Jump to ratings and reviews
Rate this book

অবিনশ্বর

Rate this book
ভয়ংকর এক খুনি নরক নামিয়ে এনেছে আমাদের এই চিরচেনা শহরে। এস আই রশীদের ভাষায় রক্তচোষা সাইকো-সিরিয়াল কিলার!
একের পর এক শরীর থেকে মাথা আলাদা হওয়া খণ্ডিত লাশের রহস্য সমাধানে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে গোটা শহরের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।
নিজের অজান্তেই সেই রক্তহিম করা সিরিয়াল কিলিং রহস্যের সাথে জড়িয়ে পড়লো ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভোগা আত্মভোলা স্কুল শিক্ষক আদ্রিয়ান। শখের বশে সাইকোলজিক্যাল সমস্যার সমাধান খুঁজে ফেরার অভিজ্ঞতা কি কাজে আসবে এবার? নাকি পথ হারাতে হবে রহস্যের গোলকধাঁধায়?
কল্পনাও করতে পারেনি ভয়ংকর এক নরকের দরজার কপাট খুলে দিয়েছে সে এই কেসটার সাথে জড়িয়ে!
খুনগুলো সাধারণ সিরিয়াল কিলিং হলে প্রায় একশত বছর আগের রক্তাক্ত ইতিহাসের সাথে এর সম্পর্ক কী?
সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কি তবে সৃষ্টি করতে যাচ্ছে এক অবিনশ্বর-অন্তহীন পৃথিবী?
যার সাথে জড়িয়ে আছে একটাই শব্দ... “দুঃস্বপ্ন”
সেই দুঃস্বপ্নের জাল ছিঁড়ে আদ্রিয়ান, রশীদরা কি থামাতে পারবে আসন্ন এক অন্ধকার জগতের আবির্ভাবকে?
পাঠক, আপনাদের স্বাগত অবিনশ্বরের অন্ধকার মনস্তাত্ত্বিক জগতের গোলকধাঁধায়...

224 pages, Hardcover

Published February 1, 2023

1 person is currently reading
119 people want to read

About the author

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
51 (34%)
4 stars
74 (49%)
3 stars
18 (12%)
2 stars
4 (2%)
1 star
2 (1%)
Displaying 1 - 30 of 56 reviews
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
February 12, 2024
প্রথমত হরর, দ্বিতীয়ত মৌলিক, তৃতীয়ত লেখকের প্রথম বই। এই ত্রী-কারনে স্বাভাবিক ভাবে এক্সপেক্টেশন কম রাখা অপরাধ ছিল না। প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয়েছে সব ভালোই তো আছে, কখন জানি গোলমেলে হয়ে যায়!
কিন্তু লেখক আমাকে যথেষ্ট অবাক করেছেন। লেখনী যথেষ্ট সাবলিল ছিল, সাথে কমপ্লেক্স একটা প্লট আহামরি টুইস্ট খাওয়াতে গিয়ে পুরা বই এর এক্সপেরিয়েন্স টা নষ্ট করেন নি৷

এক কথায় থ্রিলার কাম হরর কাম স্ল্যাশার ফ্যান দের জন্য সুপাঠ্য।

বিঃদ্রঃ স্ট্রিক্টলি প্রাপ্তমনস্ক এবং ভায়োলেন্স এর এক্সট্রিম লেভেল সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে এই বই আপনার জন্য না৷।
Profile Image for Rafia Rahman.
416 reviews215 followers
March 24, 2023
বই: অবিনশ্বর
লেখক: সাজ্জাদ সিয়াম
জনরা: ডার্ক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী
প্রকাশনী: ঋদ্ধ প্রকাশ
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৩
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২২৪
মুদ্রিত মূল্য: ৫০০/-

❝বিশাল দানবীয় সেই মুখটায় তিনটা ত্রিভুজাকৃতির চোখ! সেই চোখগুলো থেকে যেন আগুনের হলকা ঠিকরে বেরুচ্ছে! ছায়াটা একটা বিশালকায় লম্বা কালো কুচকুচে হাত বাড়িয়ে দিলো ছেলেটার দিকে।❞

কালো শার্ট পরা অদ্ভুত এক কিশোরকে নিজের রুমে দেখে চমকে ওঠে আদ্রিয়ান। আলোআঁধারির মধ্যে শোনায় অদ্ভুত এক দুঃস্বপ্নের কথা। আদোও কি স্বপ্ন...

একের পর এক রহস্যময় খুন হতে থাকে শহরের আনাচে-কানাচে! ধড় থেকে মস্তক আলাদা হওয়া যেন জানান দিচ্ছে কোনো ভয়ানক সাইকোকিলারের! কিন্তু শুধুই কি কিলার নাকি আছে অন্য কোনো রহস্যও? এস আই রশীদ হন্যে হয়ে খুঁজছেন। কোনো ক্লু, কোনো মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে না! খুনগুলোর সাথে অজান্তেই জড়িয়ে যায় আদ্রিয়ান। দুঃস্বপ্ন, অন্ধকার জগৎ, রিচুয়াল, শতবছর পুরোনো অতীত টেনে নিয়ে যায় একটি শব্দের কাছে, ❝অবিনশ্বর❞!!!

বীভৎস নবজাতক খুন দিয়ে কাহিনীর শুরু। তারপর একে একে বিভিন্ন চরিত্রের আগমন সাথে ঘটতে থাকে অদ্ভুত খুন ও ঘটনা। প্রথমে তো মনে হচ্ছিল অতিপ্রাকৃতিক সব। কিন্তু... ডার্ক সাইকোলজি সাথে মিস্ট্রি, মিথ, রিচুয়াল, ব্ল্যাক ম্যাজিক।

শুরু থেকেই কাহিনী ধীরেই এগিয়ে গেছে। স্টোরি টেলিংটা দারুণ। কনফিউজড হয়ে যাচ্ছিলাম কীভাবে খুন হচ্ছে, প্রোটাগনিস্ট-এন্টাগনিস্টই বা কে। প্লট, কনসেপ্টটা বেশ ইউনিক। স্বপ্নের থিওরিগুলো সবচেয়ে ভালো লেগেছে। পাহাড়ের চুড়ায় আদ্রিয়ানের ঘটনাটা হুট করে শুরু হয়ে, হুট করে শেষ! আরো গুছানো হলে ভালো হতো। শেষেও কিছু জিনিস অস্পষ্ট ও খটকা লেগেছে।

১৯৯০ সালে যারা বেঁচে গেছিল তাদের ২০২২ তে মারা হচ্ছে। কিন্তু ১৯৪২ থেকে ১৯৭৪ যাদের মারা হয়েছে সে সময়ে ভিক্টিম চুজ কীভাবে হয়েছে? ২০০৬ তেই বা কীভাবে চুজ করা হয়েছে?
সুইসাইডের কেসের খোলাসাটা স্পষ্ট হয়নি।
সত্তার পাঁচটি অংশের ব্যাপারটা গোলমেলে। চারটা অংশ যদি সৃষ্টি হয়ে থাকে তো অংশগুলো কোথায়? একটার সাথে অন্যটার ইন্টারকানেক্ট হচ্ছে কী করে?
রিচুয়ালের কিছু ধাপ নিয়ে কনফিউজড। বিশেষ করে খুনগুলার সাথে।

সমাপ্তি দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে। আদোও কি শেষ? ওভারঅল বইয়ের প্রডাকশন ভালো হয়েছে। টুকিটাকি কিছু বানান ভুলও চোখে পড়েছে।
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
October 17, 2023
নৃশংসতার একটা ঝলক প্রচ্ছদে দারুণ ফুটিয়ে তুলেছেন প্রচ্ছদকার সজল চৌধুরী। আর ভিতরে যা ছিল তা বাড়াবাড়ি রকমের। গায়ে কাটা দেওয়ার মতো। দারুন ঝরঝরে মেদহীন লেখা। অনুমান যা করছিলাম তার একটাও মেলে নাই। নিজের উপর নিজেই হতাশ। কিন্তু সেটা বই নিয়ে না। 'মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স' এর পর এবছরে আরো একখান দুর্দান্ত মারকাটারি বই পড়লাম । মাঝে মধ্যে ভালোই লাগে এরকম মারকাটারি টাইপ দু একটা বই পড়তে ।
Profile Image for Wasim Mahmud.
357 reviews29 followers
March 7, 2023
প্রায় সবকিছুই নশ্বর। কিন্তু আমাদের দুঃস্বপ্নগুলো কী নশ্বর? এমন সব ভয়ানক নাইটমেয়ার যা থেকে হয়তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনেকে মুক্তি পান না।

উপন্যাসের শুরু‌ই হয় এক নারকীয় দুঃস্বপ্নের মতো ঘটনা দিয়ে। প্রিভিউতে বলেছি যে এ নভেল দুর্বল হৃদয়ের পাঠকের জন্য নয়। নৃশংসতা এবং প্রচন্ড সহিংসতা দিয়ে আখ্যানের পথ চলা শুরু।

পৃথিবীর বুকে যখন নরক নেমে আসে তখন কনফিউসন সৃষ্টি হয়। এ কী বাস্তবতা না দুঃস্বপ্ন? ভূতের মতো এক সিরিয়াল কিলার শহরে তাঁর কাজে নেমেছে। এক একটা ধড় হীন শরীরের দেখা মিলছে। বিবদমান পরিস্থিতিতে দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা রশীদের দরকার একজনকে।

আদ্রিয়ান। সেই একজন‌। নিজে মারাত্মক বিষন্নতায় এবং অন্যান্য মেন্টাল প্রব্লেমে ভুগেন তিনি। সেই আদ্রিয়ান যে পার্কে গিয়ে ঘুমোয়। আত্মভোলা, অতীত বিস্মৃত, আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের পথ দিয়ে চলা এ স্কুল শিক্ষকের আশপাশেই ভয়ানক ঘটনার সূত্রপাত হয়। তাকে আশ্রয় দেয়া পরিবারটিও নিরাপদ নয়।

এ অবস্থায় রশীদ, আদ্রিয়ান এবং পুলিশ ফোর্সের অনেকেই এক গোলকধাঁধায় ঢুকে পড়েন। যা থেকে বেরুতে না পারলে নরক গুলজার হয়ে যাবে এই শহর।

সাজ্জাদ সিয়াম অনলাইন প্লাটফর্মে লিখছেন বেশ ক'বছর ধরে। বিভিন্ন লিডিং ফেসবুক গ্রুপে তাঁর লিখা গল্প আছে। সিয়ামের একটি ছোটগল্পের উপর কমিক্স‌ও হয়েছে। থ্রিলার, হরর, সাই-ফাই জনরা নিয়ে লেখক কাজ করছেন নিয়মিতভাবে। 'অবিনশ্বর' তাঁর লিখা প্রথম উপন্যাস।

প্রথম নভেল হিসেবে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টের কাজটা সাজ্জাদ ভালো করেছেন। আদ্রিয়ানের চরিত্রায়ন এবং তা গড়ে তুলার কাজটি চমৎকার করেছেন লেখক। পার্কে হুমায়ূন আহমেদের দুটি বিখ্যাত চরিত্রের প্রতি হালকা নড চোখ এড়ায় নি। আদ্রিয়ানের ক্ষুরধার বুদ্ধির পাশাপাশি ক্যারেক্টারের নিজস্ব ডিমন ফেইস করে এগুনো, তাঁর ভালনারেবিলিটি পছন্দ হয়েছে।

আখ্যানের প্রথমার্ধ তুলনামূলকভাবে ধীর গতির তবে আমার ঐ অংশটি বেশি ভালো লেগেছে। চাপা একটা ইন্টেন্সিটি রক্ষা করা হয়েছে ‌ব‌ইয়ের অর্ধেক জুড়ে। পরের দিকে গল্পের গতি বৃদ্ধি পায়। অনেকগুলো সূত্রকে ছড়িয়ে দিয়ে আবার শেষে এসে একসূত্রে গেঁথেছেন সাজ্জাদ সিয়াম।

ব‌ইয়ের অপেক্ষাকৃত কম পছন্দের বিষয় যা লেগেছে সেসবের মধ্যে অন্যতম হল 'শো, ডোন্ট টেল' এর বেশ ভালো প্রয়োগের জায়গা ছিলো উক্ত উপন্যাসে। সিয়ামের টেলিং ভালো, কিছু জায়গায় একটু বাহুল্যময় তবে 'শো' করাটা তো তিনি প্রথমার্ধে ভালো দেখিয়েছেন। পরের দিকে স্টোরি একটু রাশড মনে হয়েছে আমার। এই রাশড মনে হ‌ওয়াটার পিছনে অনেক সূত্র ছড়িয়ে দেয়াটা মূল কারণ নয়, বরঞ্চ গল্পের ভিজ্যুয়ালাইজেশনের পর্যাপ্ত প্রয়োগ না থাকায় এরকম লেগেছে।

অবশ্য লেখক পাঠকের হাতে দুটি অপশন দিয়েছেন। কেউ এ নভেলকে থ্রিলার আবার কেউ হরর মনে করতে পারেন। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের এন্ডিং এ এরূপ কনফিউশন সুন্দর। লেখক এই কনফিউশন উপন্যাসের প্রথমে, মাঝখানে মোটামোটি সৃষ্টি করেছেন, যা প্রথম উপন্যাস হিসেবে প্রশংসনীয়।

সাজ্জাদ সিয়াম অবশ্য খুব সম্ভবত এ উপন্যাসের সিক্যুয়েলের ইঙ্গিত দিয়েছেন শেষের দিকে। আমার মনে হয় আরেকটু বড় পরিসরে উপন্যাস ��িখলে লেখক আরো ভালো করবেন। ওভার‌অল ভালো লেগেছে 'অবিনশ্বর'।

নশ্বর মানুষ যখন অবিনশ্বর হতে চায় তখন বেশিরভাগ সময় পৃথিবীতে নেমে আসে নারক���য় তান্ডব। সেই উন্মাদনা, সেই তান্ডবের যে নৈরাজ্য তা লেখার জন্য সাজ্জাদ সিয়ামকে যোগ্য একজন লেখক বলে মনে করি।

ব‌ই রিভিউ

নাম : অবিনশ্বর
লেখক : সাজ্জাদ সিয়াম
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২৩
প্রকাশক : ঋদ্ধ প্রকাশ
প্রুফরিডিং : বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা
প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী
অলংকরণ : জান্নাতুল ফেরদৌস মীম, মিডজার্নি
বর্ণবিন্যাস : বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা
জনরা : সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার / হরর
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
Profile Image for Akash Rahman.
47 reviews7 followers
December 27, 2023
মৃত্যুর চোখরাঙানি উপেক্ষা করে অবিনশ্বর জীবনে পা দেবার এক উত্তুঙ্গ বাসনা মানুষকে কত ভয়াবহ করে তুলতে পারে তার অমিয় উপাখ্যান। অজস্র টুইস্টের সংমিশ্রনে জান্তব হয়ে উঠেছে বিপদসংকুল ভয়ানক এক পথ।
সাজ্জাদ সিয়াম সাহেবের লেখা 'অবিনশ্বর' বইটি শেষ করার পর বহুক্ষণ এই প্রশ্নটা আমাকে ভাবিয়েছে, এর জনরা কি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার নাকি কসমিক হরর? আমার মতে দু'টোই। লেখক সাহেবের অসাধারন লেখনী দুর্দান্তভাবে ওভারল্যাপ করেছে দু'টি জনরাকেই।
মৃত্যুর মত পরম সত্য এই পৃথিবীতে বোধহয় দ্বিতীয়টি নেই। এই নশ্বর পৃথিবীতে সবকিছুরই সর্বশেষ গন্তব্য মৃত্যু। মৃত্যু আছে বলেই আমরা জীবন উপভোগ করি, আবার এই মৃত্যুই পার্থিব জীবনে আমাদের দুঃখ-দুর্দশার অন্যতম বড় কারণ।
কিন্তু, কেমন হতো যদি আমাদের এই পৃথিবী অবিনশ্বর হতো? যদি কোনভাবে, কোনো উপায় আবিষ্কার করা যায় যাতে মৃত্যু তার রাস্তা বদলে ফেলে? সেই উপায়টি কিসের বিনিময়ে আসবে? আদৌও কি এমন কোন উপায় আবিষ্কার সম্ভব? বইতে লেখক যথেষ্ট মুন্সিয়ানার সাথে এই কন্সেপ্টটিই ফুটিয়ে তুলেছেন। পাশাপাশি, মানবমনের অন্ধকার দিক যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তারও জ্বলন্ত উদাহরন দিয়েছেন তিনি।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া:
বেশ কিছু নারকীয় হত্যাকান্ড দিয়ে কাহিনী শুরু হলেও সিরিয়াল কিলিং এ গল্পের মূল ফোকাস ছিলনা। প্লট এবং সাবপ্লটের মিশেলে অত্যন্ত জটিল এবং জালের মত সুবিস্তৃত একটি কাহিনী ফুটে উঠেছে ধীরে ধীরে। এই সাবপ্লট নিয়েই দু'টো বাড়তি কথা লিখতে ইচ্ছে করছে।
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সাবপ্লট গল্পের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে ব্যর্থ হয়, তারপর শেষের দিকে হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই বইতে সাবপ্লট এত সুন্দরভাবে মেইন প্লটের সাথে মিশে গেছে, যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছি।
গল্পের শ্রেষ্ঠ দিক হল, এর টুইস্ট৷
যে মুহুর্তেই মনে হয়েছে, কি হতে যাচ্ছে আমি প্রেডিক্ট করে ফেলেছি, লেখক অসামান্য দক্ষতার সাথে আমাকে ভুল প্রমান করেছেন। একবার নয়, বারংবার। শেষেরদিকে এমনকিছু টুইস্ট দিয়েছেন, এমনকি হার্ডকোর থ্রিলার রিডারদেরও চোয়াল ঝুলে পড়বে।
গল্পের অন্যতম পছন্দের দিক হল প্লট কন্সিসটেন্সি এবং গাম্ভীর্য। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ঢঙ্গে গল্পটাকে এগিয়ে নিয়েছেন লেখক সাহেব। কোথাও ঝুলে পড়েনি, কোথাও এতটুকু নীরস লাগেনি। বরঞ্চ, শেষের দিকে কাহিনী এতটাই ইন্টেন্স ছিল যে একনি:শ্বাসে পড়তে বাধ্য হয়েছি৷
সজল চৌধুরী সাহেবের অনবদ্য প্রচ্ছদ ডিজাইন বইটিতে এনে দিয়েছে এক অপার্থিব আমেজ। তাতে গল্পের ভেতর আরও সহজে নিমগ্ন হতে পেরেছি।
পার্সোনাল রেটিং: ৪.৫/৫
পরিশেষে, লেখক সাহেবের উদ্দেশ্যে অনুরোধ, এমন দুর্দান্ত প্রলয় উপাখ্যানের সিক্যুয়েল চাই। অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো বাকি।
Profile Image for Raihan Ferdous  Bappy.
225 reviews13 followers
May 17, 2024
"সব ভালো তার শেষ ভালো যার।"

শেষ করলাম সাজ্জাদ সিয়ামের ডার্ক-সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার "অবিনশ্বর"। বইটার প্রচ্ছদটা দেখে আর জনরা দেখে খুব ভালো লেগেছিলো। তাই খুব দেরি না করে বইটা কিনে ফেলি। কেনার পর এক ফ্রেন্ডের কাছেও শুনি যে বইটা তার পছন্দের তালিকায় অনায়াসে ঢুকে গেছে। এটাতে আরো বেশি আগ্রহ বেড়ে যায় বইটার প্রতি। তাই আর দেরি না করে ঝটপট শুরু করি বইটা।

সত্যি বলতে যেভাবে শুরু হয়েছিলো আমিও ভেবেছিলাম খুব এক্সাইটিং কিছু একটা পেতে যাচ্ছি। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টটা খুবই ভালো ছিলো। এক্ষেত্রে, লেখকের প্রশংসা না করে পারা যায় না। আর, আদ্রিয়ান ক্যারেক্টারটা মিসির আলির কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। মিসির আলি আমার খুবই পছন্দের একটা চরিত্র। তাই আদ্রিয়ান ক্যারেক্টারটা সত্যিই বেশ ভালো লাগছিলো।

কিন্তু, শেষের দিকটায় এসে হলো ভরাডুবি। কাহিনীটা কেমন জানি খাপছাড়া হয়ে গেলো একদম। অনেকেরই পছন্দ হয়েছে বইটা। তবে, আমার কাছে কেমন জানি জমলো না। জমলো না বলতে মোটেই জমলো না। একটা বইয়ের পারফেক্ট ইন্ডিংটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এই বইয়ের শেষদিকটা একদম " যাচ্ছেতাই" লেগেছে আমার কাছে। একদমই ভালো লাগেনি।

সবমিলিয়ে, বেটার কিছু আশা করছিলাম শুরুরদিকটা পড়ে। তবে শেষে এসে একদম হতাশ!
Profile Image for Parvez Alam.
306 reviews12 followers
August 16, 2023
বইটা শুরু থেকেই ভালো ছিলো, পরে শেষ করার পরেও ভাল লেগেছে কিছু কিছু ব্যাপার ছাড়া। যেমন মিরা সাথে তার স্যার ব্যাপারে আমার কাছে অহেতুক কথা মনে হয়ছে আর খুব খারাপ লেগেছে কোথাও হামিদা বেগম আবার কোথাও শুধু হামিদা। লেখক হয়ত সামনে এইটা ঠিক করে দিবেন।
Profile Image for Sakib A. Jami.
332 reviews36 followers
March 13, 2023
রাত বাড়ছে! বান্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম শিবপুর। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত সময় শেষে হয়তো রাতটি নির্বিঘ্নে, কোনো ঝুট ঝামেলা ছাড়াই করতে চায় সবাই। এরই মাঝে একটি বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। প্রয়োজন হারানোর বেদনায় ক্লান্ত তারা। কেউ জানে না, তাদের জীবনে নেমে আসছে ঘোর অমানিশা। রাতের অন্ধকারে মতো আরও একটি রাত নেমে আসছে ওদের জীবনে। পিশাচের নজর পড়েছে গ্রামে। এই পিশাচের থেকে বাঁচবে কী করে? দুই হাতে চাপাতি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছে সে। নিস্তার নেই। তার লক্ষ্য যে পূরণ করতেই হবে...

