স্মিতা চৌধুরানি আর ডাক্তার রুক্সিনী আবার মুখোমুখি। তবে এবার তাদের সাথে যোগ হয়েছে এক রহস্যময় চরিত্র যার নাম নিলেও বিপদ। ময়লা ভিটাতে খুঁজে পাওয়া গেছে বিড়ালের দুটো কাঠের মূর্তি, মূর্তিগুলো সংরক্ষিত আছে ময়নামতি জাদুঘরে; এগুলোর বুকে খোদাই করে লেখা বঙ্গাব্দ-১২১৭! প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চায় কৃষ্ণনগর জমিদারির অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাতে, কিন্তু অজানা কারণে মন্ত্রণালয় থেকে সাড়া পাওয়া যায় না। অন্যদিকে জেগে উঠেছে এক আদিম শয়তান... যার শুধু রক্ত দরকার। বাঁশি বাজছে। অদ্ভুত এক সুর চারদিকে।
বিড়ালাক্ষী যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে বাঁশি শুরু। এই বইয়ে ভয়ের আবহ এর সাথে থ্রিল ও ছিলো। সমাপ্তিটা সুন্দর হয়েছে যদিও মনে হচ্ছিলো আরেকটু বিস্তারিত হলে ভালো হতো। যেহেতো সব গুলো নভেলা টাইপ তাই উতরে গিয়েছে। শেষের দিকে সমাপ্তি আবার অনেকের মন খারাপ ও করাবে। প্রথম থেকেই দারুণ এক বুড়ো রহস্যজনক মানুষের চরিত্রের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। এই চরিত্র ভালো ছিলো। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় গত বইয়ের থেকে। গ্রাম্য প্লটে সুন্দর একটা ট্রিলজি লেখায় লেখক সুন্দর মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
মশাইয়ের বয়স যদি সাতাশ হয় তবে লেখকের বয়স কত? উত্তর পারলে কেয়া কসমেটিক্স এর পক্ষ থেকে থাকছে "কিছুইনা"। অনেক জল্পনা কল্পনা শেষে বইমেলা ২০২১ এ সুর তুলে ফেলল "বাঁশি'। "বিড়ালাক্ষী" এর শেষে রাত্রিকে নিয়ে মশাইয়ের সাথে আমরা সবাই ধোঁকা খাওয়ার পর কী হলো জানতে তর সইছিল না। তাই বইটা হাতে পেয়ে এক নিমিষেই পড়ে ফেলেছি "বাঁশি'। যদিও শেষ করতে ইচ্ছা করছিলনা। শেষ পাতা পড়ে ফেলা মানেই তো স্মিতা শেষ, বকুল ফুলের সুবাস শেষ। শেষের কয়েকটা পৃষ্ঠা আমি যেন এক অক্ষর করে এগিয়েছি। শেষ শব্দতে এসে মনে হচ্ছিল এক পুকুর বকুল ফুলের মাঝে থেকে কেউ উঠিয়ে এনেছে আমাকে। যাই হোক, "বকুল ফুল", "বিড়ালাক্ষী" এর সাথে তাল মিলিয়ে লেখক "বাঁশি" তেও নতুন আর পুরোনো চরিত্রের মধ্যে বেশ ভাল মেলবন্ধন রেখেছেন। পুরোনো চরিত্রের সাথে নতুন চরিত্রও একদম মিশে গেছে সমানভাবে। স্মিতা চৌধুরানির বকুলের সুবাস, রুক্সিনী চৌধুরীর ক্ষমতার সাথে "বাঁশি" তে এসেছে এক নতুন চরিত্র! যার বাঁশির সুরে মোহিত হয়ে যেতেই হবে। কিন্তু সেই সুর কি আসলেই মায়াবী, না কি প্রবঞ্চনা! সেই বাঁশির সুরে কী আছে যার থেকে কৃষ্ণসুন্দরীও পালিয়ে বেড়ায়! স্মিতা কেন বারে বারে মশাইয়ের কাছে ছুটে আসে? শুধুই কি মুক্তির আশায়? মশাইয়ের এমন কী হলো যাতে করে দিন দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে, চুল পেঁকে যাচ্ছে। রুক্সিনীর ক্ষমতাবলে সে আরো কত কী করে বেড়াচ্ছে তার হিসাব কি হবে বাঁশিতে? "বাঁশি" তে এবার অতিপ্রাকৃত রহস্য, বকুলের সুবাস ছাড়াও উঠে এসেছে লোভ, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, ভয়, মৃত্যু। সাথে কাঠের বিড়ালের মায়াবী ও সুন্দর চোখ। কাঠের বিড়াল আসলেই কাঠের না কি এর পেছনে আছে বড় কোনো রহস্য? কৃষ্ণনগরের জমিদারি পাওয়ার জন্য রুক্সিনী চৌধুরীর ষড়যন্ত্র কি শেষমেশ সফল হয়েছিল? "বকুল ফুল" এর সুবাস দিয়ে শুরু হওয়া গল্পটা কিভাবে "বাঁশি" এর মোহনীয় সুরে শেষ হয় জানতে বইটা পড়ে নিতে হবে খুব দ্রুত। পড়ার সময় যেন টানটান উত্তেজনা নিয়ে পড়তে পারেন তাই অনেক কিছু বাদ দিয়ে গেছি। "বাঁশি" এর বিস্ময়কর একটা চরিত্রকেও লেখায় আনি নাই। সেটা আপনি পড়েই বুঝে নিবেন। লেখকের কিছু উক্তি আমার বেশ মনে ধরেছে। কয়েকটা তুলে ধরছিঃ ১. রুক্সিনী চৌধুরী যদি সত্য হয় তবে তার চেয়ে বড় সত্য স্মিতা চৌধুরানি। ২. আমি অহল্যা না, আর আপনিও ঋষি-গৌতম না। ৩. কিছু কিছু সত্যও লুকিয়ে থাকে অবিশ্বাসের আড়ালে। ৪. মানুষের কত রূপ তা বোধ হয় মানুষই জানে না। আর জানে না বলেই সে ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। ৫. মুক্তিরও আনন্দ আছে। শেষকথাঃ ভূমিকায় লেখক ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন তাদের যারা এক শব্দে বলে ফেলেন "মনোয়ার দুর্দান্ত লেখেন কিংবা ছাইপাশ লেখেন"। আমার মতে লেখক অতিপ্রাকৃত লেখেন। হতেও পারে সেটা ছাইপাশ কিছুকে দুর্দান্ত বানিয়ে ফেলা। বই পড়ার সময় বই এরসাথে সামঞ্জস্য রেখে আমি গান শুনি। এইবারও তাই করেছি। বাঁশি নিয়ে গান খুজঁতে খুঁজতে শেষমেশ শুনেছি,
কে বাঁশি বাজায় রে মন কেন নাচায় রে আমার প্রান যে মানে না কিছুই ভালো লাগে না ঐ বাঁশি কি বিষের বাঁশি তবু কেন ভালোবাসি
আসলেই কি "বাঁশি" বিষের বাঁশি না কি মায়াবী সুর? প্রচ্ছদ: প্রচ্ছদে চোখের ছবিটা দেখে একবার খুব ভয় লাগে আবার কিছুক্ষণ দেখলে কিউট লাগে। একদম রহস্যে ভরা একটা চোখ!
“শেষ ভালো যার সব ভালো তার”বলে একটা প্রবাদ আছে। ভাইয়ার এই সিরিজের শেষ বইটি ঠিক সেইরকমি,একদম বাজিমাৎ করে দিয়েছে। দারুন লেগেছে আমার! দারুন লেখনশৈলী, চমৎকার বর্ননাভঙ্গি,চরিত্রায়নের দারুন কম্বিনেশন! দারুন উপভোগ করেছি।❤️
ক্ষমতা থাকলেই বোধহয় সবকিছু জয় করে ফেলা সম্ভব। অপরাধ ধামাচাপা দেয়া সম্ভব। অপরাধ করেও পার পাওয়া যায়! যাদের ক্ষমতা নেই, তারা থেকে যায় অতলে। সুবিচারের আশায় ধর্না দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেই সুবিচার আর মেলে না।
তাই হয়তো মশাইয়ের আর সুবিচার পাওয়া হলো না। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরলেও যার কারণে এই অবস্থা, ক্ষমতাবান সেই মানুষটি থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। জনগণের বন্ধু যাদের বলা হয়, কিংবা যাদের মূল কাজ জনগণকে সাহায্য করা— তারা-ই সেসব ক্ষমতাবান মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কে জানে, হয়তো সেই চেষ্টা না করলে তাদের জীবনটা হুমকির মুখে পড়বে!
