একজন? হুমায়ুন আজাদের নিজের মন্তব্যে ও ঘটনাসমূহের বিশ্লেষণের মধ্যদিয়ে পাঠকরা বইয়ের পাতায় সেসবের উত্তর পাবেন। মুজিবের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধন নিয়ে হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন: '...১৯৭২-এ মুজিবের নেতৃত্বে প্রণীত হয় একটি অসাধারণ সংবিধান; কিন্তু ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারিতে তাঁরই হাতে নিহত হয় তার অসামান্য সংবিধান...।'

কী এমন ছিল চতুর্থ সংশোধনীতে? এরপর মুজিব আর বেশিদিন বাঁচেননি। কিন্তু কেন?
তবে কি মুজিবের কার্যকালাপ সমন্ধে মানুষের ধারণা ক্রমশ অসচ্ছ্ব হয়ে উঠেছিল?
এর উত্তর কি আছে হুমায়ুন আজাদের বইয়ে?

বইয়ে '৭২ থেকে '৭৫ পর্যন্ত মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের বিস্তারিত ইতিহাস না পেলেও লেখক যেভাবে ঐ সময়টুকুয় মুজিবের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলি অসামন্য দক্ষতায় বিশ্লেষণ করেছেন তা চমকপ্রদ।
কিন্তু মুজিব হত্যাকাণ্ড কি প্রত্যাশিত?
''...মুজিবের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস ও অভাবিত হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। সবচেয়ে বিশাল ও ভারি যে লাশটি বাঙলাদেশ নিজের কবরে বয়ে চলছে সেটি মুজিবের লাশ...।''
হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন মুজিবকে মনে পড়লে তাঁর জুলিয়াস সিজারের কথা স্মরণ হয়। হয়ত এজন্য হুমায়ুন আজাদ আক্ষেপ করে লিখেছেন:
''...সিজারের আন্তোনি ছিল, মুজিবের কোনো আন্তোনি ছিল না, মুজিবের ছিল একদল নির্বিবেক স্বার্থপর বিশ্বাসঘাতক...।' হুমায়ুন আজাদ আরেক জায়গায় মন্তব্য করেছেন:
''...সিজারের ঘাতকরা ছিল গণতান্ত্রিক আদর্শবাদী...।''

মুজিবের ঘাতকরাও কি তাই ছিল?

০৪.
মুজিব কি বাংলাদেশের জন্য ভালো কাজ করে যাননি?

উত্তরে হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন:
''...ভালো কাজগুলো মানুষকে মুহুর্তের মধ্য ভালো কিছু এনে দেয় না, দেয় দেরিতে; কিন্তু খারাপ কাজগুলো মুহুর্তে মানুষকে আক্রান্ত করে...।''

''...মুজিবের বেলাও তাই ঘটেছে, জনগণ তার ভালো কাজগুলোর কথা ভুলে গেছে; জনগণ বুঝতে পারেনি ওগুলো ভালো কাজ...।''

মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর কেমন ছিল বাংলাদেশ?
কেমন ছিল মুজিবের সোনার বাংলার স্বাধীন মানুষদের প্রতিক্রিয়া?
সেই ঘৃণিত, রক্তার্ত আর লজ্জিত সময়ের ইতিহাস তুলে ধরেছেন হুমায়ুন আজাদ। নির্মলেন্দু গুণের 'রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫' শিরোনামে একটি বই আছে, সেই বইটিতেও মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের মানুষ, পরিবেশ আর পরিস্থিতির বর্ণনা পাওয়া যাবে। মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ নামটির সঙ্গে যে 'গণতান্ত্রিক' আর 'স্বাধীন' বিশেষণ ছিল স্বৈরশাসক আর অত্যাচারী নেকড়ে-শকুনদের নখের আচড়ে তারপর থেকে বাংলাদেশ ক্রমশ হয়ে ওঠেছে অগণতান্ত্রিক, পরাধীন আর রক্তার্ত এক উপত্যাকায়।

