Jump to ratings and reviews
Rate this book

আগুনপাখি

Rate this book
গাঁয়ের একটি মেয়ে, বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ির বাইরে সে জানে চারপাশের মানুষজনকে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু । হিন্দু বলে তারা যে আলাদা, তেমন তো কিছু বোঝেনা সে । গভীর মমতায় সে গড়ে তোলে তাদের বড় একান্নবর্তী সংসার, আর রাতের নিরালায় স্বামীর কাছে শিখে নেয় অল্পসল্প লেখাপড়া । সুখ দুঃখ এর নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সে দেখে কেমন করে তার স্বামী জড়িয়ে পড়ে সামাজিক কাজে, হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায় এর কাছেই কতটা প্রিয় এক নেতা হয়ে ওঠে সে। কিন্তু হঠাত যেন পাল্টে যায় সব। তাদের একান্নবর্তী সংসারেও ধরে ভাঙ্গন, আর বাইরেও কোথা থেকে রব ওঠে যে দেশটাও নাকি ভাগ হয়ে যাবে । তা কি করে হয় ? দেশ আবার ভাগ হয় কেমন করে ? অবিশ্বাস্য সেই ঘটনাও সত্য হলো একদিন। মুসলমান পাড়া প্রতিবেশীরা চলে যেতে লাগলো ভিটে ছেড়ে । পরিজনেরাও । কিন্তু সে? না , সে কিছুতেই যাবেনা, কেননা, সে বলে " আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলেনা ক্যানে আলেদা একটো দ্যাশ হয়েছে ,...[কেন] এই দ্যাশটি আমার লয়।"

সেই মেয়েটির মুখের আটপৌরে ভাষায় বলা এ এক বুকভাঙ্গা দেশভাগের গল্প ।

158 pages, Hardcover

Published January 1, 2006

43 people are currently reading
909 people want to read

About the author

Hasan Azizul Huq

76 books73 followers
Hasan Azizul Huq (Bengali: হাসান আজিজুল হক) is a Bangladeshi writer, reputed for his short stories. He was born on 2 February, 1939 in Jabgraam in Burdwan district of West Bengal, India. However, later his parents moved to Fultala, near the city of Khulna, Bangladesh. He was a professor in the department of philosophy in Rajshahi University.

Huq is well known for his experiments with the language and introducing modern idioms in his writings. His use of language and symbolism has earned him critical acclaim. His stories explore the psychological depths of human beings as well as portray the lives of the peasants of Bangladesh.

He has received most of the major literary awards of Bangladesh including the Bangla Academy Award in 1970.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
292 (59%)
4 stars
156 (31%)
3 stars
28 (5%)
2 stars
11 (2%)
1 star
2 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 83 reviews
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
219 reviews288 followers
September 25, 2025
কথ্য ভাষায় লেখা বলেই হয়তো ব‌ইটা পড়তেই খুব আপন আপন লাগছিল। মনে হচ্ছিল, আমি যেন অতীতের অবিভক্ত বাংলা ঘুরে দেখতে বেরিয়েছি। আর ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে প্রাচীন এক বাড়ির দাওয়ায় এসে বসতেই প্রবীণা একজন একগ্লাস পানি নিয়ে এগিয়ে আসলেন। পান করে ফিরিয়ে দিতেই পাশে বসে আমাকে বাতাস করতে লাগলেন; আমায় হয়তো তার মেয়ের মতোই লাগছিল, তাই যেন হঠাৎ করেই তার জীবনের ঝাঁপি খুলে বসলেন আমার কাছে .....


আট বছর বয়স হতেই মা তার মরে গেল। তারপর চৌদ্দ বছরেরটি হতেই বিয়ে হয়ে গেল এক অবস্থাসম্পন্ন পরিবারে। সংসারের ঘানি, সন্তানধারণে পেটের ঘানি ইত্যাদির মাঝেও বেশ নিশ্চিন্তেই বয়ে চলছিল জীবন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ব্রিটিশ-ভারতের বিভাজন নীতি, দুর্ভিক্ষ, খরা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ধীরে ধীরে কীভাবে যে এই পল্লীরমণীর সংসারকে রাহুর মতো গ্ৰাস করেছিল–তার সম্পূর্ণ বয়ান এক অনন্য রচনা।

এটি শুধু উপন্যাস নয়, অতীতের এক ভয়াবহ দলিল যা গ্ৰামীণ বাঙালিদের শিকড়কে মনে করিয়ে দেয়।
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,354 followers
September 22, 2016
The bird perished in the flames;
but from the red egg in the nest there fluttered aloft a new one—
the one solitary Phoenix bird.
ব্রিটিশ শাসন এবং দেশভাগের পটভূমিতে রচিত এ উপন্যাসটির কলেবর খুব দীর্ঘ নয়, মাত্র ২৫১ পৃষ্ঠা। কাইয়ুম চৌধুরীর করা প্রচ্ছদে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৬এ।

হাসান আজিজুল হকের খ্যাতি, মূলত শুনেছিলাম ছোটগল্পে। কিন্তু বর্ধমান-বাঁকুড়া গ্রামাঞ্চলের একান্নবর্তী মুসলিম পরিবারের অতি সাধারণ এক পর্দানশীনবধূর বয়ানে আশা-আকাঙ্ক্ষা, মান-অভিমান, স্বপ্ন-সুখের, জীবনের উথান-পতনের কী জীবন্ত এক দলিল আগুনপাখি!

পুরো উপন্যাসে কথক মূল চরিত্র এক নারী, মেজ বউ। সেই কথোপকথনে নিজের কথা নেই,আমার আমি নেই, আছে সবাই, বিপত্নীক বাবা, নূতন মা, বিয়ের পর কর্তা, শ্বাশুড়ি, দেবর-ননদ-জা। আর সংসারের অপরিহার্য অংশ কিন্তু মতামতবিহীন, ছায়াহীন, মেজ বউ।
'জেবনের কুনো কাজ নিজে নিজে করি নাই, নিজের ইচ্ছা কেমন করে খাটাতে হয় কুনোদিন জানি নাই। আমি কি মানুষ, না মানুষের ছেঁয়া? তা-ও কি আমার নিজের ছেঁয়া?'

তাই হয়তো এই কেন্দ্রীয় চরিত্রটির নাম বলা হয়নি কোথাও। নিজস্ব কোন পরিচয়ই যার নেই, তার নাম থাকলেও বা কী এসে যায়?

আমার নানু ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের অতি আদরের বড় মেয়ে। সেই ষাটের দশকের গোড়ার দিকে জেলা শহরের স্কুলে যেতেন নিজেদের প্রাইভেট কারে। ঘটনাক্রমে বিয়ে হলো এমন পরিবারে, যেখানে একসময় মূল জীবিকা ছিলো কৃষি, এরপর শিক্ষাদান। প্রথম ক'দিনের আলগা খাতিরযত্নের পর নিম্ন-মধ্যবিত্ত সেই একান্নবর্তী সংসারের উনকোটি কাজ, দফায় দফায় পাড়া পাত,আমন-আউশের মৌসুমে মণে মণে ধান সিদ্ধের নজরদারি ব্যস্ততার অবসরে বাবার বাড়ির স্নেহের পুত্তলিটি নাকি একসময় আর এক ফোঁটা নিঃশ্বাস নেবার অবকাশও পেতেন না।

পড়তে গিয়ে নানুমণির কথা মনে পড়ছিলো বার বার।

নিরক্ষর মেজ বউয়ের পুঁথিগত বিদ্যার দৌড় ছিল রাতের বেলায় টেমির আলোয় স্বামীর আদেশে নতমুখী হয়ে শেখা অ আ ক খ পাঠেই কেবল। কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যার বাইরের যে জ্ঞান, যে ঔচিত্য বোধের উন্মেষ ঘটে জীবনের সুখ- দুঃখের নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে, তাতেই বরং সে হয়ে ওঠে ঋদ্ধ, স্বশিক্ষিত। পরিবারে ক্রমে লোক বাড়ে, আসে সন্তান, আপনার জন, বাড়ে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। স্বামীটি জড়িয়ে পড়ে নানা সামাজিক কাজে, অর্জন করে নেতৃত্ব, পদ, ক্ষমতা।
আসে জন্ম-মৃত্যু-জরা।

এরপর আবার আসে ক্ষয়, এগিয়ে আসে পতন, দেখা দেয় দাহকাল। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঝড়ে, দুর্ভিক্ষের কারণে, যুদ্ধে আর অভাবে একান্নবর্তী সংসারেও ধরে ভাঙ্গন। দেশটাও ভাগ হয়ে যায়।
দেবরেরা আস্ফালন করে, বলতে থাকে-- ‘তৌহিদের ক্ষ্যমতা জানো? তৌহিদি শক্তির সামনে হিদুঁ মালাউন দাঁড়াইতে পারবে না। এক মোসলমান, সত্তরজনা কাফের!

বিহার বা কলকাতার অন্য কোথাও আবার হিন্দুর খাঁড়ার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে মরে নিরীহ মুসলিম কিশোর।

কিন্তু 'মানুষ কিছুর লেগে কিছু ছাড়ে, কিছু একটা পাবার লেগে কিছু একটা ছেড়ে দেয়। আমি কিসের লেগে কি ছাড়লম?'-- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মেজবউকে সাহায্য করে না কেউই।
'আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না ক্যানে আলেদা একটো দ্যাশ হয়েছে গোঁজামিল দিয়ে যিখানে শুদু মোসলমানরা থাকবে, কিন্তুক হিঁদু কেরেস্তানও থাকতে পারবে। তাইলে আলাদা কিসের?
আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না যি সেই দ্যাশটো আমি মোসলমান বলেই আমার দ্যাশ আর এই দ্যাশটি আমার লয়।'

শেকড়সহ উপড়ে নিয়ে আবারো নিজেকে হারানোর এক পর্যায়ে প্রায় নিরক্ষর নারীটি উপলব্ধি করে নিজের সত্যিকারের জায়গা, নিজের স্বতন্ত্রতাকে। সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে সে প্রত্যাখ্যান করে সংসার, ধর্ম, সমাজ ও দেশের চাপিয়ে দেয়া বিধানটুকু। ব্যক্তিগত অনতিক্রম্য সে হাহাকারের নিঃশ্বাসে ছড়িয়ে যায় নিষ্ফল দেশভাগের যন্ত্রণাময় অ্যাখান। আর বাজে নিঃশব্দ বিচ্ছেদগাঁথার সুর।
'আমার সোয়ামি গেলে আমি আর কি করব? আমি আর আমার সোয়ামী তো একটি মানুষ লয়, আলেদা মানুষ, খুবই আপন মানুষ, জানের মানুষ কিন্তুক আলেদা মানুষ।'
নীড় গুটিয়ে পুরো পরিবার পাকিস্তানে চলে গেলেও মেজবউ একা রয়ে যায় ভারতে, নিজের শূন্য ভিটে আঁকড়ে ধরে। হয়তো ধংসস্তুপ থেকে আবার জ্বলে উঠবে বলে...