মানুষ স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। এই স্বপ্নকে সাথে এগিয়ে যায়, বেঁচে থাকে। স্বপ্নহীন মানুষের জীবনে কোনো মূল্য নেই। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা আর বাস্তব স্বপ্নের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই স্বপ্নের বিভেদ রয়েছে। কখনো কখনো স্বপ্নের কারণে মানুষের জীবন আর জীবন থাকে না। রাতের ঘুম হারাম হয়ে ওঠে। দুঃস্বপ্নের কারণে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। শরীর ঘেমে ওঠে। এই দুঃস্বপ্নের চক্রে একবার বাঁধা পড়লে, তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মুশকিল।

আদ্রিয়ান বোধহয় সেই চক্রেই বাঁধা পড়েছে। কখনো জেগে কিংবা ঘুমিয়ে সেই স্বপ্নের পথে ছুটে চলেছে। স্বপ্ন, না বাস্তব? আদ্রিয়ান জানে না। আদ্রিয়ানের ধারণা সবই বাস্তব। পুরনো এক অতীত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। যে অতীত সম্পর্কে সে নিজেও জানে না। জানে না নিজের সম্পর্কে। কে এই আদ্রিয়ান? বর্তমান আদ্রিয়ানের অতীত কী? মানুষের সাইকোলজি নিয়ে কাজ করা আদ্রিয়ানের সাইকোলজি নিয়ে কাজ করবে কে? মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে না তো?

শহর জুড়ে নেমে এসেছে এক খুনে পিশাচ। যার খুনের ঘটনা বর্ণনা করতে গেলেও কেঁপে উঠতে হয়। একের পর এক খুন হচ্ছে। দেহ থেকে ধর আলাদা লা.শগুলো প্রবল মানসিক শক্তি সমর্থ মা��ুষও স্বাভাবিক থাকতে পারবে না। কিছু করতে পারছে না পুলিশ প্রশাসন। কোনো সূত্র নেই, ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই, সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ছে না কিছু। তবে কি মানুষ, না কোনো অশরীরী? দৃশ্যমান শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে? বুদ্ধির খেলায় হার মানতে নারাজ পুলিশ অফিসার রশীদ। এর শেষ দেখে ছাড়বে সে।

কোমল ও নরম মনের অধিকারী রেশাদ। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সে, সেখানেই পড়ে ���ীরা। শিক্ষক ও ছাত্রীর সম্পর্ক নিয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও দুইজনের মধ্যে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মনের মিল থাকলেই এভাবে বন্ধু হয়ে ওঠা যায়। কেবলই কি বন্ধু? না অন্য কোনো সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ হচ্ছে ওরা? সময়টা ভালো না। ভয়ংকর কিছু ঘটছে চারিপাশে। এর ভয়ংকর চক্রে আবদ্ধ হবে না তো ওরা? খেলা যে এখনো বাকি...

▪️বই পর্যালোচনা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া :

সাজ্জাদ সিয়ামের লেখার সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে তার ছোটো গল্পের মাধ্যমে। ছোটো পরিসরে দারুণ কাজ করা এই লেখক বড়ো পরিসরে কেমন করেন, জানার আগ্রহ ছিল। "অবিনশ্বর" লেখকের রচিত প্রথম বই। প্রতি বইমেলায় আমার চেষ্টা থাকে এমন কোনো লেখকের একটি বই অন্তত সংগ্রহ করা, যিনি প্রথম বই লিখেছেন। "অবিনশ্বর" সেই ক্ষেত্রে পাশ মার্ক নিয়ে উতরে গিয়েছে।

"অবিনশ্বর" নৃশংসতার এক অদ্ভুত নিদর্শন। যদি দুর্বল চিত্তের মানুষ হোন, এই বইটি আপনার জন্য না। ভয়াবহ সব কর্মকাণ্ডের মাঝে খেই হারিয়ে ফেলা সম্ভব। লেখক একেকটি অধ্যায় লিখেছেন, ভয়াবহের মাত্রা যেন বৃদ্ধি পেয়েছে।

"অবিনশ্বর" বইতে মানব মনস্তত্ত্ব দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। মানব মনের উপর প্রভাব বিস্তার করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। এই প্রভাব অনেকক্ষেত্রে ভয়াবহ হতে পারে। মানব মনের অলিতে গলিতে থাকা সুপ্ত বাসনা, কিংবা মনস্তত্ত্বের খুঁটিনাটি যেভাবে তুলে ধরেছেন; তারিফ করতে হয়। এছাড়া স্বপ্ন নিয়ে কথোপকথন ভালো লেগেছে। একবারের জন্যও মনে হয়নি বাহুল্য কিংবা বাড়তি কোনো কিছু।

গল্পের শুরুটা হয়েছে নৃশংসতা দিয়ে। যেন শুরুতেই লেখক বলতে চেয়েছেন, খেলা তো সবে শুরু। আরও অনেক কিছু বাকি! এই শুরু আর শেষে মাঝে অনেক কিছুই ঘটেছে। ধাপে ধাপে এগিয়েছে লেখার গতি। লেখকের লেখনশৈলী ভালো লেগেছে। গল্পের গতিও ছিল বেশ। তবে কিছু জায়গা ধীর মনে হয়েছে। অবশ্য বেশি যে ধীর ছিল তেমনটা নয়। গতিশীল গল্পের ক্ষেত্রে মাঝেমাঝে গতির লাগাম টানা প্রয়োজন পরে। যেন আগের ঘটনাগুলো মাথার মধ্যে গেঁথে নেওয়ার সময় পাওয়া যায়। আমার এ জাতীয় লেখা বেশ লাগে। লেখক যেন তেমনই কিছু করেছেন।

এবার টুইস্টের বিষয়ে বলি। লেখক তার গল্পকে এমনভাবে চালিত করেছেন, গল্পটি অতিপ্রাকৃত না কোনো সাইকোপ্যাথ সিরিয়াল কিলারের ঘটনা; এ নিয়ে একটা দ্বিধা কাজ করেছে। লেখকের হাতে দুটি অপশন ছিল, কীভাবে গল্পের সমাপ্তি টানবেন। তিনি যেভাবে টেনেছেন, আমার পছন্দ হয়েছে। অনেক গুলো খুন হয়েছে। কোনো ক্লু নেই, ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই, সিসি ক্যামেরায় কিছু দেখা যায় না। এমন অবস্থায় লেখক যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা বাস্তব সম্মত এবং যৌক্তিক। মাথা ঘোরানো কোনো টুইস্ট সেখানে ছিল না।

সব ভালো থাকলেও কিছু বিষয়ে খটকা লেগেছে। কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

০ গল্পে একটি সুইসাইডের কথা বলা আছে। কিন্তু এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যা ছিল পুরোটাই অনুমান। কিন্তু শেষে এসে সেই অংশ লেখক পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিলেন।

০ শেষাংশে মূল ঘটনা যেখানে ঘটছে, সেই জায়গায় খোঁজ রশীদ কীভাবে পেল তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

০ সবাইকে বন্দী করে মূল ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে গেলেও, মীরাকে কেন অন্য জায়গায় রাখা হয়েছিল? এর কারণ কী?

০ একদম সমাপ্তি অংশে লেখক যেভাবে বর্ণনা করেছেন, অনেক কিছুই ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। কী ঘটছিল, কেন ঘটছিল বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে।

০ ৩২ বছর আগের ঘটনা, ১৬ বছর পরও পর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো এখনো বুঝতে পারিনি। এর যোগসাজস বা কারণ সব যে বুঝতে পেরেছি, তেমন হয়নি। লেখকের আরেকটু স্পষ্টভাবে লেখা উচিত ছিল।

এছাড়াও টুকটাক কিছু জায়গায় ব্যাখ্যার বাহুল্য ছিল। অনেক জায়গায় বর্ণনা সংক্ষিপ্ত। প্রথম বই হিসেবে লেখকের এসব ত্রুটি আমলে না নিলেও চলে।

▪️চরিত্রায়ন :

এই গল্পের প্রধান চরিত্র আদ্রিয়ান। অতীতের ব্যাক স্টোরির সাথে আদ্রিয়ানকে যেভাবে যুক্ত করা হয়েছে, এক কথায় অসাধারণ। তবে লেখকের আদ্রিয়ানকে বুদ্ধিমান দেখাতে চাওয়ার প্রয়াস ভালো লাগেনি। গল্পের শুরুতে আদ্রিয়ানের ভূমিকা তাকে ইতোমধ্যে বুদ্ধিমান হিসেবেই দেখিয়েছে। এভাবে কাজে কর্মে চরিত্র বুদ্ধিমান হলে, পড়তেও আরাম লাগে। জোর করে দেখাতে গেলে মেকি এক ধরনের ভাব চলে আসে।

রশীদ চরিত্রটিকে বেশ ভালো লেগেছে। পুলিশ অফিসারের কঠোরতার ভেতরের যেন এক কোমল মন আছে। সবকিছু নখদর্পণে থাকার পরও কিছু ক্ষেত্রে হতাশা কাজ করে। একজন মানুষ সবসময় সবকিছু পারে না। রশীদ চরিত্রকে অতিমানবীয় হিসেবে উপস্থাপন না করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।

গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা গুরুত্বহীন দুই চরিত্র ছিল মীরা ও রেশাদ। এক সময় মনে হচ্ছিল, হয়তো গল্পে এদের কোনো ভূমিকা নেই। তারপরই লেখক তার শেষ অস্ত্র সামনে আনেন। এই দুটি চরিত্রকে আরও কিছু ভূমিকা দেওয়া যেত। আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা যেত। কিন্তু মূল গল্পের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে তাদের ভূমিকা সীমিত হয়ে গিয়েছে।

আড়ালে থাকা খলনায়ক। রহস্য যেভাবে উন্মোচিত হয়েছে, একে একে সবাই সামনে এসেছে। মাস্টারমাইন্ডকে দেখে রীতিমতো চমকে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে। সেই সাথে ছোটো বড়ো সকলকে লেখক ভূমিকা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। চরিত্রগুলো নিয়ে লেখকের যত্ন স্পষ্ট ছিল তার লেখায়।

▪️বানান, প্রচ্ছদ ও অন্যান্য :

আমার একটা বিষয় খুব খারাপ লাগে, শ্রুতি মধুর বাংলা থাকার পরও কেন ইংরেজি ব্যবহার করতে হবে? আমার কাছে সাহিত্য মানে শব্দের খেলা। একটি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে হয়তো বুঝিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সেই জায়গায় বাংলা শ্রুতি মধুর শব্দের ব্যবহার লেখকের দক্ষতা প্রকাশ করে। "অবিনশ্বর" বইয়ের ক্ষেত্রে লেখক যেমন এক জায়গায় নাইটমেয়ার শব্দটি লিখেছেন। যার পরিবর্তে দুঃস্বপ্ন লিখলে ভালো শোনাতো না? এমন অনেক জায়গায় শ্রুতি মধুর পারিভাষিক শব্দ থাকার পরও ইংরেজি ব্যবহার করা হয়েছে।

সংলাপের ক্ষেত্রে হয়তো এ জাতীয় লেখা চলতে পারে। কেননা কথা বলার সময় আমরা অনেকেই ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করি। কিন্তু বর্ণনার ক্ষেত্রে এই বিষয় কেন যেন ভালো লাগে না। তবে সংলাপের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, চরিত্রগুলো প্রচুর ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করে। আমার মনে হয় চরিত্রগুলোকে অতিরিক্ত শিক্ষিত দেখানোর এই প্রয়াস পরিহার করা উচিত। শুধু এই বইয়ের ক্ষেত্রে বলছি না। অনেক বইয়ে আজকাল এমন দেখা যায়। অন্যের কী অবস্থা জানি না, বাংলা অক্ষরে ইংরেজি পড়তে গিয়ে আমাকে বারবার হোঁচট খেতে হয়।

বানান ভুল না থাকলেও ছাপার ভুল ছিল কিছু জায়গায়। বেশ কিছু অংশে বাক্য গঠন আরো ভালো হতে পারত। প্রচ্ছদ বেশ ভালো। পুরো বইয়ের মূল যে। প্রচ্ছদের মাধ্যমেই তুলে ধরা হয়েছে। বাঁধাই নিয়ে অভিযোগ করার কিছু নেই। ঋদ্ধ প্রকাশ দারুণ কাজ দেখিয়েছে।

▪️পরিশেষে, এই নশ্বর পৃথিবীতে নিজেকে অবিনশ্বর হিসেবে দেখতে চাওয়ার মানুষের অভাব নেই। কেউ কি অবিনশ্বর হতে পারে? প্রকৃতি তার নিয়মের বিরুদ্ধে যাওয়া পছন্দ করে না। কেউ যেতে চাইলে অনেক কিছুই বদলে যায়। হয়তো পৃথিবী জুড়ে নেমে আসবে বিভীষিকা। কে জানে?

▪️বই : অবিনশ্বর
▪️লেখক : সাজ্জাদ সিয়াম
▪️প্রকাশনী : ঋদ্ধ প্রকাশ
▪️প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০২৩
▪️পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২২৪
▪️মুদ্রিত মূল্য : ৫০০ টাকা
▪️ ব্যক্তিগত রেটিং : ৩.৮/৫
Profile Image for ANIT.
86 reviews2 followers
March 7, 2023
অবিনশ্বর" by Sazzad Siam is a psychological thriller (with mythology I can say) that will leave readers on the edge of their seats until the very end. The writing in "অবিনশ্বর" is simply mesmerizing. Sazzad vai expertly weaves together a complex web of characters and motivations that keep readers guessing until the very end. The pacing of the novel is perfect with just the right amount of tension building throughout. Readers will find themselves eagerly turning the pages to see what happens next. The character Roshid is dope.And the character analysis/development of Adrian is mind blowing.Overall, "অবিনশ্বর" is a gripping thriller with beautiful writing and a jawdropping plot twist. It's a mustread for fans of the genre. I have found a really great book even though it's only the beginning of the year. Eagerly waiting for the next part. ❤️‍🔥
Profile Image for Samsudduha Rifath.
425 reviews23 followers
December 25, 2023
"অবিনশ্বর। যার কোনো বিনাশ নেই। যে নিজেকে ভাবে অমর। যার ক্ষমতায় এই নশ্বর দুনিয়ার সকল ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা জলাঞ্জলিতে ফেলে সবাই একই দিকে অগ্রসর হবে। অগ্রসর হবে মৃ*ত্যুর দিকে। সেই মৃ*ত্যুর পর পাবে সে এক নতুন দুনিয়ার দেখা।"

কাহিনী সংক্ষেপ-
১৯৯০ সাল। শিবপুর গ্রামটা আদতে শিবের নামে রাখলেও সেই রাতটায় বোধহয় শিবের আশীর্বাদ ছিলো না। সেদিন রাতে নেমে আসে নরকগুলজার পুরো গ্রামে। একের পর এক বাড়িতে নৃশংস ভাবে হ*ত্যা করে যাচ্ছে রুগন, সরু চিবুক আর লম্বা চুলের এক কিশোর। হাতে দুটো মাংস কাটার চাপা*তি। যার এক কো*পে ঢোড় থেকে মাথা আলাদা হচ্ছে। ১৬ টা বাচ্চা ও এক মানুষরূপী পিশাচ।

আদ্রিয়ান আত্মভোলা একজন স্কুল শিক্ষক। যার সাইকোলজি নিয়ে নেই কোনো একাডেমিক ডিগ্রি। নিজের আপন দুনিয়াতেই আছে সে আর বিভিন্ন মানুষের সাইকোলজিক্যাল কেস স্টাডি ও সমাধান করে।
পুলিশ অফিসার রশীদ জড়িয়ে পড়েছেন এক তুখোড় বুদ্ধিসম্পন্ন সিরিয়াল কিলারের তাণ্ডবনৃত্যে। কোনো রকম প্রমাণ না রেখে একের এক হ*ত্যা করে যাচ্ছে সিরিয়াল কিলার রশীদকে বার্তা দিয়ে।
আদ্রিয়ান, রশীদ কি খুঁজে পাবে সে ভয়ংকর খু*নীকে? নাকি তারই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ঘুরেবেড়াবে গোলকধাঁধায়?

পাঠ-প্রতিক্রিয়া:-
ডার্ক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার আর হরর এর মিশ্রণে লেখা সাজ্জাদ সিয়ামের প্রথম উপন্যাস ' অবিনশ্বর'। এর আগে লেখক ফেসবুকে এই জনরা নিয়ে অনেক গল্প লিখেছেন ও কিছু গল্প সংকলনেও উনার গল্প প্রকাশিত হয়। ফেসবুকে কয়েকটা গল্প পড়ার পর উনার লেখনশৈলী সাবলীল লেগেছিলো আর প্লট গুলোও চমৎকার থাকায় অবিনশ্বর বইটার যখন প্রথম ঘোষণা আসে তখন থেকেই এটা উইশলিস্টে ছিলো। তো আজ বইটা পড়া হলো অবশেষে।

যেকোনো দুর্বলচিত্তের পাঠককে গল্পের প্রথমাংশ মারাত্বক অস্বস্তিতে ফেলবে। বমি আসলেও অবাক হবো না। আমার নিজের নার্ভ যথেষ্ট শক্ত তার পরেও একটা ভয় কাজ করছিলো প্রথম দিকে। সেই ভায়ো*লেন্সের মাধ্যমে লেখক পরিচয় করান এক কিশোর বয়সের ছেলেকে, যার আখ্যানের পর একে একে আগমন ঘটে আদ্রিয়ান, রশীদ, মীরা, মিজান, রেশাদ সহ আরো কিছু পার্শ্বচরিত্রের।

ঘটনাটা শুরু হয় একটা বিড়ালের হ*ত্যার মাধ্যমে। তারপর একে একে ক্লু ছাড়া সব খু*নের ঘটনা দিয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেন আর পরিচয় করান আদ্রিয়ান আর রশীদের সাথে। এই যুগলের তদন্ত আর আদ্রিয়ানের নিজস্ব জীবনের গল্প দারুণ ভাবে একের পর এক সিকোয়েন্সে ফুটে উঠে। আদ্রিয়ানের চরিত্র গঠন দারুণ ছিলো। সেই সাথে অন্যান্য চরিত্রগুলোর গঠন তৃপ্তিময় ছিলো।
একের পর এক সূত্র যখন পাঠকের সামনে উন্মোচন হবে তখন পাঠক সন্দেহের তীর একজনের উপরই পড়বে। কিন্তু লেখক দারুণ ভাবে মাইন্ড গেম খেলেছেন পাঠকের সাথে। যখনই ভাববেন তাহলে এ হচ্ছে কালপ্রিট কিন্ত লেখক দারুণ ভাবে তার রহস্য উন্মোচন করেন।
তাছাড়া লেখক স্বপ্ন আর সাইকোলজি নিয়ে কিছু টার্ম সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লুসিড ড্রিম আমি নিজেও দেখি মাঝে মাঝে। সে সম্পর্কে কিছু বর্ণনা অনেক চমকপ্রদ ছিলো।

শেষের দিকে রশীদকে দিয়েই সব রহস্য উন্মোচন করান লেখক। কিছু কিছু জিনিস খোলসা করেননি লেখক। আর রশীদের চরিত্র গঠনেই মনে হচ্ছে এই চরিত্র নিয়ে আলাদা স্পিন অফ বইও আসবে। যদিও এই বইটাও শেষের দিকে সিক্যুয়েলের দিকেই ইঙ্গিত করেছে তার পরেও একটা সস্তিদায়ক সমাপ্তি পাঠকের জন্য আছে। যেটা আরো কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করবে।
সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারে দুইটি অপশন থাকে। কেউ এটাকে থ্রিলার মনে করবে আবার কেউ হরর ভেবে নিবে। এই কনিফিউশনটা সুন্দর। পাঠককে চিন্তায় ফেলে দেয় সেটা।

নশ্বর মানুষ যখন অবিনশ্বর হতে চায় তখন পৃথিবী পরে নেয় কালো চাদর, যে চাদরের ভিতর চলে নাশকতা আর ভয়ংকর সব চাল। সেই অবিনশ্বরের পৃথিবীকে আরো বিস্তৃত করবেন আশা করি লেখক সাজ্জাদ সিয়াম।

এক নজরে-
বই: অবিনশ্বর
লেখক: সাজ্জাদ সিয়াম
জনরা: ডার্ক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী
প্রকাশনী: ঋদ্ধ প্রকাশ
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৩
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২২৪
মুদ্রিত মূল্য: ৫০০৳
Profile Image for Sarah Haque.
427 reviews105 followers
December 2, 2023
"শহরে অদ্ভুত কিছু সিরিয়াল কিলিং হচ্ছে, যার শুরু একটি বিড়ালের কাটা মাথা দিয়ে, কিন্ত শেষটা কোথায়...."

বইটা কেমন বলার আগে কেমনে পেলাম সেইটা বলি। বইমেলার পর থেকে নামটা শোনা হলেও কেনা আর হয়নি। ক'দিন আগে, হুট করে একটা ছোট গল্প পড়ে লেখকের নাম দেখে একদম ঐদিনই অর্ডার দিয়ে ফেলছি!

