জীবনের কতগুলাে বসন্ত পার হয়ে গেছে, ম্লান হয়ে গেছে কতশত কাকডাকা ভাের। আবছা সুতির মতাে, জীবন আস্তে আস্তে আচ্ছন্ন হয় ধূসরতায়৷ সময়ের সরল সংখ্যা কমে আসছে। ধীরে ধীরে। সব পাখি নীড়ে ফেরে৷ সব নদী ফিরে যায় মােহনায়। তবু কিছু মানুষ, ভ্রান্তির মায়াজাল ভেদ করে, ফিরে আসতে চায় না। মােহ আর মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে তারা ছুটতে পারে না আদিগন্ত অনন্তের পথে। তবু ফিরতে হবে। বেলা ফুরাবার আগে, ঠিক ঠিক চিনে নিতে হবে পথ সন্ধ্যের ঘনঘাের আঁধারের অতলতায় ডুবে যাবার আগে, জীবন তরিটিকে ভেড়াতে হবে কুলে৷ রাতেরও শেষ আছে৷ ক্লান্তিরও আছে অবসান। জীবনের জড়তার জোয়ার ছেড়ে, নতুন করে একবার, শুধু একবার জ্বলে উঠতে হবে। নিজেকে আরেকবার ঝালিয়ে নিতে আজ তবে ডুব দেওয়া যাক...
আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা - লেখক আরিফ আজাদকে বর্ণনা করতে গিয়ে একথাই বলেছেন ডঃ শামসুল আরেফিন। গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, “তিনি বিশ্বাস নিয়ে লেখেন, অবিশ্বাসের আয়না চূর্ণবিচুর্ণ করেন।” আরিফ আজাদ এর বই মানেই একুশে বইমেলায় বেস্ট সেলার, এতটাই জনপ্রিয় এ লেখক। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা লেখকদের একজন আরিফ আজাদ।
১৯৯০ সালের ৭ই জানুয়ারি চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া এ লেখক মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রাম জিলা স্কুলে। একটি সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।
লেখালেখির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আরিফ আজাদ এর বই সমূহ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তার প্রথম বই ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায়। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজিদ বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে তার নাস্তিক বন্ধুর অবিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মত নানা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে খণ্ডন করে। আর এসব কথোপকথনের মধ্য দিয়েই বইটিতে অবিশ্বাসীদের অনেক যুক্তি খণ্ডন করেছেন লেখক। বইটি প্রকাশের পরপরই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এটি ইংরেজি ও অসমীয়া ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। ২০১৯ সালের একুশে বইমেলায় ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ - ২’ প্রকাশিত হয়ে এবং এটিও বেস্টসেলারে পরিণত হয়। সাজিদ সিরিজ ছাড়াও আরিফ আজাদ এর বই সমগ্রতে আছে ‘আরজ আলী সমীপে’ এবং ‘সত্যকথন’ (সহলেখক) এর মতো তুমুল জনপ্রিয় বই।
এক্সামের রুটিন দেখে মন খারাপ। ভাবলাম পড়তে বসব। আবার ভাবলাম এতদিন পড়িনি আজকে না পড়লে বিশাল কিছু ক্ষতি হবেনা। তারপরেই এই বইটার দিকে চোখ গেলো। কিছুটা নিজেকে চিন্তা থেকে ডিস্ট্রাক্ট করার জন্যই পড়তে ধরা।
আসল কথা হলো বইটার মধ্যে একটা জাদু আছে। সব কাহিনী, উপমা সব কিছুই প্রায় জানা শুনা। তারপরও পড়ার আগ্রহ কমেনা। একটার পর একটা পেইজ পড়তেই ইচ্ছা হয়। কেউ কোনো কিছু জানলেই যে সেটা সঠিক জায়গায় স্থান দিতে পারে এমনটা স্বভাবত হয়না। এই বইটা এখানেই তার জাদু দেখায়। কোরানের বিভিন্ন আয়াতকে সুনির্দিষ্ট স্থানে বসায়ে সেগুলোর তাৎপর্য আরো বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন ঘটনার আলোকে বিভিন্ন আয়াত বর্ননা করে আর কিভাবে সেই সব আয়াত দ্বারা পরিচালিত হয়ে নিজের মন আর অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যায় সেটা অনুধাবন করায়।
সুখ আসলে কাকে বলে? চাকচিক্য নাকি মনের প্রশান্তিকে? জিবনে চলার পথে কে বা কারা গুরুত্বপূর্ণ? যে বা যারা ছেড়ে চলে যায় তারা কী আসলেই আমাদের দুঃখের কারন হবার যোগ্য? আপনার নামে কে বা কারা কুৎসা প্রচারে ব্যাস্ত আর সেটার জন্য আপনার সম্মানহানি হচ্ছে তাই মন খারাপ? ভেবে দেখুন মহানবীর কথা, যিনি কাফেরদের মধ্যেও জনপ্রিয় ছিলেন "সত্যবাদী" হিসাবে, তারপরও তিনি মানুষের প্ররোচনা থেকে রেহায় পাননি। আপনি আমি তো তুচ্ছ।
মানুষ বড় হতে চায় কেন? বড় হবার জন্য যা-তা করে কেন? এই গুনটা আসলে কেমন আর তার ক্ষতির দিকটাই বা কেমন সে সম্পর্কে Francis Bacon এর দুইটা লাইন খুব যুক্তিযুক্তঃ "It is a strange desire of a man to attain some power by losing his liberty. In order to attain some power over another man, loses power over himself."