কৃষ্ণনগর জমিদারবাড়ি। স্মিতা মহল, ১২১৭ বঙ্গাব্দ। গল্পের শুরু সেখান থেকেই। যেখানে না চাইতেও এক গভীর রহস্যে জড়িয়ে পড়েছেন মশাই। তিনি ছাড়া এই রহস্যের সমাধান করা কারো পক্ষে সম্ভব না। তাই হয়তো তাকেই খুঁজে নিয়েছে স্মিতা চৌধুরানী। দীর্ঘকাল অপেক্ষার পর যোগ্য এক মানুষকে পেয়েছে সে। এবার আর কোনকিছুতেই হারাতে দেওয়া যাবে না। স্মিতার চাই মুক্তি। আর সেই মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারবেন কেবল মশাই।
বকুল ফুলের সুবাস ছড়িয়ে স্মিতা আসে। সাথে এক অদ্ভুত পচা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতিতে। স্মিতা আসে, আবার চলেও যায়। দূরে কোথাও বাঁশির সুরে ঘোর লাগা কাজ করে। কোনো এক সত্তা জানান দেয় কোনো অশুভ কিছুর। সেই সুরে স্মিতার অস্থিরতা বাড়ে। সেই বাঁশির সুরে কী কোনও রহস্য আছে? না-কি স্বাভাবিক সে সুর? কিংবা বাঁশির এমন সুরে কোন রহস্য খেলা করছে, তা জানা নেই।
এদিকে অসুস্থতায় দিনদিন কাহিল হয়ে যাচ্ছে মশাই। মাথার চুলগুলো পেঁকে যাচ্ছে। কেন? স্বাভাবিক অসুস্থতা? না-কি এর মধ্যেও আছে কোনও এক গভীর রহস্য? ওদিকে নতুন কে অনুসরণ করছে মশাইকে? রুক্সিনি চৌধুরীও যেন নতুন এক খেলায় মেতেছে। কী চায় সে? কাঠের বিড়ালের প্রতিই বা তার আগ্রহ কীসের? সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হলে বাঁশির সুরে হারিয়ে যেতে হবে। সেই সুর মায়াবী না-কি প্রবঞ্চনা, সেটা অজানা!
ময়নামতি জাদুঘরে থাকা দুটি কাঠের বিড়ালের মূর্তির রহস্য কী? হুট করে কেন চুরি হয়ে গেল? শাতু লোকটা কে? তার রহস্য কী? দৃশ্যপটে আবারও রুক্সিনী চৌধুরী। আবারও সেই কৃষ্ণনগর! অনেক রহস্য জমে আছে সেখানে। পুরনো সে রহস্যের দুয়ার একটু একটু করে খুলছে। কিন্তু যে কারণে এত তোড়জোড়, সেই স্মিতা চৌধুরানীকে মুক্তি দেওয়া যাবে? পারবে তার মশাই?
▪️ পাঠ প্রতিক্রিয়া :
“বকুল ফুল” উপন্যাস দিয়েই মনোয়ারুল ইসলামের লেখার সাথে আমার পরিচয়। বকুল ফুলের সুবাসে মুগ্ধ হয়েছিলাম। শেষ বেলায় জেনেছিলাম, এখানেই শেষ নয়। বকুলের সুবাস ছড়িয়ে দিতে আসছে নতুন উপন্যাস বিড়ালাক্ষী। সেটাও কেনা হলো। পড়ার পর হতাশ হয়েছিলাম বেশ। বকুল ফুলে যেই মুগ্ধতা ছিল, সেটার রেশ কিছুটা থাকলেও কেন যেন মন ভরাতে পারেনি। তখন থেকেই বাঁশির অপেক্ষা। শেষে হেসে অপেক্ষা তৃপ্তিতে পরিণত হয়েছে।
লেখকের লেখায় যেমন পরিপক্কতা এসেছে, তেমনই সাবলীলতা ছুঁয়ে গিয়েছে। লেখকের বর্ণনা পড়তে বেশ ভালো লাগে। প্রকৃতির রহস্যময়তা বেশ ভালোভাবে ফুটে ওঠে। ভৌতিক পরিবেশ যে মানসিক চাপের সৃষ্টি করতে পারে, এই বইতে লেখক সেই সক্ষমতা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে দুয়েকটা দৃশ্যের ভয় পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়েছিল। রাতের অন্ধকার মানুষের মনের মধ্যে চাপের সৃষ্টি করতে পারে, সেই চাপ থেকেই ভয়ের উৎপত্তি। লেখক খুব দারুণভাবে সেই দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন।
অঢেল টাকা আর প্রচুর ক্ষমতা থাকলে যা ইচ্ছে করে যায়। একাধিক ক্ষমতাধর লোকদের পকেটে রাখা যায়। কিন্তু দিন শেষে সব সময় ভালো যায় না। সব খারাপের মাঝে ভালো কেউ থাকে। তাদের কাছে অপরাধীদের দিন শেষ হয়ে যায়।
বইটির চরিত্র বিন্যাস নিয়ে আমার আক্ষেপ আছে। যা আগেও ছিল। রুক্সিনী চৌধুরীর অতীত বা তার এত ক্ষমতাবান হওয়ার গল্প বলা হয়নি। অবশ্য যেহেতু সিরিজটি মশাইয়ের বয়ানে উঠে এসেছে, তাই হয়তো সেই সুযোগ ছিল না। তারপরও রুক্সিনী চৌধুরীর এমন একজন হয়ে ওঠার বর্ণনা থাকলে আরও বেশি পূর্ণতা পেত মনে হয়। পুরনো চরিত্র ঘুরেফিরে আসছে, কিছু নতুন চরিত্রের আগমনে বেশ ভালো লেগেছে।
বিড়ালাক্ষী যেখান থেকে শেষ হয়েছিল ঠিক সেখান থেকেই বাঁশির শুরু। গল্পের গতিপ্রকৃতি ভালো লেগেছে এখানে। শেষটা দারুণ। যদিও কিছুটা তাড়াহুড়োর ছাপ আছে। তবে আমার কাছে পছন্দ হয়েছে। লেখক শেষে একটা রহস্য রেখে শেষ করেছেন। চাইলে আবার হয়তো কিছু রহস্যের অবতারণা করা যায়। আমার কোনো খেল দেখানো যায়। নতুন কোনো গল্পের সূচনা হবে ধরে নেওয়া যায়। তবে লেখক লিখবেন কি না, সে তার বিবেচনা।
▪️পরিশেষে, কিছু গল্প থাকে অজানা। কিছু বিশ্বাস থাকে অজ্ঞাত। এই প্রকৃতিতে এমন কিছু ঘটে, যাকে ঠিক বিশ্বাস করা যায় না। আবার অবিশ্বাসও করা যায় না। বিশ্বাসের জোড়ে হারিয়ে দেওয়া সেই অশুভ, অপ্রাকৃত সত্তাকে। কিংবা নিজেরই হেরে যেতে হয়।
২০২০ সালের ঘটনা । প্রিয় লেখক মনোয়ারুল ইসলামের ‘নয়নতারা’ বইটি দিয়ে শুরু করেছিলাম। লেখকের লেখা ৩য় বই হলেও আমার পড়া প্রথম বই ছিল সেটা।অতিপ্রাকৃত জনরার বই আমার পছন্দের হলেও বাংলাদেশে মানসম্পন্ন অতিপ্রাকৃত জনরার মৌলিক উপন্যাসের ঘাটতি আছে। কিন্তু ‘নয়নতারা’ বইটি পড়ে এতই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে লেখকের লেখা প্রথম এবং দ্বিতীয় বই ‘বকুলফুল’ এবং ‘বিড়ালাক্ষী’ অর্ডার করে ফেললাম পরবর্তীতে। মূলত অতিপ্রাকৃত থ্রিলার ঘরানার বকুলফুল সিরিজের ট্রিলজির প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব ছিল বইদুটি।প্রথম বইটি জুড়ে ছিল মশাইয়ের বকুলফুলের গন্ধ পাবার রহস্য, স্মিতা চৌধুরানীর আগমন, ভয়ানক কিছু মৃত্যুর গা ছম ছম করা বর্ণনা, কৃষ্ণনগরের জমিদারবাড়ী নিয়ে দ্বন্দ্ব সর্বোপরি ভিলেনরূপী রুক্সিনী চৌধুরীর আগমন। প্রথম বইটি যেখানে শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় বইটির শুরু ঠিক সেখান থেকেই। বইয়ের নাম ‘বিড়ালাক্ষী’ হলেও বই জুড়ে শুধু বিড়ালের অক্ষি ছিল না। আগের বইয়ের রেশ জুড়েই ছিল বকুলফুলের মোহনীয় গন্ধ, স্মিতা চৌধুরানীর পুনঃআগমন, রুক্সিনী চৌধুরীর জমিদারী দখলের চেষ্টার সাথে সাথে তার অবৈধ ব্যবসার গা শিউরে ওঠা বর্ণনা। সেই সাথে ডান পা ভাঙা অদ্ভুত কাঠের বিড়াল পুতুল রহস্য এবং মশাইয়ের ভালোবাসার মানুষ ‘রাত্রি’। বইটিতে টান টান উত্তেজনা ছিল। একদম শেষ দিকে এসে ভালো লাগছিল মশাইয়ের সাথে তার ভালোবাসার মানুষ ‘রাত্রি’র দেখা হওয়াটা। কিন্তু এ কি! এই রাত্রিও শেষ পর্যন্ত অন্য কেউ হয়ে দেখা দিল, মশাইয়ের খুব কাছের কেউ। হঠাৎ সেখানে আরেকজন চলে এলো বাগড়া দিতে। শেষ ! যাহ্ ! এরপর কি হল? হ্যাঁ, এরপরের কাহিনী জানতেই হাঁসফাঁস লাগার মত অবস্থা হল। আর এই হাঁসফাঁস নিয়েই অপেক্ষা করতে হল এ বছরের বইমেলার জন্য। বকুলফুল ট্রিলজির শেষ বই ‘বাঁশি’র জন্য।