দেশবিভাগ নিয়ে আমার পড়া সেরা বই আগুনপাখি। মাস্ট রিড।
আই রিপিট, মাস্ট রিড! :)
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews621 followers
January 27, 2018
খুব সুন্দর একটা উপন্যাস। প্রথম প্রথম পড়তে গিয়ে সামান্য সমস্যা হয়েছে। কারণ আমি কোন আঞ্চলিক ভাষা শুনে অভ্যস্ত নই। অবশ্য একটু পরেই সেটা ঠিক হয়ে গিয়েছে। বইটিতে মেজ বউ নিজের মনের মত করে বলে গেছে তার জীবনের কাহিনী। প্রথম প্রথম মনে হয় খুব সাধারণ ঘর সংসারের কাহিনী বলছে। কিন্তু খানিক পরেই বুঝা যায় আসলে শুধু তো তার সংসারের গল্পই নয়, সে তখনকার আর্থ সামাজিক অবস্থাও বর্ণনা করছে। এরপর একে একে চলে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা, বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন দুর্ভিক্ষের কথা, আসে তার সংসারে ভাঙন, সেই সাথে দেশেও আসে ভাঙন। মেজ বউ কিছুতেই এই দেশ ভাগ বুঝে উঠতে পারে না। কত চেষ্টা করে কিন্তু কেউ তাকে দেশ ভাগের কারণ বুঝাতে পারে না। নিজের দেশ ছেড়ে কেন অন্য দেশে যেতে হবে তাও তাকে বুঝানো যায় না। এভাবেই শেষ হয় মেঝ বউয়ের কাহিনী। উপন্যাসের শেষ অংশটুকু একেবারে মর্মে গিয়ে বিঁধে।

“আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না যি সেই দ্যাশটো আমি মোসলমান বলেই আমার দ্যাশ আর এই দ্যাশটি আমার লয় । আমাকে আরো বোঝাইতে পারলে না যি ছেলেমেয়ে আর জায়গায় গেয়েছে বলে আমাকেও সিখানে যেতে হবে । আমার সোয়ামি গেলে আর আমি কি করব ? আমি আর আমার সোয়ামী তো একটি মানুষ লয় , আলেদা মানুষ। খুবই আপন মানুষ, জানের মানুষ , কিন্তুক আলেদা মানুষ ।"
Profile Image for Syeda Ahad.
Author 1 book131 followers
July 29, 2019
অনেক অনেকদিন পর মোটামুটি এক নিঃশ্বাসে একটা বই পরে ফেললাম। ছোটবেলায় গ্রামে যখন ছিলাম, সন্ধ্যে হলেই কিছুক্ষণ নামেমাত���র পড়াশোনা করে দাদুর কাছে বসে যেতাম আমরা দুই ভাইবোন। বেশিরভাগ সময়েই লোডশেডিং চলতো আর উঠোনে খোলা আকাশের নিচে বসে হাতপাখার বাতাস খেতে খেত�� আমরা শুনতাম দাদুর জীবনের গল্প- কিভাবে বরিশালের মশাং নামক এলাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে মাত্র দশ বছর বয়েসে বিয়ে করে এই সংসারে এলো- কিভাবে অনেক দিন পর্যন্তই এই বড় বাড়িতে মন খারাপ করেই তার সময় কেটে যেত- কিভাবে সে কোনও কাজ না জেনে এলেও সময়ের সাথে সব শিখে সংসারের হাল ধরলেন - কিভাবে সংসারের ভালো মন্দ সময়গুলো গেলো- কখন একেকটা অসময়ের মৃত্যু এসে জীবনটা ওলট পালট করে দিলো- কিভাবে তারপরেও জীবন এগিয়ে গেলো- কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়টা তারা পার করলেন- এমন হাজারও জীবনের গল্প শুনতে শুনতে ছোটবেলায় কোথায় যে হারিয়ে যেতাম! একটু বড় হবার পর থেকেই তাই মাথায় ঘুরছে যে তার এই সব গল্প- সবকিছু যেভাবেই হোক লিখে ফেলতে হবে। পৃথিবীতে কত কি হয়ে যায়- তার প্রভাব একেবারেই কারও সাতে-পাঁচে না থাকা নিরীহ মানুষের জীবনে কিভাবে আন্দোলন বয়ে আনে, তা সত্যিই স্তব্ধ করে দেয় সময়ে সময়ে। আগুনপাখি বইটি পড়ে মনে হচ্ছিলো আমার দাদুর গল্পই যেন পড়ছি!
গাঁয়ের এক সাধারণ মেয়ের জবানিতে লেখা তার জীবনের বিভিন্ন সময়ের গল্প। তার বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে আসার গল্প। বিরাট সংসারে ছায়া দিয়ে যাওয়া মানুষদের কথা মেনে নিয়ে যা আছে তাই নিয়ে হাসিমুখে পার করে দেয়া সময়ের গল্প। এর মাঝেই জন্ম- মৃত্যু - হাসি - কান্না মিলে জীবন এগিয়ে যায়। পুরো বইটা জুড়ে ছড়িয়ে ছিল মাটির গন্ধ আর একমাত্র মায়ের মনেই থাকা সম্ভব এমন মায়া। কোনও কিছুই মুখফুটে না বললেও যে মানুষ তার পরিবারের মানুষগুলোর সংসার টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম অকপটে বুঝে নিয়ে নিজের সর্বস্ব দিয়ে যাচ্ছে তাকে ভালো না বেসে কি পারা যায়! তাই বইটি পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই কখনো হেসে কুটিকুটি হয়েছি, কখনো বুক ভেঙ্গে যেতে চেয়েছে হাহাকারে। বিশ্বযুদ্ধ, ভারত ছাড় আন্দোলন, দেশ বিভাগ, মঙ্গা- এসবকিছুকেই একেবারে আটপৌরে জীবনের কাছ থেকে দেখতে পেলাম যেন। আর শেষে এসে এই সর্বংসহা সরল মেয়ের জীবনে একবার অবাধ্য হবার সময়ও তাই তাকে সমর্থন না জানিয়ে পারলাম না। অসাধারণ বই!
Profile Image for Zunaed.
54 reviews119 followers
February 12, 2017
বইটা পড়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম অনলাইনে। সুযোগ পেয়ে পড়া শুরু করি। কিছু কিছু বই আছে, যেগুলো শুরু থেকেই পাঠককে ধাক্কা দেয়। এই বইটা আমার ক্ষেত্রেও তাই করেছে। বইটা শুরু করে প্রথম ধাক্কা খেয়েছি তার ভাষায়। উপভাষাকে মূল করেও যে উপন্যাস লেখা যেতে পারে, তা এই বই পড়ার আগে ভাবতেও পারিনি। অথচ বইটা পড়তে গিয়ে তার ভাষাকে কোথাও সংকীর্ণ মনে হয়নি, বরং গ্রাম্য সরলতার সাথে ভাষাটা যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

আর শুরু থেকেই বইটা আমায় খানিকটা স্মৃতিকাতর করে দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে ছেলেদের সখ্যতা গড়ে উঠে মা, দাদি-নানিদের সাথে। সেই সখ্যতার কারণেই তাদের সরল জীবনের কিছু সরল বর্ণনা আর অসাধারণ উপলব্ধি একান্তই তাদের ভাষায় জানার সুযোগ পেয়েছি। সত্যি বলতে কী, একসময় এসব শুনতে বিরক্ত হতাম। কিন্তু আজ এসব উপকথা-রূপকথাহীন সময়ে দাঁড়িয়ে আবার শুনতে ইচ্ছে হয় সেই সব রূপকথা। মাঝে মাঝে মনে হয়, সে ইচ্ছে কি আর পূরণ হবার? সে ইচ্ছেটাকে পূরণ করতেই যেনো হাতে এলো বইটা।

গল্পটা সহজ-সরল এক গ্রাম্য বধূকে নিয়ে। নিজের স্বামী আর তার মা-ভাই-বোনদের একান্তবর্তী সংসার হয়ে উঠে যার জীবন। মুসলিম বধূটির গায়ের হিন্দু-মুসলমান দুইই আছে। মুসলমানের চেয়ে হিন্দুই বেশি, কিন্তু কোনো ঝগড়া বিবাদ নেই— একে অপরে মিলে গেছে যেনো। খুব সাবলীলভাবেই এই সাধারণ জীবনের উপাখ্যান বলে গেছেন হাসান আজিজুল হক, যা কখনও অবচেতনেই মুখে হাসি এনে দিয়েছে, আবার কখনও মন খারাপ করে দিয়েছে পুরোপুরি।

সাজানো গোছানো লক্ষ্মী সংসারে অলক্ষ্যেই অলক্ষ্মী এসে ঢুকে বিশ্বযুদ্ধের বেশে। সবাই তার সাথে সংগ্রামে ব্যস্ত থাকতে থাকতে আসে আকাল। ধাক্কা লাগে প্রাণে, ধাক্কা লাগে সংসারে। তাই প্রাণ ভেঙে সংসারও ভাঙে। কিন্তু এই সংসারই কি সব? হিন্দু-মুসলমান দুই ভাই নিয়ে ভারত মায়েরও যে এক একান্তবর্তী সংসার আছে। সে কেন সব থেকে দূরে থাকবে? থাকেনি, সেও ভেঙেছে।

একান্তবর্তী পরিবার ভেঙেই এসেছে চিরকাল, তার ভাঙনের পর আসে মহাভাঙন, আর তাতে ভাঙে নতুন জন্ম নেয়া নিজের ছোট সংসারও। ছেলে বড় হয়, মায়ের কাছ থেকে চলে যায় একদিন। ভারত মায়ের সাথে ভাঙে বাংলা মায়ের সংসারও। সেই ভাঙা সংসারের এক মায়ের আত্মকথন এই উপন্যাস। কোথাও কোনো জটিলতা নেই, কোনো ক্লাইম্যাক্স নেই, জীবনের মত সরল ছন্দে এগিয়ে গেছে সে। সে এগিয়ে চলায় এক সাধারণ গ্রাম্য মহিলা খুঁজে পায় নিজের জন্য বাঁচার মন্ত্র, বলার সাহস পায়,
"আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে লা যি সেই দ্যাশটো আমি মোসলমান বলেই আমার দ্যাশ আর এই দ্যাশটি আমার লয়। ...আমি আর আমার সোয়ামিতো একটি মানুষ লয়, আলেদা মানুষ। খুবই আপন মানুষ, জানের মানুষ,কিন্তুক আলেদা মানুষ।"
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews79 followers
July 6, 2022
কিছু কিছু বই আছে যে বইগুলো মনের ভেতরে গভীর দাগ কেটে যায় কিন্তু বইটা নিয়ে বলতে গেলে কোন নির্বাক হয়ে যাই, এই বইটা ঠিক তেমন। দেশভাগের সময়কালকে কেন্দ্র করে, অজপাড়াগাঁয়ের একজন অতি সাধারণ নারীর দৃষ্টিতে বইটা বর্ণনা করা হয়েছে। দেশভাগ নিয়ে অসাধারণ একটা বই।
Profile Image for Enamul Reza.
Author 5 books174 followers
June 6, 2024
আগুনপাখি পড়লাম দিন কয়েক আগে। কিছু তো টুকে রাখা যেতেই পারে দেয়ালে।