মটিভেশনাল বা আত্ম উন্নয়ন মূলক বই প্রায় সবাই পড়ে। এই বইটিকেও সেই কাতারেই রাখা যায়। তবে এই বইটির বিশেষত্ব হলো এই বইটা অন্য বইগুলোর মতো নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে শেখাবেনা বা অন্যান্য বইয়ের মতো মানুষকে বা অপরকে ছোট করে নিজেকে সুখে থাকতে শেখাবেনা।
সাব-কনশাস মাইন্ড সমন্ধে জানা আছে? সেটার গুরুত্ব অপরিসীম। কেমন হতো সেটাকে যদি সঠিক ভাবে ব্যাবহার করা যেত? যদি ইসলামিক ওয়েতে ব্যাবহার করা যেত? শান্তির ধর্মে সব কিছুই যে শান্তি দ্বারা নিরাময় করার পথ আছে সেটা কারোর অজানা নয়। শুধু দরকার একটু সঠিক জ্ঞানের। সেসব জ্ঞানের জন্য এই রকম বই গুলো খুব দরকারী।
প্রথমে মনে করছিলাম সাধারণ কিছু লেখা। পড়ে চমকে গেলাম। দারুন সব রিমাইন্ডার। লেখক সুক্ষ্ণভাবে আমাদের বিশেষ করে কিশোর-তরুণদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন। কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা এবং সাহাবাদের জীবনী থেকে সমাধান দিয়েছেন। পাশাপাশি উপন্যাসের ঢংয়ে লেখাগুলো পড়ে দারুন লাগছিলো।
তরুণরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় লেখক তা এই বইটিতে আলোচনা করেছেন এবং তার সমাধান দিয়েছেন।
বইটিতে ১৮ টি ভাগ রয়েছে। প্রত্যেক ভাগ আমাদের একটি করে শিক্ষা দেয়-
১। শুরুর আগে: একটি নাসিহা মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যা আমাদের পথভ্রষ্ট হতে রক্ষা করে।
২। মন খারাপের দিনে: জীবনে যেমন সুখ আছে তেমনি আছে দুঃখ। দুঃখে আত্মহারা না হয়ে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ তাআ'লা সেই ব্যক্তিকে উত্তম প্রতিদান দেন।
৩। আমার এত দুঃখ কেন? এই পৃথিবী আমাদের জন্য পরীক্ষার ময়দান। পরীক্ষার সম্মুখীন হতে যেয়ে ভেঙে পরলে হবে না বরং ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতে হবে এবং নিজের ভুলের জন্য মাফ চাইতে হবে।
৪। বলো, সুখ কোথা পাই? ইহকালের সুখের পিছে ছুটবার দরুন আমরা মনে শান্তি পাই না। কিন্তু যে ব্যক্তি পরকাল ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা ভেবে কাজ করেন, তিনিই প্রকৃত সুখী।
৫। জীবনের ইঁদুর - দৌড় কাহিনি: নিত্যদিনের প্রতিযোগিতায় আমরা আমাদের ইবাদতের কথা ভুলে যায়। কি নিশ্চয়তা আছে আগামীকাল আমরা বেঁচে থাকবো! তাই আমাদের অবশ্য কর্তব্য প্রতিদিনের ইবাদত প্রতিদিন করা।
৬। চোখের রোগ: চোখের জন্য হারাম জিনিস আমরা প্রতিনিয়তই দেখে চলেছি, যা আমাদের আমল নষ্ট করে দিচ্ছে। বান্দার উচিত তওবা করে, করজোড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা।
৭। আমরা তো স্রেফ বন্ধু কেবল: বন্ধুত্বের নামে বর্তমানের ছেলেমেয়েরা হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে যা তাদের সর্বনাশের কারণ। এখনই সময় তওবা করে সঠিক পথে আসা।
৮। চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়: মৃত্যুর পরও মানুষের আমলনামায় পাপ পুরণের হিসাব হতে থাকে। তাই বান্দার উচিত মৃত্যুর পূর্বে এমন কিছু করে যাওয়া যেন তার এবং বাকিদের উপকারে আসে।
৯। বেলা ফুরাবার আগে: পৃথিবীর অর্জন পৃথিবীতে থেকে যাবে, মৃত্যুর পর যাবে শুধু আমল। তাই মৃত্যু আসার আগেই আমাদের কর্মের প্রতি সচেষ্ট হতে হবে।
১০। মেঘের কোলে রোদ হেসেছে: আল্লাহ তাআ'লার নিকট বান্দা তার পাপের জন্য মন থেকে দোয়া চাইলে এবং ভবিষ্যতে আর পুনরাবৃত্তি না করার সংকল্প করলে আল্লাহ মাফ করে দেন। আমাদের উচিত বেশি বেশি তওবা করা।
১১। বসন্ত এসে গেছে: বান্দার জীবনে বসন্ত হলো তার দ্বীন। নিজের নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এই বসন্ত টিকিয়ে রাখতে হয়। যে জয়ী হয় সেই প্রকৃত মুমিন।
১২। সালাতে আমার মন বসে না: সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় কিন্তু সেই সময়েই রাজ্যের চিন্তা ভর করে। এই থেকে পরিত্রাণের জন্য সৃষ্টিকর্তার আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
১৩। তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব: যে ব্যক্তির মনে আল্লাহ তাআ'লার প্রতি অগাধ আস্হা আর ভালোবাসা থাকে, সে মনে আর কোনো অশান্তি জায়গা পায় না।
১৪। যুদ্ধ মানে শত্রু - শত্রু খেলা: শয়তান আমাদের চরম শত্রু। সে আমাদের সাথে এক মহাযুদ্ধে অবতীর্ণ। শয়তানের বিরুদ্ধে আমাদের জয় লাভ করতে হবে, নাহলে প্রকৃত মুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।
১৫। মেঘের ওপার বাড়ি: ইহজীবনের মায়ায় আমরা বন্দী। এই জীবনকে সাজাতে আমরা সম্পূর্ণ জীবন লাগিয়ে দেয় কিন্তু দিন শেষে কী পায়? বান্দার উচিত সালাতে রবের নিকট জান্নাতের সুখ প্রর্থনা করা।
১৬। আমি হব সকাল বেলার পাখি: আমরা অনেকেই ফজরের নামাজ কাজা করে ফেলি অলসতার কারণে। যা করা উচিত নয়। ফরজ প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি ও রবের প্রতি ভালোবাসা।
১৭। তুলি দুই হাত করি মোনাজাত: চাওয়া পাওয়ার হিসেবে আমরা হতাশ। কিন্তু দেওয়ার মালিক তো আল্লাহ তাআ'লা। বান্দার কর্তব্য সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করা এবং কঠোর পরিশ্রম করা।
১৮। চলো বদলাই: আমরা আমাদের চারিপাশ তখনই পরিবর্তন করতে পারবো যখন আমরা নিজেরা পরিবর্তন হবো। আমাদের সমস্যা, সংকট আমাদেরই বের করতে হবে এবং সমাধান করতে হবে।
ধর্ম এবং কর্তব্য আমরা সবাই জানি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা তা আমল করতে ভুলে যায়। 'বেলা ফুরাবার আগে' বইটি আমাদেরকে আমাদের ভুলে যাওয়া কর্তব্য মনে করিয়ে দেয়। বইয়ে বলতে গেলে নতুন কিছুই নেই। আমরা ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় বই ও বড়দের কাছ থেকে যেসব ইসলামিক বিধিনিষেধ শুনে বা শিখে আসছি লেখক সেসবই বইয়ে বলেছেন। সহজভাবে গুছিয়ে লেখা বলে যেকোনো বয়সীরা বইটা পড়তে পারবেন���
এই বইটিতে খারাপ লাগার মতো কিছু নেই। ভালো বই। ' আমার এত দুঃখ কেন?, মন খারাপের দিনে, আমরা তো স্রেফ বন্ধু কেবল, বসন্ত এসে গেছে, তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব....' ইত্যাদি ইন্টারেস্টিং শিরোনামে বর্তমানে তরুণদের দীনের পথ থেকে দূরে চলে যাওয়া, হতাশা ও নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। আর নবি-রাসূল এবং সাহাবীদের জীবন থেকে উদাহরণ নিয়ে প্রেরণার কথা বলেছেন। স্রষ্টাকে স্মরণ না করে পার্থিব জিনিসের পেছনে ছুটে চলা থেকে শুরু করে তথাকথিত প্রেম সবকিছুই আলোচিত হয়েছে। সময় শেষ হওয়ার আগেই সতর্ক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বইটিকে লেখক রিমাইন্ডার বলেছেন। অনেকটা তা-ই। সবকিছুর ব্যাপারে যখন নির্দিষ্ট করে আঙুল ধরিয়ে দেখানো হয়েছে রিমাইন্ডার না হয়ে আর যায় কোথায়!?
