বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য ১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি নিবাস তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
নিমাই ভট্টাচার্য বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কালীতলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কন্যা দীপ্তি ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন। কলকাতার টালিগঞ্জের শাশমল রোডের বাসায় বসবাস করতেন তিনি।
জীবনের টানে, জীবিকার গরজে কক্ষচ্যুত উল্কার মত এশিয়া-আফ্রিকা ইউরোপ- আমেরিকা, গ্রাম-গঞ্জ, শহর -নগর ঘুরে বেড়িয়েছেন নিমাই ভট্টাচার্য। যারা তাঁকে ভালবেসে কাছে নিয়েছেন, তাঁদের সংগে লেনদেন হয়েছে হাসি-কান্না, স্নেহ-প্রেম ভালবাসার। হঠাৎ করেই একদিন তাঁদের কথায় লিখতে শুরু করলেন গল্প-উপন্যাস।
নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্য চিন্তা তাঁর জীবনচর্চার একান্ত অনুগামী হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৬৩ সালে তাঁর লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যামোদীদের নিকট ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। পরবর্তীকালে ‘রাজধানী নৈপথ্য’ রিপোর্টার. ভি. আই. পি এবং পার্লামেন্ট স্টীট নামক চারখানি উপন্যাস ঐ একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিমাই ভট্টাচার্য পূর্ণোদ্যমে আরো আরো উপন্যাস লেখা শুরু করেন।
নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা উপন্যাসগুলোতে বিষয়গত বৈচিত্র্যতার ছাপ প্রস্ফূটিত হয়ে উঠেছে। কোন কোন উপন্যাসে তিনি রাজধানীর অন্দর মহলের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা অভিজাত সমাজের কুৎসিত রূপের চিত্র তুলে ধরেছেন। কোথাও নীচু তলার মানুষের সুখ-দুঃখের জীবনকাহিনী চিত্রিত হয়েছে। তাঁর লেখায় কোথাও কোথাও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদও লক্ষ্য করা যায়। আবার অনেক উপন্যাসে সোনালী আনন্দ দিনের বিলাপ লক্ষ্যণীয়। তাঁর লিখিত উপন্যাসগুলো সাহিত্যরস সমৃদ্ধ ও সুখপাঠ্য।
এটা হচ্ছে সেই মহান পুস্তক যেটা (বহু কষ্টে) শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে খাটের নিচে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম। এপিক স্মৃতি! প্যানপ্যানে পেমের একটা প্রথম শ্রেণীর 'নিখাদ ফালতু' বই। এটা নিয়ে কিছু বলা/ লেখা মানেও টাইম লস।
এই বই নিয়ে আমি ফেসবুকে মানুষজনকে যতটা যুদ্ধ করতে দেখেছি ততটা মনে হয় আর কোন বই নিয়ে কখনও করতে দেখিনি...এক পক্ষের ভাষ্যমতে এটা তাদের পড়া বেস্ট রোমান্টিক বই...আর অন্য পক্ষ বলে এটার মতো জঘন্য বই নাকি তারা ইহজনমে দেখেনি...দুই পক্ষের এই মতবিরোধ কোনদিন শেষ হবার নয়...তারপরও ভেবেছিলাম পড়ে দেখি...দেখা যাক, আমি কোন দলে পড়ি...অতঃপর একটা ফ্রেন্ডের কাছ থেকে এনে পড়া শুরু করলাম...প্রথম দু’পাতা পড়েই মেজাজ খারাপ হবার দশা...কিন্তু তারপরও ঠিক করলাম শেষ অব্দি পড়বো...যারা ভালো বলেছে তারা অবশ্যই কিছু একটার জন্য তো বলেছে...দেখা যাক সেই সোনার হরিণের সন্ধান আমি পাই কিনা...সুতরাং, যেই চিন্তা সেই কাজ...আবার পড়া শুরু করলাম...যা আছে কপালে!!!...অবশেষে পড়া শেষও করলাম...যার পর আমি অতিশয় শোকাহত, মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ...পুরো বই ঘেঁটে সেই অমূল্য জিনিষের সন্ধানই পেলাম না, যেটার জন্য পাঠক সমাবেশের একাংশ কেঁদে-কেটে একাকার...'হৈমন্তী' গল্পের অপুর মতো বলতেই পারলাম না – “আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম। কাহাকে পাইলাম। এ যে দুর্লভ, ইহার রহস্যের কি অন্ত আছে।”...কি দূর্ভাগ্য আমার!!!...লাভের মধ্যে শুধু একটা লাভই হয়েছে...এটা না পড়লে কোনদিন জানতেও পারতাম না কতটা ধৈর্য্যশীল একজন মানুষ আমি...আমার মতো মানুষের জন্য এই বই শেষ করা বিশাল একটা ধৈর্য্যর ব্যাপার...এরপর থেকে কান ধরেছি এই ধরণের controversial বই এর ধারে কাছে আমি আর নেই...মাফ চাই, দোয়াও চাই...