কঠিন নয় কোনো দিক দিয়েই। খুব সুখপাঠ্য। কিন্তু যত শেষের দিকে এগোতে থাকবে, মনের উপর বাড়তে থাকবে চাপ। শেষ করতে ইচ্ছে করবে না। হজম করা হয়ে উঠবে অস্বস্তিকর। এসব আমার নিজস্ব অনুভূতি।

সব ধ্বংসের শেষে মানুষ নিজের পাশে কি দাঁড়াতে পারে নিজের কাঁধে হাত রেখে? এপিকধর্মী উপন্যাসটিতে মানুষের সেই বিজয়ী কিন্তু নিঃসঙ্গ রূপটি এঁকেছেন হাসান - এক ধরণের নির্লিপ্তি, সুতীব্র মমতা ও ক্ষমায়। শুধু রচনাশৈলী ও ভাষারীতির কারণে বইটি বাংলা সাহিত্যে অনন্য তা না। আগুনপাখি অনন্য ও অভূতপূর্ব এর গল্পের শক্তিতেও।

সারাজীবন গল্প লিখবার পর শেষ জীবনে এমন একটা উপন্যাস শুধু হাসানের একার অর্জন হয়ে থাকছে না। বাংলা সাহিত্যের অর্জন হয়েই কাজটা বেঁচে থাকবে আশা করি। এই দীর্ঘ যাত্রায় লেখক হিসেবে হাসান যে ঝুঁকিটুকু নিয়েছেন, তার এক তৃতীয়াংশ ঝুঁকি পাঠক হিসেবে নিতে হবে আপনাকে হয়তো। এরপর যা ঘটবে তা প্রাপ্তিযোগ।

বিষয় বস্তু? নারী-পুরুষ-শিশু-মহাযুদ্ধ-দাঙ্গা-দেশভাগ-নিঃসঙ্গতা।

প্রথমপাঠে আগুনপাখিকে বার্ধক্যের চিহ্নহীন এক চিরসবুজ উপন্যাসই মনে হলো।
Profile Image for Yeasin Reza.
508 reviews84 followers
June 29, 2024
' আগুনপাখি' শুরু করেও পড়া হচ্ছিলো না ক্যান জানি। কিন্তু একবার শুরু করার পর আর থামতে পারিনি। উত্তরবঙ্গের জবানে লিখিত উপন্যাসটি এক নারীর শৈশব থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত জীবনের জবানবন্দী। ব্রিটিশ আমলের সামন্তবাদ থেকে স্বাধীনতা-উত্তর সময়কালের চমৎকার ধারাবিবরণী উঠে এসেছে অদ্ভুত কাব্যিক ভঙ্গিতে এক গ্রাম্য নারীর বয়ানের মাধ্যমে। প্রথম পুরুষে বলা এই উপন্যাসের আঙ্গিক অত্যন্ত সফল। একজন সাধারণ নারীর মনের গভীর নিভৃত কুহক যে এতো মায়াময় কাব্যিক হতে পারে ভাবা যায়নি। উপন্যাসের সময়কাল মোটামুটি সুদূর অতীতকালে হলেও এখনো গ্রাম বাংলার চিরায়ত নারী চরিত্র একই রকম রয়ে গেছে। যদিও উপন্যাসের প্রধান চরিত্র দেশকাল,সময়,সংসারের যৌথতা ভেঙে আধুনিক ব্যক্তির একক উন্মেষণের যথার্থ রূপক হয়ে উঠেন তবু তিনি চিরায়ত নারীত্বের চিহ্ন ধরে রাখেন যা হয়ে উঠে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews192 followers
August 6, 2022
রাঢ়বঙ্গের এক অতি সাধারণ রমণী হয়েও চিন্তায়, চেতনায় কত সহজ, কত অসাধারণ হয়ে উঠল এক নারী, আগুনপাখি তারই আখ্যান৷ আঞ্চলিক ভাষায় লেখা এই উপন্যাস হয়ে উঠেছে চিরকালের। কথক নারীটির মনের কথা এখনো তোলপাড় তোলে হৃদয়ে। কেন দেশ ভাগ হল, কোন যুক্তিতে তাকে তার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে তার কোন উত্তর সে খুঁজে পায় না। আটপৌরে জীবন কাটানো এক অতি সাধারণ গ্রাম্য নারীর জবানে এমন এক উপন্যাস ফেঁদেছেন লেখক যার কোন তুলনা হয় না। কারণ এই নারীটি বাংলার অনেক নারী, যারা সত্যিকার অর্থে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। তাদের হয়ে বলে গিয়েছেন লেখক হাজার হাজার মানুষের ভেতরের প্রশ্ন।
আঞ্চলিক ভাষায় লেখা হলেও গল্পের গাঁথুনি এবং ভাষার সাবলীলতা একটুও আটকাতে দেয়নি পাঠকের গতিকে। চৌদ্দ বছর বয়সে যে নারীর বিয়ে হয়ে যায় আটাশ বছর বয়স্ক এক দৃঢ়চেতা যুবকের সাথে, সেই নারীর নিজস্ব ভাবনা বৃহৎ পরিবারে ডালপালা মেলার খুব সুযোগ পায় না। কিন্তু সংসারের ভার মাতৃসমা শ্বাশুড়ির উপর থাকায় এবং স্বামীটি প্রগতিশীল ধরনের হওয়ায় মেয়েটি একটু লিখতে পড়তে শেখে, একই সাথে খুব সাধারণভাবেই তার মনে জাগে নানান প্রশ্ন।
বিপদ একদিকে আসে না, যখন আসে চারপাশ থেকেই আসে। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর আকাল আসলে বৃহৎ সংসারটিও যেন ভেঙে পড়ে, যে সংসারের হাল ধরেছিল কথক নারীটির স্বামীই। কিন্তু দেশভাগ যেমন অমোঘ সত্য হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি পরিবারের ভাঙন ও অপরিহার্য হয়ে ওঠে। নারীটি সব দেখে, পুত্রহারায়, হারায় আরো অনেক কিছুই, কেবল হারায় না তার মনের জোর। তার দেশে থাকার অধিকারের জোর।
হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার যে দগদগে ঘা তার হৃদয়ে আঁকা হয়, এরপরেও সে শেখানো বুলির মতো হিন্দু আর মুসলমান দুইটি আলাদা জাতি এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে না। একসময় সে একা হয়ে পড়ে, কিন্তু দ্ব্যর্থহীনভাবে কোথাও না কোথাও বিজয়ী।
হাসান আজিজুল হকের এই উপন্যাসটি অনায়াসে কালজয়ী এবং চিরায়ত উপন্যাসের তালিকায় জায়গা করে নেয়ার মতো। দীর্ঘদিন যাবৎ পড়ার তালিকায় থাকলেও এই দুইদিনে পড়ে শেষ করে বুঝলাম কেন অধিকাংশ পাঠকের অন্যতম প্রিয় উপন্যাস এই আগুনপাখি৷ আরো বুঝলাম, দৃঢ়তা এবং দেশপ্রেম আসলে কী, প্রশ্ন কী, ব্যক্তিত্ব কী৷
নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে চলা স্বদেশকে ফেলে নিজের আখের গোছানোর যে প্রবণতা দেশভাগের এত বছর পর ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে আগুনপাখি সেই ভাবনার বিপক্ষে বিরাট একটা প্রশ্নবোধক।
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
September 7, 2020
রাঢ়বঙ্গের ধূলি-ধুসরিত জনপদের এক নারীর জবানীতে জীবন মন্থনের অমৃত ও গরল উঠে এসেছে 'আগুনপাখি' উপন্যাসে। এটি সেই উপন্যাস যেখানে ব্যক্তিকে উঠে দাঁড়াতে দেখা যায় সংসার, ধর্ম ও রাষ্ট্রের সত্যকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করার মধ্যে দিয়ে। আঞ্চলিক ভাষায় অভ্যস্ত না হওয়ায় বইটি পড়তে গিয়ে শুরুর দিকে একটু সময় লেগেছে ঠিকই, কিন্তু পরে আর অসুবিধা হয়নি। হাসান আজিজুল হকের সাবলীল বর্ণনা মন ছুঁয়ে গেছে।
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
January 9, 2024
বছরের প্রথম শেষ করা বই। বছরটা বোধহয় এবার ভালোই যাবে। ভালো একটা ওপেনিং হলো। গত একবছর ধরে বেশ কিছু ভালো বই কিনেছি এবছর এর জন্য। বেঁচে থাকলে হয়…
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews135 followers
April 21, 2020
"মুহিত হাসানঃ আগুনপাখি মায়ের প্রতি আপনার একটি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার্ঘ্যও, এমনটি যদি বলি?

হাসান আজিজুল হকঃ মায়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা তো নিছক শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের নয়, এটা হলো অস্তিত্বের সম্পর্ক। মা ছাড়া আমি তো নেই। কিন্তু রাঢ়বঙ্গের একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে ছেলেমেয়েদের কাছে মা ছিলেন নেহাতই একজন ‘মিসিং পারসন’। ছেলেমেয়েরা বাইরে সারা দিন টো-টো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাড়িতে এলে খেতে দিচ্ছেন সংসারের প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত নারী বা বিধবারা আর অবস্থাপন্ন পরিবারের বেলায় বাড়ির চাকরেরা। সারা দিনে মায়ের মুখদর্শনও হয়তো সন্তানদের হচ্ছে না। এইরকম প্রেক্ষাপটে, দেশ-কালের বাঁধনগুলো ঝোড়ো হাওয়ার মুখে যখন ভেঙে পড়ছে, তখন একজন নিঃসঙ্গ নারীর—যিনি বিরাট এক সংসারের মধ্যে থেকেও একা—তাঁর মনে কী ঘটে যাচ্ছে, তা আমরা কেউ জানতে চাইনি। আগুনপাখির মাধ্যমে আমি দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে আমার মা ও তাঁর মতো হাজারো নারীর অস্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। তাঁদের যে নিজস্ব ব্যক্তিসত্তা বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য,তাকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি।"

মাকে দেখে লিখেছিলাম ‘আগুনপাখি’ শীর্ষক সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ।

..............................................................................

বইটি পড়ার শেষ দিকে আমার মনে একটা প্রশ্ন এসেছে, যদি উপমহাদেশের ভাগ নিয়ে যদি পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের সমান স্বাধীন মতামত দেবার সুযোগ থাকত তাহলে কি দেশ ভাগ হতে পারত?