বইটির মূলকথা একই, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা চলে আসায় একঘেয়ে লেগেছে। আমি ভাবছিলাম একটানা পড়ার কারণে হয়তো এমন মনে হচ্ছে। বইটা পড়ার মাঝে বান্ধবীর সাথে কথা বললাম (সে বই-পত্র তেমন পড়ে না; সাজিদ ১,২ পড়ে খুব মজা পেয়েছে)। তাকে বললাম এই বইটা পড়তেছি এখন। সে নিজে থেকেই বললো বইটা ভাল কিন্তু বড্ড একঘেয়ে হয়ে গেছে, তাই সে মাঝপথে রেখে দিয়েছে (যাক আমি একা না) মোটিভেশন একটা অদ্ভুত ব্যাপার; ধর্মের পথে চলা কিংবা সময়কে কাজে লাগানো; সেটা যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন, একই কথা বারবার কেমন যেন লাগে। মোটিভেশন পাওয়ার পর সেই মোটিভেশন অন্তরে ধারণ করে পথ চলতে পারাটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।
একটা বিষয় আমার মোটেই ভাল লাগে নি। এটা লেখকের সমস্যা বা অন্য কিছু নাকি আমি বুঝি নি। সাজিদ ১,২ তেও এটা কমন ছিল। কোনো একটা জিনিসের ব্যাপারে ক্লিয়ারলি না জেনে সেইটা নির্দিষ্ট করে বলাটা অন্তত আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে। বইটার একটা অধ্যায়ে এক ভার্সিটি নিয়ে কথা বলা আছে। যে ঘটনার উল্লেখ আছে তা আরেক ভার্সিটির। অবশ্য এই ভার্সিটির কাহিনীও কম যায় না! :। কিন্তু নির্দিষ্ট করেই যখন একটা ঘটনা বলা হচ্ছে তাহলে সেটা নিশ্চিত হয়েই বলা উচিত! আমারটা ১ম মুদ্রণের বই। পরে এটা ঠিক করা হয়েছে কিনা জানি না।
Recommended (to whom it may concern) After all it's one kind of reminder!
সামনে অনেকগুলো কঠিন দর্শনের, তাত্ত্বিক, শক্ত শব্দের বই রাখা। এর মধ্যে এই "বেলা ফুরাবার আগে" এত সহজ অথচ কী গভীর অর্থের বই। এমন একখানা বই যা হঠাৎ হঠাৎই হাতে নিয়ে উল্টে দেখার মতন। অশান্ত মন শান্ত করে দেবার মতন, হতাশ মনে আশা জাগানোর মতন, বিক্ষিপ্ত মনকে স্থীর করার মতন এক প্রশান্তিময় এর শব্দগুচ্ছো।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ প্যারাডক্সিকাল সাজিদ ১ ও ২ এর পর পড়ে ফেললাম ' বেলা ফুরাবার আগে '। বইটায় জাদু আছে বলতে গেলে। অনেক চমৎকার একটা রিমাইন্ডার বইটা। আমরা পার্থিব মোহে যখন চরম ভাবে ঢুবে যাই তখন আখিরাতের জীবন আমরা ভুলে যাই। আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হই। এই বইটা রিমাইন্ডার হিসেবে দারুন কাজ করবে। দুর্দান্ত বর্ণনা ভঙ্গিতে জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন লেখক। সবার একবার অন্তত বইটা পড়া উচিত। হাইলি রেকোমেন্ডেড। নিজেকে নতুন ভাবে চিনতে পারবেন বইটি পড়ে।
নিচে সকল অধ্যায়ের ক্ষুদ্র আলোচনা করা হলোঃ
মন খারাপের দিনে- যখন আপনি চরম বিপদে পড়েছেন বা কোনো কারনে সমালোচনার মুখে পড়েছেন কেউ নেই আশেপাশে সাহায্য করার তখন আল্লাহ তায়লাই আপনাকে সাহায্য করবেন সে পথগমন করতে। আপনাকে ধৈর্য্য ধরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
আমার এতো দুঃখ কেন- আমরা দুনিয়ার সম্পর্কে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ি যে আমরা আখিরাতের কথা ভুলে যাই। দুনিয়া হচ্ছে আল্লাহ তায়লার পরীক্ষাকেন্দ্র। সে পরীক্ষা তিনি বান্দার মন কে পরিশুদ্ধ করার জন্য নেন। সেজন্য তিনি অনেক প্রিয় জিনিসও কেড়ে নেন। আমাদের ধৈর্য্য ধরে সকল পরীক্ষা উত্তির্ণ হতে হবে।
বলো,সুখ কোথা পাই- জীবনের দুঃসময়, দুর্যোগ,আর দুর্ভোগের সময় আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার মধ্যেই আছে পরিপূর্ণ সুখ। সুখের আশায় অন্ধকার জগতে আমরা যেনো পা না রাখি সে কথাই এ অধ্যায় ফুটে উঠেছে। সুখের মরিচীকায় আমরা যে আস্বস্ত, তা এই অধ্যায় উপলব্ধি করায়।
জীবনের ইঁদুর-দৌড় কাহিনি- আমাদের জীবন যে প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতার শেকলে আবদ্ধ তার উপলব্ধি করায় এই অধ্যায়। পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে আমরা ঝুঁকে পড়ে যে আখিরাতকে ভুলে যাচ্ছি তা বুঝতে পারবেন এ অধ্যায় পড়ে৷
চোখের রোগ- এ অধ্যায়ে চোখের যিনা নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা চোখে খুব ভালো ভাবে দেখতে পারলেও,আসলে কি আমাদের চোখ সুস্থ? চোখকে যে আল্লাহ আমাদের আমানত হিসেবে দিয়েছেন তার কি মর্যাদা আমরা দিচ্ছি? নাকী আমানতের খিয়ানত করছি?
