বুবুন কিছু বলার আগেই আম্মা বললেন, "আসলে নাম দেওয়া উচিত ছিল বেবুন-" জাহিদ এবারে না হেসে বুবুনের পিঠে হাত দিয়ে বললেন, "না না ডক্টর রওশান এটা আপনি ঠিক বললেন না। এরকম হ্যান্ডসাম একটা মানুষের আপনি নাম রাখবেন বেবুন?" বুবুন জাহিদ চাচার দিকে তাকাল, না মানুষটা ঠাট্টা করছে না সত্যি সত্যিই বলছে। সে ঠিকই ধরেছে, মানুষটা মনে হয় আসলেই ভাল।
Muhammed Zafar Iqbal (Bengali: মুহম্মদ জাফর ইকবাল) is one of the most famous Bangladeshi author of Science-Fiction and Children's Literature ever to grace the Bengali literary community since the country's independence in 1971. He is a professor of Computer Science & Engineering at Shahjalal University of Science and Technology (SUST). Before that, Iqbal worked as a research scientist in Bell Communication Research for six years until 1994.
Birth and Family Background: Iqbal was born on 23 December 1952 in Sylhet. His father, Foyzur Rahman Ahmed, was a police officer. In his childhood, he traveled various part of Bangladesh, because of his father's transferring job. Zafar Iqbal was encouraged by his father for writing at an early life. He wrote his first science fiction work at the age of seven. On 5 May 1971, during the liberation war of Bangladesh, the Pakistan's invading army captured his father and killed him brutally in the bank of a river.
Education: Iqbal passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1968 and HSC exam from Dhaka College in 1970. He earned his BSc in Physics from Dhaka University in 1976. In the same year Iqbal went to University of Washington to obtain his PhD and earned the degree in 1982.
Personal Life: Iqbal married Dr. Yasmeen Haque in 1978. Yasmeen is the Dean of the Life Science Department, Head of the Physics Department, Provost of the Shohid Janoni Jahanara Imam Hall and a researcher at SUST. They have two children - son Nabil and daughter Yeshim. Yeshim translated the book Amar Bondhu Rashed (Rashed, My Friend) written by her father. Iqbal's elder brother, Humayun Ahmed, was the most popular author and film-maker of Bangladesh since its independence. Humayun died after a nine-month struggle against colorectal cancer on the 19 July 2012. His younger brother, Ahsan Habib, is the editor of the satirical magazine, Unmad and one of the most reknowned cartoonist of Bangladesh.
Academic Career: After obtaining PhD degree, Iqbal worked as a post-doctoral researcher at California Institute of Technology (CalTech) from 1983 to 1988. He then joined Bell Communications Research (Bellcore), a separate corporation from the Bell Labs (now Telcordia Technologies), as a Research Scientist. He left the institute in 1994 and joined the faculty of the Department of CSE of SUST.
Literary career: Iqbal started writing stories from a very early age. Iqbal wrote his first short story at the age of seven. While studying in the Dhaka University Iqbal's story Copotronic Bhalobasa was published in a local magazine. But, a number of readers at that time felt that the story was based on a foreign story. To answer this allegation, he later rewrote the story and published the story in collection of stories named Copotronic Sukh Dukkho. Since then he is the most popular writer both in Bengali Science-Fiction and in Juvenile Leterature of the country.
Other Activities and Awards: Zafar Iqbal won the Bangla Academy Award, the highest award in literature in Bangladesh, in 2004. Iqbal also played a leading role in founding Bangladesh Mathematical Olympiad. In 2011 he won Rotary SEED Award for his contribution in field of education.