না, পুরুষতন্ত্র কিংবা নারীবাদ থেকে বলছি না। এই পিতৃতন্ত্র, নারীবাদ, রাজনীতি, ধর্ম, সামাজিক লাভের হিসাবের বাইরেও তো কিছু থাকে। আমাদের দেশের মায়েরা, বোনেরা, মেয়েরা আবহমানকাল থেকে ঘরে বন্দী হয়ে থাকে। পৃথিবী বলতে নিজের আর প্রতিবেশীদের মাটির কিংবা কাঠের কখানা ঘর, কয়টা পুকুর, দূরের ক্ষেত, পাশের সবুজ মাঠ আর আকাশ। এটুকুই তাদের শেকড়। সেই শেকড় ছিঁড়লে আর কি তাঁদের জীবন থাকে?

হিন্দুরা কত বছর পর আবার ভারতের শাসন ফিরে ফেলো সেই সব জটিল রাজনৈতিক অর্জন কি ফরিদপুরের অজগায়ের একজন বিধবা নারীর কাছে গুরুত্ব বহন করে? সে তো শুধু মৃত্যু পর্যন্ত সন্ধ্যা বেলায় মৃত স্বামীর ভিটেয় একটা প্রদীপ জ্বালাতে চায়।

মুসলমানদের আলাদা দেশ হল, এদেশের মুসলমানদের কত শক্তি বাড়ল সেই রাজসিক অর্জন কি বর্ধমানের কোন সন্তান হারা মাকে স্পর্শ করে? সে শুধু চায় মৃত্যুর পর সন্তানের কবরের পাশে নিজের প্রাণহীন দেহখানা রাখতে।

হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখি পড়ে আমি দেখলাম একজন কিশোরিকে বধূ হতে, একজন বধূকে মা হতে, একজন মাকে একটা দেশ হয়ে উঠতে।
Profile Image for Romel.
27 reviews
January 19, 2021
দেশভাগ, মন্বন্তর, দাঙ্গা, সর্বোপরি সামগ্রিক ভেদজ্ঞানের বিরুদ্ধে হাসান আজিজুল হক তাকে দাঁড় করান, ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সে মুখোমুখি হয় নতুন দিনের লাল সূর্যের, আর আমরা আভাস পাই দৃপ্ত পুনর্জাগরণের- ঠিক যেন পুরাণের ফিনিক্স—আগুনপাখি!
Profile Image for Md. Rahat Khan.
50 reviews5 followers
December 22, 2023
এটা কোন রিভিউ নয়। রিভিউ লিখতে তেমন পারি না। কিছু বই পড়ে ইচ্ছা হয় নিজের অনুভূতিটুুকু শেয়ার করতে তাই লেখা৷
বইটিতে লেখক এক গ্রাম্য নারীর জবানীতে ফুটিয়ে তুলেছেন তৎকালীন সময়ের চিত্র। বাবার সংসার থেকে একান্নবর্তী একটা পরিবারে বউ হয়ে যাওয়ার পরে সে সংসারের উথান, পতন, দুঃখ, কষ্ট, ঘাত, প্রতিঘাত অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মানুষের অন্ন, বস্ত্রের জন্য হাহাকার, আহাজারী, বন্যায় পৃথিবীতে টিকে থাকার যুদ্ধ, কলেরা, বসন্ত রোগে গ্রামের পর গ্রামের মানুষের মৃত্যুর চিত্র সুনিপুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। শেষের দিকে ৪৭ এ দেশভাগের সময় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ফলে বহু ন���রপরাধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা উঠে এসেছে। আদিকাল থেকে একসাথে বসবাস করা গ্রাম্য হিন্দু-মুসলিমরা কিভাবে রামদা, ছুড়ি নিয়ে হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে গেলো! গুটিকয়েক মানুষের ভ্রান্ত রাজনীতির মারপ্যাচে দুভাগ হয়ে যায় মাতৃভূমি। দেশভাগের পরে সবকিছু বদল করে স্বামী দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু বেঁকে বসেন কথক। স্বামীর রক্তচক্ষু, সন্তানদের আবেগআপ্লুুত আর্তনাদ এড়িয়ে তিনি কি পাকিস্তান না যেয়ে পেরেছেন?
শুরুতে তেমন উৎসাহ না নিয়ে পড়লেও মধ্যভাগে এসে পুরোপুরি ডুবে গিয়েছিলাম।
বইটি উত্তম পুরুষে আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত। শুরুতে বুঝতে একটু সমস্যা হলেও পরবর্তীতে এর রস আস্বাদন করতে পারবেন।
Profile Image for Zahidul.
450 reviews93 followers
February 18, 2022
"চারা গাছ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় লাগাইলে হয়, এক দ্যাশ থেকে আরেক দ্যাশে লাগাইলেও বোধয় হয়, কিন্তুক গাছ বুড়িয়ে গেলে আর কিছুতেই ভিন মাটিতে বাঁচে না।"

গ্রাম বাংলার পটভূমিতে একজন গৃহবধূর জবানবন্দীর মাধ্যমে দেশভাগ বিষয়ক অসাধারণ একটা উপন্যাস পড়লাম।
Profile Image for Nahar Trina.
Author 13 books61 followers
May 11, 2014
অদ্ভূত একটা উপন্যাস আগুন পাখি! কথক গল্পের মূল নারী চরিত্র। লেখাপড়া না শেখা একজন স্বশিক্ষিত নারী যিনি! যে স্বামীর প্রয়োজনের সময়ে গহনা ছাড় দিতে দ্বিধায় পড়ে যায় সেই নারীই শুধুমাত্র ধর্মের দোহায় দিয়ে দেশভাগের ভণ্ডামী সহ্য করতে না পেরে স্বামী সন্তানদের সাথে মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশ পাকিস্তান যেতে কিছুতেই রাজী হয়না। আগুনপাখি যেভাবে ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে নতুন জীবন নিয়ে বেরিয়ে আসবার সাহস পায় গল্পের কথক আমাদের সেই সাহসের গল্প শোনান একদম তার নিজের ভাষায়। সহজ সরল গ্রাম্য ভাষায়, যেভাষায় গল্পটা পড়তে পড়তে কখনো হেসেছি কখনো বা চোখের পানিতে অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে গেছে। অদ্ভুত একটা ভালোলাগায় মনটা ছেয়ে ছিল বহুক্ষণ বইটা পড়ে।
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
May 1, 2020
কি সুন্দর,কি সাবলীল অথচ সহজ-সরল আঞ্চলিক ভাষায় দুটো বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী আর পরবর্তী প্রেক্ষাপট, মহামারী, ক্ষুধা আনন্দ সুখ দুঃখ , হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা,দেশবিভাগের গল্প এক নামমাত্র অক্ষরপরিচয় যুক্ত চিরকালের বাংলার শান্ত গৃহবধূর মুখে শুনতে শুনতে থুক্কু পড়তে পড়তে কখন যে টুপ করে ফুরিয়ে গেল কথার ঝুড়ি থেকে কথাগুলো বুঝতেই পারিনি
Profile Image for Momin আহমেদ .
112 reviews49 followers
September 27, 2024
#এইটা কোনো রিভিউ না

একজন পাঠক যে বইগুলো পড়ে, প্রতিটা বই এর না হলেও অধিকাংশ বই নিয়েই সেই পাঠকের নিজের ছোট্ট ছোট্ট গল্প থাকে। আমি ২০২০ এর বইমেলায় কেনার জন্য পাচটা বই লিস্ট করেছিলাম। খোয়াবনামা,চিলেকোঠার সেপাই,প্রদোষে প্রাকৃতজন,আগুনপাখি আর সংশপ্তক। তখন আমি নতুন নতুন পশ্চিমবঙ্গের বইগুলো রেখে বাংলাদেশের নিজস্ব সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলাম। তো এই বইগুলোকে আমি মেজর কিছু সাহিত্যিক কাজ হিসেবে বিবেচনা করেছিলাম। বইমেলা আশার আগেই সংশপ্তক বইটা উপহার পাই। বইমেলা থেকে বাকি তিনটা বই কিনে যখন তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে সন্ধানী প্রকাশনীর খোজ করলাম তখন জানতে পারি এই প্রকাশনী এখন আর নেই। অন্য প্রকাশনী থেকেও আগুনপাখি বেড়িয়েছে। কিন্তু আমার মন আগুনপাখি বইটাকে অন্য প্রচ্ছদে মেনে নিতে পারছে না। আমার মনে হয় কিছু বই এর প্রচ্ছদ চেঞ্জ হলে তার ফ্লেভার ও চেঞ্জ হয়ে যায়। তাই সেবার এই বইটা না কিনেই ফিরে এলাম।
গত কয়েক বছরেও অনেক খোজাখুজি করে এই প্রচ্ছদটা পেলাম না। অবশেষে এক প্রিয় ছোটভাই খবর দিল ফেসবুক পেজে এই বইটা একজন বিক্রি করবে পুরনো সন্ধানী প্রকাশনীর সংস্করণ। এরপর আমি সেখানে কথা বলে জানতে পারি বইটা একজন ইতমধ্যে অর্ডার করে ফেলেছেন। এরপর আমি চেষ্টা করে নতুন বই এর বিনিময়ে এই পুরনো বইটা পেয়ে গেলাম। এরপর ও বইটা পড়তে পড়তে অনেকদিন চলে গেল।

অবশেষে আজ শেষ হয়ে গেল আমার সেই ছোট্ট লিস্টের শেষ বইটা। বইটা যে খুব ভালো অসাধারণ সেরা বা জোশ নতুন করে আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। আর আমি আসলে চাইলেও বলতে পারবো না।
আমার সংবেদনশীলতা সামান্য কম। সুখ-দু:খ, আনন্দ-বেদনা নানারকম অনুভূতি আমার কম আছে। অনেক বড় ঘটনাতে কষ্ট পেলে বা খুব খুশি হলেও সেটা আমার প্রকাশ করার ক্ষমতা কম।
এই বইটা পড়ার মাঝেই আমি জানতে পারলাম, বাস্তব জীবনে এমন অনেক অনুভূতি আমি অনুভব করতে পারি না যা বই পড়ার সময় নিজের মনের মধ্যে তোলপাড় করে। আমার সংবেদনশীলতাকে যেমন জাগ্রত করছে তেমনি বই আমাকে মানবমনের সূক্ষ্মতম অনুভূতি গুলো অনুভব করার সুযোগ করে দেয়।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Soumyabrata Sarkar.
238 reviews40 followers
September 19, 2014
An Uniquely Crafted Gem, with simple and ordinary language!

This tale of a common and almost uneducated, yet insightful woman, told in her own perception and terms, brings up a harrowing but satisfying tale of rural Bengal between the early and mid 20th century. We go through daily family chores, joys and sorrows, of her parental and in-laws family and that of her neighborhood too. Occasionally, the context of the country also comes up one or two times. Over the already depleted and sorry state of theirs, there were also the natural disasters of drought, flood and cyclone as well as of the partition. We see a steady formation of the main character over all the years she experienced and went through, celebrating her joys and success as well as crying her heart-out during calamities.