০৫.
কালুরঘাটের কিংবদন্তি মেজর জিয়া কীভাবে মূহুর্তে নায়ক হয়ে উঠেন– বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে জিয়ার নামটি কীভাবে জড়িয়ে পড়ে–জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশ কীভাবে রক্তার্ত, বস্ত্রহীন আর পদদলিত হতে থাকে; তারই ইতিবৃত্ত হুমায়ুন আজাদ গাঢ় বেদনাহত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন।
''...কেউ কেউ হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ বা মুজিব বা আইনস্টাইন হয়ে উঠতে পারেন না, কিন্তু কেউ কেউ হঠাৎ মেজর জিয়া হয়ে সারাদেশকে আলোড়িত করতে পারেন...কিংবদন্তি সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে মূহুর্তে, আকস্মিকভাবে, ঐতিহাসিক সুযোগে; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বা মুজিব বা আইনস্টাইন হওয়ার জন্য লাগে দীর্ঘ সাধনা...।''
জিয়ার ইতিবৃত্ত, উত্থান পতন, স্বৈরাচার ইত্যাদি নানাদিক হুমায়ুন আজাদের কলমে শুধু ইতিহাস হয়ে আবদ্ধ থাকেনি, প্রত্যেকটি ঘটনা হয়ে উঠেছে বিশ্লেষণধর্মী। বাংলাদেশের আরেক কলঙ্ক এরশাদের আগমন ও নির্গমন—
''...সবকিছুকে সে দূষিত করেছে, কবিতা ও নারীকেও বাদ দেয়নি...।''
৯০ এর আন্দোলনের পর এরশাদের পতন, বিএনপি আওয়ামী পালাবদলের শাসন ক্ষমতার তুলনামূলক পার্থক্য ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সূক্ষ্ম দিকগুলোকেও লেখক তাৎপর্যমণ্ডিত করে তুলেছেন।

০৬.
হুমায়ুন আজাদ তবে কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন? তার উত্তর মিলবে লেখকের এই বইয়েই। তবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যে বাংলাদেশ আমরা অর্জন করেছি হুমায়ুন আজাদের কাছে তার পাশমার্ক হয়ত শূন্য।
হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন: '...তিন দশকেরও বেশি সমযয়ে আমরা এমন এক বাঙলাদেশ সৃষ্টি করেছি, যা বসবাসযোগ্য নয়, যা একটি নর্দমায় পরিণত হয়েছে...।'

বাংলাদেশকে এমন নর্দমায় পরিণত করার দায় কার বা কাদের?
মুজিবের?
মুজিব পরবর্তী স্বৈরশাসক জিয়া-এরশাদের?
বিএনপি-আওয়ামীলিগের?
নাকি এর দায়ভার অনেকটা আমাদেরও?
হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন, '...স্বাধীনতা কোন অলৌকক ব্যাপার নয় যে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে সোনা ঝ'রে ঝ'রে পড়তে থাকবে। আমাদের আকাশ থেকে সোনা ঝ'রে পড়েনি, সোনার বাংলার মাটিও সোনা হয়ে ওঠেনি; সোনা ফলানো কাজ ছিল আমাদের, আমরা তা পারিনি...।'
আমরা কেন পারিনি?
তবে কি আমাদের সোনা ফলানোর মত অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি ছিল না? সোনা ফলানোর মতো মনন কি স্বাধীনতা আমাদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে তৈরি করতে পেরেছিল? যদি স্বাধীনতা অর্জন আমাদের মধ্যে এই মননই তৈরি করতে পারল না তবে কি আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ?
হুমায়ুন আজাদ সারা বইয়েই আক্ষেপ, ক্ষোভ আর হতাশার উচ্চাঙ্গ বাদ্য বাজালেও এই প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন: '....ব্যর্থ স্বাধীনতাও অনেক উৎকৃষ্ট পরাধীনতার থেকে...।'

চরম সত্য, সার্থক এবং শাশ্বত একটি বাক্য!

