সূর্যতামসীতে যে রমনপাষ্টির খেলা শুরু হয়েছিল, সেই ভয়ঙ্কর খেলা এবার একেবারে শেষ চরণে... শতবর্ষ আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ পাপ, যা প্রকাশ পেলে “স্বয়ং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি টলিয়া যাইতে পারে”, লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল গোটা এক মানবগোষ্ঠী। সে পাপ সবার অজান্তে আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। এ এমন এক অভিশাপ, যা কাউকেই অনাহত রাখে না। তাড়া করে চলে বীভৎস দুঃস্বপ্নের মতো। অগ্নিনিরয় সেই অন্ধকারের দিনলিপি। এর অপরূপ মহাকাব্যিক কথনে প্রিয়নাথ মুখার্জি, গণপতি, সাইগারসন, তারিণী আর তুর্বসুর পাশাপাশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে লাজুক শৈলচরণ, নির্ভয় লখন কিংবা বৃহন্নলা রামানুজের মতো প্রান্তিক মানুষজন। আসে একের পর এক মৃত্যু। হত্যা। দুর্ঘটনা। বদলে যাওয়া হাতের ছাপ। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির রোমন্থন। চিকিৎসাশাস্ত্র আর জাদুবিদ্যার নিষিদ্ধ পরিজ্ঞান। মহারাণীর প্রাণভোমরা লুকিয়ে থাকে প্রাচীন এক কাঠের বাক্সে। কে দেবে সেই বাক্সের সন্ধান? আর ভূত? তাকে বশ করবে কে? তিনটি ক্রমিক পর্ব ধরে, কালের একুল-ওকুল ছাপিয়ে, কলকাতা, চন্দননগর, চুঁচুড়ার অন্ধকার অলিগলি বেয়ে বয়ে চলা এই ম্যাসন সিরিজ অবশেষে বিরতি নেবে এই খণ্ডে। আকারে বৃহত্তম, আখ্যানে জটিলতম, বিস্তারে সর্বব্য
জন্ম ১০ এপ্রিল, ১৯৮১, কলকাতা। স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পি. এইচ. ডি. তে সেরা ছাত্রের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত। নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া Bacillus sp. KM5 এর আবিষ্কারক। বর্তমানে ধান্য গবেষণা কেন্দ্র, চুঁচুড়ায় বৈজ্ঞানিক পদে কর্মরত এবং হাবড়া মৃত্তিকা পরীক্ষাগারের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক। জার্মানী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা গবেষণাগ্রন্থ Discovering Friendly Bacteria: A Quest (২০১২)। তাঁর কমিকস ইতিবৃত্ত (২০১৫), হোমসনামা' (২০১৮),মগজাস্ত্র (২০১৮), জেমস বন্ড জমজমাট (২০১৯), তোপসের নোটবুক (২০১৯), কুড়িয়ে বাড়িয়ে (২০১৯),নোলা (২০২০), সূর্যতামসী (২০২০), আঁধার আখ্যান (২০২০) ও নীবারসপ্তক (২০২১) এই সব দিনরাত্রি (২০২২), ধন্য কলকেতা সহর (২০২২), আবার আঁধার (২০২২), অগ্নিনিরয় (২০২২), হারানো দিনের গল্প (২০২৪), সিংহদমন (২০২৪), ডিটেকটিভ তারিণীচরণ (২০২৪), আরও একটি প্রবন্ধ সংকলন (২০২৫) সুধীজনের প্রশংসাধন্য। সরাসরি জার্মান থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন ঝাঁকড়া চুলো পিটার (২০২১)। বাংলাদেশের আফসার ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ম্যাসন সিরিজের বাংলাদেশ সংস্করণ (২০২২, ২৩), মৃত্যুস্বপ্ন (২০২৪), ডিটেকটিভ তারিণীচরণ (২০২৪) । সম্পাদিত গ্রন্থ সিদ্ধার্থ ঘোষ প্রবন্ধ সংগ্রহ (২০১৭, ২০১৮) ফুড কাহিনি (২০১৯), কলকাতার রাত্রি রহস্য (২০২০) সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবর্ষে একাই একশো (২০২২), কলিকাতার ইতিবৃত্ত(২০২৩), বিদেশিদের চোখে বাংলা (২০২৪) এবং কলিকাতার নুকোচুরি (২০২৫)
ট্রিলজি পড়তে গেলে ভয়েই থাকি বলা যায়। দেখা যায়, শুরুটা বেশ ভালো কিন্তু ধীরে ধীরে কাহিনির গতি ও উত্তেজনা দুই-ই কমে গেছে। ম্যাসন ট্রিলজি-র ক্ষেত্রে ঘটনা উল্টো। শুরুতে কিঞ্চিৎ আড়ষ্ট থাকলেও গল্পে ক্রমশ গতির সঞ্চার হয়েছে এবং কৌশিক মজুমদার সেই গতি (ও উত্তেজনা) কমতে দেননি কখনো। "অগ্নিনিরয়" এ পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো একটার পর একটা রহস্যের জট খুলেছে। মূল রহস্যের সমাধান পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে একদম শেষ পর্যন্ত। লেখকের দেওয়া বিভিন্ন তথ্য পড়েও আনন্দ পেয়েছি। সিরিজের আগের দুটো বইয়ের মতো এবারেও লেখক বাস্তব ঘটনার সাথে সুকৌশলে কল্পনার মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই মিশ্রণ এতো সূক্ষ্ম যে পাঠক ধাঁধায় পড়ে যাবেন। সবাইকে বলবো সিরিজটা পড়ে দেখতে। (সিরিজ শেষ কোরে ব্রিটিশ আমলের কলকাতা সম্বন্ধে জানার তুমুল আগ্রহ হচ্ছে। সাথে ঢাউস আকারের "দারোগার দপ্তর"ও পড়তে ইচ্ছা করছে খুব।)
গেল বছর যখন সুর্যতামসী আর নীবারসপ্তকের খোজ পাই, তখন থেকেই অধীর অপেক্ষায় ছিলাম কৌশিক মজুমদারের ফ্রিম্যাসন সিরিজের শেষ বই ' অগ্নিনিরয়'এর। অবশেষে ডিসেম্বরে প্রকাশ পেল বইটি, তারপর আগের দুই খন্ড রিভিশন দিয়ে, শুরু করলাম অগ্নিনিরয়।
যদিও এই রিভিউ ঠিক অগ্নিনিরয়কে নিয়ে না, বলতে গেলে পুরো ফ্রি ম্যাসন সিরিজের উপর- ঠিক রিভিউ না বলে পাঠপ্রতিক্রিয়া বললে ভুল হবে না। গল্পের শুরু তুর্বুসু নামের এক নব্য ও শখের গোয়েন্দার মাধ্যমে, ঘটনাক্রমে(?) সে প্রতিযশা গোয়েন্দা তারিনীচরন রায়ের প্রপৌত্র। অনেকটা অপ্রতাশিতভাবে সে জড়িয়ে যায় তার প্রিয় দাদা, দেবাশীষ গুহের এক রহস্যজনক খুনের মাধ্যমে। প্রাচীন লি-চিং পদ্ধতিতে খুন করা হয় তাকে, মৃত্যুর আগে দিয়ে যান এক গোপন মেসেজ,
ঘটনাচক্রে আরও অনেকে জড়িয়ে পড়েন অনেকটা রিচুয়ালিস্টিক এই খুনের সাথে। একের পর এক গোপন ক্লু, কে শত্রু কে মিত্র, সাথে জড়িয়ে আছে কোনো বৃহৎ ষড়যন্ত্র, গোপন ভ্রাতৃসংঘ, খুন আর রক্ত- পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আটকে রাখবে বইটির পাতায় পাতায়-এই হলো সুর্যতামসীর গল্প। এরপর নীবারসপ্তকে ধীরে ধীরে আরও ক্লু আসবে, অনেক কিছু পরিস্কার হবে পাঠকের কাছে- যার চূড়ান্ত সমাধান হবে অগ্নিনিরয়ে।
এই হলো বর্তমানের কথা- কিন্তু এই গল্পের সাথে সমান্তরালে আছে অতীতের এক কালো ইতিহাস- এক অজানা অধ্যায়। এই ইতিহাসের সাথে যুক্ত আছেন 'দারোগার দপ্তরে' খ্যাত প্রিয়নাথ দারোগা, প্রথম বাঙ্গালি প্রাইভেট ডিটেকটিভ তারিনীচরন রায়, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সাইগারসন(আসল নাম বললে স্পয়লার হয়ে যাবে) এবং আরও অনেকে। এই ইতিহাস খুজে পাওয়া যাবে প্রিয়নাথ দারোগার শেষ হাড় বা ২০৬ নং গল্প ও তারিনীচরনের ছেড়া ডায়েরিতে। দেবাশিষ গুহের খুন কি এই প্রাচীন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি? নাকি জড়িয়ে আছে কোনো ভয়ানক ষড়যন্ত্র যা পুরো ইতিহাসকে বদলে দিবে - কে বা কারা শুরু করেছে রমণপাষ্টির খেলা- শুরুর শেষ নাকি শেষের শুরু এই খুনগুলো,হিলির ভুত কি আবার ঘুম থেকে জেগে উঠল? ফ্রিম্যাসনদের ব্রাদারহুড কি সিক্রেট রক্ষা করে চলছে যুগের পর যুগ থেকে- জানতে হলে পড়তে হবে এই ফ্রিম্যাসন ট্রিলজি।
"একশো বছর পরে ভূত সত্যিই জেগেছে। তুমিই হয়তো জাগিয়েছ। এবার সেই ভূত কীভাবে নৃত্য করবে, সে ব্যাপারে, বিলিভ মি, আই হ্যাভ অ্যাবসোলিউটলি নো আইডিয়া।”-প্লট নিয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই- স্পয়লার হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। অতীত- বর্তমানকে নিয়ে লেখক কৌশিক মজুমদার যে ফিকশন- নন-ফিকশনের ককটেল বানিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়, উনিশ শতকের শেষের কলকাতায় ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি হবে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে গল্পের সব ক্লু গুলো যখন জোড়া লাগা শুরু করল।সিরিজের একদম প্রথম পাতা থেকে লাস্ট প্যারা পর্যন্ত সেই একই সাস্পেন্স-সমানতালে এগিয়েছে পুরোটা সময়। সাথে থ্রিলার-ইতিহাস- সিক্রেট সোসাইটি - এক পাচমিশালী স্বাদ পেয়েছি পুরো বই জুড়ে। একদম পাঁচে পাঁচ দেয়ার মতো।
এপার বাংলা আর ওপার বাংলার মধ্যে পার্থক্য শুধু ওই কাটাতারের বেড়া- সত্যজিৎ, শরদিন্দু, সুনীল পড়ে আমরা বড় হয়েছি। মাঝে কিছুদিন হয়ত সাহিত্যে একটু শুন্যতা ভর করেছিল পশ্চিমবঙ্গে । কিন্তু এখন কৌশিক মজুমদার সহ আরও নতুন লেখকদের লেখা পড়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য। আবার আগের মতো লক্ষ্য রাখতে হবে কাটাতারের ওপারে নতুন কি কি লেখা আসল বইমেলায়। বাংলাদেশের একজন ক্ষুদ্র পাঠকের পক্ষ থেকে লেখকের জন্য শুভকামনা। শেষ করব বইটির একটা প্রিয় লাইন দিয়ে, “শয়তানের সবচেয়ে বড় শয়তানি, সে মানুষকে বিশ্বাস করিয়েছে শয়তান অলীক, অবাস্তব।"
বইয়ের নামঃ অগ্নিনিরয় লেখকঃ কৌশিক মজুমদার প্রকাশনীঃ বুকফার্ম রেটিংঃ ৫/৫
রহস্যের যে জাল সূর্যতামসীতে বোনা হয়েছিল, তা পুরোপুরি উল্টে গেছিল দ্বিতীয় পর্ব নীবারসপ্তকে। যেখানে আড়াল থেকে রমণপাষ্টির চাল চালছে কেউ। শুরু হচ্ছে ভূতের নৃত্য। অগ্নিনিরয় শুরু হচ্ছে সেই ভূতের খোঁজ দিয়েই। তবে এবার রহস্যর মায়াজাল কেটে গিয়ে বোঝা যাচ্ছে ভূতের কর্মকান্ড। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে গোটা সিরিজ ধরে ঘটে চলা ঘটনার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা ।
পুরো সিরিজের যে ব্যাপারটা সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে তা হলো, সিরিজের শুরু থেকে থাকা প্রতিটি বাস্তব ও কল্পিত চরিত্রের স্পষ্ট অবয়ব তৈরি। সাইগারসন, তুর্বসু রায়,তারিণীচরণ, শৈলচরণ, বিশ্বজিৎ,রামানুজ, দেবাশীষ গুহ, অমিতাভ মুখার্জি - সবার ভূমিকা বদল হয়েছে অগ্নিনিরয়ে। কে কার দলে, কোন স্বার্থে কাজ করছে - তা বুঝে ওঠা একসময় দুষ্কর হলেও পরে সহজেই জট খুলে দিয়েছেন লেখক। সেই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন টাইমলাইনে থাকা সবকটি চরিত্রেরই পরিণতি দেখিয়েছেন, যাতে পাঠকের মনে আর কোনও প্রশ্ন না জাগে।
তবে সব থেকে সুন্দর হল বইয়ের শেষটা। যা পড়ে পাঠক ভূত দেখার মতোই চমকে উঠবে।
এই ধরণের তুমুল জটপাকানো কাহিনিকে সুচারুভাবে শেষ করা সহজ নয়, এই ট্রিলজির লেখকও পারেননি। কাহিনির মূল রহস্যের সমাধানটা খুবই কষ্টকল্পিত, প্রায় অলৌকিক (নাকি "ভৌতিক"?) বলা চলে। যে-ব্যক্তিকে অসীম ক্ষমতাশালী বলে সারাক্ষণ প্রচার করা হলো, শেষে দেখা গ্যালো নেহাতই ছাপোষা প্রায়-গোবেচারা ভঙ্গিতে তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। কাহিনিতে প্রকৃত টুইস্ট বলে কিছু নেই, রেড হেরিং বলে কিছু নেই। যারা সন্দেহভাজন, তারাই অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে। একদম শেষে যেটাকে টুইস্ট বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেটাও অতি দুর্বল। গল্পটা বলতে গিয়ে এত বেশি অবান্তর প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে যে মাঝে মাঝে খুব বিরক্তি লেগেছে। পরিবেশ নির্মাণের স্বার্থে কাগুজে তথ্যের রেফারেন্স টানা জরুরি বুঝলাম, তাই বলে রহস্য উপন্যাসকে শ্রীপান্থের প্রবন���ধ বানাতে হবে? তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের যেরকম অপরাধপ্রবণতার আলোকে দেখানো হয়েছে সেই ব্যাপারেও আমার আপত্তি আছে। গল্প পড়া শেষ করার পরে বইয়ের একদম অন্তিমে দেওয়া "সহায়ক গ্রন্থতালিকা"টি দেখে হাসি পেয়ে গ্যালো। এই ট্রিলজি লিখতে নাকি ৮২টা বাংলা (তার মধ্যে দুটি লিখেছেন লেখক নিজেই) এবং ৭৭টা ইংরিজি বইয়ের সাহায্য লেগেছে!!