আমরা তো স্রেফ বন্ধু কেবল- এ অধ্যায়ে লেখক হারাম সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন। বর্তমান সময় এ সবচেয়ে আলোচিত টপিক বলতে গেলে। হারাম সম্পর্ক এর পরিনিতি নিয়ে ৪ টি ঘটনা খুব ভালো ভাবে তোলে ধরেছেন লেখক।
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- এই অধ্যায় টা খুবই সুন্দর। এ অধ্যায়ে নিজেকে সকল পাপাচার থেকে বেচে থাকার কথা বলা হয়েছে। এমন কোনো পাপ না করতে বলা হয়েছে যার জন্য আপনার মৃত্যুর পরও তা আমলনামায় তোলা হয়। অন্য দিকে মৃত্যুর পরও যাতে আপনার আমলনামায় সওয়াব লিখা হয় তার পথ ও বলা হয়েছে। সাদকায়ে জারিয়া,নেককার সন্তানাদি ও উপকারী জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বেলা ফুরাবার আগে- জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য হলো মৃত্যু । সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। কিন্তু সেই মৃত্যু নিয়ে আমারা উদাসীন। আমরা কি চিন্তা করেছি কি নিয়ে আমরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিবো? গুনাহ আর সওয়াব এর হিসাব করুন একদিন বসে। গুনাহ বেশি হলে বেলা ফুরাবার আগে তওবা করুন আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কাজ করে যান।
মেঘের কোলে রোদ হেসেছে- আল্লাহ তায়লার ৯৯ টি নামের মধ্যে একটি নাম ' গাফুরুর রাহীম '। যার অর্থ অত্যন্ত ক্ষমাশীল। কিন্তু আমরা আল্লাহর কাছে কখনোই নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাই না। নিজের ভুল স্বীকার করি না। এই অধ্যায়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বসন্ত এসে গেছে- আল্লাহ তায়লার পথে চলার জন্য যখন কেউ নিজেকে পরিবর্তন করে, তখন কিছু লোক নিন্দা করা শুরু করে। এদের থেকে বাচার কথাই এই অধ্যায়ে লেখা হয়েছে। বসন্তকে বইয়ে দ্বীন হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে, সেই দ্বীনকে সঠিকভাবে পালন করার বর্ণনাই তুলে ধরেছেন লেখক।
সালাতে আমার মন বসে না- বান্দা কখন আল্লাহ তায়লার সবচেয়ে নিকটে আসে জানেন? যখন সে সিজদাহ্ থাকে। তখন আল্লাহ তায়লা বান্দার সকল কথা শুনেন বেশি। সেই সিজদা এ যাওয়ার জন্য আমাদের সালাত আদায় করতে হবে। কিন্তু সেই সালাত নিয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি অনীহা। আমি নিজেও অনীহা করি। এই অধ্যায়ে সালাতে কিভাবে মনোনিবেশ করবেন তা বর্ণনা করা হয়েছে।
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব- এ অধ্যায়েও লেখক মসজিদমুখী হওয়ার জন্য আহবান করেছেন। সালাতের জন্য সবসময় ব্যাকুল থাকার জন্য কার্যকরী হচ্ছে মসজিদ মুখী হওয়া। '"মসজিদে সালাত আদায় করব" কথাটি হৃদ মাঝারে রাখতে বলা হয়েছে।
যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা- সৃষ্টিগতভাবেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের রয়েছে দুর্বার আকর্ষণ। সেই নিষিদ্ধ আকর্ষণীয় জিনিসকে আরো আকর্ষণীয় করে শয়তান। যা আমাদের পরম শত্রু। আমাদের ভুল পথের দিকে নিয়ে যায়। শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাচতে আল্লাহ তায়লা আমাদের কি নির্দেশনা দিয়েছেন তা এই অধ্যায়ে উল্লেখ আছে।
মেঘে��� ওপার বাড়ি- এ অধ্যায়ে লেখক জান্নাত সম্পর্কে লিখেছেন। কিভাবে আমরা জান্নাত লাভ করতে পারি,কিভাবে আমরা সেখানে একটা ঘর পেতে পারি সেই বর্ণনা করেছেন। ফরজ সালাতের পর দৈনিক ১২রাকাত সুন্নত সালাত আদায়ের বিনিময়ে আমরা সেই ঘর পেতে পারি। ফজরের সালাতের ২ রাকাত, যোহরের প্রথম ৪ রাকাত ও শেষ ২রাকাত, মাগরিবের ২ রাকাত, ও এশার ২ রাকাত।
আমি হব সকাল বেলার পাখি- ফজর হলো শয়তানের বিরুদ্ধে মুমিনের প্রথম বিজয়। কিন্তু আমরা ফজরের সালাত পড়তে ব্যার্থ হই। আমি নিজেও হই। কিভাবে ফজরের সালাত আদায় করতে পারি সেই বিষয়ে লিখেছেন লেখক এই অধ্যায়ে।
তুলি তুই হাত করি মোনাজাত- এই অধ্যায়ে লেখক আল্লাহ তায়লার কাছে সবসময় দোয়া করার কথা বলেছেন। যেকোনো বিপদ আপদে আল্লাহ তায়লার কাছে সবসময় দোয়া করা দরকার। আল্লাহ তায়লা অবশ্যই দোয়া কবুল করবেন। তাছাড়া কোন কোন সময় দোয়া করলে উত্তম তাও বলা হয়েছে।
চলো বদলাই- ইসলামের বিভিন্ন ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য ৭ টি ঘটনা তুলে ধরেছেন লেখক। খুবই ভালো লেগেছে এ জায়গা।
সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পাপ-পঙ্কিলতা ও নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুষের রয়েছে এক দুর্বার আকর্ষণ। শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে ও পাপের মোহন মায়ায় মানুষ হারিয়ে যায় অন্ধকারের গহীনে। এক অনাস্বাদিত সুখের প্রলোভনে মজে নিজেকে কালিমালিপ্ত করাই যেন মানবসভ্যতার চিরাচরিত সংস্কৃতি।
ইসলামের শেষ পয়গম্বর হযরত মুহম্মদ (ﷺ) এর আবির্ভাবের পূর্বে জাহিলিয়াতের যুগ নামে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ ছিল। এমন কোনো পাপ নেই যা সে সময় সংঘটিত হত না। কন্যা শিশুকে জীবন্ত সমাধিস্থ করা থেকে শুরু করে হত্যা-লুণ্ঠন, সবকিছুই ছিল সেই সময়ের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান যুগেও পৃথিবীতে জাহিলিয়াতের মত ভয়ংকর পাপ সংঘটিত হচ্ছে। এক অদৃশ্য শক্রু শয়তান আমাদের প্ররোচিত করে পুণ্য-প্রভা থেকে বহুদূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, বর্তমান যুগে আমাদের মত তরুণ প্রজন্ম নানারকম ফিতনায় নিজেকে জড়িয়ে জীবনকে অন্ধকারময় করে ফেলছে। অর্থ-বিত্ত, জৌলুশের পিছনে ছুটতে ছুটতে আমরা আমদেরকে যে কতটা নিচে নামিয়ে ফেলছি, তা হয়তো আমরা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারি না। আচ্ছা, কখনো ভেবে দেখেছেন, অর্থবিত্ত আর জৌলুশ কি আদৌ কখনো মানুষের হৃদয়ে সুখের স্বর্গীয় পরিতৃপ্তি এনে দিতে পারে? যদি তাই হয় তাহলে, আজকের কর্পোরেট পৃথিবীতে অনেক ভুবনমোহন মডেল-তারকা আছেন, যাঁদের অর্থ-বিত্ত আর জৌলুশের কোনো অভাব নেই। তাঁরা কি এত অর্থ-বিত্ত আর জৌলুশের মধ্যে থেকেও সেই স্বর্গীয় পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারে?