বলতে গেলে অনেক সুন্দর লেগেছে পড়তে বইটি।কিশোরদের জন্য আনন্দের খোরাক হতে পারে বইটি।অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর এই উপন্যাসটি পড়ে মনে হয়েছে যেন আমি নিজেই এই বইটির মধ্যে আছি।স্যার মুহাম্মদ জাফর ইকবাল অনেক সুন্দর ভাবে বইটির কাহিনী বিন্যাস করেছেন।
বুবুন, যার বাবা অনেকদিন আগে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় হারিয়ে গিয়েছিলেন।তার মা একজন চাকরিজীবী,হঠাত তার মায়ের পোস্টিং পরিবর্তন হয়ে একতি মফস্বল এলাকায় পরে।নতুন জায়গায় নিজেকে খাপ খায়িয়ে নিতে অনেক কষ্টকরতে হয়। সেখানে বুবুনের নতুন কিছু বন্ধু হয়।কিন্তু কাহিনীর মোড় পাল্টে যায় বুবুনের বাবা ফিরে আশাতে।বুবুনের বাবার আচরন বাচ্চা ছেলেদের মত হয়ে গেছে।ডাক্তার দেখানো হলে বলা হয় বুবুনের বাবা হঠাত করেই কোন ঘটনার কারনে সুস্থ হয়ে যেতে পারেন।বুবুন ও তার বন্ধুরা মিলে তার বাবকে সুস্থ করতে নানা রকম চেষ্টা করতে থাকে।প্রতিবারই তারা বিফলে যান।
বুবুনের বাবা এত ছোট থাকতে পড়েছিলাম যে এবারে পড়ে মনে হলো আনকোরা নতুন উপন্যাস পড়ছি বুঝি। মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখার একটা ট্রোপ আমার বেশ ভালো লাগে, সেটা হচ্ছে নতুন কোন জায়গায় ইন্ট্রোভার্ট কারো এসে সুন্দরভাবে মানিয়ে নেয়া। এটা সেই ট্রোপের মধ্যে পড়বে। বুবুনের বাবার নামে উপন্যাস হলেও আসলে গল্পটা বুবুন ও তার বন্ধুদের। তার সিনেমার নায়িকার মতন সুন্দর মায়ের চরিত্রটাও ভালো লেগেছে।
বই কেমন তার মধ্যে যাবোনা তবে আমি মোটামুটি নিশ্চিত জাফর ইকবালের একটা "Write a book bingo" আছে। প্রত্যেকটা বই লেখার সময় সেই বিংগো চার্ট অনুসরণ করে উনি বই লিখেন। খুব সম্ভবত এই কারণে তার বই গুলো পড়তে কম বেশী একরকম লাগে। ছোট বেলায় এই বিষয়টা চোখে বাঁধত না। কিন্তু এখন কেন জানি অনেক বেশী বাঁধে। এখন অনেকেই বলতেই পারে ছোট মানুষের বই কি বড়োদের ভালো লাগে? হ্যাঁ লাগে। ঠিক এই কারণেই ছোটদের জন্য লেখা বই গুলো একসময় চিরায়ীত বই হিসেবে পরিচিতি পায়।
গল্পের নাম বুবুনের বাবা হলেও গল্পটা কিন্তু বুবুনের। কিংবা বুবুনের বন্ধুদেরও। বুবুনে মা আর বুবুন নতুন যায়গায় আসে তার মায়ের চাকুরীর জন্য। বুবুনের বাবা নেই। নাহ মারা যাননি। কিংবা তার মা আর বুবুনকে ছেড়ে অন্য কারো কাছেও যাননি। বুবুনের বাবা, মাসুদ, হারিয়ে গিয়েছেন। বুবুন যখন অনেক ছোট ছিল বয়সে তখন বুবুনের বাবার মাথায় টিউমার ধরা পড়ে। তখন আস্তে আস্তে বুবুনের বাবা সব ভুলে যেতে লাগছিলেন। একসময় তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং হারিয়ে যান। তারপর ১১ বছর ধরে তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নতুন যায়গায় এসে মানিয়ে নেওয়া বরাবরই ঝামেলার কাজ। আর যদি ইন্ট্রোভার্ট হন তাহলে তো আরো ঝামেলার। বুবুনেরও একই সমস্যা। কিন্তু এইবার বুবুনকে অবাক হয়ে হয় যে সে খুব সহজেই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারছে। ক্রেডিট যতটা না বুবুনের তারচেয়েও বেশী বুবুনের নতুন বন্ধুদের, সুমি, গাব্বু, পিয়াল। খুব দ্রুতই তাদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আর নিত্যনতুন তারা মজার মজার ঘটনার জন্ম দিয়ে যায়।
এর মাঝে একদিন হঠাত বুবুনের বাবা ফিরে আসলেন। ফিরে আসলেন বলা ভুল হবে তাকে ফিরিয়ে আনা হল। যদিও বুবুনকে নিয়ে তার কোন স্মৃতি মনে নেই। বুবুনের বন্ধুরা আর বুবুন মিলে বুবুনের বাবার স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে নিত্যনতুন সব ঘটনা ঘটাতে লাগল। এর মাঝে উদয় হল রাজাকার খবিরউদ্দিন। কাহিনী এগোতে থাকল.........