পড়েছিলাম যখন তখন বোধহয় এইটে ছিলাম। এর পর বড় হয়ে আরেকবার পড়া শুধু এটা বুঝতেই যে আসলেও বইটা এরকম নেকু, পিচ্ছিল নাকি আমার অল্প বয়সের জন্য এমনটা লেগেছিল।
সকল দিক বিবেচনা করে, দুই বার পড়ার অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে ঠান্ডা মাথায় বলতে আসলাম বইটা অতি অখাদ্য বলে আমার অভিমত৷
বিরক্তিকর ,দীর্ঘ ক্লান্তিকর এক বই। মনের ভিতরে রোমান্টিসিজমের ছিটে ফোটাও অবশিষ্ট থাকলে এই বই পড়ে সেটা ইন্তেকাল করেছে। বই পড়া বেশির ভাগ মানুষের কাছেই সময়ের অপচয় আর মেমসাহেব এর মত বই পড়াটা সময়ের নির্মম অপচয়!!! আপাতত বেশি কিছু বলার ও এনার্জি নাই -_-
❝ Time marches on but Memories stays. Torturing silently the rest Of our days ❞
ভালোবাসার আখ্যান পুরোপুরি ত্রুটি মুক্ত হবে, সকলে তার পক্ষ নেবে এমন কোনো নিয়ম নেই। আর আপনার মতের সাথে না মিলেলে তা অরুচিকর, এটাও বলা যাবেনা৷ ওটা আপনার একান্ত মতামত মাত্র৷
মেমসাহেব স্বাভাবিক ভাবে আমার কাছে অন্যান্য প্রেমের উপন্যাস থেকে একটু আলাদা লেগেছে লেখকের গুনে নাকি মেমসাহেব এর দৃঢ়তায় তা আলাদা করা কঠিন। গল্পের প্লট কিছু যায়গাই সত্যিই বিরক্ত এনেছে আবার কিছু যায়গায় চরিত্রর বেশ ফ্ল্যাট ছিল। তারপর লেখকের চোখে ভালোবাসাকে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন দারুন লেখনী আর গল্পের বুনন দিয়ে৷ মেম সাহেবের চরিত্রের ডেপথ এ আরেকটু যদি পৌছাতে পারতাম রোমান্টিসিজমে ডুব না দিয়ে, আমার জন্য সেটা বেশি উপভোগ্য হতো।
আমার নিজের সম্পর্কে সর্বোচ্চ দম্ভোক্তি হল, আমি এক জীবনে অনেক ভালবাসা পেয়েছি, আর না হলেও চলবে। জীবনে পেয়েছিই একটা জিনিস সেটা হল ভালবাসা। এই উক্তি দিয়ে আমি বেশিরভাগ সময়ই মানুষজনের যন্ত্রণার উদ্রেক ঘটাই। তা সত্ত্বেও, বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই আমার সুদীর্ঘ জীবনে বিশেষ এক ধরণের ভালবাসা আদান-প্রদান কখনোই হয়ে ওঠেনি। তাই যেসব বইয়ের একমাত্র বিষয়বস্তু নারী-পুরুষের ভালবাসা সেই বইয়ের বেশীরভাগ ব্যাপারটাই আমি ঠাহর করে উঠতে পারি না। তখন মনে হয় একটা প্রেম টেম জীবনে করা উচিত, এই ধরণের বইগুলোর রস আস্বাদন করতে পারতাম তাহলে বোধহয়। যাই হোক, আমি এই বইয়ের রস আস্বাদনে ব্যর্থ হয়েছি। সে আমার না লেখকের ব্যর্থতা না জানিনা।
নীলক্ষেত থেকে ৭৫ টাকা দিয়ে নিমাই ভট্টাচার্যের দুটো পুরোনো বই কিনেছিলাম। একটি 'মেমসাহেব', অন্যটি 'তোমাকে'। নামটা পরিচিত হওয়াতে প্রথমে পড়লাম মেমসাহেব, প্রথমটাতেই লেখক নায়ক বাবুটির সাথে সাথে আমাকেও ছ্যাঁকা দিয়ে বসলেন। দ্বিতীয়টি মনে হয় আর পড়া হয়ে উঠবে না।
যে ব্যাপারটাতে চরম বিরক্ত হয়েছি- মেমসাহেব, যে কিনা তার প্রেমিক পুরুষটির চেয়ে যোগ্যতর ছিলেন, মনোনিবেশ করলেন প্রেমিকটির ক্যারিয়ার গড়ার জন্য তাকে উৎসাহ দেয়াতে, শক্তি যোগানোতে। আর নিজে ঠিক করলেন বিয়ে শাদী করে বাচ্চা পয়দা করবেন। স্বামী-পুত্র নিয়েই নাকি বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত নারীর ভবিষ্যৎ। ওহ টেক আ ব্রেক প্লিজ! নিজেকে সমর্পণ করতে পারলেই একজন পুরুষের হৃদয় নিংড়ানো আসল ভালবাসা পাওয়া যাবে?? স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন?? ফর্সা-স্লিম নারীই সুন্দর, পর্দানশীন-মৃদুভাষীই নারী ভদ্র আর নিমাই ভট্টাচার্য অনুসারে আত্মসমর্পণকারী নারীই মহৎ প্রেমিকা?!
আচ্ছা, না হয় নাই ঢুকালাম প্রেমের উপন্যাসে নারীবাদী কথাবার্তা। ভালবাসাকে ভালবাসার মতই থাকতে দিই। কিন্তু ভালবাসার একই রকম বিবরণ, ঘুরে ঘুরে একই বিবরণ পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা...। নাহ ভাই, একই ভালবাসা হয়তো বারবার পাওয়া যায়, একই আদর বারবার পাবার ইচ্ছা মানুষের স্বভাবজাত হলেও একই বিবরণ বারবার পড়া মনে হয় মানুষের স্বভাবজাত বিরক্তির কারণ।
শেষটাও যথেষ্ট কর্নি এবং প্রেডিক্টেবল। এছাড়া নায়কবাবু তার শ্যাম বর্ণের এবং দীঘল কালো চোখের প্রেয়সী, যে কিনা জন্ম এবং আচার-আচরণ সূত্রে বাঙালী, তাকে কেন যে মেমসাহেব বলতেন তাও বুঝতে পারিনি। কভারটিকেও অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে।
তারা একটি দিতে দিতে দুটোতে দিব ঠিক করলাম, দ্বিতীয়টা রবীন্দ্রনাথের গানগুলো কোট করার জন্য।
শুন্য তারকা দিতে পারলে দিল খুশ হইতো। যেহেতু পারতেসিনা, তাই এক তারকাই দিলুম। আমার মতে এই বইয়ের কাভারে সিগারেটের প্যাকেটের মত "সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ " বানী লেপ্টে দেওয়া দরকার।
বহুল আলোচিত বা আরও ঠিক করে বলতে গেলে বহুল সমালোচিত এই উপন্যাসটি বহু আগে একবার পড়েছিলাম। তখন কেমন লেগেছিলো মনে নেই তবে মনে যে দাগ কাটে নি তা বুঝতে পারা যায় কারণ কাহিনীর কিছুই আমার মনে ছিল না। তবু নিমাই ভট্টাচার্যের প্রয়াণের পর মনে হলো উপন্যাসটা আবার পড়ে দেখি।