আজকের পৃথিবীতে আরেকটি বড় সমস্যা ছেলেমেয়েদের অবৈধ সংস্রব। এসমস্ত অবৈধ কার্যাবলী শুরুই হয় "ক্রাশ খাওয়া"র মাধ্যমে, যেটাকে লেখক চোখের যিনা বলে অভিহিত করেছেন। এরপর সেই অদৃশ্য শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে আমরা নিমগ্ন হই পাপে, যা আপাতদৃষ্টিতে আমাদের নিকটে পাপ বলে মনে হয় না। কিন্তু, এসবের ফলাফল কখনো সুখকর হয় না। কখনো কখনো পরিণতি হতে পারে মারাত্মক ভয়ংকর।
এরপর আরো একটি ভয়ংকর পাপ, যা আমাদেরকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়ে জীবনকে বানিয়ে দিচ্ছে জাহান্নাম, সেই পাপটি হল পর্নগ্রাফির আসক্তি। রাতের পর রাত জেগে, নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে ঢুঁ দিয়ে যখন নিষিদ্ধ ভিডিওগুলো একজন তরুণ দেখতে থাকে, সেই সাথে সাথে তার ইহকাল ও পরকাল নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।
এসব পাপ যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে নিয়ে যায়, তখন বেঁচে থাকার জন্য সঙ্গী হয়ে যায় নানারকম মাদকদ্রব্য। কিন্তু এতেও বিতৃষ্ণা চলে এলে একজন তরুণ, পা বাড়াতে চায় আত্মহননের পথে।
আমরা যদি সব সমস্যার সমাধান করে মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর নিকটে তওবা করে যেতে না পারি, তাহলে অনন্তকালের জন্য আমাদের করতে হবে পরিতাপ।
তাই, আত্মহত্যা হোক কিংবা অন্য যেকোন সমস্যা, সকল সমস্যার খুব সুন্দর সমাধান আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন মহান আল্লাহ তা'আলাই। তরুণ প্রজন্মের এইসব সমস্যা ও তার সমাধান নিয়েই আলোকপাত করা হয়েছে "বেলা ফুরাবার আগে" বইটির আঠারটি অধ্যায়ে। লেখক কখনো কখনো আলোচ্য বিষয় নিয়ে কথা বলতে কোর-আন ও সহীহ হাদীস ব্যবহার করেছেন। আবার কখনো নবী-রাসুলদের জীবনে ঘটে যাওয় চমকপ্রদ ঘটনার বিবরণ দিয়ে পাঠককে আকৃষ্ট করেছেন।
ইতোপূর্বে এই গ্রন্থের লেখক আরিফ আজাদের "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" বইটি পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়। পাঠককে সরল বর্ণনার লেখনি দ্বারা আকৃষ্ট করার কারণে এ বছর প্রকাশিত লেখকের "বেলা ফুরাবার আগে" বইটিও পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে।
পরিশেষে বলব, আমরা যারা পাপ-পঙ্কিলতায় নিজেকে শেষ করে ফেলেছি, যারা অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি, যারা জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে হতাশাগ্রস্থ, তাদের আলোর পথে ফিরে আসার জন্য এই বইটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
বই : বেলা ফুরাবার আগে লেখক : আরিফ আজাদ প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন মুদ্রিত মূল্য : ২৮৭ ৳ মোট পৃষ্ঠা : ১৯২ প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২০
এক কথায়, অসাধারণ এক বই। প্রতিটি অধ্যায়ের পর একজন বিশ্বাসী অন্যরকম তৃপ্তি নিয়ে পরবর্তী অধ্যায়ে প্রবেশ করবে আর লেখাগুলো গেঁথে যাবে। আলাদা অনুভূতি দিবে।
আল্লাহর জন্যই যে আসা, তার প্রতিই যে ভালবাসা, দৈনন্দিন প্রতিটি ক্ষেত্রে সে বিষয়গুলো মনে রাখতে দারুণ রিমাইন্ডারস্বরূপ বইটি। একজন অবিশ্বাসীও পড়তে পারেন, বুঝতে পারেন ইসলামের সৌন্দর্য।
তরুণ-তরুণীদের জন্য দারুণ এক বই। পেপারব্যাক বইটি হাতে নিয়ে পড়তেও ভাল লাগবে আশা করি :)
আরিফ আজাদের বিগত ৩বছরের ৩টি মৌলিক বই পড়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম, সঙ্গত কারণেই তার নতুন বইয়ের প্রতিও আগ্রহ ছিলোই। তার উপর হালের ক্রেজ এই বইটি এবারের বইমেলার বেস্টসেলার হওয়ায় আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিলো আরও কয়েকগুণ!