০৭.
'আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম' বইয়ের শিরোনামে হুমায়ুন আজাদ কোনো বিরামচিহ্ন ব্যবহার করেননি। তিনি হয়ত বাংলাদেশের অধঃপতনে (বা মহাপতনে) এতটাই বিমূঢ়, হতাশ আর অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছিলেন যে বিস্ময় বা প্রশ্নচিহ্নও দিতে চাননি। যদিও বইয়ের ভেতরে সেই একই বাক্যে প্রশ্���চিহ্ন ব্যবহার করেছেন।
সেই বিমূঢ়তায় আচ্ছন্ন হয়ে হুমায়ুন আজাদ নিজেকেই প্রশ্ন করেছেন:
''...আমি কি দুঃখে আছি, কষ্টে আছি, ঘৃণায় আছি; ঘৃণার মধ্যে বেঁচে আছি এবং ঘৃণার মধ্যে থেকে থেকে ম'রে যাবো?...।''

এটা কি শুধু হুমায়ুন আজাদের প্রশ্ন?

আমাদের দেশ যখন আমাদের হতাশ করে, আক্ষেপ জাগায় এবং অবশেষে যখন আমাদের দেশ আমাদের ভেতর আশার বীজ হতে কোনো ধরণের অঙ্কুরেরই জন্ম দিতে পারে না; উপর্যুপরি আমাদের ভেতরে একটা ভাবলেশহীন আত্মার সৃষ্টি করে; সেই ঘোরলাগা শূন্যতায় বাস্তব জীবনের সঙ্গে আমার দেশ কি আমার ভেতরে সেই একই প্রশ্নের দোলা তুলে না?

হুমায়ুন আজাদের মতো এই একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের প্রথমার্ধে দাঁড়িয়েও আমাদের:
''...মনে হয়, ইচ্ছে হয় নির্বাসিত হই, এমন কোনো দেশে গিয়ে ভিক্ষে করে ফিরি, উচ্ছিষ্ট খেয়ে বাঁচি, পথের পাশে পড়ে থাকি, যাতে আমার কখনো মনে না পড়ে যে আমার একটি স্বদেশ ছিল, যার নাম বাঙলাদেশ, যাকে বিশ্বাসঘাতকেরা বলাৎকার ক'রে ক'রে ভেঙেচুরে ফেলেছে...।''

আমাদের যাদের জন্ম একবিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুতে বা তার পাঁচ থেকে কিছু বছর পূর্বে, তাদের হুমায়ুন আজাদের মতো ৩২ বছরের তিক্ত ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে যেতে না হলেও (কিংবা গেলেও সেই স্মৃতি ধোঁয়াশা নয় কি?) তাদের মধ্যে একধরণের রাজনৈতিক বিমুখতা গড়ে ওঠেছে। কিন্তু– তারা জাতীয় স্বার্থে সোচ্চার, প্রতিবাদী এবং সোনা ফলানোর মতো মননশীলতার অধিকারী। রাজনীতিকে ঘিরে রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী বা রাজনীতিবিদরা সাধারণদের মধ্যে ছলে বলে কৌশলে যে কোনো পন্থাতেই হোক— একটা রাজনৈতিক অন্ধতার সৃষ্টি করতে চান, সৃষ্টি করার প্রয়াস চালান এবং তারা সেক্ষেত্রে সার্থকও হন— সেই একই সার্থকতা সৃষ্টি করতে একবিংশ শতাব্দীর তরুণ তরুণীদের কাছে তারা চরম রকম ব্যর্থ।

হুমায়ুন আজাদের মতে একমত হয়ে যদি একই কথা উচ্চারণ করি,
''....এখন সুস্থ থাকা অসম্ভব, দেশটি হয়ে উঠেছে পাগলাগারদ, হিংসা পাগলদের দ্বারা শাসিত। যে-দিকেই তাকাই পাগল দেখতে পাই; মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি সচিব দারোগা ইত্যাদির কথা শুনলে সন্দেহ জাগে.....কবিদের কথা শুনলেও সন্দেহ জাগে, এমনকি পাগলদের কথা শুনলেও সন্দেহ জাগে। সারাটি দেশ এখন পাগল হয়ে উঠেছে, পাগলরা নির্দেশ দিচ্ছে, পাগলরা বিধান দিচ্ছে, পাগল উদ্বোধন করছে, এমন আদিগন্ত ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় সুস্থ থাকা বড়োই অসুস্থতা...।"