আমি উপন্যাসের প্লটের মোটেও নিন্দা করতে পারছি না, কারণ উপন্যাসের প্লট ভালোই ছিল। নিমাই ভট্টাচার্যের সম্পর্কে যতোটুকু জেনেছি তাতে মনে হয় এই উপন্যাস আত্মজৈবনিক হলেও হতে পারে। কিন্তু যে কারণে উপন্যাসটি পুরোটা পড়ে শেষ করা খুবই কষ্টকর হলো তা হচ্ছে এর সংলাপ ও অকারণে কাহিনী টেনে লম্বা করা। প্রথম প্রেমে পড়লে এমন ন্যাকা ন্যাকা সংলাপ হয়তো প্রেমিক প্রেমিকারা বলে, তবে তা বইয়ের পাতায় পড়াটা খুব একটা উপভোগ্য মনে হলো না। তবে এটা ঠিক অল্প বয়সে, বা প্রেম ভালোবাসা নিয়ে মায়াময় স্বপ্ন দেখা মানুষদের এই উপন্যাসটি হয়তো ভালো লাগতেও পারে, কিন্তু প্রাপ্তমনস্ক মানুষদের এমন গদগদ প্রেমপূর্ণ সংলাপ ভালো লাগবে না। তবু কেন এই উপন্যাসটি এতো জনপ্রিয় তা ভাবতে বসে মনে হলো, জনপ্রিয় প্রেম কাহিনীগুলো সবই বিয়োগান্তক। সে রোমিও- জুলিয়েট ই হোক কি দেবদাস-পার্বতী। এই উপন্যাসের সাথে শবনম এর তুলনা করা যায়, সেটাও কিন্তু বিয়োগান্তক। সেটা অবশ্য বেশ ইন্টেলুকচুয়াল প্রেম কাহিনী, তবে তাতেও একই রকম ন্যাকা গদগদ প্রেম পাওয়া যায়। উপন্যাসদুটোও বোধহয় সমসাময়িক। হয়তো এমন হতেও পারে তখনকার আবদ্ধ রক্ষণশীল সমাজে মানুষ এমন লেখাই পড়তে ভালোবাসতো। তবে এ যুগের লেখক এমন উপন্যাস লেখলে পাঠকপ্রিয়তা সম্ভবত পেত না।
❝মেমসাহেব❞ বইটা যখন আমি পড়ি তখন সম্ভবত ক্লাস ৬/৭/৮ ছিলাম। ছোট খালামুনির সংগ্রহ থেকে নিয়ে পড়েছিলাম। এখন পড়লে কেমন লাগবে জানি না কিন্তু তখন অনেক বেশিই ভালো লেগেছিল। আবেগের বয়সে পড়ার জন্য বেশিই আবেগি হয়ে গেছিলাম। এতবছর পরও সেই ভালো লাগাটা স্মৃতিতে রয়ে গেছে যদিও বইয়ের সম্পূর্ণ কাহিনী মনে নেই। সমাপ্তি যে আমাকে বেশ কষ্ট দিয়েছিল বইটা আবারও হাতে নিয়ে মনে পড়ে গেল। যদিও ট্রাজেডিক এডিং আমার পছন্দের।
এই বইটা নিয়ে এত হাইপ! অথচ আমার একদমই ভালো লাগেনি। রোমান্সের নামে অতিরিক্ত নেকামি দিয়ে ভরপুর। একরকম যুদ্ধ করে বইটা শেষ করছি। ব্যক্তিগত ভাবে এটা অখাদ্য ছাড়া কিছু মনে হয় নি।
পত্র উপন্যাস সম্ভবত প্রথম মেমসাহেব দিয়েই শুরু করেছিলাম। ৪৭ এর দেশ ভাগের প্রাক্কালে যখন চারদিকে বেকার, কর্মহিন মানুষের মিছিল। সেসময় এক বেকার যুবকের (হাফ রিপোর্টার) পাশে এসে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠিত মেমসাহেব। কিভাবে একটি বেকার ছেলে কোন কিছু ছাড়া শুধুমাত্র তার ভালোবাসাকে শক্তি করে মনের জোরে প্রতিষ্ঠিত হয় তা এই উপন্যাসের অন্যতম বিষয়। যদিও উপন্যাসটি প্রেমের। স্বপ্নের। ঘর বাধার। কিন্তু শেষে এসে ট্রাজেডি।
মেমসাহেব যখন বাচ্চুর জীবনে আসে তখন বাচ্চুর ৫ গুণ বেশি আয় তার। সামান্য একজন রিপোর্টারকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী করে তোলে তার অফুরান ভালোবাসা দিয়ে। যেখানে নারী জীবনে একেকজনের আসে ছলনাময়ী হয়ে, প্রতারক হয়ে। কিংবা কোনো ধনবান পাত্রের গলা জড়িয়ে রোলস রোয়েলস গাড়িতে চড়ে প্রেমিকের বুকে পা রেখে স্বামীর ঘরে প্রবেশ করে। সেখানে একজন মেমসাহেব এসেছিল মুক্তির দুত হয়ে, শক্তি হয়ে, সাহস হয়ে, ভরসা হয়ে। ১৯৪৭ সালের পটভূমিকায় দাঁড়ালে আমরা হয়তো উপলব্ধি করতে পারব লক্ষ লক্ষ বেকার হয়তো এই উপন্যাসটা পড়ে একজন মেমসাহেব কামনা করেছিল। হয়তো হাজার হাজার মেমসাহেব তৈরীও হয়েছিল। বেকার প্রেমিকের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভরসার হাত হয়ে। সাহস জুগিয়েছিল। এগিয়েছিল দুজনে সামনের পথে।
বাঙালি বাস্তবে মিলনে বিশ্বাসী হলেও সাহিত্য সে চায় বিচ্ছেদ, বিরহ। সাহিত্যে দুঃখের উপস্থিতি হয়তো পাঠককে তা মনে রাখতে সাহায্য করে দীর্ঘদিন। মেম সাহেবে হয়তো বিচ্ছেদ না থাকলে ততটা জনপ্রিয়তা পেত না। আবার অতি প্রেমের সংলাপে অজনপ্রিয়তা যে পেয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। উপন্যাসে প্রেমের কথপোকথন হিসেবে অতি বাড়াবাড়ি হতে পারে। তবে আজকের অনেক সাহিত্যিকদের মধ্যেও এমন বিষয় লক্ষ্যনীয়। অধুনা তৃতীয় বিশ্বের এই এলাকাতে এখন এসব সংলাপ ততটা ন্যাকামো মনে হয়না। সাহিত্য জীবনে জীবনানন্দ চাবরিচুত্য হয়েছিলেন কবিতায় অশ্লীলতার জন্য। আমরা জানি বাংলা সাহিতে তিনি একজন বিশুদ্ধ কবি। প্রজাপতি উপন্যাস সম্পর্কে আদালতে জবানবন্দী দেবার সময় বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, এই উপন্যাস ৫০ বছর পর নৈতিক বই হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। এত বছর পর এসে মেমসাহেব কতটা জনপ্রিয়, অজনপ্রিয় তা হয়তো আমরা দেখতে পাই। তবে আমাদের উপন্যাসের পটভূমিকাটা স্মরণ করাও জরুরী। ৭০/৮০ বছর আগের সময়টাকে এসময়ে এনে তা উপলব্ধিরও বিষয় বটে।
মেমসাহেব,নামটি দেখে কি মনে হচ্ছে? লাল টুকটুকে, ইয়া লম্বা, ঘোলা চোখ আর আধুনিক পোশাক পড়া কোন রমণীর গল্প! নাহ্,এটা কোন পরদেশি রমণীর গল্প নয়।
এটা একটা বাঙালি মেমসাহেবের প্রণয়ের গল্প। যে প্রণয়ের শুরুটা হয়েছিল একটা ট্রেনের কামড়ায়। বাচ্চু একজন ছন্নছাড়া যুবক,যার জীবিকার নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই। সে খবরের কাগজের রিপোর্টার হিসেবে কাজ করত আর পঞ্চাশ টাকা মাইনে পেতো,এই চলত তার উদ্দেশ্যহীন নিরানন্দ জীবন। সেই নিরানন্দ জীবনে আশার প্রদীপ হয়ে দেখা দেয়,মেমসাহেব। মেমসাহেব আসায় ভবঘুরে বাচ্চুর জীবনে এলো পরিবর্তন। সে যেন নতুন ভাবে গড়তে লাগল বাচ্চুকে। মেমসাহেব এর ছোঁয়ায় বাচ্চু আসলেই বদলে গেল। পঞ্চাশ টাকা মাইনে পাওয়া লোক, একদিন গাড়ি কিনে নিল। এ সকল পরিবর্তন একজনের কারণেই,সে মেমসাহেব। কিন্তু,এই প্রণয় কাহিনীর শেষ কোথায়? মেমসাহেব কি হতে পেরেছিল,বাঙালি বঁধু!