হতাশ যে হয়েছি, তা একটুও না। তবে আমার ধারণা, লেখকের ছোটগল্পগুলি বেটার হয়। একটু বড় পরিসরে উপন্যাসে আনতে গেলে টুইস্ট ধরে আনার ব্যাপারটায় হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তবে লেখা ভালো লেগেছে আমার, যেই কারণে অমনে বইটা কেনা।

পুরা বই জুড়ে ভয়ানক *ব্লাডবাথ* ধরনের যে বর্ণনা দেয়া আছে, এইটা মোটেও সবার পড়ার উপযোগী না। নিজেই এগুলোতে অভ্যস্ত থাকার পর তওবা কেটেছি খাবার পর এই বই নিয়ে বসা যাবে না।
সিরিয়াল কিলিং দিয়ে শুরু হলেও এটায় সাইকোলজিক্যাল, এমন কী স্যাটানিক টুইস্টও আছে। তবে শেষের দিকে একটু খাপছাড়া লাগে আর শেষপর্যন্ত কাহিনিতে কিছুটা অসংগতিও চলে এসেছে যেই ব্যাপারগুলিকে মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করার পরও চোখে লাগে। অবিনশ্বর যে কেন অবিনশ্বর এইটা তো হুট করেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার মত লাগলো। তার মানে কী কাহিনি আরো বাকি?
তবে আমার মনে হয় পরবর্তীতে আরো বেটার কিছু পাওয়ার আশা আমি এবার করতেই পারি।
Profile Image for Elin Ranjan Das.
88 reviews5 followers
August 17, 2024
এই বইকে একটা জনরাতে বেঁধে ফেলা সম্ভব না। এখানে জনরা হপিং হয়েছে একাধিকবার। শুরুতে মনে হচ্ছিলো হরর স্ল্যাশার। এরপর তা অকাল্ট হরর হয়ে গেলো। এরপর আবার সাইকোলজিক্যাল হরর, এবং সর্বশেষে অকাল্টে ফিরে যাওয়া। কিন্তু এই জার্নিটা আমার কাছে কোথাও খাপছাড়া লাগে নি, দারুণ লেগেছে। লেখকের প্রথম মৌলিক হিসেবে উনি ভালো দক্ষতা দেখিয়েছেন। একদম শুরুতে আদ্রিয়ানের কাজে একজন মিসির আলিকে খুঁজে পেয়েছিলাম, যদিও গল্প ওদিকে আর প্রগ্রেস করে নি। তবে আমার মনে হয় আদ্রিয়ানের প্যারানর্মাল-সাইকোলজিক্যাল ডিবাংকিং গল্পগুলো নিয়ে লেখকের কাজ করা উচিত, একটা ভালো গল্প সংকলন পাওয়া যাবে। তার সাইকোলজিক্যাল ইস্যুটাও বেশ ইন্টারেস্টিং ছিলো, এর সাথে যেভাবে অকাল্টকে মিশিয়ে দিয়েছেন লেখক, প্রশংসনীয়।
তবে এই বইতে দুইটা ভুল চোখে পড়েছে। তরুণ লেখকের সাদা দাঁড়ি গোঁফ থাকবে কেন? আবার বিড়ালটার মাথা প্রথমে বললো কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে, এর কয়েক পাতা পড়ে আবার বলা হলো একদম নিখুঁত ভাবে কেটে নেয়া। এই অসামঞ্জস্যগুলো বাদ দিলে অবিনশ্বর ওয়াজ আ গুড রিড। সিকুয়েলের অপেক্ষায় রইলাম।
Profile Image for Peal R.  Partha.
211 reviews13 followers
March 12, 2023
▌❛অবিনশ্বর❜

স্টেডিয়ামে খেলা চলছে, সে খেলা সবাই দেখছে খুব মনোযোগ সহকারে। টানটান উত্তেজনা বিরাজমান। জানে না সেই খেলায় কে হারবে বা কে জিতবে। ওদিকে গ্যালারিতে বসে একদল জু-য়া-ড়ি বাজির পর বাজি ধরে চলেছে, এক দান মেরে কেউ বনে যাচ্ছে লাখপতি আবার কেউ হেরে ডুব দিচ্ছে বিষণ্ণতায়। এভাবে চলছে সবকিছু, কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। হোক সেটা খেলার মাঠে অথবা গ্যালারিতে। মানবজীবনে এমন খেলার উদাহরণ প্রতিটি পদে পদে পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়। সবাই মাঠে নামে জেতার জন্য, কেউ হারতে চায় না—তবুও তাদের হারতে হয়। সেই হারের দায়ভার চাপানো হয় ভাগ্য নামক এক অসহায়, অদেখা বস্তুর ওপর। আদৌ এই ‘ভাগ্য’ নামক কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কি না—তা অজানা। আর এই অজানাকে জানতে মানুষ ডুব দেয় সাগ�� থেকে মহাসাগরে, উড়ে বেড়ায় আকাশ থেকে মহাকাশে। খোঁজার চেষ্টা করে, অজানার রহস্য জানতে। তবুও তারা ব্যর্থ প্রলাপ বকে।

এই ব্যর্থতার গ্লানিতে প্রলেপ দিতে সৃষ্টি হয় কিছু মিথের। যে মিথ ইতিহাসের শুরু থেকে আজ অবধি বহাল তবিয়তে বেঁচেবর্তে আছে। আর সেটাও এমন কিছু মানুষের জন্য—যাদের আমরা ‘গুপ্ত’ বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কন্সপিরেসির কথা উঠলেই আমরা বিশেষ এক সংঘের দিকে আঙুল তুলি, তাদের বিশেষ চিহ্ন নিয়ে নানান জল্পনাকল্পনা করতে থাকি। কোথায় সেই চিহ্ন খুঁজে পেলে, মেনে নিতে থাকি—এসব কিছু সেই সংঘের কর্ম। সাধারণ মানুষ এর কিছুই করতে পারবে না। পারবে না, এই নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বর বানাতে। তবুও আমরা অমরত্বের আশায় থাকি। নাহয় অমরত্ব নিয়ে লেখা হতো না কোনো গল্প। করা হতো না এই ভ্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণা। যাহোক, এসব আকাশকুসুম ভাবনা। তবে সেই ভাবনাটাও আমরা ভাবতে পছন্দ করি। হয় সেটা স্বপ্নে নাহয় দুঃস্বপ্নে!

❛অবিনশ্বর❜ এমন একটি উপন্যাস যেখানে ‘বিশেষ এক লক্ষ্য’ পূরণের গল্প রয়েছে। যেই গল্পের শুরুটা অতীতের কোনো এক বিভীষিকাময় সময়ে। সেই সময় থেকে আজ অবধি এই প্রক্রিয়া চলমান। তেমনই চলমান থাকবে ❛অবিনশ্বর❜ উপন্যাসটিও। অন্তত লেখক শেষাংশে গিয়ে এমনই একটি আশা দেখিয়েছেন।

উপন্যাসের শুরুটা নিয়ে বলতে গেলে, অন্তরাত্মা খাঁচা ছেড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। তবে সেটা শুধুমাত্র দুর্বল হৃদয়ের পাঠকদের জন্য প্রযোজ্য। র ক্তা র ক্তি’র দৃশ্য যদি সহ্য করার ক্ষমতা না থাকে, তবে গল্পের শুরুতে সতর্ক করে দেওয়া একজন সচেতন পাঠক হিসেবে আমার কর্তব্য। কারণ শুরুটা এমনই। একেবারে নৃশংস কর্মকাণ্ড দিয়ে ভরতি। যদিও ইদানীং যেই কাহিনি পড়ছি—সেখানে বিভৎস সব কাণ্ডকারখানার বর্ণনা পড়তে পড়তে এসবে অভ্যস্ত বনে যাচ্ছি। তবুও পাঠক হিসেবে যদি আলাদা এক তৃপ্ততা পেতে চান—তবে এই উপন্যাস আপনার জন্য। জিহ্বায় স্বাদ না পাওয়া রোগীকে যেমন এটা-ওটার নানান টোটকা দেওয়া হয়, একজন পাঠক হিসেবে আরেকজন পাঠককে মস্তিষ্কে স্বাদের ভিন্ন ছোঁয়া পেয়ে উক্ত বইটি পড়ার জন্য বলতে হয়।

গল্পটি এগিয়েছে দু’হাতে দুই চা-পা-তি ধরা এক কিশোর বালককে কেন্দ্র করে। যে মাংস কাটা কসাইয়ের মতো করে টপাটপ ল্যাতা বাচ্চাদের মুণ্ডু ধর থেকে অবলীলায় নামিয়ে দিচ্ছে। যে গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে, গ্রামটার নাম—শিবপুর। বান্দরবানে এই কাল্পনিক গ্রাম অবস্থিত। এখানে জায়গা অনুযায়ী গ্রামের নামটায় বন্য-বন্য অনুভূতিটা কিছুটা মিসিং মনে হয়েছে। যাহোক, এই কাহিনি যখন ঘটেছে তখন ক্যালেন্ডারে ’৯০ সাল চলছে। ওই ঘটনার ৩২ বছর পর মূল ঘটনার শুরু। চরিত্র পরিচিতির মাধ্যমে গল্পটা এগিয়ে যেতে থাকে। আর এখানে প্রশংসা করতে হয় লেখককের চরিত্রায়নে। বেশ গোছানো। পাঠক গল্পের চরিত্রগুলোর সাথে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন।

উপন্যাসের মূল প্রোটাগনিস্ট কে বা কাকে বেছে নিবেন, সেক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করতে গেলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। লেখকের ছোটো গল্প যারা ইতোমধ্যে পড়েছেন—তারা জানেন, টুইস্টের কমতি তিনি কখনও অপূরণীয় রাখেননি। আমার বিশ্বাস, আগামীতে রাখবেন না। এই উপন্যাসেও ‘টুইস্ট পাগলা’ পাঠকদের জন্য জবরদস্ত টুইস্ট রেখেছেন তিনি। যেন গল্পের শেষে টুইস্ট খেয়ে, আনন্দে বইটি বন্ধ করে ঋদ্ধ হতে পারেন।

তবে বিচক্ষণ পাঠকদের জন্য কিছু নেই? মানে ‘গল্পের গোরু ঠিকঠাক আছে তো’ টাইপ চিন্তাধারা মাথায় এলে এখনই থামুন। প্রথমত বইটি সুপারন্যাচারাল জনরার অস্তিত্ব বহন করে চলে। এখানে নানান ভুগিচুগি হতে পারে। তবে, এই গল্পে লেখক ‘আকাশ থেকে কিছু আর পাতাল থেকে কিছু’ এনে জোড়াতালি মেরে দেননি। দক্ষ হাতে, দক্ষতার সহিত তিনি পুরো গল্পটা বুনন করেছেন। কোথায় কী রাখবেন, আর সেটার ব্যবহার কীভাবে করবেন—এর পেছনে ‘লজিক’ বিদ্যমান। ‘হরর, ভূত-টূত’ এসবের ক্ষেত্রে লজিক শব্দটা একটু কেমন যেন তাই না? আসলেই। তবে, কোন এক বিখ্যাত লেখক যেন বলেছিলেন—মানুষের আদিম অনুভূতি হলো─ভয়। হ, ডর আরকি। আর ভয়কে জয় করা নিয়ে কত কত গল্প, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন তৈরি হয়েছে; সেসব নিয়ে আর না-ই বা বলি।

❛অবিনশ্বর❜ উপন্যাসে এই ‘ভয়’-কে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখানো হয়েছে। আর সেটা সুপারন্যাচারাল দিকটা ভর করে। শুধু তা-ই নয়, এখানে চরিত্রদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে পরিমিত আলোচনাও রয়েছে। এই বিষয়ে আমরা কমবেশি অনেক বইতে পড়েছি। যে কজগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো সাধারণ হলেও—ভিন্নতার ব্যাপারে চমকানোর মতো বা সেই বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার মতো দুয়েকটি সিনড্রোমের বর্ণনার উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু এই সিনড্রোম গল্পের একটি চরিত্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত—তাই এই নিয়ে আলোচনা করছি না। যদি ভেবে থাকেন, আপনার চিন্তা অনুযায়ী গল্প এখানেই শেষ! তবে ভুল। শেষ থেকেই শুরু হয়, উক্ত উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।

লেখকের সাবলীল লিখনপদ্ধতি বা তরতর করে পড়ে যাওয়ার লেখার ধাঁচ─আপনাকে পুরো উপন্যাস পড়ার ক্ষেত্রে সুখানুভূতি দিবে। সংলাপে ভালোই বাংলিশের ব্যবহার রয়েছে। গল্পের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ঠিকঠাক। কিছু কিছু জায়গায় সব চরিত্রদের কথোপকথন একইরকম মনে হচ্ছিল। বিশেষ করে পুরুষ চরিত্রগুলোর। এই দিকে আরেকটু সতর্ক থাকার দরকার ছিল। সংলাপের কিছু বাক্যে, ডাবল মিনিং চলে এসেছে। অর্থাৎ যে শব্দটা বাংলায় বললে হয়, সেটাকে বাংলার পর আবার ইংরেজিতে লেখা হয়েছে। তবে এই সমস্যা হাতে গোনা কয়েকটা বাক্যে। বিশেষ করে ‘রেশাদ’ চরিত্রের কথোপকথনে এই ঝামেলা তৈরি হয়েছে। তাই অত ভ্রু কুঁচকানোর কিছু নেই। বাদবাকি সবকিছু আমার ভালোই লেগেছে।

উপন্যাসটি কেন পড়বেন, এই নিয়ে লোমহর্ষক বা রোমাঞ্চকর কিছু বলে টায়ারে (পাঠককে) পাম্প দিতে ইন্টারেস্ট নই। লেখক গল্পটিতে মানুষের অতৃপ্ত বাসনা আর ক্ষমতার পৈশাচিক দিকটা উন্মুক্ত করতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন, সেই আদিম অনুভূতির কুৎসিত দিকটি। হয়তো এই উপন্যাসটি আগামীতে ট্রিলজি বা সিরিজের রূপান্তরিত হবে। আর তাতে সময়ও লাগবে বেশ। অথবা চাইলেই, লেখক এই গল্পে সমাপ্তি টেনে ক্ষান্ত দিতে পারেন। বাকিটা পাঠক মস্তিষ্ক যা ভাবার তা-ই ভেবে নিয়ে বসতে পারে। ❛অবিনশ্বর❜ জার্নিটা মিশ্র অনুভূতিতে মোড়ানো। স্বপ্নের ব্যাখা যেমন দেওয়া যায় না, তেমনই এই উপন্যাসের অনুভূতি পুরোপুরি লিখে বুঝানো যায় না। এক এক পাঠককে এক একরকম অনুভূতি দিবে গল্পটি। হয়তো অনেক পাঠক হইহই করে রব তুলবে, এমন গল্প তো আমরা আগেও পড়েছি—তবে নতুনত্ব কী? আমার প্রশ্ন, কোন গল্পে আপনি নতুনত্ব খুঁজে পান? নতুনত্ব না খুঁজে বরং দেখুন—কীভাবে লেখক তার গল্পের গাঁথুনি দিয়েছে, কীভাবে লেখক তার মনস্তত্ত্ব আপনার সাথে ভাগবাঁটোয়ারা করেছে, কীভাবে অজানা এক ভয়কে লেখক আপনার সত্তার সাথে পরিচয় করিয়েছে।

পেজ টার্নার বইটি অনায়াসে বা এক বসায় না হলেও দু’বসায় শেষ করার মতন বই। যারা ক্রমিক খুনের গল্প আর সেই খু-নি-কে ধরার প্রক্রিয়া অর্থাৎ প্রসিডিওরাল কাজকারবার পছন্দ করেন, সেটার দেখাও এই উপন্যাসে পেয়ে যাবেন। এক বইতে যখন এতকিছু পাওয়া যাচ্ছে, সেটা ভালো না হয়ে উপায় নেই। তার ওপর যে সুতা লেখক শুরু থেকে ছেড়েছেন, সেটা গুটিয়েও নিয়েছেন গল্প শেষে। তুলে নিয়েছেন নতুন এক সুতার বান্ডিল। হয় তা আগামীতে ছাড়বেন, নাহয় হাতে রেখে ভাবনায় ডুবে যাবেন।

লেখকের সাথে দেখা হয়ে ওনার অন্তর্মুখী দিকটা আমার কিছুটা অবলোকন করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি লেখকের অস্তিত্ব গল্পের দুটো চরিত্রের মাঝে খুঁজে পেলাম বল মনে হলো। জানি না, সঠিক কি না। হয়তো লেখক সেটা ভালো বলতে পারব���ন। তবে ছোটো গল্পে হাত পাকানো মানুষটি, বড়ো গল্পেও যে সমান পারদর্শী তা ❛অবিনশ্বর❜ দিয়ে প্রমাণ করেছেন। আগামীতে বড়ো গল্পের মধ্যে উনি নিজের একটা প্রাসাদ তৈরি করবেন বলে বিশ্বাস।

❛অবিনশ্বর❜ বইটির প্রোডাকশন বেশ ভালো হয়েছে। বিশেষ করে বইটি আরাম করে খুলে পড়া যায়। আমার এই দিকটা ঠিকঠাক হলে, আর কিছুর দরকার হয় না। প্রচ্ছদে কিন্তু সজল ভাই পুরো গল্পের হিন্টস দেননি; এটা আরও একটা প্লাস পয়েন্ট। আদতে কাহিনি কোনদিকে যাবে, পাঠক অন্তত প্রচ্ছদ দেখেও আন্দাজ করতে পারবে না। তাই প্রচ্ছদ ক্রিয়েটিভিটিতে ডাবল প্লাস পাওয়ার যোগ্য।

সুপারন্যাচারাল, আরবান ফ্যান্টাসির ছোঁয়া, প্রসিডিওরাল, স্ল্যাশার জনরায় পড়ার মতো যারা মনমতো বই খুঁজে চলেছেন─তারা বইটি কিনে ঠকবেন না। আর হ্যাঁ, ‘পাপপিঞ্জর’, ‘শোণিত উপখ্যান’ টাইপ বইয়ের যারা পাঠক/ফ্যান রয়েছেন—তারা এই ❛অবিনশ্বর❜ একবার চেখে দেখবেন। আর কেমন সেটা জানাতে ভুলবেন না।

দিনশেষে যেমন রাতে নামে, তেমনই আলোর বুক চিড়ে নামে অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে অজানা ভয়, দুর্ভাগ্য, দানবীয় অস্তিত্ব। যে অস্তিত্ব দখল করার চেষ্টা করে নশ্বর এই জগতের সবকিছুকে। সেই অস্তিত্বের ভালো নাম─ঈশ্বর আর বিপরীত নাম─অবিনশ্বর।
──(পিয়েল রায় পার্থ)

হালকা করে একটা বাণী রেখে গেলাম... হাহা...

≣∣≣ বই : অবিনশ্বর•সাজ্জাদ সিয়াম
≣∣≣ জনরা : সুপারন্যাচারাল, সাইকোলজিক্যাল, প্রসিডিওরাল থ্রিলার
≣∣≣ প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২৩
≣∣≣ নামলিপি • প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী
≣∣≣ সম্পাদনা : বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা
≣∣≣ প্রকাশনা : ঋদ্ধ প্রকাশ
≣∣≣ মুদ্রিত মূল্য : ৫০০ টাকা মাত্র
≣∣≣ পৃষ্ঠা : ২২৪
Profile Image for শুভাগত দীপ.
274 reviews47 followers
July 31, 2025
"মৃত্যু মানে কি, মা? মানুষ মরে যাওয়া?"


ঢাকার বুকে শুরু হয়েছে এক ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলারের তাণ্ডব। একের পর এক খুন করে চলেছে সে। ভিক্টিমদের সবাইকেই ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ মেরে শরীর থেকে মাথা কেটে খুন করছে সে। তারপর খণ্ডিত মাথার কপালে এঁকে দিয়ে যাচ্ছে তৃতীয় একটা চোখ। 


সিরিয়াল কিলিংয়ের এই কেসে পুলিশ পড়ে গেলো অথৈ জলে। ভিক্টিমদের কারো সাথে কারো কোন লিংক নেই। না আছে খুনের পেছনে পোক্ত কোন মোটিভ। শুধু একটা জিনিসই কমন। আর তা হলো জবাই করে মাথা আলাদা করে খুন করার বীভৎস ধরণ। পুলিশের চৌকস এসআই রশীদ যেকোন মূল্যে থামাতে চাইলো এই সিরিয়াল কিলারকে। আর এই কাজে সে সাহায্য চাইলো আদ্রিয়ানের কাছে।


আদ্রিয়ান মানুষটা অনেকটা বোহেমিয়ান স্বভাবের। পেশায় স্কুল শিক্ষক এই মানুষটার শখ মানবচরিত্র বিশ্লেষণ  আর সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাখ্যার অযোগ্য সব ঘটনার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করা। এসআই রশীদ যখন আদ্রিয়ানের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে চলা সিরিয়াল কিলিংয়ের কেসটার ব্যাপারে সাহায্য চাইলো, ঠিক তখনই তার সাথে দেখা করতে আসলো কায়সার নামের এক রহস্যময় কিশোর। 


বীভৎস সব দুঃস্বপ্নের জালে আটকা পড়া কিশোর কায়সার সাহায্য চাইলো আদ্রিয়ানের কাছে। আর তাকে সাহায্য কর‍তে গিয়ে আদ্রিয়ান নিজেও আটকা পড়ে গেলো ভয়ানক যন্ত্রণাময় এক স্বাপ্নিক জগতের মাঝে। একদিকে একের পর এক হয়ে চলা পৈশাচিক খুন, অন্যদিকে দ্রুত পেয়ে বসতে থাকা অসুস্থতা মিলে আদ্রিয়ানের অবস্থাও হয়ে উঠলো তথৈবচ। 


বহু বছর আগে রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত এক পাহাড়ি গ্রাম শিবপুরে ঘটে গিয়েছিলো নারকীয় এক ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় ঘটে চলা সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনাগুলোর কি কোন সম্পর্ক আছে তার সাথে? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, রশীদ আর আদ্রিয়ান কি পারবে নরক নেমে আসা ঠেকাতে?