হুমায়ুন আজাদের মতো এই একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের চলমান সময়ে দাঁড়িয়েও আমাদের হতাশা লাগে, আক্ষেপ জাগে, দুঃখে ভেতরটা খান খান হয়ে যায়; আমরা যদিও জানি আমরা পুরোপুরি গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে বাস করছি না–এমন বাংলাদেশ যদিও আমরা চাইনি এবং কখনোই চাই না– তারপরেও আমরা স্বপ্ন দেখি, আমরা বিশ্বাস করি— আমরা একটা সোনালি স্বপ্নের সোনালি বাংলাদেশ বাস করবোই। সেদিনটা খুব বেশি দূরে নেই এবং এটা শুধু নিছক স্বপ্ন হয়েই থাকবে না — শুভ্র, সুন্দর এবং সত্য একটি বাস্তবিক অর্জনে পরিণত হবে তার ইতিহাস লেখার জন্য সময়টা শুধু অপেক্ষা করে আছে।

এটাই হবে আমাদের নিজেদের দেশের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন।

১৬-১২-২০২১
Profile Image for শৌণক.
112 reviews17 followers
August 5, 2020
হুমায়ুন আজাদ আমার বেশ পছন্দের একজন লেখক। 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এই বইটা তেমন না। অনেক রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে লেখা বইটা। সুন্দর! ক্রোনলজিকাল অর্ডারে বাঙলাদেশের জন্মের কথা, এক মহানায়কের আবির্ভাবের কথা, ধ্বংস হওয়ার কথা, সামরিক শাসকদের কথা। তাদের পদচুম্বন করে চলা বিচারপতিদের কথা। সামন্ততন্ত্রে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া আমাদের নিরন্তর অসহায়ত্বের কথা।
"ভয়, ভয়, ভয় - এই এখন বাঙলাদেশ"


লেখাটাতে ফুটে থাকা ক্ষোভ এর তীব্রতা যবানিকায়ই টের পাওয়া যায়। বাঙালি মুসলমান হয়ে আমরা প্রগতিশীলতাকে দূরে ঠেলে দিয়েছি, আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের শাসকরা একটা অস্বাভাবিক সুন্দর সংবিধানকে বারেবারে আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে, আমাদের স্বৈরশাসকরা প্রগতিশীল গণতন্ত্র থেকে সরিয়ে এনে একে ইসলাম প্রধান দেশ বানিয়েছে, এসব অংশ বিশেষ মাত্র।

আমরা আজো আলোকে দূরে ঠেলে রেখেছি।

অনেক অনেক ক্ষোভ নিয়ে লেখা, অনেক অনেক তথ্য, অনেক অপমানজনক মন্তব্য। ফলাফল হিসেবেই খুন হয়েছিলেন হয়তো।
যাউকগা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেমন বলেছিলেন, "আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়ে গেছে"।
"শাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়"
Profile Image for Imran.
1 review1 follower
May 30, 2020
১৭-২০ পৃষ্ঠা পড়ে বইটি রেখে দিয়ে একে বিচার করলে অবিচার হবে বইটির প্রতি। পুরো বইটা পড়ার পর চোখের সামনে স্বাধীনতার পরের বাংলাদেশের কুৎসিত কিছু সত্যের আঁচ পাওয়া যাবে। একটা চাপা দুঃখবোধ জেগে উঠবে নিজের অজান্তেই।
Profile Image for Sufian.
Author 1 book7 followers
January 1, 2016
"বিংশ শতক থেকে ঠিক কতটা পিছিয়ে গেলে মানুষ একবিংশ শতকে পৌঁছোয়?"
Profile Image for Forhad Juwain Sumon.
75 reviews3 followers
March 28, 2020
যতবার পড়বেন ততবারই প্রাসঙ্গিক লাগবে সময়ের সাথে। :3
Profile Image for Azoad Ahnaf.
113 reviews
November 22, 2024
৫ আগস্টের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের সুতো ধরে হাতে তুলে নিয়েছিলাম এই বই। তখন মনে হচ্ছিলো আসলেই কি আমার এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? (আমি বাপু পুরোদস্তুর হতাশাবাদী)
পড়তে পড়তে দেখছিলাম এ অভাগা দেশটার কপালে আদৌ কখনোই সুখ ছিলো না।
শুরুটা হয়েছিলো অপারেশন ক্লিনহার্ট দিয়ে। সেখান থেকে চলে আসলো '৭১, আর একাত্তর মানেই মুজিব, তারপর জিয়া, এরশাদ, বিএনপি (+জামাত), আওয়ামি লিগ। কাউকে নিয়েই কথা বলতে বাঁধে নি তার। তবুও, কিছুটা যেন একপক্ষের ছোঁয়া রয়ে গেছে। তাতে করে আমার খুব করে জানতে ইচ্ছা করছিলো, এখন বেঁচে থাকলে তার কি আক্ষেপ হতো? নাকি এখনো সে সত্যিই বলতো?
তবে তার যে আক্ষেপ -
কিন্তু আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?
এরই জন্যে বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?
আমরা কি চেয়েছিলাম মুজিব হয়ে উঠবেন মহাএকনায়ক?
আমরা কি চেয়েছিলাম ছোটো একনায়ক জিয়াকে?
আমরা কি চেয়েছিলাম ভণ্ড একনায়ক এরশাদকে?
আমরা কি চেয়েছিলাম একের পর এক অসামরিক ও সামরিক একনায়ক ও একনায়ক ও একনায়ক ও একনায়ক?