A perfect ending indeed! কৌশিক মজুমদার বেশ দারুণভাবে উপসংহার টেনেছেন। পাজলের সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে জোড়া লাগাতে পেরেছেন বলে বেশ ভালো ফিল করেছি। কৌশিক মজুমদারের বাকি বইগুলো উৎসাহ নিয়ে পড়তে চাই।
প্রাককথন: কিছুদিন আগেই কোনো বন্ধুর পরামর্শে যখন 'সূর্যতামসী' উপন্যাস পড়া শুরু করি, তখন হাতে উপন্যাস পড়ার মতো ফাঁকা সময় খুব একটা ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু একটা ভেবে যখন খুলে বসলাম, জানিনা কি হল! কিসের মোহ আকর্ষণে নিবিষ্ট মনে বইয়ের একের পর পাতা ওল্টাতে লাগলাম, কিছুতেই বিরত রাখতে পারছিলাম না নিজেকে। বই বন্ধ রাখলেও মনে সে কি ভীষণ চাঞ্চল্য , সেই প্রশ্নগুলোই মনে ঘুরে ফিরে আসে, অন্য কোনো কাজ হয় না। অগত্যা, দিনে দিনেই উপন্যাস পড়ে ফেলতে বাধ্য হলুম, পড়াশোনাসহ অন্য সব কাজ শিকেয় তুলে। কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর তো পাওয়া হল না! অস্থিরতা বেড়েছে বৈ কমে নি! দেবাশিস গুহ'র খুন থেকে শুরু করে তুর্বসুর পারিবারিক রহস্য, ম্যাসনারির ইতিহাস, উদ্দেশ্য কি, প্রিয়নাথ, তারিণী, সাইগারসনের মিলিত প্রচেষ্টা ঠিক কোন দিশা দেখাবে উনবিংশ শতাব্দীর কোলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া একের পর এক রহস্যময় খুন আর অপরাধের...প্রশ্নগুলো মাথায় জমাট বেঁধে নাজেহাল করে ফেলছিল। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হল না অবশ্য, জেলা বইমেলা জোগান নিয়ে এল ওষুধের, কিংবা যন্ত্রণা উপশমের জাদুমলম! সংগ্রহ করে নিলাম, ম্যাসন সিরিজের তিনখানা গ্রন্থই।
পাঠপ্রতিক্রিয়া না লিখে থাকতে পারলাম না। কারণ? ক্রমশ প্রকাশ্য!
পাঠপ্রতিক্রিয়া:
'সূর্যতামসী'তে যে রহস্যের বীজ বোনা হয়েছিল কোলকাতার বুকে, তা আসলে শেষ ছিল না, শেষের শুরুও ছিল না...হয়তো ছিল শুরুর শুরু। সামান্য একটা আভাস দিচ্ছিল আগামীর আশঙ্কার হয়তো...অন্তত উপন্যাসের শেষে এসে তাই মনে হচ্ছিল।
কিন্তু 'নীবারসপ্তক'-এ এসে পাঠক পুরোপুরি ব্যোমকে যেতে বাধ্য হলেন। কেননা প্লট যে এখন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে! 'সূর্যতামসী'-র সবচাইতে বড় অবদান সম্ভবত এই সিরিজের বহু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের সাথে আমাদের পরিচয় করানো। পাশাপাশি গল্পটাকে একটা নির্দিষ্ট এবং প্রবহমান গতে বেঁধে দেওয়া।
প্রথম উপন্যাস নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ ছিল, এখানে তথ্যের কচকচানি অপেক্ষাকৃত বেশি। সামূহিক তথ্যের উপস্থিতি বারবার গল্পের গতিকে অনেকটাই শ্লথ করে দিচ্ছিল, কেউ কেউ নাকি ধৈর্যও হারাচ্ছিলেন।
আমার কাছে কিন্তু ব্যাপারটা একদম এরকম মনে হয়নি। নন ফিকশন অনেক বেশি পড়ার কারণেই হোক বা অন্য যেকোনো কারণেই, আমার কাছে গল্পের গ্রহণযোগ্যতা এতটুকুও ক্ষুণ্ণ হয়নি, আগাগোড়া এর প্রাঞ্জলতা অনুভব করেছি। চন্দননগর, চুঁচুড়ার ইতিহাস সম্পর্কে প্রায় কিছুই না জানায় আমি আরো অনেক কিছু সম্পর্ক জানতে যেমন আগ্রহান্বিত হয়েছি, তেমনি বুঝতে পেরেছি অনেক অনেক ননফিকশন পাঠ আর লেখালেখির চর্চা করার ফলে কারো ফিকশন লেখার হাত কতটা ক্ষুরধার হতে পারে। কৌশিক মজুমদার মহাশয় যে ননফিকশন লিখতে পারদর্শী, এটা আগে থেকে না জানলেও 'সূর্যতামসী' পড়ে তা বুঝতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি।
যদিও 'নীবারসপ্তক'কে সেই অভিযোগ থেকে অনেকটাই মুক্ত রাখতে পেরেছেন লেখক। এই গ্রন্থ পাঠকমহলের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হওয়ার কারণও ছিল অনেক।
অপেক্ষাকৃত অনেক জটিল প্লট, অনেক চরিত্রের আগমন, ঘটনার বাহুল্য, একের পর এক চমক দিয়ে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর যেমন গল্পের একটা দিক, তেমনি রহস্যের বিস্তৃতি, একের পর এক নতুন প্রশ্নের উত্থানও মুদ্রার অন্যপিঠ। এক কথায়, 'নীবারসপ্তক' যখন শেষ হয়, তখন রেখে যায় অনেক প্রশ্ন। কাহিনির একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পাঠকের আকুলতা বহুলাংশে বাড়িয়ে তবেই লেখক ক্ষান্ত হন।
নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে হচ্ছে, এক বছরব্যাপী ওই তীর্থের কাকের তালিকায় নাম লেখাতে হয়নি বলে। কেননা, এ ভারি জুলুম হয়ে যেত নিজের মন-মস্তিষ্কের ওপর। যাই হোক, 'সূর্যতামসী' আর 'নীবারসপ্তক'-এর পর অনেক অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছিল আমাদের মনে।
যেমন- রমনপাষ্টি'র যে খেলা শুরু হল উনবিংশ শতকের কোলকাতায় তার শেষ কোথায়? এখনকার দুই খুনের সাথেই বা তাদের কি সম্পর্ক?
শৈল খুনের রহস্যের কতটা কিনারা করতে পারবে তারিণী, প্রিয়নাথ আর সাইগারসন ('সূর্যতামসী'র পর যার আসল পরিচয় অনুমান করতে কারোরই বাকি থাকার কথা নয়)?
ম্যাসনিক ব্রাদারহুড আর জাবুলনদের কার্যকলাপের সাথে ইংরেজ সাম্রাজ্যের সম্পর্ক কোথায়, কেন?
আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন....ভূত (B.H.U.T.) -এর পরিচয় কী? কী তার ক্ষমতা, কীইবা তার ভবিষ্যৎ?
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হাজির 'অগ্নিনিরয়'। সেই একই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে, লেখক আবারও পরিচয় করালেন কিছু নতুন চরিত্রের সাথেও। গল্প যত এগিয়েছে, রহস্য তত দাঁনা বেঁধেছে।
প্লটে যত নয়া মোড় সংযোজন করেছেন লেখক, তাতে গল্প আরো অনেক ডালপালা মেলেছে ঠিক, তবে কখনোই তা পাঠককে অধৈর্য করে তোলে না। আর এখানেই লেখক জিতে যান। প্রতিটি চরিত্র, প্রত্যেকটা ঘটনার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিবরণ পাঠক মন দিয়ে পড়ে যেতে বাধ্য। চাইলেও দ্রুত পড়ে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর এক পডকাস্টে তো কৌশিকবাবু বলেই দিয়েছিলেন, অগ্নিনিরয় পড়ার সময় পাশে আগের দু'টো খণ্ড পাশে নিয়ে বসলে ভালো হয়।
গল্পের স্পয়লার দিয়ে বিন্দুমাত্র জল ঢালতে চাই না কারো আগ্রহে। শুধু এটুকু বলবো, এই কাহিনিতে রবার্ট লুই স্টিভেনসনের চরিত্রের আগমন আর তাঁর জীবনের এক বড়সড় রহস্যের দিকে আলোকপাত, এই উপন্যাসকে আরো জীবন্ত করে তুলেছে।
আরো একটি ব্যাপারে লেখককে কৃতিত্ব দিতেই হয়। প্রত্যেকটি অধ্যায় বা পরিচ্ছেদের শেষে তিনি যে ট্যুইস্ট বা মোচড়গুলো এনেছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।
কোনো কোনো অংশে এসে তো মনে হচ্ছিল....আরে! এ হল কি! এমনটাও সম্ভব!!! রীতিমতো কয়েকবার সেই একই লাইন পড়ে কয়েক সেকেন্ড ধরে ভাবতে হল, আরে, যা পড়লাম তা কি সত্যি!
একটা কথা একাধিকবার উঠে এসেছে এই ম্যাসন সিরিজে। মিথ্যের থেকেও যা ভয়ঙ্কর, তা অর্ধসত্য। পুরো সিরিজটা পড়েও মনে হয়, এর পর্যালোচনা করার জন্যেও এর চেয়ে যুতসই উদ্ধৃতি বোধহয় হতে পারতো না। ইতিহাস, কল্পকাহিনি আর অর্ধসত্যের মেলব��্ধনে লেখক যে কাহিনি উপস্থাপন করেছেন চোখের সামনে, তাতে কোনটা ফিকশন, কোনটা নন ফিকশন, ঠাহর করতে আমাদের কালঘাম ছোটে। বিস্ময়ে হতবিহ্বল হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
কৌশিকবাবুর লেখনীর মূল্যায়ন করার সামান্যতম ধৃষ্টতা নেই। পুরো সিরিজটা কখনোই একরৈখিক হতে দেননি তিনি। একাধিক সময়রেখায়, মাল্টিপল ন্যারেটিভে পুরো গল্প অগ্রসর হয়েছে। কি উদ্দেশ্যে তিনি এমনটা করেছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন উপন্যাস শেষ হওয়ার পর। আমার বিশ্বাস, সে উদ্দেশ্যে তিনি ষোলোআনা সফল। আর পাঠকমহলের প্রতিক্রিয়াও সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।
খারাপ দিক বা দুর্বল দিক বলতে আমার সেরকম কিছুই মনে হয়নি। তবে এরকম ক্লাইম্যাক্স হয়তো কেউই প্রত্যাশা করেনি। আর আমি অন্তত দারোগা প্রিয়নাথের বংশধরের এমন পরিণতি প্রত্যাশা করিনি। আর তারিণীর হঠাৎ নিঁখোজ হয়ে যাওয়াটাও রহস্যই হয়ে রইল না কি?
পুরো বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে পৃষ্ঠা, প্রিন্টিংয়ের গুণমান ভীষণ প্রশংসনীয়, নজরকাড়া। গল্পের সাথে সাথে যুক্ত ইলাস্ট্রেশন, একটা লণ্ডনের ম্যাপ, রঙিন জাদুকরের চিত্র, সমকালীন বিজ্ঞাপনের ছবি, লিখনশৈলীর প্রয়োগ অভিনব মনে হয়েছে।
সর্বোপরি, প্রকাশক বুকফার্ম আর লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা গোয়েন্দা উপন্যাস আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য। বিগত কয়েক বছরে আমার পড়া যেকোনো জঁরা'র বইয়ের মধ্যে হয়তো এই সিরিজটা বিশেষ স্থান অধিকার করে থাকবে।
[পুনশ্চ: এই বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া না লিখে পারলাম না, তার আরও একটি বিশেষ কারণও আছে। লেখক হাটখোলা দত্ত পরিবারের প্রসঙ্গ বারবার এনেছেন এই সিরিজে আর পরিবারের বেশ কিছু সদস্যকে এর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবেও ব্যবহার করেছেন। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত এই অধমও বংশসূত্রে কোথাও না কোথাও সেই পরিবারের সাথে দূর -সম্পর্কিত। অর্থাৎ পুরুষোত্তম দত্ত আর নারায়ণ দত্তের বংশধর হিসেবে আমরাও নিজেদের পরিচয় দিই, অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষেরা একই উৎসের বা জ্ঞাতিসম্পর্কীয়ই বলা যায়। সেদিকের বেশ কিছু পরিচিত আত্মীয়কে জিজ্ঞেস করেও এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো সুষ্ঠু উত্তর পাইনি। যদিও ডাক্তার গোপালচন্দ্র দত্তের অস্তিত্ব বাস্তবে ছিল বলেই তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু লেখকের কাছেই প্রশ্ন, দত্ত বাড়ির সেই সদস্যদেরকে নিয়ে আপনার লেখা অংশগুলো কতটা সত্য? নাকি প্রায় পুরোটাই আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রচনা?]
বেশকিছু দিন, কারণবশত, গ্যাপ দিয়ে শেষ করলাম কৌশিক মজুমদারের ম্যাসন সিরিজের শেষ উপন্যাস "অগ্নিনিরয়"। বরাবরের মতো এটাতেও চাপা উত্তেজনাকে জিইয়ে রেখেছেন লেখক। সরল বাক্যে, কঠিন টাইমলাইনের প্যাঁচে, আর একের পর এক ঘটনাচক্রের ভেতরে পাঠককে ধরে রাখার কাজটা খুব সুনিপুণ ভাবেই করেছেন লেখক।
পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে বসে মনে হচ্ছে যা বলব তা-ই স্পয়লার হয়ে যাবে। "নীবারসপ্তক" এ একদম শেষে যেভাবে লেখক গল্প শেষ করেছিলেন তাতে বইটাকে এতদিন পর পড়ার ইচ্ছে ছিলোনা। তখনই শেষ করতে না পারলে হয়তো আগ্রহ হারিয়ে যাবে বা সেই আবেগ কাজ করবেনা এমন ভয় ছিলো। তবে সেটা শুধু ভয়-ই। লেখকও ঠিক জানতেন যে তিনি কমপ্লেক্স একটা প্লট সাজিয়েছেন। তাই ইশারা ইঙ্গিতে আগের প্লটগুলোর সাথে কিছুটা আন্দাজ করার মতো কথা জুড়ে দিয়ে পাঠকদের একটু স্বস্তি দিয়েছেন।
গল্প সেই আগের টাই। সেই চিরযৌবনা ভূত। আর ভূতের সাথে জড়িয়ে পড়া মানুষজন। সেই ভূত আগেও যেমন জেগেছিলো, বর্তমানেও তেমোনি জেগেছে। যার ফলাফল অতীতেও ছিলো ভয়ানক আর বর্তমানেও তাই। কাজ একটাই, সেই ভূতকে সমূলে বিনাশ করা। কিন্তু কাজটা ঠিক ততোটা সহজ না। আর এখানেই ঢুকে পড়ে অতীতকে জানার প্রয়োজনীয়তা। অতীতকে না জানলে বর্তমানে ভূতের অবস্থান জানা অনেকটাই অনিশ্চিত। আর সেই অতীত, বর্তমানকে খুব সুন্দরভাবে একযোগে উপস্থাপন করেছেন কৌশিক মজুমদার। সমান্তরালে গল্পকে চালিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন অতীতের ইতিহাস আর তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন বর্তমানের। দেখিয়েছেন অতীতের মেলবন্ধনে থাকা বর্তমান চরিত্রদেরকেও।
লেখকের পরিসমাপ্তি দেখতে অপেক্ষা করতে হয়েছে একদম শেষ অবদি। এটা খুবই ভালো একটা দিক। বইটা শুরু করার পর একটা নাম নোটে টুকে রেখেছিলাম। দেখার ইচ্ছা ছিলো মিলে কিনা। শেষ পর্যায়ে যাওয়াতে মনে হলো ভুল ছিলাম হয়তো। পরের পরিচ্ছদে অবশ্য জয়ী হয়েছি। সেটা বড় কথা না। বড় কথা হচ্ছে এই নাম ততোটাও অন্দাজযোগ্য না। আর এখানেই একটু খটকা আছে কাহিনী ডেভেলপমেন্ট নিয়ে।
কিছু খারাপ লাগার ব্যাপরও আছে বই-কে ঘিরে। লেখক "পরিসমাপ্তির" পর নিজেকে নিয়ে আর বইটা লেখার কারণ নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। বলায় বাহুল্য লেখক ডিটেকটিভ উপন্যাসের খুব বড় মাপের পাঠক। কিন্তু প্রচলিত ধারা থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলেন। থেকেছেনও তাই। তিনি অন্যান্য ঔপন্যাসিকদের মতো উচ্চ, কিংবা মধ্যবিত্তদের বদলে তার গল্পে তুলে এনেছেন নিম্নবিত্তদের। গল্পে উচ্চ বা মধ্যবিত্ত থাকলেও লেখকের মতে নিম্নবিত্তদের তুলনায় গল্পে তাদের অবস্থান তেমন উপরে না। আর এখানেই গল্প সমন্ধে আরেকটা খটকা চলে আসে। যেটাকে খারাপ লাগার ভেতরেই রাখা যায়। কারণ নিম্নবিত্তদের বেশি কাজে লাগাতে লেখক অনেক মুল্যবান জিনিসকে যেখানে সেখানে থাকতে দিয়েছেন। এত বহু মুল্য জিনিসটাকে তিনি ১. অনেক মুল্যবান হিসাবে দেখিয়েছেন। ২. তিনি সেটাকে ছেলেখেলা বস্তুর মতো যেখানে সেখানে ফেলে রেখেছেন। যে জিনিসটার জন্য এত এত প্রান গেলো সেটাকে এমন উদ্ভট উদ্ভট জায়গায় এবং ব্যাক্তিবর্গের কাছে রাখার কোনো কারণ আমার মাথায় খেলেনা। তারপর আসে চরিত্রের খটকা লাগা ডেভেলপমেন্ট যেটা উপরের অনুচ্ছেদে বলেছি। গল্পে তার অবস্থানের সময়কাল নেহাত কম না। তারপরও তার মটিভ তার সাথে এরকম করার মটিভ সমন্ধে সেরকম সরস বক্তব্য লেখক দেননি। কাজ সে এমনিতও করতো। এ জায়গাটাতে একটা কিন্তু থেকেই যায়।
কিছু জটিলতা, কিছু টাইমলাইনজনিত কারনে পড়তে সমস্যা ছাড়া খুবই ভালো এই ম্যাসন সিরিজ।
পুরো সিরিজটায় ইতিহাসের নানা ঘটনা ও ব্যক্তি এবং ফিকশনাল চরিত্র নিয়ে আসা হয়েছে। প্রচুর বই পড়ার সুবাদে এর মধ্যে কিছুমিছু বিষয় জানা ছিল ও চরিত্র চেনা ছিল। লেখককে সাধুবাদ জানাই, তিনি এমন দারুনভাবে এসব ঘটনা ও চরিত্র ব্যবহার করেছেন। জাস্ট অসামমমমম!
আজ থেকে তিন বছর আগে শুরু হওয়া একটি পথচলা আজ ফুরোল। শেষ হয়ে গেল 'সূর্যতামসী' দিয়ে শুরু হওয়া সিরিজটি। কেমন লাগল? ভালো-মন্দের অনুভূতি নিয়ে পড়ে লিখব। প্রথমেই একটা কথা লিখি। এপার বাংলায় আজ অবধি বিস্তর রহস্য উপন্যাস লেখা হয়েছে। ঐতিহাসিক তথা ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাসও লেখা হয়েছে অজস্র। এই উপন্যাস তথা ট্রিলজি সম্ভবত তাদের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বহু সত্যি-মিথ্যে ইতিহাস আর আজকের এই কলকাতা ও চন্দননগরের ঘটমান বর্তমান মিশিয়ে লেখা হয়েছে এটিকে। এর মধ্যে এমন বহু জিনিস আছে যা এযাবৎ বাংলা লেখায় দেখা যায়নি। তাদের ফিরিস্তি দিলে পুরো সিরিজের স্পয়লার দেওয়া হয়ে যাবে বলে ব্যাপারটা থেকে বিরত হলাম। তবে এই তিনটি বই পড়তে গিয়ে ��ারবার গর্বিত হতে হয়েছে লেখকের ভাবনার বিস্তার দেখেই। তারই সঙ্গে দেখেছি, কীভাবে পাঠকের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে লেখক ইনফো-ডাম্পিঙের পরিবর্তে লেখার অভিমুখ ক্রমেই পরিবর্তিত করেছেন। এই উদ্বর্তন যে কত কঠিন, তা লেখক ও পাঠক উভয়েই মানবেন। কিন্তু... লেখক যা করতে চেয়েছিলেন, তা কি শেষ অবধি সম্ভবপর হয়েছে? অসরলরৈখিক কাঠামো, অনির্ভরযোগ্য চরিত্র, অবিশ্বাস্য জটিলতা— 'অ' দিয়ে শুরু হওয়া এমন বহু বিশেষণই প্রয়োগ করা চলে এর বর্ণনা দিতে গিয়ে। তবে শেষ অবধি এটির কেন্দ্রে আছে একটি কন্সপিরেসি থিওরি। কনস্পিরেসি থিওরির ভিত্তিতে কাহিনি নির্মাণ করার প্রধান সমস্যা হল, একবার সেই থিওরিটি বাতিল হলে বাকি কাল্পনিক আখ্যানটিও অসার হয়ে পড়ে। তাই, স্টিফেন নাইটের তত্ত্ব মেনে দাঁড় করানো এই আখ্যানের ষোলো আনাই বৃথা হয়ে গেছে বইয়ের শেষে। এছাড়া এই কাহিনিতে এমনিই এত অনাবশ্যক জটিলতা ছিল যে এতে জোর করে অমিতাভ ঘোষের 'দ্য ক্যালকাটা ক্রোমোজোম'-কে মেশানোর বিন্দুমাত্র প্রয়োজন ছিল না। লেখক উপসংহারে তাঁর চিন্তনের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন। সেটা পড়লে বোঝা যায়, অনেক বিষয় নিয়ে অনেক পড়াশোনার নির্যাস তিনি এই একটি কাজের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এটাই, আমার মতে, কাল হয়েছে। কাহিনি নিদারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই সর্বব্যাপী পড়াশোনার ঠেলায়। শেষ অবধি আমার বইয়ের আলমারিতেও এই সিরিজের তিনটি বই কলকাতা-বিষয়ক রেফারেন্স বইয়ের অংশেই ঢুকবে। আগের দুটো খণ্ড পড়ে থাকলে এটিও আপনাকে পড়তেই হবে। লেখা গতিময় হওয়ায় বইটা শেষও হবে একবারেই। কিন্তু তারপর? পড়েই দেখুন।
সিরিজের আগের দুই বইয়ে রহস্যের যে জাল ছড়ানো হয়েছিল 'অগ্নিনিরয়' এ এসে জাল গোটানো হলো৷ কৌশিক মজুমদারের "ম্যাসন" সিরিজ পাঠকপ্রিয় এবং তা সঙ্গত কারণেই। এতবড় সিরিজে পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখা, রহস্যের ধারা বজায় রাখা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার, এক্ষেত্রে লেখক সফল। পুরান ঢাকা এবং পুরাতন কলকাতা নিয়ে আমার আগ্রহ প্রচুর। সিরিজের বইগুলো পড়তে গিয়ে পুরতান কলকাতায় ঘুরে এলাম যেন।
The book is finished. The series is finished. Long live the series. Long live hellfire.
কী একটা সিরিজ শেষ করলাম! বহুল পঠিত ও চর্চিত এই সিরিজের বই তিনটির আলাদা রিভিউ দেয়া প্রয়োজন মনে করলাম না। ওভারঅল সিরিজের একটা পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখার ইচ্ছা রইলো।
রমণপাষ্টির খেলা শেষ হয়ে গেল। "নীবারসপ্তকে" যে জনরার ককটেইল বানানো শুরু করেছিলেন কৌশিক মজুমদার, সেটা "অগ্নিনিরয়ে" অব্যাহত রয়েছে। শার্লক হোমসের কিছু গল্প তো বটেই, ভিক্টোরিয়ান লন্ডনের আরও কিছু কিংবদন্তি ঠাঁই পেয়েছে এই উপন্যাসে। জাম্প কাটের জন্যে ঘটনাবিন্যাস বেশ জটিল, একাধিক চরিত্রের কথা মাথায় না রাখলে একটু বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়াটাও অসম্ভব নয়। চলুন, টাইমলাইন ধরে এগোতে থাকি।
সিরিজের সব থেকে বড় রহস্য ছিল (হিলির) ভূত। ভূত কী? কোথা থেকেই বা সেটা এল? সেটা মাথায় দেয় না গায়ে মাখে? সব বুঝে যাবেন প্রথম ১৫-২০ পাতার মধ্যে (আপনার যদি ভিক্টোরিয়ান সাহিত্য সম্বন্ধে একটু প্রচ্ছন্ন ধারণা থাকে তো অনেকটা রহস্যের সমাধান ওখানেই হয়ে যাবে)। ভূতের এই "রিভিল" আমার বেশ ভাল লেগেছে। যখন বুঝলাম ঘটনা কোনদিকে এগুচ্ছে, নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল।
এরপর গল্পের সুতোগুলোকে কেন্দ্রের দিকে টানতে শুরু করেন কৌশিকবাবু। লখনকে বাদ দিয়ে হঠাৎ এক নতুন অ্যান্টাগনিস্টের আবির্ভাব হয়, এবং লখন প্রায় একটা পার্শ্বচরিত্রে পরিবর্তিত হয়ে যায়। উপন্যাসের এই অংশটুকু আমার বেশ দুর্বল লেগেছে। নীবারসপ্তকের একটা বড়সড় অংশ লখনের সাথে কাটিয়েছি আমরা। আমরা জানি ওর মোটিভের ব্যাপারে, আমরা জানি ওর কষ্টের কথা। আমার তরফ থেকে অল্প সহানুভূতিও ছিল ওর পক্ষে। সেইরকম লোককে বাদ দিয়ে নতুন সাহেব ভিলেইনটা ঠিক জমল না।
আগের দুটো উপন্যাসে অতীতের রহস্য আমাকে বেশি টেনেছিল, কিন্তু অগ্নিনিরয়ে তুর্বসুর গল্প বেশি ভাল লেগেছে। গল্পের শেষাংশ (উত্তরখণ্ড) পুরোটাই তুর্বসুকে নিয়ে, এবং এই একটা খণ্ডের মধ্যে আমার বেশিরভাগ ভালো লাগা জমে রয়েছে।
রহস্যের অনেকগুলো লেয়ার ধীরে ধীরে তুলে ফেলা হয়েছে, আর প্রতিবারই বেশ চমকে গেছি। জীবনে তো কম ডিটেকটিভ গল্প পড়লাম না, কিন্তু এইরকম অদ্ভুত ডিটেকটিভ উপন্যাস শেষ কবে পড়েছি মনে পড়ল না। ডিটেকটিভ জনরাতে অন্য জনরা মেশালে অসাধারণ সব গল্প বলা সম্ভব। একটা ভাল উদাহরণ হল হ্যারি ড্রেসডেন সিরিজ (ডিটেকটিভ + ফ্যান্টাসি)। আরেকটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল সুমিত বর্ধনের "অর্থতৃষ্ণা" (ডিটেকটিভ + স্টিমপাঙ্ক)। ম্যাসন সিরিজে ডিটেকটিভের সাথে অল্প কল্পবিজ্ঞান মিশেছে, তাও টুকরো টুকরো প্যাস্টিশের মেশাল দিয়ে। তিনটে বই পরপর পড়েছিলাম বলে অভিজ্ঞতাটা নেশা ধরানো ছিল। ভিক্টোরিয়ান লন্ডন থেকে কলকাতার অতীত-বর্তমান থেকে চন্দননগর থেকে আরও কোথায় কোথায়...
উপন্যাসের শেষে যখন সমস্ত রহস্য উদঘাটিত হল, তখন মস্তিষ্ক হালকা হ্যাং করে গেছিল। বইটা বন্ধ করে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসেছিলাম।
অনেক কাব্য তো কপচালাম, এইবার উপসংহারে আসি। আমার উপন্যাসটা ভাল লেগেছে। বেশ কিছু অংশ রাশড মনে হয়েছে, হয়তো আরেকটু সময় নিয়ে পরিবর্ধিত করে লিখলে ভাল হত৷ বেশ কিছু রেটকনিং-ও চোখে পড়ল, যেগুলোকে আরেকটু ঘষামাজা করা যেত।
কিন্তু এই পরিসমাপ্তি যথেষ্ট সন্তোষজনক। ধন্যবাদ, কৌশিকবাবু। উইকিপিডিয়া থেকে টোকা থ্রিলার পড়ে পড়ে মারা যাচ্ছিলাম, আপনি বাঁচিয়ে দিলেন।
পু: অনেক পাঠক বলছে নতুন পার্ট বের করা উচিৎ। আমার মতে একদমই উচিৎ না। বরং, কৌশিকবাবুর কলমে ইতিহাসের অন্য কোনও অংশ, অন্য ধরনের রহস্য, অন্য কোনও জনরা যদি বেরিয়ে আসে, তো আমি বেশি খুশি হব।
প্রথম পার্ট মোটামুটি ছিলো দ্বিতীয় পার্ট আরো ভালো হতে পারতো, অনেক কথা লিখেছে যেগুলো আমার কাছে অর্থহীন লেগেছে। আর লাস্ট পার্ট এসে মোটামুটি ভালো লেগেছে। সবকিছু শেষে ক্লিয়ার করেছে যার জন্য বাকি দুটি পার্টের ওয়েট কমে গেছে।
গত পাঁচদিন ধরে রীতিমতো ডুবে ছিলাম 'ম্যাসন সিরিজে'। 'অগ্নিনিরয়' হাতে পাওয়ার পর আবারও প্রথম থেকে পড়তে শুরু করেছিলাম এই সিরিজটি... গতকাল ভোর রাতে 'অগ্নিনিরয়' শেষ করার পর থেকেই মোহাবিষ্টের মতো অবস্থা । কি 'পাঠ-প্রতিক্রিয়া' লিখবো এই বইয়ের ???
📙 'অগ্নিনিরয়' যেহেতু 'ম্যাসন' সিরিজের শেষ কিস্তি... তাই আমি যে আলোচনা করবো তা শুধুমাত্র 'অগ্নিনিরয়' নিয়ে নয়, বরং সম্পূর্ণ সিরিজটি নিয়ে ।
📙 আচ্ছা, এই উপন্যাসটির জঁনরা কি ?? বইয়ের মলাট�� তো গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে 'ডিটেকটিভ উপন্যাস'। কিন্তু 'বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ডিটেকটিভ', 'অপরাধ জগতের নেপোলিয়ন' সবাই আছেন এই কাহিনীতে... তবে কি এটাকে 'ফ্যান ফিকশন' বলা যায় ?? আবার এই যে কাহিনীতে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে 'অতীতে আলোড়ন জাগানো বিভিন্ন অপরাধী', 'গোপন ষড়যন্ত্র', 'দুর্দ্ধর্ষ গুপ্তসংঘ', 'সিম্বোলজি', 'জাদুবিদ্যা'... তাহলে কি এই উপন্যাস 'কন্সপিরেশি থ্রিলার' ??
▫️এই উপন্যাসটি নির্দিষ্ট কোনো জঁনরার অন্তর্ভুক্ত কিনা তা আমি জানি না... কিন্তু এটুকু বলতে পারি যে এটি শুধুই একটি 'ডিটেকটিভ উপন্যাস' নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু ।
📙 'সূর্যতামসী'তে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে যে রহস্যের সূত্রপাত ঘটেছিল, 'নীবারসপ্তক'-এ গিয়ে আমরা দেখেছিলাম তার প্রায় পুরোটাই ধাপ্পা । রহস্য উন্মোচন হওয়ার পরিবর্তে আরও বেশি ঘনীভূত হয়ে ওঠে, আভাস পাওয়া যায় এক গোপন ষড়যন্ত্রের । প্রথম ও দ্বিতীয় ��ন্ডে যেসব প্রশ্নগুলি ঘোরতর হয়ে উঠেছিল, সেই সব প্রশ্নের যথার্থ সমাধান আছে এই তৃতীয় খন্ডে । তবে 'অগ্নিনিরয়' বাকি দুটি পর্বের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা... পড়তে পড়তে বারবার হারিয়ে গিয়েছি উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক কলকাতা, চুঁচুড়া আর ভিক্টোরিয়ান লন্ডনের অন্ধকারাচ্ছন্ন গলিতে ।
📖 এই সিরিজটির অন্যতম বিশেষত্ব হল 'ফিকশন এবং নন-ফিকশনের নিখুঁত মিশ্রন'। আরো বিশদভাবে বললে - এই কাহিনীতে 'বাস্তব' এবং 'কাল্পনিক চরিত্র'রা যেভাবে সহাবস্থান করেছে, তা গোটা বিষয়টিকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে । আগের দুটি বইয়ে এই বিষয়টি থাকলেও এই উপন্যাসে সেটি অনেক বেশি । বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে বারবার 'গুগল্' করতে হয়েছে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা ঘটনাবলী সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য । আর কোনো বই পড়তে গিয়ে কখনো এইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি বলে অন্তত আমার মনে হয় না । কাহিনীতে ব্যবহৃত 'নন-ফিকশন' এলিমেন্টগুলির জন্যই এই সিরিজটি পাঠকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী জায়গা করে নেবে ।
📖 এই সিরিজের আর একটি বিশেষত্ব হল কাহিনীতে 'ইতিহাস'-এর ব্যবহার । অনেক ক্ষেত্রে হয় কি - রহস্য কাহিনীতে ইতিহাসের ব্যবহার গল্পের 'গতি' রুদ্ধ করে দেয় । কিন্তু এক্ষেত্রে এত সুনিপুণভাবে ইতিহাসের ব্যবহার করা হয়েছে যা 'বিরক্তিকর' তো নয়ই, বরং কাহিনীকে অনেক বেশি 'সমৃদ্ধ' করেছে । লেখক প্রচুর বই পড়ে, রিসার্চ করে তারপর এই সিরিজটি লিখেছেন... এবং আমার মনে হয় পাঠকদেরকে শুধুমাত্র অনেক কিছু জানানোই নয়, বরং সেই বিষয়গুলির প্রতি আগ্রহী করে তোলাও এই সিরিজের অন্যতম লক্ষ্য ।
📖 এতগুলি 'সময়কাল' ব্যবহার করেও লেখক এই সিরিজের ধারাবাহিকতা সঠিকভাবে বজায় রেখেছেন । বেশ কিছু ক্ষেত্রে 'অগ্নিনিরয়' পড়তে পড়তে এমন কিছু বিস্ময়কর তথ্যের মুখোমুখি হয়েছি, যা আগের বইয়ে পড়ার সময় বিশেষ আগ্রহ জাগাতে পারেনি । সাধারণত কোনো 'ডিটেকটিভ' কাহিনী একবারের বেশি পড়ার ইচ্ছা বা আগ্রহ জাগে না, কিন্তু এইসব বিষয়গুলির জন্য এই সিরিজটি একবার পড়ার পরেও আবার পড়তে আগ্রহ জাগে ।
📘 'অগ্নিনিরয়'এর কাহিনী অনেক বেশি জটিল এবং গতিশীল । অতীত রহস্যের 'ক্লাইম্যাক্স' অংশটি এবং বর্তমান সময়কালের ঘটনাবলী আরও একটু সময় নিয়ে লিখলে বোধহয় আরও ভালো হতো ।
📘 বইটির প্রোডাকশন কোয়ালিটি সর্বাঙ্গ-সুন্দর । এইরকম একটি 'অসাধারণ' বই পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য লেখক, প্রকাশক 'বুক ফার্ম'-সহ বইটির সাথে যুক্ত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ।
ম্যাসন সিরিজের প্রথম দু'টো বই পড়ে বলেছিলাম, একটা ভাল ওয়ানডে ম্যাচের পিঞ্চ হিটিং আর স্লো মিডল ওভার গেল, এবার স্লগ ওভারে রান ঠিকমত উঠলেই হয়। উঠেছে। আগের দু'টো বই মাথায় না থাকলে তৃতীয় বইটা একদম এলোমেলো লাগবে, কিন্তু আমাকে পরম স্বস্তি দিয়ে আগের ধাঁধাগুলোর বেশ ভাল সমাধান পাওয়া গেছে। অভিযোগ একটাই, অতীতের অংশটুকু অনেক বেশি জমজমাট ছিল; সাইগারসন, প্রিয়নাথ, তারিণী, বা গণপতির তুলনায় কিন্তু বর্তমানের তুর্বসু একেবারেই ম্লান ছিল। একদমই জমেনি, তুর্বসুকে ঠিক পছন্দসই কোন চরিত্র হিসেবে বসাতে পারলাম না। তারপরেও বলবো, ইতিহাসের সত্যি অংশটুকুর সাথে কল্পনা মিশিয়ে, কখনো অলটারনেটিভ হিস্ট্রি, কখনো অমীমাংসিত রহস্যকে আশ্রয় করে এমন ট্রিলজি বাংলা ভাষায় আমি পড়িনি। নিশ্চিতভাবেই এই ট্রিলজিটা একটা মাইলফলক, এবং একই সাথে এই ধারার অন্য লেখকদের জন্য বেঞ্চমার্ক হয়ে থাকবে। লেখক নিজে এই বেঞ্চমার্ক ধরে রাখতে পারবেন তো? প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেল, শুভকামনাও থাকলো। আর হ্যাঁ, এই বইটার রেটিং ৩ হলেও পুরো সিরিজটার রেটিং সাড়ে চার। একবার সময় করে উঠতে পারলেই তিনটা এক বসায় শেষ করার ইচ্ছা রাখি।
বুঝি না বইয়ের মধ্যখানে আজাইরা কাহিনীর প্যাঁচপ্যাঁচানি কি আদৌ দরকার ছিল।সিরিজের বাকি দুটো বইয়েও একই ভাবে লক্ষ্য করেছি। এমনটা কি বইয়ের পৃষ্ঠা বাড়ানোর জন্য করেছে নাকি অন্য কিছু তা আমার ধারণাতীত।
রবিঠাকুরের অপরিচিতার বিনুদাদার মতই বলতে হচ্ছে চলনসই। নীবারসপ্তক শেষ করার পর প্রত্যাশার পারদ চূড়ায় উঠে গেছিল, সেজন্য হয়তো কিছুটা আশাহত হলাম। তবে লেখক যে অনেক অনেক পড়াশোনা করে ট্রিলজিটা লিখেছেন সেজন্য কুর্নিশ। পুরো ট্রিলজিতে তথ্যের ভারে খেই হারিয়ে ফেললেও, এত তথ্যের কচকচানি পড়তে ভালোই লেগেছে। বাস্তবের পাশাপাশি ফিকশনের চরিত্রের আবির্ভাব এঞ্জয় করেছি। লাইফে খুবই সামান্য বই পড়া হলেও, আজ এটা তো কাল সেটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি কাইন্ড অফ জ্যাক অভ অল ট্রেড হওয়ার দরুণ বইয়ের অধিকাংশ বিষয়েই অল্প বিস্তর হলেও জানাশোনা ছিলো। আর যেটায় ছিলোনা সেটাও পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ইন্টারনেট ব্রাউজ করে জেনে নিয়েছি তাই খেই হারালেও তলিয়ে যাইনি। ট্রিলজিটা শেষ করে মনে হচ্ছে এবার একটু গভীরে জানতে হবে। তবে নিজের বই শুরু করতে গড়িমসি,শুরু করলেও শেষ না করা স্বভাব আর সাথে লেখকের রেফারেন্স বুকে একগাদা নাম দেখে আদৌও কখনো গভীরে যাওয়া হবে কিনা সন্দেহ জাগছে। অন্তত ড.জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড,হোমস সমগ্র,বাঁকাউল্লার দপ্তর,দারোগার দপ্তর শীঘ্রই শুরু করার চেষ্টা করবো।
একজন এককালের ডিটেকটিভ উপন্যাসের পোকা যার মাথায় ঢুকে গেছিল যে বাংলা ভাষায় একটু ভদ্রস্থ গোয়েন্দাকাহিনী লেখা আর হবেনা, তার বদ্ধমূল ধারণাকে কৌশিক মজুমদারের ম্যাসন সিরিজ ভেঙে দিয়েছে। সেইসঙ্গে বাংলায় ট্রান্সজঁর সাহিত্য যে হতে পারে, সেটাও এই সিরিজ দেখিয়ে দিয়েছে - গোয়েন্দা, সাইকোলজিকাল থ্রিলার, কল্পবিজ্ঞান, অল্টারনেট হিস্টোরি, ফ্যানফিকশন, কনস্পিরেসি, পাল্প এসবের মিশ্রণেও অতি সুপাঠ্য, সিরিয়াস ও রাজনৈতিক এই সিরিজ মিলিয়ে দিয়েছে অতীত ও বর্তমানের বহু সত্যিকারের এবং কল্পনাশ্রিত চরিত্রদের। বাক্সের ভূতের চরিত্রকে এই উপন্যাসের প্রথমেই বলে দেওয়ায় কাহিনীর সূত্র এবার 'কী' থেকে 'কেন এবং কারা' সেইদিকে ঘুরে যায়, সেটা লেখকের তরফে অত্যন্ত বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত আর এই ব্যাপারটা আমার খুবই ভাল লেগেছে। আগের দুটো উপন্যাসে অতীতের চরিত্রগুলি এবং অতীতের টাইমলাইনটিই মুখ্য হয়ে গিয়েছিল, এইটায় বর্তমানই মূল সময়কাল এবং তুর্বসু যে এতদিন দাগ কাটেনি সে অনেক পাঠকেরই অন্যতম প্রিয় চরিত্র হয়ে উঠতে পারে এটার পর। লেখা সম্পর্কে আর কিছু বেশি বলতে গেলে স্পয়লার হয়ে যাবে তাই এইটুকু বলি যে নতুন যে চরিত্ররা এই অন্তিম উপন্যাসে কাহিনীর প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এসেছে তাদের আমার ভালই লেগেছে।সত্যি বলতে কাহিনীর শেষ��� গিয়ে পুরো রহস্যের জালটাই সুন্দরভাবে গুটিয়ে আসে যেটা ঠিকঠাক সম্পন্ন হবে কীনা সেইটা নিয়ে আমার মনে একটু সন্দেহ ছিল, এখন বুঝছি লেখককে এত সন্দেহ করে ভালই হয়েছে, তাতে উপন্যাস আমার নিজের প্রত্যাশার তুলনায় অনেকগুণ ভাল লেগেছে। উপন্যাসের শেষে গিয়ে তাই পাঠকের পরম প্রাপ্য ক্যাথারসিস সুদে আসলে মিটে যাবারই কথা।
এখন যেহেতু জালটা গুটিয়েই এসেছে তাই দুটো ভালমন্দ কথা এখানে রইল, (এখানে একটু স্পয়লার আছে) ১. সূর্যতামসীর ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ব্যাপারটা নীবারসপ্তকের রিচুয়ালিস্টিক খুন হয়ে শেষমেশ ভূতের কান্ড হয়ে গেল, পুরো ব্যাপারটা একটা বিরাট আইওয়াশ, এটা কি আরেকটু খোলসা করে হতে পারতনা? এই জায়গাটায় একটু ইয়ে খচখচ করছে। ২. অস্কার ওয়াইল্ডের সোডোমি সংক্রান্ত পুরো মামলাটা ঘটেছিল ১৮৯৫ সাল নাগাদ, অথচ সেটার উল্লেখ ১৮৯১ এর ঘটনাপ্রবাহের সূত্রে। ৩. আশা করি আমিই একগাদা উপন্যাস পড়া আর সিনেমা/সিরিজ দেখার সূত্রে বাসুর পরিচয় প্রথম পাতাতেই অনুমান করে ফেলেছি, এটা কোনোভাবেই লেখকের বা লেখার দোষ নয়, কিংবা লেখকও বুঝি চেয়েছিলেন কিছু পাঠক সূত্রটা ধরে ফেলুক দিয়ে দেখুক যে 'কে' নয় বরং কীভাবে সত্যটা সামনে আসে।
এখন বলা উচিত, কৌশিকবাবু একা নন, বর্তমানে বাংলায় আরো দু-একজন লেখকের গোয়েন্দা উপন্যাসও আমার ইদানিং বেশ লেগেছে। শারদীয়া অন্তরীপে কৌশিকবাবুর উপন্যাসটিও বেশ জম্পেশ। এখন চাইব কৌশিকবাবু আরো কিছু স্থান-কাল-পাত্র ছাপিয়ে ওঠা জঁর তোলপাড় করা উপন্যাস লিখুন। ততদিনে বাক্সের ভূত আবার কোনোভাবে যেন জেগে উঠে উৎপাত না চালায়।
পুনশ্চ: বইয়ের প্রচ্ছদটি ছবিতে দেখে পছন্দ হয়নি, তবে হাতে পেয়ে বেশ ভাল লেগেছে, আগের মত মুদ্রণের ভুল সেরকম চোখে পড়েনি, ছাপা, বাঁধাই, অলঙ্করণ দিব্য হয়েছে। বুকফার্মকে তাই আবার ধন্যবাদ। আর ম্যাসন সিরিজ আমার পড়া সমস্ত ভাষার জঁর সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সুখকর পাঠাভিজ্ঞতা। কৌশিক মজুমদারকেও তাই আবারও ধন্যবাদ।
The story itself is compelling, and witty. The author needs no introductions because he is good at what he does.
The reason I gave two stars is because of the disturbing amount of mention of hijras in a negative light, sodomy, and pedophilia. I don't think any of them were necessities in terms of the plot and in a society where marginalised identities are already seen in a negative light, if celebrated authors such as Mr. Kaushik Majumder follows the same path, it is indeed shameful.
ম্যাসন সিরিজের পাঠ প্রতিক্রিয়া এ বই কার জন্য – যিনি ইতিহাস ভালোবাসেন, যিনি থ্রিলার ভালোবাসেন, যিনি ইতিহাসাশ্রিত ফিকশন ভালোবাসেন তাদের জন্য। এমন এক বই যেখানে দুষ্কর হয়ে যায় বাস্তব ও ফিকশনের সূক্ষ্ম পার্থক্য করা। ইতিহাসে অনেকের আগ্রহ থাকেনা, কিন্তু সে ইতিহাস যদি রোমাঞ্চকর হয়, তাহলে, এখানেই জাদু দেখিয়েছেন লেখক। কলমের টানে পাতায় পাতায় এঁকেছেন রোমাঞ্চভরা ইতিহাস। বাস্তবের প্রিয়নাথ দারোগা থেকে বঙ্কিমচন্দ্র, হেমচন্দ্র বসু, ভূদেব মুখোপাধ্যায় সকলকেই আসতে হয়েছে লেখকের আহ্বানে। লেখকের কল্পনাশ্রিত চরিত্ররাও কেউ কম যায়না, তাদের বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখেননি লেখক। লেখকের শৈল্পিক সত্তায় তারাও যেন জীবন্ত ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। গ্রন্থের বিষয়বস্তু – প্রথমখন্ড একটি খুনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলেও পরে জানা যায় এই খুন নেহাতই একটা মোড়ক। দ্বিতীয় খণ্ড এই খুনের রহস্য জানতে গিয়ে যে প্রকৃত রহস্যের সম্মুখীন হতে হয়েছে গোয়েন্দাকে তার বিবরণ। আর তৃতীয় খণ্ডে কেবলই চমক। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব এবং তার সাথে জড়িয়ে থাকা চমক। প্রথম খন্ড ছিলো চরিত্র নির্মান ও চরিত্রের পরিচয় করানো, দ্বিতীয় খণ্ডে প্রতিটি চরিত্র আমাদের সাথে মিশে যায়, পাঠককূল সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ে ঘটনার গতিপথ দেখে এবং সর্বশেষে তৃতীয় খণ্ডে রহস্যের উন্মোচন হয়। সারসংক্ষেপ – এখানে ঘটনা দুটি সময়কালে সমান্তরালে দেখানো হয়েছে, প্রথম ঘটনার সময়কাল ১৮৯০ এর দশক, এই ঘটনার স্থান কিছুটা ইংল্যান্ড কিছুটা তদানীং কালের হিন্দুস্থান– দ্বিতীয়ঘটনা ২০১৮, এবং এখানে স্থান হিসাবে আছে চন্দননগর ও কলকাতা। ইংল্যান্ডের এক বৈজ্ঞানিকের এক অদ্ভূত আবিষ্কার যার সংক্ষিপ্ত নাম B.H.U.T এবং এই আরক বানানোর ফর্মুলা এই হলো উপন্যাসের প্রাণভোমরা। ঘটনাচক্রে এই অদ্ভূত আবিষ্কার বারংবার তার মালিক বদেলেছে, এবং তাতেই এসেছে নানান জটিলতা, ছড়িয়েছে হিংস্রতা, বেড়েছে লোভ লালসা, চক্রান্ত। আরেক উল্লেখ্য বিষয় হলো ফ্রিম্যাসন এবং জাবলুন দের দৌরাত্ম। এই বই নতুন করে প্রাণ দিয়েছে ফ্রিম্যাসনদের ইতিহাসে। দুটি ঘটনায় যেহেতু বিষয়বস্তু এক তাই বারবার আমাদের পিছনের ঘটনার দিকে তাকাতে হয়। কি নেই এই ট্রিওলজিতে, ইতিহাস, ভূগোল, পুরানো কলকাতা, কিংবদন্তী বাঙালি চরিত্র, রক্ত, খুন, গুপ্তসংঘ, নানান সাংকেতিক চিহ্ন, রহস্য, ধোঁয়াশা, সব কিছুর অসামান্য মেলবন্ধন এই গ্রন্থ। সবথেকে ভালোলাগার বিষয় হচ্ছে, এত বাস্তব ও ফিকশনের নিঁখুত মিশ্রণ। পড়তে পড়তে যে কতবার গুগুল করেছি তার ইয়ত্তা নেই, এখানেই বোধহয় লেখকের নিপুণতা। লেখক নিছক ইতিহাস বলে ক্ষান্ত নন, তিনি পাঠককে চিন্তা করার রসদ দিয়েছেন, ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন পুরানো কলকাতায় পুরানো চন্দনগরে। কিছু কিছু স্থানের বর্ণনা এতো নিঁখুত যেন চোখের সামনে চন্দনগর, কলকাতার উত্থান দেখতে পাচ্ছি। কোর্টরুম্ ড্রামা যেটা বলে ঠিক এরকম একটা দৃশ্য উপভোগ করেছি, যখন অপর্ণা তার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারছে সেই অংশে। ওই অংশটার লেখাটা এতো টানটান ছিলো আমি বিভোর হয়ে গিয়েছিলাম। বইটির ভালো দিক – 1. এই বইয়ের ওপরে অধিকাংশ মানুষ যে কারণে আঙুল তুলেছে সেই কারণটাই বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে আমার ভালো লাগার কারণ হিসেবে, সেটা হলো ইতিহাসের কচকচানি। সত্যি বলছি এই উপন্যাস ভালো লাগার প্রধান কারণই হলো ইতিহাসের মিশ্রণ। আমি ভালোবাসি পুরানো কলকাতাকে। কৌশিকবাবুর লেখায় আমি পুরানো কলকাতার ছবি দেখতে পেয়েছি, আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি তৎকালীন সমাজ ব্যাবস্থা। অনেকে বলেছেন ইতিহাস ভালো লাগে তো ইতিহাস পড়ুন না, সাহিত্য কেন ঘাঁটছেন, কিন্তু আমার শুধু ইতিহাসে আগ্রহ আসে কম, আমার ভালো লাগে গল্পের ছলে ইতিহাসকে জানতে। বুকফার্মের একটা বই পড়েছিলাম হায়রোগ্লিফিকের দেশে অনির্বানদার, একই কারণে সেটা ভালো লেগেছিলো। এটাও তাই। ইতিহাস আছে বলে আমার প্রিয় বই এই ম্যাসন সিরিজ। 2. অগ্নিনিরয় গ্রন্থের শেষে লেখকের জবানি বলে একটা পরিশিষ্ট জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেটার ভীষণই দরকার ছিলো। কারণ বইটা পড়ার সময় অনেক কিছু প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরছিলো আর ভাবছিলাম কাশ কৌশিকদার সাথে দেখা হতো, তাহলে এই এই প্রশ্ন গুলো করতাম, কিন্তু উনি চান না আমাদের সাথে সাক্ষাৎ হোক, তাই সকল প্রশ্নের উত্তর এই লেখকের জবানিতে দিয়ে দেখা করার ক্ষীণ আশাটুকুকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন। 3. গল্পের ন্যারেটিভ ছিলো উত্তম পুরুষে, যার ফলে আমি কোথাও একটা নিজেকে তুর্বসুর জায়গায় বসিয়েই নিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিলো আমরা একাত্মা হয়ে গেছি, কখনো কখনো কিছুটা পড়ার পর আমি ভাবছিলাম চোখ বন্ধ করে এর পরে তুর্বসুর জায়গায় আমি থাকলে কি করতাম, তুর্বসুর ঠিক যা যা অনুভব হচ্ছিলো আমারও তার থেকে উৎকণ্ঠা কম ছিলো না। গল্পের বাচনশৈলী দারুণ ছিলো। 4. গল্পের গতি দারুণ ছিলো। পড়তে পড়তে কখনো মনে হয়নি যে বইটা নামিয়ে রাখি, প্রতি���ারই মনে হয়েছে এর পরে কি হলো, এর পরে কি হলো, দ্বিতীয় খণ্ডের তুলনায় তৃতীয় খণ্ডে গল্পবলার গতি বেড়েছে, যদিও বাড়ারই কথা। সাসপেন্স জমাট বাঁধছিলো যেহেতু। 5. কিছু কিছু বিবরণ এত নিঁখুত ছিলো, যার ফলে কল্পনা করার মতো অবসর পাচ্ছিলাম। যেন এ বই আমি পড়ছিনা, এ ঘটনা আমার সামনে ঘটছে। 6. ভাষার ব্যাবহার, প্রথম খণ্ডের ভাষা আমার এখন ততটা মনে নেই কিন্তু দ্বিতীয় খণ্ডের তুলনায় তৃতীয়খণ্ডে ভাষা অনেক পরিণত। অসাধারণ লেগেছে তিনটে আলদা আলাদা মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করতে তিন ধরনের শব্দ চয়ন। যখন তারিনীর ডায়েরি পড়ছি, তখন চলিত বাংলা, যেখানে বাংলা বানানের মা-বাপ নেই, একদম ছা-পোষা মানুষের কথ্য ভাষা। আবার যখন প্রিয়নাথের ডায়েরি পড়ছি সেখানে সভ্য সমাজের লেখ্য ভাষা, সম্পূর্ণ সাধু ভাষা, আবার তুর্বসুর জবানিতে যখন গল্প এগিয়েছে তখন অদ্যকালের ইয়ং জেনারেশনের ভাষা, এই তিন ধরনের ভাষার মধ্যে যে তফাত সেটা চোখে পড়ার মতন। 7. বইয়ের নাম গুলো নিয়ে না বললেই নয়, ভীষণই ইউনিক লেগেছে, একটি করে শব্দ দিয়ে নাম গুলো ভাবা হয়েছে, তিনটি নামই খুবই পচ্ছন্দ হয়েছে, নতুন লেগেছে বেশ। সূর্যতামসী, নীবারসপ্তক, অগ্নিনিরয় নামগুলোর মধ্যেই যেন কত রহস্য লুকিয়ে আছে। প্রতিটি নাম পাঁচ অক্ষরের এই সামঞ্জস্যও আমার পচ্ছন্দ হয়েছে। অনতিদীর্ঘ শীর্ষক যাকে বলে। 8. বইয়ের প্রচ্ছন্দ খুবই সুন্দর। যিনি বইয়ের প্রুফ রিডিং করেছেন তাকে কুর্নিশ, নাহলে আজকাল দেখি বাংলা বানানের এত প্রকার ভেদ করে ফেলেন লেখককূল, নিজের জ্ঞানেই সন্দেহ নিপতিত হয়। তাই এই কাজটি যিনি করেছেন তার জন্য আলাদা করে ধন্যবাদ জানাই তাকে। কি কি খারাপ লেগেছে 1. লেখা নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে আমি চাই আরও একবার পড়তে, এবং তখন চেষ্টা করব, যদি কিছু নেগেটিভ দিক ধরতে পারি। আপাতত প্রথমপাঠে সত্যিই আমি কোনও ত্রুটি দেখিনি। মন্ত্রমুগ্ধের মতোই পড়ে গেছি তাই কোনও খারাপ লাগাই নেই, তবে মজার ছলে প্রকাশকের উদ্দেশ্যে দুটি কথা বলতে চাই সেগুলি - 2. দীর্ঘ অপেক্ষা । একটা ঘটনা আপনাকে অর্ধেক বলার পর যদি বলা হয় বাকি অর্ধেক শোনার জন্য আপনাকে বছরভর অপেক্ষা করতে হবে তাহলে কার ভালো লাগে বলুন। তাই এ এক অভিযোগ যে এতদিন আপনি আমাদের অপেক্ষায় রাখলেন। 3. তিনটে খণ্ড করে আমাদের পকেটের ভার কমানো কি উচিত হলো আপনার।
নেহাতই বালখিল্য একটি পাঠপ্রতিক্রিয়া। খুব একটা যে রিভিউ করলাম তা নয়। কিন্তু নিজের ভালো লাগা গুলো শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। সকলকে অনুরোধ করব পড়ে দেখার জন্য। সুখপাঠ্য বই একটি। পড়ে দেখতে পারেন ভালো লাগবে।
বর্তমান সময়কালের চরিত্রগুলোর থেকে অতীতের সময়কালের চরিত্রগুলো বেশি ভালো লেগেছে। পছন্দ করার মত অনেক চরিত্র থাকলেও, বিশেষ করে লখন, শৈল আর গণপতিকে বেশি ভালো লেগেছে। তবে অতীত সময়ের ক্ল্যাইম্যাক্সটা আরো গ্র্যান্ড কিছু আশা করেছিলাম।
তবে এত বড় কাহিনীতে সবকিছুই যে ঠিক ঠাক মত একটি পরিসমাপ্তি পেয়েছে এইটাই বড় বিষয়। অলটারনেটিভ হিস্ট্রির বিষয়গুলো এই সিরিজকে আরো ধাপ উপরে নিয়েছে।
একটা fast paced থ্রিলার পড়বো বলে সূর্যতামসী বইটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম, কিন্তু এত তথ্যের প্রাচুর্য দেখে কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। পড়ার গতিও অনেক কমে গিয়েছিল। বইটা অসম্পূর্ণ দেখে আরো মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু নিবারসপ্তক সূর্যতামসীর দ্বিগুণ গতিতে পড়ে শেষ করি। আর তখনই ঠিক করে ফেলি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অগ্নিনিরয় আমাকে পড়তেই হবে।
আবার অগ্নিনিরয় পড়েছি নিবারসপ্তকের পাঁচ গুণ গতিতে। পড়ার পর মনে হয়েছে সূর্য তামসী কিংবা নিবারসপ্তকে লেখক আমাদের যে তথ্যগুলো দিয়েছেন তার কোনটাই খেলনা নয়, প্রত্যেকটি বিষয়ই কোন না কোন ভাবে একই সুতোয় গাথা।
প্রিয়নাথ দারোগার সময়কালীন কলকাতা ও ২০২০ সালের কলকাতা কোথাও গিয়ে একই বিন্দুতে মিশে গেছে। সেই সাথে রয়েছে একাধিক পরিচিত চরিত্র, যেমন- প্রিয়নাথ দারোগা, জাদুকর গণপতি চক্রবর্তী, ডাক্তার গোপাল চন্দ্র প্রমূখ। এছাড়া বর্তমান সময়ের তুর্বসু তো রয়েছেই।সেই সাথে রয়েছে বইয়ের অলংকরণ, যা অনেক যত্ন নিয়ে করা হয়েছে, সেটা পাঠক মাত্রেই অনুভব করতে পারবেন।
এক কথায় এমন একটা জম্পেস তথ্যসমৃদ্ধ থ্রিলার হাতছাড়া করার মত নয়।
সত্যি বলতে কি ভালো লেগেছে। কাহিনী আর টুইস্ট বরাবরই বেশ ভালোভাবেই পুরো সিরিজ জুড়ে পেয়েছি। তবে কিছু জিনিসঃ ১. তিনটা বই মিলে একটা মোটা বই করলেই যুক্তিসঙ্গত হত। কারণ কাহিনী তো একটাই! ২. তারিনী আর তুর্বসুর একের পর এক আসাটা ঠিক খাপে খাপ মেলেনি। দূরবীনে যেমন এক বাদে এক পর্বে দুটো কাহিনি সমান্তরালে চলে সেরকম করতে গিয়ে তারিনী আর প্রিয়নাথ কখনও অল্প কখনো বেশি এসে গিয়েছে।
লেখক যেভাবে কলকাতা আত্মস্থ করে তবেই লেখায় বসেছেন, সেইটেই সবচে প্রিয় আমার কাছে। বাংলাদেশে ইদানীং যাচ্ছেতাই বইয়ের ভিড়ে নতুন লেখকের এমন লেখা পড়ে নিরাশা দূর করছি। মজুমদার মশাইয়ের জন্য শুভকামনা।
ম্যাসন সিরিজ এর তৃতীয় পার্ট ,অগ্নিনিরয়। তৃতীয় খণ্ডটির জন্য বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিলো। হাতে পেয়ে পড়তেও বেশ কিছুদিন লেগে গেলো, কারণ আগের পার্টগুলো মাঝে মাঝেই পড়ে নিতে হচ্ছিল। সূর্যতামসি, নীবারসপ্তক এবং শেষ পার্ট অগ্নিনিরয় প্রতিটি বইয়ের ভিতরের চিত্রকর্ম, প্রাচীন বিজ্ঞাপনগুলো বইটিকে আরও সুন্দর করেছে। প্রত্যেকটি বইয়ের মলাট, প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ, বুকমার্ক এবং প্রিন্টিং অসাধারন।
পটভূমি - ১৮৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার চিনে পাড়ায় (টেরিটি বাজার সংলগ্ন অঞ্চল) এক বিভৎস মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়। পেট থেকে লম্বালম্বি ভাবে চিড়ে দেওয়া সেই মৃতদেহের যেখানে অন্ডকোষ থাকার কথা সেটি কেউ সুনিপুণভাবে কেটে দিয়েছে। ২০১৮ সালে চন্দননগর নিবাসী স্টেট আর্কাইভ এর কর্মী দেবাশীষ গুহ একি রকম ভাবে হত্যা করা হয়। অগ্নিনিরয় পড়াকালীন এই ঘটনা গুলোকে মনে হবে কোনো বৃহৎ ষড়যন্ত্রের, ছোট্ট অংশ মাত্র। এই বৃহৎ ষড়যন্ত্র যা ব্রিটিশ সরকার এর ভীত নাড়িয়ে দাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। এই সিরিজের তিনটি পার্ট এই উল্লেখিত ম্যসনিক লজ, জাবুলন সম্প্রদায়, দারোগা প্রিয়নাথ, সাইগারসন, তারিণী, জাদুকর গণপতি এরা যেমন ১৮ শতকের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তেমনি দেবাশীষ গুহ, অপর্ণা, তুবুর্সু রায়, অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, এরা জড়িত ২০১৮ সালের ঘটনার সাথে, দুটি আলাদা সময়কালের ঘটনা প্রবাহ চলেছে একসাথে, পড়ার ক্ষেত্রে একটু মনোনিবেশ বিচ্ছিন্ন হলেই আবার একটু আগের ঘটনা পড়তে হবে। পড়তে পড়তে অবাক হতে হয় অনেক ট্রিভিয়া জানতে পেরে, আরো অ���াক লাগে এডগার এলান পো, রবার্ট লুই স্টিভেনসনের মৃত্যুর পিছনে দায়ী সেই বৃহৎ ষড়যন্ত্র। ১৮৯৬ সালে দারোগা প্রিয়নাথ, সাইগারসন, তারিণী, জাদুকর গণপতি এই ষড়যন্ত্র ফাঁস করে ফেলে কলকাতায় এবং "প্রিয়নাথের শেষ হাড় তৈমুরের কাব্যগাথা গণপতির ভূতের বাক্স তারিণীর ছেঁড়া খাতা" এই চারটি জিনিস চারজনের কাছে রেখে দেয়া হয়। গণপতির ভূতের বাক্স আসলে কী? এই ভুত আসলে কি? ২০১৮ সালে আবার এই চারটি জিনিস একসাথে করার জন্য উঠে পড়ে লাগে এক নতুন দল যাদের লক্ষ্য আরো ভয়ানক। তাদের ষড়যন্ত্র আরো বড়ো, উদ্দেশ্য আরো হিংস্র এইবার তুবুর্সু রায়, অমিতাভ মুখোপাধ্যায় কী পারবে তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করতে? ভুত কী আবার জেগে উঠলো? কে জাগলো ভূতকে? কি উদ্দেশ্য? এই পুরো সিরিজে জুড়ে কি নেই, পুরনো কলকাতার ইতিহাস, ব্রিটিশ শাসিত কোলকাতার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, রানী ভিক্টোরিয়ার শাসন কালের বিবরণ, জ্যাক দি রিপার এর মত সিরিয়াল কিলার এর ইতিহাস, এডগার এলান পোর রহস্যময় মৃত্যু থেকে শুরু করে রবার্ট লুই স্টিভেনসনের ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড লেখার পটভূমি ও বর্ণিত হয়েছে এই তিনটি বইয়ে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া - কৌশিক মজুমদারের ম্যাসন ট্রিলজি মাল্টিপল টাইমলাইনের বর্ণনা, তাই অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হয়েছে। লেখক সূর্যতমসি এবং নীবারসপ্তক এ আসলে যে রহস্যের জাল বুনেছিলেন সেটা ছিল ডিকয় মাত্র, সেই রহস্যের জাল গুটিয়ে এনেছেন অগ্নিনিরয় উপন্যাসে। লেখকের গবেষণা এবং পড়াশুনা কে অবশ্যই কুর্ণিশ জানাতে হয়, এমন ইতিহাস মিশ্রিত ফিকশন এবং নন ফিকশনের এক মেলবন্ধন মাল্টি টাইমলাইন ব্যাপি উপন্যাসে ঘটানোর জন্য। আমি এটুকু বলতে পারি বাংলা থ্রিলার সাহিত্যে এই কাজ একদম ভিন্ন এবং ঠিক এইকারণেই এই সিরিজ অবশ্যই পড়া উচিৎ।
“শতবর্ষ পূর্বে ঘটিয়া যাওয়া ভয়াবহ পাপ, যাহা প্রকাশ পাইলে স্বয়ং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি টলিয়া যাইতে পারে” আপনার মনে হতেই পারে, লেখক এরকম রহস্যের জাল বুনে শেষে সামলাতে পারবেন তো? যা হোক কিছু একটা দাবী করলেই হলো? কি বা এমন থাকবে বইতে যেটা এরকম প্রত্যাশাকে পূরণ করে দেবে? আমারও মনে হয়েছিল, যখন প্রথম বইটা টেনে পড়তে বসেছিলাম। তারপর তো মাঠের সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে যাওয়া শুধু। পড়ুন আর পড়ে অবাক হোন। প্রথম দুটোর সাথে শেষ পর্বটা তুলনা করতে গেলে বলতে হয়, প্রথম দুটি হলো মহাভারতের উদ্যোগ পর্ব, আর এই শেষখানি হলো যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ। লেখক কলম তুলে তীর চালিয়েছেন, তলোয়ার ও চালিয়েছেন। অত্যুক্তি? কে জানে! পড়ে দেখুন। মুগ্ধতার বশে একআধটা আপনারও মুখ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। রহস্য উপন্যাসের একেবারে যথার্থ পরিসমাপ্তি। হ্যাঁ, বইটার উপরে ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখা থাকতেই পারে, তবে, এ বই তার চেয়েও এক কাঠি সরেস। শেষের ঐ ঝটকাতে জাস্ট থ-মেরে গিয়েছিলাম। এ যেন Now You See Me সিনেমাটার মতো। “Look closely, because the closer you think you are, the less you will actually see.” আমি গণপতি চক্রবর্তী কে দেখিনি, কিন্তু আমার মতে লেখকও কম যান না। তাই ওনার উপরেও প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেল। দেখা যাক পরবর্তীতে ওনার জাদু থলি থেকে কি বের হয়ে আসে। খালি তিনটি জিনিস একটু মনে খটকা দিয়ে গেছে। নাহ, হয়তো কিছু জিনিষে কার্যকারন খুঁজতে নেই। তাই আমার শুধু এটুকুই বলার, যাঁরা পড়েনি, please পড়ুন। আপনি/আপনারা জানেন না, কি miss করছেন।
✒️ বিগত ৩ বছর যাবত যে ,মহা মারির কালো ছায়া গোটা ভূখণ্ডে ,ত্রাসের সৃষ্টি করেছে, তার থেকে মুক্তি এখনো পাওয়া যায় নি।।
**আজকে বসে যখন ম্যাসন সিরিজের শেষ বই,বা গোটা সিরিজের পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে বসেছি , তখন শুধু বই এর কাহিনী পড়ে কেমন লাগলো এটা লেখার আগে কিছু ব্যক্তিগত ভাব প্রকাশ করা জরুরি মনে হচ্ছে**
"লেখকের জবান বন্দীর" সুরেই নিজের মনের ভাব টা প্রকাশ করি, ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে কোরোনা সবাই যখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল দেখে, ঠিক তখনই লেখক Kaushik Majumdar তার পূর্বপ্রকাশিত বই এর সূত্র ধরেই এক মহা যজ্ঞে ব্রতী হলেন।।
নিজের ছোট্ট ওয়ার্ক স্পেস এ বসে , তৈরি করতে থাকলেন , একের পর এক প্ল্যান কিভাবে তিনি , কোনান ডয়েল এর সেরা সৃষ্ঠি শার্লক কে এই বঙ্গদেশের এক রহস্যে ধরাতলে বাঁধবেন।
একজন অরিজিনাল ফ্যাক্ট বেস, ফিকশন চরিত্রের জীবনের কিছু অজ্ঞাতবাস দিনের ওপর ভর করে লিখতে বসলেন তার নিজের একটি সম্পূর্ণ সতন্ত্র ডিটেকটিভ কাহিনী।। 🌟 অতঃপর ,পূর্বে হোমস্ নামা নিয়ে কাজ করার সূত্রেই ডয়েলের দুই বিখ্যাত চরিত্রের টাইম লাইন নিয়ে গেঁথে ফেললেন এক সম্পূর্ন নতুন কাহিনী, যেখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের কলকাতা , চন্দননগর , চুঁচুড়া ও রয়েছে বিখ্যাত কিছু চরিত্র ।।
🌟🌟 এক "রহস্য" যার তার জুড়ে আছে সুদূর লন্ডনে , কলংকের ইতিহাস রক্তের ধারা বেয়ে কিভাবে যে এই পোড়া পরাধীন দেশে এসে পড়ল , সেই বর্ণনা পড়তে থাকলে মনের মধ্যেই প্রশ্ন জাগে , এরকমও কি হতে পারে না ??? হ্যাঁ পারে , আর সেটাই বইয়ের পাতায় সত্যি করে দেখিয়েছন লেখক।। 🌟🌟🌟 মরিয়াটির মত তুখোড় মস্তিষ্কের অপরাধী , কিভাবে রাজনৈতিক যাঁতাকলে পরে শেষে স্বেচ্ছায় নিজের চির প্রতিদ্বন্ধী গোয়েন্দার কাছে, মুত্যুর আগে বাঁচার জন্যে মিনতি করেন এই কাহিনী পড়লে কোথাও গিয়ে মনে হয়, হ্যাঁ আদতে মানুষের কাছে প্রাণ টাই আসল। ক্ষমতা তো সামান্য নিমিত্ত মাত্র। 🌟🌟🌟🌟 যেভাবে , এক বাবার কাছে তার সন্তান অতীব প্রিয়, ঠিক সেভাবেই এক রনির কাছে তার আজন্ম লালিত বংশের সন্মান।। রাজ পরিবারে এক কলংকিত অধ্যায় যা কিনা ব্রিটিশ শাসনের ভীত নড়িয়ে দিয়ে পারে , তা থেকে পরিত্রাণ হেতু,রানী যে যেকোনো ধরনের চরম পন্থা বেছে নেবেন এ আর বলতে।।
🌟🌟🌟🌟🌟 ওদিকে , হিলির ভুত ভারত বর্ষে এসেই নিজের জাত চিনিয়ে, ছিনিয়ে নিচ্ছে একের পর এক প্রাণ , এ ভূত বেলাগাম , কারোর পক্ষে তাকে বস করা সম্ভব নয়।। সেই ভূতের ভারতে আগমনের পরেই , মাইক্রফটের ভাই, ছদ্ম নামে এ দেশে আসিয়াছেন ,হিলির ভূত ও জাবুলান দের চক্রান্ত ভন্ডুল করতে। 🌟🌟🌟🌟🌟🌟 ওদিকে এক গোপন সংঘের অন্দরের মত বিরোধ ও টানাপোড়েন এর মধ্যেই , এক গভীর চক্রান্তের সৃষ্ঠি, পিতৃ স্নেহ বড়ই নিষ্ঠুর ।। ঠিক যেভাবে বংশের গরিমা।। ⚔️🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟⚔️ 📕সূর্য তামিশি থেকে নিবার সপ্তক জুড়ে যে রমন পাষ্ঠির খেলা চলছিল আদতে এ যে এক বিশাল অপরাধের প্রারম্ভ মাত্র।।
১৫ আগস্ট ১৯৮৫ , লন্ডনের বেডলামের 🔒🔒 সেই গোপন অধিবেশন 😈B.H.U.T😈 এর আগমনের পর থেকে যা যা হয়েছে
🔥🔥অগ্নিনিরয় বই তারই আখ্যান 🔥🔥
তারিণী, প্র���য়নাথ, শৈল, গণপতি , হোমস্ এর বদান্যতায় হিলির ভূত , এর ধর ও চূড়া আলাদা করে যে চরম আঘাত কে প্রতিহত করা হয়েছিল , সেই আঘাতের ক্ষত পুনরায় কোনো এক মন্ত্র বলে আবার জেগে উঠেছে, শুধু কি তাই, হিলির ভূত ও আবার জেগে উঠে নিজের কর্মে পুনরায় লিপ্ত ।।
কিন্তু কিভাবে জেগে উঠলো ? কে জাগালো ? কি উদেশ্যে? কোথায় ছিল সেই ভূত এত দিন ? এত দিন বাদে ফিরে এসে , কোন রহস্যের সৃষ্টি করতে চাইছে ? নাকি সেই পুরোনো ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ও তার গতিধারা বজায় রেখেই নতুন কাহিনী লিখবে এই ভূত।
গল্পের নায়ক তুবর্সু, এদিকে তার মক্কেল তথা বন্ধুর খুনের তদন্ত করতে গিয়ে ক্ষমশই তার প্রপিতামহের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার , একের পর এক তথ্য পেতে পেতে অতিষ্ঠ , কোনোটাতেই এ রহস্যের জাল খুলছে না ।
কে করলো এই খুন, তাও আবার সেই পুরোনো চিনা পদ্ধতি তে ।।
তার দেবাশিস দা কেন খুন হওয়ার আগে whatsapp এ লিখে গেলেন তুর্বসু জানে ।। সে কি জানে !☠️
তার এই পুলিশ সহকর্মী কি জড়িত ? সেই বা এই কেস কে এত টা পার্সোনাল ভাবে নিচ্ছে কেন !
***এত প্রশ্নের উত্তর যখন শেষ বইতে অবশেষে পেয়েছি তখন
🌟🌟পাঠ প্রতিক্রিয়া টা লিখি 🌟🌟
অগ্নি নিরয় আসলে , গোটা ঘটনার শুরু থেকে যবনিকা পতনের আখ্যান।
পূর্বের খন্ড গুলোয় যেসব জায়গার নাম ও তার ইতিহাস নিয়ে বলা হয়েছে , তার যে একটা সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল , এটা এই বই পড়লে পরিষ্কার হয়ে যাবে।।
**সূর্য তামসী ও নিবার সপ্তক পাঠক দের মনে যে রহস্যের আঁধার সৃষ্টি করে এই বই , একের পর এক পরিচ্ছদে সেই আঁধার দুর করেছে।।
একটি সামান্য কনা, যতই সাধারণ হোক , অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে সেই সামান্য কনাই,বড় জটিল। এই বই এর শেষে গিয়ে এটা মনে হতেই পারে।।। (নিজস্ব উপলব্ধি)
এক সময়ের কুখ্যাত কিলার🕴️ জ্যাক the রিপার কে ,লেখক নিজের লেখনীর জাদুবলে , এক অসাধারণ মোড়কে পুড়ে এই কাহিনী তে জুরেছেন। তার প্রশংসা যতই করি কম হবে।।
🧔🏾প্রফেসর মরিয়ার্টির মত মানুষ কে সেরফ্ বোরে বানিয়ে , ব্যবহার করতে গেলে সাহস লাগে বইকি। ভাবতে অনেকেই পারবে হয়তো, কিন্তু সাবলীল ভাবে সেটা করে দেখানো সবার কম্য নয়।।
এ কাহিনী মূলত নন ফিকশন ফ্যাক্ট থেকে ফিকশন তৈরী, কিন্তু এতটাই লেখনীর জোর যে বোঝা প্রায় অসম্ভব , কোথাও অতিরঞ্জিত আমার ব্যক্তিগত ভাবে লাগে নি।।
এই কাহিনী সত্য ও অর্ধসত্য ও মিথ্যা এই তিনের অসাধারণ মিশেল।।
বই এর কভারে "⚜️" চিহ্নের ছবি , কাহিনীতে এর গুরত্ব এবং বর্ণনা এক কথায় অনবদ্য।।
বইতে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি ছবি ও সাংকেতিক চিন্হহের গুরুত্ব অপরিসীম, অনেকই আছে যারা এই বই পড়বে তারা , Freemasonry or Masonry ⚔️করমর্দন সম্পর্কে অবগত নাও থাকতে পারে, তাদের কাছে ছবি গুলো ন্যায্যতার দাবি রাখে।।
মাল্টিপল ডাইমেনশন দিয়ে লেখক বই এর রহস্যের যবনিকা পতনের দিকে এগিয়েছেন , এতে করে প্রত্যেক মুহূর্তে থ্রিল এই বইয়ের ইউএসপি।।
✒️"বইয়ের পাতা পড়ে পাঠক ভূত ই আসল গল্প কথক"
শেষ মুহূর্তে যে নাটকীয় পরিবর্তন রয়েছে তা নিয়ে কিছু বলা উচিত মনে করি না , লেখকের তরফ থেকে বইয়ের সাথে সেই বিষয় টিও পাঠকদের উপহার বলা যেতে পারে।।
******* লেখক 👑 কৌশিক মজুমদার কে ধন্যবাদ 🙏 এরকম একটা কাহিনী বাংলার পাঠকদের কাছে তুলে ধরার জন্যে।। 💥💥💥💥💥💥 এ কাহিনী আর পাঁচটা ডিটেকটিভ কাহিনী নয়, মরিয়ার্টি ও শার্লক এর জীবনে এই অধ্যায় টা নতুন করে লেখা হয়েছে।। এটা বিশ্ব সাহিত্যের সম্পদ।। আশা করবো , এই বই এর ব্যাপ্তি আরও বাড়বে ।।
বই এর সাথে জড়িত __ প্রত্যেক কে অভিনন্দন এরকম একটা বই এর সহযোগী হওয়ার জন্যে । Boi Porbo Bole Akash Ray তোমাদের চ্যানেল ও আকাশ কে ধন্যবাদ দেব, কারণ তুমি রিভিউ না দিলে পড়া হতো না।। BOOK FARM কে ধন্যবাদ ,এত সুন্দর একটা বই তৈরী করার জন্যে ।।