তরুণ লেখক সাজ্জাদ সিয়াম আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন বহুদিন। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে লেখালেখি করছেন তিনি। অনলাইনে তাঁর বেশ কিছু গল্প পড়েছি। 'অবিনশ্বর' তাঁর প্রথম মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস৷ ২০২৩ সালে বইটা যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন থেকেই পড়ার ইচ্ছা ছিলো। অবশেষে পড়তে পারলাম। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার 'অবিনশ্বর'-কে সাজ্জাদ সিয়াম ডার্ক থেকে আরো ডার্কার একটা শেড দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আর সেই চেষ্টাটা বৃথা যায়নি আমার মতে।


প্রচুর ভায়োলেন্স আছে 'অবিনশ্বর' বইটাতে। প্রচুর মানে প্রচুর। কিছু জায়গার বর্ণনা এতোটাই ভায়োলেন্ট যে দুর্বল হৃদয়ের পাঠকরা তো বটেই, সবল হৃদয়ের পাঠকদের শরীরেও কাঁপন ধরিয়ে দেবে। গল্পের প্রয়োজনেই লেখক এই ভায়োলেন্ট সিকোয়েন্স গুলোর অবতারণা করেছেন। তবে অনেকের কাছে এটাকে টু মাচ মনে হলেও তাদেরকে দোষ দেয়া যাবে বলে মনে হয় না আমার।


'অবিনশ্বর'-এর চরিত্রগুলো সম্পর্কে কিছু বলি। আদ্রিয়ান চরিত্রটা রহস্য সন্ধানী এক যুক্তিবাদী মানুষের। ধীরে ধীরে স্মৃতি হারাতে থাকা আদ্রিয়ানকে শুরু থেকেই খুবই ফ্র‍্যাজাইল বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। এসআই রশীদ চরিত্রটার তদন্ত প্রক্রিয়ার মাঝে ছিলো আনাড়িপনা। আর সাজ্জাদ সিয়াম একটা থানাতেই সিরিয়াল কিলিংয়ের কেসগুলোর তদন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন। ব্যাপারটা আরো বৃহৎ পরিসরে দেখাতে পারলে বোধহয় আরো খানিকটা উপভোগ্য হতো 'অবিনশ্বর'। অন্যান্য চরিত্ররা যেমন মীরা, হামিদা বেগম, ইব্রাহিম, সার্জেন্ট নুরূল ঠিকঠাক ছিলো। রহস্যময় স্বভাবের চরিত্র কায়সারকে বেশ ক্রিপি লেগেছে আমার কাছে৷ অবশ্য লেখক চরিত্রটাকে ডেভেলপই করেছেন সেভাবে। তবে এই বইয়ে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র ছিলো রেশাদ। রেশাদের ভেতরকার ভালো মানুষটাকে যে কারো পছন্দ হবে।


এবার 'অবিনশ্বর'-এর কিছু অপ্রাপ্তি নিয়ে বলি। কাহিনিতে একটা সুইসাইডের উল্লেখ আছে। এই ব্যাপারটা প্রোপারলি ক্লিয়ার হয়নি বইয়ের শেষে এসেও। কিছু রিচুয়ালের উল্লেখ আছে, সেই রিচুয়ালগুলোর ব্যাপারেও আরো কিছুটা বিস্তারিত আশা করেছিলাম। হয়তো এই ব্যাপারগুলো সাজ্জাদ সিয়াম 'কৃষ্ণকায়া'-তে খোলাসা করেছেন। ওটাও কখনও পড়ে ফেলবো।


সাজ্জাদ সিয়ামের স্টোরিটেলিং সুন্দর। বাহুল্যবর্জিত হওয়ায় পড়তে বেশ ভালো লেগেছে। কোথাও অতি বর্ণনার দেখা পাইনি। যদিও 'অবিনশ্বর'-এর শুরুতে লেখার ধরণ কিছুটা আনাড়ি মনে হচ্ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ভাবটা কেটেও গেছে। ওভারঅল 'অবিনশ্বর' বেশ উপভোগ্য একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। লেখকের পরবর্তী প্রজেক্টগুলোর জন্য আগ্রহ রইলো।


পরাগ ওয়াহিদের করা প্রচ্ছদটা চমৎকার লেগেছে। আর ঋদ্ধ প্রকাশের প্রোডাকশনে আমি স্যাটিসফায়েড। 


ব্যক্তিগত রেটিং: ৩.৫/৫


বই: অবিনশ্বর 

লেখক: সাজ্জাদ সিয়াম

প্রকাশক: ঋদ্ধ প্রকাশ

প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ঘরানা: সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার 

প্রচ্ছদ: পরাগ ওয়াহিদ

পৃষ্ঠা: ২২৪

মুদ্রিত মূল্য: ৫০০ টাকা

ফরম্যাট: হার্ডকভার


(৩১ জুলাই, ২০২৫; নাটোর)
Profile Image for فَرَح.
188 reviews2 followers
February 20, 2025
প্রথম বই হিসেবে বলা যায় খুবই ভালো। শেষ পর্যন্ত দৌড়ে গেলাম। কিন্তু কী হইলো এটা!
কাহিনি মাঝে অনেক গ্যাপ রয়ে গেসে অবশ্য।
Profile Image for Farjana Rahman.
51 reviews4 followers
April 17, 2025
বই: অবিনশ্বর
লেখক: সাজ্জাদ সিয়াম
প্রকাশক: ঋদ্ধ প্রকাশ
প্রকাশকাল: ফ্রেব্রয়ারি ২০২৫ (প্রথম প্রকাশ: ২০২৩)
প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী
সম্পাদনা: বীক্ষন সম্পাদনা সংস্থা
মূল্য: ৫০০ টাকা।

নারকীয় দুঃস্বপ্নের ষ্টং-টোনে শুরু সাজ্জাদ সিয়ামের "অবিনশ্বর"। শেষ বুদ্ধিদীপ্ত এবং দারুন এক সমাপ্তিতে। অবশ্য সেই বুদ্ধিদীপ্ততা শুধু যে শেষে উপস্থিত তা না, বরং বইয়ের পুরোটা জুড়েই তার ছাপ টের পাবেন অনেকবারই। এখন এই শুরু আর সমাপ্তির মাঝে যা বলার থাকে সেটা অলরেডি অনেকে দারুন ভাবেই তুলে ধরেছেন। প্রায় ২ বছর পড়ে পড়লাম আমি। নতুন কিছু যোগ করার জায়গা অথবা জ্ঞান নেই আমার। খুব বেশি হলে একই কথার রিপিট হতে পারে। উপরন্তু, এই জনরা আমার পছন্দের লিস্টেই নেই। টু বি অনেষ্ট, the chainsaw massacre, Hostel, অথবা SAW (প্রথম পার্টটা বাদে) মুভিগুলো দেখে এতটাই মেন্টালি ডিষ্টার্বড ছিলাম যে স্ল্যাশার টাইপ কিছু আমার অপন্দের লিষ্টেই।

তবুও সাজ্জাদ সিয়াম ভাইয়ের ছোট-গল্পগুলো পড়ে মনে হয়েছে - লেটস গিভ এ ট্রাই। আশাহত হইনি। দারুন লেগেছে। বিশেষ করে ১ জন বা ২ জনকে শেষে মেইন ভিলেন প্রেজেন্ট না করে বইয়ের মোটামুটি এক-তৃতীয়ংশ ক্যারেক্টারকেই সেই আওতায় ফেলে দেয়ার উপস্থাপনটা দুর্দান্ত ভাবেই সম্পন্ন করেছেন। তবে ছোট-গল্পের যে আবহ অথবা আঁটসাঁট ভাবে থাকে, স্বাভাবিকভাবেই বড় একটা লেখায় সেই কম্প্যাক্টনেস অনুপস্থিত থাকবে। হয়েছেও তাই। যাই হোক - দেখা যাক টু-দ্য-পয়েন্ট কিছু কথা বলে ফেলি। লেখক নিজেই বলেছেন কোথাও, তার বইয়ের একটাই লক্ষ্য ডার্কনেস আর ভায়োলেন্স – অন্যকিছু না। (হুবহু মনে নেই)।

সাজ্জাদ সিয়াম ছোটগল্পের রূপক (অথবা সেটা পাঠকের মন মতো ডিকোড করার স্পেস থাকে) আমার পছন্দের বিধায় অবিনশ্বর পড়া। দেখাও ছিল, ছোটগল্পের সেই আঁটসাঁট বুননটা উপন্যাসেও কতটা আপহোল্ড করে। যদিও উপন্যাসের ব্যপ্তি বৃহৎ হওয়াতে সেটা থাকার সম্ভাবনাও কমে যায়। হয়েছেও তাই।

প্রথমেই নৃশংসতা এবং সহিংসতার মিশ্রনে যে কাহিনি শুরু এবং তার পর থেকে ছায়াময়ী অলিগলিতে বিচরন গল্পের বিভিন্ন চরিত্র ধরে। শুরুতেই সেই নৃশংসতার ধারককে লাইমলাইটে এনে এবং পরবর্তীতে গল্পে তার ছায়াময়ী উপস্থিতির কারনে লেখক খুব সহজেই আয়না তুলে ধরে দর্শকের মুখের সামনে। যার ফলাফল একটাই - আমরা শুরুর সেই চরিত্র (কাওসার) কেউ মূল কালপ্রিট এর ধারনা নিয়ে এগিয়ে যাই। ফলতঃ হুট করে দেখার মানসিকতায় বিভ্রান্ত হতে হয় পাঠককে। লেখক খুব সহজে বাকি এন্টি ক্যারেকটার গুলো সেই ছায়ময়ী পথের ছায়ার আড়ালে সহজেই লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হন।

মজার বিষয় যে একটা আধুনিক মিথোলজিকাল টোনের পথ ধরে আমার যতটাই অগ্রসর হই, মনে হয় তার কিছুটা সত্য, কিছুটা অলীক। মিথোলজিকাল টোনের আবহ, বিকল্প অস্তিত্ব নিয়ে যে গল্প, তাতে পাঠক বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো খুঁজতে গেলে হতাশ হবেন। লেখক সেসবের পাঁশ ঘেসেও হাঁটেননি। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জটিলতা নিয়ে কাটাছেঁড়ার স্বভাবসুলভ লেখকের মন নিয়েও তিনি এই উপন্যাসে কোনপ্রকার আভাসেরও ছবি আঁকেননি। কিন্তু যেই বিকল্প অস্তিত্ব অথবা গল্পের উপাদান তার মাঝেও রহস্য সমাধানের পথে এবং উপন্যাসের স্থান-কাল নির্নয়ে লেখকে নিয়ে এসেছেন রিয়ালিজম। এই স্থান অথবা রহস্য সমাধানের যে প্রসেস তা একদম অলীক না, অবাস্তব না। বরং রিয়ালিজম ঘেঁসা, যা আমাদের চেনা।

উপন্যাসের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টের ভালো হয়েছে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন চরিত্র আছে। তাই উপন্যাসের কথক হিসাবে শুধু আদ্রিয়ান না, বরং তার পাশাপাশি রশীদ বা আরও অনেকেই কথকের জায়গাটায় নিজের চরিত্রটুকু বেশ ভালোভাবেই ফুঁটিয়ে তুলেছেন। বরং গল্পের কথক হিসাবে শুধু আদ্রিয়ানকে রাখলে গল্পটা একতরফা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। সেই সম্ভাবনাটুকু নাকচ করে দিয়েছে অল্টারনেটিভ উপস্থাপনা। বরং আমার পড়ার সময় যেটুকু খেয়াল করেছি, একমূখী কথকের পথ ধরে হাঁটলে উপন্যাসের যে ক্রাইসিস তার মূলে পৌছাতে বেশ ঝামেলই হতো।

স্ল্যাশার অথবা হরর এরূপ পোষাকি নামে আমি গেলাম না। গল্পে আদ্রিয়ানের ক্রাইসিস বা যে রোগ তার মেডিকেল টার্মেও আলোচনায় গেলাম না। তার জন্যে আগ্রহী পাঠক শুরুতে DRC অথবা এই রিলেটেড Dissociative Symptoms গুলো যদি একটু আগাম ধারনা নিয়ে নেন, তাহলে আদ্রিয়ানের ক্রাইসিসগুলো ডিল করতে আরও বেশি ইজি হবে। একি সাথে লেখক কিভাবে সেই Dissociative Symptoms গুলো ধীরে ধীরে চরিত্রটার মধ্যে বপন করেছেন সেই মানচিত্রটাও অনেকটা স্পষ্টভাবে ধরা দেবে পাঠকের কাছে। আদ্রিয়ানে মধ্যে স্লোলি যেসব "সাইকোটিক বিহ্যাভিয়র" সিমটমগুলো লেখক সময় নিয়ে উপন্যাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত একটার পর একটা ইমপ্লিমেন্ট করে গেছেন, তাতে DCR এবং BPD (Borderline personality disorder) ও তার পারভিসিভ প্যাটার্নের ব্যাপারগুলো বাস্তব ছাঁচে ফেলা হয়েছে। ফলতঃ আদ্রিয়ারে ইস্যুটা মোর কনভিনসিং হয়ে ওঠে।

এখানে বলে নেয়া ভালো, আদ্রিয়ান চরিত্রটায় একটা বিখ্যাত চরিত্রের হালকা নড দৃশ্যমান। পাশাপাশি scarecrow (ব্যাটম্যান বিগিনস:মুভি) এরও হালকা নড আছে। এর মানে এটা না যে কপি, বরং সফলভাবে ইম্লিমেন্ট।
যে কোন লেখক মোটাদাগে অভিজ্ঞতা আর মনোজগতের প্রাধান্যে তার গল্পে জাল বুনে। সাজ্জাদ সিয়ামের "অবিনশ্বর" বইয়ে দ্বিতীয়টি মানে মনোজগতের প্রকরণ স্পষ্ট, কিন্তু কাহিনির কারনেই সেখানে অভিজ্ঞতার কিছু থাকার কথা না। সেটাকে রিপ্লেস করে কল্পনা। তবে উপরে যেটা বলেছিলাম, বিকল্প (অন্যরকম অর্থে) একটা প্লটের মাঝে রহস্য-সমাধানের এবং স্থান-কাল নির্বাচনে তিনি যেহেতু রিয়েলিজমের পথে হেঁটেছেন, তাই সেখানে অভিজ্ঞতা এবং কিছু কিছু সূক্ষ্ণ অবজারবেশনের প্রেজেনটেশন দেখা যায়। যদিও মোটাদাগে বলতে গেলে পাঠকের চোখে সেটা আলাদা দীপ্তি নিয়ে ধরা দেয় না।

অবিনশ্বরের নামলিপি (গাঢ় লাল) এবং উপন্যাসের একদম প্রথম সহিংসতায় একবার ফিরে যাই। লেখক গাঢ় লাল র/ক্ত এবং সেটাকে একটু সিম্যানটিক্যালি বাড়িয়ে পুরো উপন্যাস ধরেই "থকথকে জমাট বাঁধা র/ক্ত/ অথবা থকথকে জমাট বাঁধা লাল" (এটুকু মেমরী থেকে নেয়া, একজ্যাক্ট শব্দগুলো নোট করে নেইনি) আবহে একধরনের ভয় সৃষ্টি করেছেন। প্রথমটা মানে শুধু "লাল র/ক্ত" সিমবলিক অর্থে নিয়ে, সেটাকে নাটকীয়তা, সহিংসতা, ভয়, ক্রোধ, অথবা যে প্রবল এগ্যেশন তা বেশ সফল এবং সুস্পষ্টভাবেই ফুটিয়েছেন। একটু এক্সটেন্ডেড ভার্সনে যে জমাট বাঁধা থকথকে গাঢ় খয়েরির উপস্থিতি আমরা দেখি, সেখানে একটা সেমিওটিক বিশ্লেষণও দেয়া যায়। প্রত্যেকটা রঙেরই আলাদ কিছু মিনিং থাকে।

হয়তো পাঠক খেয়াল করে দেখবেন, উল্লেখযোগ্যভাবে সেভাবে আর কোন রঙের প্রাধান্য পায়নি উপন্যাসে (একদম শেষ অধ্যায়টুকু বাদ দিয়ে)। শেষটায় যেয়ে আমরা দেখি কালোর প্রেজেন্স। শুরুর রঙের ব্যাপারটা তখন পুরো উপন্যাসে দাঁড়িয়ে যায় সিম্বল হিসাবে। কালো রঙটা হয়ে ওঠে তখন আইকন হুট করেই। যেটার কনোটেটিভ মিনিং হয়তো তার পরবর্তী পার্ট "কৃষ্ণকায়া" তে দেখা যাবে। শিওর না।

এই সিম্বল ও আইকন হয়ে ওঠা বা রঙের ব্যাপারটা আলাদাভাবেও ডিকোড করা যায়। উপন্যাসটা শূরু থেকে একটা জায়গা পর্যন্ত (শেষটার আগ পর্যন্ত) সহিংসতা, র/ক্তপাত এবং বিভৎসতার মধ্যে আটকে ছিল। পূর্বেই বলেছি এ্র্রগ্রেশনকে যেন রিপ্রিজেন্ট করে। সহিংসতা এবং উত্তেজনাকে সিমবোলাইজ করে। ঠিক ওই বৃত্তেই যখন কাহিনিটা আটকে থাকে, "লাল" তখন সেই ট্রাফিক স্যিগনালেরর লালের মতোন "থামতে হয়" যেন। একই জায়গায় (কালার বা র/ক্ত, লাল, কালচে খয়েরি পারসপেক্টিভে) সে্ টোনটা আটকে আছে। এবং ধীরে ধীরে সেই রঙটা কালোর দিকে বদলে যায়। ডার্ক-টোনের যে মুভিগুলো (batman, sincity, daredevil, 300 কয়েকটা উদাহরন মাত্র) তাতে রঙের এবং রেড বলুন বা ব্ল্যাক এবং তার নানা শেডের সিগনিফিকেন্ট ব্যবহার দর্শক দেখতে পারবেন। খুব গুরুত্বপূর্ন হয়েই দাঁড়ায়। এটা সত্যি যে মুভির বেলায় ক্যামরার কারনে বা সিনেমাটোগ্রাফারের বদন্যতায় সেটা আরও দুর্দান্তভাবে পেজেন্ট করা একজন লেখকের চেয়ে বা শব্দে অংংকনের থেকে আরও বেশি জীবন্ত। "অবিনশ্বর" এর ভিসুয়াল ন্যারেটিভের মাঠে যদি পাঠক কল্পনার চোখে তাকান, তাহলে সেই "কালার" শেডগুলো - র/ক্ত লাল, ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে খয়েরি বা কালচে লাল এবং শেষে কালো - রঙের এই ব্যাপরটাকেই "লিট মোটিফ" হিসাবে বেছে নেবার প্রচুর সম্ভাবনা আছে।

বিপদ বা উত্তেজনার সময়ে যেমন মানব শরীরে ছড়িয়ে যায় অ্যাড্রেনালিন, ঠিক লালের নানা শেড যেন উপন্যাসের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে গল্পের ভাঁজে ভাঁজে এবং শব্দের শরীরে ছড়িয়ে গেছে। উপন্যাসের শেষে "কালো" এর সবল উপস্থিতি আবার "লাল" টাকে ফেলে দেয় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে। পাঠক কি "লাল" কে ভয় এর সিম্বলেও অনুবাদ করবে নাকি সেটা সহিংসতার প্রতীকেই সীমাবদ্ধ? যেখানে স্পষ্টত শেষে "কালো"র আগ্রাসন হয়ে গেছে ডার্ক এবং ভয়ের সিম্বল।
উপন্যাসে প্রাথমিক সহিংসতার পরে লেখক ধীর গতিতে পুরো গল্পে রোপন করে গেছেন উত্তেজনা। জায়গায় জায়গায় রেখে গেছেন নানাবিধ সূত্র। শেষে যেয়ে দারুন ভাবে সেগুলো মিলিয়েছেন। তথাপি শেষটা আমার কাছে একটু রাশড লেগেছে। লেখকের কল্পনার সমাপ্তি হয়ত এটাই ছিল। তবে সেই মজলিশি আবহে মানে শেষ রঙমঞ্চে সকলের উপস্থিতিতে রহস্য উন্মোচনের পথে হেঁটেছেন তিনি। আগের গোয়েন্দা-কাহিনির সমাপ্তি অথবা বাংলা সিনেমার শেষটার মতো। সেই কারনেই আমার কাছে রাশড লেগেছে আরো। সমাপ্তির প্রসেসটায় আরও একটু ভিন্নতা কি আনা যেত? যেভাবে ১/২ জন কালপ্রিট প্রেজেন্ট না করে উপন্যাসের অলমোস্ট এক-তৃতিয়ংশকে সেই বৃত্তে ফেলার(এই পেজেন্টেশেনটা ছিল দুর্দান্ত, যেটা আশা করিনি) দৃশ্য - সেটার সাথে ম্যাচ করে শেষটাও ডিফারেন্ট কিছু সম্ভব হতো কিনা কে জানে। তবে অসম্ভব তো না।

বাংলা সিনেমা কথাটা ব্যবহার করেছি। সেটার ব্যাপারে একটু বলি। খু/ন অথবা রিচুয়াল যে প্রসেস - প্রথম থেকেই পাঠক দেখবে, ব্যাপারটায় কালক্ষেপণ নেই। খু/নগুলো বাগে পাওয়ার সাথে সাথে এবং আক্রমন মুহুর্তেই। সেখানে এত সময় থাকা স্বত্তেও রেশাদ মাহবুব কে হাতে পেয়েও সেই মজলিশি আবহ তৈরীর জন্যে বাংলা সিনেমা টাইপ শেষ দৃশ্যের আয়োজন খাপ খায় না। সবাইকে এক রঙমঞ্চে এনে সবকিছুর উন্মেচন করার প্রক্রিয়ায় হয়তো সেই অযাচিত "কালক্ষেপণ"। শেষটায় সেটা "অযাচিত" হয়ে থাকে। লেখকের নিজস্ব আইডেন্টিটি হয়ে ওঠে না। ক্লাইম্যাক্সে ওভারহেড বা সুপিরিয়র কোন সূচনা আমরা পাইনা।

উপন্যাসে ব্রিদিং স্পেস আমার কাছে (একান্তব্যক্তিগত অভিমত) মীরার প্রাধন নারী চরিত্র না হয়ে ওঠা। "অবিনশ্বর" উপন্যাসের যে ডার্ক টোনে তাতে মীরা এবং রেশাদ মাহমুদের ক্যামিষ্ট্রির যদি আরও একটু বর্ধিত কলেবরে উঠে আসত, সেটা পুরো উপন্যাসে "গলায় কাঁটা" হয়ে বিঁধে থাকতো। লেখক জায়গা মতোই এর রেশ টেনে ধরেছেন এবং আনুষঙ্গিক হয়ে ওঠা থেকে লাগাম টেনে ধরেছেন।

সাজ্জাদ সিয়ামের "অবিনশ্বর" ঋদ্ধ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ২০২৫ বইমেলায়। যদিও ২০২৩ এর বই। নতুন করে প্রিন্ট। বইয়ের শেষটায় এর সিক্যুয়েলের ব্যাপারে তো ক্লিয়ার ইন্ডিকেশন আছে। সেসব বিষয়ে কিছু বলার নেই। ইতোমধ্যে সেটাও বাজারে প্রকাশিত। আমি বরং ২ বছর লেটে বইটা পড়লাম। লেখকের ন্যারেশন দারুন, সেটা তার ছোটগল্পের থেকেই ধারনা নেয়া যাবে। কয়েকটি জনরায় ফেলা গেলেও এই দুর্দান্ত সক্ষমতার কারনে জনরাগুলো অনায়াসে ওভারল্যাপ করে। তাই আমি শুরুতেই পোষাকি কোন নামে যাইনি। এখনও সেটায় গেলাম না।

শেষ কথায় আসি। সাজ্জাদ সিয়ামের "অবিনশ্বর" দারুন উপভোগ্য সন্দেহ নেই। এই জনরা আমার প্রিয় না হলেও দারুনভাবে উপভোগ করেছি লেখকের ন্যারেশন, গল্পের টুইষ্ট, দানা বেঁধে ওঠা রহস্য এবং ছেঁড়া সুতোগুলো শেষটায় জোড় লাগানোর মুন্সিয়ানা দেখে। যারা রহস্য বা টুইষ্টের অনুরাগী - তাদের জন্যে দারুন কিছু অপেক্ষা করছে। (যারা এখনও পড়েনি তাদের জন্যে)। সজল চৌধুরীর প্রচ্ছদ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বিশেষণের রিপিটেশনই হবে। বীক্ষন সম্পাদনা সংস্থা দুর্দান্ত কাজ করেছেন। আমি খুব মনোযোগী পাঠক বলে মনে করি ( দুর্দান্ত বলছি না)। তথাপি আমার চোখে খুব একটা ভুল ধরাই পড়েনি। ঋদ্ধ প্রকাশের প্রোডাকশনও কোন প্রকার হতাশার সৃষ্টি করবে না বলেই আশা করি।
আমাদের যাপিত জীবনটাই নানা রকম বৈচিত্রে ভরা। হোক সেটা এমনি লাইফ অথবা যারা জব-লাইফে আছেন তার আরও বেশি রিলেট করতে পারবেন। বিজি দিনগুলো যেমন আতঙ্ক নিয়ে আসে, ছুটির প্রারম্ভের দিনগুলো হয়ে ওঠে বনলতা সেন। রবিবার থেকে যদি হয়ে ওঠে হাড়ভাঙা খাটুনি, তো বৃহস্পতিবার রাত হয়ে ওঠে প্যাশন। সেই অবসরে উপলব্ধির অবকাশটুকু আমাদের এনে দেয় নানা রকম বৈচিত্র। সাজ্জাদ সিয়ামের "অবিনশ্বর"ও রহস্য আর রোমাঞ্চের নানা বৈচিত্র চায়ের কাপ থেকে ওঠা ধোঁয়ার মতো সুবাস ছড়ায়।

তবে "ভয়" বলে যে ব্যাপারটা আছে বা বলা হয়ে থাকে, সেটা বোধকরি একটা বিশেষ শ্রেনীর পাঠকের জন্যে প্রযোজ্য। আমরা যারা এই ধরনেরর অজস্র মুভি দেখেছি বা কিছু পড়েছি, তাদের কাছে ভয়য়ের বদলে সহিংসতার কারনে একধরনের প্রবল অস্বস্তি হয়। মন বিট্রে করে সেই র/ক্তারক্তির কারনে অথবা বিভৎসতার সামনে। সেটা ভয় না। "ভয়" ব্যাপারটা হয়ত আরও একটু কম-বয়েসী বা নতুন পাঠকদের জন্যে, অথবা আরও একটু ক্লিয়ার করে বললে একটা নির্দিস্ট "টার্গেট অডিয়েন্সের" জন্যে প্রযোজ্য।

তবে উপভোগ্য সবার জন্যেই, যারা থ্রিলিং কিছু পছন্দ করেন।
1 review
March 8, 2023
Mind Boggling Twist at the end! All the other shortcomings can be overlooked by the unbelievably fast and exhilarating climax and plot twist. Satisfying and waiting for the next chapter .
Profile Image for Fahad Hridoy.
6 reviews3 followers
July 10, 2025
অবিনশ্বর ও কৃষ্ণকায়া : থ্রিলার নাকি হরর?