কিন্তু বেশি চোখে লেগেছে তার ধর্মবিদ্বেষ! এ যেন পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া বাঁধানোর জন্য প্রায় প্রতি পাতাতেই ফাঁদ পেতে রেখে দিয়েছে!
তার লেখা যথেষ্ট সাবলীল, পড়তে কষ্ট তো হচ্ছিলোই না, বরং আরামসে পড়া এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে ঝালিয়ে নেবার জন্য পড়া যেতেই পারে।
Profile Image for Rocky Rahman.
106 reviews10 followers
November 7, 2023
বইঃ আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম
লেখকঃ হুমায়ুন আজাদ
প্রকাশকালঃ ২০০৩
.
বইটিতে উঠে এসেছে ১৯৭১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক ঘটনাবলী এবং এই সময়কালে যারা দেশ শাসন করেছিলো তাদের বর্ণনা।
বইটিতে প্রথমেই উঠে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়কাল। তারপর খন্দকার মোশতাক এবং খালেদ মোশাররফের অল্প কিছু বর্ণনা এবং অতঃপর জিয়াউর রহমানের ঘটনাবলি, সেনা প্রধান থেকে প্রেসিডেন্ট হবার কাহিনি। এরপর আসে এরশাদ সাহেবের কাহিনি, আমা��� মতে এই বইটিতে লেখক সবচাইতে বেশি উনাকেই সমালোচনা করেছেন।
এরপর দেশে যখন সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি আসে তখনকার রাজনৈতিক ঘটনাবলি, বিএনপির বিজয় এবং শাসনামল। এরপর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, এরপর আবার ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামাত জোট।
মোটামুটি এইসব শাসনামল কেমন ছিলো তার কিছু বর্ণনা এই বইটিতে রাখা হয়েছে।
Profile Image for Samiul  Mohsanin.
14 reviews7 followers
July 1, 2017
Strong political reference book. Kind of neutral writing? Enjoyed reading it.
Profile Image for Shihab Uddin.
289 reviews1 follower
December 27, 2021
এমন বই শতবার পড়লেও মনের তৃপ্তি ও জ্ঞানের ক্ষুধা মিটবে না!
Profile Image for Ashiqur Rahman.
63 reviews
December 28, 2023
বইটার শুরু অপ্রয়োজনীয় মুসলিম বিদ্বেষ দিয়ে। মাঝের দিক খুবই ভালো। একাত্তর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সহজ ভাষায় খোলামেলা আলোচনা। শেষের দিকে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের চাটুকারিতা।
Profile Image for Taib Islam.
15 reviews4 followers
August 23, 2019
প্রত্যেক বাংলাদেশির জন্য মাস্ট রিড একটি বই। যদি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি ভালো দেশ হতে পারে তখন এই বই পড়ে তারা জানতে পারবে এই দেশটা এক সময় কতটা খারাপ ছিল। কিংবা কেউ যদি এই দেশ ছেড়ে চিরকালের জন্য অন্য কোনো দেশে ইমিগ্রেট করে তাহলে তার সন্তানদের বলতে পারবে, দেখো কেন আমরা নিজেদের জন্মভূমি ছেড়ে অন্য দেশে চলে এসেছিলাম। আমার তো মনে হয় বাংলাদেশিরা সুযোগ পায়না বলে বাংলাদেশ ছাড়ে না, নাহলে সপরিবারে কবেই কত মানুষ এই দেশ ছেড়ে চলে যেত। যে সুযোগ পায়নি তার কথার কোন ভিত্তি নেই, যে দেশ প্রেমের জন্য দেশ ছেড়ে যাই না। সবাই নিজের ভালো টাই চায়। আর তারা তো নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই অন্যায় কাজ গুলো করে।
Profile Image for Mahdi Hossain.
55 reviews3 followers
July 10, 2020
I hate it when a boomer acts like an edgy teenager. And when that edgy boomer-teenager rants it becomes unbearable. I forced myself to finish it only because I never leave a book unfinished after starting it.
I get it that he was pissed off at his country. I get it that Bangladesh isn't an oasis of freedom and democracy. But its totally absurd to expect a country from south-asia to suddenly become a western country with western values just because it achieved independence through a war. Its stupid, its unrealistic. Nothing happens overnight. And, the way he thinks all western values are good and all eastern values are barbaric is extremely narrow-sighted, even ironic
Profile Image for Taif Ahmed.
24 reviews8 followers
July 19, 2016
বাংলাদেশের কলঙ্কিত রাজনৈতিক ইতিহাস আলোচনা করে এই বইটি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র যে আদর্শের উপর গড়ে উঠেছিল এবং সেগুলো কিভাবে দূষিত এই বইতিতে বিস্তারিত ও সুন্দর ভাবে আলোচনা করে।
Profile Image for SAWROV JAMAN.
11 reviews1 follower
September 9, 2024
“আমরা বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন চারপাশে যে বাঙলাদেশ দেখি তাকে বাঙলাদেশ মনে হয় না, একে আমরা চাইনি, এভাবে চাইনি। একে মনে হয় বিকৃত নষ্ট বসবাসঅযোগ্য জনপদ, যাকে নষ্ট ক’রে ফেলা হয়েছে, যে তার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি, যা তার জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, যাকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে বাধ্য করা হয়েছে, তাকে অসৎ ক’রে ফেলা হয়েছে। বাঙলাদেশ হয়ে উঠেছে এক ভীতিকর জঙ্গল, নেকড়েরা যে কোনো সময় লাফিয়ে পড়তে পারে।”