আমার পাঠপ্রতিক্রিয়ার : মেমসাহেব, নিঃসন্দেহে প্রেম কাহিনী। তবে এটা কিশোরীর কেঁদে কেটে বালিশ ভিজানো লুতুপুতু প্রেম কাহিনী নয়। এই গল্প আমাদের ভিন্ন কথা বলে। প্রেমের নতুন সংজ্ঞা দেয়। আমাদের শেখায় যে,প্রিয়জনের ভরসা, স্নেহ, ভালোবাসা পেলে যে কেন অখ্যাত জন স্বীয় চেষ্টায় সফল হতে পারে। লেখক নিমাই ভট্টাচার্যের লেখার সরল সাবলিল ভাষা বইটাকে যেন আলাদা মুগ্ধতা দিয়েছে। সবচে ভালো লেগেছে গল্প উপস্থাপনের ভঙ্গিটা,গতানুগতিক ধারার চাইতে আলাদা। বইটা পড়ার সময় আমার ��ার বার মনে হচ্ছে, এটা কোন প্রেমিকের আত্মকথন। যেমনটা ফীরাক গোরকপুরী তার শের এ বলেছেন, "নিদ আয়ে তো খোয়াব আয়ে, খোয়াব আয়ে তো তুম আয়ে, পর তুমহারি ইয়াদ মে ন নিদ আয়ে ন খোয়াব আয়ে।" শেষ হওয়ার পর ভাবছিলাম এটার নিশ্চয় সিনেমা থাকবে,পরে গুগল করে দেখলাম সত্যিই আছে,এবার সেটা দেখব
মেমসাহেব বইটা যখন প্রথম পড়েছি তখন হয়তোবা আমি পাঠক ছিলাম।
সেকথা থাক, কথা হচ্ছে এই উপন্যাস নাকি রোমান্টিসিজম এ ভরপুর একটি উপন্যাস। অনেকে এটা পড়ে নাকি কেঁদেকেটে চোখের জলে সাঁতার কেটেছে,অনেকের নাকি আবার বুকের বামকোণে চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হয়েছে!!! কেউবা আবার মেমসাহেবের কষ্টে রাতে ঘুমুতেই পারেন নি!! কারোকারো স্বপ্নেও মেমসাহেব হানা দিয়েছিলেন বলে শোনা গিয়েছে!
তো বিষয়টা অনুধাবনের জন্য বইটা আমি আবারো পড়লাম! এমন কি আছে এখানে,কি বা রহস্য এই বইয়ে লুকিয়ে আছে,প্রথমবার পড়ে যেহেতু উপরের রোগগুলোর কোনোটাই আমার হয় নি,তাই এবারে হয় কিনা তা যাচাই করলাম! হাজারো হোক...রোমান্টিক উপন্যাস বলে কথা!
ভাই থামেন!! এটাকে যদি রোমান্টিকতা বলা হয়,তবে হয়তোবা রোমান্টিসিজম এর সংজ্ঞাটাই বদলে যাবে(এখন অনেকেই আমাকে আক্রমণ করতে আসবে জানি,কিন্তু কি আর করা হিন্দি সিরিয়াল আর স্টার জলসা দেখলে যা হয় আরকি সেগুলোরই বহিঃপ্রকাশ ঘটবে)।একমাত্র ওই স্থানেই এগুলোকে রোমান্টিকতা বলা সম্ভব!!
আমরা ইংরেজী ব্যাকরণ এ ডিগ্রি বিষয়ে পড়েছি। এই উপন্যাস পড়লে কিন্তু ডিগ্রি বিষয়ে খুব ভাল একটা উদাহরণ পাবেন সকলে। রোমান্টিসিজম এর আড়ালে ন্যাকামি নামক একটি জিনিশের সুপারলেটিভ ডিগ্রিই এখানে উঠে এসেছে।
ন্যাকামি কে আমরা ৩টি ভাগে ভাগ করতে পারি...
১.বাংলা সিনেমাটাইপ ন্যাকামিঃ ইহা পজেটিভ ডিগ্রি।
২.সাবিলা নূরের ন্যাকামিঃ ইহাকে কম্পারেটিভ বলা যাইতে পারে।
৩.মেমসাহেব উপন্যাসঃ এবং ইহা সুপারলেটিভ।
তো আর দেরী কেন? আজই পড়ে ফেলুন এবং ডিগ্রি বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান লাভ করুন।
'যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক, তারা তো পারে না জানিতে তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ আমার হৃদয় খানিতে।'
'ভালোবাসা পেয়ে অনেক মানুষের জীবনধারাই পাল্টে যায় সত্য, কিন্তু আমার মেমসাহেব আমাকে পাল্টে দেয়নি। সে আমাকে নতুন জীবন দিল। আমাকে ভালোবেসে সে অন্ধ হয়নি। রাত্রিত অন্ধকারে আমার তপ্ত শয্যায় পলাতকের মত সে আশ্রয় চায়নি, চেয়েছিল আমার সামগ্রিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে কিছু-না-কিছু ভূমিকা গ্রহণ করতে।'
অবাক হই ভেবে, এতটা নিঃস্বার্থ হয় ভালোবাসা । ভালোবাসার মানুষটাকে জীবনযুদ্ধে জয়ী করার জন্য এমন সংগ্রাম কোন "মেমসাহেব" ই করতে পারে । আর ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর পরও যে, তাকে কতটা ভালোবাসা যায়, এই বইটি না পড়লে, হয়তো তা অজানা থেকে যেতো । ~ হাসান
আমার জীবনে পড়া প্রথম উপন্যাস 'মেমসাহেব'। ভালো বা খারাপের বিচারে যাব না। অসাধারণ অনুভূতি ছিল বইটি শেষ করে।
টেনিসনের দুটো লাইন মনে পড়ছে,
'Time marches on but memories stays. Torturing silenty the rest of our days.'