অবশেষে পড়ে শেষ করে ফেললাম ‘বাঁশি’। ‘বিড়ালাক্ষী’ যেখানে শেষ হয়েছে ‘বাঁশি’র শুরু ঠিক সেখান থেকেই। আগের দুই বইয়ে যে সব রহস্য রহস্যই থেকে গিয়েছিল সেগুলোর মোটামুটি সবগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে একে একে কাহিনীর আবর্তনে। প্রতিটি পাতায় পাতায় ছিল টান টান উত্তেজনা।এমনকি সিরিজের আগের দুটি বইয়ের চেয়ে এটায় বেশি শিহরিত হওয়ার মত ব্যাপার ছিল।
নতুন চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘শাতু’ চরিত্রের কথা আলাদা ভাবে না বললেই নয়। রহস্যময় এই চরিত্রটি নিয়ে শুরু থেকেই দোটানায় ছিলাম। সে আসলে কি চায়? সে কি ভালো নাকি খারাপ? এই দোটানা লেখক বেশ ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন বোধ করি পাঠকের মনে।
বইটির শেষ দিকে এসে সব কিছুর ঠিকঠাক ব্যাখ্যা পাওয়ার পর ভালো লাগছিল। কিন্তু একদম শেষ পাতায় এসে এমন ভাবে গল্পের ইতি টানলেন লেখক যে মনে হচ্ছিল এভাবে কি রহস্য রেখে শেষ করার দরকার ছিল? এখন তো আবার সাধ জাগছে এই সিরিজের আরেকটা বই বের হোক ! যাই হোক, এটা লেখকের সৃষ্টি, লেখক ভালো বুঝবেন আরেকটা বই বের করবেন কিনা।
তবে রুক্সিনী চৌধুরীর সমগ্র শরীর জুড়ে যে টিউমার রহস্য ছিল আগের বইয়ে ভেবেছিলাম ‘বাঁশি’তে এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা করা হবে কিন্তু সেটা পাইনি।আরেকটা ব্যাপার ভালো লাগেনি, ডাক্তার সুপ্রিয়ার সাথে দেখা করার জন্য মশাই যখন দ্বিতীয় বারের মত সুবর্ণ মেডিকেল হাসপাতালে যান তখন তিনি হাসপাতালের যে কেবিনে আগে ছিলেন সেই ৫০৭ নাম্বার কেবিনে গিয়ে নতুন রোগীকে যে ভয় দেখিয়ে পৈশাচিক আনন্দ নিলেন সেটা ভালো লাগলো না। ঘটনাটা পড়েই মনে হল, আরে! মশাই তো মানুষকে এমন ভয় দেখিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার মত মানুষ না। এটা তো মশাইয়ের চরিত্রের সাথে গেল না।
বইপড়ুয়া মশাইকে বেশ কিছু বই পড়তে দেখা গেছে পুরো ‘বাঁশি’ জুড়ে। ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। আমি নিজেই নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলাম যখন একে একে বিভূতিভূষণের তারানাথ তান্ত্রিক, তারাশঙ্করের কবি, অতীনের নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে অথবা ড্যান ব্রাউনের ইনফার্নো বইয়ের কথা আসছিল। মশাই আর আমার বইয়ের টেস্ট দেখি একই !
বইয়ে টুকটাক বানান ভুল ছিল, আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে তা শুধরে নেওয়া হবে।তবে বইয়ের পেজগুলো খুব ভালো লেগেছে।এমন হলদে টাইপ পেজ আমার খুব পছন্দের।এমন পাতার বই পড়তে কেন জানি খুব শান্তি শান্তি লাগে।
বইয়ের একটা উক্তি এখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে; ‘মানুষের যে কত রূপ তা বোধ হয় মানুষই জানেনা। আর জানেনা বলেই সে ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়।’ একদম চিরন্তন সত্যি কথা!
যাই হোক, পরিশেষে এটাই বলবো সব মিলিয়ে লেখক সফল। ট্রিলজি লেখা বেশ দুঃসাধ্য কাজ। ট্রিলজির শেষ পর্ব লিখতে বোধ করি বেশি শ্রম দিতে হয় লেখককে কারণ, আগের বইদুটির সাথে শেষ বইটি যথাযথ ভাবে যোগস্থাপন করা, সকল রহস্যের সমাধান করা, আগের দুই বইয়ের চরিত্রগুলোর সাথে কাহিনীর আবর্তনে নতুন চরিত্রের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা বেশ কষ্টসাধ্য। লেখক পেরেছেন, সফল ভাবে পেরেছেন। বকুলফুল ট্রিলজি বাংলা সাহিত্যের একটি সফল অতিপ্রাকৃত থ্রিলার ঘরানার ট্রিলজি।
লেখকের প্রতি একটা আবদার।বকুলফুল সিরিজের প্রথম বইটি লিখতে বসার আগে ‘ব্যথা’ নামের যে উপন্যাসটি লেখা শুরু করেও শেষ করতে পারেননি আমি চাই আপনি যেভাবেই হোক উপন্যাসটি শেষ করুন। আমি চাই অতিপ্রাকৃত ঘরানার লেখকের পাশাপাশি মনোয়ারুল ইসলামকে একজন সফল সামাজিক এবং রোম্যান্টিক ঘরানার লেখক হিসেবেও মানুষ জানুক।
এক নজরেঃ বই – বাঁশি লেখক – মনোয়ারুল ইসলাম প্রচ্ছদ – মোস্তাফিজ কারিগর প্রকাশনী – নালন্দা মুদ্রিত মূল্য – ৩০০ টাকা প্রকাশকাল – মার্চ ২০২১
'সখি কারে ডাকে ঐ বাঁশি নাম ধরিয়া তুই দে না বলিয়া।’
গানটি বিখ্যাত গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের। ‘বাঁশি নিয়ে এমন হাজারো কবিতা, গান, প্রেম উপাখ্যান, গল্প ও কবিতা লিখেছেন বিশ্বের নামীদামী লেখকরা। আসলে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায় বাঁশির সুরের মূর্ছনায়। সুরের যাদু দিয়ে বংশি বাদক শ্রোতাকে টেনে নেয় নিজের কাছে। রাজা বাদশাহ্দের আমলে রাজ-দরবারে নিয়োগ দেয়া হতো বংশি বাদক। যখনই রাজার মনে সুর চাইতো হুকুম দিলেই সুর বেজে উঠতো বংশি বাদকের। রাজা সুরের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দিতেন। এখন রাজা বাদশাহও নেই। বংশি বাদকও কমে গেছে।
তবে হ্যাঁ, বাস্তব জগতে বংশি বাদক কমে গেলেও কেন জানি আমি সুরের মূর্ছনা আর বকুলের গন্ধে বিমোহিত হয়ে পড়ছিলাম লেখক মনোয়ারুল ইসলামের বকুল ফুল সিরিজের শেষ উপন্যাস 'বাঁশি'। আসলে বাঁশির প্রতিটি দৃশ্যপটই এরকম। বকুল ফুল পড়তে গিয়ে পাঠক যেমন বিভোর ছিল শুধু বকুলের গন্ধে, বাঁশিতে রয়েছে অপার্থিব বকুল ফুলের স্মেলের পাশাপাশি মন পাগল করা বাঁশির করুণ সুর।
চলুন এবার মূল গল্পে প্রবেশ করি। সিরিজের এই শেষ বইটির প্রথম দৃশ্যেই স্মিতা চৌধুরানীর সাথে গল্প কথক মশাইকে দেখা যায় দূর থেকে ভেসে আসা বাঁশির অপার্থিব সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত হয়ে থাকতে। মশাইরা যখন তন্ময় হয়ে বাঁশির সুরে মগ্ন, ঠিক তখনই রুক্সিনী চৌধুরির এসইউভি সামনে এসে ব্রেক কষল। রুদ্রমূর্তি রুক্সিনীর হাতে চকচকে রিভলবার। মাথাচাড়া দিয়ে উঠল রুক্সিনী চৌধুরির ক্ষমতা দখলের লড়াই।
প্রতি পদে পদে ওঁত পেতে থাকা রুক্সিনী চৌধুরির ছুড়া বুলেট মশাইকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় আরেকটা অদ্ভুত অশরীরি ছায়ার সামনে। 'শাতু' নামের এই ছায়ামূর্তিটির উপস্থিতি 'বাঁশি'তে নতুন হলেও দারুণভাবে আমাকে থ্রিল জুগিয়েছে। শুরু থেকে শেষ অবধি এই চরিত্রটির সাথে আমি বেশ খেলেছি।
যাই হোক, মশাইয়ের বিপদ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। জন্মের প্রথমদিনই আচমকা দাঁড়িয়ে যাওয়া এই মানুষটি মাত্র ২৭ বছর বয়সে মুখোমুখি হয়েছেন কম করে হলেও ২৭'শ অপার্থিব সমস্যার। ইদানিং হঠাৎ করেই শুকিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কেন এই শুকিয়ে যাওয়া? গভীর রাতে দূর থেকে ভেসে আসা বাঁশির সুর এর জন্য দায়ী নয় তো? হৃদয়ে ঝংকার তোলা এই আওয়াজ শুধুই কী বাঁশির সুর? নাকি সুরের সাথে মিশে আছে অপার্থিব-অশরীরি কিছু?