But it is only at the very end, that we see how powerful and self-sustaining she had became, that tiny and fragile rural woman secluded under the shadow of her huge father and their family, cut-off from the outer-world, turns to a self-dependent and respectable woman, with her own will, defying all others, who were bent on deceiving her by hook or crook, to take her away from her own place.

An awesome read, that became more excellent with the impeccable style of the ingenious language!
Recommended, obviously~!!
Profile Image for Sejuti Roshnai.
18 reviews2 followers
July 4, 2020
সংসারের খাঁচায় বন্দিনী এক নারী- কখনো এর বাইরে সে ভাবেনি, বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়িই ছিল তার জগত। এমন এক নারীর জীবনের বর্ণনা। শুরুতে বেশ সাদামাটা ছিল। সংসারে ঘটে যাওয়া শত উত্থান-পতনের গল্প হচ্ছিল বেশ- কিছু জন্ম, কিছু মৃত্যুর গল্পও ছিল সাথে। চোখের সামনে দেখল সংসারের সর্বোচ্চ অবস্থান। এরপরই দুর্ভিক্ষের ধাক্কায় সোনার সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল যেন। সকলের ভদ্রতার মুখোশ খুলে গেল, মুখোমুখি হলো সবাই অন্য রূপে। অচেনা মুখগুলোকে অবাক চোখে দেখল এই গৃহবধূ। স্বামী - যে হতে পারে একজন নারীর সবচেয়ে কাছের জন, সে-ই যেন তার নয়। অশিক্ষিত, মূর্খ এই নারীর ভেতরে যে এত আগুন, তা কে-ই বা জানতো। দেশভাগের আগে হিন্দু-মুসলমান দাঙায় ভেঙে পড়ল সমাজব্যবস্থা। রাজনৈতিক পটভূমিতে তখন ভাঙনের সুর। হাঁড়ি ঠেলতে ঠেলতে এত খবর রাখার কি জো আছে গ্রামের এক নারীর? হঠাৎ শুনল দেশভাগ হয়েছে৷ বুঝেই সে কূল পায় না, দেশের আবার ভাগ কী? এখানেই তো ছিলাম জন্ম থেকে, অন্য কোন দেশ আবার? এই ধারণা মাথাতেই ঢুকল না তার। বদলে গেল সাদাসিধে এই নারীর মন, সারাজীবন সংসারের ঘানি টেনে দিনশেষে বেছে নিল সে অন্যরকম একটা জীবন।
Profile Image for Mohammad Thowhid.
57 reviews8 followers
March 29, 2025
পাঠ্যানুভূতি: নিরক্ষর এক সাধারণ গৃহিণীর ভাষ্যে জীবনকথা। যে ভাষ্যে উঠে এসেছে প্রবহমান এক ধারা। যে ধারা সময়ের। সে ধারা মায়ার। হাসান আজিজুল হক খুব সুন্দর করে রাঢ়ভাষায় এক নারীর জীবন এঁকেছেন। আমার মতে সে অলংকরণ শতভাগ সফল। সুন্দর, সাবলীল সে ভাষ্য। কোথাও থমকে যেতে হয়নি। একটুও বিরক্ত লাগেনি। গ্রামাঞ্চলে বেড়ে ওঠার বদৌলতেই বোধহয়— অনেক ঘটনার সঙ্গেই মিল পেয়েছি, “আরে! এটা তো আমিও অনুভব করেছি, দেখেছি!”
বাপের বাড়ি ছেড়ে নারীর এক নতুন জীবন শুরু হয় ‘পরের’ বাড়িতে। আজীবনই সেই বাড়ি ‘আলগা’ লাগে। নিজের মনে হয় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে যে গাছ ডালপালা মেলতে মেলতে নিজেকে ছাড়িয়ে কখন যে মায়ায় জড়িয়ে যায়, সে গাছ কি জানে? মাটিকে ভালোবেসে অন্য কোথাও যেতে পারে কই! অথচ যাঁর আশায় সে ডালপালার বিস্তার করেছিল, সে স্বামীও তো মায়া ছেড়ে চলে যেতে পারেন। তাহলে সে কীসের জন্য বাঁধে খেলাঘর? না কি প্রথম খোঁকার মায়াই মাটির মায়ায় মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে! বোঝা দায়।

মার্চ ২৭, ২০২৫, বৃহস্পতিবার।
Profile Image for Imtiaz Emu.
60 reviews33 followers
May 28, 2019
ইদানিং কিছু বই পড়ার পর মনে হচ্ছে যে, যে সময়টা বই পড়ার উপযুক্ত সময় ছিল, সে সময়টা আলতু ফালতু বই পড়ে সময়টা নষ্ট করেছি। আগুনপাখি হচ্ছে সেরকম একটা বই যা আমাকে এ ধরণের উপলব্ধি করতে বাধ্য করেছে। আমি কখনোই পিডিএফে বই পড়তে পারি না। সর্বোচ্চ ৭/৮ ফর্মার ছোট গল্প সংকলন পড়া যায়, কিন্তু প্রায় ১৬ ফর্মার আগুনপাখি আমি পিডিএফে পড়েছি! কারণ আমি বইটা রেখে উঠতে পারি নি। ট্রেনে দাড়িয়ে এক হাতে ফোন অন্যহাতে হ্যান্ডেল ধরে মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়েছি "আগুনপাখি"। এমনকি বাথরুমে পর্যন্ত মোবাইল নিয়ে পড়েছি!!
একজন সাহিত্যিকের অনেকগুলো বই লাগে না সেরা হতে। হাসান আজিজুল হক এক আগুনপাখি লিখেই সেটা প্রমাণ করলেন। তার নাম আমার আজীবন মনে থাকার জন্য এ একটা বইই যথেষ্ট!
Goodreads এর কাহিনী সংক্ষেপ দেখে পড়া শুরু। কিন্তু ১০০ পৃষ্ঠা যাবার পড়েও কাহিনী সংক্ষেপের সাথে সামঞ্জস্য খুজে পেলাম না। কারণ? লেখক উপন্যাসটার ঘাড়টা চেপে ধরেছেন ১৯০০ সাল এর শুরুর দিকে। বর্ধমানের এক আটপৌরে কন্যাশিশু যে পিতৃভয়ে কাতর। স্বল্পবয়সে মা হারিয়ে যখন কোলের ভাইটিকে মানুষ করার দায়িত্ব নিলো তখনই গল্পের শুরু। সৎ মা এর আদরে মুগ্ধ কিশোরী আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো সময়ের সাথে। অল্পবয়সে বিয়ে হলেও স্বামীর একান্নবর্তী পরিবারের জোয়াল নিজের কাঁধে তুলে নিতে দ্বিধা করেনি গল্পের বক্তা এই আটপৌরে কিশোরী। বর্ধমানের গ্রাম্য ভাষায় নিজের সরল স্বীকারোক্তিতে একটি ডায়েরী লিখেছেন যেন এই নারী। হঠাৎ করেই কিশোরী থেকে নারী হয়ে উঠার পেছনে সংসার, স্বামী, সন্তান এবং পারিপার্শ্বিকতার ব্যাপক প্রভাব লক্ষনীয়। সময় যেতে যেতে একসময় সংসারের উত্থান এবং ভাঙ্গন সবই যেন কালের পরিক্রমায় চক্রাকারে পাঁক খেতে থাকলো সে মুসলিম নারীর জীবনে। সে পাঁকে শুরু তার সংসার নয়, আবর্তিত হলো দেশ, স্বাধীনতা, বিশ্বযুদ্ধ।
বয়সকালে এসে দেখলেন - মুসলিম হত্যা করছে হিন্দুদের, হিন্দু হত্যা করছে মুসলিমদের! নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখলেন - "এই মানুষ নাকি আবার বুদ্ধিমান পেরানি"। ১৯৪৭ এর স্বাধীনতার ডামাডোলে সকলকে সরে যেতে দেখলেন। দেখলেন দেশ ভাগ। নিজের স্বামী, সন্তান কারো কাছ থেকেই এই পোড় খাওয়া নারী পেলেন না একটি সহজ উত্তর - "আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না ক্যানে আলাদা একটো দ্যাশ হয়েছে গোঁজামিল দিয়ে যেখানে শুধু মোসলমানরা থাকবে কিন্তু হিন্দু খেরেস্তানও থাকতে পারবে। তাইলে আবার আলাদা কিসের?"
বর্তমান সময় প্রশ্নটা একদম অবাঞ্ছিত মনে হলেও তৎকালীন সময়ে এই সহজ প্রশ্নের উত্তর কারো কাছেই ছিলো না। জিন্নাহ সাহেবের পাকিস্তান আলাদা করেছিল পুরো ভারতবর্ষকে। খালি করেছিল মা এর বুক, ত্যাগ করেছিল পরিবার। কতটা আর্তনাদ বুকের ভেতরে চাপা থাকলে সেটা সরল প্রশ্নে হাহাকারের মত বেরিয়ে আসে তার প্রকৃক প্রতিচ্ছবি আগুনপাখি।
বইটা শেষ করে উঠতেই চোখটা ভিজে যাবার অবস্থা হলো, বুকটা গুমড়ে উঠলো - ঠিক উপন্যাসের বক্তা নারীটির মতো যার নামকরণের কোন চেষ্টাই ঔপন্যাসিক করেন নি।

এই মহিলা, যিনি আজীবন মুখ বুজে কেবল পিতা বা স্বামী বা শাশুড়ীর আদেশই পালন করে গেলেন। নিজের কোন অভিমত কোন বিষয়ে দিতে গেলেন না এবং তা হাসিমুখেই, সেই একই মানুষ তার সমস্ত জীবনের সবটুকু অভিজ্ঞতা নিয়েই সবার বিপরীতে, সবার অমতে আঁকড়ে রইলেন তার দেশের মাটি।