কিছু কিছু বই পড়তে নিলে মনের বয়সটা একটু কমিয়ে নিয়ে পড়তে বসি। তাছাড়া এই হাজারটা কাঁটা-ছেড়ায় জর্জরিত মনের বর্তমান বয়স নিয়ে পড়তে নিলে বইগুলোর আসল নির্যাস পাওয়া যায় না। মেমসাহেব বইটা আমার কাছে ঠিক তেমন একটা বই। আবার পড়া শেষে রেটিং পুরোপুরি ৪ দিতে পারলাম না বর্তমান বয়সে ফিরে আসার জন্য। অর্ধযুগ আগে পড়লে হয়তো নির্দ্বিধায় ৫ই দিয়ে দিতাম।
কাহিনিসংক্ষেপে যাব না, এতদিনে হয়তো সবারই পড়া হয়ে গেছে। কিছু অনুভূতির কথা বলি শুধু।
অর্ধযুগ আগে পড়া নিয়ে আফসোস হলো ঠিকই। তবে তার থেকে বেশি স্বস্তি হলো এই ভেবে যে সেই সময় মেমসাহেবের কথা জানতে পারলে হয়তো তাকেই আইডল ভেবে বসতাম। কাউকে অনেকগুলো দিন ধরে ভালোবাসার মধ্যে নির্ভরতা আছে, তার পাশে থেকে তার অনুপ্রেরণা হওয়ার মধ্যে গৌরব আছে। কিছু কিছু কথা মনে খুব দাগ কেটে গেছে। কিছু কিছু চিন্তাভাবনা মিলেছে খুব মনের সাথে। কখনও তাদের ভালোবাসায় ভেসে থাকতে নিয়ে যেমন কিছুটা আক্ষেপ হয়েছে, তেমনি কখনও মনে হয়েছে এতটা সুখ আসলে কেউই পায় না, সবসময় পায় না।
"ভালোবাসা পেয়ে অনেক মানুষের জীবনধারাই পাল্টে যায় সত্য, কিন্তু আমার মেমসাহেব আমাকে পাল্টে দেয়নি। সে আমাকে নতুন জীবজ দিল। আমাকে ভালোবেসে সে অন্ধ হয়নি। রাত্রিত অন্ধকারে আমার তপ্ত শয্যায় পলাতকের মত সে আশ্রয় চায়নি, চেয়েছিল আমার সামগ্রিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে কিছু-না-কিছু ভূমিকা গ্রহণ করতে।
পুরুষের জীবনে কর্মজীবনের চাইতে বড় কিছু আর হতে পারে না। কর্মজীবনের ব্যর্থতা, কর্মক্ষেত্রে পরাজয়, পুরুষের মৃত্যুর সমান। কর্মজীবনে ব্যর্থ, পরাজিত, অপদস্থ পুরুষের জীবনে নারীর ভালোবাসার কী মূল্য? কোথায় স্বীকৃতি? মেমসাহেব এই চরম বাস্তব সত্য উপলব্ধি করেছিল।"
"মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ভুল, আমি মিথ্যা, আমি ছায়া, আমি অব্যয়।"
এবং সবশেষে,
"নীঁদ আয়ে তো খোয়াব আয়ে, খোয়াব আয়ে তো তুম আয়ে, পর তুমহারি ইয়াদ মে ন নীদ আয়ে, ন খোয়াব আয়ে।"
সবাই তো জীবনে সবকিছু পায় না, তাই না? তাহলে? তাহলে ব্যাপার নাহ। সেসব মেনে নিয়ে নিজ গতিতেই জীবন চলে যায়।
রোমান্সের নামে এ দেখি Cringe-fest! অনেক ভেবেও "মেমসাহেব" বইয়ের পজিটিভ কিছুই খুঁজে পেলাম না। এই বই শেষ করতে গিয়ে নিজের সাথেই এক প্রকার যুদ্ধ করতে হয়েছে। আপাতত যুদ্ধ থুক্কু বইটা শেষ করে বিধ্বস্ত অবস্থায় আছি, আর কিছু বলার নাই এই বই সম্পর্কে।
কারো সাথে যেকোনো সম্পর্ক গড়ে তোলার চেয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অনেক শ্রমসাধ্য ব্যাপার। প্রেমের সম্পর্ক তো আরো কঠিন। ছোট - বড় অনেক কিছু খেয়াল রেখে অপর মানুষটাকে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাসের সঙ্গে ভালোবেসে যেতে হয়। মেমসাহেব উপন্যাসে এই জিনিস গুলো খুব সুন্দর করে ফুটে উঠেছে; অগোছালো ভাবে। কিছু কিছু ব্যাপার অসঙ্গত লেগেছে বৈকি। তাছাড়া অনেক জায়গায় অতিরিক্ত ভাবাবেগ প্রকাশ বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কলকাতার দে’জ পাবলিশিং থেকে ১৩৯২ বঙ্গাব্দের মহালয়ায় প্রথম দে’জ সংস্করণে প্রকাশিত হয় মেমসাহেব। যুগযুগ ধরে যে প্রেমকে বাঙালী অন্তরে লালন করে এসেছে তারই আরেকটি অনুপম প্রেমের ইতিহাস নিয়ে সাতচল্লিশের প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাস। বাঙ্গালীর আবেগ নদীতে নতুন ভাবে দোলা দিয়ে যায় পাঠক মহলের কাছে প্রিয় হয়ে আছে মেমসাহেব। পাঠকনন্দিত এই উপন্যাসটি রোমাঞ্চকর প্রেম ও জীবন সংগ্রামের মিশেলে রচিত। কথাশিল্পী নিমাই ভট্টাচার্য তার জীবনের এক মহেন্দ্রক্ষণে লিখেছিলেন এই মেমসাহেব উপন্যাস। সুবিন্যস্ত ভাষা ব্যবহার আর জোড়ালো অনুভূতিতে লেখা এই গল্পকাহিনী বার বার নতুন করে ভালোবাসতে শেখায়। অনেক পাঠক উপন্যাসের চরিত্রের ভেতর দিয়ে ভালোবেসে ফেলে মেমসাহেবকে। সাহিত্য বোদ্ধাদের কেউ কেউ মনে করেন এই মেমসাহেবের গল্পটি লেখকের নিজের জীবনের এক সত্য উচ্চারিত ঘটনা প্রবাহের আলোকপাত।