ইদানিং আরেকটা সমস্যা হচ্ছে মশাইয়ের। সমস্যা নাকি দৃষ্টিভ্রম বিষয়টা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। ঐ যে একটা কাঠের মূর্তি ছিল না, তিন পা ওয়ালা। ওটা স্থান বদল করছে! শোকেসের উপর রাখা একটা নিরেট কাঠের মূর্তি হাঁটতে পারে? জি, এমনটাই মনে হচ্ছে মশাইয়ের কাছে। শুধুই কি হাঁটে, মাঝে-মধ্যে চোখের পলকও ফেলে! ব্যাপারটা নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় আছেন মশাই।
পুরনো রহস্য উন্মোচন, বাঁশির অপার্থিব সুরের সাথে নতুন রহস্যের সৃষ্টি আর ঘোরলাগা বকুলের গন্ধে থরথর করে এগিয়ে গেছে বকুল ফুল ট্রিলজির এই শেষ বইটি। লেখক একেবারে বাজিমাত করে দিয়েছেন। সিরিজ লেখা নিঃসন্দেহে একটি দুঃসাধ্য কাজ। পূর্বের ঘটনা, চরিত্র, স্থান, কাল আরও নানান বিষয়াদি মাথায় রেখে এই কাজটা করতে হয়। একটু হেরফের হলেই সৃষ্টি হয় বড় ধরণের অসঙ্গতি। আমি মনে করি এক্ষেত্রে লেখক মনোয়ারুল ইসলাম সফল। শুধু সফল নন, পুরোপুরিভাবেই সফল।
এই ট্রিলজির প্রথম বই 'বকুল ফুল' পড়েই কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলাম, বাংলা সাহিত্য খুব শীঘ্রই নতুন কিছু সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। জায়গা করে নিতে যাচ্ছেন আরেক সম্ভাবনাময় লেখক মনোয়ারুল ইসলাম। সিরিজের দ্বিতীয় বই 'বিড়ালাক্ষী' এই সম্ভাবনাকে আরেকটু জাগিয়ে দিয়েছিল। তারপর 'নয়নতারা' এবং 'নয়ন তাহারে পায় না দেখিতে' লেখকের অপার সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করে জানান দিয়ে গেল। সিরিজের শেষ বই হিসেবে 'বাঁশি' দিয়ে একেবারে ষোলোকলা পূর্ণ করে দিয়ে গেলেন এই তরুণ লেখক। অন্ততঃ পাঠক হিসেবে আমি পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট। মনে হচ্ছে যেন আশার চেয়েও বেশি পেয়েছি।
লেখকের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় অনেক আগে থেকেই। সেই সুবাদে গতকাল 'বাঁশি' শেষ করে উনাকে নক দিয়েছিলাম। কথায় কথায় বলছিলাম, এই সিরিজটি বাংলা সাহিত্যে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। পাশাপাশি আরও বলেছিলাম, শেষ বই হিসেবে 'বাঁশি' বাঁচিয়ে রাখবে এই সিরিজটাকে।
চমৎকার বর্ণনাশৈলী, ছোট ছোট বাক্য, ঝরঝরে শব্দ, দৃশ্যপটের অসাধারণ বর্ণনা, বকুলের গন্ধ, বাঁশির অপার্থিব সুর, ক্ষমতা, লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, জিগাংসা, ভালোবাসা আর ভৌতিক আবহ পুরো সিরিজটিকে দিয়েছে এক অনন্য স্বকীয়তা। আমি মনে করি লেখক পেরেছেন, যা তিনি বলতে চেয়েছেন। পাশাপাশি পাঠক পেয়েছে, যতটুকু প্রত্যাশা করেছিল।
অসঙ্গতি বা মন্দলাগা বলতে তেমন কিছুই ছিল না বাঁশি তথা পুরো সিরিজটিতে। দুয়েকটা ভুল বানান ছিল, আশা করছি লেখক তা পরবর্তী মুদ্রণে ঠিক করে নিবেন। সিরিজের দ্বিতীয় বই বিড়ালাক্ষীতে অশালীন কিছু শব্দ লেখক ব্যবহার করেছিলেন, যা আমার কাছে খারাপ লেগেছে বলে প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করেছিলাম। বাঁশিতে এ বিষয়টি লেখক অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এড়িয়ে গেছেন। তাছাড়া মোস্তাফিজ কারিগরের করা অসাধারণ প্রচ্ছদটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। নালন্দার বইয়ের মান এমনিতেই ভালো, এবছর তারা আরও ভালো করেছে। ক্রিম কালারের কাগজে প্রিন্টিং আর বাইন্ডিং ছিল একদম উন্নতমানের।
একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে পুরো সিরিজটি ব্যবচ্ছেদ করলে বকুলের অপার্থিব গন্ধ আর মায়াময় বাঁশির সুরের সাথে যা পাওয়া যাবে তা হলো, পরিপূর্ণ আত্মতৃপ্তি। বাংলা সাহিত্যে কম করে হলেও ডজন খানেক সিরিজ আমি পড়েছি। লেখক মনোয়ারুল ইসলামের এই সিরিজটি ছিল একদম নিঁখুত এবং পুরোপুরি সফল।
দোয়া রইল মশাই, একজীবন লিখে যান। বাংলা সাহিত্যে আপনার এ ধারা অব্যাহত থাকুক। পাঠককে ধরে রাখার এ অসীম কৌশলকে পুঁজি করে আপনি এগিয়ে যান আপনার মতো করে। অনেক অনেক শুভ কামনা জানাচ্ছি।
প্রিয় পাঠক, বকুল ফুল সিরিজের শেষ বই বাঁশিতে আপনাকে স্বাগতম। যারা বকুল ফুল-বিড়িলাক্ষী পড়েছেন অথচ বাঁশি পড়েননি, তাদের জন্য এটি হতে পারে অকল্পনীয় চমক। সো হ্যাপি রিডিং।
বই : বাঁশি লেখক : মনোয়ারুল ইসলাম প্রকাশনায় : নালন্দা প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর পৃষ্টা সংখ্যা : ১৫১ মুদ্রিত মূল্য : ৩০০ টাকা
রুক্সিনী চৌধুরীর গুলিটা ঠিক লেখকের ডান পাঁজরে এসে আঘাত করে । আর এদিক সেদিক হলেই লেখকের জীবন প্রদীপ সেদিনই নিভে যেত। এরপর বহুদিন লেখককে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয়। হাসপাতালে তার পরিচয় ঘটে সদা লাস্যময়ী ডাক্তার সুপ্রিয়ার সাথে এবং রহস্যময় মৃত্যুপথযাত্রী এক বৃদ্ধের সাথে - যার নামটা বেশ অদ্ভুত, শাতু। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পরও লেখকের রেহাই নেই। প্রতি রাতে তার কানে ভেসে আসে অন্যরকম এক বাঁশির আওয়াজ - এই বাঁশির শব্দ শরীরে শিহরণ যোগায় , মনকে বিষণ্ণ করে তোলে। এই বাঁশি কে বাজাচ্ছে আর স্মিতাই বা কেন এই বাঁ��িকে এতটা ভয় পাচ্ছে? এদিকে কোত্থেকে কৃষ্ণনগরে ফেলে আসা বিড়ালটার মূর্তিটা লেখকের বাসায় এসে জুটেছে। ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত দুটি বিড়ালের মূর্তির সাথে এই বিড়ালের মূর্তির সম্পর্ক কি? রুক্সিনী চৌধুরী কেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে কৃষ্ণনগরে খনন কাজ চালাতে বাধা দিচ্ছে ? এদিকে স্মিতা চৌধুরানীকে চিরকালের জন্য তার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে লেখক শেষবারের মত হাজির হন কৃষ্ণনগরে । কৃষ্ণনগরে পা দেবার সাথে সাথে রুক্সিনী চৌধুরীর দলবল তাকে ধরে নিয়ে যায় শুনশান একটি জায়গায় , তার মাথা চেপে ধরা হয় বলিকাষ্ঠে । লেখককে আদিম পদ্ধতিতে বলি দেয়া হবে - কিন্তু কার উদ্দেশ্যে?