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ বিটিভিতে মনে হয় এটা নিয়ে একটা নাটক হয়েছিল। ভাসা ভাসা মনে ছিল।
বইঃ আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ ধরণঃ সাইকোলজিকাল থ্রিলার প্রকাশিতঃ ২০০৩ পৃষ্ঠাঃ ৯৪ রেটিংঃ ৫🌟/৫🌟
🦋কাহিনী সংক্ষেপঃ
রূপার মনে হচ্ছে যে, তার স্বামী ফখরুদ্দিন চৌধুরী একজন মানসিক রোগী | এর অবশ্য অনেকগুলো কারণ ও আছে | ফখরুদ্দিন নানারকম অদ্ভুত সব কাজ করে, যেমনঃ গাছে পানির পরিবর্তে রক্ত ও বিষ দেয়, কিছু গাছকে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে গরম বাতাস দেয়, বানরের সাথে গল্প করে; তারপর একদিন রূপা দেখে যে, ফখরুদ্দিন ছাদে বৃষ্টির পানিতে নাক ডুবিয়ে শুয়ে আছে ইত্যাদি | ফখরুদ্দিন আবার সাইকোলজিক্যালি দুজন ব্যাক্তিকে খুন ও করে |
ফখরুদ্দিন কাদেরকে খুন করে? তার আসলে সমস্যাটা কী? সে কী আসলেই একজন মানসিক রোগী? এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়ে ফেলুন এই বইটি |
🦋পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
এই গল্পের গল্পকথক হল ফখরুদ্দিন | সে তার জীবনের গল্পগুলো বলছে | বইটি পড়ে মনে হবে যেন , সে আপনার সাথেই গল্প করছে | বইটি পড়ার আগে জানতাম না যে, এটি কী ধরণের বই | বইটি পড়ে আমি সত্যিই খুব অভিভূত হয়েছি | বইটি অর্ধেক পড়ার পর যখন আমার বোনকে ফখরুদ্দিনের করা অদ্ভুত সব কাজের কথা বলছিলাম তখন ও আমাকে বইটি পড়তে নিষেধ করেছিল | বলেছিল যে এসব বই পড়তে না | যাই হোক, আমি আমার বোনের কথা শুনিনি এবং বইটি পড়ে শেষ করেছি | আমি কাহিনীটা অল্প একটু লিখলাম কারণ বেশী লিখে ফেললে আপনাদের আর পড়ার আগ্রহ থাকবে না | সবার কাছে অনুরোধ, বইটি পড়া শুরু করলে মাঝপথে ছেড়ে দিবেন না | দয়া করে শেষ করবেন কারণ পুরোটা না পড়লে হুমায়ূন আহমেদের এই অসাধারণ উপন্যাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন না |
এটাও আগে টিভিতে নাটক দেখেছি তারপরে বই পড়েছি। বুবুনের বাবা নাম হলেও গল্পটা আসলে বুবুনের। কিভাবে একটা নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন বন্ধুদের সাথ�� মানিয়ে নেয়া। তারপরে হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পেয়ে তার স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে বন্ধুদের নিয়ে মজার মজার সব কান্ড ঘটানো। অনেক দিন মনে রাখার মতো গল্প।