সাজ্জাদ সিয়াম নামটা আমি প্রথম শুনেছিলাম “অবিনশ্বর” বইটা নিয়ে লোকজন অনলাইনে হইচই শুরু করার পর। ভাবছিলাম নতুন লেখক, হয়তো সেই পুরনো থ্রিলার ঘরানার জিনিস হবে। কিন্তু আইডিয়া পাওয়ার জন্য শুরুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাজ্জাদ সিয়ামের লেখা ছোটগল্পগুলো পড়া শুরু করে বুঝলাম, না ব্রো, এই লোক ঠিক “পুরনো ধাঁচের” কিছু লেখে না। বরং উদ্ভট ক্রিপি বিষয় আশয়, রহস্য, কাল্ট, শেষ মুহূর্তের টুইস্টের মাঝে দিয়ে গল্পের জনরাই পরিবর্তন করে ফেলা— এসব এই লোকের জন্য নিত্যদিনের কাজ। আর এমন এক ব্যক্তির লেখা স্ল্যাশার হরর থ্রিলার ইত্যাদির মিক্সচার সিরিজ হাইপ তোলাটাই স্বাভাবিক তা বুঝে গিয়েছিলাম তখনি।

পরবর্তীতে একসাথে সিরিজের দুইটা বইই নেয়ার ইচ্ছে থাকলেও বিভিন্ন কারণে সম্ভব হচ্ছিলো না। তবে গত মাসে যখন বই দুইটা অবশেষে হাতে আসলো তখন আর দেরি না করে পড়তে বসে গিয়েছিলাম অবিনশ্বর। রক্তের নেশায় বুঁদ এক সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাবে তটস্থ শহরের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর এসআই রশীদের সাথে স্কুল টিচার আদ্রিয়ানের অভিযান রক্তহিম করা সাইকোলজিক্যাল স্ল্যাশার থ্রিলারের স্বাদ দেবে যে কোনো পাঠককে। স্ল্যাশার থ্রিলার বিষয়টা যদিও বাংলা ফিকশনের জগতে খুব অপ্রচলিত সংযোজন। মনোয়ারুল ইসলামের গল্পে কিছু���া থাকলেও আর কেউ তেমন কাটাকুটি বা ভায়োলেন্সে ভরপুর গল্প লিখেছেন বলে চোখে পড়েনি। সাজ্জাদ সিয়াম অবিনশ্বর বইয়ের মাধ্যমে সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছেন বলেই মনে হবে অবশ্য। মাঝে গল্পের বিভিন্ন অংশে অনেক প্রশ্ন মাথায় প্রশ্ন আসলেও বইয়ের শেষ নাগাদ কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আর বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে সিরিজের পরের বইগুলোতে। সব মিলিয়ে পাঠককে একেবারে শেষ ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত ঘোরের মাঝে রাখবে "অবিনশ্বর", বিশেষ করে কে আসল খুনী তা এতটাই আনপ্রেডিক্টেবল যে ক্লাইম্যাক্সে এসে বেশিরভাগ পাঠকই তব্দা খেয়ে যাবেন।

তবে অবিনশ্বর শেষ করে যখন "কৃষ্ণকায়া" পড়া শুরু করলাম, তখন কিছুটা ঝামেলা লেগে গেলো। একবার মনে হলো—আরে, এই যে হালকা “ডার্ক” সিরিজ এর গন্ধ পাইতেসি, এই যে টাইমলাইন গুলায় গোল পাকাচ্ছে, এটা তো বাংলা থ্রিলারে আগে খুব একটা পাইনি! এরপরে মনে হলো, একবার এই সময়ে এই চরিত্রের কথা হচ্ছে আবার পরের চ্যাপ্টারেই অন্য চরিত্র নিয়ে ভিন্ন একটা সময়ের কথা হচ্ছে, আবার তার পরের চ্যাপ্টারে একই চরিত্র অতীত বা ভবিষ্যতের অন্য সময়ে দৌড়াচ্ছে, এই কাহিনী তো তাল ঠিক রাখছে না। মাঝে মাঝেই অসংখ্য লুপহোল তৈরি হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে যার উত্তর বইতে পরবর্তীতে আসলেও আবার নতুন প্রশ্নের উদ্ভব ঘটাচ্ছে। সব মিলিয়ে আগের বই থেকে শুরু করে কৃষ্ণকায়া পর্যন্ত বইয়ের গল্প সাধারণ থ্রিলার হিসেবে শুরু হয়ে স্ল্যাশার সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, মিস্ট্রি ও হরর হয়ে শেষ পর্যন্ত সুপারন্যাচারাল ও ফ্যান্টাসির হালকা ছিটেফোঁটা সম্পন্ন এমন এক মিশ্র জনরার ইউনিভার্স তৈরি করেছে যে পাঠকের মাথায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে আগে এটাই আসবে, "এই লেখক মাথায় আসলে কী নিয়ে ঘুরে?"

মজার বিষয় হলো সমগ্র এই সাসপেন্স স্টোরির মাঝে মানবজাতির নিজস্ব এক্সিস্ট্যান্স, মানবজাতির এই পৃথিবীতে আগমনের হেতু, কীসের প্রেরণায় মানুষ সারভাইভ করছে ও জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে কী থাকা উচিত বা কী অর্জন করা উচিত মানবজাতির আল্টিমেট গোল হিসেবে সেই সংক্রান্ত ভালো কিছু ফিলসফি আছে। মিস্ট্রি থ্রিলার, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার এসব সাব জনরায় ফিলসফির টাচ থাকলেও হরর থ্রিলার বা ভায়োলেন্স সম্পন্ন সাসপেন্স সুপারন্যাচারাল থ্রিলারের মাঝে যে দর্শন ফুটিয়ে তোলা সম্ভব তা বাংলা সাহিত্যে মনে হয় এর আগে কেউ এভাবে ইমাজিন করেন নাই।

সোজা কথায়, অবিনশ্বর ও কৃষ্ণকায়া বই দুইটি একসাথে মিলে আমার অভিজ্ঞতাটি হয়েছে এমন- যার মাঝে ভয় আছে, সাসপেন্স আছে, রহস্য আছে, অবাক হওয়ার বিষয় আছে, গা গুলানো ক্রিপি ভায়োলেন্স আছে আর সবকিছুর মাঝে লুকিয়ে আছে কিছু দার্শনিক প্রশ্ন।

অবিনশ্বর এর শুরুটা হয় ভয়ঙ্করভাবে—একটা শহর, একের পর এক মাথা কাটা লাশ, আর পুলিশের প্রায় কেঁদে পড়ার দশা- এই রকম সাইকো নাকি আগে দেখেনি তারা। এসআই রশীদের ভাষায় রক্তচোষা সাইকো।

এইদিকে আমাদের গল্পের শুরুতে দেখানো প্রধান চরিত্র আদ্রিয়ান, সে একেবারে বিপরীত মেরুর লোক। একটা স্কুলের ম্যাথ টিচার, ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভোগে, মানুষ এড়িয়ে চলে, কেন যেন লেখক সাজ্জাদ সিয়াম এই চরিত্রে নিজেকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হলো। তো ঘটনাক্রমে সে জড়িয়ে পড়ে এই খুনের রহস্য সমাধানে, আর এখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায়।

তবে এটা শুধুই সামান্য সিরিয়াল কিলিং না, এখানে আছে এক গোপন কাল্ট, যারা অমর হতে চায়। তাদের পেছনে আছে এক অদ্ভুত অতিপ্রাকৃত শক্তি যে হয়তো দেবে তাদের অমরত্ব। এই সব মিলিয়ে বুঝা যায় গল্পটা আর কেবল পুলিশের ফাইল নয়, এটা এক অন্ধকার জগতের দরজায় কড়া নাড়া মাত্র।

"অবিনশ্বর" শেষ করতে করতে মনে হলো, ভাই, মানুষ যে মাঝে মাঝে খুব ভয় পাওয়া দুঃস্বপ্ন দেখে তা তো আমি ওভাবে কখনো দেখিনি, কিন্তু দুঃস্বপ্ন দেখলে তা কেমন হতো তা মনে হয় বুঝলাম। আর লেখকের বুনোন এমন, যে পাঠক হিসেবে আপনি ঠিক প্রেডিক্ট করতে পারবেন না পরের পাতায় কী আসছে— ফলে একটা অস্বস্তিকর উত্তেজনা সবসময় গায়ে মাখা থাকে।

তো "অবিনশ্বর" যেখানে থামে, "কৃষ্ণকায়া" ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয় না আর দশটা সিক্যুয়েলের মতো। একটু ভিন্ন সময়কালে কৃষ্ণকায়া যাত্রা শুরু করে। তবে এবার ক্যারেক্টার চেঞ্জ—এসে পড়ে রুদ্র, সাবেক এক সেনা, যার জীবন রাতারাতি অদ্ভুত হয়ে যায়। সে দেখে ছাগলের মাথাওয়ালা এক দানব, যার কপালে লাল ত্রিভুজ। স্বপ্ন নাকি বাস্তব, সে-ও বুঝে না।

তার বন্ধুদেরও একই অভিজ্ঞতা—আর ঘাড়ের পেছনে ভেসে ওঠা এক অদ্ভুত চোখের চিহ্ন যেন ঘোষণা দেয়, “তোমরা সবাই চিহ্নিত।” তখনই উঠে আসে পুরনো এক ডায়েরির গল্প, সিলেটের গহীন অরণ্যে ঘুরে আসা এক কাল্পনিক ট্রিপ, যার রেশ পড়ে এখনকার জীবনে।

এই বইয়ে আগের পরিচিত চরিত্র আদ্রিয়ান আর রশীদ আবার আসে, সাথে আসে সেই অবিনশ্বর মানবী, যে প্রথম বইতে মিলিয়ে গিয়েছিল। তার মুখ দিয়ে উঠে আসে নতুন আরেক ভয়ঙ্কর অতিপ্রাকৃত শক্তির অস্তিত্বের গল্প।

তবে এখানে গল্প কেবল সাইকো থ্রিলার নয়, বরং সাথে হালকা ফ্যান্টাসি ও সাইফাইয়ের এলিমেন্ট সহ সম্পূর্ণ অতিপ্রাকৃতের জগতে ডানা মেলে দেয়। মজার বিষয় হলো টাইম ট্রাভেল, সমান্তরাল টাইমলাইন, মাল্টিভার্স—যে বিষয়গুলোর ব্লেন্ড আমরা নেটফ্লিক্সের সিরিজে দেখি, সেইসব এই বইতে একেবারে বাংলায় পড়তে পারছি!

তবে একাধিক অতিপ্রাকৃত শক্তির মাঝে মানবজাতির পক্ষ নিবে কোন অন্ধকার শক্তি? কৃষ্ণকায়া পড়ার পর এই দুই বইয়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আমার কাছে হলো—এখানে কোনো “হিরো বনাম ভিলেন” ক্লাসিক টেমপ্লেট নেই। কৃষ্ণকায়া আর অপভ্রংশ—দুইই অশুভ শক্তি। কিন্তু সারভাইভ করার জন্য মানুষকে বেছে নিতে হবে, কে কম খারাপ? কে একটু হলেও রেহাই দিতে পারে?

এই দারুণ দ্বন্দ্বটা সিরিজটাকে শুধু “একটা থ্রিলার” না রেখে, বরং একটা ফিলোসফিক্যাল কনফ্লিক্ট বানিয়ে দেয়। মানুষের কি কখনো আসলে অমর হওয়া উচিত? নাকি মৃত্যুই আমাদের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ?

প্রথম বই নাকি দ্বিতীয়? কোনটা বেশি জমেছে?
"অবিনশ্বর" ছিল টানটান, চমকে দেওয়া, একদম পেজ টার্নার। পড়তে পড়তে মনে হতো, কোথা থেকে কী আসবে বুঝতেই পারছি না। কনসেপ্ট ক্লিয়ার, ভয় জেনুইন।

এই জায়গায় "কৃষ্ণকায়া" ছিল অনেক বেশি অ্যাম্বিশাস। একাধিক টাইমলাইন, অতিপ্রাকৃত শক্তির উপস্থিতি, অতীত ও ভবিষ্যতের ইমপ্যাক্ট—সব একসাথে জুড়ে দিতে গিয়ে মাঝে মাঝে কনফিউশন লাগতে পারে। এরকম কিছু কনফিউশনের জায়গা নিয়ে চেষ্টা করবো ভিডিও এপিলগে আলাপ করতে। তবে এই বইটা ছিল আসলে এক্সপ্লোরেশনের জায়গা—যেখানে লেখক চেয়েছেন “আরও বড় গল্প” বলতে। আর জুড়ে থাকা কনফিউশনগুলোও পরবর্তী পর্বগুলোতে হয়তো নিজেদের গিঁট খুলে ফেলে উন্মুক্ত করবে রহস্যের জাল।

শতভাগ নিখুঁত না হলেও, কৃষ্ণকায়া অবশ্যই বাংলা থ্রিলারের ইতিহাসে সাহসী একটা অ্যাটেম্পট।

এই সিরিজটি স্রেফ একটা থ্রিলার ছিল না। সাজ্জাদ সিয়ামের লেখায় একটা বিষয় স্পষ্ট, তা হলো—উনি সাহিত্যের ঘরানার বাঁধাধরা নিয়ম মানতে আগ্রহী না। কখনো সাইকোলজিকাল থ্রিলার, কখনো হরর, কখনো ভিন্ন এক ওয়ার্ল্ড এর হালকা গ্লিম্পস—সব মিলিয়ে একটা স্পেসিফিক জনরার বাইরে যেয়ে কিছু বানাতে চেয়েছেন। সিরিজটি বাস্তবের ছায়ায় দাঁড়িয়ে নেই, বরং এটা পুরোপুরি এক অন্ধকার ও বিকট জগতে পা রাখে—যেখানে আপনার জ্বরের ঘোরে দেখা অস্বাভাবিক দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ংকর কিছু ঘটে বাস্তবেই।

“অবিনশ্বর” আর “কৃষ্ণকায়া” তাই শুধু ভয় পাওয়ার গল্প নয়—এটা এক বিশাল জগতের শুরু, যেখানে সামনে অপেক্ষা করছ�� অপভ্রংশ বনাম কৃষ্ণকায়া, অমরত্ব বনাম মৃত্যু, আর মানবজাতির জন্য হয়তোবা শেষ লড়াইয়ের আভাস।

প্রথম বইটি ২০২৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ঋদ্ধ প্রকাশ থেকে। পরবর্তীতে ২০২৫ এর বইমেলায় বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ ও কৃষ্ণকায়া প্রকাশিত হয়েছে। মেলায় সিরিজটি এতটাই হাইপ তৈরি করেছিল মেলাতেই প্রথম পর্বের দ্বিতীয় মুদ্রণ শেষ হয়ে যায়। আর এই জায়গায় প্রকাশনীর প্রশংসা করতেই হবে। চমৎকার ঝকঝকে ছাপা, সুন্দর মানের কাগজ, আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ, প্রায় নির্ভুল এডিটিং সব মিলিয়ে বর্তমান বাজারের হিসেবে টপ নচ প্রোডাকশন উপহার দিয়েছে তারা। দুইটি বইয়ের প্রচ্ছদই করেছেন পরাগ ওয়াহিদ। ইন্টারেস্টিংলি ভালোভাবে অবজার্ভ করলে দুইটি বইয়ের থিমই তাদের প্রচ্ছদ দেখলে টের পাওয়া যায়। ভালো অবজার্ভাররা এটা শুরুতেই খেয়াল করতে পারেন, আবার কেউ কেউ বই পড়ে শেষ করার পরেও টের পেতে পারেন।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Md Abdul Kayem.
177 reviews3 followers
April 11, 2025
🔰পাঠ প্রতিক্রিয়া: অবিনশ্বর

স্বপ্ন দেখেছেন কখনো? প্রশ্নটা দেখে নিশ্চয়ই আপনার হাস্যকর মনে হতে পারে। হওয়ারই কথা, পৃথিবীতে স্বপ্ন দেখে না এমন কোনো মানুষ নেই। কিন্তু এবার যদি আমি প্রশ্ন করি, একই স্বপ্ন দিনের পর দিন দেখেছেন? চোখ বন্ধ করলেই এক বিভৎস হত্যাযজ্ঞের স্বপ্ন যদি আপনাকে দিনের পর দিন তাড়া করে ফেরে মানসিক অবস্থাটা আপনার কেমন দাঁড়াবে বলুন তো!

তেমনই এক বিভৎস সমস্যায় পড়েছে এক কিশোর, পৃথিবীতে কাটানো তার সকল স্মৃতি কালের গহবরে হারিয়ে গেছে। কেবল মনে আছে তার এই বিভৎস স্বপ্নের কথা, যা চোখ বন্ধ করলেই হানা দেয় চাপাতি হাতে। এমন অভিশাপ থেকে তাকে একমাত্র বাঁচাতে পারবে আদ্রিয়ান নামক ছেলেটা। আদ্রিয়ানের অবশ্য এসব মানসিক সমস্যার সমাধানে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেই এসব বিষয়ে অগাধ জ্ঞানই তাকে সমস্যার দ্বারপ্রান্তে পৌছাতে সাহায্য করে প্রতিবার।

বাবা মা হারানো পাগল কিছিমের আদ্রিয়ান ছেলেটাকে পছন্দ করেন বাড়িওয়ালা হামিদা বেগমও, এমনকি হামিদা বেগমের সন্তান মিজান ও মীরাও নিজেদের আপনের মতোই পছন্দ করে। এমন নির্ঝঞ্ঝাটপূর্ণ জীবনে ভয়ংকর অভিশাপ নেমে আসলো ঠিক সেদিন থেকে, যেদিন থেকে আদ্রিয়ানকে দুঃস্বপ্নগুলো তাড়া শুরু করলো। সেই বিপর্যয়ের চূড়ান্ত হলো তখনই যখন এক কিশোরের বিভৎস স্বপ্নের চক্রে আটকে পড়া থেকে বের করে আনতে গেলো।

এদিকে শহরে আবির্ভাব হয়েছে এক ভয়ংকর খুনির। রক্তচোষা এক সাইকো কিলারের। একের পর এক শরীর থেকে মাথা আলাদা হওয়া খণ্ডিত লাশের রহস্য সমাধানে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে গোটা শহরের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।

নিজের অজান্তেই সেই রক্তহিম করা সিরিয়াল কিলিং রহস্যের সাথে জড়িয়ে পড়ল ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভোগা আত্মভোলা স্কুল শিক্ষক আদ্রিয়ানও। শখের বশে সাইকো-লজিক্যাল সমস্যার সমাধান খুঁজে ফেরার অভিজ্ঞতা কী কাজে আসবে এবার! নাকি পথ হারাতে হবে রহস্যের গোলকধাঁধায়! যে গোলকধাঁধার পথের সঙ্গী হয়েছে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের অধিকারী পুলিশ অফিসার রশীদও।

অবশ্য তারা কল্পনাও করতে পারেনি ভয়ংকর এক নরকের দরজার কপাট খুলে দিয়েছে এই কেসটার সাথে জড়িয়ে! খুনগুলো সাধারণ সিরিয়াল কিলিং হলে প্রায় একশত বছর আগের রক্তাক্ত ইতিহাসের সাথে এর সম্পর্ক কী! সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কি তবে সৃষ্টি করতে যাচ্ছে এক অবিনশ্বর-অন্তহীন পৃথিবী! অতীতের মতো তবে কি রক্তের খেলায় মেতেছে আবার সেই কালো ছায়া!