মেমসাহেব মূলত প্রেমের উপন্যাস হলেও এখানে রয়েছে দেশভাগের কথা, এক রিপোর্টারের অজানা জীবনকথা। সাতচল্লিশের দেশ ভাগ পরবর্তী সময়ে কলকাতা শহরের লাখ লাখ বেকারের মাঝে কি করে একজন হাফ বেকার, হাফ রিপোর্টার শুধু মনের জোর আর নিষ্ঠায় ভালোবাসার শক্তিকে অবলম্বন করে কিভাবে সর্বোত্তম পদে নিজেকে অধিষ্ঠিত করার গল্প। উপন্যাসটির শুরু হয়েছে দোলা বৌদিকে লেখা চিঠির মাধ্যমে। পুরো উপন্যাসটিই চিঠির মতো করে লেখা। উপন্যাসের মূল চরিত্র দু’জন। একজন মেমসাহেব অপরজন এই উপন্যাসের নায়ক বাচ্চু। নিজের অনাড়ম্বর জীবনের কথাগল্প শোনাতেই একদিন চিঠি লিখতে শুরু করে দোলা বৌদির কাছে। পাঠকের চোখকে গভীর সমুদ্রের ঢেউ দিয়ে ভিজিয়ে সুনিপুণ ভাবে লেখক তুলে আনেন মেমসাহেব চরিত্রটিকে। তবে তার আগে উপন্যাসে এসেছে নায়ক বাচ্চুর জন্মকথা। উপন্যাসের এই অনুচ্ছেদটি পড়লেই তার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠে-
“ সেদিন কি তিথি, কি নক্ষত্র, কি লগ্ন ছিল, তা আমি জানি না। জীবন নদীতে এত দীর্ঘদিন উজান বাইবার পর বেশ বুঝতে পারছি যে সেদিন বিশেষ শুভলগ্নে আমি পৃথিবীর প্রথম আলো দেখি নি। এই পৃথিবীর বিরাট স্টেজে বিচিত্র পরিবেশে অভিনয় করার জন্য আমার প্রবেশের কিছুকালের মধ্যেই মাতৃদেবী প্রস্থান করলেন। একমাত্র দিদিও আমার জীবন নাট্যের প্রথম অঙ্কেই জামাইবাবুর হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি কেটে পড়ল। আমার জীবনে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আমি নারী- ভূমিকা-বর্জিত নাটকে অভিনয় শুরু করেছি। ”
উপন্যাসের বাচ্চু নারী ভুমিকা বর্জিত জীবনকে শৈশব থেকেই উপলব্ধি করতে শিখে। শৈশব থেকেই আক্ষেপ শব্দটির সাথে পরিচয় ঘটে। মা’র অভাব পূর্ন হয়না, উল্টো চোখের জলে বুঝতে পারে যদি শৈশবের শুরুতে গাছের গোড়ায় জল পড়তো তাহলে সুন্দর একটা জীবন তারও হতো। কিন্তু বিধাতা পুরুষ হয়তোবা সেটা চাননি। শৈশবের দিনগুলোতে কোন জন্মদিনেই বাবা ছাড়া আর কেউ তাকে আর্শীবাদ করেনি, কোনদিন অপেক্ষা করেনি কেউ স্কুল গেটে। তবে ছোটবেলা থেকে অপেক্ষা হয়েছিল তার সঙ্গি। রোজ রাত্তিরে এবং দুর্গোপুজায় সঙ্গীবিহীন ঘুরে একা একা বাড়ি ফিরে বাবার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। এই অংশে মাকে নিয়ে উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে লেখকের বেশ কিছু মমস্পর্শী বয়ান যার মাঝে একটি অনুচ্ছেদের খানিকটা তুলে দিলাম-
“ অনেকে মা পায়না কিন্তু তাঁর স্মৃতির স্পর্শ পায় প্রতি পদক্ষেপে। মা’র ঘর, মা’র বিছানা, মা’র বাক্স, মা’র ফার্নিচার, মা’র ফটো ফটো থাকলেও মা’র একটা আবছা ছবি মনের পর্দায় উঁকি দেবার অবকাশ পায়। আমার পোড়াকপালে তাও সম্ভব হয় নি। নিমতলা শ্মশানঘাটে মা’র একটা ফটো তোলা হয়েছিল। পাঁচ টাকা দিয়ে তিনটে কপিও পাওয়া গিয়েছিল। নিয়মিত বাসাবদলের দৌলতে দু’টি কপি নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তৃতীয় কপিটি দিদির সংসারে ক্ষুধার্ত উইপোকার উদরের জ্বালা মেটাচ্ছে। মানুষের জীবনের প্রথম ও প্রধান নারী হচ্ছে মা। তাঁর স্নেহ, তাঁর ভালবাসা, তাঁর চরিত্র, আদর্শ, প্রতি পুত্রের জীবনেই প্রথম ও প্রধান সম্পদ। ”
নায়কের জীবনে প্রথম নারীর উপস্থিতি ঘটে কৈশরের শেষ দিনগুলিতে পাড়াতো দাদার বাড়িতে। জীবনের প্রথম আবেগী অনুভূতিটির নাম হলো ‘নন্দিনী’। কিশোরী নন্দিনী জীবন নাট্যের নায়ক খুজতে বেড়িয়েছিলে সে বয়সেই। কিন্তু উপন্যাসের নায়ক বাচ্চু প্রথম প্রেমের আহবান গ্রহন করতে পারেনা। কারো কারো জীবনে আক্ষেপের সাথে অপরাগতা এত বেশি মাত্রায় যুক্ত হয়ে যায় যে তখন অনেক কিছুই গ্রহন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। নন্দিনী হয়তোবা বাচ্চুর জীবন মঞ্চে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেনি তবে জীবনের প্রথম প্রেম হিসেবে রয়ে যায় অমূল্য স্মৃতি। ম্যাট্রিক পাস করবার পর নন্দিনী চলে যায় বোম্বে। তবে জীবন থেকে একেবারে চলে যায় না, সেই থেকে জীবনের এই মাহেন্দ্রক্ষণ পর্যন্ত প্রতি নায়কের জন্মদিনে শুভেচছা জানাতে ভূল হয় না। দীর্ঘ দশ বছর পর একদিন কার্শিয়াং এর কুয়াশা ভেদ করে নন্দিনীর সাথে পুনরায় দেখা হয়ে যায়। লেখক এখানে দেখিয়েছেন প্রেমের প্রেম রুপ। প্রেম কি পুরোনো হয়? বাচ্চু হয়তো নন্দিনীকে ভালোবাসেনি তবে প্রেমকে উপেক্ষা করবার মতো ও যে সাহস ছিলনা।
বাচ্চুর জীবনে সংগ্রামের মূল পরিবর্তনের চিত্র ফুটে উঠে দেশভাগের সময়। কলেজ জীবন শুরুর দিকে দেশভাগের নিদারুণ দৃশ্যপটে সে নিজেও বিহবল হয়ে যায়। ভারতবর্ষের ইতিহাসে বলি হওয়া মানুষ গুলোর বাঁচার প্রয়োজনীয়তা আর দেশে হঠাৎ দরিদ্রতা, সেই সাথে শুরু হয় হাজার বেকারের সাথে তার নিজেরও পড়ালেখা চালানোর জন্য চাকুরী খোঁজার চেষ্টা বাচ্চুর পরিবারের লোক তো নয়ই তার পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের কেউ কোনদিন খবরের কাগজে চাকুরী করেনি কিন্তু সেই চরম দরিদ্রতা কাধে নিয়ে সে হাফ রিপোর্টারের চাকুরী নিয়ে নেয়। শুরু হয় তার আর এক কঠিন জীবন সংগ্রাম। জীবন সংগ্রামের সেই চরম মূহুর্তে এসেই একদিন শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতা ফেরার পথে বোলপুর রেল কামরায় ভিড়ের মধ্যে মেমসাহেবের সাথে দেখা হয়ে যায়।