বই - বেলা ফুরাবার আগে লেখক - আরিফ আজাদ প্রকাশনী - সমকালীন প্রকাশন প্রচ্ছদ মূল্য - ২৮৭৳(পেপারব্যাক)/৩৩০৳(হার্ডকাভার) পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৮৭
'সাজিদ সিরিজ' পড়ে তরুণ প্রজন্মের 'সাজিদ' হয়ে ওঠার যে আকুলতা, সেটা মাথায় রেখেই লেখক সাজিদ তৈরির প্রকল্প হিসেবে লিখেছেন এই বইটি, একে উল্লেখ করেছেন 'সাজিদ তৈরির খসড়া প্রস্তাবনা, সেই স্বপ্ন ও সাহসের প্রথম পদক্ষেপ' হিসেবে। মূল রচনার কোথাও 'সাজিদ' নামটি একবারের জন্য উল্লেখ না করেই লেখক দেখিয়েছেন সাজিদ হতে হলে ব্যক্তিগত জীবনে আসলে কেমন হতে হবে! মোট ১৮টি গদ্যের সংকলনে এটি মূলত একটি আত্ম-উন্নয়নমূলক বই, যা মোটাদাগে তরুণদের সামনে রেখে লেখা হলেও মূলত সকলের জন্যই।
ইদানীং মানুষের মধ্যে খুব কমন যে সমস্যাটা দেখা যায় - নিজেকে নিয়ে/নিজের জীবন নিয়ে কেউই ঠিক সন্তুষ্ট না।অপ্রাপ্তি আর হতাশার সাগরে হাবুডুবু খায় সবাই। পড়ালেখা-ক্যারিয়ার-সংসার-সন্তান - সব কিছুতেই আমার সেরা হওয়া আর লোক দেখানো চাইই! এই প্রবণতাকে লেখক উল্লেখ ক��েছেন - Rat Race হিসেবে; এ সংক্রান্ত মানুষের যে চাওয়া, তার পুরোটাই দুনিয়াবি। পরকালের পাথেয় সংগ্রহের দিকে মানুষের নজর থাকে না। আর যা চায় তা না পেলেই মানুষ হাঁ-হুতাশ শুরু করে - 'Why always me?'
এই খারাপ থাকার কারণ কিন্তু প্রত্যেকের নিজ নিজ জীবনযাপন! লেখক আলোচনা করেছেন সেগুলোও।
তরুণ প্রজন্ম হরহামেশাই "ক্রাশ" খায়, সেই মানুষটাকে দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে, তাকে ভাবতে-কথা বলতে ভালোব���সে। অথচ নবীজী (সাঃ) এগুলোকে যথাক্রমে চোখের, মনের এবং জিহ্বার যিনা বলে উল্লেখ করেছেন। মুসলিম তরুণ-তরুণীদের ঠিক কয়জন নিজের এই এত বড় পাপের ব্যাপারে অবগত? যেখানে আল-কুরআন বলছে, মুমিনদের 'দৃষ্টি সংযত' করার কথা, একবার ভুল ক্রমে চোখ পড়ে গেলে সাথে সাথেই ফিরিয়ে নেয়ার কথা, সেখানে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা আর বন্ধুত্বের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে আসলেই ইসলাম থেকে ঠিক কত দূরে সরে গেছি আমরা! আর বিবাহপূর্ব প্রেম-ভালোবাসা, পরকীয়া আর এখনকার নতুন ট্রেণ্ড 'জাস্ট ফ্রেণ্ড' বিষয়ে আর নাইই বা বললাম! এগুলোর প্রত্যেকটাকেই লেখক উল্লেখ করেছেন 'হারাম রিলেশনশিপ' হিসেবে। এই হারাম রিলেশনশিপের পাল্লায় পড়ে বনি ইসরাইলের সবচেয়ে নেককার ব্যক্তি বারসিসা কিভাবে পাপ-পঙ্কিলতায় আকণ্ঠমগ্ন হয়েছিলেন - তা আঁতকে ওঠার মতই, সেই ঘটনা উল্লেখ করেছেন লেখক; উল্লেখ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর এলাকা এবং এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাম্প্রতিক ৩টি ঘটনা। যেই সম্পর্কে আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘিত হয়, যে সম্পর্কে আল্লাহর অসন্তুষ্টি, সেই সম্পর্কের সূচনা থেকে সমাপ্তি - কোথাও শান্তি আছে কি?
'চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়' শিরোনামে লেখক তুলে ধরেছেন কিভাবে মৃত্যুর পরও মানুষ তার পাপ কামানোর ব্যবস্থা চালু রেখে যায়!
এই 'আমরা তো স্রেফ বন্ধু কেবল' আর 'চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়' শিরোনামের গদ্য দুটি পড়ে আমি খুব বড় রকম ধাক্কা খেয়েছি। ইসলাম নারী-পুরুষের সম্পর্কের যে সীমারেখা ঠিক করে দিয়েছে, সেটা মাথায় রাখলে এটা একদম দিবালোকের মতোই পরিস্কার যে, মুমিন মুসলিম হোক সে নারী/পুরুষ আমাদের সমাজে আজকাল দেখা যায় না বললেই চলে! এটা চিন্তা করে আকাশ থেকে পড়েছি যে - ইসলামে মুমিনের যে সংজ্ঞা, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবণের প্রায় সাড়ে ৫বছরে হাতেগোনা ২/১জন ছাড়া তেমন মুমিন ব্যক্তি আমার চোখেই পড়ে নি; আর সারাজীবনে কয়েকজন দেখেছি, সেটাও হাতে গুণে বলে দেয়া সম্ভব!!! আর পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তি যাদের/ইউটিউবে নাটক-সিনেমা দেখে ভিউ বাড়িয়ে/নাটক-সিনেমার দেখে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে সেগুলোর ব্যবসাকেই উৎসাহিত করছি না আমরা? ভেবে দেখেছি কি কখনো!?
কিন্তু প্রায়শই আমরা দেখতে পাই - পাপে আকন্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তি প্রচুর টাকা-পয়সার মালিক, সুন্দরী স্ত্রী-সন্তানসন্ততি নিয়ে প্রাচুর্যের সংসার তার! মনে প্রশ্ন জাগে না - তাহলে আল্লাহর নেয়ামত কিভাবে বর্ষিত হচ্ছে তার উপর? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দরভাবে দিয়েছেন হাসান আল বাসরি রাহিমাহুল্লাহ, "আচ্ছা, তুমি কি রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে পারো?আন্তরিকতার সাথে কখনো আল্লাহর কাছে দুয়া করতে পারো? তুমি কি তৃপ্তি সহকারে কখনো সালাত আদায় করতে পারো? কুরআন পড়তে পারো? এসবই তো আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হবার জন্য যথেষ্ট!"
তাহলে এই নামমাত্র মুসলমানদের পরিত্রাণের উপায় কি? সেটাও লেখক বাঁতলে দিয়েছেন আল-কুরআন আর হাদীসের বাণী উদ্ধৃত করে, যেখানে আল্লাহতালা বলেছেন, বান্দা যতই নিজের ওপর যুলুম,অত্যাচার করুক না কেন, যতই আকাশসমান পাপ করুক না কেন, মহান আল্লাহতালা বান্দাকে ক্ষমা করে দিবেন, শুধুমাত্র আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাওয়া আর তওবা করার অপেক্ষা! সেই সাথে আল্লাহর কাছে কিভাবে সাহায্য চাইতে হবে, তওবা করতে হবে, সেসব ছোট ছোট দুয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন লেখক।
লেখক উল্লেখ করেছেন হুমায়ুন আহমেদের 'নুহাশপল্লী'র কথা, কি বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে দুনিয়াতেই সব আনন্দ ভোগ করতে চাইলেও নশ্বর জীবনের হুমায়ুন আহমেদকে ঠিকই সব ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। অথচ আল্লাহতালা কতই না সহজে জান্নাতে নিজের বাড়ি পাওয়ার উপায় বাতলে দিয়েছেন তাঁর বান্দাদের জন্য। সেসবের উল্লেখের পাশাপাশি লেখক আমাদের উপায় বাতলে দিয়েছেন সালাতে মন বসানোর এবং সময়মতো ঠিকঠাক ফজরের সালাত আদায় করার।
কোনো কাফিরও হৃদয়ের গভীর থেকে আকুলচিত্তে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার দুয়াও শুনে থাকেন। সেখানে আমাদের মতো মুসলমানের দুয়াও আল্লাহতালা শুনবেন। শুধু আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্য্য ধরে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। নিজেকে পরিবর্তন করলেই আশেপাশের পরিবর্তন করা সহজ হয়ে যায়। আমাদের জীবনে সেই পরিবর্তন আসুক আমাদের বেলা ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই!
এই বইটা নিয়ে যাইই লিখি, তাইই আসলে কম হয়ে যাবে; লিখা শেষ হবে না তবুও। ধাক্কা খাওয়ার মতো, নিমিষেই নিজের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানোর মত অসংখ্য ঘটনা লেখক উদ্ধৃত করেছেন, একটা রিভিউতে সব তুলে আনা সম্ভবও না! তাই মুসলমান হিসেবে নিজেকে খুঁজে পেতে বইটা পড়ার অনুরোধ করছি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: ২০২০ সালে প্রকাশিত 'বেলা ফুরাবার আগে' আরিফ আজাদের ৪র্থ মৌলিক বই। বইটিতে লেখক আরিফ আজাদ তরুন মনের আকুপাকু করা এবং সমাজে চলমান প্রশ্ন গুলোর সহজ, সরল, যৌক্তিক, বিশ্লেষণী সমাধান এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। এবারের বইমেলাতেও চমক হিসেবে ছিল বেলা ফুরাবার আগে বইটি।
লেখক সম্পর্কে কিছু কথা: আরিফ আজাদ একজন বাংলাদেশী লেখক। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ এর লেখক হিসেবেই তিনি বহুল পরিচিত। অমর একুশে বইমেলা-২০১৯ এ অনলাইন বেস্ট সেলার হিসেবে নির্বাচিত হন আরিফ আজাদ। তারপর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে আরিফ আজাদের অন্যান্য বইগুলো। লেখালেখির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আরিফ আজাদ এর বই সমূহ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। লেখক আরিফ আজাদ ১৯৯০ সালের ৭ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন চট্টগ্রাম জেলা স্কুল থেকে। একটি সরকারি কলেজ থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন এবং এখান থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন।
বইয়ের প্রোডাকশন: সমকালীন প্রকাশন এর পেপারব্যাক বই গুলো কোয়ালিটির দিক দিয়ে এক কথায় চমৎকার। বইয়ে বাঁধাই, পেজের মান, ছাপা সবই ভালো। শক্ত-পোক্ত ছোট বই ধরতে, পড়তে আরাম পাওয়ায়, বানান ভুল পাইনি।
সর্বোপরি সকলের সুস্বাস্থ্য ও সুখী জীবন কামনা করছি। সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুক.. 🎭
Just wowieeeeee🥰. This is a beautiful piece of work. Like I already knew it would be good but it still exceeded my expectations!! Mashallah Arif vai! 😃
I really like to mention my most favorite parts in any book, but for this one, I almost had a battle😭It's that good! But in the end I picked the one that just hit different🫠. It was: তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব... This was very special and touching for so many reasons. But I really want everybody do read it at least once!!!!! I can possibly go on about this for houuuurs😌 but I won't give any spoilers. So find it people! Buy it!!😤
And If you still haven't read it, pleaaaaaase do!! Leave any other book.
Arif vai has this gift, Mashallah. He can explain very important and intricate things in a very simple and easy manner. As a genZ, his choice of words and way to present topics is extremely appealing and attractive! I absolutely love it 😁. Also if you are a Ustadh Nouman fan, you have no other choice than to fall in love with Arif vai's writing style..
I wanna keep writing but I'll be considerate and stop😛. Anyhows, I want to finish all of his other books very soon, inshallah!😁😁😁
আমাদ��র জীবটা খুবই সংক্ষিপ্ত। প্রতি মুহুর্তে জীবনটা একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা সেই দিকে কোন দৃষ্টি দিচ্ছি না, দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট হয়ে। বেলা ফুরাবার আগে বইটা একটা মোটিভেশান বই। বইটিতে মোটিভেশন দেয়া ফিরে আসার জন্য। বইটি অনেকগুলো টপিকে ভাগ করা। এর মধ্যে আমার কাছে কয়েকটা টপিক বেশি ভালো লেগেছে। যেমন জীবনের ইঁদুর দৌড়, আমরা তো স্রেফ বন্ধু, মেঘের ওপার বাড়ি। মেঘের ওপার বাড়ি হুমায়ূন আহমেদের নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার স্মৃতিচারণ দিয়ে শুরু হয়েছে। স্মৃতিচারণটা ফেসবুক পোস্টেও একবার পড়ছিলাম। বইয়ের লেখাটার তুলনায় ফেসবুকের পোস্ট টাই বেশি ভালো লেগেছে।
পাঠপ্রতিক্রিয়া জীবনটাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী সাজাতে রিমাইন্ডার হিসেবে বইটা ভালো ভুমিকা রাখবে।
আধুনিক জামানার "মডার্ন" ভাই-বোনদের জন্য এই বইয়টি পড়া অত্যাবশ্যকীয়। না না, শুধু পড়লে হবে না, আরিফ আজাদ ভাইয়ের প্রত্যেকটি কথা হৃদয়ে গেঁথে নিতে হবে!