যার প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে জড়িয়ে আছে একটাই শব্দ... 'দুঃস্বপ্ন' সেই দুঃস্বপ্নের জাল ছিঁড়ে আদ্রিয়ান, রশীদরা কি থামাতে পারবে আসন্ন এক অন্ধকার জগতের আবির্ভাবকে! থামাতে পারবে রক্তের স্রোত! পাঠক সব প্রশ্নের উত্তর বইয়েই আছে, কেবল জানতে হলে পড়তে হবে।

আমাদের দেশিয় মৌলিক লেখকরা বেশ ভালোই লিখছেন, তারপরও আমার কেন যেন মনে হয় এই সিরিয়াল কিলিং এর জায়গায় এসে চমৎকার কোনো মৌলিক বইয়ের সন্ধান চাইলে অন্তত কিছুক্ষণ ভাবতে হবে। এই বইটাও মৌলিক সিরিয়াল কিলিং নিয়ে, তবে সিরিয়াল কিলিং নিয়ে আমরা প্রচলিত যে গল্পের প্যাটার্নের সাথে পরিচিত গল্পটা সেই প্যাটার্ন থেকে একেবারেই ভিন্ন।

গল্পের মূল আকর্ষণ হিসাব করলে এই সিরিয়াল কিলিং, সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশন আর ডার্ক হররকে বিবেচনা করা যায়। যা লেখক বেশ চমৎকার এবং গোছানোভাবেই উপস্থাপন করেছেন।  গল্প ছাড়াও বইটির সবথেকে ভালো লেগেছে,  বর্ণনা। নতুন মৌলিক লেখকদের গল্প বর্ণনায় পুরোটা না হলেও শুরু দিকে হলেও আড়ষ্টতা লক্ষ করা যায়, এই বইটিতে তা একেবারেই নেই। লেখক প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পের বর্ণনা একেবারেই সহজ, সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন। সেইসাথে গল্পের থ্রিলিং এর পরাদ বসিয়েছেন একদম যথাযত জায়গাতেই। লেখকের আগের ছোটো গল্প লেখার অভ্যাসটা দারুণ ভালোভাবেই প্রভাব ফেলেছে বলতে হয় এই বইটিকে ভালোভাবে পরিপূর্ণতা দিতে।

সিরিয়াল কিলিং জনরার গল্পে ভায়োলেন্স থাকেই, এই গল্পে সেটা বেশি পরিমাণেই আছে। তবে ভায়োলেন্সের ক্ষেত্রে পাঠক কে কতটুকু গ্রহণ করতে পারবে তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। আমার ক্ষেত্রে এমন ভায়োলেন্স খুব একটা প্রভাব পড়েনি, বরং ভালো লেগেছে। মাথা কে টে ফেলে দেওয়ার বর্ণনা যদি আপনার খুব বেশি খারাপ না লাগে তাহলে আশাকরি গল্পের ভায়োলেন্সটাও উপভোগ করতে পারবেন।

গল্পের আদ্রিয়ান, রশীদ ছাড়াও যেসকল চরিত্র কিংবা সাবপ্লট হিসেবে বর্ণনা করা ঘটনা কিংবা চরিত্র আসবে তাতে প্রথমেই একটা চিন্তা চলে আসে। মূল ঘটনায় এদের সবারই কী যোগাযোগ থাকবে! আপনি যদি নিয়মিত এমন থ্রিলার পড়েন তাহলে নিশ্চয়ই গল্প পড়ার সময় নিজেও গল্পের শেষটা কেমন হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করেন! মজার বিষয় হচ্ছে এক্ষেত্রে আপনি যা যা ভাববেন লেখক ঠিক তাই ঘটিয়ে দিবে আর তারপর তুলির শেষ আঁচড়টা দিয়ে সেই ঘটনাকে এমনভাবে সামনে এনেছেন যে প্রতিটা চরিত্রই চমকে দিয়েছে। অবশ্য এই চমক ধারণা করতে না পারায় পাঠকের চিন্তার কোনো ঘাটতি নেই। তবে শেষ দিকের বর্ণনা আমার কাছে মনে হয়েছে আরেকটু ডিটেইলস হলে ভালো হতো। ঘটনার দৃশ্যপট এতো দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে যে পাঠকের গল্পের সাথে তাল মেলানো কঠিন হবে শেষে এসে।

বইটি হরর এলিমেন্টের চেয়েও পাঠকের উপর প্রভাব বেশি ফেলবে চরিত্রগুলোর সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশন আর ভায়োলেন্স। এ দুটো বিষয় আমারও বেশ উপভোগ্য লেগেছে। সেই সাথে অতীত, বর্তমান, স্বপ্ন এবং কী প্রতিটি চরিত্রের যে ভূমিকা শেষে পাওয়া যায় তা যে কাউকেই চমকে দেওয়ার মতো। সেই সাথে শেষ হয়েও হইলো না শেষ ধরনের একটা অনূভুতি রেখে যাবে বইটি। সেই সাথে পরের বইটা পড়ার আগ্রহও তৈরি করে দিবে।

বইয়ের ঋদ্ধপ্রকাশের প্রোডাকশন বেশ দারুন, বিশেষ করে প্রচ্ছদটা আমার বেশ ভালোই লেগেছে। উপন্যাসের বানান বিন্যাস, সম্পাদনা যে চমৎকার হয়েছে তা পাঠক বইটা পড়ার সময়ই বুঝতে পারবেন। সিরিয়াল কিলিং আর সাইকোলজি এ দুটো বিষয় যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বইটি আপনার জন্য চমৎকার চয়েস হবে।

বই: অবিনশ্বর
লেখক: সাজ্জাদ সিয়াম
প্রচ্ছদ: পরাগ ওয়াহিদ
প্রকাশক: ঋদ্ধ প্রকাশ
মূল্য: ৫০০৳
পৃষ্ঠা: ২২৪
Profile Image for Tajbid Rahman  Pran.
3 reviews
March 18, 2023
ব্যস্ততার মাঝেও পড়ে শেষ করা হলো সাজ্জাদ সিয়াম ভাইয়ের লেখা "��বিনশ্��র"। দুদিন হলো পড়ে শেষ করলাম। পড়তে ততটা সময় লাগেনি যতটানা লেগেছে বইটা হাতে পেতে। গল্প-উপন্যাস তেমন একটা পড়ি না। বাট হরর আর থ্রিলার স্টোরি অনেক ভালো লাগে বিধায়, বেস্টুর রেকমেন্ডেশনে fb তে ছোটগল্প পড়া শুরু করি। আর সেখানেই একদিন সাজ্জাদ সিয়াম ভাইয়ের লেখা গল্প, "অনাহুত" পড়ে ফেললাম। আসলে মানুষের চিন্তা শক্তি দিয়ে কত সাধারণ বিষয় কেও অসাধারণে রূপান্তর করা যায়, সেটা সাজ্জাদ সিয়ামের লেখা পড়েই বুঝলাম। আসলেই, বুক কাপানোর মতোই ছিল গল্পটা। এতটাই ভালো লাগে যে তার বাকি লেখাও পড়তে শুরু করি। ফলে যখন শুনতে পেলাম, ২০২৩ বইমেলায় সাজ্জাদ ভাইয়ের লেখা একটি বই আসতে চলেছে, তখন আর বসে থাকতে পারলাম না, বইটা কিনেই ফেললাম।

ভালো লাগার বিষয়গুলো হলো, শব্দচয়ন ও বিশ্লেষণ অনেক ভালো, পড়ার সময় দৃশ্য সমুহ চোখে ভেসে ওঠে। ব্রুটাল বা থ্রিলার, কোনো অংশেই কোনটা থেকে কম না। অনেক চিন্তা ভাবনা করে, কল্পকাহিনী সাজিয়ে বেশ কিছু থিওরি বেড় করে রেখেছিলাম। নিজের মন ও মস্তিষ্ক খাটিয়ে যতটানা আন্দাজ করেছিলাম, তার পুরোটাই ধুলিস্যাৎ করে দিলো ১৮৩ ও ১৮৪, এই দুটি পাতা। কাহিনীর প্রতিটা মোড়ে নিজেই কনফিউশনে পড়ে গিয়েছিলাম, আসল খুনি কে! মূলত, থ্রিলিং চিন্তা করতে গিয়ে নিজে ভুল প্রমাণিত হলে তখনই সেটার আসল মজা পাওয়া যায়। আর ১৮৭ পাতার মাঝামাঝি আসতেই হঠাৎ করে পুরো শরীরটা যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো। এ আমি কি পড়ছি,, কোনোভাবেই মিলাতে পারছি না। এটা কি! এটা কোনো গল্প বা উপন্যাস না, এটা একটা ইউনিভার্স, "সাজ্জাদ সিয়াম'স ইউনিভার্স"। হালকা একটা হিন্ট দিয়ে রাখি। কচুগাছে ফাঁসি, অনুরোধে ঢেঁকি গেলা, চোখ কপালে তোলা, সাত খুন মাফ, এগুলো কি? বাকধারা, তাইতো? কিন্তু না, সাজ্জাদ সিয়ামের ভাষায় এগুলো বাকধারা না। এগুলো তারও উর্ধ্বে!! যারা সাজ্জাদ ভাইয়ের আগের লেখা পড়ে থাকবেন, তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝিয়েছেন এগুলো কি। অন্যদেরও বলবো, তার আগের লেখা পড়তে।

গল্পের শেষটা নিয়ে কি বলবো, একদম মাইন্ড ব্লোন করে দেয়ার মতন টুইস্ট এন্ড টার্নস। জোড় দিয়ে বলতে পারি, আসল খুনি কে, তা আপনারা কেউই ধরতে পারবেন না। অনেক ক্রাইম স্টোরিতে যেটা হয়, অল্প কিছুক্ষণ কোনো চরিত্রকে দেখানো হয় বা যেই চরিত্র স্টোরির সাথে তেমন একটা কানেকটেড না, শেষে দেখা যায় ওই চরিত্রই খুনি। কিন্তু সাজ্জাদ ভাইয়ের লেখা স্টোরিগুলো সাধারণত এমন হয় না। তিনি যেভাবে তার প্রধান চরিত্রকে প্রাধান্য দেন, তার বিপরীতে থাকা চরিত্রকেও তিনি কম প্রাধান্য দেন না।

কিছু ভুলত্রুটিতো ছিলই ওসব ছাড়াতো আর বই হয় না। কোথাও কাহিনী সল্প, কোথাও অতি দীর্ঘ। কিছু জায়গায় ইংরেজি পরিহার করে বাঙলাতেই বলা যেত। আরো কিছু কথা: গল্পের প্রধান চরিত্র, "আদ্রিয়ান"কে ভালোভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। লেখক তার সম্পর্কে যেমন ধারণা দিয়েছিলেন, কাহিনীর অগ্রগতির সাথে সাথে ঠিক তেমনটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল গল্পের প্রথম অংশে। শেষ অংশে তার চরিত্র অনেকটাই দুর্বলতায় ভোগে। হ্যা, তা ঠিক যে, কাহিনীর অগ্রগতির জন্য তার চরিত্রটা এমন হয়ে গেছে, কিন্তু তাও শেষে তাকে আরেকটু শক্ত করে তোলা উচিত ছিল। আর আরেকটা কথা হলো, গল্পের প্রধান চরিত্রকে তখনই দুর্বল লাগে যখন তার সামনে হঠাৎ করেই তার মতনই একজনের আবির্ভাব হয়। এক্ষেত্রে সেই চরিত্র হলো "ইন্সপেক্টর রশীদ"। রশীদ চরিত্রটির উপস্থাপন তেমন ভালো হয়নি বলেই শেষাংশে তার ভূমিকা দেখে অনেকেরই বিষয়টা অন্যরকম লাগবে। কিন্তু রশীদ চরিত্রটি সাজ্জাদ ভাইয়ের জন্য নতুন কেউ না। তাকে নিয়েও সাজ্জাদ ভাইয়ের লেখা একটি গল্প আছে, যেটার নাম The Twisted Killer. ওই গল্পটা পড়লেই জানতে পারবেন রশীদ আসলে আদ্রিয়ান থেকে পিছিনে নেই, তাই আমি রেফার করবো, এই বইটি পড়ার ফাঁকে fb থেকে সাজ্জাদ ভাইয়ের The Twisted Killer গল্পটাও পড়ে ফেলতে। কিন্তু লেখকেরও উচিত ছিল বইটিতে রশীদ চরিত্রটাকে আরেকটু ফুটিয়ে তোলা। আর বই লিখলে ভুল থাকবে, সেটা নিয়ে কোনো কথা না। কথা হলো লেখক কি তার বেস্ট দিতে পেরেছে? অবশ্যই, যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন তিনি। যথেষ্ট গবেষণা করে বইটি লেখা হয়েছে। কোথাও কোনো ফাঁক ফোকর রাখেননি যেখানে আপনি ভুল ধরতে পারেন।

শেষকথা: আমি মূলত এই বইটি কিনেছিলাম একটি ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে। আমি "অবিনশ্বর" বইটিকে সাজ্জাদ ভাইয়ের অন্য একটি গল্পের ২য় চ্যাপ্টার ভেবে ভুল করেছিলাম আর সেই ভুলের মধ্য দিয়েই বইটি কেনা। সেই গল্পটির ১ম চ্যাপ্টার আমার কাছে এতোই ভালো লাগে যে, অধীর আগ্রহে আমি ওটার ২য় চ্যাপ্টার এর অপেক্ষায় ছিলাম। আর ভুল বুঝতে পারার পর একটুতো খারাপ লেগেছিল, কিন্তু এতক্ষণে এই বইয়ের প্রতি ছোট্ট একটা অ্যাট্রাক্টশন কাজ করা শুরু হয়ে গেছে। বলতে গেলে, আমি শুধু এখন এই কাহিনীর শেষটা দেখতে চাই। আস্তে আস্তে ক'টা অধ্যায় শেষ করার পর আসলেই এই গল্পটাও ভালো লাগতে শুরু করে। কিন্তু এতকথা বলছি কেন? বলছি এই কারণে যে, বইটা আসলেই আমায় নিরাশ করেনি। কারণ আমি যেই আশায় বইটি কিনেছিলাম, যে চরিত্রটিকে জানার জন্য বইটি কিনেছিলাম, তার অস্তিত্ব পেয়ে যাই একদম গল্পের শেষ পাতায়। "কায়া"। আর কিছুই বলবো না। সিয়াম ভাইয়ের লেখা পড়ে থাকলে এই শব্দটার মানে কি তা আর বলা লাগে না। শুধুমাত্র এই একটা শব্দের জন্যই বইটি কেনা,,

আরেকটা কথা, গল্প কিন্তু এখানেই শেষ না, এইতো সবে শুরু,,,

বই:- অবিনশ্বর
লেখক:- সাজ্জাদ সিয়াম
জনরা:- ডার্ক সাইকোলজিক্যাল-থ্রিলার
প্রকাশনী:- ঋদ্ধ প্রকাশ
প্রকাশকাল:- ফেব্রুয়ারী ২০২৩
মুদ্রিত মূল্য:- ৫০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা:- ২২৪
পার্সোনাল রেটিং:-৯/১০
Profile Image for Mahrin Haque  Moho.
35 reviews7 followers
October 2, 2023
⛔সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ নৃশংসতা আর রক্তারক্তি ভায়োলেন্স সহ্য করার ক্ষেত্রে দূর্বল হৃদয়ের ব্যক্তিগন এই বই নিজ দায়িত্বে শুরু করবেন।


“অবিনশ্বর মানেই যার কোনো বিনাশ নেই। যার কোন শেষ নেই। এক অসীম ক্ষমতা যার জন্য নশ্বর মানব জীবনকে  নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৃতির সমস্ত কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে এমন এক পৃথিবী গড়ে উঠবে, যেখানে কোন বিনাশ নেই। যেখানে মৃত্যু প্রকৃতির নিয়মে নয় মৃত্যু হবে স্বীয় ক্ষমতায়। পৃথিবীর সকল সৃষ্টি, জন্ম, ধ্বংস আর মৃত্যু সবকিছু একজনের ইশারায় চলবে।  এই অন্তহীন চলমান জগৎ হবে অবিনশ্বর জগৎ।”বলছিলাম এমন এক জগতের কথা যেখানে-“মৃত্যুই একমাত্র সত্যি। একমাত্র মুক্তির পথ। কোন গন্তব্য নেই সে জগতের তুচ্ছ নশ্বর মানব জীবনের।”কিন্তু মুক্তির পথ নিজের হাতের মুঠোয় আনতে যুগযুগ ধরে চলছে এক অবিনাশী হওয়ার প্রক্রিয়া।


গল্প সংক্ষেপঃ সাল ১৯৯০ রাতের শেষ ভাগে শিবপুর গ্রামে বয়ে এলো ভয়ানক তাণ্ডব। ভয়ঙ্কর নেশায় মেতে উঠা এক রক্তপিপাসু কিশোরের খুনে তাণ্ডব। যার উদ্দেশ্য প্রতি মাসের শেষ তিনটা বেজোড় তারিখে জন্ম নেয়া ১৬টা বাচ্চার জীবন। 

সাল ২০২২, হঠাৎ করেই শুরু হলো আবারো রক্তপিপাসু খুনের তান্ডব। একের পর এক শরীর থেকে মাথা আলাদা হওয়া খণ্ডিত লাশ। এই রহস্যের সাথে জড়িয়ে পড়লেন আত্মভোলা শিক্ষক আদ্রিয়ান। কোন ধরনের সার্টিফিকেট ছাড়াই শখের বসে সাইকোলজিক্যাল সমস্যার সমাধানে বেশ আগ্রহী ছিলেন  আদ্রিয়ান। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো তার শখের পোষা বিড়াল আদ্রার মস্তকহীন লাশে। জড়িয়ে গেলো যুগযুগ ধরে ঘটে চলা এক অমোঘ চক্রে। সাথে জুটলো ধুরন্ধর পুলিশ অফিসার রশীদ সাহেব । কি ঘটবে সামনে? মৃত্যুর রহস্যের সন্ধানে কি পৌঁছাতে পারবে আদ্রিয়ান ও রশীদ? খুঁজে কি পাবে অবিনশ্বর আদি-অন্তহীন অস্তিত��বের সাথে খুনের সম্পর্ক? স্বপ্নের সম্পর্ক?


পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ  ডার্ক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ও কসমিক হররে মোড়া সাজ্জাদ সিয়াম এর ১ম মৌলিক উপন্যাস “অবিনশ্বর”। উপন্যাসের শুরুতেই লেখক এক ভয়াবহ তাণ্ডবের অভিষেক ঘটান কিশোর বয়সের ছেলের হাত ধরে। জীবন মৃত্যুর আক্ষেপ ও জীবনের শেষ আখ্যান টানেন রোলার কোস্টারের গতিতে ভায়োলেন্সের মাধ্যমে। ঠিক পরমুহূর্তেই আবার সমতল ভাবে গল্পের মোড় ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন বর্তমানে। ঘটনার মূলোৎপাটন ঘটান সাধারণ এক বিড়াল হত্যার মাধ্যমে। পরবর্তীতে আবারো গল্পের গতি ঘুরিয়ে একের পর এক ক্লু ছাড়া খুনের বর্ণনার মাধ্যমে টার্নিং পয়েন্টে নিয়ে আসেন। পাঠকের কাছে পরিচয় করিয়ে দেন পুলিশ অফিসার রশীদ ও আত্মভোলা আদ্রিয়ানের সাথে। 


একের পর খুনের টুকরো টুকরো তথ্য যখন পুলিশ অফিসার একত্রে করবেন তখন পাঠকের সন্দেহ একদিকেই তীর করবে। লেখকের এই সাইকোলজিক্যাল মাইন্ড গেমটা বেশ উপলব্ধি করেছিলাম। ঠিক পরমুহূর্তেই লেখক পাঠকের মনে উদয় হওয়া প্রশ্নগুলোর জবাব প্রশংসনীয় ভাবে সামনে তুলে আনবেন। গল্পের মোড় তখন আবারও ঘুরে যাবে, স্বভাবতই পাঠক ভাবতে বসে যাবে তবে কালপ্রিট কে?? আর কিভাবেই কোন ক্লু ছাড়া অদৃশ্যের মত করছে একের পর এক খুন??