বুবুনের বাবা নেই, না মারা যায়নি, হারিয়ে গিয়েছে। বুবুন যখন অনেক ছোট, তখন তার বাবার ব্রেন টিউমার হয়, ডাক্তার বলে দেয় দ্রুত অপারেশন না করলে বাঁচানো সম্ভব না। কিন্তু বুবুনের বাবা দেরি করতে থাকে, টিউমার বড় হয়ে যাওয়ার কারণে বুবুনের বাবা মাঝে মধ্যেই উল্টোপাল্টা আচরন করতো, বানরের সাথে কথা বলতো, গাছের সাথে কথা বলতো। একদিন বুবুনের মা রূপা ছাদে গিয়ে দেখেন বুবুনের বাবা মাসুদ পানির ট্যাংকে মাথা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে একদিন হঠাৎ করে বেরিয়ে যায় আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
বুবুনের মা এনজিও তে কাজ করতো, নতুন যায়গায় পোস্টিং হওয়ায় তারা এখন নতুন এলাকার নতুন বাড়িতে উঠেছে। যদিও বুবুন ভেবেছিলো এখানে এসে খাপ খাওয়াতে পারবে না কিন্তু আসার পর অনেক বন্ধু জুটে যায় । সুমি, গাব্বু, পিয়াল এর মত দুরন্তপনাদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। একসাথে ওরা অ্যাডভেঞ্চার এ যায়। কখনো বিমরুল এর বাসা ভেঙে দেয় কিংবা গর্তের মুখে আগুন জ্বালিয়ে শিয়াল বের করার চেষ্টা করে।
হঠাৎ একদিন বুবুনের বাবা ফিরে আসে, একজন ডাক্তার এসে বুবুনের বাবা কে দিয়ে যায় আর বলে যে ব্রেইন টিউমার এর অপারেশন এর পর উনি সব ভুলে গেছেন এবং আচার আচরণ একদম শিশুর মত হয়ে গেছে। প্রথমে বুবুনের বাবা কাউকেই চিনতে পারে না। তবে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হতে থাকে, বুবুনের বাবা ও সবার সাথে মাঠে খেলতে যায়, সবার সাথে অ্যাডভেঞ্চার এ যায়।
এদিকে বুবুনের মা মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটা স্কুল করতে গিয়ে কিছু লোকদের রোষানলে পড়েন, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার আলবদর ছিল। ওরা বুবুন কে স্কুল থেকে ফেরার পথে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। তারপর তারা বুবুনের বাবা কে ধরে নিয়ে যায়। এরপর বুবুন নামে নতুন এক অ্যাডভেঞ্চারে সাথে যোগ দেয় সুমি, গাব্বু আর ক্ষুদে সাইন্টিস্ট পিয়াল।
মন্তব্য
শিশু কিশোর গল্প হিসেবে লেখন শৈলী ঠিক যেমন হওয়ার কথা তেমনি, সহজ, সরল ও সাবলীল। শিশু সুলভ কিউরিওসিটি জাগাবে শিশু কিশোরদের মনে আর দিবে অন্য রকম অ্যাডভেঞ্চার এর অনুভূতি। তবে শেষের দিকে এক জায়গায় লেখক রাজাকার আলবদর বলতে ঢালাওভাবে হুজুর সমাজ কে বুঝিয়েছেন যেটা আমার কাছে মিসইন্টারপ্রিটেশন মনে হয়েছে । কেননা বাস্তব চিত্র কখনো এমন ছিলো না। আর বুবুনের বাবার ফিরে আসাটা একটু অন্যরকম ছিল কেমন যেন খাপছাড়া মানে আরেকটু বাস্তবসম্মত এন্ট্রি হওয়া দরকার ছিলো। তবে আমার মনে হয় এটা যেহেতু শিশু কিশোরদের টার্গেট করে লেখা তাই রাইটার হয়তো এদিকে অতটা গুরুত্ব দেননি। তবে লেখা ফ্লো টা ছিল সিল্কি স্মুথ, যেটা যে কোন বয়সের মানুষের কাছেই ভালো লাগবে।