পাঠ প্রতিক্রিয়া ঃ ‘বকুল ফুল’ ট্রিলজির শেষ খন্ড এই ‘বাঁশি’ । ১৫১ পৃষ্ঠার এই বইটি আগের দুই খন্ডকে নিঃসন্দেহে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ‘বিড়ালাক্ষী’ উপন্যাসটি যে অংশে শেষ হয়েছিল, ‘বাঁশি’ উপন্যাসটি সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। একটি সিরিজের চমৎকার সমাপ্তি বলতে যা বোঝায় তা হলো ‘বাঁশি’। এই বইয়ের যেসব বিষয় আমার যথেষ্ট ভালো লেগেছে তা হলো - ১। এই বইয়ের বিশেষত্ব হচ্ছে এটি একাধারে ভৌতিক এবং রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস । আপনি ভয় এবং থ্রিল দুটোই পাবেন । ২। সংলাপ গুলো চমৎকার লেগেছে। এই বইটি এক বসায় পড়ে ফেলার মতো একটি বই। ৩। চরিত্রগুলোর মধ্যে শাতু চরিত্রটি ভালো লেগেছে। ‘বিড়ালাক্ষী’ উপন্যাসে নুরা পাগলা চরিত্রটি ভালো লেগেছিল কিন্তু কাহিনীতে লেখক নুরা পাগলাকে তেমন সময় দেননি । কিন্তু এই উপন্যাসের চরিত্র শাতুকে লেখক সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন । ৪। এই উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে শহর ,গ্রাম এবং মফস্বলকে কেন্দ্র করে । পূর্বের মতো লেখক এই অংশেও পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে কেন্দ্র করে তার লেখনির মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন । ৫। কাহিনীর সমাপ্তি ভালো লেগেছে। তবে স্মিতার বাকি দুই বোনের ইতিহাস নিয়ে আরো একটু আলোচনা করলে আরো ভালো লাগতো । পরিশেষে বলবো , বাঁশি খুব চমৎকার একটি উপন্যাস। ‘বকুল ফুল’ উপন্যাসের মাধ্যমে স্মিতা চৌধুরানীর সাথে পাঠকের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল - তার সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটেছে ‘বাঁশি’র মাধ্যমে । আমাদের দেশে হরর, ভৌতিক জনরার অনুবাদ নিয়ে অনেক কাজ হয় ঠিকই , কিন্তু মৌলিকের ক্ষেত্রে অনেক কম কাজ হয় । তবে বর্তমানে বেশ কিছু লেখক এই জনরা নিয়ে মৌলিক কাজ করছেন , তাঁদের জানাই সাধুবাদ । ‘বকুল ফুল’ ট্রিলজির লেখক মনোয়ারুল ইসলামের প্রতি শুভকামনা রইলো - আপনি ভৌতিক জনরা নিয়ে আরো মৌলিক সিরিজ আমাদের উপহার দিবেন , সেই প্রত্যাশায় রইলাম।
বকুল ফুল, বিড়ালাক্ষী এবং এর পরের পর্ব বাঁশি। এটি শেষ বই এর সিরিজের যদি না লেখক স্মিতা আর মশাই কে আবার ফিরিয়ে আনেন। স্মিতা আর রুক্মিণীর অনেক রহস্যের পর্দা উঠেছে এই পর্বে।
গত পর্বের অনেক অমিমাংসিত রহস্য যেমন রাত্রি রহস্য, বিড়ালের রহস্য এই পর্বে উন্মোচিত হবে। মশাই এর পেছনে এবার ও বিশাল বিপদ তাড়া করে ফিরেছে। এবার তাকে বাঁচায়নি স্মিতা, বাঁচিয়েছে অন্য কেউ। শাতু নামের এক অদ্ভুত চরিত্রের দেখা পাবেন এবার। কিন্তু সে কে? স্মিতা এবারে আগের চেয়েও রহস্যময়ী। বিপদ থেকেও বাঁচাতে চাইছে না তার “মশাই” কে। কিন্তু কেন? গল্পে এল সুপ্রিয়া নামের আরো এক রমনী। এদিকে রুক্মিণীর দৌরাত্ম্য যেন বেড়েই চলেছে, হাত করে নিচ্ছে একের পর এক মানুষকে। এমনকি মশাই ও এখন তার কথা শুনছে। তাহলে কি মশাইকে সম্মোহিত করে ফেলল সে? সেই ভয়ানক বিড়াল মূর্তির রহস্যই বা কী? সেই মূর্তি কি রেখে দিয়েছেন? নাকি জলে বিসর্জন। কোন এক অজানা বাঁশির সুরে বদলে যাচ্ছে সবার চেনা পৃথিবী। কী লুকানো আছে এই বাঁশির সুরে?
বাকী দুটো বই এর চাইতে এই বইটা খুব দ্রুত এগিয়েছে। এতেই লেখকের পরিপক্কতা, লেখার পরিপক্কতা স্পষ্ট বোঝা যায়। এই বইটিই সবচাইতে গোছানো লেগেছে। মনে হয়েছে, এইটাকে স্ট্যান্ড এলোন হিসেবেও পড়া যেতে পারে।
স্মিতার পরিবার, রুক্মিণীর পরিবার, মশাই এর পরিবারসহ আরো কিছু পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করা যেতে পারত। রাত্রি চরিত্রকে নিয়ে আরো কিছু ব্যখ্যা বা চরিত্রটিকে আরো একটু জায়গা দেয়ার প্রয়োজন ছিল। তবে থ্রিলার, ভৌতিক, সাস্পেন্সের মিশেলে এই সিরিজটি ভালো লাগবে সবার। এছাড়া, নামের বাঁশি এবং এর বাদকের বিষয়েও আরো কিছু বর্ণনা দিলে ভালো হত। এবং হ্যাঁ, প্রথম বইটি হয়তো পরিমার্জন করা যেতে পারে।
বাঁশি নিয়ে উচ্চাশা ছিল অনেক। লেখক সেটা পূরণ করে দিসে। এই সিরিজটা অনেকদিন টিকে যাবে এই বাঁশি বইটার জোরে। দুর্দান্ত ফিনিশিং। শেষ পাতায় লেখক অবশ্য ইঙিত দিয়েছেন আবার কিছু লেখার! আসলেই কি লেখা হবে? মন্দ হবে না। স্মিতা-মশাই, সুপ্রিয়া, রমা, রুক্সিনী প্রতিটা ক্যারেক্টার বিল্ডাপ অসাধারণ। ইচ্ছে রাখি এই সিরিজটা নিয়ে ওটিটিতে কাজ হবে। কাগজের স্মিতাকে আমরা টিভির পর্দায় রাখবো। মনোয়ারুল ইসলাম আপনি আমার এই রিভিউ দেখবেন কিনা জানিনা। দেখলে বলব- আপনি লেখা থামাবেননা বস। আপনার লেখার হাত মারাত্মক।
বইটার শেষটা পড়ে মনে হইছে লেখক কি আবারো মূলা ঝুলাইলো? জানিনা। লেখকই ভালো বলতে পারবে তবে সিরিজের বেস্ট বই যদি বলতে হয় তবে নিঃসন্দেহে সেটা বাঁশি। পারফেক্ট ফিনিশিং। শাতুকে খুবই ভয়ঙ্কর লাগছে। চরিত্রগুলো একদম ঠিকঠাক। জাত লেখক মনোয়ারুল ইসলাম। বাড়িয়ে বলছিনা। লেখার মধ্যে মায়া আছে। এই জিনিস ধরে রাখতে পারলে লেখক অনেকদুর যাবে আশা করি। স্মিতা মশাইয়ের কেমিষ্ট্রিটা বেশ জমজমাট। এটা শেষ নাহলে মনে হয় ভালো হতো।
"মশাই, বাঁশির সুর শুনছেন?" "জি।" "এই সুর কিন্তু আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। ভয়ংকর..." "কেন?" স্মিতা বলল, "এখন সমস্যা নেই, নূরা বাজাচ্ছে..." আরও কিছু বলতে গিয়েও সে একটু থামলো। তারপর বলল, "সাবধানে থাকবেন মশাই। এতো প্রশ্ন করতে নেই।" কেমন সন্দেহ হলো। স্মিতাকে কখনোই আমার কছে জটিল বা কুটিল লাগেনি- কিন্তু এখন লাগছে। সে অনেক কিছু লুকাচ্ছে স্পষ্ট।
গল্পের এই অংশটুকু পড়ে একটা গানের দুটো লাইন মাথায় চলে এসেছিলো... "বাঁশি শুনে আর কাজ নাই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি।"
আসলেই ডাকাতিয়া বাঁশি। যে বাঁশির রহস্যময় সুরে লুকিয়ে আছে বিপদ! ভয়ংকর বিপদ!
'বকুল ফুল' ট্রিলজির শেষ বই 'বাঁশি'। বইটা শুরু থেকেই পড়ি প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে। কারণ দ্বিতীয় বইতে শেষটা হয়েছিলো এমনভাবে যার জন্যে পরের ঘটনা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলাম।
অবশেষে পড়ে ফেললাম। স্বাদ মিটল। সন্তুষ্ট হলাম। আবার হলাম না। চৌধুরানীর সাথে মশাইয়ের এই বিচ্ছেদ মেনে নেয়ার মতো নয়। তাছাড়া কিছু গল্প শেষ হতে দিতে মন চায় না। মনে হয় যে এটা চলতে থাকলেই বরং ভালো হতো। মনোয়ারুল ইসলামের 'বকুল ফুল' ট্রিলজি পড়ে এরকম মনে হয়েছে গল্পটা যদি চলতেই থাকতো!
পুরো গল্প এগিয়েছে সেই পুরনো ধাঁচে। সেই জমিদারবাড়ি, সেই ভৌতিক আবহ, সেই থ্রিল সাথে চিরচেনা বকুল ফুলের ঘ্রাণ। সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে মাতাল করা বাঁশির সুর। কে বাজায় সেই ডাকাতিয়া বাঁশি?
গল্পে বেশ কিছু উঠা-নামা ছিল। সব মিলেমিশে এককথায় সুন্দর। তবে শেষটা একটু ফিল্মি হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে। আরেকটু সুন্দর ও অতিপ্রাকৃতভাবে শেষ করলে মনে হয় বেশি ভালো হতো।
গল্পের একটা অতিপ্রাকৃত চরিত্র 'শাতু'। এই চরিত্রটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে। লেখকের কাছে একটা আবদার করি এই চরিত্রটা নিয়ে আলাদা একটা গল্প/উপন্যাসিকা লেখার জন্য 🥰
এবারের বইটার প্রোডাকশন আমার তেমন পছন্দ হয়নি। বাঁধাই, প্রিন্ট ভালোই ছিল। তবে পেইজের কালারটা একটু বেশিই হলদেটে হয়ে গেছে। যেটা ভালো লাগেনি।
প্রচ্ছদ মোটামুটি ভালো। ছবি��ে সবুজ কালারটা একটুও ভালো লাগছিল না, তবে বই হাতে পাওয়ার পর দেখলাম অতোটা খারাপ না। বইতে বানান-টানান কিছু ভুল ছিল, তবে কমই।
সবমিলে বেশ ভালো। 'বকুল ফুল' লাভাররা দেড়ি না করে তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলুন।
#হ্যাপি_রিডিং ********** বই : বাঁশি লেখক : মনোয়ারুল ইসলাম প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর প্রকাশনী : নালন্দা ধরণ : ভৌতিক থ্রিলার মুদ্রিত মূল্য : ৩০০ টাকা প্রকাশকাল : মার্চ, ২০২১
চারদিকে যখন বাঁশি নিয়ে কথা হচ্ছিলো। তখন একটা গান আমার খুব করে মনে পড়তো 'বাঁশি শুনে আর কাজ নেই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি।'
মশাই কি জানতেন বাঁশি বইটি তার বকুলফুল ট্রিলজির একখান ডাকাত বই। সে যাই হোক আসল কথা বলি।
১২১৭ বঙ্গাব্দ। স্মিতা মহল। জমিদারবাড়ি। কৃষ্ণনগর, হিরণমুখী। ময়লাভিটা, শ্মশান, শিবমন্দির। ছলিম, ইলিয়াস, সুফিয়া, হাফসা, নিশি, রাত্রি, ক্ষমতাধর রুক্সিনী, রমা, সুবীর, মাশরুফ এদের সাথে আমরা পরিচিত।
যে কৃষ্ণসুন্দরী স্মিতা বারংবার মশাইকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে সে কেন বাঁশিতে এসে মশাইকে উদ্ধার করতে পারেনা। কিসের কমতি তার।
মশাইয়ের চুল পেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। বারবার বিভিন্ন রকমের টেস্ট করিয়েও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কিসের জন্য এমনটা হচ্ছে। চিকিৎসার সুবাদে পরিচয় সুপ্রিয়ার সাথে। মায়াকারা এই রমণীর সাথেও স্মিতার দেখা হয়েছিলো। মশাইকে অবাক করে দিয়ে স্মিতার কথা বলেছিলো সে। কিন্তু সুপ্রিয়া কি করে স্মিতার দেখা পেলো⁉
বাঁশির মোহনীয় সুরে স্মিতা পালিয়ে যায়, বকুলের গন্ধ মিলিয়ে যায়। কিন্তু কেন? কি সম্পর্ক তার বাঁশির সাথে। কে বাজায় এই বাঁশি⁉ স্মিতা মুক্তি চায়। কিন্তু জানেনা কি করে তার মুক্তি মিলবে। মশাইও জানেনা। নানা রকম ঝামেলায় মশাইয়ের বেহাল অবস্থা।
ক্লান্ত মশাই যখন পদ্মদিঘির পাড়ে এসে বসে তখন এক আশ্চর্যরকমের মায়া কাজ করে। মাঝ পুকুরে লাল শাপলার দল, দেখলেই শরীর আর চোখে এক ধরণের প্রশান্তির ধারা বেয়ে যায়। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকেনা এই প্রশান্তি। মনের ভেতর কত শত শঙ্কা এসে ভিড় করে। এর মধ্যে স্মিতা ছাড়াও আরো একজন মশাইকে সাহায্য করে। কিন্তু কে সে⁉ কি তার পরিচয়⁉
একবার ভাবে ক্ষমতাধর রুক্সিনীর সাথে সব চুকিয়ে ফেলবে। পরক্ষণেই ভাবে কৃষ্ণসুন্দরীর কথা। ঠান্ডা মাথার রুক্সিনী সব পাট চুকিয়ে ফেললেও ফাঁদে ফেলে মশাইকে নতুন বাড়িতে নিয়ে যায়। নির্ঘাত মৃত্যু হবে কারণ এই বাড়িতে স্মিতা প্রবেশ করতে পারেনা। তবে কি মশাই স্মিতাকে মুক্তি দিতে পারবে না⁉
একটা মিষ্টি বাঁশির সুর ভেসে আসে মাঝে মাঝেই। বাঁশির সুরে এক অন্যরকম আকর্ষণ জাগে মনে। কিন্তু বাঁশিটা কে বাজাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। মশাইয়ের মা মনে করে ওইটা বোধহয় গ্ৰামের নুরা পাগলা বাজায়। নুরা সত্যিই বাঁশি বাজায় তবে পূর্ণিমা রাতে। কিন্তু সবসময় তো আর পূর্ণিমা থাকে না। তাহলে এমন করে মশাইকে আকর্ষণ করে কে বাজায় বাঁশি? এই বাঁশির সুর যখনই আসে স্মিতা কেমন ভয় পেয়ে যায়, মশাইয়ের আশেপাশে আর থাকতে পারে না। মশাই বারবার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু স্মিতা চুপ করে থাকে।
মনে আছে বকুল ফুলের কথা? যেখান থেকে শুরু হয়েছিল মশাই আর স্মিতার যাত্রা। আজ বাঁশির সুরে অন্য এক গল্প বলতে আসা। তবে কী মশাই আর স্মিতার গল্প এখানেই শেষ? নাহ আমার মন মানে না। মশাইকে ছেড়ে তাঁর স্মিতা চলে যেতে পারে না চিরতরে। তাঁকে বারবার ফিরে আসতে হবে। হয়তো ভালোবাসার টানে কিংবা মায়ার টানে। মশাই স্মিতাকে ভুলতে পারবে না যেমন, স্মিতাও তেমনি ভুলতে পারবে না।
রুক্সিনী চৌধুরানী মশাইয়ের উপর অতর্কিত হামলা করে মশাইকে একদম প্রায় মেরেই ফেলেছিল। অতি কষ্টে বোধহয় জীবনটা রক্ষা করেছেন আল্লাহ। মশাইকে অনেকদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। ওখানে পরিচয় হয় পাশের বেডে এক অদ্ভুত বুড়ো শাতুর সাথে। শাতু তাঁকে বলেছিল এই হাসপাতালের ছাদে অদ্ভুত শব্দ হয় রাতে। একদিন শাতুর পরিবারকেও দেখে মশাই, শাতু অবশ্য তখন মারা যায়নি, চোখ পিটপিট করে তাকিয়েছিল আবার। কিন্তু ডাঃ সুপ্রিয়া যে কথাটা বললো শুনে মশাইয়ের চক্ষু চড়কগাছ। মশাইয়ের পাশের বেডে গত এক মাসে কেউ ভর্তি হয়নি। সবটাই মশাইয়ের মনের ভুল।
সুপ্রিয়ার কথায় চমকে গেলেও মশাই ঘাবড়ালো না কারণ সে এই শাতুকে আরো কয়েক জায়গায় দেখেছে। একটা মানুষ চোখে কয়বার ভুল দেখতে পারে? শাতু নামের এই বুড়ো লোকটি কী চায় মশাইয়ের কাছে?
ওদিকে মশাইয়ের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যেমন শরীর দুর্বল, দিন দিন ওজন কমে যাচ্ছে তেমনি নানান শারীরিক অসুস্থতা। স্মিতাও তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে অনেকদিন হলো। রুক্সিনীর হামলার পর থেকে সে এখনো আসেনি। কিন্তু মন তো স্মিতাকে চাইছে বারবার।
মশাই ভাববে আর স্মিতা আসবে না তা কী কখনো হয়! স্মিতা এসেছে এবং এবার স্মিতা মশাইকে অনুরোধ করে তাঁকে মুক্তি দিতে। সে তাঁর স্বামী দেবীপুত্রের কাছে ফিরে যেতে চায়। এই অতৃপ্ত জীবন আর সহ্য হয় না স্মিতার। মশাইয়ের কাছে সাহায্য চাইবার কারণ স্মিতা জানায় মশাই তুলা রাশির জাতক এবং নির্লোভ, নিরপরাধ মানুষ। মশাই স্মিতাকে আশ্বাস দেয় সে খুঁজে বের করবে ওই আংটি। যেটা পেলে স্মিতার মুক্তি।
বিড়ালাক্ষীতে মশাইকে রহিম চাচার ছেলের বউ সুফিয়া একটা বিড়ালের কাঠের মূর্তি দিয়েছিল মনে আছে? ওই বিড়ালের মূর্তিটা আজকাল বড্ড রহস্যময় হয়ে উঠেছে। যেন ওটা জীবন্ত, ভেতরে প্রান আছে। মশাইয়ের মা নিজেও তাজ্জব বনে যান। তবুও তিনি যত্ন করে মূর্তিটা সাজিয়ে রেখেছেন বসার ঘরে। মশাইয়ের ওটার দিকে চোখ পড়লেই মনে হয় সেটাও তাঁকে দেখছে। এই বিড়ালের রহস্য উন্মোচন করতেই হবে।
রুক্সিনী চৌধুরানীর কথা ভুলে যাবেন না। কী ভেবেছেন মশাইকে নিস্তার দিয়েছে ওই মহিলা? যেখানে যাচ্ছে সব রুক্সিনীর নখদর্পণে। এই মহিলা বিপদজনক। মশাইকে এত সহজে ছাড়বে না। মশাইয়ের থেকে কাজ হাসিল করেও বোধহয় খুব বেশি স্বস্তিতে থাকতে পারবে না মশাই।
ওদিকে বাঁশির সুর ভেসে আসে মাঝে মাঝেই এখনো। জেগে উঠেছে এক ভয়ংকর আদিম সত্তা। যার কাছে স্মিতাও অসহায়। মশাইয়ের ক্ষতি করতে চায় সে। বাঁশিটা বোধহয় সেই বাজিয়ে মশাইকে আকর্ষণ করে কাছে ডাকছে।
এই ভয়াবহ আদিম সত্তার সাথে লড়াই করে স্মিতাকে কীভাবে সাহায্য করবে মশাই? এবার যে পথ আরো কঠিন। সাথে রুক্সিনী চৌধুরানী তো আছেই। এই বাঁশি মরণ ফাঁদ, মরণের আহ্বান করে। বাঁশির সুরে মশাই আকর্ষিত হলেই বিপদ। স্মিতাকেও সাহায্য করতে হবে।
☘️পাঠ প্রতিক্রিয়া ☘️
মনোয়ার ভাইকে ধন্যবাদ। কথায় বলে না "শেষ ভালো যার সব ভালো তাঁর" ব্যাপারটা ঠিক তেমনি ছিল। "বাঁশি" দিয়ে এই সিরিজের শেষটা একদম জমিয়ে দিলেন। তাই তিনি যেমনটা ভূমিকায় লিখেছেন যে তিনি মনে করেন তিনি সফল হয়েছেন বাঁশি বইয়ের ক্ষেত্রে, আমিও মনে করি তিনি আসলেই সফল হয়েছেন।
এটা একটা ট্রিলজি সিরিজ। এবং শেষটায় সবসময় দরকার হয় একটা পরিপূর্ণ সমাপ্তি। এবং এই বইয়ে মনোয়ার ভাই শুরু ��েকেই কাহিনীর লাগাম টেনে একদম ঠিকঠাক ব্যালেন্স করেছেন। কোনো হযবরল ভাব নেই, চরিত্রের মিশ্রনে তাড়াহুড়ো নেই। গল্প ঠিক আগে যেখান থেকে শেষ হয়েছে ঠিক সেখানে থেকে সুন্দর এগিয়েছে।
দ্বিতীয় বইয়ে বেশ অগোছালো ভাব ছিল কিন্তু শেষ বইটিতে সব গুছিয়ে এনেছেন। খুব স্ট্রং লেগেছে এবার মশাইকে। কিছু কিছু জায়গায় ডায়লগ ডেলিভারি দারুন। এই না হলে মশাই! এবং স্মিতাকে নিয়ে কী বলি সে বরাবরই আমার পছন্দের। সত্যি খুব ভালো লেগেছে এই মেয়েটিকে আমার। সে যাই হোক কিন্তু মশাইয়ের সাথে তাঁর রসায়ন বরাবর জমে ওঠে।
গল্পের সমাপ্তিটা মন ছুঁয়ে গেল। যেখানে শেষ হয়েছে লেখক চাইলে আবারো নতুন কোনো গল্পে ঢুকে যেতে পারেন এমন একটা ইন্টারেস্টিং লাইন আছে। আমার একটা দাবি থাকলো আবার যেন অবশ্যই মশাই স্মিতাকে নিয়ে লেখক একটা বই লেখেন। এভাবে স্মিতা হারিয়ে যেতে পারে না মশাইকে ছেড়ে। দারুন উপভোগ করলাম আসলেই সব মিলিয়ে।
" বাঁশি বইটিতে একদিকে যেমন রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা, লোভ, প্রেম, ভয়, মৃত্যু আবার ঠিক অন্যদিকে তেমনই রয়েছে বকুলফুলের মিষ্টি গন্ধ, বিড়ালের মায়াবী ও সুন্দর চোখ এবং বাঁশির মোহনীয় সুর। ", বকুলফুল সিরিজের ৩য় বই 'বাঁশি' এর ভূমিকা থেকে মনোয়ারুল ইসলামের অল্প একটু লেখা প্রথমেই জুড়ে দিলাম আমার পাঠ পর্যালোচনার সাথে, যেন এটা পূর্ণতা পায়।
লেখক মনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন বকুলফুল সিরিজ লেখার পেছনের ঘটনা, জানতে পেরেছি বকুলফুল লিখতে গিয়ে লেখকের অতিপ্রাকৃত ঘরানার প্রেমে পড়ে যাওয়ার গল্প। যেই লিখা লেখক নিজের মন থেকে ভালোবেসে অতি যত্ন সহকারে লিখে, তা পাঠকের ভালোবাসা না পেয়ে যায় কোথায়?
চরিত্রগুলোকে সঠিকভাবে উপস্থাপন, প্রকৃতির বর্ণনা কিংবা ভয়ানক আবহ তৈরি -- সবকিছু ছাপিয়ে লেখক মাঝেমধ্যে এতটা সুস্পষ্টভাবে কিছু দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন যা পড়তে গেলে আত্মা যেন খাঁচা ছেড়ে দৌড় দিতে নেয়! এটাই তো লেখকের সার্থকতা। গল্প কথকের সাথে স্মিতার সিম্পল ক্যামিস্ট্রি ছাপিয়ে যেভাবে ঘটনা প্রবাহিত হয়েছে, বারবার আপনি তাদের এই ক্যামিস্ট্রির মাঝেও থ্রিলারের স্বাদ পাবেন। তারও আগে, স্মিতা-রুক্সিনির 'কোনো একটা বিষয়' নিয়ে যেভাবে একটা অতিপ্রাকৃত থ্রিলার সাজিয়েছেন লেখক মনোয়ারুল ইসলাম, তার প্রশংসা করতেই হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো,
স্মিতা - রুক্সিনির মাঝে আবার কী সম্পর্ক? তাদের মাঝে কি ঘটে? কেন এই রুক্সিনি গল্প কথকের ঘুম হারাম করে রেখেছেন? -- এইরকম হাজারটা প্রশ্ন আছে, আছে চমৎকার উত্তর। কিন্তু আমি তো দিবো না!
মজার বিষয় হলো, নালন্দা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বাঁশি উপন্যাসের শুরুতেই আপনারা একটা আলতো ধাক্কা খাবেন, কেন খাবেন? সেটা নাহয় না বলি। আপনি এই ধাক্কা হজম করতে করতে গল্প কথককে গুলি করে বসবে রুক্সিনী চৌধুরি। গল্প কথকের পরনের শার্ট রক্তে ভিজে জবজবে অবস্থা। সবথেকে অবাক করা বিষয় হলো, আগের দুই উপন্যাস পড়লে আপনার মাঝে একটা ধারণা জন্মাবে যে গল্প কথককে স্মিতা প্রায়ই বিপদ থেকে উদ্ধার করে, কিন্তু এবার রুক্সিনীর গুলিতে রক্তাক্ত হয়ে যখন গল্প কথক হাত বাড়ায়, সেই হাত স্মিতা ধরেনি। কেন? -- পড়তে হবে 'বাঁশি'
আচ্ছা, এবার গুলি খাওয়ার পর গল্প কথককে পাওয়া যায় হাসপাতালে, এই হাসপাতাল ধরেই কাহিনী গড়ায় অনেকটা, গল্পের প্রয়োজনে পরিচিত হতে হয় একটা ভয়ানক চরিত্র 'শাতু'র সাথে। এই শাতু এতরকম অবাক করা ঘটনা ঘটায়, যা আপনাকে রীতিমতো ভড়কে দিতে বাধ্য। আমার সবচাইতে অবাক লেগেছে একটা বিষয়ে, লেখক মনোয়ারুল ইসলাম ঠিক কতোটা এফোর্ট দিলে ৩ টা বই পর্যন্ত এত চমৎকার ভাবে একটা গল্প সাজানো যায়! আমি সত্যিই অবাক।
অন্যান্য রিভিউয়ের মতো 'বাঁশি' নিয়ে আমি খুব বেশি একটা কথা বলবোনা। বলবোনা এই কারণে -- এটা বকুলফুল সিরিজের শেষ বই। আপনার সকল জিজ্ঞাসা, রোমাঞ্চ, আগ্রহ কিংবা প্রশ্নের উত্তর এই বইতে পাবেন। আচ্ছা, পাবেন তো? -- আমি জানি না!
শুধু এইটুকুই বলে শেষ করব, যারা ভয় পেতে ভালোবাসেন, যারা অতিপ্রাকৃত গল্প ভালোবাসেন, যারা বারবার চমকে যেতে ভালোবাসেন, যারা ভয় পেতে পেতে বই পড়তে ভালোবাসেন কিংবা যারা অতিপ্রাকৃত থ্রিলার পছন্দ করেন -- তাদের জন্য মনোয়ারুল ইসলামের 'বকুলফুল' সিরিজ আমি সাজেস্ট করব। একটা লেখক অনেকটা গুরুত্ব দিয়ে, অনেকটা সময় নিয়ে এই উপন্যাস সাজিয়েছেন - এর প্রশংসা করতেই হয়।
আগের দুই বইয়ের মতোই, প্রোডাকশন কোয়ালিটি, সম্পাদনা কিংবা প্রুফ - কোথাও কথা বলার জায়গা ছাড়েননি এই লেখক৷
স্মিতা, রুক্সিনি, গল্পকথকের থ্রিলার ছাপিয়ে আপনার মনে ভয় সৃষ্টি করবে বকুলফুলের ঘ্রাণ, বিড়াল, কাঠের পুতুল কিংবা মাঝরাতে বাঁশির সুর। দিনশেষে বইটা ভালো লাগবে।
বই পড়ুন। বই নিয়ে কথা বলুন। টক্সিক কথাবার্তা কিংবা ধ্বংসাত্মক সমালোচনা বাদ দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করুন কিংবা পজিটিভিটি ছড়িয়ে দিন। ধন্যবাদ। পৃথিবী বইয়ের হোক।
"কে বাঁশী বাজায় রে মন কেন নাচায় রে" একদম না। কলিজা কেঁপে ওঠে এই বাঁশির শব্দে।
আহ!শেষ করে ফেললাম 'বাঁশি'। পুরো সিরিজের বই গুলোর নামই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। বকুলফুল, বিড়ালাক্ষী, বাঁশি। এতো সুন্দর!
যদিও 'বকুলফুল' বইটিই আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে তবে 'বাঁশি' ও কম যায় না। সেই স্মিতা চৌধুরানী আর রুক্সিনীর সাথে নতুন করে আরও একটি রহস্যময় চরিত্র এলো,শাতু। পুরো বইয়েই শাতু সম্পর্কে খোলাসা করে কিছুই বলা হয় নি। শেষ পর্যন্ত শাতুর রহস্যের সমাধান হলো আর কথকের দাদীর রহস্যেরও। বলা হচ্ছে সিরিজের শেষ বই এটি। কেন যেন শেষটা পড়ে মনে হলো বুঝি আরও কিছু ঘটার আছে! এমন অসাধারণ সিরিজ এতো জলদি শেষ না হোক -__-।
অতঃপর কবি মঞ্চে উঠিলেন যদি লেখকের এখন পর্যন্ত সেরা বই হয়ে থাকে তবে এটা সেকেন্ড ওয়ান। শুরু থেকে শেষ শুধু উত্তেজনা আর শিহরণ কাজ করছে বুকের মাঝে। স্মিতা চৌধুরানি আর মশাইয়ের বিষয়টা এই উপন্যাসে প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। বকুল ফুল নাম ভেবে মনে করেছিলাম প্রেম ট্রেম হবে, তাই অনেকদিন এড়িয়ে গেছি এই সিরিজটিকে। আসলে এটা রহস্যের খনি।
সত্যি বলতে এই সিরিজের প্রথম দুটি বই আমার কেনো জানি ভালো লাগে নি, 'বাঁশি' বইটা ব্যতিক্রম। কথায় আছে “শেষ ভালো যার সব ভালো তার" আগের দুই বইয়ের চেয়ে 'বাঁশি' সুরে মাতাল হয়ে ছিলাম। টানটান উত্তেজনা এবং শেষ টা সুন্দর করে শেষ করে দিয়েছে....