লেখকের বেশ কিছু টার্ম খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। False Awakening Dream বা মিথ্যা স্বপ্ন, Lucid Dream এর বিশ্লেষণ গুলো সুন্দর ছিলো উপন্যাসের কাহিনির বিন্যাসে।“স্বপ্ন আমরা তখনই দেখি যখন আমরা আসলে বাস্তবতায় জেগে উঠতে চাইনা। মনকে ডাইভার্ট করে এমন সিচুয়েশনে নিয়ে যাই, যা মোটেও বাস্তব নয়।মূলত স্বপ্ন দেখার সময় আমরা ডিপেস্ট ডিজায়ারগুলোর মাঝেই বাস করি।" লেখক তাই পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আলোচনা করেছেন।


উপন্যাসে অনেকগুলো সংযুক্তহীন ছোট ছোট ঘটনার উপস্থাপন করান লেখক গল্পকে পাঠক কল্পনার চোখে দেখতে পাবার জন্য। সেই সুঁতো গুলো আবার লেখক একত্রিকরণও করেন সম্পূর্ণভাবে। তারপর ও বেশকিছু ঘটনায় প্রশ্ন থেকে যায়। লেখক উপন্যাসে যে টুইস্ট গুলো আস্তে আস্তে খোলাসা করেছেন তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য ছিলো। প্রতি মূহুর্তেই নতুন কোন মানুষকে সন্দেহ হবে পাঠকের তার পরক্ষণেই তা ভুল প্রমাণিত হবে। প্রোটাগনিস্ট ও অ্যান্টাগোনিষ্ট চরিত্র গুলো নিয়ে পাঠককে শেষ অবধি দ্বিধায় ভুগবে। তবে উপন্যাসের শেষে তার মোড়ক খুলেছেন লেখক। 


আদ্রিয়ান, রশীদ, নুরুল, হামিদা বেগম, মিজান, মিরা ও রেশাদ সহ প্রতিটা চরিত্র লেখক সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। তবে ক্লাইম্যাক্সে গিয়ে রশীদের সবকিছু খোলাসা করাটা একটু অন্যরকম মনে হয়েছে। অনেককিছু খোলাসা করা ছাড়াই লেখক তা রশীদের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। পরবর্তী সিকুয়েলে সে রহস্যের সমাধান দেখাবেন হয়তো লেখক।


লেখকের লেখনী নিয়ে কিছুই বলার নেই। যথেষ্ট সাবলীল। সহজ শব্দে লিখে গেছেন পুরো কাহিনী। প্রায় একবছর আগে গ্রুপে একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার গল্প পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে কখন যে গল্পের মাঝে ডুবে গেছি বলতেই পারবোনা। খুবই ভালো লেগেছিলো। সিরিয়াল কিলারের কনসেপ্টে অনেকটা কোরিয়ান সিরিজের ফ্লেভার পাচ্ছিলাম। অবিনশ্বর বইটা হাতে পাবার পর বেশকিছু বিষয় ঘাটাঘাটি করার পর বুঝলাম উনিই সেই লেখক যার লেখা গল্প পরে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই উপন্যাসেও লেখকের বেশকিছু উক্তি খুব ভালো লেগেছে। 


বইয়ের প্রোডাকশন কোয়ালিটি নিয়ে কিছু বলার নাই। আমার ঋদ্ধ প্রকাশের প্রথম পড়া বই এটি। প্রচ্ছদ টা বইয়ের প্রতিটা বিষয়ের সাথে সুক্ষ্ম ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পেজ যথেষ্ট প্রিমিয়াম ছিলো। সেজন্য সজল ভাইকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। বেশকিছু সুন্দর সুন্দর ইলাস্ট্রেটর ছিলো গল্পের মাঝে পাঠককে আরো আকৃষ্ট করার জন্য। সর্বোপরি ডার্ক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ও টানটান উত্তেজনাপূর্ণ রক্তারক্তি যাঁদের পছন্দ তাঁদেরকে আহবান জানাই একবার অবিনশ্বর জগতে ঘুরে আসার!
Profile Image for Arif  Raihan Opu.
212 reviews7 followers
August 30, 2025
পৃথিবী কোন দিন থেকে শুরু হয়েছে। তখন প্রাণের অস্থিত্ব কতটুকু ছিল। আদৌ কি প্রাণের অস্থিত্ব ছিল নাকি সব কিছুই ভ্রম। অসীমের মাঝে হারিয়ে শুধু খুজে ফেরা। জীবনের মাঝে জীবনকে হারিয়ে খোজা। জীবনের শুরু কোথায়, আর শেষ কোথায় কেউ কি তা বলতে পারে। এই পৃথিবীর রহস্যের মাঝে অসীম আর অনন্তকালের যে রহস্য তার শেষ কোথায়। কেউ কি এই রহস্যের সমাধান করতে পেরেছে। কেউ কি যুগে যুগে মানুষের মাঝে নিজের অস্তিত্বকে জানান দিয়ে গেছে। হয়ত সেই আছে, নয়ত কেউ নেই। হতে পেরেছে কেউ চির যৌবন প্রাপ্ত। কেউ কি যুগের পর যুগে নিজে অসীমের প্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। যেখান থেকে আর কিছু নেই।

মানুষের প্রবৃত্তি হচ্ছে বেচে থাকা। মৃত্যুকে সে ভয় পায়। কেউ মারা যেতে চায় না। যুগের পর যুগ বছর পেরিয়ে যায়। তবুও মানুষ বেচে থাকতে চায়। সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চায় না। হতে চায় অসীম আর অমর। যাকে কেউ ছুতে পারবে না। পৃথিবীর এক অপার রহস্য এই মৃত্যু। এক সময় মৃত্যুকে আলিঙন করে নিতে হয়। যতই ছুটে বেড়িয়ে চলুক মানুষ। তবুও তাকে মৃত্যুর কাছে ধরা দিতে হয়। কারণ জীবন হচ্ছে নশ্বর। এখানে কেউ কেউ চায় “অবিনশ্বর” হতে।

স্বপ্ন মানব জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্বপ্নের সাথে মানুষের বসবাস। স্বপ্ন পূরণ হলে মানুষ খুশি হয়। আর স্বপ্ন পূরনের জন্য মানুষ ছুটে চলে স্বপ্নের পেছনে। প্রতিটি স্বপ্ন আলাদা, আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। আবার ঘুমের স্বপ্ন এবং বাস্তবতার স্বপ্ন দুটোই আলাদা অথচ খুব কাছাকাছি। ঘুমের স্বপ্ন আর বাস্তবতার স্বপ্ন দুটোই জীবনের সাথে জড়িত। তবে মাঝে মাঝে এই স্বপ্নের কারণেই মানুষের জীবন বেশ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কারণ তখন ঘুমের আর বাস্তবতার স্বপ্ন আলাদা করে ভাবা যায় না। যেন একে অন্যের সাথে মিশে এক হয়ে গিয়েছে।

রাত অনেক রহস্য বয়ে নিয়ে চলে নিজের সাথে। এই রহস্য সবাই ভেদ করতে পারে না। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা হচ্ছে বান্দরবন। ছবির মত সুন্দর একটা গ্রাম শিবপুর। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে সবাই বাড়ি ফিরেছে। রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পরদিনের জন্য তৈরি হচ্ছে পুরো গ্রাম। অথচ কেউ জানত না তাদের জন্য এই রাত অপেক্ষা করছে। তাদের জীবনে নেমে আসতে যাচ্ছে কি ঘোর এক অমানিশা। হয়ত তাদের প্রত্যকের জীবন বদলে যাবে ঠিক এই রাতের পর। এক প্রলয় ধেয়ে আসছে খুব শীঘ্রই।

শহরে খুন হচ্ছে। একের পর এক খুন, আর সব বিভৎস ভাবে খুন করা হচ্ছে। খুনের ঘটনা গুলো বর্ণনা করার মত নয়। দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। যা এক প্রকার সিরিয়াল কিলিং কে নির্দেশ করে। তবে কোন প্রমাণ বা কিছু নেই। না আঙুলের ছাপ, না ক্যামেরা ফুটেজ, কোথাও কিছু নেই। যেন কোন মানুষের কাজ নয়। কোন এক অশারীরি এই কাজ করেছে। পুলিশ মাথা খাটিয়েও কিছু করতে পারছে না। কারণ খুনি তাদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে সব সময়। খুনি কি ধরা পরবে।

সাজ্জাদ সিয়ামের লেখা “অবিনশ্বর” বইটা পড়ে শেষ করেছি। যদি বলা যায় রিভিউ লিখতে দেরি করে ফেলেছি। তবুও লিখে ফেলার ছোট একটা প্রয়াস করা যায়। সাজ্জাদ সিয়ামের লেখা আগে থেকে পড়া হয়নি। অনেক দিন থেকে হরর এর ভেতর আলাদা কিছু পড়তে চাইছিলাম। খুজতে খুজতে এই বইটা সন্ধান পাই। হরর বা স্ল্যাশার হরর বলা যায়। কারণ বইটিতে বেশ ভাল ভায়োলেন্স রয়েছে। লেখকের গল্পের প্লট বেশ দারূণ বলা যায়। একটা মিথকে সামনে রেখে গল্পটাকে গড়ে তুলেছেন।

বইটার পর্যালোচনায় বলা যায় লেখক অতিরঞ্জিত না করে স্বাভাবিক গতিতে গল্পকে এগিয়ে নিয়েছেন। যেটা এই বইয়ের বেশ দারূণ একটা দিক। প্রতিটি সাব প্লট সঠিক সময়ে উপস্থাপন করেছেন। পাঠকের কাছে গল্প যে বিরক্তকর না লাগে সেজন্য তিনি প্রতিটি ঘটনার সাথে আগের ঘটনাকে একটা সুত্র দিয়ে গেথে দিয়েছেন। তাই পাঠকের আবার পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। আমার কাছে গল্পের ভাষা বেশ ভাল লেগেছে। এমন নয় যে খুব কঠিন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে যেহেতু একটু ভায়োলেন্স আছে তাই প্রাপ্তবয়স্কদের পড়াই ভাল।

গল্পের শুরুটা বেশ চমক দিয়ে হয়েছে। এটা বইটার অন্যতম একটা ভাল দিক। এতে করে পাঠক শুরু থেকেই বইয়ের সাথে আটকে যাবেন। বইটা রেখে ঘুমানোও কঠিন হয়ে যাবে। তবে গল্পের গভীরতা বা কাহিনী থেমে গিয়েছে এমন হয়নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে লেখক সম্ভবত যখন বুঝতে পেরেছেন এমন হতে যাচ্ছে উনি সেখানেই একটা টুইস্ট দিয়েছেন। কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে পাঠকে দ্বিধায় ফেলেছেন। বলা যায় পাঠক ভাবতে শুরু করবেন। নিজেকেই বইয়ের কোন এক চরিত্রে চিন্তা করে ফেলবেন। সেই সাথে বইটা দ্রুত পড়ার চেষ্টা করবেন। যেন শেষ করেই রহস্য ভেদ করতে হবে।

তবে কিছু কিছু জায়গাতে লেখক কাহিনীর অনেক অংশ ব্যাখ্যা করেননি। ধরা যায় যেমন একটা সুইসাইডের ঘটনা আছে আমি সেই জায়গা দুই তিন বার পড়েছি কিন্তু কোন ব্যাখা পাইনি। আবার বলা যায় শেষ অংশে কি হয়েছে বা কিভাবে হয়েছে সেটার কোন ব্যাখ্যা নেই। বলা যায় এত দ্রুত ঘটনা ঘটেছে যে ওখানে আসলে কি হয়েছে সেটাই লেখক এখানে তুলে ধরেননি। আমি শেষ অংশ বোঝার জন্য বেশ কয়েকবার পড়েছি। তবে আমি ব্যাখ্যা বা সেভাবে কিছু পাইনি। এখানে একটা টার্ম ছিল ৩২ বছর, ১৬ বছর, যেটা আরও একটু ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করা দরকার ছিল।

তবে এই বইটি দ্বিতীয় একটি অংশ আছে। সম্ভবত লেখক সেই বইয়ে এর ব্যাখ্যা গুলো তুলে ধরেছেন।

সবশেষে বলব, বইটা পড়ার জন্য আপনাকে একটু হলেও প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে নয়ত অনেক কিছুই বুঝতে পারবে না। তাছাড়া নশ্বর এই পৃথিবীতে সবাই তো অবিনশ্বর হতে চায়। কিন্তু সবাই কি পারে। প্রকৃতির নিয়মের বাইরে কেউ যেতে পারে না। সবাইকে প্রকৃতির নিয়ম মেনেই চলতে হয়।

বই : অবিনশ্বর
লেখক : সাজ্জাদ সিয়াম
প্রকাশনী : ঋদ্ধ প্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২২৪
মুদ্রিত মূল্য : ৫০০ টাকা
Profile Image for Arpita Chowdhury.
20 reviews3 followers
March 11, 2025
#bookreview


বই: অবিনশ্বর
লেখক: সাজ্জাদ সিয়াম
ধরণ: ডার্ক সাইকোলজিক্যাল হরর/থ্রিলার
প্রকাশক: ঋদ্ধ প্রকাশ

⭐ Rating: 4.8/5.0

⚠️ [সতর্কতা: দুর্বল হৃদয়ের পাঠকেরা বইটি নিজ দায়িত্বে পড়বেন।]

সাজ্জাদ সিয়ামের প্রথম বই "অবিনশ্বর" হলো ডার্ক সাইকোলজি সম্পর্কিত একটি হরর বা থ্রিলার উপন্যাস। বইটি পাঠককে এমন একটি দুনিয়ায় নিয়ে যাবে যেখানে সাইকোলজি সম্পর্কিত বিভিন্ন রহস্য এবং মানুষের অবচেতন মনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার পিছনে থাকা ব্যাখ্যার পাশাপাশি রয়েছে হৃদয়বিদারক ভয়ানক বা হরর ঘটনা, যেগুলো মুহূর্তের মধ্যেই পাঠকের হৃদস্পন্দনকে ক্ষীণ করে দিতে সক্ষম।

কাহিনী সংক্ষেপ:
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো আদ্রিয়ান নামের এক তরুণ স্কুল শিক্ষক, যে শখের বশে সাইকোলজিক্যাল সমস্যার কারণে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের সমাধান করে থাকে। নিজের ভিতরে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আদ্রিয়ান নিজেই যে দুর্লভ মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত, তা তার নিজের কাছেই অজানা। এইসব সাইকোলজিক্যাল ক্রাইম কেস সমাধান করতে করতে একসময় সে এমন একটি সিরিয়াল কিলিং রহস্যের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যায় যেই রহস্যের সূত্রপাত ঘটেছে বহু যুগ পূর্বে। তার এই জটিল মনস্তাত্ত্বিক ধাঁধার সমাধানের সহযাত্রী হয় তুখোর বুদ্ধিসম্পন্ন পুলিশ অফিসার রশীদ।

১৯৯০ সালে ঘটে যাওয়া এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে কোনো না কোনোভাবে এক অজানা সূত্রে বাঁধা বর্তমানে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ও হৃদয়বিদারক ধারাবাহিক হত্যাকান্ডগুলো। কে আছে এই হত্যাকান্ডগুলোর পিছনে? কে বা কারা সেই মাস্টারমাইন্ড যে/যারা যুগ যুগ ধরে এসব হত্যাকান্ড ঘটানোর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার দ্বারা সৃষ্ট মানবজাতির নশ্বরতার বিধানকে লংঘন করতে চাইছে? আদ্রিয়ান ও রশিদ মিলে কি পারবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড রহস্যের সমাধান করতে? নাকি জিতে যাবে সেই অজানা শত্রু, যে এই সৃষ্টির নিয়মকে পরিবর্তন করে দিতে চাচ্ছে! এই রহস্যগুলো উদঘাটন করতে পড়তে হবে "অবিনশ্বর" বইটি।

ব্যক্তিগত অভিমত:
"অবিনশ্বর"আমার পড়া প্রথম সাইকোলজিক্যাল হরর বই। আমি প্রায়ই থ্রিলার টাইপের বিভিন্ন বই পড়ে থাকলেও, হরর টাইপের বইগুলো পড়ি না, বলতে গেলে একটু ভীতু প্রকৃতির হওয়ার কারণেই। তাই কৌতুহলবশত যখন আমি এই বইটি পড়া শুরু করি, স্বাভাবিকভাবেই মনের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা ও ভয় কাজ করছিল। ভাবছিলাম বইটা এনে কি ভুল করলাম বা বইটি কি আদৌ শেষ করতে পারবো!! কিন্তু সাহস করে যখন গল্পটি পড়া চালিয়ে যেতে থাকলাম, আমার মন থেকে ভয় আপনাআপনিই কমে যেতে থাকলো, আর ভিতরে একপ্রকার উত্তেজনা কাজ করছিল যে সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে!!

লেখকের প্রথম বই হলেও, লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে গল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন এবং অত্যন্ত সুনিপুণভাবে গল্পের চরিত্রগুলো চিত্রায়ন করেছেন। তার লেখার প্রকৃতিও ছিল সহজ এবং সাবলীল, যাতে করে গল্প সহজেই সামনে এগিয়ে গিয়েছে। গল্পের হত্যাকাণ্ডগুলোর বিবরণ এতটাই ভয়ানক ও চাঞ্চল্যকর ছিল যে সেটি সাধারণ পাঠকের শরীর শিউরে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত। তবে গল্পের কিছু কিছু অংশ পড়তে গিয়ে আমি আশাহত হয়েছি। গল্পের কিছু কিছু ঘটনার কোনো সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ বইয়ে ছিল না। সেইসব ঘটনার পিছনে থাকা রহস্যগুলোর কোনো সুস্পষ্ট বর্ণনা লেখক দেননি। গল্পের শেষ পর্যায়ে যখন হত্যাকাণ্ডগুলোর রহস্য উন্মোচিত হচ্ছিল, তার মধ্যেও যেন কেমন একটা ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছিল। তবে সর্বোপরি "অবিনশ্বর" বইটির মাধ্যমে লেখক যে পাঠক হৃদয়ে একইসাথে ভয় ও উত্তেজনাকর অনুভূতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন, সেটি বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। সেই সাথে বইয়ে থাকা এই অসমাপ্ত রহস্যের পিছনে যে আরো বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে, তার একটি ক্ষুদ্র কিন্তু সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও লেখক বইয়ের শেষে রেখে গেছেন।

যারা ডার্ক সাইকোলজি সম্পর্কিত গল্প পড়তে পছন্দ করেন এবং একই সাথে রহস্য ও হরর প্রকৃতির গল্প ভালবাসেন, তাদের কাছে বইটি বেশ ভালো লাগবে আশা করি।
.
.
.
©️ অর্পিতা চৌধুরী
Profile Image for Shadman Navid.
36 reviews1 follower
March 21, 2025
অবিনশ্বর

°
কাহিনীর শুরু হয় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম দিয়ে। ছিম ছাম সুন্দর একটি গ্রাম, যে গ্রামের মানুষ তাদের দিনের সব কাজ শেষে যে যার মতন ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ গ্রামের চারদিকে শুরু হয় চিৎকার, যেন নেমে এসেছিল সাক্ষাৎ শয়তান আর নরক। কি হয়েছিল সেদিন রাতে সেই ছিম ছাম গ্রামে?

এবার চলুন বর্তমানে ঘুরে আসা যাক।

আদ্রিয়ান। নির্জনতা, নিরবতা আর নিজের মাঝে থাকা এক চরিত্র। পড়াশুনার বিষয় ছিল সাইকোলজি কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ না করেই ইস্তফা দিয়ে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনকে। নিজের খামখেয়ালি জীবন নিয়ে চলছিল বেশ ভালোই সে, হঠাৎ একদিন তার বাড়িওয়ালার বাসায় এক বিড়ালের বিভৎস মৃত্যু তার চিন্তাকে ওলট পাল��� করে দেয়, ঘটতে থাকে তার জীবনে নানা লৌকিকতা বিবর্জিত ঘটনা। বিড়ালের বিভৎস এই মৃত্যু কি অশুভ কিছুর ইংগিত করছে? মাঝে মাঝে অগোছালো মাথার একটি ছেলে আড়াল থেকে তাকে দেখে। ছেলেটা কি আসলে বাস্তব? কি চায় সে? একের পর এক ভয়াবহ দু:স্বপ্ন দেখছে আদ্রিয়ান, এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি!?

রশীদ। পুলিশ অফিসার। ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে বিভৎস বিড়াল হত্যাকান্ডে, এরপর একই রকম প্যাটার্নে সংগঠিত হতে থাকে একের পর হত্যাকান্ড। কিন্তু সমস্যা একটাই, হত্যাকান্ডের অথবা হত্যাকারীর সিরিয়াল কিলিং এর কোনো মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। কে হত্যাকারী? এরকম বিভৎস হত্যাকাণ্ডের রহস্য কি?

আদ্রিয়ান এবং রশীদ মিলে একসাথে নেমে গেল এক দুর্ধর্ষ অভিযানে, যেখানে রয়েছে বিপদের হাতছানি। তারা কি শেষ পর্যন্ত বিপদকে জয় করে পেরেছিল সফল হতে? অতীতে গ্রামে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনার সাথে এখনের একের পর এক খুনের রহস্য কি?