হায়, মুসলিমরাষ্ট্র এবং হিন্দুরাষ্ট্র এই দ্বিজাতিতত্ত্বের অসাড়তা, অবাস্তবতা এবং অকার্যকরিতা ভারতবর্ষের হাজারো সাধারণ মানুষ মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করলেও, করে নি দেশের হর্তা কর্তারা। তার ফলশ্রুতিতেই এই নারী তথাপি লেখকের বুকভাঙ্গা কান্নার ইতিহাস আগুনপাখি যার সাথে জড়িত হয়েছে সমাজ, সংসার, আবেগ, ভালোবাসা ও কিছু স্মৃতির টুকরো ছবি।
Profile Image for Nasrin Shila.
266 reviews88 followers
April 2, 2019
বইটা আঞ্চলিক ভাষায় লেখা। প্রথমদিকে পড়তে একটু সমস্যা হচ্ছিল। কিন্ত এত সাবলীল লেখা যে, কিছুক্ষণের মধ্যেই গল্পের মধ্যে ঢুকে যেতে কোন সমস্যা হয়নি। দুর্ভিক্ষ, দাংগা, দেশভাগ, যে সময়গুলোর কথা পড়তে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে, সবচেয়ে বেশি অসহায় লাগে নিজেকে, সেসবগুলোর কথাই এই বইতে আছে।
"আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না ক্যানে আলেদা একটো দ্যাশ হয়েছে গোঁজামিল দিয়ে যিখানে শুধু মোসলমানরা থাকবে কিন্তুক হিঁদু কেরেস্তানও আবার থাকতে পারবে। তাইলে আলেদা কিসের?"
দুর্ভিক্ষের কথা পড়লে আমার বিশ্বাস হতে চায় না সত্যিই এমন কিছু হয়েছে মাত্র কয়েক দশক আগে! সারাদিন অনলাইন পেইজের পোশাকের ছবি আর রেস্টুরেন্টের আনলিমিটেড খাওয়ার অফার দেখলে কিভাবে বিশ্বাস হবে যে, মানুষ একসময় কাপড়ের অভাবে দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হত না??
কলকাতার মানুষের কিপটেমি নিয়ে আমাদের এখানে অনেক কৌতুক প্রচলিত। তারা আস্ত মাছ কিনে না পিস কিনে, দাদা খেয়ে এসেছেন না গিয়ে খাবেন, যারা এসব বলে তাদের এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন, দেশভাগ পরবর্তী এবং মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার পর কলকাতায় খাবারের কি আকাল হয়েছিল তা পড়তে দেয়া উচিত। এসব যারা ভোগ করেছে, তারা মাছ পিস হিসেবে কেন, মাছ না খেলেও দোষ দেয়ার কিছু নেই!
পুরো বইটা একজন নারীর জবানীতে লেখা। কম বয়সে বিয়ে হয়েছে, যৌথ পরিবারে থেকেছে, স্বামী যা বলেছে তাই শুনেছে, কিন্ত শেষে যেভাবে সে ঘুরে দাঁড়ালো তা সত্যিই বিস্ময়কর। তার একটা কথা এখনকার মেয়েদের জন্যও শিক্ষণীয়। "আমি আর আমার সোয়ামী তো একটি মানুষ লয়, আলেদা মানুষ। খুবই আপন মানুষ, জানের মানুষ, কিন্তুক আলেদা মানুষ। "
কিছু কিছু বই পড়ার পর অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয় না? কি যেন নেই, কি যেন শেষ? অনেকদিন পর কোন বই পড়ে সেরকম অনুভূতি হলো।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
April 3, 2023
একজন সহজ সরল গ্রাম্য মেয়ে। মধ্যবৃত্ত সচ্ছল পরিবারে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। দুই বছরের ছোট ভাইকে ও তাকে রেখে মারা যায় তার মা। পরিবারের অবস্থা তখন ছন্নছাড়া। বাবা রাশ ভারী একটু পড়ালেখা জানা মানুষ। তারা বাবা একটু লেখালোখিও করতো তবে সে লেখার কাগজ যত্নের অভাবে হারিয়ে যায়।

তার বাবার এক খালা তাদের বাড়ীতে থাকলেও, তাকে দাদীর কাছে যাওয়াটা ভালো চোখে দেখতো না তার বাবা। তবে দাদীর সব সম্পত্তি মরার আগে তাকেই দিয়ে যায়।

সংসারটাকে ধরে রাখতে তার বাবা আবার বিয়ে করে। সংসারে নতুন মা আসলেও তারা সৎ মা পায় না নিজের মাকেই পায়। তবুও তার ছোট ভাইটি তার কোল ছাড়া হয় না।

সৎ মায়ের কাছে ভালো থাকবে না এটা মনে করে মামারা এসে তার ভাইকে নিয়ে যায় এবং তার বিয়ের বয়স হওয়াতে তাকেও বিয়ে দিয়ে দেয়। আর তখনকার সময়ে মেয়ের অনুমতির দরকার মনে করতো না পরিবারের লোকেরা। তাই তার অনুমতি না নিয়েই চুপচাপ গম্ভীর এক ছেলের সাথে বিয়েটা দিয়ে দেয়। সে বাড়ীর মেঝ ছেলে। সুন্দর সাজানো শ্বশুর ছাড়া শ্বাশুড়ীর রাশ ধরা সংসারের ঘানিতে এসে পড়ে মেয়েটি।

লেখাপড়�� না জানা এই মেয়েটি স্বামীকে ভয় পেলেও তার কাছেই বর্ণ পরিচয়টা পায় ও বানান করে পড়তে শিখে ফেলে। পড়তে শেখার ফলেই সে শহর থেকে আসা খবরের কাগজ পড়ে এটুকু বুঝতে পারে দূরে কোন দেশে রাজার সাথে যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং সে যুদ্ধটা আস্তে আস্তে আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে।

লেখকের এটা প্রথম উপন্যাস আর উনার লেখা আমার পড়া দ্বিতীয় উপন্যাস। এক নারীর জবানীনে লেখা এই উপন্যাস। আমাদেরকে দাড় করিয়ে দিয়েছে দেশ- কাল-ইতিহাসের মুখমুখি। সরল নারীর জবানীতে ফিরে যেতে হয়েছে সাতচল্লিশ-পূর্ব অখন্ড সে ই ভুবনডাঙ্গার উত্থান পতন, নির্মান ও ক্ষয়। ভাষা তার সহজ সরল আঞ্চলিক।

জীবন মন্থনের ফলে উঠে আসা অমৃত ও গরল যার সবটুকু নিজেরই বিষয়, রাঢ়বঙ্গের ধুলি ধূসরিত এক নারীর জবানে পাওয়া।

একের পর এক রাজনৈতিক উত্তাপ ও জাগরন, বিশ্বযুদ্ধের অসহ্য তাপ, লঞ্ছিত মনবতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শেষাবধি দেশ ভাগ ঝলসে দেয় কোটি মানুষের হৃদয়। একই সাথে পাল্লাদিয়ে প্রকৃতির খরা বন্যা মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ।

সহজ সরল এক নারীর নিজের স্বামী সন্তান ত্যাগ করে বসতবাড়ী আগলে থেকে দেশ ত্যাগে অস্বীকার করাটা ভ্রান্ত রাজনীতি ও অসার দেশভাগের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ।

লেখক আজিজুল হকের লেখা মানে নতুন চিন্তা চেতনা। লেখকের ভাষা ও রচনা কৌশলের এই "আগুন পাখি" বাংলা সাহিত্যের এক নতুন মাত্র।

দেশ ভাগ নিয়ে কয়েকটা বই পড়া তবে প্রতিটা বই নিজের জায়গা থেকে আলাদা। অনেক ভালোলাগা ছুয়ে থাকা বইটা। অনেক শুনেছি বইটার কথা। না পড়লে বোঝা যাবে না কি...
Profile Image for Ashis Saha.
106 reviews27 followers
July 1, 2023
যেনো দাদির মুখে গল্প শুনলাম - সন-তারিখের বালাই নাই, তবে জীবনের বয়ে চলা আছে। ইতিহাসের কপচানি নাই, তবে জীবনের নিপুন ছবি আছে, অনুভূতির গভীরতা আছে।
Profile Image for Anika Tabassum.
5 reviews23 followers
June 28, 2021
বইটি আঞ্চলিক ভাষায় লেখা হওয়ায় প্রথমে বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো, তবে অভ্যস্ত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। একটি কোর্স এর রিডিং টাস্ক হিসেবে বইটি পড়া শুরু করলেও, মুগ্ধ হয়েই বইটি শেষ করেছি।
.
.
.
বইটি তে আছে রোগ শোকের কথা, আছে যুদ্ধের কথা, আছে, আছে উপনিবেশের কথা, দেশভাগের কথা। কিন্তু সব কিছুই অনেক দুরের ঘটনা গ্রামের পড়ালেখা না জানা গল্পের মূল চরিত্রের কাছে৷ নিজের বাবার বাড়ি, ভাইবোন, নতুন মা, বিয়ের পর নিজের সংসার আর স্বামীর বাড়ির নানান মানুষ নিয়ে তার কথা। স্বামীর বাড়িতে মেজবৌ সে, স্বামীর কাছে কিছু পড়তে শিখছে। বাইরের দুনিয়ার কত কথা সে স্বামীর কাছে শুনেছে, কাগজে পড়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু ঠিক কি হচ্ছে বাইরের দুনিয়ায় তা ঠিক করে বুঝা বেশ কঠিন। নিজের আশেপাশে যা আছে তা নিয়েই তার ছোট জগৎ। কিন্তু সেই ছোট জগতে ও চির পরতে শুরু করে কালের বিবর্তনে, আর তার শেষ হয় দেশভাগের পর। এক এক করে সব ছেলে মেয়ে দেশান্তরি হওয়ার পর স্বামী ও অন্যদেশে পাড়ি দিতে প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু মেজ বৌ তার পুরানো ঠিকানা ছেড়ে যেতে নারাজ৷ সবাই যখন পাড়ি দিচ্ছে নতুন ঠিকানায় তখন তার শুধু একটু বুঝতে চাওয়া,

"আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না যি সেই দ্যাশটো আমি মোসলমান বলেই আমার দ্যাশ আর এই দ্যাশটি আমার লয় । আমাকে আরো বোঝাইতে পারলে না যি ছেলেমেয়ে আর জায়গায় গেয়েছে বলে আমাকেও সিখানে যেতে হবে । আমার সোয়ামি গেলে আর আমি কি করব ? আমি আর আমার সোয়ামী তো একটি মানুষ লয় , আলেদা মানুষ। খুবই আপন মানুষ, জানের মানুষ , কিন্তুক আলেদা মানুষ ।"
Profile Image for অলকানন্দা .
109 reviews5 followers
August 8, 2022
হাসান আজিজুল হক বাংলা সাহিত্যের এক শক্তিশালী নাম, আর তার রচিত "আগুনপাখি" উপন্যাসটি তারই দৃঢ় লেখনশৈলীর প্রতিফলন। উপন্যাসটি বিংশ শতাব্দীর রাঢ়বাংলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের পটভূমিকায় রচিত, যেখানে একে একে ঠাঁই করে নিয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসন, ২য় বিশ্বযুদ্ধ, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা, দেশভাগের মত গুরুত্বপূর্ণ সব প্রেক্ষাপট।

মনে করুন, আপনার যাপিত সুখ-দুঃখে মোড়ানো রোজকার জীবনে হঠাৎ করেই যদি শোনেন, দেশটা ভাগ হতে যাচ্ছে, কীরকম অনুভূতি হবে আপনার? আজ যে মাটির উপরে আপনার ঠাঁটবাট, যে আকাশের নীচে আপনি মুক্তচিত্তে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচছেন, তা হয়ত একই থাকবে, কিন্তু ভাগ হয়ে যাবে দেশটি, সম্পূর্ণ দুই ভিন্ন ভাগে! দেশ ও মাটিকে ঘিরে আপনার চিরায়ত চেতনা এবং অনুভূতিগুলোও কি এমনই খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যাবে? নাকি আপনি সেগুলোকে সযতনে মুড়িয়ে রেখে দেবেন নিজের মনের একান্ত প্রকোষ্ঠে, যেমনটি রেখে দিয়েছিলেন "আগুনপাখি" উপন্যাসের মূখ্য চরিত্রে থাকা নামবিহীন সেই নারী।