আমার জীবনে পড়া প্রথম বই ছিলো "বুবুনের বাবা"। এই বইটি পড়ার সাথে কিছু অনুভূতিও যুক্ত ছিলো। জন্মের আগেই বাবা হারানোয় বুবুনের বাবা বইয়ের বুবুনের সাথে নিজের একটা সাদৃশ্য খুজে পেতাম। বইটি পড়ে সবসময় মনে হয়েছে হয়তো বুবুনের মতোই কোনো একসময় দেখা হয়ে যাবে নিজের বাবার সাথে। আমার ছোটবেলার অনেক বড় একটা ফ্যান্টাসি বলে রাখা যেতে পারে এজন্য এই বইকে। এটার প্রতি কৃতজ্ঞতা কখনো শেষ হবার নয় কারণ মনখারাপ করে থাকার চেয়ে মনে আশা রেখে এগিয়ে যাওয়া শিখতে পেরেছিলাম বইটা থেকে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
"ভালো হোক, মন্দ হোক বাবা আমার বাবা পৃথিবীতে বাবার মতো আপন আছে কে বা!"
হুমায়ূন আহমেদের এরকম একটা উক্তি বোধহয় ছিলো যে পৃথিবীতে একটাও খারাপ বাবা নেই। আসলেই তো তাই। বাবারা কী কখনো খারাপ হয়? বাবারা কখনো সন্তানদের অবহেলা করে? উত্তর সবগুলোই হচ্ছে না। মায়ের মতো করে বাবারা ওইভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন না ঠিকই কিন্তু তাই বলে বাবারা সন্তানকে কী কম ভালোবাসে? কখনোই না।
বাবা মানে নাকি বটের ছায়া। সেই বটগাছ, যে ঝড় বৃষ্টি রোদ সহ্য করে কেমন ছায়া দিয়ে যায় সবসময়। বাবারাও ঠিক তেমনি। তাই বাবা ছাড়া পরিবার কত অসম্পূর্ণ তাই না! যার বাবা নেই সে বোধহয় গভীরে এই শূন্যতা অনুভব করে সবসময়। তাই পরিবারের ছবিটা সবসময় তাঁর কাছে অপূর্ণ থেকে যায়। ছোট্ট বুবুন সেরকমই ভাবে আচ্ছা শুধু তাঁর পরিবারে সে এবং আম্মা। বাবা কোথায় তাঁর? সবার বাবার মতো তাঁর কেনো বাবা নেই?
//বুবুনের কথাঃ
বুবুন তাঁর আম্মার নতুন এলাকায় নতুন এক বাসায় এসেছে আম্মার কাজের সূত্রে। তাঁর আম্মা মেয়েদের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছেন একটি এনজিওতে। নতুন এলাকা, নতুন পরিবেশে বুবুনের তেমন খারাপ লাগে না। নতুন কিছু ছেলেমেয়েদের সাথেও তাঁর আলাপ হয়ে যায়। তারমধ্যে এক ডানপিটে স্বভাবের মেয়ে সুমিকে দেখে বুবুন বেশ অবাক হয়ে যায়। মেয়েটা কেমন ভীমরুলের চাকে আগুন দিয়ে সবাইকে নিয়ে পালাচ্ছে, শেয়ালের গর্তে অভিযান চালাচ্ছে। মেয়েটা তো আসলেই অন্যরকম। ওদের সাথে আলাপচারিতা হলো, আস্তে আস্তে সবাই বন্ধু হয়ে গেছে একজন আরেকজনের। সবার পরিবার দেখে বেচারা বুবুনের মন খারাপ হয়। সবার আব্বা আছে কিন্তু তাঁর কেনো আব্বা নেই?