হুমায়ুন আজাদের ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ‌ চেয়েছিলাম’– বইটি পড়লাম। শেষের দিকটা পড়তে পড়তে আমি হাসতে হাসতে খুন হয়ে যাচ্ছিলাম! জিয়া এবং এরশাদের কাহিনী ও লেখকের ব্যঙ্গাত্মক বর্ণনাভঙ্গি পড়ে আমার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেবার মতো অবস্থা •‿• কোনো বই পড়ে এত হেসেছি বলে মনে পড়ে না। হুমায়ুন আজাদের ঠোঁটকাটা স্বভাবের সাথে বাচনভঙ্গি ও শব্দশৈলির মুন্সিয়ানার তারিফ না করে পারা যায়না। তার আক্রমণাত্মক এবং সাহসী সমালোচনামূলক লেখা আসলেই স্বাতন্ত্র্যপূর্ন। লেখক বইটিতে বাঙলাদেশ [তিনি বাংলাদেশকে ‘বাঙলাদেশ’-ই লেখেন] সম্পর্কে তার প্রত্যাশা ও অপ্রাপ্তির ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তবে বইটা পড়লে দেখতে পাই, যতটা না এখানে প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি ক্ষোভ উগড়ে দেয়া হয়েছে। আজাদ একজন প্রথাবিরোধী ও আক্রমণাত্মক লেখক, কাজেই বিষয়টি মাথায় রেখেই পড়তে হবে তার বই। সেসময়কার রাজনৈতিক বাস্তবতার যেসকল বিষয় উল্লেখ করেছেন তা আজও অনেকাংশেই সত্য। রাজনীতি আসলেই এক মারপ্যাঁচের জিনিস। রাজনীতিতে চলে ভাবাদর্শ, ক্ষমতা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব-বিগ্রহ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী অধ্যায়ে কি কি ঘটেছে তার অনেককিছুই জানতাম না। একনায়কতন্ত্র, সেনাশাসন, স্বৈরশাসন, গনতন্ত্রের ওলটপালট-পালাবদল, অনেককিছুই ঘটেছে বিগত অর্ধশতকে। সে সম্পর্কে জানা হয়ে গেল এই বইটি পড়ে।
[২২.০৭.২৪]
Profile Image for Basirul Raj.
7 reviews
March 20, 2023
অকপটে এমন সত্য কথা বলার সাহস যিনি করেছেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। যাদের এতদিন মহানায়ক ভাবতাম তাদের চরিত্র এতো কুৎসিতভাবে পড়তে ভীষণ মনোকষ্ট পেয়েছি।
এই পৃথিবীতে বস্তুত বাংলাদেশে সাধারণরা সবসময় নগন্য। তারা শুধু দিয়েই গেছেন : শ্রম,রক্ত, সর্বস্ব । ভোগ করেছে দালালেরা।
একনায়কেরা ক্ষমতার লোভে ব্যবহার করেছে মাতৃভূমিকে।
বইটিতে ১৯৯৬-২০০১ এর কথা বিস্তারিত বলা নেই। এখানে কিছুটা পক্ষপাতিত্তের ছোঁয়া অনুভব করেছি।
সবমিলিয়ে অসম্ভব ভয়ঙ্কর একটি বই।
আমরা সত্যিই এমন বাংলাদেশ চাইনি।
Profile Image for Maria Shuchi.
8 reviews
April 1, 2024
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক অবস্থার করুন পরিনতিই তুলে ধরেছেন লেখক। কোনো দলকে ভয় না পেয়ে সকলের সম্পর্কে নগ্ন সত্যকে তুলে ধরেছেন,তুলে ধরেছেন দেশে অরাজক পরিস্থিতি। অর্থনৈতিক,সামাজিক অবক্ষয় সন্ত্রাস কিভাবে দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে তার বর্ননা করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মকে হাতিয়ার করে কিভাবে ক্ষমতাকে পুঞ্জীভূত করতে চেয়েছে, মুজিবের একনায়কতন্ত্র কিভাবে তার জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছে তারই বর্ননা বইটিতে রয়েছে।
Profile Image for Omar Faruk Sazzad.
9 reviews1 follower
January 10, 2022
"বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর জাতীয় ধর্ম দুর্নীতি''

প্রথম পনের-বিশ পৃষ্ঠা ভালো লাগেনি, টিপিকাল হুমায়ুন আজাদ।।তবে তারপরের রাজনৈতিক বিশ্লেষণগুলো এড়ানোর মতো না।।
Profile Image for Papry.
6 reviews
September 17, 2022
অকপটে এমন সত্য বলতে সবাই পারে না।
Profile Image for অমিয়তোষ আকাশ.
17 reviews7 followers
August 23, 2018
অসাধারণ, অনবদ্য।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলাম হুমায়ুন আজাদের ক্ষুরধার লেখনীতে। আমরা সকলেই আমাদের চারপাশের পরিবেশ, রাজনীতি নামক কুনীতি দেখে মনে করে আমাদের মুক্ত��যোদ্ধারা কি এজন্যই যুদ্ধ করেছিলেন? আমরা অবাক হই পাক আমলের আন্দোলনের কথা মনে করে, বর্তমান কালের অথর্ব ছাত্র সমাজের সাথে তুলনা করে। ভাবি এই ছাত্রদের পূর্বজগণই কি আগেরদিনে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলত?
এই বইয়ে তার বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। যারা মনে করে বর্তমানে আমরা খুব খারাপ আছি, অতীতে অনেক সুখে ছিলাম- এমন ইউটোপিয়ান সিন্ড্রোমে ভোগা মানুষদের এ বই অবশ্য পাঠ্য।
বইয়ের একদম শুরুতে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের জন্য কোন কালেই পুরাতন হবে না। আমি যখন পড়তে শুরু করি তখন আমার কখনোই মনে হয় নি যে বইটি আজ থেকে আরো ১৫ বছর আগে লেখা। সবগুলো বর্ণনা কেমনভাবে যেন বর্তমানের সাথেও মিলে যাচ্ছে। এখানেই বর্ণিত আছে কিভাবে, কতটুকু অধপতিত হয়ে আমরা বিংশ শতাব্দী থেকে একবিংশ শতাব্দীতে পদার্পণ করেছি।
বইয়ের প্রথম অংশের এ কথাগুলো পড়ে মনে হতে পারে আমরা কি আগে ভাল ছিলাম না? না, এই নষ্ট বাংলাদেশীরা কখনোই ভাল ছিল না, বিশেষ করে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে। বইয়ের দ্বিতীয় অংশে আছে আমাদের "গৌরবময় ইতিহাস"এর কিছু পাঠ। আজাদ সাহেবের কালির অস্ত্রের আঘাত থেকে বাদ যায়নি আমাদের ইতিহাসের মহানায়ক থেকে ক্ষমতাপিপাসু কোদালনায়ক বা লম্পট একনায়করা। এ অংশে বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে কিভাবে এদেশের রাজনীতি হয়েছে অপরাজনীতি আর রাজনীতিবিদরা হয়েছে নষ্ট, দূষিত। ধর্মকে ব্যবহার করে একনায়করা কিভাবে এদেশকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে তার বর্ণনা যেমন আছে তেমনি আছে রাজাকার ও "মুক্তিযোদ্ধা" কিভাবে এক হল আর মুক্তিযোদ্ধারা কিভাবে রাজাকারদের পদলেহনে রত হল তার বিবরণ।
বইয়ের শেষ অংশে রয়েছে আমাদের গণতন্ত্রের পাঠ। বাংলাদেশীদের কাছ থেকে গণতন্ত্র প্রত্যাশা করা পাপ, মহাপাপ। এখানেই রয়েছে আমাদের সকল শাসকদের গণতন্ত্রের নমুনা(২০০৩ সাল পর্যন্ত)। অনেকেই ভাবে বর্তমান সরকার এমনভাবে শাসন করছে কেন? এর উত্তরও আছে এই অংশে।
এই বইয়ে কোন আশার বাণী আমি পাইনি, কারণ বাংলাদেশীদের কাছে কিছু আশা করাও পাপ। হুমায়ুন আজাদ বেঁচে থাকলে দেখতেন তাঁর লেখা আজও কতটা প্রাসঙ্গিক ও বাস্তব। হয়ত তিনি বর্তমান অবলোকন করে নিজেই বিস্মিত হয়ে যেতেন।
Profile Image for Tanzimur Rahman.
4 reviews
October 15, 2018
"স্বাধীন হইয়াও হইল না স্বাধীন।"

কোনো এক অদ্ভুতভাবে আমরা স্বাধীনতা তো অর্জন করেছিলাম।কিন্তু আদৌ কি সেটাকে স্বাধীনতা বলা যায়?
অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো নীতি বা আদর্শের উপর ভিত্তি করে হয় নি।আর তাইতো স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মহানায়কেরা হয়ে ওঠে একনায়ক।যেখানে ক্ষমতাই ইশ্বর। ক্ষমতাই শেষ কথা।সেখানে একজনের পতন ঘটে তো আরেকজনের উত্থান ঘটে।হ্যা একসময়ে আমরা গণতন্ত্র লাভ করি। কিন্তু সেটাকেও কি গণতন্ত্র বলা চলে কোনোভাবে?যেখানে সরকারের সমালোচনা করলে মূল্য দিতে হয়।সমালোচনা করবেই বা কি করে যেখানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার হয়ে উঠে ইশ্বর।ইশ্বরের সমালোচনা চলে না।ঈশ্বরের সামনে সবসময় মাথা নিচু করে থাকাই নিয়ম।আর সেই ঈশ্বরদের থেকেও ভয়ংকর ও নিকৃষ্ট হচ্ছে সেই সব চাটুকারের দলেরা যারা ইশ্বরকে ঘিরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে চলছে দিনকে দিন।এরা গিরগিটির মত রঙ পালটায়।ঈশ্বরের পতন ঘটে নতুন ঈশ্বর আসে কিন্তু এতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।তাদের যে রয়েছে রঙ পাল্টানোর অসীম ক্ষমতা।সত্যিই এরাম বাঙলাদেশ আমরা চাই নি,চাইতে পারি না।
Displaying 1 - 30 of 38 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.