তৎকালীন রাঢ়বঙ্গ, অর্থাৎ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গাঁয়ের সহজ সরল সাধাসিধে মাতৃহারা কিশোরী, বিয়ের পর মেঝবউ হিসেবে যার ঠাঁই হয় এক একান্নবর্তী সংসারে। বাবা, সৎ মা, আপন ভাইকে ফেলে "কন্যা-জায়া-জননী" নামক বাস্তবিক সম্পর্কচক্রে আবর্তিত হয়ে ঘরকন্না করছিলো সে বেশ। আদর্শ জীবনসঙ্গীর কল্যাণময় প্রভাবে নিরক্ষর সেই নারীর জীবনে আসে শিক্ষার আলোও। একইসাথে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ছোঁয়া তাকে করে তোলে স্বশিক্ষিত, চরিত্রে এনে দেয় স্বতন্ত্রতার ছোঁয়া। গাঁয়ে ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সকলের মাঝে থাকা সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধন সুস্পষ্টরূপে প্রতিফলিত হয় তার ঋজু ব্যক্তিত্বেও।

কিন্তু কালের আবর্তন তো থেমে থাকে না, এর রেশ পড়ে পরিবার, সমাজ তথা গোটা দেশেই। ২য় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে প্রভাবিত হয় পুরো পৃথিবী, থেমে থাকেনা ভারতবর্ষও। গাঁয়ের সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষগুলোর পেটে বহুকাল পড়েনা দানাপানি, হুহু করে বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্যের দাম। এর প্রভাব কাটতে না কাটতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের করাল গ্রাস বাড়িয়ে দেয় গ্রামবাসীর হাহাকার। এরপর একে একে আসে সাম্প্রদায়িক আঘাত-সংঘাত, ব্রিটিশ শাসন সংক্রান্ত নানান রাজনৈতিক উত্থান পতনের বেড়াজাল। যুদ্ধ আর অভাবজনিত তাড়নায় কালক্রমে মায়ায় ঘেরা যৌথ সেই পরিবারটিতে ভাঙন দেখা দেয়, ভেঙে যায় দেশটাও।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, পুরো উপন্যাসের সারগর্ভ শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। একজন পাঠক হিসেবে উপন্যাসটিকে ���ুঝতে হলে সবার আগে এর কেন্দ্রীয় তথা মুখ্য চরিত্রের গভীরতাকে আপনার হৃদয়ঙ্গম করা খুবই প্রয়োজন। এবং বলাই বাহুল্য, আগুনপাখি উপন্যাসটি আগাগোড়াই আবর্তিত হয়েছে সেই অনন্যসাধারণ, দৃঢ় চরিত্রের অধিকারিনী মেঝবউকে কেন্দ্র করে, যার সারল্যভরা আঞ্চলিক ভাষার বয়ানে বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসটি। গোটা উপন্যাসের ভাষাশৈলীর দিকে যদি আমরা আলোকপাত করি, তাহলে এটি সহজেই অনস্বীকার্য যে, রাঢ়বঙ্গের এই আঞ্চলিক ভাষা গোটা উপন্যাসে এক ভিন্নমাত্রার আবহ যোগ করেছে, যে আবহ প্রতিটি পাঠককে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকেই দেশমাতৃকার প্রতি নিবিড় টান অনুভব করাতে বাধ্য।

সংসার মানে জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে-বিচ্ছেদ নামক চক্রই নয়, বরং একটি মায়ার আখ্যানও। আর গোটা উপন্যাসজুড়ে মায়াবতী সেই মেঝবউটি একাধারে তার বিয়ের আগের ও পরের জীবনের কথা, তার স্বামীর কর্মজীবনে সাফল্যের কথা, সন্তান হারানোর বেদনার্ত সময়ের কথা, শাশুড়ি-ভাসুর-দেবর-জা-ছেলেমেয়ে পরিবেষ্টিত পারিবারিক পরিমন্ডলের কথা বয়ান করে গেলেও একটিবারের জন্যেও নিজের একান্ত ইচ্ছা তথা সত্ত্বাকে সামনে আনতে দেন নি। কেননা তিনি টুকরো টুকরো হয়ে মিশে ছিলেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে, এক এবং অভিন্ন সত্ত্বা হয়ে। তার বয়ানটিই ছিলো এরকম,

'জেবনের কুনো কাজ নিজে নিজে করি নাই, নিজের ইচ্ছা কেমন করে খাটাতে হয় কুনোদিন জানি নাই। আমি কি মানুষ, না মানুষের ছেঁয়া? তা-ও কি আমার নিজের ছেঁয়া?'

এবার পারিবারিক পরিমন্ডল থেকে আলোকপাত করা যায় সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের দিকে। উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ছিলো তৎকালীন ব্রিটিশ শাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং এর ফলশ্রুতিতে ঘটা ৪৭ এর দেশভাগ, আর সব পরিবারের মত যার প্রভাব পড়ে সেই একান্নবর্তী পরিবারটিতেও, এবং কালক্রমে একে একে আলাদা হয়ে যায় সব সদস্য, নিজেদের অস্তিত্বের টানে। কিন্তু শেকড় ভুলতে পারেন না আমাদের সেই অসাম্প্রদায়িক মেঝবউ, কেননা তিনি তো পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকেই শুধুমাত্র অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য ছিলেন না, ছিলেন তো সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও। তাই দেশান্তরিত হবার প্রসঙ্গে তার বয়ান ছিল এরূপ--

“চারা গাছ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় লাগাইলে হয়, এক দ্যাশ থেকে আরেক দ্যাশে লাগাইলেও বোধয় হয়, কিন্তুক গাছ বুড়িয়ে গেলে আর কিছুতেই ভিন মাটিতে বাঁচে না।“

এই বলে সকল বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তিনি একাকী রয়ে যান ভারতে, নিজের ভিটেমাটিতে।

তার স্বকীয়তা, চারিত্রিক মৌলিকতা তার দগ্ধ মনে একের পর এক প্রশ্নের সঞ্চার ঘটায়--

'আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না ক্যানে আলেদা একটো দ্যাশ হয়েছে গোঁজামিল দিয়ে যিখানে শুদু মোসলমানরা থাকবে, কিন্তুক হিঁদু কেরেস্তানও থাকতে পারবে। তাইলে আলাদা কিসের?
আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না যি সেই দ্যাশটো আমি মোসলমান বলেই আমার দ্যাশ আর এই দ্যাশটি আমার লয়।'

উপন্যাসটি পড়তে যেয়ে থেকে থেকে চোখ ভিজে এসেছে আমার, আমি অনুভব করেছি গোটা দেশকে নিজের ব্যক্তিত্বের মাঝে ধারন করা নামবিহীন এই নারীর মধ্যকার স্নিগ্ধ অথচ দৃঢ় সেই মায়াকে, যে মায়া তাকে তার শেকড়কে প্রত্যাখ্যান করতে শেখায়নি, বরং প্রত্যাখ্যান করতে শিখিয়েছে সাংসারিক, সাম্প্রদায়িক এবং রাজনৈতিক ডামাডোলে পিষ্ট হওয়া সেই ভঙ্গুর সমাজকে, যেখানে জোর করে চাপিয়ে দেয়া কিছু নিয়মনীতি ছাড়া আর কিছুরই ঠাঁই নেই যেন।

হাসান আজিজুল হক তার একটি সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেছেন, দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে তার মা এবং তার মতো হাজারো নারীর গড়ে উঠা অস্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্বের শ্রদ্ধামিশ্রিত প্রতিফলন "আগুনপাখি", যাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন মেঝবউ। কথায় আছে, বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলেই পরিচয়। লেখক বোধহয় এই কথাটি মাথায় রেখেই আপন মনের শ্রদ্ধামিশ্রিত রঙ তুলির ক্যানভাসে এঁকেছেন এই নারীর চরিত্র। যার মূল্যায়ন অবশ্যই শুধুমাত্র তার নাম দিয়ে করা যথেষ্ট নয়।

পাঠ প্রতিক্রিয়া
উপন্যাসের নামঃ আগুনপাখি
লেখকঃ হাসান আজিজুল হক
ধরনঃ চিরায়ত উপন্যাস, পারিবারিক-সামাজিক উপন্যাস, ইতিহাসআশ্রিত উপন্যাস
প্রথম প্রকাশঃ ২০০৬
প্রকাশনীঃ সন্ধানী প্রকাশনী
মোট পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১৫৮







Profile Image for Chayan Biswas.
35 reviews13 followers
June 6, 2019
বইঃ আগুন পাখি
লেখকঃ হাসান আজিজুল হক

আমি গ্রামের ছেলে। গ্রামে বাস করে অনেক কিছু বুঝতে শিখছি যা শহরে থাকলে আমি কখনো শিখতে পারতাম না। হয়তো আধুনিক হতাম কিন্তু গ্রামের শেকড় আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত আমি আধুনিকের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হতাম। গ্রামের প্রত্যেক পরিবারেই কিছু কাহিনী থাকে, কখনও থাকে কলঙ্কও।পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও থাকে দু-একটি স্বার্থশূন্য চরিত্র, কিছু নীরব নিরুচ্চার ব্যাক্তিত্ব, এবং প্রবল কর্তৃত্ব-সম্পন্ন একটি মানুষ, হয়তো তারই সঙ্গে কিছু আশ্রিতজন, কিছু অলস, সুযোগ-সন্ধানী লোক - সবাইকে নিয়েই চলে পারিবারিক পরিক্রমা। গ্রামে মূলত একান্নবর্তী পরিবার বেশী দেখা যায়, যেখানে সবার ভাত এক হাড়াতে রান্না হয় এবং খাওয়ার সময় সবাই এক সাথে খায়। বর্তমানে গ্রামে একান্নবর্তী পরিবার তেমন দেখা যায় না তবুও গ্রামে যারা বসবাস করে তাদের পরিবারের মধ্যে বন্ধন অটুট থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। কিছু জন্ম, কিছু প্রত্যাশিত, কিছু বা অপ্রত্যাশিত মৃত্যু; অথচ জন্মমৃত্যু যে অদৃশ্য এক সূতোয় গাঁথা, সেই সূতোটিও যেন ঘটনাস্রোতের আবর্তে দৃশ্যমান হয়।

বর্ধমান-বাঁকুড়া অঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বধূর জবানিতে তারই আঞ্চলিক কথায় যে উপন্যাসটি লিখেছেন লেখক হাসান আজিজুল হক, বহমানতায়, সততায়, নিরঙ্কুশ পবিত্রতায়, ক্ষুরধার চরিত্র-চিত্রণে তা হয়ে উঠেছে এক অতুলনীয় মানবিক চিত্রপট। উপন্যাসে একটি একান্নবর্তী মুসলিম পরিবারের উত্থানপতনের এক পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। গ্রামের একটা মেয়ে বড়-হয়ে-ওঠার-আগেই-বিয়ে-হয়ে-যাওয়া একটি সাধারণ মেয়ের আশা-আকাঙ্ক্ষা, মান-অভিমান, স্বপ্ন-সুখের নিরুপম আমরা 'আগুনপাখি'-তে পাই।

প্রথম মহাযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে শুরু হয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, বিলিতি পণ্য বর্জন, তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, সাতচল্লিশের দেশ বিভাগ এবং দু-দুটো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে উপদ্রুত পল্লীবাংলার একটি সাধারণ মুসলিম পরিবারের আরও সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দীক্ষাহীন নারীর আঞ্চলিক বয়ানে বিশিষ্ট হয়ে ওঠা এক ইতিহাসের নাম "আগুনপাখি"

ছোট-বয়সে বিয়ে হয়েছিল মেয়েটার। অনেক কিছু বোঝবার আগেই। কিন্তু বিস্ময়-বোধের আশ্চর্য ক্ষমতা তাকে কখনও ছেড়ে যায়নি। তাই তার জীবন এত বর্ণময়, অনুভূতি-বোধ এত গভীরগামী। নতুন স্বামীকে নিয়ে যেমন তার মুগ্ধতার শেষ নেই, তেমনই সে চমৎকৃত তার শাশুড়ি-মার ব্যক্তিত্বে এবং নেতৃত্ব দেবার স্বাভাবিক ক্ষমতায়। আবার সংসারের জাঁতাকলে পড়ে তার বিরক্তির অভিব্যক্তিও অতি স্বাভাবিক। বহু-প্রসবিনী এই নারীর বাৎসল্যরসে শেষ পর্যন্ত কোনও ফাঁকি পড়েনি, ফাঁকি পড়েনি সাংসারিক কর্তব্যে। তার আগমনের পরে উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে সংসারের: ধনে-জনে-শস্যে-সম্পদে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়েছে তাদের পরিবারটি। সেই তুমুল সুখের জীবনেই হঠাৎ কোন দুনিয়ার যুদ্ধের ছায়াও লাগে। হঠাৎ পরনের কাপড়ে বড্ড কমতি পড়ে যায়। সেই সাথে স্বদেশী আন্দোলনে একাত্ব হয়ে মোটা কাপড় পরা শুরু হয়, একদিন সেই কাপড়ও আর যেন জোটে না। সূতা-রং আর অন্যান্য কাঁচামালে��� অভাবে বন্ধ হয়ে যায় দেশী তাঁত। এর মাঝে "ওলাবিবি" আর "মা-শেতলা"ও ছাড়ে না গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে তারা কলেরা আর বসন্তে নিঃশেষ করে দিয়ে যায় গ্রামকে গ্রাম। প্রকৃতিই বা ছাড়বে কেন? পরপর দু'বছর ফসল হয় না--একবার খরায়, একবার অতি বর্ষনে। হায় আকাল। তবু এই করেই দিন যায়। দুঃখ-কষ্টে ভেঙে ছত্রখান হয়ে যায় সেই বিশাল সংসার, সবাই আলাদা, যার যার মত। আকাল কাটে, আসে নতুন দুর্দিন। দেশে স্বাধীনতার আন্দোলনের মাঝে কে যেন রব তোলে মোসলমানের আলাদা দেশের দাবি তুলে। শুরু এক সম্পূর্ণ নতুন যুদ্ধ, হিন্দু-মোসলমানের যুদ্ধ। দিকে দিকে হিন্দু আর মোসলমান একে অপরকে মেরে কেটে এতদিনের সহাবস্থান সব ভুলে যায়, ভারতবর্ষ স্বাধীন করে দেবার আগে ব্রিটিশদের শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়। আসে স্বাধীনতা, আর ভেঙে টুকরো টুকরো হয় ভারতবর্ষ। মেতর-বউ এর কাছে তা যে কী নিদারুণ বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়াল, তা প্রচ্ছন্ন রয়েছে উপন্যাসের প্রতিটি কথায় -

(১) "তাইলে সব্বোনাশ কি এমনি করেই শুরু হয়? চুলের মতন সরু একটো চিড় কোথা যেন ছিল, চোখে দেখতেই পাওয়া যেত না। পেথম দিন দেখে মনে হলো, কই, আগে কুনোদিন দেখি নাইত, পরের দিন দেখছি, ওমা, তার পাশে আর একটো চিড়, তারপর দেখতে দেখতে অ্যানেক অ্যানেক চিড় সব জায়গায় - কখন হলো, কি হলো, কেমন করে হলো ভালো করে কিছু বোঝার আগেই একদিন বড় বড় ফাটল ধরে জিনিশটো চৌচির হয়ে ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সোংসারে ও কি তাই হতে যেচে?"

(২) "সোংসারের ভেতরটো এইবার তাকিয়ে দেখতে প্যালম আর সোংসারের মধ্যে মানুষ কি, তা-ও দেখলম। কুকুরবেড়ালের ছেঁড়াছেঁড়ি দেখে রাগ করি, কিন্তুক মানুষ কুকুর-বেড়ালের চাইতে কিসে ভালো? মূলে টান পড়লে সবাই সমান। সেই মূল হচ্ছে প্যাট।"

দেশভাগের পরে সবাই যখন আলাদা হয়ে যাওয়া মোসলমান দেশ পাকিস্তানে যেতে শুরু করলো, তখন নিজের দেশে বসে থেকে তিনি ভাবেন- "আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না ক্যানে আলাদা একটো দ্যাশ হয়েছে গোঁজামিল দিয়ে যিখানে শুদু মোসলমানরা থাকবে কিন্তুক হিঁদু কেরেস্তানও আবার থাকতে পারবে। তাইলে আলাদা কিসের? আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না যি সেই দ্যাশটো আমি মোসলমান বলেই আমার দ্যাশ আর এই দ্যাশটি আমার লয়। আমাকে আরো বোঝাইতে পারলে না যি ছেলেমেয়ে আর জায়গায় গেয়েছে বলে আমাকেও সিখানে যেতে হবে।"

মধ্যমপুত্র যখন তার মাকে শেষবারের মতো বোঝাতে এল কেন তার সবার সঙ্গে এদেশ ছেড়ে পাড়ি দেওয়া উচিত সীমান্তের ওপারে, তখন তার জিজ্ঞাসা প্রায় আর্তির স্তরে পৌঁছে যায় - "একই দ্যাশ, একইরকম মানুষ, একইরকম কথা, শুধু ধম্মো আলেদা সেই লেগে একটি দ্যাশ একটানা যেতে যেতে একটো জায়গা থেকে আলেদা আর একটো দ্যাশ হয়ে গেল, ই কি কুনোদিন হয়? এক লাগোয়া মাটি, ইদিকে একটি আমগাছ একটি তালগাছ, উদিকেও তেমন একটি আমগাছ, একটি তালগাছ! তারা দুটো আলেদা দ্যাশের হয়ে গেল?" এই প্রশ্নের উত্তর মেজ খোকার জানা ছিল না। তার মা'র তো নয়ই। তার বাবারও নয়। যে'সব 'বুড়ো খোকারা' 'ভারত ভেঙে ভাগ' করেছিলো, তারা জানতে চায়ওনি। আমরা স্বাধীন ভারতে জন্মে রক্তের দাগ দেখিনি বটে, কিন্তু শুকিয়ে যাওয়া চোখের জলের দাগ দেখেছি বই কি?

পাঠ-পর্যালোচনাঃ কিছু কিছু বই আছে অন্তরে দাগ রেখে যায়। হাসান আজিজুল হকের আগুন পাখি উপন্যাসটা ও তেমন। পুরো উপন্যাস বর্নিত হয়েছে কথকের কথায়। কিন্তু কই কোথাও তো তার নাম খুজে পেলাম না। কিন্তু সেই এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র, তার বয়ানেই সবটা বলা। সেই বয়ান বড় সরল। ঠিক ঠান্ডা জলের মত শান্তিময়। কত কি ঘটে গেলো তার জীবনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, সাতচল্লিশের দেশভাগ এবং দেশভাগ শেষে পুনরায় সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞ, অতঃপর এক বাংলা থেকে অপর বাংলায় গমনাগমনের মধ্য দিয়ে কথকের বর্ননার পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

উপন্যাসের মূল চরিত্র অল্প কয়েকটি: মেতর বউ বা স্বয়ং নায়িকা। তার স্বামী, যাকে 'কত্তা' বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্ত্রীর জবানিতে; 'কত্তা'র মা, বা মেতর-বউ এর শাশুড়ি, বা সংসারের 'গিন্নি'। 'কত্তা'র ভায়েরা এবং এক নিঃসন্তান বিধবা ননদ। প্রতিবেশী কিছু ছোট-বড় চরিত্র।
পুরো উপন্যাসটি আঞ্চলিক ভাষায় রচিত, ফলে কথাগুলো বুঝতে অনেক সমস্যা হবে। বইটির নাম 'আগুনপাখি' কেন লেখক দিলেন তা বুঝতে পারি নি। কথকের কাহিনীতে ভেঙে গিয়েছে যৌথ সংসার, ভেঙেছে জন্মমাটিতে বসবাসের আজন্ম স্বপ্নসাধ।

হ্যাপি রিডিং ♥♥♥
পৃথিবী হোক বইময় ♥♥♥
Profile Image for Rasel Khan.
170 reviews8 followers
March 20, 2020
বইঃ আগুনপাখি
হাসাব আজিজুল হক

প্রধান চরিত্রগুলোর নাম নেই এমন উপন্যাস হিসেবে এটা আমার পড়া প্রথম। ২/১ একজন যাদের নাম ছিলো তাদেরটাও লেখক চাইলে এড়িয়ে যেতে পারতেন। 😌

বর্তমান প্রজম্ম হিসেবে বর্তমান সময়কে অনেক গালি দেই৷ সময় ভালো না ভালো না বলে চিল্লাই অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং তার পরবর্তী দুর্ভিক্ষ, দেশ ভাগের সময়গুলো যে কত ভয়ংকর ছিলো তা এই ধরনের বই গুলো পড়লে অনুধাবন করা যায়৷

গ্রামের এক মেয়ের জবানিতে রচিত পুরো এই উপন্যাসটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যুদ্ধের কারণে নেমে আসা দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, দেশ ভাগের সময়ে হওয়া দাঙ্গা এর সময়কার সমাজ ব্যবস্থা, মানুষের চিন্তা ভাবনা, ব্যবহার, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা তুলে ধরা হয়েছে৷ যদিও প্রথম দিকে আঞ্চলিক ভাষার কারণে পড়তে কষ্ট হতে পারে তবে শেষে ভালো লাগবে আশা করা যায়৷
Displaying 1 - 30 of 83 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.