দৈন্যতা কে পকেট সঙ্গী করে ফেরা সেই তরুন বাচ্চুও ‘বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জল গভীর ঘনকালো টানা টানা শ্যামলিমার চোখ দুটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল’। প্রথম দেখায় হয়তোবা একটা আচ্ছন্নতা তাকে ঘিরে ছিল কিন্তু বিধাতা পুরুষের এই বুঝি ছিল লিখন। তাই কদিন পর ফাইন-ইন-আর্টস বিল্ডিং এ যামিনী রায়ের এক্সিবিশনে দ্বিতীয় বারের মতো দেখা হয়ে যায় মেমসাহেবের সাথে। এই নাগরিক পথে বিশ্বকর্মার তীর্থক্ষেত্র মেমসাহেব নামধারী শ্যামলিমা আর বাচ্চুর শুরু হয় প্রেমজীবন। উপন্যাসের পরবর্তী অংশে লেখক নিজের মনের তুলিতে আঁচড় কেটে ফুটিয়ে তুলেন চিরাচরিত নারীর রুপ। প্রতিটি পুরুষ মানুষই একজন নারীকে অবলম্বন করে বড় হয়��� সামনের দিকে এগিয়ে যায়। মানুষ একটি মুখের হাসি আর দুটি চোখের জলের জন্যই তো এত কিছু করে। বাচ্চুর জীবনে মেমসাহেব প্রদীপ হয়ে আলোর ছটা ছড়িয়ে দেয়। হাফ রিপোর্টারের চোখে নতুন স্বপ্নের কার্পেট ছড়িয়ে দেয়। ভাগ্য বদলাতে কলকাতা থেকে দিল্লীর এক উইকলি নিউজ পেপারের করসপনডেন্ট এর পদে তৎকালীন একশ টাকার বেতনে চাকুরী করতে পাঠিয়ে দেয়।
এভাবেই উপন্যাসের পাতা বেড়ে যায় মেমসাহেবের প্রেম আর রিপোটার বাচ্চুর সফলতায়। সম্পর্কের শুভ পরিণয়ের সময় যতই এগিয়ে আসতে থাকে ততই রাজনৈতিক অস্থিরতা আর রিপোর্টারের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। এর মাঝে দিল্লীতে নতুন সংসার সাজানোর জন্য সব আয়োজন সমাপ্ত হয়। ভাগ্যবিশ্বাসী এই বাচ্চু একদিন কলকাতার শহরে এক পয়সার অভাবে ট্রামে চড়তে পারেনি, কতদিন না খেয়ে দিনযাপন করেছে আর সেই বাচ্চু আজ প্রাইম মিনিস্টারের সাথে ঘুড়ে বেড়ায় দেশ-বিদেশ। ঈশ্বর ��ে কাউকে বেশিক্ষন সুখি দেখতে পারেন না তার একটা এই উপন্যাসে লেখক সুক্ষ্ণ ভাবে রচনা করেছেন। যে কারনে উপন্যাসের শেষ অংশে এসে আবার বেদনার আল্পনা দেখতে পাই। এদিকে মেমসাহেবের সাথে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে যায়। মেমসাহেব পরিবারের সম্মতিক্রমে নিজেই বিয়ের বাজার করে। শুভক্ষণের অপেক্ষায় যখন ছিল সবাই ঠিক তখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঘটে যায় মহাপ্রস্থান পর্ব। বিয়ের তিনদিন আগে রিপোর্টার বাচ্চু লাডাক থেকে রিপোর্ট করে গ্রীন রোডের ফ্লাটে ফিরে এসে মেমসাহেবের বোনকে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়। রোমাঞ্চকর এই অধ্যায়ে কান্নার আকাশ নেমে আসে লেখকের কলমে।
কলকাতার রাজনৈতিক লীলা খেলায় প্রিয় ভ্রাতৃ সম ভাই খোকনকে মিছিল থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় মেমসাহেব, তারপর অকালমৃত্যু। যে মৃত্যুটি কারো কাম্য ছিলনা। উপন্যাসের নায়ক বাচ্চুর চরম বেদনাদায়ক পরিণতি আর আকাশ ভারি করা কান্নার পরিবেশ খুব করুণ ভেসে উঠে চোখে। মোহাচ্ছন্ন মেমসাহেবের প্রেম পুরো উপন্যাসটাকেই মায়ার যাদুবলে বিহ্বল করে রেখেছে। পরিশেষে মেমসাহেবের অন্তর্ধানে রিপোর্টারের জীবনে নেমে আসে বেদনার কালো ছায়া। মানুষ মরে যায় কিন্তু সম্পর্ক তো মরে যায় না রয়ে যায় অদৃশ্য হয়ে। সেই অদৃশ্য ভালোবাসা, অদৃশ্য স্মৃতি ক্রমশই বাচ্চুকে নিজ জীবন থেকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে দেয়। আর সে জন্যই লেখক উপন্যাসের নায়ক বাচ্চুর চরিত্রের সাথে মিশে গিয়ে লিখেছেন-
“ভগবানের ব্যঙ্কে আমার অদৃষ্টের যে পরিমাণ আনন্দ জমা ছিল. আমি বোধহয় তার চাইতে অনেক,অনেক বেশি আনন্দের চেক কেটেছিলাম। তাই বোধহয় এখন সারাজীবন ধরে চোখের জলের ইনস্টলমেন্টে দিয়ে সে দেনা শোধ করতে হবে।” প্রতিটি মানুষই জীবনের কোন কোন অধ্যায়ে গিয়ে এমনটাই ভাবেন। মেমসাহেবের বিদায় যাত্রা দিয়ে উপন্যাসটি শেষ হতে পারতো কিন্তু তা হয়নি। গ্রীন রোডে সাজানো মেমসাহেবের মানুষ বিহীন সংসার যন্ত্রনা নিয়ে প্রতিদিন অপেক্ষা করে। উপন্যাসের নায়ক তার ব্যাক্তিজীবনে আর কোন মেয়ের সান্নিধ্য চায়নি। শেষ পৃষ্ঠায় মেমসাহেবের স্মৃতিচারণ নিয়ে নিদারুণ দৃশ্য লেখক পরম কষ্টে ফুটিয়ে তুলেছেন। উপন্যাসের কল্প চিত্র নির্মাণে লেখক শব্দে শব্দে এতটাই মায়াজাল সৃষ্টি করেছেন যে মনের আকাশে নেমে আসে দু:খের নীল পাখি। করুণ সুরে নেমে আসে শ্রাবণ। উপন্যাসের রচিত লেখকের কল্পচিত্র বাস্তবকে চোখের সামনে সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে এবং বাক্য নির্মাণে যে মুন্সিয়ানা আছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। মেমসাহেব পাঠ করার পর ভালোলাগার আবেশ এতটাই মোহগ্রস্ত করে পাঠককে লেখকের মতো অজান্তেই মনে ভেসে উঠে টেনিসনের সেই লাইন-
‘Time marches on out Memories stays. Torturing silently the rest of our days’
বর্তমানে চিঠি-পত্রের চল প্রায় চলেই গেছে। আমরা যতই আধুনিক যুগের মানুষ হইনা কেন, চিঠি-পত্র আমাদের সবাইকেই আকৃষ্ট করে। আমি সেই তালিকার বাইরের লোক নই। বলা যেতে পারে- এজন্যই পত্রসাহিত্য আমাকে টানে! নিমাই ভট্টাচার্য এর তেমন এক সৃষ্টি 'মেমসাহেব'। এই উপন্যাস নিয়ে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে অনেক ধরনের আলোচনা-সমালোচনা দেখেছি। অনেকেই বইটিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। আবার কেউ বইটিকে 'অখাদ্য' বলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন! কিন্তু আমি বলব, যাদের রোমান্টিক জনরার ক্লাসিকাল সাহিত্য পছন্দ; কিংবা যাদের জানতে ইচ্ছা করে আগেকার সময়ের প্রেম সম্পর্কে, তাদের জন্য এই বইটি মাস্টরিড। 'মেমসাহেব' যেহেতু ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে, তাই এটি পড়ার সময় কল্পনাতে নিজেদেরকে আবিষ্কার করবেন সেই সময়টায়; অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে। কথায় আছে- 'প্রত্যেক পুরুষের সফলতার পিছনে একজন নারীর হাত রয়েছে'। লেখক সাহেব যেন এটিকেই প্রমাণ করতে চেয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতি বড়ই নিষ্ঠুর! সে বিনিময় প্রথায় বিশ্বাসী। কিছু দিবে তো কিছু কেড়ে নিবে। লেখক সাহেব সে ব্যাপারেও কমতি রাখেননি। প্রত্যেকের জীবনে মা এক মহামূল্যবান সম্পদ। মায়ের আদর, শাসন, ভালোবাসা, শিক্ষা, আদর্শ ছাড়া অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বেড়ে ওঠা যুবক 'বাচ্চু'। তখন পর্যন্ত যার জীবনে কোনো নারীই আসেনি! হ্যাঁ, কয়েকজন উঁকি দিয়েছিল বটে৷ কিন্তু এক হবার সুযোগ হয় নি। সেই বাচ্চুর জীবনে হঠাৎ করেই উদয় হয় সেই 'মেমসাহেব'। তাকে পাওয়ার পরবর্তীকালেই বাচ্চু'র জীবনে আসে পরিবর্তন। মেমসাহেবের ভালোবাসায়, ইচ্ছায়, প্রেরণায় সিক্ত হয়ে বাচ্চু চালিয়ে যায় তার জীবনযুদ্ধ। বাচ্চুর ছুটে চলা জীবন গড়ার তাগিদে, মেমসাহেবকে পাওয়ার নেশায়। অতঃপর বাচ্চু সফল, কিন্তু তারপরও সে সফল হয়েও সফল না। বলা যেতে পারে- সে সফল, কিন্তু পরাজিত। আগেই বলেছি, এটি রোমান্সধর্মী উপন্যাস। গল্পটি লিখতে গিয়ে লেখক রোমান্টিকতার কোনো কমতি রাখতে চাননি। তাই এখানে বাম্পার ধরণের রোমান্টিকতার দেখা মিলবে। যা অনেকেরই মন ছুঁয়ে যাবে। যাদের এখনও বইটি পড়া হয় নি তারা বইটি পড়ে নিতে পারেন। 'মেমসাহেব' এর সঙ্গে আপনার যাত্রা শুভ হোক।
যারা কাছে আছে তারা কাছে থাক, তারা তো পারে না জানিতে তাহাদের চেয়ে তুমি কাছে আছ আমার হৃদয় খানিতে।
নিজের ভালোবাসা হারানোর কষ্ট, ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কষ্ট নিয়ে । লেখকের সহজ সরল স্বীকারোক্তি, সত্যিই মনকে ছুঁয়ে যায় । চোখ ভিজে আসে । অবাক হই ভেবে, এতটা নিঃস্বার্থ হয় ভালোবাসা । ভালোবাসার মানুষটাকে জীবনযুদ্ধে জয়ী করার জন্য এমন সংগ্রাম কোন "মেমসাহেব" ই করতে পারে । যতবার পড়ি এই বইটা ততবারই মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হয় "behind every successful man there is a woman".
সত্যিই অসাধারন । আমার অনেক প্রিয় বইগুলোর মধ্যে একটি । বারবার পড়া যায় এমন একটা বই ।
বইটি সম্বন্ধে বলতে হলে বলতে হয়- খুব উঁচু মানের লেখা নয়, একই কথা বার বার লেখা হয়েছে, ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে বার বার তাল কেটে যাচ্ছে, শেষের পূর্ভাবাস প্রথম থেকেই পাওয়া যাচ্ছে, তবে নিজের সব থেকে প্রিয়জন কে হারানোর পর তার স্মৃতির রোমন্থন করতে গিয়ে বার বার তাল কেটে যাওয়াটা খুব আস্বাভাবিক? যাকে নিয়ে সুখের ঘর বাধার স্বপ্ন দেখা সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মুহুর্তে তাকে হরিয়ে ফেলার পর অবশ হতে চোখের জলে ভেজা খাতার পাতায় এর থেকে কি খুব বেশি গুছিয়ে লেখা সম্ভব? আত্মা বিহীন শুধু শরীর টির দ্বারা কি এর থেকে খুব বেশি উঁচু মানের লেখা বেরিয়ে আসতো? তাই যদি হত তাহলে বলতাম লেখক মিথ্যেই তার লেখার জাল বুনলেন।