আম্মাকে সে একদিন খাবার সময় সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেলে। তখন চোখভরা পানি নিয়ে ওঁর আম্মা তাকে বলে আব্বার গল্প। খুব মেধাবী মানুষ ছিলেন তাঁর আব্বা। পিএইচডি পর্যন্ত করেছেন কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন হারিয়ে গেলেন। আর খোঁজ পাওয়া গেলো না। বুবুনের আম্মা আজও অপেক্ষা করে আছেন নিজের স্বামীর জন্য। বুবুন ঘুমাতে যাওয়ার সময় ভাবে একটা আব্বা থাকলে কতই না ভালো হতো। ওর আম্মাকে কিছু দুষ্টু লোকেরা নাকি ভয় দেখায়, আব্বা থাকলে দুষ্টু লোকেদের ঠিক শাস্তি দিতো।
//বুবুনের আব্বার কথাঃ
একদিন বুবুনদের বাড়িতে একজন লোক আসেন তিনি নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দেন এবং আস্তে আস্তে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। বুবুনের বাবা বেঁচে আছেন। মস্তিষ্কের একটা অপারেশনের কারণে মানসিকভাবে তিনি শিশুর মতো হয়ে গেছেন। বুবুনের আম্মা কিন্তু এসব শুনে অখুশি নন। তিনি ডাক্তারকে বললেন আমার একটা বাচ্চার জায়গায় এখন দরকার হলে দুইটা বাচ্চা থাকবে। বুবুনের বাবার জন্য তাঁর আম্মা এত বছর অপেক্ষা করেছেন যে আবেগে ওনার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। বুবুন নিজের আম্মাকে এতো আবেগী বোধহয় আগে কখনো দেখেনি।
ড���ক্তার বুবুনের আম্মার এই অনুভূতি দেখে কথা দিলেন একদিন সাথে করে নিয়ে আসবেন। যদি বুবুনের আব্বা এসে মানিয়ে নিতে পারেন তাহলে রেখে যাবেন। বুবুনের বন্ধুরা, আম্মা সবাই মিলে অপেক্ষায় ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে, বুবুনের আব্বার জন্য উপহার নিয়ে আসেন বুবুনের আম্মার কলিগ জাহিদ চাচা। সবাই মিলে অপেক্ষার এক পর্যায়ে ডাক্তার বুবুনের আব্বাকে নিয়ে আসেন। বুবুন নিজের আব্বাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কেমন বাচ্চাদের মতো ভয়ে সিটিয়ে আছেন। জুবুথুবু চেহারা, চুল এলোমেলো। কাউকেই চিনতে পারছেন না অবশ্য। আস্তে আস্তে কিছুটা স্বাভাবিক হবার পরে যখন ডাক��তার চলে গেলেন বুবুনের বাবা বেশ স্বাভাবিক আচরণ করছেন।
যা বলা হচ্ছে সেগুলো শুনছেন। আস্তে আস্তে দেখা গেলো বেশ উন্নতি হচ্ছে। এখন তিনি বাগান করছেন, বুবুনের বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছে প্রায়।
কিন্তু বুবুনের আম্মার পিছনে লেগে থাকা লোকগুলো বুবুনদের ক্ষতি করার জন্য একদিন ওর আব্বাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় বুবুনকে ধরতে না পেরে। আম্মা তো অস্থির হয়ে গেলেন। তাঁর আগে বুবুনরা মিলে প্লান করে ওঁরা বন্ধুরা মিলে ছাড়িয়ে আনবে আব্বাকে। শেষটায় তাঁরা সফল হলো কী না সেটা কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর।
//গল্পের চরিত্রগুলোঃ