। চাপাতি ।
। দ্য থার্ড আই ।
। রক্ত ।

°

আমার জীবনে বলা যায় প্রথম পড়া বই যেটায় বইটি পড়ার সাথে সাথে লেখক Sazzad Siam - ভাই এর সাথে পাঠ অনুভূতি প্রকাশ করে যাচ্ছিলাম। লেখাটা পড়া শুরু করেছিলাম গভীর রাতে এবং প্রথম চ্যাপ্টার পড়ার সময়ই নার্ভে বেশ চাপ পড়ে। তবে আমি বলব বইটা পড়ার সত্যিকার মজা পেতে চাইলে রাত্রে বেলায় পড়া উচিত। বই পড়ার সময় একবার মনে হতে পারে আরে এই ব্যাটাই শিওর সিরিয়াল কিলার, আবার কিছুক্ষণ পর মনে হতে পারে আরে এই লোক না আরেকজন সিরিয়াল কিলার। তবে মজার ব্যাপার হল প্রথম থেকে আমি একজন ভদ্র চরিত্রকে মনে করছিলাম যে শেষে দেখব এই ব্যক্তিই আসল সিরিয়াল কিলার কিন্তু আমার চিন্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লেখক সিয়াম ভাই এমন একজনকে কিলার এবং মাস্টার মাইন্ড হিসেবে সামনে আনলেন যা দেখে আমার হিসাব ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যায়। লেখক এই জায়গায় একদম ভালো টুইস্টের খেল দেখিয়ে দিয়েছেন, তাই কাহিনীর শেষে গিয়ে বেশ মজা পেয়েছি। 😃

বইটি পড়ার সময় 'স্বপ্ন' নিয়ে কিছু লেখা আছে, সেগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখতে পারেন। আমরা যে স্বপ্ন দেখি তার ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে।

অবিনশ্বর পড়ার পর কিছু প্রশ্ন হয়ত সামনে আসতে পারে আর অনেক প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এখনো হয়ত অজানা, যার উত্তর পাওয়া যাবে পরবর্তী বই 'কৃষ্ণকায়া' -তে।

আর একটা কথা, যাদের ভায়োলেন্স, বিভৎস খুন খারাপি ব্রেনের নার্ভে অতিরিক্ত চাপ ফেলে, তাদের জন্য বইটি এড়িয়ে যাওয়া ভালো। তবে, ভয় পেতে চাইলে এবং নার্ভে চাপ পরাটা যদি মজা হিসেবে পেতে চান, অবশ্যই রিকমেন্ড করব 'অবিনশ্বর'।

~~~

📖 বইঃ অবিনশ্বর

✒️লেখকঃ সাজ্জাদ সিয়াম

📍 জনরাঃ সিরিয়াল কিলিং/হরর ফ্যান্টাসি

📜 প্রকাশকঃ ঋদ্ধ প্রকাশ

~~~
Profile Image for Subril Haque.
16 reviews1 follower
March 24, 2025
এক কথায় বলতে গেলে, অবিনশ্বর ছিল একটা পুরোদস্তুর রোলার কোস্টার রাইড। লেখকের প্রথম বই হয়েও কোথাও নোভিস মনে হয়নি। বরং, বেশ কিছু জায়গায় মনে হয়েছে সে বেশ আট ঘাট বেধেই লিখতে বসেছেন।
বইটিতে বেশ কিছু সেনসিটিভ সাইকোলজিকাল টার্ম নিয়ে আলোচনা আছে। সেই সাথে রয়েছে অতি মাত্রার ব্রুটালিটি। হ্যাঁ, এটি স্ল্যাশার ঘরানার, তাই রক্তপাত, গ্রাফিক্যাল মার্ডার, এমনকি ফিলিসাইড (শিশু হত্যা)-এর মতো বিষয়ও এসেছে। এই বিষয়গুলো লেখক খুব সাহসিকতার সাথে, কিন্তু প্রয়োজনীয় ভারসাম্য বজায় রেখেই পরিবেশন করেছেন।
শুরুটা থেকেই টানটান, যদিও প্রথম ইনসিডেন্ট থেকে দ্বিতীয় ইনসিডেন্টের ট্রাঞ্জিশন পার্টে এসে আমার মনোযোগ খানিকটা কমে যাচ্ছিল। সম্ভবত, ইদানীংকালে বেশি ছোট আকারের, টু-দ্য-পয়েন্ট গল্প পড়া হয় বলে এমন মনে হয়েছে। কিন্তু একবার গল্পের গ্রিপে পড়ে গেলে—২২০ পাতা কখন শেষ করলাম টেরই পাইনি।
এটা স্রেফ একটি থ্রিলার পড়ার অভিজ্ঞতা নয়। আমার কাছে এটা যেন একটা গাইডলাইন হয়ে উঠেছিল। কেন, সেটা হয়তো সময়ই বলবে।
গল্পের কথা যদি বলি—
ভয়ংকর এক খুনি নরক নামিয়ে এনেছে আমাদের চেনা শহরে। এস আই রশীদের ভাষায়—এ যেন রক্তচোষা সাইকো সিরিয়াল কিলার। একের পর এক শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়া খণ্ডিত লাশের রহস্যের পেছনে ছুটছে গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। সেই রহস্যের সঙ্গে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে আত্মভোলা স্কুলশিক্ষক আদ্রিয়ান, যিনি নিজেও ক্রনিক ডিপ্রেশনের শিকার।
গল্পটাকে যদি তিনভাগে ভাগ করি, প্রত্যেক অংশই ছিল অসাধারণ। শহরের বাইরে গ্রামীণ এলাকা থেকে শুরু করে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় পৌঁছানোর ট্রানজিশন—একদম বাস্তব মনে হয়েছে। ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, গা ছমছমে আবহ—সবকিছু খুব নিখুঁতভাবে করা হয়েছে।
আমার সবচেয়ে বড় এলার্জি—অনেক বইয়ের শুরু অসাধারণ হলেও শেষে এসে মনে হয়, লেখক যেন তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে চাইছেন। অবিনশ্বর সেই জায়গায় এসে আমাকে একটুও হতাশ করেনি। বরং, এর এন্ডিং একদম ঝলমলে। সাথে যে "কৃষ্ণকায়া"-এর মতো সম্ভাবনাময় ফিউচার পর্বের হিন্ট দিয়ে গেল, তাতে আমি পুরোপুরি সিয়াম ভাইয়ের ফ্যানবয় হয়ে গেলাম। Honestly, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের "Slasher King" ট্যাগটা তিনি ডিজার্ভ করেন।
চরিত্র বিশ্লেষণ:
আমার মনে হয়েছে, গল্পের দ্বিতীয় ক্যারেক্টারটাই ছিলো আসলে মূল নায়ক। প্রথম ক্যারেক্টারের ফুল পটেনশিয়াল হয়তো আমরা দেখিনি। তাকে একজন গোয়েন্দার চেয়ে বেশি অসহায় লেগেছে। তার ডিডাকশন স্কিলস যদি আরেকটু বেশি দেখতে পেতাম, মন্দ হত না।
এছাড়া রয়েছে অনেকগুলো ক্যারেক্টার। প্রত্যেকটা ক্যারেক্টারেরই একটা নিজস্বতা ছিলো, স্টারটিং ছিলো এন্ডিং ছিল। লেখক ইচ্ছা করেই আপনাকে সারলোক হওয়ার একটা চ্যান্স দিবেন, সেই যায়গায় আপনি সারলোক নাকি জয়ন্ত মানিক তা সময়ই বলে দিবে।
কিছু প্রশ্নের উত্তর বাকি থেকে গেছে, হয়তো সেগুলো আমরা পরবর্তী বইয়ে জানতে পারব।
গল্পে খুঁত খুঁজতে চাইলে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস নিয়েও হয়তো খুব বেশি কিছু পাওয়া যাবে না।
সবশেষে:
অবিনশ্বর নিঃসন্দেহে এক কথায় মাস্টারপিস। নতুন লেখকের জন্য এটি যে মানদণ্ড তৈরি করেছে, তা চাইলেও কেউ সহজে ছুঁতে পারবে না।
সাজ্জাদ সিয়াম ভাই—টেক মাই ফুল রেসপেক্ট!
৫/৫
Profile Image for Tanzil Saad.
95 reviews1 follower
April 2, 2024
অবিনশ্বর লেখক সাজ্জাদ সিয়াম-এর প্রথম উপন্যাস। ফেসবুকে বেশ ভালো রকমের পরিচিত একটা নাম সাজ্জাদ সিয়াম। তার লেখা ডার্ক সাইকোলজিক্যাল ছোট গল্পের বেশ হাকডাক বইয়ের গ্রুপগুলোয়। তার লেখা অবিনশ্বর বইটাও সেম জনরার।

অবিনশ্বরের গল্প এগিয়ে চলে ভবঘুরে আদ্রিয়ানকে ঘিরে। আলাভোলা টাইপের একটা চরিত্র আদ্রিয়ান। স্বশিক্ষিত সাইকোলজিস্ট। শহরে হুট করেই নৃশংসভাবে খুন হতে থাকে কিছু মানুষ। আপাত দৃষ্টিতে যাদের মাঝে কোন যোগসাজশ নেই। সবাইকেই অত্যন্ত নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়। সিরিয়াল কিলিংয়ের রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়েন এস আই রশীদ। কিন্তু কোন কুলকিনারাই পান না ভদ্রলোক। এদিকে ঘটনাচক্রে এই হত্যাকাণ্ড গুলোর সাথে জড়িয়ে পড়ে আদ্রিয়ান নিজেও।

ফেসবুকে গল্প লিখে হাত পাকানো সিয়াম ভাই উপন্যাসেও বেশ চমৎকার কাজ করেছেন। লেখনশৈলী প্রথমদিকে খানিক জড়তা মিশ্রিত হলেও আস্তে আস্তে সেটা কেটে গেছে। তার স্বভাবসুলভ এক্সট্রিম ব্রুটালিটির বর্ণনাগুলো ভালোই সামলেছেন। সাইকোলজিক্যাল হরর বই���ায় তিনি একসাথে অনেকগুলো সাইকোলজিক্যাল টার্ম ব্যবহার করেছেন। এটা ভালো লেগেছে। বইয়ের প্রথম অর্ধেক পড়ে একটু স্লো মনে হচ্ছিল তবে শেষদিকে ভালো গতি পায় ঘটনা। আর একের পর এক টুইস্টে আসলেই চমকে গেছি। আমার যেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটা হলো সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারগুলোর ক্লিশে প্লট থেকে বেরিয়ে তিনি ইউনিক একটা কাহিনি রচনা করেছেন। যেটা সহজ কাজ নয়। আর সাইকোলজিক্যাল ব্যাপারস্যাপারে লেখকের জ্ঞান প্রচুর তা বইয়ে স্পষ্ট। আর গল্প যেভাবে শেষ হয়েছে তাতে আমি স্যাটিসফাইড। এটার সিকুয়েল না আসাই ভালো আমার মতে। গল্প এখানেই শেষ হোক।

চরিত্রের দিক থেকে মুল চরিত্র আদ্রিয়ানকে বেশ ভালো লেগেছে। মানব চরিত্রের ভালনেরাবিলিটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন লেখক। এস আই রশীদ চরিত্রটা ভালো লাইমলাইট পেয়েছে বইয়ে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধির যে ঝলক রশীদ দেখিয়েছেন তা ভালোই। আরো অনেক চরিত্র গল্পের ফ্লো-তে এসেছিল। সবগুলোই মোটামুটি পাকাপোক্ত মনে হয়েছে।

প্রথম উপন্যাস হিসেবে ভালো কাজ দেখিয়েছেন সাজ্জাদ সিয়াম। সামনে আরো উন্নতি করবেন বলে আশা রাখি। মোটামুটি লেখার মধ্য দিয়ে সব রহস্য বেশ ভালোভাবেই সমাধান করেছেন। তবে [স্পয়লার অ্যালার্ট 🚫🚫]

অনামিকা মৃধার মৃত্যু বোধগম্য হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই সে বাপের সাথে মিলে সৎ মা রাবেয়া সাকলাইনকে হত্যা করে। কিন্তু পরে তাকে কেন আত্মহত্যার দিকে ঠেলা হলো আমি বুঝিনি।


মোটা দাগে আপনার যদি ডার্ক সাইকোলজিক্যাল হরর আর ভীষণ ব্রুটালিটি পছন্দ হয় তবে এই বই আপনার জন্যই লেখা। ঋদ্ধ প্রকাশের প্রোডাকশন ভালো। সজল ভাইয়ের করা প্রচ্ছদটা খুব একটা ভালো লাগেনি।
Profile Image for Aridee Hasan Sakib.
59 reviews
July 11, 2023
বইয়ের নাম :- অবিনশ্বর
লেখক :- সাজ্জাদ সিয়াম
প্রচ্ছদ :- সজল চৌধুরী
প্রকাশনী :- ঋদ্ধ প্রকাশ
প্রথম প্রকাশ :- ফেব্রুয়ারি ২০২৩
মুদ্রিত মূল্য :- ৫০০ ৳
পৃষ্ঠা :- ২২৪

অবিনশ্বর বইটা হাতের নেয়ার আগে চিন্তাভাবনা ছিল ডার্ক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের সংমিশ্রণে মিথ টাইপের কিছু আর দুঃস্বপ্ন নিয়ে কিছু জানতে পারবো উপন্যাসটিতে।

মৃ*ত্যু নিয়ে জমজ দুই বাচ্চা প্রশ্ন করছে তার মা মিতাকে। তাদের বাবা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়, সেই শোক পালন করা হচ্ছে ১২ দিন যাবত পরিবারটিতে। তারা চাকরি বদলির কারণে বান্দরবান এসেছিলো। বাড়িটিতে বান্দরবানের দক্ষিণে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। আপাতত বাড়িতে মিতা তার জমজ দুই ছেলে ও ছোট্ট একটা মেয়ে, তার বোন ও বোন জামাইকে নিয়ে বাড়িটিতে আছে। হঠাৎ রাতে তাদের পুরো পরিবারকে একছেলে চা*পাতি দিয়ে মা*থা আলাদা করে ফেললো। এই ঘটনা দিয়েই উপন্যাসের শুরু।
পুরো বই জুড়ে রয়েছে দুঃস্বপ্ন ও মা*থা কাটা সিরিয়াল কিলা*রের টানটান উত্তেজনা। আদ্রিয়ান চরিত্রটি মিসির আলি ও হিমুর মিশ্রিত ভার্সন মনে হয়েছে আমার কাছে। আদ্রিয়ান চরিত্রটি বেশ বুদ্ধি দৃপ্ত তবে বেশ ভুলমনা। আদ্রিয়ান এর বাবা মা কে, সে মুসলিম না হিন্দু কিছুই জানে না। আদ্রিয়ান একটা চার্জের ফাদারের কাছে বড় হয়েছে। এরপরে সে হামিদা বেগমের বাড়িতেই থাকে। হামিদা বেগম আদ্রিয়ানকে নিজের ছেলের মতোই স্নেহ,মায়া,মমতা,ভালবাসা দিয়ে আগলিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। হামিদা বেগমের ছেলে মিজান ও মেয়ে মীরা কে নিয়েই তার পরিবার। তাদের পরিবারের পোষা বিড়াল আদ্রার মা*থা কা*টা দিয়ে নতুন করে রহস্যের জোট বাধতে শুরু করে। মিজানের বন্ধু পুলিশ অফিসার রশীদ আসে তদন্ত করতে। বিড়ালের কেস দেখে অতটা সিরিয়াস হয় না রশীদ,কিন্তু যখন রাইটার ও গণ্যমান্য কিছু ব্যক্তির কাটা মা*থা ও কপালের কাছে থার্ড আই অংকিত লা*শ পাওয়া গেলে পুরো পুলিশ টিম নড়ে উঠে। ইন্সপেক্টর রশীদ আদ্রিয়ানের সহায়তা নেয়, তবে একপর্যায়ে আদ্রিয়ান এই রহস্যজালে ফেসে যায়। রশীদ কি পারবে এই খু*ন গুলো ঠেকাতে..? পারবে কি আদ্রিয়ানকে বিপদ মুক্ত করতে..? তারা দুজনেই কি এই রহস্যের সমাধান করতে পারবে..? জানতে হলে পড়তে হবে অবশ্যপাঠ্য এই বইটি।

পুরো বই বিশ্লেষণ করলে বেশ উপভোগ করেছি বইটি। ফিনিশিং এ ধোয়াশা আর হামিদা বেগমের রহস্যটা কিছুটা ঘোলাটে থেকেই গেলো। বইয়ের শেষে সমাপ্তি লেখাটা দেখে হতাশ হয়েছি। আশা করেছিলাম পরবর্তীতে কিছু আসবে, মানে বইটা ট্রিলজি হতে পারতো…! যাইহোক লেখকের কাছে অনুরোধ আদ্রিয়ান চরিত্রটি নিয়ে ভবিষ্যতে আপনার আরো লেখা চাই 🥰🤍
Profile Image for Lutfun Naher.
32 reviews
August 26, 2025
ভয়, রহস্য আর উত্তেজনার এক এক্সট্রিম অভিজ্ঞতা—
নশ্বর মানুষের অবিনশ্বর হতে চেয়ে শহরে নারকীয় তান্ডব চালিয়ে যাওয়া, রহস্য, সিরিয়াল কিলার আর পুলিশের তদন্ত—সবই একসাথে পাবেন অবিনশ্বর-এ।



উপন্যাসের শুরু--
"মৃত্যুই কি একমাত্র সত্যি? একমাত্র মুক্তির পথ? আর কোনো গন্তব্যই কি নেই আমাদের এই তুচ্ছ, নশ্বর মানব জীবনের?" বিড়বিড় করল মিতা।

জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। বহুক্ষণ ধরে আঁধ খাওয়া চাঁদটার দিকে চেয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। আধখাওয়া চাঁদটার সাথে নিজের জীবনের এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পাচ্ছে। তার জীবনটাও তো কেমন যেন অর্ধেক হয়ে গেছে! শূন্যতায় হাতড়ে বেড়ানো অপূর্ণ এক জীবন।

"মৃত্যু মানে কি, মা? মানুষ মরে যাওয়া?"
চমকে উঠে ফিরে তাকায় “মিতা”। কতক্ষণ ধরে বাইরে চেয়ে ছিল? মনে করতে পারল না। বাইরের অন্ধকার আর ওপরের ওই ভাঙা চাঁদের সাথে নিজের জীবনের সাদৃশ্যগুলো তাকে ডুবিয়ে দিয়েছিল গভীর নিঃসঙ্গ নিস্তব্ধতায়। ..........

আর তার কিছুক্ষন পরই বৈশাখী-তে ধেয়ে আসা আকস্মিক ঝড়ের আঘাতের মতো করে কালো শার্ট পরিহীত কিশোর সেই মিতা ও তার পুরো পরিবারকে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় “অবিনশ্বর”র যাত্রা। যেখানে ভয়ংকর এক খুনি নশ্বর পৃথিবীকে পরিনত করতে চেয়েছে এক অবিনশ্বর-অন্তহীন পৃথিবীর। পুরো বই জুড়ে রয়েছে দুঃস্বপ্ন ও মা*থা কা*টা সিরিয়াল কিলা*রের টানটান উত্তেজনার। আর পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সেই সিরিয়াল কিলিং এর সাথে জাড়িয়ে পরে ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভোগা আত্মভোলা স্কুল শিক্ষক আদ্রিয়ান। তার চরিত্রটি মিসির আলি ও হিমুর মিশ্রণ মনে হয়—বুদ্ধিদীপ্ত, কিছুটা ভুলমনা এবং অতীতের রহস্যে জর্জরিত। হামিদা বেগমের পরিবার, তাদের পোষা বিড়াল, পুলিশ অফিসার রশীদ—সবই রহস্যের জটিলতা আরও বাড়ায়। গল্পের টানটান উত্তেজনা পুরো বই জুড়ে ধরে রাখা হয়েছে।

“নশ্বর মানুষ যখন অবিনশ্বর হতে চায়, তখন শহরে নেমে আসে ভয়ংকর এক নারকীয় তান্ডব, নশ্বর থেকে অবিনশ্বরের ভয়ংকর যাত্রা---দুঃস্বপ্ন, রহস্য ও হ*ত্যা*র এক টানটান অভিজ্ঞতা, যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাকে ধরে রাখবে। অবিনশ্বর পড়ুন এবং অনুভব করুন।”
Profile Image for Sajid.
7 reviews2 followers
December 12, 2023
মীরাদের বাসায় নৃশংস ভাবে একটি বিড়াল খুন হওয়া দিয়ে রহস্যের শুরু। সেই রহস্যের জালে জড়িয়ে যায় তাদের বাসার ভাড়াটিয়া আদ্রিয়ান। ঢাকা শহরে একের পর ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে নামাটাই তার জীবনকে পরিণত করে এক মূর্তিমান দুঃস্বপ্নে। তার পিছু নেওয়া এক তরুণ ছেলে সবকিছুর সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু তাকে খুঁজে বের করতে গিয়ে পুলিশ অফিসার রশীদ এবং আদ্রিয়ান গভীর এক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়। অন্ধকারের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গল্প অবিনশ্বর।

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পড়তে ভালো লাগলেও বাংলাতে এরকম বই খুব কম পেয়েছি। সাজ্জাদ সিয়ামের প্রথম মৌলিক উপন্যাসটি এই জনরার স্বকীয়তা ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। শুরু থেকে লেখার স্টাইল আমাকে আকৃষ্ট করেছে। অসম্ভব পর্যায়ের ভায়োলেন্স এবং তার সুনিপুণ ডিটেইলিং অভিনব ছিল। আদ্রিয়ান চরিত্রটি বেশ রিলেটেবল। তার বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা মুগ্ধকর ছিল। চরিত্রটির ক্রমশ মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন বইয়ের দিকে চোখ আটকে রেখেছিল। বইটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হলেও তার সাথে প্যারানরমাল উপাদান ঘটনাকে দুটি আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে বাধ্য করেছে। তাই কাহিনী কোনদিকে গড়াচ্ছে তা আগে থেকে অনুমান করা কঠিন ছিল। সবশেষে ভয় হচ্ছিল লেখক হয়তো গড়পড়তা এন্ডিং দিয়ে বই শেষ করে দিবেন। কিন্তু সবকিছুর ভারসাম্য রেখে যেভাবে বই শেষ হলো তা আমার কাছে উপযুক্ত মনে হয়েছে। যদিও শেষের দিকে কিছুটা তাড়াহুড়ো ছিল, তবু বইটিকে মোটাদাগে তৃপ্তিকর বলা যায়।

▪️বই : অবিনশ্বর
▪️লেখক : সাজ্জাদ সিয়াম
▪️প্রকাশনী : ঋদ্ধ প্রকাশ
▪️পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২২৪
▪️মুদ্রিত মূল্য : ৫০০ টাকা
5 reviews
July 14, 2025
** বান্দরবানের শেষ মাথায় মায়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি গ্রাম শিবপুর। তেরোই ভাদ্রে শিবপুরে শুরু হলো অশুভ এক ছায়ার নারকীয় তাণ্ডব। এক ভয়ংকর সাইকো সিরিয়াল কিলারের উত্থান,যে মানুষকে শুধু মারছে না,জব*আই করে তাঁদের মাথা কেটে আলাদা করে বেড়াচ্ছে।

** সাজ্জাদ সিয়াম ভাইয়ের লেখা ডুয়োলজির প্রথম বই “অবিনশ্বর” শেষ হলো। গল্পের শুরুতেই ভয়ংকর এক দুঃস্বপ্নের রাতের বর্ণনা। স্ল্যাশার থ্রিলার এই বই এর প্রতিটি খুনের ঘটনা নৃশংসতায় ভরপুর,তাই অনেকের কাছেই পড়তে গিয়ে অস্বস্তি লাগতে পারে। গল্পের মূল চরিত্রগুলোর একজন আদ্রিয়ান ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভোগা ভবঘুরে টাইপ মানুষ। নিজের অজান্তেই প্রতিটি নৃশংস খুনের সাথে তার জড়িয়ে পড়া। জ*বাই করা প্রতিটি লাশের রহস্য কোনভাবেই সমাধান করতে পারছেনা পুলিশ কিংবা আদ্রিয়ান কেওই। পুলিশের এস আই রশিদের সকল প্রচেষ্টার পরেও নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে তার। টেকনলোজি কিংবা পর্যাপ্ত ফোর্স থাকার পরেও তারা এমন এক অদৃশ্য শক্তির মুখোমুখি হয়েছে যেখানে কোন সূত্রই পর্যাপ্ত না। গল্পের ভাষা এবং খুনের ঘটনাগুলোর বর্ণনা সাবলীল ছিল। যথেষ্ট রহস্যে ভর্তি একটি থ্রিলার, অতিরিক্ত প্যাঁচানো হয়নি যার কারণে অনেক ভালো লেগেছে। গল্পের শুরুর অংশ অপেক্ষায় শেষ অংশ দারুণ কিছু টুইস্টে ভরপুর। বইটির মধ্যে খুব সুন্দর কিছু অলংকরণ রয়েছে গল্পের সাথে মিল রেখে এবং বইয়ের প্রচ্ছদটিও যথেষ্ট সুন্দর। সব মিলে আশা করি দ্বিতীয় পার্ট “কৃষ্ণকায়া” আরো দারুণ হবে।


বইঃ অবিনশ্বর
লেখকঃ সাজ্জাদ সিয়াম
প্রকাশনীঃ ঋদ্ধ প্রকাশ
Displaying 1 - 30 of 56 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.