পাঠ প্রতিক্রিয়া: ২০২০ সালে প্রকাশিত 'বেলা ফুরাবার আগে' আরিফ আজাদের ৪র্থ মৌলিক বই। বইটিতে লেখক আরিফ আজাদ তরুন মনের আকুপাকু করা এবং সমাজে চলমান প্রশ্ন গুলোর সহজ, সরল, যৌক্তিক, বিশ্লেষণী সমাধান এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। এবারের বইমেলাতেও চমক হিসেবে ছিল বেলা ফুরাবার আগে বইটি।
লেখক সম্পর্কে কিছু কথা: আরিফ আজাদ একজন বাংলাদেশী লেখক। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ এর লেখক হিসেবেই তিনি বহুল পরিচিত। অমর একুশে বইমেলা-২০১৯ এ অনলাইন বেস্ট সেলার হিসেবে নির্বাচিত হন আরিফ আজাদ। তারপর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে আরিফ আজাদের অন্যান্য বইগুলো। লেখালেখির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আরিফ আজাদ এর বই সমূহ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। লেখক আরিফ আজাদ ১৯৯০ সালের ৭ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন চট্টগ্রাম জেলা স্কুল থেকে। একটি সরকারি কলেজ থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন এবং এখান থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন।
বইয়ের প্রোডাকশন: সমকালীন প্রকাশন এর পেপারব্যাক বই গুলো কোয়ালিটির দিক দিয়ে এক কথায় চমৎকার। বইয়ে বাঁধাই, পেজের মান, ছাপা সবই ভালো। শক্ত-পোক্ত ছোট বই ধরতে, পড়তে আরাম পাওয়ায়, বানান ভুল পাইনি।
সর্বোপরি সকলের সুস্বাস্থ্য ও সুখী জীবন কামনা করছি। সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুক.. 🎭
আরিফ আজাদ স্বভাবসুলভ যে লেখা লেখেন এই বইটা তেমন নয়। বেশ কিছু উপদেশের সংকলন মূলত এই বইটি। নুতনদের বইটি কেমন লাগবে জানি না তবে বইতে খুব কমই নতুন কিছু আছে। মনে হয়েছে বেশ কিছু বই পড়ে কিছু একটা চিন্তা করে সেটা লিখে ফেলেছেন। আরিফ আজাদের যে বয়স, তাতে এমন উপদেশমূলক বই লেখা তাকে মানায় না। বইয়ের উপস্থাপনা তার লেখনীর গুণে সুন্দর কিন্তু চলমান নয়। পড়তে গিয়ে বার বার থেমে যেতে হয়েছে। কারণ বইটায় তার নিজের এনালাইসিস করা খুব জিনিসই পেয়েছে। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ পড়ে যে কারণে মুগ্ধ হয়েছি বেলা ফুরাবার আগে পড়ে ততটাই হতাশ হয়েছি। এই বই বেস্ট সেলার হবার মতো না। আরিফ আজাদ বুঝতে পারছেন কিনা জানি না, উপদেশ দেবার বয়স বা ম্যাচুরিটি তার এখনো আসেনি। আরিফ ভাই, আরো অনেক দূর যেতে হবে আপনাকে।
বইটাতে খুব সুন্দর সুন্দর সব পরামর্শ আছে। এমন পরামর্শ বা ভালো কথা বলার লোক অ-নে-ক আছে। বিশ্বাস করুন, ১০ টা বই পড়ে এমন একটা বই লিখা কঠিন কিছু না। আমরা আসলে আপনার থেকে অন্য কিছু চাই। এমন কিছু, যা হাতিয়ার হয়ে বিশ্বাসীদের লড়াইয়ে রসদ যোগাবে। আর এই আকাশসম প্রত্যাশা যদি অন্যায় হয়, তো সেটার জন্যতো আপনিও দায়ী হবেন, তাই না?
ইসলাম আমাদের ঈমান ধরে রাখতে বলেছে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বলেছে, সব ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাস ধরতে বলে নি। সাহাবী (র) গণ বৈষয়িক চিন্তা ত্যাগ করার সুযোগেই হয়তোবা উমাইয়া শাসকগণ ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিল। ইসলাম মানে শুধু আত্নার বিশুদ্ধতা না, এর সাথে রাজনীতি আছে, অর্থনীতি আছে, গবেষণা আছে। দুনিয়াবি জীবন ত্যাগ করার থিওরিকে সমর্থন করতে পারছি না। আমার জ্ঞান এ ব্যাপারে অনেক কম। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাই ইসলামের সঠিক শিক্ষাটা পাব। আল্লাহ ভালো জানেন।
আরিফ আজাদ,আবারো নিজের নামের যথার্থতা রক্ষা করলেন।এই বইতে তিনি কোনো নাস্তিকদের প্রশ্নের জবাব দেন নি,শুধু বলেছেন একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার কথা।যার নাম ইসলাম।সেই পথ নিয়ে আলোচনা করেছেন, সিরাতুল মোস্তাকিম। যে পথ স্রষ্টার নৈকট্য লাভের পথ,যে পথ দূর্গম মনে হলেও নিহিত রয়েছে কেবল শান্তি।
৫ টা তারার মধ্যে রেটিং দিয়ে বইটার মাহাত্ম্য বোঝানো যাবেনা!আই উইস সবাইইইই বইটা পড়ত!এত সুন্দর "রিমাইন্ডার" এর মতো বইটা,যত পড়ছি, তত জানার আগ্রহ আরো বেড়েছে..
জীবন ক্ষয়িষ্ণু। বরফ যেমন গলতে গলতে একসময় নিঃশেষ হয়ে যায়, আমাদের জীবনটাও ঠিক তেমনই। সময়ের সাথে এই জীবন একদিন শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।এই নশ্বর এই জীবনটা কি নিছক ভোগ আর ভ্রান্তির মাঝেই কেটে যাবে?নিজেকে বদলে ফেলার উদাত্ত আহবান প্রতিদিন পাঁচবার করে মিনারের চূড়া থেকে ভেসে আসে আমাদের কানে।তবুও আমরা ভাবল��শহীন।
জীবনের বেলা ফুরাবার আগে, চলুন তবে প্রত্যাবর্তন করি......
"বেলা ফুরাবার আগে" এক প্রহরের মধুর গান, যেখানে প্রতিটি শব্দ যেন সূর্যাস্তের নরম আলোয় মন-জগৎকে ছুঁয়ে যায়। এই বই জীবনের অন্তর্নিহিত স্নিগ্ধতা ও মধুরতার স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে, হৃদয় জাগিয়ে তোলে আর আত্মাকে আলোর স্পর্শে উদ্দীপ্ত করে।