বুবুনের গল্প না না বুবুনের বাবারও গল্প। তবে চরিত্র একদম হাতে গোনা। প্রধান চরিত্র বুবুনকে বলা যায় বোধহয়। এছাড়াও বুবুনের আম্মা, বুবুনের বন্ধুরা, জাহিদ চাচা, বুবুনের আম্মার পেছনে লাগা দুষ্টু লোকগুলো। তারপর সবশেষে বুবুনের বাবা। যার নামে বইটি বা গল্পের সূত্র। কিশোর উপন্যাসে আমার আসলে বেশি বেশি চরিত্রের গোঁজামিল ভালো লাগে না। বুবুনের বাবা বইটি এদিক থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে কিছুটা। সহজ চরিত্র সব। এমনকি ভিলেনদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য বুঝতেও বেগ পেতে হবে না।
//নিজের অনুভূতিঃ
জাফর ইকবালের এই বইগুলো আমার মেয়েবেলার স্মৃতি বলা যায়। স্কুলের রিকশা ভাড়া বাঁচিয়ে, সালামির টাকা বাঁচিয়ে, স্কলারশিপের টাকা পেয়ে এই বইগুলো যখন কিনতাম খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম একদম। তাই এই বই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করার ইচ্ছে নেই। মাঝে মাঝে পানসে জীবনটা, করলার মতো তেতো মনে হলেই নিজের স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসি এভাবেই।
"অতীতের সব মধুর স্মৃতি মাঝে মাঝে তলিয়ে যাই,অতলে যার বিস্মৃতি"
"বুবুনের বাবা " ভালো থাকুক বুবুনের কাছে। বইয়ের পাতা খুলে আবারও এভাবে পড়ে দেখবো যত্ন করে।
//খুঁটিনাটিঃ
বইয়ের বাঁধাই বেশ মজবুত। আমার বইটা প্রায় দশ বারো বছরের পুরনো। কিন্তু এখনো কিচ্ছু হয়নি বইয়ের। স্বাচ্ছন্দে উল্টে পাল্টে পড়তে পারি এটা বেশ স্বস্তিদায়ক। প্রচ্ছদটা কেনো জানি আমার ভালোই লেগেছে। কিশোর উপন্যাস বোঝা যায়।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবারা। এই সম্পদকে যেনো যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই সবসময়। বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে যেসব দুর্ভাগারা রাতের আকাশে তাকিয়ে নির্বাক চোখে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরিয়ে দিন কাটে যাদের তাদের জন্য রইলো ভালবাসা। বাবারা কী কখনো হারিয়ে যেতে পারে!! কখনো তাঁরা হারিয়ে যায় না। চোখ বুজলেই তো অনুভব করা যায়। ভালোবাসা সব বাবাদের জন্য।
বইয়ের নামঃ "বুবুনের বাবা" লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪.৫/৫
বুবুনের বাবার নামে উপন্যাস হলেও আসলে গল্পটা বুবুন ও তার বন্ধুদের। সাথে তার নায়িকার মত সুন্দর মাও আছে। নতুন যায়গায় এসে মানিয়ে নেওয়া বরাবরই ঝামেলার কাজ। আর যদি ইন্ট্রোভার্ট হন তাহলে তো আরো ঝামেলার। বুবুনেরও একই সমস্যা। সুন্দর লেগেছে পড়তে বইটি। অ্যাডভেঞ্চারটাও ভালো লেগেছিলো।
হঠাৎ হাতের কাছে বইটা পেয়ে , কিশোর উপন্যাসের সেই মজা সেই সুখ পাওয়ার লোভ জেঁকে বসল । অনেক আশা নিয়ে পড়া শুরু করলাম ।পড়ে খুব আনন্দ পেয়েছি তবু কেন যেনো মন ভরল না । একটা অপূর্নতা রয়ে গেল । হয়ত বয়স হয়ে গেছে নয়তো প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল ।